নাস্তিকতাই স্ট্যালিন কর্তৃক গনহত্যার জন্য দায়ী?
নাস্তিকবিদ্বেষীরা নাস্তিকতা নিয়ে যেসব অভিযোগ তোলেন তার কোনোটার সাথেই নাস্তিকতার কোনো যোগসূত্র নেই। তাদেরকে প্রায়ই এমন অভিযোগ তুলতে দেখা যায় যে, নাস্তিকতাই লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী কিংবা নাস্তিকতার কারণে গনহত্যা হয়!
কি হাস্যকর অভিযোগ রে বাবা! এরকম গোমূর্খের মতো অভিযোগ যারা তোলেন তারা যে অত্যন্ত ভ্রমাত্মক এবং তাদের মাথাভর্তি যে মরুভূমির গরম বালু ছাড়া কিছু নেই তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।
নাস্তিকতা মানে কি? নাস্তিকতা মানে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসের অভাব বা অবিশ্বাস। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না এমন একজন মানুষের করা খুন বা ধর্ষণের জন্য তার ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করাকে বা নাস্তিকতাকে দায়ী করা ঠিক ততোটাই হাস্যকর ও অর্থহীন যতোটা হাস্যকর ও অর্থহীন মূলা খায় না এমন একজন মানুষের করা খুন বা ধর্ষণের জন্য তার মূলা না খাওয়াকে দায়ী করা।
নাস্তিকবিদ্বেষীদের নাস্তিকতার বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ তোলার পেছনে উদ্দেশ্য কি? তারা মূলত বোঝাতে চান যে, নাস্তিকতা মানবসভ্যতার জন্য খুবই খারাপ বা ভুল এবং তা কঠোরভাবে দমন করা প্রয়োজন। তারা বোঝাতে চান, একজন নাস্তিক সমাজের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ, তাই সমাজে নাস্তিকদের কোনো জায়গা নেই। মূলত, কেউ নাস্তিক হলে তাকে যেন হত্যা করা হয় নয়তো, জেলে বন্দী করে রাখা হয়। নাস্তিকদের বিরুদ্ধে সেই জুলুম নির্যাতন উস্কে দিতেই নাস্তিকবিদ্বেষীদের নাস্তিকতার বিরুদ্ধে এই অর্থহীন অভিযোগ।
আমরা যদি ধরেও নেই যে নাস্তিকবিদ্বেষীদের অভিযোগটি সঠিক, আমরা যদি ধরেও নেই যে নাস্তিকতাই স্ট্যালিনের করা গনহত্যার জন্য দায়ী, তাহলে কি এটা প্রমাণিত হয় যে নাস্তিকরা ভুল বা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা ভুল? ‘নাস্তিকতা মানবসভ্যতার জন্য খারাপ’ এটি প্রমাণিত হলে কি ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়ে যাবে? আমরা যদি ধরেও নেই যে ইসলাম সমাজে শান্তি নিয়ে আসে আর নাস্তিকতা গনহত্যা, তাতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় না।
নাস্তিকবিদ্বেষীরা আসলেই বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বরে বিশ্বাস না করা একজন মানুষকে খুন/ধর্ষণের দিকে নিয়ে যায়। শাঁকচুন্নিতে বিশ্বাস না করা আপনাকে কোনদিকে নিয়ে যায়? যারা শাঁকচুন্নিতে বিশ্বাস করেন না তাদের করা যেকোনো অপরাধের জন্য কি তাদের শাঁকচুন্নিতে বিশ্বাস না করা দায়ী?
স্ট্যালিন একজন নাস্তিক হয়ে একটি খুনী শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেন। তাই দাবি করা হয়, নাস্তিকতা মানুষকে খুনী বানায়। স্ট্যালিন কেবল একজন নাস্তিক ছিলেন না, তিনি একজন পুরুষও ছিলেন। সেইসূত্রে আমরা কি দাবি করতে পারি যে, একজন পুরুষের ‘পুরুষত্ব’ কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী? বা, একজন পুরুষের পুরুষত্বই তাকে খুনী বানায়? বা, পুরুষ হওয়াটা একজন মানুষের ভুল? আমি যদি কোনো ইসলামী সন্ত্রাসের জন্য ইসলামকে দায়ী করি তাহলে আমাকে যারা বলবে, ‘তিনি সহিহ মুসলিম ছিলেন না, তার অপকর্মের দায় তার, ইসলামের নয়’, ঠিক তারাই বিশ্বাস করেন এবং প্রচার করেন যে, স্ট্যালিনের অপকর্ম সমূহের জন্য তার নাস্তিকতাই দায়ী!
আমি একজন নাস্তিক আর আমার ন্যায়পরায়ণ হওয়ার জন্য ঈশ্বর বা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করার কোনো প্রয়োজন নেই। নাস্তিকবিদ্বেষীদের সমস্যা, তারা এই বিষয়টা কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারে না যে ঈশ্বর বা ধর্মে বিশ্বাস না করে একজন মানুষ কিভাবে ন্যায়পরায়ণ হতে পারে। এই বিষয়টি বুঝার মতো মানসিক সামর্থ্য তাদের নেই। যারা নাস্তিকদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, আমার মনে হয় না তাদের অধিকাংশই এবিষয়ে কখনো গভীরভাবে ভেবে দেখেছেন যে ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে বা কোনো ধর্মে বিশ্বাস না করে কিভাবে একজন মানুষ ন্যায়পরায়ণ হতে পারে। অধিকাংশ ধর্মবিশ্বাসী আস্তিক মনে করেন, একজন মানুষ ধর্মের কারণে ভালো খারাপের পার্থক্য বুঝতে পারেন, ঈশ্বরের ভয়ে খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারেন। সেইজন্য তারা মনে করেন, যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না বা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না তারা যেকোনো সময় যেকোনো মানুষকে খুন করতে পারেন, নিজের মা-বোনকেও ধর্ষণ করতে পারেন। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, তাদের ঈশ্বর-বিশ্বাস বা ধর্মবিশ্বাসই তাদেরকে যেকোনো সময় যেকোনো মানুষকে খুন করা বা নিজের মা-বোনকে ধর্ষণ করা থেকে বিরত রাখে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ঈশ্বর-বিশ্বাস বা ধর্মবিশ্বাস না থাকলে তারা হয়তো যেকোনো সময় যেকোনো মানুষকে খুন করতে পারেন, নিজের মা-বোনকেও ধর্ষণ করতে পারেন।
ঠিক কি নাস্তিকদেরকে যেকোনো সময় যেকোনো মানুষকে খুন করা থেকে বিরত রাখে? ঠিক কি নাস্তিকদেরকে ধর্ষণ করা থেকে বিরত রাখে? আমি একজন নাস্তিক এবং আমি মানুষকে খুন করা থেকে বিরত থাকি, আমি মানুষকে ধর্ষণ করা থেকে বিরত থাকি। কারণ আমি তা করতে চাই না। ধর্মবিশ্বাসী আস্তিকরা মনে করেন, যদি আকাশ থেকে কোনো ঈশ্বর তাদের ওপর নজর না রাখেন তাহলে তারা যতখুশি খুন যতখুশি ধর্ষণ করতে পারেন, যা আমি করতে চাই না। আমার কোনো ইচ্ছা নেই কারো শ্বাসরোধ করার, আমার কোনো ইচ্ছা নেই কাউকে যন্ত্রণা দেয়ার। আমি শান্তিপূর্ণভাবে এবং নির্ভয়ে বেঁচে থাকতে চাই। আমার লক্ষ্য, আমার প্রতিবেশীদের সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করা ও তাদের সহযোগী হওয়া আর এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যেখানে আমি নির্ভয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে পারবো এবং আমার প্রতিবেশীরাও নির্ভয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে পারবে, যাদেরকে ছাড়া আমি নির্ভয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে পারবো না। আর সেজন্য কোনো ঈশ্বরে বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই।
নাস্তিকতা কি কোনোভাবেই কোনোকিছুর কারণ?
ধরুন, আমি একটি হ্রদে সাতার কাটতে চাই, তবে সেই হ্রদে সাতার কাটা নিষিদ্ধ। কেউ যদি সেই হ্রদে সাতার কাটে তাহলে তাকে ৩০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। সেই হ্রদে সাতার কাটার ওপর জরিমানা আরোপ করা হয়তো আমাকে সেই হ্রদে সাতার কাটা থেকে বিরত রাখবে। ঠিক একইভাবে, কোনো ঈশ্বর যদি আমাকে চুরি/খুন/ধর্ষণ ইত্যাদি অপকর্মের জন্য জাহান্নামের ভয় দেখায় তাহলে আমার দ্বারা সেইসব অপকর্ম হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।
ধর্মবিশ্বাসী আস্তিকরা মনে করেন, ‘ঈশ্বরে বিশ্বাস যদি একজন মানুষের দ্বারা খুন/ধর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে, তাহলে ঈশ্বরে অবিশ্বাস একজন মানুষের দ্বারা খুন/ধর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে’।
না, এরকম ধারণা একদমই ভুল। আমি যদি সেই হ্রদে সাতার কাটতে চাই তাহলে সেই হ্রদে সাতার কাটার ওপর জরিমানা আরোপ হওয়াটা আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারে। তবে, আমি যদি সেই হ্রদে সাতার কাটতে না চাই এবং সাতার কাটার জন্য যদি কোনো জরিমানা না থাকে, তাহলে জরিমানা না থাকাটা আমার মধ্যে সাতার কাটার ইচ্ছে তৈরি করবে না। আমি যদি জেনে থাকি, সেই হ্রদের নিচে প্রচুর ধনদৌলত লুকানো আছে, তাহলেই আমার সেখানে সাতার কাটার ইচ্ছা তৈরি হতে পারে। অবশ্যই কোনো বাধ্যকারী কারণ থাকতে হবে যা আমাকে বাধ্য করবে কাজটি করতে।
ঈশ্বরে বিশ্বাস না করাটা কোনোকিছুর জন্যই কোনো বাধ্যকারী কারণ নয়।
নাস্তিকতার মূলে কোনো নিয়ম-নীতি নেই, কোনো আদেশ-নিষেধ নেই, কোনো উপদেশাবলি নেই, কোনো বৈধতা-অবৈধতা নেই। আস্তিকরা এক বা একাধিক ঈশ্বরের অস্তিত্ব দাবি করে এবং নাস্তিকরা তাদের দাবি বিশ্বাস করে না। ‘আমি কোনো ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না’ এবং ‘আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বর বলে কিছু নেই’, এই কথা দুটির কোনোটাই কোনো নিয়ম বা আদেশ নয়। এই কথা দুটির কোনোটাই কোনোকিছুর বৈধতা বা অবৈধতা প্রকাশ করে না।
একজন নাস্তিক কি করলো না করলো তার দায়ভার নাস্তিকতার না। ঠিক যেমন একজন শাঁকচুন্নিতে অবিশ্বাসী কি করলো না করলো তার দায়ভার শাঁকচুন্নিতে অবিশ্বাস করার না।
স্ট্যালিনের সমস্যা তার নাস্তিক হওয়ায় নয়, বরং একজন খুনি সর্বগ্রাসী একনায়ক হওয়ায় ছিলো!
আরও পড়ুনঃ
সুন্দর ব্যবচ্ছেদ
ভাই নাস্তিকদের কোন নিয়ম নীতি নেই এটা কোন বিবেকবান মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? আমরা কি যেমন ইচ্ছা তেমন চলতে পারি এই ধারণা কি কোন সভ্য সমাজে গ্রহণ যোগ্য হবে।আমরা বলতে পারি আমরা নিরপেক্ষ নিয়ম নীতি যা মানব সভ্যতার বিপক্ষে যায় না সেই নিয়ম নীতি মেনে চলি।
“নাস্তিকবিদ্বেষী” শব্দটি একেবারেই যথার্থ! কোন অভিধানে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। সুতরাং, শব্দটি “কয়েন” করার জন্য একই সাথে ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা ও সাধুবাদ জানাই। আশা করি আপনারা এই শব্দটি আরো ব্যবহার করবেন এবং করাকে অনুপ্রাণিত করবেন।
এ লেখার শিরোনাম ও কভারে স্টালিনের ছবি দেখে যে কারোরই মনে হবে, এখানে সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক জীবনের সূক্ষ্ম তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে শিরোনামের দাবিটি খন্ডন করা হয়েছে।
অথচ এখানে না আছে স্টালিন সম্পর্কিত কোনো তথ্য,
না আছে তার নির্দেশে ঘটা হত্যাকান্ডের কোনো তথ্যভিত্তিক কারণ বিশ্লেষণ…!
পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণের এ ধরনের হাস্যকর চেষ্টা কাম্য নয়। বরং এ লেখার শিরোনাম দেয়া যায়—
“নাস্তিকতা ও আস্তিকতা সম্পর্কে দুটো কথা”….!
যথার্থ লিখছেন
ভাল লিখেছেন। যুক্তিগুলো বেশ ধারালো।
নাস্তিক্যবাদ- দায়মুক্তির ষ্ট্যালিনীয় ষ্টাইল
১.১
আপনার লেখা মনযোগ সহকারে পড়লাম। ষ্ট্যালিন একজন নাস্তিক ছিলেন একথা আপনি স্বীকার করেছেন তবে তার নাস্তিকতার বিশ্বাস তাকে কোনভাবে প্রভাবিত করেনি বলে নানান কৌশলে প্রমান করার চেষ্টা করেছেন এবং তার বিশ্বরেকর্ড করা খুন-খারাবীর দায়-মুক্তির উপায় খুঁজে পাবার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। আপনার লেখার মধ্যে একটা সুক্ষ্ম ইংগিত আছে। সেটা হলো মানুষের প্রতি নাস্তিক্যবাদের ধারনা। যে ধারনা মানুষকে সাধারন জন্তু-জানোয়ার ছাড়া আর কিছুই মনে করে না। এই যেমন, গরু-ছাগল, কুকুর বিড়াল, বাঘ-সিংহ ইত্যাদি। জানোয়ার বা চতুষ্পদ জীবের কোন বিবেক-বুদ্ধি নাই, কোন দাশর্নিক দৃষ্টি-ভঙ্গিও নাই। আছে শুধু প্রবৃত্তির কামনা আর বাসনা। ক্ষুধা লাগলে খাবে, কামভাব প্রবল হলে সামনে বিপরীত লিঙের কাউকে পেলেই যৌন বাসনা পুরন করে নেবে। ডানে-বামে কে আছে, আলো-অন্ধকার কোন কিছুই বিবেচ্য নয়। এক কথায় প্রবৃত্তিই জন্তু জীবনের চালক। বিবেক সেখানে অনুপস্থিত। মুক্তচিন্তা সেখানে অলিক।
১.২
জীব-জন্তুর মনে ঈশ্বরের ধারনা কি, কেমন সেটা তা কি আপনি জানেন? নিশ্চয়ই না। জানোয়ারেরা আস্তিকতা-নাস্তিকতা নিয়ে কি ভাবে তাও আপনি বুঝতে পারবেনা। তাই জানোয়ারের সমাজে খুন করলেও খুনের শাস্তি নাই, ধর্ষন করলেও ’রজম’ নাই, চুরি করলেও হাত কাটার ভয় নাই, শাসন-অপশাসন নাই, বখে যাওয়া-বিটলামী, ইঁচড়ে পাকামি নাই, মনিবেরর খেয়ে বেইমানী নাই। ওদের সমাজে ওরা যা করে তাই সঠিক। জঙ্গলে কোন ভাল-মন্দের পার্থক্য নাই। এতকিছুর বালাই না থাকার একটাই কারন পশুর আছে পাশবিকতা আর সৃষ্টিগত ও চিন্তার সীমাবদ্ধতা । যার জন্য ওরা দেশ দখল করতে পারেনা, ওরা একে অন্যকে বিচারের নামে ঠান্ডা মাথায় প্রয়োজন না থাকা সত্তে্বও খুন করেনা।
১.৩
ন্যায়-অন্যায়, বিচার-অবিচার, বিবেক-বুদ্ধির যত ঝামেলা এই মানব সমাজে। তাই যত শালিস আর বিচার সব মানুষকে ঘিরেই। এজন্যই আইন-আদালত, হাই-কোর্ট সুপ্রিম কোর্ট। আফ্রিকার জঙ্গলে এমন কোন শালিস-বিচারের ব্যবস্থা নাই। যদি থাকত তাহলে আজকে আমরা আদালতের কাঠগড়ায় অনেক বাঘ, সিংহ, ভাল্লক আর নেকড়েকে দেখতে পেতাম। কিন্তু তা হয়না। যত বিচার সব মানুষের জন্য। কারন একটাই- মানুষ বিবেক ও বিশ্বাস দ্বারা পরিচালিত হয়। একটা বাঘ যদি সুন্দরবনের ১০০ টা বানর খেয়ে ফেলে আর একটা পুরুষ যদি কোন যুবতী নারীকে কটুক্তি করে তাহলে ব্যাপার দুটাকে কি আপনারা একই দৃষ্টিকোন থেকে দেখবেন? নিশ্চয়ই না।
১.৪
একই অপরাধ কিন্তু বিচার দুই রকমের হওয়ার কারনটা কি? কারন একটাই মানুষ তার বিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত, বিশ্বাসের দূর্বলতা তাকে অপরাধ করতে সাহায্য করেছে কিংবা প্রবৃত্তির তাড়নাকে সে বিবেক দ্বারা দমন করতে পারেনি। বাঘ যেমন বানর খাওয়ার সময় শুধু প্রবৃত্তিরই দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল সে বিবেকের শাসনকে অবজ্ঞা করেনি, কারন তারতো বিবেক নাই। ঠিক একইভাবে সভ্য সমাজে কোন পুরুষ যদি কোন যুবতী নারীকে মন্দ কথা বলে তাহলে অবশ্যই সেটা অপরাধ বলে গন্য হবে। ঠিক একই ভাবে ষ্ট্যালিন একজন মানুষ ছিলেন এবং তিনি আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতই অন্যান্য মানবিক গুনাবলীর পাশাপাশি বিশ্বাস দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন এবং তার বিবেক তাকে লক্ষ্য লক্ষ মানুষ হত্যা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
১.৫
মানুষের বিবেক পরিচালিত তার বিশ্বাস দ্বারা। ষ্ট্যালিন তার নিজের জীবনকে ভালোবাসতেন, তিনি নিজেকে আরো ভালো দেখার আশায়, জীবনকে উপভোগ আর ভবিষ্যতকে সুন্দর করার জন্য মানুষ মেরে পথের বাধা দূর করতে চেয়েছিলেন। যদি ষ্ট্যালিনের সামনে এমন কোন শক্তি থাকত যে তাকে চ্যালেঞ্জ করত এবং তার এই অন্যায় অপকর্মের জন্য শিরোচ্ছেদ নিশ্চিত করত তাহলে ষ্ট্যালিন একাজে সাহস পেতেন না। ষ্ট্যালিন দুনিয়ার জীবনে নিজেকে অপ্রতিরোধ্য ভেবেছিল কিন্তু সে জানতো না যে, ইশ্বর তাকে বিচারের মুখোমুখি করবেন। ষ্ট্যালিন ২০ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করে আপাত দৃষ্টিতে পার পেলে কি হবে? ঈশ্বর তাকে প্রত্যেকটা মানুষের প্রান হরনের সমস্ত দুঃখ ও কষ্ট একটা-একটা করে কড়ায়-গন্ডায় ঠিকই বুঝিয়ে দেবেন। ঈশ্বর অবিশ্বাস করার মাধ্যমে ষ্ট্যালিন এই জঘন্য অপকর্মের জন্য দায়-মুক্তির মিথ্যা অজুহাত তৈরি করে নিয়েছিল। ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাস তাকে সব রকম শাস্তির ভয় থেকে নির্ভয় করেছিল যার কারনে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষের রক্ত তাকে এই অপকর্ম থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
১.৬
মানুষের জীবনের সর্বপ্রথম এবং মৌলিক বিশ্বাস হলো ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস অথবা অবিশ্বাস। ঈশ্বরের প্রতি মানুষের এই ধারনা বা বিশ্বাসই তার পরবর্তী সকল বিশ্বাস ও বিবেককে নিয়ন্ত্রন করে। এই একই কারনে সবকিছুকে পাশে রেখে আপনার আস্তিকতা ছেড়ে নাস্তিকতার মিথ্যা মরিচিকার পিছনে ছুটছেন। ঠিক স্ট্যালিন যেমন ২০ লক্ষ মানুষ মারার পথ মসৃন করতে ইশ্বকে সরিয়ে দিয়েছিল নিজের মন থেকে।
এখন হয়ত আপনারা কথা ঘুরিয়ে বলবেন ষ্ট্যালিন মানুষ ছিলনা- সে ছিল একটা বনের বাঘ। তাহলেই স্ট্যালিনের জন্য দায়মুক্তির রাস্তা খুঁজে পাবেন। আর মানুষকে মানুষ নয়, জানোয়ার বানাতে পারাই নাস্তিকতা বড় স্বার্থকতা। আর এখানেই আছে সব অপকর্মের দায়-মুক্তি- ঠিক স্ট্যালিনের মত।
’আপনি অধম তাই বলে আমি উত্তম না হইব কেন?’
১.৭
’’যারা ঈমানদার তারা যে, জেহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা জেহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।’’
সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত: ৭৬
apnake ei study tar link debar jonn aslam. ora pelo je nastik ra astik der theke beshi moral.
https://journals.plos.org/plosone/article?id=10.1371/journal.pone.0246593
accha,apni ekta soja hisab den. atheism ba secularism er follow er der kono morality na secular country gula te crime rate kom keno?
@Hasan vai, superb writing. Loved the concept.
অত্যন্ত সুন্দর ও যুক্তিপূর্ণ | যারা নীতি, নৈতিকতার একমাত্র উৎস ধর্ম বলে চিৎকার করছে তাদের জন্য কিছু প্রশ্ন
১) বর্তমান পৃথিবীর 90 থেকে 95 শতাংশ মানুষ ধার্মিক আর আমরা জানি যে ধার্মিকরা নীতি বোধ সম্পন্ন ঈশ্বরের ভয়ে (ভয় করেনা, উচিত নয় বলে করেনা তা নয়) অন্যায় করেন না | তার মানে দাঁড়ালো যে বর্তমানে জেলএ বন্দি থাকা অপরাধীদের সবাই (বা প্রায় সবাই) নাস্তিক | তাই তো ? পরিসংখ্যান উল্টো কথা বলে | আমেরিকার জেলএ বন্দি থাকা অপরাধীদের মাত্র 0.07 শতাংশ নাস্তিক | একটু অঙ্ক জানলে বুঝতে পারবেন যে ধার্মিকরা নাস্তিকদের থেকে প্রায় ১০০ গুন্ বেশি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত | ঈশ্বর ভীতি গোল্লায় গেলো যে !
২) 150 কি তার বেশি বছর পিছিয়ে যান | তখন নাস্তিকদের সংখ্যা 1 শতাংশও ছিল না | তার মানে তখন কোনো অপরাধ থাকার কথা নয় | অথচ ইতিহাস বলে মধ্যে যুগে মানবিধাকার-এর সবথেকে বেশি খারাপ অবস্থা ছিল |
৩) মানলাম স্তালিন নাস্তিক ছিল তাই অত মানুষ মারতে পেরেছিলো | একটু ইতিহাস ঘাটুন, দেখবেন আদি কাল থেকে আজ পর্যন্ত হাজার হাজার রাজা, বাদশাহ, নবাব, জমিদার লক্ষ লক্ষ মানুষ মেরেছে , অত্যাচার করেছে, মহিলাদের ধর্ষণ করেছে, ঠকিয়ে জমি কেড়ে নিয়েছে, হারেম বানিয়ে শত মহিলাকে আটকে রেখেছে | তারা সবাই কিন্তু কঠোর ধার্মিক ছিলেন | কোনো না কোনো ঈশ্বরের একনিষ্ঠ উপাসক ছিলেন | কারণ নাস্তিক রাজা, বাদশাহ ইতিহাসে অত্তান্ত দুর্লভ, মাত্র কয়েকজন ছিলেন | এই সব রাজারা ঈশ্বরকে কাঁচকলা পরোয়া করতেন | আশাকরি google করে একটু ইতিহাসটা খুঁজে নিতে পারবেন |
৪) ইতিহাস ছেড়ে এবার একটু বর্তমানের আসা যাক | নীতি নৈতিকতার সমস্যাটা বর্তমানে আরো অদ্ভুত | একদল যেটাকে ঈশ্বরের বারণ বলে মনে অন্য দল সেটাকে ঈশ্বরের নির্দেশ মনে করে | একদল যেটাকে জাহান্নামের পথ বলে মনে অন্য দল সেটাকে জান্নাতের সরাসরি (shortcut) রাস্তা মনে করে | কোনটা নীতি কোনটা দুর্নীতি সব ঘেটে গুলিয়ে একাকার | তাই আমরা দেখি এক চূড়ান্ত ধার্মিককে শরীরে বোমা বেঁধে সিনেমা হলএ ফাটিয়ে দিতে | তাই আমরা দেখি অন্য এক চূড়ান্ত ধার্মিককে রবিবার সকালে চার্চএ অথবা শুক্রবার দুপুরে মসজিদএ AK-47 হাতে যথেচ্ছ গুলি বৃষ্টি করতে | বাচ্চা ছেলেদের দিয়ে মানুষের গোলাকাটার দৃশ্য রেকর্ড করে upload করতে | কারণ এসব নাকি ধার্মিকের পবিত্র কর্তব্য | কোনো নাস্তিক এ কাজ করেছে বলে আজও শোনা যায়নি | যাদের পরজন্মে দোজখের আগুনে পোড়ানো ভয় তারই এ জন্মে এসব করে |
৫) সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা যেগুলোতে অতি অতি বড়ো মিথ্যাবাদী ধার্মিকও বলবে না যে নাস্তিকরা বিন্দুমাত্র জড়িত কিন্তু ধার্মিকরা যে জড়িত তা সারা বিশ্ব জানে – Sirya-র যুদ্ধ, Yemen-এর যুদ্ধ, Sundan ভাগ ও South Sudan এর গৃহযুদ্ধ, Afghanistan এর যুদ্ধ, Israel Palestine যুদ্ধ |
৬) কট্টর ইসমালিক দেশগুলোতে তো আইন, আদালত, পুলিশ, জেল কিছুই থাকা উচিত নয় কারণ গোড়া ধার্মিকরা তো কোনোদিন অন্যায় করবে না |
ধর্ম গ্রন্থে পাতার পর পাতা নৈতিকতার নির্দেশ দিয়ে যে কোনই তফাৎ তৈরী করা গেলো না সেটা উপরের উধারণগুলো থেকে পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিত |
Question:What has caused more deaths, atheism or religion? Answear: Nobody has been killed in the name of atheism. And before you mention Stalin, Mao, or Pol Pot, please remember that their victims were not in the name of atheism. Stalin,Mao,Pol Pots victims were killed in the name of the Communist revolution. And peoples who say communism is atheism, i wanna to tell them No. Communism is the struggle against the bourgeoisie towards a classless society by means of the workers taking control of the means of production – by arms, if necessary. The forms of communism propagated by Stalin, Mao and Pol Pot took the form of a pseudo-religion – especially those of Mao and Pol Pot, in which they were elevated as objects of worship to near godhood.