নড়বড়েঃ ৯৯ এ নয় ছয় (পর্বঃ ১)

Print Friendly, PDF & Email

বিশ্বাসের খুটি নাকি অধিক শক্ত হয় যার ব্যাপ্তি ও সহনশীলতা হয় অতীব, তাই বলে কি অন্ধ বিশ্বাসের খুটিও? অজ্ঞতা আর চৌকুষ এ দুয়ের অবস্থান সর্বদাই উত্তর মেরু আর দক্ষিন মেরু। ধর্মান্ধদের অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে যদিও শতাধিক মতবাদ ও চৌকুষ প্রমান রহিয়াছে তবুও ধর্মান্ধরা দক্ষিন মেরুতেই থাকিতে ইচ্ছুক। ধর্ম(গরুর) কল্পিত অপার্থিব আর মনগড়া নসত্যাকে ধর্মান্ধরা অনেক নামেই ডাকিয়া থাকে। তবে তাহাদিগকের মধ্যে মোহাম্মদ এর ইসলাম ধর্মমতে আল্লাহ (সঃ) এর মুল নামের পাশাপাশি আরো ৯৯ টি নাম রহিয়াছে। যদিও কিছু কিছু হাদিস মতে এর থেকেও বেশী, তবে এই নিরান্নবইটি নামই উল্লেখ্য। মুলত এই নামগুলা হল আল্লাহ(সঃ) এর এক একদিকের গুন যাহা গুণবাচক নাম হিসেবেও গ্রাহ্য।

“আল্লাহ বলে আহ্বান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই।” (সূরা বনী-ইসরাঈল আয়াত ১১০)

সমালোচনা নয়, আলোচনার তাগিদেই এই নামগুলার অর্থ কয়েকদিন ধরেই খুজিতেছিলাম। যখন নিরান্নবই এর পুর্ন অর্থ বের করিতে সক্ষম হইলাম তখন নিশ্বাস ছাড়িয়া খুশী হওয়ার থেকে আশ্চর্যই বেশী হইলাম বটে। ইসলাম ধর্মান্ধদের মতে তাহাদের আল্লাহ (সঃ) হলেন সর্ব উৎস। এর মানে এই ধারায় যে, জ্ঞানের দিক হইতে সর্বজ্ঞানী, শক্তির দিক হইতে সর্বশক্তিমান, দয়ার দিক হইতে দয়াময়, কারিগড়ের দিক হইতে নিখুঁত। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ব্যাখ্যা নড়বড় হইতে পারে কিন্তু আল্লাহ (সঃ) এর গুনে নয়। ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের ছোট ছোট প্রশ্নগুলি একত্র করিবার পর এই ৯৯ আমার কিছুটা নয়ছয় লাগিল।

১. আর-রহমানঃ পরম দয়ালু। সাধারনত দয়া বলতে আমারা কোন বস্তু বিশেষ বা ব্যাক্তির উপর সদয় হওয়া বুঝি। দয়া সর্বদাই উল্লেখ্য বস্তু বিশেষ বা ব্যাক্তির পক্ষে। আর যিনি সাধারনত সদয় হইয়া থাকেন তাহাকে দয়ালু বলে। ধরা যাক, কাহারো ক্ষুধার্ত মুখখানা দেখিয়া তাহার প্রতি সদয় হইয়া আহারের ব্যবস্থা করাকে দয়া বলে। আর যিনি তাহা করিলেন তিনি দয়ালু। আবার উদ্ভিদভোজীদের খাবারের টেবিলে মুরোগের রোস্ট না থাকাও মোরগের প্রতি এক ধরনের দয়া। কিন্তু পরম দয়ালু শুনে মনের ভিতর একটি প্রশ্ন উদয় হইল, যহার জন্য পরম দয়ালুর প্রতি অনীহাই বেশী রইয়া গেল। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার কি পরম দয়ালুর দয়ার জন্যই চিরচিরায়িত? তারই পরম দয়ার সমবন্টনই কি স্তরের বিবেদ সৃষ্টি? শ্রদ্ধেয় আরজ আলী মাতুব্বরের উপস্থাপনায়,

“ঈশ্বরের সৃষ্টি জীবেরা সকলেই তাঁর দয়ার সমানাংশ প্রাপ্তির দাবীদার। কিন্তু তাহা পাইতেছে কি? খাদ্য সম্বন্ধে বলা যায় যে, ঈশ্বর মানুষের জন্য চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয় ইত্যাদি অসংখ্য রকম খাদ্যের ব্যবস্থা করিয়াছেন এবং পশু-পাখীদের জন্য বরাদ্দ করিয়াছেন ঘাস-বিচালী, পোকা-মাকড় আর কুকুরের জন্য বিষ্ঠা। ইহাকে ঈশ্বরের দয়ার সমবণ্টন বলা যায় কি?
কাহারও জীবন রক্ষা করা যদি দয়ার কাজ হয় এবং হত্যা করা হয় নির্দয়তার কাজ, তাহা হইলে খাদ্য-খাদক ব্যাপারে ঈশ্বর ‘সদয়’-এর চেয়ে ‘নির্দয়’-ই বেশী। তবে কতগুণ বেশী, তাহা তিনি ভিন্ন অন্য কেহ জানে না, কেননা তিনি এক একটি জীবের জীবন রক্ষা করার উদ্দেশ্যে অসংখ্য জীবকে হত্যা করিয়া থাকেন। কে জানে একটি মানুষের জীবন রক্ষার জন্য তিনি কয়টি মাছ, মোরগ, ছাগল ইত্যাদি হত্যা করেন? কে জানে তিনি একটি শোল, গজাল, বোয়াল মাছ এবং একটা বক পাখীর জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে কয়টি চুনো মাছ হত্যা করেন? আমিষ ভোজী জীবদের প্রতি ঈশ্বরের এত অধিক দয়া কেন? তিনি কি হতভাগাদের ‘দয়াময়’ নহেন?”

২. আর-র’হীম- অতিশয় মেহেরবান। এই শব্দার্থের বিপরীতে একটা কথা না বললেই নয়, আল্লাহ (সঃ) এতটাই মেহেরবান হইয়াছেন যাহার ফলশ্রুতিতে পশ্চিমাবিশ্ব আজ উন্নতির চরম শিখরে আরোহিত হইয়াছে অথচ মোহাম্মিসলাম বিশ্ব দিন দিন রণক্ষেত্রে হইয়া যাইতেছে। তিনি কি তাহার অনুসারীদের প্রতি মেহেরবান হইতে চান না নাকি অক্ষম আর নতুবা অতিশয় মেহেরবান বানাইতে যাইয়া উনার আলহাম্মদ উনাকে অতি নড়বড়ে বানাইয়া ফেলিয়াছেন? প্রশ্ন রহিয়া গেল। আল্লাহ (সঃ) এর মেহেরবানীতে প্রায়শই বিভিন্ন দুর্যোগ প্রদান করিয়া থাকেন, যদিও মোমিনরা বলিয়া থাকে ইহা খোদাম্মদের গজব। পরিপ্রেক্ষিত বলিতে হয়, গজব নাজীলকৃত আওতাধীন সকল প্রানীই কি এই অতিশয় মেহেরবানের যোগ্য নাকি কেবলি ইহা প্রাকৃতিক। যদি ইহকালেই গজবের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হইবে তাহলে পরকালের ব্যাবস্থা কেন? সময়ের ব্যাবধানে মানুষ্য পরীক্ষা, নীরিক্ষার মাধ্যমে যাহা প্রমানের যোগ্য তাহাই বিশ্বাস করিতে শিখিয়াছে, অপার্থিব আর অপ্রমানিত সত্তার অতিশয়ে নহে। হয়ত দর্শনকারীর কাছে আল্লাহ (সঃ) মেহেরবান হইতে পারেন কারন তাহার জৈবিক ক্ষুধা মিটাইয়াছেন, তদরুপ দর্শন হওয়া মেয়েটিকেও কি তিনি মেহেরবানী করিয়াছেন?

৩. আল-মালিকঃ সর্বকর্তৃত্বময় অর্থাৎ যাবতীয় লৌকিক অলৌকিক সবকিছুর সত্ত্বাধিকারী। মালিক বা সত্ত্বাধিকারী যাহাই হোক না কেন, ভাবানুবাদ অনুযায়ী তাহা হস্তান্তরগত। যদি সমগ্র কিছুর মালিক হইয়া থাকেন বা সত্ত্বাধিকারী হইয়া থাকেন তাহলে তিনি পুর্বের কোন মালিকের কাছ থেকে সত্ত্বাধিকারী পাইয়াছেন তাহা আমার বোদগম্য নহে। ধরে নিলাম তিনি নিজেই সৃষ্টি করিয়াছেন, হস্তান্তর এর প্রশ্নই আসে না। সৃষ্টি করিতে যোগান লাগে, তাহইলে উনার যোগানদাতা কে বা তাহারই মালিক কে। শুন্য থেকে উনি সৃষ্টি করিয়া নিজেই মালিক হইয়াছেন এটাও মানিয়া নিলাম আপাতভাবে যদিও আমি বিগ ব্যং থিউরিতে অটল। যদি তাহাই হইবে তাহলে শুন্যের আগে কি ছিল এবং তাহারই বা সত্ত্বাধিকারী কে। আবার মাঝে মাঝে তাহার কাণ্ডকারখানা দেখিয়া বড়ই হাস্যকর মনে হয়, নিজেই সৃষ্টি করিয়া মালিক হইলেন এবং তাহাতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিলেন ইহা নাপাক। এ কেমন মালিক নিজে বানাইয়া নিজেই দুরত্ব রাখিবার জন্য বলেন, ইহা যেন তামাক বাজারকৃত মালিকের মতই “ধুমপান ক্যান্সার এর কারন”

৪. আল-কুদ্দুছঃ নিষ্কলুষ বা অতিব পবিত্র। ইহা হাতের কনুই আর পায়ের টাকনু ধুইয়া পবিত্রতা নহে, ইহা পবিত্রতার সর্বশেষ অধ্যায় অর্থাৎ এই পবিত্রতা থেকে আর পবিত্র হতেই পারে না। বলা হল আল্লাহ (সঃ) এর অবস্থান সকল যায়গায় বিরাজমান। যদি তাহাই হইয়া থাকে তাহলে যখন কোন নাইট ক্লাবে কোন ব্যাক্তি থাকে অথবা সিনেমার বড় পর্দায় ইংলিশ কোন অশ্লীল চলচিত্র দেখিয়া থাকে, সেখানেও কি আল্লাহ (সঃ) অবস্থান করেন, না কি উনি বাহিরে দারাইয়া থাকেন? বড়ই হাস্যকর। সর্বযায়গায় বিরাজমান এর মানে হইল নাপাক প্রাণীর মাঝেও উনার অবস্থান। তা হইলে কিভাবে উনি নিষ্কলুষ অথবা অতি পবিত্র থাকেন, অন্তত আমার বোধগম্য হইল না। সাধারন পবিত্রতা সাময়িক হইতেও পারে কিন্তু অতি পবিত্র স্থায়ী, সেক্ষেত্র উনি অতি পবিত্র হইলেন কিভাবে?

৫. আস-সালামঃ নিরাপত্তা দানকারী বা শান্তি দানকারী। মুসলিম জাতীকে শান্তি দান করিতে করিতে এমন পর্যায়ে উনি লইয়া গিয়াছেন যেখানে শান্তির রণক্ষেত্র সৃষ্টি হইয়াছে। এমন কোন মুসলিম দেশ ম্যাপে খুজে পাওয়া যাইবে না যেখানে দাংগা, ফ্যাসাদ, হত্যা, বিদ্রোহ, বোমাবাজি, সহ যাবতীয় যতরকম অন্যায় অশান্তি হইতে পারে তাহা নাই। সিরিয়ায় হাজারো মুসলিম নারী শিশু যখন বোমা আর বন্দুকের আঘাতে জর্জারিত হইতেছে তখন মনে হয় আল্লাহ (সঃ) এর চোখের সামনে মনে হয় মুলা ঝুলাইয়া দেওয়া হইয়াছে যাহার কারনে তিনি নিরাপত্তা দিতে ভুলিয়া গিয়াছেন। অপরদিকে বন্য, মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাজারো প্রান বিনাশ হইতেছে, তাহার জন্য কাকে দায়ী করা হইবে? বর্তমান এবং অতীত আর অদুঢ় ভবিষ্যৎ, আল্লাহু আকবরই যত অশান্তির মুলে রহইয়াছে, তা হইলে উনাকে নিরাপত্তা দানকারী কিভাবে বলা হইবে?

৬. আল-মু’মিনঃ নিরাপত্তা ও ঈমান দানকারী। নিরাপত্তা দানকারী নিয়া আগেই বলিয়াছি, তাহার জন্য নতুন করে বলিতে হইবে বলে আমি মনে করি না। যাই হোক, ঈমান দানকারী প্রসঙ্গে আসা যাক। উনি যদি ঈমান দানকারী হইয়া থাকেন তাহইলে যাহাদের মধ্যে ইসলাম এর বিশ্বাস নেই অর্থাৎ নওমুসলিম (ঈমানদার নহে) তাহার জন্য ঈমানহীন ব্যাক্তি দায়ী নহে, উনি নিজেই দায়ী। এক্ষেত্রে দুযোখ আর পরকালের বিচার ভিত্তিহীন কারন নিজে দায়ী অন্যকে শাস্তিবিধান করার নিশ্চই আল্লাহ (সঃ) এর ইচ্ছা নহে। এক্ষেত্র গাণিতিক হিসাব মিলাইলে দেখা যাইবে ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে নওমুসলিম হবে ৫০০ কোটিরও বেশী। তিনি যদি ঈমান দানকারীই হইবেন তাহা হইলে উনার সৃষ্টকে কেন ঈমান দান করিলেন না, নাকি নওমুসলিমরা উনার সৃষ্টির মধ্যে নহে?

৭. আল-মুহাইমিনঃ পরিপুর্ণ রক্ষণাবেক্ষণকারী। ইহার পরিপ্রেক্ষিতে না বলিলেই নহে, উনি এতটাই পরিপূর্ণ রক্ষণকর্তা যে তিনি তাহার রক্ষণ কে পরিপূর্ণ করিবার জন্য ফেরেস্তা রাখিয়াছেন। যদি নিজেই পুর্ণ রক্ষক হইয়া থাকেন তাহলে কি নিজের পরিচালনা করিতে পারেন না। এক্ষেত্রে মনীষী আরজ আলী মাতুব্বরের মনের ভাব না দিলে পরিপূর্ণ হইবে না। উনার ভাষায়,
“আল্লাহতা’লা আরশে “কুরছির” উপর বসিয়া রেজওয়ান নামক ফেরেস্তার সাহায্যে বেহেস্ত,মালেক নামক ফেরেস্তার সাহায্যে দোজখ,জেব্রাইলের সাহায্যে সংবাদ এবং মেকাইলকে দিয়া খাদ্য বণ্টন ও আবহাওয়া পরিচালনা করেন — তখনই মন ধাধাঁয় পড়ে,বৃদ্ধি বিগড়াইয়া যায়। মনে প্রশ্ন জাগিতে থাকে — নিরাকার সর্বশক্তিমান ভগবানের সৃষ্টি পালনে সাকার হইতে হইবে কেন? অদ্বিতীয় ঈশ্বরের মহত্ত্ব প্রকাশে ত্রিত্বের আবশ্যক কি? সর্বব্যাপী আল্লাহ্তা’লার স্থায়ী আসনে অবস্থান কিরূপ এবং বিশ্বজগতের কার্য পরিচালনার জন্য ফেরেস্তার সাহায্যের আবশ্যক কি?”
পরিপূর্ণ রক্ষন নিজে হইলে উনাদের প্রয়োজন কেন, আমারো মনে প্রশ্নোদয় হইল।

৮. আল- খালিক্ব- সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টিকর্তা নিয়েই যত জল্পনাকল্পনা। সৃষ্টিকর্তার যদি আদৌ কোন অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকিত তাহলে ১৪০০ বছর পার হওয়ার ভিতর কোন না কোন সারা মিলিত। এই বিষয় নিয়া হাজারো বৈজ্ঞানিক মতবাদ রহিয়াছে। এক্ষেত্রে মুক্তমনার অভিজিৎদার দৃষ্টিভংগি আমার মনে ধরিয়াছে।

সবকিছুরই তো একটা সৃষ্টিকর্তা আছে, তাই না? আমাদের এই জটিল বিশ্ব কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্ট হওয়া সম্ভব?
সবকিছুরই যদি একটা সৃষ্টিকর্তা থাকে – আর কোন কিছুই যদি স্রষ্টা বা ঈশ্বর ছাড়া সৃষ্টি হতে না পারে, তবে স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, ঈশ্বরকে বানালই বা কে? কোথা থেকেই বা তিনি এলেন? বিশ্বাসীরা সাধারণত এই ধরনের প্রশ্নের হাত থেকে রেহাই পেতে সোচ্চারে ঘোষণা করেন যে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ। তার তার উদ্ভবের কোন কারণও নেই। তিনি অনাদি-অসীম। এখন এটি শুনলে অবিশ্বাসীরা/যুক্তিবাদীরা স্বভাবতই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে চাইবেন, ‘ঈশ্বর যে স্বয়ম্ভূ তা আপনি জানলেন কি করে? কে আপনাকে জানালো? কেউ জানিয়ে থাকলে তার জানাটিই যে সঠিক তারই বা প্রমাণ কি? আর যে যুক্তিতে ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ বলে ভাবছেন, সেই একই যুক্তিতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেরও সৃষ্টি স্রষ্টা ছাড়া এটি ভাবতে অসুবিধা কোথায়?’ আসলে মুক্ত-মনারা মনে করেন এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে কোন পরম পুরুষের হাতের ছোঁয়ায় নয়, বরং নিতান্তই প্রাকৃতিক নিয়মে। সব কিছুর পেছনে সৃষ্টিকর্তা থাকতে হবে, কিংবা সব ঘটনার পেছনেই কারণ থাকতে হবে, এটি স্বতঃসিদ্ধ বলে ভাবে নেওয়ার আসলেই কোন যৌক্তিক কারণ নেই। আকাশে যখন ‘সন্ধ্যার মেঘমালা’ খেলা করে, কিংবা একপশলা বৃষ্টির পর পশ্চিম আকাশে উদয় হয় রংধনুর, আমরা সত্যই মুগ্ধ হই, বিস্মিত হই। কিন্তু আমরা এও জানি এগুলো তৈরি হয়েছে স্রষ্টা ছাড়াই পদার্থবিজ্ঞানের কিছু সূত্রাবলী অনুসরণ করে। এছাড়া পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা সকলেই জানেন, রেডিও অ্যাকটিভ ডিকের মাধ্যমে আলফা বিটা, গামা কণিকার উদ্ভব হয় প্রকৃতিতে কোন কারণ ছাড়াই, স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এছাড়াও ‘ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন’ এর ঘটনাও একটি কারণবিহীন ঘটনা বলে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে অনেক আগে থেকেই স্বীকৃত। বহু পদার্থবিজ্ঞানীই বহু গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে দেখিয়েছেন যে, ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে শূন্য থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশ্বজগৎ তৈরি হওয়া কোন অসম্ভব বা অলৌকিক ব্যাপার নয়, এবং এভাবে বিশ্বজগৎ তৈরি হলে তা পদার্থবিজ্ঞানের কোন সূত্রকেই আসলে অস্বীকার করা হয় না। সেসব গবেষণাপত্র পদার্থবিজ্ঞানেরই নামী দামী জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এবং লিওনার্ড ম্লোডিনো তাদের সাম্প্রতিক গ্র্যাণ্ড ডিজাইন (২০১০) বইয়ে বলেছেন,

‘মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সূত্রের মতো পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র কার্যকর রয়েছে, তাই একদম শূন্যতা থেকেও মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্ভব এবং সেটি অবশ্যম্ভাবী। ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি’ হওয়ার কারণেই ‘দেয়ার ইজ সামথিং, র‌্যাদার দ্যান নাথিং’, সে কারণেই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে, অস্তিত্ব রয়েছে আমাদের। মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় বাতি জ্বালানোর জন্য ঈশ্বরের কোন প্রয়োজন নেই ।’

সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা থাকিতেই হইবে, এমনটা হইলে আমারো জানার আগ্রহ জন্মাইতে পারে, সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করিল?

৯. আল-গফফারঃ পরম ক্ষমাশীল। ক্ষমার দিক বিবেচনা করিলে আল্লাহ (সঃ) নাকি পরম ক্ষমাশীল। এর মানে যেই সেই ক্ষমা না, গনহারে ক্ষমা। যে যাহাই করুক না কেন, মুমিনরা গলা কেটে হত্যা করুক অথবা বোমাবাজি করে গণহত্যাই করুক না কে তাহাদিগকের জন্য রহিয়াছে পরম ক্ষমা। যদি পরম ক্ষমাশীল হইয়া থাকেন তাহা হইলে অবান্তর বিচার এর ব্যাবস্থাইবা কেন করা হইবে। কারন পরম ক্ষমাশীল যিনি তিনিতো গনহারেই ক্ষমা করিবেন। তাহা হইলে জাহান্নামে যাইবে কে, আর সুবিচারই বা হইবে কিভাবে? গরমিল।

চলতে থাকবে….

বৃত্তবন্দি

"মুর্খরা প্রার্থনায় আর জ্ঞানীরা কাজে বিশ্বাসী।"(ময়নুল)

2 thoughts on “নড়বড়েঃ ৯৯ এ নয় ছয় (পর্বঃ ১)

  • March 31, 2018 at 4:01 PM
    Permalink

    bravo!!! keep writing

    Reply
  • February 12, 2019 at 5:39 PM
    Permalink

    ধন্যবাদ

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *