‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ থেকে চৌর্যবৃত্তির দশটি নিদর্শন
সূচিপত্র
- 1 প্রাক কথন
- 2 গৌরচন্দ্রিকা
- 3 প্লেজিয়ারিজম (Plagiarism) কী?
- 4 চৌর্যবৃত্তি শেখার প্রাক্কালে
- 5 চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০১ঃ ফেটে গেলো বুদবুদ
- 6 চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০২ঃ কপি করে ন্যাকামো
- 7 চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৩ঃ ভণ্ডামো তুমি কার
- 8 চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৪ঃ দুধওয়ালার গোফে মাছি, তোমার দেখা নাই
- 9 চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৫ঃ ট্যাঁশ গরু গরু নয়, আসলেতে পাখি সে
- 10 চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৬ঃ আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার পরে
- 11 চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৭ঃ যত হাসি, তত কান্না, বলে গেচ্ছেন রাজেশ খান্না
- 12 চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৮ঃ গান, ভালোবেসে গান
- 13 চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৯ঃ নয়ন সরসী কেন, ভরেছে জলে
- 14 চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১১০ঃ 99% Chimp
- 15 চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট অ্যাপেন্ডিক্সঃ গরমাগরম প্লেজিয়ারিজম
- 16 শেষ কথা
- 17 তথ্যসূত্র
প্রাক কথন
কিছুদিন আগে একটি লাইভ আলোচনার মধ্যে একজন অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের ইসলামিক ধারার বিবর্তন বিরোধী অংশের একজন লেখকের লেখা “হোমো স্যাপিয়েন্স: রিটেলিং আওয়ার স্টোরি” নামের বইটির উল্লেখ করে আমাকে পড়ার অনুরোধ জানালেন। পক্ষ বিপক্ষের সব ধরণের যুক্তি জানার এবং শোনার আগ্রহ থেকে বইটি সংগ্রহ করে ফেললাম, এবং পড়েও ফেললাম। পড়া শুরু করার সাথে সাথেই দেখতে পেলাম, এই বইটির লাইনগুলো কেমন যেন চেনা চেনা, খুব পরিচিত। চিরাচরিত, বহুল প্রচলিত সেই একই যুক্তি। এই কথা গুলো আগেও শুনেছি। একটু খুঁজতে খুঁজতেই দেখি ইংরেজি ভাষায় লেখা Jonathan Wells এর Icons of Evolution: Science or Myth? Why Much of What We Teach About Evolution Is Wrong বইটির [1] সাথে আশ্চর্য সাদৃশ্য এবং বেশকিছু অংশই মূলত অনুবাদ করা। “হোমো স্যাপিয়েন্স: রিটেলিং আওয়ার স্টোরি” বইটির লেখকের নাম রাফান আহমেদ। এই বইটি থেকে মেধাসত্ত্ব না দিয়ে চৌর্যবৃত্তি শেখার কমপক্ষে দশটি শিক্ষা নেবার প্রয়োজন আছে, বিশেষ করে যদি জনপ্রিয় ধারার লেখক হতে চান। এই লেখক ভদ্রলোক চৌর্যবৃত্তি কাকে বলে, এটি কত প্রকার এবং কী কী, তা রীতিমত উদাহরণ সহকারে বেশ ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। একটি জনপ্রিয় প্রবাদ আছে , বড় ধরণের চুরি করলে লোকজন বলে অমুকে পুকুর চুরি করেছে। এই বইটি পড়ার পরে মনে হলো, প্রবাদটি এভাবে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে। এখন থেকে বলা দরকার, নদী চুরি করেছে, বা খোদ সমুদ্রই চুরি করে বসে আছে। কারণ, এই বইটির সাথে যে বইগুলো থেকে কপি করা, তা মিলিয়ে পড়লে বোঝা যায়, এটি সামান্য পুকুর চুরি নয়। রীতিমত নদী বা সমুদ্র চুরিই বটে।
‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ থেকে চৌর্যবৃত্তির দশটি নিদর্শন এই লেখায় পাবেন এবং আশা করি সেখান থেকে আপনারাও কিছু শিক্ষা নেবেন।
তবে রাফান আহমেদ ভদ্রলোক যদি দাবী করেন, উনি ঐ ইংরেজি বইটি থেকে অংশবিশেষ চুরি করেন নি, তাহলে আমরা বুঝে নিবো, জনাথন ওয়েলসই নিশ্চয়ই রাফান আহমেদের বই থেকে খানিকটা এদিক সেদিক করে চুরি করেছে! সেটি হয়ে থাকলে বাঙালি হিসেবে অবশ্যই আমরা গর্বিত হবো এই ভেবে যে, আজকাল আমাদের দেশের লেখকদের লেখাও বিদেশিরা কপি করছে; তখন অবশ্য ভিন্ন আরেকটি সমস্যা দেখা দিবে। সেটি হচ্ছে, জনাথন ওয়েলস বইটি প্রথম প্রকাশ করেছেন ২০০২ সালে। রাফান আহমেদের বইটি প্রকাশ হয়েছে ২০২০ সালে। এর অর্থ একটিই হতে পারে যে, জনাথন ওয়েলস ভদ্রলোক টাইম মেশিন আবিষ্কার করেছেন এবং টাইম মেশিনে চেপে উনি ভবিষতে গিয়ে রীতিমত বাংলা ভাষা শিখেছেন, এরপরে রাফান আহমেদের বইটি কিনে পড়ে সেখান থেকে কপি করে ২০০২ সালে ফিরে গিয়ে বইটি প্রকাশ করেছেন। রাফান আহমেদ যদি চুরি করেন নি এমন দাবী করেন, তাহলে বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে গন্য হবে। কারণ এর আগে এখন পর্যন্ত কেউ টাইম মেশিনের এরকম বাস্তব প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
গৌরচন্দ্রিকা
আপনারও ইচ্ছে হতে পারে আসছে বইমেলায় বেশ একখানা বই ছাপিয়ে নাম কামিয়ে নেয়া। ধরুন, নারায়ন সান্যাল বা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মত ধাঁ করে একটা বই যদি লিখে নেয়াই যায়, তাহলে আর চাই কি! কিন্তু বই লিখব বললেই তো আর লেখা যায় না। বই লিখতে হলে, সেই বই আবার বেস্ট সেলার হতে গেলে তো এমন কিছু নিয়ে লিখতে হবে যেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন ধরুন গোয়েন্দা গল্প। কিন্তু গোয়েন্দা গল্প বললেই তো আর লেখা যায় না। তাছাড়া শ’য়ে শ’য়ে গোয়েন্দা গল্প আছে বাজারে। তেমন চেনা জানা লেখক না হলে কেউ হয়ত বইয়ের পাতা উল্টেও দেখবে না। তাহলে অন্য বিষয় ভাবতে হবে। যেমন কারেন্ট এফেয়ার্স বা হতে পারে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা। কিন্তু সেটাও খুব একটা জনপ্রিয় বিষয় না, তাছাড়া এই বিষয়ে পড়াশোনা লাগে।
আচ্ছা, তাহলে কিছু বিতর্কিত বিষয়। যেমন ধরুন একটা কন্সপিরেসি থিওরি বা এমন কিছু একটা যা সাধারণ মানুষ নাম শুনেছে কিন্তু খুব বেশী জ্ঞান রাখে না। এইটা খুবই জনপ্রিয় বিষয়। যেমন ধরুন, মানুষ যে চাঁদে গেছে, সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে শুনেছে। কিন্তু খুব যে গভীরভাবে এই বিষয়ে জ্ঞান রাখে তা নয়। কিংবা ধরুন বহির্জগতের বা মহাজাগতিক প্রাণী। সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে জানে, নাম শুনেছে, সিনেমাও দেখছে, আর বিষয়টা নিয়ে খুব আগ্রহীও। বেশ মুখরোচক বিষয়, বেশ একটা রহস্য আছে, রোমাঞ্চ আছে। ভালো বিষয়, কিন্তু এর মধ্যে খুব একটা বিতর্ক নেই। আর তাছাড়া বহির্বিশ্বের প্রাণীরা ভারতীয় উপমহাদেশের ভূখণ্ডকে খুব একটা পাত্তা দেয় না। তারা আমেরিকা বা রাশিয়া ছাড়া অন্য কোথাও ল্যান্ড বা অবতরন করে না। তাহলে কি লেখা যায়!
সত্যি বলতে কি, আমার দেখা সব থেকে জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত বিষয়গুলির মধ্যে সর্বপ্রথম হল, “বেদ- কোরআন-বাইবেল” এবং অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থে কি পরিমান বিজ্ঞান ঠেসে ঠেসে ভরা আছে সেই নিয়ে। এই বিষয়ে বই লিখলে আর দেখতে হবে না। ধর্মের স্বপক্ষে যারা আছে তারা তো পড়বেই, বিপক্ষে যারা তারাও নাক সিঁটকে একবার পাতা উল্টে দেখবেই। তবে এই বিষয়ে ইন্টারনেটে এতো তথ্য আছে, খুব নতুন কিছু না লিখলে সবাই বুঝে যাবে কোথা থেকে টুকলি করা হয়েছে।
আরেকটা খুব জনপ্রিয় বিষয় হল, এই মহাবিশ্বের শুরু কিভাবে। কিন্তু সেটা জনপ্রিয় হলেও, একটা পুরো বই লিখতে গেলে পড়াশোনা করতে হবে। এমনিতে বাজারে খাবে না হয়তো, কিন্তু ধর্মের ব্যাপারটা যদি ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে আর কথাই নেই। আর একটা ব্যাপার আছে, সেটা হল বিবর্তন। এইটা বেশ জুতসই একটা বিষয়। বাঁদর থেকে মানুষ এসেছে এই কথাটা শোনেনি এমন লোকজন প্রদীপ নিয়ে খুঁজলেও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বিবর্তনের সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করুন, খুব কম মানুষই এই বিষয়ে সঠিক ধারণা দিতে পারবে।
এর কারণ বিবর্তন তত্ত্বের মুল উপপাদ্যটা খুব সহজে বোঝানো যায়। ব্যাপারটা “loop quantum gravity”-র মত দাঁত ভাঙ্গা বিষয় নয়। সেজন্য যেকোন রামশ্যাম যদু মধুও এই বিষয়ে কিছু না কিছু মতামত দিতেই পারেন। আর সেই কারণে এই বিষয়টা বেশ জনপ্রিয়। আর ধর্ম ব্যাপারটা ঢুকিয়ে দিতে পারলে তো কথাই নেই। সাথে এই কথাটা বললেই হল যে, বিবর্তন তত্ত্ব একদম মিথ্যে। আপনাকে আর পায় কে!
বিশেষ করে যদি বাংলায় এমনি একটা বই লেখা যায়। কারণ মুখে বিবর্তন বিরোধী কথা বললেও, লিখিত আকারে এই বিষয়ে বই প্রকাশের সাহস খুব কম মানুষই দেখায়। কারণ, লিখিত ভাবে হাসির পাত্র কেউ হতে চায় না। সে, যায় হোক। বই লিখতে হবে বলে কথা। সব দিক ভেবে চিন্তে ঠিক করলেন এই বিষয়ে একটি বই আপনি লিখবেন আর প্রকাশ করবেন পরের বই মেলায়।
কিন্তু বিধি বাম। মাথায় কিছুতেই আসছে না। আজকাল বিবর্তন তো কেবল একটা থিওরি বললে লোকজন এমন হাসাহাসি করে যে লজ্জায় কান পর্যন্ত লাল হয়ে যায়। আর সে তো হবে এক লাইন থেকে বড় জোর এক পাতা। তাহলে? তাহলে ভাবতে হবে। ইন্টারনেট ঘেঁটে তাহলে দেখতে হবে এই বিষয়ে কি কি বলা আছে। ফ্ল্যাট আর্থ নিয়ে যদি হাজার খানেক ওয়েবসাইট থাকে, এই বিষয়ে থাকবে না? তাহলে একটা কম্পিউটার খুলে বসে পড়তে পারেন। সত্যি করেই গাদাখানেক তথ্য পেয়ে যাবেন। আর পেয়ে যাবেন বই। বিবর্তনবিরোধী অনেক ধর্মীয় সংস্থা আছে। এমনি একটা উদাহরণ হল, Discovery Institute কিম্বা Creation.com-এর মতন ওয়েবসাইট।
এই সংস্থাগুলি থেকে অনেক বই প্রকাশ করা হয়। সবই ইংরাজি ভাষায় যদিও। আপনি ভাষান্তর করতে পারেন। কিন্তু সেটা ভালো দেখায় না। নিজের নামটা সেখানে অনুবাদক হিসাবে কেমন ম্লান হয়ে যায়। তাহলে উপায়? আরে ভাই, আপনি তো লিখবেন বাংলায়। আর এই সব “সৃষ্টিবাদী” বা “বুদ্ধিমান স্বত্বার পরিকল্পনা” তত্ত্বের প্রচারকদের কথা পাত্তা দেয় কে? এপার বাংলা বা ওপার বাংলা যাই বলুন, এই সব বই পড়ার সময় কার আছে।
ব্যাস। হয়ে গেলো। এমনি দু চারটে বইয়ের পিডিএফ কপি নামিয়ে, বসে যান পড়তে আর বাংলায় কপি করতে। আর ওয়েবসাইটগুলি তো রইলই। দরকার মতন সেখান থেকে তথ্য নেওয়া যাবে। মাঝে মাঝেই এদিক ওদিক ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে।
আর আমরা বাংলা রচনা লিখতে তো খুবই পারদর্শী। সেই কোন ছোটবেলা থেকে লিখে এসেছি। আমার মনে আছে, গরুর রচনা লিখতে গেলেও, আমাদের একজন শিক্ষক অনেকগুলো বই দেখে এটা থেকে একটু ওটা থেকে একটু নিয়ে রচনা লেখাতেন। আমরা সেই রচনা মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় উগ্রে দিয়ে আসতাম, যেন আমার নিজের লেখা। সবার লেখা যদিও প্রায় একই রকম হত, কিন্তু তাতে কি যায় আসে। এতো আর কোন সায়েন্স জার্নালের জন্য লেখা না, যে তারা চৌর্যবৃত্তির এর জন্য কান ধরে নিল ডাউন করিয়ে রাখবে। তাহলে তো হয়েই গেল। হাঁ করে দেখছেন কি? আরে একটা এমনি বই লিখতে বসে যান। সাফল্য আসবেই।
কি বললেন? বিশ্বাস হচ্ছে না? দাঁড়ান দেখাই তাহলে একটা জলজ্যান্ত প্রমান। ডাক্তার রাফান আহমেদের লেখা “হোমো স্যাপিয়েনস: রিটেলিং আওয়ার স্টোরি” বইটির বাণিজ্যিক সফলতা সম্পর্কে নিশ্চয় অবগত। তাহলে আর দেরি না করে সেই গল্প শুরু করা যাক। ও, হ্যাঁ। ভালো কথা। এমনি একটা বই লিখে যদি বেস্ট সেলার হয়ে যান, তাহলে আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আপনার সফলতার গল্প বিশদভাবে বর্ণনা করা হবে।
কিন্তু তার আগে, চৌর্যবৃত্তি বা Plagiarism কথাটা যখন উঠলোই সেটা কি না জেনে আগে না যাওয়াই ভালো। কোথায় কখন দরকার পড়ে বলা তো যায় না।
প্লেজিয়ারিজম (Plagiarism) কী?
প্লেজিয়ারিজম (Plagiarism) বিজ্ঞান মহলে বড় ভয়ঙ্কর বস্তু। যদি প্লেজিয়ারিজমের দায়ে ধরা পরেন তাহলে লজ্জায় নাক তো কাটা যায়ই, অনেক সময় জেল, হাজত, জরিমানা হতে পারে। যদিও আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়না। তাই অনেকেই এই কাজটি করে থাকেন।
Plagiarism হল, অন্য কারও কাজ বা লেখা বা গবেষণাকে মূল লেখকের নাম উল্লেখ ছাড়া এবং কোন কোন অংশ তার লেখা থেকে নেয়া সেগুলোর মেধাসত্ত্ব না দিয়ে সেগুলো নিজের নামে ব্যবহার করা বা নিজের নামে প্রকাশ করা। প্রতিটি শিল্পী, লেখক, সাহিত্যিক, কবি, প্রাবন্ধিক, সুরকার যখন তার মেধা দিয়ে কিছু লেখেন, কিছু সৃষ্টি করেন, সেটির ওপর তার অধিকার থাকে। অন্য কেউ সেখান থেকে অংশবিশেষ গ্রহণ করার একটি অনুমোদিত পদ্ধতি রয়েছে। পদ্ধতিটি হচ্ছে, তার মেধাসস্ত্বের স্বীকৃতি দিয়ে তার অনুমতি নিয়ে সেটি প্রকাশ করা। কিন্তু মেধাসত্ত্ব উল্লেখ না করা হলেই সেটি হয়ে যায় চৌর্যবৃত্তি। এটি যেকোন সভ্য দেশে দণ্ডনীয় অপরাধ।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, প্লেজিয়ারিজম হচ্ছে মেধাচুরি, যেখানে অন্য কারও কাজ বা লেখাকে নিজের নামে ব্যবহার করা বা নিজের নামে প্রকাশ করা। তবে লেখক মূল লেখকের মেধাসত্ত্ব উল্লেখ করে যদি অনুবাদ বা ভাবানুবাদ করেন, সেটির ক্ষেত্রে এই অভিযোগ আরোপ করা যাবে না। প্লেজিয়ারিজম যারা করেন তারা সাধারণত কোন বই থেকে কপি করেন, কপি করার সময় কিছু শব্দ বা বাক্যের গঠন পরিবর্তন করে দেন। লাইনগুলো উল্টেপাল্টে দেন, যেন একদম হুবুহু কপি তা বোঝা না যায়। কিন্তু সেগুলো করা হলেও, প্লেজিয়ারিজম বোঝা খুব কঠিন কাজ নয়।
পূর্বের কোনও প্রকাশিত লেখার অনুকরণে (এমনকি নিজের লেখা থেকে হলেও) একটু এদিক ওদিক করে, প্রায় একই কথার পুনরাবৃত্তি করা মোটেই ভালো লেখা নয়। সেক্ষেত্রে উৎস অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ কোন ধরুন লেখক ‘ক’ একটি বক্তব্য লিখে তার সাথে তথ্য সুত্র উল্লেখ করেছেন। লেখক ‘খ’ কিন্তু সেই একই বিষয়ে একটি লেখা লিখে, সেই একই বক্তব্য উল্লেখ করে, সেই একই তথ্যসুত্র দিলেও, সেখানে যদি লেখক ‘ক’-এর কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করেন তাহলে তা চুরির পর্যায়েই পরে। যদি না হত, তাহলে আপনার লেখা একটি রিভিউ পেপার অনুকরন করে আমি আমার নামে চালিয়ে দিতে পারতাম। কারণ রিভিউ পেপার কোন মৌলিক গবেষণা নয়। কিন্তু তা হয় না।
তাহলে মূল কথায় আসা যাক। আজকে আমরা শিখবো, কীভাবে চৌর্যবৃত্তি করে জনপ্রিয় ধারার লেখক হতে হয়।
চৌর্যবৃত্তি শেখার প্রাক্কালে
গবেষণায় দেখা গেছে ছাত্রছাত্রীরা সবথেকে ভালো শিক্ষা গ্রহন করে যদি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যায়। তাই চৌর্যবৃত্তি শেখার এই টিউটোরিয়ালটি বোঝার সুবিধার্থে একটি প্রত্যক্ষ উদাহরণ দেওয়া যাক। ডাক্তার রাফান আহমেদের লেখা জনপ্রিয় “হোমো স্যাপিয়েন্স রিটেলিং আওয়ার স্টোরি” বইটি তাক থেকে নামিয়ে আনুন। কারণ চৌর্যবৃত্তি শেখার জন্য এই বইটি একটি ভাল উদাহরণ। প্রথমে দেখে নিই, ডাক্তার রাফান আহমেদ প্রণীত আলোচ্য বইটির সূচীপত্র এবং যেখান থেকে এই বইটি মুলত খানিকটা অদলবদল করে অনুকরণ, সেই মূল বইটির সূচীপত্র।
উপরের ছবিতে বাম দিকে আছে হোমো স্যাপিয়েন্স নামক বাংলা বইটির সূচীপত্র আর ডান দিকে যে বইটি থেকে অধিকাংশ তথ্য নেওয়া হয়েছে সেই বইটির সূচীপত্র। এই দ্বিতীয় বিদেশী বইটির লেখক Jonathan Wells আর বইটির নাম Icons of Evolution: Science or Myth? Why Much of What We Teach About Evolution Is Wrong। আপনি হয়তো ভাবছেন শুধু সূচীপত্রের মধ্যে সাদৃশ্য থাকলে কি আর আসে যায়। ঠিক কথা।
আমরা এই বইয়ের ভিতরে আর কোন কোন জায়গা থেকে সরাসরি চুরি করা হয়েছে তাও দেখবো। আর একটি কথা, এখানে বাকি যে চিহ্নিত না করা পরিচ্ছদগুলি দেখছেন, সেগুলি অন্য কিছু উৎস থেকে নেওয়া। সে কথাতেও আসবো। ঐ যে আগেই বললাম না, বিভিন্ন বই থেকে নিয়ে ‘গোরু’ রচনা লেখার কায়দা, ঠিক সেই কায়দাতেই লিখে এই বইয়ের সাফল্য।
যাই হোক এই বার ‘গভীরে যাও, আরও গভীরে যাও’।
চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০১ঃ ফেটে গেলো বুদবুদ
আলোচ্য বইটির ৭৯ পাতা খুলুন আর ঐ ইংরাজি বইটির ৯ নম্বর পাতা খুলুন।
উপরের ছবি দেখে বোঝাই যাচ্ছে বামদিকেরটি সেই জনপ্রিয় বাংলা বইটি, আর ডান পাশে সেই ইংরাজি বইটি। বাংলা বইটিতে এই পরিচ্ছদের মূল বক্তব্য ইংরাজি বইটির সাথে হুবহু একই রকম। শুধু তাই নয়। বেশ কিছু জায়গায় ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। কিন্তু উৎসের কোন উল্লেখ ছাড়াই। আসুন সেই নির্বাচিত অংশগুলির দিকে দৃষ্টিপাত করি।
উপরের চিত্রে আলোচ্য বই কোনটি এবং কোনটি বিদেশী বই, তা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। তবে এখনও শেষ হয়নি। আরও আছে। তবে আরও একটু এগিয়ে যাবার আগে, এখানে একটা কথা আবারও মনে করিয়ে দিই। পরিচ্ছদগুলি বিদেশী বইটি থেকেই যে নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু এখানে কেবলমাত্র সেই পংক্তিগুলিই উল্লেখ করা হচ্ছে যা একদম সরাসরি বঙ্গানুবাদ, তাও আবার কোনও রকম উৎস উল্লেখ করা ছাড়াই।
লক্ষ্য করুন দুটি বইয়ের এই পরিচ্ছেদের শেষ দিকে RNA world অনুকল্পের কথা উল্লেখ করা হয়। এই পরিচ্ছেদের বাকি অংশে বিদেশী বইটিতে আমেরিকান পাঠ্য পুস্তকে কি বলা হয়েছে, আর বাংলা বইটিতে বাংলাদেশী পাঠ্যপুস্তকে কি বলা হয়েছে তাই নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাই একে তো আর বঙ্গানুবাদ বলা যায় না। তাই তার উল্লেখ করলাম না। আপনারা এই দুটি বই পড়ে চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করতে পারেন। আরেকটা মজার জিনিস দেখাই? দেখুন দুটি বইয়ের শেষ কিভাবে হয়…
বাংলা এবং বিদেশী বইদুটির উল্লিখিত পরিচ্ছদের শেষ একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে। আপনারাও কি অবাক হচ্ছেন? যদিও সরাসরি বঙ্গানুবাদ নয়, এখানে স্টাইল থেকে অনুপ্রেরনা নেওয়া হয়েছে। এটা অবশ্য তেমন কিছু দোষের নয়। কত বড় বড় সুরকার বিদেশী গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই।
চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০২ঃ কপি করে ন্যাকামো
বাংলা বইটিতে যে পরবর্তী পরিচ্ছেদটি দেখাবো তার নাম “বিবর্তনচিন্তার কাঠামো”। সেই বইটিতে “প্রাণের ইতিহাস (Tree of Life)” নামের একটি অংশ আছে। যদিও tree of life এর বঙ্গানুবাদ প্রাণের ইতিহাস হবে কিনা এই নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে, কিন্তু সেই সন্দেহ নিরসনে সময় নষ্ট না করে একটু এগিয়ে যাই। বিদেশী বইটিতে পরিচ্ছদের নাম “Homology in Vertebrate Limbs“, Chapter 4, page number 59. আসুন দেখি সাবলীল বঙ্গানুবাদের কিছু সাদৃশ্য।
এইবারে দেখি একটা রেফারেন্স অনুবাদ করার নমুনা।
দেখে মনে হয় সার্কুলার লজিক কথাটা একেবারে দাঁতভাঙা একটা জবাব, কিন্তু লক্ষ্য করে দেখুন সেই কথাটাও এই বিদেশী বই থেকে নেওয়া। এখানেই শেষ নয়। আরও আছে। পরের চিত্রটি দেখুন।
এখানে বাংলা লেখাটিতে কেবল Trisha Gura [2]-র লেখাটি উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও বাংলা আর বিদেশী লেখাটির মধ্যে অদ্ভুত মিল।
উপরের চিত্রটি লক্ষ্য করুন, এখানে ‘r’ অক্ষরটি অপনয়ন করা হয়েছে। যদিও সেটা সঠিক নয়। তার কারণ homology নির্ণয়ের ক্ষেত্রে rRNA-ই ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক সময় যাতে কপি কপি গন্ধ সহজে না পাওয়া যায়, তাই এই ধরনের পরিবর্তন করতেই পারেন।
উপরের ছবিটির দিকে তাকান। খুব সন্দর একটি উদাহরণ, কিভাবে একটি অনুচ্ছেদে বিভিন্ন বাক্য বিভিন্ন জায়গা থেকে নিতে হয়। এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে কিন্তু। নইলে খুব সহজেই কেউ ধরে ফেলবে যে কোথা থেকে এই বাক্যগুলি নেয়া।
এখানে অবশ্য একটা পার্থক্য আছে। বাংলা বইটিতে ‘Horizontal’ আর বিদেশী বইটি বলছে ‘Lateral’। এই বার দেখি এই পরিচ্ছদের আর একটি উদাহরণ। তারপর পরবর্তী পরিচ্ছদে চলে যাবো।
চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৩ঃ ভণ্ডামো তুমি কার
পরবর্তী পরিচ্ছদে চলে এলাম। বাংলা বইটিতে এই পরিচ্ছদের নাম, “হেকেলের ভণ্ডামো” আর বিদেশী বইটিতে এর পরিচ্ছদের নাম “Haeckel’s Embryos“। নামটা একটু পরিবর্তিত। তবে এমনি নাম পরিবর্তন করে না দিলে লোকে দুয়ো দেবে; তাছাড়া একদম পুকুর চুরি করলেও মুশকিল।
বাংলা বইতে লেখা ডারউইন নাকি চিঠিতে লিখেছিলেন, কিন্তু বিদেশী বইটিতে লেখা, “Darwin wrote in The Origin of Species” এবং চিঠির উল্লেখ নেই। এই ব্যাপারটাও মাথায় রাখবেন বই লেখার সময়। একটু এদিক ওদিক না করলে সবাই ধরে ফেলবে।
উপরের চিত্রটি লক্ষ্য করুন, সামান্য একটি বক্তব্য। কিন্তু লেখক কোন রকম ঝুঁকি নেন নি। এই ধরনের পন্থা অবলম্বনের সুবিধা হল, ভুল হবার সম্ভাবনা কম। আরও কিছু উদাহরণ দেখে নিই।
এর পর যা বক্তব্য আছে, তা হুবহু বঙ্গানুবাদ বলা যায় না। তবে ভাবানুবাদ তো অবশ্যই। বিদেশী বইটি এবং এই বাংলা বইটির যে প্রবাহ তা মোটামুটি একই, কিন্তু কিছু নতুন এবং সাম্প্রতিক রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে একদম নির্লজ্জ পুকুর চুরির হাত থেকে বাঁচার জন্য। এই বিষয়টি কিন্তু বই লেখার সময় মাথায় রাখবেন। পুকুর চুরি থেকে বাঁচা কিন্তু এতো সহজ না। দেখুন একটি ছবি একদম হুবহু ছেপে দেওয়া হয়েছে এই বাংলা বইটিতে।
ব্যাপারটা কি নিতান্ত কাকতালীয়? নাকি দুই জনেই একই জায়গা থেকে কপি করেছেন? আরও একটা মজার জিনিস দেখি। মূল ছবিটি কার এবং বাংলা বইতে কার নাম দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্য করুন মূল ছবিটির নীচে চিত্রশিল্পির স্বাক্ষর করা আছে। বাংলা বইটিতে ঐ স্বাক্ষরটি অপনিত হয়েছে। চিত্রশিল্পীর নামের আদ্য অক্ষর JFS, অর্থাৎ জোডি এফ. জোগ্রেন। কিন্তু বাংলা বইতে কি লেখা হয়েছে ‘জন’। আর এই চিত্রটির সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত। ইচ্ছে করলেই এই ছবি পুনর্মুদ্রণ করা যায় না। পুনরায় ব্যাবহার করতে হলে চিত্রশিল্পীর কাছে অনুমতি নিতে হয়।
ব্যাপারটা নিয়ে ভাবার বেশী দরকার নেই। মূল কথাটা হল ছবিটা একটু পরিবর্তন করে দেবেন। এটাই এখান থেকে শেখার বিষয়। এইবার এই পরিচ্ছেদের শেষ উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক।
চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৪ঃ দুধওয়ালার গোফে মাছি, তোমার দেখা নাই
বাংলা বইতে সেই একই পরিচ্ছেদের শেষের দিকে চার ডানা যুক্ত মাছির কোথা বলা হয়েছে। যদিও বিদেশী বইটিতে এই নিয়ে একটি সম্পূর্ণ আলাদা পরিচ্ছদ আছে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে বইয়ের আয়তন নিয়ন্ত্রনে থাকে। এই কথাটিও মাথায় রাখা দরকার। তবে এইরকম কাজ করতে গেলে, একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে। বেশ কায়দা করে দুটি পরিচ্ছদ একত্রীত করতে হয়, যেন ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
এই পরিচ্ছেদে fruit fly, Drosophila melanogaster এর সম্পর্কে বলা হচ্ছে। কি বলা হয়েছে, সেটা পরের কোন পোস্টে বলবো। এখন খালি দেখি দুটি বইয়ের সাদৃশ্য।
হুম, দেখেই বোঝা যাচ্ছে সাদৃশ্য বেশ খানিকটা। এই পরিচ্ছেদে একটি ছবিও আছে। দেখুন তো, কোন মিল পান কিনা।
উপরের ছবিতে বাম দিকেরটি বাংলা বই থেকে আর ডান দিকের ছবি বিদেশী বই থেকে নেওয়া। অদ্ভুত এক সাদৃশ্য আছে এই ছবিগুলিতে। দুই ডানা ও চার ডানা যুক্ত মাছিগুলির ডানার দাগগুলিও অদ্ভুতভাবে একই। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন। বাংলা বইটিতে মাছির মাথা মুছে দেওয়ার কি দরকার ছিল? মেডিকেল টেক্সট বুকে দেখবেন অনেক সময় কোন রোগীর ছবি দেওয়া থাকলে, সেই রোগীর আইডেনটিটি বা পরিচয় গোপন রাখার জন্য মুখ ঢেকে দেওয়া হয় বা অনেক সময় মুখমণ্ডলের অংশটুকু বাদ দেওয়া হয়। সেই রকমই কি কিছু করার চেষ্টা করা হয়েছে এখানে? করা হয়ে থাকলে সাধুবাদ জানাই। মাছি বলে কি মানুষ নয়!!! এই কথাটিও খেয়াল রাখবেন। বই লেখার সময় কোন এথিকস যেন ভঙ্গ না হয় সেই বিষয়ে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
আরও একটি কথা। এই ছবির স্বত্বাধিকারী “গ্রেট ড্রয়িংস” নয়। এই ছবিটির স্বত্বাধিকারী “মেটা স্টুডিওস”। “গ্রেট ড্রয়িংস” নাম কোথায় পেলেন জানি না।
চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৫ঃ ট্যাঁশ গরু গরু নয়, আসলেতে পাখি সে
পরবর্তী অধ্যায় “পাথরের কথা”। যদিও সূচীপত্রে “পাথরের মাঝে” বলা হয়েছে। এই রকম ভুল হতেই পারে, তাই সাবধান। পাণ্ডুলিপি শেষ করে প্রকাশকের কাছে জমা দেবার আগে, সূচীপত্রটি আপডেইট করতে ভুলবেন না। এই কথাটি নোট করে রাখুন। করেছেন তো? তাহলে পরের কোথায় আসি। এই অধ্যায়ে একটি পরিচ্ছেদে Archaeopteryx নিয়ে কথা হচ্ছে, যদিও বিদেশী বইটিতে এটি একটি সত্বন্ত্র অধ্যায়। আগেই বলেছি এই পন্থার সুবিধা কি কি। তাহলে একই কথা বেশী না বলে, আসুন দেখে নি সাদৃশ্যগুলি একনজরে।
আরও কিছু অংশ দেখি। যেখানে Henry Gee-এর বক্তব্যটাও দুই বইতেই আছে।
Henry Gee-এর বক্তব্যের বঙ্গানুবাদ তো আছেই। সাথে Larry Martin ও Mark Norell -এর বক্তব্যও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শেষের দুজনের বক্তব্য তো দুই জায়গাতেই একই ক্রমান্বয়ে আছে। এখানে থেকে শিক্ষা এটা নেওয়া গেলো যে, কোটেশনগুলো একই জায়গায় রাখাই ভালো। তাতে পাঠকের সুবিধা হয়।
এর কথার পরে পরেই দুইটি বইতেই আসছে ‘Archaeoraptor‘-এর কথা।
আর বেশী কিছু বলা হয় নি বাংলা বইটিতে। এখানেও একটি শিক্ষণীয় বিষয়। অনেক ক্ষেত্রেই বইয়ের আয়তন বেশী বড় না করে খালি যেটুকু বলা প্রয়োজন সেটুকু বলে ইতি টেনে দেওয়া। হাজার হোক, আপনার পাঠক তো বাঙালি। তাদের খালি এইটুকু জানলেই হবে যে, ফসিল জালিয়াতি হয়েছে, ব্যাস।
চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৬ঃ আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার পরে
পরের পরিচ্ছদ “আধুনিক ঘোড়ার বিবর্তন”। সেই একই অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। পরিচ্ছেদটি ছোট। শুধু এক পাতা মত। কিন্তু বক্তব্য মোটামুটি একই। তবে বিদেশী বইটিতে এই সম্পর্কে অনেক বেশী বিবরন আছে। সামান্য একটি উদাহরণ দেখে নিই।
চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৭ঃ যত হাসি, তত কান্না, বলে গেচ্ছেন রাজেশ খান্না
পরের অধ্যায় মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস। বাংলা লেখাটি ছোট, বিদেশী লেখাটির তুলনায়। কিন্তু সাদৃশ্য কিছু আছে।
একদম শুরু থেকেই সাদৃশ্য দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এখানে একটি ব্যাপার খেয়াল করুন। আপন মনের মাধুরি মেশানোর প্রচেষ্টা। এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন কিন্তু। আপন মনের মাধুরি না মেশালে এবং খালি কাঠখোট্টা কপি করলে কিন্তু ভালো দেখাবে না। তাই মাঝে মাঝে একদম বাংলার মাটিতে নামিয়ে আনবেন।
এবার চলে আসি একটি ওয়েবসাইট http://www.ideacenter.org/ -এর Human origin Quotes collection-এ। বাংলা বইটিতে উল্লিখিত পাঁচখানা উক্তি এই খানেও শোভা পাচ্ছে।
আর একটু এগলেই Ida-র গল্প। এই অনুচ্ছেদটির সাথে creation.comএর একটি আর্টিকেলের সাথে বেশ মিল।
চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৮ঃ গান, ভালোবেসে গান
আগেই বলেছি, শুধুমাত্র একটি বই থেকে চুরি করলে তো হয় না। আমরা ছাত্রজীবনে এইভাবে গোরু রচনা লিখতে শিখি নি। একাধিক বই থেকে একটু একটু ধার নিতে হয়। তারই কিছু নমুনা দেখব। আলোচ্য বাংলা বইটি লেখার সময় লেখক আরেকটি বিদেশী বই থেকে তথ্য নিয়েছেন। তবে সেক্ষেত্রে বিদেশী বইটির নাম উল্লেখ করেন নি। তাহলে আরেকটি বই তাক থেকে পেড়ে আনুন Stephen Meyer-এর লেখা Signature in the Cell বইটি। আসুন, দেখা যাক।
আসলে এই দ্বিতীয় বইটি বেশ বড়, প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠা। কিন্তু সেখান থেকে কেবল একটি অধ্যায় নেওয়া হল, নাম “প্রাণের গান”।
চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১০৯ঃ নয়ন সরসী কেন, ভরেছে জলে
শেষ একটি অধ্যায়ের কথা বলবো। বাংলা বইটিতে এই অধ্যায়ের নাম ‘রয়েছে নয়নে নয়নে’। এই অধ্যায়টির উৎস বর্ণনা করার আগে কিছু কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন। বিবর্তন তত্ত্বের বিরোধী এবং Intelligent Design ধারনার সমর্থক Michael Behe তাঁর একটি বই “Darwin’s Black Box: The Biochemical Challenge to Evolution” বইটিতে দেখান যে মানুষের চোখ বিবর্তিত হতে পারে না এবং এটি একটি irreducibly complex নকশা। কারণ হিসাবে তিনি দেখান মানুষের চোখ এতই জটিল একটি অঙ্গ যে সেখান থেকে কোন একটি অংশ সরিয়ে নিলেই তা পুরপুরি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। “Irreducible complexity” বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের এমন একটি design (গঠন), যে design থেকে একটি মাত্র অংশ (part বা component) সরিয়ে নিলেই সেই অঙ্গ প্রত্যঙ্গটি আর কাজ করে না।
পরবর্তী কালে প্রকাশিত Stephen Meyer-এর লেখা Signature in the Cell বইটিতে সেই একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায়। বইটির মূল উপজীব্য এই রকম, মানুষের কোন একটি অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গের গঠন ও কার্যকারিতা যেহেতু খুবই জটিল, তাই এটি প্রাকৃতিক ভাবে বিবর্তিত হতে পারে না, তাঁর মানেই কোন এক বুদ্ধিমান স্বত্বা তৈরি করেছেন। সোজা কথায়, “তাইলে বলুন কেমনে” ধরনের কথা। বইটির একটি অংশ নীচের ছবিতে তুলে ধরা হল, যেখানে মানুষের চোখের গঠনের কথা বলা হচ্ছে।
এখানে চোখের Stephen Meyer বলছেন যে, বিবর্তনবাদীরা যে বলেন চোখের গঠন নিখুঁত নয়, সেই কথা মোটেই ঠিক নয়। বরং আমরা যদি আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করি তাহলে দেখব এটাই সব থেকে ভালো ডিজাইন এবং তাঁর ফলে প্রমান হয়ে যাবে যে একজন বুদ্ধিমান স্বত্বা মানুষের চোখ নিজে হাতে গড়ে তুলেছেন। বইটি লেখা হয় ২০০৯ সালে, এবং তারপর গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। নিখুঁত ডিজাইন কিনা তার স্বপক্ষে ও বিপক্ষে বহু মতামত দেওয়া হয়েছে।
আর এই বাংলা বইটির অধ্যায় ‘রয়েছে নয়নে নয়নে’ শুরু এখান থেকেই। তবে এখানে তথ্য গুলি অন্য জায়গা থেকে নেওয়া হয়েছে। ঐ যে বললাম, গরুর রচনা কিভাবে লিখতে হয়, অনেকগুলো বই থেকে তথ্য নিয়ে, ঠিক সেই রকম। এই ব্যাপারটা সব সময় মাথায় রাখবেন কিন্তু। তাহলে উদাহরণগুলি দেখি।
দুই জায়গাতেই প্রথম দিকেই চোখের গঠনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, কেবল পার্থক্য একটাই। বাংলা বইতে জাফর ইকবালের বক্তব্য আর অন্য জায়গায় ডকিন্স কি বলেছেন সেই উদ্ধৃতি। আগেই শিখিয়েছি এই ট্রিক, আর ঠিক এই ভাবেই প্রয়োজন মত পাঠকের মানসিকতার সাথে সমতা রেখে রেফারেন্স পরিবর্তন করে নিতে হবে। আপনার বইয়ের পাঠক কারা সেটা আগে থেকে জানা ও তাদের বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
চলে যাই পরবর্তী অংশে।
পরবর্তী ধাপে অদ্ভুত ভাবে দুই জায়গাতেই একজন চিকিতসকের কথা। বাংলা বইটিতে যিনি লেখক তিনি নিজেই চিকিৎসক, তাই নিজের কথাই লিখলেন আর বিদেশী লেখাটিতে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের উক্তি। কিন্তু, এই চোখেই যে কত শত অসুখ হয় সেটা বোধহয় তিনি পড়েন নি, হয়ত বা উনি ইচ্ছে করেই নিজের পড়াশোনা বইয়ের একদম প্রথম দিকের অধ্যায়, যেখানে চোখের অ্যানাটমি ব্যাখ্যা করা হয়, সেইখানেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন।
পরবর্তী অনুচ্ছেদটি লক্ষ্য করুন। এটি একই ওয়েবসাইটের ভিন্ন একটি আর্টিকেল থেকে নেওয়া।
কেন অন্য একটি আর্টিকেল থেকে ধার করা হল, তার কারণ পরবর্তী কয়েকটি চিত্র দেখে তারপর ব্যাখ্যা করা যাবে।
প্রথম আর্টিকেল-এ খুব সংক্ষিপ্ত আকারে অনেকগুলি কথা তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু একটি কথা উল্লেখ করা হয়েছে, “This provides the rich blood supply needed for the very metabolically active retinal pigment epithelium (RPE).” দ্বিতীয় আর্টিকেল এই metabolically active কথাটা ব্যাখ্যা করে। আর এখানেই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয়। মনে করে দেখুন ছাত্রজীবনে গোরু রচনা লিখতে গিয়ে এই কাজটাই করতাম। যেখান দেখতাম আর একটু বিশদ বর্ণনা আছে, সেখানেই থেকেই একটু অংশ নিয়ে নিজের রচনার কলেবর বৃদ্ধি করতাম।
চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট ১১০ঃ 99% Chimp
এরবার একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কৌশল নিয়ে কথা বলবো। বাংলা বইটিতে একটি অধ্যায় আছে, নাম তার ‘দি মিথ অফ ১%’। লেখাটি মুলত অনুপ্রাণিত creation.com ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কয়েকটি আর্টিকেল থেকে। কিন্তু বোঝার উপায় নেই। আর্টিকেলগুলি নিম্নরূপ:
- The myth of 1%
- Is the human genome nearly identical to chimpanzee?—a reassessment of the literature
- Genomic monkey business—estimates of nearly identical human–chimp DNA similarity re-evaluated using omitted data
- The myth of ape-to-human evolution
যদিও অনুপ্রাণিত এবং তথ্যসুত্র হিসাবে এই আর্টিকেলগুলি উল্লেখ করা হয়নি, তবুও একে চৌর্যবৃত্তি বা plagiarism বলবো না। তার প্রথম কারণ কথাগুলি একটু এদিক ওদিক করা হয়েছে, হুবহু মিল নেই। আসুন কতকগুলি উদাহরণ দেখে নিই।
এখানে লক্ষ্য করে দেখুন, ১২৭ টি প্রোটিনের কথা যেখানে বলছেন, বিদেশী আর্টিকেল সেই একই কথা বললেও, বিদেশী আর্টিকেল বাক্য শেষে কোন তথ্যসুত্র উল্লেখ করে নি (যদিও জেরেমি টেইলর এর বক্তব্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা খানিক পরেই করা হয়েছে)। কিন্তু লেখক বুদ্ধি করে তথ্যসুত্র উল্লেখ করেছেন আর কত মিল আছে তার জায়গায় ১০০ থেকে ২০ বাদ দিয়ে ৮০ শতাংশ মিলের কথা লিখলেন।
শিক্ষণীয় বিষয় এটাই। এমনি করেই বুদ্ধি খাটাতে হবে। যদিও একটি বাংলা বই চৌর্যবৃত্তি বা plagiarism-এ ভর্তি থাকলে কেউ আপনাকে মারতে যাবে না, কিন্তু তবু আপনি দু-একটা জায়গা দেখিয়ে মুখ বাঁচাতে পারবেন।
চৌর্যবৃত্তি-ক্রেডিট অ্যাপেন্ডিক্সঃ গরমাগরম প্লেজিয়ারিজম
বোঝাই যাচ্ছে ডা রাফান আহমেদ creation.com-এর বিশেষ ভক্ত। এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিষ্ক্রিয় অঙ্গ নিয়ে একটি লেখায় সার্কুলার রিজনিং কথাটা উল্লেখ আছে।
এই ওয়েবসাইটে কয়েকটি আর্টিকেল লক্ষ্য করুন:
- Your appendix … it’s there for a reason
- The human vermiform appendix
- Appendix shrieks ‘Creation’ (at least 18 times!)
এই লেখাগুলির সাথে বেশ সাদৃশ্য আছে। তবে সব থেকে বেশী মিল যে লেখাটির সাথে সেই লেখা থেকে কিছু নমুনা লেখা যাক।
শেষ কথা
তাহলে আমরা দেখলাম ডাক্তার রাফান আহমেদ প্রণীত “হোমো স্যাপিয়েন্স: রিটেলিং আওয়ার স্টোরি” বইটির কিছু নির্বাচিত অংশ এবং সেই অংশগুলি মুলত কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে। দেখা গেলো, বইটির মূল অংশগুলি Jonathan Wells প্রণীত Icons of Evolution: Science or Myth? Why Much of What We Teach About Evolution Is Wrong থেকেই নেওয়া হয়েছে। এর অবশ্য একটি কারণ আছে। এই বিদেশী বইটি বিবর্তনের স্বপক্ষে বহুল প্রচলিত যে সমস্ত তথ্য এবং প্রমানগুলি ‘Icon’ হয়ে উঠেছে তার বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছে। তাই বিবর্তন বিরোধী যে সমস্ত বই প্রকাশিত হয়েছে creation.com অথবা Intelligent Design মতের প্রবর্তক Discovery Institute-এর মত সংস্থাগুলি থেকে, তার মধ্যে এই বইটিতে খুব সংক্ষেপে বিবর্তনের স্বপক্ষে যে সমস্ত প্রমানগুলি তুলে ধরা হয় তার প্রায় প্রত্যেকটি উল্লেখ করা হয়েছে। যেটুকু বাকি ছিল তা অন্যান্য কিছু উৎস থেকে নিয়ে ষোল কলা পূর্ণ করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।
যদি এই বই পড়ে মনে হয়, আরে বাপরে বাপ! কি এক খানা লেখা। কত তথ্য, কত রেফেরেন্স, কত জ্ঞান। তাহলে অবাক হবেন না। এই সমস্ত তথ্য এক জায়গায় এক সাথে পাওয়া যায়। বেশী ঘাঁটতে হবে না এদিক ওদিক। খৃষ্টান বিবর্তন বিরোধীরা তাদের সহকর্মীদের সুবিধার জন্য এই তথ্যগুলি তাদের ওয়েবসাইটে রেখে দেয়। এমন ওয়েবসাইট বহু আছে। তাদের মধ্যে জনপ্রিয় যেগুলো, তাদের নাম আপনি আগেই দেখেছেন।
একটি কথা ধার্মিকদের সাথে তর্কবিতর্ক করার সময় ধর্মহীনরা সবসময় বলে থাকে। সেটি হল, ‘ঈশ্বরের পক্ষে, ধর্মের পক্ষে বা ধর্মহীনতার বিপক্ষে, বিজ্ঞানের বিপক্ষে ধার্মিকরা যেসকল (কু)যুক্তি উপস্থাপন করে, সেগুলোতে কেবল ধর্মের নামটা পাল্টে দিলেই বা ‘x’ ব্যবহার করলেই ধর্মহীনদের কাছে বা ধর্মনিরপেক্ষদের কাছে সেগুলো সব একই শোনায়।’ এই কথাটা অন্য কেউ জানুক বা না জানুক, মানুক বা না মানুক, ধার্মিকরা কিন্তু ঠিকই জানে এবং মানে। আর তাই তো তারা একে অন্যের যুক্তি এভাবে ধার করে। সেক্ষেত্রে খ্রিস্টানরা একটু এগিয়েই বটে। হাজার বছর ধরে পিছিয়ে পড়া ধর্মের অনুসারীরা তাই তাদেরটাই ধার করে। খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা গেছে উল্টোটা ঘটতে। আর এই লেখক তো সেটিকে প্র্যাকটিক্যাল রূপ দিয়ে রীতিমত ব্যবসায় পরিণত করে ফেলেছেন। ইনি খুব ভাল করেই জানেন যে, খ্রিস্টানরা যা যা বলে, কেবল ধর্মের নাম পাল্টে দিলে, ধর্মগুরুর নাম পাল্টে দিলে, ঈশ্বরের নাম পাল্টে দিলেই নিজের ধর্মের বেলায় ইনি সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন আর স্বল্পশিক্ষিত পাঠকরা সেগুলো চিন্তাও করতে পারবে না, উৎস খোঁজা তো অনেক দূরের কথা। দুঃখের বিষয় হল, দুষ্টু নিধার্মিকগুলো বড্ড বেশি বেরসিক। তারা আগেই ওদের সাথে তর্ক বিতর্ক করতে করতে ঝানু হয়ে গেছে বিধায় এগুলো শুনলে আর নতুন লাগে না তাদের কাছে।
একটা খুবই অবাক করা ব্যাপার, এই বইটির শুরুতেই প্রাচীন আরবি এবং ইসলামি সভ্যতা, শিক্ষা-দীক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি নিয়ে অনেক বড়াই করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেলো যখন কপি করা হয়েছে তখন খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন উৎস থেকেই এই বইটির মূল কথাগুলি নেওয়া হয়েছে। মান সম্মান তো আর কিছু লেখক বাকি রাখলেন না। আবার দিনশেষে বলবেন ‘নাস্তিকরা ইহুদিনাসারা খ্রিস্টান মিশনারিদের টাকায় চলে’! তা বলুক, কিন্তু যদি জবাবে বলে বসেন যে, ‘একই টপিকে একই যুক্তি, একই তথ্য, একই প্রমাণ এমনকি একই উদাহরণ দুইজন আলাদা আলাদা লেখকের মাথায় আলাদা আলাদাভাবে এসেছে’ তাহলে আসলে কচু গাছে দড়ি দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
এখানে মূলত সেই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলিই উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে উল্লিখিত বইগুলির সাথে সাদৃশ্য আছে কিন্তু তথ্যসুত্রে সেই বইগুলি বা লেখাগুলির উল্লেখ করা হয়নি। এই অংশগুলির উপরেই দাঁড়িয়ে আছে বইটির ভিত্তি। আরও খুঁজলে আরও সাদৃশ্য ধরা পড়ত নিশ্চিতভাবেই। কিন্তু এখানে যে যে অংশগুলি উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে এই কথা পরিষ্কার যে “হোমো স্যাপিয়েন্স” চৌর্যবৃত্তি বা প্লেজিয়ারিজম দোষে দুষ্ট এবং এর মূল বক্তব্যই ‘খ্রিস্টান মিশনারিদের’ থেকে চুরি করা। সত্যিকার অর্থে এভাবে মেধাসত্ত্ব না দিয়ে বিদেশি লেখকদের লেখা চুরি করে বই লিখে অনেকেই বাংলা ভাষায় অর্থ উপার্জন করছে, কিছু মূর্খ অশিক্ষিত লোকের বাহাবা কুড়াচ্ছে, কিন্তু এরা নিজেরাই যখন অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে, তখন হাতে কলমে প্রমাণ করে দিতে হয়, তারা নিজেরাই কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকতে গিয়ে শরীরের নিম্নাঙ্গ উদোম করে রেখে বসে আছে। নিচের স্ট্যাটাসটি দেখুন-
এই লেখাটির উদ্দেশ্য “হোমো স্যাপিয়েন্স: রিটেলিং আওয়ার স্টোরি” বইটির কোন সমালোচনা নয় অথবা যে যে আর্গুমেন্ট এই বইটিতে আনা হয়েছে তার উত্তর দেয়া নয়। কারণ, যেহেতু এই বইটি কোনও মৌলিক বক্তব্য উপস্থাপন করে না তাই আলাদা করে ডিবাঙ্ক করার কোনও প্রয়োজন এবং যোগ্যতা আছে বলে আমরা মনেই করি না। প্রায় চার শত টাকা মূল্য দিয়ে এই দুই শত পৃষ্ঠার বইটি যারা কিনেছেন তাদের জন্য রইল এক রাশ সমবেদনা।
তথ্যসূত্র
- মূল বইটি, যেখান থেকে বড় অংশ কপি করা হয়েছে [↑]
- Gura, T. Bones, molecules…or both?. Nature 406, 230–233 (2000). [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"
তারা Jonathan wells এর বইটা debunked চায়,তারা সেটা এখানে পাবে-http://www.talkorigins.org/faqs/wells/
একি লেখকের আরেকটা বই-http://pandasthumb.org/archives/2006/08/the-politically.html
যারা, ট্রু অরিজিন লিংক দিবেন না পড়ে,তাদের জন্য-https://rationalwiki.org/wiki/TrueOrigin
CreationWiki, ট্রু অরিজিন এর de facto succesor-https://rationalwiki.org/wiki/CreationWiki
শুরুতে যারা হবে, শেষে যারা এর পরে কমা হবে না।
@Hasibul ashraf, Thanks a ton… You rock, as always…
thanks
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের চৌর্য্যবৃত্তির সত্যতা নিয়ে একটা লেখা চাই। জানি এটা অফ টপিক
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের চৌর্য্যবৃত্তির সত্যতা নিয়ে একটা লেখা চাই, যদিও অফ টপিক
lol,rafan ahmed is now claiming we lied by taking our posts out of context.
Oh really??? So, in other words, he agrees that he has copied from Christian Missionaries… that is what we were claiming.
I saw Rafan made a post about this in his blog. You may like to reply to his thoughts as well, although I am doubtful how worthwhile that might be