বিবর্তনস্টিকি

মানুষের (Homo Sapiens) এক জোড়া পূর্বপুরুষ?

ইদানিং এক শ্রেণীর মানুষের আবির্ভাব হয়েছে তারা ধর্মও মানেন আবার বিবর্তনও। খ্রিস্টানরা এর মধ্যে অনেক এগিয়ে। তারাই মূলত এই ধরণের ধারণার প্রচারক। তার মধ্যেও আবার দুইটি শ্রেণী আছে, যাদের একদল মনে করেন এটা ন্যাচারাল সিলেকশন নয় বরং এক ধরণের পূর্বপরিকল্পিত আরটিফিশিয়াল সিলেকশন তথা এটাকে তারা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন বলে দাবি করেন এবং তাদের দেখাদেখি অনেক মুমিন ভাইয়েরা আল্লাহকে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার বানিয়ে দেন। অর্থাৎ বলা যেতে পারে তারা বিবর্তন মানেন না। আরেক শ্রেণী আছে যারা মনে করেন মানুষের বিবর্তন ঘটেছে এক জোড়া পূর্বপুরুষ থেকে। আজ মূলত তাদের দাবিটি নিয়েই বলব।

মানুষের বিবর্তনের দুই রকম বর্ণনা (আমার জানামতে হাইপোথেসিস পর্যায়ে) প্রচলিত ছিল, একটা হল অনেক অঞ্চলে বিবর্তিত হবার বা Multiregional evolution আরেকটা হল Out of Africa বা কেবল আফ্রিকান অরিজিন থেকে বিবর্তনের মডেল। আউট অফ আফ্রিকা মডেলটির পক্ষে এভিডেন্স বেশি। জানতে চাইলে পীয়ার রিভিউড এই জার্নালটি (১) কিংবা এটি (২) পড়ে দেখতে পারেন।

তারা এই আউট অফ আফ্রিকা মডেলকে দাবি করেন এক জোড়া পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত মডেল হিসেবে, সাথে আবার নানা বইয়ের বা পত্রিকার রেফারেন্স জুড়ে দেয়। আমি জানিনা তারা এটা জেনে করেন নাকি না জেনেই। আউট অফ আফ্রিকা মডেল মানে কিন্তু এক পূর্বপুরুষ থেকে বোঝায় না!!! একটা Group of People বোঝায় যে সংখ্যাটা পর্যন্ত এস্টিমেট করা হয়েছে বেশ কয়েক হাজার হিসেবে। (৩) (৪)

এখানে জানিয়ে রাখা ভাল হবে যে, এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির বিবর্তনের প্রক্রিয়াকে স্পেসিয়েশন (Speciation) বলে (৫), আবার Splitting of lineages ও বলা যায়। এটা কখনই পূর্ববর্তী প্রজাতির এক জোড়া থেকে ঘটে না। এটা ঘটে অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই একটি দলে যেটাকে কিনা আরও যথাযথভাবে বলা যেতে পারে আন্তঃপ্রজননে সক্ষম একটি দলের জিন পুলের() মধ্যে (Gene Pool)(৬)। যে প্রজাতির জিন পুলে যত বেশি বৈচিত্র্য থাকবে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে বেঁচে থাকার তথা বিলুপ্ত হবার সম্ভবনা তত কম। আরও বিস্তারিত জানতে পারেন Common Descent(৭) সম্পর্কে।

আউট অফ আফ্রিকারও আবার পুরনো ও নতুন মডেল আছে। পুরনোটিকে আউট অফ আফ্রিকা ১ বলা হয় (৫) আর নতুনটিকে আউট অফ আফ্রিকা ২ বা আউট অফ আফ্রিকা থিয়োরি (৬)। নতুনটিতে পার্থক্য শুধু এটুকুই যে এটা আমাদের পূর্বপুরুষদের আফ্রিকার বাইরে পদার্পণের একাধিক রুটের বদলে একটি রুটকে সাজেস্ট করে। এ বিষয়ে আরও কয়েকটি জার্নাল/আর্টিকেল (৭) (৮) (৯) পড়তে পারেন।

শেষ করার আগে একটি মজার কথা বলে রাখা ভাল হবে। অনেকেই আছেন যারা আবার Mitochondrial Eve এবং Y- Chromosomal Adam কে মানুষের পূর্বপুরুষ জোড়া বলে দাবি করেন। তাদের জন্য তিন বালতি সমবেদনা সমেত জানাতে চাই যে তাদের এস্টিমেটেড সময় এবং অবস্থান কোনটাই মেলেনা (১৩) (১৪) আর এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন আলোচনা।

তাই,Adam-Eve বা আদম-হাওয়া বিশ্বাসীদের প্রতি অনুরোধ থাকবে যে কোন একটা মানার কেননা বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা দুইটি সুস্পষ্টভাবে পরস্পর সাংঘর্ষিক।

তথ্যসূত্রঃ
(১) Human Dispersal Out of Africa: A Lasting Debate
(২) Analysis of Two Competing Theories on the Origin of Homo sapiens sapiens: Multiregional Theory vs. the Out of Africa 2 Model
(৩) Estimating Variable Effective Population Sizes from Multiple Genomes: A Sequentially Markov Conditional Sampling Distribution Approach
(৪) Human population dispersal “Out of Africa” estimated from linkage disequilibrium and allele frequencies of SNPs
(৫) Speciation
(৬) Gene pool
(৭) Common descent
(৮) Early expansions of hominins out of Africa
(৯) Recent African origin of modern humans
(১০) Human origins: Out of Africa
(১১) Re-Examining the “Out of Africa” Theory and the Origin of Europeoids (Caucasoids) in Light of DNA Genealogy
(১২) New Research Confirms ‘Out Of Africa’ Theory Of Human Evolution
(১৩) Y-chromosomal Adam
(১৪) Mitochondrial Eve

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *