ইসলামিক পোশাক পরিধানে নারীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি
ইসলামে নারীদের জন্য ইসলামিক পোশাক পর্দা ফরজ করা হয়েছে। ইসলামের অবশ্যপালনীয় এই বিধান পালন করার ফলে নারীদেহে কি ধরণের প্রভাব পড়তে পারে? কোন নারী যদি মাথা, মুখ, চুল, হাত, পা ঢাকা পোশাক পরিধান করে তাহলে তাকে কি কোন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে?
ভিটামিন ডি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি আমরা পাই সূর্যের আলো থেকে। মানে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরীতে সূর্যের আলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সংক্ষেপে বলতে গেলে কোলেস্টেরলের উপস্থিতিতে সূর্যের আলোর সাহায্যে আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি তৈরী হয়। খুব অল্প সংখ্যক খাবারেই পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন ডি আছে। কোন ধরণের সাপ্লিমেন্ট বা সূর্যের আলো ছাড়া শুধুমাত্র খাবার খেয়ে ভিটামিন ডি এর চাহিদা মেটানো প্রায় অসম্ভব। যেসব নারীরা বোরকা, হিজাব, নেকাব, হাত মোজা, পা মোজা আরো হাবিজাবি কত কিছু পরে তাদের শরীরে কি ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন পড়েনা? ধর্মীয় বিধান পালন করায় ঈশ্বর কি খুশি হয়ে তাদের শরীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভিটামিন ডি তৈরী করে দেন?
ভিটামিন ডি তৈরীর জন্য সূর্যের আলোর প্রয়োজন পড়বে এটাও তো আল্লাহরই পরিকল্পনা। তাহলে একজন পরহেজগার মুমিনা নারী বস্তাবন্দী অবস্থায় কিভাবে তার ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করবে? ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে এর দায়ভার কার উপর বর্তাবে? তখন তো আবার ইহুদী নাসারাদের আবিষ্কৃত সাপ্লিমেন্ট খেয়েই অভাব পূরণ করা লাগবে।
মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলেই নারীদের শরীরে ভিটামিন ডি তৈরীর জন্য কোন অঙ্গ দিয়ে দিতে পারতেন। অথবা এমন ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন যাতে তাদের শরীরে এটার প্রয়োজনই না পড়ে। যেহেতু মহান রাব্বুল আল আমিন পর্দা প্রথা ফরজ করে নারীদের ভিটামিন ডি এর উৎস বন্ধ করে দিয়েছেন সেহেতু কোরানে কৃত্রিম ভিটামিন ডি তৈরীর ফর্মুলা নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু কোরান হাদিস তন্ন তন্ন করে সার্চ করে, রিসার্চ করেও মাদ্রাসাপাশ বিজ্ঞানীরা কেউ এটা খুঁজে কেন পাচ্ছেনা এটাই রহস্য।
ভিটামিন ডি রক্তে ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। যা সুস্থ সবল হাড়ের জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড়ের সমস্যা, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, অস্টিওপরোসিস, রিকেটের মত ভয়ংকর রোগ হতে পারে। এছাড়াও টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস, বিশেষ ধরণের বাত এবং বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ভিটামিন ডি অভাবগ্রস্থ মায়েদের সন্তানদের হৃদরোগের ঝুঁকিও বেশি থাকে। ইউকে তে বাচ্চাদের রিকেট বেড়ে যাওয়ার পেছনে বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর নারীদের পোশাককেই দায়ী করা হচ্ছে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ভিটামিন ডি ডেফিশিন্সি বেশিমাত্রায় লক্ষ্যণীয়। কারণটা আর নতুন করে বলার কিছু নাই। মুসলিমপ্রধান অনেকগুলো দেশ থেকে আমেরিকায় আসা নারীদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ভিটামিন ডি এর লেভেল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম পাওয়া গিয়েছে। সৌদি আরবে ৫২ জন নারীর উপর চালানো একটি পরীক্ষায় প্রত্যেকের রক্তেই ভিটামিন ডি এর পরিমান নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে অনেক কম ছিল। (১) মুসলিমপ্রধান দেশ জর্ডানে একটি স্টাডিতে সর্বাঙ্গ আবৃত ৮৩.৩% মহিলারই শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পাওয়া গিয়েছে। (২)
আমেরিকার মিশিগানে মাইগ্র্যান্ট আরব-আমেরিকান নারীদের উপর চালানো একটি জরিপে দেখা গেছে যেসব মহিলা সর্বাঙ্গ আবৃত পোশাক পরে দেহে তাদের গড় ভিটামিন ডি 4 ng/ml. আবার একই পোশাক পরিহিতা কিন্তু ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করছে এমন নারীদের শরীরে গড় 7 ng/ml ভিটামিন ডি পাওয়া গিয়েছে। (৩) কিন্তু 20 ng/ml কম হলেই সেটাকে ডেফিশিন্সি হিসেবে ধরা হয়।
ইসলামিস্টরা পর্দাপ্রথার গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই বলে থাকেন বোরকা নাকি বিভিন্ন UV রেডিয়েশন থেকে রক্ষা করে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে UV রেডিয়েশনের তুলনায় অনেক বেশি নারী মারা যাচ্ছে সূর্যালোকের অভাবজনিত কারণে। যেহেতু একজন মুমিনা নারীর পোশাক নির্বাচনের কোন স্বাধীনতা থাকেনা, তারা সর্বাঙ্গ ঢাকা পোশাক পরতে বাধ্য হয়। কিন্তু কোন কুসংস্কারমুক্ত নারী তার পোশাক নির্বাচনে স্বাধীন থাকে। আর ভিটামিন ডি তৈরীর জন্য UV-B রশ্মির প্রয়োজন। এটাকে শরীরে ঢুকতে বাঁধা দেয়ার মানে হল নিজের বিপদ ডেকে আনা।
‘দ্যা ইকোনোমিস্ট’ ম্যাগাজিন নারীদের স্থুলতার মাত্রার উপর একটি জরিপ চালিয়েছিল। ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেয়া ফলাফলে দেখা গেছে প্রথম ১০ টি দেশের ৮ টি দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। অর্থাৎ মুসলিম নারীদের ভেতরেই মেদবাহুল্য বেশি।
২০০৬ সালের একটি স্টাডিতে দেখা যায় গাল্ফ আরবের ৭ টি স্টেটের ৭০% মহিলাই মাত্রাতিরিক্ত ওজনের অথবা মেদবহুল। যা বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি।
২০১০ সালের SDEA এর করা জরিপে বলা হয়েছে সৌদি আরবের ৭০% মানুষই ‘আশঙ্কাজনক হারে স্থূল’। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন এর মতে কাতারের ১৪.১% প্রাপ্তবয়ষ্কই ডায়াবেটিস আক্রান্ত। শুধুমাত্র MENA region এ ৩৯ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে। WHO এর মতে কাতারের ৭২.২% প্রাপ্তবয়ষ্কই অতিরিক্ত ওজনের, ৩৪% খুবই স্থুলকায়। শিশুদের ভেতর এটির মাত্রা দিনদিন বাড়ছে।
২০০০-২০১৫ সালে করা অন্য একটি জরিপে দেখা যায় হাই বডি মাস ইন্ডেক্সের কারণে রোগব্যাধিজনিত কারণে অক্ষমতার হার আরব আমিরাতে ৩১৪%, ওমানে ১৬১%, কাতারে ১৩৯% বেড়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। এসব দেশগুলোতে পুরুষের তুলনায় নারীদের স্বাভাবিকের তুলনায় মেদবাহুল্যও বেশি। অর্থাৎ ঐ সকল দেশে নারীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও বেশি।
তিন প্রকার খেলা ছাড়া ইসলামে অন্য কোন খেলার বৈধতা নেই।
পরিচ্ছদঃ ২২. ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা
১৭০০। আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তীর নিক্ষেপ এবং উট ও ঘোড়দৌড় ব্যতীত অন্য কিছুতে প্রতিযোগিতা নেই।সহীহ, ইবনু মা-জাহ (২৮৭৮)
আর ইসলামিক পোশাক আশাক কখনোই শরীরচর্চার জন্য অনুকূল নয়। বিশেষ করে নারীদের জন্য। বাড়ির বাইরে যেয়ে খেলাধুলা বা শরীরচর্চা করা একজন মুমিনার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। ইউরোপ-আমেরিকার মত পছন্দসই আরামদায়ক পোশাকে জিমে যাওয়ারও সুযোগ নেই। NCBI এর একটি রিপোর্টে বলা হয় সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের ৯৯.৫% নারীই কোন ধরণের শরীরচর্চা করেনা।
শরীরের বাড়তি ওজনের কারণে হৃদরোগ, টাইপ টু ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, কিডনি জটিলতা, বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকিবৃদ্ধি, অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিস, স্ট্রোক সহ আরো নানা রকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে। যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও বটে। তাই ধর্মের নিয়ম কানুন পালন এবং ধর্ম কর্তৃক নির্ধারিত পোশাক ব্যবহারের আগে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। বিশেষ করে নারীদের।
তাই আধুনিক শিক্ষিত মুসলিম নারীরা নিজেদেরকে বস্তাবন্দী করার আগে অন্তত দুইবার ভাবুন।
তথ্যসূত্র সমূহ:
১) Elsammak, M.Y., et al., Vitamin D deficiency in Saudi Arabs. Hormone and Metabolic Research, 2010. 42(5): p. 364-368.
২) Mishal, A.A., Effects of Different Dress Styles on Vitamin D Levels in Healthy Young Jordanian Women. Osteoporosis International, 2001. 12(11): p. 931-935.
৩) Hobbs, R., et al., Severe Vitamin D Deficiency in Arab-American Women Living in Dearborn, Michigan. Endocrine Practice, 2009. 15(1): p. 35-40.
দ্যা ইকোনোমিস্ট ম্যাগাজিন, বিবিসি, ncbi, gulf-times, international diabetic federation, independent UK, WHO এর ওয়েবসাইট থেকে।
প্রাসঙ্গিক লেখাঃ
একজন মুমিন এই লেখা খন্ডন করেছে। একজন সংশয়বাদী হয়েও সেই মুমিনের লেখার সামনে আপনার এই লেখা অত্যন্ত তুচ্ছ। আপনাদের লেখার মান ভালো করা উচিত। এককালে আমরা অনলাইন দাপটে বেড়াতাম এই বলে “কই একটাও কি মুমিন নাই? ” আজ আমাদের লেখার মান দিনে দিনে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। লেখাটা পড়ুন মুক্তমনা নিজেকে দাবী করলে মনটাও মুক্ত রাখা উচিত। আমি দুই পক্ষেরই লেখা পড়ি।
পর্দায় নারীদের স্বাস্থ্য ঝুকি?
আপনার মা বোনকে বইলেন উলংগ হয়ে থাকতে…
ভাই তোমারে কি কেউ বলতেছে যে তোমার মা বোনরে উলংগ ঘুরাও। আমরা তা বলছি না।
আমাদের কথা হইলো মেয়েদের পোশাক চয়েজের সাধীনতা আর সাধারন(at least চেহারা দেখা যায় আর মাথায় টাক না পরলে যাতে হিজাবের মতো আজব জিনিস না পরে) আরামদায়ক পোশাক পরা। আপনার বোনটা যে আপনার দুলাভাই এর খেদমত বাদে জীবনে নাম সম্মান সামাজিক পরিচিতি কিছুই কামায় না তা হয়তো আপনার ভালো লাগে। কিন্তু আমি চাই আমার বোনের পোশাকের সাধীনতা থাকুক এবং সে আমার দুলাভাই এর খেদমত করা ছাড়াও জীবনে অনেক বড় কিছু করে। আর হিজাব বোরখা পোশাকগুলো যখন মেয়েদের সাধীনতা কেড়ে নেয়/২;সাস্থ্যঝুকি বাড়ায় /৩/সমাজ এবং ছেলেদের সাথে সাচ্ছ্যন্দে বন্ধুভাবাপন্ন থাকার অন্তরায় ৪/ অনেক দেশের অনেক ঋতুতে এই পোশাক অসস্তিকর……..ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই আমরা এসবের বিরুদ্ধে বলি। আসা করি এটা নিয়ে যারা ধর্মের কারনে সেন্সিটিভ তারা ১/২ বছর চিন্তা করবেন। আর হ্যাঁ আমার কথাগুলো ও আপনার চিন্তাগুলো যাচাই করবেন। আর গোড়ামি করবেন না ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস করবেন না।
বাহ্ মুমিন বাহ্! নিজের মা বোনকে উলংগ দেখার এত শখ???
আপনি যে ধর্ম, গোত্র বা বর্নের মহিলাই হন না কেন এবং যত সুন্দরী হন না কেন পাবলিক প্লেসে চেহারা ঢেকে রাখা অন্যায় ও অপরাধ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন চেহারা বিকৃত হলে, মুখ ঢেকে রাখতে হয় এ ধরনের পেশায় থাকলে, মুখ খোলা থাকলে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশংকা আছে এ ধরনের কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে মুখ ঢেকে চলাচল করা যায়। তবে নিজের ঘরে, প্রাইভেট প্রপারটিতে যেভাবে খুশি থাকতে পারেন।