একটুসখানি প্রজননবিদ্যা

প্রজনন 18

শিরোনাম দেখেই হয়ত ভাবছেন আমিও কি আবার বিজ্ঞান বুঝি? আসলে আপনি ঠিকই ভাবছেন। তেমন কোন কিছুই বুঝি না। তাও আবার যদি প্রজনন হয় তাহলে ঝামেলা বাড়ল বৈ কমল না। লেখাপড়া খুব একটা করতে পারিনি। বিজ্ঞান যতটুকু জানি শুক্রাণু-ডিম্বাণু মিলিত না হলে কোন মহিলা গর্ভধারণ করতে পারে না। আবার কোন মহিলা বীর্য খেলেও গর্ভধারণ করতে পারে এরকম প্রমাণ আমার জানা নেই। কারণ বীর্য পান করলে তা পেটে যায়। আর পেটে বীর্য খেলে কখনোই বাচ্ছা হয় না। ঠিক যেমন ছোটবেলায় আমরা বরই খেয়ে ভাবতাম বিচি খেলে পেটে গাছ হবে!! অথচ কখনই সে গাছ হয়নি।

অন্যদিকে অনেক ধর্মে পিতা ছাড়া সন্তান জন্ম হলেও বৌদ্ধ ধর্ম আরো একধাপ এগিয়ে থাকবে। ভগবান বুদ্ধ ভিক্ষুগণকে বলে গিয়েছেন তিন বস্তুর মিলনের ফলে কোন মহিলার গর্ভসঞ্চার হয়। সেই তিন কারণ হল-

  1. মাতা-পিতার মিলন হওয়া
  2. মাতা ঋতুমতী হওয়া
  3. জন্মা অন্বেষণকারী (স্বর্গ বা নরক হতে চ্যুত) সত্ত্ব বিদ্যমান থাকা।

কিন্তু পরবর্তীতে বুদ্ধের এ বাক্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন রাজা মিলিন্দ। পরবর্তীতে বুদ্ধের পরিনির্বাণের পর নাগসেন ভিক্ষু তাঁর ব্যাখ্যা দেন। ভিক্ষু নাগসেনঃ নাগসেন একজন অর্হৎ লাভকৃত ভিক্ষু। অর্হৎ হল নির্বাণ লাভের উপযুক্ত ব্যক্তি। বৌদ্ধধর্মের অনেক খুটিনাটি বিষয় তিনি ব্যাখ্যা করেন। মিলিন্দ রাজার বিভিন্ন প্রশ্নের বিপরীতে নাগসেন ভিক্ষু যথার্থ উত্তর প্রদান করেন। একদিক দিয়ে তখনকার মিলিন্দকে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মাধ্যমে নাগসেন ভিক্ষু খুশী করতে পারলেও বর্তমান মিলিন্দদের কোন ভিক্ষু কীভাবে খুশি করবেন তা এক বিরাট প্রশ্ন বটে! এখানে অনেকেই বলতে চাইবেন যে এগুলো তো গৌতম বুদ্ধের কথা নয়। এই ধরনের উক্তি যারা করবেন তাঁরা পুণঃরায় প্যাঁচে পড়ে যাবেন। কারণ এগুলো বুদ্ধের কথা বা মানুষগুলো বুদ্ধের সময়কালীন যারা বুদ্ধের ভিক্ষুসংঘে ছিল। বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পর রাজা মিলিন্দ অনেক বিষয় বুঝতে না পারলে নাগসেন ভিক্ষু বুঝিয়ে দেন। নিশ্চিত থাকতে পারবেন যে ত্রিপিটক এর বাইরে কোন রেফারেন্স দেওয়া হবে না। আবার অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারবেন এগুলো বিশ্বাসমাত্র বাস্তবে নয়। তাঁদেরকে সম্মাণের সহিত বলতে চাই হিন্দু ধর্মে এ ধরণের ব্যাপার আছে কিন্তু সেগুলো দেবতাদের ক্ষেত্রে। এই বিষয়ে তারা ভাল জানবে। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের নিম্নে আলোচিত সত্যিকার মানুষ। কারণ সেখানে ভান্তে, স্থবিরগণ বিদ্যমান। তাছাড়া আম্রপালি নামের রমনী বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী বাস্তবে ছিল। কারণ তিনি বৌদ্ধ ধর্মে প্রীত হয়ে বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘকে বিহার উৎসর্গ করেন। কেবল তাই নয় তার এক পুত্র সন্তানও ছিলেন। যিনি বুদ্ধ ধর্মে সংঘভূক্ত হয়ে স্থবির বিমল কোন্ডঞ্‌ঞ নামে পরিচিত।
(একান্তই ব্যক্তিগত মতামত, আমার অনেক বন্ধু বিভিন্ন উক্তি দিয়ে বলেন যে গৌতম বুদ্ধ এমন, তেমন বলেছেন। রেফারেন্স চাইলে বলেন তিনি নিজেই রেফারেন্স বা ফেইসবুক লিংক দেন। তাহলে কীভাবে প্রমাণ হবে সেই উক্তি গুলো গৌতম বুদ্ধের। অথচ আমিও একই দাবি করতে পারি সেই উক্তিটি করেছেন হাট্টিমাট্টিম টিম। তখন তারা রেফারেন্স চায়। আমি কখনোই দাবি করছি না, ধর্মগ্রন্থ অনুসারে গৌতম বুদ্ধ ভাল কথা বলেন নি। প্রায় ৩৫০০০ পৃষ্ঠার ত্রিপিটকে কোন ভাল কথা থাকবে না এমনটি বোকাও ভাবে না। আমার ছোট্ট শিশুটি যখন প্রথম প্রথম পেনসিল নিয়ে ঘষাঁমাজা করে সেখানে কোন কোন ঘষামাজা ৩ বা ০ এর মত মনে হয়। তার মানে এই নয় আমার শিশুটি সত্যিকার অর্থে অক্ষরগুলো চিনে বা জানে। তবে ভাল কাকে বলে? এরকম সংজ্ঞা আমার জানা নেই।)

কয়েকজন মানুষের জন্ম প্রক্রিয়া

সাংকৃত্য কুমার ও ঋষিশৃঙ্গ মুনির জন্মঃ

দুই হরিণী ঋতুমতী অবস্থায় দুইজন তাপসের (ঋষি/ভান্তে) প্রস্রাব স্থানে এসে প্রস্রাব পান করেছিল। সেই কারণে দুই হরিণী থেকে দুইজন মানুষ সাংকৃত্য কুমার ও ঋষিশৃঙ্গ মুনির জন্ম হয়। তাহলে দুই হরিণী ঋতুমতি অবস্থায় দুইজন মানুষের প্রস্রাব পান করার কারণে হরিণী থেকে মানুষের জন্ম হল।

স্থবির(জ্ঞানী ভিক্ষু) কুমার কশ্যপের জন্মঃ

একসময় স্থবির উদায়ী ভিক্ষুণীদের আশ্রমে গিয়েছিলেন। সেখানে উদায়ী স্থবির কামচিত্তে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভিক্ষুণীর যোনি সম্পর্কে চিন্তা করায় তার বীর্যপাত হয়। তখন সেই উদায়ী স্থবির ভিক্ষুণীকে জল আনতে বললেন যাতে তিনি তাঁর কাপড় ধৌত করতে পারেন। কিন্তু ভিক্ষুণী স্থবিরকে বললেন কাপড়টি তাঁকে দিতে তিনি ধুয়ে আনবেন। সেই সময় ভিক্ষুণী ঋতুমতী ছিল। ভিক্ষুণী কাপড়টি ধৌত করতে যাবার সময় কাপড়ের এক অংশ মুখে গ্রহণ করল এবং অন্য অংশ তাঁর যোনিতে স্পর্শ করার। তার ফলে কুমার কশ্যপের জন্ম। তার কারণ হল হিসেবে উল্লেখ করেছেন যৌনাঙ্গে কাপড় নিক্ষেপের কারণে রক্তরেগ বন্ধ হল ফলে ভিক্ষুণীর বীর্য সংস্থিত হয়, এবং ধাতু স্থির হয় তখন সেই কাপড়ের আরেক বীর্যযুক্ত অংশ তার মুখে দিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে গর্ভ সঞ্চার হল। খুবই অদ্ভুত ব্যাপার বটে? বীর্যযুক্ত কাপড় মুখে ও যৌনাঙ্গে স্পর্শ করিয়েই মানুষের জন্ম হয়? তবে এক্ষেত্রে বৌদ্ধরা এই বিষয়টি নিয়ে দাবি করতেই পারে ত্রিপিটকের এই ব্যাপারগুলো গবেষণা বিজ্ঞানীরা প্রাণীর ক্লোন করছে। তাঁদের জন্য রইল একরাশি ভালবাসা।

শাম কুমার ও মান্ডব্যের জন্মঃ

দুকুল তাপস ও পারিকা তাপসী তারা পরমার্থের অন্বেষণে বনে বাস করছিল। তাঁদের তপস্যার প্রভাবে ব্রহ্মলোকও উত্তপ্ত হচ্ছিল। তখন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যায় তাঁদের সেবা করতে আসতেন। দেবরাজ ইন্দ্র দেখতে পেলেন তাঁদের দুইজনেরই চোখ নষ্ট হবে। তখন দেবরাজ ইন্দ্র তাঁদেরকে অনুরোধ করলেন একজন পুত্র সন্তান লাভের জন্য যাতে সে তাঁদের সেবা করতে পারবে। মনে হয় দেবরাজ ইন্দ্রের ব্রহ্মলোক থেকে সেবা করতে আসতে কষ্ট হবে! যে দেবরাজ ইন্দ্র চোখ নষ্ট হবে সেটি আগে থেকে জানেন, পুত্র সন্তান হবে তাও জানেন, তাহলে চোখ নষ্ট না হয় মত ব্যবস্থা করে দিতে কী অসুবিধা ছিল বৌদ্ধরা ভাল জানেন। কিন্তু তারা দেবরাজ ইন্দ্রের অনুরোধ তারা রক্ষা করলেন না। কারণ ব্রহ্মচারীরা আমাদের মতো লোকাচার হতে দূরে থাকেন। বরং দেবরাজ ইন্দ্রকে অনর্থকারী বলে তিরস্কার করলেন। তখন দেবরাজ ইন্দ্র তাঁদেরকে বললেনে, “যদি আপনারা আমার পরামর্শে উৎসাহিত না হন তবে এরকম করুন “যখন তাপসী ঋতুমতী তখন আপনি দক্ষিণ হাতের আগুল দিয়ে তার নাভিদেশ স্পর্শ করিবেন। তার ফলে গর্ভ লাভ করিবেন।” ফলে আপনাদের তপস্যাও নষ্ট হল না আবার সন্তানও লাভ করবেন। অন্যদিকে স্বর্গে এক ক্ষীণপূণ্য এক দেবপুত্র ছিলেন। যেদিন পারিকা তাপসী ঋতুমতি ও পুস্পবতী ছিলেন সেদিন দুকুল তাপস পারিকা তাপসীর নাভি স্পর্শ করল ফলে ঐ স্বর্গীয় পুত্র দুকুল তাপসীর গর্ভে পুণঃজন্ম হল। বৌদ্ধরা পূণঃজন্মে বিশ্বাসী। নাভি স্পর্শের কারনে মহিলা গর্ভবতী হয় তা কি বিশ্বাসী? তাছাড়া স্পষ্টই বলেছেন মৈথুন ক্রিয়া ছাড়াও গর্ভ সঞ্চার হয়। একই উপায়ে মহাপনাদ, ‍কুশরাজা , মান্ডব্য জন্মগ্রহণ করেন। আরো অবাক যে মহাপনাদ, ‍কুশরাজা এরা বোধিসত্ত্ব ছিলেন।

আম্রপালির জন্মঃ

বৌদ্ধরা পূণঃজন্মে বিশ্বাসী। চিরমুক্তি লাভ লাভ না হওয়া পর্যন্ত মানুষের জন্মান্তর ধারা শেষ হয় না। আম্রপালি তাবতিংস স্বর্গে ছিলেন। এই আম্রপালি অতীতকালে ভিক্ষুণী ছিলেন। ফলে গর্ভবাস তার বিরাগ ছিল। ফলে তিনি ভবিষ্যতে ঔপপাতিক(মাতাপিতা ছাড়া উৎপন্ন) রূপে জন্মগ্রহণের জন্য প্রার্থণা করেছিলেন।
আম্রপালির জন্মান্তর ধারা শেষ হয় গৌতমবুদ্ধের সময়ে। এ জন্মই আম্রপালির অন্তিম জন্ম। আম্রপালি তার পূণ্যের কারনে কোন মাতৃগর্ভে জন্ম না নিয়ে সরাসরি আমগাছের শাখায় উৎপন্ন হন। উদ্যানপাল এ শিশুকে দেখে রাজার হাতে সমর্পণ করেন। রাজা এর নাম রাখলেন আম্রপালি/অম্বপালি। কারন তিনি আম গাছের শাখা হতে উৎপন্ন হয়েছেন।এক্ষেত্রে নাগসেন ভিক্ষু রাজা মিলিন্দকে বারংবার বিশ্বাস করতে বলা হচ্ছে। মিলিন্দও বিশ্বাস করলেন এবং বললেন সমস্ত নদী যেমন মহাসমুদ্রে গিয়ে অবতরণ করে, সেরকম যা কিছু খাদ্য, ভোজ্য, লেহ্য, পেয় সবকিছুই যথাস্থানে গিয়ে অবতরণ করে এবং যথাস্থানে বর্ধিত হয়। সেই কারণে রাজা মিলিন্দ বিশ্বাস করলেন মুখ দিয়ে বীর্য প্রবেশ করেও মহিলা গর্ভবতী হতে পারে।নাভি স্পর্শ করে মানুষ জন্ম, হরিণী থেকে মানুষ জন্ম, আমগাছের শাখা থেকে মানুষ জন্ম, বীর্য পান করে মানুষ জন্ম হতে পারে তা অসম্ভবই বটে। যদিও ধরে নিই সম্ভব, তা হলে এই ২৫০০ বছরে এরকম আর কোন মানুষ জন্ম নিয়েছেন কি? আর যদি সম্ভব হয় তাহলে তা প্রমাণের দাবি রাখে। উপরোক্ত বর্ণনায় পাওয়া নামগুলো কোন দেব-দেবী নয় বরং মানুষ ছিল তা ত্রিপিটক থেকেই জানা যায়। আর যদি অসম্ভব হয় সত্যিকার অর্থেই এদের পিতামাতা কে সেই উত্তর কে বা কারা দিবেন?

রেফারেন্সঃ
১) ত্রিপিটক, খুদ্দক নিকায়ে মিলিন্দ প্রশ্ন অনুবাদ পন্ডিত শ্রীমৎ ধর্মাধার মহাস্থবির।
২) ত্রিপিটক, সূত্ত পিটক, থেরগাথা অনুবাদ স্থবির।
৩) ত্রিপিটক, সূত্ত পিটক, থেরীগাথা অনুবাদ ভিক্ষু শীলভদ্র।

লিখেছেনঃ Sina Ali

View Comments (2)

  • আমার প্রশ্ন, গৌতম বুদ্ধই এই কথাগুলো বলেছেন তার প্রমাণ কী?? ত্রিপিটকে থাকলেই হয়ে গেল প্রমাণ??
    ,
    আরে ভাই যেখানে ত্রিপিটকই বহুবার পরিবর্তন হয়েছে সেখানে ত্রিপিটককে প্রমাণ হিসেবে কীভাবে নিতে পারেন আপনি??
    ,
    গৌতম বুদ্ধ নিজেও বলেছেন কোনো গ্রন্থকে অযৌক্তিকভাবে স্বতঃপ্রমাণিত স্বীকার না করতে।
    ,
    ত্রিপিটকে লেখা অযৌক্তিক অংশগুলো সংশোধন করা অসম্ভব কিছু নয়। কারণ এটাতো বুদ্ধেরই লেখা নয়।
    ,
    স্পষ্ট কথা, মহামতি গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- গুরু বলেছে বলেই বিশ্বাস করতে হবে এমন কোন কথা নেই, জাতি বলেছে বলেই বিশ্বাস করতে হবে তাও নয়, শাস্ত্রে আছে বলেই মেনে নিতে হবে এমন নয়, আগে বোধগম্য কিনা দেখো, পরীক্ষণ চালাও, গ্রহণীয় হলে গ্রহণ করো যেটা বাস্তবিক কল্যাণকর ও শ্রদ্ধার।
    ,
    আপনি নিশ্চয়ই এ কথাটা এখানে বিস্তারিত দেখেছেন,কেসমুত্তিসুত্ত,অঙ্গুত্তর শিখায়, সূত্র পিটক।
    ,
    এজন্য আমরা এসব হাবলা মার্কা প্রজননবিদ্যা গ্রহণ করিনা।আমিও যুক্তিতে বিশ্বাস করি।
    ,
    বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে ব্লগে লিখতে কমপক্ষে পঞ্চাশ টা বই পড়ুন এবং আরো গভীর ভাবে গবেষণা করুন। আমার পছন্দের লেখক রাহুল সংকৃত্যায়ন।

  • বর্তমান সময়ে ত্রিপিটকের যেসব অলৌকিক বিষয় গ্রহণযোগ্য নয় তা বিশ্বাস করার কোন প্রয়োজন নেই। তাছাড়া অলৌকিক বিষয়গুলো মানতেই হবে বা বিশ্বাস করতেই এমন কোন বাধ্যবাধকতা বৌদ্ধধর্মে নেই। বুদ্ধ তো বলেই দিয়েছেন অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে।

Leave a Comment