ধর্মহিন্দুধর্ম

পদ্ম পুরাণে রামচন্দ্রের শূদ্র শম্বুক হত্যা

বাল্মীকি রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে ভগবান বিষ্ণুর অবতার রামচন্দ্রকে তপস্যার করার অপরাধেই এক শূদ্রের মুণ্ডুপাত করতে দেখা যায়। শুধু বাল্মীকি রামায়ণে নয়, কৃত্তিবাসী রামায়ণ এবং মহাভারতেও এই কাহিনীটি পাওয়া যায়। সংস্কৃত ভাষার নানা বিখ্যাত সাহিত্যিকেরাও তাদের কাব্যে রামের শূদ্র শম্বুক হত্যার ঘটনার উল্লেখ করেছেন। কালিদাস তার রঘুবংশে, ভবভূতি তার উত্তররামচরিতে এই ঘটনার উল্লেখ করেন। আমি ইতমধ্যেই আমার পূর্বের আর্টিকেলগুলোতে উল্লেখিত গ্রন্থগুলো থেকে রামের শম্বুক হত্যা সম্বন্ধে তথ্যের সরবরাহ করেছি। কিন্তু শুধুমাত্র এই সকল গ্রন্থেই নয়, অষ্টাদশ মহাপুরাণের অন্যতম পদ্মপুরাণেও রামের শূদ্র হত্যার ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ মেলে।

পদ্মপুরাণের সৃষ্টিখণ্ডের ৩৪ তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে-

“তিনি (রাম) নিয়ত ধর্মানুষ্ঠান সহকারে সকলের সুখ ও সন্তোষের অব্যাঘাতে দশশতসহস্র বৎসর রাজত্ব করিলেন। সর্বদা দান ও যুদ্ধ ব্যাপারে তিনি এরূপ লিপ্ত ছিলেন যে, এই সুদীর্ঘকাল তাহার এক বৎসরের ন্যায় অতীত হইয়াছিল। তাহার অধিকার কালে প্রজা লোকের সুখের সীমা ছিল না। এইরূপে পুত্র নির্বিশেষে প্রজাপালন করিতে করিতে একদা জনপদবাসী কোনো বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ মৃত পুত্র গ্রহণ পূর্বক রাজদ্বারে সমাগত হইলেন! এবং স্নেহাক্ষর সমন্বিত বহুবিধ করুণ বাক্যে বিলাপ ও রোদন করিয়া বলিতে লাগিল, হা বৎস! তুমি আমার এই অসীম সংসারে একমাত্র অবলম্বন! আমি বহু কষ্টে তোমার মুখকমল দর্শন ও তোমারে হৃদয়ে ধারণ করিয়া কথঞ্চিৎ সুখী হইয়াছি। না জানি আমি পূর্বদেহে কি দুষ্কর্ম করিয়াছিলাম? সেইকারণে তোমাকে অকালে মৃত্যুমুখে পতিত দেখিতে হইল? আর, আজিও তোমার যৌবন উপস্থিত বা বাল্যকাল অতিবাহ হয় নাই। তুমি এই পঞ্চবর্ষে উপনীত হইয়াছ। বুঝিলাম আমারই ভাগ্যদোষ ও দুঃখের পরিণাম বশতঃ তুমি অকালে বালককালে গমন করিলে। হা বৎস! হা ভূবনৈকভূষণ! হা মদৈকজীবত! আমি এই অসহায় বৃদ্ধ বয়সে তাদৃশ অসমুদ্রসমুদ্ভুত ভুবনদুর্লভ অমূল্য রত্নে বঞ্চিত হইয়া কিরূপে দুর্ভরভারময় ও ক্লেশময় জীবন ধারণ করিব? হা বৎস!তুমি পিতৃকার্য সমাহিত না করিয়াই কিরূপে পরলোক বাসের অভিলাষ করিলে। হা মাতঃ, হা বিধাতঃ! হা হতদিষ্ট! আমি যে তোমার পরিপালন জন্য এতদিন প্রাণপণে যত্ন ও আয়াস স্বীকার করিলাম তাহার পরিণাম কি এইরূপই বিসর্জিত হইল? অথবা দুরাচার রামের দুষ্কৃতী বশতই বৎসের আমার এইরূপ দারুণ অকাল মৃত্যু সংঘটিত হইয়াছে? যেহেতু শাস্ত্রকারেরা বলিয়া গিয়াছেন যে রাজার পাপেই ও বুদ্ধিদোষেই রাজ্য নষ্ট হইয়া থাকে। হে রাঘব! ঈদৃশ বৃদ্ধ বয়সে গুরুতর পুত্রশোক সহ্য করা কখনোই সুসাধ্য নহে। অতএব আমরা স্ত্রী পুরুষে এই মুহূর্তেই প্রাণত্যাগ করিব, সন্দেহ নাই। কিন্তু তুমি নিশ্চয় জানিও আমরা প্রাণত্যাগ করিলে তোমার রাজ্যে বাল্যহত্যা, স্ত্রীহত্যা ও ব্রহ্মহত্যার একশেষ হইবে। ব্রাহ্মণ এইরূপ ও অন্যরূপ বহুবিধ বিলাপ ও পরিতাপ করিয়া অবিরল ধারায় বাষ্পবারি বিসর্জন করিতে লাগিল। ক্রমে ক্রমে তাহার শোকসিন্ধু সমধিক উদ্বেল হইয়া উঠিল। করুণাসিন্ধু রাম সমুদায় সবিশেষ শ্রবণ করিয়া নিতান্ত ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন। এবং মৃদুল বাক্যে সেই দুঃখ শোক সমন্বিত দ্বিজাতিকে সর্বতোভাবে সান্ত্বনা করিয়া আগ্রহাতিশয় সহকারে গুরুদেব বশিষ্ঠকে সম্বোধন পূর্বক কহিলেন , ভগবন! রঘুবংশীয়গণ বিপদে সম্পদে সর্বত্রই আপনার অপার সাহায্যে অতিক্ষেপ করিয়া থাকেন। যে গুরুতর ব্যাপার উপস্থিত তাহা স্বচক্ষেই প্রত্যক্ষ করিলেন। এ বিষয়ে  কর্তব্য কি সত্ত্বর উপদেশ করুন। আমার মন উত্তরোত্তর ব্যাকুল হইয়া উঠিতেছে। হে ব্রহ্মন! আমি কি জ্বলন্ত অনলে প্রাণাহুতি দিব অথবা পর্বত হইতে ধরাতলে পতিত হইব। ভাবিয়া কিছু অবধারণ করিতে পারিতেছি না। হায়! না জানি কিরূপে আমার শুদ্ধিলাভ হইবে।

হে ভীষ্ম! দেবর্ষি নারদ তৎকালে সভামণ্ডপে বশিষ্ঠের অগ্রে আসীন হইয়াছিলেন। তিনি ভগবান রামের এই প্রকার ব্যাকুলতা দর্শন করিয়া ঋষিগণ সমক্ষে তাহারে সম্বোধন পূর্বক বলিতে লাগিলেন, হে দাশরথে, এই বালক স্বয়ং যেরূপে কালপ্রাপ্ত হইয়াছে বলিতেছি শ্রবণ কর। পূর্বে সত্যযুগে সমুদায়ই ব্রাহ্মণপ্রধান ছিল। তৎকালে ব্রাহ্মণ ব্যতিত অন্যকোনো বর্ণ তপশ্চারণ করিত না। অনন্তর ত্রেতাযুগ প্রবৃত্ত হইলে সমুদায় বর্ণ ব্রাহ্মণ পূর্বক হয় এবং ধর্মের একপাদ ক্ষীণ হইয়া যায়। অনন্তর দ্বাপর যুগের আবির্ভাবে ধর্ম পাদদ্বয়ে অবশিষ্ট এবং নীতি বৈশ্য বর্ণে সমাবিষ্ট হইয়াছে। এই যুগত্রয়ের ধর্ম এইরূপে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে যে, শূদ্র কোনোমতেই উগ্র তপশ্চারণ করিতে পারিবে না। কলিযুগেই শূদ্র যোগীতে তপস্যার সমাবেশ হইবে। কিন্তু কোনো শূদ্র দুর্বুদ্ধিপরতন্ত্র হইয়া উগ্রতর তপোনুষ্ঠান পূর্বক দিবাকরকেও সন্তাপিত করিতেছে। এই হেতু তোমার সে বধ্য হইয়াছে। হে পরন্তপ! মনুষ্যগণ দুরভিসন্ধি পরতন্ত্র হইয়া যে রাজার রাজ্যে অধম বা অকার্যের অনুষ্ঠান করে সেই রাজা আশু নরকগামী হন, তাহাতে অনুমাত্র সন্দেহ নাই। অধিক কি নরপতি স্বয়ং তাহার সেই অধর্মের চতুর্থ ভাগ গ্রহণ করেন। তন্নিবন্ধন তাহার দুরত্যয় পাপ সঞ্চিত হইয়া থাকে। হে রাজেন্দ্র! তুমি রঘুবংশের ভূষণ ও সর্বদা ধর্মবুদ্ধি। যত্নবান হইয়া অক্ষয় শাসন পরিপালন এবং সেই দুরাত্মারে অন্বেষণ করিয়া, এই মুহূর্তেই সংহার কর। তাহা হইলেই এই ব্রাহ্মণ বালক জীবন লাভ করিবেন এবং তোমারও পাপের পর্য্যবসান হইবে। তাহাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই।

দেবর্ষি নারদ এই প্রকার অমৃতায়মান বাক্য প্রয়োগ করিলে দেবদেব রাম তাহা আকর্ণন করিয়া বিপুল পুলক লাভ করিলেন এবং আপনারে দুঃখসাগরের পারগামী বলিয়া বোধ করিলেন। অনন্তর কথঞ্চিৎ প্রকৃতিস্থ হইয়া লক্ষ্মণকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন , হে সুমিত্রানন্দবর্ধন ! তুমি সত্ত্বর গমন করিয়া পুত্রবিয়োগবিধূর দ্বিজোত্তমকে আশ্বাসিত কর। এবং বালকের মৃতদেহ সুগন্ধী তৈল ও পরমোদার গন্ধে সুবাসিত ও তৈল দ্রোণিতে বিনিক্ষিপ্ত করিয়া যাহাতে কোনো মতেই বিশীর্ণ না হয় তাহার উপায় বিধান কর। অধিক কি যাহাতে সেই মৃত দেহ সম্যকরূপে রক্ষিত হইয়া কোনমতে কুত্রাপি দেহ বা ভেদ প্রাপ্ত না হয় সাবধান হইয়া তদনুরূপ অনুষ্ঠান কর। ভগবান রাম শুভ লক্ষণ লক্ষ্মণকে এই প্রকার আদেশ করিয়া মনে মনে রথবর পুষ্করের ধ্যান পূর্বক কহিলেন , হে মহারথ তুমি সত্ত্বর আগমন কর। এইরূপ বলিবামাত্র সেই কামগামী হেমভূষিত দিব্য মহারথ মুহূর্ত মধ্যেই তদীয় সকাশে সমাগত হইল। এবং কৃতাঞ্জলি হইয়া বিনয়বাক্যে কহিল, হে নরাধিপ, হে মহাবাহো অবলোকন করুন, আমি আপনার কিঙ্কর উপস্থিত হইয়াছি। আজ্ঞা করুন, আপনার কি করিতে হইবে। জনাধিপ রাম পুষ্করের বাক্য শ্রবণ করিয়া যথাবিধানে সমাবেত ঋষিদিগকে অভিবাদনান্তর তৎক্ষণাৎ তাহাতে আরোহণ করিলেন এবং ভারত ও সৌমিত্রি এই উভয়কে নগর রক্ষার্থে নিয়োজিত করিয়া মহাপ্রভাব খড়্গ দুরভিভাবধনু ও অক্ষয় তূণীর গ্রহণ পূর্বক দ্রুতপদসঞ্চারে পরম সমাহিত হইয়া অন্বেষণ করিতে করিতে প্রতীচী দিকে যাত্রা করিলেন। তথা হইতে হিমালয়ের আশ্রিত উত্তরদিকে যাত্রা করিলেন এবং পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পাপের কারণ অন্বেষণ করিতে লাগিলেন। কিন্তু কুত্রাপি তাহার দর্শন পাইলেন না। অনন্তর তথা হইতে পূর্ব দিকে গমন করিয়া দেখিলেন তত্রত্য দেশ ও দেশবাসী মাত্রেই পরম শুদ্ধাচার ও পাপলেশ পরিশূণ্য। তদ্দর্শনে তথা হইতে বিনিবৃত্ত হইয়া দক্ষিণ দিকে গমন করিলেন। তথায় মহর্ষি পুলস্ত্যের পবিত্র আশ্রমপদের উত্তরপার্শ্বে সরোবরের তীরে অবলোকন করিলেন কোনো ভীমাকৃতি পুরুষ তাপসগণ মধ্যে অধোমুখে লম্বমান হইয়া উগ্রতর তপস্যায় প্রবৃত্ত হইয়াছে তদ্দর্শনে তিনি সেই তপ্যমান ব্যক্তির সমীপবর্তী হইয়া মৃদু মধুর বাক্যে কহিলেন, হে অমরপ্রভ, তুমিই ধন্য, তুমি কিরূপ যোনিতে গমন করিবার নিমিত্ত এই প্রকার তপঃসবৃদ্ধি  সাধনে কৃতনিশ্চয় হইয়াছ? আমি মহাভাগ দশরথের পুত্র সূর্যবংশসমুদ্ভূত রাম কুতুহলবশত তোমারে জিজ্ঞাসা করিতেছি ; তুমি স্বর্গলোকে কিরূপ অর্থের অভিলাষী হইয়াছ? সাত্বিক ও রাজসিক এই বিবিধ তপস্যাই সত্যময়; তাহাতেই অগ্নিসাধন , সিদ্ধিসাধন অথবা মোক্ষসাধন হইয়া থাকে। কিন্তু তোমার তাহা কিছুই দেখিতেছি না। তুমি আসুরিক ভাব অবলম্বন করিয়া তপোনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হইয়াছ, তুমি কখনো ব্রাহ্মণ নহ। অধিক কি অন্য ধর্মের অনুসরণ করিলে সিদ্ধি বা আমৃত্যু কিছুই লাভ করিতে পারা যায় না। ভগবান রাম এই প্রকার বাক্য প্রয়োগ করিলে সেই উগ্রকর্মা তাপস অধঃশিরা লম্বমান হইয়াই তদীয় বাক্যের প্রত্যুত্তর করিয়া কহিল, হে নৃপশেষ্ঠ, তুমিও সুখে আগমন করিয়াছ। হে রাঘব, তোমারে বহুদিনের পর দর্শন করিলাম হে বৎস, তুমি আমার পিতা এবং আমিও তোমার পিতৃস্থানীয়। হে রাম, ঋষিগণ বলিয়া থাকেন, রাজা সকলের পিতা। অতএব তুমি আমার সর্বথা পূজনীয়। বিশেষত আমরা তোমার অধিকারে বাস করি। হে পৃথিবীপতে, আমরা যার পর নাই ধন্য এবং তুমিও যার পর নাই ধন্য যেহেতু আমরা তোমার অধিকারে বাস করিয়া তপানুষ্ঠান পূর্বক তাদৃশী সিদ্ধিলাভের অভিলাষী হইয়াছি। হে রাঘব, তুমি নিরতিশয় গুণশালী এবং সর্বথা রাজপদের যোগ্য পাত্র। মদীয় তপস্যায় তোমার সিদ্ধিলাভ হউক। হে কাকুৎস, আমি শূদ্রবংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছি। আমার নাম শম্বুক।

… শম্বুক এই কথা বলিবামাত্র ভগবান রাম বুঝিতে পারিলেন ইহারই অধর্ম প্রভাবে স্বীয় অধিকারে ঈদৃশী বিসদৃশী ঘটনা সংঘটিত হইয়াছে। অতএব তিনি তৎক্ষণাৎ কোষ হইতে রুচিরপ্রভ সুশানিত খড়্গ নিষ্কাশিত করিয়া এক আঘাতেই তাহার মস্তকচ্ছেদন করিয়া ফেলিলেন। শম্বুক বিনিহত হইলে ইন্দ্র, অগ্নিও পুরঃসর দেবগণ দর্শন পূর্বক পরমপ্রীত হইয়া বারংবার অভিবাদন সহকারে তাহার প্রশংসা করিতে লাগিলেন। তৎকালে বহু গন্ধশালিনী অতি মহতী দিব্য পুষ্পবৃষ্টি আকাশ হইতে বিনিষ্পতিত হইয়া দিগ্বিদিক বিকিরণ পূর্বক তাহাকেই ব্যপ্ত করিয়া তুলিল। দেবগণ পরম পরিতুষ্ট এবং নিতান্ত আহ্লাদিত হইয়া সেই বাক্যবিদশ্রেষ্ঠ রামকে বলিতে লাগিলেন, সৌম্য! হে রঘুনন্দন! তুমি দেবগণের এই মহৎ কার্য সাধন করিলে। ইহাতে আমাদের অতিমাত্র প্রীতি সমুদ্ভূত হইয়াছে। হে মহাব্রত যদি তোমার অভিলাষ থাকে তবে আমাদের নিকট স্বাভিষ্ট বর গ্রহণ কর। হে কুলনন্দন! তোমার প্রভাবেই এই শূদ্র যোনিসমূহ সশরীরে স্বর্গ লাভ করিল । ইহাতে তোমার মহিমার সীমা নাই।

মহামতি রাম দেবগণের তাদৃশ বাক্য শ্রবণ করিয়া কৃতাঞ্জলিপুটে দেবরাজ পুরন্দরকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন আপনারা যদি প্রসন্ন হইয়া থাকেন আমারে যদি বর দান বিধেয় হয় এবং যদি আমার এই সামান্য কার্য আপনাদের প্রীতি সাধন করিয়া থাকে তাহা হইলে ব্রাহ্মণ তনয় পুনরায় জীবন লাভ করুন। ইহাই আমার অভিলষিত পরম বর। আপনাদের নিকট এইমাত্র প্রার্থনা করি। হে অমরবৃন্দ ব্রাহ্মণ বালক অকালে কাল কর্তৃক যমসদনের অধিকৃত হইয়াছে। এখনও তাহার বাল্যকাল অতিবাহিত কিংবা যৌবন প্রাপ্ত হয় নাই। যাহা হউক, আপনাদের কল্যাণ হউক। আমি সকলের সমক্ষে বলিয়াছি ব্রাহ্মণের পরলোকগত পুত্রকে পুনর্জীবিত করিয়া দিব। আপনারা অনুগ্রহ করিয়া আদেশ করুন, আমার বাক্য যেন মিথ্যা না হয়। হে সুরগণ, একপাদ বা দ্বিপাদ পুণ্য দ্বারা ব্রাহ্মণ বালক জীবিত হউন। আপনারা প্রসন্ন হইয়া এই বর প্রদান করুন। বলিতে কি, আমার পক্ষে ইহা কোটিরও অধিক বর।

…সমুদায় অমরেন্দ্রগণ রামচন্দ্রের বাক্য আকর্ণন পূর্বক পরমপ্রীত হইয়া মধুর বাক্যে কহিলেন হে কাকুৎস! তুমি যে সময়ে এই শূদ্রকে বিনিপাতিত করিয়াছ ব্রাহ্মণ বালক সেই সময়ে সেই মুহূর্তেই জীবিত ও পূর্বের ন্যায় উত্থিত হইয়াছে। এ বিষয়ে আমাদের অপেক্ষা করিতে হইবে না। হে দাশরথে! তুমি স্বভাবত পুণ্যের অধিষ্ঠান;তোমার আবার অন্যদীয় বরের সাপেক্ষতা কি? হে পরন্তপ, এক্ষণে আমরা গমন করি। তোমার স্বস্তি ও সর্বদা কল্যাণ প্রাপ্তি হউক । “

রামের এই কাজের কথা শুনে সন্তুষ্ট হয়ে ঋষি আগস্ত রামকে বলেন, “হে কুলনন্দন! তুমি বিবিধ অত্যুত্তম গুণের আধার এবং দুরাচার শূদ্রকে হত্যা করিয়া ব্রাহ্মণপুত্রের পুনর্জীবন সাধন করিয়াছ। এইজন্য তুমি আমার সর্বদা সবিশেষ পূজনীয় এবং এই জন্যই আমি তোমারে হৃদয়ে অধিষ্ঠিত করিয়াছি। দেবগণ সর্বদাই তোমার গুণ প্রসঙ্গে বলিয়া থাকেন , যে তুমি ধর্মানুসারে শূদ্রকে বিনিপাতিত ও ব্রাহ্মণ পুত্রকে জীবিত করিয়াছ। ইহাতে তোমার মহীয়সী ক্ষমতা সর্বত্র প্রথিত হইয়াছে।“ ( পদ্মপুরাণ/ সৃষ্টিখণ্ড/ ৩৫ অধ্যায়)

সহায়ক গ্রন্থ

  • পদ্মপুরাণ সৃষ্টিখণ্ড; প্রকাশক ও সংগ্রহক- শ্রীজহরলাল লাহা

স্ক্রিনশটসমূহ

শূদ্র 1
স্ক্রিনশট ১
শূদ্র 3
স্ক্রিনশট ২
শূদ্র 5
স্ক্রিনশট ৩
শূদ্র 7
স্ক্রিনশট ৪
শূদ্র 9
স্ক্রিনশট ৫
শূদ্র 11
স্ক্রিনশট ৬
শূদ্র 13
স্ক্রিনশট ৭
শূদ্র 15
স্ক্রিনশট ৮

অজিত কেশকম্বলী II

"মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।"

2 thoughts on “পদ্ম পুরাণে রামচন্দ্রের শূদ্র শম্বুক হত্যা

  • ব্রাহ্মণোস্য মুখমাসীদ্ বাহূ রাজন্যঃ কৃতঃ।
    ঊরু তদস্য যদ্বৈশ্যঃ পদ্ভাংশূদ্রো অজায়ত।।
    ঋগ্বেদ ১০।৯০।১২
    সরলার্থঃ
    ব্রাহ্মণ [জ্ঞানী পুরুষ] এই পুরুষের মুখ হয়, ক্ষত্রিয় [পরাক্রমীব্যক্তি]
    এই পুরুষের বাহু। যাহা এই পুরুষের উরু তাহা বৈশ্য [পোষণশক্তিসম্পন্ন
    ব্যক্তি] এবং পা শূদ্ররূপে [সেবাধর্মী ব্যক্তিরূপে] প্রকট হয়।

    Reply
  • keno apnara vul bekka korcen? ved a protik hisabe upoma deya hoice

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *