প্রসঙ্গ- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার বানিজ্যিকীকরণ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সেমিস্টার ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ছাত্রকে এখন থেকে প্রতি সেমিস্টারে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে হবে পড়ালেখার খরচ বাবদ। এই নতুন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেছে।
“কেন রে বাবা? তোমরা এমন কোন লাট সাহেবের ছেলেপেলে যে মাগনা মাগনা পড়ালেখা করতে চাও? পড়ালেখা কি ছেলের হাতের মোয়া, নাকি মামা বাড়ির আবদার? কম খরচে পড়ার এতই ইচ্ছা থাকলে তোমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলা না কেন? সেখানে কেন সুযোগ পাও নাই। তোমাদের মেধা নাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার, তোমাদের যোগ্যতা নাই বৃত্তি পাবার, আবার এত আন্দোলন ফান্দোলনের কি আছে? যাও বাবারা রাস্তা মাপ। হয় টাকা দাও না হয় এত পড়ালেখা করার প্রয়োজন নাই। আমাদের দেশে হাজার হাজার শিক্ষিত ছেলে রাস্তায় ঘোরে, এদের সংখ্যা আর বাড়িয়ে কি হবে?”
–বেশ ভাল কথা! কথাগুলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী ছাত্রদের বর্তমানে প্রতিনিয়ত শুনতে হচ্ছে, এবং ধারনা করি আরও বেশ কিছুদিন পর্যন্তই সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শুনে যেতে হবে।
একটা গল্প দিয়ে শুরু করি, আমার এক অনুজপ্রতীম বন্ধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। পিতৃহীন বন্ধুটির পারিবারিক অবস্থা ঠিক সর্বহারা না হলেও তার কাছাকাছি। তার মা প্রথমদিকে বড়লোকের বাসায় ছুটা বুয়ার কাজ করতো, ইদানীং দুই মেয়ে সহ একটি গার্মেন্টসে কাজ করে সংসার চালায়। বন্ধুটি খুব মেধাবী ছাত্র তা বলছি না, তবে তাকে কেন্দ্র করেই এ ক্ষয়িন্সু পরিবারটির সব আশা ভরসা। হাজার প্রতিকূলতাতেও তার পড়া বন্ধ হয় নি, সে তিনটি টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালাবার পাশাপাশি পরিবারকেও সাহায্য করে। খুব মেধাবী ছাত্র না হবার কারণে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় নি, কিন্তু তার নিজস্ব অবস্থান থেকে বিবেচনা করলে তাকে অমেধাবীও আমি বলতে পারি না।
কয়েকশ’ ছাত্রের সাথে প্রতিযোগিতা করে জগন্নাথে পড়ার সুযোগ তাকে ভবিষ্যৎ গড়ার হাতছানি দেয়। ছোটবোনদের বিয়ে দিতে হবে, বিধবা মাকে একটু বিশ্রাম দিতে হবে, একটি সুন্দর সংসার গড়তে তো হবেই নিজের জন্য। তাই প্রতিদিনের অক্লান্ত শারীরিক পরিশ্রম তার কাছে কিছু না, সকাল থেকে দুপুরে ক্লাস, দুপুরে মাকে খাবার দিয়ে এসে লোকাল বাসে কোনক্রমে ঝুলে দাড়িয়ে ঠেলে ঠুলে রাত ১০ টা পর্যন্ত একটানা টিউশনির বাড়িতে ছুটোছুটির পর ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে চারটি মুখে দিয়ে পড়তে বসার ইচ্ছে মরে যায় তার। তাও দেড় দু’ ঘণ্টা পড়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরে আরেকটি নতুন যান্ত্রিক দিনের অপেক্ষায় তা সে কোন দিনই মনে করতে পারে না।
আরেকটি অনুজপ্রতীম বন্ধুর কথা বলি, সে বড়লোকের ছেলে, সে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সে বিশেষ মেধাবী, পড়াশোনায় তুখোড় এবং জীবনের অন্যান্য উপভোগের সামগ্রী ব্যবহারেও তার জুড়ি নেই। যখন তখন ইয়ার দোস্তদের নিয়ে লঙ ড্রাইভে বের হয়ে যাওয়া, সময় পেলেই ডিজে পার্টিতে ঢু মেরে আসা উত্তাল উচ্ছল জীবন তার। সে সাথে পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাচ্ছে ভালভাবেই। প্রতিদিন সে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় পায় পড়ার জন্য, এসি গাড়িতে করে ইউনিভার্সিটিতে যায়, যেতে যেতেও ক্লাসের পড়ায় চোখ বুলিয়ে নেয়, তার সিজিপিও ঈর্ষনীয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তারাই আসে, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেলে সুযোগ পায় নি, সেটা মোটেও মেধার ঘাটতির জন্য নয়, এর সাথে যোগাযোগ রয়েছে সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসের, সামগ্রিক অর্থনীতির। সাধারণত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তারাই পড়তে আসে, যারা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেলে সুযোগ পায় নি, এবং অসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মত আর্থিক সামর্থ্য যাদের নেই। অর্থাৎ তারা একটা অর্থনৈতিক শ্রেণী, যাদের বলা যায় মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত।
শিক্ষার অধিকার আছে আমাদের সবারই, সেটা জাতি ধর্ম বর্ণ অর্থনৈতিক শ্রেণী নির্বিশেষে। একটা দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজ এবং প্রগতির চাকা হচ্ছে সে সমাজের শিক্ষা। যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতিই তত উন্নত। এর সাথে এটাও বলতে হচ্ছে, একটি আধুনিক রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার হচ্ছে শিক্ষা। উন্নতবিশ্বে রাষ্ট্রপ্রধানগন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে করজোড়ে ছাত্রদের কাছে প্রার্থনা করে, “বাবারা, তোমাদের যত খরচ লাগে সরকার দেবে, তোমরা শুধু মন দিয়ে পড়”।
আর আমাদের দেশে শিক্ষা ক্রমশই হয়ে উঠছে পণ্য। সরকার যেন আমাদের কান ধরে বুঝিয়ে দিচ্ছে, “তোমরা ছোটলোক, তোমাদের এত উচ্চশিক্ষার কি প্রয়োজন? শিক্ষার দরকার হলে ফেল কড়ি মাখ তেল, কোন খাতির নেই। সরকার কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয় যে তোমাদের লেখাপড়ার পিছনে খরচ করবে!”
বিভিন্ন সময়ে সরকার মহল বা সরকারী দালাল, বুর্জোয়া রাজনৈতিক দল বা শিক্ষাকে বানিজ্যিকীকরণের পক্ষের মানুষেরা বলে থাকেন, মেধার মূল্যায়ন- মেধার মূল্যায়ন। মেধার মূল্যায়ন ব্যাপারটা আসলে কি? মেধাবী ছাত্রদের জন্য সরকার বৃত্তির ব্যবস্থা করে, নানান সুযোগ সুবিধা পায়, কম খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়, কিন্তু আসলেই সেখানে মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে কি?
আপনি একটা দৌড় প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করলেন, তারপর একজন প্রতিযোগীর পায়ে একমন পাথর বেধে দিলেন আর অপরজনকে একটি সাইকেল কিনে দিলেন, তাহলে আর যাই হোক এ প্রতিযোগিতাকে সুস্থ প্রতিযোগিতা বলা যায় না। এই প্রতিযোগিতার জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার। হয় দুজন কেই সাইকেল কিনে দিন বা দুজনার পায়েই পাথর বেধে দিন । তবেই বোঝা যাবে প্রকৃত মেধার মাপকাঠি, বোঝা যাবে কে কতটা মেধাবী। একজন গাড়ির এসিতে বসে ঠান্ডা হাওয়ায় বসে আসা যাওয়া করে, তিনজন প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ে এসএসসি এইচএসসি তে গোল্ডেন এ প্লাস পাবে আর অপরদিকে লোকাল বাসে ঝুলে ঝুলে তিনটা ছাত্র ছয় ঘণ্টা ধরে পড়িয়ে , বাজার করে, কারেন্ট পানি বিদ্যুতের বিলের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে একই মানের রেজাল্ট দেবে এটা কখনোই আশা করা যায় না। যারা মেধার মূল্যায়নের কথা বলেন তাদের বলব দুজনকেই সমান সুযোগ দিয়ে দেখুন , তবেই না হবে মেধার মূল্যায়ন।
আর তাদের দুজনকেই সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেবার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমরা সাধারণ জনগণ রাষ্ট্রকে ট্যক্স দেই সেনাকুঞ্জে লেফট রাইটের নামে আর্মির তেলঝরা দেখতে না, বা এমপিদের জন্য ফ্লাট বরাদ্দ, গাড়ী বরাদ্দের নামে ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ উৎপাদনের জন্য না। আমরা ট্যাক্স দেই এই যারা পিছিয়ে পড়েছে বা পড়ছে- অর্থনীতির কাছে- রাজনীতির কাছে- নাগরিক জীবনের কাছে বিপর্যস্ত হয়েও একটি আশা নিয়ে টিকে আছে যে “একদিন আমাদেরও সুদিন আসবে, আমরাও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হইয়ে মাথা উঁচু করে দঁড়াবো”, তাদের সে সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
প্রয়োজনে ধনী পরিবারের ছেলেদের শিক্ষার খরচ দ্বিগুণ করে বা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ট্যাক্স দ্বিগুণ করে হলেও এ দরিদ্র ছেলেগুলোকে শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছেলেও যদি সিমেস্টারে টাকা দিতে না পেরে হতাশ হয়ে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে তার দায় কে নেবে? রাজনৈতিক দলগুলো সবসময় চাইবে শিক্ষাবঞ্চিত তরুনদের, তাতেই তাদের লাভ। এদের দিয়ে ছাত্রদল ছাত্রলীগ শিবিরের মত রাজনৈতিক গুন্ডাপান্ডার দল তৈরি করতে পারলেই তাদের লাভ। তরুনরা নেশা করে রাস্তায় ছিনতাই করবে, রাজনৈতিকদলগুলোর গুটিতে পরিণত হবে, সেটাই তাদের রাজনৈতিক কৌশল। একটা জনগোষ্ঠী যতবেশি শিক্ষিত হবে, শাসক শ্রেনীর প্রতারণা তারা তত ভালভাবে উপলব্ধী করতে পারবে, আর এটাই বন্ধ করতে চায় বুর্জোয়া রাজনৈতিকদলগুলো। শিক্ষিত শিক্ষা বিক্রয় যোগ্য পণ্য নয়, যে যার সামর্থ্য আছে সে কিনে নেবে আর যার নাই সে পাবে না।
কেউ কেউ বলেন মেধাই হোক উচ্চশিক্ষা লাভের মাপকাঠি, অমেধাবীদের উচ্চশিক্ষা দরকার নেই; তাদের বলতে চাই একটি গরীব মেধাবী ছাত্রের সারাদিনের পরিশ্রমের পর সে এক ঘণ্টা সময় পায় পড়ার আর একটি ধনী পরিবারের ছেলে ১০ ঘণ্টা বাড়তি সময় পাবার পরেও পড়ার জন্য তিন ঘণ্টা ব্যবহার করে, এটি অবশ্যই আমাদের অর্থনৈতিক বৈষম্য। এর দায়ভার সেই নিম্নমধ্যবিত্ত বা দরিদ্র ঘরের ছেলেটির নয়, এর দায় আমাদের সকলের, আমাদের রাষ্ট্রের-রাষ্ট্রব্যবস্থার। উচ্চশিক্ষা লাভের মাপকাঠি কেবল ‘তথাকথিত’ মেধা হতে পারেনা, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থানও এখানে বিবেচ্য। কারণ অর্থনীতির সাথে, শ্রেনীচরিত্রের সাথে মেধার সুস্পষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। শুধু মেধাকে বিবেচনা করা হলে আসলে কোনভাবেই সঠিক মানদণ্ড তৈরি হয় না।
আমাদের এই রকম শিক্ষার বানিজ্যিকীকরণ চলতে থাকলে যেটা হবে, তা হচ্ছে ধনীরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে, আর দরিদ্র জনগোষ্ঠী উচ্চশিক্ষার খরচ যোগাতে না পেরে এক সময় ঝরে যাবে, তারা শিক্ষার প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। এমনিতেই আমাদের তরুণরা নানান হতাশায় নিমজ্জিত, তার উপরে এইভাবে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করে তাদের শিক্ষা সম্পর্কে, জীবন সম্পর্কে হতাশ করে ফেলার কি অধিকার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আছে? একটি অর্থনৈতিক শ্রেণী সৃষ্টি করে আমাদের সমাজের মধ্যে একটা নতুন ধনিক সমাজ গঠিত হবে, যাদের কাছেই শুধু শিক্ষা সহজলভ্য হবে, তারাই আমাদের রাজনীতির ধারক বাহক হবে, তারাই আমাদের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। আর আমাদের নিম্নবিত্তরা আরো দরিদ্রে পরিণত হবে, মধ্যবিত্তরা নিম্নবিত্তে পরিণত হবে। এই অশুভ চক্রান্ত শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগেই, আস্তে আস্তে শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করে আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কয়েক দশক পরে অসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এই সব উচ্চশিক্ষিত ধনী পরিবারের ছেলেরা বিদেশে চলে যাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের ছেলেমেয়েরা বিদেশে আরও বেশী সুবিধা পেয়ে পাড়ি জমাবে, কিন্তু দেশে রয়ে যাবে আমাদেরই এই দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েরা।
আমরা কি আমাদের ভবিষ্যতে এভাবে নষ্ট হয়ে যেতে দেখবো? আমাদের কি কিছুই করার নাই?
আগামী শুক্রবার এই নিয়ে বিকাল চারটায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে সংহতি জানাবার জন্য “জাতীয় স্বার্থে ব্লগার-অনলাইন একটিভিস্ট”- এর ব্যানারে আমরা উপস্থিত হচ্ছি। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনারা যে যেভাবে পারেন, সেদিন চলে আসুন শাহবাগে।
যে কয়টি দাবীর ভিত্তিতে ছাত্ররা আন্দোলন করছে তার একটি হল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৭(৪) ধারা পরিবর্তন, যাতে বলা হয়েছে, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হইবার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনঃপৌনিক ব্যয় যোগানে সরকার কর্তৃক প্রদেয় অর্থ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাইবে এবং পঞ্চম বছর হইতে উক্ত ব্যয়ের শতভাগ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ও উৎস হইতে বহন করিতে হইবে।”
আমাদের দাবী হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরণের সিদ্ধান্ত তারা বাস্তবায়ন করবে না, প্রয়োজনে সরকার শিক্ষাখাতে ভর্তুকি দেবে। আমাদের এত এত ট্যাক্সের টাকা কোথায় যাচ্ছে, যদি আমরা আমাদের তরুণদের শিক্ষাটুকুর সুযোগই দিতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা মুখ দেখাবো কিভাবে?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত পাঁচ বছর সরকার পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেয়া হতো, যেটা এই আইন অনুসারে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই পাঁচ বছরে যে টাকা এসেছে, তা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের কথা ছিল, যেন বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজেই নিজের খরচ চালিয়ে নিতে পারে। কিন্তু সমস্ত টাকাই লুটপাট হয়ে গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন অবকাঠামোই তৈরি করতে পারে নি। এখন তড়িঘড়ি করে ছাত্রদের উপরে চাপিয়ে দিচ্ছে অতিরিক্ত সেমিস্টার ফি’র বোঝা।
আমরা ব্লগার এবং অনলাইন একটিভিস্টরা যদি আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এই রকম দুর্দিনে ছাত্রদের পাশে না দাড়াই, তাহলে কে দাঁড়াবে। ব্যক্তিগতভাবে আমরা আগামী শুক্রবার তাদের আন্দোলনে শরিক হচ্ছি, আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনারাও আমাদের পাশে থেকে আমাদের কার্যক্রমকে শক্তিশালী করবেন। শিক্ষার অধিকারের জন্য আমাদের ছাত্রদের আমরা পুলিশের হাতে মার খেতে দেবো না। প্রয়োজনে আমরাও পিঠ পেতে দেবো, পুলিশের মার যেন আমাদের পিঠেও এসে পরে।
আন্দোলনকারী ছাত্রীর উপরে পুলিশী নির্যাতন
জয় আমাদের হবেই। আমরা আমাদের শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত হতে দেবো না। শিক্ষা হোক সকলের জন্য। আর এজন্য আমাদের রুখে দাড়াতে হবে, নিজেদের অধিকার রক্ষায়।
আমরা যদি না জাগি, কেমনে সকাল হবে?