সম্পাদকীয়মানবাধিকারযুক্তিবাদ

ইসলামি শরিয়তে ধর্ষণের শাস্তি

Table of Contents

ভূমিকা

ইসলামি শরিয়তে ধর্ষণ কীভাবে সংজ্ঞায়িত, বিচারিত এবং প্রমাণিত হয়— এই প্রশ্নটি শুধু ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনাই নয়, সরাসরি মানবাধিকার ও নারীর নিরাপত্তার প্রশ্ন। আধুনিক আইনে ধর্ষণ এমন একটি অপরাধ যেখানে ভিক্টিমের ইচ্ছা, সম্মতি, নিজের শরীরের ওপর স্বায়ত্তশাসন, এবং মানবাধিকার— সবকিছুর মূল্য অপরিহার্য। কিন্তু ইসলামের শাস্ত্রীয় আইনব্যবস্থায় যৌন অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে “যিনা” বা “অবৈধ যৌনাচার”— একটি মধ্যযুগীয় শ্রেণীকরণ, যা নারীর বিরুদ্ধে বলপূর্বক যৌন সহিংসতাকে আলাদা অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িতই করে না। যৌন সহিংসতা নয়— বরং ইসলামী ফিকহে জিনা একটি নৈতিক অপরাধ, যেখানে রাষ্ট্রের উদ্বেগ নারীর নিরাপত্তা নয়, বরং পিতৃতান্ত্রিক নৈতিক মানদণ্ড রক্ষা করা। কারণ নারীর সম্ভ্রম পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের মান সম্মানের বিষয়বস্তু।

এই প্রবন্ধে আমরা দেখব—ইসলামে ধর্ষণকে কখনো আধুনিক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে ধর্ষণ বা Rape হিসেবে দেখা হয়নি; বরং তা হয় “জোরপূর্বক যিনা” নামে শ্রেণীকরণ করা হয়েছে, যেখানে ভিক্টিমের জন্য বিচার পাওয়া কার্যত অসম্ভব। চারজন পুরুষ প্রত্যক্ষদর্শী, সাক্ষ্যের কঠোর মানদণ্ড, নারীর সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য হওয়া, DNA-সহ আধুনিক প্রমাণ প্রত্যাখ্যান, বৈবাহিক ধর্ষণের বৈধতা, যুদ্ধবন্দী নারীর দেহকে গনিমতের মাল ঘোষণা, এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের বৈধতা— সবকিছু মিলে শরিয়ার ধর্ষণ-বিষয়ক বিধানগুলো বাস্তবে ভিক্টিমকে রক্ষা করার বদলে অপরাধীকে রক্ষা করার জন্যই ডিজাইন করা হয়েছে।

ইসলামি শরিয়া আইন “ধর্ষণকে” একটি স্বাধীন অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেনি— এটি মূলত ব্যক্তিগত ইচ্ছার বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতা নয়, বরং “যিনা” নামক নৈতিক অপরাধের এক উপশ্রেণী— যেখানে ভিক্টিমকে পর্যন্ত অভিযুক্ত করে শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে, যদি সে প্রমাণ হাজির করতে না পারে। ঐতিহাসিকভাবে এই আইনগুলোর ফলে অসংখ্য নারী শাস্তি পেয়েছে, অপবাদ ভোগ করেছে, আর প্রকৃত ধর্ষকেরা সামাজিক, ধর্মীয় ও আইনি সুরক্ষা পেয়েছে।

এই প্রবন্ধে প্রতিটি বিরোধ, প্রতিটি ফাঁকফোকর, প্রতিটি অমানবিক বিধান— প্রমাণসাপেক্ষে, সহিহ হাদিস, কোরআন ও ক্লাসিকাল তাফসীরের আলোকে— গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হবে। উদ্দেশ্য কোনো সেনসেশন তৈরি করা নয়; বরং পাঠককে দেখানো যে— মধ্যযুগীয় শরিয়া আইনে ধর্ষণের বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ, অমানবিক, এবং আধুনিক মানবাধিকারের ধারণার সঙ্গে মৌলিকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।


ধর্ষণের সংজ্ঞা

আধুনিক অপরাধবিদ্যা ও মানবাধিকার আইনে ‘ধর্ষণ’ বলতে বোঝানো হয় কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা, সম্মতি ও দেহগত স্বায়ত্তশাসন উপেক্ষা করে বলপূর্বক বা চাপ সৃষ্টি করে তার শরীরে যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানো। ভুক্তভোগীর স্পষ্ট সম্মতি যে কোনো যৌনসম্পর্কের মৌলিক শর্ত— এবং এই সম্মতি অনুপস্থিত থাকলে, তা শারীরিক শক্তি, প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার, ব্ল্যাকমেইল, মানসিক জবরদস্তি বা ভুক্তভোগীর সম্মতিদান-অক্ষমতার (যেমন অচেতনতা, শিশুকাল, প্রতিবন্ধকতা) কারণে হোক— সব ক্ষেত্রেই এই অপরাধকে ধর্ষণ বলে গণ্য করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন এবং সমসাময়িক আইনি মত অনুযায়ী, ধর্ষণের সংজ্ঞায় মূল গুরুত্ব দেওয়া হয় informed consent— অর্থাৎ বুঝে শুনে স্বেচ্ছাসম্মতি— কারণ যৌন সম্পর্ক মানবদেহের সর্বোচ্চ ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়। সুতরাং কোন নারী বা পুরুষ যদি সম্মতি না দেয়, অথবা সম্মতি দেওয়ার আইনি ও মানসিক সক্ষমতা না থাকে, তাহলে যেকোনো যৌন অনুপ্রবেশ ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই সংজ্ঞা প্রতিটি সভ্য আধুনিক গণতান্ত্রিক আইনব্যবস্থায় অপরিবর্তনীয়। কারণ এটি ভুক্তভোগীর অধিকার, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও মানবিক স্বীকৃতিকে কেন্দ্র করে গঠিত। কিন্তু পরবর্তী অংশে আমরা দেখব— ইসলামী শরিয়তের ধর্ষণ-সংজ্ঞা এই মৌলিক মানবিক নীতিগুলোর সাথে সরাসরি বিরোধে অবস্থান করে।

আর সাধারণ ভাষায় ‘ধর্ষণ’ হচ্ছে যৌন আক্রমণ। একজন ব্যক্তির ইচ্ছা এবং অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্যভাবে চাপ প্রদান, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ব্ল্যাকমেইলিং কিংবা ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে। অনুমতি প্রদানে অক্ষম (যেমন- কোনো অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি) এরকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যেকোন অবস্থায় যৌনমিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত। [1] [2] [3]

উপরে ধর্ষণের যেই সংজ্ঞা আমরা জানলাম এবং সেখান থেকে এটি স্পষ্ট যে, সম্পূর্ণ ইচ্ছায় এবং সম্মতিতে দুইজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ যৌনকর্ম করতে পারে। প্রত্যেকে তার নিজ ইচ্ছা অনুসারে পছন্দের মানুষ বেছে নেবে, এবং তার সাথে প্রেম, ভালবাসা বা যৌন সম্পর্ক করবে, এটি তার অধিকার। এক্ষেত্রে তাদের ওপর কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। এগুলো ছাড়া, যেকোন অবস্থাতেই, ইচ্ছা বা সম্মতি ছাড়া, কোন ধরনের ভয়ভীতি কিংবা ক্ষতির সম্ভাবনা সৃষ্টি করে, চাপ প্রদান করে, ব্ল্যাকমেইল করে, ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে, অথবা অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যারা সম্মতি দানে অক্ষম বলে গণ্য, তাদের সাথে যদি যৌনকর্ম করা হয়, সেটিকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করতে হবে।


ধর্ষণের সংজ্ঞার পরিবর্তন

ধর্ষণের সংজ্ঞা ইতিহাসে কখনোই স্থির বা অপরিবর্তনীয় ছিল না; বরং সমাজ, আইনব্যবস্থা, নৈতিকতা, ক্ষমতার কাঠামো এবং লিঙ্গসম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সাথে সাথে এই সংজ্ঞাও বদলেছে। আধুনিক অপরাধবিজ্ঞানে ধর্ষণ বলতে বোঝানো হয়— কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা ও সম্মতি ব্যতীত, বলপ্রয়োগ, জবরদস্তি, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা কিংবা ভুক্তভোগীর সম্মতি দেওয়ার অক্ষমতা (যেমন: অচেতন অবস্থা, শিশুকাল, মানসিক প্রতিবন্ধকতা) ব্যবহার করে তার শরীরে যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানো। কিন্তু মানবসভ্যতার দীর্ঘ ইতিহাসের তুলনায় এই ধারণা খুবই সাম্প্রতিক; কার্যত ২০শ শতকে এসে তবেই প্রাধান্য পায়। বহু শতাব্দী ধরে ধর্ষণকে কখনো নৈতিক অপরাধ, কখনো পুরুষের “সম্পত্তির” ওপর আক্রমণ, কখনো “নারীর পবিত্রতা” লঙ্ঘন, কখনো আবার জাতিগত ও বর্ণগত সীমানা অতিক্রমের অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে ধর্ষণের সংজ্ঞার বিবর্তন আসলে আইনি টেক্সটের বিবর্তনের চেয়ে বেশি— এটি সমাজে নারীর অবস্থান ও মানবিক মর্যাদা নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের আয়না।

উদাহরণ হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বের আইনব্যবস্থাকেই ধরা যেতে পারে। ১৯৭৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্য প্রথমবারের মতো স্পষ্টভাবে স্বীকার করে যে, স্বামীও স্ত্রীর উপর ধর্ষণ করতে পারে এবং বৈবাহিক ধর্ষণ বা marital rape–কে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে। এর আগে প্রচলিত আইন ধরে নিত— বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রী একবার “consent” দিয়েছে, এরপর তার আলাদা করে “না” বলার অধিকার নেই; স্বামীর যৌনপ্রবেশ আইনত ধর্ষণ গণ্য হবে না। ১৯৯৩ সালের মধ্যে সব অঙ্গরাজ্য নিজেদের আইন পরিবর্তন করে marital rape–কে সরাসরি অপরাধের তালিকাভুক্ত করে, কিন্তু তার আগ পর্যন্ত অধিকাংশ জায়গায় স্বামীর দ্বারা স্ত্রীর উপর ধর্ষণ আইনত স্বীকৃত অপরাধই ছিল না। অর্থাৎ বিয়ের ভেতরে একজন নারীর দেহগত স্বায়ত্তশাসন আইনের দৃষ্টিতে অস্বীকৃত ছিল। একইসাথে একজন মানুষ যে যেকোন সময়ে চাইলে তার কনসেন্ট ফিরিয়ে নিতে পারে, সেই অধিকারও অস্বীকৃত ছিল।

একইভাবে ১৯৫০–এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে বর্ণবাদী আইন বলবৎ ছিল, যেখানে কোনো শ্বেতাঙ্গ নারী যদি স্বেচ্ছায় কোনো কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের সাথে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হতো, তখন সেটিকেও আইনিভাবে “ধর্ষণ” হিসেবে চিহ্নিত করা হত। এখানে অপরাধ আসলে সম্মতির অভাব নয়; অপরাধ ছিল “জাতিগত বিশুদ্ধতা” লঙ্ঘন এবং বর্ণভিত্তিক ক্ষমতার কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করা। ফলে দেখা যায়— ধর্ষণের সংজ্ঞা বহু যুগ ধরে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কর্তৃত্ব কাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, এবং সেখানে প্রকৃত ভুক্তভোগীর মানবিকতা বা স্বায়ত্তশাসনের প্রায় কোনো মূল্যায়ন ছিল না।

এই রকম বিকৃত ও ভিক্টিম-ব্লেমিং সংজ্ঞার দীর্ঘ ছায়া এশিয়াতেও দেখা যায়। বাংলাদেশের আইনেও এখনও ঔপনিবেশিক আমলের বহু বর্বরতা অটুট রয়েছে। “সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২”-এর ১৫৫(৪) ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে— ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত পুরুষের পক্ষে এটা প্রমাণ করা যেতে পারে যে অভিযোগকারিণী “সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা নারী” (was of generally immoral character)। ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া সম্পাদিত সাক্ষ্য আইন গ্রন্থের ৬৭৪ পৃষ্ঠায় এই বিধানটি হুবহু উদ্ধৃত আছে—

When a man is prosecuted for rape or an attempt to ravish, it may be shown that the prosecutrix was of generally immoral character.

এই ধারণাটি ভয়াবহভাবে নারী-বিদ্বেষী, কারণ এটি ভুক্তভোগীর উপরই নিজের চরিত্র প্রমাণের দায়বদ্ধতা চাপিয়ে দেয়। যেন একটি নারী “দুশ্চরিত্রা” হলে, তার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া সহিংসতা আর সহিংসতা থাকে না; বরং সে নিজেই “যোগ্য ভিক্টিম”— তাই তার আর সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার নেই! পৃথিবীর কোনো আধুনিক ও মানবিক আইনব্যবস্থায় ভুক্তভোগীর নৈতিক অবস্থান— সে যৌনকর্মী হোক, অন্য সম্পর্কযুক্ত হোক, বা বারবার সঙ্গী পরিবর্তন করুক— ধর্ষণের প্রশ্নে কোনো প্রাসঙ্গিক ফ্যাক্টর হতে পারে না। কারণ যৌনসম্পর্কের একমাত্র মৌলিক শর্ত হলো সম্মতি। একজন দেহব্যবসায়ী প্রতিদিন দশজন ক্লায়েন্টের সাথে স্বেচ্ছায় যৌনসম্পর্কে যেতে পারে, কিন্তু যদি সে একজনকেও স্পষ্টভাবে “না” বলে, এবং তারপরও তাকে জোর করে— সেটি নিঃসন্দেহে ধর্ষণ। অথচ বাংলাদেশের আইন এখনো এমন ধারার অস্তিত্ব মেনে নিয়েছে, যেখানে ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে নারী নিজেই আবার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যায়।

এর বিপরীতে, বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার আন্দোলন, নারীবাদী রাজনীতি এবং আইনি সংস্কারের দুর্দান্ত চাপের ফলে ধীরে ধীরে একটি অপেক্ষাকৃত প্রগতিশীল, ভিক্টিম–সেন্ট্রিক সংজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), Interpol, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) — এদের সংজ্ঞায় ধর্ষণের মূল নির্ধারক হল কনসেন্ট বা সম্মতি (consent); এবং consent অনুপস্থিত থাকলে যে কোনো যৌনসম্পর্কই অপরাধ, তা বিবাহের ভেতরে হোক, বাইরে হোক, ভিন্ন বর্ণের মধ্যে হোক বা একই বর্ণের মধ্যে হোক, নারীর “চরিত্র” কেমন— তা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক।

কিন্তু ইসলামী শরিয়ায় “ধর্ষণ” কোনো স্বতন্ত্র ও স্বাধীন অপরাধ হিসেবে গড়ে ওঠেনি; বরং এটি “যিনা” নামক নৈতিক অপরাধের একটি উপশ্রেণী হিসেবে স্থান পেয়েছে। সেখানে প্রশ্নটি ভিক্টিমের অধিকার নয়, বরং “বিয়ে-বহির্ভূত যৌনসম্পর্ক” ঘটেছে কি না— তা নিয়ে। ৭ম শতকের আরব সমাজে যেভাবে এই ধারণা ফিকহের বইয়ে বন্দী করা হয়েছে, অনেক ইসলামি আলেমের মতে, সেই সংজ্ঞা কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে; কারণ কোরআন-হাদিস সমর্থিত ফিকহি বিধানকে মানব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী “রিফর্ম” করা তাদের দৃষ্টিতে ঈমানবিরোধী। ফলাফল দাঁড়িয়েছে এই যে— আধুনিক আইনব্যবস্থা যেখানে ধর্ষণকে ভিক্টিমের দৃষ্টিকোণ থেকে, consent-এর ওপর ভিত্তি করে সংজ্ঞায়িত করছে, সেখানে ইসলামী শরিয়ার ধর্ষণ–সংজ্ঞা এখনও মূলত একটি নৈতিক অপরাধ, যেখানে ভিক্টিম নিজেই আসামিতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

PEW Research Center–এর জরিপে দেখা যায়— মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বহু দেশে সাধারণ মুসলিমদের বড় একটি অংশ শরিয়াকে রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক আইন হিসেবে বাস্তবায়িত দেখতে চায়, যদিও তাদের উল্লেখযোগ্য অংশই জানে না— শরিয়াতে ধর্ষণকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, এবং বাস্তবে নারীরা এই আইনের অধীনে কী ধরনের অমানবিক বাধা ও ঝুঁকির মুখোমুখি হয়। [4]

যেখানে পৃথিবীজুড়ে ধর্ষণের সংজ্ঞা আধুনিক মানবাধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিবর্তিত হয়েছে, সেখানে ইসলামে তা শতাব্দীর পর শতাব্দী অপরিবর্তিত থেকে গেছে। এ কারণেই আধুনিক বিচারব্যবস্থা ও ইসলামী শরিয়ার মধ্যে মৌলিক সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে— এবং এই সংঘাতের প্রধান মূল্য দিতে হচ্ছে ধর্ষিত নারী, শিশু ও প্রান্তিক মানুষদের।

ধর্ষণ 1

ধর্মীয় রক্ষণশীল সমাজগুলোর আরেকটি বড় সমস্যা হলো— তারা বিশ্বাস করে আল্লাহ ও তার রাসুল যে আইন ৭ম শতকের আরবে প্রণয়ন করেছেন, সেটিই চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয়। তাদের দৃষ্টিতে এই আইনকে “হালনাগাদ” করা, নতুন সামাজিক বাস্তবতার সাথে মানানসই করে “সংস্কার” করা বা নতুন নৈতিক মানদণ্ডের সাথে খাপ খাওয়ানো— সবই এক ধরনের বিকৃতি বা “বিদআত”। আবার আল্লাহর আইন পরিবর্তন তো সরাসরি কুফরি। ফলে ধর্ষণের মতো একটি আধুনিক মানবাধিকারভিত্তিক অপরাধকে যৌক্তিক, সম্মতিনির্ভর দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করাই তাদের কাছে ধর্মদ্রোহের শামিল। এই অন্ধ নীতিনিষ্ঠতা এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করে যেখানে অনেক ধরনের যৌন সহিংসতা ধর্মীয় ব্যাখ্যায় ধর্ষণ হিসেবেই বিবেচিত হয় না— যেমন: বৈবাহিক ধর্ষণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, শিশুর প্রতি যৌন নিপীড়ন, যুদ্ধবন্দী নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক যৌনসম্পর্ক, কিংবা ধর্মীয় অনুমতিপ্রাপ্ত দাসপ্রথার আওতায় যৌন শোষণ— এসবকেই ধর্মতত্ত্ব “ধর্ষণ” হিসেবে গণ্য করে না।

ফলে ধর্মান্ধ-নিয়ন্ত্রিত রক্ষণশীল দেশগুলোতে প্রকৃত ধর্ষণের ঘটনা কম হয় না, বরং কাগজে-কলমে রিপোর্টই হয় কম। ধর্মীয় শাস্তির ভয়, সমাজের কুপমণ্ডূকতা, সতীত্ব ও সম্মানের ভ্রান্ত ধারণা, পারিবারিক মর্যাদা, ভিক্টিমকেই অপরাধী বানানোর সংস্কৃতি— সব মিলিয়ে নারীরা অভিযোগ করতেই ভয় পান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষিত নারীই অভিযুক্ত হন “চরিত্রহীনতা”, “অসতীত্ব”, “পোশাকের দোষ”, বা “পুরুষকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা” ইত্যাদি অভিযোগে। এমনকি পরিবারও সামাজিক লজ্জার ভয়ে মেয়েকে পুলিশে নিতে চায় না। ফলে রক্ষণশীল দেশগুলোতে পরিসংখ্যানের খাতা কখনো প্রকৃত বাস্তবতাকে প্রকাশ করে না।

এর ঠিক বিপরীতে, পশ্চিমা দেশগুলোতে— যেখানে রাষ্ট্র মানবাধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতাকে কেন্দ্র করে আইন গঠন করেছে— সেখানকার নারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাধীন, বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে সক্ষম। গণপরিবহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি যৌন হয়রানি বা আক্রমণ ঘটে— তারা সেটি রিপোর্ট করে। সমাজের ভয়ে থেমে যায় না। সমাজ তাদের দোষী করে না, বরং ভিক্টিমকে সুরক্ষা দেয়। ফলে সেখানে রিপোর্টের সংখ্যা বেশি মনে হলেও— বাস্তবে তা অপরাধ কম বেশি হওয়ার প্রমাণ নয়; বরং রিপোর্টিং সিস্টেমের শক্তিশালী হওয়ার প্রমাণ।

কিন্তু ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এই পার্থক্যটিই ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করে। তারা বলে বেড়ায়— “পশ্চিমে নাকি ধর্ষণ বেশি”— অথচ বাস্তবতা হলো:
রক্ষণশীল ধর্মীয় সমাজে ধর্ষণ কম ঘটে না; বরং কম রিপোর্ট হয়। এই ভুয়া তুলনার মাধ্যমে তারা নারীদের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে— বিশেষ করে তাদের পোশাক, চলাফেরা, স্বাধীনতা ও জনসমক্ষে উপস্থিতির উপর। যেন সমস্যার মূল অপরাধী পুরুষ নয়— বরং নারীই; এবং তাকে নিয়ন্ত্রণ করলেই নাকি ধর্ষণ কমবে।

এ কারণেই ধর্ষণের সংজ্ঞা, রিপোর্টিং মেকানিজম, সামাজিক কলঙ্ক, রাষ্ট্রের ভূমিকা এবং ধর্মীয় বিধানগুলোর প্রভাব— এসব বিবেচনা না করে দুই ধরনের সমাজের ধর্ষণের পরিসংখ্যান তুলনা করা সম্পূর্ণ ভুল। ভিন্ন আইনব্যবস্থা, ভিন্ন সামাজিক চাপ, ভিন্ন রিপোর্টিং প্রক্রিয়া, ভিন্ন লজ্জাবোধ, এবং ভিন্ন মানবাধিকার কাঠামো— সবকিছু আলাদা হলে দুই সমাজকে এক স্কেলে মাপা যায় না। শুধুমাত্র সংখ্যা দেখে দাবি করা— “ধর্মীয় সমাজে ধর্ষণ কম, পশ্চিমে বেশি”— এটি একটি ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর, তথ্যবিকৃত, এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক প্রচার, যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।


নারীর সম্পর্কে সামাজিক ধারণা

অপরাধবিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব এবং নারীবাদী তত্ত্ব— প্রায় সব ক্ষেত্রেই একটি বিষয়ে প্রায় ঐকমত্য রয়েছে যে, ধর্ষণ যতটা না “যৌন চাহিদা পূরণের” ঘটনা, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা প্রদর্শন, প্রাধান্য দেখানো এবং অধিকারবোধ চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনা। একধরনের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এখানে কাজ করে— “আমি পুরুষ, তাই আমি ক্ষমতাবান; আমার শরীর, আমার আকাঙ্ক্ষা, আমার ইচ্ছা— এগুলোর তুলনায় নারীর ইচ্ছা গৌণ।” নারীকে মানুষ হিসেবে নয়, বরং মূলত পুরুষের “সন্তুষ্টি ও স্বস্তি” দেওয়ার জন্য সৃষ্ট সেবিকা ও ভোগ্যবস্তু হিসেবে কল্পনা করা— এই ধারণাই ধর্ষণের অন্যতম প্রধান ও মৌলিক শিকড়।

ধর্ষণের সবচেয়ে বড় প্রেক্ষাপট তাই শুধু ব্যক্তিগত নৈতিকতা নয়, বরং নারী সম্পর্কে সামাজিক ও ধর্মীয় ধারণা। যখন সমাজ একটি অর্ধেক জনগোষ্ঠী— অর্থাৎ নারীকে— ধারাবাহিকভাবে “ভোগ্যপণ্য”, “অবলা”, “অক্ষম”, “দুর্বল”, “পরনির্ভরশীল”, “কুটিল”, “অপূর্ণাঙ্গ”, “অধীনস্ত” এবং সর্বোপরি “ঊনমানুষ” হিসেবে আঁকতে থাকে, তখন যৌন সহিংসতার জন্য একটি স্বাভাবিকীকৃত পরিবেশ তৈরি হয়। মুসলিম সমাজে ক্লাসিকাল ইসলামি শিক্ষার পাঠ্যবস্তুতে নারীর যে চিত্র আঁকা হয়— তা নারীর জন্য গভীরভাবে অবমাননাকর এবং অসম্মানজনক। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে, এই ধর্মীয় ও সামাজিক ধারণাগুলোই ধর্ষণের মতো অপরাধকে নৈতিকভাবে জাস্টিফাই করার, অন্তত স্বাভাবিক মনে করার, একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক ভিত্তি তৈরি করে।

একজন শিশুকে যখন খুব ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়— “নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের একাকীত্ব কাটানোর জন্য”, “স্ত্রী হলো স্বামীর আনন্দের উৎস”, “নারী হলো পুরুষের বিনোদনের সামগ্রী, শস্যক্ষেত্র, উৎপাদনযন্ত্র”— তখন সেটি কেবল একটি ধর্মীয় বাক্য হিসেবে থাকে না; বরং ধীরে ধীরে তার একটি গভীর মানসিক কাঠামো তৈরি হয়। নারী তখন তার চোখে হয়ে ওঠে একটি খেলনা— একটি শস্যক্ষেত্র, যেখানে যেভাবে ইচ্ছা “চাষাবাদ” করা যায়; একটি শরীর, যার প্রধান “কাজ” হচ্ছে সন্তান উৎপাদন ও পুরুষের যৌনতৃপ্তি নিশ্চিত করা। এই নারীর সঙ্গে সে স্বাভাবিকভাবে বন্ধুত্ব করতে শেখে না, খেলাধুলার সঙ্গী হিসেবে দেখে না, সমান অংশীদার হিসেবে কল্পনাও করে না।

ফলে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়— নারীর স্থান ঘরের ভেতর, অন্দরমহলে, রান্নাঘরে, বিছানায়; পুরুষের স্থান বাইরের জগতে, রাস্তায়, অফিসে, ক্ষমতার কেন্দ্রে। পুরুষকে শেখানো হয়, সে স্ত্রীকে “প্রহার করতে”, “শাসন করতে”, “নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে” পারে; নারীর শরীর ঢেকে রাখতে হবে, মাথা নিচু করে চলতে হবে, সর্বক্ষণ “লজ্জা” প্রদর্শন করতে হবে। এভাবে যখন প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শেখানো হয় যে, নারীকে সবসময় আয়ত্তে রাখতে হবে— তখন তা শুধু সামাজিক চর্চা থাকে না, বরং যৌন সহিংসতারও নীরব অনুমোদনে পরিণত হয়। কারণ যে মানুষকে শৈশব থেকে শেখানো হয়, “তুমি প্রাকৃতিকভাবেই নারীর থেকে উঁচু, তুমি রক্ষক এবং ভক্ষক, তারা ভোগ্য, তাই তুমিই শ্রেষ্ঠ”— সে বড় হয়ে এই শ্রেষ্ঠত্বকে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ করবেই।

একটি মেয়ের অধিকার রয়েছে নিজের ইচ্ছামতো জীবন বেছে নেওয়ার, নিজের ইচ্ছামতো পোশাক পরার এবং পছন্দের মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ার। কিন্তু রক্ষণশীল ধর্মীয় ও সামাজিক মানসিকতায় এই অধিকারকে স্বীকার করা হয় না। একজন নারী যদি শর্টস বা শারীরিক সৌন্দর্য দৃশ্যমান এমন পোশাক পরে, অনেক ধর্মান্ধ পুরুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধরে নেয়— “এই মেয়েটা নিশ্চয়ই চরিত্রহীন বা বেশ্যা।” ফলে তার “না” বলার অধিকারকে মানসিকভাবে অকার্যকর ধরে নেওয়া হয়।

এই পুরুষ যে শিক্ষা পায়, তা হলো— “নারী মূলত পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্যই সাজে”, “যদি সে শরীর দেখিয়ে পোশাক পরে, তাহলে নিশ্চয়ই সে চায় কেউ তার কাছে আসুক।” ফলে সেই পুরুষের মনে জন্মায় এক ধরনের যৌন অধিকারবোধ— সে ভাবতে থাকে, “আমি চাইলে তাকে পেতেই পারি; তাকে তো আমার আহ্বানে সাড়া দেওয়াই উচিত।” যখন সে মেয়েটির কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান পায়, তখন সেটি শুধুই একটি “না” হিসেবে দেখা হয় না; বরং এটি তার পুরুষত্বের ওপর আঘাত হিসেবে অনুভূত হয়।

শৈশব থেকে তাকে শেখানো হয়েছে— “তুমি পুরুষ, তাই তুমি শ্রেষ্ঠ; তোমার একটি পুরুষাঙ্গ আছে বলেই তুমি ক্ষমতাশালী।” এই অযৌক্তিক গর্ব এবং লিঙ্গ-শ্রেষ্ঠত্ববোধ মিলে যখন আহত অহমের সাথে একত্রিত হয়, তখন সে নিজের “পুরুষত্ব” প্রমাণের উপায় হিসেবে নারীর শরীরকে ব্যবহার করে। ধর্ষণ তখন তার কাছে শুধুই “যৌন তৃপ্তি” নয়; বরং “নিজেকে প্রমাণ করা”, “দেখিয়ে দেওয়া”— সে নারীর উপর কতটা আধিপত্য বিস্তার করতে পারে।

এবার দেখা যাক, ইসলামি শিক্ষায় নারীকে কীভাবে ফ্রেম করা হয়েছে। কেবল সামাজিক প্রচলিত ধারণা নয়, বরং ধর্মীয় টেক্সট নিজেই নারীর একটি নির্দিষ্ট, অধীনস্ত, ভোগ্য এবং বিপজ্জনক সত্তার চিত্র নির্মাণ করে। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য এই লেখাটি দেখতে পারেন। [5] [6] [7] [8] [9] [10] [11]

তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।
সুরা আল বাকারা আয়াত ২২৩

তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে; আর তার থেকেই তৈরী করেছেন তার জোড়া, যাতে তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে।
সুরা ৭ আয়াত ১৮৯ 

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান
পরিচ্ছদঃ ৯. মহিলাদের সম্পর্কে ওসিয়ত
৩৫১২। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবন নুমায়র আল-হামদানী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়া উপভোগের উপকরণ (ভোগ্যপণ্য) এবং দুনিয়ার উত্তম উপভোগ্য উপকরণ পুণ্যবতী নারী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান
পরিচ্ছদঃ ৯. মহিলাদের সম্পর্কে ওসিয়ত
৩৫১৩। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নারী পাজরের হাড়ের ন্যায় (বাঁকা)। যখন তুমি তাকে সোজা করতে যাবে তখন তা ভেঙ্গে ফেলবে আর তার মাঝে বক্রতা রেখে দিয়েই তা দিয়ে তুমি উপকার হাসিল করবে।
যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … (যুহরীর ভ্রাতুষ্পুত্র তার চাচা যুহরীর সুত্রে) (উপরোক্ত সনদের ন্যায়) ইবনু শিহাব (রহঃ) সুত্রে অবিকল অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ৩০/ কলহ-বিপর্যয়
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৩০/১৯. নারীদের সৃষ্ট বিপর্যয়
১/৩৯৯৮। উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিক বিপর্যয়কর আর কিছু রেখে যাবো না।
সহীহুল বুখারী ৫০৯৬, মুসলিম ২৮৪০, ২৮৪১, তিরমিযী ২৮৮০, আহমাদ ২১২৩৯, ২১৩২২, সহীহাহ ২৭০১। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২/ ঈমান
পরিচ্ছদঃ ২১/ স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা 
২৮। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। (আমি দেখি), তার অধিবাসীদের অধিকাংশই স্ত্রীলোক; (কারন) তারা কুফরী করে। জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তারা কি আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করে?’ তিনি বললেনঃ ‘তারা স্বামীর অবাধ্য হয় এবং ইহসান অস্বীকার করে। ’ তুমি যদি দীর্ঘকাল তাদের কারো প্রতি ইহসান করতে থাক, এরপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখলেই বলে, ‘আমি কখনো তোমার কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাইনি। ’
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


ধর্ষণের জন্য নারীরাই দায়ী?

যে কোনো ধর্ষণের ঘটনার পর আমরা প্রায় নিয়মিতই এক ধরনের “বিশেষজ্ঞের” উত্থান দেখতে পাই— পাড়ার চায়ের দোকানের সেই চিরচেনা বুড়ো চাচামিয়ারা, বাসের সিট দখল করে বসে থাকা আত্মঘোষিত নীতিবিদেরা, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার সুশীল কমেন্টবাজরা। এরা খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে ঘোষণা করেন, “ওই মেয়েরও দোষ আছে”, “ওর চলাফেরা ঠিক ছিল না”, “রাতে-বিরাতে রাস্তায় বেরোয় কেন?”, “ছেলেদের সাথে ঘোরাফেরা করে, এরকম না হলে ধর্ষণ হবে কেন?”— যেন কোনো মেয়ের জীবনধারা, পোশাক, সামাজিক অবস্থান বা রাতের বেলায় বাইরে থাকার কারণে তাকে ধর্ষণ করা এক ধরনের “জাস্টিফায়েড” শাস্তি। অর্থাৎ এই মানসিকতায় ধর্ষক না, বরং ধর্ষিতাই আসল অপরাধী।

চায়ের দোকানের বেঞ্চ, বাসের সিট অথবা টকশোর ক্যামেরার সামনে বসে এরা নিজেদের “নিরপেক্ষ” বিচারক হিসেবে উপস্থাপন করে— এবং জনতার কাছ থেকেও হাততালি পায়। কখনো বলে, “ধর্ষক দোষী, ঠিক আছে; কিন্তু মেয়েটারও দোষ ছিল”, কখনো বলে, “ওই জামাকাপড় পরে রাস্তায় নামলে তো পুরুষের মাথা গরম হবেই”— যেন পুরুষের ধর্ষকামীতা তার নিজের দায় নয়, বরং নারীর দায়। ফেসবুক, ইউটিউব, টেলিভিশনের টকশো— সবখানেই এই একই ভিক্টিম ব্লেইমিং( victim blaming), যাকে “সংস্কৃতি”, “ধর্ম”, “সংযম”, “শালীনতা”র ভাষায় মোড়ানো হয়। এর ফলে ধর্ষক ও ধর্ষিতাকে একই বেঞ্চে বসিয়ে “দুজনই দোষী” বলে বিষয়টিকে ভারসাম্যপূর্ণ করা হয়, এবং আসল অপরাধীকে কার্যত সামাজিক ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়।

একজন নারী বাস্তবে একবারই ধর্ষণের শিকার হন না; তিনি যেন স্তর স্তর করে বহুবার ধর্ষণের শিকার হন। প্রথমে তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে ধর্ষক— কোনো অপরাধী পুরুষ, যার হাতে সে সরাসরি সহিংসতার শিকার। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতীকী ও মানসিক ধর্ষণ— নিজের বাড়ির ভেতরেই, বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী— সবার মন্তব্য ও অভিযোগের মাধ্যমে। বাবা-মা যখন সরাসরি বা ইঙ্গিতে মেয়েকেই দোষারোপ করেন— “তুমি বোরখা পরো নি”, “তুমি নিজেকে সামলে রাখোনি”, “তুমি বাইরে গেলে কেন”— তখন তারা আসলে মেয়েটির ওপরই অপরাধের বোঝা চাপিয়ে দেন। যে মেয়ে প্রথমে ধর্ষকের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে, সে আবার নিজের পরিবারের ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা দ্বিতীয়বার অপমানিত ও মানসিকভাবে চূর্ণবিচূর্ণ হয়।

এরপর যদি কোনোভাবে সে সাহস সঞ্চয় করে থানায় যায়— সেখানে তাকে অপেক্ষা করছে তৃতীয় স্তরের “প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ষণ”। পুলিশ, ডাক্তার, তদন্ত কর্মকর্তা, আইনজীবী— সবাই একসাথে যেন তার শরীর ও স্মৃতির ওপর আবার অস্ত্রোপচার করতে বসে। তাকে জেরা করা হয়— কোথায় ধর্ষণ হয়েছে, কতক্ষণ ধরে, কতবার, কোন ভঙ্গিমায়, শরীরের কোন অংশে হাত দিয়েছে, মুখ দিয়েছে, সে চিৎকার করেছে কি না, তার শরীরের প্রতিক্রিয়া কী ছিল। অনেক প্রশ্নই এমনভাবে করা হয়, যেন বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে— “তুমি কি গোপনে ধর্ষণটি উপভোগ করোনি?”

তারপর যদি সংবাদমাধ্যম খবর পায়, তাহলে শুরু হয় চতুর্থ স্তরের গণ-ধর্ষণ। “রাতভর, উপর্যুপরি, লাগাতার, বিভিন্ন পথে, নগ্ন করে” ইত্যাদি শব্দ দিয়ে “সেক্সুয়ালাইজড” রিপোর্ট বানিয়ে পাঠকের সামনে পরিবেশন করা হয়, যাতে ভিক্টিমের কষ্টের বদলে পাঠকের কল্পনায় যৌন উত্তেজনা জাগিয়ে তোলা যায়। পাঠক এরপর সেই রিপোর্ট পড়ে মনে মনে মেয়েটিকে আবারও “ধর্ষণ” করে। বাস্তবে একবার ধর্ষিত হলেও, সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবতায় সে যেন বারবার, বহুগুণে ধর্ষিত হতে থাকে। এভাবে পুরো সমাজ— পরিবার, পুলিশ, আদালত, মিডিয়া— মিলে ধর্ষিতাকেই আবারও শাস্তি দেয়, আর ধর্ষকের অপরাধকে ভার কমিয়ে দেয়, আড়াল করে দেয়।

ধর্ষণের জন্য তাই মূলত দায়ী নারীর পোশাক নয়, বরং পুরুষতন্ত্রে গঠিত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং সেই মানসিকতাকে পুষ্ট করার সামাজিক কাঠামো। খেয়াল করে দেখুন— আমরা ছোটবেলা থেকেই ছেলে ও মেয়ের খেলনা আলাদা করে দিই: ছেলের জন্য বন্দুক, গাড়ি, প্লেন, রোবট; মেয়ের জন্য হাড়িপাতিল, বার্বিডল, রান্নাঘরের সেট, সাজগোজের সামগ্রী। এই বণ্টন কোনো নিরীহ খেলা নয়; বরং ক্ষমতার ধারণা ও লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা ছোটবেলা থেকেই শিশুর মাথায় বসিয়ে দেওয়ার এক সূক্ষ্ম সামাজিক ম্যাসেজ। ছেলেকে শেখানো হয়— সে বাইরে গিয়ে বিশ্ব দখল করবে, লড়াই করবে, জয় করবে, নেতৃত্ব দেবে। আর মেয়েকে শেখানো হয়— সে ঘর সামলাবে, রান্না করবে, সন্তান জন্ম দেবে, সাজগোজ করবে এবং অন্যের চোখে সুন্দর দেখাবে।

এইভাবে বড় হতে হতে ছেলেবাচ্চার মধ্যে তৈরি হয় এক ধরনের স্বাভাবিক “দখলদারিত্বের” মনোভাব— সে বিশ্বাস করতে শিখে, সে-ই কর্তৃত্বশীল, সে-ই নিয়ন্ত্রণ করবে, আর নারী তার অধীনস্ত, সেবা প্রদানের যন্ত্র। যখন এই মানসিকতা ধর্মীয় ব্যাখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে — যেখানে নারীর “শালীনতা”, “আওরত”, “বশ্যতা” ইত্যাদিকে ঈশ্বরের বিধান হিসেবে তুলে ধরা হয়— তখন ধর্ষণকে আর ব্যতিক্রমী সহিংসতা হিসেবে দেখা হয় না; বরং “নারীর সীমালঙ্ঘনের শাস্তি”, “পুরুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া”, কিংবা “ধর্মীয়ভাবে বোধগম্য” একটি ঘটনা হিসেবে রূপ দেওয়া হয়। এর পরিণতিতে, ধর্ষক তার কর্মকাণ্ডের জন্য নারীর পোশাক, চলাফেরা কিংবা জীবনধারাকেই দায়ী করে, আর সমাজ সেই অজুহাতকে বৈধতা দেয়।
অর্থাৎ— আমরা যে সমাজে বাস করছি, সেখানে ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির কাজ নয়; বরং গভীরভাবে প্রোথিত ক্ষমতা, লিঙ্গবৈষম্য, খেলনা থেকে শুরু করে ধর্মীয় ভাষ্য পর্যন্ত বিস্তৃত এক দীর্ঘ সামাজিক গঠনের ফল। তাই দায়ী শুধু “কিছু পুরুষ” নয়— বরং সেই সচেতনভাবে নির্মিত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, যেটাকে আমরা পরিবার, ধর্ম, শিক্ষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিচ্ছি।

মুসলিম সমাজে এই ভিক্টিম-ব্লেইমিং মানসিকতাকে আরও দৃঢ় করে ধর্মীয় টেক্সট নিজেই। কোরআনে নারীদের উত্যক্ত করা বা হয়রানির কারণ হিসেবে সোজাসুজি পুরুষের আচরণ বা মানসিকতাকে নয়, বরং নারীর পোশাককে মূল ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আনা হয়েছে। সূরা আহযাবের ৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, [12]— যদি নারীরা জিলবাব টেনে শরীর ঢেকে রাখে, তাহলে তারা “চেনা যাবে” এবং “উত্যক্ত করা হবে না”। অর্থাৎ মূল যুক্তি হচ্ছে: উত্যক্ত হওয়া বা না হওয়ার দায় পুরুষের আচরণে নয়, বরং নারীর শরীর কতটা ঢেকে রাখা হয়েছে তার ওপর নির্ভরশীল। এখানে পুরুষের প্রতি কোনো নিঃশর্ত নির্দেশ নেই— “তুমি উত্যক্ত করবে না, যা-ই পরুক”, বরং বার্তাটি গিয়ে পড়ে নারীর শরীরের ওপরে— যেন যথেষ্ট ঢেকে না রাখলে, উত্যক্ত হওয়া তারই দোষ।

হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

এই ধরনের ধর্মীয় ভাষ্য সমাজে একটি ভয়াবহ বার্তা প্রেরণ করে— “উত্যক্ত হওয়া বা হয়রানির মূল কারণ পুরুষের অনিয়ন্ত্রণ নয়, বরং নারীর পোশাক।” ফলাফল দাঁড়ায়— পুরুষ নিজেকে দায়মুক্ত মনে করে, আর নারী তার নিজের ওপর হওয়া সহিংসতার জন্যও অপরাধবোধ অনুভব করে। এটি ক্লাসিক ভিক্টিম-ব্লেইমিং: অপরাধীর বদলে ভুক্তভোগীর আচরণ ও পোশাককে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। এইসব মধ্যযুগীয় ধারণা থেকে বের হতে না পারলে, সমাজ কখনোই ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতার প্রকৃত কারণ— ক্ষমতা, পুরুষতন্ত্র, লিঙ্গবৈষম্য— এর মুখোমুখি হবে না।

এবার আমরা একটি প্রভাবশালী তাফসীর গ্রন্থের অংশ দেখি, যেখানে আরও সরাসরি নারীদেরকেই ব্যভিচার ও নৈতিক বিচ্যুতির মূল কারণ হিসেবে দোষারোপ করা হয়েছে [13]— যেন পুরুষের কামনা, লালসা ও সহিংসতা সবই নিরীহ, আর নারীর উপস্থিতি ও শরীরই “ফিতনা”।

ধর্ষণ 3

ধর্ষণের শাস্তি এবং মৃত্যুদণ্ড: আধুনিক গবেষণায় কী দেখা যায়?

আমাদের সমাজে একটি অত্যন্ত প্রচলিত এবং বিপজ্জনক মিথ হলো— বর্বর ও কঠোর শাস্তি দিলে অপরাধ কমে যাবে। বিশেষ করে ধর্ষণের মতো যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন— মৃত্যুদণ্ড, শিরচ্ছেদ বা জনসমক্ষে ফাঁসি দিলে অপরাধীরা ভয় পাবে, ফলে ধর্ষণের ঘটনা হ্রাস পাবে। কিন্তু আধুনিক অপরাধবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান— সবগুলো ক্ষেত্রেই দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরঞ্চ বাস্তবে দেখা গেছে, যেসব দেশে চরম কঠোর শাস্তি— বিশেষ করে রাষ্ট্র-সমর্থিত সহিংস দণ্ড— চালু রয়েছে, সেসব দেশেই অপরাধের হার স্থিতিশীলভাবে কমে না; অনেক ক্ষেত্রে বরং অপরাধ আরও সংগঠিত, আরও নৃশংস এবং আরও অপ্রকাশ্য হয়ে ওঠে।

আন্তর্জাতিক বহু গবেষণার সামঞ্জস্যপূর্ণ ফলাফল দেখায়— মৃত্যুদণ্ড অপরাধ কমায় না। বরঞ্চ রাষ্ট্র যখন নিজেই সহিংসতা প্রয়োগ করে, তখন সমাজে সহিংসতার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে এবং অপরাধীরা আরও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঝুঁকি নিতে শুরু করে [14] [15]. যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেসের দীর্ঘ গবেষণায়ও দেখানো হয়েছে যে, মৃত্যুদণ্ডের প্রতি “দমন ক্ষমতা” (deterrence effect) সংক্রান্ত যেকোনো দাবি বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন [16]. বরং নেদারল্যান্ডস ও নর্ডিক অঞ্চলের মতো অনেক উন্নত দেশে— যেখানে মৃত্যুদণ্ড বাতিল এবং কারাব্যবস্থাই মানবিক করা হয়েছে— সেখানে অপরাধের হার এতটাই কমে গেছে যে কিছু জেলখানা পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়েছে [17] [18]

এসব উদাহরণ স্পষ্টভাবে দেখায়— বিচারব্যবস্থার নৃশংসতা অপরাধ কমায় না; বরং ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা, সামাজিক সমতা, সুশিক্ষা এবং ভুক্তভোগীর সুরক্ষাই অপরাধ হ্রাস করে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের প্রভাব আরও বিপজ্জনক ও জটিল। একজন ধর্ষক সাধারণত অপরাধের মুহূর্তে শাস্তি নিয়ে ভাবেন না; বরং ধারণা থাকে— হয়তো ধরা পড়বে না। কিন্তু যদি আইন এমন হয় যে ধর্ষণের শাস্তি সরাসরি মৃত্যুদণ্ড, তাহলে অপরাধীর মনের হিসাব-নিকাশ পুরোপুরি বদলে যায়। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে— কঠোর শাস্তির ভয় ধর্ষকদের একটি নৃশংস মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে: তারা ভিক্টিমকে হত্যা করে প্রমাণ লুকাবার চেষ্টা করে। কারণ অপরাধীর কাছে তখন ভুক্তভোগী একজন “সম্ভাব্য প্রমাণ”। তাই বেঁচে থাকলে সে আদালতে সাক্ষ্য দেবে— এই আশঙ্কায় ধর্ষক ধর্ষণের পরপরই ভিক্টিমকে হত্যা করতে চাইতে পারে।

অপরাধবিজ্ঞানীরা বলেন— অপরাধ ঘটার পর প্রথম প্রবৃত্তি হলো “প্রমাণ নষ্ট করা”। যদি আইন নিজেই এমন হয় যে প্রমাণ বিদ্যমান থাকলে অপরাধীর জীবন যাবে, তাহলে এই প্রবৃত্তি আরও তীব্র ও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ফলে বাস্তব পরিস্থিতিতে দেখা যায়— যেখানে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, সেখানে ভিক্টিমের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, এমনকি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে কঠোর শাস্তির পরে ধর্ষকেরা “অবচেতন আতঙ্কে” ভিক্টিমকে হত্যা করেছে— এমন অসংখ্য উদাহরণ গবেষণা প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে দেখা গেছে— শাস্তির ভয় থাকলে ধর্ষকের cognitive function স্বাভাবিক থাকে না; আতঙ্ক এবং প্যানিক তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সবচেয়ে সহিংস সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। ফলে যাকে আগে ধর্ষণের পর ছেড়ে দিত— সেই নারী এখন আর জীবিত আদালতে পৌঁছাতে পারে না। ফলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে— মৃত্যুদণ্ড ধর্ষণ কমানোর বদলে ভিক্টিমের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাই কমিয়ে দেয়। ভুক্তভোগীকে হত্যা করা হলে তদন্ত কঠিন হয়ে পড়ে, প্রমাণ নষ্ট হয়, পরিবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়, আর সমাজে নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়ে।

অপরাধবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীদের সর্বসম্মত মত হলো— মৃত্যুদণ্ড ধর্ষণ প্রতিরোধ করে না; বরং বিচার প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ভিক্টিম হত্যার ঝুঁকি বাড়ায়। কার্যকর প্রতিরোধ হলো— ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দ্রুত বিচার, শক্তিশালী তদন্ত কাঠামো, যৌন শিক্ষার প্রসার, নারীদের স্বাধীনতা বৃদ্ধি, এবং সামাজিক-মানসিক সহিংসতার বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি গঠন করা।

বর্বরতা কখনো ন্যায়বিচার সৃষ্টি করে না— বরং সহিংসতা আরও বৃদ্ধি করে। তাই মৃত্যুদণ্ড ধর্ষণ প্রতিরোধের কোনো কার্যকর সমাধান নয়।


ইসলামে হালাল ধর্ষণসমূহ

আধুনিক অপরাধবিজ্ঞান ও মানবাধিকারভিত্তিক আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা খুব পরিষ্কার— যে কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা ও সম্মতি ছাড়া তার শরীরে যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোই ধর্ষণ, তা সে বৈবাহিক সম্পর্কের ভেতরে হোক, বাইরে হোক, কিংবা “দাসপ্রথা” বা ক্ষমতার অন্য কোনো কাঠামোর ভেতরেই হোক। এই সংজ্ঞা মাথায় রেখে যখন আমরা ইসলামের বিভিন্ন বিধান দেখি, তখন দেখা যায়— একাধিক ধরনের এমন যৌন আচরণ রয়েছে, যেগুলো আধুনিক সংজ্ঞা অনুযায়ী স্পষ্ট ধর্ষণ হলেও, ইসলামি ফিকহে এগুলোকে “হালাল”, “জায়েজ” বা “স্বামী/মালিকের অধিকার” হিসেবে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

উপরে যে আধুনিক ধর্ষণ–সংজ্ঞা আলোচনা করা হয়েছে, এখন পাঠক যদি সেই সংজ্ঞাটি মাথায় রেখে নীচের অংশগুলো পড়েন, তাহলে সহজেই বোঝা যাবে— কোন কোন ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়াত ইচ্ছা ও সম্মতি–বিহীন যৌন সম্পর্ককে বৈধ করে রেখেছে, এবং কীভাবে “হালাল” শব্দের আড়ালে কিছু ধর্ষণকে ধর্মীয় মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।


বৈবাহিক ধর্ষণ হালাল

স্বামী বা স্ত্রীর স্পষ্ট সম্মতি ছাড়াই তার সঙ্গে জোরপূর্বক যৌনসম্পর্ক স্থাপনকে আধুনিক আইনে বৈবাহিক ধর্ষণ (marital rape) বলা হয়। বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকারভিত্তিক সভ্য আইন স্বীকার করেছে— বিয়ের কাগজ কোনোভাবেই স্থায়ী ও সীমাহীন “যৌন লাইসেন্স” নয়। বৈবাহিক সম্পর্ক থাকলেও, যে কোনো ব্যক্তির তার নিজের শরীরের ওপর সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে; তার ইচ্ছা ও সম্মতি ছাড়া স্বামী কিংবা স্ত্রী— কেউই তাকে যৌনকর্মে বাধ্য করতে পারে না।

অর্থাৎ, আপনি আপনার বৈবাহিক সঙ্গীর ইচ্ছা এবং সম্মতি ছাড়া তার সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করতে পারেন না। আপনার সঙ্গী কোনো “যৌনবস্তু” নয়, যে আপনার ইচ্ছা হলেই প্রতিবার যৌনসুখ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে— এটি তার ওপর একতরফা অধিকার নয়, বরং দুইপক্ষের পারস্পরিক সম্মতির বিষয়। আপনার সঙ্গীর শরীর ক্লান্ত, ব্যস্ত, মানসিকভাবে অস্থির বা “মুড নেই”— এই সব অবস্থাই বৈধ কারণ; আপনি চাইলে আলোচনা ও আবেগের মাধ্যমে রাজি করানোর চেষ্টা করতে পারেন, কিন্তু অস্বীকৃতির পরও তাকে চাপ দিয়ে, ভয় দেখিয়ে বা ধর্মীয় শাস্তির আতঙ্ক দেখিয়ে বিছানায় টেনে নেওয়া সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘন।

১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার (United Nations High Commissioner for Human Rights) “Declaration on the Elimination of Violence Against Women” প্রকাশ করে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়— বৈবাহিক ধর্ষণও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি রূপ [19]। পরে বিভিন্ন দেশে আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে marital rape–কে একইভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়, এবং বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যেও “সম্মতি”কে কেন্দ্রীয় নীতিতে পরিণত করা হয় [20]

Article Two:
Violence against women shall be understood to encompass, but not be limited to, the following:
(a) Physical, sexual and psychological violence occurring in the family, including battering, sexual abuse of female children in the household, dowry-related violence, marital rape, female genital mutilation and other traditional practices harmful to women, non-spousal violence and violence related to exploitation;

কিন্তু ইসলামের ক্লাসিকাল ফিকহে বৈবাহিক ধর্ষণকে কোনো ধর্ষণই হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। স্বামী–স্ত্রীর যৌনসম্পর্ককে সেখানে “স্বামীর অধিকার” (হক্‌) এবং স্ত্রীর “দায়িত্ব” হিসেবে ধারণা করা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে নির্মিত এই বিধানে স্ত্রীকে এমনভাবে ফ্রেম করা হয়েছে— স্বামী যখনই বিছানায় ডাকে, স্ত্রীকে সেখানে হাজির হতে হবে; অস্বীকার করলে তা শুধু “অবাধ্যতা” নয়, বরং তার ওপর ফেরেশতাদের লা’নত, আসমানবাসীদের অসন্তুষ্টি এবং পরকালীন শাস্তির হুমকি নেমে আসে।

অর্থাৎ, যেখানে আধুনিক মানবাধিকার আইন স্বীকার করে— স্ত্রীর না বলা মানে না— সেখানে ইসলামী ফিকহে স্ত্রীর “না” বলা নিজেই এক ধরনের অপরাধ বা গুনাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। অসুস্থতা, ঋতুস্রাব বা একেবারে শারীরিক অক্ষমতার সীমিত কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে স্বামীর যৌন আহ্বান প্রত্যাখ্যান করা স্ত্রীকে “আল্লাহর অবাধ্যতা”-র সমতুল্য করে দেখা হয়। এভাবে স্বামীর যৌন ইচ্ছাকে ধর্মীয় বৈধতা এবং স্ত্রীর অসম্মতিকে ধর্মীয় অপরাধ বানিয়ে— বাস্তবে বৈবাহিক ধর্ষণের একটি কাঠামোগত অনুমোদন তৈরি করা হয়েছে [21] [22] [23] [24]

সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৭। বিবাহ
২০. স্বামীর বিছানা পরিহার করা স্ত্রীর জন্য নিষিদ্ধ
৩৪৩৩-(১২২/…) আবূ বাকর ইবনু শায়বাহ, আবূ কুরায়ব, আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহিমাহুমুল্লাহ) ….. আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে এবং সে না আসায় তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে রাত্রি যাপন করে, সে স্ত্রীর প্রতি ফেরেশতাগণ ভোর হওয়া পর্যন্ত লা’নাত করতে থাকে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪০৬, ইসলামীক সেন্টার ৩৪০৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৭। বিবাহ
২০. স্বামীর বিছানা পরিহার করা স্ত্রীর জন্য নিষিদ্ধ
৩৪৩২-(১২১/…) ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ….. আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কসম সে সত্তার যার হাতে আমার জীবন। কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যখন বিছানায় আহ্বান করে, কিন্তু সে তা অস্বীকার করে, নিঃসন্দেহে যে পর্যন্ত সে তার স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্টি না হয়, ততক্ষণ আসমানবাসী তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪০৫, ইসলামীক সেন্টার ৩৪০৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-১৩ঃ বিবাহ
৩২৫৭-(২০) ত্বলক্ব ইবনু ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো স্বামী নিজ প্রয়োজনে স্বীয় স্ত্রীকে ডাকলে, সে যেন তৎক্ষণাৎ তার ডাকে সাড়া দেয়, যদিও সে চুলার পাশে (গৃহকর্মীর কাজে) ব্যস্ত থাকে। (তিরমিযী)(1)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনানে ইবনে মাজাহ
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
অধ্যায়ঃ ৯/ বিবাহ
২/১৮৫৩। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআয (রাঃ) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সাজদাহ করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মু‘আয! এ কী? তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পাই যে, তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে সাজদাহ করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ ছাড়া অপর কাউকে সাজদাহ করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সাজদাহ করতে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার প্রভুর প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না। স্ত্রী শিবিকার মধ্যে থাকা অবস্থায় স্বামী তার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে চাইলে স্ত্রীর তা প্রত্যাখ্যান করা অনুচিত।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
It was narrated that: Abdullah bin Abu Awfa said “When Muadh bin Jabal came from Sham, he prostrated to the Prophet who said: ‘What is this, O Muadh?’ He said: ‘I went to Sham and saw them prostrating to their bishops and patricians and I wanted to do that for you.’ The messenger of Allah said: ‘Do not do that. If I were to command anyone to prostrate to anyone other than Allah, I would have commanded women to prostrate to their husbands. By the One in Whose Hand is the soul of Muhammad! No woman can fulfill her duty towards Allah until she fulfills her duty towards her husband. If he asks her (for intimacy) even if she is on her camel saddle, she should not refuse.’ ”

এই হাদিসগুলো মিলিয়ে একটি কঠোর বার্তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে— স্বামীর যৌন চাহিদা পূরণ করা স্ত্রীর ধর্মীয় কর্তব্য; সে অস্বীকার করলে ফেরেশতাদের লা’নত, আসমানের অসন্তুষ্টি, আল্লাহর অবাধ্যতা— সবকিছু তার মাথায় বর্তায়। অর্থাৎ স্ত্রীর মানসিক অবস্থা, শারীরিক ক্লান্তি, ব্যথা, ট্রমা, কিংবা একেবারে কোন কারণ ছাড়াই “ইচ্ছা নেই”— এসব কোনো কিছুই ইসলামী শরিয়তে আসলে গুরুত্ব পায় না। বাস্তবে এটি বৈবাহিক ধর্ষণকে “হালাল” করার ধর্মীয় কাঠামো: স্বামী চাপ দিয়ে, ভয় দেখিয়ে, ধর্মীয় শাস্তির হুমকি দিয়ে যৌনসম্পর্কে বাধ্য করলেও, ফিকহ তার পক্ষে দাঁড়ায়, স্ত্রীর পক্ষে নয়।

আসুন, এখন কয়েকজন আধুনিক আলেমের বক্তব্য দেখি, যেখানে তারা স্পষ্ট ভাষায় এই ফিকহি ধারণাগুলো পুনরাবৃত্তি করেন— এবং প্রমাণ করে দেন, বৈবাহিক ধর্ষণ ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো অপরাধই নয়, বরং “স্বামীর অধিকার”

এখানেই এসে বৈবাহিক ধর্ষণ ও অর্থনৈতিক নির্ভরতার সম্পর্কও স্পষ্ট হয়। ইসলাম পুরুষকে পরিবারের ভরণপোষণকারী এবং উপার্জনকারী হিসেবে নির্ধারণ করেছে; নারীর জন্য উপার্জন করা ধর্মীয়ভাবে বাধ্যতামূলক নয়— বরং তাকে ঘরকন্না, সন্তান পালন এবং গৃহকর্মে সীমাবদ্ধ রাখাই আদর্শ নারীজীবনের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলাফল দাঁড়ায়— ইসলামপন্থী পরিবারগুলোর বড় অংশে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা, পেশাগত দক্ষতা বা অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতাকে “অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা” বা “অপচয়” মনে করা হয়। “মেয়ের তো শেষমেষ অন্যের ঘরেই যেতে হবে”— এই লজিক দেখিয়ে অনেক বাবা-মা সচেতনভাবেই তাকে অর্থনৈতিকভাবে অক্ষম রেখে বড় করে।

এর ফলে, বিবাহিত জীবনে যদি সে বৈবাহিক ধর্ষণের শিকারও হয়— প্রতিরোধ করার, স্বামীকে ছেড়ে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার, কিংবা আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বাস্তবিক ক্ষমতা তার হাতে থাকে না। কারণ পুরুষ একদিকে তার স্বামী, অন্যদিকে তার একমাত্র অর্থনৈতিক ভরসা। ইসলামি সমাজকাঠামো তাকে শুরু থেকেই এক ধরনের “পরজীবী” হিসেবে গড়ে তোলে— সে যেন নিজের দাঁড়াবার মাটি না পায়; স্বামীকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব ভাবতেই না শেখে।

ইসলামপন্থীরা তখন খুব গর্ব করে বলে— “দেখো, ইসলাম নারীকে কত সম্মান দিয়েছে; তাকে কাজ করতে বাধ্য করা হয়নি, সে পায়ের ওপর পা তুলে খেতে পারবে, স্বামী-ই সব দায়িত্ব নেবে!”— কিন্তু এই কথার আড়ালে যে দীর্ঘমেয়াদি ফাঁদ লুকিয়ে থাকে, সেটি হলো আজীবন নির্ভরতার মাধ্যমে দাসত্ব। যখন কোনো নারী নিজের শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত থাকে, তখন তার “না” বলার অধিকার কার্যত কাগজে-কলমের অধিকার হয়ে দাঁড়ায়। স্বামীর চাপ, পরিবার–সমাজের চাপ এবং ধর্মীয় শাস্তির ভয়— সব মিলিয়ে সে নিজের উপর হওয়া বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়েও চুপ করে থাকে।

এইসব যুক্তি— “নারীকে কাজ করতে হয় না”, “স্বামী উপার্জন করবে”, “স্ত্রী ঘরে আরামে থাকবে”— এগুলো আসলে এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, যাতে নারীরা কখনো আত্মনির্ভরশীল, স্বাধীন সিদ্ধান্তগ্রহণে সক্ষম মানুষ হয়ে উঠতে না পারে। যতদিন তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকবে না, ততদিন তাদের শরীর, মতামত এবং যৌন সম্মতির উপরও প্রকৃত স্বাধীনতা আসবে না। [25] [26]


শিশু মেয়েদের ধর্ষণ

সারা বিশ্বের আধুনিক আইনব্যবস্থায় একটি মৌলিক নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে— কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের প্রশ্নে “সম্মতি” কথাটাই প্রযোজ্য নয়। কারণ আইন স্বীকার করে— একটি শিশু মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এমন কোনো জটিল বিষয়ে informed consent দেওয়ার সক্ষমতা রাখে না। তাই সম্মতিতে হোক কিংবা অসম্মতিতে, যেকোন অবস্থায় অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের সাথে যৌনকর্ম পুরো সভ্য পৃথিবীতে নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য। এটি এখন শিশু অধিকার, মানবাধিকার এবং শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড।

কিন্তু ক্লাসিকাল ইসলামি ফিকহে ঠিক বিপরীত অবস্থান দেখা যায়। ইসলাম কেবল অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দেওয়াকেই বৈধ করেনি, বরং তাদের সাথে বৈবাহিক সহবাসকেও বৈধ করেছে— এবং তা সরাসরি নবী মুহাম্মদ ও আয়িশার বিয়ে ও সহবাসের উদাহরণ দিয়ে। এই “জায়েজ” ঘোষণা কেবল একটি ব্যক্তিগত ঘটনা নয়; বরং তা আইনি নীতিতে পরিণত হয়েছে— যেখানে পিতা অপ্রাপ্তবয়স্ক কুমারী কন্যার বিয়ে দিতে পারে, আর স্বামী তার সঙ্গে সহবাসও করতে পারে। আধুনিক আইনে যা স্পষ্টতই শিশু ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে, ইসলামি আইনে সেটিই “বিয়ে” ও “স্বামীর অধিকার” নামে বৈধ হয়ে যায়। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য এই লেখাটি দেখুন [27] [28]

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৭। বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১০. পিতা অপ্রাপ্ত বয়স্কা কুমারী কন্যার বিবাহ দিতে পারে
৩৩৭০-(৬৯/১৪২২) আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলা ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহু (রহিমাছমাল্লাহ) … আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিয়ে করেছেন, আমার বয়স তখন ছয় বছর। তিনি আমাকে নিয়ে বাসর ঘরে যান, তখন আমার বয়স নয় বছর। আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, আমরা হিজরাত করে মাদীনায় পৌছার পর আমি একমাস যাবৎ জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম এবং আমার মাথার চুল পড়ে গিয়ে কানের কাছে (কিছু) থাকে। (আমার মা) উম্মু রূমান আমার নিকট এলেন, আমি তখন একটি দোলনার উপরে ছিলাম এবং আমার কাছে আমার খেলার সাখীরাও ছিল। তিনি আমাকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকলেন, আমি তার নিকট গেলাম।
আমি বুঝতে পারিনি যে, তিনি আমাকে নিয়ে কী করবেন। তিনি আমার হাত ধরে আমাকে দরজায় নিয়ে দাঁড় করালেন। আমি তখন বলছিলাম, আহ, আহ। অবশেষে আমার উদ্বেগ দূরীভূত হল। তিনি আমাকে একটি ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে আনসার মহিলাগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলে আমার কল্যাণ ও রহমাতের জন্য দুআ করলেন এবং আমার সৌভাগ্য কামনা করলেন। তিনি (মা) আমাকে তাদের নিকট সমর্পণ করলেন। তারা আমার মাথা ধুয়ে দিলেন এবং আমাকে সুসজ্জিত করলেন। আমি কোন কিছুতে ভীত শংকিত হইনি। চাশতের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং তারা আমাকে তার নিকট সমর্পণ করলেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৩৪৪, ইসলামীক সেন্টার ৩৩৪৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)


যুদ্ধবন্দী নারীদের ধর্ষণ হালাল

সমস্ত আধুনিক আন্তর্জাতিক আইন— বিশেষত জেনেভা কনভেনশন এবং মানবাধিকার সনদ— একবাক্যে ঘোষণা করেছে যে, যুদ্ধবন্দী বা দখলকৃত অঞ্চলের নারীদের ধর্ষণ যুদ্ধাপরাধ (war crime)। দাসপ্রথা এবং যুদ্ধলব্ধ নারীদের “গনিমতের মাল” হিসেবে ভাগ করে নেওয়ার প্রথা আজকের সভ্য বিশ্বে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ ও অপরাধ। কিন্তু ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে দাসপ্রথা কেবল বৈধই নয়, বরং “আল্লাহর ঐশ্বরিক বিধান”— এবং যুদ্ধবন্দী নারীদের “যৌনভোগের অধিকার” আজও ফিকহের পাতায় কিয়ামত পর্যন্ত বৈধ আছে।

কোরআন ও সহীহ হাদিসে “মালিকানাধীন দাসী” (ما ملكت أيمانكم) ধারণাকে ব্যবহার করে যুদ্ধবন্দী নারীদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ককে হালাল করা হয়েছে। সেখানে নারীর সম্মতির কোনো প্রশ্ন নেই; যুদ্ধের লুট হিসেবে মুসলিম সৈন্যের হাতে যে নারী চলে এসেছে, সে আর স্বাধীন মানুষ নয়— তার উপর যৌন অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে প্রতিবাদ করতে পারে না, “না” বলতে পারে না, বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে যেতে পারে না। এর সবই আধুনিক আইনের ভাষায় স্পষ্টতই সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বৈধতা। [29] [30] [31]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছেদঃ ২১৯৬. বনূ মুসতালিকের যুদ্ধ। বনূ মুসতালিক খুযা’আর একটি শাখা গোত্র। এ যুদ্ধ কে মুরায়সীর যুদ্ধ ও বলা হয়। ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেছেন, এ যুদ্ধ ৬ষ্ঠ হিজরী সনে সংঘটিত হয়েছে। মুসা ইবন উকবা (র) বলেছেন, ৪র্থ হিজরী সনে। নুমান ইবন রাশিদ (র) যুহরী (র) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইফকের ঘটনা মুরায়সীর যুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল।
৩৮৩২। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু মুহায়রীয (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে প্রবেশ করে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে বসলাম এবং তাকে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বানূ মুসতালিকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এ যুদ্ধে আরবের বহু বন্দী আমাদের হস্তগত হয়। মহিলাদের প্রতি আমাদের মনে খায়েস হল এবং বিবাহ-শাদী ব্যতীত এবং স্ত্রীহীন আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। তাই আমরা আয্‌ল করা পছন্দ করলাম এবং তা করার মনস্থ করলাম। তখন আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে বিদ্যমান। এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস না করেই আমরা আযল করতে যাচ্ছি। আমরা তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এরুপ না করলে তোমাদের ক্ষতি কি? জেনে রাখ, কিয়ামত পর্যন্ত যতগুলো প্রাণের আগমন ঘটবার আছে, ততগুলোর আগমন ঘটবেই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনে মুহায়রীয (রহঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৯৭/ তাওহীদ
পরিচ্ছদঃ ৯৭/১৮. আল্লাহর বাণীঃ তিনিই আল্লাহ্ সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদাতা। (সূরাহ আল-হাশর ৫৯/২৪)
৭৪০৯. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বানী মুসতালিক যুদ্ধ বিষয়ে বর্ণনা করেন যে, মুসলিমগণ যুদ্ধে কতকগুলো বন্দিনী লাভ করলেন। এরপর তাঁরা এদেরকে ভোগ করতে চাইলেন। আবার তারা যেন গর্ভবতী হয়ে না পড়ে সে ইচ্ছাও তারা করছিলেন। তাই তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আযল বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এতে তোমাদের কোন লাভ নেই। কারণ আল্লাহ্ ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যত জীবন সৃষ্টি করবেন, তা সবই লিখে রেখেছেন। মুজাহিদ (রহ.) কাযআ (রহ.)-এর মাধ্যমে আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যত জীবন সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই তা সৃষ্টি করবেনই। (২২২৯) (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


শিশু ছেলেদের ধর্ষণ

আমরা প্রায়ই খবরের কাগজে, অনলাইনে কিংবা সামাজিক মাধ্যমে দেখি— মাদ্রাসায় অমুক বাচ্চা ছেলেকে ধর্ষণ করা হয়েছে, তমুক শিশুকে “হুজুর”, “শিক্ষক” বা “মোল্লা” নিজ কক্ষে ডেকে যা খুশি করেছে। প্রতিদিনের খবর যেন এই ধরনের ঘটনায় ভরে থাকে। এই শিশুদের অনেককে বেশি নম্বর দেওয়ার লোভ দেখিয়ে, কেউকে কোরআন শেখার অজুহাতে, আবার কাউকে মারধর ও ধর্মীয় শাস্তির ভয়ে জিম্মি করে যৌন নির্যাতনের শিকার করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো— এই সমস্ত ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ বা শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে ইসলামী শরিয়াত আসলে কী বলে?

ক্লাসিকাল ফিকহে সমকামী যৌনাচার বা পায়ুকামের শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন আলেম “হত্যা”, “রজম”, “উঁচু স্থান থেকে ফেলে দেওয়া” ইত্যাদি নৃশংস শাস্তির কথা বলেছেন। উপরোক্ত হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে— “তোমরা যখন কাউকে লূতের কাওমের মত কাজে (সমকামে) লিপ্ত দেখবে, তখন কর্তা ও ভুক্তভোগী উভয়কে হত্যা করবে” [32]. যদিও ফিকহে শিশুদের জন্য রজম বা প্রাপ্তবয়স্কের শাস্তি সরাসরি প্রযোজ্য নয়, বাস্তবে এই ধরনের হাদিস ও বক্তব্যই ব্যবহার করে মাদ্রাসার শিক্ষকরা নির্যাতিত বাচ্চাদের মুখ বন্ধ রাখার চেষ্টা করেন।

বাচ্চাকে বোঝানো হয়— “তুমি যদি কাউকে বলো, তবে তুমি নিজেও গুনাহগার, তোমারও মারাত্মক শাস্তি হবে”— ফলে ভয়ের আতঙ্কে শিশুটি নীরব হয়ে যায়। অপরাধী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ (যে আসলে ক্ষমতাবান শিক্ষক বা হুজুর) এবং অসহায় শিশু— দুজনকেই সমান অপরাধী ঘোষণা করা এই হাদিস-ভিত্তিক দর্শন বাস্তবে শিশু ভিক্টিমের উপর দ্বিগুণ অত্যাচার। সে একদিকে যৌন নির্যাতনের শিকার, অন্যদিকে ধর্মীয় শাস্তির ভয়ে নালিশও করতে পারে না। এভাবে ইসলামী বিধানের ভয় দেখিয়ে, “আল্লাহর গজব”, “হত্যা” ইত্যাদির কথা বলে— বাস্তবে যারা শিশু ধর্ষণ করছে, তারাই নিজেদের অপরাধ আড়াল করার জন্য ধর্মকেই ব্যবহার করছে।

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান
৪৪০৩. আবদুল্লাহ্‌ ইবন মুহাম্মদ (রহঃ) ……… ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন কাউকে লূতের কাওমের মত কাজে (সমকামে) লিপ্ত দেখবে, তখন এর কর্তা এবং যার সাথে এরূপ করা হবে, উভয়কে হত্যা করবে।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)


ইসলামে যিনা কাকে বলে?

আরবি زِنَاء / زِنًى শব্দ থেকে আসা যিনা বলতে ইসলামি শরিয়তে বোঝানো হয়— যে কোনও পুরুষের এমন নারীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক, যার ওপর তার বৈধ মালিকানা নেই; অর্থাৎ স্ত্রী নয়, অথবা মালিকানাভুক্ত ক্রীতদাসী (মা মালাকাত আইমানুকুম) নয়। তাই ক্লাসিকাল ফিকহের দৃষ্টিতে স্বামী–স্ত্রীর বাইরে, কিংবা “দাসী” ছাড়া অন্য যে কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কই যিনা— তা প্রেমের সম্পর্ক হোক, দুই পক্ষের পূর্ণ সম্মতিতে হোক, বা বলপূর্বক ধর্ষণ হিসেবেই হোক। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে “আইনি মালিকানা”; ভুক্তভোগী নারীর সম্মতি, ইচ্ছা বা মানবিক স্বায়ত্তশাসনের কোনো গুরুত্বই নেই।

হাদিসে যিনাকে কেবল শারীরিক সহবাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি; মানুষের চোখ, জিহ্বা, মন— সবকিছুর স্তরে “যিনা”র ধারণা প্রসারিত করা হয়েছে। দৃষ্টির মাধ্যমে নিষিদ্ধ নারী বা পুরুষের দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকানোকে “চোখের যিনা”, অশ্লীল কথাবার্তা বা ইঙ্গিতকে “জিহ্বার যিনা”, আর শেষ পর্যন্ত লজ্জাস্থানের মাধ্যমে বাস্তবিক সহবাসকে যিনার পরিণতি বলা হয়েছে। অর্থাৎ শরীরের কোনো অংশই এই নৈতিক অপরাধ–সংজ্ঞা থেকে বাদ যায় না [33]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭০/ তাকদির
পরিচ্ছেদঃ ২৭৪২. আল্লাহর বাণীঃ যে জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি তার সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যে, তার অধিবাসীবৃন্দ ফিরে আসবে না (২১ঃ ৯৫)। আল্লাহর বাণীঃ যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া তোমার সম্প্রদায়ের অন্য কেউ কখনও ঈমান আনবে না (১১ঃ ৩৬)। আল্লাহর বাণীঃ তারা জন্ম দিতে থাকবে কেবল দুষ্কৃতিকারী ও কাফের (৭১ঃ ২৭)। মানসুর ইবন নো’মান … ইবন আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাবশী ভাষায় حرم অর্থ জরুরী হওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৬১৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৬১২
৬১৫৯। মাহমুদ ইবনু গায়লান (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ছোট গুনাহ সম্পর্কে যা বলেছেন তার চেয়ে যথাযথ উপমা আমি দেখি না। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ) আল্লাহ আদম সন্তানের উপর যিনার কোন না কোন হিসসা লিখে দিয়েছেন; তা সে অবশ্যই পাবে। সুতরাং চোখের যিনা হল (নিষিদ্ধদের প্রতি) নযর করা এবং জিহ্বার যিনা হল (যিনা সম্পর্কে) বলা। মন তার আকাঙ্ক্ষা ও কামনা করে, লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবায়িত করে অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। শাবাবা (রহঃ) ও … আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ)

ইসলামী আকীদায় যিনা একটি কবিরা গুনাহ— বড় পাপ; কিন্তু একই সাথে এটি ক্ষমাযোগ্য অপরাধ হিসেবেও ফ্রেম করা হয়েছে। ধারণা হলো, এ গুনাহ যদি ব্যক্তি আন্তরিক তওবা করে, অথবা “সঠিক আকীদা” ও ঈমান নিয়ে মারা যায়, তবে আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন। ফলে বাস্তবে যতই কঠোর শাস্তির কথা বলা হোক— বেত্রাঘাত, প্রস্তরাঘাত (রজম) ইত্যাদি— শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসের কালিমা উচ্চারণকে সব নৈতিক অপরাধের উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

উপরের হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে— কেউ যদি অন্তর থেকে “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” বলার অবস্থায় মারা যায়, তবে সে চুরি করুক, ব্যভিচার করুক, বড় গুনাহে লিপ্ত থাকুক— তবুও শেষ বিচারে জান্নাতে যাবে। অর্থাৎ ভুক্তভোগীর প্রতি ন্যায়বিচার বা নৈতিক জবাবদিহিতা নয়, বরং “সঠিক ঈমান” ও দলীয় পরিচয়ই শেষ পর্যন্ত পরকালের পরিণতি নির্ধারণে মুখ্য হিসেবে বিবেচিত হয় [34]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১ঃ ঈমান (বিশ্বাস)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২৬-(২৫) আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (একবার) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে পৌঁছলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি সাদা কাপড় পরিহিত অবস্থায় ঘুমিয়েছিলেন। আমি ফেরত চলে এলাম। অতঃপর পুনরায় তাঁর নিকট গেলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জেগে ছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (আমাকে দেখে) বললেন, যে ব্যক্তি (অন্তরের সাথে) ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে আর এ বিশ্বাসের উপর তার মৃত্যু হবে, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, সে চুরি ও ব্যভিচার (এর মতো বড় গুনাহ) করে থাকে তবুও? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে চুরি ও ব্যভিচার করলেও। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, চুরি ও ব্যভিচার করার পরও? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, চুরি ও ব্যভিচারের ন্যায় গুনাহ করলেও। আবূ যার-এর নাক ধূলায় মলিন হলেও। বর্ণনাকারী বলেন, যখনই আবূ যার (রাঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন (গৌরবের সাথে) এ শেষ বাক্যটি ‘আবূ যার-এর নাক ধূলায় মলিন হলেও’ অবশ্যই বর্ণনা করতেন। (বুখারী, মুসলিম)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ৫৮২৭, মুসলিম ৯৪, আহমাদ ২১৪৬৬, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৩৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


ধর্ষণ কী যিনার অন্তর্ভূক্ত?

ইসলামী আইনশাস্ত্রে ধর্ষণকে কখনো কখনো পৃথক শব্দ দিয়ে— যেমন ইগতিসাব (বলপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়া) বা জিনা-বিল-জাবর (জোরপূর্বক যিনা)— উল্লেখ করা হলেও, ধারাবাহিকভাবে এটিকে যিনা-এরই একটি উপশ্রেণী হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। মূল কাঠামোটা খুব পরিষ্কার: কোনো পুরুষ যদি তার স্ত্রী বা মালিকানাধীন ক্রীতদাসী ব্যতীত অন্য নারীর সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে, তা “স্বেচ্ছায়” হোক বা “জোরপূর্বক”— ফিকহের ভাষায় সেটি যিনা। আলাদা করে “ধর্ষণ” নামের কোনো স্বতন্ত্র অপরাধধারণা গড়ে ওঠেনি; বরং জোরজবরদস্তি থাকলে মাঝে মাঝে “হিরাবাহ”, “রাহাজানি”, বা “ফাসাদ–ফিল–আর্দ” এর আওতায়ও তা টেনে আনা হয়েছে— কিন্তু ভুক্তভোগী নারীর জন্য স্বাধীন আইনি সুরক্ষা বা মানবিক অধিকার–ভিত্তিক কোনো কাঠামো তৈরি হয়নি।

কাগজে–কলমে বলা হয়— তাত্ত্বিকভাবে ইসলাম নিজ স্ত্রী ও দাসী ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে বলপূর্বক যৌন সম্পর্ককে অনুমোদন করে না; ধর্ষককে নাকি একই যিনার হদ্দ–শাস্তি (বিবাহিত হলে রজম, অবিবাহিত হলে বেত্রাঘাত) দেওয়া হবে, এবং ধর্ষিতা নারীর ওপর কোনো শাস্তি প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু বাস্তবে এই “কঠোরতা”র ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক বিশাল শুভঙ্করের ফাঁকি— যেটা ধর্ষকের জন্য দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা জাল, আর ভিক্টিমের জন্য প্রায় অসম্ভব এক প্রমাণ–বোঝা।

ইসলামের হুদুদ আইন অনুযায়ী যিনা প্রমাণ করার জন্য দরকার হয়— চারজন প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন, ন্যায়পরায়ণ, মুসলিম পুরুষের একই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য; অথবা অপরাধীর নিজস্ব স্বীকারোক্তি। ধর্ষণকে যিনার শাস্তির আওতায় আনতে গেলেও এই একই অতি–অবাস্তব মানদণ্ড প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ, ধর্ষণের ঘটনাটি যদি চারজন মুসলিম পুরুষ দাঁড়িয়ে থেকে একসাথে নগ্ন চোখে না দেখে, তবে তা “যিনা” হিসেবে প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব। আধুনিক প্রমাণ–পদ্ধতি— যেমন ডিএনএ, ফরেনসিক মেডিক্যাল রিপোর্ট, সিসিটিভি ফুটেজ, ভিক্টিমের ক্ষত, মানসিক ট্রমা— এগুলোর কোনোটাই ক্লাসিকাল হুদুদ মানদণ্ডে “সরাসরি প্রমাণ” হিসেবে গণ্য হয় না।

ফলে, ভিক্টিম যদি এগুলো নিয়ে আদালতে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করে, কিন্তু চারজন পুরুষ প্রত্যক্ষদর্শী হাজির করতে না পারে— তখন উল্টো ঝুঁকি তৈরি হয় তার নিজের জন্যই। অনেক ফিকহি মত অনুযায়ী, প্রমাণের এই মানদণ্ডে ব্যর্থ হলে তার অভিযোগকে “মিথ্যা অপবাদ”— কাযফ— হিসেবে দেখা যেতে পারে, যার শাস্তি আবার নিজেই বেত্রাঘাত। তাই তত্ত্বে বলা হয় “ধর্ষণ প্রমাণ হলে ধর্ষকের কঠোর শাস্তি”— কিন্তু বাস্তবে এমন একটা প্রমাণ কাঠামো বানানো হয়েছে, যাতে ধর্ষণ প্রায় কোনোদিনই প্রমাণ করা যায় না, আর ভিক্টিম নিজেই নতুন আইনি ঝুঁকিতে পড়ে।

উপরন্তু, আধুনিক সময়ের ইসলামি ফতোয়া–ওয়েবসাইটগুলো— যেমন ইসলামকিউএ ইত্যাদি— ধর্ষণকে যিনার থেকে আলাদা করার চেষ্টা করলেও মূল কাঠামো অক্ষুণ্ণ থাকে: তারা স্বীকার করে, “হদ্দ” পর্যায়ের শাস্তি প্রমাণ করতে হলে চার সাক্ষী বা স্বীকারোক্তি লাগবে; ডিএনএ–টাইপ প্রমাণকে তারা সর্বোচ্চ “পরোক্ষ/সহায়ক প্রমাণ” বা কারীনা হিসেবে দেখে, যা সাধারণত তাআযির–ধরনের অপেক্ষাকৃত নমনীয় শাস্তিতে গিয়ে ঠেকে [35]

ফলাফল দাঁড়ায়— কাগজে ইসলামে ধর্ষণ “নিষিদ্ধ” হলেও, বাস্তব আইনি ব্যবস্থায় এটি এমনভাবে যিনা–এর সঙ্গে গুলিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এমন অবাস্তব সাক্ষ্য–মানদণ্ডের বেড়াজালে বন্দী করে রাখা হয়েছে যে, ভুক্তভোগীর জন্য ন্যায়বিচার প্রায় অসম্ভব, কিন্তু অপরাধী খুব সহজেই ধর্মীয় কাঠামোর ভেতরেই নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে যায়।

ধর্ষণ 5

ধর্ষণ যিনা নাকি ফিতনা ফ্যাসাদ?

মুসলিমদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে ধর্ষণ বোঝাতে ব্যবহৃত কোনো স্পষ্ট শব্দই নেই; আজকের অর্থে rape ধারণাটি সেখানে একেবারেই অনুপস্থিত। কোরআন যেখানে চুরি, ব্যভিচার, মদ্যপান, চোরাচালান, এমনকি উত্তরাধিকার ও তালাকের সূক্ষ্ম বিধান পর্যন্ত দিয়েছে, সেখানে নারীর বিরুদ্ধে বলপূর্বক যৌন সহিংসতার মতো গুরুতর অপরাধ নিয়ে একটিও সরাসরি শব্দ না থাকা— নিজেই একটি গভীর নীরবতা। হাদিসে কেবল একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা পাওয়া যায়, যেখানে “জোরপূর্বক যিনা” (forced zina) ঘটেছে বলে বর্ণনা করা হয়েছে; সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই পরবর্তী ফিকহে ধর্ষণকে কখনো যিনা, কখনো ফিতনা–ফাসাদে টেনে আনা হয়েছে।

ইসলামের অধিকাংশ প্রখ্যাত আলেম ধর্ষণকে সরাসরি যিনার অন্তর্ভুক্ত করে— তার জন্য হদ্দের শাস্তিই প্রয়োগযোগ্য বলে মত দিয়েছেন। এই মত অনুযায়ী, ধর্ষক যদি বিবাহিত হয় তবে তার শাস্তি হলো পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা— অর্থাৎ রজম— আর অবিবাহিত হলে ১০০ বেত্রাঘাত এবং কখনও কখনও নির্বাসন। মুহাম্মদের জীবদ্দশায় বর্ণিত যে ঘটনায় একজন নারী জোরপূর্বক যিনার শিকার হন, সেখানে হাদিসের বর্ণনানুসারে ধর্ষিতাকে দায়মুক্ত করা হয়, আর ধর্ষক (যিনি বিবাহিত) সম্পর্কে রজমের হুকুম আসে— কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাস্তবে পাথর মারা হয়নি বলেই বর্ণনা থেকে ধারণা পাওয়া যায়। অর্থাৎ, তাত্ত্বিকভাবে কঠোর শাস্তি, কিন্তু বাস্তবে তার প্রয়োগ নিয়ে দ্বিধা ও অস্পষ্টতা— যা ফৌজদারি ন্যায়বিচারের বদলে “আধ্যাত্মিক নরমতা”র অজুহাত তৈরি করে।

সমকালীন গবেষকরা দেখিয়েছেন, ক্লাসিকাল ফিকহে ধর্ষণকে প্রথম থেকেই একটি crime of sexual morality হিসেবে ফ্রেম করা হয়েছে, নারী–বিদ্বেষী নৈতিক চিন্তার ধারাবাহিকতায়; ভিক্টিমের অধিকার বা শারীরিক–মানসিক ট্রমা সেই আলোচনার কেন্দ্রে নেই— বরং আল্লাহর অধিকার, সমাজের নৈতিক পবিত্রতা ও পুরুষতান্ত্রিক সম্মানের প্রশ্নই মুখ্য [36]

অন্যদিকে, বিশেষ করে মালেকি মাজহাবের কিছু ফকীহ ধর্ষণকে সরাসরি “যিনা” না বলে, সম্ভ্রম ও নিরাপত্তা লুট করার ঘটনা হিসেবে দেখার চেষ্টা করেছেন। তাদের ভাষায় এটি শুধু ব্যক্তিগত শয্যা–সংক্রান্ত অপরাধ নয়, বরং জনজীবনে ভয়–আতঙ্ক, নিরাপত্তাহীনতা এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে— তাই এটিকে “ফিতনা–ফাসাদ” বা “ফাসাদ ফিল আরদ”–এর আওতায় ফেলা যায়। কয়েকজন প্রখ্যাত ফিকহশাস্ত্রবিদ ও আলেম— যেমন মুহাম্মদ ইবনে জারির আল তাবারি, আবু বকর ইবনে আল-আরাবি এবং মিশরের সর্বোচ্চ শরিয়া কাউন্সিল ধর্ষণকে যিনার উপশ্রেণী হিসেবে নয়, বরং কোরআনে বর্ণিত “আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা” এবং “পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি”–এর সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাধ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন।

এই দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা সূরা মায়িদার ৩৩ নম্বর আয়াতকে ভিত্তি হিসেবে আনেন— যেখানে আল্লাহর ও রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং দেশে হাঙ্গামা, সন্ত্রাস, ডাকাতি ও ভীতি সৃষ্টিকে কঠোর অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে; শাস্তি হিসেবে উল্লেখ আছে— হত্যা, শূলীতে চড়ানো, বিপরীত দিক থেকে হাত–পা কেটে ফেলা, কিংবা দেশ থেকে নির্বাসন। ধর্ষণের ক্ষেত্রে এই আয়াত প্রয়োগ করলে তাত্ত্বিকভাবে কঠোর শাস্তির দরজা খোলা থাকে বটে, কিন্তু এখানে মূল সমস্যা দুই স্তরে:
১) একদিকে ইসলাম নারীকে ইতিমধ্যেই একটি ভোগ্যপণ্য, “উপভোগের উপকরণ” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে [37], ফলে ধর্ষণকে অনেক আলেম মাল–মত্তা লুট, ডাকাতি বা সন্ত্রাসের মতো “মাল–ও–ইজ্জত” লুটের ঘটনা হিসেবে দেখেন— ভিক্টিমের স্বায়ত্তশাসিত ব্যক্তি–সত্তা সেখানে আবারও আড়ালে চলে যায়।
২) অন্যদিকে, সূরা মায়িদার এই আয়াতের তাত্ত্বিক কঠোর শাস্তির ঠিক পরের আয়াতেই স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে— অভিযুক্তরা যদি গ্রেফতারের আগে তওবা করে, তবে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন [38].

অর্থাৎ ফিকহি পুনর্বিন্যাসে ধর্ষণকে “ফিতনা–ফাসাদ” হিসেবে যতই ভারী শব্দে সাজানো হোক না কেন— শেষ পর্যন্ত কোরআনিক কাঠামো এটিকে তওবা–সাপেক্ষ ক্ষমাযোগ্য অপরাধের মধ্যে ফেলে দেয়। এখানে আবারও দেখা যায়— অপরাধীর পরকালীন পরিণতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি–অসন্তুষ্টিই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, অথচ ভুক্তভোগী নারীর জন্য পৃথিবীতে ন্যায়বিচার, পুনর্বাসন বা প্রতিকার— এসব প্রশ্ন “তওবা”র আধ্যাত্মিক রোমাঞ্চের আড়ালে কার্যত গৌণ হয়ে যায়।

যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।

ঠিক পরের আয়াতেই, একই প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে— যদি তারা গ্রেফতার হওয়ার আগেই তওবা করে, তবে আল্লাহ তাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু [39]. অর্থাৎ যাকে ফিতনা–ফাসাদ, সন্ত্রাস ও হাঙ্গামা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেই অপরাধেরও শেষ ভরসা রেখে দেওয়া হচ্ছে ব্যক্তিগত তওবার ওপর। বাস্তবে এর মানে দাঁড়ায়— ধর্ষক কিংবা সশস্ত্র সন্ত্রাসী, যদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে আন্তরিকভাবে কিছু ধর্মীয় আচার পালন করে, অনুতাপের কথা বলে, তবে পরকালের বিচারে তার জন্য “ক্ষমার দরজা” খোলা। ভুক্তভোগীর বেঁচে থাকা জীবন, তার মানসিক ধ্বংস, সামাজিক অপমান— এসব কোরআনিক কাঠামোতে প্রায় উধাও; মূল ফোকাস থাকে অপরাধীর আল্লাহ–সম্পর্ক ঠিকঠাক হলো কি না।

এই অবস্থায় ধর্ষণকে যিনা বলেই ধরা হোক, বা ফিতনা–ফাসাদ বলেই ধরা হোক— দু’ক্ষেত্রেই ইসলামি আইনের কাঠামো ধর্ষিতার পক্ষে নয়, বরং অপরাধীর জন্য “তওবা ও ক্ষমা”র আধ্যাত্মিক পথ খুলে রেখে তাকে নরমভাবে ট্রিট করার আদর্শিক ভিত্তি তৈরি করে দেয়। আধুনিক মানবাধিকার–ভিত্তিক ফৌজদারি দর্শনের দৃষ্টিতে এটি ধর্ষণবিরোধী বিচারব্যবস্থা নয়, বরং ধর্ষণকারীকে আধ্যাত্মিক ও আইনি সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তৈরি এক মধ্যযুগীয় ধর্মীয় ফ্রেমওয়ার্ক।

কিন্তু যারা তোমাদের গ্রেফতারের পূর্বে তওবা করে; জেনে রাখ, আল্লাহ ক্ষমাকারী, দয়ালু।


নবীর আমলে ধর্ষণের শাস্তি

ধর্ষণ সম্পর্কিত ইসলামী আইনের সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত উদাহরণগুলোর একটি এসেছে সুনান আবু দাউদে। সেখানে বর্ণিত আছে— নবী মুহাম্মদের যুগে এক নারী নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে একজন পুরুষের দ্বারা বলপূর্বক ধর্ষিত হন, এবং পরে প্রকৃত অপরাধী নিজেই এসে অপরাধ স্বীকার করে। এই ঘটনায় সবচেয়ে লক্ষণীয় ও সমস্যাজনক দিক হচ্ছে— ধর্ষণের শিকার নারীকে নবী প্রথমে “অপরাধিনী” ধরে নিয়ে তার জন্য আল্লাহর ক্ষমার ঘোষণা দেন; যেন ভুক্তভোগী হওয়াটা নিজেই কোনো গুনাহ, যার জন্য তাকে আধ্যাত্মিক ক্ষমা দরকার। এর চেয়েও অদ্ভুত হলো, স্বীকারোক্তিকারী ধর্ষকের ক্ষেত্রে রজমের (পাথর মেরে হত্যা) নির্দেশ আদৌ কার্যকর হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে ফিকহ ও হাদিসবিদদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে; তাহকীককৃত রিওয়ায়াতে অগ্রাধিকারযোগ্য মত হল— সেই ধর্ষককে বাস্তবে পাথর মারা হয়নি, বরং ‘অসাধারণ তওবা’র কারণে তাকে আধ্যাত্মিকভাবে মহিমান্বিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই ম্যাসেজে ধর্ষিতার ন্যায়বিচারের চেয়ে ধর্ষকের তওবা ও পরকালের পরিণতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে [40] [41] [42]

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৩/ শাস্তির বিধান
পরিচ্ছেদঃ ৭. হাকীমের সামনে নিজের দোষ স্বীকার করা সম্পর্কে।
৪৩২৮. মুহাম্মদ ইবন ইয়াহইয়া (রহঃ) …. আলকামা তাঁর পিতা ওয়াযেল (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নরী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় জনৈক মহিলা সালাত আদায়ের জন্য গমনকালে পথিমধ্যে তার সাথে একজন পুরুষের দেখা হলে, সে ব্যক্তি জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। সে মহিলা চিৎকার দিলে, তার পাশ দিয়া গমনকালে জনৈক ব্যক্তি এর কারন জানতে চায়। তখন সে মহিলা বলেঃ অমুক ব্যক্তি আমার সাথে এরূপ অপকর্ম করেছে। পরে তার পাশ দিয়ে মুহাজিরদের একটি দল গমনকালে সে মহিলা তাদের বলেঃ অমুক ব্যক্তি আমার সাথে এরূপ কাজ করেছে। তারপর তারা গিয়ে এক ব্যক্তিকে ধরে আনে, যার সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল যে, সে-ই এরূপ করেছে। এরপর তারা সে ব্যক্তিকে উক্ত মহিলার কাছে উপস্থিত করলে, সেও বলেঃ হ্যাঁ। এই ব্যক্তিই এ অপকর্ম করেছে।
তখন তাঁরা সে ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে যায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সে ব্যক্তির উপর শরীআতের নির্দেশ জারী করার মনস্থ করেন, তখন মহিলার সাথে অপকর্মকারী ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যায় এবং বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি-ই অপকর্ম করেছি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মহিলাকে বলেনঃ তুমি চলে যাও, আল্লাহ তোমার অপরাধ মাফ করে দিয়েছেন। এরপর তিনি সে লোকটির সাথে উত্তম ব্যবহার করেন। তখন সাহাবীগন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ব্যভিচারী লোকটিকে পাথর মেরে হত্যা করার নির্দেশ প্রদানের জন্য অনুরোধ করলে, তিনি বলেনঃ লোকটি এমন তাওবা করেছে যে, সমস্ত মদীনাবাসী এরূপ তাওবা করলে, তা কবূল হতো।
ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীস সিমাক (রহঃ) হতে আসতার ইবন নসর (রহঃ)-ও বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আলকামাহ (রহঃ)

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি
পরিচ্ছেদঃ ৭. হাদ্দের অপরাধী উপস্থিত হয়ে স্বীকারোক্তি করলে তার সম্পর্কে
৪৩৭৯। আলকামাহ ইবনু ওয়াইল (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জনৈকা মহিলা সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে এক ব্যক্তি তাকে নাগালে পেয়ে তার উপর চেপে বসে তাকে ধর্ষণ করে। সে চিৎকার দিলে লোকটি সরে পড়ে। এ সময় অপর এক ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে (ভুলবশত) বললো, এ লোকটি আমার সঙ্গে এরূপ এরূপ করেছে। এ সময় মুহাজিরদের একটি দল এ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। স্ত্রীলোকটি বললো, এ লোকটি অমার সঙ্গে এরূপ করেছে। অতএব যার সম্পর্কে মহিলাটি অভিযোগ করেছে তারা দ্রুত এগিয়ে লোকটিকে ধরলো।
অতঃপর তারা তাকে তার নিকট নিয়ে আসলে সে বললো, হ্যাঁ, এ সেই ব্যক্তি। তারা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি তার সম্পর্কে ফায়সালা করতেই আসল অপরাধী দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহ রাসূল! আমিই অপরাধী। তিনি ধর্ষিতা মহিলাটিকে বললেনঃ তুমি চলে যাও, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন আর নির্দোষ ব্যক্তি সম্পর্কে উত্তম কথা বললেন। যে ধর্ষনের অপরাধী তার ব্যাপারে তিনি বললেনঃ তোমরা একে পাথর মারো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে এমন তওবা করেছে যে, মদীনাবাসী যদি এরূফ তওবা করে, তবে তাদের পক্ষ থেকে তা অবশ্যই কবূল হবে।[1]
হাসান, এ কথাটি বাদেঃ ’’তোমরা একে পাথর মারো।’’ অগ্রাধিকারযোগ্য কথা হলো, তাকে পাথর মারা হয়নি।
[1]. তিরমিযী, আহমাদ। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান, গরীব ও সহীহ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আলকামা ইবনে ওয়াইল আল-হাদরামী (রহঃ)

ধর্ষণ 7

যিনার চারজন পুরুষ সাক্ষী

ইসলামী আইনে ধর্ষণ প্রমাণের জন্য যে কুখ্যাত “চারজন পুরুষ সাক্ষী”র বিধানকে বারবার সামনে আনা হয়, তার পেছনে রয়েছে নবীর স্ত্রী আয়িশাকে নিয়ে সংঘটিত এক রাজনৈতিক–পারিবারিক কেলেঙ্কারি, যাকে মুসলিম ঐতিহ্যে “হাদিসুল ইফক” নামে ডাকা হয়। নবীর এক অভিযানে ফেরার পথে আয়িশার সম্পর্কে গুজব ছড়ায়— তিনি নাকি একজন সাহাবীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক করেছেন; কিছু সাহাবী এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিও সেই অপবাদে যুক্ত হয়, এমনকি আলী ইবনে আবি তালিব পর্যন্ত তাকে তালাক দিয়ে অন্য নারীকে বিয়ে করার পরামর্শ দেন বলে বর্ণিত আছে। পরে কোরআনের আয়াত নাজিল হয়ে আয়িশাকে “পবিত্র” ঘোষণা করে, এবং ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই ব্যভিচার–অভিযোগে চারজন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত না থাকলে অভিযোগকারীকে মিথ্যাবাদী ও অপরাধী গণ্য করার বিধান দেওয়া হয়। সূরা নিসার ১৫–১৬ নম্বর আয়াতে প্রথমদিকে যিনার অভিযোগ ও শাস্তির একটা প্রাথমিক কাঠামো দেওয়া হয়, যেখানে চার সাক্ষী আনার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে [43]

“আর নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারিণী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার জন পুরুষকে সাক্ষী হিসেবে তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ করে রাখ, যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্দেশ না করেন। তোমাদের মধ্যে যে দুজন সেই কুকর্মে (ব্যভিচারে) লিপ্ত হয়, তাদেরকে শাস্তি প্রদান কর, অতঃপর তারা যদি উভয়ে তওবা (অনুশোচনা,অনুতাপ) করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, তবে তাদের থেকে হাত গুটিয়ে নাও। নিশ্চই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু।”

পরবর্তীতে সূরা নূরের ১২–১৬ নম্বর আয়াতে আয়িশাকে নিয়ে ছড়ানো অপবাদকে “নির্জলা মিথ্যা” ঘোষণা করা হয় এবং একইসঙ্গে নতুন করে স্পষ্ট করে বলা হয়— কোনো নারীকে ব্যভিচারিণী বলে অভিযুক্ত করতে হলে চারজন সাক্ষী হাজির না করতে পারলে, অভিযোগকারী নিজেই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হবে [44]. এই আয়াতগুলো বহুল ব্যবহৃত হলেও এক বিব্রতকর বাস্তবতা আড়াল করে— শক্তিশালী রাজনৈতিক/ধর্মীয় পরিবারকে কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচানোর জন্য তৈরি এই বিধান, পরবর্তী ইতিহাসে ধর্ষণ–ভুক্তভোগী অসংখ্য নারীর জন্যই এক অদমনীয় আইনি দেয়ালে পরিণত হয়েছে। কারণ ধর্ষণের ঘটনায় চারজন পুরুষের “লাইভ সাক্ষী” হাজির থাকা কার্যত অসম্ভব, এবং এই অযৌক্তিক মানদণ্ডকে ধরে রেখে ভুক্তভোগীর মুখ বন্ধ করার সুযোগ তৈরি হয়।

সূরা নূরের ২ নম্বর আয়াতে যিনা–অভিযুক্ত পুরুষ ও নারীর শাস্তি হিসেবে একশত বেত্রাঘাত নির্ধারণ করা হয়েছে, এবং এই শাস্তি প্রদানের সময় বিশ্বাসীদের একটি দলকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে— যেন এটি একটি প্রকাশ্য নৈতিক প্রদর্শনীতে পরিণত হয় [45]. এখানে কোথাও ধর্ষণ বা ভিক্টিম–প্রোটেকশন নিয়ে কোনো আলাদা আলোচনা নেই; বরং পুরো কাঠামো ব্যভিচারকে “নৈতিক অপরাধ” হিসেবে দেখে— যেখানে মূল লক্ষ্য “সমাজের শুদ্ধতা রক্ষা”, ভিক্টিমের মানবাধিকার নয়।

সূরা নূরের ৪–৫ আয়াতে আরো এক ধাপ এগিয়ে বলা হয়— যারা নিরপরাধ নারীদের ওপর ব্যভিচারের অভিযোগ তোলে এবং চারজন সাক্ষী হাজির করতে পারে না, তাদেরকে আশি বেত্রাঘাত করা হবে এবং ভবিষ্যতে তাদের সাক্ষ্য আর গ্রহণ করা হবে না [46]. প্রথম দৃষ্টিতে এটি “নারীর সম্মান রক্ষার” বিধান বলে মনে হতে পারে— কিন্তু বাস্তবে ধর্ষণের মামলায় এটি ভিক্টিমের জন্য ভয়াবহ হুমকি তৈরি করে: সে যদি চারজন পুরুষ সাক্ষী হাজির করতে না পারে, তাহলে তার অভিযোগকেই “মিথ্যা অপবাদ” হিসেবে দেখা যেতে পারে। ফলে কোরআনিক কাঠামো ভিক্টিমকে উল্টো কাযফ-এর ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়; আর ধর্ষক স্বচ্ছন্দে অস্বীকার করে বেরিয়ে যাওয়ার পথ পায়।

তাফসীরে যাকারিয়ার মতো ক্লাসিকাল ব্যাখ্যাগ্রন্থে এই আয়াতগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে— যিনা প্রমাণের জন্য চারজন পুরুষ সাক্ষীর শর্ত মৌলিক, এবং এই শর্ত পূরণ না হলে অভিযোগ দায়ী ব্যক্তি নিজেই অপরাধী হয়ে যাবে [47]. অর্থাৎ, কোরআন, হাদিস ও তাফসীর–তিন স্তরেই এমন একটি কাঠামো তৈরি হয়েছে, যেখানে ধর্ষণকে প্রায় কখনই আইনি অর্থে প্রমাণ করা সম্ভব নয়— বরং ভিক্টিমের মুখ বন্ধ রাখাই “শরিয়াতের স্বার্থে” নিরাপদ পথ বলে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ধর্ষণ 9

নারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়

ইসলামী শরিয়তের মৌলিক পূর্বধারণা হলো— নারী বুদ্ধিমত্তা, স্মৃতিশক্তি এবং ধর্মীয় দায়িত্ববোধে পুরুষের তুলনায় “অপূর্ণ” বা “ত্রুটিযুক্ত” এক শ্রেণি; তাই তাদের সাক্ষ্যও আইনি প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হয় না। কোরআন এবং সহীহ হাদিস— দু’ জায়গাতেই এই বৈষম্যমূলক অবস্থান স্পষ্টভাবে লেখা আছে। সূরা বাকারা ২৮২ নম্বর আয়াতে ঋণ–লেনদেনের ক্ষেত্রে “দু’জন পুরুষ” না পেলে “একজন পুরুষ ও দু’জন নারী”কে সাক্ষী করার কথা বলা হয়েছে— অর্থাৎ ফৌজদারি–সিভিল উভয় প্রকার আইনি লেনদেনে একজন পুরুষের সমান হতে হলে দুইজন নারীর প্রয়োজন; সরাসরি গণিতের ভাষায় নারী = ½ পুরুষ। আর সহীহ বুখারীর বিখ্যাত হাদিসে নবী নিজেই নারীদেরকে “বুদ্ধি ও দ্বীনে ত্রুটিযুক্ত” বলে ঘোষণা করেছেন— এবং তার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে, একজন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের অর্ধেক, আর মাসিকের সময় সালাত–সিয়াম ছাড়ার বিধান তাদের “দ্বীনের” ঘাটতি [48] [49]

দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা
কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২৮২ )

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬/ হায়য
পরিচ্ছেদঃ ২০৮। হায়য অবস্থায় সওম ছেড়ে দেওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৯৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩০৪
২৯৮। সা’ঈদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) … আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে মহিলা সমাজ! তোমরা সা’দকা করতে থাক। কারন আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা আরয করলেনঃ কী কারনে, ইয়া রাসূলাল্লাহ? তিনি বললেনঃ তোমরা অধিক পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর না-শোকরী করে থাক। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যাক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চাইতে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি।
তাঁরা বললেনঃ আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষের অর্ধেক নয়? তাঁরা উত্তর দিলেন, ’হ্যাঁ’। তখন তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর হায়য অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম থেকে বিরত থাকে না? তাঁরা বললেন, ’হাঁ’। তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের দ্বীনের ত্রুটি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)

এই সরাসরি কোরআনিক–হাদিসি ভিত্তি থেকেই ক্লাসিকাল ফিকহে উন্নীত হয়েছে সেই নির্মম বাস্তবতা— হদ্দকিসাস সংক্রান্ত মারাত্মক গুরুতর মামলায় (যেমন যিনা, ধর্ষণ, হত্যা, শরীরিক গুরুতর আঘাত) নারীর সাক্ষ্য আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্যই নয়; সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে “সহকারি” বা “পরোক্ষ” বিবরণ হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু মূল আইনি প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয় না। অর্থাৎ একজন নারী যদি নিজের ধর্ষণ নিজ চোখে দেখেও, নিজের সঙ্গে যা ঘটেছে তা আদালতে বর্ণনা করেন— ক্লাসিকাল শরিয়া কাঠামোতে তার সেই বক্তব্যকে পূর্ণ আইনি সাক্ষ্য হিসেবে ধরা হয় না, শুধুমাত্র সে নারী বলে। ইসলামি আইন ও বিচার নামের ত্রৈমাসিক ফিকহ–জার্নালে স্পষ্ট লেখা আছে— হদ্দ ও কিসাসের ক্ষেত্রে নারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়; এখানে পুরুষ, মুসলিম এবং “আদিল” হওয়াই সাক্ষ্যের মৌলিক শর্ত [50]

এখানে বিষয়টি শুধু “অর্ধেক সাক্ষ্য” নয়— বরং ধর্ষণের মতো অপরাধে নারীর নিজের কণ্ঠকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া। একজন নারী ধর্ষণের শিকার হন, আবার সেই অপরাধ প্রমাণের প্রক্রিয়াতেও তাকে আইনি দৃষ্টিতে “অর্ধ–মানুষ” হিসেবে বিবেচনা করা হয়; তার চোখ, তার স্মৃতি, তার দেহের ওপর চালানো সহিংসতার বর্ণনা— সবকিছুকে নীতিগতভাবে পুরুষের সাক্ষ্যের নিচে নামিয়ে রাখা হয়। এই কাঠামোতে ভিক্টিম–ব্লেমিং, নীরবতা এবং অপরাধীর নিরাপত্তা— তিনটিই স্বাভাবিক ফল হিসেবে সামনে আসে।

ধর্ষণ 11

সাক্ষ্যদানের শর্তাবলী

ব্যভিচার বা ধর্ষণের মতো যৌন অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়তে প্রায় অসম্ভব–ধরনের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যিনা প্রমাণের জন্য মূলত মাত্র দু’টি পথ রাখা হয়েছে— এবং বাস্তবে এই দু’টি শর্তই ধর্ষণ ভিক্টিমের বিরুদ্ধে কাজ করে।

  • ক. অপরাধীর নিজের স্বীকারোক্তি;
  • খ. চারজন মুসলিম, সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সাক্ষী, যারা ঘটনাটি নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছে।

ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী, যিনার হদ্দ–শাস্তি হল— অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত, আর বিবাহিত হলে পাথর ছুঁড়ে হত্যা (রজম)। কিন্তু এই শাস্তি কার্যকর করার পূর্বশর্ত এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে বাস্তবে এই শাস্তি প্রায় কখনই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়ে কার্যকর না হয়—যদি না অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেই বারবার গিয়ে জোর দিয়ে স্বীকার করে। অন্যথায়, চারজন পুরুষ সাক্ষীকে একসঙ্গে হাজির করতে হবে, যারা প্রত্যক্ষদর্শী; এবং শুধু “শারীরিক সান্নিধ্য” নয়, বরং “সুরমা শলাকা সুরমাদানিতে ঢোকার মতো” পরিষ্কার penetration দেখা লাগবে— এভাবে বিস্তারিত যৌন ভঙ্গির বর্ণনা পর্যন্ত হাদিসে উল্লেখ আছে [51]

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি
পরিচ্ছেদঃ ২৬. দু’ ইয়াহুদীকে রজম করার ঘটনা
৪৪৫২। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদল ইয়াহুদী তাদের মধ্যকার যেনার অপরাধী পুরুষ-নারীকে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হলো। তিনি বলেনঃ তোমাদের মধ্যকার সব চাইতে বিজ্ঞ দু’ জন লোক নিয়ে এসো। অতএব তারা ‘সূরিয়ার’ দু’ পুত্রকে তাঁর নিকট হাযির করলো।
তিনি তাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে প্রশ্ন করেনঃ তোমরা এদের ব্যাপারে তাওরাতে কিরূপ বিধান দেখতে পাও? তারা বললো, আমরা তাওরাতে দেখতে পাই, চারজন সাক্ষী যদি সাক্ষ্য দেয় যে, তারা পুরুষটির গুপ্তাঙ্গ স্ত্রী গুপ্তাঙ্গে এরূপভাবে ঢুকানো অবস্থায় দেখেছে, যেরূপ সুরমা শলাকা সুরমাদানিতে ঢুকানো হয়। তাহলে তাদের উভয়কে রজম করা হবে।
তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তাহলে কোন্ জিনিসটা তোমাদেরকে তাদেরকে রজম করতে বাঁধা দিচ্ছে? তারা উভয়ে বললো, আমাদের শাসনক্ষমতা লোপ পেয়েছে। সুতরাং হত্যা করাকে আমরা অনুমোদন করি না।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাক্ষীদের নিয়ে আসতে ডাকলেন। তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে এলো। তারা সাক্ষ্য দিলো যে, সুরমা শলাকা যেরূপ সুরমাদানির ভিতরে ঢুকে যায় ঠিক সেরূপই তারা পুরুষটির গুপ্তাঙ্গ স্ত্রী লোকটির গুপ্তাঙ্গের মধ্যে ঢুকানোর অবস্থায় দেখেছে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের রজম করার নির্দেশ দেন।(1)
সহীহ।
(1). ইবনু মাজাহ, দারাকুতনী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)

ধর্ষণের মতো অপরাধে এই মানদণ্ড কতটা অবাস্তব, তা নতুন করে ব্যাখ্যা করারও প্রয়োজন নেই। ধর্ষণ সাধারণত একান্ত নির্জন জায়গায়, ক্ষমতার অসমতা ও ভয়ের আবহে ঘটে— সেখানে চারজন “ন্যায়পরায়ণ মুসলিম পুরুষ” চোখের সামনে penetrative intercourse দেখবে— এবং তবুও সেটি আটকে রাখবে, পরের দিন আদালতে গিয়ে গর্বের সঙ্গে বর্ণনা করবে— এমন পরিস্থিতি বাস্তবে কল্পনাতীত। ফলে ইসলামি আইনের এই কাঠামোতে ধর্ষণ প্রমাণ করার আইনি প্রয়োজনীয়তা শুরু থেকেই এমন উঁচুতে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে প্রকৃত অর্থে ভিক্টিমের জন্য ন্যায়বিচার প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়; অপরাধী নিশ্চিন্তে বলতে পারে— “সাক্ষী কোথায়?”

এখানেই আসে ফিকহি কঠোরতার আরেকটি মাত্রা। ফতওয়ায়ে আলমগীরী–সহ ক্লাসিকাল হানাফি ফিকহগ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা আছে— কারা সাক্ষ্য দিতে পারবে, তাদের চরিত্র কেমন হতে হবে, কোন অপরাধে কার সাক্ষ্য বাতিল হবে, কাদের সাক্ষ্য আদৌ গ্রহণযোগ্য নয় ইত্যাদি [52]. সেখানে স্পষ্টভাবে দেখা যায়— নারী, অমুসলিম, দাস, “ফাসেক”, বা যাদের চরিত্র নিয়ে মোল্লাতন্ত্রের সন্দেহ আছে— তাদের সাক্ষ্যকে ধারাবাহিকভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে; এর ফল সরাসরি পড়ে ধর্ষণের মামলায়, যেখানে ভিক্টিম সাধারনত নারী এবং প্রায়ই নিম্নবিত্ত–অসহায় শ্রেণির।

ধর্ষণ 13

উপরের স্ক্যানগুলোতে যেমন দেখা যায়, কে সাক্ষ্য দেবে, কে দেবে না— এসব নিয়ে গোঁড়া তালিকা তৈরি করে ইসলামি আইন ধর্ষিতার জন্য আইনি পথ আরও সঙ্কীর্ণ করে দিয়েছে। “আদালতে দাঁড়িয়ে সত্য কথা বলা”র মতো একটি সাধারণ মানবিক কাজকে এমন এক টেকনিক্যাল জটিল খেলায় পরিণত করা হয়েছে, যেখানে ভিক্টিমের কণ্ঠ প্রায় শুরু থেকেই বাতিল ধরা হয়। ড. আহমদ আলীর ইসলামের শাস্তি আইন গ্রন্থেও একই ধরণের কড়া মানদণ্ডের পুনরাবৃত্তি দেখা যায়; হদ্দ–সম্পর্কিত অপরাধে সাক্ষী হতে হলে পুরুষ, মুসলিম, বালেগ, স্বাধীন, সৎ, সুন্নি— ইত্যাদি একগাদা শর্ত পূরণ করতে হবে; নারী বা অমুসলিম হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই “সুযোগ” থেকে বঞ্চিত [53]

ধর্ষণ 15
ধর্ষণ 17
ধর্ষণ 19
ধর্ষণ 21
ধর্ষণ 23
ধর্ষণ 25
ধর্ষণ 27
ধর্ষণ 29
ধর্ষণ 31

ডিএনএ টেস্ট গ্রহণযোগ্য নয়

ইসলামী শরীয়তের ক্লাসিক্যাল কাঠামোতে হদ্দ–সংক্রান্ত অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞানের কোনো প্রমাণ—অডিও, ভিডিও, ডিএনএ বা যেকোন মেডিকেল টেস্ট—কোনোটাই মূল প্রমাণ হিসেবে গণ্য হয় না। অর্থাৎ, ফরেনসিক রিপোর্ট, ডিএনএ প্রোফাইল, সিসিটিভি ফুটেজ, অডিও–ভিডিও রেকর্ড—এসব কিছুই শরিয়া আদালতে “হদ্দের প্রমাণ” হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। শুধুমাত্র সেইসব পদ্ধতি বা উপায়কে প্রমাণ ধরা হবে, যেগুলোকে প্রথাগত ফিকহ চার–মাজহাবের স্কিমে “শরয়ি দালিল” হিসেবে অনুমোদন করেছে—যেমন চারজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষ প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, অভিযুক্তের সরাসরি স্বীকারোক্তি, কিংবা অবিবাহিত নারীর গর্ভধারণ। এর বাইরে যত ধরনের বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসাগত, বা প্রযুক্তিনির্ভর প্রমাণ আছে, সেগুলোকে ইসলামী শরিয়া আদালতে হদ্দের ক্ষেত্রে সরাসরি বাতিল বলে ধরে নেওয়া হয় [54]

প্রশ্নঃ
আমি জানি যে, অতীতে কাউকে যিনার দায়ে অভিযুক্ত করতে হলে তাদের ৪ জন সাক্ষী নিয়ে আসতে হতো। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান সময়ে ৪ জন সাক্ষী আনার পরিবর্তে কি আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে-যেমন ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে পারি?
উত্তরঃ
সকল প্রশংসা আল্লাহর।
ইসলামী শরিয়াহ অনুসারে, জিনা কেবল সুস্পষ্ট প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হতে পারে, যথা চারজন বিশ্বাসযোগ্য এবং সত্যবাদী সাক্ষী, যারা সরাসরি তা দেখেছিল, বা অভিযুক্ত যদি দোষ স্বীকার করে বা মহিলা যদি গর্ভবতী হয়। উপরে উল্লিখিত প্রমাণের পরিবর্তে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বা ক্যামেরা এবং ভিডিও প্রমাণের সাহায্যে এটি প্রমাণিত হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা ভাল জানেন।
[55]

Question
I know that in the past if someone has committed adultery, they had to bring 4 witnesses .
My question is can we prove that today by using latest scientific methods as the DNA test, instead of bringing 4 witnesses.
Answer
Praise be to Allah.
According to Islamic sharee’ah, zinaa can only be proven by clear evidence, namely the testimony of four trustworthy and sound witnesses who saw it actually happen, or by confession of guilt, or by the woman becoming pregnant. It cannot be proven by DNA testing or by use of cameras and videos in place of the things mentioned above. And Allaah knows best.
Source: Sheikh Muhammed Salih Al-Munajjid

এখানে বিষয়টা পরিষ্কার: ইসলামি কোর্ট যিনা/ধর্ষণের মতো হদ্দ অপরাধে প্রমাণের মানদণ্ডকে ইচ্ছাকৃতভাবে আধুনিকতার বাইরে রেখে, সপ্ত–আট শতকের আদালতসংস্কৃতির ভেতরে আটকে রেখেছে। ডিএনএ টেস্ট—যা আজ পৃথিবীর প্রায় সব আধুনিক ফৌজদারি ব্যবস্থায় সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ, সেটি ইসলামি ফিকহের চোখে কেবল একটি “পরোক্ষ, অনিশ্চিত” ইঙ্গিত, যা চারজন পুরুষ প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের তুলনায় কোনো মূল্যই পায় না। ফলে, একজন গরিব নারী যদি ডিএনএ, মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে শতভাগ নিশ্চিত প্রমাণও এনে দেখান, শরিয়াভিত্তিক হদ্দ আদালত সেই প্রমাণের ওপর ভর করে ধর্ষককে হদ্দের আওতায় আনবে না— কারণ “শরয়ি প্রমাণ” হিসেবে ডিএনএকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

এবারে দেখা যাক, অনলাইনে বহুল ব্যবহৃত আরেকটি ফতোয়া প্ল্যাটফর্ম ইসলাম ওয়েব এ এই একই বিষয়ে কী ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে [56]

Fatwa Title: Proving Rape by Modern Medical Means
Fatwa No: 70220
Fatwa Date: 01/05/2017

As for proving rape by modern medical means, this is impermissible because Allah, the Exalted, enjoined that for zina to be proven, four witnesses must give their testimony, and He identified specific conditions for the testimony to be accepted. Such restrictions are set forth by the sharia in order to conceal people’s sins and safeguard their honor. It is impermissible to renounce these conditions and seek other means that may fail to prove that which is simpler than zina.
Moreover, it is untrue that the factor of witnesses is usually lacking in rape crimes. On the contrary, it is more likely that there are witnesses for rape as the victim would scream and seek help, unlike zina, where both the man and the woman are keen to hide themselves from people.
If we assume that a woman screamed and sought help while being raped and the rapist is caught, then the concerned authority should interrogate him. If he confessed his crime, then his confession is enough and no witnesses are needed in this case. Confession of the perpetrator is the strongest evidence.
Allah knows best.

ধর্ষণ 33

এই ফতোয়াটিতে কয়েকটি চরম সমস্যাজনক দাবি চোখে পড়ে:

১. “ডিএনএ ও মেডিকেল প্রমাণ দ্বারা ধর্ষণ প্রমাণ করা হারাম/impermissible” — কারণ এতে আল্লাহ নির্ধারিত চার সাক্ষীর শর্ত “উপেক্ষা” হয়। অর্থাৎ বাস্তব দুনিয়ায় যে প্রমাণ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য (ফরেনসিক), সেটাকেই আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে যাওয়া বলে ঘোষণা করা হচ্ছে।

২. ধর্ষণের মামলায় “সাক্ষী থাকে না”—এই বাস্তব পর্যবেক্ষণটিকেও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে; বরং উল্টো দাবি করা হচ্ছে, ধর্ষণের ক্ষেত্রে নাকি সাক্ষী থাকার সম্ভাবনা বেশি, কারণ ধর্ষিতা চিৎকার করবে! বাস্তবে ধর্ষণের অধিকাংশ ঘটনাই হয় নির্জন স্থানে, ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে, বা সম্পর্কগত ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে— যেখানে কেউ চিৎকার করলেও নিরাপদ সাক্ষী হাজির হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।

৩. এখানে মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় “গুনাহ ঢেকে রাখা” ও “ইজ্জত রক্ষা”— অর্থাৎ অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে ভিক্টিমকে ন্যায়বিচার দেওয়ার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হচ্ছে, মুসলিম সমাজের সম্মান রক্ষা ও ‘অশ্লীলতার প্রসার’ ঠেকানো। ফতোয়া নিজেই স্বীকার করছে যে এই কড়া শর্তের উদ্দেশ্য হল মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার বদলে, তাদের গুনাহ গোপন রাখা— যার বাস্তব ফলাফল দেখা যায়, ধর্ষণ–ভিক্টিমের কণ্ঠও গোপন হয়ে যায়।


মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখা

ইসলামে অপরাধ গোপন রাখাকে কেন্দ্র করে আরেকটি জনপ্রিয় ধারণা হলো— “মুসলিম ভাইয়ের দোষ ঢেকে রাখলে আল্লাহ তোমার দোষ আখিরাতে ঢেকে রাখবেন।” এই হাদিসটি রিয়াযুস সালেহীনসহ বিভিন্ন গ্রন্থে বারবার উদ্ধৃত হয় এবং খুতবা–বক্তৃতায় প্রায়ই শোনা যায়। ফলে বাস্তবে যা দাঁড়ায়, তা হলো: একজন মুসলিম অপর মুসলিমের অপরাধ, নৈতিক বিচ্যুতি, এমনকি যৌন অপরাধও দেখলেও— “গুনাহ গোপন” করার নীতি দেখিয়ে তার মুখ বন্ধ রাখার উৎসাহ দেওয়া হয়। নিচের হাদিসটি তারই একটি ক্লাসিক উদাহরণ [57]

রিয়াযুস স্বা-লিহীন
১/ বিবিধপরিচ্ছেদঃ ২৮: মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা জরুরী এবং বিনা প্রয়োজনে তা প্রচার করা নিষিদ্ধ
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,অর্থাৎ “যারা মু’মিনদের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।” (সূরা নূর ১৯ আয়াত)
১/২৪৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’’ (মুসলিম) (1)
(1) মুসলিম ২৫৯০, আহমাদ ২৭৪৮৪, ৮৯৯৫
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হদ্দ আইন, চারজন পুরুষ সাক্ষীর শর্ত, ডিএনএ অগ্রহণযোগ্যতা—এর সঙ্গে যখন “দोष ঢেকে রাখো, আল্লাহ তুমার দোষ ঢাকবেন” ধরনের হাদিস যোগ হয়, তখন একটি ভয়াবহ সামাজিক ফলাফল তৈরি হয়: অপরাধী মুসলিমের অপরাধ গোপন রাখা ধর্মীয়ভাবে পুণ্যের কাজ হয়ে যায়, আর ভিক্টিমের ন্যায়বিচার চাইবার অধিকার ধর্মীয় নৈতিকতার বিরুদ্ধে চলে যায়। কেউ যদি ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রত্যক্ষ করেও “এই হাদিসের সওয়াবের” আশায় ধর্ষকের দোষ গোপন রাখতে চায়, তাহলে চারজন সাক্ষী সংগ্রহ তো দূরের কথা, একজন সত্যবাদী সাক্ষী জোগাড় করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।

এই মানসিকতার আরেকটি নমুনা দেখা যায় সেই হাদিসে, যেখানে নবীর এক সাহাবী একটি তরুণীকে মিথ্যা কথা বলে ঘরে নিয়ে, তার অনুমতি ছাড়াই তাকে চুম্বন করে— এবং তারপর বিষয়টি গোপন রাখতে বারবার পরামর্শ দেওয়া হয়। খোলাখুলি বলা হয়, “নিজের মধ্যে রাখ, তওবা করো, কাউকে বলো না।” নবী ঘটনাটি জানার পরও কোন নির্দিষ্ট পার্থিব শাস্তি দেন না; বরং কোরআনের একটি আয়াত পড়ে শোনান যে, “সৎকাজ অসৎ কাজ মুছে দেয়” [58]

সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫০/ কুরআন তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ সূরা হুদ
৩১১৫. আবদুল্লাহ্ ইবন আবদুর রহমান (রহঃ) … আবুল ইউসর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক মহিলা একবার আমার কাছে খেজুর কিনতে আসল। আমি বললামঃ ঘরে আরো ভাল খেজুর আছে, সে তখন আমার সাথে ঘরে প্রবেশ করল। আমি তার দিকে ঝুঁকে তাকে চুমু দেই। পরে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে এসে তার বিষয়টি বললাম। তিনি বললেনঃ নিজের মধ্যে তা গোপন রাখ, আর তওবা কর। এ বিষয়ে কাউকে জানাবে না। কিন্তু (অনুশোচনায়) আমি স্থির থাকতে পারলাম না। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে এসে বিষয়টি বললাম, তিনিও বললেনঃ নিজের মধ্যেই তা গোপন রাখ, আর তওবা কর। এ বিষয়ে কাউকে জানাবে না। কিন্তু (অনুশোচনায়) আমি স্থির তাকতে পারলাম না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বিষয়টি বললাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জেহদরত একজন যোদ্ধার অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রীর বিষয়ে তুমি কি এ ধরনের আচরণ করলে? ফলে সে কামনা করতে লাগল সে যদি পূর্বে ইসলাম গ্রহণ না করে এ মুহূর্তে ইসলাম গ্রহণ করত এবং ধারণা করতে লাগল যে, সে জাহান্নামী হয়ে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেকক্ষণ মাথা নীচু করে রইলেন অবশেষে তাঁর কাছে ওহী এলঃ
أَقِمِ الصَّلاَةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ
সালাত (নামায)কায়েম কর দিনের দু’প্রান্ত ভাগে ও রাতের প্রথমাংশে। সৎকাজ অবশ্যই অসৎ কাজ মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে এ তাদের জন্য এক উপদেশ (১১ : ১১৪)।
আবুল ইউসর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমি তাঁর কাছে হাযির হলাম। রাসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এই আয়াত তিলাওয়াত করে শোনালেন। সাহাবীগণ বললেনঃ এটি কি বিশেষ করে এরই জন্য না সব মানুষের জন্য। তিনি বললেনঃ না বরং এ সব মানুষের জন্যই।
এ হাদীসটি হাসান-সহীহ-গারীব। রাবী কায়স ইবন রবী কে ওয়াকী’ (রহঃ) প্রমুখ হাদীসবিদগণ যঈফ বলেছেন। শরীক (রহঃ)-ও এটি উছমান ইবন আবদুল্লাহ্ সূত্রে কায়স ইবন রবী’ (রহঃ) এর রিওয়ায়াতের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এ বিষয়ে আবূ উসামা, ওয়াছিলা ইবন আসকা’ ও আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবুল ইউসর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নাম কা’ব ইবন আমর।
হাসান, তিরমিজী হাদিসঃ ৩১১৫ [আল মাদানী প্রকাশনী]
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)

ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার প্রেক্ষিতে এই নীতির প্রভাব মারাত্মক: অপরাধী মুসলিমের সুনাম ও “ইজ্জত” রক্ষার দোহাই দিয়ে ভিক্টিমকে চুপ থাকতে বলা যায়, আর চারজন পুরুষ সাক্ষী ও ডিএনএ–অগ্রহণযোগ্যতার যুক্তি দেখিয়ে তার অভিযোগকে অনায়াসে হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া যায়। ফলে “গোপন রাখো, আল্লাহ ঢেকে রাখবেন”—এই ধর্মীয় স্লোগান ধীরে ধীরে ধর্ষক ও নির্যাতকের সুরক্ষা–বর্মে পরিণত হয়।


যিনা প্রমাণে ব্যর্থ হলে উল্টো শাস্তি

এবারে দেখা যাক, যিনা বা ধর্ষণের অভিযোগ তুলেও যদি কেউ প্রমাণ দেখাতে না পারে—তাহলে ইসলামী আইন তার সঙ্গে কী করে। আগে একটি ক্লাসিক ফিকহি টেক্সটের বক্তব্য দেখে নেই, যেখানে বলপূর্বক সহবাসের অভিযোগকারিণী নারীর প্রতি মালিকি ফিকহ কী ধরনের আচরণের প্রস্তাব রেখেছে [59] [60]

মুয়াত্তা মালিক
৪১. হুদুদের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ৪. কোন নারীকে হরণ করিয়া বল প্রয়োগে সহবাস করা হইলে তাহার হুকুম
মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে সমস্ত রমণী গর্ভবতী হয়, অথচ তাহদের কোন স্বামী না থাকে আর তাহাদের কেহ বলে, তাহার সহিত বলপূর্বক ব্যভিচার করা হইয়াছে অথবা বলে, আমি বিবাহ করিয়াছি, তবে তাহার এই কথা ধর্তব্য নহে, বরং তাহার উপর শাস্তির বিধান করা হইবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে বিবাহের কোন সাক্ষী উপস্থিত করিতে অসমর্থ হইবে অথবা সে নিজের অসমর্থতার জন্য সাক্ষী না আনিবে। যেমন এক অবিবাহিতা রমণী এই অবস্থায় কাঁদিতে কাঁদিতে আসিবে যে, তাহার লজ্জাস্থান হইতে রক্ত নিরর্গত হইতেছে, আর সে কুমারী ছিল (ব্যভিচারের সময়) অথবা চিৎকার করিবে আর লোক একত্র হইয়া তাহার এই অবস্থা দেখিবে অথবা এই ধরনের অন্য কোন নিদর্শন। এই সব কিছুই সে না করিলে তাহাকে শাস্তি দেওয়া হইবে, আর তাহার কথা বিশ্বাস করা হইবে না।
মালিক (রহঃ) বলেন, যদি কেহ কোন রমণীর সহিত বলপূর্বক সহবাস করে, তবে তিন হয়েয অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে সে বিবাহ করিবে না। যদি গর্ভ হওয়ার সন্দেহ হয়, তবে গর্ভের সন্দেহ দূর না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ করিবে না।
হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু আনাস (রহঃ)

ধর্ষণ 35

এই মালিকি মতামতের কাঠামোতে, একজন অবিবাহিতা নারী যদি গর্ভবতী হন এবং দাবি করেন যে তাকে বলপূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছে, বা বলেন তিনি গোপনে বিবাহ করেছিলেন— তবুও কেবল তার কথায় বিশ্বাস করা হবে না। তাকে শাস্তি (যিনা–শাস্তি) থেকে বাঁচতে হলে, তাকে প্রায় অসম্ভব কিছু কন্ডিশন পূরণ করতে হবে: যেমন ব্যভিচারের মুহূর্তেই চিৎকার করা, রক্তাক্ত অবস্থায় লোক জড়ো করা ইত্যাদি। এ রকম নাটকীয় “লাইভ প্রমাণ” যদি না থাকে, তবে তাকে অপরাধী হিসেবেই ধরা হবে। এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, ফোকাস ধর্ষকের অপরাধ প্রমাণে নয়; বরং নারীর প্রতি সর্বোচ্চ সন্দেহ রেখে তাকে শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া খুঁজে বের করার দিকে।


এবারে দেখা যাক, যিনা–অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে কোরআন নিজেই কী শর্ত বেধে দিয়েছে, এবং সেই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে অভিযোগকারীর পরিণতি কী হওয়া উচিত। সূরা আন নূরের ১৩ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, যিনা–অভিযোগ তুলেও যদি চারজন সাক্ষী হাজির না করা যায়, তাহলে চার্জ–তুলনেচ্ছু ব্যক্তিরাই আল্লাহর দৃষ্টিতে মিথ্যাবাদী [61]

তারা কেন এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী নিয়ে আসল না? সুতরাং যখন তারা সাক্ষী নিয়ে আসেনি, তখন তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী। ( অনুবাদঃ আল-বায়ান )
তারা চারজন সাক্ষী হাযির করল না কেন? যেহেতু তারা সাক্ষী হাযির করেনি সেহেতু আল্লাহর নিকট তারাই মিথ্যেবাদী। ( অনুবাদঃ তাইসিরুল )
তারা কেন এ ব্যাপারে চার জন সাক্ষী হাযির করেনি? যেহেতু তারা সাক্ষী হাযির করেনি, সেই কারণে তারা আল্লাহর বিধানে মিথ্যাবাদী। ( অনুবাদঃ মুজিবুর রহমান )
Why did they (who slandered) not produce for it four witnesses? And when they do not produce the witnesses, then it is they, in the sight of Allah, who are the liars. ( Sahih International )

এই আয়াতের তাফসীর–সাহিত্যে বারবার বলা হয়েছে, চারজন সাক্ষী না থাকলে যিনা–অভিযোগকারী নিজেই “কাজফ” বা মিথ্যা অপবাদদাতা হিসেবে দণ্ডনীয়। জালালাইন, মাযহারী—এসব ক্ল্যাসিক তাফসীরে আয়াতটির ব্যাখ্যায় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যে কেউ চারজন সাক্ষী না এনে ব্যভিচারের অভিযোগ করলে, সে আল্লাহর বিধানে মিথ্যাবাদী এবং তার জন্য শাস্তি নির্ধারিত [62] [63]

ধর্ষণ
ধর্ষণ 38
ধর্ষণ 40
ধর্ষণ 42
ধর্ষণ 44

এর সঙ্গে আরেকটি শর্ত যোগ হয়: যেকোনো ধরনের প্রমাণের মধ্যে ডিএনএ, অডিও–ভিডিও, মেডিকেল রিপোর্ট কিছুই হদ্দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই ধর্ষণ বা জোরপূর্বক যিনার অভিযোগ তুললে—চারজন পুরুষ সাক্ষী না পেলে, আধুনিক ফরেনসিক প্রমাণ আদালতের কাছে শূন্য; অভিযোগকারীর ওপরই “কাজফ” বা মিথ্যা অপবাদের শাস্তি জারি হতে পারে। সহীহ বুখারীর একটি হাদিস এই নীতিটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে—“প্রমাণ না দিলে, অভিযোগকারীর পিঠেই বেত্রাঘাত” [64]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৪/ শাহাদাত
পরিচ্ছেদঃ ১৬৬৩. কেউ কোন দাবী করলে কিংবা (কারো প্রতি) কোন মিথ্যা আরোপ করলে তাকেই প্রামাণ করতে হবে এবং প্রমাণ সন্ধানের জন্য বের হতে হবে
২৪৯৩। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হিলাল ইবনু উমাইয়া নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তার স্ত্রী বিরুদ্ধে শারীক ইবনু সাহমা এর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ করলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হয় তুমি প্রমাণ (সাক্ষী) পেশ করবে, নয় তোমার পিঠে (বেত্রাঘাতের) দন্ড আপতিত হবে। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমাদের কেউ কি আপন স্ত্রী উপর অপর কোন পুুরুষকে দেখে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য ছুটে যাবে? কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই কথা (বার বার) বলতে থাকলেন, হয় প্রমাণ পেশ করবে, নয় তোমার পিঠে বেত্রাঘাতের দন্ড আপতিত হবে। তারপর তিনি লি’আন (لعان) সংক্রান্ত হাদীস বর্ণনা করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

এই নীতি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে ধর্ষণ–ভিক্টিমের জন্য আইনি ঝুঁকি দ্বিগুণ: একদিকে সে ধর্ষণের শিকার; অন্যদিকে চারজন পুরুষ প্রত্যক্ষদর্শী হাজির করতে না পারলে, উল্টো “মিথ্যা অপবাদ”–এর অভিযোগে আটষট্টি/আশি বেত্রাঘাত বা কারাদণ্ড–জরিমানার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাকিস্তানের “হুদুদ অর্ডিন্যান্স”–এর পুরনো ধারা এই চিন্তাকাঠামোকেই আইনে রূপ দিয়েছিল—সেখানে ধর্ষণ প্রমাণে ব্যর্থ নারী নিজেই কাজফের আসামি হয়ে যেত [65]

“The Offence of Qazf (Enforcement of Hudood) Ordinance of 1979”. It described the offence of false accusation of Zina (fornication and adultery) either written, verbal or “by visible representations”, with intent to cause harm, and without producing four witnesses in support of the accusation before the Court, or who “according to the finding of the Court”, a witness has given false evidence of the commission of zina or rape, or when a complainant has made a false accusation of rape;
– Proof of “qazf liable to hadd” includes the accused confessing to it in court, the accused committing qazf in court, or if two Muslim adult male witnesses (other than the victim of the qazf) testify that the defendant committed qazf. (If the accused is a non-Muslim, the witnesses may be non-Muslims.)
– Punishment of “qazf liable to hadd” will be a whipping numbering 80 stripes.
– “Qazf liable to Tazir” applies whenever
– proof in any of the forms mentioned above is not available,
– or when the perpetrator has committed ‘qazf’ against any of his descendants,
– or when the victim of qazf has died during the “pendency of the proceedings”;
– punishment of “qazf liable to tazir” shall be imprisonment for up to two years, a whipping of up to 40 stripes, and may also include a fine.


অর্থাৎ ইসলামী হদ্দ আইন, চারজন পুরুষ সাক্ষীর শর্ত, ডিএনএ–অগ্রহণযোগ্যতা, গুনাহ গোপন রাখার উৎসাহ, আর কাজফের শাস্তি—সব মিলিয়ে একটি এমন কাঠামো দাঁড়ায়, যেখানে ধর্ষকের জন্য রক্ষাকবচ অনেকগুলো; আর ধর্ষিতা নারীর জন্য ন্যায়বিচারের পথ প্রায় বন্ধ, উল্টো আইনি প্রতিশোধের ভয় সবসময় মাথার ওপর ঝুলন্ত তলোয়ারের মতো ঝুলে থাকে।


চারজন না পেলে সাক্ষীদেরই শাস্তি

ইসলামী ফিকহ অনুযায়ী যিনা প্রমাণের জন্য যে চারজন প্রাপ্তবয়স্ক, সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ মুসলিম পুরুষ সাক্ষীর শর্ত রাখা হয়েছে, সেই শর্ত পূরণ না হলেই উল্টো সাক্ষীদের বিরুদ্ধেই শাস্তি কার্যকর হয়। চারজনের বদলে যদি মাত্র তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী থাকে, কিংবা চারজনের এক জন অন্ধ, গোলাম অথবা ন্যায়পরায়ণতার শর্ত পূরণ না করে— তাহলে যিনা প্রমাণিত তো হবেই না, উপরন্তু এই তিনজন অথবা অসম্পূর্ণ সাক্ষ্য প্রদানকারীদেরকেই “অপবাদদাতা” বলে ধরে নিয়ে তাদের ওপর হদ্দে কাযফের শাস্তি আরোপ করা হবে। অর্থাৎ, যারা অপরাধ প্রমাণের জন্য এগিয়ে আসছে, শরীয়তের চোখে তারাই হয়ে যায় “মিথ্যাচারকারী”। একটু ভেবে দেখুন— এমন আইনি কাঠামোর মধ্যে থাকলে, কোন সুস্থ ব্যক্তি কি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী হবে? যখনই নিশ্চিত চারজন পূর্ণ শর্তসম্পন্ন সাক্ষী না পাওয়ার ঝুঁকি থাকে, তখন সাক্ষ্যদানের মানে দাঁড়ায় নিজের জন্যই আশি বেত্রাঘাতের শাস্তি ডেকে আনা! [66]

ধর্ষণ 46

উমরের শাসনামলে চারজন সাক্ষীর বিধান

খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের খিলাফতের সময় মুগীরা ইবনু শু‘বা ছিলেন মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী গভর্নরদের একজন। তিনি কখনও বাহরাইনের, কখনও বসরা ও কুফার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন; পরবর্তীতে মুয়াবিয়ার আমলেও কুফার গভর্নর ছিলেন। উমরের হত্যাকারী আবু লুলু মূলত এই মুগীরারই দাস ছিল— অর্থাৎ মুগীরার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান কতটা শক্তিশালী ছিল, তা এই তথ্যেই পরিষ্কার।

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে, এক পর্যায়ে মুগীরা ইবনু শু‘বার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবৈধ যৌন সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি বিচারিক প্রক্রিয়ায় গড়ায়, এবং তখনই বাস্তবে পরীক্ষা হয় “চারজন সাক্ষীর” বিধানের। ইসলামী শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যভিচার প্রমাণের জন্য চারজন পুরুষ সাক্ষীকে এমনভাবে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করতে হবে, যেন তারা স্পষ্টভাবে দেখতে পায়— পুরুষের জননাঙ্গ ঠিক সুরমা শলাকা সুরমাদানির ভিতরে ঢোকার মত প্রত্যক্ষ সহবাসের অবস্থায় আছে। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার বর্ণনা অনুযায়ী, মুগীরার বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগের ঘটনাস্থলে চারজন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন শপথ করে বললেন, তারা ঠিক এইরকম অবস্থায় সরাসরি সহবাস হতে দেখেছেন। কিন্তু চতুর্থ জন স্বীকার করলেন, তিনি এত কাছ থেকে পরিষ্কার করে দেখতে পাননি, তাই আগের তিনজনের মতো নির্দ্বিধায় সাক্ষ্য দিতে তিনি রাজি নন।

ফল কী হলো? শরীয়তের কঠোর ফর্মুলা অনুযায়ী “চারজন সুরমাশলাকা–সুরমাদানি পর্যায়ের প্রত্যক্ষদর্শী” পাওয়া গেল না বলে ব্যভিচারকেই আর প্রমাণিত ধরা হলো না। মুগীরা ইবনু শু‘বার উপর এ কারণে কোনো হদ্দ বা রজমের শাস্তি কার্যকর করা হয়নি। অথচ ঘটনার পর খলিফা উমরের মন্তব্য ও আচরণ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়— তিনি অন্তরে পুরোপুরি বিশ্বাস করতেন যে, মুগীরা সত্যিই অবৈধ যৌন কাজে লিপ্ত হয়েছিল। চারজন সাক্ষীর শর্ত, এবং তাদের এক জনের সামান্য দ্বিধা— পুরো মামলাকে কীভাবে উল্টে দিল, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার বর্ণনা পড়লেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়। [67]

ধর্ষণ 48
ধর্ষণ 50
ধর্ষণ 52

তা’যীর শাস্তির বিধান

ইসলামী ফিকহে অপরাধের শাস্তি broadly দুই ভাগে ভাগ করা হয়— (১) নির্দিষ্ট ও স্থির শাস্তি, অর্থাৎ হদ্দ ও কিসাস; (২) বিচারকের বিবেচনাধীণ লঘু বা পরিবর্তনশীল শাস্তি, যাকে বলা হয় তা’যীর। হদ্দ ও কিসাসের ক্ষেত্রে অপরাধ ও শাস্তি দুটোই নির্দিষ্ট, বিচারকের এখতিয়ার নগণ্য; কিন্তু তা’যীরের ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটাই বিচারকের “ইজতিহাদ” ও ব্যক্তিগত বিবেচনার উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে কোন অপরাধীকে কতটুকু শাস্তি দেয়া হবে, আদৌ শাস্তি দেয়া হবে কি না, নাকি কেবল কিছু আর্থিক জরিমানা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে— সবই নির্ভর করছে স্থান, কাল, সামাজিক প্রভাব আর বিচারকের মনোভাবের উপর।

ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে, যদি চারজন পুরুষ সাক্ষী হাজির করা না যায় কিংবা অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজে মুখে মুখে অপরাধ স্বীকার না করে, তবে শরীয়তের দৃষ্টিতে “যিনা” প্রমাণই হয় না। কিন্তু ধর্ষিতা নারী বা অন্য কেউ যদি কিছু পারিপার্শ্বিক প্রমাণ হাজির করতে পারে— যেমন নির্যাতনের শারীরিক চিহ্ন, রক্তাক্ত অবস্থা, গুরুতর আঘাত, বা অন্য কোনো এমন ক্লু যা বলপ্রয়োগ স্পষ্ট করে— তখন সেটি “যিনা” নয়, বরং “জুলুম” বা “আঘাত” হিসেবে ধরা হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে হদ্দের বদলে তা’যীরের আওতায় একটি সীমিত শাস্তি দেয়ার সুযোগ থাকে। তবে সেটি হবে “ধর্ষণ” বা “যিনা” অপরাধের শাস্তি নয়, বরং জুলুম বা নির্যাতনের কারণে প্রদত্ত লঘু দণ্ড। সেইসাথে, শরীয়তের বিধান অনুযায়ী তা’যীরের ক্ষেত্রে বিচারক সমাজের প্রভাবশালী বা গণ্যমান্য মুসলিমদের সুপারিশও বিবেচনায় নিতে পারেন; কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি চাইলে অভিযুক্তের শাস্তি হালকা করা বা পুরোপুরি মওকুফ করার সুপারিশ করতে পারেন। কিন্তু হদ্দের ক্ষেত্রে এ ধরনের সুপারিশ, লবিং বা “দয়া করে ক্ষমা করে দিন” ধরনের ভাষণ গ্রহণ করা শরীয়তিভাবে বৈধ নয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোনও ধর্ষণ–অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি চার সাক্ষীর শর্ত পূরণ না হওয়ার কারণে হদ্দের আওতার বাইরে চলে গিয়ে তা’যীরের আওতায় পড়ে— তাহলে সর্বোচ্চ কী শাস্তি তার হতে পারে? সহীহ হাদিস অনুযায়ী, তা’যীরের ক্ষেত্রে শাস্তির সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ দশ বেত্রাঘাতে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলসহ অনেক আলেম এই হাদিসের ভিত্তিতে স্পষ্ট মত দিয়েছেন— নির্দিষ্ট হদ্দের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন অপরাধে দশ কশাঘাতের বেশি শাস্তি দেয়া শরীয়তসম্মত নয় (যদিও কিছু ফকিহ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন)। নিচের হাদিসটি এই সীমারেখা খুব স্পষ্টভাবে দেখায়ঃ [68]

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩০। অপরাধের (নির্ধারিত) শাস্তি
পরিচ্ছেদঃ ৯. তাযীর এর বেত্ৰাঘাতের পরিমাণ
৪৩৫২-(৪০/১৭০৮) আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) ….. আবূ বুরদাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, কাউকে যেন আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অপরাধের নির্দিষ্ট হদ্দ (দণ্ড) ব্যতীত দশ বেত্ৰাঘাতের বেশী বেত্ৰাঘাত না করা হয়।
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৩১১, ইসলামিক সেন্টার ৪৩১২)
(যে অপরাধ হদযোগ্য (নির্দিষ্ট দন্ডযোগ্য) নয়- এ জাতীয় অপরাধের কারণে যে শাস্তি প্রদান করা হয় তাকে তাযীর বলা হয়।)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ বুরদা (রহঃ)

অর্থাৎ, এই হাদিসকে ভিত্তি ধরে বিচার করলে, ধর্ষণ–প্রতিবাদী কোনও নারী চারজন পুরুষ সাক্ষী উপস্থাপন করতে না পারায় হদ্দের শাস্তি প্রয়োগ সম্ভব না হলেও, তা’যীরের আওতায় সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মাত্র দশটি বেত্রাঘাত— সেটাও পুরোপুরি বিচারকের সদিচ্ছা ও ব্যাখ্যার উপর নির্ভরশীল। এখন আরও কিছু সহীহ হাদিস দেখা যাক, যেখানে একই সীমা পুনরায় স্পষ্ট করা হয়েছেঃ [69] [70] [71] [72] [73]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭৫/ কাফের ও ধর্মত্যাগী বিদ্রোহীদের বিবরণ
পরিচ্ছেদঃ ২৮৬২. শাস্তি ও শাসনের পরিমান কতটুকু
৬৩৮৪। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ আল্লাহর নির্ধারিত হদ সমুহের কোন হদ ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে দশ কশাঘাতের ঊর্ধ্বে দন্ড প্রয়োগ করা যাবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবু বুরদা ইবন নিয়ার (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭৫/ কাফের ও ধর্মত্যাগী বিদ্রোহীদের বিবরণ
পরিচ্ছেদঃ ২৮৬২. শাস্তি ও শাসনের পরিমান কতটুকু
৬৩৮৬। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আবূ বুরদা আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর হদসমূহের কোন হদ ব্যতীত অন্যত্র দশ কশাঘাতের বেশি প্রয়োগ করা যাবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবু বুরদা ইবন নিয়ার (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩০/ অপরাধের শাস্তি
পরিচ্ছেদঃ ৮. তাযীর এর বেত্রাঘাতের পরিমাণ
৪৩১১। আহমাদ ইবনু ঈসা (রহঃ) … আবূ বুরদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, কাউকে যেন আল্লাহ তা’আলার নির্ধারিত হদ্দ জাতীয় অপরাধ ব্যতীত অন্য কোন অপরাধে দশ বেত্রাঘাতের অধিক বেত্রাঘাত না করা হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবু বুরদা ইবন নিয়ার (রাঃ)

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৩/ শাস্তির বিধান
পরিচ্ছেদঃ ৩৮. শাস্তি সম্পর্কে।
৪৪৩২. কুতায়বা ইবন সাঈদ (রহঃ) …. আবূ বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি ব্যতীত, অন্য কোন শাস্তি, দশ কোড়ার বেশী প্রদান করা যাবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবু বুরদা ইবন নিয়ার (রাঃ)

ধর্ষণ 54

উপসংহার

এখন পর্যন্ত আলোচিত সবকিছু একসাথে রেখে দেখলে খুব সহজেই বোঝা যায়— বাস্তব পৃথিবীতে কোনও ধর্ষিতা নারী কখনোই “চারজন ন্যায়পরায়ণ মুসলিম পুরুষ সাক্ষী” সঙ্গে নিয়ে ধর্ষিত হতে যায় না। আবার ধরুন, কাকতালীয়ভাবে চারজন পুরুষ কাছ থেকে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করলও; হাদিস অনুযায়ী তাদেরকে এমনভাবে সহবাস দেখতে হবে, যেন সুরমা–শলাকা সুরমাদানির ভিতরে ঢুকে যাওয়ার মত স্পষ্ট প্রবেশ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেউ যদি এত কাছ থেকে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখেই বা থাকে, তাহলে কি সে সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ সাক্ষী, নাকি বাস্তবে সে ওই অপরাধী দলের অংশ? কোনো প্রতিরোধ করার চেষ্টা না করে এই চারজন যদি চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুধু “দেখে” যায়, তাহলে তাদেরকে কি ধর্ষকের সহযোগী না ধরে উপায় থাকে?

তারও পর আছে সাক্ষীর যোগ্যতার দীর্ঘ শর্তাবলি— সাক্ষীকে মুসলিম হতে হবে, পুরুষ হতে হবে, ন্যায়পরায়ণ ও সত্যবাদী হতে হবে, ফাসিক বা সমাজে বদনামি হওয়া যাবে না, বিবরণ দিতে হবে একই রকম ভাষায়— বাস্তবে এগুলোর সব একসাথে পূরণ হওয়া প্রায় অসম্ভব। ফলে বাস্তব জীবনে এই আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে ধর্ষণ প্রমাণ করা কার্যত অতি দুর্লভ এক ঘটনা। এর স্বাভাবিক ফল হচ্ছে, অধিকাংশ ধর্ষণ মামলা কখনোই আদালত পর্যন্ত পৌঁছায় না; পৌঁছালেও প্রমাণের বেড়াজালে গিয়ে আটকে থাকে। ধর্ষিতা নারী, তার পরিবার এবং সমাজ— সবাই মিলে “ঝামেলা নেয়ার” চাইতে চুপ করে থাকার পথটাই বেশি নিরাপদ মনে করে।

রক্ষণশীল ও ধর্মীয় সমাজে নারীরা আগেই নানা ধরনের সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে জীবন কাটায়— চলাফেরা, পোশাক, পেশা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সবকিছু নিয়েই সেখানে অসংখ্য অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা কাজ করে। তার উপর ধর্ষণের মতো ট্রমাটিক অভিজ্ঞতার পর যদি আইনি কাঠামোও এমন হয় যে, কেবল অভিযোগ করলেই উল্টো নিজের ওপর বেত্রাঘাতের ঝুঁকি, সামাজিক লজ্জা আর “মিথ্যেবাদী” তকমা মাথায় নেয়ার সম্ভাবনা— তাহলে কোন মেয়ে স্বেচ্ছায় আদালতের সামনে দাঁড়াতে চাইবে? ফলে এই ধরনের আইন বাস্তবে ধর্ষণ কমায় না; বরং ধর্ষকের পক্ষে এক ধরনের নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করে, আর ধর্ষিতাকে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে বাস্তবে আমাদের করণীয় কী? প্রথমত, পরিবার পর্যায় থেকেই সন্তানদের সামনে একটি ভিন্ন বার্তা স্পষ্টভাবে পৌঁছে দিতে হবে— “নারী দুর্বল, অক্ষম, অবলা”— এই পুরনো ধর্মীয়–সামাজিক গল্প ভেঙে দিয়ে তাদের শেখাতে হবে যে, মানুষ হিসেবে নারী–পুরুষ কেউই কারও চেয়ে কম নয়। প্রত্যেক মানুষের নিজের শরীর, সম্মান ও জীবনের উপর নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে। আপনার মেয়েকে বাক্সবন্দি করে রাখার চেয়ে অনেক বেশি জরুরি হচ্ছে, আপনার ছেলেকে শেখানো— সে যেন কখনো এমন কোনও কাজ না করে, যার কারণে তার মা, বোন বা বন্ধু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলতে বাধ্য হয়।

দ্বিতীয়ত, স্কুল–কলেজ পর্যায়ে বৈজ্ঞানিক ও মানবিক ভিত্তির উপর দাঁড়ানো যৌনশিক্ষা চালু করা জরুরি। বাচ্চারা যেন নিজের শরীর, সীমা, সম্মতি, নির্যাতন এবং নিরাপত্তা— এসব বিষয়ে খোলামেলা ও তথ্যভিত্তিক ধারণা নিয়ে বড় হয়, এবং কোনো সমস্যায় পড়লে নির্ভরযোগ্য বড়দের (অভিভাবক বা শিক্ষক) জানাতে লজ্জা বা অপরাধবোধ না করে। ধর্ষণের শিকার হওয়া মানে সে নিজেই দোষী— এই ভয়াবহ ধারণা ভেঙে দিতে হবে। পাশাপাশি আইনের ভিতরেও নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক ধারা, সাক্ষ্য–বিধি এবং প্রমাণের অযৌক্তিক বাধাগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন; যাতে ভিক্টিমের কথা গুরুত্ব পায়, আর অপরাধীর প্রতি নয়, বরং ভুক্তভোগীর প্রতি সহমর্মিতা দেখানো হয়।

মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, যে গোষ্ঠীকে আমরা “মানুষের মতো মানুষ” বলে কল্পনা করতে শিখি না, যাদের কে কাছে থেকে চিনি না— তাদের প্রতি সহিংসতা দেখাতে আমাদের ভিতরে আপত্তি কম কাজ করে। নারীকে যদি সব সময় “পরের মেয়ে”, “পরের ইজ্জত”, “অর্ধমস্তিষ্ক” কিংবা “দ্বীনে ত্রুটিপূর্ণ” হিসেবে শেখানো হয়, তখন তাকে মানুষ হিসেবে সমান মর্যাদা দেয়া, কিংবা তার উপর আক্রমণকে অপরাধ হিসেবে দেখা— দুটোই কঠিন হয়ে পড়ে। মৃত্যু–দণ্ডের মতো বর্বর শাস্তি দিয়ে সমস্যাকে ঢাকতে গেলে মূল সামাজিক ও মানসিক কাঠামো অপরিবর্তিতই থেকে যায়। দরকার হচ্ছে— কেন ধর্ষক ধর্ষণ করে, কীভাবে ক্ষমতা, ধর্ম, লজ্জা আর নীরবতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে— সেই মনস্তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করা এবং শিক্ষা–সংস্কৃতি–আইনের সম্মিলিত মাধ্যমে ভেঙে ফেলা।

এই পুরো আলোচনার সারমর্ম, সংক্ষেপে বলা যায়— প্রথমত, গবেষণা ও পরিসংখ্যান দেখায় যে, কড়া শাস্তি, বিশেষ করে মৃত্যুদণ্ড, ধর্ষণ রোধে কার্যকর কোনও “ডিটারেন্ট” হিসেবে কাজ করছে না; বরং অনেক ক্ষেত্রে মামলা করার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়ে ভিক্টিমকে আরও নীরব করে দেয়। দ্বিতীয়ত, শরীয়াহর ক্লাসিকাল বিধান অনুযায়ী ধর্ষণকে যিনা–কেন্দ্রিক প্রমাণ–ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকিয়ে যে বিচার কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবে ভুক্তভোগীর পক্ষে নয়, বরং অপরাধীর পক্ষেই বেশি নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করে— যা আধুনিক মানবাধিকার, ফরেনসিক বিজ্ঞান এবং ন্যায়বিচারের ন্যূনতম মানদণ্ডের সাথেও স্পষ্ট বিরোধ তৈরি করে।

তাই প্রশ্নটা এখন খুব সোজা— আপনি কি এমন আইন ও বিচারব্যবস্থা চান, যেখানে ধর্ষণ প্রমাণ করাই প্রায় অসম্ভব, যেখানে সাক্ষ্য দিতে গেলেই নিজেকে বেত্রাঘাত ও কারাদণ্ডের ঝুঁকিতে ফেলতে হয়, আর যেখানে ধর্ষক বেঁচে যায় “চারজন সাক্ষী” ও “সুরমা শলাকা–সুরমাদানি”র অদ্ভুত শর্তের আড়ালে? নাকি আপনি এমন আইন চান, যেখানে ভুক্তভোগীর কথা, ফরেনসিক প্রমাণ, ডিএনএ টেস্ট, মেডিক্যাল রিপোর্ট, সিসিটিভি ফুটেজ, মানসিক ট্রমা— সবকিছুকে একসাথে বিবেচনায় নিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়? পাঠকের হাতে সিদ্ধান্ত— আপনি ঠিক কোন ধরনের বিচারব্যবস্থাকে আপনার দেশ, আপনার সমাজ, আর আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ মনে করেন?


Independent AI Review
তথ্যগত সঠিকতা
  • কোরআন ও হাদিসভিত্তিক বর্ণনা – বিশেষ করে সূরা নূর ও সূরা নিসার আয়াত, চারজন পুরুষ সাক্ষীর শর্ত, যিনা–শাস্তি (বেত্রাঘাত ও রজম) এবং ধর্ষণকে অনেক ফকিহের কাছে যিনার উপশ্রেণী বা হিরাবাহ/ফিতনা–ফ্যাসাদ হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস – মোটের ওপর ক্লাসিকাল ফিকহ ও তাফসিরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
  • নারীর সাক্ষ্য, হদ্দ মামলায় নারীর অগ্রহণযোগ্যতা, এবং পাকিস্তানের পুরনো হুডুদ ও কাযফের আইনসহ আধুনিক ফতোয়াবিষয়ক সাইট (IslamQA, Islamweb)–এর উদ্ধৃতি ব্যবহার করে ডিএনএ/মেডিকেল–প্রমাণ কেন হদ্দ মামলায় বাতিল ধরা হয় – এই অংশটাও মূলধারার ফিকহি অবস্থানের সঠিক প্রতিফলন দেয়।
  • কিছু জায়গায় ভাষা কঠোর ও জেনারালাইজিং – যেমন “ইসলাম নারীকে ভোগ্যপণ্য মনে করে” বা “মৃত্যুদণ্ড কখনো ধর্ষণ রোধে সহায়ক নয়” – এগুলো আংশিক সত্য, মতামতনির্ভর বা এম্পিরিক্যালভাবে প্রমাণিত নয়; তুলনামূলক আইন/ডেটা বা সব মাজহাবের পূর্ণ পরিসর দেখিয়ে বিষয়টা আরেকটু সূক্ষ্মভাবে বলা দরকার।
যুক্তির গঠন
  • প্রবন্ধটি প্রথমে যিনা–ধর্ষণের ধর্মীয় সংজ্ঞা, তারপর হদ্দ, সাক্ষ্য, নারীর অর্ধেক সাক্ষ্য, ডিএনএ–প্রমাণ, কাযফের শাস্তি, তা’যীর, এবং শেষ পর্যন্ত বাস্তবিক প্রভাব ও সমাধানের প্রস্তাব – এমন ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়েছে; ফলে পাঠক বুঝতে পারে, কীভাবে নর্মেটিভ আইন থেকে বাস্তব জীবনের ভুক্তভোগীর অবস্থায় পৌঁছানো হচ্ছে।
  • তবে ক্লাসিকাল ফিকহের মধ্যে ভিন্নমত (যেমন কিছু মালেকি/হানাফি ফকিহের বিশেষ অবস্থান, বা আধুনিক রিফর্মিস্ট আইনবিদদের প্রস্তাব) তুলনামূলকভাবে খুবই কম আলোচিত হয়েছে; এতে কখনো কখনো এমন ইমপ্রেশন তৈরি হয় যে, “একটাই” একমুখী শরিয়া ব্যাখ্যা আছে – যুক্তির ভারসাম্য ও সমালোচনাকে আরো শক্তিশালী করতে এখানে কিছু জায়গায় কনট্রাস্ট/বিকল্প মত উল্লেখ করলে ভালো হয়।
উৎস ও প্রমাণ
  • প্রবন্ধে কোরআন, সহিহ হাদিস, ক্লাসিক তাফসির (জালালাইন, মাযহারী), ফিকহগ্রন্থ (ফতওয়ায়ে আলমগীরী, আশরাফুল হিদায়া, ইসলামের শাস্তি আইন), এবং সমসাময়িক ফতোয়া–সাইট ও একাডেমিক আর্টিকেল (Peters, Noor, পাকিস্তানি হুডুদ অর্ডিন্যান্স) – সব মিলিয়ে উৎস ব্যবহারের দিক থেকে খুবই সমৃদ্ধ ও ডকুমেন্টেড; উদ্ধৃতির ধরন এই সাইটের স্টাইলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
  • কিছু তথ্য – যেমন “সব/অধিকাংশ ইসলামী রাষ্ট্রে এখনও ডিএনএ গ্রহণযোগ্য নয়”, মৃত্যুদণ্ড ও ধর্ষণ–হার কমার সম্পর্ক, অথবা মুসলিম–মজরিটি দেশের বর্তমান ক্রিমিনাল কোড কীভাবে ক্লাসিক ফিকহ থেকে ডিভোর্সড – এসব জায়গায় হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট/ক্রিমিনোলজিকাল স্টাডি বা লিগ্যাল স্ট্যাটিস্টিক থাকলে, সমসাময়িক প্রমাণভিত্তিক অংশ আরও শক্তিশালী হতো।
বৈজ্ঞানিক/সমসাময়িক মানদণ্ড
  • আধুনিক ক্রিমিনাল জাস্টিস, ভিকটিমোলজি, ফরেনসিক সাইন্স (ডিএনএ, মেডিকেল রিপোর্ট, ভিডিও–প্রমাণ) এবং জেন্ডার জাস্টিস–এর আলোকে ইসলামী শরিয়তের ধর্ষণবিষয়ক বিধানগুলোকে বিচার করা হয়েছে – যা মানবাধিকার–কেন্দ্রিক সমসাময়িক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং কনসিস্টেন্ট।
  • তবে “মৃত্যুদণ্ড কখনো ধর্ষণ রোধে সহায়ক নয়”–টাইপ স্টেটমেন্টগুলো এম্পিরিক্যাল দাবির মতো শোনালেও, আর্টিকেলে কোনো ডেটা, তুলনামূলক স্টাডি বা মেটা–অ্যানালাইসিস উল্লেখ নেই; কয়েকটি রেফারেন্স (যেমন Amnesty, UNODC, বিভিন্ন দেশের ডেটা) যোগ করলে বৈজ্ঞানিক মানদণ্ডের দাবি আরও বিশ্বাসযোগ্য হবে।
মূল শক্তি
  • কোরআন–হাদিস–ফিকহ–ফতোয়া–আধুনিক আইন—এই পুরো চেইন ধরে অত্যন্ত প্রণালীগতভাবে টেক্সটউয়াল প্রমাণ হাজির করে, সেখান থেকে যুক্তি টেনে আনা; বিশেষ করে সাক্ষ্য–ব্যবস্থা, নারীর অর্ধেক সাক্ষ্য, কাযফের শাস্তি, ও তা’যীরের সীমা (দশ বেত্রাঘাত) – এসব অংশ পাঠকের কাছে সিস্টেমিক সমস্যা স্পষ্ট করে তোলে।
  • উপসংহারে শুধুই নেগেশন না করে কনস্ট্রাকটিভ প্রস্তাব – যৌনশিক্ষা, সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন, আইন সংস্কার, লিঙ্গসমতা – এগুলো যোগ হওয়ায় লেখাটি কেবল ধর্মসমালোচনায় থেমে না থেকে, বাস্তবনীতি ও সামাজিক পরিবর্তনের রোডম্যাপও স্পর্শ করেছে।
মূল দুর্বলতা
  • বেশ কিছু জায়গায় গদ্য ভাষা খুবই নর্মেটিভ ও ইমোশনাল (“মধ্যযুগীয় বর্বর”, “ভোগ্যপণ্য”, “মস্তবড় শুভঙ্করের ফাঁকি”) – বিশ্লেষণাত্মক শক্তি থাকা সত্ত্বেও, এই ধরণের শব্দচয়ন কিছু পাঠকের কাছে “অবজেক্টিভ রিভিউ”–এর ইমপ্রেশন কমিয়ে দিতে পারে এবং টেক্সটকে মাঝে মাঝে পোলেমিক্যাল প্রবন্ধের দিকে ঠেলে দেয়।
  • ইসলামী ফিকহ ও সমসাময়িক ইসলামী আইনবিদদের মধ্যে যে ভিন্নমত ও সাম্প্রতিক রিফর্ম (কিছু দেশে ডিএনএ–প্রমাণ আংশিক গ্রহণ, মারজিনাল নারীবাদী ফিকহি প্রচেষ্টা ইত্যাদি) আছে – সেগুলোকে বেশি “ব্রাশ–ওভার” করা হয়েছে; খুব সংক্ষেপে হলেও এই থ্রেডগুলো উল্লেখ করলে, আপনার মূল সমালোচনা বরং আরও শক্ত ও ন্যায়সংগত শোনাবে।
সংশোধন ও সুপারিশ
  1. যেখানে “ইসলাম নারীকে ভোগ্যপণ্য মনে করে”–ধরনের সার্বিক স্টেটমেন্ট এসেছে, সেখানে নির্দিষ্ট টেক্সট (যেমন নির্দিষ্ট হাদিস বা ফিকহি উদ্ধৃতি)–এর আলোকে “ক্লাসিকাল ফিকহে ‘স্ত্রী/ক্রীতদাসী’কে সম্পত্তিমূলকভাবে দেখা হয়েছে” – এমন বেশি প্রিসাইজ ও সোর্স–টাইড ভাষা ব্যবহার করলে তথ্যগত ও বিশ্লেষণাত্মক শক্তি বাড়বে।
  2. কিছু সেকশনে (ডিএনএ–প্রমাণ, পাকিস্তানের হুডুদ/কাযফ আইন, আধুনিক মুসলিম–মজরিটি দেশের আইনি সংস্কার) সামান্য হালনাগাদ ডেটা বা রেফারেন্স যোগ করা যায় – যেমন নির্দিষ্ট দেশের আইন–ধারা, মানবাধিকার রিপোর্ট, বা কোর্ট–কেস – যাতে পাঠক বুঝতে পারে, “ক্লাসিক ফিকহ” আর “আজকের বাস্তব আইন”–এর মধ্যে কোথায় ফাঁক, আর কোথায় ধারাবাহিকতা।
  3. প্রবন্ধের শুরু বা উপসংহারে একটি ছোট ব্যাখ্যামূলক প্যারাগ্রাফ যোগ করা যেতে পারে, যেখানে স্পষ্ট করে বলা থাকবে – “এই লেখাটি ক্লাসিকাল সুন্নি ফিকহ ও তার আধুনিক প্রয়োগের সমালোচনামূলক পাঠ; আধুনিক রিফর্মিস্ট/সংখ্যালঘু মত এখানে ফোকাস নয়” – এতে পাঠক আগেই বুঝে যাবে বিশ্লেষণের স্কোপ, এবং “আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে X মত বাদ দিয়েছেন”–ধরনের আপত্তি কিছুটা ঠেকানো যাবে।
সারাংশ রায়
তথ্যগত সঠিকতা৮ / 10
যুক্তির গুণমান৮ / 10
উৎস-ব্যবহার৯ / 10
সামগ্রিক স্কোর৮.৫ / 10

চূড়ান্ত মন্তব্য: সামগ্রিকভাবে এটি ক্লাসিকাল ইসলামী ফিকহের আলোকে ধর্ষণ ও যিনা–বিধানের উপর একটি শক্ত, টেক্সট–সমৃদ্ধ এবং সুসংগঠিত সমালোচনামূলক প্রবন্ধ। কোথাও কোথাও ভাষা একটু কম আবেগী ও বেশি প্রিসাইজ হলে, এবং কিছু সমসাময়িক ও তুলনামূলক ডেটা যোগ করলে, এটি একই সাথে গবেষণামূলক ও পোলেমিক – দুই ধরনের পাঠকের কাছেই আরও বেশি গ্রহণযোগ্য ও রেফারেন্স–যোগ্য হয়ে উঠবে।

এই রিভিউটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এটি কোনো মানব-সম্পাদিত রিভিউ নয়। প্রতিটি তথ্য ও রেফারেন্স যাচাই করে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করার পর এই রিভিউ প্রস্তুত করা হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ
  1. “Sexual violence chapter 6” (PDF)। World Health Organization। ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ↩︎
  2. “Rape”। dictionary.reference.com। এপ্রিল ১৫, ২০১১ ↩︎
  3. “Rape”। legal-dictionary.thefreedictionary.com। এপ্রিল ১৫, ২০১১ ↩︎
  4. Sharia as the Official Law of the Land ↩︎
  5. সর্বোচ্চ সম্মান এবং সুমহান মর্যাদা! ↩︎
  6. সুরা আল বাকারা, আয়াত ২২৩ ↩︎
  7. সূরা আল আরাফ, আয়াত ১৮৯ ↩︎
  8. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৫১২ ↩︎
  9. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৫১৩ ↩︎
  10. সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স,‌ হাদিসঃ ৩৯৯৮ ↩︎
  11. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৮ ↩︎
  12. সূরা আহজাব, আয়াত ৫৯ ↩︎
  13. তাফসীরে মাযহারী, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭৯ ↩︎
  14. A CLEAR SCIENTIFIC CONSENSUS THAT THE DEATH PENALTY DOES NOT DETER ↩︎
  15. DOES THE DEATH PENALTY DETER CRIME? GETTING THE FACTS STRAIGHT ↩︎
  16. Deterrence and the Death Penalty (2012) ↩︎
  17. অপরাধী নেই, নেদারল্যান্ডসে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জেল! ↩︎
  18. অপরাধী কম, তাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারাগার ↩︎
  19. Declaration on the Elimination of Violence Against Women ↩︎
  20. Marital Rape: Consent, Marriage, and Social Change in Global Context ↩︎
  21. সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিসঃ ৩৪৩৩ ↩︎
  22. সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিসঃ ৩৪৩২ ↩︎
  23. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৩২৫৭ ↩︎
  24. সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ১৮৫৩ ↩︎
  25. ইসলামে বৈবাহিক ধর্ষণের বৈধতা কি অস্বীকার করা যায়? ↩︎
  26. ইসলামে বৈবাহিক ধর্ষণের বৈধতা ↩︎
  27. আয়িশা কি নয় বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছিলেন? ↩︎
  28. সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিসঃ ৩৩৭০ ↩︎
  29. ইসলামে অমানবিক দাসপ্রথা ↩︎
  30. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৮৩২ ↩︎
  31. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ৭৪০৯ ↩︎
  32. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৪০৩ ↩︎
  33. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬১৫৯ ↩︎
  34. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ২৬ ↩︎
  35. What is the difference between the ruling on rape and the ruling on fornication or adultery? Can rape be proven by modern methods? ↩︎
  36. Noor, Azman Mohd (1 January 2010). “Rape: A Problem of Crime Classification in Islamic Law”. Arab Law Quarterly. 24 (4): 417–438. doi:10.1163/157302510X526724 ↩︎
  37. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৫১২ ↩︎
  38. সূরা মায়িদা, আয়াত ৩৩–৩৪ ↩︎
  39. সূরা মায়িদা, আয়াত ৩৪ ↩︎
  40. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৩২৮ ↩︎
  41. সূনান আবু দাউদ(তাহকীককৃত), হাদিসঃ ৪৩৭৯ ↩︎
  42. সূনান আবু দাউদ(তাহকীককৃত), আল্লামা আলবানী একাডেমী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৮-২৯৯, হাদিসঃ ৪৩৭৯ ↩︎
  43. সূরা নিসা, ১৫-১৬ ↩︎
  44. সূরা নূর, ১২-১৬ ↩︎
  45. সূরা নূর, আয়াত ২ ↩︎
  46. সূরা নূর, আয়াত ৪-৫ ↩︎
  47. তাফসীরে যাকারিয়া, ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া, সৌদি সরকার কর্তৃক প্রকাশিত, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৬–৩৯৭ ↩︎
  48. কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২৮২ ↩︎
  49. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮ ↩︎
  50. ইসলামী আইন ও বিচার, ত্রৈমাসিক গবেষণা পত্রিকা, ইসলামিক ল’ রিসার্চ সেন্টার এন্ড লিগ্যাল এইড বাংলাদেশ, বর্ষঃ ১০ সংখ্যাঃ ৩৭, জানুয়ারি – মার্চ ২০১৪, পৃষ্ঠা ১০১ ↩︎
  51. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিসঃ ৪৪৫২ ↩︎
  52. ফতওয়ায়ে আলমগীরী, বাদশাহ আবুল মুজাফফর মুহাম্মদ মহীউদ্দীন আওরঙ্গযেব আলমগীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭৯ ↩︎
  53. ইসলামের শাস্তি আইন, লেখকঃ ড. আহমদ আলী। প্রকাশনীঃ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ ↩︎
  54. How can zinaa be proven? ↩︎
  55. সূত্রঃ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ ↩︎
  56. Proving Rape by Modern Medical Means ↩︎
  57. রিয়াযুস স্বা-লিহীন, হাদিসঃ ২৪৫ ↩︎
  58. সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩১১৫ ↩︎
  59. মুয়াত্তা মালিক, হাদিসঃ ১৫৬২ ↩︎
  60. মুয়াত্তা মালিক, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩১-৫৩২ ↩︎
  61. সূরা আন-নূর, আয়াত ১৩ ↩︎
  62. তাফসীরে জালালাইন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৯০, ৪৯৩, ৪৯৭, ৪৯৯ ↩︎
  63. তাফসীরে মাযহারী, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬০, ৩৬১ ↩︎
  64. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৪৯৩ ↩︎
  65. THE OFFENCE OF QAZF (ENFORCEMENT OF HADD) ORDINANCE (VIII OF 1979) ↩︎
  66. আশরাফুল হিদায়া, ইসলামিয়া কুতুবখানা, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৭ ↩︎
  67. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭ম খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ১৫২–১৫৫ ↩︎
  68. সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিসঃ ৪৩৫২ ↩︎
  69. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৩৮৪ ↩︎
  70. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৩৮৬ ↩︎
  71. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৩১১ ↩︎
  72. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৪৩২ ↩︎
  73. সুনান আবূ দাউদ, তাহক্বীক- আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী, আল্লামা আলবানী একাডেমী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫১ ↩︎

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

9 thoughts on “ইসলামি শরিয়তে ধর্ষণের শাস্তি

  • Palash Roy

    এই মূহুর্তে লেখাটির প্রয়োজনীয়তা খুবই ছিল।

    ধন্যবাদ আসিফ ভাই।

    Reply
  • Shariful Islam Sujon

    কাকু, আপনাদের ওয়েবসাইটে প্রশ্ন করার ব্যবস্থা নেই? থাকলে ভালো হতো!

    Reply
      • রাস্টিন কোল

        আসিফ ভাই,আপনি সবসময়ই ভাল লেখেন। ভাল হয় যদি একটা এপ চালু করেন আর আর্কাইভে যাতে আরো সহজে সব লেখা খুজে পাওয়া যায় সেই দিকে একটু নজর দিবেন।

        Reply
  • Irin Fatema

    প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই কঠোর পরিশ্রম দ্বারা রেফারেন্স সহ ইসলাম ধর্মের শান্তির নামে মানবজাতির জন্য তৈরি করা দুর্বিষহ আইন গুলো তুলে ধরার জন্য। আপনার প্রতিটি লেখারই আমি প্রশংসা করি কারণ সুন্দর যুক্তি দিয়ে আপনি ইসলাম ধর্মের শান্তি নামের অশান্তি ও বর্বরতা গুলো সমালোচনা করেন। তবে দুঃখের বিষয় আমার মতে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই ইসলাম ধর্মের বর্বরতা গুলো শুনতে বা বুঝতে চায় না। আধুনিক যুগে তারা শিক্ষার বড়াই করলেও তাদের মধ্যে ধর্মের কুশিক্ষা এখনও বজায় আছে। এরা নিজেদের যুক্তি, চিন্তা, বুদ্ধি দিয়ে ধর্মের বানোয়াট বিষয়গুলো বিবেচনা করে না। এরা সাধারন মানুষের ব্যক্তিগত ও অন্যান্য বিষয়ে নিয়ে সমালোচনা করার সময় অনেক যুক্তি, তর্ক খরচ করে কিন্তু ধর্ম ও ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত মানুষদের ইতিহাস জানলেও তাদের সমালোচনা করার বেলায় চুপ। উল্টো ধর্মের নোংরা ও বর্বর নিয়ম গুলো সাফাই গাওয়ার জন্য যুক্তি তর্ক খোজা শুরু করে। এদের মাথায় কি আছে এরা নিজেরাই জানে না। যাহোক ধর্মের মিথ্যা, কুসংস্কার, নোংরামি,বর্বরতা থেকে বের হবার এ মহান প্রচেষ্টার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং আপনার এ প্রচেষ্টা সবসময় বজায় থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বাংলাদেশের ১০০% মানুষ যখন আপনার প্রচেষ্টা উপলব্ধি করতে পারবে তখন দেশের উন্নতি হবে। নইলে ধর্মের বেড়াজালে দেশের মানুষ হাবুডুবু খাবে। তাদের মুক্তি অসম্ভব।

    Reply
  • জ্যোতিশ্বর

    যারা পাপী, শুধু তাদেরকে ছাঁটাই করলে হয়না, এরা হচ্ছে গাছের পাতার মতো। একটা গাছ লাগালে পাতা তো গজাবেই।
    যারা শাস্তি দিয়ে সন্তুষ্ট থাকে তাদের জন্য বলছি, শাস্তি দেয়া হচ্ছে গাছের পাতা ছাঁটাই করার মতো। আপনি পাতা কেটে ফেললেন, কিন্তু পাতা আবার গজাবে।
    তেমনি একজন পাপীকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দিলেই সব ফুরিয়ে যায় না।
    পাতা আবার গজাবে।
    মানে আবার সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবেই। আর আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হচ্ছে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটা হয়ে যাওয়ার পরে।
    অর্থাৎ, “ঐ পাপগুলো” ঘটতেই থাকবে, আর আইন শাস্তি দিতেই থাকবে তাইতো?
    যদি শাস্তিই সবচেয়ে ভালো সমাধান হয়, তাহলে যে অন্য পাপীরা তাদের পরবর্তী পাপকাজ করার জন্য বসে আছে, এদেরকে কিভাবে দমন করবেন? তারা তো অপরাধী নয়, কারণ তারা কাজটা করে ফেলেনি (কিন্তু অবশ্যই করে ফেলবে)। শাস্তির ভয় থেকে যদি আমি এসব কাজ থেকে বিরত থাকি, তাহলে আমার অন্তরে ঘু ছাড়া আর কিছুই নেই। ভয় কেটে যাওয়ার পরপরই ধর্ষণ( অথবা অন্যান্য পাপ ) হবে……

    শাস্তির ভয় থেকে নয়, এমনিতেই ( কিংবা মানবিক দায়িত্ববোধে ) আমরা এসব কাজ থেকে বিরত থাকব, মাথাতেও এসব করার ভাবনা আসার কথা নয়।

    Prevention is better than cure.
    দমন করতে হলে শাস্তির চেয়েও অনেক বড় ব্যাপার আছে, তা হলো “গাছটির গোড়া কেটে ফেলা”
    গোড়া থেকে নাশ না করলে (Prevention না করলে) যতই শাস্তি দেয়া হোক না কেন, পাপ ঠেকানো যাবেনা। এমনকি শাস্তিকে cure বলাটাও বোকামি। কই , আমি পাপ করলে শাস্তি পেলুম, আচ্ছা। আমি আর করলাম না, আর ঠিক এরপর, অন্য আরেকজন পাপটা করতে গেলে? করে ফেললে? সেটা cure হল? বারবার ওই একই রোগ ফিরে আসা।
    Punishment is NOT A CURE, It’s a REVENGE

    কেউ গোড়া খুঁজেনা,

    এই গোড়াটা হল মানুষের মন, এখান থেকেই Prevention করা উচিত

    একটা ছোট বাচ্চা কখনো ধর্ষক হয়ে জন্মায়না, সে পরিবেশ অনুযায়ী বড় হয়। কিন্তু এমন খুব কম পরিবেশ আছে, যেখানে থাকলে মনকে নিয়ন্ত্রণ করা শেখা যায়। পরিবেশ যেরকমই হোক, মানবতার স্বার্থে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। যেকোনো বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই বলতে পারবে যে, ধর্ষণ (অথবা অমুক কাজগুলো ) খারাপ, তাহলে তারা সেটা করে কেন? কারণ, তাদের মনে স্বার্থ থাকে, এবং সেই স্বার্থপর মনকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। একটা গাছ লাগালে পাতা তো গজাবেই। এটাই হচ্ছে সেই গাছ, স্বার্থ, যেটা গোড়া থেকে আসে, মন থেকে।

    ( কিছু পাতি নারীবাদী আছে যারা বলে থাকে যে পুরুষ মানেই ধর্ষক, এটা আমি মানিনা )

    কেও কেও বলে থাকে, রাষ্ট্রের (কিংবা অমুক দলের) আশ্রয়ে এসব ঘটে
    আরে ভাই, রাষ্ট্র (কিংবা অমুক দলের) আশ্রয়ে এসব ঘটে, কিন্তু কাজটা করছে ওই পাপীটাই। সে একটুও বিবেক থাকলে পাপটা করবে? তার মানবিকতা যদি রাষ্ট্র (কিংবা অমুক দলের) নিয়ন্ত্রনে থাকে, তাহলে তো পাপটা হবেই।যার নিয়ন্ত্রনে মনটা থাকার কথা, সে মূলত নিয়ন্ত্রণ হারায়না, সে আসলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। শিখতে হবে, আর শিখাতে হবে।

    আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন, ধর্ষণ হয়ে যাওয়ার আগেই আটকাবো, ঠিক আছে, হওয়ার পরে কি করব?

    ব্যাপারটাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, ১। Victim,.২। Criminal

    প্রথম কথা হচ্ছে, কনফার্ম( মানে মেয়েটার কূট চালাকি না থাকলে, বা সত্যিই ধর্ষণ হলে) ধর্ষণ হওয়ার পর যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (Victim), তার ক্ষতিপূরণটা বেশি দরকার। সেটা নিয়ে কথা বললাম না, আমি জানিনা কিভাবে ক্ষতিপূরণ দিব, আসলে শাস্তি চাইতে চাইতে Victim এর কথাই আমরা ভুলে যাই। Victim কে কিভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়া যায় সেটা নিয়ে লেখালেখিও কখনো করতে দেখিনি। সেটা কিন্তু খুবই দরলার। কারণ আমরা সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা পাই না… কিছু একটা তো করতেই হবে তার জন্য…

    এরপর Criminalকে কি করব? শাস্তি দেব? @মৃত্যুদণ্ড কী ধর্ষণ রোধ করতে পারে? প্রবন্ধের এই অংশটা পড়ে নিতে পারেন। আমার মতামত দিচ্ছি, আমি হলে শাস্তি দেয়ার আগে কিভাবে লোকটার কলুষিত মনটাকে সংশোধন করা যায় সেটা দেখব, এটা অদ্ভুত ব্যাপার, কেওই এটার কথা বলেনা। মেরে ফেলার যেকোনো শাস্তি দিলে সেই পাপী নিষ্পাপ হয়ে যাচ্ছে না, সে তার কলুষিত মনটাকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি চাই না কেউ পাপী অবস্থায় দুনিয়া ছেড়ে দিক। সে তো আর পাপী অবস্থায় আসেনি। অন্তত তার একটা বিষয় ভেবে অনুতপ্ত হওয়া উচিত যে, সে খারাপ কাজ করেছে। তাকে মন নিয়ন্ত্রণ করা শিখাতে হবে। মানবিক গুণাবলী তার মধ্যে আনতে হবে। এরপর ,

    এরকম মানুষকে দরকার মতো খরচার খাতায় ফেলে রাখলেই হয়। সমাজের অনেক ভালো মানুষ দেহের অঙ্গ, রক্ত দান করে প্রতিবন্ধী জীবনযাপন করছে, তাদের বিকল্পে পাপীদেরকে ব্যাবহার করা যায়। বিপজ্জনক কাজে তাদেরকে ব্যাবহার করা যেতেই পারে, কিছু নিলে কিছু দিতে হয়। তখন তার মৃত্যু হলেও আমার সমস্যা নেই, আরেকটা ভালো “কাজের মানুষ” বেঁচে থাকবে। হয়তো মানবজাতির কল্যাণে তার অবদান থাকবে।

    আর সে পাপী হলেও আমরা পাপী হব কেন। সে ধর্ষণ দিয়েছে, আমরা মৃত্যু দেব, প্রতিশোধ নেব, এতে মহানুভবতা নয়, অমানবিকতা প্রকাশ পায়। আমি হিংস্র হতে চাই না।

    মহৎ এবং গুণী ব্যাক্তিরা কেন চরম পাপীকেও ক্ষমা করে দেন? কারন তারা জানেন যে, শাস্তি ছাড়াও পাপ আটকানোর সুন্দর উপায় আছে। এই দিক বিবেচনা করলে বুঝা যায় যে, ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম নয়। সে শুধু শাস্তির ব্যাবস্থা করতে পারে। অপটিমাম সমাধান তার কাছে নাই।

    ধর্ষণ হোক বা অন্য অপরাধ হোক, অপরাধ সবই কিন্তু মন থেকে আসে। তাই মন থেকেই সব পাপ নির্মূল করতে হবে, মন নিয়ন্ত্রণ করে। শাস্তি দিয়ে নয়।

    কিছু মনে করবেন না, আপনি ত ধর্ম বিশ্বাসী নন, আমিও “মোটামুটি” নাস্তিক, কিন্তু বৌদ্ধ মতবাদ চিত্ত বা মন নিয়ন্ত্রণ করার পথ দেখিয়ে গেছে বলে আমি বৌদ্ধ মতবাদকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি। সেটা আসলেই আছে কীনা, থাকলে সেটা বৈজ্ঞানিক কীনা, তা যাচাই করে দেখতে পারেন।

    Reply
  • Rayhan khan

    Low qualitylogic

    Reply
    • তোর বাপ

      তুই দেখি লজিক দে।কেমন লজিক তোর।

      Reply
  • Farida Parvin

    https://response-to-anti-islam.com/show/%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%93-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A3-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%A8-%E0%A6%93-%E0%A6%9C%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AC-/280

    Reply

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।