চিত্রশিল্প বা ছবি বিষয়ে ইসলামের বিধান
সূচিপত্র
ভূমিকা
মানুষের মনের সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ রূপ হচ্ছে শিল্পকলা। হাজার হাজার বছর আগে সেই গুহাযুগ থেকেই মানুষ নিজের মননশীলতা এবং সৃজনশীলতার প্রকাশ হিসেবে ছবি এঁকেছে, তার ভেতরে মানুষের জন্য রেখে গেছে তার চিন্তাগুলো। এর পরে যুগে যুগে লক্ষ লক্ষ বিশ্ববিখ্যাত সব শিল্পীর জন্ম হয়েছে, যারা যুগে যুগে মানুষকে ভাবতে শিখিয়েছে, মানুষের জন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থেকেছে, মানুষের মননশীলতার বিকাশ ঘটিয়েছে। লিওনার্ডো দ্যা ভিঞ্চির মোনালিসা কিংবা ভিনসেন্ট ভ্যান গখ এর চিত্রগুলো, অথবা পাবলো পিকাসোর অঙ্কন, সান্দ্রো বতিচেল্লি , মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, সালভাদর দালি, রাফায়েল, জোহানস ভারমিয়ার, অ্যাডভার্ড মাঞ্চ, পল সেজান, ফ্রিদা কাহলো, বাংলাদেশের জয়নুল আবেদীন, এস এম সুলতান কিংবা নভেরা, এরা যুগযুগ ধরে মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরে কাঁপন ধরিয়েছে, মানুষকে ভাবতে শিখিয়েছে। প্রাসঙ্গিকভাবে কয়েকটি বিশ্বখ্যাত চিত্রকর্মের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। শুরুতেই বেশ কয়েকটি অনবদ্য শিল্পকর্ম সম্পর্কে খানিকটা জেনে নিই। উল্লেখ্য, ইসলামে অন্যান্য সকল সৃজনশীল, মননশীল কাজের মতই চিত্রশিল্প সম্পর্কেও কঠোর নিয়ম আরোপ করেছে। আজকের আলোচ্য বিষয় সেইটিই।
প্রাচীন চিত্রশিল্প বা ছবি
গুহাচিত্র হল সেই সব চিত্র যা প্রাচীন গুহার দেয়াল বা ছাদে আবিষ্কার করা হয়েছে। বিশেষ করে সেই সকল চিত্রকর্ম যা প্রাগৈতিহাসিক কালে মানুষেরা প্রায় ৪০,০০০ হাজার বছর আগে (আনুমানিক ৩৮,০০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দ) অঙ্কন করেছিল। এশিয়া ও ইউরোপে এই গুহা চিত্রগুলি পাওয়া গিয়েছে। পুরাতন প্রস্তরযুগের এই সকল চিত্রকর্ম ঠিক কি কারণে অঙ্কন করা হয়েছিল তা জানা যায়নি। সংগৃহিত প্রমাণাদি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে নিছক গৃহসজ্জার জন্য এই চিত্রগুলো অঙ্কন করা হয়নি। কারণ, এই গুহাগুলি বা তার আশেপাশে মানুষের কোন বসতি থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া প্রায়ই সব গুহাই খুব দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। ধারণা করা হয়, গুহাচিত্র দ্বারা প্রগৈতিহাসিক মানুষেরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করত। যদিও অনেকে আবার মনে করেন যে এগুলো সম্পূর্ণ ধর্মীয় বা আনুষ্ঠানিকতার কাজে ব্যবহৃত হত। প্রায় সবগুলো চিত্রই একই রকম যেখানে পশু হচ্ছে প্রধান উপজিব্য বিষয়।
প্রায় ১৭ হাজার বছর আগে অঙ্কিত এই চিত্রশিল্পটি এখনো মানুষকে মুগ্ধ করে। এই চিত্রটি যে সেই প্রাচীন যুগের মানুষের চিন্তার প্রকাশ ঘটায় তাই নয়, এটি একটি বৈজ্ঞানিক গবেষনারও উৎস বটে। কারণ এসব শিল্পকর্ম থেকে আমরা সেই সময়ের সমাজের অবস্থা, নিয়ম কানুন সহ অনেক কিছুই গবেষণার কাজে পেয়ে থাকি। আসুন কিছু প্রাচীন শিল্পকর্মের সাথে পরিচিত হই।
প্রাচীন মিশর থেকেও অনেক চিত্রাবলী পাওয়া যায়। এই চিত্রগুলো থেকে সেই সময়ের মানুষের অবস্থা, জীবন যাপন, সমাজ এবং ফারাওন বা রাজাদের জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারা সম্ভব হয়েছে।
মধ্য/আধুনিক যুগের ছবি বা শিল্পকর্ম
মোনা লিসা (ভুলভাবে মোনালিসা) একটি বিশ্বখ্যাত চিত্রকর্ম। ইতালীর শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ১৬ শতকে এই ছবিটি অঙ্কন করেন। ধারণা করা হয়, বিখ্যাত এই ছবিটি মোনা লিসার দ্বিতীয় পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ স্মরণে অঙ্কিত হয়। বর্তমানে এটি প্যারিস শহরের ল্যুভ জাদুঘরে রাখা আছে। এটি ছিল শিল্পীর সবচেয়ে প্রিয় ছবি এবং তিনি সবসময় এটিকে সঙ্গেই রাখতেন। আর তিনি নিজেই বলতেন এটি হলো আমার সেরা শিল্পকর্ম।
হুইস্টলারের ‘মাদার’ শিল্পকর্মটি মানব ইতিহাসের অন্যতম একটি বিখ্যাত চিত্র। এটি মহান চিত্রকর হুইস্টলার তার নিজের মাকে উদ্দেশ্য করেই এঁকেছিলেন বলে জানা যায়।
চিত্রশিল্পের ইতিহাসে অনন্য সাধারণ এক নাম ভিনসেন্ট ভ্যান গখ। তার অনন্য সাধারণ এক সৃষ্টিকর্ম হচ্ছে ‘দ্য স্টারি নাইট’। গখ তার জীবনকালের প্রায় শেষের দিকে মেন্টাল এসাইলামে বসে এ ছবিটি এঁকেছিলেন। এই ছবিটা আঁকার কিছু দিনের মধ্যেই তিনি আত্মহত্যা করেন। তিনি বিশ্ববিখ্যাত এই ছবিটাকে তার একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
রেনেসাঁর যুগে বতিচেল্লি ছিলেন অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ প্রতিভা। বার্থ অব ভেনাস নামক এই ছবিতে ঠিক মাঝে প্রেমের দেবী ভেনাসকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় একটি ঝিনুকের খোলের উপর। যেটি সমুদ্র থেকে উঠে এসেছে। তাঁর ডানে জিউসের তিন কন্যার একজন, তিনি অপেক্ষা করছেন ভেনাসের জন্য – হাতে ধরা আছে লাল চাঁদর। অন্যপাশে যুগল জেফাইর ফুঁ দিয়ে গোলাপ পাঠিয়ে দিচ্ছে ভেনাসের দিকে।
মিকেলেঞ্জেলো রেনেসাঁস যুগের একজন ইতালীয় ভাস্কর,চিত্রকর,স্থপতি এবং কবি। তার পুরো নাম মাইকেলেঞ্জেলো দি লোদোভিকো বুওনারোত্তি সিমোনি। তার বৈচিত্রময়তার ব্যাপ্তি এবং বিস্তৃতির কারণে মিকেলাঞ্জেলোকে রেনেসাঁ মানব বলে বর্ণনা করা হয়। মিকেলাঞ্জেলোর জীবৎকালেই তাকে শ্রেষ্ঠ জীবিত শিল্পী হিসাবে বিবেচনা করা হত, এবং ইতিহাসেও তাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের একজন হিসাবে ধরা হয়। তার এই শিল্পকর্মটি পৃথিবীর সবচাইতে বিখ্যাত শিল্পকর্মের একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে ঈশ্বর এবং মানুষ পরস্পর আঙ্গুল ছুঁয়ে আছে। খেয়াল করলে দেখবেন, ঈশ্বরের বাসস্থানের অংশটি অনেকটাই মানুষের মস্তিষ্ক আকৃতির।
পাবলো পিকাসোর একটি অসাধারণ শিল্পকর্ম হচ্ছে এই ড্রিম ছবিটি। লক্ষ্য করলে দেখবেন, একজন নারী ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে, মৃদু হাসছে। স্বপ্নে সে কি দেখছে, সেটি চিত্রটি ভালভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন।
সালভাদোর দালিছিলেন একজন খ্যাতিমান স্পেনীয় পরাবাস্তববাদী চিত্রকর। ১৯৩১ সালে তিনি এঁকেছিলেন দ্য পারসিসটেন্স অব মেমোরি নামের এই বিখ্যাত চিত্রটি। বহুল আলোচিত এই ছবির অন্যতম মূল আকর্ষণ ঘড়ি। পটভূমিতে দেখা যায় সমুদ্রের তীর ঘেষে পাহাড় স্থির অনড় দাঁড়িয়ে। একটা টেবিলে গাছের কান্ডে ঝুলন্ত ঘড়ি। কিছু আকৃতি, কিছু ছোট অবজেক্ট। তবে সবচেয়ে চোখে পড়ে ৪টা পকেট ঘড়ি যা বিচিত্র ভাবে পরে আছে চার জায়গায়। তিনটি ঘড়ি যেন গলে গলে পড়ছে।
“লিবার্টি লিডিং দ্যা পিপল” ১৮৩০ সালে শিল্পি ওজেন দ্যলাক্রোয়া এর তেল রং-এ আঁকা একটি বিশ্বখ্যাত চিত্রকর্ম যা সর্বকালের সেরা চিত্রকর্মগুলোর একটি। তৎকালীন সময়কালে স্পেনের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে চিত্রটি অঙ্কিত। একহাতে পতাকা অন্য হাতে অস্ত্রসহ সামনে ধাবমান অর্ধনগ্ন নারী যাকে বিজয় ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ছবির নিচের অংশে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে মৃত সৈনিকের দেহাবশেষ।
জয়নুল আবেদিন বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী। পূর্ববঙ্গে তথা বাংলাদেশে চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু প্রচেষ্টার জন্য তিনি শিল্পাচার্য অভিধা লাভ করেন।
এস এম সুলতান বাংলাদেশের অত্যন্ত বিখ্যাত একজন চিত্রশিল্পী। উনার ছবিগুলো ফ্রান্সে অনেকবারই প্রদর্শিত হয়েছে। আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তার শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। তার ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণির দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হালও অনেকটা ফুটে উঠেছে। তার ছবিগুলোতে বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ইসলামে প্রাণীর ছবি হারাম
এবারে আসুন জেনে নেয়া যাক, ইসলাম চিত্রশিল্প কিংবা শিল্পকলা নিয়ে কি অবস্থান নেয়, তা জেনে নিই। অনেকগুলো হাদিস উল্লেখ করা হচ্ছে, তবে এখানেই শেষ নয়। ছবি আঁকা বিষয়ে আরও অসংখ্য হাদিস রয়েছে [1] [2] [3] [4] [5] [6] [7] [8] [9] [10] [11] [12] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২ঃ পোশাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ – ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৮৯-(১) আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) সে ঘরে প্রবেশ করেন না যাতে কুকুর রয়েছে এবং সে ঘরেও না যাতে আছে (প্রাণীর) ছবি। (বুখারী ও মুসলিম)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ৫৯৪৯, মুসলিম (৫৬৩৬)-২৬, আবূ দাঊদ ৪১৫৩, তিরমিযী ২৮৪, নাসায়ী ৪২৮২, ইবনু মাজাহ ৩৬৪৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩০৫৮, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার ৩৬১৮, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ১৯৪৮৩, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ১৯৯৫২।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ত্বলহা (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৪১৯. ছবি ভেঙ্গে ফেলা
৫৫২৮। মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ঘরের এমন কিছুই না ভেঙ্গে ছাড়তেন না, যাতে কোন (প্রাণীর) ছবি থাকত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৪২৩. যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
৫৫৩৫। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … সালিমের পিতা (আবদুল্লাহ ইবনু উমর) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ জিবরীল (আলাইহিস সালাম) (একবার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (আগমনের) ওয়াদা করেন। কিন্তু তিনি আসতে দেরী করেন। এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খুবই কষ্ট হচ্ছিল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে পড়লেন। তখন জিবরীলের সাথে তার সাক্ষাত হল। তিনি যে মানসিক কষ্ট পেয়েছিলেন সে বিষয়ে তার কাছে বর্ণনা করলেন। তখন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ যে ঘরে ছবি বা কুকুর থাকে সে ঘরে আমরা কখনও প্রবেশ করি না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৪১৭. ছবি
৫৫২৫। আদম (রহঃ) … আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ফিরিশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর থাকে এবং ঐ ঘরেও না, যে ঘরে ছবি থাকে।
লায়স (রহঃ) আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (এ বিষয়ে) শুনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ত্বলহা (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৪১৯. ছবি ভেঙ্গে ফেলা
৫৫২৯। মূসা (রহঃ) … আবূ যুর’আ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর সাথে মদিনার এক ঘরে প্রবেশ করি। ঘরের উপরে এক ছবি নির্মাতাকে তিনি ছবি তৈরী করতে দেখলেন। তিনি বললেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। (আল্লাহ বলেছেন) ঐ ব্যাক্তির চেয়ে অধিক যালিম আর কে, যে আমার সৃষ্টির অনুরূপ কোন কিছু সৃষ্টি করতে যায়? তা হলে তারা একটি দানা সৃষ্টি করুক অথবা একটি অণুপরিমাণ কণা সৃষ্টি করুক? তারপর তিনি একটি পানির পাত্র চেয়ে আনালেন এবং (উযূ (ওজু/অজু/অযু) করতে গিয়ে) বোগল পর্যন্ত দু’হাত ধুইলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ হে আবূ হুরায়রা! (এ ব্যাপারে) আপনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু শুনেছেন কি? তিনি বললেনঃ (হ্যাঁ, শুনেছি) অলংকার পরার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত (ধোয়া উত্তম)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যুর‘আহ ইবনু ‘আমর ইবনু জারীর (রহ.)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৪২০. ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে বসার আসন তৈরী করা
৫৫৩০। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবুক যুদ্ধের) সফর থেকে প্রত্যাগমন করলেন। আমি আমার কক্ষে পাতলা কাপড়ের পর্দা টাঙ্গিয়েছিলাম। তাতে ছিল (প্রানীর) অনেকগুলো ছবি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিড়ে ফেললেন এবং বললেনঃ কিয়ামতের দিন সে সব মানুষের সবচেয়ে কঠিন আযাব হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির (প্রানীর) অনুরূপ তৈরি করবে। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমরা তা দিয়ে একটি বা দু’টি বসার আসন তৈরি করি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৪২০. ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে বসার আসন তৈরী করা
৫৫৩১। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফর থেকে প্রত্যাগমন করেন। সে সময় আমি নকশাদার (প্রানীর) ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে (ঘরের) পর্দা লটকিয়ে ছিলাম। আমাকে তিনি তা খুলে ফেলার হুকুম করেন। তখন আমি খুলে ফেললাম। আর আমি ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই পাত্র থেকে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৫২১. ছবির উপর বসা অপছন্দনীয়
৫৫৩৩। কুতায়বা (রহঃ) … রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথী আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফিরিশতা প্রবেশ করে না। এ হাদীসের (এক রাবী) বুসর বলেনঃ যায়েদ একবার অসুস্থ হয়ে পড়ল। আমরা তার সেবা শুশ্রুষার জন্য গেলাম। তখন তার ঘরের দরজায় ছবিযুক্ত পর্দা দেখতে পেলাম। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিনা মায়মূনা (রাঃ) এর প্রতিপালিত উবায়দুল্লাহর কাছে জিজ্ঞাস করলাম, ছবি সম্পর্কে প্রথম দিনই যায়দ আমাদের কি জানায় নি? তখন উবায়দুল্লাহ বললেন, তিনি যখন বলেছিলেন তখন কি তুমি শুননি যে, কারুকার্য করা কাপড় ব্যাতিরেকে? ইবনু ওহাব অন্য সূত্রে আবূ তালহা (রাঃ) থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ত্বলহা (রাঃ)
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২ঃ পোশাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ – ছবি সম্পর্কে বর্ণনা
৪৪৯৮-(১০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক ছবি প্রস্তুতকারী জাহান্নামী। সে যতগুলো ছবি তৈরি করেছে (কিয়ামতের দিন) সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান করা হবে এবং জাহান্নামের শাস্তি দেয়া হবে। ইবনু ‘আব্বাস বলেন, যদি তোমাকে একান্তই ছবি তৈরি করতে হয়, তাহলে গাছ-গাছড়া এবং এমন জিনিসের ছবি তৈরি কর যার মধ্যে প্রাণ নেই। (বুখারী ও মুসলিম)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ২২২৫, মুসলিম ৫৬৬২, আহমাদ ২৮১০, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩০৫৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
হাদীস সম্ভার
২২/ নিষিদ্ধ কার্যাবলী
পরিচ্ছেদঃ পাথর, দেওয়াল, ছাদ, মুদ্রা ইত্যাদিতে প্রাণীর মূর্তি খোদাই করা হারাম। অনুরূপভাবে দেওয়াল, ছাদ, বিছানা, বালিশ, পর্দা, পাগড়ী, কাপড় ইত্যাদিতে প্রাণীর চিত্র অঙ্কন করা হারাম এবং মূর্তি ছবি নষ্ট করার নির্দেশ
(২১৪৬) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, প্রত্যেক ছবি (বা মূর্তি) নির্মাতা জাহান্নামে যাবে, তার নির্মিত প্রতিটি ছবি বা মূর্তির পরিবর্তে একটি ক’রে প্রাণ সৃষ্টি করা হবে, যা তাকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘যদি তুমি করতেই চাও, তাহলে গাছপালা ও নিষ্প্রাণ বস্তুর ছবি বা মূর্তি তৈরী করতে পার। (বুখারী ২২২৫, ৫৯৬৩, মুসলিম ৫৬৬২)
সাঈদ বিন আবুল হাসান বলেন, এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাসের নিকট এসে বলল, আমি ছবি (বা মূর্তি) নির্মাণ করি অতএব এ বিষয়ে আমাকে ফতোয়া দিন। তিনি বললেন, আমার কাছে এস। লোকটি তাঁর কাছে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, আরো কাছে এস। লোকটি আরো কাছে গেল। অতঃপর তার মাথায় হাত রেখে তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে যা শুনেছি তাই তোমাকে জানাব; আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, প্রত্যেক মূর্তি বা ছবি নির্মাতা দোযখে যাবে। সে যে সব মূর্তি বা ছবি বানিয়েছে তার প্রত্যেকটির পরিবর্তে এমন জীব তৈরী করা হবে যা তাকে জাহান্নামে আযাব দিতে থাকবে। ইবনে আব্বাস বলেন, আর যদি তুমি একান্ত করতেই চাও তবে গাছ ও রূহবিহীন বস্তুর ছবি বানাও। (বুখারী ২২২৫, মুসলিম ৫৬৬২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৮। পোশাক ও সাজসজ্জা
পরিচ্ছেদঃ ২৬. প্রাণীর ছবি হারাম, বিছানা ইত্যাদিতে অপদস্ত করা ছাড়া প্রাণীর ছবিযুক্ত জিনিস ব্যবহার করা হারাম; যে বাড়িতে কুকুর ও ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না
৫৪৩৬-(১০১/২১১১) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ….. আবূ যুর’আহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) এর সঙ্গে (খলীফা) মারওয়ানের গৃহে ঢুকলাম। সেখানে তিনি বহু ছবি প্রত্যক্ষ করে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “সে লোকের চেয়ে অধিকতর অত্যাচারী আর কে আছে, যে আমার সৃষ্টি সমতুল্য মাখলুক সৃষ্টি করতে চায়; (যদি তাই হয়) তাহলে তারা একটি (অনুভূতিশীল) বিন্দু সৃষ্টি করুক? কিংবা তারা (খাদ্য প্রাণ ও স্বাদযুক্ত) একটি শস্যদানা সৃষ্টি করে দেখাক? কিংবা তারা একটি মাত্র যব (এর দানা) সৃষ্টি করুক? (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৬২, ইসলামিক সেন্টার ৫৩৮০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যুর‘আহ ইবনু ‘আমর ইবনু জারীর (রহ.)
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৮। পোশাক ও সাজসজ্জা
পরিচ্ছেদঃ ২৬. প্রাণীর ছবি হারাম, বিছানা ইত্যাদিতে অপদস্ত করা ছাড়া প্রাণীর ছবিযুক্ত জিনিস ব্যবহার করা হারাম; যে বাড়িতে কুকুর ও ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না
৫৪০৬-(৮২/২১০৫) হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ….. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মাইমূনাহ্ (রাযিঃ) আমাকে বলেছেন যে, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিমৰ্ষ অবস্থায় সকালে উঠলেন। তখন মাইমূনাহ্ (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আজকে আপনার চেহারা মুবারক বিষন্ন দেখছি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জিবরীল (আঃ) আজ রাত্রে আমার সাথে সাক্ষাৎ করার অঙ্গীকার করেছিলেন, কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। জেনে রাখো, আল্লাহর কসম! তিনি (কক্ষনো) আমার সঙ্গে ওয়াদা খিলাফ করেননি। পরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সে দিনটি এভাবেই কাটালেন। এরপর আমাদের পর্দা (ঘেরা খাট)-এর নিচে একটি কুকুর ছানার কথা তার স্মরণ হলো। তিনি নির্দেশ করলে সেটি বের করে দেয়া হলো।
অতঃপর তিনি তার হাতে সামান্য পানি নিয়ে তা ঐ (কুকুর শাবক বসার) স্থানে ছিটিয়ে দিলেন। অতঃপর সূর্যাস্ত হলে জিবরীল (আঃ) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। সে সময় তিনি তাকে বললেন, আপনি তো গত রাত্রে আমার সাথে সাক্ষাৎ করার অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে আমরা (ফেরেশতারা) সে সকল গৃহে প্রবেশ করি না যে সকল গৃহে কোন কুকুর থাকে। অথবা কোন (প্রাণীর) ছবি থাকে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেদিন সকাল বেলায় কুকুর নিধনের নির্দেশ দিলেন। এমনকি তিনি ছোট বাগানের (পাহারাদার) কুকুরও মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং বড় বড় বাগানের কুকুরগুলোকে মুক্তি দিয়েছিলেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৩৩৫, ইসলামিক সেন্টার ৫৩৫২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
ইসলামে ছবি নির্মাতাদের শাস্তি
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, চিত্রশিল্পীদের কেয়ামতের দিনে কঠিনতম শাস্তি দেয়া হবে, যারা কোন জীবিত প্রাণীর ছবি এঁকেছিল [13] [14] [15] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৪১৮. ক্বিয়ামতের দিন ছবি নির্মাতাদের শাস্তি প্রসঙ্গে
৫৫২৭। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যারা এ জাতীয় (প্রানীর) ছবি তৈরি করে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে। তাদের বলা হবে তোমরা যা বানিয়েছিলে তা জীবিত কর।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৪১৮. ক্বিয়ামতের দিন ছবি নির্মাতাদের শাস্তি প্রসঙ্গে
৫৫২৬। হুমায়দী (রহঃ) … মুসলিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরুকের সাথে ইয়াসার ইবনু নুমায়রের ঘরে ছিলাম। মাসরুক ইয়াসারের ঘরের আঙ্গিনায় কতগুলো মুর্তি দেখতে পেয়ে বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে শুনেছি এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন যে, (কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি বানায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুসলিম (রহঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৫২১. ছবির উপর বসা অপছন্দনীয়
৫৫৩২। হাজ্জাজ ইবনু মিনহাল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি একবার ছবিযুক্ত গদি খরীদ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বাহির থেকে এসে এ অবস্থা দেখে) দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলেন, প্রবেশ করলেন না। আমি বললামঃ যে পাপ আমি করেছি তা থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা করছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ গদি কিসের জন্য? আমি বললামঃ আপনি এতে বসবেন ও হেলান দিবেন। তিনি বললেনঃ এসব ছবির নির্মাতাদের কিয়ামতের দিন আযাব দেওয়া হবে। তাদের বলা হবে, যা তোমরা তৈরি করেছিলে সেগুলো জীবিত কর। আর যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফিরিশতা প্রবেশ করে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
সকল মূর্তি এবং ভাষ্কর্য ধ্বংসের নির্দেশ
ইদানিং অনেক মডারেট মুসলিমই দাবী করে থাকেন, ইসলামে পুজনীয় মূর্তি ভাঙ্গা জায়েজ হলেও ভাষ্কর্য বানাতে নাকি কোন বাধা নেই! অথচ, নবী মুহাম্মদ যখন মক্কা বিজয় করেন, সেই সময়ে কাবায় একটি কবুতরের কাঠের মূর্তি ছিল। নবী নিজ হাতেই সেটি ভেঙ্গে দিয়েছেন। সেটি কোন পুজনীয় মূর্তি ছিল না। শুধুমাত্র সৌন্দর্য্য বর্ধনের মূর্তি ছিল। অর্থাৎ, ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা হলে যাবতীয় মূর্তি ভাষ্কর্যই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। [16]
এই বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, ইসলাম কোন রকমের রাখঢাক না রেখেই সকল মূর্তি এবং প্রাণীর প্রতিমূর্তি বা ভাষ্কর্য ধ্বংসের সরাসরিই নির্দেশ দেয়। বিষয়বস্তুর পরিসর বড় হওয়ার কারণে এই বিষয়ে বিস্তারিত লেখা হযেছে আলাদা একটি পোস্টে, আগ্রহী পাঠকগণ বিস্তারিত পড়তে পারেন এখান থেকে [17]।
উপসংহার
বেশিরভাগ সৃজনশীল এবং মননশীল কর্মের মত ছবি আঁকার বিষয়েই ইসলামের রয়েছে আপত্তি এবং কিছু ক্ষেত্রে একদমই নিষেধাজ্ঞা। আল্লাহ রাসুলের নাম জপ করা, আল্লাহর তোষামোদ করা, গুণগান করা, জিহাদ করা, অমুসলিমদের মুসলিম বানানো ছাড়া এই ধরণের সকল শৈল্পিক কর্মই ইসলাম নিষিদ্ধ করে। যা মানুষের মুক্ত চিন্তার বিকাশ, মননশীলতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক। অনেক মোডারেট মুসলিমই আজকাল ইসলামের এই সকল পরিষ্কার বিধান গোপন করে শিল্পকলাকে ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রচার করতে চায়, যা একেবারেই ডাহা মিথ্যা কথা। ইসলামে সকল ধরণের প্রাণীর চিত্র অংকন সরাসরি হারাম। ইসলামই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে এগুলো সবই ধ্বংস করে ফেলা ইসলামের বিধান। তাই আমাদের বেছে নেয়া জরুরি যে, আমরা আমাদের সন্তানদের শিল্পকলা শেখাবো, নাকি কাফের কতল করার ঘৃণার মন্ত্র দেবো?
তথ্যসূত্র
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৪৪৮৯ [↑]
- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৫৫২৮ [↑]
- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৫৫৩৫ [↑]
- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৫৫২৫ [↑]
- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৫৫২৯ [↑]
- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৫৫৩০ [↑]
- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৫৫৩১ [↑]
- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৫৫৩৩ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৮ [↑]
- হাদীস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ২১৪৬ [↑]
- সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), হাদিস নম্বরঃ ৫৪৩৬ [↑]
- সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), হাদিস নম্বরঃ ৫৪০৬ [↑]
- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৫৫২৭ [↑]
- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৫৫২৬ [↑]
- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৫৫৩২ [↑]
- সিরাত ইবন হিশামে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৬-৬৭ [↑]
- ধর্ম অবমাননা, সাম্প্রদায়িকতা এবং মূর্তি ভাঙ্গার সুন্নত [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"
There is a mistake in spelling in the conclusion ” যা একেবারেই ডাহা মিথ্যা কোথা”