হিচানুবাদ ১ – ক্রিস্টোফার হিচেন্স
ক্রিস্টোফার হিচেন্সঃ কেউ যদি বলে “আমি ডিইস্ট বা সর্বত্র বিরাজমান এক ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি এবং আমি কল্পনা করতে পারিনা যে এই মহাবিশ্বের সব কিছু এমনিতেই হয়ে গেল, আমার মনে হয় এর পেছনে একটা ঐশ্বরিক শক্তি বলতে কিছু আছে।”
আমি তার কথাকে ভুল প্রমান করতে পারবো না। কিন্তু আমি মনে করি মহাবিশ্ব তার অস্তিত্ব ছাড়াই কাজ করতে পারছে। কিন্তু জনাব আপনাকে এই দাবি করার পরেও আপনার সামনে আরো অনেক কাজ পরে থাকবে এই দাবি করতে পারার আগে যে
-জেসাস অফ নাজারাত সত্যিকারে লোক ছিলেন
-বা সে যে ঈশ্বরের সন্তান ছিলেন
-বা তার মা একজন কুমারী ছিলেন
-বা তাকে পুনরোজ্জীবিত করা হয়েছিল
তারপরেও এই সব কিছু যদি সত্যিও হয় তা এটা প্রমান করবে না যে উনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।
যদি এগুলো ঘটেও থাকে। তারপরেও বলতে পারবেন না যে তার মতবাদ গুলো ভুলশুণ্য। একজন পুনরোজ্জীবিত ব্যাক্তি যে কিনা কুমারীর ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছে সেও আবোল তাবোল বকতে পারেন। এমন কোনো যুক্তি নাই যে তার কথা অবশ্যই সত্যি হতে হবে।
আমি যদি আপনার সাথে তর্ক করতে থাকি এবং আপনি বলতে থাকেন “আপনি আমার কাছে হেরে গেছেন।”
আমি বললাম “কিভাবে হারলাম ?”
তখন আপনি বললেন “কারণ আমার আম্মা কখনো কারো সাথে বিছানায় যাননি।”
আপনার এই যুক্তি ত্রূটিপূর্ণ। আমার কেইস তারপরেও এমনি সুদৃঢ থাকবে যেমনটা আগেও ছিল।
এখন আসুন আমরা দেখি ধর্ম আছে কেন? – কোথা থেকে আসলো ? আমরা কেন আজ এই আলোচনা করছি ? আমাদের কেন এভাবে কথা বলতে হবে-
কারণ আমরা প্যাটার্ন সিকিং মেমল।
আমরা প্যাটার্ন খুঁজে বেড়াই।
আমরা স্বভাবতই তা করি।
আমরা যদি কোনো ভালো ব্যাখ্যা না দাঁড় করতে পারি, একটা খারাপ ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফেলি।
কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় না করানোর চেয়ে ভুল ব্যাখ্যা দাঁড় করানো পছন্দ করি।
অধিকাংশ মানুষ কোনো তত্ত্ব না প্রস্তুত করার চেয়ে একটি সুবিধাজনক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (conspiracy theory) প্রস্তুত করে ফেলবে । এই কাজের অনেক উদহারণ আমাদের সামনে বিদ্যমান। অনেক অপবিজ্ঞান পার হয়ে গেলে পরে আমাদের সামনে আসে আসল বিজ্ঞান । আমাদের এস্ট্রোনমি আসার আগে এস্ট্রোলোজি চলে আসে, কেমেস্ট্রি আসার আগে আসে এলকামি। এই সব কিছুই ধর্ম থেকে বেরিয়ে এসেছে।
কারণ বাইবেলের একটা অশুভ বাক্য আছে যা কৈশোরে আমাকে বিপর্যস্ত করতো যখন আমাকে তা শুনতে বাধ্য করা হইতো।
এটা বলে “Seek, and ye shall find” “খোঁজ এবং তুমি তা পাবে।“
কথাটা একদম “সঠিক”। খোঁজ তাহলে তুমি পাবে।
খুঁজে দেখো আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতের কারণ কি ? যখন আপনি ঐসব প্রিমিটিভ সমাজ গুলোতে বাস করছেন তখন আপনি ধরে নেবেন এর কারণ আপনার রাগান্বিত দেবতা।
তারপর আপনাকে বলা হবে আপনি পরবর্তী অগ্ন্যুত্পাত এড়াতে পারবেন যদি আপনি কিছু জীবন্ত শিশুকে অগ্নিগিরির জ্বালামুখের ভিতরে দিয়ে লাভার মধ্যে নিক্ষেপ করেন।
আপনি তখন তা ই করবেন।
আর এভাবেই শুরু হয়ে যায় ধর্ম।
-কেন কিছু লোকের প্লেগ হয় এবং কিছু লোকের হয়না?
-কারণ তারা পাপী।
-প্লেগ কোথা থেকে আসলো ?
-এইটা ঈশ্বরের দেয়া শাস্তি।
এবং শুরুর দিকের খ্রিস্টান সমাজের বানোয়াট ব্যাখ্যা – ইহুদিরা কুয়ার পানি বিষাক্ত করেছে।
সুতরাং আমাদের ইহুদিদের পিটাইতে হইবে।
তাছাড়া আমরা তাদের এমনিতেই ঘৃণা করি কারণ ওরা আমাদের যীশুকে /উদ্ধারকর্তাকে হত্যা করেছে। তারা সবাই করেছে এতে কেউ এই অভিযোগ থেকে বাদ যাবেনা । এমনকি আপনি যদি খ্রিস্টান হতে চান আপনাকে এইটাকে আরটিকেল অফ ফেইথ হিসাবে জানতে হবে।
( ক্রিস্টোফার হিচেন্স যেহেতু মায়ের দিক দিয়ে জাতিগত ইহুদী- তিনি বলেন ) তাদের বিশ্বাসটা এমন যেন আমরা সবাই তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম, আমরা সবাই ক্রস টেনে নিয়ে গিয়েছি, আমরাই যীশুর হাতে পেড়েক মেরেছি। ইহুদিরা বিশেষ ভাবেই এমন এবং আমাদের সবাইকে এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে যা হয়তো করা হয়েছিল বা হয়নি আর যদি হয়েও থাকে তা হয়েছিল আমাদের জন্মের আগে।
এইটা কি?
এইটা পদার্থ বিদ্যা না, এইটা বায়োলজি না এইটা বিজ্ঞান না।
এইটা বিশ্বাস। জনাব আপনি কেন আপনার সঠিক পতাকার নিচে হাঁটেন না। কেন আপনি বলেন না যে এইগুলা আপনাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে ঈমানের অঙ্গ হিসাবে। চেষ্টা করবেন না এইটা বিজ্ঞান থেকে উদ্ভূত বলে দাবি করার।
আমি অতি প্রাকৃত বিষয়ের বিরুদ্ধে ডেভিড হিউমেরআর্গুমেন্টের চেয়ে উন্নতর কিছু দিতে পারবোনা। যে প্রকৃতির আইন সময় সময় নিয়মভঙ্গ করে যাতে মানুষ তাদের বিশ্বাস সুদৃঢ করতে পারে। ডেভিলস ডিকশনারি সংজ্ঞা অনুযায়ী P তে prayer প্রার্থনার সংজ্ঞায় বলা আছে “একটা আবেদন যাতে প্রকৃতির আইন ভঙ্গ করা হয়, প্রার্থনাকারী ব্যক্তির স্বার্থে যা সে নিজেই বলছে সে পাবার যোগ্য না। “
ডেভিড হিউম তারচেয়ে বিদ্রুপাত্মক ভাবে সংজ্ঞায়িত করেন
“ আপনি যদি দেখেন যে প্রকৃতির আইন ভঙ্গ হয়েছে যেমন
-কুমারী মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছে
-কুষ্ঠ রোগী হটাৎ করে রোগ মুক্ত হয়ে গেছে
কে জানে এইটা কেন? আপনারা এই জাতীয় বিষয় সম্পর্কে শুনেছেন আপনাকে নিজেকে দুইটার একটা প্রশ্ন করতে হবে
আসলে দুইটাই প্রশ্ন করেন
কোনটা বেশী সম্ভবনাময়?-প্রকৃতির আইন এইমাত্র ভঙ্গ করা হয়েছে, নাকি আমি কোনো কিছু ভুল দেখছি। এবং এইটা যখন আপনি নিজেই চোখের সামনে এই রকম অস্বাভাবিক কিছু দেখবেন। আর আপনি যদি এই ধরণের অস্বাভাবিক অলৌকিক কিছুর দাবি দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ ব্যক্তির কাছ থেকে শুনে থাকেন তাহলে আপনাকে প্রশ্নটা করতে হবে দ্বিগুন, তিনগুন বা চারগুন জোড়ের সঙ্গে। আসলে সম্ভবত কি হয়েছে ? প্রকৃতির আইন ভঙ্গ করা হয়েছে, নাকি কেউ কোনো বিকৃত করে অতিরঞ্জিত করে কেউ গুজব রটিয়েছে?
আপনি যদি এই ধারণা গুলো বুঝতে পারেন তাহলে বাস্তবতা সম্পর্কে কোনো কিছু রহস্যময় মনে হবে না। কোন কিছুই রহস্যময় নয়। কেন সবাই মনে হচ্ছে মারা যাচ্ছে এবং কেউ ফিরে আসছে না? এইটা কোনো রহস্য ময় কিছু মনে হবে না।
রহস্যময় মনে হবে যা যদি কেউ কুষ্ঠ রোগ কিংবা এরচে কঠিন রোগ থেকে মুক্তি লাভ করে যদি তারা ডাক্তারের কাছে যায় এবং ডাক্তারের নাগালে ভাল কোনো ঔষধের থাকে, তা না হলে না।
ব্ল্যাক ডেথ চলাকালীন সময় আর্চ বিশপ অফ কেন্টারবারি বলেছিলেন
“এই বিষয়টা আমার কাছে খটকা লাগে এমন লোক যে কি না নিয়মিত গির্জায় আসছে, প্রার্থনা করছে, তাদের গির্জায় দান করছে – তারা সব কিছু সঠিক ভাবে করছে যা তাদের করা উচিত তারা ধার্মিক জীবন যাপন করার জন্য তারপরও দেখা যাচ্ছে তারা প্লেগ রোগে মারা যাচ্ছে ঠিক – একই ভাবে যেভাবে পাপীরা মারা যাচ্ছে।”
এই আর্চ বিশপ অফ কেন্টারবাড়ী কবরে গিয়েছিলেন এইটা না বুঝে যে উনি একটা খুব ভাল ধারণার খুব কাছাকাছি এসেও তা বুঝতে পারেন নাই।
g