ভিক্টিম ব্লেইমিং এবং জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ বায়াস
সূচিপত্র
ভূমিকা
ভিক্টিম ব্লেইমিং এর আলোচনা পরে আসবে। তার আগে জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ সম্পর্কে আলোচনা সেড়ে নেয়া যাক। জাস্ট ওয়ার্ড হাইপোথিসিজ একটা খুব পরিচিত ও সাধারণ কগনিটিভ বায়াস যা প্রচুর মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এই বায়াসটি জাস্ট ওয়ার্ল্ড ফ্যালাসি বা ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্প বা ন্যায্য বিশ্ব হেত্বাভাস নামেও পরিচিত। এই বায়াসের কারণে মানুষ মনে করে যে কোন কাজের ক্ষেত্রে তার ন্যায্য ফল পাওয়া যাবে, অর্থাৎ ভাল কাজের জন্য ভাল ফল ও মন্দ কাজের জন্য মন্দ ফল পাওয়া যাবে। এই বায়াসের সাথে ঈশ্বরের মত বিশেষ সত্তা বা “কর্ম” এর মত এক বিশেষ জাদুবিদ্যাগত যান্ত্রিক মেকানিজমে বিশ্বাস জড়িয়ে থাকে, সাধারণভাবে বলতে গেলে একটি ইউনিভার্সাল ফোর্স (শক্তি) বা ইনহেরেন্সি (দৃঢ়সংগগ্নতা বা শক্তিশালী সম্পর্ক) জড়িত থাকে, যা এই ভাল কাজের জন্য পুরস্কার ও মন্দ কাজের জন্য শাস্তির উৎস্য হয়ে থাকে। সামগ্রিকভাবে বললে জাস্ট ওয়ার্ড হাইপোথিসিজ হচ্ছে কোন কার্যের ওপর একটি ফল আরোপ করার প্রবণতা, যেখানে ধরে নেয়া হয় একটি ইউনিভার্সাল ফোর্স জগতের মোরাল ব্যালেন্স বা নৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, বা কোন ইউনিভার্সাল ইনহেরেন্সি এমনভাবে বিভিন্ন কার্যকে সংযুক্ত করে একটি ন্যায্য ফলের দিকে নিয়ে যায়। মোট কথা এখানে কোন কার্যের ওপর কোন ন্যায্য ফলকে এট্রিবিউট বা আরোপ করা হয়। আর এই ফল বর্তমান কাজও হতে পারে, মানে বর্তমানের কোন ঘটনাকে অতীতের কোন কাজের শাস্তিস্বরূপ বা পুরস্কারস্বরূপ বলেও মনে হতে পারে, এক্ষেত্রে কারও সাথে ভাল কিছু হলে, তার পেছনে পূর্বের কোন ভাল কার্য ছিল, আর খারাপ কিছু হলে এর জন্য পূর্বের কোন খারাপ কার্য ছিল বলে মনে করার প্রবণতা কাজ করে। যাই হোক, কোন কার্য বা আচরণের ক্ষেত্রে কোন কারণ আরোপ করার ক্ষেত্রে যদি সিস্টেমেটিক এরর জড়িত থাকে তাহলে এট্রিবিউশন বায়াস হয়। এই জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজের ক্ষেত্রেও ভুলভাবে ন্যায্য কারণ ও ফল আরোপ করা হয় বলে এটি এট্রিবিউশন বায়াস টাইপেরই অন্তর্গত একটি বায়াস। এই বায়াসের কারণে একজন মানুষ জাস্টিস বা ন্যায়, ডেস্টিনি বা ভাগ্য, ডিভাইন প্রোভিডেন্স বা দৈবযোগ, স্বর্গীয় অভিশাপ, স্বর্গীয় নিয়ন্ত্রণ, অর্ডার – এসবে বিশ্বাস করে। মানুষ তার দুঃখ-কষ্টকে মন থেকে মেনে নেয়ার জন্য সেটা তার প্রাপ্য ছিল বা এর মাধ্যমে এক দিক দিয়ে ন্যায় হয়েছে – এসব ভেবে নিজের দুঃখ-কষ্টকে র্যাশনালাইজ করার চেষ্টা করে, যা মনস্তাত্ত্বিকভাবে তার ডিফেন্স মেকানিজম হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ তার দুঃখ-কষ্ট দূর করতে সহায়তা করে। কিন্তু এভাবে তা সেই ব্যক্তির জন্য কখনও ভাল হলেও তা বায়াসই থাকে, যেটা ভুল এট্রিবিউশন বা আরোপের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। সকল ভাষাতেই এরকম জাস্ট ওয়ার্ল্ড ফ্যালাসি সংক্রান্ত প্রবাদ-প্রবচন বা ফিগার অফ স্পিচ পাওয়া যায়, যেমন ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, হকের দান পক্বে, Karma is itch, what goes around comes around ইত্যাদি।
জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ বায়াসটির আবিষ্কার
১৯৬০ এর দশকে সোশ্যাল সাইকোলজিস্ট মেলভিন জে. লার্নার (Melvin J. Lerner) এই জাস্ট ওয়ার্ল্ড ফ্যালাসি নিয়ে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেন। এরপর থেকে এটা নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কালচারে এর প্রেডিক্টিং ক্যাপাসিটি নিয়ে গবেষণা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে এই বায়াস সংক্রান্ত তাত্ত্বিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই বায়াস নিয়ে ধারণা অনেক আগে থেকেই পাওয়া যায়, অনেক দার্শনিকই এর কথা বলেছেন। পাইরোনিস্ট দার্শনিক সেক্সটাস এম্পিরিকাস ১৮০ খ্রিস্টাব্দে এই ব্যাপারে উল্লেখ করেছিলেন। তবে লার্নারই একে প্রথম মনস্তাত্ত্বিক গবেষণার বিষয়ে পরিণত করেন। লার্নার এই বায়াসটা নিয়ে কাজ করেন নেতিবাচক সামাজিক মিথোস্ক্রিয়ার আলোচনায়। স্ট্যানলি মিলগ্রামের আনুগত্য নিয়ে গবেষণাগুলোর দ্বারা তিনি প্রভাবিত হন, আর নিজের কাজগুলোকে তিনি মিলগ্রামের কাজেরই সম্প্রসারণ বলে উল্লেখ করেছিলেন, কেননা আনুগত্যের ধারণা নিয়ে কাজ করতে গিয়েই তিনি এই জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যায্য বিশ্বের ধারণার দিকে অগ্রসর হন। কোন শাসক গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থের জন্য জনসাধারণের উপর দুঃখ-কষ্ট চাপিয়ে দেয়, সেই সাথে তাদেরকে শাসক গোষ্ঠীর প্রতি অনুগত থাকারও ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তার মনে বারবার এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে যে কেন শাসক গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া এত দুঃখ-কষ্টভোগের পরও সাধারণ জনগণ শাসক-গোষ্ঠীর প্রতি অনুগত থাকে, কেন শাসক গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া সামাজিক রীতিনীতি (Social norm) ও আইনের প্রতি তারা অনুগত থাকে, যে রীতিনীতি ও আইন নিজেই জনগণের দুঃখ-দুর্দশার কারণ। তিনি এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে খেয়াল করলেন, মানুষের মধ্যে এই দুঃখ-দুর্দশার ক্ষেত্রে ভিক্টিম ব্লেমিং, অর্থাৎ ভুক্তভোগী-দোষারোপের প্রবণতা কাজ করে, মানে যারা দুঃখ ভোগ করছে তাদেরকেই তাদের দুঃখের দায় আরোপ করা, অর্থাৎ দুঃখের জন্য দোষী করার প্রবণতা তিনি লক্ষ্য করেন। এটা প্রথম তার নজর কেড়েছিল যখন তিনি সাইকোলজির ছাত্র ছিলেন, ক্লিনিকাল ট্রেইনিং নেবার সময় তিনি দেখতেন কিভাবে চিকিৎসক বা হেলথকেয়ার প্র্যাক্টিশনাররা মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎশা করছেন। তিনি লক্ষ্য করেন এই হেলথকেয়ার প্র্যাক্টিশনাররা খুব সদয় ও শিক্ষিত লোক হলেও প্রায়ই এরা দুর্দশাগ্রস্ত রোগীদের রোগের জন্য সেই রোগীদেরকেই দায়ী করতেন। এরপর লার্নার নিজে যখন শিক্ষক হলেন তখন তিনি দেখলেন তার শিক্ষার্থীরাও দরিদ্রদেরকেই তাদের দারিদ্র্যের জন্য দায়ী করছে, হেয়ো করছে, তারা যেন কোন বৈশ্বিক শক্তির অস্তিত্বে বিশ্বাস করছে যা দরিদ্রদেরকে তাদের দোষের জন্য দরিদ্র করে রাখছে। তিনি রিওয়ার্ড বা পুরস্কার নিয়ে একটি গবেষণা করলেন। গবেষণাটি ছিল এমন – কিছু অবজার্ভার বা পর্যবেক্ষকের সামনে দুজন মানুষকে দিয়ে একটি কাজ করানো হলো, এরপর কাজ শেষ হলে দুজনের মধ্য থেকে যাদৃচ্ছিকভাবে বা র্যান্ডমলি একজনকে বাছাই করে তার কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হলো, মানে সেই ব্যক্তির কাজ অনুযায়ী তাকে পুরস্কৃত করা হয়নি, জাস্ট এমনি একজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে, এর ফলে তুলনামূলক খারাপ কাজ করলেও একজন পুরস্কৃত হতে পারে। যাই হোক, এরপর অবজার্ভারদেরকে এই পুরস্কার করার ব্যাপারটা নিয়ে মন্তব্য করতে বলা হয়। দেখা যায়, অবজার্ভাররা পুরস্কৃত ব্যক্তিকেই সেই পুরস্কারের জন্য অধিকতর যোগ্য বলে বেশি বিচার করছে। মানে তাদের র্যান্ডমলি বাছাই করে ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করা হলেও তাদের মধ্যে পুরস্কৃতকে তাদের পুরস্কারের যোগ্য বলে মনে করার প্রবণতা কাজ করছে, তাদের মনে এটা ভাবার প্রবণতা কাজ করছে যে, এই লোক যেহেতু পুরস্কৃত হয়েছে কারণ এই লোকই অন্যের চেয়ে ভাল কাজ করেছিল। লার্নার দেখলেন যে, কগনিটিভ ডিজোনেন্স সহ সাইকোলজিতে যতগুলো তত্ত্ব আছে তাদের কোনটা দিয়েই এই ফেনোমেনাকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। একে ব্যাখ্যা করতে গিয়েই জাস্ট-ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ নামে নতুন এক বায়াসের ধারণার আবিষ্কার হলো।
এবারে এই জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ বায়াসটির অস্তিত্ব আবিষ্কারের হয়ে যাবার পর লার্নার এই বায়াসটি সম্পর্কে, বিশেষ করে অবজার্ভাররা এই ভিক্টিমাইজেশনের প্রতি কিরকম প্রতিক্রিয়া দেখায় তা ভালভাবে জানতে ১৯৬৬ সাল থেকে একাধিক এক্সপেরিমেন্ট করা শুরু করেন। ষাট এর দশকের সেই সময়টা ছিল শক প্যারাডাইমের সময়, অর্থাৎ সেই সময় সাইকোলজি সংক্রান্ত মোটামুটি সব এক্সপেরিমেন্টই হতো পার্টিসিপেন্টদের ইলেকট্রিক শক দেবার মাধ্যমে। প্রথম এক্সপেরিমেন্টটা করা হয় ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে ৭২ জন নারী পার্টিসিপেন্টকে নেয়া হয়। এই পার্টিসিপেন্টদের সামনে কিছু মানুষকে ফেইক ইলেক্ট্রিক শক দেয়া হয় ও শকের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে কষ্ট পাবার অভিনয় করতে বলা হয়, ধীরে ধীরে ইলেক্ট্রিক শকের মাত্রা বাড়ানো হয়, এতে “কষ্টের” পরিমাণও বাড়তে থাকে, আর সেই সাথে ৭২ জন নারী পার্টিসিপেন্ট অবজার্ভারদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা হয়। প্রথম দিকে দেখা যায় এই অবজার্ভারগণ ইলেকট্রিক শকপ্রাপ্তদের কষ্টভোগ দেখে দুঃখ পাচ্ছে, বেদনাবোধ করছে, কিন্তু কষ্টভোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকলে যখন অবজার্ভাবরা দেখলো তাদের সেটা আটকানোর কোন উপায় নেই, তখন তারা এই ইলেক্ট্রিক শকপ্রাপ্ত দুর্দশাগ্রস্তদের প্রত্যাখ্যান (rejection) ও অবমূল্যায়ন (devaluation) করতে ও মন্দ ভাবতে শুরু করল, এদের ইলেকট্রিক শকপ্রাপ্তদের কষ্ট যত বৃদ্ধি পেতে থাকলো, ততই পার্টিসিপেন্টদের প্রত্যাখ্যান ও অবমূল্যায়ন বৃদ্ধি পেতে থাকল, যেন শকপ্রাপ্তরা তাদের মন্দ কাজের পরিণতি ভোগ করছে, তাই তাদের এরকম প্রত্যাখ্যান ও অবমূল্যায়ন করাই ঠিক। এরপর পার্টিসিপ্যান্টদেরকে বলা হলো, এই শকপ্রাপ্তদেরকে পরবর্তীতে এই কষ্টভোগের বিনিময়ে কমপেনসেশন বা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এবারে আর পার্টিসিপেন্টরা আর শকপ্রাপ্তদের খারাপ ভাবল না, কেননা এবার তারা বুঝতে পারল যে এরা পূর্বে কোন খারাপ কাজ করেনি, বরং তাদের এই বর্তমান কষ্টভোগের কারণে পরে তারা ভাল পরিণতি লাভ করবে। এই এক্সপেরিমেন্টটি লার্নার আরও কয়েকবার করেন, অন্যান্য গবেষকরাও এই পরীক্ষাটি করে। একই ফল দেখা যায়।
জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ কেন কাজ করে?
গবেষণা হয়ে গেল, এবারে গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার পালা। অন্যভাবে বললে কেন মানুষ অমন আচরণ করে তার ব্যাখ্যায় জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ নামক বায়াসের একটা সন্ধান দেয়া গেল, কিন্তু এবারে দেখতে হবে, মানুষের মধ্যে এই বায়াসটাই বা কেন ও কিভাবে কাজ করে? মানে এই আচরণের ব্যাখ্যা বায়াস, কিন্তু বায়াসের ব্যাখ্যা কী?… লার্নার এই তত্ত্বই দিলেন যে এটি ন্যায্য বিশ্ব বা জাস্ট ওয়ার্ল্ডে বিশ্বাসের জন্যই ঘটে। জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যায্য বিশ্ব বলতে সেই বিশ্বকে বোঝায় যেখানে কোন ব্যক্তির প্রতিটি কার্যেরই একটি প্রেডিক্টেবল (আগে থেকে ধরে নেয়া যায় এমন), সঠিক ও ন্যায্য পরিণাম থাকে। আর দেখা যায় যে ন্যায্য বিশ্বকে কল্পনা করা হচ্ছে তার সেই কার্যগুলোর ন্যয্য পরিণামকে কল্পনা করা হয় সেই সমাজের রীতিনীতি ও আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই। লার্নার ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের ফাংশনগুলো দেখান। তিনি বলেন, এই বিশ্বাসের পেছনে এই ধারণাটি থাকে যে, একজন এই বিশ্বকে প্রেডিক্টেবল উপায়ে প্রভাবিত করতে পারে। এই ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস এই জগতের সাথে একরকম চুক্তি হিসেবে কাজ করে, মানে যদি ভাল কাজ করি তাহলে ন্যায্য বিশ্ব আমাকে ভাল ফল দিতে বাধ্য, আর যদি খারাপ কাজ করি তবে ন্যায্য বিশ্ব আমাকে খারাপ ফল দিতেও বাধ্য, এভাবেই ন্যায্য বিশ্বকে চুক্তি হিসেবে ধরা হয়। লার্নার বলেন, এভাবে চুক্তি অনুযায়ী মানুষ তার ভবিষ্যৎকে প্রেডিক্ট করতে বা ধরে নিতে পারে, এবং সেই অনুযায়ী ভবিষ্যতের জন্য সে পরিকল্পনা করে নিজেকে একটি কার্যকরী ও উদ্দেশ্য-তাড়িত আচরণের মাধ্যমে চালিত করতে পারে। লার্নার তার সব গবেষণা ও এখান থেকে উদ্ভুত তার ব্যাখ্যাগুলোকে ১৯৮০ সালে তার রচিত গ্রন্থ “The Belief in a Just World: A Fundamental Delusion”-এ প্রকাশ করেন। লার্নার বলেন, ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস মানুষের জন্য তার নিজের ভাল থাকার জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু মানুষ প্রতিদিনই নিত্য নতুন সাক্ষ্য-প্রমাণ লাভ করে যা তাকে দেখায় যে এই পৃথিবী ন্যায্য নয়, সে দেখে যে কোন সঙ্গত ও ন্যায্যতা ছাড়াই মানুষ কষ্টভোগ করে। লার্নার বলেন, মানুষ তার বিরুদ্ধে আসা অন্যায্য হুমকিগুলোকে দূর করার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে, যা যৌক্তিক ও অযৌক্তিক দুইই হতে পারে। পৃথিবীর ন্যায্যতা-হীনতার বাস্তবতাকে মেনে নেয়া, অন্যায্যতাকে প্রতিরোধ করা, অন্যায্যতার ক্ষতিপূরণ দান করা, নিজের সীমাবদ্ধতাগুলোকে মেনে নেয়া – এগুলো যৌক্তিক কৌশল। অন্যদিকে অন্যায্য ঘটনাগুলোর ডিনায়াল বা অস্বীকার, উইথড্রয়াল বা প্রত্যাহার, রিইন্টারপ্রিটেশন বা পুনর্ব্যাখ্যা প্রদান হলো অযৌক্তিক কৌশল। এই অযৌক্তিক কৌশল হিসেবে পুনর্ব্যাখ্যা করার ব্যাপারটার সাথে জাস্ট ওয়ার্ল্ডে বিশ্বাসের ব্যাপারটা সরাসরিভাবে সম্পর্কিত। এক্ষেত্রে ব্যক্তি একটি অন্যায্য ঘটনার কারণ, ফল ও ভিক্টিমের চরিত্রের পুনর্ব্যাখ্যা দাঁড় করায়, যেমন লার্নারের পরীক্ষণে অবজার্ভাররা ইলেক্ট্রিক শকপ্রাপ্ত ভিক্টিমদের কষ্টভোগ করতে দেখে তাদের চরিত্রের এমনভাবে পুনর্ব্যাখ্যা করল যার ফলে তারা নিজেদের বিশ্বাস করাতে পারল যে এদের জন্য এরকম কষ্টভোগই ঠিকাছে। এভাবে অবজার্ভাররা ভিক্টিমদেরকে তারের ভোগান্তির জন্য তাদের আচরণ বা চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে দোষারোপ বা ব্লেইম করে। অন্যান্য কনটেক্সটেও এরকন ভিক্টিম ব্লেমিং ও ভিক্টিম ডেরোগেশনের মত নেগেটিভ সোশ্যাল ফেনোমেননগুলোতে ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের দিকটাকে তুলে ধরা হয়। এই ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ এফেক্ট হলো এর ফলে ব্যক্তি নিজেকে কম ভালনারেবল বা কম ক্ষতির সম্মুখীন বলে ভাবে, কারণ তারা মনে করে যেহেতু তারা অন্যায় কাজ করেনি তাই তাদের কোন ক্ষতি হবেনা, বা নেতিবাচক কিছু ঘটবে না। এরকম চিন্তা আবার সেলফ-সার্ভিং বায়াসের সাথেও সম্পর্কিত। অনেক গবেষক ন্যায্য বিশ্ব বিশ্বাসকে কজাল এট্রিবিউশনের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখেন, সেক্ষেত্রে তারা ভিক্টিমাইজেশনের কারণ হিসেবে পরিস্থিতির চেয়ে ব্যক্তির উপর জোর দেন, এবং ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের পরিণামকে কজাল এট্রিবিউশনের প্যাটার্ন হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। মেলভিন লার্নারের এই ব্যাখ্যাটি ছাড়াও অন্যেরা এই ভিক্টিম ব্লেমিং বা ভিক্টিম ডেরোগেশনের অন্যান্য ব্যাখ্যা হাজির করেছেন –
- ভেরিডিকাল জাজমেন্ট : একটি প্রস্তাব হচ্ছে এই ডেরোগেশন এফেক্ট আসলে ভিক্টিমের চরিত্র সম্পর্কে “সঠিক জাজমেন্ট” এর ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। বিশেষ করে, লার্নারের প্রথম দিককার গবেষণাগুলো থেকে কেউ কেউ এই অনুকল্প প্রদান করেছিলেন যে, কোন ব্যক্তি যদি কোন যুক্তি ছাড়া নিজেকে ইলেক্ট্রিক শকজনিত কষ্টভোগের দিকে ঠেলে দেয়, অর্থাৎ ইলেক্ট্রিক শকের মাধ্যমে কষ্টভোগ করতে সম্মত হয় তাহলে অবজার্ভাররা তাকে ডেরোগেট করাকেই যৌক্তিক বলে ভাবে। কিন্তু পরবর্তীতে সংঘটিত হওয়া লার্নারের একটি গবেষণা থেকে দেখা যায় এই অনুকল্পটি ভুল, সেখানে দেখা যায় ব্যক্তি কষ্টভোগ করলেই ভিক্টিম ডেরোগেশনের শিকার হচ্ছ, কিন্তু কষ্টভোগ করতে সম্মত হবার পরও যদি তাকে শেষ পর্যন্ত আর কষ্টভোগ করতে না হয় তাহলে সে আর ডেরোগেশনের শিকার হচ্ছে না। এর মানে এই দাঁড়ায় যে, ভিক্টিম ব্লেমিং বা ভিক্টিম ডেরোগেশন আসলে কেবল কষ্টভোগের ওপরেই নির্ভরশীল, তা কষ্টভোগের ক্ষেত্রে সম্মতি বা প্রতিবাদের ওপর নির্ভর করেনা।
- গিল্ট রিডাকশন : ভিক্টিম ডেরোগেশনের আরেকটি ব্যাখ্যা হলো গিল্ট রিডাকশন। এটিও জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ সংক্রান্ত প্রথম দিককার গবেষণা থেকে উঠে এসেছিল, কিন্তু পরে তা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এটি দাবি করে যে, অবজার্ভাররা ভিক্টিমদেরকে ডেরোগেট বা ব্লেইম করে ভিক্টিম কষ্টভোগ সংক্রান্ত তাদের নিজেদের গিল্ট বা অপরাধবোধ কমানোর জন্য। ভিক্টিমদের কষ্টভোগ করা দেখে অবজার্ভাররা এই ভেবে অপরাধবোধ করা শুরু করে যে, তারা যদি একই পরিস্থিতি বা পরীক্ষণের মধ্য দিয়ে যেত তাহলে তাদের সাথে কী ঘটত। এরপর সেই অপরাধবোধ লাঘব করার জন্য তারা ভিক্টিমকে ডেরোগেট বা ব্লেইম করা শুরু করে। লার্নার ও তার সহকর্মীরা দাবি করেন যে, এই ব্যাখ্যাটি সমর্থনের মতো যথেষ্ট এভিডেন্স নেই। তারা একটি গবেষণা পরিচালনা করেন যেখানে অবজার্ভাররা গবেষণাটির সাথে জড়িত ছিলনা, অর্থাৎ এটা যে একটি গবেষণা বা এক্সপেরিমেন্ট তা তারা জানত না, মানে অপরাধবোধের কোন সুযোগই অবজার্ভারদের ছিলনা, কিন্তু তবুও এক্সপেরিমেন্ট থেকে একই ফল আসতে দেখা যায়। কাজেই এটা দাবি করা যায়না যে, অপরাধবোধের হ্রাস করা বা গিল্ট রিডাকশনের কারণে এই ভিক্টিম ব্লেমিং বা ভিক্টিম ডেরোগেশন কাজ করে।
- ডিসকম্ফোর্ট রিডাকশন : আরেকটি ব্যাখ্যা হলো ডিসকম্ফোর্ট বা অস্বস্তি লাঘব। এটি অনুযায়ী একজন অবজার্ভারের কাছে ভিক্টিম ব্লেমিং বা ডেরোগেশনের প্রাথমিক প্রেরণা জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যায্য বিশ্বের প্রতি বিশ্বাসের পুনরুদ্ধার করা নয় (অন্যের বিনা কারণে কষ্টভোগ দেখে প্রথমে ন্যায্য বিশ্বের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে যায়, এই মূল গ্রহণযোগ্য তত্ত্বটির ক্ষেত্রে), বরং ভিক্টিমের কষ্টভোগ দেখে ভিক্টিমের প্রতি অবজার্ভারের এম্প্যাথাইজিং বা সহমর্মিতাসৃষ্টির ফলে অবজার্ভারের মনে যে অস্বস্তি বা ডিসকম্ফোর্টের উদ্ভব হয় তা কমানোর জন্যই অবজার্ভার ভিক্টিম ব্লেমিং বা ভিক্টিম ডেরোগেশনের আশ্রয় নেয়। গবেষণায় দেখা যায়, ডেরোগেশনের পরও অবজার্ভাররা পরবর্তীতে কষ্টভোগীদের সহায়তা করে, আর ভিক্টিমের ওপর ব্লেইমিং বা অভিযুক্তকরণের ক্ষেত্রে এম্প্যাথাইজিং বা সহমর্মিতাবোধের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভুক্তভোগীকে অবজার্ভারদের সহায়তা করতে আসার ব্যাপারটাকে কমপেনসেশন বা ক্ষতিপূরণ শব্দ দিয়ে সূচিত করা যাক। আরভিন স্টব বলেন, কম্পেনসেশন অবজার্ভারদের দ্বারা ডিভেল্যুয়েশন বা অবমূল্যায়নের পূর্বেই হোক বা পরেই হোক কম্পেনসেশনের পরিমাণ বা মাত্রা একই রকম থাকে। কিন্তু যদি ভিক্টিম ডেরোগেশনের প্রধান প্রেরণা জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যায্য বিশ্বের প্রতি বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করাই হতো তাহলে ভিক্টিম ডেরোগেশনের পরবর্তীতে কম্পেনসেশনের পরিমাণ কমে যাবার কথা ছিল, যা ঘটে না। তাই ডিসকম্ফোর্ট রিডাকশনই প্রধান কারণ হবার কথা, যার সাথে এমপ্যাথাইজিং বা সহমর্মীকরনের নিবিড় সম্পর্ক আছে (যেহেতু সহমর্মিতা বা এমপ্যাথির কারণেই ভিক্টিমের কষ্ট দেখে অবজার্ভারের মনে ডিসকম্ফোর্ট বা অস্বস্তি তৈরি হয়)। এছাড়া সাইকোপ্যাথদের মধ্যে জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের অভাব দেখা যায়, মানে তাদের মধ্যে এই জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ বায়াসটা সেভাবে কাজ করেনা। সম্ভবত সাইকোপ্যাথদের মধ্যে এমপ্যাথি বা সহমর্মিতার অভাব থাকে বলেই এমনটা হয়। (যাই হোক, সাইকোপ্যাথদের মধ্যে জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ বায়াস কাজ করেনা বলে এটা ভাববেন না যে যাদের মধ্যে এই বায়াস কাজ করে না তারা সবাই সাইকোপ্যাথ, বা এই বায়াসকে প্রতিহত করা শুরু করলে মানুষ সাইকোপ্যাথ হয়ে যাবে!)।
অন্যান্য এভিডেন্স
লার্নারের প্রথম দিককার গবেষণার পর অন্যান্য গবেষকগণ অন্য সেটিংস-এ এই গবেষণাগুলো পুনরায় করেন, যেক্ষেত্রে ভিক্টিম ব্লেমিং বা ভিক্টিম ডেরোগেশনের শিকারদের সম্পর্কে অবজার্ভারদের মতামত বা প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা হয়। এধরণের কাজ ১৯৭০ এর দশকে শুরু হয়েছিল, আজও চলছে। এই গবেষণাগুলোতে বিভিন্ন বিপর্যয় যেমন ট্রাফিক একসিডেন্ট, ধর্ষণ, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স, রোগ, দারিদ্র্য – এসব ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের নিয়েই কাজ করা হয়েছে। সাধারণত গবেষকগণ গবেষণায় দেখেন, নিরপরাধ ভুক্তভোগীদের কষ্টভোগ দেখে অবজার্ভার বা পর্যবেক্ষকর একই সাথে ভিক্টিম ডেরোগেশন ও ভিক্টিম ব্লেইমিং করে। এভাবে অবজার্ভাররা ভিক্টিমের প্রতি তাদের চিন্তাধারার পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে তাদের জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসকে রক্ষা করে। ১৯৭০ এর দশকে সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক জিক রুবিন ও লেটিশিয়া অ্যান পেপ্লু এই জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের পরিমাপ করার পদ্ধতি বের করেন। এই পদ্ধতিটি এবং এর একটি রিভাইসড ফর্ম ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হয়, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যকার জাস্ট-ওয়ার্ল্ডে বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব হয়। এরপর থেকে জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ নিয়ে যেসব গবেষণা হয় তার বেশিরভাগই ছিল এই মিজারমেন্ট স্কেপ ব্যবহার করেই। এই গবেষণাগুলোতে সহিংসতা, রোগ, দারিদ্র্য ও অন্যান্য দুর্দশার শিকার ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রে অবজার্ভারদের জাস্ট ওয়ার্ল্ড বিলিফ ও ভিক্টিম ব্লেমিং এর মধ্যে সম্পর্ক খুঁজবার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সাথে এই গবেষণাগুলোর মাধ্যমেই একটি সাইকোলজিকাল ফেনোমেনা হিসেবে জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। এখানে কিছু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে বলা হলো –
- ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন : গবেষকগণ দেখতে চেয়েছেন অবজার্ভাররা ধর্ষণ ও অন্যান্য সহিংসতায় ভুক্তভোগীদের প্রতি কেমন আচরণ করে। লিন্ডা কার্লি ও তার সহকর্মীগণ ধর্ষণ ও ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার জন্য একটি গবেষণা পরিচালনা করেন যেখানে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদেরকে দুই ভাগে ভাগ করে, উভয় দলকেই একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে মিথোস্ক্রিয়ার একটি গল্প পড়তে দেয়া হয়। উদ্ভয় দলের কাছে একই গল্প দেয়া হয়েছিল, কেবল গল্পের সমাপ্তিটুকু বাদে। একটি দল যে গল্পটি পায় তাতে গল্পের শেষে গল্পের পুরুষটি গল্পের নারীটিকে ধর্ষণ করে, অন্য দল যে গল্পটা পায় তাতে এমন কিছু ঘটেনি, কোন রকম সহিংসতা ছাড়াই গল্পটি সমাপ্ত হয়। যে দলের গল্পে ধর্ষণ ছিল দেখা যায় সেই দলটি গল্পের নারীটির আচরণের ভিত্তিতে (চরিত্রের ভিত্তিতে নয়) তার ধর্ষিত হওয়াকে অবধারিত ছিল বলে মনে করেছে, এবং ধর্ষিতা নারীকে তার ধর্ষণের জন্য দোষারোপও করেছে। কিন্তু অন্য যে দলের গল্পটিতে ধর্ষণ ছিল না, তারা পুরো গল্প জুড়ে নারীটির একই রকম আচরণ সম্পর্কেই পড়েছে বা জেনেছে, কিন্তু তারা কেউই নারীটিকে তার আচরণের জন্য দোষারোপ করেনি, বা ব্লেইমও করেনি। এক্ষেত্রে বায়াসটা গবেষণায় স্পষ্ট হয়ে যায়। পরে এই একই গবেষণাটা আবার করা হলো, এবারেও সেই একই গল্প দেয়া হলো, একটি গল্পে ধর্ষণের কথা লেখা হলো, তবে আরেকটি গল্পে বলা হলো পুরুষটি নারীটিকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছে, মানে একটি হ্যাপি এন্ডিং ঘটেছে। এবারেও একই রেজাল্ট দেখা গেল। ধর্ষণ ছাড়াও নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রেও ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস নিয়ে গবেষণা করা হয়। পুরুষ সঙ্গী তার নারী সঙ্গীকে নির্যাতন করে এরকম কাপল এর গল্প নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। দেখা গেল অবজার্ভাররা নারী সঙ্গীটিকেই দোষারোপ করছে। তবে দুটি ইন্টারেস্টিং বিষয় গবেষণাটিতে উঠে আসে। একটি হলো, সেই নারী ও পুরুষ সঙ্গীর মধ্যে সম্পর্ক যত বেশি গভীর, ভুক্তভোগী নারীর প্রতি ভিক্টিম ব্লেমিং এর মাত্রাও তত বেশি। আরেকটি হলো, অবজার্ভাররা নির্যাতনকারী সঙ্গীটিকে কেবল একটি ক্ষেত্রেই ব্লেমিং করছিল, যখন গল্পে সে তার নারী সঙ্গী ছাড়াও আরেকজন পরিচিতকে আঘাত করেছিল।
- বুলিং : গবেষকগণ বুলিং সম্পর্কে বোঝার জন্য এর সাথে জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজের সম্পর্ক জানার চেষ্টা করেন। অন্যান্য গবেষণার মত এখানেও বুলিং এর ভিক্টিমদের ক্ষেত্রে অবজার্ভারদের ভিক্টিম ডেরোগেশন কাজ করার কথা, কিন্তু এখানে সেটা হয়না। দেখা যায় যাদের মধ্যে জাস্ট ওয়ার্ল্ডে বিশ্বাস বেশি তারা শক্তিশালী বুলিং-বিরোধী প্রবণতা দেখায়। অন্য গবেষকরা গবেষণা করে দেখেন, শক্তিশালী ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস যাদের আছে তারা নিম্নমাত্রায় বুলিং আচরণ দেখায় (লক্ষ্যণীয় যে সাইকোপ্যাথ বা নিম্নমাত্রায় এমপ্যাথি যাদের তাদের মধ্যে ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস সবচেয়ে কম হয়, আর তাদেরকেই বুলিং বেশি করতে দেখা যায়, সেই সাথে এটিও লক্ষ্যণীয় যে একটি গ্রহণযোগ্য থিওরি অনুসারে, গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব অনুসারে ভিক্টিম ডেরোগেশন ও জাস্ট ওয়ার্ল্ডে বিশ্বাসের সাথে এম্প্যাথাইজিং এর ব্যাপারটা জড়িত, আর বুলিং এর ব্যাপারটা এম্প্যাথি বা সহমর্মিতার বিপরীত)। এছাড়া গবেষণায় এও দেখা গেছে যে, বাচ্চাদের ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য তাদের জাস্ট ওয়ার্ল্ডে বিশ্বাসের ব্যাপারটা তাদেরকে মানসিকভাবে একরকম প্রোটেকশন দেয়, যার কারণে তারা বিষয়টির সাথে মানিয়ে নিতে পারে, একই ব্যাপার অন্যান্য বয়সের সাধারণ জনগণের মধ্যেও দেখা গেছে।
- রোগ : গবেষণায় দেখা গেছে অবজার্ভাররা রোগীদেরকেই তাদের রোগের জন্য দায়ী করেছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে অসুস্থ ব্যক্তিরা সুস্থ ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি ভিক্টিম ডেরোগেশনের শিকার হয়, ইনডাইজেশন, নিউমোনিয়া, স্টোমাক ক্যানসার ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে তা দেখা গেছে। তবে ক্যান্সার বাদে অন্যান্য দূরারোগ্য ব্যাধির ক্ষেত্রে ভিক্টিম ডেরোগেশনের মাত্রা অনেক বেশি হয়, তবে সবচেয়ে বেশি ডেরোগেশন এইডস রোগীর ক্ষেত্রেই হয়।
- দারিদ্র্য : গবেষণায় দেখা যায় দরিদ্রদেরকে জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের সাথে দরিদ্রদের অভিযোগ করার একটি শক্তিশালি সম্পর্ক আছে। এছাড়া দারিদ্র্যের প্রকৃত কারণগুলো, অর্থাৎ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যুদ্ধ, শোষণের সাথেও জাস্ট ওয়ার্ল্ডে বিশ্বাসের হালকা সম্পর্ক দেখা যায়।
- আত্ম-অভিযোগ বা সেলফ ব্লেইম : কিছু গবেষণা, যেমন ডঃ রনি জ্যানফ-বুলম্যানের প্রথম দিককার গবেষণায় দেখা গেছে রেইপ ভিক্টিম বা ধর্ষণের শিকার যারা হয়েছেন তারা প্রায়ই তাদের সাথে ঘটা অন্যায়ের জন্য নিজেদেরকে ব্লেইমিং করেন। সেলফ ব্লেইম দুই প্রকার। একটি হলো, বিহ্যাভিওরাল সেলফ ব্লেইম, যেখানে ভিক্টিম মনে করেন তার ভিন্নভাবে কাজ করা উচিৎ ছিল, আর সেজন্য তিনি মনে করেন তিনি ভুল করেছেন। আরেকটি হলো ক্যারেক্টারোলজিকাল সেলফ ব্লেইম, যেখানে ভিক্টিম মনে করে তার মধ্যে অন্তর্নিহিতভাবেই কিছু একটা ভুল রয়েছে, যার কারণে তার মনে হয় যে সে এমনটাই ডিজার্ভ করে। গবেষণায় দেখা যায় রেইপ ভিক্টিমদের সেলফ ব্লেইমটা হলো বিহ্যাভিওরাল সেলফ-ব্লেইম, অর্থাৎ তারা নিজেদের আচরণকেই তাদের কষ্টভোগের জন্য দায়ী করে, মনে করে তার অন্যরকম আচরণ করা উচিৎ ছিল, নিজের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যকে তারা দায়ী করেনা, মানে এটা ক্যারেক্টারোলজিকাল সেলফ ব্লেইম না। এই বিহ্যাভিওরাল সেলফ ব্লেইমের সাথে গিল্ট বা অপরাধবোধের অনুভূতি সম্পর্কিত। এটি ব্যাখ্যার জন্য এই অনুকল্পই দাঁড় করানো হয়েছে যে নিজের আচরণকে দোষ দেবার মাধ্যমে তারা এই ধর্ষণের ঘটনাকে জাস্টিফিকেশন দান করার চেষ্টা করে, অর্থাৎ এখানে জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যয্য বিশ্বে বিশ্বাস কাজ করে। সেলফ ব্লেইমিং এর ব্যাপারটা প্রাকৃতিকভাবে ভিক্টিমের মধ্যে কোপিং স্ট্র্যাটেজি হিসেবে কাজ করে, যার মধ্য দিয়ে সে নিজের সাইকোলজিকাল ডিস্ট্রেস বা মানসিক পীড়নকে কাটিয়ে উঠতে পারে, কিন্তু এই সেলফ ব্লেইমিং এর ব্যাপারটি তার মনের মধ্যে বাজে ক্ষতচিহ্ন তৈরি করে দেয়, একে অপরাধকে অপরাধ বলতে ও অপরাধীকে অপরাধী বলতে সে ব্যর্থ হয়, তার ওপর সারাজীবন সে মনের মধ্যে অপরাধবোধ ও লজ্জা বহন করে, নিজেকে তার ধর্ষণের জন্য বারবার দোষী করতে থাকে, যা তার পরবর্তী জীবনের আচরণকেও প্রভাবিত করে, সবসময় নিজের আচরণগুলোকে জাজ করতে করতে, অপরাধবোধ ও লজ্জা নিয়েই তাকে কাটাতে হয়। এছাড়া জুন টাংনি বলেন, এই শেইম বা লজ্জাবোধের কারণে আরও কিছু বাজে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে যার মধ্যে রয়েছে যত্ন নেবার মোটিভেশনের অভাব, এম্প্যাথি বা সহমর্মিতার অভাব, নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা, রাগ ও এগ্রেশন। এছাড়া চাইল্ড এবউজের শিকারের ফলে যারা যেসব বাচ্চারা সেলফ ভিক্টিমের কারনে শেইম-প্রোন বা লজ্জাপ্রবণ হয় (এই লজ্জা শাইনেস টাইপ লজ্জা না, নিজের অপরাধবোধ নিয়ে লজ্জা) তাদের মধ্যে পরবর্তীতে এনজাইটি, ডিপ্রেশন, ও সাবস্টেন এবিউজ অর্থাৎ ড্রাগ নেবার প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়। কাজেই আমাদের মস্তিষ্কের এই কোপিং স্ট্র্যাটেজি আমাদেরকে সাময়িক ডিস্ট্রেসের হাত থেকে রক্ষা করলেও এটি ভাল কোন সমাধান নয়। এছাড়া যে বা যারা ধর্ষণ সংগঠন করতে চায় তারাও এটাই চায়। সমকামী নারীদের ওপর অনেক সময় কারেক্টিভ রেইপ হয়, অর্থাৎ বিষমকামে রূপান্তরের উপায় হিসেবে ধর্ষণকে বেছে নেয়া হয়, আর এর ফলে সেলফ ব্লেইমের মাধ্যমে ভিক্টিম অনেক সময় ভাবতে শুরু করে সমকামী আচরণ তার জন্য অপরাধ ছিল। সেলফ ব্লেইম এভাবে আল্টিমেটলি অপরাধীদের স্বার্থই রক্ষা করে। এটার জন্যই ধর্ষণের শিকারের পর খুব দ্রুত আক্রান্তের কাউন্সেলিং দেয়া প্রয়োজন। শুধু সাইকোলজিকাল ট্রমা কাটানোর জন্যই না, আক্রান্তরা যাতে সেলফ ব্লেমিং শুরু না করে সেজন্যেও এটা দরকার। কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং কগনিটিভ বিহ্যাভিওরাল থেরাপি, সাপোর্টিভ রেসপন্স, সাইকোএডুকেশনাল রেসপন্স ইত্যাদি ভিক্টিমের সেলফ-ব্লেইমিং এর সমস্যার সমাধান করে।
তাত্ত্বিক উন্নয়ন
পরবর্তীকালে ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের পরিমাপ নিয়ে হওয়া গবেষণাগুলোতে এই বিশ্বাসের বিভিন্ন ক্ষেত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করা হয়েছে। জাস্ট ওয়ার্ল্ড বিশ্বাসের একটি অনুকল্পিত বিশ্বাসের মধ্যে আছে আনজাস্ট ওয়ার্ল্ডে বিশ্বাস, অন্তর্নিহিত ন্যায়বিচার ও চূড়ান্ত ন্যায়বিচারে বিশ্বাস, ন্যায়বিচারের আশা, আর অন্যায্যতা কমানোর ক্ষেত্রে নিজের সক্ষমতায় বিশ্বাস। অন্যান্য গবেষণায় এই ন্যায্য বিশ্ব বিশ্বাসের অন্যান্য ক্ষেত্র সম্পর্কে গবেষণা করা হয়েছে, মানুষ তার পারসোনাল ডোমেইন বা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে, সোশিওপলিটিকাল ডোমেইন বা সমাজরাজনৈতিক ক্ষেত্রে, সোশ্যাল ডোমেইন বা সামাজিক ক্ষেত্রে ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসী হতে পারে। কোন ব্যক্তির নিজের সম্পর্কে ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস ও অন্যের সম্পর্কে ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।
অন্যান্য ফ্যাক্টরের সাথে সম্পর্ক
কিছু গবেষণায় জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের সাথে বেশ কিছু মতাদর্শিক বিষয়ের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাইট-উইং অথোরিটেরিয়ানিজম ও প্রোটেস্ট্যান্ট ওয়ার্ক এথিক। সেই সাথে গবেষণায় জাস্ট ওয়ার্ল্ডে বিশ্বাসের সাথে রেলিজিয়াসনেস বা ধার্মিকতার মধ্যেও সম্পর্ক পাওয়া গেছে। গবেষণায় বিভিন্ন লিঙ্গ ও বর্ণের মধ্যকার ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস সংক্রান্ত কোন সিস্টেমিক ডিফারেন্স পাওয়া যায়নি, তবে প্রস্তাব করা হয় যে কৃষ্ণাঙ্গ ও আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস সবচেয়ে কম। ন্যায্য বিশ্ব বিশ্বাস নিয়ে ক্রসকালচারাল স্টাডিও হয়েছে। একটি গবেষণায় ১২টি দেশের লোকের ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস নিয়ে গবেষণা হয়, গবেষণায় দেখা যায়, যেসব দেশের বেশিরভাগ লোকেরা নিজেদেরকে ক্ষমতাহীন বলে মনে করে তাদের মধ্যে ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস কম দেখা যায়। এটি ফলাফলটি জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজের থিওরিকে সমর্থন করে, কেননা ক্ষমতাহীনরা অধিক পরিমাণে ব্যক্তিগত ও সমাজসম্পর্কিত দুঃখ-কষ্টের শিকার হয় বলে তাদের কাছে বিশ্ব আর ন্যায্য ও প্রেডিক্টেবল থাকেনা, অর্থাৎ বেশি দুঃখ কষ্টের বাস্তবতা তাদের মধ্যকার বায়াসকে ভেঙ্গে দেয়। এদিকে অন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের সাথে সেলফ-হ্যান্ডিক্যাপিং (ব্যর্থতা ও আত্মমর্যাদাকে হার্ট করার ভয়ে কোন প্রচেষ্টা না নেবার প্রবণতা), অপরাধ প্রবণতা, ডিফেন্সিভ কোপিং, রাগ ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি সম্পর্কিত উপলব্ধি লক্ষ্য করা যায়। এটি অনেক সময় কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির অন্যায় আচরণকে জাস্টিফাই করার জন্য ইগো-প্রোটেক্টিভ বিশ্বাস হিসেবেও কাজ করে।
সমসাময়িক গবেষণাসমূহ
পজিটিভ মেন্টাল হেলথ এফেক্ট : যদিও জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ সংক্রান্ত বেশিরভাগ গবেষণা এর নেতিবাচক সামাজিক পরিণামের কথা বলে, কিছু কিছু গবেষণায় একে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক বলা হয়েছে। সেই গবেষণাগুলোতে দেখানো হয়, জাস্ট ওয়ার্ল্ড বা ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসের ফলে ব্যক্তি জীবনে অধিকতর সন্তুষ্টি লাভ করে, ভালো থাকে ও কম ডিপ্রেশনে ভোগে। কিন্তু এর কারণ কী? গবেষকরা বললেন, এই ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস মানুষের জন্য কোপিং স্ট্র্যাটেজি হিসেবে কাজ করে যার ফলে মানুষ তার জীবনের ট্রমাটিক ঘটনাগুলোকে ও দৈনন্দিন জীবনের স্ট্রেসফুল ঘটনাগুলোর চাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারে। এই অনুকল্প অনুসারে ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাসকে একরকম পজিটিভ ইল্যুশন বা ইতিবাচক বিভ্রম হিসেবে ধরা যেতে পারে। এই লাইনে গবেষণা করে সাম্প্রতিক গবেষণায় জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজের সাথে রিলিজিওসিটি বা ধার্মিকতা, স্পিরিচুয়ালিটি বা আধ্যাত্মিকতা ও মানসিকভাবে ভালো-থাকা বা সাইকোলজিকাল ওয়েল-বিইং এর সম্পর্ক পাওয়া গেছে। কিছু গবেষণা এও বলছে যে ন্যায্য বিশ্বে বিশ্বাস অন্তর্নিহিত লোকাস অফ কন্ট্রোলের সাথে সম্পর্কিত। জাস্ট ওয়ার্ল্ডের প্রতি শক্তিশালী বিশ্বাসের সাথে ব্যক্তির নিজের জীবনে ঘটা নেতিবাচক ঘটনাগুলো সম্পর্কে অধিকতর স্বীকার ও কম অসন্তুষ্টি সম্পর্কিত। এভাবেও জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ মানসিক সুস্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। অন্যেরা অবশ্য বলেন নিজের ক্ষেত্রে জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজেই কেবল ইতিবাচক মানসিক সুস্বাস্থ্য থাকতে পারে, অন্যের ক্ষেত্রে জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজের ক্ষেত্রে ভিক্টিম ব্লেমিং ও ভিক্টিম ডেরোগেশন দেখা যায়, আর তার ফলে একজনের জাস্ট ওয়ার্ল্ডে বিশ্বাস আরেকজনের মানসিক অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা নেতিবাচক সামাজিক পরিণাম। অর্থাৎ একজন নিজেকে বাস্তব জীবনের দুঃখ-কষ্ট থেকে দূরে রেখে, ডিনায়ালের আশ্রয় নিয়ে মানসিকভাবে সুখে থাকতে পারে, কিন্তু তার নিজের জীবনে দুঃখ-দুর্দশা নেমে এলে অন্যেরা যখন একই বিশ্বাসের কারণেই তাকে ব্লেইমিং ও ডেরোগেট করা শুরু করবে তখন একই বিশ্বাস তার জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দেবে। এছাড়া এই জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ ব্যক্তিকে প্রকৃত সুখ দেয়না, বরং সুখের একটি ভ্রম তৈরি করে দেয়, আর এর সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতিকারীরা, শোষকগোষ্ঠী আরও বেশি ভোগান্তি তৈরি করার সুযোগ পায়। দুঃখময় বাস্তবতা সম্পর্কে অনুধাবন করেই এই দুর্দশাগ্রস্ত পৃথিবীকে সংশোধন করার জন্য সংগ্রাম করতে হয়, শোষকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, আর এরই মাধ্যমে প্রকৃত সুখ নিশ্চিত করতে হয়।
আন্তর্জাতিক গবেষণা : লার্নারের অসাধারণ কাজটির ৪০ বছর পরেও জাস্ট ওয়ার্ল্ড হাইপোথিসিজ নিয়ে গবেষণা চলছে। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ায় এই নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। তবে আধুনিক গবেষণাগুলোতে জার্মানির গবেষকদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। তাদের কাজ নিয়ে লার্নার নিজে ও লিও মন্টাডা মিলে ১৯৯৮ সালে Responses to Victimizations and Belief in a Just World নামে একটি ভল্যুম প্রকাশ করেন।
তথ্যসূত্র
- Lerner, Melvin J.; Montada, Leo (1998). “An Overview: Advances in Belief in a Just World Theory and Methods”. In Montada, L.; Lerner, M. J. (eds.). Responses to Victimizations and Belief in a Just World. Critical Issues in Social Justice. New York: Plenum. pp. 1–7. doi:10.1007/978-1-4757-6418-5_1. ISBN 978-1-4419-3306-5.
- Furnham, Adrian (2003). “Belief in a just world: research progress over the past decade”. Personality and Individual Differences. 34 (5): 795–817. doi:10.1016/S0191-8869(02)00072-7.
- Sextus Empiricus, “Outlines of Pyrrhonism”, Book 1, Chapter 13, Section 32
- Nicomachean Ethics Book V
- Montada, Leo;Lerner, Melvin J. (1998). “Preface” (PDF). In Montada, L.; Lerner, M. J. (eds.). Responses to Victimizations and Belief in a Just World. Critical Issues in Social Justice. New York: Plenum. pp. vii–viii. doi:10.1007/978-1-4757-6418-5. ISBN 978-1-4419-3306-5.
- Lerner, M.; Simmons, C. H. (1966). “Observer’s Reaction to the ‘Innocent Victim’: Compassion or Rejection?” (PDF). Journal of Personality and Social Psychology. 4 (2): 203–210. doi:10.1037/h0023562. PMID 5969146.
- Lerner, Melvin J. (1980). The Belief in a Just World: A Fundamental Delusion. Perspectives in Social Psychology. New York: Plenum Press. doi:10.1007/978-1-4899-0448-5. ISBN 978-0-306-40495-5.
- Lerner, Melvin J.; Miller, Dale T. (1978). “Just world research and the attribution process: Looking back and ahead”. Psychological Bulletin. 85 (5): 1030–1051. doi:10.1037/0033-2909.85.5.1030.
- Maes, Jürgen (1998). “Eight Stages in the Development of Research on the Construct of Belief in a Just World?”. In Montada, L.; Lerner, M. J. (eds.). Responses to Victimizations and Belief in a Just World. Critical Issues in Social Justice. New York: Plenum. pp. 163–185. doi:10.1007/978-1-4757-6418-5_10. ISBN 978-1-4419-3306-5.
- Reichle, Barbara; Schmitt, Manfred (2002). “Helping and Rationalization as Alternative Strategies for Restoring the Belief in a Just World: Evidence from Longitudinal Change Analyses”. In Ross, Michael; Miller, Dale T. (eds.). The Justice Motive in Everyday Life. Cambridge University Press. pp. 127–148. doi:10.1017/CBO9780511499975.008. ISBN 9780511499975.
- Linden, Michael; Maercker, Andreas (2011). Embitterment: Societal, psychological, and clinical perspectives. Wien: Springer. ISBN 9783211997413.
- Howard, Judith A. (1984). “Societal influences on attribution: Blaming some victims more than others”. Journal of Personality and Social Psychology. 47 (3): 494–505. doi:10.1037/0022-3514.47.3.494.
- Godfrey, Bruce W.; Lowe, Charles A. (1975). “Devaluation of innocent victims: An attribution analysis within the just world paradigm”. Journal of Personality and Social Psychology. 31 (5): 944–951. doi:10.1037/h0076786.
- Lerner, M.J. (1970). The desire for justice and reactions to victims. In J. Macaulay & L. Berkowitz (Eds.), Altruism and helping behavior (pp. 205–229). New York: Academic Press.
- Davis, Keith E.; Jones, Edward E. (1960). “Changes in interpersonal perception as a means of reducing cognitive dissonance”. The Journal of Abnormal and Social Psychology. 61 (3): 402–410. doi:10.1037/h0044214. PMID 13720212. S2CID 16524346.
- Glass, David C. (1964). “Changes in liking as a means of reducing cognitive discrepancies between self-esteem and aggression”. Journal of Personality. 32 (4): 531–549. doi:10.1111/j.1467-6494.1964.tb01357.x. PMID 14238983. S2CID 19556220.
- Cialdini, Robert B.; Kenrick, Douglas T.; Hoerig, James H. (1976). “Victim derogation in theLerner paradigm: Just world or just justification?”. Journal of Personality and Social Psychology. 33 (6): 719–724. doi:10.1037/0022-3514.33.6.719.
- Staub, Ervin (1978). Positive Social Behavior and Morality: Social and Personal Influences, Volume 1. Academic Press Inc. pp. 169–170. ISBN 978-0-12-663101-2.
- Hafer, Carolyn L.; Bègue, Laurent; Choma, Becky L.; Dempsey, Julie L. (2005). “Belief in a Just World and Commitment to Long-Term Deserved Outcomes” (PDF). Social Justice Research. 18 (4): 429–444. CiteSeerX 10.1.1.507.4227. doi:10.1007/s11211-005-8569-3. S2CID 38967492. Archived from the original (PDF) on 2013-12-28.
- Reichle, Barbara; Schneider, Angela; Montada, Leo (1998). “How do Observers of Victimization Preserve Their Belief in a Just World Cognitively or Actionally?”. In Montada, L.; Lerner, M. J. (eds.). Responses to Victimizations and Belief in a Just World. Critical Issues in Social Justice. New York: Plenum. pp. 55–64. doi:10.1007/978-1-4757-6418-5_4. ISBN 978-1-4419-3306-5.
- Rubin, Zick; Peplau, Anne (1973). “Belief in a Just World and Reactions to Another’s Lot: A Study of Participants in the National Draft Lottery”. Journal of Social Issues. 29 (4): 73–93. doi:10.1111/j.1540-4560.1973.tb00104.x.
- Rubin, Z.; Peplau, L. A. (1975). “Who believes in a just world?” (PDF). Journal of Social Issues. 31 (3): 65–90. doi:10.1111/j.1540-4560.1975.tb00997.x. Archived from the original (PDF) on 2011-07-20.
- Janoff-Bulman, Ronnie; Timko, Christine; Carli, Linda L. (1985). “Cognitive biases in blaming the victim”. Journal of Experimental Social Psychology. 21 (2): 161–177. doi:10.1016/0022-1031(85)90013-7.
- Carli, Linda L. (1999). “Cognitive Reconstruction, Hindsight, and Reactions to Victims and Perpetrators”. Personality and Social Psychology Bulletin. 25 (8): 966–979. CiteSeerX 10.1.1.830.8628. doi:10.1177/01461672992511005. S2CID 145242166.
- Summers, Gertrude; Feldman, Nina S. (1984). “Blaming the Victim Versus Blaming the Perpetrator: An Attributional Analysis of Spouse Abuse”. Journal of Social and Clinical Psychology. 2 (4): 339–347. doi:10.1521/jscp.1984.2.4.339.
- Fox, Claire L.; Elder, Tracey.; Gater, Josephine; Johnson, Elizabeth (2010). “The association between adolescents’ beliefs in a just world and their attitudes to victims of bullying”. British Journal of Educational Psychology. 80 (2): 183–198. doi:10.1348/000709909X479105. PMID 19930790. S2CID 33974893.
- Correia, Isabel; Dalbert, Claudia (2008). “School Bullying”. European Psychologist. 13 (4): 248–254. doi:10.1027/1016-9040.13.4.248. S2CID 145567888.
- Correia, Isabel; Kamble, Shanmukh V.; Dalbert, Claudia (2009). “Belief in a just world and well-being of bullies, victims and defenders: A study with Portuguese and Indian students”. Anxiety, Stress & Coping. 22 (5): 497–508. doi:10.1080/10615800902729242. PMID 19333798. S2CID 205725655.
- Gruman, Jessie C.; Sloan, Richard P. (1983). “Disease as Justice: Perceptions of the Victims of Physical Illness”. Basic and Applied Social Psychology. 4: 39–46. doi:10.1207/s15324834basp0401_4.
- Furnham, Adrian; Procter, Eddie (1992). “Sphere-Specific Just World Beliefs and Attitudes to AIDS”. Human Relations. 45 (3): 265–280. doi:10.1177/001872679204500303. S2CID 145524763.
- Harper, David J.; Wagstaff, Graham F.; Newton, J. Tim; Harrison, Kevin R. (1990). “Lay Causal Perceptions of Third World Poverty and the Just World Theory'” (PDF). Social Behavior and Personality. 18 (2): 235–238. doi:10.2224/sbp.1990.18.2.235.
- Harper, David J.; Manasse, Paul R. (1992). “The Just World and the Third World: British explanations for poverty abroad”. The Journal of Social Psychology. 132 (6): 783–785. doi:10.1080/00224545.1992.9712107.
- Janoff-Bulman, Ronnie (1979). “Characterological versus behavioral self-blame: Inquiries into depression and rape”. Journal of Personality and Social Psychology. 37 (10): 1798–1809. doi:10.1037/0022-3514.37.10.1798. PMID 512837. S2CID 22347571.
- Dalbert, C.; Lipkus, I.; Sallay, H.; Goch, I. (2001). “A just and unjust world: Structure and validity of different world beliefs”. Personality and Individual Differences. 30 (4): 561–577. doi:10.1016/S0191-8869(00)00055-6.
- Maes, Jürgen (1998). “Immanent justice and ultimate justice: two ways of believing in justice”. In Montada, L.; Lerner, M. J. (eds.). Responses to Victimizations and Belief in a Just World. Critical Issues in Social Justice. New York: Plenum. pp. 9–40. doi:10.1007/978-1-4757-6418-5_2. ISBN 978-1-4419-3306-5.
- Mohiyeddini, Changiz; Montada, Leo (1998). “BJW and Self-Efficacy in Coping with Observed Victimization”. In Montada, L.; Lerner, M. J. (eds.). Responses to Victimizations and Belief in a Just World. Critical Issues in Social Justice. New York: Plenum. pp. 41–54. doi:10.1007/978-1-4757-6418-5_3. ISBN 978-1-4419-3306-5.
- Lipkus, Isaac M.; Dalbert, Claudia; Siegler, Ilene C. (1996). “The Importance of Distinguishing the Belief in a Just World for Self Versus for Others: Implications for Psychological Well-Being”. Personality and Social Psychology Bulletin. 22 (7): 666–677. doi:10.1177/0146167296227002. S2CID 145379940.
- Lambert, Alan J.; Burroughs, Thomas; Nguyen, Tina (1999). “Perceptions of Risk and the Buffering Hypothesis: The Role of Just World Beliefs and Right-Wing Authoritarianism”. Personality and Social Psychology Bulletin. 25 (6): 643–656. doi:10.1177/0146167299025006001. S2CID 53576739.
- Furnham, Adrian; Procter, Edward (1989). “Belief in a just world: Review and critique of the individual difference literature”. British Journal of Social Psychology. 28 (4): 365–384. doi:10.1111/j.2044-8309.1989.tb00880.x.
- Schuurmans-Stekhoven, J. B. (2020). “Just world beliefs mediate the well-being effects of spiritual/afterlife beliefs among older Australians”. Journal of Religion, Spirituality & Aging. na(na): 1–18. doi:10.1080/15528030.2020.1779902.
- Bègue, Laurent (2002). “Beliefs in justice and faith in people: just world, religiosity and interpersonal trust”. Personality and Individual Differences. 32 (3): 375–382. doi:10.1016/S0191-8869(00)00224-5.
- Kunst, J. L.; Bjorck, J. P.; Tan, S.-Y. (2000). “Causal attributions for uncontrollable negative events”. Journal of Psychology and Christianity. 19 (1): 47–60.
- Calhoun, Lawrence G.; Cann, Arnie (1994). “Differences in Assumptions about a Just World: Ethnicity and Point of View”. The Journal of Social Psychology. 134 (6): 765–770. doi:10.1080/00224545.1994.9923011.
- Hunt, Matthew O. (2000). “Status, Religion, and the “Belief in a Just World”: Comparing African Americans, Latinos, and Whites”. Social Science Quarterly. 81 (1): 325–343. JSTOR 42864385.
- Furnham, Adrian (1993). “Just World Beliefs in Twelve Societies”. The Journal of Social Psychology. 133 (3): 317–329. doi:10.1080/00224545.1993.9712149.
- Furnham, Adrian (1992). “Relationship between Knowledge of and Attitudes towards Aids”. Psychological Reports. 71 (3_suppl): 1149–1150. doi:10.2466/pr0.1992.71.3f.1149. PMID 1480694. S2CID 41943578.
- Lench, Chang (2007). “Belief in an Unjust World: When Beliefs in a Just World Fail”. Journal of Personality Assessment. 89 (2): 126–135. doi:10.1080/00223890701468477. PMID 17764390. S2CID 18511029.
- Dolinski, Dariusz (1996). “The belief in an unjust world: An egotistic delusion”. Social Justice Research. 9 (3): 213–221. doi:10.1007/BF02197248. S2CID 144694943.
- Dalbert, Claudia (2001). The Justice Motive as a Personal Resource: Dealing with Challenges and Critical Life Events. New York: Plenum. ISBN 9780306465550.
- Ritter, Christian; Benson, D. E.; Synder, Clint (1990). “Belief in a Just World and Depression”. Sociological Perspectives. 33 (2): 235–252. doi:10.2307/1389045. JSTOR 1389045. S2CID 145553423.
- Hafer, Carolyn L.; Olson, James M. (1998). “Individual Differences in the Belief in a Just World and Responses to Personal Misfortune”. In Montada, L.; Lerner, M. J. (eds.). Responses to Victimizations and Belief in a Just World. Critical Issues in Social Justice. New York: Plenum. pp. 65–86. doi:10.1007/978-1-4757-6418-5_5. ISBN 978-1-4419-3306-5.
- Taylor, S. E.; Brown, J. D. (1988). “Illusion and well-being: A social psychological perspective on mental health”. Psychological Bulletin. 103 (2): 193–210. doi:10.1037/0033-2909.103.2.193. PMID 3283814. S2CID 762759.
- Sutton, Robbie M.; Douglas, Karen M. (2005). “Justice for all, or just for me? More evidence of the importance of the self-other distinction in just-world beliefs”. Personality and Individual Differences. 39 (3): 637–645. doi:10.1016/j.paid.2005.02.010.