ঈশ্বর হাইপোথিসিস

ঈশ্বর

নিজের বিশ্বাসকেই সবচেয়ে লজিক্যাল মনে করেন না এমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে নগণ্য হলেও, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই লজিক্যাল ফ্যালাসি কি তা জানেননা। সবাই নিজেকে বুদ্ধিমান এবং সঠিক মনে করলেও যে যার যার অবস্থান থেকে অনেক বেশিই ধর্মান্ধ যা তেতো শোনা গেলেও সত্য। নিজেদের প্রচলিত বিশ্বাসের পেছনে তারা লজিক খুঁজতে ভালোবাসেন না, তবে কেউ তাদের বিশ্বাসের পক্ষে লজিক প্রয়োগ করলে সেটা ঠিকই খুশি মনে অনায়াসে মেনে নেন গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা ছাড়াই। বলা যায়, অধিকাংশ মানুষই জানেন না বা জানতে আগ্রহী হয় না যে, কোন লজিকটা গ্রহণযোগ্য এবং কোনটি নয়। মানুষের মধ্যে থাকা এমন অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়েই কিছু মানুষ ইউটিউব চ্যানেল খুলে, বই লিখে নিজেদের উদ্দেশ্যে সফল হয়। নিজেদের মতো সাধারণ মানুষকেও তারা ঈশ্বর বিশ্বাসী এবং ধর্মান্ধ করে রাখতে চায় আর সেজন্য প্রয়োগ করে এমন কিছু যুক্তি যা যুক্তিবিদ্যায় অগ্রহণযোগ্য বলে গণ্য হলেও, সাধারণ মানুষের বিশ্বাসে জোর দিয়ে বেশ ভালোভাবেই অন্ধ করে রাখতে পারে। কোনটি ভ্যালিড লজিক আর কোনটি লজিক্যাল ফ্যালাসি সেটা বুঝতে আমাদের সবারই একটু যুক্তিবিদ্যা পড়া উচিত। এতে আমাদের যুক্তিবোধ বাড়বে, মুক্তমনে চিন্তা করতে শিখবো, মিথ্যার ভীড় থেকে সত্য খুঁজে নিতে শিখবো।

অনেকেই আমাকে অনেকসময় কোনো ইসলাম প্রচারকে ভিডিও পাঠিয়ে বা কোনো অনলাইন ইসলাম বিশারদের ফেসবুক স্ট্যাটাসের লিংক দিয়ে বলেন সেখানে নাকি ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা হয়েছে। সেসব ভিডিও দেখে বা স্ট্যাটাস পড়ে যা বুঝি তা হলো, বিশ্বাসীর বিশ্বাস সর্বদাই লজিক্যাল ফ্যালাসির ওপর নির্ভরশীল এবং সেইসব ফ্যালাসির বাইরে তারা কিছু ভাবতে পারেনা বা ভাবতে চায় না। যাইহোক, আমি এই লেখায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ক ঈশ্বরবাদীদের বহুল ব্যবহৃত যুক্তিসমূহ তুলে ধরবো, পাশাপাশি তাদের যুক্তিসমূহ কেন গ্রহণযোগ্য নয় তা ব্যাখ্যা করবো। আশাকরি, লেখাটি একজন বিশ্বাসীর চিন্তাজগতে প্রভাব ফেলবে এবং তার দীর্ঘদিনের বিশ্বাস নিয়ে সে আরও একবার ভেবে দেখবে।

ঈশ্বর ছাড়া সবকিছু কোথা থেকে আসলো, কিভাবে চলছে?

কোনো প্রশ্নের প্রকৃত উত্তরটি যদি আমাদের অজানা থাকে, তাহলে সবচেয়ে সহজ এবং সৎ উত্তরটি হবে, “আমরা জানি না”। হয়তো আমরা কখনোই এটা জানতে পারবো না যে ঠিক কিভাবে আমাদের এই মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিলো। তাই বলে আমরা এটা ধরে নিতে পারি না যে কোনো অলৌকিক সত্ত্বা বা ঈশ্বরই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে। মহাবিশ্বের উদ্ভব কিভাবে ঘটেছে সেটা আমাদের না জানাটা প্রমাণ করে না একজন অলৌকিক সত্ত্বাই মহাবিশ্বের উদ্ভব ঘটিয়েছে। কোনো প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি না বলে নিজেদের মতো করে একটা উত্তর অনুমান করে নিলেই সেই উত্তরটি সত্য হয়ে যায় না।

মানুষ কখনোই অজানা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলো না, কোনো ঘটনার পেছনের রহস্য না জানলে বা না বুঝলে কোনো অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে। বিজ্ঞানের অবদানে এমন অসংখ্য ঘটনার পেছনের রহস্য আজ আমরা জানি যেসকল ঘটনা একসময় কেবলই ঈশ্বরের লীলা বলে মনে করা হতো। এখনো আমরা মহাবিশ্বের অসংখ্য ঘটনার পেছনের রহস্য জানি না, হয়তো কখনোই জানতে পারবো না। তবে, কোনো ঘটনার পেছনের রহস্য আমরা জানি না মানে এই নয় যে সেই ঘটনার জন্য নিজেদের মতো করে একটি ব্যাখ্যা অনুমান করে নিতে হবে।

সত্য যদি আপনার অজানা থাকে এবং আপনি যদি সত্য জানতে চান, তাহলে অজানাকে মেনে নিয়েই আপনাকে সত্যের খোঁজে থাকতে হবে।

Watchmaker Argument

ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরবাদীরা যেসকল যুক্তি ব্যবহার করেন তার মধ্যে Watchmaker Argument অন্যতম জনপ্রিয় একটি যুক্তি। যুক্তিটি আমি সংক্ষিপ্ত রূপে উপস্থাপন করছিঃ

“ঘড়ি খুব জটিল একটি বস্তু, সেকারণে একটি ঘড়ি দেখে আমরা বুঝতে পারি, এটি কোনোভাবেই আপনা-আপনি তৈরি হয়নি, বরং কোনো কারিগর তৈরি করেছেন। যেহেতু জীবদেহ বা আমাদের এই মহাবিশ্বও অত্যন্ত জটিল, সেহেতু জীবদেহ বা আমাদের এই মহাবিশ্বও আপনা-আপনি তৈরি হয়নি, বরং কোনো কারিগর তৈরি করেছেন। একটি ঘড়ির জন্য যেমন একজন কারিগর প্রয়োজন, তেমনি জীবজগৎ বা মহাবিশ্বের জন্যও একজন ঈশ্বর প্রয়োজন।”

ঈশ্বরবাদীদের এই যুক্তিটির বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যার কয়েকটি সীমাবদ্ধতা আমি তুলে ধরছিঃ

(১) এই যুক্তিকে False Analogy Fallacy এর একটি উদাহরণ বলা যায়। এই ফ্যালাসিটি তখনই হয় যখন কেউ দুটি বস্তু বা বিষয়ের মধ্যে তুলনা করে তাদের মধ্যকার একটি সাদৃশ্যের ওপর নির্ভর করে আরেকটি সাদৃশ্য অনুমান করে। দুটি বস্তু বা বিষয়ের মধ্যে একটি ক্ষেত্রে মিল আছে মানে এটা নয় যে, তাদের মধ্যে অপর আরেকটি ক্ষেত্রে অবশ্যই মিল থাকবে। একটি মোবাইল ফোন আর একটি জীবদেহ উভয়ই অত্যন্ত জটিল মানে এটা নয় যে, মোবাইল ফোনটি কোনো কারিগরের অবদান বলে জীবদেহটিও কোনো কারিগরের অবদান হবে। এই যুক্তি অনুসারে আমরা দাবি করতে পারিঃ

◑ ছাগল স্তন্যপায়ী প্রাণী,
◑ ছাগল কাঁঠাল পাতা খায়।
◑ মানুষ স্তন্যপায়ী প্রাণী,
◑ অতএব, মানুষও কাঁঠাল পাতা খায়।

অবশ্যই, ছাগল এবং মানুষ উভয়ই স্তন্যপায়ী প্রাণী মানে এটা নয় যে, ‘ছাগল এবং মানুষ উভয়ই কাঁঠাল পাতা খায়।’

(২) একটি ঘড়ি দেখে বোঝা যায়, এটি কোনোভাবেই আপনা-আপনি তৈরি হয়নি, বরং একজন কারিগর তৈরি করেছেন। তার কারণ, আমরা আগে থেকেই জানি, একটি ঘড়ি আপনা-আপনি তৈরি হয়না, একজন কারিগর তৈরি করলেই তৈরি হয়।

একজন কারিগর দ্বারা একটি ঘড়ি তৈরি হওয়ার অসংখ্য উদাহরণ থাকলেও, একজন কারিগর ছাড়া আপনা-আপনি একটি ঘড়ি তৈরি হওয়ার একটিও উদাহরণ নেই। অপরদিকে, প্রাকৃতিকভাবে প্রকৃতিতে জীবদেহ জন্ম নেওয়ার অসংখ্য উদাহরণ থাকলেও, একজন কারিগর দ্বারা জীবদেহ তৈরি হওয়ার একটিও উদাহরণ আমরা খুঁজে পাই না।

একটি ঘড়ির জন্য অবশ্যই একজন কারিগর প্রয়োজন আর তার কারণ, একটি ঘড়ি প্রাকৃতিকভাবে প্রকৃতিতে জন্ম নিতে পারেনা, একটি অপর একটিকে জন্ম দিতে পারেনা। তাই, একটি ঘড়ি একজন কারিগর তৈরি করলেই তৈরি হয়। অপরদিকে, প্রাণী, উদ্ভিদ কিংবা প্রকৃতিতে বিদ্যমান সবকিছুই আমরা প্রাকৃতিকভাবে প্রকৃতিতে জন্ম নিতে দেখি আর এই জন্ম নেওয়ার ঘটনায় কোনো কারিগরের উপস্থিতি খুঁজে পাই না। অর্থ্যাৎ, একটি ঘড়ির জন্য অবশ্যই একজন কারিগর প্রয়োজন মানে এটা নয় যে, জীবজগৎ কিংবা মহাবিশ্বের জন্যও অবশ্যই একজন কারিগর প্রয়োজন।

অর্থ্যাৎ, ঘড়ি, মোবাইল ফোন, যানবাহন, রোবট ইত্যাদি মানবসৃষ্ট বস্তুর ক্ষেত্রে কারিগরের প্রয়োজনীয়তা একটি বাস্তবতা হলেও জীবজগৎ, গ্রহ-নক্ষত্র কিংবা মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে কারিগরের প্রয়োজনীয়তা কেবলই একটি অনুমান। আপনি কেবল অনুমান করে নিতে পারেন জীবজগৎ বা মহাবিশ্বের পেছনে একজন কারিগরের অবদান আছে। আর এই অনুমানের অর্থ, জীবজগৎ বা গ্রহ-নক্ষত্র কিংবা মহাবিশ্বের জন্মরহস্য আপনি জানেন না এবং সেই অজানা স্থান পূরণ করতেই একজন কারিগর বা ঈশ্বর অনুমান করে নিয়েছেন।

(৩) একজন ঘড়ি-নির্মাতা শূন্য থেকে ঘড়ির জন্ম দেন না। একটি ঘড়ি তৈরিতে প্রকৃতিতে বিদ্যমান উপাদানসমূহই ব্যবহৃত হয়। আর প্রকৃতিতে বিদ্যমান উপাদানসমূহ অবশ্যই একজন ঘড়ি-নির্মাতার সৃষ্টি নয়।

অর্থ্যাৎ, Watchmaker Analogy অনুযায়ী, একটি ঘড়ি যেমন কোনো কারিগরের অবদান, তেমনি জীবজগৎ বা মহাবিশ্বও কোনো কারিগরের অবদান। তবে, সেই কারিগর যেসব উপাদান ব্যবহার করে জীবজগৎ বা মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন সেসব উপাদানের অস্তিত্ব আগে থেকেই ছিলো এবং সেসব উপাদান সেই কারিগরের সৃষ্টি নয়।

৪) Watchmaker Argument দাবি করেঃ

◑ ঘড়ি জটিল,
◑ একটি ঘড়ির জন্য একজন কারিগর প্রয়োজন।
◑ মহাবিশ্ব জটিল,
◑ অতএব, মহাবিশ্বের জন্যও একজন কারিগর প্রয়োজন।

এই একই যুক্তি অনুসারে, মহাবিশ্বের কারিগরের জন্যও একজন কারিগর প্রয়োজন।

বিশ্বাসীরা বলেন, মহাবিশ্ব অত্যন্ত জটিল, নিশ্চয়ই কোনো ঈশ্বর একে সৃষ্টি করেছেন। আমি বলি, আমাদের এই জটিল মহাবিশ্ব যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি নিশ্চয় কল্পনাতীত জটিল, নিশ্চয় তাকেও কোনো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতির জটিলতার জন্য যদি একজন ঈশ্বর প্রয়োজন হয়, তাহলে প্রকৃতির চেয়েও জটিল ঈশ্বরের জন্য আরও জটিল একজন ঈশ্বরের প্রয়োজন। একইভাবে, ঈশ্বরের ঈশ্বরের জন্য আরও একজন ঈশ্বরের প্রয়োজন। একইভাবে, ঈশ্বরের ঈশ্বরের ঈশ্বরের জন্য আরও একজন ঈশ্বর প্রয়োজন।

এখন আপনি যদি দাবি করেন, যিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন তাকে কেউ সৃষ্টি করেননি, তিনিই শেষ, তারপর আর কেউ নেই, তাহলে পুরো যুক্তিটি আরেকটি লজিক্যাল ফ্যালাসিতে পরিণত হবে, যাকে বলে Special pleading fallacy. এটা এক প্রকার হিপোক্রেসি, যা একজন মানুষ তখন করে থাকে যখন তার প্রস্তাবিত সমাধান তার নিজেরই খাড়া করা নিয়মে টিকতে ব্যর্থ হয়। আপনি যদি ধরে নেন, মহাবিশ্বের জটিলতার জন্য একজন ঈশ্বর প্রয়োজন, তাহলে আপনাকে এটাও ধরে নিতে হবে যে, সেই ঈশ্বরের জন্যও আরও একজন ঈশ্বর প্রয়োজন।

Cosmological Argument

ঈশ্বরবাদীরা ঈশ্বরের পক্ষে Cosmological Argument নামে একটি যুক্তি ব্যবহার করেন আর এটাও ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে অনেক জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত একটি যুক্তি। যা বলে, প্রত্যেক ঘটনাই একটি কারণের প্রভাব, আমাদের মহাবিশ্বও একটি কারণের প্রভাব, ঈশ্বরই সেই কারণ।

যুক্তিটি বলে, আমরা যদি সময় মারফত প্রত্যেক ঘটনার পূর্ব অবস্থা খেয়াল করি, তাহলে প্রত্যেকবারই একটি পূর্ববর্তী ঘটনা খুঁজে পাবো যার ফলে পরবর্তী ঘটনাটি ঘটেছে। আর, যেহেতু প্রাকৃতিক ঘটনার এই ধারা চিরতরে চলতে পারেনা এবং কোনো ঘটনা নিজে নিজে ঘটতে পারেনা, সেহেতু্ কোনোকিছুর অস্তিত্ব সবকিছুর আদি কারণ।

আস্তিকদের অন্যান্য যুক্তিসমূহের মতো এই যুক্তিটিও বেশকিছু সীমাবদ্ধতায় ভোগে। কিছু উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা তুলে ধরছিঃ

১) এই যুক্তিটির প্রথম সমস্যা হিসেবে বলা যায়, এখানে আগেই ধরে নেওয়া হয়েছে যে, মহাবিশ্বের প্রত্যেক ঘটনার পেছনেই কোনো না কোনো কারণ আছে, যার কোনো প্রমাণ নেই। এটি পুরোপুরি একটি প্রমাণহীন দাবি, কোনো প্রমাণ নেই যার ওপর নির্ভর করে আমরা এই কথাটি বলতে পারি। হয়তো আমাদের এযাবৎ পর্যবেক্ষিত সকল ঘটনার পেছনেই কোনো না কোনো কারণ আছে, তারমানে এই নয় যে মহাবিশ্বের সকল ঘটনার পেছনেই কোনো না কোনো কারণ আছে। আপনি যদি তেমনটা ধরে নিতে চান, তাহলে ধরে নিতেই পারেন। তবে জেনে নিবেন, সেটা কেবলই আপনার অনুমান।

২) যদি আমরা ধরেও নিই যে, মহাবিশ্বের প্রত্যেক ঘটনার পেছনেই কোনো না কোনো কারণ রয়েছে, তাও অনেক সমস্যা থেকে যায়। মহাবিশ্বের কোনো ঘটনার পেছনে একটি কারণ আছে বলে স্বয়ং মহাবিশ্বের পেছনেও একটি কারণ আছে বলে দাবি করাটা একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি, যাকে বলে Fallacy of composition. এই ফ্যালাসিটি তখনই হয় যখন কেউ একটি দলের একজন সদস্যের জন্য যা সত্য তা পুরো দলের জন্য সত্য বলে দাবি করে। মহাবিশ্বের প্রত্যেক ঘটনার পেছনেই কোনো না কোনো কারণ আছে মানে এই নয় যে স্বয়ং মহাবিশ্বের পেছনেও একটা কারণ আছে বা থাকা আবশ্যক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি ভেড়ার পালের প্রত্যেক ভেড়ারই একটি মা আছে বলে এটা দাবি করা যায় না, স্বয়ং ঐ ভেড়ার পালেরও একটি মা আছে।

৩) এছাড়াও, আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি, যদি সবকিছুর পেছনে একটি কারণ বা সৃষ্টিকর্তা থাকে, তাহলে ঈশ্বরকে কে সৃষ্টি করেছে? ঈশ্বরকে যে সৃষ্টি করেছে তাকে আবার কে সৃষ্টি করেছে? এভাবে প্রশ্নের পর প্রশ্ন আসতেই থাকবে। পরিষ্কারভাবেই, মহাজাগতিক যুক্তি সমাধান দেখানোর পরিবর্তে সমস্যার জন্ম দেয়।

‘সবকিছুর পেছনে একটি কারণ আছে’ দাবি করে ‘ঈশ্বরের পেছনে কোনো কারণ নেই’ দাবি করাটা একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি, যাকে বলে Special Pleading Fallacy যেমনটা আগেও বলেছি, এটা এক প্রকার হিপোক্রেসি, যা একজন মানুষ তখন করে থাকে যখন তার প্রস্তাবিত সমাধান তার নিজেরই খাড়া করা নিয়মে টিকতে ব্যর্থ হয়। সবকিছুর পেছনে যদি একজন ঈশ্বরের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই ঈশ্বরের পেছনে কেনো আরেকজন ঈশ্বরের প্রয়োজন হবে না? ঈশ্বরের যদি একজন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন না হয়, তাহলে সবকিছুর কেনো অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন হবে?

৪) Cosmological Argument আর যাই করুক, ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করে না। ধরে নিলাম, মহাবিশ্বের পেছনে একটি কারণ রয়েছে, কিন্তু সেই কারণটিই যে ঈশ্বর তার প্রমাণ কি? সেই কারণটি যে একটি বুদ্ধিমান সত্ত্বা, যার চৈতন্য আছে, যে যা খুশি তাই করতে পারে, তার প্রমাণ কি? আমরা কেনো এটি ধরে নিবো যে, মহাবিশ্বের উদ্ভবের জন্য দায়ী এই কারণটি একটি অলৌকিক সত্ত্বা?

‘ঈশ্বর নেই’ তার প্রমাণ কি?

“আপনি কি প্রমাণ করতে পারবেন যে, ঈশ্বর নেই?”

ঈশ্বর বিশ্বাসীগণ যখন বুঝতে পারেন যে তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারবেন না, তখন তারা অবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন।

তারা এটা বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চেষ্টা করেন না যে, আমরা যদি ‘ঈশ্বর নেই’ প্রমাণ করতে না পারি, তাতে প্রমাণ হয় না ‘ঈশ্বর আছে’। আমি একটি দাবি করে বসলাম, আপনি আমার দাবিটি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলেন না, এতে আমার দাবিটি সত্য প্রমানিত হয়ে যায় না।

আমি যদি বলি অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির কোনো একটি নক্ষত্রের কোনো একটি গ্রহে ঠিক আপনার মতোই দেখতে একজন মানুষ বাস করে, স্বাভাবিকভাবেই আপনি আমার দাবিটি বিশ্বাস করবেন না, কেননা এমনটা বিশ্বাস করার কোনো যৌক্তিক কারণ আপনার কাছে নেই।

এখন, আপনি যদি আমাকে আমার দাবিটি সত্য প্রমাণ করে দেখাতে বলেন এবং আমি তাতে ব্যর্থ হয়ে আপনাকেই আবার আমার দাবিটি মিথ্যা প্রমাণ করে দেখাতে বলি আর আপনি যদি তা না পারেন, তাতে কি প্রমাণিত হয়? তাতে কি প্রমাণিত হয় অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির কোনো একটি নক্ষত্রের কোনো একটি গ্রহে ঠিক আপনার মতোই একজন মানুষ বাস করে? অবশ্যই না।

ঈশ্বরের অনস্তিত্বের প্রমাণের অভাবকে যদি আপনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করেন, তাহলে সেটা একটি লজিক্যাল ফ্যালাসি বা কুযুক্তি ছাড়া কিছু না। একে বলে Argument from ignorance fallacy.

এই Argument from ignorance fallacy বা অজ্ঞতার কুযুক্তি অনুযায়ী, কোনোকিছু সত্য, কারণ তা এখন অব্দি মিথ্যা প্রমাণিত হয়নি, আবার, কোনোকিছু মিথ্যা, কারণ তা এখন অব্দি সত্য প্রমানিত হয়নি।

কোনো দাবি মিথ্যা প্রমাণিত না হলেই দাবিটি সত্য প্রমানিত হয়ে যায় না। আবার, কোনো দাবি সত্য প্রমানিত না হলেই দাবিটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে যায় না।

এছাড়াও, আপনি যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে বলে দাবি করেন, তাহলে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ আপনাকেই দিতে হবে। দাবি যার, প্রমাণের দায়িত্ব তার।

আপনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে বলে দাবি করলেন, আমি আপনার দাবির সপক্ষে প্রমাণ চাইলাম। আপনি বললেন, ঈশ্বর নেই তার প্রমাণ কি? আপনি এখানে Burden of proof fallacy প্রয়োগ করলেন।

কিছু দাবি করে দাবিটি প্রমাণ করার পরিবর্তে অন্যের ওপর অপ্রমাণের বোঝা চাপানোর মানেই Burden of proof fallacy.

মাতৃগর্ভের যমজ বাচ্চার গল্প

ঈশ্বর এবং পরকাল বিশ্বাসীদের মধ্যে একটি গল্প প্রচলিত আছে যা তুলে ধরে তারা মাঝেমাঝে বোঝাতে চায় যে ঈশ্বর বা পরকাল বিশ্বাস খুবই লজিক্যাল। আমি আগে সেই গল্পটা ছোট করে তুলে ধরবো এবং পরে ব্যাখ্যা করবো সেই গল্পটা আসলে কেন গ্রহণযোগ্য নয়।

একটি মাতৃগর্ভে জমজ দুই বাচ্চার মধ্যে কথা হচ্ছে। প্রথম জন দ্বিতীয় জনকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি প্রসব পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করো”? দ্বিতীয় জন বলে, “হ্যা করি। নিশ্চয় প্রসব পরবর্তী জীবন বলে কিছু আছে, হয়তো সেজন্যই আমরা এখানেই আছি”। তারপর আবার প্রথম জন বলে, “আরে বোকা পরবর্তী জীবন বলে কিছু নেই। তোমার সেই কাল্পনিক জগত কেমন হতে পারে বলতো দেখি”? দ্বিতীয়জন বললো, ”আমি ঠিক জানিনা। তবে হতে পারে সেখানে এখানের (মাতৃগর্ভ) তুলনায় আলো অনেক বেশি হবে। হতে পারে সেখানে আমরা আমাদের পা দিয়ে হাঁটতে পারবো। প্রথমজন বললো, “এটা নিছক কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। পা দিয়ে হাঁটাহাঁটি? অসম্ভব”। দ্বিতীয়জন বললো, ”আমি মনে করি প্রসব পরবর্তী জীবন বলে কিছু আছে এবং সেটা এই মাতৃগর্ভের জীবনের চেয়ে ভিন্ন”।

এই গল্পটি খুবই অসার এবং কিছুই প্রমাণ করে না। তবে, গল্পটি অবশ্যই অন্ধবিশ্বাসীদের আরও অন্ধত্বে ডুবিয়ে রাখতে সহায়ক।

একজন মানুষের মৃত্যুবরণ করার সাথে মাতৃগর্ভ থেকে একটা বাচ্চা প্রসব হওয়ার তুলনা করা ভুল। কেননা পরকালের ধারনা অনুযায়ী একজন মানুষ তার দেহত্যাগ করে পরকাল গমন করে। অপরদিকে মাতৃগর্ভ থেকে বাচ্চা তার দেহ নিয়েই পৃথিবীতে জন্মলাভ করে। পরকালের ধারনা অনুযায়ী মানুষ আত্মা ত্যাগ করলে একজীবন থেকে আরেক জীবনে প্রবেশ করে। অপরদিকে মাতৃগর্ভের আত্মা ত্যাগের কোনো ব্যাপারস্যাপার নেই।

পরকালের ধারনা এসেছে এই ‘আত্মা’ ধারনা থেকে। আগের দিনের মানুষ জানতো না মানুষ কেন বেঁচে থাকে, কেন মারা যায় অথবা, কেন কথা বলতে পারে, কেন কোনো অনুভূতি অনুভব করতে পারে বা কেন ভালবাসতে পারে। আগের দিনের মানুষের কাছে এসব প্রশ্নের একমাত্র সমাধান ছিলো আত্না ধারনা। তাদের ধারনা ছিলো এমন যে আত্মা নামক অতিপ্রাকৃতিক শক্তির কারণে মানুষ বেঁচে থাকে এবং সেই অতিপ্রাকৃতিক শক্তি দেহত্যাগ করলেই মানুষের মৃত্যু হয় ও পরকালের যাত্রা আরম্ভ হয়।

আত্মা বলে যে কিছু আছে তার কোনো প্রমাণ নেই। জীববিদ্যা প্রাণীর বেঁচে থাকা, মারা যাওয়া, অনুভব করা, চিন্তা করা, কথা বলাসহ প্রায় সবকিছুই ব্যাখ্যা করতে পারে এবং তাতে আত্মা নামক কোনো অতিপ্রাকৃতিক ধারনার প্রয়োজন হয় না। আমরা নিজেদের মনকে আত্মা বা অলৌকিক কিছু মনে করি। মন অতিপ্রাকৃতিক কোনো শক্তি নয় যার উপস্থিতিতে মানুষ বেঁচে থাকে বা ত্যাগ করলে মানুষ মারা যায়। মন মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের কাজকর্মের ফলাফল। মানুষের আমিত্ব, আকাঙ্ক্ষা, বেদনা, সংবেদনশীলতা, স্মৃতি ইত্যাদি মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ এবং তাদের আনুষঙ্গিক অনুর বিবিধ ব্যবহার মাত্র। এমনটাই বলেছেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিক তার The Astonishing Hypothesis : The Scientific Search for the soul গ্রন্থে (1)। মৃত্যু মানে কাল্পনিক আত্মার দেহত্যাগ নয়, মৃত্যু মানে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ অচল হয়ে যাওয়া। মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ অচল হয়ে গেলেই আমরা মনেকরি কাল্পনিক আত্মা দেহত্যাগ করেছে। (আত্মা, জীবন ও মৃত্যু নিয়ে আরও অনেক তথ্য ও নিখুঁত বিশ্লেষণ পেতে অভিজিৎ রায় এবং রায়হান আবীরের ‘অবিশ্বাসের দর্শন‘ বইয়ের ‘আত্মা নিয়ে ইতং বিতং’ অধ্যায়টি বিশেষ পাঠ্য।)

অর্থাৎ, যমজ বাচ্চার গল্পে আগেই ধরে নেওয়া হয়েছে আত্মা বলতে আসলেই কিছু আছে। অথচ আত্মা প্রাচীন মানুষের ধারনা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠিত সত্য নয়।

যাইহোক শেষকথা হিসেবে বলতে চাই, লজিক্যাল ফ্যালাসি প্রয়োগ করে নিজেকে ধর্মীয় অন্ধত্বে ফেলে রাখা যায়, ধর্মান্ধদের আরও অনেক বেশি ধর্মান্ধ করে রাখা যায়, তবে লজিক্যালি কোনোকিছু প্রমাণ করা যায়না।


তথ্যসূত্র

1. ‎Francis, The Astonishing Hypothesis : The Scientific Search for the soul


আরও পড়ুন

View Comments (48)

  • ভাইয়া আপনার লেখা অনেক ভাল লাগে। আপনার লেখা পড়ার পর যুক্তি ও কু যুক্তির পার্থক্য বুঝতে পেরেছি। আপনার থেকে আরও অনেক কিছু জানার ও বুঝার বাকি আছে আমাদের।
    আপনার লেখার উপর ভিত্তি করে আমিও বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করি মমিন বন্ধুদের কাছে।
    ধন্যবাদ ভাইয়া।

  • আপনাদের নাস্তিকবাদ সর্ম্পকে জানার মাধ্যম হলাে ব্লগ,ফেসবুক, গুগল ইত্যাদি ৷ কিন্তু সমাজে এখনো অনেক মানুষ আছে যারা ব্লগ,ফেসবুক, গুগল ইত্যাদি সর্ম্পকে কিছু জানেনা ৷ আমার প্রশ্ন হচ্ছে - সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষেকে নাস্তিকবাদ সর্ম্পকে জানানোর জন্য কি ধরনের পদক্ষেপ নিবেন ????

    • ইন্টারনেট যাকে নাস্তিক হতে সাহায্য করবে সে ইন্টারনেটের বাইরে তার পরিচিতদের নাস্তিক হতে সাহায্য করবে এভাবে প্রসার হবে মনে করি।

  • খুবই ভাল লেখা ভাই।ধন্যবাদ আপনাকে।
    এ বিষয়ে আমার জ্ঞান খুবই কম তাই কয়েকটা প্রশ্ন ছিলঃ
    ১। ঈশ্বর না থাকলে "ন্যায় এবং শুভ" এর ধারনার "ভিত্তি" কি?
    ২। logic কি আমাদের সব সমস্যার সমাধান দেয়? স্বজ্ঞার মূল্য কি?
    ৩। যদি কখনও এমন পরিস্থিতি হয় যেখানে আমি বা আমার সন্তানের একজনকে প্রান দিতে হবে অন্যজনে বেচে থাকার জন্য তখন আমরা আমাদের সন্তা্নের জন্য "প্রান দিতে রাজী থাকি" কেন? আমি তখন "লজিক" ব্যাবহার করি না? ৩। আমরা কেন কোন মহৎ উদ্দেশে জীবন দিতে রাযি হই? যেখানে আমি জানি যে, আমি মরে গেলে আমার "সব শেষ"। এরপর "পৃথিবীর" সব সমস্যা সমাধান হলেই বা আমার কি?
    ৪। আমরা সবাই মনে করি "আমার জীবন মূল্যবান/ জীবনের একটা উদ্দেশ্য আছে"। কেন মনে করি? পুরো সৃষ্টি ই যদি উদ্দেশ্য হীন হয় তাহলে আমার জীবনের কেন উদ্দেশ্য থাকবে?
    ধন্যবাদ ভাই।

    • https://youtu.be/Tgbva3jGD0Q

      ভিডিও টা দেখতে পারেন।

      আর আপনার প্রশ্নের উত্তরের ওপর একটা আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করবো। সাথেই থাকুন।

  • আমি মনে করতাম আপনি একজন যুক্তিবাদি নাস্তিক কিন্তু আজ বুঝলাম আপনি একজন অযৌক্তিক নাস্তিক। আপনার যুক্তি নিয়ে আপনার সাথে আমার অনেক কথা আছে। যদি নিজেকে যুক্তি বাদি মনে করেন আশা করি আমার সাথে কথা বলবেন।
    আর comments গুলো দেখলাম, যারা আপনাকে ভাইইইয়ায়ায়া...... বলতে বলতে মুখ দিয়ে ফেনা তুলে ফেলছে তাদের জন্য খুব মায়া হইতাছে।

    • আপনার যুক্তি ভালো না লাগলে সেটা আগে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। যারা ভাইয়া ভাইয়া করছে তাদের হয়তো যুক্তি বোধ আপনার চেয়ে অনেক বেশি, আপনার হয়তো খুবই কম। হয়তো যা লিখেছি তা আপনার মাথার ওপর দিয়ে গেছে এবং পুর্বের ধারনা ধরেই বসে আছেন। যাইহোক আমাকে ভুল মনে হলে আগে প্রমাণ করুণ, বাড়তি কথা পরে বলুন।

      • Maruf Bhai, I'm not being let to comment . Why ? I tried to post a very thoughtful comment describing a common logical and ethical mistake of religionists and also an interesting paradox of religions, but all my labour went in vein.

    • যুক্তিবাদী ভাই, দয়াকরে আপনার যুক্তিটা দেন যাতে আমরা সবাই আবার ইসলামে ফেরত আসতে পারি।

  • আমার কিন্তু চমৎকার লেগেছে। আশা করি, এই জাতীয় লেখা আপনার শক্তিশালী কলম থেকে আরো পাব। ধন্যবাদ।

  • প্রথমেই ধন্যবাদ আপনাকে - পাঠ করে নতুনত্য লাগলো।????✌

  • All religions and religionists have a common tendency or characteristic as like a universal rule : before going in any debate or starting any argument, they keep already in their mind a pre-judgment, some fixed ideas which they take as accepted, as something that are already resolved. But externally, they show that they are proving it and giving logic and analyses for that.
    Now, they don't want to even realise that this is self-cheating with oneself. This is unethical and dishonesty.
    The most interesting paradox for religions is : all religions appeal for truth and universal well-being of mankind. But religions prevent or restrict the search of truth by human in the name of "Believe " and "Authority of God or Unquestioned words of God". Now, if we even take as granted , for instance, that there might exist some kind of "Power"-that could be a personal Being or an Impersonal Being, that being must be something which is like "Absolute truth", "Truthful", "Must be beyond any religious identity" in order for being evaluated as "All Universal Being" emequal to all creatures of all worlds . This concept is proposed mostly by Hindu, Muslim or Sufi mystics and Bauls, and sages. But the irony is, religions appeal for "Believe "-that is, accepting without any question. This weakens the moral position of religions and religionists.

  • যদি প্রকৃতি নিজে নিজেই সৃষ্টি হতে পারে, তাহলে ইশ্বর কেন নিজে নিজেই সৃষ্টি হতে পারেনা।

Leave a Comment