মাস্ক পরে, কাতারে ফাঁক রেখে সালাত/ নামাজ পড়া যাবে কি?
ছোঁয়াচে রোগের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হাদিসগুলো বিকৃতির চেষ্টা করার পরে এবারে করোনার দোহাই দিয়ে মুমিন ভাইরা ‘মুখে মাস্ক লাগিয়ে’ ‘কাতারের মাঝে এক/দেড় মিটার করে ফাঁক রেখে’ জামাতে সালাত/ নামাজ পড়ছেন মসজিদে গিয়ে। কিন্তু এভাবে নামাজ পড়া কি ইসলামসম্মত?
আসুন দুইটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জেনে নেই।
সূচিপত্র
- 1 মাস্ক পরে নামাজ পড়া যাবে কি?
- 2 কাতারে ফাঁক রেখে, কাতার পূর্ণ না করে সালাত/ নামাজ পড়া যাবে কি?
- 2.1 কাতার সোজা করা সালাত পূর্ণ করার অন্তর্ভুক্ত
- 2.2 কাতারে ফাঁক বন্ধ করে কাতার পূর্ণ করলে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়
- 2.3 কাতারে কাঁধে কাঁধ মেলালে এবং কাতারে ফাঁক রাখলে
- 2.4 ফেরেশতাদের মত গায়ে গায়ে লেগে কাতারবদ্ধ হতে হবে
- 2.5 কাতার পূর্ণ করার জন্য কাঁধ নরম করে দাঁড়াতে হবে
- 2.6 কাতারে কাঁধে কাঁধ, হাঁটুর সাথে হাঁটু, গোড়ালির সাথে গোড়ালি মেলানো
- 2.7 শুধুমাত্র শেষ কাতারই অপূর্ণ থাকতে পারে
- 2.8 কাতার সোজা না করলে আল্লাহ মুখমণ্ডল বিকৃত করে দেবেন
- 2.9 কাতারে ফাঁক থাকলে শয়তান প্রবেশ করে
- 3 সংযুক্তি
মাস্ক পরে নামাজ পড়া যাবে কি?
নামাজের সময়ে মুখ ঢাকা নিষেধ
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন / গ্রন্থঃ সুনানে ইবনে মাজাহ / অধ্যায়ঃ ৫/ সলাত কায়িম করা ও নিয়ম-কানুন
হাদিস নম্বরঃ ৯৬৬
পরিচ্ছেদঃ ৫/৪২. সলাতের মাকরূহসমূহ
৩/৯৬৬। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোন ব্যাক্তিকে সালাতরত অবস্থায় তার মুখমন্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন।
সুনানে আবু দাউদ
২ সালাত (নামায)
অনুচ্ছেদ-৮৬
সলাতরত অবস্থায় কাপড় ঝুলিয়ে দেয়া
৬৪৩/ আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের সময় কাপড় উপর থেকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিতে ও মুখ ঢেকে রাখতে নিষেধ করেছেন।
ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘ইস্ল ‘আত্বা (রহঃ) হতে আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের সময় কাপড় ঝুলিয়ে দিতে নিষেধ করেছেন।
সিজদাহর সময়ে অবশ্যই নাক এবং কপাল মাটিতে লাগাতে হবে
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন / গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ১০/ আযান
হাদিস নম্বরঃ ৭৭৫
পরিচ্ছেদঃ ৫২৫. নাক দ্বারা সিজদা করা।
৭৭৫। মু’য়াল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। কপাল দ্বারা এবং তিনি হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে এর অন্তর্ভুক্ত করেন, আর দু’ হাত, দু’ হাঁটু, দু’ পায়ের আঙ্গুলসমূহ দ্বারা। আর আমরা যেন চুল ও কাপড় না গুটাই।
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন / গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ১০/ আযান
হাদিস নম্বরঃ ৭৯৭
পরিচ্ছেদঃ ৫৪২. সালাত শেষ হওয়া পযন্ত যিনি কপাল ও নাকের ধুলাবালি মোছেন নি।
আবূ আবদুল্লাহ্ (রহঃ) বলেন, আমি হুমায়দী (রহঃ)-কে দেখেছি যে, সালাত শেষ হওয়ার আগে কপাল না মুছার ব্যাপারে এ হাদীস দিয়ে দলিল পেশ করতেন।
৭৯৭। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পানি ও কাদার মধ্যে সিজদা করতে দেখেছি। এমন কি তাঁর কপালে (মুবারক) কাদামাটির চিহ্ন লেগে থাকতে দেখেছি।
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন / গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ১৯/ তাহাজ্জুদ বা রাতের সালাত
হাদিস নম্বরঃ ১১৩৫
পরিচ্ছেদঃ ৭৬৫. সালাতে সিজদার জন্য কাপড় বিছানো ।
১১৩৫। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতাম। আমাদের কেউ মাটিতে তার চেহারা (কপাল) স্থির রাখতে সক্ষম না হলে তার কাপড় বিছিয়ে উহার উপর সিজ্দা করত।
কাতারে ফাঁক রেখে, কাতার পূর্ণ না করে সালাত/ নামাজ পড়া যাবে কি?
কাতার সোজা করা সালাত পূর্ণ করার অন্তর্ভুক্ত
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কাতারগুলো সোজা কর। কেননা কাতার সোজা করা সালাত পূর্ণ করার অন্তর্ভুক্ত।
সহিহ মুসলিম (তাওহীদ প্রকাশনীঃ ৮৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮৫৭)
সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ ৯৯৩)
সুনানে আবু দাউদ (তাওহীদ ৬৬৮)
কাতারে ফাঁক বন্ধ করে কাতার পূর্ণ করলে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যারা কাতারগুলো মিলিয়ে রাখে তাদের প্রতি আল্লাহ এবং তার ফেরেশতাগন রহমত বর্ষণ করেন। যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ ৯৯৫)
কাতারে কাঁধে কাঁধ মেলালে এবং কাতারে ফাঁক রাখলে
ইবনু উমার ও আবূ শাজারাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে নাও, পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও এবং উভয়ের মাঝখানে ফাঁক বন্ধ কর আর তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও। বর্ণনাকারী ঈসার বর্ণনায়, “তোমাদের ভাইয়ের হাতে” শব্দগুলো নেই। (তিনি আরো বলেন,) শাইত্বানের জন্য কাতারের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহও তাকে তারঁ রহমাত দ্বারা মিলাবেন। আর যে ব্যক্তি কাতার ভঙ্গ করবে, আল্লাহও তাকে তাঁর রহমাত হতে ছিন্ন করবেন।
ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ শাজারার নাম হচ্ছে কাসীর ইবনু মুর্রাহ। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) আরো বলেনঃ “তোমাদের ভাইদের হাতে নরম হয়ে যাও” এর অর্থ হচ্ছে, কোন ব্যক্তি এসে কাতারে প্রবেশ করতে চাইলে প্রত্যেক ব্যক্তিই তার জন্য নিজ নিজ কাঁধ নরম করে দেবে, যেন সে সহজে কাতারে শামিল হতে পারে।
সুনানে নাসাঈ (তাওহীদ ৮১৯)
সুনানে আবু দাউদ (তাওহীদ ৬৬৬)
ফেরেশতাদের মত গায়ে গায়ে লেগে কাতারবদ্ধ হতে হবে
জাবির বিন সামুরা আস-সুওয়ায়ী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সাবধান! তোমরা এমনভাবে কাতারবন্দী হও যেভাবে ফেরেশতাগণ তাদের প্রভুর নিকট কাতারবন্দী হন। রাবী বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ফেরেশতারা তাদের প্রভুর সামনে কিভাবে কাতারবন্দী হন? তিনি বলেন, তারা প্রথম সারিগুলো আগে পূর্ণ করেন এবং সারিতে গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ান।
সহিহ মুসলিম (তাওহীদ ৮৫৪, ইফা ৮৫০)
সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ ৯৯২)
সুনানে আবু দাউদ (তাওহীদ ৬৬১)
কাতার পূর্ণ করার জন্য কাঁধ নরম করে দাঁড়াতে হবে
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যকার উৎকৃষ্ট হচ্ছে ঐসব লোক, যারা সালাতের মধ্যে নিজেদের কাঁধ বেশি নরম করে দেয়।
সুনানে আবু দাউদ (তাওহীদ ৬৭২)
কাতারে কাঁধে কাঁধ, হাঁটুর সাথে হাঁটু, গোড়ালির সাথে গোড়ালি মেলানো
আবূল ক্বাসিম আল-জাদালী থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমবেত লোকদের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারসমুহ সোজা কর। আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দাঁড়াও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নু’মান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাঁটুর সাথে নিজের হাঁটু এবং তার গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালি মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম, কাতারসমূহ সোজা করার নির্দেশ বাক্য যোগে। আর কাঁধের সাথে কাঁধ মিলানোর বাক্যটি বুখারী তা’লীক্বভাবে বর্ণনা করেছেন আনাস সূত্রে।
সুনানে আবু দাউদ (তাওহীদ ৬৬২)
শুধুমাত্র শেষ কাতারই অপূর্ণ থাকতে পারে
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সর্বাগ্রে প্রথম কাতার পূর্ণ করবে, তারপর তার পরবর্তী কাতার পূর্ণ করবে। এরপর কোন অসম্পূর্ণতা থাকলে তা যেন শেষ কাতারে হয়।
সুনানে আবু দাউদ (তাওহীদ ৬৭১)
কাতার সোজা না করলে আল্লাহ মুখমণ্ডল বিকৃত করে দেবেন
নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাতারগুলো সোজা করে দিতেন, মনে হত তিনি যেন কামানের কাঠ সোজা করছেন। অতঃপর তিনি স্বস্থানে দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহ্রীমা বলতে যাবেন, এমন সময় দেখলেন এক ব্যক্তি কাতার থেকে সামনে এগিয়ে আছে, তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহর বান্দাগণ তোমাদের কাতার সোজা কর, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মুখ-মণ্ডল বিকৃত করে দিবেন।
সহিহ মুসলিম (তাওহীদ ৮৬৫, ইফা ৮৬১)
সুনানে ইবনে মাজাহ (তাওহীদ ৯৯৪)
সুনানে আবু দাউদ (তাওহীদ ৬৬৩)
কাতারে ফাঁক থাকলে শয়তান প্রবেশ করে
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কাতারে পরস্পর মিশে দাঁড়াও। ঘন করে কাতার বাঁধো এবং কাতারগুলোকে পরস্পর নিকটবর্তী রাখ। কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে দাঁড়াও। সেই মহান সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ আছে, কাতারের মধ্যেকার ফাঁকে ছোট ছোট বকরীর (ছাগল) মত আমি শয়তানকে প্রবেশ করতে দেখছি।
সুনানে নাসাঈ (তাওহীদ ৮১৫)
সুনানে আবু দাউদ (তাওহীদ ৬৬৭)
(কালো ছোট জাতের ছাগল যা ইয়েমেনে পাওয়া যায়)
সহিহ বুখারি, মুসলিম, ইবনু মাজাহ, আহমাদ, দারেমী
সংযুক্তি
যারা বলবেন ওজর থাকলে মুখে মাস্ক লাগানো জায়েজ আছে, এটা যে ওজর তারা সেটা কোথায় পেয়েছেন? স্বপ্নে?
অসুস্থতা ওজর হয় মানে যারা অলরেডি অসুস্থ, কিন্তু ‘মহামারীতে অসুস্থ হবার ভয়‘ কখনই ওজর হয়না কারণ ‘মহামারী মুসলিমদের জন্য নেয়ামত এবং আক্রান্ত হয়ে মরলে শহীদ!‘ (সহিহ বুখারি ৩৪৭৪) এছাড়াও ছোঁয়াচে রোগের অস্তিত্বই ইসলামে অস্বীকার করা হয়েছে। আর রোগ দেয়ার মালিক আল্লা নিজে। সুস্থ মানুষের জন্য রোগের ভয় ওজর হলে সবার জন্য সকল অসুখের ভয়ই ওজর হত। আর কাতারের বেলায় কোনোরকম ওজরের স্থানই নেই।