বাংলায় আর্য-ব্রাহ্মণ্যের আগমন ও প্রভাবের ইতিহাস – পর্ব ১
এই সিরিজটি নীহাররঞ্জন রায় এর “বাঙ্গালীর ইতিহাস – আদি পর্ব” গ্রন্থটির বিভিন্ন অংশকে নিজের মত করে সাজিয়ে সেই গ্রন্থটিকেই প্রাথমিক সূত্র ধরে লেখা হয়েছে। এই লেখার ভেতরেই প্রাসঙ্গিক সূত্রগুলো দেয়া হয়েছে। যারা সেই গ্রন্থটি কাভার-টু-কাভার পাঠ করেছেন, তাদের এই সিরিজটি অনুস্মরণ করার প্রয়োজন নেই।
বাংলায় বর্তমান হিন্দুধর্মের দিকে যদি আপনারা তাকান তাহলে যে জাতপাত ও মূল ধারার বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের সংস্কৃতি ফুটে উঠবে সেগুলো প্রধাণত বাংলার বাইরে থেকে আসা আর্য-ব্রাহ্মণ্য প্রভাবাধীন। হিন্দুদের আচার সংস্কার ও বর্ণব্যবস্থায় এককালে উত্তর ভারত থেকে আসা আর্য-ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রভাবটাই প্রধান। বাংলায় তারা আসবার পূর্বেও এই অঞ্চলে ভিন্ন ধর্মীয় রীতি প্রচলিত ছিল। সেই সব আর্য-পূর্ব সংস্কৃতির রীতিগুলোও যে বাংলায় এখন আর প্রচলিত নেই তা নয়, এখনও এগুলো গ্রামে গঞ্জে দেখতে পাওয়া যায়, বাংলার হিন্দুদের বিভিন্ন স্থানীয় উৎসবেই এগুলো অংশ হয়ে আছে। যাই হোক বাংলায় এই আর্য ব্রাহ্মণ্য প্রভাব একদিনে আসেনি, অনেক দিন ধরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন সংঘাত ও সমন্বয়ের ধারার মধ্য দিয়ে এই সংস্কৃতি বাংলায় প্রবেশ করে, এবং একসময় নিজেকে মূল ধারার সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, আর গঠন করে বাংলার বর্তমান হিন্দুধর্ম। এই প্রবন্ধে বাংলার সেই ইতিহাসেরই কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
বাংলায় আর্য-ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি প্রবেশের পূর্বেও শক্তিশালী সংস্কৃতি ছিল। নৃতাত্ত্বিক গবেষণাগুলোর দ্বারা উঠে এসেছে যে, আর্য পূর্ব সমাজেও কৃষি ও শিকারজীবী, গৃহী ও অরণ্যজীবী এরকম হিসেবে অসংখ্য কোম বা গোষ্ঠী বা একরকম বর্ণবিন্যাস প্রচলিত ছিল। এইসব কোমের মধ্যে বৈবাহিক, আচারগত, ও ধর্মীয় নানান বিধি নিষেধ চালু ছিল। আর এসব বিধি নিষেধের উপর ভিত্তি করে আর্যপূর্ব বাংলায় বিভিন্ন কোমদের মধ্যে বিভেদ প্রাচীরও অনেক ছিল। পরবর্তিতে যখন বাংলায় মৌর্য, শুঙ্গ ও গুপ্তযুগে আর্য-ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি প্রবেশ করে, সঙ্গতকারণেই তাদেরকে স্থানীয় আর্য-পূর্ব সংস্কৃতিকে, তাদের সম্বন্ধগত বিধি নিষেধকে আশ্রয় করতে হয়েছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আর্য-ব্রাহ্মণ্য সংস্কার ও সংস্কৃতি গুণ ও কর্মকে ভিত্তি করে তাদের চিন্তা ও আদর্শ অনুসারে এইসব বিধিনিষেধকে ক্রমে ক্রমে কালানুযায়ী প্রয়োজনে, যুক্তি ও পদ্ধতিতে প্রথা ও শাসনপদ্ধতিতে পরিণত করেছে।
মৌর্য ও শুঙ্গযুগ মিলে সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৭৫ অব্দ। এই সময়ে বাংলায় মৌর্যশক্তির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরাভবের পর সেখানে আর্য-ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রবেশ ও প্রভাব ধীরে ধীরে শুরু হয়। এই মৌর্য ও শুঙ্গযুগের আর্যীকরণকেই আমি প্রথম আর্যীকরণ বলছি। গুপ্তযুগ ছিল ৩১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৫৪৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এই সময়ে বাংলায় ব্রাহ্মণাদি বর্ণবিণ্যাস শক্তিশালী হয়, এই সাংস্কৃতিক প্রভাবটিকে আমি বলছি দ্বিতীয় আর্যীকরণ। আজকের প্রবন্ধটি কেবল প্রথম আর্যীকরণের আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
বাংলার সংস্কৃতি তাই ছিল আর্যপূর্ব ও আর্য-ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির এক সম্মেলন। কিন্তু এই মিলন একদিনে হয়নি, কয়েক শতাব্দি ধরে নানান বিরোধ, নানান সংগ্রাম, নানান মিলন ও আদান প্রদানের মাধ্যমেই একসময় এই সমন্বয় সম্ভব হয়। যাই হোক, বাংলায় এই বিরোধ-মিলন-সমন্বয়ের সূচনা কিভাবে হয়েছিল তার কিছু কিছু আভাস প্রাচীন আর্য-ব্রাহ্মণ্য, বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থে পাওয়া যায়। তবে এমন নয় যে এই গ্রন্থগুলো পক্ষপাতদুষ্ট হবে। কেননা এই গ্রন্থগুলো সবসময়ই আর্য-ব্রাহ্মণ্য, বৌদ্ধ বা জৈনদের পক্ষ নিয়েছে এরকমটাই আশা করা যায়। আর্যপূর্ব সংস্কৃতিকে পক্ষ নিয়েছে এমন কোন উৎস্য বা অকাট্য প্রমাণ অনুপস্থিত।
দেখা যায়, বাংলা অঞ্চলে আর্য-ব্রাহ্মণ্য সংস্কার ও সংস্কৃতি এসেছে সবার পরে। ততদিনে তারা উত্তর-ভারত সহ প্রায় সর্বত্রই বিজয়ী, সুপ্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী। অন্যদিকে তখন সমগ্র বাংলাদেশে আর্যপূর্ব সংস্কার ও সংস্কৃতিসম্পন্ন বিচিত্র কোমদের বাস, তারাও কম শক্তিশালী ছিল না। তাদের নিজস্ব সংস্কার ও সংস্কৃতিবোধ ব্যাপক ছিল। কাজেই এই অঞ্চলে আর্য-ব্রাহ্মণ্য-সংস্কার ও সংস্কৃতির বিজয়াভিযান বিনা বিরোধ ও বিনা সংঘর্ষে সম্পন্ন হয়নি। বহু শতাব্দী ধরে এই বিরোধ-সংঘর্ষ চলেছে – এটা যেমন সহজেই অনুমান করা যায়, তেমনি ঐতিহাসিক সাক্ষ্য দ্বারাও এটি সমর্থিত। লিপিপ্রমাণ থেকে মনে হয় গুপ্ত আমলে আর্য-ব্রাহ্মণ্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে ব্রাহ্মণ্য বর্ণ-বিন্যাস, ধর্ম, সংস্কার ও সংস্কৃতি এদেশে সম্যকভাবে স্বীকৃত হয়নি। তার পরেও ব্রাহ্মণ্য বর্ণ-বিন্যাস নিম্নস্তরে ও তার বাইরে সংস্কার ও সংস্কৃতির সংঘর্ষ বহুদিন ধরে চলে।
সেন-বর্মণ আমলে (একাদশ – দ্বাদশ শতকে) বর্ণ সমাজের উচ্চস্তরে আর্যপূর্ব লোক-সংস্কৃতির পরাভব প্রায় সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু তারপরও বাঙালী সমাজের অন্তঃপুরে এবং একান্ত নিম্নস্তরে এই সংস্কার ও সংস্কৃতির প্রভাব আজও একেবারে বিলুপ্ত হয়নি। ব্রাহ্মণ্য বর্ণ-বিন্যাসের আদর্শ সেখানে শিথিল, দৈনন্দিন জীবনে ধর্মে, লোকাচারে, ব্যবহারিক আদর্শে, ভাবনা-কল্পনায় আজও সেখানে আর্যপূর্ব সমাজের বিচিত্র স্মৃতি ও অভ্যাস সুস্পষ্ট। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে, শিল্পে, ধর্মে, এমনকি বর্তমান বাঙ্গালীর ধ্যানে মননে আচারে ব্যবহারেও এখনও সেই স্মৃতি বহমান, একথা ভুললে চলবে না।
ঐতরেয় আরণ্যক গ্রন্থের “বয়াংসি বঙ্গাবগধাশ্চেরপাদা” এই পদে কেউ কেউ বঙ্গ, মগধ, চের ও পাণ্ড্য অঞ্চলের উল্লেখ আছে বলে মনে করেন। এইসব অঞ্চলকে বলা হয়েছে বয়াংসি বা “পক্ষী-বিশেষাঃ’, এবং এরা যে আর্য-সংস্কৃতির বাইরের তাও সেখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ গ্রন্থে পুণ্ড্র (বর্তমান উত্তরবঙ্গ অঞ্চল) এর মত বাংলার জনপদের লোকজনকে দস্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই দুটি ছাড়া প্রাচীন কোন গ্রন্থে বাংলার অঞ্চলগুলোর কথার উল্লেখ নেই। বোঝায় যায় যে, সেই প্রাচীনকালের আর্যভাষীরা তখন পর্যন্ত সমগ্র বাংলা অঞ্চলের সাথে পরিচিত হয়নি। পরবর্তীতে সংহিতা, ব্রাহ্মণ ইত্যাদি রচনার সময় তারা পুণ্ড্র, বঙ্গ ইত্যাদি অঞ্চলের নাম শুনেছেন মাত্র।
ঐতরেয় ব্রাহ্মণের একটি গল্প এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। ঋষি বিশ্বামিত্র একটি ব্রাহ্মণ বালককে পোষ্যপুত্ররূপে গ্রহণ করেন, দেবতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য যজ্ঞে বালকটিকে উৎসর্গ করা হচ্ছিল, বিশ্বামিত্র তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু বিশ্বামিত্রের এই পোষ্যপুত্র গ্রহণ তার ৫০ জন পুত্র ভালভাবে নিল না। বিশ্বামিত্র রেগে গিয়ে তাদের অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, তাদের সন্তানরা যে উত্তরাধিকার লাভ করবে তারা একেবারে পৃথিবীর প্রান্ততম সীমায় (বিকল্পে তাদের বংশধরেরা সর্বনিম্ন বর্ণ প্রাপ্ত হবে)। এরাই দস্যু আখ্যা পাওয়া অন্ধ্র, পুণ্ড্র, শবর, পুলিন্দ ও মুতিব গোষ্ঠীর জন্মদাতা। এই গল্পের ক্ষীণ প্রতিধ্বনি মহাভাভ্রতের এবং কিছু পুরাণের গল্পেও শোনা যায়।
মহাভারতের অন্য জায়গায় ভীমের দিগ্বিজয় প্রসঙ্গে বাংলার সমুদ্রতীরবাসী জাতিগুলোকে বলা হয়েছে “ম্লেচ্ছ”, ভাগবত পুরাণে কিয়াত, হূণ, অন্দ্র, পুলিন্দ, পুক্কস, আভীর, যবন, খস ও সূহ্ম অঞ্চলের লোকেদের বলা হয়েছে “পাপ”। বৌধায়নের ধর্মসূত্রে আরট্ট (পাঞ্জাব), পুণ্ড্র (উত্তর বঙ্গ), সৌবীর (দক্ষিণ পাঞ্জাব ও সিন্ধু), বঙ্গ (পূর্ববঙ্গ), কলিঙ্গ (উড়িষ্যা) প্রভৃতি অঞ্চলের লোকেদের অবস্থান নির্দেশ করা হয়েছে আর্য বহির্ভূত দেশের প্রত্যন্ততম সীমায়, এদের বলা হয়েছে “সংকীর্ণ যোনয়ঃ”, এরা একেবারে আর্য সংস্কৃতির বাইরে। এই জনপদে কেউ স্বল্পকালের জন্য গেলেও ফিরে এসে তাকে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হত। স্পষ্টই দেখা যায়, বৌধায়নের কালে বাংলার সাথে আর্যসংস্কৃতির পরিচয় যদিও হয়েছে, যাতায়াতও আরম্ভ হয়েছে, কিন্তু তখনও আর্য-ব্রাহ্মণ্য-সংস্কারের দৃষ্টিতে এইসব অঞ্চলের লোকেরা ঘৃণিত ও অবজ্ঞাত ছিল।
এই ঘৃণা ও অবজ্ঞা প্রাচীন আর্য, জৈন ও বৌদ্ধ গ্রন্থাদিতেও কিছু কিছু দেখা যায়। আচারঙ্গ-আয়ারঙ্গ সূত্রের একটি গল্পে পথহীন রাঢ়দেশে (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে) মহাবীর ও তার শিষ্যদের যে লাঞ্ছনা ও উৎপীড়নের যে বর্ণনা রয়েছে, বজ্রভূমিতে (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে) যে অখাদ্য-কুখাদ্য ভখণের ইঙ্গিত আছে তাতে এই ঘৃণা ও অবজ্ঞা সুস্পষ্ট। বৌদ্ধ আর্মঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থে গৌড় (বর্তমান মালদা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ), সমতট (বর্তমান কুমিল্লা, নোয়াখালি অঞ্চল) ও হরিকেলের (বর্তমান বাংলাদেশে) লোকেদের ভাষাকে বলা হয়েছে “অসুর” ভাষা।
এইসব বিচিত্র উল্লেখ থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, এরা এমন একটি সুদীর্ঘকালের স্মৃতি-ঐতিহ্য বহন করে, যে সময়ে আর্যভাষাভাষী (ভারতবর্ষের ইন্দো-আর্য ভাষাভাষী) ও আর্য-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক উত্তর ও মধ্যভারতের লোকেরা পূর্বতম ভারতের বঙ্গ, পুণ্ড্র, রাঢ়, সুহ্ম প্রভৃতির গোষ্ঠী বা কোমদের সাথে পরিচিত ছিল না, যে সময়ে এইসব কোমদের ভাষা ছিল ভিন্ন, আচার-ব্যবস্থা ছিল ভিন্ন। আর্য-ব্রাহ্মণ্য সংস্কারের পুরোধাগণ এই ভিন্ন আচার-ব্যবহার, সভ্যতা, সংস্কৃতি, ভাষার লোকেদেরকে আখ্যায়িত করেছিল “দস্যু”, “ম্লেচ্ছ”, “পাপ”, “অসুর” ইত্যাদি নামে, যার মূলে ছিল জাতিবিদ্বেষ। কেবল প্রাচীণ আর্য-ব্রাহ্মণ্য সংস্কারই (বা “সনাতন ধর্ম”) নয়, এই বিদ্বেষের ঊর্ধ্বে যেতে পারেনি তদকালীন জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মও।
কিন্তু এই জাতিবিদ্বেষ মূলক দর্পিত উন্নাসিকতা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নানান বিরোধ ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে এইসব দস্যু, ম্লেচ্ছ, অসুর, পাপ গোষ্ঠীর লোকদের সঙ্গে আর্যভাষাভাষী লোকেদের মেলামেশা হচ্ছিল। এসব বিরোধ সংঘর্ষের কিছু কিছু আভাস পাওয়া যায় ইতস্তত বিক্ষিপ্ত নানা পৌরাণীক গল্পে – রামায়ণে রঘুর দিগ্বিজয়, মহাভারতের কর্ণ ও ভীমের দিগ্বিজয়ম আচারঙ্গসূত্ররে মহাবীরের রাঢ়দেশে জৈনধর্ম প্রচার ইত্যাদি প্রসঙ্গে। রামায়ণে দেখা যায়, মৎস্য-কাশী-কোশল অঞ্চলের সাথে সাথে বঙ্গ-অঙ্গ-মগধ অঞ্চলের রাজবংশগুলো অযোধ্যা রাজবংশের সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হচ্ছেন। বায়ু ও মৎস্যপুরাণে, মহাভারতে একটি গল্প আছে। এই গল্পে অসুররাজ বলির স্ত্রীর গর্ভে বৃদ্ধ অন্ধ ঋষি দীর্ঘতমসের পাঁচতি পুত্র উৎপাদনের কথা বর্ণিত হয়েছে। এই পাঁচ পুত্রের নাম হচ্ছে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র ও সুহ্ম। এদের নাম থেকেই নাকি পাঁচ পাঁচটি জনপদের নামের উদ্ভব! এই গল্পগুলো থেকে বোঝা যায়, আর্যপূর্ব সমাজের “ম্লেচ্ছ” ও “দস্যু”রা ধীরে ধীরে আর্যসমাজে স্বীকৃতি পাচ্ছিল।
প্রাথমিকভাবে সংঘর্ষ ও যোগাযোগের পর বাংলা অঞ্চলের এসব “দস্যু” ও “ম্লেচ্ছ” অঞ্চলগুলো ধীরে ধীরে আর্যসমাজ ব্যবস্থায় স্বীকৃতি ও স্থান লাভ করে আরম্ভ করে। এই স্বীকৃতি ও স্থানলাভ যে একদিনে ঘটেনি তা সহজেই অনুমেয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একদিকে বিরোধ ও সংঘর্ষ, অন্যদিকে স্বীকৃতি ও অন্তর্ভূক্তি চলছিল। কখনও তা ধীর ও শান্ত ছিল, কখনও দ্রুত ছিল। রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিকভাবে এই অঞ্চলগুলোকে আগেই দমন করা হয়। আর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব এসেছিল ধীরে ধীরে, অনেক পরে। মানবধর্মশাস্ত্রে আর্যাবর্তের সীমা দেয়া হয়েছে পশ্চিম সমুদ্র হতে পূর্ব সমুদ্রতীর পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রাচীন বাংলার অন্তত কিছুটা অংশ হলেও আর্যাবর্তের অন্তর্গত ছিল বোঝা যাচ্ছে। মনু পুণ্ড্র অঞ্চলের লোকেদেরকে বলছেন ব্রাত্য বা পতিত ক্ষত্রিয়, আর তাদেরকে দ্রবিড়, শক, চৈনিক প্রভৃতি জাতির সাথে একই শ্রেণীভুক্ত করছেন।
এদিকে মহাভারতের সভাপর্বে বঙ্গ ও পুণ্ড্রদেরকে যথার্থ ক্ষত্রিয় বয়া হয়েছে, জৈন প্রজ্ঞাপনা গ্রন্থেও বঙ্গ ও রাঢ় অঞ্চলকে আর্য অঞ্চল বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মহাভারতে দেখা যায়, প্রাচীন বাংলার কোন কোন অঞ্চল তীর্থ হিসেবে স্বীকৃত হচ্ছে, যেমন পুন্ড্রভূমির করতোয়া তীর, সুহ্মদেশের ভাগীরথী সাগর-সঙ্গম। অর্জুন অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গের তীর্থস্থানগুলো ভ্রমণের সময় ব্রাহ্মণদেরকে অনেক উপহার দিয়েছিলেন। বাৎস্যায়ন তার কামসূত্রে (তৃতীয়-চতুর্থ শতক) গৌড়-বঙ্গের ব্রাহ্মণদের উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, বাংলা ও বাঙ্গালির আর্যীকরণ ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। মহাভারত ও পুরাণগুলোতে এই ইঙ্গিতই পাওয়া যায়। বায়ু ও মৎস্যপুরাণে, মহাভারতে বঙ্গ, সুহ্ম, পুণ্ড্রদেরকে ক্ষত্রিয় তো বলা হয়েছেই, সেই সাথে শবর, পুলিন্দ ও কিরাতদেরকেও ক্ষত্রিয় বলা হয়েছে (শবর হল ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িশ্যা ও মধ্যপ্রদেশে বসবাসরত মুণ্ড জনগোষ্ঠী, পুলিন্দরা মধ্যপ্রদেশের বিন্ধ্য অঞ্চলে বাস করত, কিরাতরা হিমালয়ের পাদদেশে বাস করত যা নেপাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল)। এই অঞ্চলের কোন কোন বংশ ব্রাহ্মণ পর্যায়ও স্বীকৃতি পায়। কিন্তু এই বিজিত লোকদের বেশিরভাগই শূদ্রবর্ণ পর্যায়ে অন্তর্ভূক্ত হয় – এই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
মনু বলছেন, পৌণ্ড্রক ও কিরাতরা ক্ষত্রিয় ছিল, কিন্তু অনেকদিন তারা ব্রাহ্মণদের সংস্পর্শে না আসায় ব্রাহ্মণ্য পূজাচার প্রভৃতি ত্যাগ করেছিল, আর সেজন্য তাদেরকে শূদ্র পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়। অন্যান্য অঞ্চলেও হয়তো এটিই ঘটে থাকবে। মনু কৈবর্তদেরকে সংকর বর্ণ হিসেবে অভিহিত করেন, কিন্তু বিষ্ণুপুরাণে তাদেরকে “অব্রহ্মণ্য” বলা হয়েছে, যার অর্থ ব্রাহ্মণ সমাজ বহির্ভূত। কিন্তু একদিকে স্বীকৃতি বা অন্তর্ভূক্তি, আবার অন্যদিকে উন্নীত করে অবনতিকরণ যাই চলুক না কেন, এটা সুস্পষ্ট যে, আর্য-সংস্কৃতির প্রভাব বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আর্য-ব্রাহ্মণ্য বর্ণ বিন্যাসও ধীরে ধীরে বাংলায় তার মূল প্রতিষ্ঠা করেছিল। শুধু বাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বীরাই যে আর্য-সংস্কৃতি ও সমাজ-ব্যবস্থা বাংলায় বহন করে এনেছিলেন তা নয়, জৈন ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরাও এ সম্পর্কে সমান কৃতিত্ব দাবি করেন। তারা যে বেদবিরোধী ছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু তারা আর্য-সমাজব্যবস্থা বিরোধী ছিলেন না। এছাড়া বর্ণ-ব্যবস্থাকেও তারা একেবারে অস্বীকার করেন নি।
মৌর্য আধিপত্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ অব্দ – খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫ অব্দ) ও শুঙ্গ আধিপত্যের (খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫ অব্দ – খ্রিস্টপূর্ব ৭৫ অব্দ) সাথে সাথে ও তাকে আশ্রয় করে আর্য-সংস্কৃতি ও সমাজ ব্যবস্থা বাংলায় অধিকতর প্রসার লাভ করেছিল তাতে সন্দেহ নেই, বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্যধর্মাবলম্বী রাষ্ট্রের আধিপত্যকালে এটি হয়। কিন্তু মহাস্থানলিপির গলদন পুরোদস্তুর দেশজ বাংলা নাম বলেই মনে হয়। গলদনকে সংস্কৃত গলর্দন করলেও তার দেশজ রূপ অপরিবর্তিতই থেকে যায়। লিপিটির ভাষা প্রাকৃত, মৌর্য আমলের সব লিপির ভাষাই তো তাই, কিন্তু রাষ্ট্রের যে আর্যসামাজিক আদর্শ গৃহীত ও স্বীকৃত হচ্ছিল তা সুস্পষ্ট। মনে হয়, এই সময় থেকেই ব্যাবসা-বাণিজ্য, ধর্মপ্রচার, রাষ্ট্রকর্ম ইত্যাদিকে আশ্রয় করে আরও বেশি সংখ্যায় উত্তর-ভারতীয় আর্যভাষীরা বাংলায় এসে বসবাস আরম্ভ করে থাকে। কিন্তু আর্য, বৌদ্ধ, জৈন ও সরবোপরি ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও সংস্কৃতির পুরোপুরি প্রতিষ্টা গুপ্তকালের (প্রায় ৩১৯ খ্রিস্টাব্দ – ৫৪৩ খ্রিস্টাব্দ) আগে হয়েছিল বলে মনে হয় না। এবং আর্য-ব্রাহ্মণ্য বর্ণ-ব্যবস্থাও বাংলায় বোধ হয় তার আগে দানা বেঁধে উঠতে পারেনি। পরের পর্বগুলোতে বাংলায় গুপ্তযুগ ও তার পরবর্তি সময়ে কিকরে ব্রাহ্মণাদি বর্ণবিন্যাস তিলে তিলে গড়ে উঠেছিল সেসম্পর্কে আলোচনা করব। বাঙ্গালি হিন্দুদের মধ্যে যে বর্ণব্যবস্থা ও নিম্নবর্ণবিদ্বেষ দেখা যায় তা ব্রাহ্মণ্য প্রভাবিত কৃত্রিম নির্মাণ বই আর কিছু নয়, আর সেই বর্ণবিন্যাস সৃষ্টির ইতিহাস সকলের সামনে তুলে ধরা দরকার।
মধ্য ও উত্তরভারত থেকে যেসব রাজবংশ, যেসব বণিক ও ব্যবসায়ী যুদ্ধ, রাষ্টকর্ম ও ব্যাবসা-বাণিজ্য উপলক্ষে বাংলায় এসেছিলেন তারা তাদের সাথে আর্য-ভাষা, আর্য-ধর্ম ও আর্য-সংস্কৃতিকেও বহন করে নিয়ে এসেছিলেন। তারাই পথ তৈরি করে সেই পথ দিয়ে আর্য অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তবে হ্যাঁ, ধর্মাচার ও ধর্মীয় সংস্কৃতির কথা যদি আসে তাহলে বলতে হয় যে বাংলায় প্রথমেই ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি প্রবেশ করেনি। প্রথমে এসেছিল জৈন, অজীবিক ও বৌদ্ধ সংস্কৃতিই বাংলায় প্রবেশ করে, এবং সেগুলো বেদবিরোধী সংস্কৃতি হলেও আর্যসংস্কৃতিই বটে। পরবর্তিতে গুপ্ত আমলে পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্য-ধর্ম ও সংস্কৃতি বাংলায় ক্রমশ বিস্তার লাভ করে, যা বর্তমান ব্রাহ্মণ্য ধর্মের ভিত্তি রচনা করেছিল। বর্তমান বাংলার হিন্দুধর্ম ও লোকাচারে ব্রাহ্মণ্যের প্রভাবই প্রধাণ হলেও আর্যপূর্ব যুগের ধর্ম, বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রভাবও দেখা যায়। বাংলার ধর্মের এই ইতিহাস ও ক্রমবিবর্তনও পরের পর্বগুলোতে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
বাধা ও বিরোধ গড়ে তোলার পরও সমসাময়িক বাংলার প্রাচীন কোমগুলো আর্য-ব্রাহ্মণ্যের এই প্রভাব ঠেকাতে পারে নি। রাষ্ট্রক্ষেত্রে আর্য-পরাভবের প্রধান কারণ ছিল এই যে, আদি বাংলার সেই কোম বা জাতিগোষ্ঠীগুলো তাদের কৌম-সামাজিক মন পরিত্যাগ করে কৌমসীমা অতিক্রম করে রাজতন্ত্রের বৃহত্তর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিধি মধ্যে স্থায়ীভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে নিজ নিজ কৌম স্বার্থবুদ্ধি বা জাতিগোষ্ঠীকেন্দ্রিক মনোভাবই বোধ হয় তাদের পরাজয়ের কারণ। রাষ্ট্র ও অর্থনীতির ক্ষেতে বাইরের বিজেতা রাষ্ট্রগুলো উন্নততর উৎপাদন ব্যবস্থা ও উন্নততর সামাজিক ব্যবস্থা ও ধর্ম, উন্নততর অস্ত্র-শস্ত্র ও যুদ্ধপ্রণালীও নিঃসন্দেহে তাদের পরাভবের কারণ ছিল, এই বিষয়ে সন্দেহের কিছু অবকাশ থাকলেও তার পরিমাণ অল্পই। এছাড়া অর্থ ও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে পরাভব ঘটলে ধর্ম ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও কম বেশি পরাভব ঘটা অনিবার্য তা আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে। এমনকি সুপ্রাচীন সংস্কৃতি সম্পন্ন চীন ও ভারতবর্ষের ইতিহাসেও তার প্রমাণ দেখা যায়।
(চলবে)
জিহাদী ধর্মের পর্দা উন্মোচন- ০৭
এমন পোলারে বাঘে খাইলো কেমনে ?
আগের এপিসোড এ ছিল- “জিহাদী ধর্মকে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য বিভিন্ন দেশ “(ক) টেকনোলজীর মাধ্যমে যাতায়াত ও কার্য্যকলাপ নিয়ন্ত্রন (যেমন, যুক্তরাষ্ট্র), (খ) দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া (যেমন, মায়ানমার), (গ) ক্যাম্প-এ বন্দী করে রাখা (যেমন- চীন) এই সব করছে।“ কারণ মুক্ত পৃথিবীর মানুষ এমন গারদ খানায় আবদ্ধ হতে চায় না যেখানে তাদের নিজেদের মেয়েদেরই সন্মান নেই। বলা হয়েছিল “বর্তমান শতাব্দীতে এমন ঘটনা ঘটেছে যা ধর্মটির ভিত্তিমূল কাঁপিয়ে দিয়েছে।“ আজকের আলোচনা, সেই ঘটনা। মোহাম্মদের মৃত্যুর পর তার গড়া জিহাদী বাহিনী এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ আক্রমন করতে থাকে। ঐ বিশাল সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রন তখন আর মক্কা থেকে করা সম্ভব ছিল না। জিহাদী সেনাপতিরা নিজেরাই সব নিয়ন্ত্রন হাতে নিয়ে বিজিত দেশগুলির খলিফা হয়ে পড়ে। তারা আর মক্কার আইনে চলতো না, বরং তারা নিজেরাই সব করতো। তবে ইসলাম বা এর প্রচারকের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু করতে সাহস পেতো না। এই ধর্মের প্রতি আনুগত্যই ছিল তাদের রাজ্য শাসনের মূল ভিত্তি।
মোহাম্মদের মৃত্যুর উনিশ বছর পর থেকে পরবর্তী প্রায় ৩০০ বছর এই ধর্ম সম্বন্ধে যা লেখা হয়েছিল তাতে কোন রাজাই কোন রকম পরিবর্তন করতে সাহস করে নি। এই গুলির মধ্যে আছে- (১) কোরান , (২) হাদিস এবং (৩) সিরাত । এই বইগুলির মধ্যে যে কোন বুদ্ধিমান লোকই বাদ দিতে চাইবে এমন অসম্ভব, পরস্পরবিরোধী, উদভট, অবাস্তব এবং অতিরঞ্জিত কথা থাকলেও শত সহস্ত্র বৎসর ধরে সেগুলি অবিকৃত থাকে। এভাবে এরা ক্লাসিক মর্য্যাদা লাভ করে । এই গুলি আরবী ভাষায় লেখা । অন্য ভাষাভাষীরা এগুলি জানতো আরবী ভাষা জানা লোকের তরজমায় । বলাবাহুল্য এই সব তরজমাকারীরা সেগুলি শ্রোতাদের মন জয় করার মতন করে পরিবেশন করতো। এর ফলে আরবী না জানা মানুষদের মনে এই ধর্ম সম্বন্ধে এক ভ্রান্ত এবং ভালো ধারনার সৃষ্টি হয়। আবার কোরানের আয়াতগুলি সময়-অনুক্রম অনুযায়ী না সাজানোয় দুর্বোদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সৌদী আরব এই বইগুলি বাংলায় অনুবাদের জন্য প্রচুর অর্থ প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু ধার্মিক ব্যাক্তির সহায়তায় এগুলির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে। এই গুলি এখন সারা পৃথিবীর মাদ্রাসা, মসজিদ, ধর্মীয় লাইব্রেরী এবং ব্যাক্তিগত সংগ্রহে আছে। আর এর পিডিএফ কপি যে কত কম্পিঊটার, ট্যাব আর স্মার্ট মোবাইলে আছে তার কোন ইয়ত্তা নাই । এই সঙ্গে এসেছে সময় অনুক্রম মেনে তৈরী করা কোরান । এগুলি পড়ে আর এর অর্থ বুঝে এতদিনের ধার্মিকদের তো চক্ষু চড়ক গাছ। একদল এসব বলছে, আর এক দল “কিছুতেই হরে পারে না” বলে চিৎকার করে উঠছে। পরক্ষনেই কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে মূল বই পড়ে মিলিয়ে নিচ্ছে।
এগুলি পড়ে পড়ে স্পষ্ট বোঝা যায়, মোহাম্মদ তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে নতুন ধর্ম প্রচারের উদ্যোগ নেয় যাতে সে নিজেকে ইহুদী এবং খৃস্টান ধর্মের পরবর্তী এবং শেষ নবী হিসেবে ঘোষনা করে । দশ বছর এই কাজে সফল না হওয়ায় সে ডাকাতের দেশ মদিনায় চলে যায়। সে বুঝতে পারে এই ডাকাতেরা পছন্দ করবে এমন কিছু প্রচার করলেই সে ধর্ম প্রচারে সফল হতে পারবে। অতএব মরু ডাকাতেরা পছন্দ করে এমন জিনিস (মদ, মাংস, মেয়েমানুষ, শিশু, মধু, দুধ, ছায়া, ঠান্ডা পানি ইত্যাদি) দিয়ে তাকে তার ধর্মের বেহেস্ত বানাতে হয়। বানিজ্য বহরে আক্রমন আজীবন চলতে পারে না । তাই তাকে এই মরু ডাকাতদের জন্য আরবের ভেতরের এবং বাইরের সকল অবিশ্বাসীর বিরুদ্ধে ডাকাতির পরিবর্তে ধর্মযুদ্ধ বা জিহাদ প্রবর্তন করতে হয়। যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ ও বন্দীদের তিন পঞ্চমাংশ তাদেরকে দেয়া হয়। মেয়েদের বিষয়ে বলা হয়, তারা ধর্ম পালন না করলে বা স্বামীকে অসন্তুষ্ট করলে দোযখের আগুনে পুড়বে। নিজের জন্ম এবং পিতৃ সম্পত্তি না পাওয়ার দুঃখ থেকে তাকে পুত্র বধুকে বিবাহ এবং অনাথের সম্পত্তি না পাওয়ার মত অদ্ভুত আইন চালূ করতে হয়। নিজের কোন পুত্র না থাকায় তার পারিবারিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল হয় নি।
মোহাম্মদের প্রচারিত ধর্মের তথ্য এখন স্মার্টফোন আর নেট আছে এমন যে কোন বাংলাভাষীর কাছে সহজ লভ্য। সৌদী আরব ও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় যে সত্য আজ থলের বাইরে বেড়িয়ে পড়েছে তাকে আর থলেতে ঢোকানো যাবে না । বরং নাড়াচাড়া করলেই তা থেকে ভুরভুরে গন্ধ বের হয়। তাই বলা হইয়েছিল, “বর্তমান শতাব্দীর শুরুতেই এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা জিহাদী ধর্মটির ভিত্তিমূল কাঁপিয়ে দিয়েছে।“ এই কাঁপন ভিত্তিকে শক্ত করবে না ভেঙ্গে ফেলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
(জিহাদী ধর্মের পর্দা উন্মোচন- ০৭ শেষ)