ঈশ্বর না থাকলে “অধিকার” কোথা থেকে আসে?

অধিকার

প্রশ্নঃ ঈশ্বর না থাকলে অধিকার কোথা থেকে আসে?

উত্তরঃ সমাজ থেকেই আমাদের সকল অধিকার তৈরি হয়।

কথাটা হয়তো খানিকটা অস্বাভাবিক লাগতে পারে, তবে বিষয়টি না বুঝেই কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে, পুরো আলোচনাটি পড়ে দেখুন। সবার আগে আমাদের বুঝতে হবে যে ‘অধিকার’ বলতে আসলে কি বুঝায়। এ হলো সমাজ থেকে পাওয়া একটি অনুমোদন, যেমনঃ একজন মানুষ কি কি করতে পারে। অধিকার মানে এটা নয় যে আপনার কি করতে পারা উচিত, বরং এটা যে আপনি কি করতে পারেন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমেরিকা সরকার আমেরিকানদের জন্য বাক-স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করে। একজন মানুষের অধিকার তার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। একজন মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার তখনই আর থাকবে না যখন সে এমন একটি দেশে প্রবেশ করবে যেখানে মতপ্রকাশের অধিকার নেই।

যদি বলেন আমেরিকা একটি খ্রিস্টান প্রধান দেশ হওয়ায় আমেরিকানরা বাইবেল থেকে তাদের অধিকারসমূহ পেয়েছে, তাহলে কথাটা পুরোপুরি ভুল হবে।  কারণ, বাইবেলে কোথাও বাক স্বাধীনতার অধিকার (Right to free speech) দেওয়া হয়নি, ন্যায্য প্রক্রিয়ার প্রক্রিয়াধীন (Right to due process) হবার অধিকার দেয়া হয়নি কিংবা  আইনগত প্রক্রিয়ায় নীরব থাকার অধিকার (Right to silence) দেয়া হয়নি। এসব অধিকার এসেছে সেই দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে যারা তা লিখেছে, বাইবেল থেকে নয়। আমরা নিজেরাই এভাবে নিজেদের নাগরিক অধিকার সৃষ্টি করতে পারি, যেখানে অলৌকিক সত্তাকে ডেকে আনার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা প্রজাতি হিসেবে নিজেরাই নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ।

অনেকে এমন ধারণা পোষণ করে থাকে যে অধিকার বলতে কিছু নেই বা তা অবৈধ  (not valid) – যদি না তা একজন সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব (supreme authority) কিংবা তথাকথিত ঐশ্বরিক উৎস (ultimate source) থেকে না আসে। তারা হয়তো আংশিক ভাবে সত্য – কারণ কাগজে লিখিত না হলে অধিকার কার্যকর হয় না।

যাইহোক, মানুষের অধিকারের বিষয়টি মানব সমাজই ধীরে ধীরে গড়ে তোলে। যখন দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল, দাসদের কোন অধিকার ছিল না, সেই সিস্টেম মানুষই পরিবর্তন করে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেছে। পৃথিবীর কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করার মত গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি। বা ধরুন, নারী পুরুষ কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের নাগরিক হিসেবে সমান অধিকারের বিষয়টি। মানুষই ক্রমাগত বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে, বিভিন্ন ত্রুটি সংশোধন এবং আধুনিক মননশীলতা ও শিক্ষাদীক্ষার বিকাশের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের নানা মূল্যবোধ ধীরে ধীরে তৈরি করেছে। তাই অধিকারের বিষয়টি কোন কল্পিত অলৌকিক সত্ত্বা দ্বারা নির্ধারিত নয়, ঐশ্বরিক নয়, ইহলৌকিক এবং খুবই বাস্তব মানব সমাজের আলোচ্য ও নির্ধারণের বিষয়।

Leave a Comment