১. এন অফার ইউ ক্যান্ট রিফিউজ
একটি চাকরির ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য অনেকক্ষণ ধরে একটি হলরুমে বসে আছি। ইন্টারভিউ বোর্ডে তিনজন আমার ইন্টারভিউ নেবেন। শার্ট ইস্ত্রি করে টাই লাগিয়ে মোটামুটি ফিটফাট হয়ে এসেছি। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে ভেতর থেকে আমার ডাক এলো। খুব মার্জিত ভঙ্গিতে রুমে ঢুকেই স্যারদের সুপ্রভাত জানালাম। আমাকে বসতে বলা হলো, বসলাম। এরপরে আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা শুরু হলো।
শুরুতেই তারা জানিয়ে দিলো, কাকে চাকরিতে নেবে, কাকে নেবে না, তা পূর্ব নির্ধারিত। মানে, আগে থেকেই উনারা ঠিক করে রেখেছেন। এরপরে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, হাই এনার্জি ফিজিক্সের কিছু প্রশ্ন। আমি উত্তর দিতে শুরু করবো, তখনই তারা আমাকে থামিয়ে দিলেন। থামিয়ে দিয়ে বললেন, উত্তর দেয়ার জন্য তোমাকে ফ্রি উইল দেয়া হয়েছে। তবে তুমি যেমন উত্তরই দাও না কেন, আমরা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছি তোমাকে চাকরিতে নেয়া হবে কিনা। যদি আমরা আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখি, তোমাকে চাকরিতে নেবো না, তাহলে এমন এমন প্রশ্ন করবো, যার উত্তর তুমি দিতে পারবে না। মানে তোমার পরীক্ষাটা কঠিন হবে। আর যদি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখি, তোমাকে নেবো, তাহলে প্রশ্ন হবে সহজ [1]। বুঝতে পেরেছো?
আমি অবাক হয়ে তাদের কথা শুনছিলাম। এ আবার কেমন পরীক্ষা? এ কেমন ইন্টারভিউ? এটা তো জোচ্চুরি মনে হচ্ছে আমার কাছে। এরা কীভাবে এইরকম কথা বলছে! অবাক কাণ্ড। ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রত্যেক ক্যান্ডিডেটের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সমান থাকা উচিত। নইলে এত তো অবিচার। তারপরেও আমি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে লাগলাম। যা জানি তা বলতে লাগলাম। আমার সাথে কয়েকজন এসেছিলেন, তারা চাকরি পান নি। তাদের মধ্যে অনেকেই অনেক পড়ালেখা করে এসেছিলেন। কিন্তু কেন জানি চাকরি হলো না। আমি অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম, অনেকগুলোর পারলাম না। এরপরে তারা জিজ্ঞেস করলেন, আমার বাবা মা কী করেন? আমি বললাম, আমার বাবা মা এই অফিসেরই পুরনো কর্মচারি। এই কথা শুনে তারা হাসতে হাসতে বললেন, তা আমরা জানি। এবং এই কারণেই তোমার চাকরিটা হচ্ছে। তুমি চাকরি পেয়েছো। এতক্ষণ তোমাকে প্রশ্ন করলাম এমনিতেই। ওগুলো দেখাবার জন্য পরীক্ষা। সিদ্ধান্ত তো আগেই নেয়া। আমরা আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম, তোমাকেই চাকরিটা দেয়া হবে। কারণ তোমার বাবা মা আমাদের বসকে অনেক তোষামোদ করতো, তুমি সেই শিক্ষা পেয়ে বড় হয়েছো। তুমিও একইভাবে আমাদের বসকে তোষামোদ করবে, আমরা জানি। এই নাও চাকরির নিয়োগপত্র।
তাদের কথা শুনে আমি আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম। এসব কী বলছে এরা? তাহলে এত সুন্দর করে শার্ট ইস্ত্রি করে আসলাম, এত পড়ালেখা করে আসলাম, এত প্রশ্নের জবাব দিলাম, এগুলোর মানে কী? যদি আগে থেকেই সব নির্ধারণ করা থাকে, তাহলে পরীক্ষার নামে এইসব তামাশা কেন? যাইহোক, চাকরি পেয়েছি এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। সাইন করার জন্য চাকরির নিয়োগপত্রটি দেখলাম। চোখ আটকে গেল খুব ছোট করে একটা লাইনের দিকে। সেখানে লেখা, এই চাকরি ছাড়া যাবে না। আজীবনের জন্য এই চাকরি করতে হবে। চাকরি ছাড়লে আমাকে হত্যা করা হবে[2] [3]। খুব নৃশংস কায়দায় আমাকে জবাই করা হবে! পড়তে পড়তে আমি ভয়ে উত্তেজনায় উঠে দাঁড়াতে গেলাম। কিন্তু তারা বললো, আরে থামো থামো, এত উত্তেজিত হয়ো না। এই চাকরিতে অনেক সুযোগ সুবিধা। চাকরি শেষে পেনশন হিসেবে পাবে জান্নাতুল ফেরদৌস নামক একটি আবাসিক এলাকায় বিশাল একটি বাড়ি। সেই বাড়িতে ৭২ টি সুন্দরী সেবিকা। তাদের সাথে যত খুশী সেক্স করার সুযোগ। এই রকম চাকরি আর কোথায় পাবে বলো? তাছাড়া তোমাকে এই চাকরি নিতেই হবে। আর কোন উপায় নেই। নইলে তোমাকে ছাড়া হবে না।
আমি এই হুমকি শুনে একটু ভয় পেলাম। ভয়ে যন্ত্রের মত চাকরির নিয়োগপত্রে সাইন করলাম। সাইন করে বাইরে বের হয়ে আসতেই, মনে হলো, মস্তবড় ভুল হয়ে গেছে। এ আমি কী করলাম?
২. পুর্ব নির্ধারিত পাপপুণ্যসমূহ
নতুন চাকরিতে জয়েন করেই বসের রুমে গিয়ে ঢুকলাম। বস বললেন, কাজ করার ক্ষেত্রে তোমাকে ফ্রি উইল দেয়া হলো। তুমি ভাল কাজ করলে প্রমোশন, খারাপ করলে ডিমোশন। তবে ভাল কাজ খারাপ কাজ যাই করো, সবার প্রমোশন ডিমোশন আমি আগে থেকেই নির্ধারিত করে রেখেছি। আমি সব আগেই ঠিক করে আমার ডায়েরিতে লিখে ফেলেছি। তবে ডায়েরিতে কী লিখেছি, তা এখন তোমাকে বলা যাবে না। বললে তো জেনেই যাবা। সেটা গোপন।
আর শোনো, তোমাকে হেদায়েতের মালিক শুধুমাত্র আমি। আমি হেদায়াত না দিলে তুমি ভাল কাজ করতে পারবা না। আর তোমার অন্তরে মোহর মেরে দিলে তোমার ভাল কাজ করার উপায় নাই, খালি খারাপ কাজই করবা। এগুলো একেবারেই আমার ইচ্ছাধীন। যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দিই, যাকে ইচ্ছা অন্তরে মোহর মেরে দিই। তোমাকে যদি হেদায়াত দিই, তাহলে তুমি ভাল কাজ করবা, এবং প্রমোশন পাবা। আর মোহর মেরে দিলে তুমি চাইলেও ভাল কাজ করতে পারবা না। ফলাফল হিসেবে পাবা ডিমোশন। বুচ্ছো বাপধন?
আর শোনো, আমার একটা স্পেশাল চামচা আছে, যে তোমাকে ঠিকমত কাজ করতে দেবে না। সব কাজে সমস্যা তৈরি করবে। তাকে স্পেশাল ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তোমাকে ধোঁকা দেয়ার। আমিই তাকে সেই ক্ষমতা দিয়েছি। তার থেকে দূরেই থেকো। সে সব কাজে ঝামেলা করবে। তখন শুধু আমারে ডাকবা। আমি ইচ্ছা হলে তার থেকে তোমাকে রক্ষা করবো, ইচ্ছা না হলে করবো না। সেটাও আমার ইচ্ছাধীন বিষয়। আমার যদি ইচ্ছা না হয়, যদি আমার চামচার ধোঁকায় পরে কোন গ্যাঞ্জাম করো, তাহলে পাবা ডিমোশন।
আরেকটা কথা। নিশ্চয়ই আমি ন্যায়বিচারক। নিঃসন্দেহে আমি মহান এবং সবচেয়ে শক্তিশালী। আমার বিচার আচার নিয়ে সন্দেহ সংশয় কিংবা ভ্যাজাল করলে চাকরি নট। খুব সাবধান। এইসব বিষয়ে নিয়ে খুতখুত করবা না৷ তাইলে খবর আছে৷ যদি ঠিকমত চাকরি করো, তাহলে অফিসের বার্ষিক পার্টিতে যেতে পারবা। সাথে পেনশন হিসেবে পাবা জান্নাতুল ফেরদৌস নামক আবাসিক এলাকায় একটি বিশাল ফ্ল্যাট বাড়ি। সেটা হচ্ছে একটা গ্রান্ড সেক্স পার্টি এরিয়া। এক একজনকে সেখানে ৭২ টা করে মেয়ে দেয়া হবে, এবং সাথে আনলিমিটেড মদ। যত ইচ্ছা সেক্স করবা। এক একটা মেয়ের স্তন হচ্ছে খাড়া এবং উঁচু। এগুলা পাবা যদি আমার চামচামি ঠিকমত করতে পারো। আর যদি চাকরি ছেড়ে পালাও, তাহলে অন্য কর্মচারিরা তোমার কল্লা ফেলে দেবে। কারণ মনে রাখবা, আমিই সবচেয়ে করুণাময়।
তোমার বাবা মাও সেখানেই আছেন। উনারা মহা সুখে মহা আনন্দে আছেন। তারাও এই অফিসেই চাকরি করতো। তবে তুমি কখনই তাদের সাথে কথা বলতে পারবা না। জিজ্ঞেস করতে পারবা না, তারা আসলেই জান্নাতুল ফেরদৌস এলাকায় বিশাল ফ্ল্যাট বাড়ি পেয়েছে কিনা। তোমার এগুলো বিশ্বাস করতে হবে। বিশ্বাস না করলে চাকরি নট। আর চাকরি নট হলে কী তা জানো নিশ্চয়ই! চাকরি ছাড়ার কথা স্বপ্নেও ভেবো না। তাহলে আমার অন্য কর্মচারিরা তোমকে জবাই করে ফেলবে। এটাই এই অফিসের নিয়ম।
আরো শোনো। সারাক্ষণ আমাকে তোষামোদ করতে হবে। আমার পায়ে তেল মালিশ করবা দিনে পাঁচবার। ঠিকমত তেল দিতে পারলে, চামচামি করতে পারলে, সব কাজে জ্বী হুজুর বলতে পারলে, ভাল কাজ করো কী মন্দ কাজ যাই করো, প্রমোশন পাবা। আর বিধর্মীরা মানে আমার বিরোধীরা যারা আমারে তেল দিবে না, চামচামি করবে না, তারা যত ভাল কাজই করুক, প্রমোশন পাবে না। আমাকে তেল মালিশ করাই মূখ্য, ভাল কাজ মন্দ কাজ পরের বিষয়। কারণ আমি ন্যায় বিচারক। বুঝতে পেরেছো? এইগুলা সব ভালভাবে মনে রাখবা।
এবারে শোনো, অফিসে আমার প্রেরিত কিছু চামচা আছে, একজন আছে আখেরি চামচা। তার আবার একটু আলুর দোষ আছে। অফিসে মেয়ে দেখলেই তার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে ৯ বছরের মেয়ে দেখলে বেটার আবার মাথা ঠিক থাকে না৷ একই সাথে ১৩ জন মেয়ের সাথে প্রেম করে৷ জনি সিন্সের বাপ সে৷ তাকে দেখলেই সালাম দিবা৷ সম্মান করবা৷ তাকে অনুসরণ করবা৷ সে আবার অফিস ক্লিনার কাজের মেয়েগুলোর সাথে মাঝে মাঝেই চিপায় যায়। চিপায় গিয়ে কী করে সেসব নিয়ে কানাঘুষা করবা না। সেই নিয়ে কিছু বলবা না। কারণ সে যা করে আমার হুকুমেই করে৷ তার আত্মীয়স্বজন সবাইকে আমি অফিসের ভাল পদগুলো দিয়েছি। আবার বইলো না এই অফিসে স্বজনপ্রীতি হয়। সব মাথায় ঢুকছে?
সবকথা শুনে আমি হতভম্বের মত মাথা নাড়তে লাগলাম। বুঝতে পারলাম না, এরকম লোকের আন্ডারে চাকরি করা ঠিক হবে কিনা। এই বস তো দুনিয়ার হারামি। এই বসের স্পেশাল চামচাগুলা তো আরো বড় হারামি।
আপনারা কী বলেন? এই বসের আন্ডারে চাকরি করবো? বুঝতে পারছি না। চাকরি ছাড়লে নাকি কল্লাও থাকবে না। কী যে করি!
তথ্যসূত্রঃ
আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।
কোরআন ১৮:১৭
যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
কোরআন ৭:১৭৮
গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
হাদিস নম্বরঃ (7454)
অধ্যায়ঃ ৯৭/ তাওহীদ
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৯৭/২৮. আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এ কথা আগেই স্থির হয়ে গেছে। (সূরাহ আস্ সাফফাত ৩৭/১৭১)
৭৪৫৪. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি ‘সত্যবাদী’ এবং ‘সত্যবাদী বলে স্বীকৃত’ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি হলো এমন বীর্য থেকে যাকে মায়ের পেটে চল্লিশ দিন কিংবা চল্লিশ রাত একত্রিত রাখা হয়। তারপর তেমনি সময়ে আলাক হয়, তারপর তেমনি সময়ে গোশতপিন্ডে পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ্ তার কাছে ফেরেশতা প্রেরণ করেন। এই ফেরেশতাকে চারটি বিষয় সম্পর্কে লেখার করার জন্য হুকুম দেয়া হয়। যার ফলে ফেরেশেতা তার রিযক, ‘আমাল, আয়ু এবং দুর্ভাগা কিংবা ভাগ্যবান হওয়া সম্পর্কে লিখে দেয়। তারপর তার মধ্যে প্রাণ ফুঁকে দেয়া হয়। এজন্যই তোমাদের কেউ জান্নাতীদের ‘আমাল করে এতটুকু এগিয়ে যায় যে, তার ও জান্নাতের মাঝে কেবল এক গজের দূরত্ব থাকতেই তার ওপর লিখিত তাক্দীর প্রবল হয়ে যায়। তখন সে জাহান্নামীদের ‘আমাল করে। শেষে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ জাহান্নামীদের মত ‘আমাল করে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক গজের দূরত্ব থাকতে তার উপর তাকদীরের লেখা প্রবল হয়, ফলে সে জান্নাতীদের মত ‘আমাল করে, শেষে জান্নাতেই প্রবেশ করে। (৩২০৮) (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ (6946)
অধ্যায়ঃ ৮৬/ জাহ্মিয়াদের মতের খণ্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ৩১৩০. আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এ বাক্য পূর্বেই স্থির হয়েছে। (৩৭ঃ ১৭১)
৬৯৪৬। আদম (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি সত্যবাদী এবং সত্যবাদী বলে স্বীকৃত আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি হল এরূপ বীর্য থেকে যাকে মায়ের পেটে চল্লিশ দিন কিংবা চল্লিশ রাত একত্রিত রাখা হয়। তারপর অনুরূপ সময়ে আলাক হয়, তারপর অনুরূপ সময়ে গোশতপিন্ডে পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ তা’আলা তার কাছে ফেরেশতা প্রেরণ করেন। এই ফেরেশতাকে চারটি জিনিস সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করার জন্য হুকুম দেয়া হয়। যার ফলে ফেরেশতা তার রিযিক, আমল, আয়ু এবং সৌভাগ্য কিংবা হতভাগ্য হওয়া সম্পর্কে লিখে দেয়। তারপর তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করা হয়। এজন্যই তোদের কেউ জান্নাতীদের আমল করে এতটুকু অগ্রগামী হয়ে যায় যে, তার ও জান্নাতের মাঝখানে মাত্র এক গজেঁর দূরত্ব থাকতেই তার ওপর লিখিত তাকদীর প্রবল হয়ে যায়। তখন সে দোযখীদের আমল করে। পরিশেষে সে দোযখেই প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ দোযখীদের ন্যয় আমল করে। এমন পর্যায়ে পৌছে যে, তার ও দোযখের মধ্যে মাত্র এক গজের দূরত্ব থাকতে তার উপর তাকদীরের লেখনী প্রবল হয়, যদ্দরুন সে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করে, ফলে জান্নাতেই প্রবেশ করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
ন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
হাদিস নম্বরঃ (3208)
অধ্যায়ঃ ৫৯/ সৃষ্টির সূচনা
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৫৯/৬. ফেরেশতাদের বর্ণনা।
৩২০৮. যায়দ ইবনু ওয়াহব (রহ.) হতে বর্ণিত। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, সত্যবাদী হিসেবে গৃহীত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান নিজ নিজ মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত বীর্যরূপে অবস্থান করে, অতঃপর তা জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়। ঐভাবে চল্লিশ দিন অবস্থান করে। অতঃপর তা গোশতপিন্ডে পরিণত হয়ে (আগের মত চল্লিশ দিন) থাকে। অতঃপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আর তাঁকে চারটি বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়। তাঁকে লিপিবদ্ধ করতে বলা হয়, তার ‘আমল, তার রিয্ক, তার আয়ু এবং সে কি পাপী হবে না নেককার হবে। অতঃপর তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেয়া হয়। কাজেই তোমাদের কোন ব্যক্তি ‘আমল করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তার এবং জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত পার্থক্য থাকে। এমন সময় তার ‘আমলনামা তার উপর জয়ী হয়। তখন সে জাহান্নামবাসীর মত আমল করে। আর একজন ‘আমাল করতে করতে এমন স্তরে পৌঁছে যে, তার এবং জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত তফাৎ থাকে, এমন সময় তার ‘আমলনামা তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতবাসীর মত ‘আমল করে। (৩৩৩২, ৬৫৯৪, ৭৪৫৪) (মুসলিম ৪৭/১ হাঃ ৩৬৪৩, আহমাদ ৩৬২৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৭৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থের নামঃ আন্-নওয়াবীর চল্লিশ হাদীস
হাদিস নম্বরঃ (4)
অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
পাবলিশারঃ ইসলাম হাউস
পরিচ্ছদঃ কোন পরিচ্ছদ নেই
৪। আবূ আব্দির রহমান আব্দুল্লাহ্ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন— রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম— যিনি সত্যবাদী ও যার কথাকে সত্য বলে মেনে নেয়া হয়— তিনি আমাদেরকে বলেছেন:
তোমাদের সকলের সৃষ্টি নিজের মায়ের পেটে চল্লিশ দিন যাবৎ শুক্ররূপে জমা হওয়ার মাধ্যমে শুরু হতে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন জমাট বাঁধা রক্তরূপে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন গোশতপিণ্ড রূপে থাকে, তারপর তার কাছে ফিরিশ্তা পাঠানো হয়। অতঃপর সে তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করায় এবং তাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য হুকুম দেয়া হয়- তার রুজি, বয়স, কাজ এবং সে কি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান।
অতএব, আল্লাহর কসম-যিনি ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই-তোমাদের মধ্যে একজন জান্নাতবাসীর মত কাজ করে(1)- এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জাহান্নামবাসীর মত কাজ শুরু করে এবং তার ফলে তাতে প্রবেশ করে।
এবং তোমাদের মধ্যে অপর এক ব্যক্তি জাহান্নামীদের মত কাজ শুরু করে দেয়- এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জান্নাতবাসীদের মত কাজ শুরু করে আর সে তাতে প্রবেশ করে।
(বুখারী: ৩২০৮, মুসলিম: ২৬৪৩)
(1) অর্থাৎ বাহ্যিক দৃষ্টিতে তার কাজটি সবার নিকট জান্নাতবাসীদের কাজ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতের কাজ করেনি। কারণ, তার ঈমান ও ইখলাসের মধ্যে কোথাও কোন ঘাটতি ছিল। (সম্পাদক)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গ্রন্থের নামঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
হাদিস নম্বরঃ (82)
অধ্যায়ঃ পর্ব-১ঃ ঈমান (বিশ্বাস)
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ – তাক্বদীরের প্রতি ঈমান
৮২-(৪) ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে স্বীকৃত আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেরই জন্ম হয় এভাবে যে, তার মায়ের পেটে (প্রথমে তার মূল উপাদান) শুক্ররূপে চল্লিশ দিন পর্যন্ত থাকে। অতঃপর তা চল্লিশ দিন পর্যন্ত লাল জমাট রক্তপিন্ডরূপ ধারণ করে। তারপর পরবর্তী চল্লিশ দিনে মাংসপিন্ডর রূপ ধারণ করে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা একজন মালাককে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য পাঠন। সে মালাক লিখেন তার- (১) ‘আমাল (সে কি কি ‘আমাল করবে), (২) তার মৃত্যু, (৩) তার রিয্ক্ব (রিজিক/রিযিক) ও (৪) তার নেককার বা দুর্ভাগা হওয়ার বিষয় আল্লাহর হুকুমে তার তাক্বদীরে লিখে দেন, তারপর তন্মধ্যে রূহ্ প্রবেশ করান। অতঃপর সে সত্তার কসম, যিনি ব্যতীত প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই! তোমাদের মধ্যে কেউ জান্নাতবাসীদের ‘আমাল করতে থাকে, এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত দূরত্ব থাকে, এমন সময় তার প্রতি তাক্বদীরের লিখা তার সামনে আসে। আর তখন সে জাহান্নামীদের কাজ করতে থাকে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে। তোমাদের কোন ব্যক্তি জাহান্নামীদের মতো ‘আমাল করতে শুরু করে, এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে। এমন সময় তার প্রতি সে লেখা (তাক্বদীর) সামনে আসে, তখন সে জান্নাতীদের কাজ করতে শুরু করে, ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। (বুখারী, মুসলিম)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ৩২০৮, মুসলিম ২৬৪৩, আবূ দাঊদ ৪৭০৮, ইবনু মাজাহ ৭৬, তিরমিযী ২১৩৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১৭৪, আহমাদ ৩৯৩৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৫/ সুন্নাহ
হাদিস নাম্বার: 4703
৪৭০৩। মুসলিম ইবনু ইয়াসার আল-জুহানী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে এ আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলোঃ ‘‘যখন তোমার রব আদম সন্তানের পিঠ থেকে তাদের সমস্ত সন্তানদেরকে বের করলেন…’’ (সূরা আল-আ‘রাফঃ ১৭২)। বর্ণনাকারী বলেন, আল-কা‘নবী এ আয়াত পড়েছিলেন। উমার (রাঃ) বলেন, আমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রশ্ন করতে শুনেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পর স্বীয় ডান হাতে তাঁর পিঠ বুলিয়ে তা থেকে তাঁর একদল সন্তান বের করে বললেন, আমি এদেরকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা জান্নাতবাসীর উপযোগী কাজই করবে।
অতঃপর আবার তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে একদল সন্তান বেরিয়ে এনে বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং জাহান্নামীদের উপযোগী কাজই করবে। একথা শুনে এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমলের কি মূল্য রইলো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন তখন তার দ্বারা জান্নাতবাসীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষে সে জান্নাতীদের কাজ করেই মারা যায়। আর আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যখন তিনি কোনো বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজ করিয়ে নেন। অবশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করে মারা যায়। অতঃপর এজন্য তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করান।(1)
সহীহ, পিঠ বুলানো কথাটি বাদে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
Leave a Comment