শয়তানের আয়াত বা স্যাটানিক ভার্সেস

Print Friendly, PDF & Email

ভূমিকা

আমরা সকলেই কমবেশি সালমান রুশদীর বহুল আলোচিত উপন্যাস স্যাটানিক ভার্সেস বা শয়তানের আয়াতসমূহ বইটির কথা জানি। এই নিয়ে শুধু পশ্চিমে নয়, ইরান, সৌদি আরব, সমস্ত মুসলিম দেশগুলো এমনকি বাঙলাদেশে পর্যন্ত তুলকালাম হয়ে গিয়েছিল। মুসলিম বিশ্বব্যাপী সালমান রুশদীর ফাঁসির দাবী, ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনীর মৃত্যুদণ্ড এখনো বহাল আছে। সালমান রুশদী তার ওপর মৃত্যু পরোয়ানা নিয়েই বহাল তবিয়তে রয়েছেন। যদিও তার উপন্যাসটি মোটেও ধর্ম সম্পর্কিত ছিল না, তারপরেও শয়তানের আয়াত বিষয়টি সেখানে থাকায় মুসলিম বিশ্ব তার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। সেই নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। এই শয়তানের আয়াত বিষয়টি কতটুকু সত্য আর কতটুকু মিথ্যা, তা পাঠকই বিবেচনা করবেন। আমি শুধুমাত্র তথ্যসূত্র সমূহ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। যদিও অনেক মুসলিম লেখকই দাবী করেন, এগুলো ইহুদী নাসারা নাস্তিকদের প্রোপাগাণ্ডা, ইসলামকে নিয়ে তাদের চক্রান্ত! আমি ঠিক জানি না, নাস্তিকরা টাইম মেশিন আবিষ্কার করে ফেলেছে কিনা! টাইম মেশিন ছাড়া তারা এত বছর আগে গিয়ে এত এত ইসলামী কেতাবে এই কথাগুলো নাস্তিকরা ঢুকিয়ে দিয়ে আসলেন কীভাবে? কারণ অসংখ্য ইসলামিক গ্রন্থে এই বিবরণ পাওয়া যায়, যেই গ্রন্থগুলো ইসলামের ইতিহাসে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হিসেবেই বিবেচিত। আধুনিক যুগের অনেক আলেম যদিও পুরো ঘটনা অস্বীকার করতে চান, কিন্তু ঐতিহাসিক দলিলগুলো তো উনারা মুছে ফেলতে পারবেন না। সেগুলো আমরা আজকের লেখাতে আলোচনা করবো।

শয়তানের আয়াতের মূল ঘটনা

মুহাম্মদ তখন মক্কায় ইসলামের দাওয়াত প্রচার শুরু করেছেন। তখন একদিন তিনি ক্বাবা শরীফের প্রাঙ্গণে বসে সদ্য ইসলামে দাখিল হওয়া মুসলিমদের মাঝে বক্তৃতা রাখছিলেন। সেখানে মক্কার অন্যান্য পৌত্তলিক কুরাইশরাও ছিলো। পৌত্তলিক এবং মুসলিমদের মধ্যে তখন প্রচণ্ড শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্ক। হজরত জ্বিবরাঈল সেই সময়ে ওহী নিয়ে মুহাম্মদের কাছে আগমন করেন। এবং সূরা নাজমের কয়েকটি আয়াত নাজিল করেন। আয়াতগুলো হচ্ছে,

তোমরা কী ভেবে দেখেছো লাত ও উযযা সম্পর্কে?
এবং আরেক (দেবী) মানাত সম্পর্কে?
তাঁরা হলেন খুব-ই উঁচু পর্যায়ের (ক্ষমতাবান) দেবী
তাদের কাছে সাহায্যও চাওয়া যায়
( শয়তানের দ্বারা প্রভাবিত আয়াত )

আরেকটি অনুবাদে,

তোমরা কী ভেবে দেখেছো লাত ও উযযা সম্পর্কে?
এবং আরেক (দেবী) মানাত সম্পর্কে?
এঁঁরা হচ্ছে সেই উড়ন্ত সারস।
তাই এদের মধ্যস্ততা আশা করা যেতে পারে।

পরে মুহাম্মদ নিজেই আবার এই শেষের দুই আয়াত তার অনুসারীদের বাদ দিয়ে সংশোধনমূলক আয়াত নাজিল করে। এবং সূরাটির অন্যান্য আয়াত নাজিল হয়।

তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে।
এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে?
পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্যে এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য?
এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন।
এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।
( সংশোধিত আয়াত )

কারণ হিসেবে বললেন, ওগুলো আসলে আল্লাহ প্রেরিত আয়াত ছিল না। শয়তান ধোঁকা দিয়ে তার মুখ দিয়ে এই আয়াতগুলো বলিয়ে নিয়েছে। এর পরিবর্তে তিনি অন্য আয়াত দেন, দেবীদের প্রশংসামূলক আয়াতগুলো বাতিল ঘোষণা করেন। এই পর্যন্ত বক্তব্যগুলো পরবর্তীতে রেফারেন্স সহকারে প্রমাণ করা হবে।

উল্লেখ্য, সেই সময়ে আরবের পৌত্তলিকদের পূজিত সবচে বড় তিন দেবী ছিল লাত, উযযা এবং মানাত। এদের তিনজনকে আল্লাহর তিন কন্যা হিসেবেও গণ্য করা হতো। পৌত্তলিকগণ বারবার মুহাম্মদের কাছে আবদার করছিল, মুহাম্মদ তাদের দেবদেবীকে মেনে নিলে তারাও মুহাম্মদের আল্লাহকে মেনে নিবে। পৌত্তলিকগণ এই বিষয়টি খুবই অপছন্দ করছিল যে, নবী মুহাম্মদ তাদের দেবদেবী সম্পর্কে লাগাতার কটূক্তি, গালাগালি এবং সমালোচনাতে লিপ্ত ছিল। অনেকবার তাকে বোঝাবার পরেও সে ধর্মদ্রোহী কথা, কটূক্তি, দেবদেবীকে গালাগালি থেকে বিরত থাকে নি। এমনকি, মুহাম্মদের চাচা আবু তালিবের কাছে বিচার দিয়েও কোন কাজ হয় নি।

এরকম পরিস্থিতিতে মুহাম্মদের মুখ থেকে পৌত্তলিকদের দেবী সম্পর্কিত ঐ দুই আয়াত শুনে মক্কার মুশরিকরা খুব উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। তারা ভাবলো, মুহাম্মদ এখন থেকে তাদের দেবদেবীদের নিয়ে আর কটূক্তি করবে না। বরঞ্চ প্রশংসা করবেন। মুহাম্মদ তাদের দেবদেবীদের মেনে নিয়েছেন, তারাও মুহাম্মদের আল্লাহকে মেনে নেবে। দুই পক্ষের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে গেছে। এখন সকল ধর্মের লোকের সহাবস্থান সম্ভব হবে। কেউ কারো উপাস্য দেবদেবী বা ঈশ্বরকে নিয়ে আর কটূক্তি করবে না। তাই, সেদিন মুহাম্মদ এবং অন্যান্য মুসলিমদের সাথে মক্কার মুশরিকরা একই সাথে সিজদা করেছিলো মক্কা প্রাঙ্গণে।

কিন্তু পরবর্তীতে মুহাম্মদ দাবী করলেন, ঐ আয়াত দুটি শয়তানের ধোঁকা। তিনি আল্লাহ ছাড়া আর কোন দেবদেবীকে মানবেন না। উনি আয়াত দুটি বাদ দিতে বললেন। তখন আবারো শুরু হলো দুই দলের দ্বন্দ্ব। এবারে আসুন, রেফারেন্সগুলো যাচাই করে দেখি।

শয়তানের প্রভাবে নবীগণ

গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হচ্ছে, শয়তান কী নবীগণের ওপর কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে? উদাহরণ হিসেবে বলা যায় নবী ইউশার কথা। হযরত ইউশা ছিলেন মুসার ভাগিনা এবং বনী ইসরাইলের একজন নবী। এই বিষয়ে আশ শিফা গ্রন্থ থেকে একটি পাতা পড়ে নিই [1]

শয়তানের আয়াত 2

আরো একটি হাদিস পড়ে নিই, যেখানে নবী মুহাম্মদ নিজেও যে শয়তানের প্রভাবে ঘুম থেকে জাগতে পারেন নি তা স্পষ্ট [2]

সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত)
পর্ব-৬: সালাতের সময়সীমা
পরিচ্ছেদঃ ৫৫: ছুটে যাওয়া সালাত কিভাবে কাযা করা যায়?
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৬২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬২৪
৬২৩. ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম (রহ.) ….. আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে সারা রাত সফর করার পরে শেষ রাতে এক জায়গায় যাত্রা বিরতি করি এবং ঘুমিয়ে পড়ি। সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কারো ঘুম ভাঙলো না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের বললেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাহনের লাগাম ধরে এ জায়গা ত্যাগ কর। কারণ এ স্থানে শয়তান আমাদের কাছে এসেছে। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, আমরা তাই করলাম। তারপর কিছু দূর গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) পানি এনে উযু করলেন। এরপর ফজরের সুন্নাত সালাত আদায় করলেন। তারপর ইকামত হলে ফজরের ফরয সালাত আদায় করলেন।
সহীহ: মুসলিম ৬৮০, ইরওয়াউল গালীল ২৬৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

গালাগালি, কটূক্তি, সমালোচনা

নবী মুহাম্মদ পৌত্তলিকদের দেবদেবী, পূর্বপুরুষদের ধর্ম, এগুলো সম্পর্কে অবমাননাকর কটূক্তি করতো বলেই জানা যায়। তাকে ধর্মদ্রোহীতা দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। সমাজে শত শত বছর ধরে প্রচলিত ধর্মের সমালোচনা, বাপদাদার ধর্মের অবমাননা, কটূক্তি, দেবদেবী নিয়ে অপমানজনক কথা বলার কারণে বারবার তাকে সতর্ক করা হয় [3]

শয়তানের আয়াত 4
শয়তানের আয়াত 6

এবারে সীরাতুল মুস্তফা সা. থেকে পড়ি [4]

শয়তানের আয়াত 8
শয়তানের আয়াত 10
শয়তানের আয়াত 12
শয়তানের আয়াত 14
শয়তানের আয়াত 16

হিজরতকারীদের মক্কা প্রত্যাবর্তন

নবী মুহাম্মদ তখন মক্কার প্রচলিত ধর্মের সমালোচনা এবং ধর্ম অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত। পুরো মক্কার বেশিরভাগ মানুষই তার বিরুদ্ধে। পঞ্চম হিজরীতে কোরাইশদের অত্যাচারে কয়েকজন মুসলিম তখন আবিসিনিয়া পালিয়ে গেছেন। আবিসিনিয়ায় হিজরত করা মুসলিমরা তখন একদিন জানতে পারলো, মক্কার কোরাইশ আর মুসলিমদের মধ্যে সংঘাতের অবসান হয়েছে। দুই পক্ষ মিলে মিশে সহাবস্থান করছে। খুশি মনে ফিরে আসলো তারা। কিন্তু এসে দেখে পরিস্থিতি আগের মতই। কিন্তু তারা ফিরে আসলেন কেন? মক্কায় কোরাইশ আর মুসলিমদের মধ্যে সংঘাতের অবসান হয়েছে, এমন খবরই বা প্রচার পেল কীভাবে? আসুন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওযীর বিখ্যাত গ্রন্থ যাদুল মা’আদ থেকে দেখে নিই। পাঠক লক্ষ্য করুন, কাফেরদের সেই সময়ে দাবীটি ছিল সদ্য মুসলিম হওয়া ব্যক্তিবর্গ হয় মুহাম্মদকে গালি দিবে নয়তো লাত ও উজ্জার প্রশংসা করবে। কয়েকজন সেটি করতে বাধ্যও হয়েছিল, যেই পাপের শাস্তি আল্লাহর আয়াতের মাধ্যমে নবী ক্ষমা করে দেন [5]

শয়তানের আয়াত 18
শয়তানের আয়াত 20

মুসলিম এবং মুশরিকগণের সমবেত সিজদা

এই ঘটনাটির সাথে জড়িত রয়েছে সববেতভাবে কাফের মুশরিক এবং মুসলিম সকলের একসাথে সিজদা করার একটি অদ্ভুত ঘটনা। আমরা সকলেই জানি যে, সেই সময়ে কাফেরদের সাথে মুসলিমদের ধর্ম নিয়ে খুবই সংঘাতপুর্ণ সম্পর্ক। এরকম পরিস্থিতিতে কাফেররা বারবার মুহাম্মদকে অনুরোধ করেছিল, মুহাম্মদ যদি তাদের দেবদেবীকে মেনে নেয়, তাহলে কাফেররাও মুহাম্মদের আল্লাহকে মেনে নিবে। মিলেমিশে তারা যার যার ধর্ম পালন করবে। কিন্তু মুহাম্মদ তাতে প্রাথমিকভাবে রাজি ছিল না। পরবর্তীতে সূরা নজমের এই আয়াতটি নাজিল হয় এবং সেই আয়াত নাজিলের সময় কাফের এবং মুসলিম সকলে সমবেতভাবে সিজদা করে। এর অর্থ কী পাঠকগণ ভালভাবেই বুঝবেন [6] [7] [8]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছদঃ ৬৫/৫৩/৭. আল্লাহর বাণীঃ অতএব আল্লাহ্কে সাজদাহ্ কর এবং তাঁরই ‘ইবাদাত কর। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/৬২)
৪৮৬২. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ নাজমের মধ্যে সাজদাহ্ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলিম, মুশরিক, জিন ও মানব সবাই সাজদাহ্ করল। আইয়ুব (রহ.)-এর সূত্রে ইব্রাহীম ইবনু তাহ্মান (রহ.) উপরোক্ত বর্ণনার অনুসরণ করেছেন; তবে ইবনু উলাইয়াহ (রহ.) আইয়ূব (রহ.)-এর সূত্রে ইবনু ‘আববাস (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করেননি। (১০৭১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ৪/ কিতাবুল জুমু’আ (জুমু’আর নামায)
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
পরিচ্ছদঃ ৫১. সূরা আন-নাজমের সাজদাহ
৫৭৫। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা নাজম-এ সাজদাহ করেছেন। মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও মানুষ সবাই তার সাথে সাজদাহ করেছেন। -সহীহ। বুখারী, কিসসাতুল গারানীক— (১৮, ২৫, ৩১ পৃঃ), বুখারী।
আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ অনুচ্ছেদে ইবনু মাসউদ ও আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। একদল বিদ্বানের মতে সূরা নাজম-এ সাজদাহ রয়েছে। একদল সাহাবা ও তাবিঈনের মতে মুফাসসাল সূরাসমূহে কোন সাজদাহ নেই। মালিক ইবনু আনাস এই মতের সমর্থক। কিন্তু প্রথম দলের মতই বেশি সহীহ। সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারাক, শাফিঈ ও আহমাদ প্রথম মতের সমর্থক। (অর্থাৎ মুফাসসাল সূরায় সাজদাহ আছে)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

শয়তানের আয়াত 22

উপরের হাদিসটি থেকে জানা যায়, সূরা নাজমের আয়াত আবৃত্তি করার পরে শুধু মুসলিমগণই নয়, মুশরিকরাও নবী মুহাম্মদের সাথে তার অনুসরণ করে সকলে সিজদা করলো। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সময়ে তো মুহাম্মদের সাথে মুশরিকদের চরম দ্বন্দ্ব এবং শত্রুতা চলছে। কী এমন হলো, যার ফলে নবী মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীরা, সেই সাথে মুশরিকরাও তারই সাথে একত্রে কোরআনের একটি সূরার সাথে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করলো? এমন কী ঘটে গেল? এরকম তো হওয়ার কথা নয়। এখন আসুন আরো কয়েকটি হাদিস দেখি। যেই হাদিসে দেখা যায়, মক্কায় থাকা অবস্থায় নবী যখন সূরা নজম পাঠ করে শোনান, তখন একজন বৃদ্ধ কাফের লোকও মাটি কপালে নিয়ে সিজদার কাজটি করেছিল। পরবর্তী সময়ে সেই বৃদ্ধটি কাফের অবস্থায় নিহত হয়। এর অর্থ হচ্ছে, বৃদ্ধটি কাফের অবস্থাতেই সিজদা করেছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, সূরা নজম শুনে কাফের কেন সিজদার মত মাটি কপালে তুলবে? [9] [10]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৭/ কুরআন তিলওয়াতে সিজদা
পরিচ্ছেদঃ ৬৮৩. কুরআন তিলাওয়াতের সিজ্দা ও এর পদ্ধতি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১০০৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৬৭
১০০৬। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় সূরা আন্-নাজম তিলওয়াত করেন। এরপর তিনি সিজদা করেন এবং একজন বৃদ্ধ লোক ছাড়া তাঁর সঙ্গে সবাই সিজদা করেন। বৃদ্ধ লোকটি এক মুঠো কংকর বা মাটি হাতে নিয়ে কপাল পর্যন্ত উঠিয়ে বলল, আমার জন্য এ যথেষ্ট। আমি পরবর্তী যামানায় দেখেছি যে, সে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৭/ কুরআন তিলওয়াতে সিজদা
পরিচ্ছেদঃ ৬৮৬. সূরা আন্ নাজ্‌মের- এর সিজদা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১০০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১০৭০
قَالَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
ইবন আব্বাস (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ বিষয়ে বর্ণনা করেছেন।
১০০৯। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা আন্ নাজ্‌ম তিলাওয়াত করেন, এরপর সিজ্‌দা করেন। তখন উপস্থিত লোকদের এমন কেউ বাকী ছিল না, যে তাঁর সঙ্গে সিজদা করেনি। কিন্তু এক ব্যাক্তি এক মুঠো কংকর বা মাটি হাতে নিয়ে কপাল পর্যন্ত তুলে বলল, এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। (আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন) পরে আমি এ ব্যাক্তিকে দেখেছি যে, সে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

ভেবে দেখুন, এত বড় আশ্চর্য ঘটনা কীভাবে ঘটে? এর জন্য আমাদের যেতে হবে অনেকগুলো সিরাত গ্রন্থ এবং তাফসীর সমূহতে।

সিরাতে রাসুলুল্লাহ – ইবনে ইসহাক

ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম এবং সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ সিরাত গ্রন্থ হচ্ছে মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ইবনে ইয়াসার ইবনে খিয়ারের সিরাত গ্রন্থটি। সত্যিকার অর্থে, এই গ্রন্থটি এতটাই গুরুত্বপুর্ণ যে, এই গ্রন্থটি না থাকলে নবীর সম্পর্কে কোন তথ্যই হয়তো জানা সম্ভব হতো না। এই গ্রন্থটির মধ্যে খুব সরাসরি এবং পরিষ্কারভাবেই এই বিবরণটি রয়েছে [11]

এখান থেকে তোমরা কি ভেবে দেখেছ “লাত” ও “ওজ্জা” সম্পর্কে এবং তৃতীয় বস্তু “মানাত” সম্পর্কে? আল্লাহর বাণী এ পর্যন্ত এলো, তখন শয়তান, যে তাঁর [রাসুলের (সা.)] এই ধ্যান ও স্বজনদের সঙ্গে আপসের ব্যাপারটা পছন্দ করছিল না, সে করল কি, তাঁর জিহ্বায় জুড়ে দিল, এরা হলো মহান গারানিক, যার মধ্যস্থতা অনুমোদিত।
কোরাইশরা এটা শুনে খুব আহ্লাদিত হয়ে গেল , তাদের দেবদেবী সম্পর্কে এমন প্রশংসাসূচক উক্তি শুনে তারা খুব খুশি হলো এবং তারা তাঁর কথা শুনতে মনোযোগী হয়ে উঠল। বিশ্বাসীগণ কিছুই সন্দেহ করল না, তাঁদের রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছ থেকে যা আনেন, তা-ই সত্য। তাতে কোনো ভুল-ত্রুটি কিংবা মিথ্যা কামনা থাকতেই পারে না। সুরার শেষে সেজদার জায়গায় রাসুলে করিম (সা .) সেজদা দিলেন। তারাও দিল, কারণ রাসুলে করিমকে (সা.) মান্য করা তাদের কর্তব্য। বহু – ঈশ্বরবাদী কোরাইশ এবং অন্য যারা ছিল সেখানে, তারাও সেজদা করল। কারণ, রাসুলে করিম ( সা.) তাদের দেবদেবীর নাম নিয়েছিলেন। কাজেই দেখা গেল, মসজিদের ভেতরে বিশ্বাসী অবিশ্বাসী সবাই সেজদায় প্রণত হলো। আল-ওয়ালিদ ইবনে আল-মুগিরা খুব বৃদ্ধ ছিলেন। তিনি নত হতে পারতেন না, কাজেই তিনি সেজদায় যেতে পারেন না। এক মুঠো ধুলো হাতে নিয়ে তাতেই মাথা ঠেকিয়েছিলেন। তারপর সবাই যে যার পথে চলে গেল। কোরাইশরা আনন্দে আটখানা। তারা বলতে লাগল, মুহাম্মদ আমাদের দেবতা সম্পর্কে যা সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন। তিনি তাঁর আবৃত্তিতে বলেছেন তাদের দেবতারা হলেন গারানিক, যার মধ্যস্থতা অনুমোদিত।
আবিসিনিয়ায় রাসুলে করিমের (সা.) সাহাবিদের কানে গেল সে কথা। তাঁরা শুনলেন কোরাইশরা সব মুসলমান হয়ে গেছে। অতএব, কিছু লোক তক্ষুনি রওনা হয়ে গেছেন, কিছু থেকে গেলেন।
তখন জিবরাইল (আ.) এলেন রাসুলে করিমের (সা.) কাছে। বললেন, ‘এ কী করলে তুমি মুহাম্মদ ? তুমি তাদের কাছে এমন কথা বলেছ, যা আমি আল্লাহর কাছ থেকে আনিনি, যা আল্লাহ কোনো সময় বলেননি।
রাসূলে করিম (সা.) ভীষণ ব্যথিত হলেন, তিনি আল্লাহর ভয়ে ভীত হলেন। তখন আল্লাহ একটি প্রত্যাদেশ পাঠালেন, কারণ আল্লাহ তাঁর প্রতি বড় সদয় ছিলেন, তাঁকে শান্তি দিতে চাইতেন। তাঁর ভার লঘু করে দিতেন। তাঁকে বলতেন, তাঁর পূর্ববর্তী সমস্ত নবী ও রাসুল ঠিক তাঁরই মতো ইচ্ছা করতেন, ঠিক তাঁরই মতো চাইতেন, শয়তান কেবল মাঝেমধ্যে তাঁদের সেই চাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ইচ্ছেমতো একটা কিছু ঢুকিয়ে দিত। যেমন শয়তান এবার ঢুকিয়ে দিল তাঁর জিহ্বার মধ্যে। সুতরাং, শয়তান যা ঢুকিয়েছিল, তা খারিজ করে দিলেন আল্লাহ এবং আল্লাহ তাঁর আপন আয়াত প্রতিষ্ঠা করলেন, অর্থাৎ বলে দিলেন, ‘তুমিও অন্যান্য নবী ও রাসুলের মতো একজন!’ তখন আল্লাহ নাজিল করলেন, ‘আমি তোমার আগে যেসব রাসুল কিংবা নবী প্রেরণ করেছি, তারা শয়তান তাদের আবৃত্তিতে কিছু প্রক্ষিপ্ত করেছে, কিন্তু শয়তান যা প্রক্ষিপ্ত করে, আল্লাহ তা বিদূরিত করেন। তারপর আল্লাহ তাঁর নিজের আয়াতসমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ এমন করে আল্লাহ তাঁর রাসুলের দুঃখ মোচন করলেন, সমস্ত ভয় থেকে তাঁকে মুক্ত করলেন, তাদের দেবতা সম্পর্কে যে সমস্ত শব্দ শয়তান আল্লাহর বাণীর ভেতর প্রক্ষেপ করেছিল, তা বিদূরিত করেন। তিনি নাজিল করেন, ‘তোমরা কি ভেবেছ ছেলেসন্তান তোমাদের জন্য আর মেয়েসন্তান আল্লাহর জন্য?
১. বড় আকৃতির পাখিবিশেষ। আকাশে অনেক ওপর দিয়ে উড়ে থাকে।
২. কোরআন ২২:৫২
পৃষ্ঠা ১৯৮ ● সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)

শয়তানের এই আক্ষেপ খারিজ করে যখন আল্লাহর কাছ থেকে ওহি এল, তখন কোরাইশরা বলল, আল্লাহর সঙ্গে তোমাদের দেবদেবীদের অবস্থান সম্পর্কে মুহাম্মদ আগে যা বলেছিল, তাতে এখন সে অনুতাপ করছে, সে তা বদল করে অন্য কিছু নিয়ে এসেছে। এদিকে শয়তানের দেয়া শব্দগুলো সমস্ত পৌত্তলিকদের মুখে মুখে ঘুরে ফিরছিল। এখন তারা সবাই মুসলমানদের প্রতি, রাসুলে করিমের (সা.) প্রতি মারমুখী হয়ে উঠল।
পৃষ্ঠা ১৯৯ ● সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)

শয়তানের আয়াত 24
শয়তানের আয়াত
শয়তানের আয়াত 27

তাবাকাত আল কাবীর – ইবনে সাদ

একই বিবরণ পাওয়া যায় কিতাব আল তাবাকাত আল কাবীর গ্রন্থে [12]

The Apostle of Allah, may Allah bless him, had seen his people departing from him. He was one day sitting alone when he expressed a desire: I wish, Allah had not revealed to me anything distasteful to them. Then the Apostle of Allah, may Allah bless him, approached them (Quraysh) and got close to them, and they also came near to him. One day he was sitting in their assembly near the Ka`bah, and he recited: “By the Star when it setteth”, (Qur’an, 53:1) till he reached, “Have ye thought upon Al-Uzza and Manat, the third, the other”. (Qur’an, 53:19 20) Satan made him repeat these two phrases: These idols are high and their intercession is expected. The Apostle of Allah, may Allah bless him, repeated them, and he went on reciting the whole surah and then fell in prostration, and the people also fell in prostration with him. Al-Walid Ibn al-Mughirah, who was an old man and could not prostrate, took a handful of dust to his forehead and prostrated on it. It is said: Abu Uhayhah Sa’id Ibn al-‘As, being an old man, took dust and prostrated on it. Some people say: It was al-Walid who took the dust; others say: It was Abu Uhayhah; while others say: Both did it. They were pleased with what the Apostle of Allah, may Allah bless him, had uttered. They said: We know that Allah gives life and causes death. He creates and gives us provisions, but our deities will intercede with Him, and in what you have assigned to them, we are with you. These words pricked the Apostle of Allah, may Allah bless him. He was sitting in his house and when it was evening, Gabriel, may peace be on him, came to him and revised the surah. Then Gabriel said: Did I bring these two phrases. The Apostle of Allah, may Allah bless him, said: I ascribed to Allah, what He had not said.

শয়তানের আয়াত 29

আল তাবারীর ইতিহাস থেকে

এবারে আসুন দেখি, ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তাবারীর বিবরণে কী পাওয়া যায় [13]

শয়তানের আয়াত 31
শয়তানের আয়াত 33
শয়তানের আয়াত 35
শয়তানের আয়াত 37
শয়তানের আয়াত 39
শয়তানের আয়াত 41
শয়তানের আয়াত 43

কোরআনের আয়াত ও তাফসীর

প্রথমেই আসুন বর্তমান সময়ে প্রাপ্ত কোরআনে সূরা নজমের ১৯, ২০ এবং ২১ নম্বর আয়াতগুলো পড়ে নিই, [14] [15]

তোমরা কি লাত ও উযযা সম্পর্কে ভেবে দেখেছ?
— Taisirul Quran
তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্বন্ধে?
— Sheikh Mujibur Rahman
তোমরা লাত ও ‘উযযা সম্পর্কে আমাকে বল’?
— Rawai Al-bayan
অতএব, তোমরা আমাকে জানাও ‘লাত’ ও ‘উযযা’ সম্পর্কে
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আর তৃতীয় আরেকটি মানাৎ সম্পর্কে? (এ সব অক্ষম, বাকশক্তিহীন, নড়া-চড়ার শক্তিহীন মূর্তিগুলোর পূজা করা কতটা যুক্তিযুক্ত)
— Taisirul Quran
এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্বন্ধে?
— Sheikh Mujibur Rahman
আর মানাত সম্পর্কে, যা তৃতীয় আরেকটি?
— Rawai Al-bayan
এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্পর্কে [১]?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

এরপরে আরো একটি আয়াত আছে, যেখানে ঐ আয়াতে নাজিল হওয়া বিষয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলা হলো। বলা হলো, কাফেররা লাত মানাত উজ্জা নামক দেবীদেরকে আল্লাহর কন্যা বলে মনে করে, আল্লাহ নিজের জন্য কন্যা সন্তান নেবেন না। সেই সময়ে পুত্র সন্তান হওয়া ছিল গৌরবের বিষয়, আর কন্যা সন্তান হওয়া ছিল লজ্জার বিষয়। আল্লাহ পাকও সেই সময়ের মানুষের মতই, খুব গর্ব করে এই আয়াতে বলছেন, আল্লাহ কী কাফেরদেরকে পুত্র সন্তান দেবেন, আর নিজের জন্য নেবেন কন্যা সন্তান? এই আয়াতটি পড়লে স্পষ্টতই বোঝা যায়, আল্লাহও কন্যা সন্তান হওয়াকে অমর্যাদাকর এবং পুত্র সন্তান হওয়াকে মর্যাদাকর বলে মনে করেন। আসুন আয়াতটি দেখি, যা থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ কন্যা সন্তান আর পুত্র সন্তান হওয়ার মাঝে মর্যাদার তারতম্য করেছেন কিনা [16]

কী! তোমাদের জন্য পুত্র সন্তান আর আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান?
— Taisirul Quran
তাহলে কি পুত্র-সন্তান তোমাদের জন্য এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য?
— Sheikh Mujibur Rahman
তোমাদের জন্য কি পুত্র আর আল্লাহর জন্য কন্যা?
— Rawai Al-bayan
তবে কি তোমাদের জন্য পুত্ৰ সন্তান এবং আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

একদম একই আয়াত আবার বলা হয়েছে সূরা জুখরুফের ১৬ নম্বরে [17]

কি! তিনি তাঁরই সৃষ্টি হতে কন্যা সন্তান গ্রহণ করেছেন আর তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন পুত্র সন্তান?
— Taisirul Quran
তিনি কি তাঁর সৃষ্টি হতে নিজের জন্য কন্যা সন্তান গ্রহণ করেছেন এবং তোমাদেরকে বিশিষ্ট করেছেন পুত্র সন্তান দ্বারা?
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনি কি যা সৃষ্টি করেছেন তা থেকে কন্যা সন্তান গ্রহণ করেছেন, আর তোমাদেরকে বিশিষ্ট করেছেন পুত্র সন্তান দ্বারা?
— Rawai Al-bayan
নাকি তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তা হতে কন্যা সন্তান গ্ৰহণ করেছেন এবং তোমাদেরকে বিশিষ্ট করেছেন পুত্ৰ সন্তান দ্বারা?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

কোরআনের সূরা হজ্বে পরিষ্কারভাবেই বলা আছে যে, নবী রাসুলদের ওহীর মধ্যে শয়তান কিছু বাক্য ঢুকিয়ে দিতে পারে। এরপরে বলা হয়েছে, এগুলো আসলে ইমানদারদের ইমান পরীক্ষা করার জন্য। আসুন আয়াতগুলো আগে পড়ে নিই [18]

৫২
আমি তোমার পূর্বে যে সব রসূল কিংবা নবী পাঠিয়েছি তাদের কেউ যখনই কোন আকাঙ্ক্ষা করেছে তখনই শয়ত্বান তার আকাঙ্ক্ষায় (প্রতিবন্ধকতা, সন্দেহ-সংশয়) নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু শয়ত্বান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ তা মুছে দেন, অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। কারণ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রেষ্ঠ হিকমতওয়ালা।
— Taisirul Quran
আমি তোমার পূর্বে যে সব রাসূল কিংবা নাবী প্রেরণ করেছি তাদের কেহ যখনই কিছু আকাংখা করেছে তখনই শাইতান তার আকাংখায় কিছু প্রক্ষিপ্ত করেছে। কিন্তু শাইতান যা প্রক্ষিপ্ত করে আল্লাহ তা বিদূরিত করেন; অতঃপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর আমি তোমার পূর্বে যে রাসূল কিংবা নবী পাঠিয়েছি, সে যখনই (ওহীকৃত বাণী) পাঠ করেছে, শয়তান তার পাঠে (কিছু) নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু শয়তান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ তা মুছে দেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সুদৃঢ় করে দেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়।
— Rawai Al-bayan
আর আমরা আপনার পূর্বে যে রাসূল কিংবা নবী প্রেরণ করেছি [১], তাদের কেউ যখনই (ওহীর কিছু) তিলাওয়াত করেছে [২], তখনই শয়তান তাদের তিলাওয়াতে (কিছু) নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু শয়তান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ্‌ তা বিদূরিত করেন [৩]। তারপর আল্লাহ্‌ তাঁর আয়াতসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
৫৩
(তিনি এটা হতে দেন এজন্য) যাতে তিনি শয়ত্বান যা মিশিয়ে দিয়েছে তা দ্বারা পরীক্ষা করতে পারেন তাদেরকে যাদের অন্তরে (মুনাফিকীর) ব্যাধি আছে, যারা শক্ত হৃদয়ের। অন্যায়কারীরা চরম মতভেদে লিপ্ত আছে।
— Taisirul Quran
এটা এ জন্য যে, শাইতান যা প্রক্ষিপ্ত করে তিনি ওকে পরীক্ষা স্বরূপ করেন তাদের জন্য যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, যাদের হৃদয় পাষাণ। নিশ্চয়ই যালিমরা দুস্তর মতভেদে রয়েছে।
— Sheikh Mujibur Rahman
এটা এজন্য যে, শয়তান যা নিক্ষেপ করে, তা যাতে তিনি তাদের জন্য পরীক্ষার বস্ত্ত বানিয়ে দেন, যাদের অন্তরসমূহে ব্যাধি রয়েছে এবং যাদের হৃদয়সমূহ পাষাণ। আর নিশ্চয় যালিমরা দুস্তর মতভেদে লিপ্ত রয়েছে।
— Rawai Al-bayan
এটা এ জন্য যে, শয়তান যা প্রক্ষিপ্ত করে তিনি সেটাকে পরীক্ষাস্বরূপ করেন তাদের জন্য যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে আর যারা পাষণহৃদয় [১]। আর নিশ্চয় যালেমরা দুস্তর বিরোধিতায় লিপ্ত রয়েছে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

তাফসীরে জালালাইন থেকে

বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে জালালাইনে এই শয়তানের আয়াতের বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। সেখান থেকে সূরা হাজ্জ এর ৫২ এবং ৫৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর পড়ে নিই [19]

শয়তানের আয়াত 45
শয়তানের আয়াত 47

এবারে তাফসীরে জালালাইন থেকেই পড়ি সূরা নজমের শানে নুজুল। শানে নুজুলে আবার খুব কৌশলে শয়তানের প্ররোচনায় আয়াত নাজিলের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে [20]

শয়তানের আয়াত 49
শয়তানের আয়াত 51

তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে

এবারে তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে সূরা হাজ্জ এর ৫২, ৫৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর পড়ে নিই [21]

শয়তানের আয়াত 53
শয়তানের আয়াত 55
শয়তানের আয়াত 57
শয়তানের আয়াত 59
শয়তানের আয়াত 61
শয়তানের আয়াত 63

তাফসীরে মাজহারী থেকে

এবারে আসুন এই আয়াতের তাফসীরটি তাফসীরে মাজহারী থেকে পড়ি [22]

শয়তানের আয়াত 65
শয়তানের আয়াত 67
শয়তানের আয়াত 69
শয়তানের আয়াত 71
শয়তানের আয়াত 73

বিষয়টি নিয়ে লুকোছাপা

শয়তানের এই আয়াতটি নিয়ে যে মুসলিম স্কলারগণ বিব্রত ছিলেন, তা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় একটি হাদিস থেকে। দেখুন, একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, ইবনু আব্বাস কোরআনের আয়াতের লাত শব্দের অর্থ বানিয়েছিলেন, একজন ব্যক্তি। দাবী করা হয়েছে, সেই ব্যক্তি যিনি হাজীদের জন্য ছাতু গুলাতো, এখানে দেবী লাত নয়- তার কথা বলা হয়েছে। অথচ, সহজেই বোঝা যায়, এখানে লাত এবং উজ্জা বলতে কী বোঝানো হয়েছে।

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছদঃ ৬৫/৫৩/৫. আল্লাহর বাণীঃ তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উয্যা সম্বন্ধে। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/১৯)
৪৮৫৯. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর বাণী اللَّاتَ وَالْعُزَّى এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে ‘লাত’ বলে এ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যে হাজীদের জন্য ছাতু গুলত। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৯৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

শয়তানের আয়াত 75

ধ্রুপদী আলেমদের বক্তব্য

শুরুতেই পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামিক আলেম শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ শয়তানের আয়াত সম্পর্কে কী বলেছেন তা জেনে নিই [23]

প্রাথমিক যুগের সালাফগণ সম্মিলিতভাবে সারসের আয়াতগুলোকে কোরআনের সাথে সম্পৃক্ত হিসেবে মেনে নিতেন। পরবর্তী সময়ে আগত আলেমদের (খালাফ) থেকে যারা প্রথম পণ্ডিতদের মতামত অনুসরণ করেছিল, তারা বলে যে এই ঐতিহাসিক বিবরণগুলো বিশুদ্ধ বর্ণনার সাথে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং এগুলি অস্বীকার করা অসম্ভব এবং কোরআন নিজেই এর সাক্ষ্য দিচ্ছে।

মুহাম্মদের সবচেয়ে প্রথম জীবনী, ইবনে ইসহাক এর সিরাত গ্রন্থটি অনেকাংশে হারিয়ে গেলেও তার সংগ্রহকৃত তথ্যাবলি মূলতঃ দুই উৎসে টিকে আছে। ইবনে হিশাম এবং আল-তাবারি। শয়তানের আয়াতসমূহ প্রবর্তনের এই ঘটনাটি আল-তাবারিতে পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে, যা উপরে দেয়া হয়েছে। তিনি ইবনে ইসহাক থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করেন। তবে ইবনে হিশামের সিরাত গ্রন্থে এই ঘটনাটি লিপিবদ্ধ করা হয়নি। এই বিষয়ে তিনি স্বীকার করেন, এই ঘটনা “কিছু মানুষকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলতে পারে” বলেই এরূপ করা হয়েছে [24]

Things which it is disgraceful to discuss; matters which would distress certain people; and such reports as I have been told are not to be accepted as trustworthy all these things have I omitted.

যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা লজ্জাজনক; যে বিষয়গুলো কিছু লোককে কষ্ট দেয়; আমাকে বলা হয়েছে এই ধরনের বিবরণগুলো বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে গ্রহণ করা হবে না, সেই সমস্ত জিনিস আমি বাদ দিয়েছি।

Things which it is disgraceful to discuss; matters which would distress certain people; and such reports as I have been told are not to be accepted as trustworthy all these things have I omitted.

ঘণ্টা শয়তানের বাঁশি

নবী মুহাম্মদের হাদিস থেকে জানা যায়, তিনি বলেছিলেন, ঘণ্টাধ্বনির ন্যায় তার কাছে ওহী আসতো [25]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ ওহীর সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার প্রতি ওহী কিভাবে আসে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন সময় তা ঘন্টাধ্বনির ন্যায় আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচাইতে কষ্টদায়ক হয় এবং তা সমাপ্ত হতেই ফিরিশতা যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নিই, আবার কখনো ফিরিশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি প্রচন্ড শীতের দিনে ওহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওহী শেষ হলেই তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।
তাহক্বীক: মারফু হাদিস।
তাখরীজ: ( বুখারীঃ তা.পা ২, ৩২১৫; তিরমিযীঃ ৩৯৯৪; নাসাঈঃ ৯৪২; আহমাদঃ ২৬৯৫২; মুয়াত্তাঃ ৪৭৯। মুসলিম ৪৩/২৩, হা: ২৩৩৩ , আহমাদ ২৫৩০৭ ( আধুনিক প্রকাশনী. ২ , ই.ফা. ২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

শয়তানের আয়াত 78

ঠিক একইসাথে, তিনি এটিও বলেছেন [26]

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৮/ পোশাক ও সাজসজ্জা
পরিচ্ছদঃ ২২. সফরে কুকুর ও ঘণ্টা রাখা মাকরূহ
৫৩৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘন্টা শয়তানের বাঁশি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

শয়তানের আয়াত 80

তারমানে দেখা যাচ্ছে, নবীর কাছে যখন ওহী আসতো, তখন ঘণ্টাধ্বনির শব্দ হতো। আবার ঘণ্টা হচ্ছে শয়তানের বাঁশি, এটিও নবীরই বক্তব্য। এখন আপনি নিজেই বিবেচনা করুন আসল সত্য কী!

তারপরেও তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি, নবীর কাছে আল্লাহর ওহীই আসতো। কিন্তু মহাবিশ্বের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ পাকের ওহী সামান্য এক সৃষ্টি শয়তান উল্টেপাল্টে দিচ্ছে, ভুলভাল ঢুকিয়ে দিচ্ছে, এই কথা কী মেনে নেয়া যায়? আল্লাহ পাকের সিকিউরিটি সিস্টেম কী এতটাই দুর্বল ছিল?

উপসংহার

শয়তানের প্ররোচনায় আয়াত নাজিল হয়ে থাকলে, সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি যেটি ওঠে, তা হচ্ছে, নবী মুহাম্মদ কি কে আল্লাহর ফেরেশতা আর কে শয়তান, তার পার্থক্য বুঝতেন না? এমনও তো হতে পারে, সেই প্রথম যেদিন জিব্রাইলের আবির্ভাব হয়েছিল, সেই আসলে শয়তান ছিল। পুরো কোরআনই আসলে শয়তানের আয়াত। মাঝখানে সত্যিকারের আল্লাহ দুইটি সঠিক সূরা নাজিল করতে পেরেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে শয়তান আবার সেই আয়াত দুটি সংশোধন করে দিয়েছিলেন।

অর্থাৎ, আমি বোঝাতে চাচ্ছি, আমরা কীভাবে শতভাগ নিশ্চিত হবো যে, যেই আল্লাহকে মুসলমানগণ সাড়ে ১৪০০ বছর ধরে উপাসনা করছে, সে আসলে শয়তান আর যাকে তারা শয়তান ভাবছে, সেই আসলে আল্লাহ কিনা। এরকম হয়নি তা নিশ্চিতভাবে বোঝার উপায় কী? যেখানে খোদ নবী মুহাম্মদই ধোঁকা খেয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে ধোঁকাটি আরো বড় কিনা, রিভার্স ধোঁকা কিনা, আমাদের নিশ্চিত হওয়ার উপায় কী?

একইসাথে আরও একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। কারণ অধিকাংশ মুমিন ভাইদের বুদ্ধিমত্তার মান নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ থাকায়, তারা অনেকেই এই লেখা পড়ে মনে করতে পারেন যে, নাস্তিকরা বুঝি আল্লাহ আর শয়তানের অস্তিত্বকে মেনে নিলো। মোটেও তা নয়। এই লেখাটির মূল বিষয়টি তাদের মাথায় প্রবেশ করতে যেই আইকিউ প্রয়োজন, তা তাদের অনেকেরই নেই বলেই তারা এরকম ভাবতে পারে। মুমিন ভাইদের বুদ্ধির আসলেই জুড়ি মেলা ভার। নাস্তিকরা আল্লাহ বা শয়তান কারোর অস্তিত্বেরই প্রমাণ পায়নি, তাই মানেও না। এই লেখাটির মূল বিষয়টি হচ্ছে, নবী মুহাম্মদ যে ক্ষণে ক্ষণে পরিস্থিতি বুঝে নিজের সুবিধামত আয়াত নাজিল করতেন, তা ঘটনাটি থেকে একদম পরিষ্কার হয়ে যায়। যখন তার দরকার হয়েছিল, মুশরিকদের সাথে সংঘাত অনিবার্য, তখন লাত মানাত উজ্জার প্রশংসা করে আয়াত নাজিল করলেন। আবার যখন দেখলেন, তার অনুসারীদের মধ্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তার মূল উদ্দেশ্যও ব্যহত হচ্ছে, তখন তিনি আবার আয়াত বদলে ফেললেন। আয়াত বদলে সব দোষ ফেললেন বেচারা শয়তানের ঘাড়ে। কারণ কেউ তো আর বিষয়টি যাচাই করে দেখতে পারবে না, আসলেই শয়তান এরকম কিছু করেছিল কিনা। আমাদের দেশে মাদ্রাসার হুজুরেরা ছাত্রদের ধর্ষণ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা খেলেও দেখবেন, তারা সব দোষ শয়তানের ঘাড়ে চাপিয়ে সটকে পড়তে চায়। বলে শয়তান নাকি তাকে দিয়ে এগুলো করিয়েছে। আবার অনেক সময় দেখবেন, যেসব মেয়েদের স্বামীরা বিদেশে দীর্ঘদিন ধরে থাকে, সেইসব মেয়ে গর্ভবতী হয়ে গেলে সব দোষ ফেলে বেচারা জ্বীনদের ওপর। জ্বীনেরা নাকি রাতের বেলা কাজ করে চলে গেছে। কেউ তো আর জ্বীনদের গিয়ে জিজ্ঞেস করবে না, আসলেই তাদের কেউ এরকম কাজ ঘটিয়েছে কিনা। তাই তাদের ওপর দায় চাপানো খুবই নিরাপদ, এবং অন্ধবিশ্বাসী অশিক্ষিত মূর্খ লোকদের এগুলো দিয়ে বোকা বানানোও সহজ। এই প্রসঙ্গে আয়িশার একটি হাদিস উল্লেখ না করলেই নয় [27]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ ترجئ من تشاء منهن وتؤوي إليك من تشاء ومن ابتغيت ممن عزلت فلا جناح عليك “তুমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তোমার কাছ থেকে দূরে রাখতে পার এবং যাকে ইচ্ছা তোমার কাছে স্থান দিতে পার। আর তুমি যাকে দূরে রেখেছ, তাকে কামনা করলে তোমার কোন অপরাধ নেই। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন ترجئ দূরে রাখতে পার। أرجئه তাকে দূরে সরিয়ে দাও, অবকাশ দাও।
৪৪২৫। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যেসব মহিলা নিজকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হেবাস্বরূপ ন্যাস্ত করে দেন, তাদের আমি ঘৃণা করতাম। আমি (মনে মনে) বলতাম, মহিলারা কি নিজেকে অর্পণ করতে পারে? এরপর যখন আল্লাহ্ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ “আপনি তাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আপনার কাছ থেকে দূরে রাখতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনার নিকট স্থান দিতে পারেন। আর আপনি যাকে দূরে রেখেছেন, তাকে কামনা করলে আপনার কোন অপরাধ নেই।” তখন আমি বললাম, আমি দেখছি যে, আপনার রব আপনি যা ইচ্ছা করেন, তা-ই পূরণ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)

তথ্যসূত্র

  1. আশ শিফা, ইমাম কাযী আয়ায আন্দুলুসী, সনজরী পাবলিকেশন্স, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬৫ []
  2. সুনান আন-নাসায়ী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৬২৩ []
  3. সীরাতে ইবনে হিশাম : হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনীগ্রন্থ, আকরাম ফারুক পৃষ্ঠা ৬১-৬২ []
  4. সীরাতুল মুস্তফা সা., আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (রহ.), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৫৪, ১৫৫ []
  5. মুখতাসার যাদুল মা’আদ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওযী, ওয়াহিদীয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী, পৃষ্ঠা ২০২-২০৩ []
  6. সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬২ []
  7. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৫৭৫[]
  8. সহিহ আত-তিরমিযী, প্রথম খণ্ড, হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪৬৪ []
  9. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ১০০৬ []
  10. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ১০০৯ []
  11. সিরাতে রাসুলাল্লাহ, মহানবীর প্রথম বিশদ জীবনী, ইবনে ইসহাক, অনুবাদঃ শহীদ আখন্দ, প্রথমা প্রকাশনী, পৃষ্ঠাঃ ১৯৭-১৯৯ ডাউনলোড লিঙ্ক []
  12. KITAB AL-TABAQAT AL-KABIR – Ibn Sa’d, Page- 232 []
  13. The History of al-Tabari, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১০৭-১১২ []
  14. সূরা নজম, আয়াত ১৯ []
  15. সূরা নজম, আয়াত ২০ []
  16. সূরা নজম, আয়াত ২১ []
  17. সূরা ৪৩, আয়াত ১৬ []
  18. সূরা হজ্ব, আয়াত ৫২, ৫৩ []
  19. তাফসীরে জালালাইন, চতুর্থ খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পৃষ্ঠা ৩৯২-৩৯৩ []
  20. তাফসীরে জালালাইন, ষষ্ঠ খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পৃষ্ঠা ২৫১-২৫২ []
  21. তাফসীরে ইবনে কাসীর, সপ্তম খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৪৮০-৪৮৫ []
  22. তাফসীরে মাজহারী, অষ্টম খণ্ড []
  23. Ibn Taymiyyah। Majmu’ al-Fatawa। ১৩ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০২০ []
  24. Holland, Tom (২০১২), In the Shadow of the Sword। Doubleday, পৃষ্ঠা ৪২ []
  25. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২ []
  26. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৩৬৬ []
  27. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৪২৫ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

10 thoughts on “শয়তানের আয়াত বা স্যাটানিক ভার্সেস

    • December 10, 2022 at 8:49 PM
      Permalink

      মিনার ভাই,
      এখানে তো ঠিকই কমেন্ট করলেন।
      আপনাদের response to anti islam এ কমেন্ট করা যায় না কেন?
      নাস্তিকরা কমেন্ট করলে গোমর ফাঁস করে ফেলবে এই ভয় পান???

      Reply
  • December 23, 2019 at 8:12 AM
    Permalink

    M.E.F. Prottoy
    ৩ নাম্বার পয়েন্টা টা (স্কলার রা দাবি করেন আয়াতটি শয়তান কাফেরদের কানে পৌছে দিয়েছে, মুহাম্মাদ(স) এর মুখ হতে উচ্চারিত হয়নি) এর প্রমাণ টা কি? যেখানে তাফসীরে জালালাইন আর ইবনে কাসিরে পরিষ্কার ভাবেই দেখা যাচ্ছে তা মুহাম্মদ(স) এর মুখ হতে উচ্চারিত হয়েছিলো।

    Reply
  • January 8, 2020 at 1:15 AM
    Permalink

    Khub valo laglo Vai,, Egiye Jan Vai..

    Reply
  • July 16, 2020 at 10:21 PM
    Permalink

    “””স্যাটানিক ভার্সেস””””

    স্যাটানিক ভার্স অর্থাৎ কুরআনে শয়তানের বানী।সালমান রুশদি থেকে শুরু করে বর্তমানের অনেক নাস্তিকের দাবি শয়তান সুকৌশলে নিজের বানী আল্লাহর ওহি বলে ডুকিয়ে দিয়েছেন আল কুরআনে।এটা মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই না এবং নাস্তিকদের দ্বীমুখি আচরন।????

    যেহেতু নাস্তিকদের দাবি শয়তান তার কথা কুরআনে ডুকিয়ে দিয়েছে তারমানে শয়তান আছে।এবং শয়তানের অস্তিত্বের জোড়দাবিও করে থাকে!!!!

    এখানে আমার প্রশ্নে হলো। শয়তান আসলো কোথা থেকে???শয়তানের স্রষ্টা কে??? শয়তান আছে তবে শয়তানের স্রষ্টা নেই কেন??? যদি, নাস্তিকদের কথা মেনেও নেই তারপরেও কথা থাকে।কুরআনের বাকি আয়াত গুলো কার বানী??? নাস্তিকরা আবার এটাও দাবি করে কুরআন হযরত মুহম্মদ সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রচনা করেছেন, যদি কুরআন মানব রচিত হয়ে থাকে তাহলে শয়তান আবার আয়াত ডুকায় কি করে??? নাস্তিকদের এই সকল আলতু ফালতু কথাই প্রমান করে কুরআন আল্লাহর বানী।✌নাস্তিকদের বিশ্বাস আল্লাহ নাই, শয়তান আছে। ক্যামনে কি! শয়তান আসলো কোথা থেকে? শয়তান কি বৈজ্ঞানীকভাবে প্রমাণীত সত্বা??? সকল নাস্তিক আল্লাহ,আল্লাহর রাসূল এবং ধর্মের নামে কুৎসা রটনার সময় শয়তানকে ব্যবহার করে!!!HOW FUNNY!!!

    নাস্তিক মানেই হাইস্যকর, চরম বিনোদন। ????????????????????????

    Reply
  • December 10, 2020 at 7:32 AM
    Permalink

    আরে নাস্তিকের বাচ্চা ঘন্টা ধনির মত আর ঘন্টা ধনির মাঝে যে প্রার্থক্য আছে সেটা তুই না বুঝলেও একটা পাগল ও বুঝবে।।ভালো করে ওহী নাযিলের পদ্ধতি গুলি ভালো করে পড়।।।ওহী নাযিলের পদ্ধতি ছিল ৯ টি
    ১.সপ্ন
    ২..ঘন্টা ধনির মত গুন গুন করে।।সেটা হতে পারে অন্য রকম যেরকম এখনকার ঘন্টা বাজে।।
    ৩.মানুষের আকৃতিতে
    ৪.অন্তর্লোকে ফুকে দেয়া
    ৫.পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি
    ৬..তন্দ্রাবস্থায় সরাসরি অহী
    ৭.অন্তর্লোক ছাড়া সরাসরি
    ৮..জীব্রাইল (আ) এর নিজ আকৃতিতে
    ৯..ইস্রাফিল আ কখনো ওহী আনত
    নাস্তিকের বাচ্চা ইসলাম সম্পর্কে জানতে হলে ভালো করে জানবি।।অল্প জেনে কমেন্ট করবিনা

    Reply
  • July 20, 2021 at 7:50 AM
    Permalink

    আকাশে থুথু ছুড়ে নিজের মুখে ফেলা !!

    আচ্ছা, ধর্মানুরাগীরা ভাইরা একটু বুঝিয়ে বলবেন শয়তান এলো কোথা থেকে? আল্লা একা এই বিশ্ব, সমস্ত প্রাণী, সমস্ত উদ্ভিদ, সমস্ত পাহাড়, সমস্ত নদী, সমস্ত গ্রহ নক্ষত্র সব কিছু শূন্য থেকে বানিয়েছেন | তার মানে তিনি শয়তানও নিজেই বানিয়েছেন | অর্থাৎ এমন কিছু বানিয়েছেন যা তার বিরোধিতা করছে | তিনি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বগামী, সব সর্ব, তবু শায়েস্তা করতে পারছেন না ? শুধু তাই নয়, নাস্তিকদের মতো মাত্র 50 বা 60 বছর জ্বালানোর পর মরে ভূত হয়ে নরকের আগুনে পুড়ে চাই হয়ে যাচ্ছে না | দিব্বি যুগ যুগ ধরে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে মনের আনন্দে ! আর যদি তিনি শয়তান সৃষ্টি না করে থাকেন তবে বলতে হবে যে তিনি সব কিছুর স্রষ্টা না | অন্য কেউ বানিয়েছে | তবে কি আরো স্রষ্টা আছে?

    Reply
  • November 10, 2021 at 5:43 PM
    Permalink

    ফেসবুক কমেন্টে দেখলাম Nur Mohammad নামে এক ব্যক্তি মরিস বুকাইলি আর কিথ মুরের বইয়ের রেফারেন্স দিয়ে অমুসলিম ও নাস্তিকদের সাথে ইচ্ছেমতো বাজে আচরণ করছে। তার উদ্দেশ্যে কিছু লিংক দিলাম এখানে

    https://dharma-bad.blogspot.com/2017/10/mushfique-imtiaz-chowdhury.html

    https://durmor.com/%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B8-%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF/

    “http://dawahganda.blogspot.com/2013/01/western-scientists-testify-to-qurans.html”
    https://durmor.com/%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B8-%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF/#:~:text=http%3A//dawahganda.blogspot.com/2013/01/western-scientists-testify-to-qurans.html

    https://youtube.com/user/ThisIsTheTruthUncut

    Reply
  • December 10, 2022 at 8:40 PM
    Permalink

    মুশফিক মিনার ভাই এখানে কমেন্ট করেছেন ঠিকই কিন্তু ওনাদের সাইটে কমেন্ট করার সুযোগ নেই।

    Reply
  • January 28, 2024 at 4:41 AM
    Permalink

    আপনি হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) এর নামের ক্ষেত্রে কোনো সম্মান সূচক শব্দ ব্যবহার করেননি, এর জন্য আমি আপনাকে ভর্ৎসনা করতে পারি; কিন্তু আমার নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) শিকার কারণ আপনার সাথে সম্মানের সাথেই কথা বলব।
    আপনি পবিত্র কোরআনকে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) এর বানানো বলে অভিহিত করেছেন। আপনার এই ভিত্তিহীন উক্তির প্রেক্ষিতে আমার বক্তব্য হচ্ছে-
    প্রথমত: যদি পবিত্র কোরআন হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) এর নিজের বানানো হবে, তবে কেন তিনি এটিকে মহান আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করবেন, যে সময়কার লোকজন আল্লাহকে অস্বীকার করত? হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) কোরআনকে নিজেদের সাথে সম্পৃক্ত করে কৃতিত্ব নিতে পারতেন এবং সবাই এটা করে। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) এমনটি করেননি; কারণ কোরআন তাঁর বানানো নয়; সর্বস্রষ্টা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।
    দ্বিতীয়ত: আপনি নিশ্চয়ই পবিত্র কোরআনের তাঁর অস্বীকারকারীদের প্রতি ছুঁড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে অবগত নন। পবিত্র কোরআন তাঁর অস্বীকারকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছে, যদি পার কোরআনের অনুরূপ একটি সুরা বানিয়ে নিয়ে আস, যদি না পার অন্ততঃ একটি আয়াত বানিয়ে নিয়ে আস। কারোও পক্ষে তা সম্ভব হয়নি; তৎকালীন আরবের শ্রেষ্ঠ কবি বলেছিল, ‘এটা কোনো মানুষের কথা নয়”। পবিত্র কোরআনের এই চ্যালেঞ্জ আজ অব্দি আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে, চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

    আপনি আপনার আলোচিত আয়াতের ব্যাপারে মুসলিম মনীষীদের কিতাব থেকে রেফারেন্স দিয়েছেন; তবে আমি আপনাকে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য শীয়া মাযহাবের বিশিষ্ট গবেষক আল্লামা আসকারীর “নাকশে আইম্মা দার ইহয়ায়ে দ্বীন” বা نقشه ائمه در احیای دین বইটি পড়ার অনুরোধ করব।
    শুধু এইটুকু বলতেছি যে, পবিত্র কোরআন ইহুদি জাতিকে ইসলাম ও মুসলমানদের চিরন্তন শত্রু বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু অনেক ইহুদি ছদ্মবেশে ইসলামে ইসলাম ও এর মহান প্রচারক হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) এর নামে নানা ভিত্তিহীন অপবাদ ছড়িয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের কিছু মনীষীও সেই সব ভিত্তিহীন অপবাদকে কোনোরূপ যাচা-বাচাই ছাড়া গ্রহণ করেছেন।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *