হযরত হাসান । ইসলামের শ্রেষ্ঠ প্লেবয়

হাসান 14

ভূমিকা

ইসলামের ইতিহাসে যাদের নাম সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের অধিকাংশ মানুষের খুবই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। নবী মুহাম্মদের মৃত্যু হয়েছিল বিষক্রিয়ায়। ইহুদিদের ওপর চালানো তার গণহত্যার কারণে এক ইহুদি মহিলা তাকে বিষযুক্ত ভেড়ার মাংশ খাইয়েছিল, যার ফলে দীর্ঘদিন রোগভোগের পরে মুহাম্মদের মৃত্যু ঘটে। এরপরে তার লাশ নিয়ে ক্ষমতার লড়াই, খিলাফত আর সম্পত্তি নিয়ে কামড়া কামড়ি, এরকম অনেক কিছুই চলতে থাকে। ফলশ্রুতিতে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। খলিফা আবু বকরের সাথে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় নবী কন্যা ফাতিমার, কিছু সূত্র থেকে জানা যায় ফাতিমার মৃত্যুও ঘটে অস্বাভাবিকভাবে। প্রধান চারজন খলিফার মধ্যে উসমান এবং আলীর মৃত্যু হয় মুসলমানদের হাতেই। এটি প্রায় সকল সূত্র থেকেই জানা যায়। এরপরে আলী ও ফাতিমার দুই পুত্রের মৃত্যু হয় অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। মানে, নবীর পুরো বংশধারারই এই রকম ভয়াবহ পরিণতি ঘটে। আজকে আমাদের আলোচনা নবীর প্রিয় দৌহিত্র হযরত হাসান সম্পর্কে। বাদবাকী বিষয়গুলোও ধীরে ধীরে আমরা আলোচনা করবো। আশাকরি আগ্রহী পাঠক মন দিয়ে আমাদের লেখাগুলো পড়বেন এবং তথ্যসূত্রগুলো যাচাই করে দেখবেন।

হাসান হচ্ছেন জান্নাতের সর্দার

নবী মুহাম্মদের জীবদ্দশায় তিনি তার দুই দৌহিত্র- হাসান ইবনে আলী এবং হুসাইন ইবনে আলীকে শুধু জান্নাতের সুসংবাদ দেন নি, তারা যে জান্নাতের যুবকদের সর্দার হবেন, সেটিও জানিয়ে গেছেন। সেই বাল্যকাল থেকেই উনারা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ছোটবেলাতেই তারা এমন কী উত্তম কাজ করলো, যার কারণে তাদের জান্নাতের যুবকদের সর্দার পদে নির্বাচিত করা হলো? আমরা যারা সভ্য মানুষ, তারা সবসময়ই বলি, মানুষের জন্ম কোথায় কীভাবে সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়, তার কর্মই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, তারা নবীর পরিবারে জন্ম নেয়ায় একটি বড় রকমের সুবিধা পেয়ে গেলেন।

জান্নাতের একদম সর্দার হওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। আমাদের ধারণা হতে পারে, নিশ্চয়ই তারা এমন মহান কোন কাজ করে গেছেন, যার কারণে তারা সরাসরি জান্নাতের সর্দার হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। মুহাম্মদের দৌহিত্র হয়ে জন্ম নেয়া ছাড়া এমন কী কাজ উনারা করেছেন? হাসান বা হুসাইন যদি আবু জেহেল বা আবু লাহাবের পরিবারে জন্ম নিতেন, তাহলে তারা কী জাহান্নামের সর্দার হতেন? আমার মত একজন নাস্তিক, আমি যদি মুহাম্মদের দৌহিত্র বা কোন আত্মীয়স্বজন হিসেবে জন্ম নিতাম, তাহলে আমাকেও কী জান্নাতের সর্দার করা হতো? কিন্তু জন্ম হওয়ার আগে, জন্মের পর এবং আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন তো আমার কোন কর্ম ছিল না। ভাল কর্মও ছিল না, খারাপ কর্মও ছিল না। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, আমার আত্মা এবং হাসান হুসাইনের আত্মা তো তখন সমান আমল সম্পন্ন। তাহলে, এই দুইজনার একজনকে আল্লাহ নবীর পরিবারে জন্ম হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন, আর আমাকে সুযোগ করে দিচ্ছেন বাঙলাদেশের একটি পরিবারে, তাহলে তো আমার আর হাসানের পরীক্ষার মধ্যে কোন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকলো না। একজন কোন কর্ম ছাড়াই এক্সট্রা কিছু সুবিধা পেয়ে গেলেন, আর আমি সেই সুবিধাটুকু পেলাম না। কেন এই অবিচার?

বা ধরুন, আজকে যেই ছেলেটি একজন মুশরিকের পরিবারে জন্ম নিচ্ছে, সে তো মুহাম্মদের দৌহিত্র হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করলো না। তার জন্ম হলো একটি হিন্দু পরিবারে, এবং পিতামাতার কাছ থেকে সে মূর্তি পুজাই শিখলো। সে তো জান্নাতেই যেতে পারবে না। উল্টোদিকে, ঘটনাক্রমে নবী মুহাম্মদের পরিবারে জন্ম নেয়ায় হাসান ও হুসাইন সুবিধা বেশি পেলো। দেখা যাচ্ছে, নবীর পরিবারে জন্ম নিলে একটু বেশী সুবিধা পাওয়া যায়। নবী মুহাম্মদও স্বজনপ্রীতি করে তার পরিবারকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে গেছে। তাহলে, আল্লাহ পাকের পরীক্ষা নেয়ার পদ্ধতি এবং বিচার প্রক্রিয়া তাহলে সুষ্ঠু কীভাবে হলো? এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া কোন বিচারে সুষ্ঠু পদ্ধতি?

ধরে নিই, একটি স্কুলে একশোজন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরীক্ষার আগেই, পড়ালেখার আগেই, ক্লাস শুরুর আগেই যদি প্রধান শিক্ষকের ছেলেকে পরীক্ষায় প্রথম ঘোষণা করে দেয়া হয়, সেটি আর পরীক্ষা থাকে কীভাবে? এটা তো পরিষ্কারভাবেই স্বজনপ্রীতি হলো।

আবার ধরুন, মানব সভ্যতার ইতিহাসে স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর পেনিসিলিন আবিষ্কার হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। তিনি পেনিসিলিন আবিষ্কারের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষার ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। বা ধরুন আব্রাহাম লিঙ্কন। উনি দাস প্রথা বিলুপ্ত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কিংবা ধরুন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নেলসন ম্যান্ডেলা, এরা প্রত্যেকেই মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে, মানুষের কল্যাণের জন্য বিশাল বিশাল কাজ করেছেন। কিন্তু ইসলামের বিধান অনুসারে, তারা সকলেই জাহান্নামী। কারণ তারা কেউই ইসলাম কবুল করে নি। এদের মধ্যে অনেকেই বাপদাদার ধর্মই পালন করেছেন, আবার অনেকে প্রচলিত কোন ধর্মেই বিশ্বাসী ছিলেন না। তাই মানুষের জন্য অনেক বড় কাজ করার পরেও তাদের জায়গা হবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। কারণ কী? তাহলে নবীর পরিবারে আমরা সবাই জন্ম নিলাম না কেন, এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?

ভেবে দেখুন, হযরত হাসান পৃথিবীর জন্য কোনরকম কোন কিছু না করেই, মানুষের উপকার হবে এমন কিছু না করেই শুধুমাত্র নবীর দৌহিত্র হওয়ার কারণে তার জায়গা হবে জান্নাতে, তাও যুবকদের সর্দার হিসেবে। বিষয়টি দেখলে বোঝা যায়, আল্লাহর কাছে স্বজনপ্রীতি চলে। আসুন সহিহ হাদিস থেকে বিষয়টি নিশ্চিতভাবে জেনে নিই- [1]

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪৬/ রাসূলুল্লাহ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা
পরিচ্ছেদঃ ৩১. আল-হাসান ইবনু ‘আলী এবং আল-হুসাইন ইবনু ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাযিঃ)-এর মর্যাদা
৩৭৬৮। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন (রাযিঃ) প্রত্যেকেই জান্নাতী যুবকদের সরদার।
সহীহঃ সহীহাহ (৭৯৬)
সুফইয়ান ইবনু ওয়াকী’-জারীর ও মুহাম্মাদ ইবনু ফুযাইল হতে, তিনি ইয়াযীদ (রাহঃ) হতে এই সনদে একই রকম বর্ণনা করেছেন। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনু আবী নুম হলেন আবদুর রহমান ইবনু আবী নুম আল-বাজালী, কুফার অধিবাসী। তার উপনাম আবূল হাকাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)

এরকম আরো অনেক বর্ণনাই রয়েছে, আরেকটি হাদিস পড়ে দেখতে পারেন- [2]

সুনানে ইবনে মাজাহ
ভূমিকা পর্ব
পরিচ্ছেদঃ ১৪. ‘আলী বিন আবী ত্বলিব (রাঃ)-এর সম্মান
৫/১১৮। ইবনু উমার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হাসান ও হুসায়ন জান্নাতী যুবকদের নেতা এবং তাদের পিতা তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহাহ ৯৭৯। উক্ত হাদিসের রাবী মুআল্লা বিন আব্দুর রহমান সম্পর্কে আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, তার হাদিস দুর্বল এবং তার ব্যাপারে হাদিস বানিয়ে বর্ণনার অভিযোগ রয়েছে। ইবনু আদী বলেন, আশা করি তেমন কোন সমস্যা নেই। আবু হাতীম আর-রাযী বলেন, তার হাদিস দুর্বল। ইমাম দারাকুতনী বলেন, তিনি দুর্বল ও মিথ্যুক। উক্ত হাদিস শাহিদ এর ভিত্তিতে সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ)

সেইসাথে, এটিও জেনে নেয়া প্রয়োজন যে, যে সকল বাচ্চার জন্ম মুশরিক পরিবারে হয়, তারা কোথায় যাবে। এই বিষয়ে সহিহ হাদিস কী বলে? [3]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১ঃ ঈমান (বিশ্বাস)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় ‘অনুচ্ছেদ – তাকদীরের প্রতি ঈমান
১১১-(৩৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! মু’মিনদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের (জান্নাত-জাহান্নাম সংক্রান্ত ব্যাপারে) কী হুকুম? তিনি উত্তরে বললেন, তারা বাপ-দাদার অনুসারী হবে। আমি বললাম, কোন (নেক) ‘আমল ছাড়াই? তিনি বললেন, আল্লাহ অনেক ভালো জানেন, তারা জীবিত থাকলে কী ‘আমল করতো। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা মুশরিকদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের কী হুকুম? তিনি বললেন, তারাও তাদের বাপ-দাদার অনুসারী হবে। (অবাক দৃষ্টিতে) আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন (বদ) ‘আমল ছাড়াই? উত্তরে তিনি বললেন, সে বাচ্চাগুলো বেঁচে থাকলে কী ‘আমল করত, আল্লাহ খুব ভালো জানেন। (আবূ দাঊদ)(1)
(1) সহীহ : আবূ দাঊদ ৪০৮৯। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন : হাদীসটি দু’টি সানাদে বর্ণিত যার একটি সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সেইসাথে, এটিও জেনে রাখা দরকার, সহিহ হাদিস অনুসারে আল্লাহ পাক মানুষকে দিয়ে জান্নাতের বা জাহান্নামের কাজ করিয়ে নেন[4]

পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৫/ সুন্নাহ
৪৭০৩। মুসলিম ইবনু ইয়াসার আল-জুহানী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে এ আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলোঃ ‘‘যখন তোমার রব আদম সন্তানের পিঠ থেকে তাদের সমস্ত সন্তানদেরকে বের করলেন…’’ (সূরা আল-আ‘রাফঃ ১৭২)। বর্ণনাকারী বলেন, আল-কা‘নবী এ আয়াত পড়েছিলেন। উমার (রাঃ) বলেন, আমি এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রশ্ন করতে শুনেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পর স্বীয় ডান হাতে তাঁর পিঠ বুলিয়ে তা থেকে তাঁর একদল সন্তান বের করে বললেন, আমি এদেরকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা জান্নাতবাসীর উপযোগী কাজই করবে।
অতঃপর আবার তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে একদল সন্তান বেরিয়ে এনে বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং জাহান্নামীদের উপযোগী কাজই করবে। একথা শুনে এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমলের কি মূল্য রইলো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন তখন তার দ্বারা জান্নাতবাসীদের কাজই করিয়ে নেন। শেষে সে জান্নাতীদের কাজ করেই মারা যায়। আর আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যখন তিনি কোনো বান্দাকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তার দ্বারা জাহান্নামীদের কাজ করিয়ে নেন। অবশেষে সে জাহান্নামীদের কাজ করে মারা যায়। অতঃপর এজন্য তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করান।(1)
সহীহ, পিঠ বুলানো কথাটি বাদে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হাসানের বিলাসবহুল রঙ্গিন জীবন

হযরত হাসান ছিলেন নবী মুহাম্মদের সুযোগ্য দৌহিত্র। নবী মুহাম্মদ যেরকম অসংখ্য বিবাহ করেছেন, দাসী ভোগ করেছেন, বৃদ্ধা, অল্পবয়সী, মাঝারী কাউকেই বাদ রাখেন নি। নবী মুহাম্মদের দৌহিত্র ইমাম হাসানও তার নানার দেখানো পথে এমনকি নানাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। ইসলামের ইতিহাসে এরকম বিলাসী আর রঙ্গিন পুরুষ আর নেই। সবাইকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন। তার সাথে আসলে তুলনা চলে শুধুমাত্র নবী সুলায়মানের। নবী সুলায়মানও একদিনে ১০০ জন মহিলার সাথে সেক্স করতেন বলে সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে [5]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৭/ বিয়ে
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬৭/১২০. কোন ব্যক্তির এ কথা বলা যে, নিশ্চয়ই আজ রাতে সে তার সকল স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হবে।
৫২৪২. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দাউদ (আঃ)-এর পুত্র সুলায়মান (আঃ) একদা বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আজ রাতে আমি আমার একশ’ স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হব এবং তাদের প্রত্যেকেই একটি করে পুত্র সন্তান প্রসব করবে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এ কথা শুনে একজন ফিরিশিতা বলেছিলেন, আপনি ‘ইন্শাআল্লাহ’ বলুন; কিন্তু তিনি এ কথা ভুলক্রমে বলেননি। এরপর তিনি তার স্ত্রীগণের সঙ্গে মিলিত হলেন; কিন্তু তাদের কেউ কোন সন্তান প্রসব করল না। কেবল এক স্ত্রী একটি অপূর্ণাঙ্গ সন্তান প্রসব করল। নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেন, যদি সুলায়মান আঃ) ‘ইন্শাআল্লাহ্’ বলতেন, তাহলে তাঁর শপথ ভঙ্গ হত না। আর তাতেই ভালভাবে তার আশা মিটত। আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৪৮৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হাসানের পিতা আলীও ছিল একজন রঙ্গিন চরিত্রের মানুষ। নবী মুহাম্মদ নিজে অসংখ্য বিবি, দাসী ভোগের সাথে সাথে নিজের জামাইদেরকেও যুদ্ধবন্দিনীদের ভাগ দিতে কসুর করেননি। হযরত আলীকে তিনি উদারভাবে মালে গনিমত বন্টন করেছেন। নিচের হাদিসটিতে দেখা যাবে, কীভাবে হযরত ফাতেমার স্বামী নবী জামাতা শেরে খোদা হযরত আলী বন্দিনীর সাথে সেক্স করছেন, যে বন্দিনীকে তিনি শ্বশুরের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন।

মহান আমাদের দয়াল নবী মুস্তফা। নিজের কন্যার স্বামীর সাথে সেক্স করার জন্য যুদ্ধবন্দিনী দিতে এখনকার আধুনিক পিতারও বুক কেঁপে উঠবে, কিন্তু সেই সময়েই দয়াল নবী তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন [6]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী (যুদ্ধ)
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬৪/৬২. বিদায় হাজ্জের পূর্বে ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব এবং খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ।
৪৩৫০. বুরাইদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে খুমুস (গানীমাতের এক-পঞ্চমাংশ) নিয়ে আসার জন্য খালিদ (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। (রাবী বুরাইদাহ বলেন,) আমি ‘আলী (রাঃ)-এর প্রতি অসন্তুষ্ট, আর তিনি গোসলও করেছেন। (রাবী বলেন) তাই আমি খালিদ (রাঃ)-কে বললাম, আপনি কি তার দিকে দেখছেন না? এরপর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে আসলে আমি তাঁর কাছে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি বললেন, হে বুরাইদাহ! তুমি কি ‘আলীর প্রতি অসন্তুষ্ট? আমি বললাম, জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার উপর অসন্তুষ্ট থেক না। কারণ খুমুসে তার প্রাপ্য এর চেয়েও অধিক আছে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০১২)
Narrated Buraida: The Prophet (ﷺ) sent `Ali to Khalid to bring the Khumus (of the booty) and I hated `Ali, and `Ali had taken a bath (after a sexual act with a slave-girl from the Khumus). I said to Khalid, “Don’t you see this (i.e. `Ali)?” When we reached the Prophet (ﷺ) I mentioned that to him. He said, “O Buraida! Do you hate `Ali?” I said, “Yes.” He said, “Do you hate him, for he deserves more than that from the Khumlus.”
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

পাঠক লক্ষ্য করুন, যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে যৌন কর্মের পরে গোছলের কথাটিকে বাঙলায় অনুবাদ করা হয়েছে শুধু গোছল হিসেবে। যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে নবী জামাতা আলী সেক্স করতেন তা গোপন করার জন্য। খুব কৌশলে আলীর চরিত্র রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে একই হাদিসের ইংরেজি অনুবাদে সেটি পাওয়া যায়।

সহি বুখারিঃ ভলিউম-৫, বুক নং-৫৯, হাদিস নং-৬৩৭:
বুরাইদা কর্তৃক বর্ণিতঃ
নবী আলীকে ‘খুমুস’ আনতে খালিদের নিকট পাঠালেন (যুদ্ধলব্ধ মালের নাম খুমুস)। আলীর উপর আমার খুব হিংসা হচ্ছিল, সে (খুমুসের ভাগ হিসেবে প্রাপ্ত একজন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌনসঙ্গমের পর) গোসল সেরে নিয়েছে। আমি খালিদকে বললাম- “তুমি এসব দেখ না”? নবীর কাছে পৌছলে বিষয়টি আমি তাকে জানালাম। তিনি বললেন- “বুরাইদা, আলীর উপর কি তোমার হিংসা হচ্ছে”? আমি বললাম-“হ্যা, হচ্ছে”। তিনি বললেন-“তুমি অহেতুক ইর্ষা করছ, কারণ খুমুসের যেটুকু ভাগ সে পেয়েছে তার চেয়ে আরও বেশী পাওয়ার যোগ্য সে”।

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে এই বর্ণনাটির আরো বিবরণ পাওয়া যায় [7]

সহজ ইনআমুল বারী যা সহিহ বুখারীর একটি ব্যাখ্যা গ্রন্থ, তা থেকে এই হাদিসটির ব্যাখ্যা যা জানা যায়, তাতে পিলে চমকে ওঠে। আলী আসলে যুদ্ধবন্দিনী হিসেবে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক পিরিয়ড পর্যন্ত না হওয়া এক বালিকার সাথে সহবত করেছিল [8]

এবারে আসুন দেখে নিই, হযরত আলীর কতজন দাসী এবং উম্মে ওয়ালাদ ছিল [9]

সেই সাথে, অনেক হাদিসেই ইমাম হাসানের ছেলে হাসান ইবনে হাসান ইবনে আলীর বহু বিবাহের সম্পর্কেও কিছু বিবরণ আছে [10]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬৭/ বিয়ে
পরিচ্ছেদঃ ৬৭/২৫. কোন্ কোন্ মহিলাকে বিয়ে করা হালাল এবং কোন্ কোন্ মহিলাকে বিয়ে করা হারাম।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগিনী, দুধ মা, দুধ বোন, শ্বাশুড়ী, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সঙ্গত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে- নিশ্চয় আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত ও পরম কুশলী।’’(সূরাহ আন্-নিসা ৪/২৩-২৪)
আনাস (রাঃ) বলেন, (وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ) এ কথা দ্বারা সধবা স্বাধীনা মহিলাদেরকে বিয়ে করা হারাম বোঝানো হয়েছে; কিন্তু ক্রীতদাসীকে ব্যবহার করা হারাম নয়। যদি কোন ব্যক্তি বাঁদীকে তার স্বামী থেকে তালাক নিয়ে পরে ব্যবহার করে, তাহলে দোষ নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণীঃ ‘‘মুশরিকা নারীরা ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না।’’(আল-বাক্বারাহঃ ২২১) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, চারজনের অধিক বিয়ে করা ঐরূপ হারাম বা অবৈধ যেরূপ তার গর্ভধারিণী মা, কন্যা এবং ভগিনীকে বিয়ে করা হারাম।
৫১০৫. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রক্তের সম্পর্কের সাতজন ও বৈবাহিক সম্পর্কের সাতজন নারীকে বিয়ে করা হারাম। এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেনঃ ‘‘তোমাদের জন্যে তোমাদের মায়েদের বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে।’’ (সূরাহ আন-নিসাঃ ২৪)
আবদুল্লাহ্ ইবনু জা‘ফর (রহ.) একসঙ্গে ‘আলী (রাঃ)-এর স্ত্রী(1)ও কন্যাকে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ করেন (তারা উভয়েই সৎ-মা ও সৎ-কন্যা ছিল) ইব্নু শিরীন বলেন, এতে দোষের কিছুই নেই। কিন্তু হাসান বসরী (রহ.) প্রথমত এ মত পছন্দ করেননি; কিন্তু পরে বলেন, এতে দোষের কিছুই নেই। কিন্তু হাসান ইব্নু হাসান ইব্নু ‘আলী একই রাতে দুই চাচাত বোনকে একই সঙ্গে বিয়ে করেন। জাবির ইব্নু যায়দ সম্পর্কচ্ছেদের আশংকায় এটা মাকরূহ মনে করেছেন; কিন্তু এটা হারাম নয়। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘এসব ছাড়া আর যত মেয়ে লোক রয়েছে তা তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে।’’ (আন-নিসাঃ ২৪) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, যদি কেউ তার শালীর সঙ্গে অবৈধ যৌন মিলন করে তবে তার স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যায় না।
শা’বী এবং আবূ জা‘ফর বলেন, যদি কেউ কোন বালকের সঙ্গে সমকামে লিপ্ত হয়, তবে তার মা তার জন্য বিয়ে করা হারাম হয়ে যাবে। ইকরামাহ (রাঃ)…ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কেউ যদি শাশুড়ির সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হয়, তবে তার স্ত্রী হারাম হয় না। আবূ নাসর ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, হারাম হয়ে যাবে। ‘ইমরান ইব্নু হুসায়ন (রাঃ) জাবির ইব্নু যায়দ (রাঃ) আল হাসান (রহ.) এবং কতিপয় ইরাকবাসী থেকে বর্ণনা করেন যে, তার স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে। উপরোক্ত ব্যাপারে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেছেন যে, স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক ততক্ষণ হারাম হয় না, যতক্ষণ না কেউ তার শাশুড়ির সঙ্গে অবৈধ যৌন মিলনে লিপ্ত হয়। ইব্নু মুসাইয়িব, ‘উরওয়াহ (রাঃ) এবং যুহরী এমতাবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা বৈধ বলেছেন। যুহরী বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, হারাম হয় না। ওখানে যুহরীর কথা মুরসাল অর্থাৎ একথা যুহুরী ‘আলী (রাঃ) থেকে শোনেননি। (আধুনিক প্রকাশনী- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)
(1) ফাতিমাহ (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় ‘আলী (রাঃ) কাউকে বিয়ে করেননি। পরে তিনি বিয়ে করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস গ্রন্থ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে ইমাম হাসান সম্পর্কে বলা আছে, [11]

ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে, হযরত হাসান (বা) বহু বিবাহকারী লোক ছিলেন ৷ সবসময় চারজন স্বাধীন মহিলা তার স্ত্রী হিসেবে থাকতেনই ৷ তিনি বহু স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেছেন ৷ কথিত আছে যে, তিনি সর্বমোট ৭০ জন মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন ৷ তারা আরো বলেছেন যে, একদিন তিনি তার দু ’জন স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেছিলেন ৷ একজন ছিল বানূ আসাদ গোত্রের অন্যজন বানূ ফাযারা গোত্রের ৷ তারপর তিনি ওদের প্রত্যেককে ১০ হাজার দিরহাম ও কয়েক বোতল মধু প্রদান করেছিলেন ৷ তিনি তার সেবককে বলেছিলেন, ওরা কি মন্তব্য করে তা তুমি মনোযোগ দিয়ে শুনবে ৷ বস্তুত বানূ ফাযাৱা গোত্রের মহিলাটি উপহার পেয়ে বলেছিল, আল্লাহ্ তা জানা হযরত হাসান (রা) কে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন ৷’ সে হযরত হাসান (বা) এর জন্যে আরো দু অ৷ ও কল্যাণ কামনা করেছিল ৷ অন্যদিকে বানূ আসাদ গোত্রের মহিলাটি বলেছিল, “একজন ভালবাসার মানুষের সাথে বিচ্ছেদের মোকাবেলায় নিতাস্তই তুচ্ছ।” তার সেবক ফিরে এসে উভয়ের বত্তল্য জানাল ৷ পরবর্তীতে হযরত হাসান (রা) বানু আসাদ গোত্রের মহিলাটিকে দাম্পত্য জীবনে ফিরিয়ে নিলেন এবং বানূ ফাযারা গোত্রের মহিলাটিকে ত্যাগ করলেন ৷ হযরত আলী (রা) কুফার অধিবাসী লোকদেরকে বলতেন, তোমাদের মহিলাদেরকে হযরত হাসান (রা) এর নিকট বিয়ে দিও না ৷ কারণ সে একজন অতিশয় তালাক দানকারী পুরুষ ৷’ উত্তরে তারা বলত, আমীরুল মুমিনীন ! আল্লাহর কসম ! হযরত হাসান (রা) যদি প্রতিদিন আমাদের মহিলাদেরকে বিয়ে করতে চাইতেন তবে তাদের সকলকে আমরা তার নিকট বিয়ে দিয়ে দিব আর তা শুধু এই উদ্দেশ্যে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) এর পরিবারের সাথে যেন আমরা বিবাহ সূত্রে আত্মীয় হতে পারি ৷

সেই সাথে, কিছু বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, স্বয়ং হযরত আলীও হাসানের এই বিয়ে করার বাতিক নিয়ে বিরক্ত ছিলেন [12]

আবু জাফর (র) বলেছেন যে, হযরত আলী (রা) বলেছেন, হে কুফার অধিৰাসীবৃন্দ! তোমরা তোমাদের কোন মহিলাকে হাসান (রা) এর নিকট বিয়ে দিও না ৷ কারণ সে অধিকহারে স্ত্রীদেকে তালাক দেয় ৷’ তখন হামাযান গোত্রের এক লোক বলল, আল্লাহর কসম ! আমরা অবশ্যই তার নিকট আমাদের মেয়েদেরকে বিয়ে দিব ৷ তারপর যাকে তার রাখতে মন চায়,- রাখবেন আর যাকে ইচ্ছা তালাক দিবেন’ ৷

উপরের বিবরণে দেখা যায়, ইমাম হাসান সেই ১৪০০ বছর আগেই এক একজন নারী ভোগ করে দশ হাজার দিরহাম দিয়ে বিদায় করে দিতেন। আবার অনেককে দিতেন আরো বেশি। আমরা প্রায়শই শুনতে পাই, নবী মুহাম্মদ এবং তার পরিবার নাকি খুব আর্থিক কষ্টে থাকতেন। তাদের নাকি খাবার মত টাকাপয়সাও ছিল না। অথচ, ইসলামিক সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, নবীর দৌহিত্র খুবই বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। মেয়েদের পেছনে প্রচুর টাকা ব্যয় করতেন। বিষয়গুলো অদ্ভুত না?

বিষ প্রয়োগ এবং হাসানের মৃত্যু

নবী মুহাম্মদের কীভাবে মৃত্যু হয়েছিল, সেই নিয়ে ইতিপূর্বে আরেকটি লেখায় বলা হয়েছে। ইমাম হাসান ইবনে আলীরও অত্যন্ত যন্ত্রণা মৃত্যু হয়েছিল, বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে। এই বিবরণ থেকে জানা যায়, হাসানকে বহুবার বিষ খাওয়ানো হয়েছিল। শেষবারের বিষক্রিয়ায় তার কলিজা ছিড়ে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। উল্লেখ্য, সেই সময়ে কিন্তু কোন ইহুদি নাসারা কিংবা হিন্দু সেইসব স্থানে ছিল না। যারা হাসানের আশেপাশে ছিলেন, সকলেই মুসলিম, এবং পরিবার পরিজন। ইবনে কাসীরের গ্রন্থ থেকে জানা যায়, জা’দা বিনতে আশ’আছ ইবনে কায়েস নামে হাসানের একজন স্ত্রী হাসানকে বিষ খাওয়ায়। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। এরপরে ৪০ দিন মৃত্যু যন্ত্রণায় কষ্ট পাওয়ার পরে তার মৃত্যু হয়। আসুন বিবরণটি পড়ি- [13]

উপসংহার

নবী মুহাম্মদের দৌহিত্র এবং মুসলমানদের স্বর্গ জান্নাতের যুবকদের সর্দারের জন্য আসলে পৃথিবীও ছিল জান্নাত, পরকালেও নিশ্চয়ই তিনি এখন অসংখ্য হুরী নিয়ে ব্যস্ত আছেন। কারণ, পৃথিবীতেই যার চরিত্র ছিল এত রঙ্গিন, নারী ভোগ ছিল তার সবচাইতে পছন্দের কাজ, সে জান্নাতে গিয়ে নিশ্চয়ই বেশ আনন্দেই আছেন। নবীর নাতী হওয়ার আসলে কত সুবিধা। পৃথিবীতেও অসংখ্য নারী, পরকালেও অসংখ্য হুরী। কিন্তু, তার মৃত্যুটা হয়েছিল ভয়াবহভাবে। অন্য কারো হাতে নয়, মুসলিমদের হাতেই মুসলিমরা প্রায়শই ইহুদি নাসারা আর নাস্তিকদের ষড়যন্ত্রের কথা বলে। অথচ, নবী, তার প্রধান খলিফাগণের তিনজন, তার কন্যা(এই নিয়ে শিয়া সুন্নীদের ভিন্ন মত আছে), তার নাতী দুইজন, সবার মৃত্যুই হয়েছিল অত্যন্ত নির্মমভাবে। ইসলাম যদি এতই শান্তি প্রতিষ্ঠা করে গিয়ে থাকে, এদের সকলের এভাবে অপঘাতে মরতে কেন হলো, সেটাই প্রশ্ন।

তথ্যসূত্র

  1. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বর- ৩৭৬৮ []
  2. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর- ১১৮ []
  3. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বর- ১১১ []
  4. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), আল্লামা আলবানী একাডেমী, হাদিস নাম্বার- ৪৭০৩ []
  5. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বর- ৫২৪২ []
  6. সহীহুল বুখারী। তাওহীদ প্রকাশনী। চতুর্থ খণ্ড। পৃষ্ঠা নম্বর ২১০। হাদিস নম্বর ৪৩৫০ []
  7. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৯১ []
  8. সহজ ইনআমুল বারী। শরহে বুখারী মাগাযী ও তাফসীর অংশ। অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ মাওলানা মুহাম্মদ আলমগীর হুসাইন। মাকতাবায়ে এমদাদিয়া প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ২২৭, ২২৮ []
  9. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৮৯ []
  10. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বর- ৫১০৫ []
  11. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮২ []
  12. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৩ []
  13. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯০, ৯১ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"

View Comments (5)

  • I love Hasan( radiallahu anhu).....because if I love love him....Allah also love me.....this was the Dua of muhammod ( sallahu alyhe wa sallam).....you will find in Bukhari shorif.thank you.

  • বাল!! এত রেফারেন্স এর ঘনঘটার জন্য আসিফের আর্টিকেল পড়তে বিরক্ত লাগে।
    নিজের মত করে লিখে লাস্টে তথ্যসূত্র এড করলে পড়ার একটা আমেজ আসে। এত রেফারেন্স দেখে পড়ার ইচ্ছাটাই নষ্ট হয়ে যায়।

    বালের আর্টিকেল!

  • ৭০ টা বিয়ে! রেফারেন্স গুলো সংরক্ষণ করে রাখলাম

  • প্রথমত, ইমাম হাসান এর বিয়ের সংখ্যা নিয়ে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া থেকে যে রেফারেন্স দেয়া হয়েছে সেটা জাল। এই বিষয়ে শিয়া সুন্নী বিভেদ আছে। দ্বিতীয়ত, যদি তিনি ৭০/৯০/২৫০/৩০০ টা বিয়ে করেও থাকেন (যদিও এটা অসত্য), তাতে আসিফ মহিউদ্দিন সাহেবের খারাপ লাগার কারণ কি? তিনি তো নিজেকে নাস্তিক বলে পরিচয় দেন, নাস্তিকের কাছে জীবনের মানে কি? শুধুমাত্র ভোগ। যতো পারো ভোগ করো। একজন নাস্তিক চাইলে হাজারটা বিবাহবহির্ভূত... (থুক্কু, নাস্তিকরা তো বিবাহ নামক সামাজিক বন্ধনে বিশ্বাসী নন) সম্পর্ক রাখতে পারে, এমনকি নিজের মা, বোন, মেয়ে সকলের সঙ্গে '........' করতে পারে, এতে কোন সমস্যা নেই। তো ভোগ করার কাজটা যদি ইমাম হাসান করেই থাকেন, তাতে সমস্যা কি? আসিফ মহিউদ্দিন সাহেবের উচিত ছিল ইমাম হাসানকে বাহবা দেয়া! তা না করে উনি ইমাম হাসানকে 'প্লেবয়' উপাধি দিয়েছেন। খুবই অদ্ভুত ব্যাপার, আসিফ সাহেব কি এটা জানেন না যে 'প্লেবয় ' হওয়া একজন নাস্তিকের দৃষ্টিকোণ থেকে কোন খারাপ কাজ নয়, বরং খুব ভালো কাজ, বুদ্ধিমানের মতো কাজ। নাস্তিকদের কাছে পাপ-পূণ্যের কোন বালাই নেই। আসলে আসিফ সাহেবের সমস্যা ইসলাম নিয়ে। আমার মনে হয় তিনি এখনো খাঁটি নাস্তিক হতে পারেননি। যদি সত্যিই আসিফ সাহেব নাস্তিক হয়ে থাকতেন তাহলে ইমাম হাসান এর বিয়ের সংখ্যা নিয়ে তার আপত্তি থাকতো না।

Leave a Comment