কোরআনে আঙুলের ছাপের মিরাকল?
ভূমিকা
কোরআনের বৈজ্ঞানিক মিরাকলের উদাহরণ হিসেবে বা কোরআনকে ঐশ্বরিক গ্রন্থ বলে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে অনেক ইসলামিক অ্যাপোলজিস্ট দাবি করে যে কোরআনে ১৪০০ বছর আগেই বলা হয়েছে, একজনের আঙুলের ছাপ অন্যজনের সাথে মিলে না। দাবিটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত এবং সেটাই স্বাভাবিক, কেননা প্রচুরসংখ্যক ইসলাম ওয়েবসাইট থেকে দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যম থেকেও দাবিটি প্রচারণা লাভ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ব্যাপকভাবে মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়েছে এবং জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দাবিটি করা হয় কোরআনের সূরা আল-ক্বিয়ামাহ’র ৪ নং আয়াতকে কেন্দ্র করে, যেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ মানুষের আঙুলের অগ্রভাগসমূহও পুনর্বিন্যাস্ত করতে সক্ষম। এ প্রবন্ধে দাবিটি বিশ্লেষণ করে দাবিটির সত্যতা কতটুকু তা তুলে ধরা হবে।
দাবি
“আমাদের সবারই আঙুলের ছাপ আছে তবে তারা অনন্যসুলভ, এমনকি অভিন্ন যমজদের আঙুলের ছাপও ভিন্ন হয়ে থাকে। সম্প্রতি এটি জানা যায়, কিন্তু এটি আবিষ্কারের ১৪০০ বছর পূর্বেই এটি কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। কোরআন বলে যে আল্লাহ পুনরুত্থানের দিন মানুষকে এমনকি তাদের আঙুলের ডগাকেও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আজ আমরা জানি আঙুলের ডগা আঙুলের ছাপ ধারণ করে যা জনে জনে ভিন্ন হয়ে থাকে।
হ্যাঁ অবশ্যই; আমরা তার আঙুলের অগ্রভাগও পুনর্গঠন করতে সক্ষম।
(কোরআন ৭৫:৪)
٤ بَلَىٰ قَادِرِينَ عَلَىٰ أَنْ نُسَوِّيَ بَنَانَهُপুনরুত্থানের দিন আল্লাহ আমাদের দেহ এমনকি আমাদের আঙুলের ডগাও পুনর্গঠন করবেন।
১৪০০ বছর আগের একজন অশিক্ষিত মানুষ কি করে জানতে পারলেন যে আঙুলের ডগা এমনকিছু ধারণ করে যা অনন্যসুলভ?” [1]
বিশ্লেষণ
আলোচ্য আয়াতটির আগের আয়াতসমূহ না পড়ে আয়াতটি পড়লে বোঝা যায়না যে কোরআনের লেখক ঠিক কোন সময়ের কথা বলছেন, কোন বিষয়ে কথা বলছেন এবং কেনো বলছেন। আগের আয়াতসমূহ পড়লে আমরা আয়াতটি ভালো করে বুঝতে পারি। তাহলে আসুন আলোচ্য আয়াতটির আগের আয়াতসমূহ পড়ে দেখি,
لَآ أُقْسِمُ بِيَوْمِ ٱلْقِيَـٰمَةِ
আমি কসম করছি ক্বিয়ামতের দিনের,
— Taisirul Quran
আমি শপথ করছি কিয়ামাত দিবসের।
— Sheikh Mujibur Rahman
আমি কসম করছি কিয়ামতের দিনের!
— Rawai Al-bayan
আমি শপথ করছি কিয়ামতের দিনের [১],
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
I swear by the Day of Resurrection
— Saheeh International
(কোরআন ৭৫:১)
وَلَآ أُقْسِمُ بِٱلنَّفْسِ ٱللَّوَّامَةِ
আমি আরো কসম করছি সেই মনের যে (অন্যায় কাজ ক’রে বসলে) নিজেকে ধিক্কার দেয় (যে তোমাদেরকে অবশ্যই আবার জীবিত করে উঠানো হবে)।
— Taisirul Quran
আরও শপথ করছি তিরস্কারকারী আত্মার।
— Sheikh Mujibur Rahman
আমি আরো কসম করছি আত্ম-ভৎর্সনাকারী আত্মার!
— Rawai Al-bayan
আমি আরও শপথ করছি ভর্ৎসনাকারী আত্মার [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
And I swear by the reproaching soul [to the certainty of resurrection].
— Saheeh International
(কোরআন ৭৫:২)
أَيَحْسَبُ ٱلْإِنسَـٰنُ أَلَّن نَّجْمَعَ عِظَامَهُۥ
মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড়গুলোকে একত্রিত করতে পারব না।
— Taisirul Quran
মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ একত্র করতে পারবনা?
— Sheikh Mujibur Rahman
মানুষ কি মনে করে যে, আমি কখনই তার অস্থিসমূহ একত্র করব না?
— Rawai Al-bayan
মানুষ কি মনে করে যে, আমরা কখনোই তার অস্থিসমূহ একত্র করতে পারব না?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
Does man think that We will not assemble his bones?
— Saheeh International
(কোরআন ৭৫:৩)
উপরিউক্ত আয়াতসমূহ পড়ে এখন আমরা বুঝতে পারছি যে, এ আয়াতসমূহে আল্লাহ মানুষকে সাবধান করে বলছেন তারা যেনো মনে না করে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের অস্থিসমূহ একত্রিত করে তাদেরকে জীবিত করতে পারবেননা, কেননা তিনি তাদের আঙুলের অগ্রভাগসমূহও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।
আলোচ্য আয়াতটি কিন্তু আঙুলের ছাপ সম্পর্কে কিছুই বলছেনা। আয়াতটি কেবল এতটুকুই বলছে যে, আল্লাহ মানুষের আঙুলের অগ্রভাগসমূহও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম। আয়াতটি কোনোভাবেই এটি প্রকাশ করছেনা যে, একজনের আঙুলের ছাপ অন্যজনের থেকে আলাদা হয়।
সূরা আল-ক্বিয়ামাহ’র আয়াত ৩-৪ একত্রে কেবল এতটুকুই প্রকাশ করে যে, মানুষের অস্থিসমূহ একত্রিত করার চেয়ে তাদের আঙুলের অগ্রভাগসমূহ পুর্নবিন্যস্ত করা বেশি কঠিন, আল্লাহ যদি মানুষের আঙুলের অগ্রভাগ পুনর্বিন্যস্ত করতে পারেন, তাহলে তিনি তাদের অস্থিসমূহও একত্রিত করতে পারবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আয়াত দুটি থেকে কোনোভাবেই এ ইংগিত পাওয়া যায়না যে, একজনের আঙুলের ছাপ অন্যজনের থেকে ভিন্ন হয়। সেরকম সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ আমরা খুঁজে পাচ্ছিনা।
উপসংহার
ইসলামিক অ্যাপোলজিস্টগণ যা দাবি করেন কোরআন তা বলেনা। কোরআনের সাথে তাদের দাবির কোনো মিল নেই। যে আয়াতকে কেন্দ্র করে তারা দাবিটি করেন সেই আয়াতে আঙুলের ছাপ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। আয়াতটি কেবল এতটুকুই প্রকাশ করে যে, আল্লাহ মানুষের আঙুলের অগ্রভাগসমূহও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম। এ থেকে কোনোভাবেই এ ইংগিত পাওয়া যায়না যে, একজনের আঙুলের ছাপ কখনো আরেকজনের সাথে মিলে না। দাবিটি তাদের নিছক অনুমান ছাড়া কিছু নয়।
তথ্যসূত্র
- Fingerprints – Miracles of Quran [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"
পৃথিবীতে ৭০০ কোটি মানুষ আছে , এদের সবার আঙুলের ছাপ ভিন্ন ভিন্ন । ফিঙ্গারপ্রিন্ট আবিষ্কারের আগে মানুষ আঙুলের ডগাকে এটা তুচ্ছ কিছু ভাবত ।
৭৫:৩, মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ মিলিত করব না ?
৭৫:৪ বস্ততঃ আমি তার আঙুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম
আমার মতে মানুষের শরীরের সবচেয়ে জটিল অঙ্গ মস্তিষ্ক , আল্লাহ মস্তিষ্ক কথা বলেননি
আর যদি মুহাম্মাদ সাঃ কুরআন লিখে থাতে তবে তার পক্ষে ফিঙ্গারপ্রিন্টের কথা জানা সম্ভব ছিল না।
একটা বাচ্চার কাছে যদি জিজ্ঞাসা করি তোমার শরীরে জটিল অঙ্গ কোনটি? বলবে, বুক পেট, মাথা , আঙুলের ডগা কখনই বলবে না ।
এত অঙ্গ থাকতে তুচ্ছ আঙুলের ডগা বলার কারন কি , বুঝলেন তো ।
শুভ্র ।
ধরুন আমি আপনাকে বললাম,
আপনি আমার চুল পর্যন্ত ছিড়তে পারবেনা।।
এখানে কি আমি চুল সম্পর্কে বিশেষ তথ্য দিয়েছি।। নাকি আমার ক্ষমতার কথা বলেছি।
৭৫:৩, মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ মিলিত করব না ?
৭৫:৪ বস্ততঃ আমি তার আঙুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।।
এটাও আল্লাহ আঙ্গুল সম্পর্কে বিশেষ কোনো তথ্য দেয় নাই।। আল্লাহ শুধু তার ক্ষমতা দেখিয়েছে।।।