ইসলামখ্রিস্টানধর্মপ্রশ্নোত্তর

সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই?

ইসলামি জঙ্গী গোষ্ঠী কর্তৃক আক্রমনের খবর পাওয়া মাত্রই অনেক মুমিন সমস্বরে বলে ওঠে ‘সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নাই’ অথবা ‘ওরা সহীহ মুসলিম নয়’ অথবা ‘দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবী দেখলেই তাকে মুসলিম ভাবা যাবেনা’। প্রতিটা সন্ত্রাসী হামলার পরেই তারা এই কথাগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে থাকে তাদের ধর্মকে ‘শান্তির ধর্ম’ প্রমানের জন্য। কিন্তু বাস্তবতা পুরোটাই ভিন্ন।

যে ব্যক্তি কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের অনুসারী নয় তাকে ধর্মহীন বা নাস্তিক বলা যায়। এখন একজন ধর্মহীন ব্যক্তি কিসের আশায় আত্মঘাতী বোমা হামলা করে নিজের জীবন বিসর্জন দিবে? তার কি স্বার্থ থাকতে পারে? সে তো মৃত্যুর পর হুর-গেলমানের লোভ করেনা। দুধ বা মদের নদীতে সাতার কাটতে চায়না। নাস্তিকগণ জীবনকে অর্থপূর্ণ এবং চমৎকার এক অভিজ্ঞতা মনে করেন। বরঞ্চ ধার্মিকগণই মনে করেন জীবন হল ভ্রম, মিথ্যা, মায়া কিংবা পরীক্ষা। আর পরকালটিই মুখ্য। আর নাস্তিকদের কাছে, এই জীবনটিই মুখ্য এবং সত্য। জীবনকে মুখ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাবলেই তাকে অর্থপূর্ণ করা সম্ভব। জীবনকে অগুরুত্বপুর্ণ ভেবে আত্মঘাতী বোমা মেরে পরকালে হুর পাওয়ার আশা থাকলে, জীবনকে অর্থহীন পরীক্ষাই মনে হবে।

ধার্মিকগন তাদের ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য যুগে যুগে বহু নিরীহ মানুষের প্রান কেড়ে নিয়েছে। এবং সাম্প্রতিক সময়গুলোতে তারা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিভিন্ন সময় তারা মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, হোটেলে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার নিরীহ নিষ্পাপ মানুষের প্রাণ হরন করেছে।

২০১৭ সালে জঙ্গী হামলায় নিহতের পরিমান ১৮,৮১৪ জন। তার ভেতর ১০,৬৩২ জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ৪ টি ইসলামিক জঙ্গী গোষ্ঠী।

Islamic State – 4,350 deaths 

The Taliban – 3,571 deaths 

Al-Shabaab – 1,457 deaths

Boko Haram – 1,254 deaths

বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন কর্তৃক হামলা এবং নিহতের সংখ্যা:

নিহতের সংখ্যানামআইডিওলজি
২৯৯৬৯/১১ এ্যাটাকইসলামিক এক্সট্রিমিজম
১৫৬৬ক্যাম্প স্পেইচার ম্যাসাকারইসলামিক এক্সট্রিমিজম
৮৬০২০০৮ ক্রিসমাস ম্যাসাকারক্রিশ্চিয়ান এক্সট্রিমিজম
৫০০+২০০৭ ইয়াজিদি কমিউনিটি বোম্বিংইসলামিক এক্সট্রিমিজম
৩৮৫বেয়াইয়ান স্কুল হোস্টেজ ক্রাইসিসইসলামিক এক্সট্রিমিজম
৩৪১২০১৬ কার‍্যাডা বোম্বিংইসলামিক এক্সট্রিমিজম
৫৮৭মোগাদিসু বোম্বিংইসলামিক এক্সট্রিমিজম

ইতিহাসের এত এত নির্মম নিধনযজ্ঞের জন্য দায়ী ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠী। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা দেশগুলোর ভেতরেই উগ্রতা, সন্ত্রাসবাদ, অশান্তি, জঙ্গীবাদ বেশি। অপরদিকে নাস্তিকপ্রধান দেশগুলোই পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ।

গ্লোবাল টেরোরিজম ইন্ডেক্স ২০১৭ এর রিপোর্ট অনু্যায়ী সন্ত্রাসী দ্বারা আক্রান্ত প্রথম পাচটি দেশই ধর্মপ্রধান। নাম ইরাক, আফগানিস্তান, নাইজেরিয়া, সিরিয়া এবং পাকিস্তান। ওয়ার্ল্ড পিস ইন্ডেক্স অনুযায়ী বিশ্বের শান্তিপূর্ণ প্রথম সারির সবগুলো দেশই ধর্মনিরপেক্ষ। প্রথম পাচটি দেশের নাম হল আইসল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল আর ডেনমার্ক। আর এই লিস্টের সবচেয়ে নিচের দিকের দেশগুলো হল সিরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিন সুদান, ইরাক, সোমালিয়া।

  • ধর্মগ্রন্থে সন্ত্রাস:

পবিত্র কোরানে কাফেরদের হত্যার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ রয়েছে। নিচের আয়াতগুলো লক্ষ্য করুন।

-হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্খান।

কোরআন ৬৬-৯

-হে নবী, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করুন এবং মুনাফেকদের সাথে তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন।- তাদের ঠিকানা হল দোযখ এবং তাহল নিকৃষ্ট ঠিকানা।

কোরআন ৯-৭৩

-তা এই যে, তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্খাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ।

কোরআন ৬১-১১

-তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর।বস্তুত: আল্লাহ্ই জানেন, তোমরা জান না।

কোরআন ২-২১৬

-যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ্ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন।

কোরআন ৯-১৪

-সুতরাং যদি কখনো তুমি তাদেরকে যুদ্ধে পেয়ে যাও, তবে তাদের এমন শাস্তি দাও, যেন তাদের উত্তরসূরিরা তাই দেখে পালিয়ে যায়; তাদেরও যেন শিক্ষা হয়।

কোরআন ৮-৫৭

-মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল।

কোরআন ৪৮-২৯

-আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুত: ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি।

কোরআন ২-১৯১

-আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহ্র দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অত:পর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)

কোরআন ২-১৯৩

-যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।

কোরআন ৫-৩৩

-যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে, আমি সাথে রয়েছি তোমাদের, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীরস্খির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট আঙ্গুলের জোড়ায় জোড়ায়।

কোরআন ৮-১২

-হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কাফেরদের সাথে মুখোমুখী হবে, তখন পশ্চাদপসরণ করবে না।

কোরআন ৮-১৫

-আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহ্র সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ্ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন।

কোরআন ৮-৩৯

-আর কাফেররা যেন একা যা মনে না করে যে, তারা বেঁচে গেছে; কখনও এরা আমাকে পরিশ্রান্ত করতে পারবে না।

কোরআন ৮-৫৯

-আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যরে মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহ্র শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ্ তাদেরকে চেনেন। বস্তুত: যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহ্র রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

কোরআন ৮-৬০

-অত:পর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ্ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

কোরআন ৯-৫

-তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ্ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।

কোরআন ৯-২৯

-হে ঈমানদারগণ, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক্ আর জেনে রাখ, আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।

কোরআন ৯-১২৩

-বরং আমি তাদেরকে এবং তাদের বাপ-দাদাকে ভোগসম্বার দিয়েছিলাম, এমনকি তাদের আয়ুস্কালও দীর্ঘ হয়েছিল। তারা কি দেখে না যে, আমি তাদের দেশকে চতুর্দিক থেকে হ্রাস করে আনছি। এরপরও কি তারা বিজয়ী হবে?

কোরআন ২১-৪৪

-অতএব আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের সাথে এর সাহায্যে কঠোর সংগ্রাম করুন।

কোরআন ২৫-৫২

-অত:পর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দার মার, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অত:পর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করবে! একথা শুনলে। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। যারা আল্লাহ্র পথে শহীদ হয়, আল্লাহ্ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না।

কোরআন ৪৭-৪

-তিনিই কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে প্রথমবার একত্রিত করে তাদের বাড়ী-ঘর থেকে বহিস্কার করেছেন। তোমরা ধারণাও করতে পারনি যে, তারা বের হবে এবং তারা মনে করেছিল যে, তাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহর কবল থেকে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহর শাস্তি তাদের উপর এমনদিক থেকে আসল, যার কল্পনাও তারা করেনি। আল্লাহ তাদের অন্তরে ত্রাস সঞ্চার করে দিলেন। তারা তাদের বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে এবং মুসলমানদের হাতে ধ্বংস করছিল। অতএব, হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ, তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।

কোরআন ৫৯-২

এছাড়াও বলা হয়েছে- জিহাদীরাই প্রকৃত মুসলিম।

আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী।

সুরা আনফাল আয়াত ৭৪

এছাড়াও ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের জগতে, বিশেষতঃ হানাফি ফিকাহ্‌র পরিমণ্ডলে আল-হিদায়া একটি মৌলিক ও বুনিয়াদি গ্রন্থ । এক কথায় এ গ্রন্থকে হানাফী ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলা যায়।  বহু সংখ্যক মানুষই দাবী করে থাকে, জিহাদের অর্থ হচ্ছে নিজের অন্তরে খারাপের সাথে যুদ্ধ। কিন্তু ইসলামের পরিভাষায় জিহাদ কী এবং কীভাবে তা করতে হবে, তা পরিষ্কারভাবেই আল-হিদায়া গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে।

এছাড়াও হাদীসে আছে:

■ যতক্ষণ না মুসলমান হয়, ততক্ষণ কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদের নির্দেশ

গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)

হাদিস নম্বরঃ (35) অধ্যায়ঃ ১। ঈমান (বিশ্বাস) পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি

পরিচ্ছদঃ ৮.লোকেদের বিরুদ্ধে জিহাদের নির্দেশ যতক্ষণ না তারা স্বীকার করে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং সালাত কায়িম করে, যাকাত দেয়, নাবী যে শারীআতের বিধান এনেছেন তার প্রতি ঈমান আনে, যে ব্যক্তি এসব করবে সে তার জান মালের নিরাপত্তা লাভ করবে; তবে শারীআত সম্মত কারণ ব্যতীত, তার অন্তরের খবর আল্লাহর কাছে; যে ব্যক্তি যাকাত দিতে ও ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করতে অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার এবং ইসলামের বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইমামের গুরুত্বারোপ করার নির্দেশ।

৩৫-(৩৫/…) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) ….. জাবির (রাযিঃ), আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) ও আবূ সালিহ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। বাকী অংশ আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে ইবনুল মুসাইয়্যাব-এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।

আবূ বাকর ইবনু শাইবাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ) ….. জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই” এ কথার স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। “আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই” এ কথা স্বীকার করলে তারা আমার থেকে তাদের জান মালের নিরাপত্তা লাভ করবে; তবে শারী’আত সম্মত কারণ ছাড়া। তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে। তারপর তিনি আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ “আপনি তো একজন উপদেশদাতা। আপনি এদের উপর কর্মনিয়ন্ত্রক নন”- (সূরাহ আল গা-শিয়াহ্ ৮৮ঃ ২১-২২)। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৩৫-৩৬)

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

■ মুসলিম না হলেই হত্যা

গ্রন্থের নামঃ সুনানে ইবনে মাজাহ

হাদিস নম্বরঃ (3929) অধ্যায়ঃ ৩০/ কলহ-বিপর্যয়

পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন

পরিচ্ছদঃ ৩০/১. যে ব্যক্তি ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ’’ বলে, তার উপর হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা

৩/৩৯২৯। আওস (রাঃ) বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি আমাদেরকে (অতীতের) ঘটনাবলী উল্লেখপূর্বক উপদেশ দিচ্ছিলেন। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে তাঁর সাথে একান্তে কিছু বললো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তাকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করো। লোকটি ফিরে গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, ‘‘আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই’’? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেনঃ যাও, তোমরা তাকে তার পথে ছেড়ে দাও। কারণ লোকেরা ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ না বলা পর্যন্ত আমাকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা তাই করলে তাদের জান-মালে হস্তক্ষেপ আমার জন্য হারাম হয়ে গেলো।

নাসায়ী ৩৯৭৯, ৩৯৮২, ৩৯৮৩, আহমাদ ১৫৭২৭, দারেমী ২৪৪৬। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

■ ইসলামের দাওয়াত দেয়ার পরে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন বৈধ

গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)

হাদিস নম্বরঃ (4370) অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পরিচ্ছদঃ ১. যে সকল বিধর্মীর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা বৈধ

৪৩৭০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) … ইবনু আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নাফি’ (রহঃ) কে এই কথা জানতে চেয়ে পত্র লিখলাম যে, যুদ্ধের পূর্বে বিধর্মীদের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন কি না? তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে লিখলেন যে, এ (নিয়ম) ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ মুসতালিকের উপর আক্রমণ করলেন এমতাবস্থায় যে, তারা অপ্রস্তুত ছিল (তা জানতে পারেনি।) তাদের পশুদের পানি পান করানো হচ্ছিল। তখন তিনি তাদের যোদ্ধাদের (পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ) হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের (নারী শিশুদের) বন্দী করলেন। আর সেই দিনেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল। (ইয়াহইয়া বলেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি বলেছেন) জুওয়ায়রিয়া অথবা তিনি নিশ্চিতরূপে ইবনাতুল হারিছ (হারিছ কন্যা) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই হাদীস আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেই সেনাদলে ছিলেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এছাড়াও হযরত মুহম্মদ নিজেও রাতের আধারে অতর্কিত আক্রমন করে শিশু ও নারী হত্যা করেছেন। বানু কুরাইজা গোত্রের ৯০০ মানুষকে অতর্কিত আক্রমন করে অপ্রস্তুত অবস্থায় হত্যা করা হয়।

গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)

হাদিস নম্বরঃ (4399) অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পরিচ্ছদঃ ৯. রাতের অতর্কিত আক্রমনে অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই

৪৩৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মনসুর ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) … সা’ব ইবনু জাছছামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুশরিকদের নারী ও শিশু সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যখন রাতের আধারে অতর্কিত আক্রমণ করা হয়, তখন তাদের নারী ও শিশুরাও আক্রান্ত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারাও তাদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)

হাদিস নম্বরঃ (4442) অধ্যায়ঃ ৩৩। জিহাদ ও সফর

পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি‏

পরিচ্ছদঃ ৯. রাতের আকস্মিক হামলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই

৪৪৪২-(২৭/…) আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. সা’ব ইবনু জাসসামাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা রাতের অন্ধকারে আকস্মিক হামলায় মুশরিকদের শিশুদের উপরও আঘাত করে ফেলি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারাও তাদের (মুশরিক যোদ্ধাদের) মধ্যে গণ্য। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪০০, ইসলামিক সেন্টার ৪৪০০)

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন

গ্রন্থঃ সুনানে ইবনে মাজাহ

অধ্যায়ঃ ১৮/ জিহাদ

হাদিস নাম্বার: 2839

১/২৮৩৯। সাব‘ ইবনে জাসসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের বেলা মুশরিকদের মহল্লায় অতর্কিত আক্রমণ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো, যাতে নারী ও শিশু নিহত হয়। তিনি বলেনঃ তারাও (নারী ও শিশু) তাদের অন্তর্ভুক্ত।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এছাড়াও হযরত মুহম্মদ মাঝেমধ্যেই গুপ্তহত্যার নির্দেশও দিতেন।

■ গুপ্ত হত্যার নির্দেশ দিতেন মুহাম্মদ

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)

হাদিস নম্বরঃ (3032) অধ্যায়ঃ ৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার

পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন

পরিচ্ছদঃ ৫৬/১৫৯. হারবীকে গোপনে হত্যা করা।

৩০৩২. জাবির (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কা’ব ইবনু আশরাফকে হত্যা করার দায়িত্ব কে নিবে?’ তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘আপনি কি পছন্দ করেন যে, আমি তাকে হত্যা করি?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) বললেন, ‘তবে আমাকে অনুমতি দিন, আমি যেন তাকে কিছু বলি।’ তিনি বললেন, ‘আমি অনুমতি দিলাম।’ (২৫১০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৮১৭)

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

হাদিস নম্বরঃ (2820) অধ্যায়ঃ ৪৮/ জিহাদ (كتاب الجهاد والسير)

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পরিচ্ছদঃ ১৯০০. হারবীকে গোপনে হত্যা করা

২৮২০। আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … জাবির (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কাব’ ইবনু আশরাফকে হত্যা করার দায়িত্ব কে নিবে? তখন মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) বললেন, ‘আপনি কি এ পছন্দ করেন যে, আমি তাকে হত্যা করি?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) বললেন, ‘তবে আমাকে অনুমতি দিন, আমি যেন তাকে কিছু বলি।’ তিনি বললেন, ‘আমি অনুমতি প্রদান করলাম।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

গ্রন্থের নামঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ)

হাদিস নম্বরঃ (2813) অধ্যায়ঃ ৪৮/ জিহাদ

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পরিচ্ছদঃ ১৮৯৬. ঘুমন্ত মুশরিককে হত্যা করা

২৮১৩। আলী ইবনু মুসলিম (রহঃ) … বারা ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারীগণের একটি দল আবূ রাফে ইয়াহুদীদের হত্যা করার জন্য প্রেরণ করেন।তাদের মধ্যে থেকে একজন এগিয়ে গিয়ে ইয়াহুদীদের দূর্গে ঢুকে পড়ল। তিনি বললেন, তারপর আমি তাদের পশুর আস্তাবলে প্রবেশ করলাম। এরপর তারা দূর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। তারা তাদের একটি গাধা হারিয়ে ফেলেছিল এবং তার খোঁজে তারা বেরিয়ে পড়ে। আমিও তাদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম। তাদেরকে আমি বুঝাতে চেয়েছিলাম যে, আমি তাদের সঙ্গে গাধাঁর খোজ করছি। অবশেষে তারা গাধাটি পেল। তখন তারা দূর্গে প্রবেশ করে এবং আমিও প্রবেশ করলাম। রাতে তারা দূর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। আর তারা চাবিগুলি একটি কুলুঙ্গির মধ্যে রেখে দিল। আমি তা দেখতে পাচ্ছিলাম। যখন তারা ঘুমিয়ে পড়ল, আমি চাবিগুলি নিয়ে নিলাম এবং দূর্গের দরজা খুললাম। তারপর আমি আবূ রাফের নিকট পৌঁছলাম এবং বললাম, হে আবূ রাফে! সে আমার ডাকে সাড়া দিল। তখন আমি আওয়াজের প্রতি লক্ষ্য করে তরবারির আঘাত হানলাম, অমনি সে চিৎকার দিয়ে উঠল।

আমি বেরিয়ে এলাম। আমি পুনরায় প্রবেশ করলাম, যেন আমি তার সাহাযার্থে এগিয়ে এসেছি। আর আমি আমার গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবূ রাফে! সে বলল, তোমার কি হল, তোমার ধ্বংস হোক। আমি বললাম, তোমার কি অবস্থা? সে বলল, আমি জানিনা, কে বা কারা আমার এখানে এসেছিল এবং আমাকে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, তারপর আমি আমার তরবারী তার পেটের উপর রেখে সবশক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম, ফলে তাঁর হাড় পর্যন্ত পৌঁছে কট করে উঠল। এরপর আমি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় বের হয়ে এলাম। আমি অবতরণের উদ্দেশ্যে তাদের সিড়ির কাছে এলাম। যখন আমি পড়ে গেলাম, তখন এতে আমার পায়ে আঘাত লাগল। আমি আমার সাথীগণের সাথে এসে মিলিত হলাম। আমি তাদেরকে বললাম, আমি এখান হতে ততক্ষন পর্যন্ত যাব না, যাবত না আমি মৃত্যুর সংবাদ প্রচারকারীনীর আওয়াজ শুনতে পাই। হিযাজবাসীদের বণিক আবূ রাফের মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা না শোনা পর্যন্ত আমি সে স্থান ত্যাগ করলাম না। তিনি বলেন, তখন আমি উঠে পড়লাম এবং আমার তখন কোনরূপ ব্যথা বেদনাই অনুভব হচ্ছিল না। অবশেষে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌঁছে এ বিষয়ে তাঁকে সংবাদ দিলাম।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এছাড়াও মহানবী বিভিন্ন সময়ই ভিন্নমতের মানুষকে হত্যার নির্দেশ দিতেন। ভিন্ন মত অবলম্বন করলে তাকে কতল করার পদ্ধতি মহানবীর আমল থেকেই চলে আসছে। কাব বিন আশরাফকে হত্যা একটি বড় উদাহরন। তার অপরাধ ছিল তিনি এমন এমন কবিতা লিখতেন যাতে নিহত কুরাইশদের প্রতি দু:খ প্রকাশ হত। তার দলভূক্ত হওয়ার ভান করে, ছলে-বলে-কৌশলে তাকে হত্যা করে ইবন মাসালামা নামক এক সাহাবী এবং তার সাথীরা।

মহানবীর বিরুদ্ধে বিদ্রূপাত্মক কবিতা লেখার অভিযোগে ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে বৃদ্ধ ইহুদি কবি আবু আফাককে হত্যা করা হয়। সেলিম ইবনে উমর তাকে হত্যা করে।

মহানবীর নির্দেশে কবি আসমা বিনতে মারওয়ান নামক এক পাঁচ সন্তানের জননীকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। আবু আফাককে হত্যার পর আসমা মহানবীর তীব্র সমালোচনা করেন। মহানবীর নির্দেশে যখন রাতের আধারে তার উপর হামলা করা হয় যখন তিনি তার ৫ সন্তানকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। সে সময়ে এই হতভাগ্য মা তাঁর এক সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছিলেন। হত্যাকারী আসমার স্তন থেকে শিশুটির মুখ সরিয়ে নেন এবং তাকে হত্যা করেন।

এসমস্ত ঘটনা থেকে এটাই প্রমানিত হয় খুন, হত্যা, গনহত্যা, সন্ত্রাসের মত বিষয়গুলো ইসলামের প্রারম্ভ থেকেই চলে আসছে। মহানবীর নির্দেশেই বহু গনহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এবং এসব গণহত্যার সাথে নবী এবং সাহাবীরা সরাসরি জড়িত ছিলেন। তাহলে তাদেরও কি কোন ধর্ম ছিলনা? এখনকার জঙ্গীরা তো কেবল তাদের অনুসরনই করছে। তারা তো সহীহ ইসলামই পালন করছে।

এছাড়াও বাইবেলে যীশু সরাসরি মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন।

“যীশু তাঁদের বললেন, ‘কিন্তু এখন বলছি, যার টাকার থলি বা ঝুলি আছে সে তা নিয়ে যাক; আর যার কাছে তলোযার নেই সে তার পোশাক বিক্রি করে একটা তলোযার কিনুক৷ কারণ আমি তোমাদের বলছি:‘তিনি রোগীদের একজন বলে গন্য হবেন৷’যিশাইয় 53:12 শাস্ত্রের এই য়ে কথা তা অবশ্যই আমাতে পূর্ণ হবে: হ্যাঁ, আমার বিষয়ে এই য়ে কথা লেখা আছে তা পূর্ণ হতে চলেছে৷’ তাঁরা বললেন, ‘প্রভু, দেখুন দুটি তলোযার আছে!’তিনি তাঁদের বললেন, ‘থাক, এই যথেষ্ট৷’

লুক (Luke) ২২ : ৩৬-৩৮

“তোমাদের কাছে কি আমি আরো দৃষ্টান্ত তুলে ধরব? আমার যথেষ্ট সময় নেই য়ে আমি তোমাদের কাছে গিদিযোন, বারক, শিম্শোন, যিপ্তহ, দাযূদ, শমূয়েল ও ভাববাদীদের সব কথা বলি; ওঁদের প্রচণ্ড বিশ্বাস ছিল৷ তাঁরা বিশ্বাসের দ্বারা রাজ্যসকল জয় করেছিলেন৷ তাঁরা যা ন্যায় তাই করলেন এবং ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতিগুলি পেলেন৷ তাঁরা সিংহদের মুখ বন্ধ করেছিলেন৷ কেউ কেউ আগুনের তেজ নিস্প্রভ করলেন, তরবারির আঘাতে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেন৷ এঁদের বিশ্বাস ছিল তাই এঁরা এসব করতে পেরেছিলেন৷ বিশ্বাসের বলেই দুর্বল লোকেরা বলশালী লোকে রূপান্তরিত হয়েছিলেন; তাঁরা যুদ্ধের সময় মহাবিক্রমী হয়ে শত্রু সৈন্যদের পরাস্ত করেছিলেন৷” (হিব্রুদের কাছে পত্র (Hebrews) ১১ : ৩২-৩৪)

এসব থেকেই বোঝা যায় মানুষকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ধাবিত করার জন্য ধর্মগ্রন্থগুলোই যথেষ্ট। ধর্মগ্রন্থগুলোর ইন্ধনেই মানুষ সন্ত্রাসের দিকে ধাবিত হয়। জঙ্গী তৈরী হয়। ভারতে হিন্দু কর্তৃক মুসলমান অত্যাচারের খবর সামনে আসে। আবার বাঙলাদেশে বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু নির্যাতন, প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা আমাদের কানে আসে। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম ত্যাগ করে যারা মানবতাকেই পরম ধর্ম মনে করে তাদের কাছে প্রতিটা প্রাণীর প্রাণই মূল্যবান। কোন মানুষকে হত্যার মত বর্বর কাজ করতে পারে উগ্র ধার্মিকেরা। এখন পর্যন্ত কোন মুক্তমনা জঙ্গীগোষ্ঠীর খোজ পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত এমন খবর পাওয়া যায়নি যে কোথাও কেউ কোন নাস্তিকের নাম নিয়ে কোপাকুপি করেছে। বরং যারা ধর্ম সম্পর্কে ভালো ভাবে জানে তারাই মূলত জঙ্গী হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অপরাধীদের ভেতরেও ধর্মভীতি লক্ষ্য করা যায়। মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীদের ধর্ষণ-বলাৎকার-খুনের মত গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয় মূলত ধার্মিকদের দ্বারাই। ধর্মগ্রন্থগুলোই আসলে জঙ্গীবাদের মৌলিক গ্রন্থ। ধর্মগ্রন্থগুলো সঠিকভাবে অধ্যয়ন করলে হয় সে জঙ্গী হবে নাহলে নাস্তিক হবে। তাই একথা বলাই যায়- ধর্মহীন সন্ত্রাসী আর লিঙ্গহীন ধর্ষক আসলে একই কথা।

ধর্মই মানুষের মনে জঙ্গীবাদের বীজ বপন করে। মানুষকে সন্ত্রাসের দিকে ধাবিত করে।

One thought on “সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *