সম্পাদকীয়

সমকামিতা প্রসঙ্গেঃ সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কারে আবদ্ধ মানবাধিকার।

সমকামিতা প্রসঙ্গে কথা বলা বা এই বিষয়কে নিয়ে আলোচনা করাটা আমাদের সমাজে বিব্রতকর। আর একজন নাস্তিক মুক্তমনার জন্য তো তা আরও যন্ত্রণাদায়ক। এমনিতেই একজন নাস্তিককে সমাজের বহু অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে মুর্খ জনগন এবং ধর্মজীবীদের তোপের মুখে পরতে হয়, তার উপরে থাকে সমকামীদের অধিকার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সমকামী ট্যাগের শিকার হওয়া, সাধারন স্বল্পবুদ্ধির যারা বিন্দুমাত্র পড়ালেখা না করে এই বিষয়ে প্রাচীন ধ্যান ধারনার উপরে আস্থা রাখেন তাদের ঘৃনার পাত্র হওয়া।

তবে ব্যাক্তিগত ভাবে আমি জনপ্রিয়তার আশা করি না, কে আমার সাথে একমত হল কে হল না তা থোরাই পরোয়া করি। কিন্তু আমার অর্জিত জ্ঞান, পড়ালেখা এবং একান্ত চিন্তা আমার প্রকাশ করতেই হবে, সব মানুষ যদি আমার বিরুদ্ধেও চলে যায়, তারপরেও বলতে হবে।

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য সমকামিতাকে উৎসাহিত করা নয়, বা আপনাকে সমকামী হয়ে যেতে বলা নয়। কিন্তু যারা সমকামী তাদের সামাজিক সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে আপনার চিন্তার কিছুটা হলেও পরিবর্তন করা, তার সুফল এবং কুফল তুলে ধরা। বস্তুত পক্ষে মানবাধিকার বিষয়ে সকলের চিন্তার স্থবিরতাকে আঘাত করা। আপনি ব্যাক্তিগত ভাবে সমকামী যৌনতা সম্পর্কে কি মনোভাব পোষন করেন তা জানার কোন আগ্রহ আমার নাই, যারযার যৌনরুচি তাকেই বুঝতে দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত না যৌনরুচির কারনে কোন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, ততক্ষণ এই বিষয়ে আমার কিছুই বলার নাই। যখনি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তখনি তার কারনগুলো সম্পর্কেও আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

সমকামিতা সম্পর্কে সাধারন ভাবে আমরা কিছু ভুল তথ্য জেনে থাকি। তথ্য গুলোর উৎপত্তি হয় সাধারনত আমাদের ধর্মীয় মুল্যবোধ থেকে, সামাজিক মনোভাব থেকে। আমরা এই ধারনাগুলো সমাজ থেকে পেয়ে আমাদের মস্তিষ্কের দরজা বন্ধ করে দেই, আধুনিক বিজ্ঞানকর্মী বা মানবাধীকার কর্মীরা যতই গলা ফাটিয়ে চেঁচাক, আমরা কানেই তুলি না।

এই বিষয়ে মুক্তমনায় অভিজিৎ দা চমৎকার কাজ করেছেন, তার লেখা সবাইকে পড়ার আহবান জানাচ্ছি। আর এই বিষয়ে আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা তুলে ধরছি।

আশা করছি আমার কথাগুলো পাঠক খোলা মন নিয়ে চিন্তা করবেন, আর যারা এই নিয়ে লেখার কারনে আমাকে সমকামী বানিয়ে ফেলবেন, তাদের জন্য করুনা বোধ করা ছাড়া আর কিছুই দেয়ার নাই।

আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে একটা স্বাধীন সভ্য দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা প্রত্যেক রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমাদের দেশে অবশ্যই সমকামী বিবাহের আইন করা প্রয়োজন, সমকামীদের সামাজিক ভাবে স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন। এটা যেকোন সভ্য সমাজের দায়িত্ব।

সমকামীরা সামাজিক অবদমনের কারনে বিভিন্ন প্রকার অপরাধপ্রবনতা এবং একই সাথে আত্মহত্যাপ্রবনতা এবং বিভিন্ন মনোবৈকল্যের শিকার হতে পারেন। এর ভেতরে থাকতে পারে ড্রাগসে আসক্তি, অবদমনের কারনে যৌনতা বিকৃতির দিকে মোড় নেয়া ইত্যাদি। এর পেছনে সমকামিতাকে দায়ী করা যাবে না, সামাজিক অবদমন এবং ধর্মীয় দৃষ্টিতে পাপবোধের সৃষ্টিই এর কারন।

আমাদের দেশে প্রায়শই দেখা যায় ছোট ছোট শিশুরা তাদের বয়ষ্ক আত্মীয়, এলাকার কোন বয়ষ্ক পুরুষ দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হন, যেটার জন্য সমকামীদের ঢালাওভাবে অভিযুক্ত করা হয়। আমরা সমকামীদের সামাজিক ভাবে চিনি নি, আমরা জানি না যে আমাদের পাশের বাসার ভদ্রলোক, যাকে দেখলে খুব আপনি ভাবতেই পারবেন না তিনি সমকামী, যিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে সুখে জীবন কাটাচ্ছেন, তিনি হয়তো জন্মগত ভাবেই সমকামী। সামাজিক শৃংখলা আর অবদমনের কারনে তার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বিকৃতির দিকে মোড় নিতে পারে, সে ধর্ষকামী/ শিশুকামী তে পরিনত হতে পারে। আধুনিক গবেষনা মতে ধর্ষকামীতা বা শিশুকামীতার সাথে সমকামিতার কোন সম্পর্ক নাই, এবং সমকামিতা কোন মতেই বিকৃতি নয়। তবে সামাজিক ভাবে যৌন অবদমন অবশ্য ধর্ষকামীতা বা শিশুকামীতার মত বিকৃতির জন্ম দিতে পারে বলে মনে করি( এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ আছে, সামাজিকভাবে যৌন অবদমন যে ধর্ষকামীতা/শিশুকামীতার মত বিকৃতির জন্ম দিতে পারে এটা একান্তই ব্যাক্তিগত ধারনা, বৈজ্ঞানিক গবেষনাপ্রাপ্ত ফলাফল নয়)।

তিনি যদি সুস্থ সমকামী জীবন যাপন করতেন, তার যদি একজন পুরুষ সঙ্গী থাকতো, তার এই ধরনের ধর্ষক মনোভাব থাকতো না।সুস্থযৌন আচরন ধর্ষকামীতা/শিশুকামীতা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি থেকে তাদের রক্ষা করতে পারে যাতে করে আমাদের সমাজের হাজারো শিশু এই ধরনের যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়।

সমকামী পুরুষটিকেও কিন্তু দোষ দেয়া যাচ্ছে না। আমাদের সমাজ তার স্বাভাবিক যৌনতার প্রধান বাধা। সে হয়তো শুরু থেকেই সমকামী, কিন্তু সমাজের চাপে প্রকাশ করতে না পারায় লুকিয়ে লুকিয়েই তার যৌনাকাংখা চরিতার্থ করতে হয়েছে। এই কারনে তার বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়ে পরতে হয়েছে, নিজের অবদমিত যৌনতা উপভোগের জন্য।

কাল এমন হতে পারে যে আপনার ভাই বা বোন সমকামী হয়ে জন্মালো ( সমকামিতার বীজ তার ভেতরে জন্ম থেকেই থাকতে পারে)। তার সমস্যাটাকে আপনি যদি গভীরভাবে বিশ্লেষন বা তদন্ত না করে শুরুতেই আপনার প্রাচীন ধ্যান ধারনা দ্বারা তাকে মারধোর করা শুরু করেন, তাকে চাপ দিতে থাকেন, বেচারা বা বেচারী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? সে আপনার কাছ থেকে একটু মানবিক আশ্রয় চাইতে পারে, ব্যাপারটা আপনি বুঝবেন সেটা আশা করতে পারে। তার কি দোষ বলতে পারেন? সে বেচারীর যৌন আকাংখা প্রকৃতি ভিন্নভাবে তৈরি করে দিয়েছে। হয়ত সে সারাজীবন মনের একান্ত ইচ্ছাকে গলাটিপে মেরে আপনাদের পছন্দমত বিপরীত লিঙ্গে বিয়ে করে জীবন পার করলো, কিন্তু তারও তো প্রেমের অনুভুতি আছে, তারও তো ভালবাসার মানুষ বেছে নেয়ার অধিকার আছে, কতদিন সে যাকে ভালবাসে না বা যার জন্য তার শরীর সে বিন্দুমাত্র আন্দোলিত, উত্তেজিত হয় না, তার সাথে কষ্টকর যৌনতায় জীবন পার করবে?

এছাড়াও আর একটা গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার হচ্ছে সমকামীদের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন তারা বুঝে ওঠার পরে পাপবোধ বা অপরাধ বোধ, নিজের প্রতি ঘৃণার কারনে আত্মহত্যা প্রবণতা। আমরা পেপার খুললেই দেখি আজ এখানে কোন ছেলে বা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সেগুলো নিছক প্রেম ঘটিত ব্যাপার স্যাপার নাও হতে পারে। অনেক সময়ই নিজেদের সমকামী হিসেবে আবিষ্কারের পরে ছেলে মেয়েরা আত্মহত্যা করে ফেলে।

যদি তারা কোনমতে সমাজে টিকেও যায়, তখন তাদের ভেতরে সৃষ্টি হতে পারে অপরাধপ্রবনতা। সমাজের প্রতি ঘৃণা থেকে তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পরতে পারে।

আমরা কি পারি না একটু মানবিকভাবে ব্যাপারটা একটু গভীরভাবে বিশ্লেষন করতে?

আজকে পুরো পৃথিবীর মানবতাবাদীরা সমকামিদের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমরা বাঙ্গালীরা সবই বুঝি, তবে অনেক দেরি করে। আমাদের দেশেও সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, কিন্তু ততদিনে কত সমকামি আমাদের সমাজের হাতে ধুঁকে ধুঁকে মরবে কে তার খোঁজ রাখবে? তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু লুকিয়া থাকা সমকামীদের হাতে আমাদের কত শিশু যে ধর্ষিত হবে, মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হবে, তার খবর কি আমরা রাখি?

আমরা যদি একজন সমকামীকে সামাজিক ভাবে চিহ্নিত করি, তার জন্য পছন্দ অনুসারে বিয়ের ব্যাবস্থা করি, তাতে সমাজের কি ক্ষতি হয়ে যাবে? কিন্তু বিপরীতে উপকার হবে যে আমরা চিনতে পারবো একজন সমকামীকে, একজন সমকামী আমার শিশু সন্তানের দিকে হাত বাড়াতে চাইবে না, চাইলেও আমরা সমকামী পুরুষ থেকে আমার শিশুকে দুরে রাখতে পারবো।

সমকামিতা সম্পর্কে আমাদের সমাজ হাজারো কুসংস্কারে আবদ্ধ। এমনকি যার কিছু বইপত্র পড়ে রাতারাতি প্রগতিশীল বনে গেছেন, তারাও সমকামীদের সম্পর্কে ঘৃণাত্মক মনোভাব পোষন করেন।

সমকামিতা পাশ্চাত্য সভ্যতার আবিষ্কার?

একেবারেই ভুল কথা। মধ্যপ্রাচ্যে সমকামিতার ইতিহাস বেশ পুরনো, প্রাচীন মিশরেও সমকামিতার চিহ্ন পাওয়া যায়। ভারতে সমকামিতার প্রচুর উদাহরন রয়েছে। বাৎসায়নের কামাসুত্রে সমকামিতা প্রচুর উদাহরন রয়েছে। তাই দেখা যাচ্ছে সমকামিতা পাশ্চাত্য সভ্যতার আবিষ্কার নয়, বরঞ্চ বলা যায় ভারত বা মিশর বা মধ্যপ্রাচ্য থেকেই সমকামিতা পাশ্চাত্যে গিয়ে থাকতে পারে। তাই যারা বলে সমকামিতা আমাদের সংস্কৃতি ঐতিহ্যের লঙ্ঘন, তাদের ভারতবর্ষের ইতিহাস পড়ে দেখার অনুরোধ রইলো।

সমকামিতা প্রকৃতি বিরুদ্ধ?

সমকামিতা প্রকৃতি বিরুদ্ধ কোন ঘটনা নয়। প্রাণীকূলে প্রচুর সমকামিতার উদাহরন পাওয়া যায়, প্রানীরা পাশ্চাত্য সভ্যতায় দীক্ষা নিয়ে সমকামিতায় লিপ্ত হচ্ছে বা প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ করছে এমনটা মনে করাটা মুর্খতা ছাড়া আর কিছুই না। একজন মানুষ সমকামী হতেই পারে, এটা দোষের কোন ব্যাপার না। প্রকৃতিতে সমকামিতার উদাহরন থাকলে মানুষের ভেতরেও থাকবে, এতে অস্বাভাবিকত্বের কিছু নাই।

সমকামিতা মানসিক বিকৃতি?

সমকামিতা মানসিক বিকৃতি হতেই পারে না। একজন স্ট্রেইট কখনই সমকামী হতে পারবে না। মানুষের যৌন রুচিকে সাধারনত কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়, দেখা যায় প্রচুর মানুষের মধ্যেই সমকামিতার কিছু সাধারন প্রবনতা থাকে। যাদের ভেতরে এই সাধারন প্রবনতাগুলো থাকে, তারা বিরুপ পরিবেশে নারী সঙ্গের বাইরে থাকলে(মাদ্রাসা, জেলখানা ইত্যাদি)সমকামী হয়ে উঠতে পারে। তবে একজন স্ট্রেইট মানুষ সমকামী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা একেবারেই নাই।

সমকামীদের অধিকার বিষয়ে কথা বলাটা কি সমকামী হয়ে যেতে বলা?

একটা সাধারন প্রবনতা হচ্ছে সমকামিতা নিয়ে কিছু সাধারন কথা বললেই ধরে নেয়া হয় যাকে বলা হচ্ছে তাকে সমকামী হবার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। মোটেও ব্যাপারটা তা নয়। আপনি স্ট্রেইট, আপনার যৌনরুচি নিয়ে আপনি সুস্থ জীবন যাপন করুন। কিন্তু একজন সমকামীকে স্ট্রেইট হয়ে যাবার কথা আপনি বলতে পারেন না। যৌনরুচি যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। যে যেরকম ভাবে নিজের যৌনতা উপভোগ করতে চাচ্ছে তাকে সেভাবেই উপভোগ করতে দিন। কিন্তু যৌনরুচির পার্থক্যের কারনে আমরা কেন একজন আর একজনের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করবো?

সমকামীদের অধিকার দিলে গনহারে সবাই সমকামী হয়ে যাবে?

এই ধরনের চিন্তা যাদের করে তাদের একমাত্র জায়গা হওয়া উচিৎ মানসিক হাসপাতাল।

সমকামী হয়ে গেলে মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে?

মানব সমাজে এবং প্রানীকূলে সব সময়ই একটা অংশ সমকামী হবে, এটা বৈজ্ঞানিক গবেষনাতেই প্রমানিত। কিন্তু সব মানুষের সমকামী হওয়া সম্ভব নয়, তাই মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবার সম্ভাবনাও নাই। তারা সমাজের ছোত একটা অংশ, তাদের দেখা দেখি স্ট্রেইটদের সমকামী হওয়া একেবারেই সম্ভব না, যদি না ভেতরে সমকামিতার বীজ থেকে থাকে। আর প্রকৃতি সব সময়ই ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, মানবকুলের সমকামী হয়ে যাবার কোন সম্ভাবনাই তাই নাই।

সমকামিতা এক ধরনের অসুস্থতা? চিকিৎসা প্রয়োজন?

পাশ্চাত্যে সমকামিতা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে, সেখানে সমকামিতাকে অসুস্থতা বলে চিহ্নিত করার কোন কারন পাওয়া যায় নাই। সমকামিতার অভ্যাস ত্যাগের জন্য বেশ কিছু থেরাপী দেয়া হয়, তবে তা শুধুমাত্র তাদের জন্যই প্রযোজ্য যারা যারা বিরুপ পরিবেশে সমকামীতে পরিনত হয়েছেন। যারা জন্মগত ভাবেই সমকামী, তাদের জন্য কোন চিকিৎসা প্রযোজ্য নয়। কারন এটা কোন রোগ নয়।

মানুষ তো ইনসেস্টও করে, তাই বলে কি এটা স্বাভাবিক?

ইনসেস্ট আর সমকামিতা ভিন্ন বিষয়। এক করে দেখার কোন উপায় নাই। যিনি ইনসেস্ট সম্পর্ক স্থাপন করেন, তার এই সম্পর্কের বাইরে যাওয়া সম্ভব। বেছে নেয়ার সুযোগ থাকে প্রচুর। অন্যদিকে একজন সমকামী বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃস্টই হবে না, প্রেম-ভালবাসা-আবেগ বোধ করবে না। আর প্রেমহীন যৌনতা নোংরামী ছাড়া আর কিছুই না। একজন ধর্ষক ধর্ষন না করেও সুস্থ যৌনতার মাধ্যমে নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষা পুরন করতে পারে। একজন ইনসেস্টকারী ইনসেস্ট না করেও সুস্থ যৌনজ়ীবন যাপন করতে পারে। যেটা সমকামীদের বেলায় প্রযোজ্য নয়।

সমকামিদের সামাজিকভাবে বয়কট করা উচিৎ?

তারা রক্তমাংশের মানুষ। সমকামিতা সমকামিরা নিজে নির্ধারন করে না। প্রকৃতি তাদের ভেতরে সমকামিতার বীজ বপন করে। একজন সমকামি পুরুষের নারীর প্রতি প্রাকৃতিকভাবে আকর্ষন নাই, যৌন আকাংখা নাই। এই দোষে নিশ্চয়ই একজন মানুষকে এক ঘরে করে রাখা বা বয়কট করা কোন মতেই মানবিক আচরন হতে পারে না।

কাল আপনার শিশু সন্তান বাম হাতি হয়ে জন্মাতে পারে, সমকামী হয়ে জন্মাতে পারে, হিজরা হয়ে জন্মাতে পারে। তাকে মারধোর করে বা চাপ প্রয়োগ করে আপনি ডান হাতি বানাতে চাইবেন, স্ট্রেইট বানাতে চাইবেন, হিজরা হলে ছুড়ে ফেলে দিতে চাইবেন, আমরা কতকাল আর এই সমস্ত ভ্রান্ত ধারনা নিয়ে বাস করবো? আমরা আমাদের ধর্মীয় এবং সামাজিক নোংরামীর বলি আর কত দেবো?

তাই একজন সমকামীকে সম্মান করুন, তাকে তার যৌনতা উপভোগ করতে দিন, তাকে আর একজন সমকামীকে বেছে নেবার সুযোগ সৃষ্টি করে দিন। মনে রাখতে হবে যে আজকে আপনি তাদের সামাজিক ভাবে চাপ দিয়ে হয়তো আপাত ভাবে স্বাভাবিক করে তুললেন, কিন্তু তার সমকামী মনোভাব তাতে পাল্টাবে না, সে কাল আপনার শিশু সন্তানের দিকে হাত বাড়াতে পারে। আপনি যেই চাপ তাকে দেবেন, সেই চাপ আপনাকেও সহ্য করতে হবে। এবং আপনার কাছে ফিরে আসলে সেটা আরও ভয়াবহ হতে পারে।

আপনার সন্তান সমকামী হলে মারধোর করবেন না, ঘর থেকে বের করে দেবেন না। তাকে বোঝার চেষ্টা করুন। কুপ্রথাগুলোকে এখন ভেঙ্গে ফেলবার সময় এসেছে, আমাদের এখন এগিয়ে যেতে হবে। ঐতিহ্য-সভ্যতা-সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে আর কতকাল আমরা নিজেদের ক্ষতি করে যাবো।

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

6 thoughts on “সমকামিতা প্রসঙ্গেঃ সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কারে আবদ্ধ মানবাধিকার।

  • H. M. Pavel

    সমকামিতা কীভাবে প্রাকৃতিক? ছাগল ছাড়া কেউ এ কথা বলবে না। ভ্যাজিনাল সেক্সে কোনো শারীরীক ক্ষতি হয় না। আর অ্যানাল সেক্সে অ্যানাসের মাসলের টোন চলে যায় পাইলস, ফিস্টুলা ব্যাপক আকারে ঘটে।সর্বোপরি অ্যানাসের নরমাল অবস্হার পরিবর্তন ঘটে। এটাকে ন্যাচারাল একমাত্র মূর্খরাই বলবে।

    Reply
    • আসিফ মহিউদ্দীন

      ছাগল ছাড়া বলবে না নাকি ছাগলেই বলবে, সেটা মন্তব্যেই বোধগম্য। তবে বাক স্বাধীনতার সমর্থক বলে এরকম হাস্যকর নির্বোধ মন্তব্যও প্রকাশ করি। যাইহোক।
      কিসে শারীরিক ক্ষতি হবার সম্ভাবনা আছে সেটা যদি অপ্রাকৃতিক বা কৃত্রিম হয়ে থাকে, তবে পৃথিবীর সমস্ত অনুজীবই অপ্রাকৃতিক। ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে মশাও অপ্রাকৃতিক। লাভ কিংবা ক্ষতির সাথে প্রাকৃতিক কিংবা অপ্রাকৃতিকের কোন সম্পর্ক নেই। এইটুকু সম্ভবত আপনার পক্ষে বোঝা কঠিন।
      বনে জঙ্গলে ঘুরলে আপনাকে বাঘে কামড়াতে পারে। সেটা আপনার লাভ ক্ষতি যাই হোক, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ব্যাপারই সেটা। কারণ বাঘ ক্ষুধার্ত হলে মাংস খাইতে চাইবে। সেটাতে আপনার অনেক ক্ষতি হয়ে গেলেও, খুবই স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক ঘটনা সেটা।
      এরকম নির্বোধ মন্তব্যের উত্তর দেয়াটাও হাস্যকর, তারপরেও বলছি। অনেক প্রাণীর মধ্যেও হস্তমৈথুন দেখা যায়। হস্তমৈথুন লাভজনক না ক্ষতির কারণ সেটা ভিন্ন বিষয়, প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক কিনা সেটা এখানে আলোচ্য। তেমনি, সমকামিতাও দেখা যায়। আপনার সেগুলো জানা না থাকলে একটু পড়ালেখা করতে পারেন। এখন তো অনেক কিছুই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।

      অথবা কোরান পড়তে পারেন। সেখানে তো আবার সব কিছু ল্যাখা আছে।

      Reply
  • Jakia jannat orpy

    Onek valo likhen
    all the best and congratulations
    ami apnar lekha pore onek kichhu jante perechhi thanks

    Reply
  • যাযাবর

    আপনার লেখা বরাবরই যুক্তিগত মনে হয়েছে তবে এ বিষয়ে যুক্তিগুলো একটু খাপছাড়া মনে হল। প্রথমত, সমকামী ব্যক্তি মাত্রই যৌনহতাশা নিয়ে একসময় ধর্ষক হয়ে উঠবে এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?? ধর্ষকমাত্রই যৌনহতাশ হতে পারে তবে এটা একমাত্র কারন হতে পারেনা। সমকামিতাকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়ার যে যুক্তি দিলেন তা অমূলক নয় হয়ত, তবে সমকামিতাকে সহজ করতে গিয়ে আপনার যুক্তিগুলো তাকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

    Reply
  • Ex-muslim

    ➡️যৌনতা:

    ১)যৌন স্বাধীনতা হলো কেবলমাত্র যেকোন দুজন ব্যক্তির সম্মতিতে যৌনাচার।এখানে তৃতীয় কোন পক্ষের তাদের দুজনকে বাধা দেয়ার অধিকার নেই।এখানে তৃতীয় পক্ষ হতে পারে অপর কোন ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র ইত্যাদি।

    ২)যৌন স্বাধীনতা মানে এই নয় আমি যেকোন নারীর সাথে সেক্স করতে পারবো।

    ৩)বরং যৌন স্বাধীনতা মানে হলো এই যে,শুধুমাত্র যেসকল নারীরা আমার সাথে সেক্স করার জন্য সম্মতি দিয়েছে আমি কেবল তাদের সাথেই সেক্স করতে পারবো।এক্ষেত্রে তৃতীয় কোন পক্ষই ওই নারীকে জোরপূর্বক বাধা দেয়ার অধিকার রাখেনা।এমনকি আমাকেও ওই নারীর সাথে যৌনকর্ম করা থেকে বাধা দিতে পারেনা।

    ৪)অপরদিকে অবাধ যৌনাচার হলো ধর্ষণ,জোর করে কোন নারীকে যৌনকাজে বাধ্য করা,রাস্তাঘাটে যাকে তাকে জোর করে যৌনকাজে বাধ্যকরা।কারও অনুমতি ব্যতীত তার শরীর ব্যবহার করে যৌনতৃপ্তি নেয়া।কোন নারীর অনুমতি ছাড়া ওই নারীর শরীরে হাত দেয়া হলো অশ্লীল কাজ।সেই নারীর অনুমতি ছাড়া তার শরীরে হাত দিয়ে যৌনতৃপ্তি নেয়া যৌন অপরাধ।

    ৫)বিকৃত যৌনাচার হলো শিশুকামিতা,ধর্ষণ,দাসী ধর্ষণ,পশুকামিতা,মৃতদেহের সাথে যৌনাচার।

    ৬)পতিতাবৃত্তি খারাপ বা অনৈতিক কিছুই নয়।পতিতাবৃত্তি পেশাটি খারাপ হতে পারে।কারণ এর মাধ্যমে নারীদের পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।কিন্তু যে নারীরা পতিতা তাদের ঘৃণা করা উচিত নয়।কারণ খদ্দের এবং পতিতা দুজন দুজনের সম্মতির ভিত্তিতই যৌনকর্মে লিপ্ত হচ্ছে।

    ৭)দুজন ব্যক্তি সম্মতির ভিত্তিতে যৌনকর্মে লিপ্ত হলে এক্ষেত্রে দুজনই যৌনকর্ম উপভোগ করতে পারে

    Reply
  • Ex-muslim

    LGBTQ+🏳️‍🌈🏳️‍🌈🏳️‍🌈🏳️‍⚧️🏳️‍⚧️🏳️‍⚧️
    ১)সমকামিদের যৌনতা সমর্থন করলেই কেও নিজে সমকামি হয়ে যায় না।
    ২)ট্রান্সজেন্ডারদের সমর্থন করলেই কেও নিজে ট্রান্সজেন্ডার হয়ে যায় না।🏳️‍⚧️🏳️‍⚧️🏳️‍⚧️
    ৩)উভকামিদের সমর্থন করলেই কেও নিজে উভকামি হয়ে যায় না।
    ৪)LGBTQ+ দের যৌন অধিকারকে সমর্থন করলেই কেও LGBTQ+ হয়ে যায় না।
    ৫)gay,lesbian হওয়া দোষের কিছুনা,অপমানজনক কিছুনা।এগুলো কোন মানসিক রোগও নয়।
    ৬)সমকামিতা,উভকামিতা,ট্রান্সজেন্ডার এগুলো কোন মানসিক রোগ নয়।
    ৭)কারও পুরুষ পুরুষ চুমাচুমি করতে দেখলে তার নিজেরও পুরুষ পুরুষ চুমাচুমি করতে মন চাইবে এমনটা ভুল ধারণা।
    ৮)কেও gay porn দেখলে নিজেই গে হয়ে যাবেনা।
    ৯)সমকামিতা অনৈতিক কোন কাজ নয়।কারণ অনৈতিক কাজে একপক্ষ কষ্ট পাবে।কারণ সমকামি couple রা দুজন সম্মতির ভিত্তিতে যৌনকর্ম করেন।

    ➡️বিবর্তন:
    ১)বিবর্তন তত্ত্বের কোথায়ও বলা হয়নি মানুষ বানর থেকে এসেছে।
    ২)মানুষ এসেছে সরল প্রজাতির এককোষী জীব থেকে।
    ৩)সেই সরলপ্রজাতির জীবটি একইসাথে মানুষ,বানর,শিন্পাঞ্জি,গরিলা,ওরাংওটাং এবং পৃথিবীর সকল প্রাণী যা এখন পর্যন্ত জন্ম নিয়েছে তাদের সবার পূর্বপুরুষ ছিল।
    ৪)বিবর্তনের মাধ্যমে এককোষী জীব বা সরল প্রজাতির জীব থেকে ধীরে ধীরে বহুকোষী জটিল জীবপ্রজাতির উৎপত্তি ঘটেছে।

    ৫)একথা সত্য যে সেই এককোষী জীবপ্রজাতি থেকে বানরের পূর্বপুরুষ এবং ধীরের ধীরে মানুষের জন্ম হওয়ার অনেক মিসিং লিঙ্ক পাওয়া গেছে।কিন্তু বিবর্তন তবুও প্রমাণিত সত্য।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *