গোপিনীদের সাথে কৃষ্ণের রাসলীলা, ১৮+
সূচিপত্র
ভূমিকা
কৃষ্ণ নামটি হিন্দু ধর্মে ও সমাজে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কৃষ্ণ কে? তার পরিচয় কি? এসব বলার আর অপেক্ষা রাখে না। কৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বাণী গীতার সমাদর আজ প্রত্যেক হিন্দু ঘরে ঘরে। কিন্তু এই কৃষ্ণের নামটিই নারীঘটিত কেলেঙ্কারির সাথে এমনভাবে জড়িয়ে গিয়েছে যে, সাধারণ মানুষেরা প্রায়শই বলে থাকে, “কৃষ্ণ করলে লীলা, আর আমরা করলে?” এসব প্রবাদ শুনে সাধারণ হিন্দুরা বলেন, এসব অপপ্রচার মাত্র; কৃষ্ণ কখনো এমন ছিলেন না। অপরদিকে এমন কিছু লোকও দেখা যায়, যারা মনে করেন কৃষ্ণ সত্যই একজন নারীবাজ লোক ছিলেন। এমতাবস্থায় মনে এক প্রকার দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক- আসলে কে ঠিক বলছে? আসলে কার কথা সত্য?
সত্যাসত্য কারো দাবীর উপর নির্ভর করেনা, নির্ভর করে তথ্য-প্রমাণের উপর। আর তথ্যপ্রমাণ যাচাই করলে দেখা যায়, সত্যই কৃষ্ণের বহু নারীর সাথে সম্পর্ক ছিল। একথা অনেক আস্থাবান হিন্দুর কাছে তিক্ত বলে মনে হতে পারে। আসলে সত্য অনেকক্ষেত্রেই তিক্ত হয়, তখন তাকে তিক্তসত্য বলা হয়।
যাইহোক, ধীরে ধীরে কৃষ্ণের নারী ঘটিত কাহিনী প্রকাশ করা যাক। প্রথমে আমরা বিরজার কথা দিয়ে শুরু করি।
কৃষ্ণ এবং বিরজা
গোলোকধামে বিরজা নামে এক গোপিনী ছিলেন। তার সাথে কৃষ্ণের সম্পর্ক ছিল। কৃষ্ণ এবং বিরজার সম্পর্কের বিস্তারিত বিবরণ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ডের ২য় অধ্যায়ে আছে। এখানে বলা হয়েছেঃ
“একদিন গোলোকধামের জনহীন রাসমণ্ডলে কৃষ্ণ রাধার সাথে বিহার করছিলেন। রাধা সঙ্গমসুখে আপন-পর কিছুই জানতে পারেননি। কৃষ্ণ বিহার করে অতৃপ্ত রাধাকে পরিত্যাগ করে শৃঙ্গার করার জন্য অন্য গোপির কাছে গমন করলেন। তখন রাধিকার সমতুল্য বিরজা ও তার শতকোটি সুন্দরী বান্ধবী বৃন্দাবনে অবস্থান করছিল। সেই সময় বিরজা কৃষ্ণকে দেখতে পান। শ্রীকৃষ্ণও শরচ্চন্দ্রমুখী মনোহর হাস্যবদনা কুটিল নয়নে নাথ সন্দর্শিনী নবযৌবনে বিরাজমানা রত্নালঙ্কারভূষিতা সূক্ষবস্ত্র পরিধানা বিরজাকে দেখলেন। তিনি সবসময়ই ষোলো বছর বয়সী। কৃষ্ণ তাকে রোমাঞ্চিত ও কামবাণ নিপীড়িত দেখে সত্বর নির্জন মহারণ্যে রত্নমণ্ডলের উপরে পুষ্পশয্যায় তার সাথে বিহার করলেন। বিরজা কোটি কামদেবের সমতুল্য রূপবান রত্নবেদির উপর উপবিষ্ট শৃঙ্গারাসক্ত প্রাণনাথ শ্রীহরিকে বক্ষে ধারণ করে কৃষ্ণের শৃঙ্গার কৌতুকবশে মূর্ছিত হলেন। তখন রাধিকার সখীগণ কৃষ্ণকে বিরজার সাথে বিহার করতে দেখে তাকে তা জানাল। তাদের কথা শুনে রাধা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তখন রাধা রক্ত পদ্মের মত রক্তচক্ষু হয়ে ভীষণভাবে কাঁদলেন এবং তাদের বললেন, আমায় তোমরা বিরজাসক্ত কৃষ্ণকে দেখাতে পার? যদি তোমরা সত্য বলে থাকো, তবে আমার সাথে চল ; গোপী বিরজার ও কৃষ্ণের যথোক্ত ফল প্রদান করব। আমি শাসন করলে আজ ঐ বিরজাকে কে রক্ষা করবে? আমার প্রিয় সখীগণ শীঘ্র সেই বিরজার সাথে কৃষ্ণকে নিয়ে এস।… তোমরা কেউই সেই কুটিল হাস্যমুখ হরিকে আমার ঘরে আসতে দেবে না। এখন আমার ঘরে গিয়ে তোমরা তাকে রক্ষা কর। কয়েকজন গোপি রাধার এই কথা শুনে ভীত হল। সকল গোপিরা হাতজোড় করে রাধার সামনে দাঁড়িয়ে রাধাকে বলল, আমরা সেই বিরজার সাথে প্রভু কৃষ্ণকে দেখাবো। সুন্দরী রাধা তাদের কথা শুনে রথে আরোহণ করে ৬৩০০ কোটি গোপীর সাথে বিরজার ঘরে গমন করেন। রাধা সেই ঘরের দরজায় নিযুক্ত দ্বাররক্ষক শ্রীদামকে দেখলেন। শ্রীদাম কৃষ্ণের প্রিয়কারী গোপ। সে লক্ষ গোপের সাথে সেই ঘরের দরজায় পাহাড়া দিচ্ছিল। তাকে দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে রাধা তাকে বলেন ,ওরে রতিলম্পটের চাকর! দূর হ, দূর হ; তোর প্রভুর আমার চাইতেও সুন্দরী কান্তা কিরূপ? আমি তা দেখব। মহাবলবান বেত্রহস্ত শ্রীদাম রাধার কথা শুনে নিঃশঙ্কচিত্তে তার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে তাকে ভেতরে যেতে দিলেন না। তখন রাধার সখীরা ক্রোধে ফেটে পড়ে এবং প্রভুভক্ত শ্রীদামকে জোর করে মণ্ডপের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয়। গোলোকবিহারী কৃষ্ণ ঐ কোলাহল শুনতে পেয়ে এবং রাধাকে ক্রুদ্ধ জানতে পেরে, সেখান থেকে পালিয়ে যান। আর বিরজা রাধার আওয়াজ শুনে শ্রীকৃষ্ণকে পালাতে দেখে রাধার ভয়ে যোগবলে প্রাণত্যাগ করেন। বিরজার শরীর এক নদীতে পরিণত হয়। সেই নদীতে গোলোকধাম বর্তুলাকারে ব্যপ্ত হয়। ঐ নদী প্রস্থে দশযোজন বিস্তৃত ও অতি গভীর এবং দৈর্ঘ্যে তার চাইতে দশগুণ। ঐ নদী মনোহর ও বহুবিধ রত্নের আধার হয়েছিল। “
এর ফলে রতিগৃহে গমন করে রাধা আর কৃষ্ণকে দেখতে পান না, বিরজাকেও নদীরূপে দেখে ঘরে ফিরে যান। তখন শ্রীকৃষ্ণ প্রেয়সী বিরজাকে নদীরূপিনী দেখে সেই সুন্দরসলিলা বিরজার তীরে সজোরে কাঁদতে থাকেন। … কৃষ্ণ বিরজাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার পুরোনো শরীর নদীতে পরিণত হয়েছে; এখন নতুন শরীর ধারণ করে জল থেকে উঠে এসো। একথা শুনে বিরজা কৃষ্ণের কাছে উঠে আসে। … কৃষ্ণ সকামা রূপবতী সেই বিরজাকে দেখে শীঘ্রই তাকে আলিঙ্গন ও চুম্বন করলেন। কৃষ্ণ সেই প্রিয়তমাকে একা পেয়ে নানারকমের বিপরীতাদি শৃঙ্গার করলেন। তখন রজঃস্বলা বিরজা হরির অমোঘ বীর্য ধারণ করে গর্ভবতী হন। তিনি দেবতাদের হিসাবে একশ বছর কৃষ্ণের গর্ভধারণ করলেন।এরপর বিরজার সাত পুত্রের জন্ম হয়। একসময় বিরজা শৃঙ্গারে আসক্ত হয়ে কৃষ্ণের সাথে আবারো সঙ্গম করছেন; এমন সময়ে তার ছোট ছেলে অন্য ভাইদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে ভীত হয়ে মায়ের কোলে এসে ওঠে। কৃপাময় কৃষ্ণ নিজের পুত্রকে ভীত দেখে বিরজাকে ত্যাগ করলেন। বিরজা পুত্রকে কোলে নিলেন আর শ্রীকৃষ্ণ রাধার ঘরে গমন করলেন। বিরজা পুত্রকে সান্ত্বনা দিয়ে প্রিয়তম কৃষ্ণকে আর কাছে দেখতে পান না। তখন শৃঙ্গারে অতৃপ্ত হওয়ায় বিরজা ভীষণভাবে কাঁদতে থাকেন এবং রেগে গিয়ে নিজ পুত্রকে এই বলে অভিশাপ দেন- তুমি লবনসমুদ্র হবে, কোন প্রাণী আর তোমার জল পান করবে না। …” ( শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড, ৩য় অধ্যায়)
এরপর কৃষ্ণ আবার বিরজার সাথে বিহার করা শুরু করেন। কৃষ্ণ বিরজাকে বর দেন, “ আমি তোমার কাছে প্রতিদিন অবশ্যই আসবো। যেমন রাধা, তার মত তুমিও আমার প্রিয়তমা হবে এবং আমার বরপ্রভাবে তুমি নিজের পুত্রদের সর্বদা রক্ষা করবে।”
রাধার সখীরা বিরজার সাথে কৃষ্ণের এসকল কথা শুনতে পান এবং সেসব রাধাকে গিয়ে বলেন। এসব কথা শুনে রাধা কাঁদতে থাকেন এবং ভীষণ রেগে যান। এর মধ্যে কৃষ্ণ রাধার কাছে আসেন। রাধা কৃষ্ণকে দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে বলতে থাকেন, “এই গোলোকধামে আমি ছাড়াও তোমার অনেক স্ত্রী আছে, তাদের কাছে যাও, আমার কাছে আসার কি প্রয়োজন? তোমার প্রিয় স্ত্রী বিরজা আমার ভয়ে দেহ ত্যাগ করে নদী হয়েছে, তোমার নদ হওয়া উচিত। নদীর সাথে নদের সঙ্গমই ভালো হয়; কারণ শয়ন ভোজন স্বজাতিতেই পরম প্রীতিসহকারে হয়ে থাকে। দেবতাদের চূড়ামণি কৃষ্ণ নদীর সাথে বিহার করেন, একথা যদি আমি বলি তাহলে মহাজনেরা একথা শোনার সাথে সাথেই হেসে উঠবে। যারা তোমাকে সর্বেশ্বর বলে থাকেন, তারা তোমার অন্তর জানেন না, সর্বভূতাত্মা ভগবান কৃষ্ণ নদীকে সম্ভোগ করতে ইচ্ছা করছেন।” রাধা আরো বলেন, “হে বিরজাকান্ত কৃষ্ণ আমার কাছ থেকে চলে যাও। হে লোলুপ, রতিচোর, অতিলম্পট! কেন আমাকে দুঃখ দিচ্ছ? … হে লম্পট! তোমার নিরন্তর মানব সংস্পর্শ হচ্ছে, এজন্য তুমি মানবযোনী প্রাপ্ত হও। গোলোক হতে ভারতে গমন কর।“
এমতাবস্থায় রাধার অনেক সখীরা কৃষ্ণকে রাধার কাছ থেকে দূরে যেতে বলেন। অনেক গোপি বলেন, “তুমি অন্য নারীর কাছে যাও; তুমি অন্য স্ত্রীলোলুপ; হে নাথ! আমরা তোমার যথোচিত ফল বিধান করবো।“ ( শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ড, ৩য় অধ্যায়)
এমন সময় শ্রীকৃষ্ণের বন্ধু শ্রীদাম কৃষ্ণের পক্ষ নিয়ে রাধাকে অনেক কথা বলেন। শ্রীদামের সকল কথার বিবরণ দিয়ে অকারণে লেখাটিকে বড় করতে চাইছি না, তার কয়েকটি কথার উদ্ধৃতি দিচ্ছি। শ্রীদাম রাধাকে বলেন, “ তুমি শীঘ্র ক্রোধ ত্যাগ করে কৃষ্ণের পাদপদ্ম সেবা কর। তুমি, অন্য নারী এবং সমগ্র জগতই কৃষ্ণের বশীভূত।“
শ্রীদামের এসবকথা শুনে রাধা ভীষণ রেগে যান। রাধা ক্রুদ্ধ হয়ে শ্রীদামকে বলেন, “ ওরে ইতর, ওরে মহামূঢ়, ওরে রতিলম্পটের চাকর, শোন, তুই সমস্ত তত্ত্ব জেনেছিস, আমি তোর প্রভুকে জানতে পারিনি! ওরে ব্রজাধম, শ্রীকৃষ্ণ তোরই প্রভু, আমাদের নয়। জানতে পারলাম, তুই সবসময় জনকের স্তব এবং জননীর নিন্দা করে থাকিস। যেমনি অসুররা সবসময় দেবতাদের নিন্দা করে থাকে; ওরে মূঢ়, তেমনি তুই আমার নিন্দা করছিস। এই কারণে তুই অসুর হ। ওরে গোপ, গোলোক হতে বের হ, আসুরী যোনিতে গমন কর। ওরে মূঢ়, আজ তোকে এই অভিশাপ দিলাম; কোন ব্যক্তি তোকে রক্ষা করবে?”
কৃষ্ণ ও বিরজার কাহিনী ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের অন্যত্রও বর্ণিত হয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতিখণ্ডের ষোড়শ অধ্যায়ে কৃষ্ণ বলছেন, “ একসময় আমি গোলোকধামে প্রাণাধিকা মানিনী রাধিকাকে পরিত্যাগ করে নিজ ঘর থেকে রাসমণ্ডলে গমন করেছিলাম। এরপর রাধিকা দাসীমুখে আমাকে বিরজার সাথে ক্রীড়া করতে শুনে ক্রোধভরে সেই স্থানে গমন করে আমাকে দেখতে পান এবং তৎক্ষণাৎ বিরজাকে নদীরূপা এবং আমাকে পলাতক জেনে সক্রোধে সখীদের সাথে পুনরায় গৃহে গমন করেন। পরে দেবী রাধিকা সেই স্থানে চুপচাপ ও সুস্থির আমাকে সুদামের সাথে অবস্থিত দেখে যথোচিত ভর্ৎসনা করেন। সুদাম তা সহ্য করতে না পেরে তার প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করলে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে আমার সামনেই সুদামকে যথেষ্ট তিরস্কার করেন। সুদামও রাধিকাকে তিরস্কার করে। সুধাম রাধিকাকে তিরস্কার করলে রাধিকা তার উপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। এর ফলে তার চোখদুটি তখন রক্ত পদ্মের মত লাল হয়ে ওঠে। তিনি অতিশয় ব্যস্ত হয়ে আমার সভা হতে সুদামকে বহিষ্কৃত করতে আজ্ঞা দেন। আজ্ঞা দেওয়া মাত্র দুর্বার তেজস্বিনী লক্ষ সখী গাত্রোত্থান করে বারংবার কূটভাষী সুদামকে অতিশীঘ্র বহিষ্কৃত করে দিল। সেইসময়ে রাধিকা সুদামের কটূক্তিতে ক্রুদ্ধ হয়ে ‘তুই দানবযোনী প্রাপ্ত হবি’ বলে দারুণ অভিশাপ দেন।“
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতিখণ্ডের ৪৯ তম অধ্যায়েও কৃষ্ণ এবং বিরজার কাহিনীটি রয়েছে। এখানে পার্বতী মহাদেবকে জিজ্ঞেস করেন, “ সুদাম শ্রীরাধিকাকে কেন অভিশাপ দিলেন এবং শিষ্য হয়ে শ্রীদামের শাসক শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়াকে অভিশাপ দেওয়ার কারণ কি?” মহাদেব বললেন, “ হে দেবী!…একদিন কৃষ্ণ গোলোকে বৃন্দাবনে অবস্থিত শতশৃঙ্গপর্বতের একদেশে সৌভাগ্যে রাধিকাসদৃশী বিরজা নামের গোপীর সাথে নানাভূষণে বিভূষিত হয়ে ক্রীড়া করছিলেন; রত্ননির্মিত সেই রাসমণ্ডলের চতুর্দিকে রত্নপ্রদীপ জ্বলছিল। তারা উভয়ে বহুমূল্য রত্ন নির্মিত চম্পক পুষ্প শোভিত কস্তূরী কুমকুম প্রভৃতি দ্বারা বিলোপিত সুগন্ধি চন্দন চর্চিত সুগন্ধ মালতী পুষ্প মালাপক্তি পরিবেষ্টিত সুখশয্যায় অবস্থিত হলেন। তখন তাদের অবিশ্রাম রমণ হতে লাগল। রতিপণ্ডিত শ্রীকৃষ্ণ এবং বিরজা পরস্পর সখসম্ভোগ অনুভব করলেন। জন্মমৃত্যুশূণ্য গোলোকবাসিদের মন্বন্তর পরিমিতকাল তাদের সখসম্ভোগ অতীত হল। চার জন দূতী সেই বিষয় জানতে পেরে শ্রীরাধাকে জানালেন। শ্রীরাধাও দূতীমুখে সেই বিষয় শুনে অতিশয় ক্রুদ্ধ হয়ে গলার হার দূরে নিক্ষেপ করলেন। সখীদের দ্বারা প্রবোধিতা হলেও রাধা কোপে আরক্ত মুখলোচনা হয়ে দেহ হতে রত্নালঙ্কার সকল দূরে নিক্ষেপ করলেন। বহ্নিশুদ্ধ বস্ত্রদ্বয়, অমূল্য রত্ননির্মিত ক্রীড়াপদ্মও দূরীকৃত করলেন এবং বিচিত্র পত্রাবলি রচনা ও সিন্দূরাদি বস্ত্রাঞ্চলদ্বারা মুছে ফেললেন। অঞ্জলি পূর্ণ জলে মুখরাগ এবং অলক্তাদি ধুয়ে ফেললেন। আলুলায়িত কেশে কবরী সকলকে মুক্ত করে ক্রোধে কম্পমানা হলেন। বসনভূষণাদি বিহীনা হয়ে শুক্ল বসন পরিধান পূর্বক যানারোহণেচ্ছায় ধাবমানা হলেন। প্রিয়সখীরা শ্রীরাধিকাকে সেই অবস্থা হতে নিবারিত করিলেন। রাধা ক্রোধে ওষ্ঠ ও অধর কম্পন করে সখীদের আহ্বান করলেন। ক্রোধে কম্পমান শ্রীরাধিকাকে সখীরা চতুর্দিকে পরিবৃত করলেন। রাধা ক্রুদ্ধ হয়ে কোটি কোটি রথে এককোটি তিনলক্ষ প্রিয়সখী গোপিদের সাথে আরোহণ করলেন। … শ্রীরাধা মন অপেক্ষা দ্রুতগামী রথে আরোহণ করে গমন করতে লাগলেন। শ্রীকৃষ্ণের সহচর সুদাম শ্রীরাধার আগমনকোলাহল শুনে শ্রীকৃষ্ণকে সাবধান করে গোপদের সাথে পালিয়ে গেলেন। প্রেমময়ী শ্রীরাধার প্রেমভঙ্গ ভয়ে ভীত হয়ে পতিব্রতা বিরজাকে পরিত্যাগ করে কৃষ্ণ অন্তর্হিত হলেন। বিরজাও সময় জেনে শ্রীরাধার ভয়ে ক্রোধে প্রাণ ত্যাগ করলেন। বিরজার সখীরা ভয়ে বিহ্বল এবং কাতর হয়ে তৎক্ষণাৎ বিরজার শরণ গ্রহণ করলেন। বিরজা গোলোকধামে নদীরূপে প্রবাহিত হলেন। শতকোটিযোজন দীর্ঘ এবং কোটি যোজন বিস্তৃত সেই নদী পরিখার মত গোলোককে বেষ্টন করল। … সেইকালে বিরজার সখীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদীরূপে বিরজার অনুগামিনী হলেন। পৃথিবীর অন্যান্য নদীও তার অংশে উৎপন্ন হয়েছে এবং সপ্তসাগরও বিরজা হতে উৎপন্ন হয়েছে। শ্রীরাধা সেই রাসমণ্ডলে উপস্থিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ ও বিরজার দেখা না পেয়ে নিজের ঘরে ফিরে এলেন। শ্রীকৃষ্ণও তার আটজন সখার সাথে শ্রীরাধার কাছে উপস্থিত হলেন। দ্বারাপালিকা গোপনীরা শ্রীকৃষ্ণকে বারংবার নিবারণ করলেন। রাসেশ্বরী রাধা শ্রীকৃষ্ণকে দেখে বহুতর তিরস্কার করলেন। কৃষ্ণ সখা সুদাম সখার এই নিন্দা শুনে বিরক্ত হয়ে শ্রীরাধিকাকে ভর্ৎসনা করলেন। শ্রীরাধিকা সুদামের কথায় আরো রেগে গিয়ে তাকে এই বলে অভিশাপ দেন, “ ক্রুরমতি! শীঘ্রই ক্রুরতর অসুরযোনিকে লাভ কর”। সুদামও রাধাকে এই বলে অভিশাপ দিল- “গোলোক হতে ভূলোকে গমন করে গোপের ঘরে গোপকন্যারূপে জন্মগ্রহণ করে অসহ্য কৃষ্ণ বিরহ দুঃখ শত বৎসর অনুভব করবে। ভগবান পৃথিবীর ভার হরণের জন্য অবতীর্ণ হয়ে তোমার সাথে মিলিত হবেন”…
কৃষ্ণ এবং তুলসী
গোলোকধামে তুলসী নামে একজন গোপিকা ছিলেন। কৃষ্ণ তার সাথেও লীলাখেলা করেছিলেন। তুলসীর সাথে রাসলীলা করতে গিয়ে কৃষ্ণ রাধার কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন। তখন রাধা তুলসীকে মানুষ হওয়ার অভিশাপ দিয়েছিলেন।
এই ঘটনাটি তুলসী নিজে বর্ণনা করছেন ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে। তুলসি বুলেছেন, “ আমি তুলসী, আমি পূর্বে গোলোকে গোপিকা ছিলাম, শ্রীকৃষ্ণের কিঙ্করী হয়ে সবসময় তার সেবা করতাম। আমি রাধার অংশসম্ভূতা এবং তার প্রিয়তম সখী ছিলাম। একসময়ে আমি রাসমণ্ডলে গোবিন্দের সাথে ক্রীড়া-কৌতুক ভোগ করে মূর্ছিত হয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। সেই সময়ে রাসেশ্বরী রাধিকা হঠাৎ সেই স্থানে আগমন করে আমাকে সেই অবস্থায় দেখতে পান । … তখন তিনি অত্যন্ত ক্রোধান্ধ হয়ে গোবিন্দকে অনেক ভর্ৎসনা করলেন এবং আমাকে এই বলে অভিশাপ দিলেন, “ পাপিষ্ঠে! তুই মনুষ্য যোনিতে জন্মগ্রহণ কর।“ (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ/ প্রকৃতিখণ্ড/ ১৫ অধ্যায়)
কৃষ্ণ এবং তুলসীর যে কাহিনী বলা হল, তার উল্লেখ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতিখণ্ডের ৫৫ অধ্যায়েও আছে। এখানে বলা হয়েছে, “ একদিন তুলসীবনে তুলসী গোপীর সাথে শ্রীকৃষ্ণ ক্রীড়াসক্ত হলে শ্রীরাধিকা মানিনী হয়ে প্রিয়তম শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে অন্তর্হিত হন। রাধা লীলাক্রমে তার নিজমূর্তি ও কলার বিনাশ করলে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব প্রভৃতি দেবতাদের ঐশ্বর্য নষ্ট হয়, তাঁরা শ্রীশূণ্য ভার্যাহীন হন এবং রোগ প্রভৃতি দ্বারা পীড়িত হলন।” তখন সকল দেবতারা কৃষ্ণের শরণাগত হন। এরপর কৃষ্ণ রাধার স্তব করে রাধাকে শান্ত করেন।
কৃষ্ণ এবং স্বধা ও স্বাহা
স্বধা নামে এক গোপিনীর সাথেও কৃষ্ণ লীলা করেছেন। এই প্রসঙ্গে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে, “ আগে গোলোকধামে স্বধা নামে রাধিকার এক সখী ছিল। স্বধা তার আত্মার স্বরূপ পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণকে বক্ষে ধারণ করে স্বধানামে বিখ্যাত হয়েছিল।স্বধাকে রমণীয় বৃন্দাবনের নিকুঞ্জবনে প্রাণবল্লভ শ্রীকৃষ্ণকে আলিঙ্গন করতে দেখে কৃষ্ণ প্রাণেশ্বরী রাধিকা তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। ( প্রকৃতিখণ্ড, ৪১ অধ্যায়)
স্বাহা নামেও রাধার প্রিয় সখী ছিল। স্বাহা তার প্রাণবল্লভ শ্রীকৃষ্ণকে রমণের জন্য বলেছিলেন; তাই তিনি স্বাহা নামে খ্যাত হয়েছেন। স্বাহা রাসমণ্ডলে রাসবিহারী শ্রীকৃষ্ণের সাথে রমণ করে রতিরসে মত্ত হয়েছিলেন। রাধা, কৃষ্ণকে স্বাহাকে আলিঙ্গন করতে দেখে স্বাহাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন।“ ( প্রকৃতিখণ্ড, ৪১ অধ্যায়)
কৃষ্ণ এবং সুশীলা
সুশীলা নামে রাধার এক সখীর সাথেও কৃষ্ণের সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতিখণ্ডের ৪১ অধ্যায়ে আছে- সুশীলা নামে রাধার এক সখী ছিল। সুশীলা রাধার সামনেই কৃষ্ণের দক্ষিণ ক্রোড়ে উপবেশন করেছিলেন। এর ফলে রাধা তাকেও গোলোক থেকে ভূলোকে আসার অভিশাপ দিয়েছিলেন।
গোপি সুশীলার সাথে কৃষ্ণের লীলার বিস্তারিত বিবরণ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতি খণ্ডের ৪২ তম অধ্যায়ে আছে। এখানে বলা হয়েছেঃ ।
“রাধার প্রধান সহচরী সুশীলা গোপি পূর্বে শ্রীরাধিকার সম্মুখে শ্রীকৃষ্ণের দক্ষিণ ক্রোড়ে উপবেশন করেছিলেন। তখন কৃষ্ণ রাধার ভয়ে তার মাথা নিচু করে রেখেছিলেন। কৃষ্ণ গোপীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাধিকাকে ক্রোধে নিষ্ঠুর বাক্য বলার জন্য তেড়ে আসতে দেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সুশীলা গোপী শান্তমূর্তি ভগবান কৃষ্ণকে ভয়ে পালিয়ে যেতে দেখে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। লক্ষকোটি গোপী শ্রীমতী রাধিকা ক্রোধান্বিত দেখে সঙ্কট বিবেচনা করে ভক্তিসহকারে হাতজোড় করে বলতে থাকেন, হে দেবী! রক্ষা করুন, রক্ষা করুন। এমন কথা বলতে বলতে তাঁরা রাধার চরণ পঙ্কজে শরণ গ্রহণ করেন।… শ্রীদাম প্রভৃতি তিনলক্ষকোটি গোপও ভয়ে রাধার চরণপঙ্কজে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরমেশ্বরী রাধা জগতকান্ত কৃষ্ণকে পলাতক দেখে সহচরী সুশীলাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। আজ থেকে সুশীলা গোপী যদি গোলোকে আগমন করে , তাহলে সে আসার সাথে সাথে ভস্মীভূত হইবে। সুশীলাকে এই অভিশাপ দিয়ে ক্রুদ্ধ রাসেশ্বরী রাধা রাসমণ্ডলেই রাসবিহারীকে কৃষ্ণকে অহ্বান করতে থাকেন।“
উপসংহার
সুতরাং আমরা দেখতে পেলাম কৃষ্ণ ছিলেন বহুনারীর সাথে একসাথে সম্পর্ককারী একজন সার্টিফায়েড পলিগামী। তিনি প্রায়শই একই সময়ে বহু নারীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতেন। তবে গোলোকধামের গোপিরা যাদের সাথে কৃষ্ণ একই সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হতেন তাঁরা কৃষ্ণের স্ত্রী এমন কথাও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে। এরা সকলে কৃষ্ণের স্ত্রী তা ধরে নিলেও কৃষ্ণ বহুবিবাহের দোষে দূষিত হন এবং এই বহুবিবাহের ফল কি হয়েছিল তা আমরা সকলেই দেখেছি। অন্য স্ত্রীদের সাথে কৃষ্ণকে দেখতে পেয়ে রাধা প্রায়ই তাদের তাড়া করতেন এবং নিজেও কষ্ট পেতেন। এর ফল ছিল পারিবারিক অশান্তি।
এমন স্বভাবের কৃষ্ণকে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের অনেক স্থানে পরমাত্মা বলা হয়েছে। কিন্তু পরমাত্মার চাইতে দুরাত্মার সাথেই তার বেশি মিল দেখা যায়। ধর্মগ্রন্থের এইসব চরিত্র থেকে মানুষ ঠিক কি শিক্ষা পাবে?
সহায়ক গ্রন্থঃ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, পঞ্চানন তর্করত্ন কর্তৃক অনুবাদিত ও সম্পাদিত, নবভারত পাবলিশার্স
অজিতদা, আপনার জ্ঞানের কাছে আমি ধারে কাছেও নাই। তাও বলি, পুরান ছোটবেলা যতগুলো শুনছিলাম বর্তমানে পুরানের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই আছে। এগুলো পুরান লেখা হয়েছে অনেক পরে। যে যার মতো যা ইচ্ছা সেভাবেই লিখছে। এক রাইটারের সাথে আরেক রাইটারের মিল নাই।তাছাড়া শ্রীকৃষ্ণের সময় যে লিখছিল তা এত বছর পরে এসে বিকৃত হয়ে গেছে।ধর্ম টা যেহেতু হিন্দুধর্ম, তাই এগুলো নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। হিন্দুদের ৮০% সেকুলার। তবে মহাভারত এবং গীতা থেকে যদি কিছু দেখাতে পারেন তবে বিশ্বাস করব।
মুসলমান আর হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। পলাশ দেবনাথের লেখাই তার প্রমাণ।
মহাপুরাণ ১৮ টা, উপপুরাণ অনেকগুলো। তবে আপনি ছোটো থেকে বড় হতে হতে নতুন পুরাণ আর তৈরি হয়নি।
যাইহোক, মহাভারতেও অনেক সমস্যা আছে। মহাভারত নিয়ে আমি কয়েকটি লেখা লিখেছি ইতিমধ্যে । ভবিষ্যতে আরো অনেক কিছু লেখার আছে। নিচে লেখাগুলোর লিংক রইলোঃ
মহাভারতে জাতিভেদঃব্রাহ্মণ
https://www.shongshoy.com/archives/13536?swcfpc=1
ধার্মিক পাণ্ডবরা যখন ঠান্ডা মাথার খুনি
https://www.shongshoy.com/archives/18169?swcfpc=1
মহাভারতের একলব্য, যার প্রতিভাকে খুন করেছিল বর্ণবাদীরা
https://www.shongshoy.com/archives/21077?swcfpc=1
দাদা আপনার সবগুলো লেখা ব্রহ্মবৈর্ত পুরান থেকে।
আমি যতটুকু জানি এটি মধ্যযুগীয় মুসলিম শাষকেরা হিন্দুপন্ডিতদের দ্বারা কৃষ্ণচরিত্রটিকে কলুষিত করার জন্য লিখেছে।
তাই ব্রহ্মবৈবর্তপুরান থেকে কিছু লিখলে আমি তা সত্য বলে মেনে নিতে পারলাম না
কোন বিষয়ক সবগুলো লেখা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ থেকে? ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ নিয়ে আমি কেবল দুটি আর্টিকেল লিখেছি।
যদি বলেন কৃষ্ণ সম্বন্ধে সব ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ থেকে লেখা, তাহলে ঠিক আছে। এখন ব্রহ্মবৈবর্ত নিয়ে সিরিজ চলছে, এরপর ভাগবত সহ অন্যান্য পুরাণ এবং মহাভারত নিয়ে চলবে।
আপনি যতটুকু জানেন বলছেন সেটা ভুল জানেন। মুসলিম শাসকেরা হিন্দু পণ্ডিতদের দ্বারা কৃষ্ণকে কলংকিত করার জন্য যে এসব লিখেছে তার প্রমাণ দয়া করে দেবেন। প্রমাণ ছাড়া আপনার কথা সত্য বলে মানা গেল না।
শাস্ত্রের ব্যাখ্যা লৌকিক দৃষ্টিতে কিভাবে সম্ভব?
এসব সত্য মানলে কৃষ্ণকে গোলোকবাসী ভগবান মানতেই হবে। তাঁকে ভগবান মানলে নাস্তিকতা অক্ষুন্ন থাকবে না।
আর তাঁকে ভগবান না মানলে এসব মিথ্যা গদ্য রচনা বলেই বিবেচিত হবে। তা ছাড়া আর কিছু না।
শাস্ত্রকে খন্ডন করতে হলে শাস্ত্রীয় তর্ক উপস্থাপন করা উচিত। নচেৎ এতো পরিশ্রম ভস্মে ঘি ঢালার মতোই অপচয়।
তা ছাড়া সনাতন হিন্দু ধর্ম কোনো ব্যক্তি বা পুস্তক নির্ভর না হওয়ায় একে সমাপ্ত করা সম্ভবই নয়। কৃষ্ণ নয় তো শিব, শিব নয় তো দুর্গা, দুর্গা নয় তো সরস্বতী, সরস্বতী নয় তো গণেশ এভাবে অসংখ্য অসংখ্য দেবী দেবতার আশ্রয়ে সনাতন ধর্ম সদাতন থাকবে।
এমনকি নাস্তিকতাকে আকড়ে ধরেও সনাতন ধর্ম জীবিত থাকতে পারে। ????
আপনার মন্তব্যের অধিকাংশ অংশই অপ্রাসঙ্গিক, তাই সেসব নিয়ে বাক্য ব্যয় করার প্রয়োজন অনুভব করছি না। বাকি যেটুকু অংশ আছে যা নিয়ে কিছু বলা যেতে পারে তা বলা যাক।
ধরুন, ঈশপের গল্পে নানা বন্য প্রাণীরাও পরস্পরের সাথে, মানুষের সাথে কথা বলে। এই ধরণের গল্পগুলোর মাধ্যমে নানা মেসেজ দেওয়া হয়ে থাকে। বাচ্চা-কাচ্চাদেরও এসব পড়ানো হয়ে থাকে। তার মানে কিন্তু এই নয় যে এসবকে মানুষ সত্যি মনে করেই এসবের পঠন পাঠন করে।
কিন্তু এইধরণের কোনো গল্পে যদি কোথাও অনৈতিক, হিংসাত্মক ইত্যাদি ধরণের কোনো মেসেজ থাকে। তাহলে মাতা-পিতারা তার সন্তানদের এসব পড়াতে চাইবেন না। কারণ এসব গল্প শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এমতাবস্থায় অভিভাবকেরা, মানুষেরা এই ধরণের অবাস্তব সাহিত্যেরও সমালোচনা করতে বাধ্য হন শুধুমাত্র এটা বোঝানোর জন্য যে এই ধরণের গল্পগুলো, চরিত্রগুলো মানবসমাজের খারাপ ছাড়া ভালো করতে পারে না। তার মানে কিন্তু আবার এটা নয় যে এসবকে তারা বাস্তব ভাবছেন, বা ভাবতে বাধ্য।
সাহিত্যের নানা চরিত্র নিয়েও সাহিত্য সমালোচনা করা হয়ে থাকে। ধরুন, শরৎচন্দ্রের গল্পের গফুর চরিত্রটিকে নিয়ে সাহিত্য সমালোচনা হচ্ছে, তার মানে কিন্তু এই নয় সাহিত্য সমালোচক গফুর চরিত্রটিকে বাস্তব ভাবেন বা বাস্তব ভাবতে বাধ্য।
ধর্মের এই ধরণের চরিত্রগুলো অবাস্তব হলেও, এইসব চরিত্র মানুষ অনুসরণ করলে সমাজের অধঃপতন হতে পারে, সমাজের উপর কুপ্রভাব পড়তে পারে, এই জন্যেই এইসব চরিত্রের সমালোচনা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
এসকল ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে কোমলমতি শিশুরা কী শিক্ষা নিতে পারে?
এইসব গ্রন্থ অপ্রাপ্তবয়স্কদের পড়ার উপযোগী নয়। বাল্যাবস্থায় শিশুদের ভালোমন্দ বোধ যেহেতু গড়ে ওঠে না, তাই এইসব গ্রন্থ তাদের কাছ থেকে দূরে রাখাই মঙ্গলজনক…
কি অদ্ভুত এসব কথা!!এসবের সাথে অথেনটিক কাহিনির কোন মিল নেই।কৃষ্ণ জন্মের পর মাত্র ১২ বছর বৃন্দাবন থেকেছিল।রাধাও অন্যান্য গোপ গোপীরা খেলার তাঁর সঙ্গী ছিলো।মাত্র ১০ বা ১২ বয়সী বালক কোন যুক্তিতে এসব করে তা সত্যিই অবাক লাগে।যদি ও আপনাদের দোষ পুরোপুরি দিবো না কারণ মধ্যযুগে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার জন্য এই ধরণের বানোয়াট কাহিনি রচনা করেছিলো
অথেনটিক কাহিনী কি স্বপ্নে দর্শন করেছেন ?
সাত বছরের বালকও ধর্ষণ করতে পারে-
https://timesofindia.indiatimes.com/city/agra/seven-year-old-boy-accused-of-raping-girl-5-in-aligarh/articleshow/78755555.cms
আর এখানে সব গোলোকধামের কাহিনী বলা হয়েছে। এখানে কৃষ্ণ শিশু নয়। তবে আপনি ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ পড়েননি, তাই আপনি বুঝবেন না কি নিয়ে কথা হচ্ছে, আগে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ পড়ে আসুন।
“হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার জন্য কাহিনী বানিয়েছে”
হাহাহা, এইসব প্রলাপ মূর্খদের কাছে গিয়ে বকুন, তারা চোখ বুজে বিশ্বাস করে নেবে।
শ্রীকৃষ্ণের বহুবিবাহ সম্পর্কে প্রচলিত গল্প এই যে, শ্রীকৃষ্ণের প্রধান মহিষী বা স্ত্রী ছিলো ৮ জন এবং আসামের রাজা নরকাসুরের অন্তঃপুর থেকে উদ্ধার করা স্ত্রীর সংখ্যা ছিলো ১৬,১০০ জন; সব মিলিয়ে শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা ১৬,১০৮।
তো প্রথমে আমরা বিষ্ণু পূরাণের রেফারেন্স দেখবো কি বলছে ওখানে
বিষ্ণু পুরাণের ৪ নং অংশের ১৫ নং অধ্যায়ের ১৯ নং শ্লোকে আছে,
“ভগবতোহপ্যত্র মর্ত্যলোকেহবতীর্ণস্য।
ষোড়শসহস্রাষণ্যেকোত্তরশতা ধিকানি স্ত্রীণামভবন।।
এখানে বলা হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের ষোলহাজার একশত স্ত্রী।
কিন্তু বিষ্ণু পূরাণের পরবর্তী অংশে (৫ম অংশের ২৮ অধ্যায়) কি বলছে দেখুন-
অন্যাশ্চ ভার্য্যাঃ কৃষ্ণস্য বভূবুঃ সপ্ত শোভনাঃ…
ষোড়শাসন সহস্রাণি স্ত্রীণামন্যানি চক্রিণঃ। ইত্যাদি
এই দুই শ্লোকের অর্থ হলো কৃষ্ণের মোট স্ত্রীর সংখ্যা ষোল হাজার সাত জন। এর মধ্যে ষোল হাজার জন হলো হলো কথিত নরকাসুরের অন্তঃপুর থেকে উদ্ধারকৃত নারী, এদের সম্পর্কে আমরা আলোচনার শেষে বলবো। বলে শুরুতেই উল্লেখ করেছি, তাই এখন এই ৭ বা ৮ জনের মীমাংসা টা করে নিই।
বিষ্ণুপুরাণ বলছে, নরকাসুরের অন্তঃপুরের নারীরা বাদে কৃষ্ণের স্ত্রী ৭ জন, কিন্তু একই অধ্যায়ে একটু পরেই বিষ্ণুপুরাণ শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীদের যে তালিকা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে ৮ জনের কথা, তার মধ্যে আবার শ্রীকৃষ্ণের প্রথম স্ত্রী রুক্মিনী নেই।
দেখে নিন সেই তালিকা-
“কালিন্দী মিত্রবিন্দা চ সত্যা নাগ্নজিতী তথা।
দেবী জাম্ববতী চাপি রোহিণী কামরূপিণী ||
মদ্ররাজসুতা চান্যা সুশীলা শীলমণ্ডনা।
সাত্রাজিতী সত্যাভামা লক্ষ্মণা চারুহাসিনী |
এখানে রুক্মিনী ছাড়া অন্য যে আটটি নাম আছে, সেগুলো হলো-
১.কালিন্দী, ২.মিত্রবিন্দা, ৩.নগ্নজিতকন্যা সত্যা, ৪.জাম্ববতী, ৫.রোহিনী, ৬.মদ্ররাজের কন্যা সুশীলা, ৭.সত্রাজিত কন্যা সত্যভামা ও ৮.লক্ষণা।
কিন্তু বিষ্ণুপুরাণের ৪র্থ অংশের ১৫ অধ্যায়ে আছে,
“তাসাঞ্চ রুক্মিণী-সত্যভামাজাম্ববতী জালহাসিনীপ্রমুখা অষ্টৌ পত্ন্যঃ প্রধানাঃ।”
আগের শ্লোকে আটজনের নাম ছিলো এখানে নতুন একজন ও রুক্মিণীসহ তাহলে মোট হলো ১০জন।
তাহলে আমরা বিষ্ণু পূরাণ থেকে পেলাম ১০জনের নাম।
১.কালিন্দী, ২.মিত্রবিন্দা, ৩.নগ্নজিতকন্যা সত্যা, ৪.জাম্ববতী, ৫.রোহিনী, ৬.মদ্ররাজের কন্যা সুশীলা, ৭.সত্রাজিত কন্যা সত্যভামা ও ৮.লক্ষণা
৯।জালহাসিনী ও
১০।রুক্মিণী
মহাভারত ছাড়া, কৃষ্ণ সম্পর্কে যেসব গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সেগুলো হলো- বিষ্ণুপুরাণ, ভাগবত পুরাণ এবং হরিবংশ। উপরে বিষ্ণুপুরাণের শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কে জানালাম।
এবার দেখবো আমাদের হরিবংশে কি বলছে?? হরিবংশ হলো মহাভারতের খিল পর্ব। যদিও মূল মহাভারত রচনার অনেক পরে এটি রচিত, তবুও অন্যান্য পুরাণ অপেক্ষা এর প্রামাণিকতা কিছুটা বেশি।
হরিবংশের ১১৮ অধ্যায়ের ৪০ থেকে ৪৩ নং শ্লোকে-
“মহিষীঃ সপ্ত কল্যাণীস্ততোহন্যা মধুসূদনঃ।
উপষেমে মহাবাহুর্গুণোপেতাঃ কুলোদ্গতাঃ |
কালিন্দীং মিত্রবিন্দাঞ্চ সত্যাং নাগ্নজিতীং তথা।
সুতাং জাম্ববতশ্চাপি রোহিনীং কামরূপিণীম্||
মদ্ররাজসুতাঞ্চাপি সুশীলাং ভদ্রলোচনাম্।
সাত্রাজিতীং সত্যভামাং লক্ষ্মণাং জালহাসিনীম্।
শৈব্যস্য চ সুতাং তম্বীং রূপেণাপ্সরসাং সমাং ||”
এখানে পাওয়া যাচ্ছে যে, লক্ষ্মণাই জালহাসিনী; তাহলে লক্ষণাসহ অন্য যে নামগুলো এখানে আছে, সেগুলো হলো-
১.কালিন্দী, ২.মিত্রবিন্দা, ৩.সত্যা, ৪.জাম্ববতী, ৫.রোহিনী, ৬.মদ্ররাজ কন্যা সুশীলা, ৭.সত্রাজিত কন্যা সত্যভামা, ৮.জালহাসিনী লক্ষণা এবং ৯. শৈব্যা।
এখানে নতুন যে নাম যুক্ত হলো, সেটা শৈব্যা এবং বিষ্ণুপুরাণের জালহাসিনীকে লক্ষণা বলে ধরে নেওয়ার পরও রূক্মিণীসহ শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী সংখ্যা হলো ১০ জন।জালহাসিনীকে আর লক্ষণাকে আলাদা বলে ধরলে এই সংখ্যা হয় ১১ জন।
হরিবংশের ১১৮ অধ্যায়ের এই তালিকার পর ১৬২ অধ্যায়ে রয়েছে আরেকটি তালিকা:
“অষ্টৌ মহিষ্যঃ পুত্রিণ্য ইতি প্রাধান্যতঃ স্মৃতাঃ।
সর্বা বীরপ্রজাশ্চৈব তাস্বপত্যানি মে শৃণু ||
রুক্মিণী সত্যভামা চ দেবী নাগ্নজিতী তথা।
সুদত্তা চ তথা শৈব্যা লক্ষ্মণ জালহাসিনী।।
মিত্রবিন্দা চ কালিন্দী জাম্ববত্যথ পৌরবী।
সুভীমা চ তথা মাদ্রী…”
এই শ্লোকে রুক্মিণীসহ মোট নাম আছে বারোটি।
বারো জনের নাম দেখুন ১. রুক্মিনী, ২. সত্যভামা, ৩. নগ্নাজিতী, ৪. সুদত্তা, ৫. শৈব্যা, ৬. লক্ষণা জালহাসিনী, ৭. মিত্রবিন্দা, ৮. কালিন্দী, ৯. জাম্ববতী, ১০. পৌরবী, ১১. সুভীমা এবং ১২. মাদ্রী।
তাহলে এখন পর্যন্ত রুক্মিনী সহ কৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১২ জনে।
এখানে আরেকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে যে, হরিবংশের রচয়িতা (রচয়িতা বলতে এখানে বা পরবর্তী কোথাওই পরম বেদজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যাসদেবকে বোঝানো হয় নি, বরং যেসব অজ্ঞানী ব্যাসদেবের নাম করে এসব অর্বাচীন পুরাণসমূহ রচনা করেছেন তাদেরকে বোঝানো হয়েছে), শুরুতেই-
“অষ্টৌ মহিষ্যঃ পুত্রিণ্য ইতি প্রাধান্যতঃ স্মৃতাঃ।”
এই শ্লোকে বলেছেন, আটজন স্ত্রীর কথা, কিন্তু তালিকা দিলেন ১২ জনের।
কিন্তু তাতেও তিনি ক্ষান্ত হন নি, যখন কৃষ্ণের সন্তানদের নাম বলতে শুরু করেন, তখন বেরিয়ে আসে আরও ৫ জন স্ত্রীর নাম, সেগুলো হলো- ১. সুদেবা, ২. কৌশিকী, ৩. উপাসঙ্গ, ৪. সুতসোমা এবং ৫. যৌধিষ্ঠিরী।
এছাড়াও বিষ্ণুপুরাণ না বললেও হরিবংশ এমনও বলে যে, সত্রাজিত তার অপর দুই কন্যা ব্রতিনী এবং প্রস্বাপিনীকেও শ্রীকৃষ্ণের কাছে সমর্পন করেছিলো।
এখন তাহলে মোট ১২+৫+২=১৯জন।
তাহলে সব মিলিয়ে পুরাণ মতে এখন পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৯ জনে। এছাড়াও মহাভারতের মৌষল পর্বে পাওয়া যায় দুইজনের নাম গান্ধারী ও হৈমবতী।
তাহলে ১২+৫+২+২=২১
অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের মোট স্ত্রীর সংখ্যা হয় ২১ জন।
কৃষ্ণের স্ত্রী, তথাকথিত ১৬১০০ জন বাদে তথাকথিত ৮ জন বলা হলেও, কৃষ্ণ সম্পর্কিত সমস্ত শাস্ত্র ঘেঁটে নাম পাওয়া যাচ্ছে ২১ জনের।
এর মধ্যে ১৩ থেকে ১৯ পর্যন্ত নাম শুধু হরিবংশেই আছে, আর কোথাও নেই এবং যেহেতু হরিবংশের সাংঘর্ষিক বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, রচয়িতা তার তাল ঠিক রাখতে পারেন নি, সেহেতু এই ১৩ থেকে ১৯ জনের নাম একেবারেই বাদ বা পরিত্যাজ্য।
এছাড়াও কৃষ্ণের স্ত্রী হিসেবে গান্ধারী ও হৈমবতীর নাম শুধু মহাভারতের মৌষল পর্বেই আছে এবং মৌষল পর্ব যেহেতু মহাভারতে প্রক্ষিপ্ত (বিভিন্ন গবেষকদের মতে), সেহেতু এই দুই নামও বাদ, বাকি থাকলো ১২ জন।
মহাভারতের মৌষল পর্বকে কেনো প্রক্ষিপ্ত বলা হলো, তা একটু পরেই বলা হবে।
এবার আমরা শ্রী কৃষ্ণের স্ত্রী জাম্ববতী সম্পর্কে একটু জেনে আসি
জাম্ববতী সম্পর্কে বিষ্ণুপুরাণের ২৮ অধ্যায়ে লেখা আছে,
“দেবী জাম্ববতী চাপি রোহিণী কামরূপিনী।
আবার হরিবংশে লিখা আছে,
“সুতা জাম্ববতশ্চাপি রোহিণী কামরূপিণী।
এই দুই শ্লোক মতে প্রতীয়মান হয় যে, জাম্ববতী ও রোহিনী একই নারী। তাহলে বাকি থাকলো ১১ জন।
এই ১১ জনের মধ্যে সত্যভামা, ব্রতিনী ও প্রস্বাপিনী, যারা সত্রাজিতের কন্যা বলে বিষ্ণুপুরাণ ও হরিবংশ বলেছে, যাদের সঙ্গে কৃষ্ণের বিবাহ স্যামন্তক মণির ঘটনাকে কেন্দ্র করে; সেই ঘটনা যে কখনোই ঘটেই নি, সেটা বুঝতে পারবেন এবারের আলোচনাটা পড়ে।
দ্বারকায় সত্রাজিৎ নামে এক ব্যক্তি বাস করতো। সে কোনো ভাবে এক মণি পেয়েছিলো, যার নাম স্যামন্তক মণি; পুরাণ মতে এই মণিকে কেন্দ্র করেই শ্রীকৃষ্ণের বহুবিবাহের সূচনা।
যাই হোক, দ্বারকার রাজা তখন উগ্রসেন হলেও কৃষ্ণই ছিলেন প্রধান ব্যক্তি। সত্রাজিৎ ভয় পেয়েছিলো যে, সেই মণি কৃষ্ণ তার কাছে চাইতে পারে, আর কৃষ্ণ যদি তা চায়, তাহলে সে তা তাকে দিতে বাধ্য থাকবে। এজন্য সত্রাজিৎ সেই মনি নিজের কাছে না রেখে তার ভাই প্রসেনের কাছে দেয় এবং প্রসেন তা নিয়ে বনে শিকার করতে যায়।
কিন্তু বনের মধ্যে একটি সিংহ প্রসেনকে হত্যা করে সেই মণি মুখে করে নিয়ে যেতে লাগলে জাম্ববান নামে এক ভাল্লুক, যে নাকি রামের পক্ষ হয়ে রাবনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কৃষ্ণের সময় পর্যন্ত জীবিত ছিলো (!), সেই ভাল্লুক সিংহকে হত্যা করে সেই মণি দখল করে তার গুহায় নিয়ে গিয়ে রাখে।
বনের মধ্যে প্রসেন নিহত এবং মণি হারিয়ে যাওয়ার পর সবাই এজন্য কৃষ্ণকেই সন্দেহ করা শুরু করে, নিজের উপর অযথা আরোপিত এই কলঙ্ক ঘুচানোর জন্য কৃষ্ণ, সেই মনি কোথায় গেলো এবং প্রসেন কিভাবে নিহত হলো,
তার জন্য তদন্ত করতে বনে গমন করে এবং প্রসেনের মৃতদেহ যেখানে পড়ে ছিলো, সেখানে সিংহের পদচিহ্ন দেখে তা অনুসরণ করতে করতে দেখে এক ভাল্লুকের পদচিহ্ন এবং সেই পদচিহ্ন অনুসরণ করতে করতে কৃষ্ণ গিয়ে পৌঁছায় এক গুহার মধ্যে, সেখানে সে জাম্ববানের পুত্রপালিকা এক ধাত্রীর হাতে সেই মণি দেখতে পায়, এরপর কৃষ্ণ জাম্ববানকে যুদ্ধে পরাজিত করে এবং স্যামন্তক মনি অধিকার করে।
এরপর জাম্ববান শুধু মণিই কৃষ্ণকে দেয় না, তার কন্যা জাম্ববতীকেও কৃষ্ণকে অর্পণ করে। কৃষ্ণ, জাম্ববতীকে বিয়ে করে মণিসহ দ্বারকায় ফেরত আসে। দ্বারকায় ফিরে, কৃষ্ণ সেই মণি সত্রাজিৎকেই দেয়। কিন্তু মণি হারিয়ে যাওয়ার পর, সত্রাজিৎই প্রথম কৃষ্ণকে সন্দেহ করেছিলো, এই ভয়ে সত্রাজিৎ তার নিজের কন্যা সত্যভামাকে কৃষ্ণের সাথে বিয়ে দিয়ে এর একটা আপোষ মীমাংসা করে।
এরপর এই স্যামন্তক মণি নিয়ে আরো কিছু ঘটনা আছে, কিন্তু সেগুলো কৃষ্ণের বহুবিবাহের ঘটনার সাথে যুক্ত নয় বলে এখানে তা আর উল্লেখ করা হল না। কিন্তু বাস্তবতার দৃষ্টিকোণ থেকে এবার ঘটনাটিকে বিচার করে দেখা যাক,
স্যামন্তক মণি নিয়ে পুরাণ রচয়িতারা যে গল্প ফেঁদেছে তা কতদূর সত্য বা এসব সম্ভব হতে পারে কি না ?
আমরা সবাই জানি শ্রীকৃষ্ণ, কংসকে পরাজিত ও হত্যা করে। রাজাদের আমলে এই রীতি ছিলো যে, কোনো ব্যক্তি কোনো রাজাকে হত্যা করতে পারলে, ক্ষমতার সূত্রে সেই, সেই রাজ্যের রাজা হতো। এই সূত্রে শ্রীকৃষ্ণই মথুরার রাজা হতে পারতো, কিন্তু সে তা না হয়ে কংসের পিতা উগসেনের হাতে রাজ্যের দায়িত্ব অর্পণ ক’রে তাকেই রাজা বানায়।
এই ঘটনা থেকে শ্রীকৃষ্ণের নির্লোভ মনের পরিচয় পাওয়া যায়। কংসকে হত্যা করায়, কংসের শ্বশুর জরাসন্ধের সাথে কৃষ্ণের সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায় এবং সে বার বার মথুরা আক্রমন করতে থাকে, জরাসন্ধ ছিলো সেই সময়ের ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজা, বলা যেতে পারে চক্রবর্তী সম্রাট, যার ছিলো ২০ অক্ষৌহিনী সেনা, যা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সমাগত সমস্ত সৈন্যের চেয়ে বেশি। এখানে বলে রাখি, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ছিলো মোট ১৮ অক্ষৌহিনী সেনা।
যাই হোক, জরাসন্ধের সৈন্য বলের কাছে মথুরার সৈন্যবল ছিলো নিতান্তই শিশু, তারপরও জরাসন্ধ যখনই মথুরা আক্রমন করেছে, কৃষ্ণ তার শক্তি, বুদ্ধি ও কৌশলের দ্বারা জরাসন্ধকে হতাশ করে মথুরা ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে।
কিন্তু জরাসন্ধের আক্রমনের ফলে প্রতিবারই মথুরার সৈন্য ক্ষয় হচ্ছিলো, এই অযথা মৃত্যু ঠেকাতে, শ্রীকৃষ্ণ, রাজধানীকে মথুরা থেকে তিন দিক জল দিয়ে ঘেরা দ্বারকায় স্থানান্তরিত করে, ফলে সেখানে আক্রমন করে আর কোনো ফল হবে না বিবেচনা ক’রে, জরাসন্ধ, দ্বারকা আক্রমন থেকে বিরত থাকে; কারণ, চতুর্দিকের আক্রমন ঠেকানোর চেয়ে একদিকের আক্রমন ঠেকানো সহজ।
এই জরাসন্ধের সাথে, কৃষ্ণ বিরোধিতায় যুক্ত হয়েছিলো কাল যবন নামে এক রাজা, এই দুজনেরই দৈহিক শক্তি ছিলো যেমন অতুলনীয়, তেমনই কোনো সাধারণ অস্ত্রেও এদের মৃত্যু হতো না, তাই এদের হাত থেকে রাজ্যবাসীকে বাঁচাতে কৃষ্ণকে ঐ পথ অবলম্বন করতে হয়েছিলো।
দ্বারকায় রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পর, অর্থাৎ রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, উগ্রসেন নামে মাত্র রাজা হলেও কৃষ্ণই ছিলেন প্রধান ব্যক্তি। এই কৃষ্ণের কাছ থেকে স্যামন্তক মণি লুকানো, তা এক হাস্যকর ব্যাপার।
কারণ, কৃষ্ণ যদি মণি চায়, তাহলে কৃষ্ণকে তা দিতেই হবে, এই ভয়ে সত্রাজিৎ সেই মনি তার ভাই প্রসেনকে দিয়ে দেয়। প্রসেন কি এমন মহারথি ছিলো বা প্রসেনের কি এমন ক্ষমতা ছিলো যে, কৃষ্ণ চাইলে সে তাকে মণি না দিয়ে তা নিজের কাছে রক্ষা করতে পারতো ?
দ্বারকায় যেখানে কৃষ্ণের ইচ্ছাই আইন, সেখানে এই প্রসেনের কথা বা ইচ্ছার মূল্য কী ? আর যে কৃষ্ণ, রাজা হওয়ার সুযোগ পেয়েও মথুরা বা দ্বারকায় রাজা হয় নি, সেই কৃষ্ণ, সামান্য এক মণির লোভ সামলাতে পারবে না, এটা সত্রাজিৎকে দিয়ে পুরাণ রচয়িতারা ভাবাতে পারলো কিভাবে বা পুরাণ রচয়িতারাই ভাবলো কিভাবে ?
যা হোক, এরপর প্রসেন সেই মনি নিয়ে বনে শিকার করতে যায় কিন্তু সিংহের হাতে মারা পড়ে। এই ব্যাপারটা কেউ জানতে পারে না, তার মানে বনে শিকার করতে প্রসেন একা গিয়েছিলো এবং এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, সে ছিলো খুবই সাধারণ একজন লোক; কারণ, মানুষ যখন সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠে তখন তার চারপাশে সব সময় সকল কাজে প্রচুর লোকজনের ভীড় থাকে, হয় তার কাজে সাহায্য করার জন্য, নয়তো সাহায্য পাওয়ার আশায়।
এই সামান্য লোক প্রসেনকৃর কাছে কৃষ্ণ যদি মণি চাইতো, তাহলে সে তা কিভাবে রক্ষা করতে পারতো ? কোনো ভরসায় সত্রাজিৎ তার ভাইকে ওই মণিটি দিয়েছিলো ?
আমরা জানি, সিংহের কোনো কিছু শিকারের একমাত্র কারণ তার পেটের ক্ষুধা অর্থাৎ খাদ্য।
কিন্তু মণির জন্য কোনো সিংহ কাউকে আক্রমন করে হত্যা করেছে, এমন ঘটনার কথা লিখা একমাত্র পুরাণ রচয়িতাদের পক্ষেই সম্ভব।
এই পুরাণ রচিয়তারা লিখেছে, প্রসেনকে হত্যা করে তার মাংস না খেয়ে, শুধু মনি মুখে সিংহ চলে যায় এবং সেই অবস্থায় জাম্ববান নামের ভাল্লুকের সাথে সিংহের দেখা হয়। সিংহ যে প্রসেনের মাংস খায় নি, তার প্রমান, পুরাণ মতে, কৃষ্ণ যখন তদন্ত করতে বনে যায়, তখন সেখানে প্রসেনের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে।
যাই হোক, আমরা জানি, সিংহ বনের রাজা, কোনো পশু তাকে পরাজিত করতে পারে না। কিন্তু এক ভাল্লুক তাকে পরাজিত করে ফেলে এবং তার কাছ থেকে সেই মণিটা দখল করে। মণি যে খুব মূল্যবান হয়, এই জ্ঞান বুদ্ধি আমাদের পুরাণ রচয়িতারা- সিংহ, ভাল্লুকের মতো হিংস্র প্রাণীদের মধ্যেও ঢুকিয়ে দিয়েছে।
ভাল্লুক থাকে এক গুহার মধ্যে, সেখানে সে তার বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য এক ধাত্রী নিযুক্ত করে রেখেছিলো, যা একমাত্র মনুষ্য সমাজই করে থাকে বা করতে পারে।
জাম্ববানকে মানুষ হিসেবে দেখানোর যদি এতই শখ পুরাণ রচয়িতাদের থাকে, তাহলে তাকে প্রথমে ভাল্লুক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কী দরকার ছিলো ?
নাকি কোনো মানুষের পক্ষে সিংহকে হত্যা করা সম্ভব নয় ব’লে, পুরাণ রচয়িতারা ভাল্লুককে দিয়ে প্রথমে সিংহকে হত্যা করিয়ে পরে তাকে মানুষ হিসেবে রূপান্তরিত করেছে; কিন্তু কোনো ভাল্লুকেরই কি সিংহকে হত্যা করার ক্ষমতা আছে ?
যাই হোক, জাম্ববানকে যুদ্ধে পরাজিত করে, কৃষ্ণ, সেই মণিটা দখল করে। এতে জাম্ববানের খুবই অপমানিত ও কৃষ্ণের সাথে শত্রুতা স্থাপিত হওয়ার কথা।
কিন্তু জাম্ববান ঘটায় উল্টো ঘটনা, কৃষ্ণের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়। এই ভাল্লুককে তো পুরাণ রচয়িতারা মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি দেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু মানব আচরণের পক্ষে এটা কি সম্ভব যে, শত্রুর হাতে নিজের কন্যাকে সমর্পণ করা ?
আর ভাল্লুকের মেয়ের তো শারীরিক আকার ভাল্লুকের মতোই হবে, তাকে কৃষ্ণ বিয়ে করতে যাবে কেনো ?
যদি বলা হয় জাম্ববতীর মনুষ্য রূপ ধারণ করার ক্ষমতা ছিলো, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এই ক্ষমতা ও মন নিয়ে সে কিভাবে বনে গুহার মধ্যে বাস করতে পারছিলো ?
কারো যখন ক্ষমতা ও বুদ্ধি হয় উন্নত সমাজে গিয়ে বাস করার, তখন সে নিম্ন সমাজ ব্যবস্থায় আর বাস করতে চায় না, এটাই মানব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য, তাহলে জাম্ববতী কিভাবে মানব মন নিয়ে গুহার মধ্যে বাস করতে পারে ? আবার জাম্ববানের ছেলে মেয়েকে দেখা শোনার জন্য যে ধাত্রীর কথা বলা হয়েছে, সেও মানব আকৃতির, তাহলে সে কিভাবে বনে, গুহার মধ্যে এক ভাল্লুকের সাথে বাস করে ?
কৃষ্ণ, স্যামন্তক মণি উদ্ধার করে জাম্ববতী বিয়ে করে দ্বারকায় ফিরে এসে সেই মনি সত্রাজিৎকেই দেয়। কৃষ্ণকে সন্দেহ প্রথমে সত্রাজিৎই করেছিলো, তাই তার ভয় ছিলো, কৃষ্ণ এ ব্যাপারে সত্রাজিৎকে প্রশ্ন করবে, এই ভয়ে সত্রাজিৎ তার মেয়ে সত্যভামাকে কৃষ্ণের সাথে বিয়ে দিয়ে একটা আপোষ মীমাংসা করে। এইভাবে পুরাণ মতে রুক্মিনী সহ কৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা হয় তিন।
কৃষ্ণ যে রাজ্য ও সম্পদলোভী ছিলো না, সেটা কংস হত্যার পর, মথুরায় কংসের পিতা উগ্রসেনকে রাজা করার মধ্য দিয়ে ই প্রমাণিত; তারপর কৃষ্ণ নিজেই দ্বারকা নগরী নির্মান করে রাজতুল্য হয়ে যায়, আর এই কৃষ্ণ, সামান্য এক মণির জন্য এত কাহিনী ঘটাতে যাবে, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য ?
রাজ্যের কোনো সম্পদ কি রাজার হাতের বাইরে ? এছাড়াও কৃষ্ণ, চেয়েছিলো বলে, বিয়ের আসর থেকে রুক্মিনীকে তুলে এনে বিয়ে করেছিলো, বিদর্ভ রাজার সমস্ত শক্তি কৃষ্ণের কিছুই করতে পারে নি। বলা হয়, সত্যভামা ছিলো খুবই সুন্দরী ও বহু রাজার পছন্দের পাত্রী, কৃষ্ণ যদি সত্যভামাকে বিয়ে করতেই চাইতো, তাহলে এমনিই করতে পারতো, সত্রাজিতের তাকে কৃষ্ণের হাতে সমর্পনের কোনো প্রয়োজনই পড়তো না।
প্রকৃতপক্ষে স্যামন্তক মণির এই ঘটনা যে একটা ডাহা মিথ্যা গল্প, আশা করছি আপনারা উপরের এই আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন।
২) সত্রাজিতের তিন কন্যার মধ্যে দুইটাকে আগেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, স্যামন্তক মণির ঘটনা মিথ্য বলে বাদ পড়ে আরও দুই জন সত্যভামা ও জাম্ববতী। তাহলে বাকি থাকে ৯ জন। এই ৯ জনের মধ্যে একজনকে বলা হচ্ছে মদ্ররাজ কন্যা সুশীলা, এবার এ ব্যাপারে কিছু বলা যাক।
মদ্ররাজের বোন হচ্ছে মাদ্রী, যার বিয়ে হয় পাণ্ডুর সাথে এবং যার দুই পুত্রের নাম হচ্ছে নকুল ও সহদেব।
এই সূত্রে মদ্ররাজ হলো নকুল ও সহদেবের মামা। এই মদ্ররাজ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো এবং নকুল ও সহদেবের মামা হিসেবে তার ব্যাপক পরিচিত ছিলো, কিন্তু সে যে কৃষ্ণেরও শ্বশুর সেই কথা কিন্তু মহাভারতের কোথাও একটুও বলা নেই।
তার মানে খুব সহজেই ধরে নেওয়া যায় যে, সুশীলার সাথে কৃষ্ণের বিবাহ একটা গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।
৩) সুশীলাকে বাদ দিলে বাকি থাকলো ৮।
এই ৮ জনকে বিষ্ণুপুরাণ রচয়িতা বা রচয়িতারা, কৃষ্ণের স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছেন বটে, কিন্তু এরা কোন দেশের, কার কন্যা, কবে বিয়ে হলো, এ সম্পর্কে কিন্তু কোনো তথ্য নেই। শুধু তাই নয়, কৃষ্ণের জীবনের প্রকাশিত ঘটনার সাথে এদের কোনো সংস্পর্শই নেই। এদের সন্তানদের নাম পুরাণ রচয়িতারা অবশ্য উল্লেখ করেছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, রুক্মিনীর পুত্র প্রদুম্ন ছাড়া আর কারো কোনো কাহিনী নেই।
৪)বিকৃত মহাভারতের মৌষল পর্বে অবশ্য শাম্বের নাম উল্লেখ আছে, আর এই শাম্বের মাতার নাম জাম্ববতী।
তাহলে এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, জাম্ববতী যদি কৃষ্ণের স্ত্রী হয়, তাহলে স্যামন্তক মণির ঘটনা সত্য এবং তাহলে সত্যভামা, এমন কি সত্যভামার অপর দুই বোনের সাথে কৃষ্ণের বিয়ের ঘটনাকেও সত্য বলে ধরে নিতে হবে।
কিন্তু গবেষণা বলছে, মহাভারতের মৌষল পর্বটি একটি প্রক্ষিপ্ত অংশ, মৌষল পর্বের যে ঘটনা, এমন কোনো ঘটনাই বাস্তবে ঘটে নি।
আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, পুরাণ বলছে, শাম্বের সাথে দুর্যোধনের মেয়ে লক্ষণার বিয়ে হয়েছিলো। এটা হলে কৃষ্ণ আর দু্র্যোধনের আত্মীয়তার সম্পর্ক হয় বেয়াই। এমন ঘটনা কি সম্ভব ? শাম্ব, কৃষ্ণের ছেলে হলে, অমন দুরাচারী দুর্যোধন, যাকে বিনাশ করার জন্য কৃষ্ণের এই মানবজন্ম ধারণ, তার মেয়ের সাথে কি কৃষ্ণ তার ছেলের বিয়ে দিতো ? আর ঘটনাচক্রে যদি এমন ঘটনা ঘটেই থাকতো, মহাভারতে কি তার কিছু মাত্র উল্লেখ থাকতো না ?
এসবের কোনো কিছুর উল্লেখ নেই, এজন্যই নেই যে শাম্ব বলে কেউ ছিলো না, তাহলে মৌষল পর্বের ব্যাপারটা কী ? আর কেনো এটাকে বলছি প্রক্ষিপ্ত ?
মৌষল পর্বের ঘটনা শুরু এভাবে-
একদিন বিশ্বামিত্র কন্ব ও নারদ মুনি দ্বারকায় বেড়াতে গেলে শাম্বের সমবয়সী দুইজন, শাম্বকে স্ত্রী বেশে সজ্জিত করে তাদের কাছে গিয়ে বলে, ইনি গর্ভবতী, আপনারা বলুন, ইনি কী প্রসব করবে ?
মুনিরা, তাদের এই ছল বুঝতে পেরে অভিশাপ দেয় যে, এ একটি লৌহ মুষল প্রসব করবে এবং সেই লৌহ মুষল যদু বংশ ধ্বংসের কারণ হবে। এরপর শুরু হয় ঘটনা, দ্বারকাতে নানা অশুভ ঘটনা ঘটতে থাকে এবং বিনা কারণে যাদবরা একে অপরকে আঘাত করে হত্যা করতে থাকে, এভাবে ধ্বংস হয় যদু বংশ, যা পুরোপুরি কাল্পনিক এবং বানোয়াট; কারণ, এভাবে কোনো রাজবংশ ধ্বংস হওয়া সম্ভব নয় এবং পৃথিবীর কোথাও কখনো তা ঘটে নি।
শাম্বের লৌহ মুষল প্রসবের ঘটনা যে পুরোটাই মিথ্যা, এবার তার কিছু প্রমাণ দিই। শাম্ব যদি বাস্তবে থাকতো, তাহলে সে সুভদ্রার ছেলে অভিমন্যুর চেয়ে বয়সে কিছু বড় হতো; কারণ পুরাণ রচয়িতারা অভিমন্যুর মা সুভদ্রার বিয়ের আগে কৃষ্ণের সাথে জাম্ববতীর বিয়ে দিয়েছে, ফলে অভিমন্যুর চেয়ে কয়েক বছর আগে শাম্বের জন্ম হওয়ার কথা।
যা হোক, এই অভিমন্যুর ছেলে পরীক্ষিতের বয়স যখন ৩৬, তখন যদুবংশ ধ্বংসের কথা বলা হয়। মহাভারতের যুদ্ধের বছর পরীক্ষিতের জন্ম এবং সেই সময় কৃষ্ণের বয়স ছিলো ৭০ বছর, তাহলে মহাভারতের যুদ্ধের সময় শাম্বের বয়স ছিলো কমপক্ষে ৩০/৩৫ এবং তার স্ত্রী সেজে মুণিদের সাথে রসিকতা করার সময় তার বয়স কমপক্ষে ৬৫ বা ৭০, এই রকম বয়সে কি কেউ ঐ ধরণের রসিকতা করতে পারে ? তাছাড়া শাম্ব তো মেয়ে নয় যে সে প্রসব করবে, তাহলে মুষল সে প্রসব করলো কিভাবে ? এই তথ্যগুলোই প্রমান করে শাম্বের মুষল প্রসবের কোনো ঘটনাই ঘটে নি। গান্ধারীর যে অভিশাপ ছিলো সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যদু বংশ ধ্বংস হবে, বাস্তবে হয়েছেও তাই। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে দ্বারকা নগরী ধীরে ধীরে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে।
আরো মজার ব্যাপার হলো, পুরো মহাভারতের কোথাও সেই স্যামন্তক মুনির কোনো কাহিনী না থাকলেও, এই মৌষল পর্বে তার কথা উল্লেখ আছে। এ থেকে এটা স্পষ্ট যে, যারা বিষ্ণুপুরাণে স্যামন্তক মুণির কাহিনী বানিয়ে কৃষ্ণের বহুবিবাহের সূচনা করেছিলো, তারাই মহাভারতে এই মৌষল পর্বটি টি প্রক্ষিপ্ত আকারে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
৫) মহাভারতের বন পর্বে সত্যভামার কথা একটু উল্লেখ আছে, এবার সেই ব্যাপারে একটু নজর দিই।
পাণ্ডবরা বনবাস কালে কাম্যকবনে এসে যখন বাস করতে থাকে, তখন সেখানে কৃষ্ণ ও সত্যভামা তাদেরকে দেখার জন্য যায়; তখন সেখানে কৃষ্ণ, দ্রৌপদীকে বলে, তোমার পুত্ররা দ্বারকাতে সুখেই আছে, তারা অভিমন্যু ও প্রদুম্নের কাছে অস্ত্র শিক্ষা করছে।
এখানে সত্যভামার স্থলে রুক্মিনীকে বসিয়ে দেখুন, সিচুয়েশনটা অনেক গ্রহনযোগ্য হবে। কারণ, মায়ের সামনে পুত্রের প্রশংসাই গ্রহনযোগ্য, সৎ মায়ের সামনে নয়। তাছাড়াও পুরাণে বলে, সত্যভামার ১০ পুত্র, তাদের কোনো খবর কোথাই নেই কেনো ?
শুধু নাম দিলেই কি তাদের অস্তিত্বকে প্রমান করা যায় ? কৃষ্ণের পুত্র হিসেবে প্রদুম্নের কথা যেমন মাঝে মাঝে এসেছে, তাহলে কৃষ্ণের আর কোনো পুত্র থাকলে তাদের ঘটনাগুলো কি মাঝে মাঝে আসতো না ? এ থেকে এটা ধারণা করা যায় যে, বনপর্বে সত্যভামার উপস্থিতি প্রক্ষিপ্ত, বাস্তবে এটা হবে রুক্মিনী।
সর্বশেষ খণ্ডন
এই কাহিনীর সূত্রপাত বিষ্ণুপুরাণে এবং তারপর তার বিস্তৃতি ভাগবত পুরাণে। না বুঝে পুরাণকে যেহেতু আমরা সনাতনীরা- বেদ, গীতার পরেই স্থান দিয়ে এসেছি, সেহেতু পুরাণে উল্লিখিত এই সব ঘটনাকে অস্বীকার করার ক্ষমতা আমাদের সনাতনীদের ছিলো না, আর পুরাণের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো জ্ঞানী লোকও খুব কম ছিলো, তাই এই ঘটনাগুলো ডালপালা মেলে কৃষ্ণ চরিত্রকে হাজার হাজার বছর ধরে কলুষিত করেছে এবং সনাতন সমাজ ধ্বংসের কারণ হয়েছে।
কৃষ্ণের জীবনে যে এই ধরণের কোনো ঘটনা, কখনোই ঘটে নি, তার আরেকটা প্রমাণ হলো- মহাভারতে এই ঘটনার কোনো উল্লেখ নেই, যেমন উল্লেখ নেই রাধার। যদি কৃষ্ণ এই ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতো, তাহলে যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের সময়, সেখানে উপস্থিত শিশুপাল, যে ছিলো কৃষ্ণের প্রধান শত্রু ও সমালোচক, সে কৃষ্ণ নিন্দার সময় এই ষোলহাজার একশ মেয়ের ঘটনার কথা অবশ্যই উল্লেখ করতো, কিন্তু শিশুপালও তা উল্লেখ করে নি, যেমন শিশুপাল উল্লেখ করে নি রাধার কথা।
কারণ, কৃষ্ণের জীবনে রাধা বলে যেমন কেউ ছিলো না, তেমনি তার জীবনে ষোল হাজার একশ মেয়েকে উদ্ধার ও বিয়ে করার ঘটনাও ঘটে নি।
কৃষ্ণের এই ষোলহাজার বিয়ে সংক্রান্ত বিষ্ণুপুরাণের আরেকটি আজগুবি তথ্য, যা আমরা বিশ্বাস করে এসেছি, তা হলো কৃষ্ণের ছিলো ১ লক্ষ ৮০ হাজার পুত্র। আবার এও বলা হয় কৃষ্ণের প্রত্যেক স্ত্রীর ছিলো ১০টি করে পুত্র, একটি করে কন্যা; এই সূত্রে কৃষ্ণের পুত্র কন্যা হওয়া সম্ভব ১,৭৭,১৮৮ জন।
কৃষ্ণের তথাকথিত প্রধান ৮ স্ত্রী এবং তাদের ছেলে মেয়েদের নামও লিখে রেখেছে। এই তালিকায়, অন্য সাত স্ত্রীর সন্তানদের কথা না হয় বাদ ই দিলাম, কৃষ্ণ ও রুক্মিনীর ছেলে প্রদুম্ন ছাড়াও অন্য ১০ জনের নাম আছে। তাহলে প্রদুম্ন ছাড়া অন্য কোনো পুত্রের নাম বা তার কাজের কোনো কিছুর উল্লেখ শুধু মহাভারতেই নয়, অন্য কোনো পুরাণেও উল্লেখ নেই কেনো ? রুক্মিনীর যদি ১০ পুত্র থাকে, তাহলে তো প্রদুম্নের মতো তাদেরও সমান গুরুত্ব কৃষ্ণের কাছে থাকা উচিত ছিলো। অথচ কৃষ্ণ বলেছে শুধু প্রদুম্নের কথা, কারণটা কী ? কারণটা হলো কৃষ্ণের পুত্র ছিলো একজনই সেটা প্রদুম্ন, আর প্রদুম্নের মা রুক্মিনীই ছিলো কৃষ্ণের একমাত্র স্ত্রী।
আমাদের এই পোস্টের উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং পরম পবিত্র কৃষ্ণচরিত্রের কলঙ্কমোচন করা। তিনি ছিলেন একাধারে পরম ধার্মিক, বেদজ্ঞ, দূরদর্শী রাজনীতিবিদ, শক্তিশালী যোদ্ধা এবং ধর্মের রক্ষক। তাকে মর্যাদাপুরুষোত্তম থেকে লীলাপুরুষোত্তম বানাতে গিয়ে আমরা তার চরিত্রে অনেক কালিমা লেপন করেছি। সময় এসেছে এসব পৌরাণিকতা ভুলে গিয়ে আসল কৃষ্ণচরিত্রকে জানা। এই লেখার মূল লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সাধুভাষা হতে চলিতভাষায় রূপান্তর ও ঈষৎ অলংকরণে A Mantra A Day.
আপনি যে পুরাণ থেকে রেফারেন্স দিয়েছেন সেই ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ সম্পর্কে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কিছু কিছু উক্তি তাঁর বিখ্যাত গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘কৃষ্ণচরিত্র’ থেকেই উল্লেখ করা হলো। সেগুলো নিম্নরূপ:-
“….মৎস্যপুরাণে, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ সম্বন্ধে এই দুইটি শ্লোক আছে;—
“রথন্তরস্য কল্পস্য বৃত্তান্তমধিকৃত্য যৎ।
সাবর্ণিনা নারদায় কৃষ্ণমাহাত্ম্যসংযুতম্ ||
যত্র ব্রহ্মবরাহস্য চরিতং বর্ণ্যতে মুহুঃ।
তদষ্টাদশসাহস্রং ব্রহ্মবৈবর্তমুচ্যতে ||”
অর্থাৎ, যে পুরাণে রথন্তর কল্পবৃত্তান্তাধিকৃত কৃষ্ণমাহাত্ম্যসংযুক্ত কথা নারদকে সাবর্ণি বলিতেছেন এবং যাহাতে পুনঃ পুনঃ ব্রহ্মবরাহচরিত কথিত হইয়াছে, সেই অষ্টাদশ সহস্র শ্লোকসংযুক্ত ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ।
এক্ষণে যে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ প্রচলিত আছে, তাহা সাবর্ণি নারদকে বলিতেছেন না। নারায়ণ নামে অন্য ঋষি নারদকে বলিতেছেন। তাহাতে রথন্তরকল্পের প্রসঙ্গমাত্র নাই, এবং ব্রাহ্মবরাহচরিতের প্রসঙ্গমাত্র নাই। এখনকার প্রচলিত ব্রহ্মবৈবর্তে প্রকৃতিখণ্ড ও গণেশখণ্ড আছে। যাহার কোন প্রসঙ্গ দুই শ্লোকে নাই।
অতএব প্রাচীন ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ এক্ষণে আর বিদ্যমান নাই। যাহা ব্রহ্মবৈবর্ত নামে চলিত আছে, তাহা নূতন গ্রন্থ।…..”
“….এখন আর উদাহরণ বাড়াইবার প্রয়োজন নাই, কৃষ্ণচরিত্র লিখিতে লিখিতে অনেক উদাহরণ আপনি আসিয়া পড়িবে। স্থূল কথা এই যে, যে গ্রন্থে অমৌলিক, অনৈসর্গিক, উপন্যাসভাগ যত বাড়িয়াছে, সেই গ্রন্থ তত আধুনিক।…..ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ পরিত্যাজ্য, কেন না, মৌলিক ব্রহ্মবৈবর্ত লোপপ্রাপ্ত হইয়াছে।”
“কৃষ্ণদ্বেষীদিগের নিকট যে কথা কৃষ্ণচরিত্রের প্রধান কলঙ্ক, এবং আধুনিক কৃষ্ণ-উপাসকদিগের নিকট যাহা কৃষ্ণভক্তির কেন্দ্রস্বরূপ, আমি এক্ষণে সেই তত্ত্বে উপস্থিত। কৃষ্ণের সহিত ব্রজ গোপীদের সম্বন্ধের কথা বলিতেছি। কৃষ্ণচরিত্র সমালোচনায় এই তত্ত্ব অতিশয় গুরুতর। এই জন্য এ কথা আমরা অতিশয় বিস্তারের সহিত কহিতে বাধ্য হইব।
মহাভারতে ব্রজগোপীদিগের কথা কিছুই নাই। সভাপর্বে শিশুপালবধ-পর্বাধ্যায়ে শিশুপালকৃত সবিস্তার কৃষ্ণনিন্দা আছে। যদি মহাভারত প্রণয়নকালে ব্রজগোপীগণঘটিত কৃষ্ণের এই কলঙ্ক থাকিত, তাহা হইলে, শিশুপাল অথবা যিনি শিশুপালবধবৃত্তান্ত প্রণীত করিয়াছেন, তিনি কখনই কৃষ্ণনিন্দাকালে তাহা পরিত্যাগ করিতেন না। অতএব নিশ্চিত যে, আদিম মহাভারত প্রণয়নকালে এ কথা চলিত ছিল না—তাহার পরে গঠিত হইয়াছে।…
….এই ব্রজগোপীতত্ত্ব মহাভারতে নাই, বিষ্ণুপুরাণে পবিত্রভাবে আছে, হরিবংশে প্রথম কিঞ্চিত বিলাসিতা প্রবেশ করিয়াছে, তাহার পর ভাগবতে আদিরসের অপেক্ষাকৃত বিস্তার হইয়াছে, শেষ ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে তাহার স্রোত বহিয়াছে।”
এখন আপনার দেওয়া রেফারেন্স গুলির কথায় আসি….
আপনার রেফারেন্স অনুযায়ী উক্ত সকল ঘটনাগুলি গোলকধামের, পৃথিবীর নয়, যা সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক। আপনি নিজেই উল্লেখ করেছেন, “…জন্মমৃত্যুশূণ্য গোলোকবাসিদের…”
এবং সেখানে রাধা, কৃষ্ণকে বলছে,
“….তোমার নিরন্তর মানব সংস্পর্শ হচ্ছে, এজন্য তুমি মানবযোনী প্রাপ্ত হও। গোলোক হতে ভারতে গমন কর।”🙄
এখন, গোলকধাম জন্ম-মৃত্যুশুন্য অথচ, রাধার কথা অনুযায়ী কৃষ্ণ সেখানে বারবার মানব সংযোগ করেছে!!! এই যুক্তিগুলি কি হাস্যকর নয়?😆😆😆
তাছাড়া আপনি কৃষ্ণ সহ আরো যে কটা চরিত্রের উল্লেখ করেছেন, সে সকলকেই রাধা গোলকধাম পরিত্যাগ করে পৃথিবীতে মনুষ্য জন্ম গ্রহণের জন্য অভিশাপ দিয়েছেন।
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সেসব চরিত্রের কেউই পৃথিবীবাসী মানুষ নন, নিছক এক গাঁজাখোর কবির/লেখকের কল্পিত গোলকধামে স্বপ্নবিলাস মাত্র।🥴🥴🥴
আপনার রেফারেন্স,👇👇👇
“…..গোলোকবিহারী কৃষ্ণ ঐ কোলাহল শুনতে পেয়ে এবং রাধাকে ক্রুদ্ধ জানতে পেরে, সেখান থেকে পালিয়ে যান। আর বিরজা রাধার আওয়াজ শুনে শ্রীকৃষ্ণকে পালাতে দেখে রাধার ভয়ে যোগবলে প্রাণত্যাগ করেন। বিরজার শরীর এক নদীতে পরিণত হয়। সেই নদীতে গোলোকধাম বর্তুলাকারে ব্যপ্ত হয়। ঐ নদী প্রস্থে দশযোজন বিস্তৃত ও অতি গভীর এবং দৈর্ঘ্যে তার চাইতে দশগুণ। ঐ নদী মনোহর ও বহুবিধ রত্নের আধার হয়েছিল।” এবং আরো অনেক….
😂😂😂এইসব হাস্যকর রেফারেন্সের মাধ্যমে আপনি কৃষ্ণকে কলঙ্কিত করতে চাচ্ছেন, যা আপনার বৃথা পরিশ্রম মাত্র।
ব্রহ্মবৈবর্তকার গাঁজা খেয়ে এইসব লিখেছেন কিনা জানিনা। কিন্তু আপনি 👉 ‘সংশয়’ 👈এর মতো ব্লগে আর্টিকেল লেখেন, অথচ এইসব হাস্যকর ও অলীক কল্পনাযুক্ত রেফারেন্স দেওয়ার আগে একটুও ভাবেন না যে, এইসব রেফারেন্স যুক্তিযুক্ত কিনা!!!🤔🤔🤔
এগুলো সব মিথ্যা । কিছু লোক হিন্দু ধর্ম কে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। কেউ বিশ্বাস করবেন না।প্রেম সবার সাথেই হয় নিজের পিতা মাতার সাথেও । মানুষ প্রেম আর কাম এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে না। শ্রীকৃষ্ণের
সবার সাথে আত্মার সম্পর্ক কাউর সাথে শারীরিক সম্পর্ক ছিল না। কিছু লোক এই বই দেখিয়ে আপনাদের বিভ্রান্ত করছে। সবাই সতর্ক হোন। আপনারা প্রেম আর কামের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন একদিন। সেদিন ভগবানকে বিচার করার জন্য নিজেরাই লজ্জিত বোধ করবেন।
DADA JODI BRAMHABOIBORTA PURANER PDF TA DITEN KHUB UPOKRITO HOTAM
Jemon radha krishna ke lompot boleche kano? Jei radha er praner cheyeo priyo chilo Shree Krishna.. Emonki krishnar mrityur age tar jeno mrityu hoy, setar jonyo debi saraswati er kache topossha korechilo… Tobe emon o onekbar hoyeche Krishna kokhono kokhono Radha ke vul bujheche abar kokhono kokhono Radha Krishna ke vul bujheche.. Jemon ta premik premikar moddhe hoy… Seta jante Radha Krishnar aro kichu book dekhte lagbe…