বৌদ্ধধর্ম – নাস্তিকতা নাকি আস্তিকতা? -৩
বিগত দুই পর্বে লিখেছি বৌদ্ধধর্মে আস্তিক্যবাদ ও নাস্তিক্যবাদ নিয়ে। বিভিন্ন মিডিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মকে কেউ নাস্তিক্যবাদ, আস্তিক্যবাদ, অদ্বৈতবাদ ইত্যাদি প্রচার করা হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় পন্ডিতগণ তাদের বইতে লিখে থাকেন যে বুদ্ধ সৃষ্টিকর্তা বিষয়ে চুপ ছিলেন। কথাটি কতই গোঁজামিলপূর্ণ এই লেখাতে ধরা দেবার চেষ্টা করব। তাছাড়া নাস্তিকবাদীরা কী প্রার্থণা করে? তাঁরা কী স্বর্গ নরক বিশ্বাস করে? তারা কী পূণঃজন্ম বিশ্বাস করে? বোধিগাছের নিচে ৬ বছর কঠোর সাধনা করার পর গৌতম বুদ্ধত্ব লাভ করেন? তাহলে সেই লাভটি কোত্থেকে ও কীভাবে আসে?
বৌদ্ধ ধর্ম যদি নাস্তিক্যবাদ ধর্ম হয় তাহলে বুদ্ধ কীভাবে নাস্তিকবাদীকে মিথ্যাদৃষ্টির সাথে তুলনা করেছেন এবং পঁচাগন্ধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন,
যে ইধ কামেসু অসঞ্ঞতাজনা, রসেসু গিদ্ধা অসুচিভাবমস্সিতা
নত্থিকদিট্ঠী বিসমা দুরন্নযা, এসামগন্ধো ন হি মাংসভোজনং (১)
অনুবাদ: এই জগতে যাহারা কামভোগে অসংযত জন, রসাস্বাদে অত্যাসক্ত, অশুচিভাবাশ্রিত, নাস্তিকবাদী বা মিথ্যাদৃষ্টিক, বিষম বা অমার্গ এবং ভ্রান্তপথ অনুসারী তাহারাই আমগন্ধবাদী বা পঁচাগন্ধ শ্রেণিভূক্ত হয়। মাংসভোজনকারী নহে।
এই সূত্রে গৌতম বুদ্ধ নাস্তিকবাদীদেরকে স্পষ্টই পঁচাগন্ধ বলে অভিহিত করেছেন। সাথে সাথে অপরদিকে প্রাণীহত্যা হতে বিরত থাকলেও মাংসভোজনকে স্বীকৃত দিয়েছেন। (প্রাণীহত্যা নিয়ে পরবর্তীতে লেখা হবে। অপেক্ষায় থাকুন।)
তাছাড়া বিভিন্ন ধর্মে যেমন সময় সময় অবতার ও ধর্ম প্রবর্তক এসেছেন। বৌদ্ধধর্মও এর ব্যাতিক্রম নয়। কোন কোন ধর্মে ধর্ম প্রবক্তা আসা বন্ধ হলেও বৌদ্ধ ধর্মে আরো বুদ্ধ আসা বাকী আছে।
অধিকাংশ ধর্মের মত বৌদ্ধ ধর্মেও গৌতম বুদ্ধের আগেও ২৭জন বুদ্ধ এসেছেন বলে বৌদ্ধরা বিশ্বাস করে। গৌতম বুদ্ধ হল আটাশতম বুদ্ধ। তাছাড়া গৌতম বুদ্ধের শাসনকাল ৫০০০ বছর। এখন পর্যন্ত ২৫০০ বছর চলে গিয়েছে। তারপরে আসবেন আর্যমিত্র বুদ্ধ। সকল বুদ্ধের মতো তাঁরও জন্ম হবে সেই বারাণসীতে।
আগেই দুই লেখায় মহাব্রহ্মার সাথে বুদ্ধের সাক্ষাত, আলাপ, আলোচনা ইত্যাদির প্রমাণ দিয়েছি। তাছাড়া মহাব্রহ্মার প্রার্থণা বা অনুরোধে গৌতম বুদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন।
কেবল মহাব্রহ্মার সাথে গৌতম বুদ্ধের সাক্ষাত নয় সকল বুদ্ধই মহাব্রহ্মার প্রার্থণায় র্ধম প্রচার করেছে এবং করবেন। মহাব্রহ্মাকে সহম্পতি ব্রহ্মা, ব্রহ্মাও বলা হয়। প্রথম পর্বে মহাব্রহ্মা যে সৃষ্টিকর্তা তার ব্যাখ্যা করেছি। এই লেখার শেষের দিকে আবার পুনরায় প্রমাণ থাকবে। তাহলে সৃষ্টিকর্তা থাকলে বৌদ্ধরা সৃষ্টিকর্তাকে প্রার্থণা না করে বুদ্ধকে কেন প্রার্থণা করে। বৌদ্ধধর্ম মূলত হিন্দু ধর্মের সাথে অনেকটা মিলে যায়। অনেক হিন্দুরাও সরাসরি সৃষ্টিকর্তাকে প্রার্থণা না করে বিভিন্ন দেবদেবী বা দেবতাদের প্রার্থণা করা হয়। (দেবতার সংজ্ঞা দ্বিতীয় পর্বে বিদ্যমান।) তাহলে কী বুদ্ধও দেবতা?
ভগবান (বুদ্ধকে ভগবানও বলা হয় তবে বৌদ্ধ ধর্মে ভগবান মানে ভাগ্যবান) বুদ্ধ নরকের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন,
দেবদূত প্রণোদিত মাণবক যদি প্রমাদে পতিত হয়
হীন জন্ম লভি সে জন দীর্ঘকাল অনুতাপী হয়। (সংক্ষেপিত)(২)
অনুবাদঃ স্বর্গীয় দূত প্রচারিত ধর্মে যেসব মানুষ ভ্রান্তিতে পতিত হয় তাঁরা ক্ষণজন্ম হয়ে দীর্ঘকাল অনুতপ্ত হন।
তাহলে এই সূত্রে কোন স্বর্গীয় দূত বা দেবদূত ধর্ম প্রচার করেন? নিশ্চয়ই গৌতম বুদ্ধ ছাড়া আর কেউ নয়। আবার একই সূত্রে নরকের বর্ণনায় আরো বলেছেন তিনি এগুলো শুনে বলেন নাই বরং স্বয়ং জ্ঞাত হয়ে, দর্শণ করে, বিদিত হয়ে নরকের বর্ণনা দিয়েছেন।
বৌদ্ধ ধর্মে উল্লেখ আছে শতবছর পাপকাজ করেও যদি কোন ব্যক্তি একবার বুদ্ধগুণ সর্ম্পকিত স্মৃতি আনতে পারে তিনি স্বর্গে যাবে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন একখন্ড লোহাও যেমন নৌকা ছাড়া পানিতে ভাসতে পারে না একটি বড় লোহাও নৌকা ছাড়া পানিতে ভাসতে পারবে না। তাই সমস্ত পুর্ণকর্মকে নৌকা সদৃশ তুলণা করতে হবে? তাহলে এক্ষেত্রে বুদ্ধের সমস্ত পূণ্যকে (শতবছর পাপীরতো আর পূণ্য নেই) নৌকা হিসেবে তুলনা করা হয়েছে। এটি এক প্রকার পাপকাজের লাইসেন্সও বটে! (৩)
অন্যান্য ধর্মের মতো বৌদ্ধ ধর্মও তার আগের ধর্মগুলোকে অশুদ্ধ বলেছেন।। সহম্পতি ব্রহ্মা গৌতম বুদ্ধকে বলেন,
উদিত মগধে পূর্ব্বে ধর্ম সমল
নহে সুচিন্তিত তাহা শুদ্ধ নির্মল।
উদঘাটিদ এবে জান অমৃতের দ্বার
জন্ম-জরা-মৃত্যু হতে করিতে উদ্ধার (সংক্ষেপিত)(৪)
তাহলে কে এই সহম্পতি ব্রহ্মা?
সহম্পতি(পুং): সহম্পতি নামক ব্রহ্মা, মহাব্রহ্মা, সৃষ্টিকর্তা, ব্রহ্মা।(৫)
তাহলে মহাব্রহ্মা ছিল, আছেন, থাকবেন।
এখন পাঠকের কাছে প্রশ্ন উঠবে মহাব্রহ্মা যদি সৃষ্টিকর্তা হন তাহলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ত্রিপিটক মতে গৌতম বুদ্ধকে প্রার্থণা বা অভিবাদন কেন করবেন? বরং গৌতম বুদ্ধই মহাব্রহ্মাকে প্রার্থণা করবেন? বৌদ্ধধর্ম অনুসারে মহাব্রহ্মা কেবল গৌতম বুদ্ধকেই প্রার্থণা বা অভিবাদন করেন নি। তাঁদের বিশ্বাসমতে গৌতম বুদ্ধের আগেও যেসব বুদ্ধ এসেছেন এবং সামনে যেসব বুদ্ধ আসবেন সব বুদ্ধকেই মহাব্রহ্মা প্রার্থণা করবেন। মনে হয় এটিই সবচেয়ে অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন?
এই প্রশ্নের উত্তরও ত্রিপিটকে বিদ্যমান। অনেকেই না জেনে প্রতিবেশি থেকে, বন্ধু-বান্ধব থেকে, মিডিয়া থেকে জেনে বা তারাও তাদের ধর্মকে বিভিন্ন বাদের স্বীকৃতি দেয়।
ত্রিপিটকের ব্যাখ্যা হল সেই সময় সমস্ত লোক এমন কি তপস্বী, শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ-ব্রহ্মার উপাসক ছিলেন, ব্রহ্মাকেই গৌরব করিতেন এবং ব্রহ্মপরায়ণ ছিলেন। সেই কারণে যদি সেই বলবান যশস্বী, বিখ্যাত, জ্ঞানী, লোকোত্তর ও সর্বাগ্রগণ্য ব্রহ্মা (ব্রহ্মার বৈশিষ্ট্য লক্ষ করুন) প্রার্থণা করেন তাহলে তাহলে দেবতাসহ সমস্ত মানুষ অবনত হবে, ধর্মকে মান্য করবে, আগ্রহ সহকারে ধর্ম শুনবে, পালন করবে।
যেমন মনে পড়ে কোন এক ঘটনায় আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন এতিম (মাতাপিতা আগুণে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু) মেয়েকে নিজের মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করে তাদেরকে বুকে জড়িয়ে নেয়। তার মানে কি এই প্রধানমন্ত্রী উক্ত মেয়েদের বুকে জড়িয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী ছোট হয়ে গেল মেয়েরা প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বড় হয়ে গেল। কখনোই নয় বরং প্রধানমন্ত্রী উক্ত মেয়েদের বুকে টেনে নিয়েছে এবং নিজ দায়িত্বে বিয়ে দিয়েছে বলেই মানুষের, সমাজের কাছে মেয়েগুলোর সম্মাণ, সমাদর, মর্যাদা বৃদ্ধি পেল। ত্রিপিটকের আরো ব্যাখ্যা হল, যদি কোন রাজা বা রাজমন্ত্রী কোন লোককে সম্মাণ ও সমাদর করে, তবে তাঁদের আচরনের জন্য প্রজারাও সেই লোককে সম্মাণ করে ও সমাদর করেন। সেইরূপ বুদ্ধদের সম্মুখে মহাব্রহ্মা প্রণত হলে দেবতাদের সাথে সাথে সমগ্র মানুষ সেই তাঁদের প্রতি অনুগদ হবেন। অর্থাৎ বড় লোকেরা যাহার পূজা করেন তিনি সকলের পূজ্য হন। সেই কারণে মহাব্রহ্মা, সহম্পতি ব্রহ্মা, সৃষ্টিকর্তা সকল বুদ্ধকে ধর্মদেশনার নিমিত্ত প্রার্থণা করেন, আর বুদ্ধগণও সৃষ্টিকর্তার ধর্মদেশনা করেন। তাহলে সকল বুদ্ধই মহাব্রহ্মার সৃষ্টিকর্তার প্রার্থণায় ধর্ম প্রচার করেছেন এবং করবেন। বুদ্ধদেরকে সম্মাণিত, গ্রহণযোগ্য, প্রতিষ্ঠিত করতে যাতে সকল মানুষেরা বুদ্ধদের কথা মান্য করে, গ্রহণ করে, পূজা করে এবং সেই মত চলে।(৬)
এইবার, তিনপর্ব পড়ে আপনারা বুঝলেন কি বৌদ্ধধর্ম নাস্তিক্যবাদ, আস্তিক্যবাদ, অজ্ঞেয়বাদ, অদ্বৈতবাদ?
রেফারেন্সঃ
- ১। ত্রিপিটক: সুত্ত পিটক, সুত্ত নিপাত, আমগন্ধং সুত্র ৫ নং শ্লোক, অনুবাদঃ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির(বনভান্তে)
- ২। ত্রিপিটক: মধ্যম নিকায়, তৃতীয় খন্ড, দেবদূত সূত্র, অনুবাদঃ শ্রী বিনয়েন্দ্রনাথ চৌধুরী
- ৩। ত্রিপিটক: মিলিন্দ প্রশ্ন, তৃতীয় বর্গ অনুবাদঃ পন্ডিত শ্রীমৎ ধর্মাধার মহাস্থবির।
- ৪। ত্রিপিটক: বিনয় পিটক, মহাবর্গ, মহাস্কন্ধ, অনুবাদঃ প্রজ্ঞানন্দ স্থবির
- ৫। পালি-বাংলা অভিধান, শান্তরক্ষিত মহাস্থবির, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, ঢাকা)
- ৬। ত্রিপিটক: মিলিন্দ প্রশ্ন, পঞ্চম রর্গ, অনুবাদঃ পন্ডিত শ্রীমৎ ধর্মাধার মহাস্থবির
লিখেছেনঃ Sina Ali
আমার প্রশ্ন, গৌতম বুদ্ধই এই কথাগুলো বলেছেন তার প্রমাণ কী?? ত্রিপিটকে থাকলেই হয়ে গেল প্রমাণ??
,
আরে ভাই ২৫০০ বছরের বেশি পুরনো তথ্য কী এতদিন অপরিবর্তিত থাকতে পারে?? যেখানে ত্রিপিটকই বহুবার পরিবর্তন হয়েছে সেখানে ত্রিপিটককে প্রমাণ হিসেবে কীভাবে নিতে পারেন আপনি??জাতকে প্রাণীরা কথা বলে, হাস্যকর।
,
গৌতম বুদ্ধ নিজেও বলেছেন কোনো গ্রন্থকে অযৌক্তিকভাবে স্বতঃপ্রমাণিত স্বীকার না করতে।
,
ত্রিপিটকে লেখা অযৌক্তিক অংশগুলো সংশোধন করা অসম্ভব কিছু নয়। কারণ এটাতো বুদ্ধেরই লেখা নয়।
,
স্পষ্ট কথা, মহামতি গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- গুরু বলেছে বলেই বিশ্বাস করতে হবে এমন কোন কথা নেই, জাতি বলেছে বলেই বিশ্বাস করতে হবে তাও নয়, শাস্ত্রে আছে বলেই মেনে নিতে হবে এমন নয়, আগে
✓✓✓✓✓বোধগম্য কিনা দেখো, পরীক্ষণ চালাও, ✓✓✓✓✓গ্রহণীয় হলে গ্রহণ করো
✓✓✓✓✓যেটা বাস্তবিক কল্যাণকর ও শ্রদ্ধার।
,
আপনি নিশ্চয়ই এ কথাটা এখানে বিস্তারিত দেখেছেন,কেসমুত্তিসুত্ত,অঙ্গুত্তর শিখায়, সূত্র পিটক। আমি হুবুহু তুলে ধরি নি ।
,
এজন্য আমরা ত্রিপিটকের পুরোপুরি তথ্য গ্রহণ করিনা। আমিও যুক্তিতে বিশ্বাস করি।
✓✓✓✓✓[কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের যুক্তিবাদী মানুষ দেবদেবী,ব্রহ্মা, ইত্যাদি অলৌকিক কিছুকে বিশ্বাস করতে পারে না]✓✓✓✓✓
,
বৌদ্ধ মতবাদ নিয়ে ব্লগে লিখতে কমপক্ষে পঞ্চাশ টা বই পড়ুন এবং আরো গভীর ভাবে গবেষণা করুন। আমার পছন্দের লেখক রাহুল সংকৃত্যায়ন।
ভাই আপনি কি মানেন না মানেন সেটা কথা না! শাস্ত্রে যা বলা আছে সেটাই দলিল l এগুলা অবশ্যই পরিবর্তন হয়েছে সময়ের সাথে l কিন্তু আপনাকে এটা অবশ্যই মানতে হবে, কারণ এর বিরুদ্ধে আপনার কোনো প্রমান নেই ! যেটা ভালো লাগে সেটা মানবেন, আর যেটা ভালো লাগে না সেটা সত্য না, এটা তো হতে পারে পারে না! বুদ্ধ যেহেতু নরকে বিশ্বাস করতেন তাহলে এখানে নাস্তিকতার প্রশ্নই আসে না l আর তিনি নিজেও নাস্তিকতাকে পঁচাগন্ধ বলেছেন !
সৃষ্টিকর্তা প্রশ্নে তিনি নীরব থেকেছিলেন এর মানে এটার উত্তর তিনি হ্যাঁ বা না কিছু বলেন নি ! এটা অমীমাংসিত l কিন্তু তিনি সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা এবং ব্রহ্মলোক কে বিশ্বাস করতেন এর প্রমান দেয়াই আছে!
নাস্তিকতার কনসেপ্ট অনেক ডিপ ভাই, বুদ্ধ নাস্তিকতা অথবা চার্বাকপন্থার ধারেকাছেও নাই !
আর জন্মান্তরবাদ, মোক্ষলাভ, নরকের বর্ণনার ধরণ এবং ব্রহ্মার বিশ্বাস থেকে দেখা যায় যে বৌদ্ধধর্ম হিন্দুধর্মেরই একটা আপডেটেড ভার্সন l মানে চার্বাকনীতি এবং সনাতনবাদী সংমিশ্রণ, কিন্তু বেদবিরোধী, এই আর কি!
//এই জগতে যাহারা কামভোগে অসংযত জন, রসাস্বাদে অত্যাসক্ত, অশুচিভাবাশ্রিত, নাস্তিকবাদী বা মিথ্যাদৃষ্টিক, বিষম বা অমার্গ এবং ভ্রান্তপথ অনুসারী তাহারাই আমগন্ধবাদী বা পঁচাগন্ধ শ্রেণিভূক্ত হয়। মাংসভোজনকারী নহে।//
বুদ্ধ যে অর্থে নাস্তিক শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা বর্তমানে প্রচলিত নাস্তিক অর্থে নয় ঠিক যেমন বুদ্ধের ভাষিত (পালিতে) ধম্ম মানে ধর্ম নয়। কারণ বুদ্ধ সরাসরি ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার বিরোধিতা করেছেন। অনেকে বলে থাকেন বুদ্ধ নাকি ঈশ্বরের ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিলেন- এটা সম্পূর্ণ ভুল। বুদ্ধ অনেক সূত্রে ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, যেমন- ব্রহ্মজাল সূত্র (দীর্ঘ নিকায়) বোধি রাজকুমার সূত্র (মধ্যম নিকায়), তীর্থিয়াদি সূত্র (অঙ্গুত্তর নিকায়)। তাছাড়া ভূরিদত্ত জাতক ও মহাবোধি জাতকেও ঈশ্বরের সমালোচনা করা হয়েছে।
আস্তিক্য ধর্মসমূহ সরাসরি প্রাণীহত্যা করতে বলেছে। বুদ্ধ প্রাণীহত্যাকারীকেও আমগন্ধবাদী বলেছেন। সুতরাং স্পষ্টত বুদ্ধ আস্তিক্যবাদের বিরোধিতা করেছেন, অর্থাৎ আস্তিক্যবাদীরা আমগন্ধবাদী।
ব্রহ্মা বা মহাব্রহ্মা শব্দগুলো বুদ্ধের আগে প্রচলিত ছিল, বুদ্ধের আগে সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বরকে ব্রহ্মা বলা হতো সে হিসেবে পালি বাংলা ডিকশনারিতে প্রচলিত সমার্থক হিসেবে ব্রহ্মা মানে সৃষ্টিকর্তা উল্লেখ করা হয়েছে। ঈশ্বর, আল্লাহ সৃষ্টিকর্তার সমার্থক হলেও মুসলিমরা ঈশ্বর হিসেবে মানে না। ত্রিপিটক অনুযায়ী ব্রহ্মলোকের সর্বোচ্চ দেবতা ব্রহ্মা নিজেকে সৃষ্টিকর্তা, ঈশ্বর দাবি করেছিল কিন্তু বুদ্ধ তা মানেননি। বরং বুদ্ধ তাকে ব্রহ্মলোকের সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবেই মেনেছে। বৌদ্ধধর্ম পালনে দেবতাদের কোন প্রয়োজনীতা নেই কারণ তারাও মানুষের মতো মুক্ত নয়। একটি সূত্রে এক অরহৎ ভিক্ষুর কাছে ব্রহ্মা নিজেই নিজের অক্ষমতার কথা স্বীকার করেছে।
ব্রহ্মা বা মহাব্রহ্মা শব্দগুলো বুদ্ধের আগে প্রচলিত ছিল, বুদ্ধের আগে সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বরকে ব্রহ্মা বলা হতো সে হিসেবে পালি বাংলা ডিকশনারিতে প্রচলিত সমার্থক হিসেবে ব্রহ্মা মানে সৃষ্টিকর্তা উল্লেখ করা হয়েছে। ঈশ্বর, আল্লাহ সৃষ্টিকর্তার সমার্থক হলেও মুসলিমরা ঈশ্বর হিসেবে মানে না। ত্রিপিটক অনুযায়ী ব্রহ্মলোকের সর্বোচ্চ দেবতা ব্রহ্মা নিজেকে সৃষ্টিকর্তা, ঈশ্বর দাবি করেছিল কিন্তু বুদ্ধ তা মানেননি। বরং বুদ্ধ তাকে ব্রহ্মলোকের সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবেই মেনেছে। বৌদ্ধধর্ম পালনে দেবতাদের কোন প্রয়োজনীতা নেই কারণ তারাও মানুষের মতো মুক্ত নয়। একটি সূত্রে এক অরহৎ ভিক্ষুর কাছে ব্রহ্মা নিজেই নিজের অক্ষমতার কথা স্বীকার করেছে।
ত্রিপিটক অনুযায়ী বুদ্ধত্ব লাভ করার পর বুদ্ধ বুঝতে পারলেন যে তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ পদ্ধতি বা ধম্ম পালন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে কঠিন হবে। তাই প্রথমে ভাবছিলেন যে ধম্ম প্রচার করবে না- বুদ্ধের এই মনোভাব তৎক্ষণাৎ মহাব্রহ্মাকে কম্পিত করে। ধম্ম প্রচার করার জন্য মহাব্রহ্মা বুদ্ধকে অনুরোধ করে। এসব অলৌকিক ঘটনা সত্য বা মিথ্যা যেটাই হোক বুদ্ধ ব্রহ্মাকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্বীকার করেনি।