সংশয়বাদইসলাম

আন্ডারস্ট্যান্ডিং মুহাম্মদ – আলি সিনা

অধ্যায়-২

মুহাম্মদের চারিত্রিক প্রোফাইল

মুহাম্মদের জীবনি নিয়ে হাজার হাজার গল্প প্রচলিত আছে। এর মধ্যে অনেকগুলো পুরোপুরি বানোয়াট, কিছু আছে দুর্বল ও সন্দেহজনক আর কিছু আছে যেগুলোকে বলা হয় সহিহ বা সত্য হাদিস। এসব সহিহ হাদিস থেকে মুহাম্মদের মোটামুটি পূর্ণ একটি ইমেজ দাঁড় করানো, ও তার চরিত্র এবং মানসিক গঠন সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া সম্ভব।
এ সমস্ত বর্ণনা থেকে যে ছবিটি উঠে আসে তা একজন নার্সিসিস্ট বা আত্নপ্রেমীর। এই অধ্যায়ে আমি নার্সিসিজমের উপরে প্রতিষ্ঠিত গবেষকদের লেখা উদৃত করে দেখানোর চেষ্টা করবো যে মুহাম্মদের চরিত্রের সাথে তা খাপে খাপে মিলে যায়।
মুহাম্মদের নার্সিসিজম সংক্রান্ত বিষয়ে পান্ডিত্য ও গবেষণার খুবই অভাব , কারণ মুসলিমরা কখনো মুহাম্মদ ও কুরআন নিয়ে নির্মোহ গবেষণা করার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু তার মুহাম্মদ সম্পর্কে যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় তা কেবল তার নার্সিসিজমের দিকেই যে ইংগিত করে তা নয়, বরং আজকের দুনিয়ার মুসলিমদের নানান উদ্ভট কাজকারবার ও আচার আচরণের ব্যাখ্যাও পাওয়া যায় এর মধ্যে। এভাবে একজনের পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার উত্তরাধিকারের মত তার অনুসারীদের ভিতর চলে এসেছে। একজনের মানসিক বিকৃতি, সুগভীর আত্নমোহ তার কোটি কোটি অনুসারীদের ভিতর ছড়িয়ে পড়েছে ও তাদেরকেও একইভাবে আত্নমোহে নিমগ্ন, অযৌক্তি ও বিপদজনক করে তুলেছে।
মুহাম্মদের মনস্তত্ত, তার নির্মমতা ও অবস্থা অনুযায়ী ভোল-পাল্টানো নৈতিকতার ব্যাবহার , এসব বুঝতে পারলেই আজকের দুনিয়ায় মুসলিমরা কেনো এত অসহিষ্ণু, ধ্বংসাত্নক ও প্যারানয়েড তা বুঝা যাবে। বুঝা যাবে তারা কেনো নিজেদের ভুক্তভোগী বলে দাবী করে যেখানে আদতে তারা নিজেরাই আক্রমণকারী।

নার্সিসিজম কি ?

The Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM) অনুযায়ী নার্সিসিজম হচ্ছে একধরণের চারিত্রিক দোষ (Personality Disorder) , যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নিজেকে বিশাল কিছু মনে করা, লোকজনের কাছ থেকে ভালোবাসা ও পছন্দ পাওয়াকে নিজের দাবী ও অধিকার বলে মনে করা। এতে আক্রান্ত ব্যাক্তি প্রায়শই নিজেকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ও নিজের অর্জনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে দেখতে চায়। ক্ষুদ্র অর্জন স্বত্তেও প্রশংসা ও স্তুতি গ্রহণ এমনকি দাবী করে।
১৯৮০ এবং ১৯৯৪ এ DSM এর চতুর্থ ও পঞ্চম সংস্করণ এবং ইউরোপের ICD-10 (টীকা ৯২) এ একই রকমের ভাষায় নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে,
“সর্বময় আত্নগরিমা ও হামবড়া ভাব(কল্পনায় এবং আচরণে ) , পরিপার্শের আনুগত্য ও পছন্দলাভের ইচ্ছা, অন্যের প্রতি সহানুভুতির ঘাটতি যা সাধারণত বয়প্রাপ্তির সাথে সাথে শুরু হয় ও বিভিন্ন ধরণের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান থাকে। নিচের বর্ণনাগুলোর মধ্যে ৫ বা তার বেশি সংখ্যক বর্ণনা অবশ্যই মিলতে হবে।
১। নিজেকে বিশাল কিছু ও আত্ন-গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ( নিজের প্রতিভা ও অর্জন নিয়ে অতিরঞ্জন করে, যথোপযুক্ত অর্জন ছাড়াই অন্যদের চাইতে নিজেকে উচ্চ বলে স্বীকার করে নেয়ার দাবী করে)
২। অসীম সাফল্য, খ্যাতি, ক্ষমতা, সর্বময় ক্ষমতা, অনন্যসাধারণ মেধা, শারীরিক সৌন্দর্য ও যৌনক্ষমতা অথবা আদর্শ, চিরস্থায়ী, সর্বোময় ভালোবাসা ও আনুগত্যে অলীক কল্পণায় মগ্ন থাকে।
৩। শক্তভাবে বিশ্বাস করে যে সে একক, অনন্যসাধার। কেবল তার সমমানের কারো দ্বারাই কেবলমাত্র সঠিকভাবে তাকে বুঝা ও তার সাথে চলাফেরা সম্ভব বলে মনে করে।
৪। মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা, পছন্দ, আনুগত্য, মনোযোগ ও সম্মতি দাবী করে। এগুলো দিতে ব্যার্থ হলে চরম শাস্তির ভয় দেখায়।
৫। সমস্তু কিছু নিজের অধিকার বলে মনে করে। অযৌক্তিক, অসাধারণ ও নিজের পছন্দ অনুযায়ী ব্যাবহার পাওয়ার আবদার করে। তার চাওয়া বিনা প্রশ্নে পরিপূর্ণভাবে পূরণ করতে হবে বলে দাবী করে।
৬। নিজের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য অন্যদের ব্যাবহার করে।
৭। সহানুভুতিহীন। অন্যের প্রয়োজন ও অনুভুতির কথা বুঝতে চায় না বা তোয়াক্কা করে না।
৮। অন্যদের নিয়ে সবসময় ঈর্ষা ও সন্দেহে ভোগে এবং মনে করে অন্যরাও তার বিরুদ্ধে এরকম ভাবছে।
৯। অহংকারী ও দাম্ভিক আচরণ করে, হতাশা হলে বা কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে তার উপর ক্রোধান্বিত হয়। (টীকা-৯৩)

উপরের সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলোই মুহাম্মদের মধ্যে দেখা যায়। নিজেকে আল্লাহর মনোনীত রাসুল এবং সর্বশেষ নবী(কুরান ৩৩:৪০) ভাবা ছাড়াও মুহাম্মদ নিজেকে খায়রুল খালাক(সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি) বলে মনে করতো, সর্বোত্তম আদর্শ (কুরান ৩৩:২১) বলে মনে করতো এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুইভাবেই ,’অন্যসব নবীদের তুলনায় গুরুত্পূর্ণ’ (কুরান ২:২৫৩) বলে দাবী করতো। তার দাবী, সে হচ্ছে, ‘আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় একজন’ (কুরান ১৭:৫৫), ‘সমস্ত দুনিয়ার জন্য রহমতস্বরুপ প্রেরিত’, (কুরান ২১:১০৭), ‘সর্বোচ্চ প্রশংসিত অবস্থানে অধিষ্ঠিত'(কুরান ১৭:৭৯)। এমন অবস্থান যা কেবলমাত্র তার নিজের জন্যই নির্ধারিত, তা হচ্ছে, হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের পাশে দাঁড়িয়ে উম্মতকূলের জন্য শাফায়ত করার অধিকারসম্পন্ন। অর্থাৎ সেই হবে একমাত্র ব্যাক্তি যার আবেদন অনুযায়ী আল্লাহ ঠিক করবেন কে বেহেস্তে যাবে আর কে দোযখে। মুহাম্মদের বড় বড় দাবীর মধ্যে কুরআনে উল্লেখিত এগুলো সামান্য কয়েকটি মাত্র।
নিচের দুইটা আয়াতে মুহাম্মদের আত্নম্ভরীতা এবং নিজেকে নিজে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ভাবার মানসিকতা খুব ভালোভাবে ফুটে উঠেছে।
“আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর।” (কুরান ৩৩:৫৬)
“যাতে তোমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর।” (কুরান ৪৮:৯)
মুহাম্মদ এতই আত্নমুগ্ধ ছিলো যে সে আকাশের উপরের আল্লাহর মুখ দিয়ে নিজের কথা বলিয়ে নেয় এভাবে,
“আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। ” (কুরান ৬৮:৪)
“এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।” (কুরান ৩৩:৪৬)
ইবনে সা’দের বর্ণনায় এসেছে মুহাম্মদ নিজের সম্পর্কে বলে
“বিশ্বের সমস্ত জাতির মধ্যে থেকে আল্লাহ পছন্দ করেছেন আরবদের। সমস্ত আরবদের ভিতর থেকে কিনানাদের। কিনানাদের ভিতর থেকে তিনি পছন্দ করেছেন কুরাইশ গোত্রকে। কুরাইশ গোত্রের মধ্যে তিনি পছন্দ করেছেন বানু হাশিমকে। আর বানু হাশিমের মধ্যে থেকে তিনি পছন্দ করেছেন আমাকে। ” (টীকা-৯৪)
বিভিন্ন হাদিসে মুহাম্মদ নিজের সম্পর্কে যেসব দাবী করেছে সেগুলো এরকম,
১- আল্লাহ সর্বপ্রথম যে জিনিস সৃষ্টি করেছেন তা হচ্ছে আমার রুহ।
২- সমস্ত জিনিসের আগে আল্লাহ আমার আত্না তৈরী করেন।
৩- আমি এসেছি আল্লাহর কাছ থেকে আর মুমিনরা আমার কাছ থেকে।(টীকা-৯৫)
৪- আল্লাহ যেমন আমাকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে তৈরী করেছেন তেমনি আমাকে দিয়েছেন সর্বোত্তম চরিত্র।
৫- তোমাকে তৈরী না করলে (হে মুহাম্মদ ) তাহলে এই মহাবিশ্ব আমি তৈরী করতাম না। (টীকা-৯৬)
উপরের কথাগুলোর সাথে জিসাসের বলা কথার তুলনা করে দেখা যাক। কেউ একজন তাকে “শ্রীযুক্ত প্রভু” বলে ডাকলে জিসাস সাথে সাথে বলেন, “কেনো আমাকে শ্রীযুক্ত বলে ডাকছো ? ঈশ্বর ছাড়া কেউ শ্রীযুক্ত নয়” (টীকা-৯৭)। প্যাথলজিক্যালি আত্নপ্রেমী ছাড়া আর কারো পক্ষে এমন বাস্তবতাবিবর্জিত দাবী করা সম্ভব না যে, পুরো মহাবিশ্ব কেবল তার জন্যই সৃষ্ট হয়েছে।
নার্সিসিস্ট বা আত্নপ্রেমীরা মাঝে মাঝে নিজেদের সম্পর্কে বড় বড় কথা বলার মধ্যে কপটতার সাথে সামান্য বিনয় মিশিয়ে নেয়। আবু সাইদ আল খুদরির বর্ণনায় এসেছে, নবী বলেন, “আমি সমস্ত মানবজাতির নেতা, কোনরকম অহংকার ছাড়াই বলছি এ কথা”।
তিরমিযি বর্ণনা করেন,
“নবী বলেন, আমি তোমার কথা শুনেছি আর তুমি যা বলছো তার সবই সত্য, আমিই হাবিবুল্লাহ, আর একথা আমি বলছি কোন অহংকার ছাড়া, হাশরের ময়দানে সম্মানের পতাকা বহন করবো আমি, আমিই প্রথম শাফায়াতকারী এবং আমার আবেদনই প্রথম কবুল করবেন আল্লাহ, আমিই প্রথম বেহেশতের দরজায় কড়া নাড়বো আর আল্লাহ তা খুলে দিবেন আমার জন্য যাতে আমি আমার দলবল নিয়ে আমার উম্মতদের মধ্যে থেকে দরিদ্রদের নিয়ে প্রবেশ করবো , আর আমি এসবই বলছি কোন অহংকার ছাড়াই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যত মানব আসবে তার মধ্যে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর এসবই বলছি আমি কোন অহংকার ছাড়া “। টীকা-৯৮

নার্সিসিস্টকে দেখতে আত্নবিশ্বাসী এবং এমনকি সফল মানুষ মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তার (পুরুষদের মধ্যেই এই রোগের প্রকোপ বেশি) ভিতরে গভীর হীনমন্যতা বোধ থাকে, এজন্যই সে ক্রমাগত বাইরে থেকে প্রশংসা ও পছন্দ পেতে চায়। Malignant Self-Love (টীকা-৯৯)নামক বইয়ের লেখক ডক্টস স্যাম বিক্রম (Sam Vaknin) এই বিষয়ে বেশ সম্মানিত একজন বিশেষজ্ঞ। তার মত করে এই রোগকে বুঝেছে এমন লোক খুবই কমই আছেন। Vaknin এর লেখায় এসেছে :
প্রত্যেকেই বিভিন্ন মাত্রায় নার্সিসিস্ট। নার্সিসিসজম মূলত স্বাস্থ্যকর চর্চা। টিকে থাকার জন্য এই জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর এবং অসুস্থ্য নার্সিসিজমের মধ্যে পার্থক্যটা মাত্রায়। অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ের নার্সিসিজমের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্যের প্রতি সহানুভুতির ভয়ানক স্বল্পতা। নার্সিসিস্ট অন্য মানুষকে দেখে মানুষ হিসাবে বিবেচনা করে না। সে তাদের দেখে তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু হিসাবে। নিজের নার্সিসিজমের যোগানদার হিসাবে। তার বিশ্বাস যে সে অন্যদের তুলনায় আলাদা হিসাবে বিবেচিত হবার অধিকার রাখে, কারণ নিজের সম্পর্কে কাল্পনিক উচ্চ ধারণা আছে তার মধ্যে। দুনিয়ায় নিজের আসল অবস্থান সম্পর্কে কোন ধারণাই নাই নার্সিসিস্টের। তার চেতনা ও আবেগে বিকৃত। নার্সিসিস্ট নিজের কাছে নিজে মিথ্যা বলে , অন্যদের কাছেও। দেখাতে চায় তার ‘ধরাছোঁয়ার বাইরের অবস্থা’ , আবেগহীনতা এবং এনকি তাকে জয় করা অসম্ভব এমন একটা অবস্থা। নার্সিসিস্টের কাছে তার সমস্ত কিছুই জীবনের চাইতে বড়। সে এমনকি যখন ভদ্রতা দেখায় সেটাও অনেকটা আক্রমণাত্নক ভদ্রতা। তার প্রতিজ্ঞাগুলো উদ্ভট, তার করা সমালোচনা হিংস্র এবং ভীতিকর , তার দেখানো উদারতা ফাঁপা। নার্সিসিস্ট হচ্ছে ধূর্ততার ও মুখোশবাজির দক্ষ খেলোয়াড়। সে দেখানো সুন্দর আচরণে দক্ষ, দক্ষ অভিনেতা, যাদুকরী ব্যাক্তিত্তের অধিকারী এবং তার ও তার মুরিদকূলের পরিচালক। প্রথম দেখায় তার এই রহস্য বুঝতে পারা বেশ কঠিন।(টীকা-১০০)

নার্সিসিস্টের মুরিদান

নার্সিসিস্টের প্রচুর মুরিদ দরকার। সে নিজেকে কেন্দ্র করে আলাদা এক সমাজ, এক দুনিয়া তৈরী করে। সেই দুনিয়ায় সে তার ভক্ত ও অনুসারীদের জড়ো করে আর তাদের মোসাহেবী, চাটুকারী আচরণকে উৎসাহিত ও পুরষ্কৃত করে। এই চক্রের বাইরে যারা তার হয়ে পরে তার ঘোরতর শত্রু। Vaknin আরো বলেন,
“ মুরিদানের মধ্যমণি ও গুরু হচ্ছে নার্সিসিস্ট নিজে। অন্যান্য গুরুর মত সেও তার স্ত্রী, সন্তান, পরিবার পরিজন , বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রশ্নহীন আনুগত্য দাবী করে। মুরিদদের কাছ থেকে বিশেষ শ্রদ্ধা ও আলাদা ব্যাবহার পাবার যোগ্য মনে করে সে নিজেকে। ভিন্নমত ভিন্নচিন্তার কেউ থাকলে সে তাদের শাস্তি দেয়। সে তার মুরিদদের মধ্য নিয়মানুবর্তীতার চর্চা, তার শিক্ষা ও দেখানো পথের প্রতি আনুগত্য এবং দলের সম্মিলিত স্বার্থের ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য জোর দেয়। বাস্তবের দুনিয়ায় তার যোগ্যতা যত কম এই মুরিদের দলের ভিতরে তার কড়াকড়ি তত বেশি এবং মুরিদদের মগজধোলাইয়ের চেষ্টাও তত বেশি থাকে।
নার্সিসিস্টের নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করে অস্পষ্টতা, হঠকারীতা, ধোঁয়াশা সূক্ষ্ণ নির্যাতনের (টীকা-১০১) উপর। তার নিয়ত পরিবর্তনশীল ঝোঁকের উপরেই নির্ভর করে সঠিক ও ভুল, পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় কাজ এবং কোন কাজ করতে হবে কোনটা এড়িয়ে যেতে হবে এসব। সে একচ্ছত্রভাবে ঠিক করে দেয় তার মুরিদদের অধিকার ও কর্তব্য অথচ আবার মুহূর্তের ঝোঁকেই পাল্টে ফেলে সেসব।
নার্সিসিস্ট খুঁতখুঁতে স্বভাবের হয়। মুরিদদের আচরণের ক্ষুদ্র থেকে তুচ্ছতর বিষয়ের উপর সে তার নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তার ইচ্ছা ও স্বার্থের বিরুদ্ধে যে যায় অথবা তার কাছে বিন্দুমাত্র যে গোপন করতে চায় তাকে সে চরমতম শাস্তি দেয়।
নার্সিসিস্টের কাছে মুরিদদের সীমা ও ব্যাক্তগত গোপনীয়তার কোন মূল্য নেই। তাদের ব্যাক্তিগত ইচ্ছাকে সে বিন্দুমাত্র গ্রাহ্য না করে তাদের নিজের উদ্দেশ্য পূরণের বস্তু হিসাবে ব্যাবহার করে। যেকোন পরিস্থিতি এবং যে কাউকে সে সম্পূর্ণরুপে নিজের নিয়ন্ত্রণের আওতায় রাখতে পছন্দ করে।
অন্যদের ব্যাক্তিগত চিন্তা ও স্বাধীনতার ঘোর বিরোধীতা করে সে। কোন বন্ধুর সাথে দেখা করা বা নিজের পরিবারের সাথে দেখা করতে যাওয়ার মত তুচ্ছতম বিষয়েও তার অনুমতি নিতে হয় মুরিদদের। তার চারপাশের সবাইকে সে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণভাবে একজনকে অন্যজনের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলে যাতে তারা সবাই মানসিক, অর্থনৈতিক, যৌন ও সামাজিকভাবে সম্পূর্ণরুপে তার উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়।
তার আচরণ আত্নগরিমায় ভরপুর। অন্যদের সাথে তার ব্যাবহার তাচ্ছিল্যের এবং প্রায়ই সমালোচনায় ভরপুর। মুরিদকূলের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভুলের জন্য সমালোচনা করা , আবার অন্যদিকে তাদের প্রতিভা ও দক্ষতাকে অতিরিক্ত রকমে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলা এই দুই মেরুতে আর আচরণ। মুরিদদের কাছে তার প্রত্যাশার পরিমাণ মারাত্নকরকমভাবে বাস্তবতাবিবর্জিত এজন্য সে তাদের সাথে আচরণও করে সীমাহীন খারাপভাবে। কারন কোন বাস্তব মানুষের পক্ষে পুরোপুরি তার প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব না। (টীকা-১০২)
মুহাম্মদ একটা বিশাল মিথ্যার জন্ম দেয় যেটা তার ভক্তরা পরম সত্য বলে মেনে নেয়। ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে তারা হিটলারের ভক্তদের মতই স্বেচ্ছায় অংশগ্রহন করা লোক।
আগের অধ্যায়ে আমরা দেখেছি মুহাম্মদ কিভাবে তার ভক্তদের তাদের পরিবার-পরিজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে ও কিভাবে তাদের জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। দুঃখজনকভাবে ১৪০০ বছরেও এই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। অনেক বাবামার হৃদয়বিদারক চিঠি আমি পড়েছি যারা জানাচ্ছেন তাদের ছেলে বা মেয়ে মুসলমান হয়ে যাবার পর সবসময় অন্য মুসলিমদের সাথে উঠাবসা করে যাদের ইচ্ছায় তারা তাদের বাবামার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে।

নার্সিসিস্টের সংগ্রাম

নার্সিসিস্ট জানে যে সরাসরি নিজের নিজের মহিমা প্রচার করতে গেলে লোকে সেটা খারাপ চোখে দেখবে। তাই সে নিজেকে দেখায় বিনয়ী, প্রায় আত্নপ্রচারবিমুখ, বৃহত্তর স্বার্থে স্রষ্টা, মানবতা বা দেশের সেবক হিসাবে। এই মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে তার আসল উদ্দেশ্য। নার্সিসিস্ট তার মুরিদদের এক বিশাল সর্বময় সংগ্রামের ডাক দেয়। এই সংগ্রাম এতই বিশাল এতই মহৎ যে এর সফলতা ছাড়া তাদের জীবন অর্থহীন। সে দিন বদলের ডাক দেয়া ও আশার আলো দেখানো বিপ্লবী নেতা। অতিরঞ্জিত হুজুগ ও মানসিকতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সংগ্রামের মূল্য তার অনুসারীদের জীবনের চাইতে বেশি হয়ে দেখা দেয়। তারা এতটাই মগজধোলাই হয়ে যায় যে এই সংগ্রামের জন্য নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে এবং অন্যের জীবন কেড়ে নিতেও দ্বিধাবোধ করে না। নার্সিসিস্ট আত্নত্যাগকে উৎসাহিত করে। যত বেশি, তত ভালো। এরপর সে নিজেকে প্রস্তাব করে এই সংগ্রামের এই সাধারণ উদ্দেশ্যের মধ্যমণি হিসাবে। তাকে কেন্দ্র করেই সংগ্রামের কাজকারবার চলে। একমাত্র তার দ্বারাই সম্ভব এই সংগ্রামকে সফলতার পথে নিয়ে যাওয়া ও তার অনুসারীদের স্বপ্নের দুনিয়ায় নিয়ে যাওয়া। এই বিশাল সংগ্রাম তাকে ছাড়া কোনভাবেই চলতে পারে না। এর মধ্য দিয়ে সে হয়ে যায় দুনিয়ার সবচে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। একমাত্র ব্যাক্তি যে তার অনুসারীদের মুক্তি, উন্নতি ও খ্যাতির চাবিকাঠি।
এভাবেই নার্সিসিস্ট গুরু তার অনুসারীদের ব্যাবহার করে। তাদের সংগ্রাম মূলত তাদের ব্যাক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের উপায় মাত্র। এই সংগ্রাম যেকোন কিছুর জন্য হতে পারে। নিজের ৯০০ অনুসারীকে গণ-আত্নহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলো যেই জিম জোন্স (Jim Jones), তার সংগ্রাম ছিলো “সামাজিক ন্যায়বিচার” এর জন্য। সে ছিলো এই সংগ্রামের ত্রাণকর্তা।
হিটলার তার সংগ্রামের জন্য বেছে নিয়েছিলো আর্যদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা। সে সরাসরি তার নিজের মহিমা কীর্তন করেনি বরং জার্মানিকে উচ্চাসনে নিয়ে যাবার জন্য সংগ্রাম করেছে বলে দাবী করেছে। অবশ্য সে নিজেই ছিলো সেই সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য মধ্যমণি ও রাজা।
স্টালিনের সংগ্রাম ছিলো সমাজতন্ত্রের জন্য। তার বিরুদ্ধে যে-ই কথা বলতো সে-ই ছিলো নির্যাতিত শ্রমিক শ্রেণীর বিরোধী এবং হত্যাযোগ্য।
মুহাম্মদ তার অনুসারীদের তার নিজের পূজা করার জন্য বলেনি। সে নিজেকে দাবী করেছিলো “সামান্য বার্তাবাহক” হিসাবে। নিপুন ধড়িবাজের মত, “আল্লাহ ও তার রাসূলকে” অনুসরণ করতে বলে সে মূলত তার নিজের আজ্ঞাবহ হিসাবে তৈরী করেছিলো তার অনুসারীদের। আল্লাহর বেনামিতে কুরআনের এক আয়াতে সে বলে,
“তারা আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের হুকুম সম্পর্কে। বলে দিন, গণীমতের মাল হল আল্লাহর এবং রসূলের। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নাও। আর আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য কর, যদি ঈমানদার হয়ে থাক।”(কুরান ৮-১)
আল্লাহর যেহেতু বেদুঈনদের কাছ থেকে চুরি করা মালের কোন দরকার নাই, সেহেতু এইসব মাল আসলে চলে যাচ্ছে তার প্রক্সি মুহাম্মদের কাছেই। কেউই যেহেতু আল্লাহকে দেখে নাই বা তার কথা শুনে নাই সেহেতু আনুগত্য আসলে মুহাম্মদের কাছেই। লোকে ভয় পেত মুহাম্মদ কেই কারণ পরাক্রমশালী আল্লাহর সাথে মধ্যস্ততা করতে পারতো কেবল সে-ই। অনুসারীদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য আল্লাহর জুজুর দরকার ছিলো মুহাম্মদের। আল্লাহতে বিশ্বাস না থাকলে কি তার অনুসারীরা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতো ? মানুষ খুন করতো , যাদের মধ্যে তাদের নিজের রক্তের আত্নীয়রাও ছিলো ? অন্যদের মালামাল লুট করে মুহাম্মদের হাতে সঁপে দিতো ? এই কাল্পণিক আল্লাহই ছিলো তার দাপট ও নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। আল্লাহ মূলত মুহাম্মদেরই আরেক রুপ। হাস্যকর হচ্ছে মুহাম্মদ কড়াভাবে নিষেধ করতে আল্লাহর সাথে কোন শরীক দাঁড় করানোকে, কিন্তু যৌক্তিকভাবে বাস্তবতার বিচারে মুহাম্মদ আর আল্লাহর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মুহাম্মদই আল্লাহর ক্ষমতার শরীক হিসাবে নিজেকে দেখিয়েছে।
নার্সিসিস্টে একটা বিশাল উদ্দেশ্য দরকার হয় তার অনুসারীদের কাজে লাগানোর জন্য। জার্মানরা হিটলারের জন্য যুদ্ধ বাঁধায় নি। তারা যুদ্ধ করেছিলো হিটলার যে বিশাল উদ্দেশ্য ও সংগ্রামের কথা তাদের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো তার জন্য।
Sam Vaknin লিখেছেন,
“নার্সিসিস্ট তার আত্নপ্রেমের লিপ্সা চরিতার্থ করার জন্য হাতের নাগালে যা পায় তা-ই ব্যাবহার করে। যদি ঈশ্বর, মাজহাব, মসজিদ, বিশ্বাস ও প্রাথিষ্ঠানিক ধর্ম তার তার উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক হয় তাহলে সে ধার্মিকের ভাব ধরে। যদি এগুলো তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে না পারে তাহলে সে ধর্মত্যাগী হয়” (টীকা-১০৩)
ইসলাম ছিলো অন্যদের নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। মুহাম্মদের পরে অন্যরাও এই হাতিয়ার ব্যাবহার করেছে একই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। যেসব নেতারা তাদের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ইসলামকে ব্যাবহার করে মুসলিমরা তাদের হাতের পুতুল হয়ে যায়।
মির্জা মালকাম খান নামে এক ধর্মান্তরিত আমেরিকান মুসলিম যিনি জামালুদ্দিন আফগানীর সাথে মিলে ইসলামি পূনঃজাগরণের ডাক দিয়েছিলেন, তার একটা ধূর্ত স্লোগান ছিলো এরকম, “ মুসলিমদের বললেই হয় যে অমুক জিনিস কুরআনে আছে, তাহলেই তারা সেই জিনিসের জন্য নিজেদের জান কুরবানী করে দেবে”। (টীকা-১০৪)

নার্সিসিস্টের সিলসিলা

মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদ তার অনুসারীদের তার অসমাপ্ত জিহাদ চালিয়ে যাবার আদেশ দিয়ে গিয়েছিলো। চেঙ্গিস খান তার মৃত্যুশয্যায় এরকমই এক নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলো তার সন্তানদের উদ্দেশ্যে। সে বলেছিলো তার ইচ্ছা ছিলো পুরো দুনিয়া জয় করা, কিন্তু তার পক্ষে যেহেতু আর সম্ভব হচ্ছে না, সন্তানরা যেনো এই অসমাপ্ত কাজ শেষ করে। মঙ্গলরাও ছিলো প্রাথমিক মুসলিমদের মতই সন্ত্রাসী। নার্সিসস্টের কাছে জয়ই শেষ কথা। তার কোন বিবেক নাই। তার কাছে অন্যদের জীবনের দাম নেই।
৫১ বছর বয়সে হিটলার তার বাম হাতে কাঁপুনি ধরা রোগ আছ বলে বুঝতে পারে। সে এটা সবার কাছ থেকে গোপন করে রাখে ও অবস্থার অবনতি ঘটলে জনসম্মূখে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। সে বুঝতে পারে মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে। তার উদ্দেস্য সাধণে সে আরো দৃঢ়কল্প হয়ে উঠে। দ্রুততার সাথে নতুন নতুন আক্রমণ করতে থাকে, কারণ সে বুঝতে পারে তার লড়াই এখন সময়ের বিরুদ্ধে। নার্সিসিস্ট তার কাজের সিলসিলা রেখে যেতে চায়।
ইসলামকে ধর্ম হিসাবে দেখাটা আসলে বড় ভুল। ইসলামের আধ্যাত্নবাদী ব্যাখ্যাগুলো মূলত পরের যুগের মুসলিম দার্শণিকদের তৈরী করা। মুহাম্মদের ছাগলামি কথাবার্তাকে তারা স্বর্গীয় মাহাত্ন্য দেয়। তার পরের যুগের অনুসারীরা নিজেদের ব্যাক্তিত্ব দিয়ে ইসলামকে অন্যরুপে তৈরী করে। সময়ের সাথে সাথে এসব নতুন রুপও পুরাতন হয়ে যায় এবং কালের ছাপ পড়ার কারণে অনেকের কাছে ধর্মের আদি রুপ বলে মনে হতে থাকে।

ইসলামকে যদি ধর্ম হিসাবে ধরা হয় তাহলে সে একই বিচারে নাৎসিবাদ, কমুনিজম, স্যাটানিজম, Heaven’s Gate, People’s Temple, Branch Davidian এসবকেও ধর্ম হিসাবে ধরতে হবে। মানুষকে শিক্ষিত করার, মানুষের সুপ্ত ক্ষমতাকে বের করে আনার, আত্নাকে উন্নত চেতনার স্তরে উন্নীত করার, মানুষে মানুষে মেলবন্ধন তৈরী করার ও মানুষকে আলোকিত করার কোন দর্শণ হিসাবে যদি ধর্মকে বিবেচনা করি সেই বিচারে ইসলাম কোনভাবেই ধর্ম হতে পারে না।

নার্সিসিস্ট নিজেই খোদা হতে চায়

নার্সিসিস্টের কাছে শেষতক যা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে ক্ষমতা। সে চায় তাকে যাতে কেউ অবহেলা করতে না পারে। সবার মনোযোগ ও শ্রদ্ধার লক্ষ্যবস্তু হতে। ভিতরে ভিতরে নার্সিসিস্ট মূলত একা, হীনমন্যতায় ভোগা মানুষ। তারা জানে নিজেদের বিশাল সংগ্রামের কান্ডারি, আশার আলো হিসাবে বিপ্লবী নেতার মত করে উপস্থাপণ করতে পারলে তারা অনেক অনুসারী পাবে যেভাবে চিনির চারপাশের পিঁপড়া জমা হয় তেমন করে। সংগ্রামের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য আসলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না তার জন্য। কেবলই একটা অজুহাত। নার্সিসিস্ট নিজের খেয়ালে কাল্পণিক খোদা আর বিশাল সংগ্রামের লক্ষ্য ঠিক করে। নিজেদের বানানো খোদাকে যত বেশি মহিমান্বিত করা যায় আর নিজের তৈরী করা সংগ্রামকে যত ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ করা যায় , ততই তাদের নিজের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বাড়ে।
মুহাম্মদের খুব দরকারী হাতিয়ার ছিলো আল্লাহ। তার মাধ্যমে সে তার অনুসারীদের উপর সীমাহীন প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলো। তাদের জীবনের একচ্ছত্র মালিক হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সে নিজেই। তার বর্ণনায় খোদা কেবল একজনই, পরাক্রমশালী আবার দয়াময়। আর মুহাম্মদ ছিলো তার একমাত্র দালাল। কার্যত তাতে মুহাম্মদই হয়ে উঠে একমাত্র খোদা। যদিও দেখানো হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলছে মুহাম্মদ ও অন্যরা , কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মুহাম্মদের সব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ইচ্ছা ও ঝোঁকের আদেশকে মেনে চলতে বাধ্য হচ্ছে তার অনুসারীরা। Vaknin এই উদ্ভট প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছেন তার “For Love of God – Narcissist and Religion” লেখায় (টীকা-১০৫)
“ নার্সিসিস্ট নিজেই হতে চায় খোদা – সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী, সর্বত্র বিরাজমান, পছন্দনীয়, সকলে আলোচনার বিষয় ও সমীহ-জাগানীয়া। খোদা হচ্ছে নার্সিসিস্টের স্বপ্নদোষ, তার বিশাল কল্পণা। কিন্তু অনেকভাবেই খোদাকে ব্যাবহার করা যায়। নার্সিসিস্ট নানান উপায়ে ক্ষমতাধরের কতৃত্বকে সম্মানিত আবার অসম্মান করে।
সম্মানের সময়ে সে ক্ষমতাধরদের উচ্চাসনে বসায়, তাদের পছন্দ করে, অনুকরণ করতে চায় (অনেকসময় হাস্যকরভাবে), তাদের কর্তৃত্বকে রক্ষা করতে চায় আক্রমণ থেকে। ক্ষমতাধররা কখনো ভুল করতে পারে না, তাদের ভুল হয় না। নার্সিসিস্ট তাদের মনে করে জীবনের চেয়ে বড়, নির্ভুল, নিখুঁত, অসীম ও অসাধারণ। কিন্তু যখনই দেখা যায় ক্ষমতাধররা অবশ্যাম্ভাবীভাবে তার অতিরিক্ত ও অবাস্তব উচ্চাশা পূর্ণ করতে ব্যার্থ হয় , তখনই সে এসব প্রাক্তন সম্মানিত ক্ষমতাধরদের অপমান করা শুরু করে।
এবার তারা কেবলি “মানুষ” (নার্সিসিস্টের কাছে এটা অস্তিত্বের একটা নীচু স্তর)। এরা এখন ক্ষুদ্র, ভংগুর, ভুলে ভরা, ভীতু, কুচক্রী, নির্বোধ ও মোটামুটি মানের। সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর খোদার সাথে তার সম্পর্কেও নার্সিসিস্ট এই একই সম্মান-অপমান চক্রের ভিতর দিয়ে যায়।
কিন্তু প্রায়ই, যখন ভিতরে ভিতরে যখন তার মোহভংগ ঘটে ও বিপ্লবী চেতনায় হতাশা ভর করে, তখনও সে খোদাকে ভালোবাসার ও তার নির্দেশ মেনে চলার ভান করে যেতে থাকে। নার্সিসিস্ট এই ভান ধরে যেতে থাকে কারণ, খোদার নৈকট্যই তার কর্তৃত্বের উৎস। বিভিন্ন তরীকার নেতা, পুরোহিত, ইমাম, ধর্মপ্রচারক, রাজনীতিবিদ এমনকি বুদ্ধিজীবি – সবাই তাদের কর্তৃত্ব দেখায় খোদার সাথে তাদের সম্পর্ক অন্যদের চাইতে উচ্চ পর্যায়ের এই দাবীর ভিত্তিতে।
ধর্মীয় কর্তৃত্ব থাকার কারণে নার্সিসিস্ট তার ধর্ষকামী ইচ্ছা ও নারীবিদ্বেষের চর্চা করে যেতে পারে বাধাহীন ও খোলামেলাভাবে। যে নার্সিসিস্টের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের উৎস ধর্ম, সে চায় একপাল বাধ্য ও অনুগত দাস যাদের উপর সে তার খামখেয়ালি প্রভুত্ব খাটাতে পারে। সবচে নিষ্পাপ ও বিশুদ্ধ ধর্মীয় আবেগকেও নার্সিসিস্ট ধর্মীয় আচার এবং শক্ত কর্তৃত্বের কাঠামোর ভিতরে নিয়ে আসতে পারে। সরলপ্রাণ মানুষের আবেগকে পূঁজি করে তার ব্যাবসা চলে। তার অনুসারীরা তার হাতের জিম্মি হয়ে পড়ে।
ধর্মীয় কর্তৃত্ব নার্সিসিস্টের আত্নরতি চর্চারও সুযোগ করে দেয়। তার সহধার্মিকরা, তার অনুসারীরা, তার জামাতের লোকজন , তার দর্শক শ্রোতারা হয়ে পড়ে তার আত্নরতি চরিতার্থ করার উপায়। তারা তার আদেশ নিষেধ মেনে চলে, তার দেখানো পথে চলে, তার ব্যাক্তিত্বের প্রশংসা করে, তার তুচ্ছ ব্যাক্তিগত বিষয়ের প্রশংসা করে , তার প্রয়োজন (অনেকসময় যৌনাকাংখাও) পূরণ করে , তাকে সম্মান ও পূজা করে।
এমনিতেও “প্রবল পরাক্রমশালী” কোন স্বত্তার অংশ হতে পারা নার্সিসিস্টের জন্য সন্তুষ্টির উৎস। খোদার একটা অংশ হতে পারে, তার বিশালত্বের ভিতরে নিজেকে খুঁজে পাওয়া, তার ক্ষমতা ও সন্তুষ্টি সরাসরি উপভোগ করতে পারা, তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারা, এসবই নার্সিসিস্টের অসীম আত্নরিত চরিতার্থ করার উপায়ে পরিণত হয়। খোদার নির্দেশ পালন করে, তাকে ভালোবেসে, তার প্রতি আত্নসমর্পণ করে, তার সাথে যোগাযোগ করে, তার সাথে একাত্ন হয়ে গিয়ে এবং এমনকি তার বিরোধীতা করে নার্সিসিস্ট নিজেই হয়ে উঠে খোদা। (নার্সিসিস্টের শত্রু যতো বিশাল হয় সে নিজেকে তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও বিশাল মনে করে )
নার্সিসিস্টের জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতই , সে খোদাকেও এক ধরণের বিপরীত-নার্সিসিস্টে পরিণত করে ফেলে। খোদাই হয়ে উঠে তার আত্নরতি চরিতার্থ করার বৃহত্তম উৎস। এই অসীম ক্ষমতাধর ও অকল্পণীয় স্বত্তার সাথে সে ব্যাক্তিগত এক সম্পর্ক তৈরী করে যাদের অন্যদের উপর সে অসীম ক্ষমতার চর্চা করতে পারে। সে নিজেই খোদার প্রক্সি হয়ে উঠে, খোদার সাথে তার একচ্ছত্র সম্পর্কের দাবী দিয়ে। সে খোদাকে পরমপূজ্য দাবী করে , এবং একই সাথে তার অবমূল্যায়ন ও অপব্যাবহারও করে। নার্সিসস্টের মনস্তত্তের এই প্যাটার্ণ থেকে স্বয়ং খোদাও রেহাই পায় না।” (টীকা-১০৬)

নার্সিসিস্টরা সরাসরি নিজেদের গুনগান গায় না। তারা বিনয়ের পর্দার আড়ালে লুকিয়ে তাদের প্রস্তাবিত খোদা, আদর্শ, বিপ্লব ও ধর্মের গুনগান গায় যেগুলো মূলত তাদের নিজের স্বত্তারই অন্যরুপ। তারা হয়তো নিজেদের কেবলমাত্র বার্তাবাহক, সরল, বিনয়ী আত্নত্যাগী হিসাবে কোন এক খোদার সেবক অথবা কোন মহৎ সর্বময় সংগ্রামের একজন সৈনিক হিসাবে দেখাতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে সেই সর্বশক্তিমান খোদা বা মহৎ সংগ্রামের সাথে তাদের নিজেদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, কারণ একমাত্র তারাই সেই খোদার সাথে যোগাযোগ করতে পারে সেই মহৎ সংগ্রামের উদ্দেশ্য ও আদর্শ সম্পর্কে একমাত্র তার মাধ্যমেই জানা সম্ভব। তাদের প্রস্তাবিত খোদা বা সংগ্রামের বিরোধীতাকারীদের প্রতি তারা চরম মাত্রায় অসহিষ্ণু হয়।
নার্সিসিস্টরা নির্মম ও দুর্দমনীয় কিন্তু বোকা না। তারা অন্যদের যে ক্ষতি করে সে সম্পর্কে পুরোপুরিই আত্নসচেতন থাকে। অন্যদের আঘাত করে যে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া যে তারা তা উপভোগ করে। তারা খোদার মত ক্ষমতা উপভোগ করে। নিজের এক ইশারায় কাকে পুরষ্কৃত করা হবে, কাকে শাস্তি দেয়া হবে, কাকে মেরে ফেলা হবে , কাকে বাঁচতে দেয়া হবে এসব ঠিক করে দেয়ার ক্ষমতা তারা ভালোভাবেই উপভোগ করে। মুহাম্মদের সমস্ত কিছু – তার নির্মমতা, উদ্ভট আত্নগরিমা, যারা তার আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে তাদের প্রতি উদারতা, তার আত্নবিশ্বাস ও বর্ণময় ব্যাক্তিত্ব – সবই ব্যাখায় করা যায় তার নার্সিসিজম রোগের ভিত্তিতে।

নার্সিসিজম রোগের কারণ

সমাজের কাছ থেকে তাচ্ছিল্য পেয়ে (বাস্তবে অথবা নিজের ভিতরে মনে করে) যে শিশু বড় হয় সে তার এই হীনমন্যতাবোধকে অবচেতনে এক ধরণের মানসিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পুষিয়ে নিতে চায়। Alfred Adler নামের একজন প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এই প্রক্রিয়ার নাম দিয়েছেন “Superiority Complex” বা বাংলায় আত্নগরিমাবোধ। এ প্রক্রিয়ার একটা অংশ হচ্ছে নিজের যেকোন অর্জনকে বিশাল করে দেখা ও যাদেরকে সে শত্রু হিসাবে দেখে তাদের যেকোন কিছুকে খাটো করে দেখা।
পিতামাতের লালন-পালন পদ্ধতির ভুল হচ্ছে নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের প্রধাণ কারণ। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যেসব বাবা মা সন্তানকে অতিরিক্ত প্রশংসা, বিলাস দিয়ে ও নূন্যতম ন্যায়নীতি না শিখিয়ে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে তারা আর অন্যদিকে যারা সন্তানকে শারিরীক নির্যাতন ও অবহেলা দিয়ে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয় ; সন্তানের ব্যাক্তিত্বগঠনে ব্যার্থতার পরিমাণ এই দুই দলেরই একই পরিমাণ। ফলস্বরুপ দেখা যায় এ ধরণের পরিবেশে বড় হওয়া নার্সিসিস্ট প্রাপ্তবয়ষ্কদের দুনিয়ার জন্য নিজেকে পুরোপরি প্রস্তুত করতে পারে না। জীবন সম্পর্কে একটা অবাস্তব ধারণা নিয়ে সে বড় হয়। উল্টোদিকে যে বাচ্চা যথেষ্ঠ পরিমাণ সাহায্য ও উৎসাহ পায় না তার মধ্যেও নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে।
হাদিস ও সিরাত থেকে আমরা জানি যে মুহাম্মদ কে একেবারে শিশু অবস্থাতেই অন্যীক মহিলার কাছে দিয়ে দেয়া হয়। এমনকি হতে পারে তার নিজের মা আমিনা তার ব্যাপারে মোটেই উৎসাহী ছিলো না ? মুহাম্মদ যখন ষাট বছরের বৃদ্ধ তখনো সে আমিনার কবরে গিয়ে প্রার্থণা করেনি। কেনো ? সেই বয়সেও কি তার মায়ের প্রতি ক্ষোভ যায় নি ?
হালিমা শিশু মুহাম্মদ কে নিতে চায়নি। কারণ সে ছিলো গরীব ঘরের এতিম বাচ্চা। তার বিধবা মা যে খুব বেশি টাকা পয়সা দিতে পারবে না এটা হালিমা জানতো। হালিমা ও তার পরিবারের অন্যরা মুহাম্মদের সাথে কি ধরণের আচরণ করেছিলো তার উপর এই বিষয়ের একটা প্রভাব থাকার কথা না ? এমনকি শিশুরাও নিষ্ঠুর হতে পারে। সেইসব দিনে এতিম হওয়াটা এক ধরণের কলংকের মত ছিলো। এখনও বিভিন্ন দেশে এতিমদের প্রতি এ ধরণের মনোভাব বিদ্যমান। মুহাম্মদের বাল্যকালের অবস্থা সুস্থ্য আত্নসম্মান তৈরীর জন্য উপযুক্ত ছিলো না।
Stress Response Syndromes নামক বইয়ের লেখক Jon Mardi Horowitz বলেন,
“ সবার পছন্দের পাত্র হওয়া, সবার কাছ থেকে আলাদা ব্যাবহার পাওয়া, নিজের অবস্থানে সন্তুষ্ঠ থাকার মত এসব আত্নরতিমূলক ইচ্ছা যখন অপূর্ণ থেকে যায় নার্সিসিস্ট তখন বিষণ্ণতা, উৎকণ্ঠা, অস্থিরচিত্ত , লজ্জা , স্ববিধ্বংসী কার্যকলাপ ও অজানা আক্রোশে আক্রান্ত হয়। এই আক্রোশের লক্ষ্যবস্তু হয় এমন যেকোন কেউ যার দিকে সে তার নিজের দুরাবস্থার জন্য আংগুল তুলতে পারে। এইসব কষ্টদায়ক অনুভুতি থেকে বাঁচতে সে শিশু তখন বাইরের দুনিয়াকে দেখার জন্য এক ধরণের আত্নরতিমূলক কাল্পণিক রংগিন চশমা পরে নেয় চোখে।” (টীকা-১০৭)
মুহাম্মদের বাল্যকাল ছিলো কষ্টকর। কুরানের সুরা ৯৩ এর আয়াত ৩-৮ এ দেখা যায় সে নরম হৃদয়ে তার একাকী এতিম বাল্যকালের কথা স্মরণ করে ও নিজেকে নিশ্চিন্ত করে যে আল্লাহ তার প্রতি দয়ালু হবেন ও তাকে ছেড়ে যাবেন না। এ থেকে বুঝা যায় বাল্যকালের একাকীত্বের স্মৃতি তার জন্য কতটা যন্ত্রণাদায়ক ছিলো। কর্কশ বাস্তবতা থেকে বাঁচতে সে নিজের ভিতর এক কল্পণার জগত তৈরী করেছিলো যার বর্ণনা এত বিস্তৃত ও বর্ণীল ছিলো যে তার পালক বাবা মা এসব শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। এ থেকে বুঝা যায় মুহাম্মদের শিশুকাল কোনভাবেই মসৃণ ছিলো না। জীবনের প্রথম বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে হয়তো মুহাম্মদের স্পষ্ট স্মৃতি ছিলো না কিন্তু সেসব সময়ের মানসিক ক্ষত সে সারা জীবন বয়ে বেড়িয়েছিলো। তার কাছে তার কল্পণার তৈরী করা জগত ছিলো সত্য। এটা ছিলো তার নিরাপদ আশ্রয়, সুখময় এক জায়গা যেখানে গিয়ে কর্কশ বাস্তবতার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কল্পণার এ জগতে তার জন্য ভালোবাসা ছিলো , শ্রদ্ধা ছিলো। সে ছিলো সকলের পছন্দনীয় , ক্ষমতাবান, গুরুত্বপূর্ণ এমনকি ভয়ংকরও। বাইরের দুনিয়া থেকে পাওয়া অবহেলা পুষিয়ে নিতে এই কল্পণার দুনিয়াতে সে যা ইচ্ছে তা-ই হতে পারতো।
Vaknin এর মতে, “নার্সিসিজমের সত্যিকারের কারণ এখনো পুরোপুরি বুঝা যায়নি, তবে এতটুকু মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে সবকিছু শুরু হয় শিশুকালে (পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে)। ধারণা করা হয় এই রোগের কারণ শিশুর প্রাথমিক অভিভাবকের (পিতামাতা অথবা লালনকারী) ব্যার্থতা। প্রাপ্তবয়স্ক নার্সিসিস্টের অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিশুকালে বাবা অথবা মা কোন একজনের কাছ থেকে ক্রমাগত অবহেলা অথবা নির্যাতনের স্বীকার ছিলো সে। সব শিশুই (সুস্থ্য ও অসুস্থ্য) যখন বাবামার কাছ থেকে কোন কাজে বাঁধা পায় তখন মাঝে মাঝে তারা এক ধরনের নার্সিসিস্টিক অবস্থায় ঢুকে যায় যেখানে তারা নিজেদের ক্ষমতাবান হিসাবে ভাবতে পারে। এটা সাধারণত স্বাভাবিক ও সুস্থ্য আচরণ কারণ এর মাধ্যমে শিশু বাবামার বাধার বিপরীতে নিজের ভিতরে আত্নবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে। (টীকা-১০৮)

অবহেলিত হওয়া শিশুরা নিজেদের ভিতরে এক ধরণের অক্ষমতা, অপূর্ণতার বোধ নিয়ে বড় হয়। বোধের গভীরে ধরে নেয় ভালোবাসা ও মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য নয় তারা। এর প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের ইগো ধরে রাখার জন্য তারা নিজেদের ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় দেখাতে চায়। নিজেদের দুর্বলতা ধরতে পারার কারণে তারা বুঝতে পারে অন্যরাও যদি এই সত্য জেনে যায় তাহলে কেউ তাদের ভালোবাসবে না, পছন্দ করবে না, সম্মান করবে না। এজন্য তারা নিজেদের নিয়ে মিথ্যা কাল্পণিক আত্নগরিমাপূর্ণ গল্প বানায় ও ছড়ায়। তাদের এই কাল্পণিক ক্ষমতা সাধারণত বাইরের কারো উপর ভিত্তি করে গাঁথা হয়। বাবা মা অথবা কোন শক্তিশালী বন্ধু এরকম কারো সাথে মিলিয়ে। এটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে , কিন্তু এই ধরণের নার্সিসিজম যদি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে তাহলে সেটা নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার রোগের পরিণত হয়। মুহাম্মদের কাল্পণিক বন্ধু ছিলো আল্লাহ। সর্বশক্তিমান, মহা পরাক্রমশালী। এই আল্লাহর নিজেকে যোগ করে ও তার একমাত্র দালাল হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে আল্লাহর সমস্ত শক্তির দুনিয়াবী অংশীদার হিসাবে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
ছয় বছর বয়সে মায়ের মৃত্যুর পরে মুহাম্মদ তার বৃদ্ধ দাদা আব্দুল মুত্তালিবের আশ্রয়ে আসে। মুত্তালিব তাকে অতিরিক্ত আদরে নষ্ট করে ফেলেন। বিভিন্ন হাদিস হতে দেখা যায় মুত্তালিব ছিলেন মুহাম্মদের প্রতি অতিরিক্ত রকমের নরম। মুত্তালিবের নিজেরা ছেলেরা যখন তার চারপাশে বসে থাকতো তখন তিনি মুহাম্মদ কে বসতে দিতেন তার নিজের মাদুরের উপর।
আব্দুল মুত্তালিব যে মুহাম্মদের আসল মূল্য আগেই বুঝতে পেরেছিলেন মুহাম্মদের এই দাবী তার অবশ্যই তার নিজের কল্পণাপ্রসূত। এটা তার নিজের কাছে নিজের বলা মিথ্যা। তবু এটা নিশ্চিত যে আব্দুল মুত্তালিব মুহাম্মদকে বুঝিয়েছিলেন যে সে আলাদা কিছু, গুরুত্বপূর্ণ কিছু। তিনি তার এতিম নাতিকে ভালোবাসা ও যত্ন দিয়ে লালন করেছিলেন। করুণা ও দয়াবশত। কিন্তু মুহাম্মদ তার এই আলাদা যত্নের অর্থ করেছিলো তার নিজের বিশালত্ব ও গুরুত্ব ভেবে। শিশুকালে তার নিজের মধ্যে নিজেকে বিশাল ভাবার যে প্রবণতা শুরু হয়েছিলো তা আব্দুল মুত্তালিবের আচরণের কারণে আরও শক্তপোক্ত হয়। সে নিজেকে অদ্বিতীয়, আলাদা ও গুরুত্বপূর্ণ কেউ হিসাবে আবার আবিষ্কার করে।
আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পরে চাচা আবু তালিব তার লালনপালনের ভার নেন। এতিম অবস্থায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে পালিত হওয়ার কারনে আবু তালিবের সন্তানদের মাঝে মুহাম্মদের প্রতি দয়া ছিলো। দাদা ও চাচা দুইজনেই মুহাম্মদকে যথেষ্ঠ পরিমাণ শাসন করতে ব্যার্থ হন। এই সমস্তু কিছু মিলিয়েই তার মধ্যে নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার দেখা দেয়। মনোবিজ্ঞানী J.D. Levine ও Rona H. Weiss লিখেন:
“শারীরবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা যেমন দেখি যে, একটা শিশুকে সুস্থ্য সবলভাবে বড় করে তুলতে হলে তাকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে, তীব্র গরম ও শীত থেকে বাঁচাতে হবে ও যথেষ্ঠ পরিমাণ অক্সিজেন আছে এমন বাতাস দিতে হবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য , ঠিক তেমনি মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা জানি শক্ত সবল ও সুস্থ্য মানসিকতাসম্পন্ন হিসাবে বড় হতে হলে শিশুকে ভালো সহানুভুতিশীল পরিবেশ দিতে হবে যেখানে, ১) তার মনোযোগ প্রাপ্তির ইচ্ছা পূর্ণ হবে পিতামাতার ভালোবাসা পেয়ে ও ২) শক্তিশালী প্রাপ্তবয়স্কের অধীনে চারপাশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারার মতো স্থিতিশীলতা থাকবে।” (টীকা-১০৯)
জীবনের একেবারে প্রথম কয়েক বছরে মুহাম্মদ পেয়েছিলো অবহেলা ও একাকীত্ব, তার পরে আবার অতিরিক্ত আদর। তার পরিস্থিতি নার্সিসিস্টে পরিণত হবার জন্য একেবারে যথোপযুক্ত ছিলো।
মুহাম্মদ তার মায়ের সম্পর্কে কিছু বলেছিলো এমন কিছু পাওয়া যায় না। মক্কা বিজয়ের পরে একবার তার মায়ের কবরে গিয়েছিলো কিন্তু কোন প্রার্থণা করেনি। তাহলে কেন যাওয়া ? হতে পারে এটা দেখানো যে তাকে ছাড়াই সে অনেক দূর আসতে পেরেছে, অনেক বড় কিছু করতে পেরেছে। অন্যদিকে তার বর্ণনায় দাদা আব্দুল মুত্তালিব এর কথা অনেকবার এসেছে যিনি তাকে ভালোভাসা দিয়েছিলেন ও তার নার্সিসিস্টে পরিণত হবার জন্য কাঁচামাল যুগিয়েছিলেন।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে শিশুর জীবনের প্রথম পাঁচ বছর সবচে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়েই ঠিক হয়ে শিশু কতদূর আগাবে। এই পাঁচ বছরে মুহাম্মদের মানসিক প্রয়োজনগুলো মিটেনি। প্রথম কয়েক বছরের অবহেলা ও নিদারুণ একাকীত্বের স্মৃতির ভার সে প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরও বয়ে বেড়াচ্ছিলো। নিজের প্রতি এক ধরণের হীনমন্যতাবোধ ও নিজের মূল্য সম্পর্কে ভিতরে ভিতরে অনিশ্চয়তা নিয়ে সে বেড়ে উঠেছিলো। এই দুর্বলতাকে সে লুকাতে চাইতো মাত্রাতিরিক্ত আত্নঅহংকার দিয়ে। নিজেকে দেখাতো চাইতো সমস্ত কিছুর অধিপতি, বিশাল কিছু হিসাবে।
সে নিজেকে খোদার একমাত্র অংশীদার হিসাবে দাবী করে , আর অন্য কেউ যাতে তাকে উৎখাত করতে না পারে সেজন্য নিজেকে শেষ নবী বলে দাবী করে যায়। তার ক্ষমতা একেবারে পরিপূর্ণ এবং চিরদিনের জন্য।

মুহাম্মদের উপর খাদিজার প্রভাব

ইসলামে খাদিজার ভূমিকা এখনো পুরোপুরিভাবে বুঝা ও স্বীকার করে নেয়া হয়নি। মুহাম্মদের উপর তার প্রভাব ছিলো বিশাল। ইসলামের জন্মে মুহাম্মদের সাথে সাথে খাদিজার ভূমিকাও সমান সমান বলে স্বীকার করা উচিৎ। তাকে ছাড়া ইসলাম সম্ভবত টিকতে পারতো না।
খাদিজা তার তরুণ স্বামীকে পছন্দ করতো একটু বেশিই। খাদিজার সাথে বিয়ের পর মুহাম্মদ কোন কাজ করেছিলো বলে কোথাও পাওয়া যায় না। বিয়ের পরে খাদিজার ব্যাবসায় ক্রমাবনতি হতে থাকে এবং তার মৃত্যুর পরে পুরো পরিবার আবার দারিদ্রে পতিত হয়।
মুহাম্মদ তার সন্তানদের দেখাশোনাও করতো না। দুনিয়ার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে মুহাম্মদ তার প্রায় পুরোটা সময় কাটাতো একাকী, তার কাল্পণিক চিন্তার আকাশ-কুসুম জগতে।
Vaknin এর ভাষায়,
“এ ধরণের অসহ ব্যাথা থেকে বাঁচতে নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে ভোগা কিছু কিছু রোগী সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় ও মিথ্যা বিনয় ও নম্রতা দিয়ে নিজেদের বিশাল অন্তর্গত আত্নগরিমাকে ঢাকতে চায়। একাকীত্ব, লজ্জা ও অপূর্ণতার বোধ থেকে সাধারণভাবে বিষণ্ণতা ও জন-বিচ্ছিন্নতার উৎপত্তি হয়।” (টীকা-১১০)

মাঝে মাঝে মুহাম্মদ কয়েকদিনের খাবার একসাথে নিয়ে তার নির্জন গুহায় ধ্যানে চলে যেতো। ফিরতো কেবল নতুন করে খাবার ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে যাবার জন্য।
খাদিজাকে ঘরেই থাকতে হতো। দুইজনের মধ্যে জন্ম নেয়া নয়জন বাচ্চার দায়িত্ব না কেবল, তার স্বামীর দায়-দায়িত্বও তাকেই নিতে হতো। কারণ তার আচরণও ছিলো দায়িত্বজ্ঞানহীন একটা বাচ্চার মতই। তাকে কখনো অভিযোগ করতে শুনা যায় নি। আত্নত্যাগেই সে সুখী ছিলো। কেনো ?
এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। এ থেকে ইংগিত পাওয়া যায় খাদিজার সম্ভবত নিজস্ব আলাদা মানসিক সমস্যা ছিলো। আধুনিক মনোবিজ্ঞানে যাকে বলা হয় সহ-নির্ভরশীল (codependent) অথবা বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট (Reversed Narcissist)। মুহাম্মদ যখন তার হ্যালুসিনেশনের গল্প বলে খাদিজাকে তখন সে কেনো কোন ওঝা না ডেকে বরং সেসব কথা বিশ্বাস করে নেয় ও মুহাম্মদের নবীত্বের ক্যারিয়ার শুরু করতে সাহায্য করে তা বুঝতে হলে খাদিজার এই মানসিক অবস্থাকে আমলে নিতে হবে।
National Mental Health Association এর সংজ্ঞানুযায়ী সহ-নির্ভরতা হচ্ছে “এটা শিখে নেয়া আচরণের এক ধরণের প্যাটার্ণ যা প্রজন্মান্তরে চলতে পারে। এটি মানসিক ও আচরণগত এক ধরণের সমস্যাজনক অবস্থা। এ ধরনের রোগীর সুস্থ্য ও পারষ্পরিক সন্তুষ্টিপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী ও চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। এটাকে অন্যভাবে “সম্পর্কের আসক্তি” (Relationship Addiction) ও বলা হয়, কারণ সহ-নির্ভরশীলতার রোগীরা প্রায়ই একপাক্ষিক, মানসিকভাবে ধ্বংসাত্নক বা নিপীড়নমূলক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ও চালিয়ে যায়। এই রোগ প্রথম আবিষ্কার করা হয় প্রায় দশ বছর আগে মাদকাসক্তদের পরিবারের ব্যাক্তিদের মাঝে সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিনের গবেষণার ফলাফল থেকে। সহ-নির্ভরশীলতায় আক্রান্ত পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখে ও তাদের কাছ থেকে শিখে অন্যরাও ধীরে ধীরে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে।” (টীকা-১১১)
খাদিজা ছিলো সফল ও সুন্দরী নারী। তার পিতা খুয়াইলিদের সবচে প্রিয় কন্যা। খুয়াইলিদ তার নিজ পুত্রদের চাইতে বেশি আস্থা রাখতেন খাদিজার উপর। মক্কার ক্ষমতাধরদের বিয়ের প্রস্থাব ফিরিয়ে দিয়েছিলো খাদিজা। কিন্তু টগবগে তরুন, অভাবগ্রস্থ মুহাম্মদকে দেখে খাদিজা প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যায় ও নিজের চাকরানীর মধ্যস্ততায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।
উপর থেকে ভাসাভাসাবে দেখলে হয়তো মনে হবে মুহাম্মদের যাদুকরী ব্যাক্তিত্ব দেখে এই ক্ষমতাবান মহিলা বুঝি মোহগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলো। আদতে বিষয়টি আরো জটিল।
তাবারির বর্ণনায় এসেছে,
“খাদিজা মুহাম্মদের কাছে বিয়ের পয়গাম পাঠায়। এই ফাঁকে সে তার বাবাকে বাড়ীতে ডেকে এনে তাকে প্রচুর পরিমাণ মদ পান করিয়ে মাতাল করে ফেলে ও সুগন্ধী মাখিয়ে কেতাদুরুস্ত পোশাক পরিয়ে প্রস্তুত করে। অন্যদিকে গরু জবাই করে খাবার দাবারের ব্যাবস্থা করে। এর পরে মুহাম্মদ ও তার চাচাদের আসতে বলে। সবাই জড়ো হলে তার মাতাল বাবা মুহাম্মদের সাথে তার বিয়ে পড়ান। মাতাল অবস্থা কাটলে তিনি বলে উঠেন এই আতর, পোশাক , খাবার-দাবার এগুলোর উদ্দেশ্য কি ? তখন খাদিজা বলে তুমি আমাকে মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহর সাথে বিয়ে দিয়েছো। তিনি বলেন, অসম্ভব। আমি একাজ করি নাই। মক্কার বিখ্যাত সব লোকেরা তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে , আমি রাজি হইনি, আর এই ফকিরের সাথে আমি কেনো তোমার বিয়ে দিতে যাবো ? ” টীকা-১১২
মুহাম্মদের পক্ষ উষ্মার সাথে দাবী করে সমস্তু কিছু তার মেয়েই আয়োজন করেছে। বৃদ্ধ তার তলোয়ার বের করলে মুহাম্মদের আত্নীয়রাও তাদের তলোয়ার বের করে। রক্তারক্তি যখন আসন্ন তখন খাদিজা সবার সামনে মুহাম্মদের প্রতি তার ভালোবাসার কথা ও বিয়ের সমস্তু কিছু আয়োজন করার কথা স্বীকার করে নেয়। খুয়াইলিদ তখন শান্ত হন ও যা ঘটে গেছে তা আর যেহেতু উল্টানো যাবে না সেহেতু মুহাম্মদের পক্ষের সাথে বিবাদ মিটিয়ে ফেলেন।
একটা ধীরস্থীর বুদ্ধিমতি মহিলা কিভাবে হঠাৎ তার চাইতে ১৫ বছরের ছোট একটা চালচূলোহীন তরুণের প্রেমে পড়ে যেতে পারে ? এই হঠকারি আচরণের মূলে রয়েছে খাদিজার নিজস্ব অন্য এক ধরনের মানসিক সমস্যা।
খাদিজার পিতা মদ্যপ ছিলো বলে প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন বর্ণনায়। খাদিজা নিশ্চয়ই জানতো তার বাবার মদের প্রতি দুর্বলতার কথা। এ কারণেই সে বিয়ের পুরো প্রক্রিয়ায় ধোঁকা দেয়ার জন্য মদের আশ্রয় নেয়। সাধারণত যারা মাদকে আসক্ত না তারাও মাঝেমধ্যে টুকটাক মদ পান করে ও জানে কতটুকু হলে থামতে হবে। খুয়াইলিদ কিন্তু অতিথিরা আসার আগেই মাতাল হয়ে গিয়েছিলেন। এ থেকে ধারণা করা যায় তিনি কেবল সামাজিকতার খাতিরে মদ পান করতেন না বরং পুরোদস্তুর মাদকাসক্তই ছিলেন। কিন্তু এর গুরুত্ব কি ? খাদিজা যে সহ-নির্ভরশীলতা রোগে আক্রান্ত ছিলো সেটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। মাদকাসক্ত ব্যাক্তির পরিবারের সন্তানদের মধ্যে সহ-নির্ভরশীলতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবণা বেশি থাকে।
খাদিজার পিতা তাকে অতিমাত্রায় আগলে রাখতেন ও তাকে নিয়ে অতিরিক্ত উচ্চাশা রাখতেন নিজের মধ্যে। গরীব ঘরের মুহাম্মদের সাথে তার চল্লিশোর্ধ কণ্যার বিয়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘মক্কার সবচে বিখ্যাতরা তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে কিন্তু আমি রাজি হই নাই’। এখান থেকে পরিষ্কার যে খাদিজা ছিলো তার চোখের মণি। খুয়াইলিদের অন্য সন্তান ছিলো, পুত্র ছিলো, কিন্তু খাদিজা ছিলো তার গর্ব ও আনন্দের স্থল। খাদিজা ছিলো তার একমাত্র সফল সন্তান।
যেসব শিশুকে অতিরিক্ত আদর ও উচ্চাশা দিয়ে বড় করা হয় তারা প্রায়ই বাবামার ছায়াতলে বেড়ে উঠে। এরা প্রায়শই সহ-নির্ভরশীলতায় আক্রান্ত হয়। এরা সাধারণত বাবা অথবা মায়ের প্রতি অতিরিক্ত পরিমাণে আচ্ছন্ন থাকে ও বাইরের দুনিয়ার কাছে বাবা মাকে গর্বিত করাকেই নিজেদের অস্তিত্তের উদ্দেশ্য হিসাবে ধরে নেয়। এরা ‘বিষ্ময়-শিশু’ হিসাবে বিখ্যাত হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে বড় হয় ও নিজেদের সাফল্য দিয়ে যাতে তাদের উপর করা প্রত্যাশার জবাব দিতে পারে সে বিষয়ে সচেতন থাকে।

ক্রমাগত আরো ভালো করার চাপে থাকার কারণে এ শিশু তার স্বাধীন ব্যাক্তিত্ব গড়ে তুলতে পারে না। নার্সিসিস্টিক ও পারফেকশনিস্ট পিতামাতার প্রত্যাশা পূরণ করাকেই সে তার জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য মনে করে। সে বুঝতে পারে তার ভালোবাসা প্রাপ্তি নির্ভর করছে সে কেমন অর্জন দেখাতে পারলো তার উপর, অন্যকিছুর উপর নয়। সন্তান হিসাবে পিতামাতার নিঃশর্ত ভালোবাসা আরো দূরের ব্যাপার। মাদকাসক্ত বাবা তার নিজের মানসিক অতৃপ্তি ঝাড়তে চায় সন্তানদের উপর, বিশেষ করে যে সন্তানের ভিতর সম্ভাবণা বেশি তার উপর। সে চায় এই সন্তান যেনো জগতের সমস্ত কিছুতে সবার উপরে থাকে ও তার নিজের ব্যার্থতার বোঝা প্রশমিত করে।
সহ-নির্ভরশীলতার রোগী সমতার ভিত্তিতে গড়ে উঠা সুস্থ্য স্বাভাবিক সম্পর্কের মধ্যে সুখ ও পূর্ণতা খুঁজে পায় না। সম্পর্কের অন্য মানুষটির নিরবচ্ছিন্ন সেবক ও তুষ্টিকারক হিসাবেই সে কেবলমাত্র সুখ খুঁজে পায়। এই ধরণের সহ-নির্ভরশীলতার রোগীর জন্য তাই খাপে খাপ সংগী হচ্ছে অপরিসীম চাওয়ার অধিকারী নার্সিসিস্ট।
খাদিজা তার জন্য আসা সফল ও প্রাপ্তবয়স্ক পাণিপ্রার্থীদের ফিরিয়ে দিয়ে প্রেমে পড়ে তরুণ এবং অর্থনৈতিক মানসিক দুই দিক থেকেই অভাবী মুহাম্মদের। সহ-নির্ভরশীলতার রোগী ভালোবাসা ও করুণাবোধের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেনা। যাদের করুণা করা উচিৎ ও দুরাবস্থা থেকে উদ্ধার করা যায় সর্বোচ্চ, এ ধরণের লোকের প্রেমে পড়ার ঝোঁক থাকে এদের মধ্যে।
Vaknin তার লেখায় সহ-নির্ভরশীল এর বদলে ব্যাবহার করেন বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট শব্দবন্ধ। সহ-নির্ভরশীল ও নার্সিসিস্টের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন,
“বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট শুধুমাত্র কোন নার্সিসিস্টের সাথে সম্পর্কে জড়ালেই সত্যিকারের কোন আবেগ অনুভব করতে পারে। বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট শুরু থেকে এমন পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায় যা তাকে নার্সিসিস্টের জন্য যথোপযুক্ত সংগীতে পরিণত করে। নার্সিসিটের ইগোকে মজবুত করা, তার বিশালত্বের অংশ হওয়া, প্রশংসা ও ভালোবাসার দাবী করা তখনই যখন সেটা নার্সিসিস্টের জন্য আরো বেশি পরিমাণ প্রশংসা ও ভালোবাসা বয়ে আনে তখন।”(টীকা-১১৩)
সফল ও সুন্দরী খাদিজা কেনো মুহাম্মদের মত অভাবীর প্রতি উৎসাহিত হয় তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এখানে। বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্টরা নিজেদের ক্ষেত্রে সফল হলেও তাদের সম্পর্কগুলো সাধারণত অসুস্থ্য হয়। Vaknin আরো বলেন,
“বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট নার্সিসিস্টের সাথে মা-শিশু সম্পর্কের মত এক ধরণের সম্পর্ক তৈরী করে। নার্সিসিস্টের আত্নম্ভরীতাকে সমর্থণ দিয়ে বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট তার নিজস্ব দাসত্বের ক্ষুধা মিটায়। (নার্সিসিস্ট তার নিজের আত্নগরীমার সমর্থণ পায় বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্টের কাছ থেকে)। বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্টের নিজস্ব পূর্ণতাবোধের জন্য তাকে সম্পর্ক করতে হয় কোন না কোন এক নার্সিসিস্টের সাথে। নার্সিসিস্টকে সুখী করার জন্য, তার উপযুক্ত যত্ন করার জন্য, ভালোবাসা ও আদর দেয়ার জন্য যা যা কিছু করা দরকার তার সবই করতে প্রস্তুত থাকে বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট। কারণ সে মনে করে এগুলো পাওয়া নার্সিসিস্টের অধিকার। বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট নার্সিসিস্টকে মহিমান্বিত করে, তার শক্ত আশ্রয় হিসাবে কাজ করে, তার কাছ থেকে পাওয়া সমস্ত অন্যায় ও অবহেলাকে ধীরস্থীরভাবে মেনে নেয়, তার কাছ থেকে পাওয়া অসম্মানকে গায়ে মাখে না। ” (টীকা-১১৪)
মুহাম্মদ ও খাদিজার বিয়ে দেখে মনে হয় একেবারে নিয়তির অমোঘ লিখনের মত। মুহাম্মদ ছিলো ক্রমাগত প্রশংসা, মনোযোগ ও আদরের জন্য বুভুক্ষ এক নার্সিসিস্ট। গরীব এবং মানসিকভাবে কাংগাল। প্রাপ্তবয়স্ক হলেও তার ভিতরের শিশুটি তখনো শিশুকালে না পাওয়া আদর ও মনোযোগের জন্য ক্ষুধার্ত। তার প্রয়োজন ছিলো এমন কেউ যে তার দেখাশোনা করবে, যার উপর অত্যাচার করা যাবে , নিজের প্রয়োজনে যাকে ব্যাবহার করা যাবে। দুগ্ধপোষ্য শিশু যেভাবে তার মায়ের উপর অত্যাচার করে সেভাবে।
দুগ্ধপোষ্য শিশুর সাথে মায়ের সম্পর্কও নার্সিসিস্ট ও বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্টের সম্পর্কের মত। শিশুর মা শিশুর সাথে সহ-নির্ভরশীলতার সম্পর্কে জড়ানো থাকে। শিশুর সমস্ত অত্যাচার সে আনন্দের সাথে সহ্য করে। এটা সুস্থ্য স্বাভাবিক। কিন্তু দুইজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের মধ্যে এ ধরণের সম্পর্ক কোনভাবেই সুস্থ্য ও স্বাভাবিক নয়।
নার্সিসিস্টের মানসিক পরিপক্কতা শিশু অবস্থাতেই থেকে যায়। তার শিশুসূলভ চাওয়াগুলো শিশুকালে পূরণ হয়নি। প্রতিনিয়ত সে শৈশবের সেসব অপূর্ণ চাওয়া পূরণ করে চায়। সমস্ত শিশুই নার্সিসিস্ট। এটা তাদের বেড়ে উঠার একটা দরকারী পর্যায়। কিন্তু শৈশবের এসব নার্সিসিস্টিক চাওয়াগুলো পূরণ না হলে তাদের মানসিক পরিপক্কতা থেমে যায় ওখানেই। শৈশবে না পাওয়া মনোযোগ তারা তাদের প্রাপ্তবয়সের সংগী ও চারপাশের লোকজনের কাছ থেকে আদায় করতে চায়। এমনকি নিজের সন্তানদের কাছ থেকেও।
ভালোবাসার জন্য মুহাম্মদের কাংগালপনা বিভিন্ন সময় তার নিজের কাছ থেকেই প্রকাশিত হতে দেখা যায়। ইবনে সা’দের বর্ণনায় পাওয়া যায়, মুহাম্মদ বলে,
“কুরাইশ বংশের সবার উচিৎ আমাকে ভালোবাসা। আমি আল্লাহর কাছ থেকে যে বাণী নিয়ে এসেছি সেটা তাদের পছন্দ না হলেও নিজেদের আত্নীয় হিসাবে তাদের উচিৎ আমাকে ভালোবাসা।” (টীকা-১১৫)
কুরানে মুহাম্মদ বলে,
“তোমাদের কাছ থেকে আমি আত্নীয়সূলভ ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই চাইনি”। (টীকা-১১৬)
ভালোবাসা ও মনোযোগের কাংগাল কারো মরিয়া কান্নার শব্দ এইগুলো।
অন্যদিকে খাদিজা ছিলো বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট যার প্রয়োজন ছিলো এমন কাউকে যার সেবায় সে তার জীবন উৎসর্গ করতে পারবে। সহ-নির্ভরশীলতার রোগী অন্যের দ্বারা ব্যাবহৃত হওয়াতে কোন কিছু মনে তো করেই না, বরং তা উপভোগ করে।
Vaknin বলেন,
“বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট তার নিজস্ব ক্ষুধা-নিবারণের উৎস খুঁজে পায় নার্সিসিস্টের মধ্যে। এ দুই ধরণের মানুষ নিজেদের মধ্যে কার্যত এক ধরণের স্বাধীন স্বতন্ত্র মিথোজীবিতা তৈরী করে। বাস্তবে অবশ্য, দীর্ঘমেয়াদে নিজেদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে দুই পক্ষকেই নিজেদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হওয়া দরকার। ” (টীকা-১১৭)

মনোবিজ্ঞানী Dr. Florence W. Kaslow এ ধরণের মিথোজীবিতা সম্পর্কে বলেন, দুই পক্ষেরই এক্ষেত্রে পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার আছে, তবে বিপরীত মেরুতে।
“এদের দেখে মনে হয় একজনের প্রতি আরেকজনে বিধ্বংসী ও দুর্বার আকর্ষণ আছে। একজন আরেকজনের পরিপূরক। হয়তো এ কারণেই এ ধরণের যুগল যদি আলাদা হয়ে যায় তারপরও দেখা যায় ঘুরেফিরে একই ধরণের নতুন কারো সাথে আবার একই ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে”। (টীকা-১১৮)
নার্সিসিস্ট মুহাম্মদ ও বিপ্রতীপ-নার্সিসিস্ট খাদিজার মধ্যকার সম্পর্ক ছিলো দুইজনের জন্যই নিখুঁত। মুহাম্মদকে জীবিকার জন্য চিন্তিত থাকতে হয়নি। গুহায় বসে নিজের উর্বর কল্পণার জগতে ডুবে থাকতে পারতো সে সারাদিনমান। কল্পনার যে জগতে সে সকলের মধ্যমণি, সকলে শ্রদ্ধা, ভয় ও ভালোবাসার পাত্র। এই আত্নমগ্ন নার্সিসিস্টের সেবায় খাদিজা এতই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যে সে নিজের ব্যাবসায় অবহেলা দেখানো শুরু করে। তার এক সময়ের রমরমা ব্যাবসা ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে পড়ে ও সম্পদ কমতে থাকে। সর্বশেষ সন্তানের জন্মের সময় তার বয়স ছিলো প্রায় পঞ্চাশ বছর। মানসিক ও শারিরীকভাবে মুহাম্মদ যখন পাহাড়ের গুহায় একাকী কাটাচ্ছিলো , খাদিজা তখন ব্যাস্ত ছিলো ঘরে সন্তান লালন-পালনে।
Vaknin এর মতে,
“বিপ্রতীপ নার্সিসস্ট তার মানবিক সম্পর্কগুলোতে একেবারেই স্বার্থহীন, ত্যাগী এমনকি তোষামোদপূর্ণ ও কোনভাবেই অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে অস্বীকার করে। শুধুমাত্র অন্যেকে দিতে পারলে, তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারলে, তাদের সহায়তা করতে পারলেই সে কেবলমাত্র অন্যদের সাথে কোনরকম সম্পর্কে জড়াতে পারে”। (টীকা-১১৯)
সহ-নির্ভরশীলতার রোগী সম্পর্কে Vaknin আরো বলেন,
“ এরা সে ধরণের লোক যারা নিজেদের মানসিক সন্তুষ্টির জন্য অন্যের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। নিজেদের ইগো ধরে রাখা এমনকি দৈনন্দিনের বেঁচে থাকার জন্যও। এরা কাংগাল, নিজেকে সমর্পণকারী। সম্পর্কের অপর প্রান্তের মানুষটি তাদের ছেড়ে যাবে এই ভয়ে এরা এতই ভীত থাকে যে কথিত ‘সম্পর্ক’ টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নানা অপরিপক্ক আচরণ করে”। (টীকা-১২০)
Copendent No More বইয়ের লেখক Meloy Beattie বলেন, সহ-নির্ভরশীলতার রোগী নিজের অজান্তেই সমস্যাওয়ালা সংগী পছন্দ করে যাতে তারা নিজেদের অস্তিত্বের একটা উদ্দেশ্য খুঁজে পায়; প্রয়োজনীয় ও পরিপূর্ণ বলে অনুভব করতে পারে নিজেকে।
যেকোন যৌক্তিক মানুষই মুহাম্মদের উদ্ভট হ্যালুসিনেশনকে মানসিক রোগ অথবা তখনকার দিনের ভাষায়, ‘শয়তানের আছর’ বলে সাব্যস্ত করতো। এমনকি মুহাম্মদ নিজেই ভেবেছিলো তার উপর শয়তানের আছর পড়েছে। কুরানে আমরা দেখি মক্কার কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন লোকেরা ভেবেছিলো মুহাম্মদের উপর জ্বিনের আছর করেছে যার অর্থ সে পাগল হয়ে গেছে। খাদিজার জন্য এ ধরণের চিন্তা করা বেদনাদায়ক ছিলো। কারণ তার সুখ ও মানসিক তৃপ্তি নির্ভর ছিলো মুহাম্মদের প্রয়োজন মিটানো তাকে তৃপ্ত করার ভিতর। তার নিজস্ব নার্সিসিস্টকে যেকোন মূল্যে ধরে রাখা ছিলো তার উদ্দেশ্য। সহ-নির্ভরশীলতার রোগী খাদিজা বুঝেছিলো তার নিজস্ব মানসিক শান্তির উৎস মুহাম্মদকে বাঁচানোর তাকে এখন নামতে হবে, দিক-নির্দেশনা ও সাহায্য দিতে হবে।
নার্সিসিস্ট প্রায়শঃই তার কাছের লোকজনের কাছ থেকে আত্নত্যাগ আশা করে। চায় তারা তার সাথে সহ-নির্ভরশীলতার সম্পর্কে জড়াক। নীতি নৈতিকতার ধার তারা ধারে না। তারা মনে করে নৈতিকতা বা আইনের চাইতে তারা নিজেরা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কানাডার আলবার্টা প্রদেশের John de Ruiter একজন স্ব-ঘোষিত ত্রাতা (Messiah)। তার অনুসারীরা তাকে খোদার মতই মানে। এক সাক্ষাৎকারে জন দে রুটারের প্রাক্তন স্ত্রী Joyce যিনি জনের সাথে ১৮ বছরের বিবাহিত জীবন কাটিয়েছেন, বলেন, “একদিন সবাই সিগারেট ফুঁকছিলাম রান্নাঘরে। এর মধ্যে সে (জন) আমার ‘মৃত্যু’ নিয়ে কথা উঠায়। সে স্বীকার করে যে, আমি এরই মধ্যে একটু একটু করে মরে যাচ্ছিলাম। তার মতে এটা ভালো জিনিস। আমার নিজের জীবনে পচানব্বই শতাংশই আমি ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তার কথানুযায়ী আমি এখনো নিজেকে পুরোপুরি ছেড়ে দিতে পারিনি। সে যদি আরো দুইটি স্ত্রী গ্রহণ করে তবেই নাকি আমার আত্নত্যাগ পরিপূর্ণ হবে”।
Joyce বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম সে বুঝি এমনিতেই মজা করছে। আসলে সে মজা করছিলো না। জন দ্বিতীয়বার একই কথা উঠায়। সে জানতে চায় তার অন্য দুই স্ত্রী সব তারা তিনজন একই বাড়িতে থাকলে কোন সমস্যা আছে কিনা”। (টীকা-১২১)
সৌভাগ্যক্রমে Joyce নিজে সহ-নির্ভরশীলতার রোগে অতদূর পর্যন্ত আক্রান্ত ছিলেন না যে এতখানি অপমান অপমান সহ্য করেও সেখানে পড়ে থাকবেন। তিনি এই উম্মাদ নার্সিসিস্টের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে পালিয়ে যান। সত্যিকারের সহ-নির্ভরশীলতার রোগী তার নিজস্ব নার্সিসিস্টের তুষ্টির জন্য যেকোন কিছু করতে পারে। নার্সিসিস্ট ও সহ-নির্ভরশীলতার রোগীর সম্পর্কটি মর্ষকামের।
মানুষের জন্য দুর্ভাগ্য যে খাদিজা ছিলো সত্যিকারের সহ-নির্ভরশীলতার রোগী, যে তার পছন্দের নার্সিসিস্টের জন্য সর্বস্ব ত্যাগেও প্রস্তুত ছিলো। সেই মুহাম্মদের নবীত্বের ক্যারিয়ার শুরু করার পিছনে উৎসাহ দিয়েছিলো ও তাকে সেই পথে নিয়ে গিয়েছিলো। মুহাম্মদের মৃগীরোগের কারণে ফিট হওয়া ও ফেরেশতা দেখা বন্ধ হয়ে গেলে খাদিজা আশাহত হয়। ইবনে ইসহাকে পাওয়া যায়,
“এর পর জিব্রাঈল বেশ কিছুদিন তার কাছে আসেন নি। এতে খাদিজা বলেন, “আমারতো মনে হয় তোমার প্রভু তোমাকে অপছন্দ করেন”।” (টীকা-১২২)
এ থেকে বুঝা যায় তার নিজস্ব নার্সিসিস্ট মুহাম্মদকে নবী বানানোর জন্য খাদিজা কতটা উদগ্রীব ছিলো।
খাদিজা বেঁচে থাকতে মুহাম্মদ কেনো আর বিয়ে করেনি ? কারণ সে খাদিজার টাকায় চলতো, তার বাড়িতে থাকতো। তার উপর মক্কার অধিকাংশ লোকই তাকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখতো। সবাই তাকে পাগল বলতো। নিজের টাকা থাকলে , খাদিজা কোন বাঁধা না দিলেও কেউ তাকে বিয়ে করতো না। মক্কায় তার অনুসারী ছিলো কিছু অল্পবয়স্ক ছেলেপিলে আর কয়েকজন ক্রীতদাস যার মধ্যে স্ত্রীলোকের সংখ্যা ছিলো আরো কম। বিয়ে করার মত উপযুক্ত কেউ ছিলো না। মুহাম্মদের ক্ষমতারোহন পর্যন্ত যদি খাদিজা বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো তাকেও স্বামীর খাম-খেয়ালিপণা ও অল্পবয়স্ক সুন্দরী নারীদের সাথে স্বামীকে ভাগ করে নেয়ার যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো।

টিকাসমূহ

  • টীকা ৬ : কুরআন সুরা ৯৩, আয়াত ৩-৮ : এই বইয়ে ব্যবহার করা অনুবাদ গুলো ইউসুফ আলি এবং শাকিরের। ইসলামের দলিলগুলো নিয়ে আমার কাজ নয়, বরং দলিলগুলার উপর ভিত্তি করে। আমি যেসব অনুচ্ছেদ কোট করবো সেগুলো কুরআন এবং হাদিস থেকে নেয়া। কুরআনের দাবী এটি কোন মানুষের বাণী নয়, বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোই আল্লাহর বাণী। হাদিসগুলো হচ্ছে মুহাম্মদের জীবনের ছোট ছোট ঘটনা এবং বাণীর সংকলন। ইসলামকে পুরো বুঝার জন্য মুসলিমরা হাদিসগুলোও ব্যবহার করে। কুরআন হাদিস নিয়ে শুরু থেকেই হাজার প্রশ্ন আছে, অনুবাদ নিয়ে আছে এবং ছোটখাট বর্ণনা নিয়েও অনেক রকমের মতভেদ আছে , সেইসব নিয়ে এই বইয়ে আলোচনার কোন প্রয়োজন দেখি না। এই বইয়ের বিষয় নিয়ে যেসব অনুচ্ছেদ উদৃত করবো সেগুলোর বেশিরভাই ব্যাখা ছাড়াই বুঝা সম্ভব। সাধারণভাবে স্বীকৃত উৎস থেকে এগুলো সংগৃহীত।
  • টীকা ৮ : মুহাম্মদের সর্বমোট চার কন্যা এবং দুই পুত্রসন্তান ছিলো। তার পুত্ররা কাশেম এবং আব্দুল মেনাফ (মেনাফ দেবীর নাম অনুযায়ী রাখা নাম) শিশুকালেই মারা যায়। তার মেয়েরা বড় হয় এবং বিয়েও করে কিন্তু সবাই বেশ অল্পবয়সেই মারা যায়। সর্বকনিষ্ঠা ফাতেমার দুই সন্তান ছিলো , সেও মুহাম্মদের মৃত্যুর ছয় মাসের মাথায় মারা যায়।
  • টীকা ৯ :
    গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রসবপূর্ব এবং প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতায় ভোগা মায়েদের সন্তানদের রক্তে cortisol এবং norepinephrine মাত্রা বেশি থাকে এবং Dopamine এর মাত্রা কম থাকে , এবং মস্তিষ্কের সামনের ডানদিকের EEG তে তুলনামূলকভাবে অসামঞ্জস্যের মাত্রা বেশি থাকে। আবার প্রসবপূর্ব এবং প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় ভোগা মায়েদের সন্তানদের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায়, প্রসবপূর্ব বিষণ্ণতায় ভোগা মায়েদের শিশুদের রক্তে nonrepineprhine এর মাত্রা এবং মস্তিষ্কের সামনের ডানদিকের EEG তে অসামঞ্জস্যের মাত্রা , প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় ভোগা মায়েদের শিশুদের চাইতেও বেশি থাকে। এইসব উপাত্ত থেকে ধারণা করা যায় শিশুর শারীরবৃত্তীয় গঠনে প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রে প্রসবপূর্ব বিষণ্ণতা বেশি বিপদজনক, এবং বিষণ্নতার সময়ের দৈর্ঘ্যের প্রভাবও লক্ষণীয়। ncbi.nlm.nih.gov
  • টীকা১০:
    https://www.health.harvard.edu/…/Depression_during_pregnancy…
  • টীকা-১১:
    ইবনে ইসহাকের সীরাত রাসুলুল্লাহ , পৃষ্ঠা -৭২। ইবনে ইসহাক হলেন বিখ্যাত মুসলিম ইতিহাসবিদ। জন্ম মদীনায় আনুমানিক হিজরি ৮৫ সনে (জন্ম ৭০৪ সাল মৃত্যু ৭৬৮ সাল, মুহাম্মদের মৃত্যুর ৭৫ বছর পর জন্ম)। তিনি ছিলেন মুহাম্মদের প্রথম জীবনিকার , এবং তার যুদ্ধসমূহের কাহিনী লিপিকার। তার সংগৃহীত গল্পগুলার সংকলনের নাম ছিলো “সিরাত-আল-নবী”। এই বইটি এখন বিলুপ্ত। তার সংকলনের উদ্ধারকৃত অংশগুলোর সাথে নিজের কিছু মতামত জুড়ে দিয়ে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে লিপিবদ্ধ করেন ইবনে ইসহাকের ছাত্র হিবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৪)। ইবনে হিশামের এই সংকলণের ইংরেজি অনুবাদ এখন বাজারে পাওয়া যায়। (অনুবাদক এ. গুলিয়োম)। ইবনে হিশাম স্বীকার করে গেছেন যে তিনি ইবনে ইসহাকের সংগ্রহ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু অংশ বাদ দিয়েছেন যেগুলো মুসলিমদের জন্য অস্বস্তিকর। এইসব অস্বস্তিকর গল্পের কিছু অংশ পরবর্তীতে তাবারি (৮৩৮-৯২৩) উদ্ধার করেন। তাবারি হলেন অন্যতম বিখ্যাত পারসিয়ান ইতিহাসবিদ এবং কুরআনের তাফসিরকারী।
  • টীকা-১২:
    W. Montgomery Watt: Translation of Ibn Ishaq’s biography of Muhmmad (পৃষ্টা-৩৬)
  • টীকা-১৩:
    Tabaqat Ibn Sad, পৃষ্টা ৭। ইবনে সাদ (৭৮৪-৮৪৫) ইতিহাসবিদ, আল ওয়াক্কিদির ছাত্র। তিনি তার সংকলনকে আটটি শ্রেণীতে বা তাবাকাতে ভাগ করেছিলেন, সেই থেকেই বইয়ের নাম তাবাকাতসমূহ। প্রথম ভাগে মুহাম্মদের জীবনি , দ্বিতীয়ভাগে মুহাম্মদের যুদ্ধসমূহ, তৃতীয়ভাগে মক্কার সাহাবীরা, চতুর্থভাবে মদীনার সাহাবীরা, পঞ্চমভাগে তার নাতি হাসান হুসেইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মুসলিমগণ, ষষ্ঠভাগে সাহাবীদের অনুসারীরা (তাবেঈ), সপ্তভাগে পরবর্তীযুগের গুরুত্বপূর্ণ অনুসারীগণ, অস্টমভাগে প্রাথমিক যুগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম মহিলাদের নিয়ে বর্ণনা এসেছে। এই বইয়ে ইবনে সাদের তাবাকাত থেকে যেসব উদৃতি দেয়া হয়েছে সেগুলো নেয়া হয়েছে তাবাকাতের পার্সিয়ান অনুবাদ থেকে। অনুবাদক, Mahmood Mahdavi Damghani, প্রকাশক, Entesharat-e Farhang va Andisheh, Tehran (2003)
  • টীকা -১৪ Tabaqat Ibn Sa’d , Volume 1 , page 107
  • টীকা-১৫
    The life of Muhammad , Sir William Muir (Smith, Elder & Co. , London, 1861) Volume 2, Chapter 1, page -28
  • টীকা-১৬
    kitab al waqidi , page -22
  • টীকা -১৭
    Tabaqat, Vol. 1 page 108
  • টীকা -১৮
    The life of Muhammad , Sir William Muir , Vol. 2, Chapter 1, page 33
  • টীকা-১৯ Ibn Ishaq, page 195
  • টীকা -২০
    The life of Muhammad , Sir William Muir, Vol. 2, page 195
  • টীকা-২১
    Bukhari , Vol. 5, Book 58, Number 224
  • টীকা -২২
    আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বুখারি(৮১০-৮৭০), হাদিস সংগ্রাহক। বুখারি ১৬ বছর ব্যায় মোট ২৬০২ টি হাদিস সংগ্রহ করেন। হাদিস সংগ্রগে বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার অত্যন্ত কঠিন পদ্ধতি অনুসরণের কারণে তার সংগৃহীত হাদিসগুলে বিশেষভাবে সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে আসছে।
  • টীকা-২৩
    বুখারি, Vol. 4, Book 56, Number 762
  • টীকা -২৪
    Tabaqat Volume1, page 191
  •  
  • টীকা – ৩২ – ইস্পাহানের Abu al-FarajAli কতৃক সংকলিত কয়েক খন্ডের কিছু কবিতার সমষ্টি। প্রাচীনযুগের আরব থেকে শুরু করে নবম শতাব্দী পর্যন্ত রচিত অনেক কবিতা আছে এতে। মধ্যযুগের ইসলামিক ইতিহাস সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে এই কবিতাগুলোতে।
  • টীকা -৩৩ – সিরাত ইবনে ইসহাক পৃষ্টা ১৯৭
  • টীকা-৩৫ – youtube video
  •  
  • টীকা-৪১
    যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অংগরাজ্যে অগাস্ট ১৯, ২০০৩ সালে দায়ের করা এক অভিযোগে দেখা যায় কয়েকটি মুসলিম চ্যারিটি বিএমআই ইনকরপোরেটেড নামের এক সংস্থাকে ৩৭ লাখ আমেরিকান ডলার দান করে। নিউজার্সির এই ইসলামি প্রাইভেট বিনিয়োগ করপোরেশনটি পরবর্তীতে এই টাকা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের বিলিয়ে দেয় বলে ধারণা করা হয়। সৌদি আরবের জিদ্দাহ থেকে কোন এক অজানা দাতার দান করা এক কোটি ডলারের একাংশ এই ৩৭ লাখ ডলার। ওয়াশিংটন পোস্ট, পিউ রিসার্চ ফোরামের মত আরো অনেক অথেনটিক সোর্সে এইধরণের অনেক অভিযোগের কথা জানা যাবে।
  • টীকা -৪২ – এবিষয়ে আরো দেখা যেতে পারে কুরআন (৮ ৭২), (৮-৭৪)
  • টীকা ৪৩,৪৪ – ইন্টারনেট সংবাদমাধ্য metimes ডট কম
  • টীকা ৪৫ – ফেইথফ্রিডম ডট অর্গ
  • টীকা -৪৬ > Tabaqat Vol.2 p. 1-2
  • টীকা -৪৭ > Sahih Bukhari Volume 5, Book 59, Number 702
  • টীকা -৪৮ > Willium Muir, The Life of Muhammad Volume II Chapter 2 Page 6
  • টীকা ৪৯ > Sahih Bukhari Vol.3 Book 46, Number 717
  • টীকা ৫০ > টীকা ৪৯
  • টীকা ৫১ > Sahih Muslim Book 019, Number 4321, 4322, 4323টীকা-৫৩ > ফেইথফ্রিডম ডট অর্গে মুহাম্মদের স্ত্রীদের বিষয়ে লেখাতে বিস্তারিত পাওয়া যাবে।
  • টীকা -৫৪ > বুখারি , ভলিউম ৩ , বুক ৪৭, হাদিস নং ৭৬৬
  • টীকা-৫৫ > তারিখ আল তাবারি এবং তাফসির আল তাবারির লেখক। প্রাথমিক যুগের বিখ্যাত পারসিয়ান বংশোদ্ভুত ইসলামি ঐতিহাসিক।
  • টীকা -৫৬ > পার্সিয়ান তাবারি , ভলিউম ৪, পৃষ্টা ১২৯৮
  • টীকা -৫৭ > বুখারি , ভলিউম ৩, বুক ৩৪, হাদিস নং ৩১০
  • টীকা -৫৮ > বুখারি , ভলিউম ৫, বুক ৫৯, হাদিস নং ৪৫৯ যুদ্ধবন্দী ও দাসীদের সাথে সংগমের অনুমতি দেয়া নিয়ে আরো অনেক সহিহ হাদিস আছে। যেমন বুখারি ৩-৩৪-৪৩২। আরো আছে সহিহ মুসলিম এবং সুনান আবু দাউদ এ।
    বুখারি ৩-৪৬-৭১৮, ৫-৫৯-৫৪৯, ৭-৬২-১৩৫ আরো আরো।
  • টীকা -৫৯ > কুরআন ৪-২৪, ৩৩-৫০, ৪-৩
  • টীকা -৬০ > সিরাত রাসুল আল্লাহ , ইবনে ইসহাক পৃষ্টা ৫১৫
  • টীকা ৬১ > সহিহ বুখারি ১-৮-৩৬৭
  • টীকা ৬২ > বুখারি ৪-৫২-২৬১
  • টীকা -৬৩ > বুখারি ৫-৫৯-৩৬৯
  • টীকা-৬৪ > The Kitab al Tabaqat al Kabir , Vol 2 , page -31
  • টীকা -৬৫ > ইবনে ইসহাকের সিরাত রাসূলুল্লাহ p 675-676 (A. Guilaume’s Translation)
  • (টীকা-৬৬) > টীকা-৬৫
  • (টীকা-৬৭) > ইবনে সাদের বর্ণনায় এই ঘটনা একটু অন্যরকমভাবে এসেছে। Kitab al-Tabaqat al-Kabir , translated by S. Mominul Haq Vol.2, page-24
  • (টীকা-৬৮) > কুরআন ৩-১৫১
  • (টীকা-৬৯) > বুখারি ৪-৫২-২২০
  • (টীকা-৭০) > Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland, Page 100-107 by W.N. Arafat
  • (টীকা-৭১) > কুরআন ২-৬৫, ৫-৬০, ৭-১৬৬
  • (টীকা-৭২) > ইবন ইসহাক, p-363
  • (টীকা-৭৩) > (টীকা-৭২)
  • (টীকা-৭৪) > Ar-Raheeq Al-Makhtum by Saifur Rahman al-Mubarakpuri
  • (টীকা-৭৫) > মওদূদীর কুরআন তাফসির
  • (টীকা-৭৬) > ইবনে ইসহাক p-438
  •  টীকা ৭৮ > বাণিজ্য কাফেলার উপর ক্রমাগত আক্রমণে ক্ষিপ্ত হয়ে মক্কাবাসীরা মুহাম্মদ কে শাস্তি দেয়ার জন্য সৈন্য-সামন্ত নিয়ে মদীনা আক্রমণ করে। তারা মুহাম্মদের মত ডাকাতের মত রাতের অন্ধকারে অতর্কিত হামলা করেনি, তাই প্রস্তুতির জন্য মুহাম্মদ যথেষ্ঠ সময় পায়। সালমান-ফার্সি নামের এক ইরানি বংশোদ্ভুত লোকের পরামর্শে মুহাম্মদ মদীনার চারপাশে খাল (খন্দক) কেটে মক্কাবাসীদের প্রতিহত করে। এই যুদ্ধকে খন্দকের যুদ্ধ বলা হয়।
  • টীকা ৭৯ > www . al-sunnah . com / nectar / 12.htm (ফেইসবুকের অটো-লোড ঠেকাতে স্পেসগুলো ইচ্ছাকৃত)
  • টীকা ৮০ > টীকা ৭৯
  • টীকা৮১ > Ayatollah Khomeni : A speech delivered on the commemoration of the Birth of Muhammad in 1981
  • (টীকা-৮২) > বুখারি ৪-৫২-২৮০
  • (টীকা-৮৩) > আবু দাউদ বুক ৩৮, হাদিস নং ৪৩৯০
  • (টীকা-৮৪) > বুখারি ৪-৫২-২৮৮
  • (টীকা-৮৫) > বুখারি ৪-৫২-১৭৬
  • টীকা-৮৬ > Tabari Vol.3 Page 1126
  • টীকা-৮৭ > Ibn Ishaq’s sirat, Battle of Trench
  • টীকা-৮৬ > Sirah al-Halabiyyah v3,p61
  • টীকা-৮৯ > Reza Aslan , No God but God
  • টীকা-৯০ > Sahih Bukhari v.7, p102
  • টীকা-৯১ > internet ( কেবল ইন্টারনেট লেখা হয়েছে ফেইসবুকের অটোমেটিক ওয়েবপেজ ডাউনলোড ঠেকানোর জন্য। কিওয়ার্ডগুলো দিয়ে গুগল সার্চ দিলে পাওয়ার কথা। Narcissistic Personality Disorder)
  • টীকা-৯২ > International Statistical Classification of Diseases and Related Health Problems 10th edition, World Health Organization (1992)
  • টীকা-৯৩ > American Psychiatric Assosiation এর DSM ম্যানুয়াল থেকে সংক্ষেপিত।
  • টীকা-৯৪ > Tabaqat V.1,P2
  • টীকা-৯৫ > wwwডটmuhammadanrealityডটকম/creationofmuhammadanrealityডটhtm
  • টীকা-৯৬ > Tabaqat V.1,P364
  • টীকা-৯৭> Mark 10:18
  • টীকা-৯৮ > wwwডটmuhammadanrealityডটকম/aboutডটhtm
  • টীকা-৯৯ > Malingnant Self Love –Narcissism revisited (Sam Vaknin and Lidija Rangelovska)
  • টীকা-১০০ > healthyplace-dot-com
  • টীকা-১০১ > Malingnant Self Love –Narcissism revisited (Sam Vaknin and Lidija Rangelovska)
  • টীকা-১০২> Ibid
  • টীকা-১০৩ > টীকা-১০০
  • টীকা-১০৪ > Amir Taheri Neo-Islam
  • টীকা-১০৫,১০৬ > For Love of God – Narcissist and Religion (Dr. Sam Vaknin
  • টীকা-১০৭ > Jon Mardi Horowitz – Stress Response Syndromes: PTSD, Grief and Adjustment Disorder
  • টীকা-১০৮> www dot faqfarm dot com /Q/Can_you_be_responsible_for_your_spouse’s_narcissism
  • টীকা-১০৯ > J.D. Levine and Rona H. Weiss. The Dynamics and Treatment of Alcoholism.
  • টীকা-১১০> Dr. Sam Vaknin
  • টীকা-১১১ > www dot nmha dot org /infoctr/factsheets/43.cfm
  • টীকা-১১২> Persian Tabari v.3 p.832
  • টীকা-১১৩ > http:// samvak dot tripod dot com/faq66 dot html
  • টীকা-১১৪> http:// www dot toddlertime dot com/sam/66 dot htm
  • টীকা-১১৫> Tabaqat vol.1 page.3
  • টীকা-১১৬> quran sura-42 verse-23
  • টীকা-১১৭> http:// samvak dot tripod dot com/faq66 dot html
  • টীকা-১১৮ > Mixing Oil and Water by Bridget Murray, APA online Monitor On Psychology, Vol 35, No.3, March 2004
  • টীকা-১১৯> http:// www dot toddlertime dot com/sam/66 dot htm
  • টীকা-১২০> The Inverted Narcissist by Sam Vaknin
  • টীকা-১২১> The Gospel According to John, by Brian Hutchison, Satureday Night Magazine, May 5 , 2001
  • টীকা-১২২> Sira Ibn Ishaq p.108

ভাষান্তর – মাওলানা দূরের পাখি

2 thoughts on “আন্ডারস্ট্যান্ডিং মুহাম্মদ – আলি সিনা

  • Gourab Saha

    বিষয়সারটি যিনি লিখেছেন, ভাই, Acromegaly তে ED হয় না। কোন ডাক্তারির বইতে এমন রেফারেন্স পেয়েছেন জানলে বাধিত হব। 2015 এ প্রকাশিত একটি পেপার ছাড়া আর কোন গবেষণা নেই এ নিয়ে, আর ডাক্তারির বইতেও এই তথ্য নেই।
    Temporal lobe এর কার্যকারিতা বাড়লে যৌনতাড়না বাড়ে ,এও আগে শুনিনি। পারলে এরও রেফারেন্স দেবেন।

    জ্ঞানঃ গালি দেবার আগে গালিটা ঠিক না ভুল, যাচাই করে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

    Reply
    • অনির্বাণ সেন

      আপনি মুহাম্মদের পক্ষ নিয়ে পৃথিবীর ক্ষতি করছেন।

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *