ইসলামঅবশ্যপাঠ্যপ্রতিক্রিয়া

উম্মে হানী- মুহাম্মদের গোপন প্রণয়

Table of Contents

ভূমিকা

নবী মুহাম্মদ যখন ইসরা বা মিরাজে যান, অনেক ইসলামিক রেফারেন্সেই দেখা যায়, উনি সেই রাতে অবস্থান করছিলেন উম্মে হানী নামক এক নারীর বাসায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কে ছিলেন এই নারী? এবং নবী মুহাম্মদই বা কেন এই নারীর গৃহে সেই রাতে অবস্থান করছিলেন? সেই রাতে নবী মুহাম্মদ এবং উম্মে হানীর সাথে আর কে কে ছিল? নবী মুহাম্মদের সাথে তার সম্পর্কই বা কী ছিল? ইসলামের কঠোর এবং কঠিন বিধান অনুসারে, স্বামী বা আপন ভাই ছাড়া আর কারো সাথে মেলামেশা, দেখা সাক্ষাত, ইত্যাদি একজন ইমানদার মুমিনের জন্য সম্পূর্ণ গর্হিত কাজ। অর্থাৎ যাদের সাথে বিবাহ বৈধ, তাদের সাথে মেলামেশা, দেখাসাক্ষাৎ এমনকি কথাবার্তাতেও রয়েছে নানাবিধ কঠোর ও কঠিন নিষেধাজ্ঞা। অথচ, ইসলামের রেফারেন্সেই দেখা যায়, বিবাহ বৈধ এমন নারীর বাড়িতে নবী রীতিমত রাত্রিযাপন করতেন। মুসলিমদের পক্ষ থেকে অনেকে যুক্তি দেখাবেন, তখনো পর্দার বিধান নাজিল হয় নি, তাই নবী এমনটি করেছেন। কিন্তু পর্দার বিধান নাজিলের পরেও নবী একইভাবে উম্মে হানীর সাথে দেখাসাক্ষাৎ করেছেন। মেলামেশা খানাপিনা সবই করেছেন। সেই সব দলিল প্রমাণ ইসলামের গ্রন্থ থেকেই পাওয়া যায়। তাহলে?

আবার, ইসলামের প্রাথমিক সময়ে যা হালাল ছিল, পরে হারাম হয়েছে, এরকম কোন বিষয়ের বিধান নাজিলের আগেও নবী সেই কাজটি করেছেন, অনেক ইসলামিক স্কলারই তা স্বীকার করেন না। যেমন, অধিকাংশ ইসলামিক স্কলার মনে করেন, কোরআন নাজিলের পূর্বেও নবী কখনো জিনা করেন নি, মদ খান নি, মূর্তি পুজাও করেন নি। তাহলে সেই সূত্র থেকে ধরে নিতে হয়, কোরআনে পর্দার বিধান নাজিলের আগেও তিনি বিবাহ বৈধ এমন নারীর সাথে মেলামেশাও করেন নি। তাহলে উম্মে হানীর সাথে তার সম্পর্ক কী ছিল, তার সাথে মেলামেশার বিধান কী ছিল, সেই প্রশ্নের জবাবে অনেক ইসলামিক স্কলারই বলে থাকেন, “উম্মে হানীকে নবী নিজের আপন বোনের মত মনে করতেন!” নাস্তিকরা নাকি বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ, যারা ভাই বোনের এই পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে কুৎসা রটনা করে!

কিন্তু আসলেই কী তার সাথে নবীর ভাইবোনের মত সম্পর্ক ছিল? ভাইবোনের মত পবিত্র সম্পর্ক হয়ে থাকলে নবী মুহাম্মদ বারবার তাকে বিয়ে করতে চেয়েছেন কেন? সেই বিষয়েই আজকের আলোচনা। পাঠকগণ ইসলামিক রেফারেন্সগুলো পর্যালোচনা করবেন, এবং নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন, উম্মে হানীর সাথে নবী মুহাম্মদের সম্পর্ক ভাইবোনের পবিত্র সম্পর্ক ছিল, নাকি পুরোটাই হয়তো এক অতৃপ্ত প্রেমের গল্প ছিল। গুরুগম্ভীর দালিলিক আলোচনা শুরুর আগে আসুন একটি মজার ভিডিও দেখে নেয়া যাক,


সংক্ষিপ্তসার (Article Summary)

এই প্রবন্ধে কোন দাবী না করে পুরো ঘটনাটির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলো নানা দিক দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে একটি বিকল্প ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যক্তিগত সম্পর্কজনিত প্রেক্ষাপটের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হবে—যা শুধু উৎস-অসঙ্গতির ভিত্তিতে এক ধরনের হাইপোথিসিস হিসেবে বিবেচিত। যেহেতু মিরাজ বর্ণনায় নানা অসঙ্গতি, বৈজ্ঞানিকভাবে অবাস্তব এবং ঐতিহাসিক সূত্রগুলোর সাথে গড়মিল একটি বিকল্প ব্যাখ্যার সম্ভাবনা আলোচনার দাবি রাখে। ইতিহাসে দেখা যায়, অনেক সমাজে ব্যক্তিগত বা সামাজিক ঘটনাগুলো পরবর্তীকালে ধর্মীয় আখ্যানের মাধ্যমে ব্যাখ্যায় স্থান পায়—যা কখনও কখনও রাজনৈতিক বা সামাজিক কাঠামোর সাথেও সম্পর্কযুক্ত হয়ে ওঠে। এই প্রবন্ধে মুহাম্মদের বাল্যকালের প্রেম, উম্মে হানীকে কেন্দ্র করে ইসলামের ইসরা-মিরাজ আখ্যান কীভাবে তৈরি হলো, ইসলামবিরোধী উম্মে হানীর স্বামীর ভীতি এবং পলায়ন, মক্কা বিজয়ের পরে উম্মে হানীর সাথে আবারো মেলামেশা, নবী মুহাম্মদের ব্যক্তিগত আচরণগত প্যাটার্ন, মিরাজ বিষয়ক হাদিস–সীরাত–তাফসীরের অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্য, এবং আরব সমাজের পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সীরাত ও উম্মে হানীর একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত বর্ণনা অনুসারে—মিরাজের রাত মুহাম্মদ উম্মে হানীর ঘরেই কাটান, তার বাসায় অবস্থানকালীন একাধিক ঘনিষ্ঠ পরিস্থিতির উল্লেখ রয়েছে, এবং মক্কা বিজয়ের দিন একই পাত্র থেকে পান করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোজা ভঙ্গ, উম্মে হানীর বাড়িতে গিয়ে একই দিনে দ্বিতীয়বার গোছলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যৌক্তিক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এসব দলিল দেখায় যে, উম্মে হানী প্রাথমিক ইসলামী ইতিহাসে একটি উপেক্ষিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, এবং তার উপস্থিতি মিরাজ আখ্যানের গ্রহণযোগ্যতাকে সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ করে।

প্রবন্ধে আরও দেখানো হয়েছে যে, মিরাজ ঘটনার বর্ণনাগুলো পারস্পরিকভাবে সাংঘর্ষিক—কোথাও এটি স্বপ্ন, কোথাও শারীরিক ভ্রমণ; কোথাও নবী ঘুমন্ত অবস্থায় শুরু করেন, আবার শেষে জেগে ওঠেন; কখনো আসমান ভেদ করে দেবদূতের সাথে ভ্রমণ, কখনো বোরাক নামের কল্পিত জন্তু। ইসলামি তাফসীরকার ও সাহাবীরাও অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত নন। এই সকল বৈপরীত্য থেকে বোঝা যায় যে মিরাজের ঘটনাটি সম্ভবত ঐতিহাসিক সত্য নয়, বরং পরবর্তীকালে বিবর্তিত একটি কিংবদন্তি হিসেবে গড়ে উঠেছে।

একইসাথে, এই ধরনের গল্প যে আরব অঞ্চলে খুব অপরিচিত ছিল না, সেটিও আলোচনা করা হয়েছে। আরব ইরান সহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে এসব পুরনো উপকথা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। আবার, “ফাস্টব্লাড কাজিন আগ্রহর প্যাটার্ন” অংশে দেখানো হয়েছে যে উম্মে হানী–ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়। আরব গোত্রীয় সমাজে কাজিন-বিয়ে স্বাভাবিক ছিল এবং নবী মুহাম্মদের ক্ষেত্রেও একই ধারার একাধিক উদাহরণ—যেমন জয়নব বিনতে জাহশ—ইতিহাসে নথিভুক্ত। সবশেষে, প্রবন্ধে হাদিস, তাফসীর, সীরাত, এবং ইসলামের প্রাচীন গ্রন্থগুলোর সরাসরি স্ক্যান বা উদ্ধৃতি ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে যে ধর্মীয় আখ্যান, বাস্তব ইতিহাস, এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়ার মধ্যে একটি গভীর ফাঁক রয়েছে। মিরাজ কাহিনি ও সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলির নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এগুলোকে ঐতিহাসিক সত্যের চেয়ে পরবর্তী যুগের ধর্মীয় মিথের পুনঃনির্মান হিসেবে চিহ্নিত করে কিনা, সেটি এখানে আলোচনা করা হবে। সংক্ষেপে, এই প্রবন্ধের মূল বিষয়বস্তুগুলো হলো:

  • মিরাজ রাতে মুহাম্মদের অবস্থান সম্পর্কে প্রাথমিক উৎসগুলোতে গুরুতর অসঙ্গতি আছে।
  • উম্মে হানীর সাথে নবীর প্রেম, মেলামেশার বর্ণনা মিরাজের বাস্তবতা সম্পর্কে ভিন্ন কিছু ইংগিত করে।
  • মিরাজের ঘটনা নিজেই উৎসসমূহে বিরোধপূর্ণ, বৈজ্ঞানিকভাবে অসম্ভব এবং হাদিস-সীরাতে বিভিন্নজনার বর্ণনা বিভিন্ন রকম।
  • নবীর কাজিন-প্রেম একটি বৃহত্তর সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্যাটার্নের অংশ।
  • ধর্মীয় দাবি, ইতিহাস, ও বাস্তবতা—এই তিনের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট বিচ্ছিন্নতা বিদ্যমান।

ঐতিহাসিক টেক্সটগুলোর বিশ্লেষণ করে এই প্রবন্ধে কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন, সন্দেহ এবং সম্ভাবনা উত্থাপন করা হবে যে, নিরপেক্ষভাবে সকল ধর্মীয় পক্ষপাত বাদ দিয়ে পর্যালোচনা করলে মিরাজের ঘটনাটি সচেতনভাবে মনোযোগ ভিন্নমুখী করার চেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিল কিনা। বিশেষ করে হাদিসগুলোতে নানা ধরণের বর্ণনার গড়মিল লক্ষ্যনীয়। স্বয়ং মুহাম্মদ যখন সাহাবীদের মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করেছেন, তখন তিনি কোথাও নিজের ঘরে ছিলেন বলেছেন, আবার কখনো কাবার হাতিমে ছিলেন বলেছেন। উল্টো দিকে উম্মে হানীর বিবরণ থেকে জানা যায়, মুহাম্মদ ছিলেন উম্মে হানীর ঘরে। অর্থাৎ মুহাম্মদের নিজের বর্ণনা (কাবা প্রাঙ্গণ) এবং উম্মে হানীর জবানবন্দি (তার ঘর) মধ্যে থাকা স্পষ্ট অসঙ্গতি থেকে ধারণা করা যায় যে আসল অবস্থানটি গোপন রাখার চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে। যেহেতু উম্মে হানী তার চাচাতো বোন ছিলেন এবং তৎকালীন সমাজে বিবাহিত নারীর ঘরে রাত্রিযাপন মারাত্মক সামাজিক নিন্দা বা গোত্রীয় সংঘাতের জন্ম দিতে পারত, তাই মিরাজের সূচনা আসলে কোথায় হয়েছিল সে বিষয়টি বিতর্কিত থাকায়, তা আড়াল করতে একটি শক্তিশালী ‘আলিবাই’ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে একটি সরল মিথ্যা (যেমন—‘আমি অন্য কোথাও ছিলাম’) সহজেই ধরা পড়ত। তাই এর পরিবর্তে, এমন একটি অবিশ্বাস্য এবং অলৌকিক দাবি উত্থাপন করা হলে তা মুহূর্তের মধ্যে বিতর্কের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। জেরুজালেম ও সাত আসমান ভ্রমণের এই কাহিনীটি হয়তো ‘শক অ্যান্ড অ’ ধরনের একটি প্রয়াস ছিল, যা মক্কাবাসীর দৃষ্টি উম্মে হানীর ঘর থেকে সরিয়ে সেই অবিশ্বাস্য ঘটনার দিকেই নিবদ্ধ করেছিল। নবুয়তের বিশ্বাসযোগ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলেও এই গল্পটি বলার যুক্তিসম্মত কারণ হতে পারে—ব্যক্তিগত জীবনের আরও বড় কোনো নিন্দা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা।

এই প্রয়াসের সফলতা ছিল সুদূরপ্রসারী। মক্কাবাসী তখন তর্ক করতে শুরু করে, “এক রাতে এতদূর যাওয়া কি সম্ভব?”, কিন্তু তারা আর প্রশ্ন করেনি, “তুমি আসলে রাতটি কোথায় কাটিয়েছিলে?” এইভাবে, মিরাজের বর্ণনাটি সম্ভাব্য ব্যক্তিগত নিন্দার উপর ধর্মীয় অলৌকিকতার একটি আবরণ প্রতিষ্ঠা করেছে; এর ফলে ঐ ব্যক্তিগত ঘটনাটি পবিত্রতার আড়ালে ঢাকা পড়েছে এবং ঘটনাস্থল নিয়ে পরবর্তীকালে যে প্রশ্নগুলো উঠেছিল সেগুলোও গুরুত্ব হারিয়েছে।

প্রবন্ধের সার্বিক মানচিত্রঃ ঘটনাক্রম ও বিষয়বস্তু
উম্মে হানী → মিরাজ আখ্যান → উৎসের দ্বন্দ্ব → সামাজিক প্যাটার্ন → সমালোচনামূলক উপসংহার
ঐতিহাসিক উৎস ও উম্মে হানীর পরিচয়
মিরাজ রাত ও ঘরে থাকা–সংক্রান্ত বর্ণনা
হাদিস–তাফসীরের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
বোরাক, আসমান, বৈজ্ঞানিক অসঙ্গতি
পরবর্তী ফিকহি ব্যবহার ও সালাতুল আউওয়াবীন
ফাস্টব্লাড কাজিন প্যাটার্ন ও সামাজিক বাস্তবতা
ইতিহাস বনাম মিথ – চূড়ান্ত মূল্যায়ন
সূত্র ও পটভূমি
উম্মে হানী, মক্কা যুগ ও প্রাথমিক দলিল

শুরুতে প্রবন্ধে উম্মে হানীর পরিচয়, আবু তালিবের পরিবার, বাল্যকালের বিয়ের প্রস্তাব এবং মক্কার সামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। এরপর হাদিস–সীরাত–তাফসীরকে মূল তথ্যভিত্তি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।

  • চাচাতো বোন ও শৈশবকালীন আকর্ষণের প্রসঙ্গ
  • ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ অনুমোদিত বই থেকে উদ্ধৃতি
  • উৎসের ধরন: হাদিস, সীরাত, তাফসীর, আধুনিক আলেমের বই
মিরাজের রাত
মিরাজ – উম্মে হানীর ঘরে রাতযাপন

প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে যে একাধিক সীরাত বর্ণনায় ইসরা–মিরাজের রাতকে উম্মে হানীর ঘর থেকে শুরু করতে বলা হয়েছে। এতে মিরাজের প্রচলিত ‘বায়তুল হারাম–কেন্দ্রিক’ বয়ানের সঙ্গে সরাসরি বিরোধ তৈরি হয়।

  • “আমার ঘরে শুয়ে থাকা অবস্থায়…” টাইপের বর্ণনা
  • মক্কা বিজয়ের দিন একই পাত্র থেকে পান করা, রোজা সম্পর্কিত হাদিস
  • উম্মে হানীর ঘর–কেন্দ্রিক টাইমলাইন ভিজ্যুয়াল
উৎসের দ্বন্দ্ব
হাদিস ও তাফসীরে সাংঘর্ষিক বর্ণনা

মিরাজ কখন, কীভাবে, কতবার হলো—এ নিয়ে হাদিস, সীরাত ও তাফসীরে স্পষ্ট মতভেদ আছে। কেউ বলেন স্বপ্নে, কেউ শারীরিক ভ্রমণ; কোথাও ঘুমিয়ে শুরু, শেষে ঘুম থেকে জাগা—এগুলোকে পাশাপাশি রেখে প্রবন্ধটি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দেখিয়েছে।

  • আয়িশা, মুয়াবিয়া, ইবনে ইসহাক ইত্যাদির ভিন্নমত
  • ইবনে কাসীরসহ তাফসীর গ্রন্থ থেকে স্ক্যান ও উদ্ধৃতি
  • একই ঘটনা নিয়ে একাধিক ভিন্ন ন্যারেটিভ
অলৌকিক দাবি
বোরাক, সাত আসমান ও বৈজ্ঞানিক অসঙ্গতি

বোরাক নামের অধিবিদ্যামূলক জন্তু, এক রাতে বহু আসমান ভ্রমণ, নক্ষত্রমণ্ডল অতিক্রম ইত্যাদি দাবিগুলো আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে অসম্ভব—এই অংশে সেগুলোর সমালোচনা করা হয়েছে।

  • বোরাকের শারীরিক বর্ণনা বনাম বাস্তব প্রাণীবিজ্ঞান
  • আসমান ধারণা বনাম আধুনিক কসমোলজি
  • “এক রাতেই সব কিছু” দাবির সময়গত অসঙ্গতি
পরবর্তী ব্যবহার
সালাতুল আউওয়াবীন ও ফিকহি প্রসার

প্রবন্ধে দেখানো হয়েছে, কীভাবে উম্মে হানী–সংক্রান্ত হাদিসগুলো পরবর্তীতে নফল নামাজ, সালাতুল আউওয়াবীন ইত্যাদি ফিকহি আলোচনায় ব্যবহৃত হয়েছে এবং বই-ব্রোশিওরের মাধ্যমে সাধারণ মুসলিমের মাঝে প্রচারিত হয়েছে।

  • ইসলাম হাউজ প্রকাশিত সালাতুল আউওয়াবীন গ্রন্থের পৃষ্ঠা বিশ্লেষণ
  • একই হাদিসের তাফসীর ও আমলি রায়ে ব্যবহার
  • আধুনিক দায়ী–আলেমদের বক্তব্যের সাথে তুলনা
সামাজিক প্যাটার্ন
ফাস্টব্লাড কাজিন আগ্রহ – উম্মে হানীই একমাত্র নন

এখানে দেখানো হয়েছে যে উম্মে হানী–ঘটনা আলাদা নয়; আরব সমাজে কাজিন-বিয়ে প্রচলিত ছিল এবং নবীর পরিবারেও একাধিক উদাহরণ আছে। আধুনিক মনোবিজ্ঞানের আলোচনায় আত্মীয়-আকর্ষণ ব্যাখ্যায় কিছু প্রেক্ষাপটও যোগ করা হয়েছে।

  • জয়নব বিনতে জাহশ সহ আরও কাজিন–বিয়ে উদাহরণ
  • গোত্রীয় স্বার্থ, রক্ত–সম্পর্ক ও বিয়ের সংস্কৃতি
  • GSA/Westermarck Effect শুধু সহায়ক ব্যাখ্যা – মূল ফোকাস নয়
উপসংহার
ইতিহাস বনাম মিথ – চূড়ান্ত মূল্যায়ন

সব উৎস, বৈপরীত্য ও সামাজিক বাস্তবতা একত্রে রেখে প্রবন্ধটি দেখায় যে মিরাজ—বিশেষত উম্মে হানী–কেন্দ্রিক বর্ণনাগুলো ধর্মীয় বিশ্বাস হিসেবে থাকলেও ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক মানদণ্ডে টেকসই নয়, বরং ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা মিথনির্মাণ।

  • উৎস-সমালোচনাভিত্তিক চূড়ান্ত রায়
  • ধর্মীয় দাবি, ইতিহাস ও মানবিক নৈতিকতার মধ্যকার ফাঁক
  • পাঠককে নিজে বিচার করার আমন্ত্রণ

উম্মে হানী কে ছিলেন?

উম্মে হানীর আসল নাম ছিলো ফাখিতা বা ফাকিতাহ্‌ মতান্তরে হিন্দ। তিনি ছিলেন মুহাম্মদের আপন চাচা আবূ তালিবের কন্যা। তার পিতার নাম আবূ তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিব ও মাতার নাম ছিলো ফাতিমা বিনতে আসাদ। তিনি জাফর, আকিল ও ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর বোন ছিলেন। মুহাম্মদের পিতামাতার মৃত্যুর পরে সে প্রথমে দাদা আবদুল মুত্তালিব এবং পরে চাচা আবূ তালিবের কাছে আশ্রিত হিসেবে থাকেন। চাচাতো ভাই-বোনদের সাথে ছোটবেলা থেকেই তিনি একসাথে বড় হয়েছেন। উল্লেখ্য, সেই সময়ে সেই অঞ্চলে চাচাতো ভাইবোনদের মধ্যে বিবাহ খুব একটি খারাপ বিষয় বলে মনে করা হতো না। একে অজাচার হিসেবেও চিহ্নিত করা হতো না। কোরআনেও চাচাতো ভাইবোন বা ফার্স্ট ব্লাড কাজিনদের মধ্যে বিবাহ এবং যৌন সম্পর্কের বিষয়টিকে হালাল করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে যা ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করা হয় এবং যেই কাজটি নিরুৎসাহিত করা হয়। এই বিষয়ে বিস্তারিত এই প্রবন্ধের শেষে রয়েছে।


গায়রে মাহরাম কি?

যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য শরীয়তে জায়েজ নয় এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ তাদেরকে গায়রে মাহরাম বলে। বস্তুতঃ গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগ হয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারী পূর্ণ পর্দা করে সামনে যাবে। নবী মুহাম্মদ ছিলেন উম্মে হানীর গায়রে মাহরাম, অর্থাৎ তার সাথে বিবাহ বৈধ। মাহরাম বাদে সমস্ত পুরুষই মুমিনা নারীর জন্য নিষিদ্ধ, দেখাসাক্ষাৎ কথাবার্তা সবই সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ, শুধুমাত্র নিতান্ত প্রয়োজন হলে মাহরামের অনুমতিক্রমে দেখাসাক্ষাৎ কথাবার্তা বলা যায়। এমনকি নিজ পরিবারের চাচাতো-খালাতো-মামাতো-ফুপাতো ভাই, দুলাভাই, দেবর, ভাসুর, চাচা-মামা-খালু-ফুপা-শ্বশুর এরা সবাই গায়রে মাহরাম। এদের সামনে ইসলামের রীতি অনুসারে যাওয়া, মেলামেশা, দেখাসাক্ষাৎ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আসুন একজন প্রখ্যাত আলেমের একটি আলোচনা শুনে নিই,

এবারে আসুন একটি হাদিস পড়ি, যেখানে বলা হচ্ছে, কোন পুরুষ কোন প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর কাছে কিছুতেই রাত যাপন করবে না; যদি না সে তার স্বামী হয় অথবা মাহরাম হয় [1]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪০/ সালাম
পরিচ্ছেদঃ ৮. নির্জনে অনাত্মীয়া স্ত্রীলোকের কাছে অবস্থান করা এবং তার কাছে প্রবেশ করা হারাম
৫৪৮৬। ইয়াহইয়াহ ইবনু ইয়াহইয়া, আলী ইবনু হুজর, ইবনু সাব্বাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! কোন পুরুষ কোন প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর কাছে কিছুতেই রাত যাপন করবে না; তবে যদি সে তার স্বামী হয় অথবা মাহরাম হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)

এবারে আসুন আরও একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় জেনে নেয়া যাক। নবী মুহাম্মদ একবার আবু বকর এবং আবু বকরের কন্যা ও তার নিজের স্ত্রী আয়িশাকে একসাথে দেখেন। তাদেরকে এককক্ষে একসাথে দেখে নবী তাদের এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন এবং বলেন, এমনকি বাবা কন্যাও একসাথে এক কক্ষে থাকতে পারবে না। অর্থাৎ নারী পুরুষের এরকম মেলামেশা ইসলামের দৃষ্টিতে খুব কঠোরভাবেই নিষিদ্ধ, এমনকি ইসলাম পিতা কন্যার সম্পর্কের মধ্যেও শয়তানের কুমন্ত্রণা দেখতে পায়। এরকম মন মানসিকতার মানুষকে আমরা সাধারণত নিচু মনের মানুষ হিসেবেই গণ্য করি। ইসলামের এই বিষয়টি এই আলোচনার জন্য জেনে রাখা জরুরি,


বাল্যকালের প্রেম

ইসলামের ইতিহাসে উম্মে হানীর শৈশব-কৈশাের জীবনের কথা তেমন কিছু জানা যায় না। তবে বিয়ে সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন মুহাম্মদের নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে মুহাম্মদ তার চাচা আবূ তালিবের নিকট উম্মু হানীর বিয়ের পয়গাম পাঠান। একই সঙ্গে হুমায়রা ইবনে আবি ওয়াহাব বা হুবায়রা ইবন ‘আমর ইবন ‘আয়িয আল-মাখযুমী (Hubayra ibn Abi Wahb)-ও পাঠান। চাচা হুবায়রার প্রস্তাব গ্রহণ করে উম্মু হানীকে তার সাথে বিয়ে দেন। মুহাম্মদ সেই সময়ে অত্যন্ত দুঃখিত হন এবং দুঃখ নিয়ে বলেন, চাচা! আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হুবায়রার সাথে তার বিয়ে দিলেন? চাচা বললেন : ভাতিজা! আমরা তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করেছি। সম্মানীয়দের সমকক্ষ সম্মানীয়রাই হয়ে থাকে।

এর থেকে বোঝা যায়, নবী মুহাম্মদকে তার চাচা আবূ তালিব সম্মানীয় এবং তাদের সমকক্ষ মনে করেন নি। শুধুমাত্র পিতামাতাহীন এতিম এবং সহায় সম্বলহীন দরিদ্র হওয়ার অপরাধে তার নবী মুহাম্মদের মনের এই সুপ্ত কামনা, তার বাল্যকালের প্রেম পূর্ণতা পায় নি। পরবর্তীতে অর্থবিত্তহীন মুহাম্মদ রাগে দুঃখে কষ্টে বেশি বয়সী এবং ধনকুবের হযরত খাদিজাকে তিনি বিয়ে করেন কিনা, তা জানা যায় না। তবে এমনটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।


আসমাউর রিজাল

আসুন আসমাউর রিজাল গ্রন্থ থেকে উম্মে হানীর পরিচয় এবং বাল্যকালে মুহাম্মদের বিবাহের প্রস্তাবের কথাগুলো জেনে নেয়া যাক [2]

উম্মে হানী বিনতে আবু তালেব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা
নামঃ ফাখতা, বা হিন্দ।
উপনাম- উম্মে হানী। পুত্র হানীর নামানুসারে তিনি উম্মে হানী নামে প্রসিদ্ধ।
পিতার নাম- আবু তালেব।
মাতার নাম- ফাতেমা বিনতে আসাদ।
তিনি হলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো বোন এবং হযরত আলী ও জাফর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার সহোদরা বোন।
ইসলাম গ্রহণঃ মক্কা বিজয়ের সময় ৮ম হিজরীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
তাঁর ঘরে রাসুল সা. এর অবস্থানঃ মক্কা বিজয়ের সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হানীর ঘরে অবস্থান করে গোসল করেন এবং চাশতের নামাজ আদায় করেন। শিআবে আবু তালেবে বন্দী থাকাকালীন উম্মে হানীর ঘরে রাত যাপন অবস্থায় মিরাজের ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয় ।
বিবাহঃ নবুয়তের পূর্বে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন । কিন্তু তখন আবু তালেব হুবাইবা ইবনে আবু ওহাব মাখযুমীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ দেন। মক্কা বিজয়ের পর তাঁর স্বামী হুবাইবা ইসলাম গ্রহণ না করে পালিয়ে যায়। তখন পুনরায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। উম্মে হানী এই বলে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন যে, আমি এখন অনেক সন্তানের জননী হয়ে গেছি।
হাদীস বর্ণনায় তাঁর অবদানঃ তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ৪৬টি হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন। বুখারী ও মুসলিমে যৌথভাবে তাঁর বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ আছে।
মৃত্যুঃ তিনি ৫০ হিজরীর পরে ইন্তেকাল করেন।
………………………
তথ্যসূত্র- ১. সিয়ার ৩/৫৩৭, ২. উসদুল গাবা ৫/৫০১, ৩. আলইসাবা ৪/৫০৩, ৪. তাযকিরা ১/৩৮ ।

উম্মে হানী 1

আসহাবে রাসুলের জীবনকথা

একই বিবরণ আসুন পড়ে নিন আসহাবে রাসুলের জীবনকথা গ্রন্থ থেকে [3]

উম্মু হানী বিন্ত আবী তালিব (রা)
ইতিহাসে তিনি উম্মু হানী – এ ডাকনামে প্রসিদ্ধ । আসল নাম ফাতা, মতান্তরে হিন্দ। হযরত রাসূলে কারীমের (সা) মুহতারাম চাচা আবূ তালিব এবং মুহতারামা চাচী ফাতিমা বিত আসাদের কন্যা। ‘আকীল, জা’ফার, তালিব ও আলীর (রা) সহোদরা(১)। তাঁর শৈশব-কৈশোর জীবনের কথা তেমন কিছু জানা যায় না। তবে বিয়ে সম্পর্কে দু’একটি বর্ণনা দেখা যায়। যেমন রাসূল (সা) নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে চাচা আবূ তালিবের নিকট উম্মু হানীর বিয়ের পয়গাম পাঠান। একই সংগে হুবায়রা ইবন ‘আমর ইবন ‘আয়িয আল-মাখযূমীও পাঠান । চাচা হুবায়রার প্রস্তাব গ্রহণ করে উম্মু হানীকে তার সাথে বিয়ে দেন। নবী (সা) বললেন : চাচা! আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হুবায়রার সাথে তার বিয়ে দিলেন? চাচা বললেন : ভাতিজা! আমরা তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করেছি। সম্মানীয়দের সমকক্ষ সম্মানীয়রাই হয়ে থাকে(২)। এতটুকু বর্ণনা। এর অতিরিক্ত কোন কথা কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় না। তবে হুবায়রা ইবন ‘আমরের সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল, সে কথা বিভিন্নভাবে জানা যায়(৩)।
উম্মু হানী কখন ইসলাম গ্রহণ করেন সে ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে একটু ভিন্নতা দেখা যায়। ইমাম আয-যাহাবী বলেনঃ(৪)
تأخر اسلامها وأسلمت يوم الفتح
“তাঁর ইসলাম গ্রহণ বিলম্বে হয়। তিনি মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণ করেন।’
তবে রাসূলুল্লাহর (সা) মি’রাজ সম্পর্কিত যে সকল বর্ণনা পাওয়া যায় তার মধ্যে উম্মু হানীর (রা) একটি বর্ণনাও বিভিন্ন গ্রন্থে দেখা যায়। তাতে বুঝা যায় রাসূলুল্লাহর (সা) মি’রাজ উম্মু হানীর ঘর থেকে হয়েছিল এবং তিনি তখন একজন মুসলমান। আর এটা হিজরাতের পূর্বের ঘটনা। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহর (সা) ইসরা’ (মক্কা থেকে বাইতুল মাকদাসে রাত্রিকালীন ভ্রমণ) আমার ঘর থেকেই হয়। সে রাতে তিনি ‘ঈশার নামায আদায় করে আমার ঘরে ঘুমান। আমরাও ঘুমিয়ে পড়ি। ফজরের অব্যবহিত পূর্বে তিনি আমাদের ঘুম থেকে জাগান। তারপর তিনি ফজরের নামায পড়েন এবং আমরাও তাঁর সাথে নামায পড়ি। তারপর তিনি বলেন : উম্মু হানী! তুমি দেখেছিলে, গতরাতে আমি এই উপত্যকায় ‘ঈশার নামায আদায় করেছিলাম। তারপর আমি বাইতুল মাকদাসে যাই এবং সেখানে নামায আদায় করি। আর এখন আমি ফজরের নামায তোমাদের সাথে…
১. সীরাতু ইবন হিশাম, ২/৪২০; আ’লাম আন-নিসা, ৪/১৪ আল-ইসতী আব, ২/৭৭২ ২. আ’লাম আন-নিসা-৪/১৪ ৩. উসুদুল গাবা- ৫/624 ৪. সিয়ারু আ’লাম আন-নুবালা-২/৩১

উম্মে হানী আসহাবে রাসুলের জীবনকথা

মার্টিন লিংসের লাইফ অফ মুহাম্মদ

এবারে আসুন পশ্চিমা বিশ্বে সর্বাধিক বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থ মার্টিন লিংসের বই থেকে পড়ি [4]

cousin’s love with a devotion that proved to be lasting. Abū Ṭālib also had daughters, and one of these was already of marriageable age. Her name was Fākhitah, but later she was called Umm Hani’, and it is by that name that she is always known. A great affection had grown up between her and Muḥammad, who now asked his uncle to let him marry her. But Abū Ṭālib had other plans for his daughter: his cousin Hubayrah, the son of his mother’s brother, of the clan of Makhzūm, had likewise asked for the hand of Umm Hani’; and Hubayrah was not only a man of some substance but he was also, like Abū Ṭālib himself, a gifted poet. Moreover the power of Makhzüm in Mecca was as much on the increase as that of Hashim was on the wane; and it was to Hubayrah that Abu Talib married Umm Häni’. When his nephew mildly reproached him, he simply replied: “They have given us their daughters in marriage” – no doubt referring to his own mother “and a generous man must requite generosity.” The answer was unconvincing inasmuch as ‘Abd al-Muttalib had already more than repaid the debt in question by marrying two of his daughters, ‘Atikah and Barrah, to men of Makhzūm. Muḥammad no doubt took his uncle’s words as a courteous and kindly substitute for telling him plainly that he was not yet in a position to marry. That, at any rate, is what he now decided for

AI অনুবাদঃ তাঁর কাজিন (চাচাতো ভাই/বোন)-এর প্রতি যে গভীর অনুরাগ ছিল, তা স্থায়ী প্রমাণিত হয়। আবু তালিবের কন্যাও ছিল এবং তাদের মধ্যে একজন বিবাহযোগ্য বয়সে পৌঁছেছিলেন। তাঁর নাম ছিল ফাখিতাহ, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি উম্মে হানি নামে পরিচিত হন এবং তিনি এই নামেই সর্বদা পরিচিত। তাঁর এবং মুহাম্মদের মধ্যে একটি গভীর স্নেহপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এবং মুহাম্মদ তখন তাঁর চাচাকে তাঁকে বিবাহ করার জন্য অনুরোধ করেন।
কিন্তু আবু তালিবের তাঁর মেয়ের জন্য অন্য পরিকল্পনা ছিল: তাঁর মায়ের ভাইয়ের পুত্র, মাখজুম গোত্রের তাঁর কাজিন হুবায়রা-ও উম্মে হানির হাত চেয়েছিলেন; এবং হুবায়রা কেবল একজন ধনী ব্যক্তিই ছিলেন না, বরং তিনি আবু তালিবের মতোই একজন প্রতিভাবান কবি ছিলেন। অধিকন্তু, মক্কায় মাখজুম গোত্রের ক্ষমতা যেমন বাড়ছিল, তেমনি হাশিম গোত্রের প্রভাব কমছিল। আর এই হুবায়রার সাথেই আবু তালিব উম্মে হানির বিবাহ দিলেন।
মুহাম্মদ যখন তাঁর চাচাকে বিনম্রভাবে তিরস্কার করলেন, তিনি কেবল উত্তর দিলেন: “তারা আমাদের তাদের কন্যাদের বিবাহে দিয়েছে”—নিঃসন্দেহে তিনি তাঁর নিজের মায়ের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন—”এবং একজন উদার ব্যক্তিকে অবশ্যই উদারতার প্রতিদান দিতে হয়।”
এই উত্তরটি অগ্রহণযোগ্য ছিল, কারণ আব্দুল মুত্তালিব ইতিমধ্যেই তাঁর দুই কন্যা আতিকাহ এবং বাররাহ-কে মাখজুম গোত্রের পুরুষদের সাথে বিবাহ দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ এই ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছিলেন। মুহাম্মদ সম্ভবত তাঁর চাচার কথাটিকে নিছকই একটি সৌজন্যমূলক ও সদয় বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, যার মাধ্যমে তাঁকে সরাসরি বলা হয়েছিল যে, তিনি তখনো বিবাহের মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না। অন্ততপক্ষে, সেই সিদ্ধান্তই তিনি তখন নিলেন।

উম্মে হানী 4

কাবা থেকে উম্মে হানীর ঘরের দূরত্ব

এই আলোচনার আরও গভীরে যাওয়ার পুর্বে আমাদের জেনে নিতে হবে, কাবা শরীফের থেকে উম্মে হানীর ঘরের দূরত্ব ঠিক কত ছিল। এই তথ্যটি এই আলোচনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ওপর অনেক তথ্যের গোঁজামিল আপনাদের পরিষ্কার হবে। তাই আসুন শুরুতে উম্মে হানীর ঘর থেকে কাবার দূরত্বের একটি চিত্র দেখি,

কাবা, আশপাশ অঞ্চল ও উম্মে হানীর ঘর – বার্ড’স আই ভিউ (কনসেপ্টচুয়াল)
ঐতিহাসিক বর্ণনায় “কাবার একদম কাছে, কয়েক কদমের পথ” – এখানে শুধু ভিজুয়ালাইজ করার জন্য স্কেমাটিক মানচিত্র
উত্তর
মসজিদুল হারাম (আনুমানিক স্কিমা)
মাতাফ (তাওয়াফের খোলা জায়গা)
কাবা
একটি গেট (কাল্পনিক)
পুরনো মক্কার ঘরবাড়ি (প্রতীকী)
উম্মে হানীর ঘর
(কাবার খুব কাছে)
কাবা থেকে উম্মে হানীর ঘর পর্যন্ত হাঁটার পথ
ঐতিহাসিক বর্ণনায়: “কয়েক কদম” ·
এখানে ধরা হয়েছে ≈ ৩০–৫০ মিটার / ≈ ৪০ কদম

যারা হজ্ব করেছেন, মক্কায় নিয়মিত যাওয়া আসা করেন, তারা মোটামুটি সকলেই এই বিষয়গুলো জানেন। আসুন একজন হাজ্বীর বর্ণনা থেকে দেখে নেয়া যাক, উম্মে হানীর ঘর ঠিক কোথায় ছিল,


কান পেতে মুহাম্মদের কণ্ঠ শোনা

মুহাম্মদের সাথে উম্মে হানীর সাথে বিয়ে না হলেও, একজন কী আরেকজনার থেকে দূরে থাকতেন? একজন কি আরেকজনকে ভুলে গিয়ে সংসার শুরু করেছিলেন? না, বরঞ্চ তারা দুইজন দুইজনকে কখনই ভুলে যাননি। উম্মে হানী রাতের বেলা কান পেতে মুহাম্মদের কণ্ঠ শুনতেন। একটি হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ রাতের বেলা কাবার চত্তরে কিরাআত পাঠ করতেন, উম্মে হানী তার বাসার ছাদ থেকে তা কান পেতে শুনতেন। উল্লেখ্য, কাবা থেকে উম্মে হানীর বাসার দূরত্ব অতি অল্প, কাবা থেকে মাত্র কয়েক কদম হাঁটলেই উম্মে হানীর বাসায় পৌঁছে যাওয়া যেতো। অর্থাৎ, শারীরিকভাবে দূরে থাকলেও, মন থেকে তারা দূরে ছিলেন না [5] [6]

সুনান ইবনু মাজাহ
৫/ সালাত কায়িম করা ও নিয়ম-কানুন
পরিচ্ছেদঃ ৫/১৭৯. রাতের সালাতের কিরাআত।
১/১৩৪৯। উম্মু হানী বিনতে আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার ঘরের ছাদে শোয়া অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রাতের কিরাআত শুনতে পেলাম।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: নাসায়ী ১০১৩, আহমাদ ২৬৩৬৬, ২৬৮৩৬।
তাহক্বীক্ব আলবানী: হাসান সহীহ। তাখরীজ আলবানী: মুখতাসার শাথায়িল ২৭২।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)

সুনানু ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ১৩৪৯

আবু তালিব ও খাদিজার মৃত্যু

প্রায় সকল ইসলামিক তথ্য সূত্র থেকেই জানা যায়, নবী মুহাম্মদের ব্যবসায়ী ধনকুবের স্ত্রী বিবি খাদিজা, যার বাসাতে নবী ঘরজামাই হিসেবে ছিলেন, যাকে বিবাহ করে তিনি ধনী হয়েছিলেন, তিনি ৬১৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। প্রায় কাছাকাছি সময়ে আবু তালিবেরও মৃত্যু ঘটে। অর্থাৎ এই কথা খুব জোর দিয়েই বলা যায়, মিরাজের সময়ে নবী মুহাম্মদের স্ত্রী খাদিজা জীবিত ছিলেন না। এই বিষয়ে সীরাতুল মুস্তফা গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মিরাজের ঘটনার আগেই এদের মৃত্যু ঘটে [7]

উম্মে হানী 7
উম্মে হানী 9

খাদিজার মৃত্যু একমাসের মধ্যে দুইটি বিবাহ

এখানে একটি প্রশ্ন আমাদের মনে জাগতেই পারে যে, যেই খাদিজা সর্বদা নবীর সমর্থক ছিলেন, যেই নবী খাদিজাকে এত ভালবাসতেন, তিনি খাদিজার মৃত্যুর কতদিন পরে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিবাহ করেছিলেন? সাধারণত আমাদের প্রেমময় স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে, আমরা অনেকেই বহুবছর শোকের মধ্যে থাকি। সেই সময়ে অন্য কোন বিবাহের কথা আমাদের মাথাতেই আসে না। অনেক বছর কেটে গেলে সময়ের সাথে সাথে শোক কমতে থাকলে হয়তো আমাদের মধ্যে অনেকে আবারো বিয়ের কথা ভাবে। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে পরিবারে কোন বাচ্চা থাকলে। বাচ্চাকাচ্চা থাকলে অনেকেই হয়তো খুব দ্রুতই বিয়ে করে ফেলতে পারে। কারণ নতুন স্ত্রী এসে সেই বাচ্চাদের মায়ের আদর দিতে পারবে। কিন্তু আয়িশার ক্ষেত্রে তো সেটিও সম্ভব নয়। কারণ আয়িশা নিজেই ছিলেন শিশু। অন্য শিশুকে দেখভাল বা মায়ের আদর দেয়া তার পক্ষে তো সম্ভব নয়। তাহলে আসুন দেখে নিই, ইসলামের ওপর গবেষকদের মত অনুসারে খাদিজার মৃত্যুর কতদিন পরে মুহাম্মদ আয়িশাকে বিয়ে করেছিল। সূত্র বলছে, মাত্র একমাসের মধ্যেই তিনি দুইটি বিবাহ করে ফেলেন [8]

অধিকাংশ গবেষকের সিদ্ধান্ত এবং নির্ভরযোগ্য বর্ণনাসমূহের গরিষ্ঠ অংশ যা সমর্থন করে তা হলো, খাদীজা (রা) নুবুওয়াতের দশম বছরে হিজরাতের তিন বছর পূর্বে রমজান মাসে ইনতিকাল করেন এবং তার একমাস পরে শাওয়াল মাসে রাসূলুল্লাহ (সা) আয়িশাকে (রা) বিয়ে করেন। তখন আয়িশার (রা) বয়স ছয় বছর। এই হিসাবে হিজরাত-পূর্ব তিন সনের শাওয়াল, মুতাবিক ৬২০ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে আয়িশার (রা) বিয়ে হয়। আল-ইসতী’য়াব গ্রন্থকার ইবন আবদিল বার এই মত সমর্থন করেছেন। মূলত বিয়ে হয়েছিল খাদীজার (রা) ওফাতের বছরেই এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় তিন বছর পরে যখন নয় বছর বয়সে তাঁকে ঘরে তুলে নেন।

উম্মে হানী 11

শিশু আয়িশাকে স্বপ্নে দেখতেন মুহাম্মদ

নবী মুহাম্মদ শিশু আয়িশাকে বিয়ের আগে স্বপ্নে দেখতেন [9]। স্বপ্নগুলোও খুবই আগ্রহ উদ্দীপক। কারণ এরকম স্বপ্ন আমি কোন শিশু মেয়ে সম্পর্কে দেখলে (যদিও আমি সেরকম স্বপ্নও দেখবো না) ঘুণাক্ষরেও আমার মাথায় বিবাহের কথা আসতো না। হয়তো তখন আমি মেয়েটিকে নিজের আপন মেয়ের মতই ভাবতাম। কিন্তু নবী এই স্বপ্ন দেখে কীভাবে বুঝলেন যে, আল্লাহ তাকে ঐ শিশু কন্যাকে বিবাহ করতে হুকুম দিচ্ছেন, এটিও এক বিষ্ময়কর ব্যাপার!

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৪/ বিয়ে-শাদী
পরিচ্ছেদঃ ২৪৩৪. কুমারী মেয়ের শাদী সম্পর্কে। ইবন আবী মুলায়কা (র) বলেন, ইবন আব্বাস (রা) আয়িশা (রা)-কে বললেন, আপনাকে ছাড়া নবী (সা) আর কোন কুমারী মেয়ে শাদী করেননি।
৪৭০৭। উবায়দুল্লাহ্ ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’বার করে আমাকে স্বপ্নযোগে তোমাকে দেখানো হয়েছে। এক ব্যাক্তি রেশমী কাপড়ে জড়িয়ে তোমাকে নিয়ে যাচ্ছিল, আমাকে দেখে বলল, এই হচ্ছে তোমার স্ত্রী। তখন আমি পর্দা খুলে দেখি, সে তুমিই। তখন আমি বললাম, এ স্বপ্ন যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তবে তিনি বাস্তবে পরিণত করবেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)

এবারে আসুন মিজানুর রহমান আজহারীর বক্তব্য শুনি। মধ্যেবর্তী সেই একমাস সময়ের মাঝেই মুহাম্মদ শিশু আয়িশাকে রীতিমত স্বপ্নে দেখা শুরু করে দিয়েছেন। মুহাম্মদের বয়স তখন ৪৯-৫০, আয়িশার বয়স ৬ এর কম। অর্থাৎ, খাদিজার মৃত্যুর সপ্তাহ খানেক পরেই মুহাম্মদ আয়িশাকে স্বপ্নে দেখতে শুরু করেছে, এবং এই শিশু মেয়েকে দেখেই সে বিয়ে করার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। একটি শিশু মেয়েকে দেখে বিয়ে বা প্রেমের চিন্তা এত বয়ষ্ক একজন মানুষের মাথায় আসে কীভাবে! তাও আবার তার এতদিনের স্ত্রীর কবর শুকানোর আগেই? এর অর্থ হচ্ছে, মুহাম্মদ সেই খাদিজার মৃত্যুর সাথে সাথেই বিবাহ বা প্রবল যৌন তাড়নায় ছিলেন, যা স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়। আসুন একটি ওয়াজ শুনি,



মিরাজের রাতের ঘটনা

খুব ভালভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, মিরাজের ঘটনার সময়ে নবী মুহাম্মদের স্ত্রী খাদিজা আর জীবিত নেই। খাজিদার মৃত্যুতে নিশ্চিতভাবেই নবী দুঃখিত ছিলেন। ওদিকে উম্মে হানীর পিতা আবু তালিবেরও সেই কাছাকাছি সময়ে মৃত্যু ঘটে। এরকম সময়ে নবীর মনে পুরনো প্রেম জেগে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু বলে আমার মনে হয় না। সব মানুষই দুঃখের সময়, শোকের সময় প্রিয় মানুষদের সান্নিধ্য চায়। এটিই মানুষের স্বভাব। আসুন কয়েকজন প্রখ্যাত ইসলামিক আলেমের বক্তব্য শুনে নিই,

এবারে আসুন বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত ওয়াজকারী, এদেশের ওয়াজের জগতে যিনি সবসময় শীর্ষ অবস্থানে ছিলেন এবং এখনো আছেন, সেই জামাতের নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর একটি বক্তব্য শুনি। উল্লেখ্য, ওয়াজটির অডিও রেকর্ড শুধুমাত্র পাওয়া গেছে। লক্ষ্য করে শুনুন, সাইদী উম্মে হানীকে নবী মুহাম্মদের ফুফু বলে সম্বোধন করছেন। এতবড় একজন আলেম, এতবড় একজন ওয়াজকারী কী আসলেই জানেন না, উম্মে হানী নবী মুহাম্মদের চাচাতো বোন ছিলেন? তবে কেন তিনি উম্মে হানীকে নবীর ফুফু বলে সম্বোধন করলেন, বলুন তো? উম্মে হানীকে নবীর ফুফু বলে তিনি কেন সত্য গোপনের চেষ্টা করলেন?


আবু বকর যাকারিয়া

এবারে আসুন বাঙলাদেশের প্রখ্যাত একজন আলেম ড আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়ার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ, যেই গ্রন্থটি সৌদি সরকার কর্তৃক সত্যায়িত, সেই বইটি থেকে দেখে নিই। শুরুতে ভিডিওতে দেখি, আবু বকর যাকারিয়ার তাফসির গ্রন্থটি কতটা বিশুদ্ধ সেই ভিডিও [10]

উম্মে হানী 13

সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ইবন আব্দুল আযীয আল সাউদ-এর নির্দেশে ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত কুরআনের তরজমা ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর থেকে আরও একটি অংশ দেখে নেয়া যাক, যেখানে দেখা যাচ্ছে, মিরাজ থেকে ফিরে উম্মে হানীর কাছে নবী ঘটনার বিবরণ বর্ণনা করেছেন [11]

উম্মে হানী 15

গিউম, লাইফ অফ মুহাম্মদ

এবারে আসুন পশ্চিমা বিশ্বে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সীরাত গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত গিউম ( Guillaume) এর The Life Of Mohammed থেকে একটি পাতা পড়ি, [12]

The following report has reached me from Umm Hani’ d. of Abū Talib, whose name was Hind, concerning the apostle’s night journey.
She said: ‘The apostle went on no night journey except while he was in my house. He slept that night in my house. He prayed the final night prayer,
then he slept and we slept. A little before dawn the apostle woke us, and
when we had prayed the dawn prayer he said, “O Umm Häni’, I prayed
with you the last evening prayer in this valley as you saw. Then I went to Jerusalem and prayed there. Then I have just prayed the morning prayer
with you as you see.”” He got up to go out and I took hold of his robe and laid bare his belly as though it were a folded Egyptian garment. I said,
“O prophet of God, don’t talk to the people about it for they will give you
the lie and insult you.” He said, “By God, I certainly will tell them.”
I said to a negress, a slave of mine, Follow the apostle and listen to what he says to the people, and what they say to him. He did tell them and they
were amazed and asked what proof he had.

AI অনুবাদঃ নিম্নোক্ত বর্ণনাটি রাসূলের মি’রাজ বা রাতের সফরের বিষয়ে আবু তালিবের কন্যা উম্মে হানি’র (যার আসল নাম ছিল হিন্দ) কাছ থেকে আমার কাছে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ আমার ঘরে থাকা অবস্থাতেই তাঁর রাতের সফর(মিরাজ) সম্পন্ন করেন। সেই রাতে তিনি আমার ঘরে ঘুমালেন। তিনি রাতের শেষ সালাত (ইশা বা বিতর) আদায় করলেন, তারপর ঘুমালেন এবং আমরাও ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরের কিছুক্ষণ আগে রাসূলুল্লাহ আমাদের জাগালেন, এবং যখন আমরা ফজরের সালাত আদায় করলাম, তিনি বললেন, “হে উম্মে হানি, এই উপত্যকায় আমি তোমার সাথে শেষ সন্ধ্যার সালাত আদায় করেছিলাম, যেমন তুমি দেখলে। তারপর আমি জেরুজালেম গিয়ে সেখানে সালাত আদায় করেছি। আর এইমাত্র আমি তোমার সাথে ফজরের সালাত আদায় করলাম, যেমন তুমি দেখলে।”’
তিনি বাইরে যাওয়ার জন্য উঠলেন এবং আমি তাঁর পোশাক ধরে টানলাম এবং তাঁর পেট থেকে তা ভাঁজ করা মিশরীয় কাপড়ের মতো সরিয়ে দিলাম। আমি বললাম, “হে আল্লাহর নবী, এ বিষয়ে লোকদের সাথে কথা বলবেন না, কারণ তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলবে এবং আপনার অপমান করবে।” তিনি বললেন, “আল্লাহর কসম, আমি অবশ্যই তাদের বলব।”
আমি আমার একজন হাবশি দাসীকে বললাম, ‘রাসূলের পেছন পেছন যাও এবং শোনো তিনি লোকেদের কী বলেন, আর তারা তাঁকে কী বলে।’ তিনি তাদের বললেন, আর তারা অবাক হয়ে গেল এবং তাঁর কাছে এর প্রমাণ চাইল।”

উম্মে হানী 17

বোখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ

এবারে আসুন আমরা বোখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ থেকে নবীর বক্তব্য পড়ি। এই বিবরণে দেখা যাচ্ছে, নবী ভোর হওয়ার অল্প আগে তার সঙ্গীসাথীদের কাছে ফিরে এসেছে। অর্থাৎ নবী তার সঙ্গীদের সাথেই তার আগে ছিলেন। ফিরে আসার পরে সঙ্গীদের মধ্যে আবু বকর জিজ্ঞেস করলেন, আপনি রাতে কোথায় ছিলেন? আবু বকর তখন সব জায়গাতেই মুহাম্মদকে খুঁজে এসেছে, কিন্তু পায়নি। অর্থাৎ মাঝখানে নবী কোথাও গিয়েছিলেন এবং পুরো প্রায় রাতই সেখানে সেই বিশেষ জায়গাতে কাটিয়ে এসেছেন। তো, আবু বকরের প্রশ্নের জবাবে নবী বললেন, তিনি সেই সময়ে বায়তুল মোকাদ্দাস ঘুরে এসেছেন। আবার উল্টোদিকে, উম্মে হানীর বর্ণনা অনুসারে তিনি তার ঘরে এসেছিলেন এবং রাত্রে নামাজ পড়ে উম্মে হানীর ঘরেই ঘুমিয়েছিলেন। অর্থাৎ আবু বকরদের কাবার সামনে রেখে নবী উম্মে হানীর বাসায় গেলেন, সেখানে নামাজ পড়লেন, ঘুমালেন অথবা যা করার করলেন, এরপরে ঘুমিয়ে গেলেন। ভোর হওয়ার আগে আবার আবু বকরদের কাছে ফিরে এসে বললেন, তিনি বায়তুল মোকাদ্দাস ঘুরে এসেছেন। ঘটনা দুইটি পর্যালোচনা করুন [13]

উম্মে হানী 19

তাফসীরে ইবনে কাসীর

এবারে আসুন তাফসীরে ইবনে কাসীরে কী বলা হয়েছে দেখি। সেই তাফসীর দেখার আগে বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়ার একটি বক্তব্য শুনে নিই, [14]

হযরত উম্মে হানী বিনতে আবূ তালেব (রা) কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েত মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বলেন, মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ সায়েব কলবী (রা.)…. উম্মে হানী বিনতে আবূ তালেব (রা) হইতে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মি’রাজ সম্পর্কে বলেন, যেই রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মি’রাজ সংঘটিত হয় সেই রাত্রে তিনি আমার ঘরে নিদ্রিত ছিলেন। ইশার সালাত শেষে তিনি পুনরায় নিদ্রা যান। আমরাও নিদ্রা যাই । ভোর হইবার পূর্বে আমরা রসূলুল্লাহ (সা) কে জাগ্রত করিলাম । যখন তিনি সালাত পড়িলেন এবং আমরাও তাহার সহিত সালাত পড়িলাম তখন তিনি বলিলেন হে উম্মে হানী আমি তোমাদের সহিত ইশার সালাত পড়িয়াছিলাম এবং এখন ফজরের সালাতও তোমাদের সহিত পড়িলাম। এই সময়ের মধ্যেই আল্লাহ তা’আলা আমাকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত পৌছাইয়াছেন এবং পুনরায় তোমাদের নিকট পৌছাইয়া দিয়াছেন । যেমন তুমি দেখিতেছ। কালবী নামক রাবী মুহাদ্দিসিনগণের নিকট বর্জিত । কিন্তু আবূ ইয়ালা তাহার মুসনাদে মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আনসারী….উম্মে হানী (রা) হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং অধিক বিস্তারিত বর্ণনা করিয়াছেন। হাফিয আবুল কাসেম তবরানী আব্দুল আ’লা ইবনে আব্দুল মুসাভির…. হযরত উম্মে হানী হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মি’রাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) আমার ঘরে ছিলেন। অতঃপর আমি তাহাকে না পাইয়া বড়ই অস্থির হইলাম এবং আমার বিনিদ্ররাত্র অতিবাহিত করিলাম ভয় হইল, কুরাইশরা তাহাকে কোন বিপদে ফেলে নাই

উম্মে হানী 21

তাফসীরে মাযহারী

একই কথা বর্ণিত আছে তাফসীরে মাযহারীতে, [15]

উম্মে হানী 23

আসুন তাফসীরে মাযহারী থেকে আরও পড়ি, [16]

উম্মে হানী 25
উম্মে হানী 27

তাফসীরে জালালাইন

একই বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাফসীরে জালালাইনে [17]

উম্মে হানী 29

তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন

একই বর্ণনা পাওয়া যায় পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার মাওলানা মুহাম্মদ শফী লিখিত তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন থেকেও [18]

উম্মে হানী 31

মুখতাসার যাদুল মা’আদ

এবারে আসুন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রচিত মুখতাসার যাদুল মা’আদ গ্রন্থ থেকে একটি দলিল দেখে নিই, যেখানে দেখা যাচ্ছে, মিরাজ থেকে ফেরার পরে উম্মে হানীর সাথে তার দেখা এবং উম্মে হানীকেই তিনি ঘটনাটি প্রথম খুলে বলেন [19]

উম্মে হানী 33

সিরাতে রাসুলাল্লাহ – ইবনে ইসহাক

এবারে আসুন প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত সিরাতে রাসুলাল্লাহ গ্রন্থ থেকে বিবরণটি দেখে নিই, [20]

রাসুলে করিমের (সা.) মিরাজ সম্পর্কে উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব ওরফে হিন্দের কাছ থেকে কিছু বর্ণনা আমি পেয়েছি। তিনি বলেছেন, ‘আমার বাড়িতে থাকা অবস্থায়ই তিনি মিরাজে গেছেন, অন্য কোনো খান থেকে যাননি। সে রাতে তিনি আমার বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। সে রাতে তিনি এশার নামাজ পড়ে ঘুমাতে গেলেন। আমরাও ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরের একটু আগে রাসুলে করিম (সা.) আমাদের জাগিয়ে দিলেন। আমরা ফজরের নামাজ পড়লাম। তারপর তিনি বললেন, “উম্মে হানি, কালকে তো এইখানে এই উপত্যকায় আপনাদের সঙ্গে আমি এশার নামাজ পড়লাম। সে তো আপনি দেখেছিলেন। তারপর আমি জেরুজালেমে গেলাম এবং ওখানে নামাজ পড়লাম। আবার এখানে আমি এক্ষনি আপনাদের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়লাম, এই যেমন দেখলেন । তিনি বাইরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই আমি তাঁর জামা চেপে ধরলাম, তাতে টান লেগে তাঁর পেট উদাম হয়ে গেল, যেন আমি এক ভাঁজ করা মিসরীর কাপড় ধরে টেনেছিলাম। আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ, এ কথা কাউকে যেন বলবেন। না, ওরা বলবে এটা মিথ্যা কথা, আপনাকে তারা অপমান করবে।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম, তাদের আমি বলবই।’

উম্মে হানী 35

সীরাতুন নবী – ইবন হিশাম

এবারে আসুন দেখি ইবনে হিশামের সীরাতুন নবী গ্রন্থে কী বলা, [21]

উম্মে হানী 37

তাফসীরে ইবনে আব্বাস

এবারে আসুন তাফসীরে ইবনে আব্বাস থেকে একটি পাতার কিছু অংশ পড়ে নেয়া যাক [22]

উম্মে হানী 39

সৌদি সরকারের হজ্ব ও ওমরা গাইড

এবারে আসুন সৌদি সরকার দ্বারা প্রকাশিত হজ, উমরা ও যিয়ারত গাইড থেকে দেখে নিই, যেই বইটই সৌদি সরকার বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দেয় [23]

উম্মে হানী 41
উম্মে হানী 43

ফাতহুল বারী, ইবনু হাজার আসকালানীর ব্যাখ্যা

এবারে আসুন আমরা প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনু হাজার আসকালানী, যিনি প্রখ্যাত বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারী লিখেছেন, সেই ব্যাখ্যা গ্রন্থ থেকে মিরাজের রাতে নবী কোথায় ছিলেন সে সম্পর্কে কী বলেছেন দেখে নিই, [24]

আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স দ্বারা তৈরি অনুবাদঃ মেরাজ অধ্যায় সম্পর্কে অধিকাংশ কপি-তে “বাবুল-মিরাজ” এসেছে, আর নাসাফীর সংস্করণে “মেরাজের কাহিনি” বলা হয়েছে। “মিরাজ” শব্দটি “আরজা” ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ ওপরে ওঠা বা আরোহণ করা। মেরাজের সময়ের বিষয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন—মেরাজ নবুয়ত পাওয়ার আগেই হয়েছিল। তবে এ মতটি অপ্রচলিত; এটিকে স্বপ্নের মেরাজ বলা হলে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। অধিকাংশ আলেমের মতে এটি নবুয়ত পাওয়ার পর হয়েছে। কিন্তু সেই সময় নিয়েও বহু ভিন্ন মত রয়েছে। যেমন—ইবনু সা’দ, নওয়াবী—বলেছেন এটি হিজরতের এক বছর আগে হয়েছিল; ইবনু হাযম তো দাবি করেছেন এতে ইজমা রয়েছে—কিন্তু এই দাবিটি ভুল, কারণ এ বিষয়ে দশটিরও বেশি মত পাওয়া যায়। ইবনুল জাওযী বলেন—কেউ বলেন আট মাস আগে, কেউ বলেন ছয় মাস আগেইবনু হাযমের বর্ণনায় পাওয়া যায়—মেরাজ রজব মাসে, নবুয়তের বারো বছর পরে হয়েছিল। ইব্রাহীম হারবী বলেন—মেরাজ হয়েছিল রবিউস সানি মাসে, হিজরতের এক বছর আগে। ইবনু আবদিল-বার, ইবনু ফারিস, আস্-সুদ্দী, ওয়াকিদী—সবারই ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। কারও মতে এটি হিজরতের আঠারো মাস আগে, কারও মতে তিন বছর আগে, কারও মতে পাঁচ বছর আগে। যুহরী, ক্বাযী ‘ইয়াদ, কুরতুবী প্রমুখ পাঁচ বছর আগেকেই সবচেয়ে শক্তিশালী মত বলেন। তারা যুক্তি দেন—খদিজা নামায ফরজ হওয়ার পরে নবীর সঙ্গে নামায পড়তেন, আবার তিনি হিজরতের কয়েক বছর আগে মারা যান, এবং নামায ফরজ হয়েছে মেরাজের রাতেই
ইবনু হাজর আসকালানী এই যুক্তিগুলোকে খণ্ডন করে দেখান—খদিজার মৃত্যুর সাল নিয়েও তীব্র মতভেদ আছে—কেউ বলেন সাত বছর আগে, কেউ বলেন চার বছর আগে, আবার কেউ বলেন তিনি হিজরতের বছরেই মারা গেছেন। নামায ফরজ হওয়া নিয়েও মতভেদ—কারও মতে নবুয়তের শুরু থেকেই দুই রাকাত সকাল–দুই রাকাত বিকাল ছিল, আর ইসরা রাতে ফরজ হয় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযআয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন—খাদিজা পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ হওয়ার আগেই মারা গেছেন। এতে দু’টি মতকে মিলিয়ে নেওয়া যায়—প্রাথমিক রাকাত-নামায আলাদা, পাঁচ ওয়াক্ত আলাদা। ফলে দাঁড়ায়—খদিজা ইসরা–মেরাজের আগেই মারা গেছেন।
এরপর হাদিসের মুল অংশে আনাস ইবন মালিক বর্ণনা করেন, মালিক ইবন সা’সা’আ তাকে মেরাজের রাতের ঘটনা বলেছেন। মালিক ইবন সা’সা’আ আনসারী বনী নাজ্জারের একজন; তাঁর থেকে আনাস ছাড়া আর কেউ হাদিস বর্ণনা করেননি। নবী বলেন—“আমি হাতীমে শুয়ে ছিলাম”; কাতাদাহ কখনও বলেন—“হিজরে ছিলাম”হাতীমহিজর কোনটা কোন অংশ—তা নিয়ে পূর্বে মতভেদ থাকলেও এখানে উদ্দেশ্য কেবল ঘটনাস্থল নির্দেশ করা। যুহরী-র আরেক বর্ণনায় আসে—“আমার ঘরের ছাদ ফাটিয়ে দেওয়া হলো, আর আমি তখন মক্কায় ছিলাম।” ওয়াকিদী-র সনদে পাওয়া যায়—তাঁকে ইসরা করানো হয় “শি‘বু আবী তালিব” থেকে। আর উম্মে হানীর বর্ণনায়—“তিনি আমার ঘরে রাত কাটিয়েছিলেন; রাতে আমি তাঁকে দেখলাম না; তিনি বললেন—জিবরিল এসেছিল।”
ইবনু হাজর আসকালানী এই সব ভিন্ন বর্ণনাকে মিলিয়ে নির্ণয় করেন—নবী সেই রাতে উম্মে হানীর ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলেন, যা ছিল শি‘বু আবী তালিব এলাকায়। নবী যখন বলেন—“আমার ঘরের ছাদ ফাটানো হলো”—তিনি সে ঘরকে নিজের ঘর বলেছেন, কারণ তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন। সেখানকার ছাদ ফাটিয়ে ফেরেশতা অবতরণ করেন; তাঁকে সেখান থেকে বের করে মসজিদুল হারামে নিয়ে যান; সেখানে তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় শুয়ে ছিলেন; তারপর তাঁকে মসজিদের দরজায় আনা হয় এবং সেখানেই বুরাকের পিঠে আরোহন করানো হয়। এই মিলনব্যাখ্যাকে জোরদার করে হাসান আল-বাসরীর মুরসাল বর্ণনা, যেখানে জিবরিল নবীকে ঘর থেকে বের করে মসজিদে নিয়ে যান এবং বুরাকে চড়ান। আলেমরা বলেন—ছাদ ফেটে ফেরেশতার নামা ছিল ঘটনাটিকে হঠাৎ এবং অলৌকিকভাবে শুরু করানোর ইঙ্গিত, এবং এ যেন উর্ধ্বলোকে যাত্রার ঘোষণা।
এরপর আসে বক্ষবিদারণ—“আমি আধাঘুম–আধাজাগরণ অবস্থায় ছিলাম।” এরপর তাঁকে সম্পূর্ণ জাগ্রত অবস্থায় বুরাকে আরোহণ করানো হয়। ইবনু আবি জমরাহ বলেন—নবীর ঘুম ও জাগরণ সমমর্যাদার; তাঁর চোখ ঘুমালেও হৃদয় ঘুমাত না; তিনি বর্ণনার সত্যতা বজায় রাখতে প্রকৃত শব্দই ব্যবহার করেছেন।
তারপর দীর্ঘ বিবরণে আসে বুরাকের স্বরূপ, আসমানসমূহে আরোহণ, প্রতিটি আসমানে বিভিন্ন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ—আদম, ঈসা, ইয়াহইয়া, ইউসুফ, ইদরিস, হারুন, মূসা, ইব্রাহিম—সিদরাতুল মুনতাহা, তার ফল–পাতা–আলো, জান্নাতি চার নদী—যার দু’টি পৃথিবীতে প্রতিফলিত হয়ে নীলফুরাত হয়ে প্রবাহিত হয়—বায়তুল মা’মুর, এবং তিন পাত্র—দুধ, মদ, পানি/মধুর মধ্যে দুধ বেছে নেবার ঘোষণা—“এটাই ফিতরা।”
শেষে আসে নামায ফরজ হওয়ার ঘটনা—প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত, পরে মূসা (আ.) বারবার পরামর্শ দেন ফিরে গিয়ে ছাড় চাইতে; নবী ফের যান, ছাড় পান; অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই চূড়ান্ত হয়, কিন্তু সওয়াব থাকে পঞ্চাশের সমান। নবী বলেন—“এবার আমি লজ্জা পাচ্ছি; আমি সন্তুষ্ট, এবং মেনে নিচ্ছি।” আল্লাহ তখন বলেন—“আমি আমার ফরজ বহাল রেখেছি এবং আমার বান্দাদের জন্য সহজ করে দিয়েছি।”
এইভাবে পুরো মেরাজের বর্ণনা শেষ হয়—যেখানে মেরাজের সময়, উম্মে হানীর ঘর থেকে মসজিদুল হারাম, আসমানসমূহ, জান্নাত–জাহান্নামের দৃশ্য, নামায ফরজ হওয়ার প্রক্রিয়া—সবই বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।


সেরাতে উম্মে হানীর স্বামী কোথায় ছিল?

অনেক ইসলামিক এপোলোজিস্টই দাবী করেন, মিরাজ বা ইসরার রাতে উম্মে হানীর সাথে উম্মে হানীর স্বামী হুবায়রা ইবন ‘আমর ইবন ‘আয়িয আল-মাখযুমীও ছিলেন। এর কারণ হিসেবে উনারা বলেন, বিবরণটিতে উম্মে হানীর কাছ থেকে “আমরা” শব্দটি এসেছে, অর্থাৎ সেই রাতে উম্মে হানীর স্বামী বাইরে ছিল না। উম্মে হানী, উম্মে হানীর স্বামী এবং নবী মুহাম্মদ, এরা সবাই মিলে নাকি সেই রাতে নামাজ আদায় করছিলেন! অথচ, আরেকটি বিবরণ থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদের ভয়ে উম্মে হানীর স্বামী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, যেটি পরে আলোচনা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, যেই লোক নবী মুহাম্মদকে বাসায় ডেকে রাতে বউ সহ একত্রে নামাজ পড়তেন, সেই লোক মক্কা বিজয়ের পরে নিশ্চয়ই নবী মুহাম্মদের আতঙ্কে দেশ ছেড়ে পালাবেন না, তাই না? তাছাড়া, আরো জরুরি বিষয় হচ্ছে, বেশিরভাগ সূত্র থেকে জানা যায়, উম্মে হানী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন মক্কা বিজয়ের পরে [25] । তাহলে হিজরতের পূর্বে মুহাম্মদ মক্কায় থাকাকালীন সময়ই উনারা একসাথে কেন নামাজ আদায় করতেন? সেই রাতে তো উম্মে হানী মুসলিমই ছিলেন না, তাহলে রাতের বেলা তারা নামাজ আদায় না করে থাকলে কী করতেন? হিসেব কিছুতেই মিলছে না কিন্তু। আসুন বর্ণনাগুলো পড়ি –

উম্মে হানী 45
মক্কা বিজয়ের পরে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল

জান্নাতে বেলালের পায়ের আওয়াজ

আসুন একটি অদ্ভুত হাদিস পড়ি। আমরা সকলেই যারা ইসলামের ইমান আকীদা সম্পর্কে অবগত, তারা জানি যে, মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষার জন্য। মানুষের মৃত্যুর পরে তাদের কবরে আজাব হবে, এরপরে কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর উপস্থিতিতে হবে বিচার। সেই বিচারে যারা আল্লাহর অনুগত থাকবে, তারা জান্নাতে যাবে, আর যারা আল্লাহর অনুগত হবে না, তারা জাহান্নামে যাবে। সেই বিচার হবে কেয়ামতে, মহাবিশ্ব ধ্বংসের পরে। কিন্তু এই হাদিসটিতে দেখা যাচ্ছে, জীবিত একজন মানুষের পায়ের আওয়াজ জান্নাতে পাওয়া যাচ্ছে। হাদিসটি অদ্ভুত এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবী মুহাম্মদ বলেছেন, তিনি নাকি তার সম্মুখে জান্নাতে হযরত বেলালের জুতার আওয়াজ শুনেছেন [26]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত
পরিচ্ছেদঃ ৩৯. প্রথম অনুচ্ছেদ – নফল সালাত
সকল প্রকার নফল সালাত, যেগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, যথাক্রমে সালাতুল তাহ্ইয়্যাতুল উযূ, সালাতুন ইস্তিখারাহ্, তওবা্, সালাতুল হাজাত এবং সালাতুত্ তাসবীহ।
التَّطَوُّعِ শব্দটি الطوع، والطاعة শব্দ হতে গৃহীত অর্থ মান্য করা, বাস্তবায়ন করা, মেনে নেয়া ইত্যাদি এবং التَّطَوُّعِ শব্দটি ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত সকল নফলের উপর মুত্বলাক (তালাক)্ব (সকল নফলের ক্ষেত্রে এ শব্দটি প্রযোজ্য) আর যে বা যারা ফরয কিংবা ওয়াজিবের উপর অতিরিক্ত ’আমলুস্ সালিহ বা সৎকর্ম সম্পাদন করে তাকে (مُتَطَوِّعِ) বলা হয়।
১৩২২-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলালকে ফাজ্‌রের (ফজরের) সালাতের সময়ে ইরশাদ করলেনঃ হে বিলাল! ইসলাম কবূল করার পর তুমি এমনকি ’আমল করেছ যার থেকে অনেক সাওয়াব হাসিলের আশা করতে পার। কেননা, আমি আমার সম্মুখে জান্নাতে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। (এ কথা শুনে) বিলাল বললেন, আমি তো অনেক আশা করার মতো কোন ’আমল করিনি। তবে রাত্রে বা দিনে যখনই আমি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করেছি, আমার সাধ্যমতো সে উযূ দিয়ে আমি (তাহ্ইয়্যাতুল উযূর) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছি। (বুখারী, মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : বুখারী ১১৪৯, মুসলিম ২৪৫৮, ইরওয়া ৪৬৪, সহীহ আত্ তারগীব ২২৬, আহমাদ ৮৪০৩, ইবনু খুযায়মাহ্ ১২০৮।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


আলোচ্য প্রশ্নসমূহ
এই হাদিসটি পড়ার পরে কয়েকটি প্রশ্ন জাগেঃ
  1. মুহাম্মদ তো এখনো জান্নাতবাসী হননি। তিনি ঠিক কবে জান্নাতে গেলেন? মিরাজের রাত ছাড়া আর কোন ঘটনা তো ঘটেছে বলে জানি না।
  2. হযরত বিলালের তো তখনো মৃত্যুই হয়নি, কেয়ামতও ঘটেনি। তাহলে বিলালের পায়ের আওয়াজ জান্নাতে কীভাবে পাওয়া গেল?
  3. এমন কি হতে পারে যে, নবী মুহাম্মদ পৃথিবীর কোন ঘরেই জান্নাতের সুখ লাভ করছিলেন, সেই সময়ে দরজার কাছে বিলাল পাহারারত ছিল? জান্নাতের আনন্দময় অভিজ্ঞতা বা অন্তিম সুখ লাভের সময় নবী আসলেই বিলালের পায়ের আওয়াজ শুনেছিলেন?

আসুন এই সম্পর্কে একটি ওয়াজ শুনি,


নবী মুহাম্মদের শরীরের বর্ণনা

ইসরার রাতে নবী মুহাম্মদ চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে, উম্মে হানী তার চাদরের এক কোনা ধরে টেনে ফেলেন। ফলে নবীর পেটের একাংশ বেরিয়ে যায়। উম্মে হানী সেই পেটের সৌন্দর্য্যের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, মুহাম্মদের পেট মিসরীয় কিবতী ভাঁজ করা কাতান বস্ত্রের মত ছিল। নবীর সাহাবী, হাদিস বর্ণনাকারী এবং একজন সৎ চরিত্রের মুমিনা নারীর জন্য গায়রে মাহরাম একজন বেগানা একজন পুরুষের শরীরের অংশ দেখে ফেলা, তা দেখে মুগ্ধ হওয়া এবং তার সৌন্দর্য্য বর্ণনা করা কতটা ইসলামিক, তা ইসলামের স্কলাররাই ভাল বলতে পারবেন। [27] [28]
নবীর নগ্ন পেটের এই সৌন্দর্যের বর্ণনা তার কোনো স্ত্রীর কাছেও পাওয়া যায়না। কেবল উম্মে হানীই এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তিনি একাধিকবার এই পেট দেখেছেন, এবং সেই সাথে তার হাসিরও প্রশংসা করেছেন। উম্মে হানী বলতেন, “আমি আল্লাহর রাসুলের চাইতে সুন্দর হাসি আর কারও মুখে দেখি নি। আর আমি যখনই আল্লাহর রাসুলের পেট দেখতাম তখনই আমার মনে পড়ে যেত। আমি মক্কা বিজয়ের দিনে উনার মাথায় চারটি বেণী বাঁধা দেখেছি। [29]
এই বেণীর বর্ণনা সহি হাদিসেও এসেছে।

সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
অধ্যায়ঃ ৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চুল
পরিচ্ছেদঃ তিনি চুলের মধ্যে বেণী বাঁধতেন
২৬। উম্মে হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি চুলের চারটি বেণী বাঁধা অবস্থায় দেখেছি।
(মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৪৩০; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০৪৮৩।)
হাদিসের মানঃ সহিহ
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)


মুহাম্মদের ভয়ে স্বামীর পলায়ন

নবী মুহাম্মদের ভয়ে উম্মে হানীর স্বামী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি মক্কা থেকে পালিয়ে নাজরানের দিকে চলে যান। স্ত্রী উম্মে হানীর ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে তাঁকে তিরস্কার করে একটি কবিতা তিনি রচনা করেন। কবিতাটির কিছু অংশ সীরাতের বিভিন্ন গ্রন্থে দেখা যায়। নিম্নের চরণগুলােতে মক্কা থেকে পালিয়ে যাবার কারণ স্ত্রীর নিকট ব্যাখ্যা করেছেন, [30]

“তােমার জীবনের শপথ! আমি ভীরুতার কারণে ও হত্যার ভয়ে মুহাম্মাদ ও তার সঙ্গীদেরকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে আসিনি। তবে আমি নিজের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছি, তাতে বুঝেছি এ যুদ্ধে আমার তীর ও তরবারি যথেষ্ট নয়। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছি। কিন্তু যখন আমার অবস্থান সংকীর্ণ হওয়ার ভয় করেছি তখন ফিরে এসেছি যেমন বাঘ তার শাবকের কাছে ফিরে আসে।”

উম্মে হানী 47
উম্মে হানী 49

অথচ, উম্মে হানীর এক কথায় নবী মুহাম্মদ মক্কা বিজয়ের দিনে কয়েকজন মুশরিককে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, যাদেরকে আলী হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। এই কথা নিশ্চতভাবেই বলা যায়, উম্মে হানীর স্বামীকেও নবী মুহাম্মদ ক্ষমা করতেন এবং নিরাপত্তাই দিতেন। তারপরেও কেন উম্মে হানীর স্বামীর পালিয়ে জীবন রক্ষা করতে হলো, তা এক বিষ্ময়কর ঘটনা। উপরের আসহাবে রাসুলের জীবনকথা বইটির পাতা থেকেই যা স্পষ্ট।

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৯/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৬৭. নারীর দেয়া নিরাপত্তা সম্পর্কে
২৭৬৩। উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি মক্কা বিজয়ের দিন মুশরিকদের এক লোককে আশ্রয় দেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁকে বিষয়টি অবহিত করায় তিনি বললেনঃ তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছো ‘আমরাও তাকে আশ্রয় দিলাম এবং তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছো, ‘আমরাও তাকে নিরাপত্তা দিলাম।(1)
(1). সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)

কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। কে ছিল সেই কয়েকজন মুশরিক, যাদেরকে উম্মে হানী আশ্রয় দিয়েছিলেন? তারা ছিলেন উম্মে হানীর স্বামী হুবায়রা ইবন ‘আমর ইবন ‘আয়িয আল-মাখযুমী-এর দুইজন ভাই, অর্থাৎ উম্মে হানীর দেবর। তাদের নাম ছিল আবদুল্লাহ বিন আবি রাবিয়া আল-মাখযুমি ও আল হারিথ বিন হিশাম। প্রসিদ্ধ ইসলামিক ইতিহাসবিদ মুহাম্মদ বিন আমর আল ওয়াকিদীর বর্ণনায় সেইদিনের ঘটনা বিস্তারিত জানা যায়। তবে ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইবনে হাজার আসকালানি তাকে অসীম জ্ঞানের অধিকারী বললেও তার নানা সমালোচনা করেছেন, সেই কারণে আল ওয়াকিদীর বর্ণনা এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে না। আগ্রহী পাঠকগণ The Life of Muhammad: Al-Waqidi’s Kitab al-Maghazi বইটি নিজ উদ্যোগে কিনে পড়তে পারেন।


উম্মে হানীর অনুরোধ রক্ষা

উম্মে হানীর অনুরোধে কয়েকজন মুশরিককে হত্যা করতে বাধা দেন মুহাম্মদ, যেখানে হযরত আলী তাদের হত্যা করার সংকল্প করে ফেলেছিল [31] [32]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ৮/ সালাত
পরিচ্ছেদঃ ২৪৫। এক কাপড় গায়ে জড়িয়ে সালাত আদায় করা করা।
৩৫০। ইসমা’ঈল ইবনু আবূ উওয়ায়স (রহঃ) …. উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব (রাঃ) বলেনঃ আমি বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে রখেছেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ কে? আমি উত্তর দিলামঃ আমি উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব। তিনি বললেনঃ মারহাবা, হে উম্মে হানী! গোসল করার পরে তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত শেষ করলে তাঁকে আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সহোদর ভাই (‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)) এক লোককে হত্যা করতে চায়, অথচ আমি সে লোকটিকে আশ্রয় দিয়েছি। সে লোকটি হুবায়রার ছেলে অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উম্মে হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাঁকে আশ্রয় দিলাম। উম্মে হানী (রাঃ) বলেনঃ তখন ছিল চাশতের সময়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬৯. মহিলাদের পক্ষ থেকে কাউকে নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান
২৯৪৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … উম্মে হানী বিনতে আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তখন তাঁকে এ অবস্থায় পেলাম যে, তিনি গোসল করছিলেন এবং তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ইনি কে? আমি বললাম, আমি উম্মে হানী বিনতে আবূ তালিব। তখন তিনি বললেন, মারহাবা হে উম্মে হানী! যখন তিনি গোসল থেকে ফারেগ হলেন, একখানি কাপড় শরীরে জড়িয়ে আট রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়িয়ে আদায় করলেন। তারপর আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সহোদর ভাই আলী (রাঃ) হুবাইরার অমুক পুত্রকে হত্যা করার সংকল্পে করছে, আর আমি তাকে আশ্রয় দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাকে আশ্রয় দিয়েছি। উম্মে হানী (রাঃ) বলেন, তা চাশতের সময় ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)


বার্ধক্যেও সেই প্রেম অটুট ছিল

শুধু যে বাল্যকালেই নবী মুহাম্মদ উম্মে হানীকে ভালবাসতেন তাই নয়, বার্ধক্যেও সেই প্রেম অটুট ছিল। বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও নবী মুহাম্মদ তাকে বিয়ের আবারো প্রস্তাব দেন। সেই সময়ে মুহাম্মদ বিপুল অর্থ সম্পদ এবং প্রতিপত্তির মালিক। তার রয়েছে অনেকগুলো স্ত্রী এবং দাসীদের হেরেম। কিন্তু সেই সময়েও উম্মে হানী সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৪৫। সহাবা (রাযিঃ)-গণের ফাযীলাত (মর্যাদা)
পরিচ্ছেদঃ ৪৯. কুরায়শ নারীদের ফাযীলাত
৬৩৫৩-(…/…) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ ও ‘আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালিবের কন্যা উম্মু হানী (রাযিঃ) এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো বার্ধক্যে পৌছে গেছি এবং আমার সন্তানাদিও রয়েছে। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ উটে আরোহণকারিণীদের মধ্যে (তুমি) সর্বোত্তম নারী। তারপর মা’মার (রাবী) ইউনুস বর্ণিত হাদীসের হুবহু উল্লেখ করেন। কিন্তু তার বর্ণনায় এতটুকু উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেন, অর্থাৎ “তারা শৈশবে সন্তানের প্রতি খুবই স্নেহশীল ও যত্নশীল”। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২২৯, ইসলামিক সেন্টার ৬২৭৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৪৬/ সাহাবী (রাঃ) গণের ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ৪৯. কুরায়শী মহিলাদের ফযীলত
৬২২৯। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালিবের কন্যা উম্মে হানীকে বিবাহের পয়গাম পাঠালেন। তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি এবং আমার সন্তান সন্ততি আছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সর্বাপেক্ষা উত্তম নারী। যারা উটে আরোহণ করে ……। এরপর মা’মার ইউনূস বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তরে তার বর্ণনায় এতটুকু পার্থক্য যে, তিনি বলেন,أَحْنَاهُ عَلَى وَلَدٍ فِي صِغَرِهِ অর্থাৎ “তারা শৈশবে সন্তানের প্রতি মেহেরবান ও যত্নশীল হয়ে থাকেন।”
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

হাদিসটিতে লক্ষ্য করুন, নবী মুহাম্মদ বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার সাথে উটে আরোহণকারী নারী হিসেবে উম্মে হানীকে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, উটে আরোহণকারী নারীকে বিবাহের জন্য উত্তম নারী বলে নবীর কেন মনে হলো? উটে চড়া মেয়ে বিবাহ করলে কী কী সুবিধা পাওয়া যায়? আসুন প্রাসঙ্গিকভাবে উট বা ঘোড়া বা মহিষের মত প্রাণীর ওপর চড়া একজন নারীর ছবি দেখে নিই,

উম্মে হানী 51

তিরমিযী শরীফেও এই বিবাহের প্রস্তাবের হাদিসটি পাওয়া যায় [33]

উম্মে হানী 53

এমনকি সূরা আহযাবের ৫০ নম্বর আয়াতটি যে সকল নারীদের জন্য অবতীর্ণ হয়েছিল উম্মে হানী ছিলেন তাদের একজন। তিনি হিজরতকারীদের অন্তর্ভুক্ত চাচাতো বোন না হলেও যদি রাজী হতেন নিজেকে সমর্পণ বা হেবা বা ন্যস্ত করতে তাহলেই হয়ত এই প্রেম পূর্ণতা পেয়ে যেত। আমরা সেটি জানতে পারি তাফসীর থেকে। [34]

সূরা আহযাব ৩৩, আয়াত ৫০

নবী মুহাম্মদের সাথে মেলামেশা

মিরাজের রাতে নবী মুহাম্মদ উম্মে হানীর বাড়িতে ছিলেন বলে উপরে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ আমরা দিয়েছি। কিন্তু যাদের সাথে ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ বৈধ, তাদের বাড়িতে রাত্রিযাপন সম্পর্কে ইসলামের অবস্থান কী? আসুন একটি হাদিস পড়ি, [35]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ – (বিবাহের প্রস্থাবিত) পাত্রী দেখা ও সতর (পর্দা) প্রসঙ্গে
৩১০১-[৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো বিবাহিতা নারীর নিকটে স্বামী অথবা মাহরাম ছাড়া (বিবাহ নিষিদ্ধ যাদের সাথে) কেউ যেন রাত্রি যাপন না করে। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম ২১৭১, সহীহাহ্ ৩০৮৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)

সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মাঝেমাঝেই উম্মে হানীর বাড়িতেও যেতেন। দেখাসাক্ষাৎ, কথাবার্তা বলতেন, খানাপিনা করতেন [36]

সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ২৮/ খাদ্য সম্পর্কিত
পরিচ্ছেদঃ সিরকা।
১৮৪৮। আবূ কুরায়ব (রহঃ) … উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমার কাছে এলেন এবং বললেন, তোমাদের কাছে কিছু আছে কি? আমি বললাম, শুকনো রুটির কয়েকটি টুকরা ও সিরকা ছাড়া আর কিছুই নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা-ই নিয়ে আস, যে বাড়িতে সিরকা আছে যে বাড়িতে সালনের কোন অভাব আছে বলে বলা যায় না। হাসান, সহীহাহ ২২২০, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৮৪১ (আল মাদানী প্রকাশনী)
এ হাদীসটি হাসান; এ সূত্রে গারীব। উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর রিওয়ায়াত হিসাবে এ সূত্র ছাড়া এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই। উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা আলী (রাঃ)-এর অনেক দিন পর ইন্তিকাল করেন।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)

আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, একই পাত্র থেকে নবী মুহাম্মদ এবং উম্মে হানী পানীয় পান করতেন [37]

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৮/ সওম (রোযা)
পরিচ্ছেদঃ ৭৩. এ ব্যাপারে অনুমতি প্রসঙ্গে
২৪৫৬। উম্মু হানী (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন ফাতিমাহ (রাযি.) এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাম পাশে বসলেন আর উম্মু হানী (রাযি.) বসলেন তাঁর ডান পাশে। বর্ণনাকারী বলেন, এক দাসী এক পাত্র পানীয় এনে তাঁকে দিলে তিনি তা থেকে কিছু পান করার পর উম্মু হানীর দিকে পাত্রটি এগিয়ে দিলেন এবং তিনি তা থেকে পান করলেন। উম্মু হানী (রাযি.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে এখন ইফতার করলাম, আমি তো সওম রেখেছিলাম! তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি এগুলো কাযা করতে চাও? তিনি বললেন, না। তিনি বললেনঃ যদি তা নফল (সওম) হয় তাহলে কোনো ক্ষতি নেই।(1)
সহীহ।
(1). তিরমিযী, বায়হাক্বী, দারিমী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)

আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, একই পাত্র থেকে থেকে প্রথমে মুহাম্মদ, এরপরে উম্মে হানী শরবত পান করতেন [38]

উম্মে হানী 56
উম্মে হানী 58

আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, মক্কা বিজয়ের দিনে মুহাম্মদ এবং উম্মে হানী পাশাপাশি বসে পানীয় পান করেছিলেন। অর্থাৎ, ততদিনে পর্দার বিধান নাজিল হয়ে গেছে। পর্দার বিধান নাজিলের পরেও বিবাহ বৈধ এমন নারীর সাথে মুহাম্মদের পাশাপাশি বসে পানীয় পান করা কতটা ইসলাম সম্মত, তা ইসলামের আলেমগণই ভাল বলতে পারবেন [39]

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৮/ সওম
পরিচ্ছেদঃ ২৬৩. রোযার জন্য নিয়্যাত না করার অনুমতি।
২৪৪৮. উসমান ইবন আবূ শায়বা …. উম্মে হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (রাবী) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন বিজয়ের পর ফাতিমা (রাঃ) আগমন করেন। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বামদিকে উপবেশন করেন এবং উম্মে হানী (রাঃ) ডানদিকে। তিনি (রাবী) বলেন, এ সময় জনৈক দাসী একটি পাত্রে কিছু পানীয় দ্রব্য এনে পেশ করলে তিনি তা পান করেন। এরপর তিনি এর অবশিষ্টাংশ উম্মে হানীকে পান করতে দেন। তিনি তা পান করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তো ইফতার করলাম, কিন্তু আমি যে রোযা ছিলাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি কোন কাযা রোযা আদায় করছিলে? তিনি বলেন, না। তিনি বলেন, যদি তা নফল রোযা হয়, তবে এতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)

আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, মক্কা বিজয়ের দিনে যেন অনেক দিনের প্রতীক্ষার শেষে উম্মে হানীর বাসায় যান নবী মুহাম্মদ। গিয়ে গোছল করেন নবী মুহাম্মদ। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সময়ে উম্মে হানীর স্বামী কোথায় ছিল? তিনি তো নবী মুহাম্মদের ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাহলে, বাড়িতে আর কে কে ছিল সেইদিন? [40]

সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৩/ বিতর
পরিচ্ছেদঃ দ্বিপ্রহরের সালাত।
৪৭৪. আবূ মূসা মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ….. আবদুর রহমান ইবনু আবী লায়লা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ উম্মু হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা ব্যতীত আমার নিকট আর কেউ একথা বর্ণনা করেন নি যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এই সালাত (ç) আদায় করতে দেখেছেন। উম্মু হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে, রাসূল ফতহে মক্কার দিন (মক্কা বিজয়ের দিন) তাঁর ঘরে এলেন এবং গোসল করলেন। এরপর আট রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত সালাত আদায় করতে আমি তাঁকে আর কখনও দেখিনি। তবে তাঁর এই সালাতে তিনি রুকূ ও সিজদা পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করেছিলেন। – ইবনু মাজাহ ১৩৭৯, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪ (আল মাদানী প্রকাশনী)
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান-সহীহ। ইমাম আহমদ এই বিষয়ে উম্মু হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর রিওয়ায়াতটিকেই সর্বাধিক সহীহ বলে মনে করেন। এই বিষয়ে একটি হাদীসসের রাবী অপর এক সাহাবী নুআয়ম রাদিয়াল্লাহু আনহু (এর পিতার নাম) সম্পর্কে ঐতিহাসিকভাবে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেনঃ তিনি হচ্ছেন নুআয়ম ইবনু খাম্মার, কারো কারো মত হ’ল, ইবনু আম্মার, কেউ কেউ বলেনঃ ইবনু হাব্বার, কারো কারো মতে ইবনু হাম্মাম। তবে শুদ্ধ হ’ল ইবনু হাম্মার। রাবী আবূ নু’আয়ম রাদিয়াল্লাহু আনহু এই বিষয়ে সন্দেহের শিকার হয়েছেন। তিনি তাকে ভুল করে ইবনু ইবনু খাম্মার বলে উল্লেখ করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি এর উল্লেখ ছেড়ে দেন এবং (পিতার নাম উল্লেখ করা ছাড়াই) নু’আয়ম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ নু’আয়ম (রহঃ) থেকে আমাকে এই সম্পর্কে রিওয়ায়াত করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলা (রহঃ)


রমজান মাসে রোজা নফল না ফরজ?

আমরা সকলেই জানি যে, রমজান মাসে মক্কা বিজয় হয়েছিল। সিরাতে ইবনে হিশাম থেকে জানা যায়, মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর সময় নবী নিজেই রোজা রেখেছিলেন, পথে ইফতারও করেছিলেন। [41]

উম্মে হানী 60

মক্কায় প্রবেশ এবং এরপরের এই ঘটনাবলী সবই ঘটেছিল রমজান মাসে। আমরা ভালভাবেই জানি, রমজান মাসে রোজা রাখা দ্বিতীয় হিজরিতেই মুসলিমদের জন্য ফরজ হয়ে গেছে [42]। এমতাবস্থায় নবী মুহাম্মদ কীভাবে উম্মে হানী আর ফাতিমাকে নিয়ে সবাই মিলেমিশে পানীয় পান করছেন? অদ্ভুত ঘটনাই বটে। ইসলামিক এপোলোজিস্টরা যদি গোঁজামিল দেয়ার জন্য বলে যে, মুহাম্মদ যেহেতু সফরে ছিল, তাই রোজা তার জন্য ফরজ ছিল না, এই যুক্তি দিলেও এখানে কাজ হবে না। কারণ উম্মে হানী তো সফর করেনি। তার জন্য তো রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। সদ্য ইসলাম গ্রহণ করা উম্মে হানীকে নবী মুহাম্মদ রমজান মাসে ঠিকমতো রোজা রাখার হুকুম না দিয়ে তার রোজা ভঙ্গ করে দেয়ার ব্যবস্থা কেন করলেন, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না [43]

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৮/ সওম
পরিচ্ছেদঃ ২৬৩. রোযার জন্য নিয়্যাত না করার অনুমতি।
২৪৪৮. উসমান ইবন আবূ শায়বা …. উম্মে হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (রাবী) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন বিজয়ের পর ফাতিমা (রাঃ) আগমন করেন। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বামদিকে উপবেশন করেন এবং উম্মে হানী (রাঃ) ডানদিকে। তিনি (রাবী) বলেন, এ সময় জনৈক দাসী একটি পাত্রে কিছু পানীয় দ্রব্য এনে পেশ করলে তিনি তা পান করেন। এরপর তিনি এর অবশিষ্টাংশ উম্মে হানীকে পান করতে দেন। তিনি তা পান করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তো ইফতার করলাম, কিন্তু আমি যে রোযা ছিলাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি কোন কাযা রোযা আদায় করছিলে? তিনি বলেন, না। তিনি বলেন, যদি তা নফল রোযা হয়, তবে এতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)

যে বিষয়টি এখানে জেনে নেয়া দরকার, একজন রোজাদার মানুষের জন্য খাওয়া দাওয়া এবং সহবাস নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এখন আসুন আরও একটি হাদিস পড়ি, যেখান থেকে জানা যায়, ভুলবশতঃ কেউ যদি রোজা থাকা অবস্থায় কিছু খেয়ে ফেলে বা পান করে ফেলে, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। তার রোজা সম্পন্ন করতে হবে, কারণ ঐ ভুল করে খাওয়া বা পান করা রোজা ভঙ্গ বলে গণ্য হবে না। অথচ দেখুন, নবী কিন্তু রমজানের এই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ রোজাটিকে নফল বলছেন এবং তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন না যে, ভুল করে পান করলে রোজা ভাঙ্গে না। উম্মে হানীর যে রোজাটি সম্পন্ন করা উচিত ছিল, সেটি নবী তাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন না কেন? [44]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩০/ সাওম/রোযা
পরিচ্ছেদঃ ৩০/২৬. সায়িম ভুলবশতঃ কিছু খেলে বা পান করে ফেললে।
وَقَالَ عَطَاءٌ إِنْ اسْتَنْثَرَ فَدَخَلَ الْمَاءُ فِي حَلْقِهِ لاَ بَأْسَ إِنْ لَمْ يَمْلِكْ وَقَالَ الْحَسَنُ إِنْ دَخَلَ حَلْقَهُ الذُّبَاب فَلاَ شَيْءَ عَلَيْهِ وَقَالَ الْحَسَنُ وَمُجَاهِدٌ إِنْ جَامَعَ نَاسِيًا فَلاَ شَيْءَ عَلَيْهِ
‘আত্বা (রহ.) বলেন, নাকে পানি দিতে গিয়ে যদি তা কন্ঠনালীতে ঢুকে যায়, আর সে ফিরাতে সক্ষম না হয় তা হলে কোন দোষ নেই। হাসান (রহ.) বলেন, সায়িম ব্যক্তির কন্ঠনালীতে মাছি ঢুকে পড়লে তার কিছু করতে হবে না। হাসান এবং মুজাহিদ (রহ.) বলেছেন, সায়িম ব্যক্তি যদি ভুলবশতঃ স্ত্রী সহবাস করে ফেলে, তবে তার কিছু করতে হবে না।
১৯৩৩. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সওম পালনকারী ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার সওম পুরা করে নেয়। কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন। (৬৬৬৯, মুসলিম ১৩/৩৩, হাঃ ১১৫৫, আহমাদ ৬৬৬৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৭৯৫ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮০৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)


গোছলের হিসেবে গড়মিল

এবারে আসুন একটি হিসেব মিলিয়ে দেখি। দৃশ্যপট হচ্ছে মক্কা বিজয়ের দিন (ইংরেজি অনুবাদ দেখুন)। মক্কার কাফেররা তখন মুহাম্মদের আতঙ্কে দিশেহারা। সেইদিনই, উম্মে হানী একজন কাফেরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, যাকে আলী হত্যা করতে চাচ্ছিলেন। উম্মে হানী দ্রুত মুহাম্মদের কাছে আসলেন, সেই কাফেরকে আলীর হাত থেকে রক্ষার জন্য। নবী মুহাম্মদ তখন গোছল করে বের হলেন এবং চাশতের সময় নামাজ আদায় করলেন [45] [46] [47] [48]

উম্মে হানী 62
উম্মে হানী 64
উম্মে হানী 66

এরপরে মুহাম্মদ গোছল থেকে বের হন, ঐ একই স্থানে বসে ফাতিমা, মুহাম্মদ এবং উম্মে হানী পাশাপাশি বসে এক ধরণের পানীয় পান করেন। উম্মে হানী রোজা ছিলেন, তাই তিনি পানীয় পান করতে আপত্তি করেছিলেন। অর্থাৎ সেইদিন উম্মে হানীর জন্য কোন কিছু খাওয়া বা যৌন সম্পর্ক করা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু, নবী মুহাম্মদ প্রায় জোর করেই উম্মে হানীর রোজা ভাঙ্গিয়ে দেন। রোজা যেহেতু ভেঙ্গে গেছে, তাই এরপরে আর কোন কিছু পান করা, খাওয়া বা যৌন সঙ্গম করায় উম্মে হানির আর কোন বাধা বিপত্তি রইলো না। পাঠক, ঘটনা পরম্পরা খুব ভালভাবে লক্ষ্য করুন [49]

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৮/ সওম
পরিচ্ছেদঃ ২৬৩. রোযার জন্য নিয়্যাত না করার অনুমতি।
২৪৪৮. উসমান ইবন আবূ শায়বা …. উম্মে হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (রাবী) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন বিজয়ের পর ফাতিমা (রাঃ) আগমন করেন। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বামদিকে উপবেশন করেন এবং উম্মে হানী (রাঃ) ডানদিকে। তিনি (রাবী) বলেন, এ সময় জনৈক দাসী একটি পাত্রে কিছু পানীয় দ্রব্য এনে পেশ করলে তিনি তা পান করেন। এরপর তিনি এর অবশিষ্টাংশ উম্মে হানীকে পান করতে দেন। তিনি তা পান করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তো ইফতার করলাম, কিন্তু আমি যে রোযা ছিলাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি কোন কাযা রোযা আদায় করছিলে? তিনি বলেন, না। তিনি বলেন, যদি তা নফল রোযা হয়, তবে এতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)

এরপরে নবী উম্মে হানীর বাড়িতে গেলেন। সেখানে উম্মে হানীর স্বামী বাড়িতে নেই। সেখানে নবী আবারো গোছল করলেন। এরপরে আবারো নামাজ পড়লেন। প্রশ্ন হচ্ছে, একই দিনে একই সময়ে দুইবার গোছলের প্রয়োজন হলো কেন? স্বামী বাসায় নেই যেই বেগানা নারীর, সেই উম্মে হানীর বাসায় নবী কী এমন করলেন, যে কিছুক্ষণ আগে গোছল করা নবীর আরো একবার গোছলের প্রয়োজন হলো?

আসুন, মক্কা বিজয়ের দিনের বিবরণটি ভালভাবে পড়ি। পাঠকগণ লক্ষ্য করুন, নবী একবার মক্কার উচ্চ এলাকাতে অবস্থান করছেন। সেই সময়ে উম্মে হানীর ঘরে পলাতক মানুষেরা লুকিয়ে ছিল। এই সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফাতিমা এবং নবী এই সময়ে একবার গোছল করেছেন [50] [51]পরের হাদিসে লক্ষ্য করুন, ঘটনাস্থল উম্মে হানীর ঘরে। নবী মুহাম্মদ মাথার চুলে বেণী করে অর্থাৎ সেজেগুজে উম্মে হানীর বাড়িতে উপস্থিত [52]। সেখানে আরেকবার গোছল করেছেন নবী। প্রশ্ন হচ্ছে, একই সময়ে দুইবার গোছলের প্রয়োজন হল কেন? উম্মে হানীর ঘরে নবী এমন কী করলেন যে, আরও একবার গোছলের দরকার হলো? [53]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – চুল আঁচড়ানো
৪৪৪৬-[২৮] উম্মু হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মক্কা বিজয়ের দিন) একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন, এ সময় তাঁর মাথার চুলে চারটি জুলফি ছিল। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
[1] সহীহ : আহমাদ ২৬৮৯০, তিরমিযী ১৭৮১, আবূ দাঊদ ৪১৯১, ইবনু মাজাহ ৩৬৩১, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ৩৬৯১৭, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ২০৪৮৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩/ হায়েয
পরিচ্ছেদঃ ১৬. গোসলকারী কাপড় অথবা অনুরূপ কিছু দিয়ে পর্দা করে নিবে
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৬৫৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৩৬
৬৫৮। মুহাম্মাদ ইবনু রুমহ ইবনু মুহাজির (রহঃ) … উম্মু হানী বিনতে আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্নিত। মক্কা বিজয়ের বছর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। তিনি তখন মক্কার উচু এলাকায় অবস্থান করছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল করতে গেলে ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে আড়াল করে দিল। এরপর তিনি নিজের কাপড় নিয়ে পরিধান করলেন। তারপর আট রাকআত চাশতের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)

উম্মে হানী 68
উম্মে হানী 70

উল্লেখ্য, পুরুষের চুলে বেণী একটি পুরনো কালচার। বিশেষ বিশেষ দিনে এই ধরনের সাজসজ্জা করে পুরুষেরা বের হতো। আসুন AI দিয়ে তৈরি একটি ছবি দেখে নিই, যেখানে চুলে বেণী করা একজন আরব পুরুষ তার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে, ব্যাপারটি কল্পনায় তুলে আনা হয়েছে।

উম্মে হানী 72

এখানে একটি জরুরি বিষয় জানিয়ে নেয়া প্রয়োজন, নবী মুহাম্মদ একাই যে সেজেগুজে চুলে বেণী করে উম্মে হানীর সাথে দেখা করতে যেতেন তা কিন্তু নয়। উম্মে হানীও সেজেগুজে মুহাম্মদের সাথে দেখা করতে আসতেন। যেটি দেখে একবার উমর খুব ক্ষিপ্ত হয়ে উম্মে হানীকে আজেবাজে কথা বলেছিলেন। আসুন সেই হাদিসটি পড়ি, [54]

tabarani:21526 – Zakariyyā b. Yaḥyá al-Sājī > Hudbah b. Khālid > Ḥammād b. Salamah > ʿAbd al-Raḥman b. Abū Rāfiʿ
[Machine] That Umm Hani’ bint Abi Talib went out wearing a garment that showed her ears, so Umar ibn al-Khattab said to her, “Know that Muhammad cannot give you any benefit.” So she went to the Prophet ﷺ and informed him. The Messenger of Allah ﷺ said, “What is wrong with some people who claim that my intercession does not reach the people of my household, while my intercession reaches all of them.” Two tribes were mentioned.
الطبراني:٢١٥٢٦ – حَدَّثَنَا زَكَرِيَّا بْنُ يَحْيَى السَّاجِيُّ ثنا هُدْبَةُ بْنُ خَالِدٍ ثنا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ
أَنَّ أُمَّ هَانِئٍ بِنْتَ أَبِي طَالِبٍ خَرَجَتْ مُتَبَرِّجَةً قَدْ بَدَا قُرْطَاها فَقَالَ لَهَا عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ اعْلَمِي فَإِنَّ مُحَمَّدًا لَا يُغْنِي عَنْكِ شَيْئًا فَجَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَأَخْبَرَتْهُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ «مَا بَالُ أَقْوَامٍ يَزْعُمُونَ أَنَّ شَفَاعَتِي لَا تَنَالُ أَهْلَ بَيْتِي وَإِنَّ شَفَاعَتِي تَنَالُ حا وَحُكْمَ» حا وَحُكْمَ قَبِيلَتَانِ

উম্মে হানী 74

এবারে আবারো আগের হাদিসটির কাছে ফিরে যাই। ইসলামিক এপোলোজিস্টগণ যেসমস্ত অসততা সাধারণত করে থাকে, তারা হয়তো এই বাঙলা অনুবাদ দেখিয়ে বলতে পারে যে, এখানে মুহাম্মদের বাড়ির কথা বলা হয়েছে! এই কারণে একইসাথে ইংরেজি অনুবাদটিও যুক্ত করে দেয়া হলো [55]

উম্মে হানী 76

আসুন বুখারী শরীফ থেকেও হাদিসটি দেখে নিই। লক্ষ্য করুন, এই হাদিসের রাবি একমাত্র উম্মে হানী। অর্থাৎ আর কোন সাহাবী সেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেই [56] [57]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছেদঃ ২২১৪. মক্কা বিজয়ের দিন নাবী (সাঃ) এর অবস্থানস্থল
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩৯৬২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪২৯২
৩৯৬২। আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) … ইবনু আবী লায়লা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চাশতের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছে এ কথাটি একমাত্র উম্মে হানী (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ আমাদের কাছে বর্ণনা করেননি। তিনি বলেছেন যে, মক্কা বিজয়ের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়িতে গোসল করেছিলেন, এরপর তিনি আট রাকাত সালাত আদায় করেছেন। উম্মে হানী (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ সালাত অপেক্ষা হালকাভাবে অন্য কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি। তবে তিনি রুকূ, সিজ্‌দা পুরোপুরই আদায় করেছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইবনু আবূ লায়লাহ (রহঃ)

উম্মে হানী 78

এবারে আসুন বিবরণটি তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে পড়ে নিই, [58]

উম্মে হানী 80

এবারে আসুন ইসলাম হাউজ থেকে প্রকাশিত সালাতুল আউওয়াবীন গ্রন্থ থেকে একটি পাতা দেখে নেয়া যাক [59]

উম্মে হানী 82
উম্মে হানী 84

উপরের বইটির আরেকটি ভার্শন রয়েছে, সেই বইটির পৃষ্ঠা নম্বর ভিন্ন। সেই ভার্শনও একইসাথে দিয়ে দেয়া হচ্ছে [60]

উম্মে হানী 86
উম্মে হানী 88
উম্মে হানী 90

অর্থাৎ, মক্কা বিজয়ের দিনে যা ঘটেছিলঃ

সময় স্থানঘটনা
মক্কা বিজয়ের দিন [61] মক্কার উচ্চ এলাকায় [62] [63]ফাতিমার উপস্থিতিতে নবীর গোছল, উম্মে হানীর আগমন। [64] [65]
উম্মে হানীর বাসায় তখন দরজা বন্ধ, ভেতরে লুকিয়ে আছেন কিছু মানুষ। [66]
মক্কা বিজয়ের দিন [67] [68]মক্কার উচ্চ এলাকায় [69]ফাতিমা-মুহাম্মদ-উম্মে হানী পাশাপাশি বসে পানীয় সেবন।
মুহাম্মদের অনুরোধে উম্মে হানীর রোজা ভঙ্গ। [70]
মক্কা বিজয়ের দিন [71]মক্কার উচ্চ এলাকা থেকে উম্মে হানির বাড়ির দিকে যাত্রানবী মুহাম্মদ সাজগোজ করলেন। চুলে চারটি বেণী করলেন। [72]
মক্কা বিজয়ের দিন [73] [74]উম্মে হানীর বাসায় [75] [76] উম্মে হানীর বাড়িতে নবীর গমন, উম্মে হানীর স্বামী বাড়িতে অনুপস্থিত।
সেখানে গিয়ে নবী আবারো গোছল করলেন। [77] [78] [79]

এবারে আসুন, আরও কয়েকটি হাদিস পড়ি। যেই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, একাধিকবার বা একাধিক স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের পরে গোছল করা নবীর একটি স্বভাব ছিল। যেই লোক একি দিনে বা রাতে ১১ জনার সাথে সঙ্গমের পরে একবার গোছল করতো, মাঝখানে এক বিবির থেকে আরেক বিবির কাছে যাওয়ার সময় গোছল করে নিতো না, সেই ১১ জনার দীর্ঘ তালিকার মধ্যে স্ত্রী দাসীবাঁদী থাকতো, সেই লোক একই নামাজের ওয়াক্তে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই দুইবার গোছল করবে কেন, কোন অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়াই, সেটি একটি চিন্তা করার মত বিষয়ই বটে! [80] [81] [82] [83] [84] [85] [86] [87]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫/ গোসল
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫। একাধিকবার বা একাধিক স্ত্রীর সাথে সংগত হওয়ার পর একবার গোসল করা।
২৬৫। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) …. মুহাম্মদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে (আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ))-এর উক্তিটি* উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ আবূ ‘আবদুর রহমানকে রহম করুন। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুশবু লাগাতাম, তারপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তারপর ভোরবেলায় এমন অবস্থায় ইহ্‌রাম বাঁধতেন যে, তাঁর দেহ থেকে খুশবু ছড়িয়ে পড়তো।
(আবদুল্লাহ্ ইবন ‘উমর (রাঃ))-এর উক্তিটি: আমি এমন অবস্থায় ইহরাম বাঁধতে পছন্দ করি না, যাতে সকালে আমার দেহ থেকে খুশবু ছড়িয়ে পড়ে ।
‏হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মাদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫/ গোসল
পরিচ্ছেদঃ ১৮৫। একাধিকবার বা একাধিক স্ত্রীর সাথে সংগত হওয়ার পর একবার গোসল করা।
২৬৬। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) …. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের কাছে দিনের বা রাতের কোন এক সময় পর্যায়ক্রমে মিলিত হতেন। তাঁরা ছিলেন এগারজন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি এত শক্তি রাখতেন? তিনি বললেন, আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম যে, তাঁকে ত্রিশজনের শক্তি দেওয়া হয়েছে। সা’ঈদ (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আনাস (রাঃ) তাঁদের কাছে হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে (এগারজনের স্থলে) নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৫/ গোসল
পরিচ্ছেদঃ ৫/১২. একাধিকবার বা একাধিক স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হবার পর একবার গোসল করা।
২৬৭. মুহাম্মাদ ইবনু মুনতাশির (রহ.) তাঁর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ‘আয়িশাহ (রাযি.)-এর নিকট (‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.))-এর উক্তিটি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ আবূ ‘আবদুর রহমানকে রহম করুন। আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সুগন্ধি লাগাতাম, তারপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তারপর ভোরবেলায় এমন অবস্থায় ইহরাম বাঁধতেন যে, তাঁর দেহ হতে খুশবু ছড়িয়ে পড়তো। (২৭০; মুসলিম ১৫/৭, হাঃ ১১৯২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মাদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৫/ গোসল
পরিচ্ছেদঃ ৫/১২. একাধিকবার বা একাধিক স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হবার পর একবার গোসল করা।
২৬৮. আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের নিকট দিনের বা রাতের কোন এক সময়ে পর্যায়ক্রমে মিলিত হতেন। তাঁরা ছিলেন এগারজন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি এত শক্তি রাখতেন? তিনি বললেন, আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম যে, তাঁকে ত্রিশজনের শক্তি দেয়া হয়েছে। সা‘ঈদ (রহ.) ক্বাতাদাহ (রহ.) হতে বর্ণনা করেন, আনাস (রাযি.) তাঁদের নিকট হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে (এগারজনের স্থলে) নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন। (২৮৪, ৫০৬৮, ৫২১৫ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

সুনানে ইবনে মাজাহ
১/ পবিত্রতা ও তার সুন্নাতসমূহ
পরিচ্ছেদঃ ১/১০১. যে ব্যক্তি সকল স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর একবার গোসল করে।
১/৫৮৮। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সকল স্ত্রীর সাথে সহবাস শেষে একবার গোসল করতেন।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: বুখারী ২৬৮, ২৮৪, ৫০৬৮, ৫২১৫; মুসলিম ৩০৯, তিরমিযী ১৪০, নাসায়ী ২৬৩-৬৪, ৩১৯৮; আবূ দাঊদ ২১৮, আহমাদ ১১৫৩৫, ১২২২১, ১২২৯০, ১২৫১৪, ১২৫৫৫, ১২৯৪২, ১৩০৯৩, ১৩২৩৬; দারিমী ৭৫৩-৫৪, ইবনু মাজাহ ৫৮৯।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবূ দাউদ ২১১-২১৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

সুনানে ইবনে মাজাহ
১/ পবিত্রতা ও তার সুন্নাতসমূহ
পরিচ্ছেদঃ ১/১০১. যে ব্যক্তি সকল স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর একবার গোসল করে।
২/৫৮৯। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গোসলের পানি প্রস্তুত করে রাখলাম। তিনি একই রাতে তাঁর সকল স্ত্রীর সাথে সহবাসের পর একবার গোসল করেন।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: বুখারী ২৬৮, ২৮৪, ৫০৬৮, ৫২১৫; মুসলিম ৩০৯, তিরমিযী ১৪০, নাসায়ী ২৬৩-৬৪, ৩১৯৮; আবূ দাঊদ ২১৮, আহমাদ ১১৫৩৫, ১২২২১, ১২২৯০, ১২৫১৪, ১২৫৫৫, ১২৯৪২, ১৩০৯৩, ১৩২৩৬; দারিমী ৭৫৩-৫৪, ইবনু মাজাহ ৫৮৮।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ লিগাইরিহী। তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবূ দাউদ ২১৪। উক্ত হাদিস্বে রাবী সালিহ ইবনুল আদখার সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইমাম বুখারী তাকে দুর্বল বলেছেন। আবু হাতিম ও আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আল আজালী বলেন, তার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। উক্ত হাদিসটি শাহিদ এর ভিত্তিতে সহিহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

সুনান আদ-দারেমী
১. পবিত্রতা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ৭১. যিনি একাধিক স্ত্রীর নিকট গমণ করে একবার গোসল করেন
৭৭৬. আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই রাতে পর্যায়ক্রমে স্ত্রীগণের নিকট গমণ করতেন।(1)
(1) তাহক্বীক্ব: এর সনদ সহীহ। হাদীসটি বুখারী মুসলিমের হাদীস।
তাখরীজ: তাহাবী, শারহু মা’আনিল আছার ১/১২৯; আমরা এর পূর্ণ তাখরীজ করেছি মুসনাদুল মাউসিলী নং ২৯৪২, ৩১৭৫, ৩১৭৬, ৩২০৩, ৩৭১৮, ৩৭১৯, ৩৮৮৬ ও সহীহ ইবনু হিব্বান নং ১২০৬-১২০৯; এবং পরের টীকাটি দেখুন। (সহীহ বুখারী ২৬৮; সহীহ মুসলিম ৩০৯; আহমাদ ৩/১৮৫; তিরমিযী ১৪০; আবু দাউদ ২১৮; নাসাঈ ১/১৪৩, ১৪৪ ও ৬/৫৩, ৫৪; ইবনু মাজাহ ৫৮৮; বাইহাকী ১/২০৪; সহীহ ইবনু খুযাইমা ২৩১; সহীহ ইবনু হিব্বান , ১১৯৫. ১১৯৬; আব্দুর রাযযাক, আল মুছান্নাফ ১০৬১; বাগাবী, শারহুস ‍সুন্নাহ নং ২৬৯, ২৭০; আবুশ শাইখ, আখলাকুন নাবী সা:, পৃ: ২৩১; আবু আওয়ানাহ ১/২৮০; আবু নুয়াইম, হিলইয়া ৭/২৩২; তাবারানী, আস সগীর ১/২৪৬; অনেকগুলো সূত্রে। – মুহাক্বিক্বের তাহক্বীক্বকৃত মুসনাদুল মাউসিলী নং ২৯৪১, ২৯৪২ এর টীকা অনুসরণে।- অনুবাদক))
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

সুনান আদ-দারেমী
১. পবিত্রতা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ৭১. যিনি একাধিক স্ত্রীর নিকট গমণ করে একবার গোসল করেন
৭৭৭. (অপর সূত্রে) আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই রাতে পর্যায়ক্রমে স্ত্রীগণের সাথে মিলিত হতেন।(1)
(1) তাহক্বীক্ব: এর সনদ সহীহ।
তাখরীজ: আহমাদ ৩/২৫২; আর পূর্ণ তাখরীজের জন্য আগের টীকাটি দেখুন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)


নতুন বোতলে পুরনো মদঃ প্রাচীন মিথের পুনরাবৃত্তি

ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ এবং ধর্ম প্রচারকগণ (Apologists) প্রায়শই মিরাজের ঘটনাকে একটি অনন্য এবং অভূতপূর্ব অলৌকিক ঘটনা হিসেবে দাবি করেন। তাদের মতে, ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা দ্বিতীয়টি নেই এবং এটি মুহাম্মদের নবুওয়াতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রমাণ। কিন্তু তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব (Comparative Theology) এবং ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে দেখলে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র ফুটে ওঠে। সপ্তম শতাব্দীর আরব সমাজে কোনো ব্যক্তির স্বশরীরে কিংবা আত্মিকভাবে স্বর্গে আরোহণের গল্প মোটেও নতুন বা অনন্য কোনো ধারণা ছিল না। ইসলামের আবির্ভাবের বহু শতাব্দী আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের জুডিও-খ্রিস্টান ঐতিহ্যে এবং বিশেষ করে পারস্যের জরোয়াস্ট্রিয়ান (অগ্নিপূজক) ধর্মে হুবহু একই ধরণের আখ্যান বা মিথ প্রচলিত ছিল [88]

মিরাজের গল্পের সাথে সবচেয়ে চমকপ্রদ এবং বিস্তারিত সাদৃশ্য পাওয়া যায় প্রাচীন পারসিক ধর্মগ্রন্থ ‘আরদা ভিরাফ নামাগ’ (Book of Arda Viraf)-এর সাথে। এই গ্রন্থটি সাসানিড শাসনামলে (২২৪–৬৫১ খ্রিষ্টাব্দ) রচিত, যা ইসলামের উৎপত্তির সময়ের চেয়েও বেশ পুরনো। পারস্যে যখন ধর্মের প্রভাব কমে আসছিল, তখন ধর্মবিশ্বাসকে পুনরুজ্জীবিত করতে ‘ভিরাফ’ নামক এক পুণ্যবান ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া হয়, যিনি পরকাল ভ্রমণ করে এসে মানুষকে সতর্ক করবেন—ঠিক যেমন মিরাজের মাধ্যমে জান্নাত-জাহান্নামের খবর নিয়ে আসার ধারণা দেওয়া হয় [89]

ভ্রমণের ধরণ ও প্রস্তুতি: ‘আরদা ভিরাফ নামাগ’-এর বর্ণনায় দেখা যায়, ভিরাফকে স্বর্গভ্রমণে পাঠানোর আগে ‘মাং’ (Mang) নামক এক ধরণের বিশেষ নেশাজাতীয় পানীয় বা হ্যাম্ব পান করানো হয়। এটি পান করার পর তিনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হন এবং তার শরীর নিথর হয়ে পড়ে, কিন্তু তার আত্মা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উর্ধ্বাকাশে ভ্রমণে বের হয় [90]। ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাস এবং হাদিস পর্যালোচনায় দেখা যায়, মিরাজের রাতে মহানবী মক্কার ‘হাতিম’ চত্বরে কিংবা উম্মে হানির ঘরে গভীর ঘুমে বা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন। অনেক বর্ণনায় একে ‘স্বপ্নযোগে ভ্রমণ’ বা ‘রুহানি সফর’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে, যা ভিরাফের আচ্ছন্ন অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ [91]

গাইড বা পথপ্রদর্শক: ভিরাফ একা এই ভ্রমণে যাননি। তাকে পথ দেখানোর জন্য এবং বিভিন্ন স্তরের (আসমান) সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ‘সরোশ’ (Srosh) এবং ‘আদার’ (Adar) নামক দুইজন ফেরেস্তা বা ঐশ্বরিক সত্তা তার সঙ্গী হয়েছিলেন [92]। ইসলামের মিরাজের ঘটনাতেও আমরা অবিকল একই চিত্র দেখি, যেখানে জিবরাঈল নবীকে বোরাকে চড়ানো থেকে শুরু করে আকাশের বিভিন্ন স্তরে নবীদের সাথে সাক্ষাৎ এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পথ দেখিয়ে নিয়ে যান।

স্বর্গ-নরক দর্শন ও পুলসিরাত: ভিরাফ তার যাত্রাপথে স্বর্গের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করেন এবং পুণ্যবানদের জন্য নির্ধারিত অকল্পনীয় সুখ-শান্তি প্রত্যক্ষ করেন। এরপর তিনি নরক বা দোজখ পরিদর্শন করেন, যেখানে পাপীদের ওপর ভয়াবহ শাস্তির দৃশ্য দেখেন। জরোয়াস্ট্রিয়ান ধর্মে পরকালে পার হওয়ার জন্য ‘চিনভাট ব্রিজ’ (Chinvat Bridge) বা বিচারক সেতুর ধারণা বহু আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। এই সেতুটি পুণ্যবানদের জন্য চওড়া হয়ে যায়, কিন্তু পাপীদের জন্য তা চুলের চেয়েও সরু এবং তরবারির চেয়েও ধারালো হয়ে যায়—যা থেকে পাপীরা নিচে নরকের আগুনে পড়ে যায় [93]। বিস্ময়করভাবে, ইসলামে ‘পুলসিরাত’-এর যে বর্ণনা দেওয়া হয় (চুলের চেয়ে সূক্ষ্ম, তরবারির চেয়ে ধারালো), তা জরোয়াস্ট্রিয়ানদের এই চিনভাট ব্রিজের হুবহু কপি [94]

এছাড়া ইহুদি ও খ্রিস্টান অ্যাপোক্রিফাল (Apocryphal) সাহিত্যেও, যেমন ‘টেস্টামেন্ট অফ আব্রাহাম’ (Testament of Abraham) বা ‘এসেনশন অফ আইজায়া’ (Ascension of Isaiah)-তে নবীদের স্বর্গে আরোহন, আকাশের বিভিন্ন স্তর ভেদ করা এবং সরাসরি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের গল্প প্রচলিত ছিল [95]। সুতরাং, নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখলে বোঝা যায়, মিরাজের গল্পটি তৎকালীন আরবে কোনো অভিনব ঘটনা ছিল না, বরং তা ছিল প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যে মানুষের মুখে মুখে ফেরা মিথলজিগুলোরই একটি নবরূপায়ণ বা ‘Rebranding’, যাকে বাঙলায় বলে নতুন বোতলে পুরনো মদ পরিবেশন। অতএব, মিরাজের কাহিনি অলৌকিক বাস্তবতার চেয়ে বরং তৎকালীন ধর্মীয় গল্প–সংস্কৃতির ধারাবাহিক পুনর্লিখন বলেই স্পষ্ট হয়।

টেবিল: আর্দা ভিরাফ, ইহুদি–খ্রিস্টান অ্যাপোক্রিফা বনাম মিরাজ – একটি তুলনামূলক চিত্র

নিচের টেবিলে জরোয়াস্ট্রিয়ান মিথলজি ‘আরদা ভিরাফ’-এর সাথে মহানবীর মিরাজের ঘটনার সাদৃশ্যগুলো তুলে ধরা হলোঃ

বিষয়/উপাদানজরথুস্ত্রীয় (Zoroastrian) আরদা ভিরাফ নামাহ (৩য়–১০ম শতাব্দী)ইহুদি–খ্রিস্টান অ্যাপোক্রিফা (২য় শতাব্দী খ্রিপূ–৪র্থ শতাব্দী খ্রিস্টাব্দ)ইসলামিক মিরাজ (৭ম শতাব্দী)মিলের মাত্রা (১–১০)মন্তব্য
ভ্রমণের উৎসআরদা ভিরাফ নামাহ – সাসানীয় পারস্যের আধ্যাত্মিক রাতভ্রমণ কাহিনিBook of Enoch, Ascension of Isaiah, Testament of Abraham, 2 Enochকুরআন (১৭:১, ৫৩:১–১৮) + বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী১০/১০তিনটিই “এক রাতের স্বর্গ-নরক ভ্রমণ”
ভ্রমণের শুরুর অবস্থামাং (হ্যালুসিনোজেনিক ওয়াইন) পান করে ৭ দিনের গভীর নিদ্রা/ট্রান্সইনোক/ইশায়া ঘুম বা ধ্যানে পড়ে যান, আত্মা শরীর ছেড়ে যায়অনেক হাদিসে নবী ঘুমন্ত অবস্থায় (বুখারী ৩৮৮৭: “আমি ঘুমিয়ে ছিলাম…”)৯/১০সব ক্ষেত্রেই শরীর ঘুমন্ত, আত্মা ভ্রমণ করে
পথপ্রদর্শক দেবদূতসরোশ (Sraosha) ও আদার (Atar) – দুই দেবদূতArchangel Michael, Raphael, Gabrielজিবরাঈল (গ্যাব্রিয়েল), বা দুই অথবা তিনজন ফেরেশতা৯/১০একই নামের দেবদূত (Gabriel)
বিশেষ যানবাহনপ্রথমে ষাঁড়-মুখো জন্তু, পরে আলোকময় পথEnoch-এ “ঝড়ো বাতাসের রথ”, Isaiah-এ আলোর রথবোরাক – ষাঁড়-মুখো, ঘোড়ার শরীর, ডানা, বিদ্যুৎগতি৯.৫/১০বোরাকের বর্ণনা আরদা ভিরাফের যানের প্রায় অবিকল
সেতু বা বিচার পুলচিনভাট সেতু – চুলের চেয়ে সরু, তলোয়ারের চেয়ে ধারালোJewish Merkabah texts-এ “Bridge of Fire”, “Narrow Bridge”পুলসিরাত – চুলের চেয়ে সরু, তলোয়ারের চেয়ে ধারালো১০/১০শব্দগত ও বর্ণনাগত পুরোপুরি মিল
স্বর্গের স্তর সংখ্যাস্পষ্টভাবে ৭ স্তরের আসমান (star station, moon station…)2 Enoch-এ ৭ বা ১০ আসমান, Hekhalot literature-এ ৭ হেকালট৭ আসমান – প্রতিটিতে একজন নবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ১০/১০সংখ্যা ও ক্রম একই
প্রতি স্তরে নবী/পুণ্যবানদের সাক্ষাৎপ্রতি স্তরে পূর্ববর্তী যিশত, দেবতা, পুণ্যবান আত্মাEnoch-এ আদম, আবেল, ইত্যাদি; Isaiah-এ Abel, Enoch১ম: আদম, ২য়: ঈসা+ইয়াহিয়া, ৩য়: ইউসুফ, ৪র্থ: ইদরিস, ৫ম: হারুন, ৬ষ্ঠ: মূসা, ৭ম: ইব্রাহিম১০/১০একই কাঠামো: নিচের দিকে পুরনো নবী, উপরে নতুন
সর্বোচ্চ স্তরে ঈশ্বরের সিংহাসনআহুরা মাজদার আরশ ও দরবারEnoch-এ “Great Glory”-র সিংহাসন, Isaiah-এ “Lord of Glory”সিদরাতুল মুনতাহা → আল্লাহর আরশ (কিছু বর্ণনায় সরাসরি দর্শন)৯.৫/১০একই কনসেপ্ট
স্বর্গ-নরকের দৃশ্যপাপীদের নির্দিষ্ট শাস্তি (যেমন ব্যভিচারীদের লিঙ্গ কেটে খাওয়ানো)Enoch-এ পাপীদের শাস্তি: অন্ধকার গর্ত, আগুন, কীটজাহান্নামে ব্যভিচারীদের লিঙ্গে হুক, সুদখোরের পেটে সাপ৯/১০শাস্তির ধরন প্রায় একই
ভ্রমণের উদ্দেশ্যধর্মীয় বিশৃঙ্খলা দূর করা, মানুষকে সৎপথে আনাপাপ থেকে সতর্ক করা, ঈশ্বরের বার্তা পৌঁছানোনামাজ ফরজ করা, কাফেরদের চ্যালেঞ্জ, উম্মতকে সতর্ক করা১০/১০একই মিশন
ফিরে এসে বর্ণনা দেওয়া৭ দিন পর জেগে উঠে বিস্তারিত বর্ণনা দেনEnoch/Isaiah ফিরে এসে লিখে রাখেননবী ফিরে এসে কাফেরদের বলেন, আবু বকর বিশ্বাস করেন১০/১০একই প্যাটার্ন
সময়ের দৈর্ঘ্য৭ দিন শরীর ঘুমন্ত, আত্মা ভ্রমণ করেEnoch-এ ৭ দিনের ভ্রমণের উল্লেখ আছেএক রাতে পুরো ভ্রমণ, বিছানা ঠান্ডা হয়নি৮/১০সংখ্যা ৭-এর প্রতি আকর্ষণ সবার মধ্যে

আল-আকসা মসজিদঃ ঐতিহাসিক বাস্তবতা বনাম মিরাজের উপকথা

কুরআনের সূরা বনি ইসরাঈলের ১ নম্বর আয়াতে এবং অসংখ্য হাদিসের বর্ণনায় ইসলামের একটি কেন্দ্রীয় দাবি হলো— মিরাজের রাতে নবী মক্কার ‘মসজিদুল হারাম’ থেকে জেরুজালেমের ‘মসজিদুল আকসা’য় (দূরবর্তী মসজিদ) ভ্রমণ করেছিলেন। সেখানে তিনি অন্যান্য নবীদের সাথে সালাত আদায় করেন এবং ইমামতি করেন। কিন্তু ধর্মতাত্ত্বিক আবেগের বাইরে এসে যদি আমরা ঐতিহাসিক দলিল এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের (Archaeological Evidence) দিকে তাকাই, তবে বড় ধরণের বিভ্রান্তি ও অসঙ্গতি সামনে আসে। সপ্তম শতাব্দীর গোড়ার দিকে, অর্থাৎ ৬২১ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেমে কি আদৌ কোনো ‘মসজিদ’ বা প্রার্থনালয় দাঁড়িয়ে ছিল?

ইতিহাস এবং প্রত্নতত্ত্ব দ্ব্যর্থহীনভাবে উত্তর দিচ্ছে— না, ছিল না।

১. ধ্বংসস্তূপের ইতিহাস (৭০ খ্রিস্টাব্দ পরবর্তী সময়): জেরুজালেমের যে স্থানটিকে বর্তমানে ‘টেম্পল মাউন্ট’ বা আল-আকসা চত্বর (Haram al-Sharif) বলা হয়, সেখানে মূলত ইহুদিদের ‘দ্বিতীয় পবিত্র মন্দির’ (Second Temple) অবস্থিত ছিল। ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সেনাপতি টাইটাস (Titus) জেরুজালেম অবরোধ করেন এবং এই মন্দিরটি সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করে দেন [96]। এরপর দীর্ঘ কয়েকশ বছর এই স্থানটি পরিত্যক্ত ছিল। ইহুদিদের জন্য এটি ছিল কান্নার জায়গা, আর খ্রিস্টান শাসকরা যিশুর ভবিষ্যদ্বাণী (যেখানে বলা হয়েছিল মন্দিরের একটি পাথরও অন্য পাথরের ওপর থাকবে না) সত্য প্রমাণ করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই এই জায়গাটিকে ধ্বংসস্তূপ হিসেবে ফেলে রেখেছিল [97]। অতএব, জেরুজালেমে কোনো মসজিদ না থাকা অবস্থায় ‘মসজিদুল আকসা’-এ নবীর সালাত আদায়ের দাবিটি ঐতিহাসিকভাবে অসম্ভব ও কালগতভাবে অসঙ্গত।

২. প্রার্থনালয় নাকি আবর্জনার ভাগাড়? ইসলামের আবির্ভাবের সময় এবং তথাকথিত মিরাজের রজনীতে (আনুমানিক ৬২১ খ্রিষ্টাব্দ) জেরুজালেম ছিল বাইজেন্টাইন খ্রিস্টানদের শাসনাধীন। ঐতিহাসিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করে যে, বাইজেন্টাইনরা ইহুদি ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের জন্য টেম্পল মাউন্টের ওই পবিত্র স্থানটিকে শহরের আবর্জনার ভাগাড় (Garbage Dump) বা ডাম্পিং গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করত। শহরের যাবতীয় ময়লা এবং নারীদের ঋতুস্রাবের ন্যাকড়া ফেলার স্থান ছিল সেটি [98]

এমনকি মহানবীর মৃত্যুর পর ৬৩৭-৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে যখন দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব জেরুজালেম জয় করেন, তখন তিনি নিজেও ওই স্থানটিকে ময়লার স্তূপ হিসেবেই আবিষ্কার করেন। বিখ্যাত মুসলিম ঐতিহাসিক আল-তাবারির বর্ণনায় পাওয়া যায়, খলিফা উমর যখন টেম্পল মাউন্টে প্রবেশ করেন, তখন তাকে এবং তার সঙ্গীদের হামাগুড়ি দিয়ে ময়লার স্তূপ পার হতে হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তিনি নিজে সেই আবর্জনা পরিষ্কারে হাত লাগিয়েছিলেন [99]

তাবারীর বর্ণনা অনুযায়ী, খিলাফতের বিস্তারের সময় মুসলিম বাহিনী সিরিয়া–ফিলিস্তিন অঞ্চল দখল করছিল। জেরুজালেম (Bayt al-Maqdis) তখন বাইজেন্টাইনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং তারা এক কঠিন অবরোধের মুখে পড়েছিল। জেরুজালেমের খ্রিস্টান নেতারা (প্যাট্রিয়ার্ক Sophronius) চেয়েছিল—শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর personally খলিফা উমর নিজে উপস্থিত থাকবেন

এ কারণে:

  • খলিফা উমর মদিনা থেকে সিরিয়ায় যান
  • আল-জাবিয়াহ পৌঁছে চুক্তির খসড়া প্রস্তুত হয়
  • এরপর তিনি জেরুজালেমে প্রবেশ করেন

জেরুজালেমে প্রবেশ করার পর তাবারী বর্ণনা করে:

  • উমর টেম্পল মাউন্ট এলাকায় যান (বিবরণে এটিকে মসজিদ এলাকা/মাসজিদ বলা হয়েছে)
  • সবচাইতে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য হচ্ছে, সেখানে কোনো মসজিদ ছিল না।
  • পুরো জায়গাটি ছিল রোমান/বাইজেন্টাইনদের ফেলে রাখা আবর্জনার স্তূপে ঢাকা
  • এমনকি তারা ইহুদিদের প্রাচীন মন্দিরের স্থান (Temple of Solomon) পর্যন্ত আবর্জনা দিয়ে ঢেকে রেখেছিল
  • উমর নিজে হাঁটু গেড়ে সেই আবর্জনা হাতে করে তুলতে শুরু করেন
  • সবাইকে বলেন: “আমি যা করছি, তোমরা তাই করো”

এই বর্ণনাটি এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি দেখায়:

  • উমরের সময় আল-আকসা নামে কোনো মসজিদ ছিল না
  • টেম্পল মাউন্ট ছিল আবর্জনার স্তূপে ঢাকা পরিত্যক্ত এলাকা
  • উমর নিজে হাতে সেই আবর্জনা পরিষ্কার করতে অংশ নেন

আসুন তাবারির ইতিহাস গ্রন্থ থেকে দেখে নেয়া যাক,

Then he (Umar) stood up from his place of prayer and went to the rubbish in which the Romans buried the temple (bayt al-maqdis) at the time of the sons of Israel. (When he came to the Byzantines, they had uncovered a part but left the rest under the rubbish.) He said: ‘O people, do what I am doing.’ He knelt in the midst of the rubbish and put it by the handful into the lower part of his mantle.

উমর তাঁর নামাজের জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং সেই আবর্জনার দিকে গেলেন, যার মধ্যে রোমানরা বায়তুল মাকদিস (Temple) কে পুঁতে রেখেছিল। যখন তিনি বাইজেন্টাইনদের কাছে এলেন, তারা এর একটি অংশ পরিষ্কার করেছিল, কিন্তু বাকিটা আবর্জনার নিচে রেখেছিল।”
“তিনি বললেন: ‘হে লোকেরা, তোমরা যা আমি করছি তাই করো।’
তিনি আবর্জনার মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বসলেন এবং মুঠোভরে সেই আবর্জনা তুলে তাঁর চাদরের নিচের অংশে ভরতে লাগলেন।

উম্মে হানী 92

সুতরাং প্রশ্ন জাগে, ৬২১ খ্রিস্টাব্দে নবী যখন মিরাজে গেলেন, তখন সেখানে কোনো মসজিদের অস্তিত্ব ছিল না, ছিল কেবল আবর্জনার পাহাড়। তাহলে তিনি ‘প্রবেশ’ করলেন কোথায়? আর ‘সালাত’ আদায় করলেন কোন চত্বরে? এবারে আসুন আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থ থেকে দেখি, [100]

হযরত উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রা)-এর হাতে বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়
আবূ জা’ফর ইব্‌ন জারীর উল্লেখ করেছেন যে, এ ঘটনা ঘটেছে ১৫ হিজরী সনে। তিনি এটি বর্ণনা করেছেন সায়ফ ইবন উমর থেকে। তিনি এবং অন্যরা এ প্রসঙ্গে যা উল্লেখ করেছেন তার সারমর্ম এই যে, সেনাপতি আবূ উবায়দা দামেশক অভিযান শেষ করেন। তারপর তিনি জেরুযালেমের অধিবাসীদেরকে আল্লাহ্র পথে এবং ইসলামের পথে আসার আহ্বান জানিয়ে পত্র লিখেন। তিনি লিখেন যে, হয় ইসলাম গ্রহণ করবে অথবা জিয়া কর প্রদান করবে অথবা যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত হবে। তারা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিতে অস্বীকার করে। তিনি তাঁর সেনাদল নিয়ে ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। দামেশকের শাসনভার দিয়ে যান সাঈদ ইব্‌ন যায়দকে। তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস অবরোধ করেন। সেখানে খ্রিস্টানদের জীবন যাত্ৰা সংকটময় হয়ে ওঠে। তারপর তারা চুক্তি সম্পাদনে রাজী হয় এই শর্তে যে, স্বয়ং আমীরুল মু’মিনীন খলীফা উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রা) এসে সন্ধিপত্র সম্পাদন করবেন। সেনাপতি আবূ উবায়দা এই সংবাদ খলীফাকে জানান। খলীফা তাঁর উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ করেন। এ প্রসঙ্গে হযরত উসমান বললেন, স্বয়ং খলীফা ওখানে যাওয়ার দরকার নেই। তাহলেই ওরা চরমভাবে অপমানিত হবে। হযরত আলী (রা) খলীফার যাবার পক্ষে মত প্রকাশ করলেন। তাহলে অবরোধ আরোপকারী মুসলিম সৈন্যদের কষ্ট লাঘব হবে এবং সহজে ওই শহর জয় করা যাবে। খলীফা উমর (রা) হযরত আলী (রা)-এর পরামর্শ গ্রহণ করলেন। সৈন্য-সামন্ত নিয়ে তিনি জেরুযালেমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। মদীনার শাসনভার দিয়ে গেলেন হযরত আলী (রা)-এর হাতে। তাঁর আগে আগে যাচ্ছিলেন হযরত আব্বাস ইব্‌ন আবদুল মুত্তালিব।
খলীফা সিরিয়া পৌঁছলে সেনাপতি আবূ উবায়দা ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় সেনাপতিগণ তাঁর সাথে সাক্ষাত করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন খালিদ ইব্‌ন ওয়ালীদ এবং ইয়াযীদ ইব্‌ন আবু সুফয়ান। আবূ উবায়দা পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন; উমর (রা)-ও পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। আবূ উবায়দা (রা) হযরত উমর (রা)-এর হাতে চুমু খেতে চাচ্ছিলেন তখন হযরত উমর (রা) আবূ উবায়দার কদমবুচি অর্থাৎ পায়ে চুমু খেতে চাইলেন। আবূ উবায়দা (রা) তা দিলেন না। উমর (ঝ)-ও তাঁর হাতে চুমু খেতে দিলেন না। খলীফা উমর (রা) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসের খ্রিস্টানদের সাথে সন্ধি চুক্তি সম্পাদন করলেন এবং শর্ত করলেন যে, তিন দিনের মধ্যে সকল রোমান নাগরিক বায়তুল মুকাদ্দাস ছেড়ে চলে যাবে। এরপর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করলেন সেই দরজা দিয়ে, মি’রাজের রাতে রাসূলুল্লাহ্ যে দরজা দিয়ে প্রবশে করেছিলেন।
কেউ কেউ বলেছেন যে, বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশের সময় তিনি তালবিয়া পাঠ করেছিলেন। ভেতরে গিয়ে দাউদ (আ)-এর মিহরাবের পার্শ্বে তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায আদায় করলেন। পরের দিন ফজরের নামায মুসলমানদেরকে সাথে নিয়ে জামাআতের সাথে আদায় করলেন। প্রথম রাক’আতে পাঠ করলেন সূরা সাদ (০)। তাতে তিনি তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করলেন। তাঁর সাথে মুসলমানগণও সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করলেন। দ্বিতীয় রাকআতে সূরা বনী ইসরাঈল পাঠ করলেন। এরপর তিনি ‘সাখরা’ বা বিশেষ পাথরের নিকট এলেন। কা’ব আল আহবার (রা) থেকে তিনি ওই স্থান সম্পর্কে জেনে নিয়েছিলেন। কা’ব (রা) এই ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন যেন তিনি মসজিদটি ওই পাথরের পেছনে তৈরি করেন। হযরত উমর (রা) বললেন, ইয়াহুদী ধর্ম তো শেষ হয়ে গিয়েছে। তারপর বায়তুল মুকাদ্দাসের সম্মুখে মসজিদ নির্মাণ করলেন। এখন সেটি উমরী মসজিদ নামে পরিচিত। এরপর তিনি সাখরা বা বিশেষ পাথর থেকে মাটি সরাতে লাগলেন। নিজ চাদর ও জামাতে করে তিনি মাটি বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর সাথে মুসলমানগণও মাটি সরানোরা কাজে শরীক হয়। জর্ডানবাসীকে অবশিষ্ট মাটি সরানোর কাজে নিয়োজিত করা হয়। রোমানগণ ওই পাথরের স্থানকে ময়লার ডাস্টবিন বানিয়েছিল। কারণ ওই পাথর ছিল ইয়াহুদীদের কেবলা। এমনকি ঋতুমততী খ্রিস্টান মহিলাগণ তাদের রক্তমাখা কাপড় এনে ওখানে ফেলে যেত। এটি ছিল প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা। কারণ ইয়াহুদীগণ ‘আল কামামা’ নামক স্থানটিকে এভাবে ডাস্টবিন বানিয়েছিল। কামামা হলো সেই স্থান যেখানে ইয়াহুদীগণ ঈসা (আ) ভেবে তাঁর অনুরূপ এক ব্যক্তিকে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল। ওই ব্যক্তির কবরে তারা ময়লা ও নোংরা বস্তু নিক্ষেপ করত। এজন্যে ওই স্থানটি আল-কামামা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। পরবর্তীতে খ্রিস্টানগণ সেখানে যে গির্জা বানিয়েছিল সেটির নাম দিয়েছিল ‘আল কামামা’ গির্জা।
হিরাক্লিয়াস যখন জেরুযালেমে অবস্থান করছিল তখন তাঁর নিকট রাসূলুল্লাহ্ এসে পৌঁছেছিল। সে তখন খ্রিস্টানদের অপকর্মের বিরুদ্ধে ওদেরকে নসীহত করে। ওরা তখন ব্যাপকহারে ময়লা-আবর্জনা ফেলছিল সাখরা বা বিশেষ পাথরটির উপর। এমনকি ওই ময়লার ডিপো দাউদ (আ)-এর মিহরাব পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তখন হিরাক্লিয়াস বলেছিল, এই ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপের কারণে তোমরা খুন হবার- নিহত হবার যোগ্য। এর দ্বারা তোমরা এই মসজিদের অবমাননা করছ। ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়া (আ)-এর খুনের অপরাধে যেমন বনী ইসরাঈল নিহত হয়েছিল, এই অপরাধে তোমরা নিশ্চয় খুন হবে। এরপর হিরাক্লিয়াস এই ময়লা আবর্জনা অপসারণের জন্যে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা অপসারণ শুরু করেছিল। ১ অংশ অপসারণের পরই মুসলমানগণ বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করে নেয়। এরপর খলীফা উমার ইবন খাত্তাব (রা) ওগুলো অপসারণ করেন। হাফিজ বাহাউদ্দীন ইব্‌ন হাফিজ আবুল কাসিম ইবন আসাকির তাঁর “আল মুখতাস্কা ফী ফাদাইলিল মাসজিদিল আকসা” গ্রন্থে এই সকল হাদীস সনদ ও মতনসহ বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।
আপন সনদে সায়ফ উল্লেখ করেছেন যে, উমর (রা) মদীনা থেকে একটি ঘোড়ায় আরোহণ করেছিলেন যাতে তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়। তাঁর অবর্তমানে মদীনার শাসনভার দিয়ে যান হযরত আলী (রা)-এর হাতে। তিনি দ্রুত অগ্রসর হয়ে জাবিয়া গিয়ে পৌঁছেন। তিনি সেখানে অবতরণ
মোদ্দাকথা রাসূলুল্লাহ্ -এর নবুওয়াত প্রাপ্তির ৩০০ বছর পূর্ব থেকে খ্রিস্টানগণ যখন বায়তুল মুকাদ্দাসের কর্তৃত্ব অর্জন করে, তখন তারা “আল-কুমামাহ্” নামক স্থানটিকে পরিষ্কার করে নেয় এবং সেখানে “হাইলা” গির্জা নির্মাণ করে। রাজা কনস্টানটিনোপলের মাতা ওই গির্জা নির্মাণ করেন। রাজার মায়ের নাম ছিল হায়লানাহ্ হিরানিয়্যাহ বুন্দুকিয়্যাহ্। সে তার পুত্রকে আদেশ দিল—সে যেন ঈসা (আ)-এর জন্ম স্থানে ‘বেথেলহাম’ তৈরি করে, আর মাতা নিজে তাদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী তাঁর কবরের উপর হাইলা গির্জা নির্মাণ করে। অর্থাৎ তারাও প্রতিশোধ হিসেবে ইয়াহূদীদের কিবলাকে ময়লার ডিপোতে পরিণত করে।
হযরত উমর (রা) যখন বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করলেন এবং সাখরার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হলেন তখন সাখরার উপর স্তূপীকৃত ময়লা-আবর্জনা সরানোর নির্দেশ দিলেন। কথিত আছে যে, হযরত উমর (রা) নিজের চাদরে ভরে নিজে ময়লা সরিয়েছেন। তারপর হযরত কা’ব (রা)-কে জিজ্ঞেস করলেন—মসজিদ স্থাপন করবেন কোন্ জায়গায়। কবি পরামর্শ দিয়েছিলেন সাখরার পেছনে নির্মাণের। খলীফা উমর (রা) তাঁর বুকে হাত মেরে বললেন, হে কা’ব! ইয়াহুদী যুগের তো অবসান ঘটেছে। আমরা এখন ওই ধর্মের পক্ষে কাজ করব কেন ? শেষ পর্যন্ত খলীফা নির্দেশ দিলেন বায়তুল মুকাদ্দাসের সম্মুখে মসজিদ নির্মাণ করার জন্যে।
ইমাম আহমদ (র) বলেন, আসওয়াদ ইবন আমির আবূ গু’আয়ব থেকে বর্ণিত যে, উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রা) জাবিয়ায় অবস্থান করেছেন তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করেছেন। তিনি বলেন যে, ইব্‌ন সালামা বলেছেন, আবূ সিনান বর্ণনা করেছেন উবায়দ ইব্‌ন আছম সূত্রে। তিনি বলেছেন, আমি শুনেছি উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রা) কাব (রা)-কে বলেছেন, বলুন তো আমি কোন্ স্থানে নামায পড়ব? কাব বললেন, আপনি যদি আমার পরামর্শ গ্রহণ করেন তবে সাখরার পেছনে নামায পড়ুন তাহলে পুরো বায়তুল মুকাদ্দাস আপনার সম্মুখে থাকবে। হযরত উমর (রা) বললেন, “ইয়াহুদী ধর্মের তো অবসান হয়েছে, না—আমি বরং সেখানেই নামায পড়ব, যেখানে রাসূলুল্লাহ্ নিজে নামায পড়েছেন। তারপর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসের মধ্যে কিবলার দিকে অর্থাৎ সামনের দিকে অগ্রসর হলেন এবং সেখানে নামায পড়লেন। তারপর তাঁর চাদর বিছিয়ে সাখরা থেকে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে নিতে লাগলেন। লোকজনও তা পরিষ্কার করতে লেগে গেল। এটি একটি উত্তম সনদ। হাফিজ যিয়াউদ্দীন মুকাদ্দেসী তাঁর ‘আলমুসতাখরাজ’ গ্রন্থে এটি উদ্ধৃত করেছেন। ‘মুসনাদই উমর’ নামে আমাদের লিখিত গ্রন্থে আমরা এই সনদের বর্ণনাকারীদের সম্পর্কে পর্যালোচনা করেছি। তাছাড়া তিনি যে সব মারফূ’ হাদীস বর্ণনা করেছেন আর তাঁর থেকে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলোকে ফিক্হ শাস্ত্রের অধ্যায় অনুযায়ী সন্নিবেশিত করেছি। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ্।

উম্মে হানী 94
উম্মে হানী 96
উম্মে হানী 98

৩. বর্তমান আল-আকসার নির্মাতা কে? বর্তমানে আমরা জেরুজালেমে যে সোনালী গম্বুজ বা ‘ডোম অফ দ্য রক’ (কুব্বাত আস-সাখরা) এবং ‘মসজিদুল আকসা’ দেখি, তা মহানবীর সময়ের স্থাপনা নয়। উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান এবং তার পুত্র আল-ওয়ালিদ-এর শাসনামলে (৬৮৫-৭১৫ খ্রিষ্টাব্দে) এই বিশাল স্থাপনাগুলো তৈরি করা হয় [101]

অর্থাৎ, কুরআনে যখন ‘মসজিদুল আকসা’র কথা বলা হচ্ছে, তখন বাস্তবে সেখানে ইট-পাথরের কোনো কাঠামো ছিল না। হাদিসে বর্ণিত নবীর ‘মসজিদে প্রবেশ করা’, ‘বোরাককে খুঁটির সাথে বাঁধা’—এই বর্ণনাগুলো ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিকভাবে অসম্ভব, কারণ বাঁধার মতো কোনো খুঁটি বা প্রবেশ করার মতো কোনো দরজা তখন অস্তিত্বহীন ছিল।

আল-আকসা / টেম্পল মাউন্ট – ঐতিহাসিক টাইমলাইন
ধ্বংসপ্রাপ্ত ইহুদি মন্দির থেকে রোমানদের আবর্জনার স্তূপ, সেখান থেকে উমরের আমলে পরিষ্কার ও পরবর্তীতে মসজিদ নির্মাণ—মূল টার্নিং পয়েন্টগুলোর সারাংশ।
মন্দির ধ্বংস / দখল
পরিত্যক্ত / আবর্জনার স্তূপ
মসজিদ / ইসলামী স্থাপনা
রাজনৈতিক দখল ও রূপান্তর
৫৮৬ খ্রিষ্টপূর্ব (আনুমানিক)
প্রথম মন্দির ধ্বংস
ব্যাবিলনীয় রাজা নবূখদ নসর জেরুজালেম দখল করে সোলোমনের মন্দির ধ্বংস করেন। টেম্পল মাউন্ট প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়।
৭০ খ্রিস্টাব্দ
দ্বিতীয় মন্দির ধ্বংস
রোমান জেনারেল টাইটাস ইহুদি বিদ্রোহ দমন করে সেকেন্ড টেম্পল ধ্বংস করেন। টেম্পল মাউন্ট আবারও ধ্বংসস্তূপ ও পুড়িয়ে দেয়া অবকাঠামোতে ভরে যায়।
২য়–৬ষ্ঠ শতক খ্রিস্টাব্দ
পরিত্যক্ত / আবর্জনার স্তূপ
রোমান ও পরে বাইজেন্টাইন যুগে এই চত্বর ধর্মীয় কেন্দ্র না থেকে বরং আংশিক ধ্বংসস্তূপ, আংশিক আবর্জনার ফেলা জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইসলামী উৎসে (তাবারী প্রভৃতি) বর্ণিত—রোমানরা বায়তুল মাকদিসকে আবর্জনার নিচে পুঁতে রেখেছিল।
৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ / ১৫ হিজরি
উমরের আগমন ও পরিষ্কার
খলিফা উমর ইবনে খাত্তাব জেরুজালেম দখলের পর আল-মাসজিদ এলাকায় প্রবেশ করলে দেখেন পুরো স্থানটি আবর্জনার স্তূপে ঢাকা। তিনি নিজে হাঁটু গেড়ে আবর্জনা পরিষ্কার করতে অংশ নেন এবং দক্ষিণ দিকে একটি সরল কাঠামোর নামাজঘর স্থাপন করেন।
৬৯১–৬৯২ খ্রিস্টাব্দ (আনুমানিক)
ডোম অফ দ্য রক
উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান টেম্পল মাউন্টের মাঝখানে শিলাখণ্ডের উপর বিশাল গম্বুজওয়ালা স্থাপনা কুব্বাতুস সাখরা (Dome of the Rock) নির্মাণ করেন। এটি বর্তমান সোনালী গম্বুজওয়ালা ভবন।
প্রায় ৭০৫ খ্রিস্টাব্দ
বৃহৎ মসজিদুল আকসা
আব্দুল মালিকের পুত্র খলিফা আল-ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিক দক্ষিণ প্রান্তে আজকের “মসজিদুল আকসা” ভবনের পূর্বসূরি বৃহৎ জামেয় মসজিদ নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করেন। নবীর সময়ে এই স্থাপনাগুলোর কোনোটিই ছিল না।
১০৯৯–১১৮৭ খ্রিস্টাব্দ
ক্রুসেড ও পুনরুদ্ধার
ক্রুসেডাররা জেরুজালেম দখল করলে আল-আকসা ভবনকে প্রাসাদ ও নাইটস টেম্পলার-এর সদর দফতর বানায়। সালাহুদ্দিন আইয়ূবী ১১৮৭ সালে শহর পুনর্দখল করে স্থাপনাকে আবার মসজিদে রূপান্তর করেন।
পরবর্তী শতকগুলো
সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ
মামলুক, উসমানীয় ও আধুনিক যুগে ভূমিকম্প ও যুদ্ধের ক্ষতির পর বহুবার আল-আকসা কমপ্লেক্সে সংস্কার, পুনর্নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়েছে। বর্তমান কাঠামোটি বিভিন্ন যুগের স্থাপত্য পরিবর্তনের ফল।
নোট: কিছু সাল আনুমানিক (≈) এবং ইতিহাসবিদদের সাধারণ মতের উপর ভিত্তি করে। মূল ফোকাস হলো ধারাবাহিকতা দেখানো—প্রথমে ইহুদি মন্দির, তারপর দীর্ঘ সময় ধ্বংসস্তূপ ও আবর্জনার স্তূপ, এবং অবশেষে উমাইয়া যুগে বর্তমান ইসলামী স্থাপনাগুলোর উদ্ভব।

তাহলে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত এটাই দাঁড়ায় যে, কুরআনের ‘মসজিদুল আকসা’ শব্দটি হয়তো কোনো পার্থিব স্থানকে নির্দেশ করে না, অথবা পরবর্তী সময়ে উমাইয়া আমলের কিছু ঘটনাবলী পর্যালোচনা করলে প্রশ্ন ওঠে, কিছু গবেষণা ইঙ্গিত করে যে এই সংযোগ পরবর্তী রাজনৈতিক-ধর্মীয় রূপায়ণের অংশ হতে পারে।। কারণ যেই মসজিদের অস্তিত্বই তখন ছিল না, সেখানে ভ্রমণ করা এবং ইমামতি করা কি বাস্তবে সম্ভব, নাকি পুরোটাই ছিল উমাইয়া শাসনামলে তৈরি করা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বয়ান?


মিরাজের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণঃ পদার্থবিজ্ঞান ও মহাকাশবিদ্যার আলোকে

ইসলামি ধর্মতত্ত্বে মিরাজকে একটি অলৌকিক মহাশূন্য ভ্রমণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। হাদিসের ভাষ্যমতে, নবী মুহাম্মদ এক রাতেই মক্কা থেকে জেরুজালেম এবং সেখান থেকে সপ্ত আসমান পাড়ি দিয়ে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসেন [102]। এই যাত্রায় বোরাক নামক বাহন, আলোর গতির চেয়ে দ্রুত ভ্রমণ এবং মহাকাশের বিভিন্ন স্তরে গমনের কথা বলা হয়েছে। তবে, একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক বিজ্ঞান—বিশেষ করে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান (Theoretical Physics) এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy)—এর কষ্টিপাথরে যাচাই করলে এই বর্ণনাগুলোর সাথে ভৌত বাস্তবতার (Physical Reality) তীব্র সংঘাত পরিলক্ষিত হয়। নিচে খুব সংক্ষিপ্তভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সূত্র এবং একাডেমিক রেফারেন্সের আলোকে মিরাজের ঘটনাটির একটি বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা করা হলো। অন্য প্রবন্ধে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।


বিশেষ আপেক্ষিকতা ও আলোর গতির সীমাবদ্ধতা (Special Relativity & The Speed Limit)

মিরাজের বর্ণনায় দাবি করা হয় যে, নবী মুহাম্মদ চোখের পলকে বা অত্যন্ত স্বল্প সময়ে বিশাল মহাজাগতিক দূরত্ব অতিক্রম করেছেন। পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ প্রায় ৪৬.৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। আমাদের নিকটতম নক্ষত্রমণ্ডল ‘আলফা সেঞ্চুরি’ (Alpha Centauri)-তে পৌঁছাতেও আলোর গতিতে (প্রায় ৩,০০,০০০ কি.মি./সেকেন্ড) ৪.৩৭ বছর সময় লাগে। আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে তাঁর বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে (Special Theory of Relativity) প্রমাণ করেন যে, ভরযুক্ত কোনো বস্তুর পক্ষে আলোর গতি (c) অর্জন করা অসম্ভব। কারণ, কোনো বস্তু যখন আলোর গতির কাছাকাছি পৌঁছায়, তখন তার আপেক্ষিক ভর (Relativistic Mass) অসীমের দিকে ধাবিত হয় এবং তাকে আরও ত্বরান্বিত করতে অসীম শক্তির (Infinite Energy) প্রয়োজন হয় [103]

অতএব, বোরাক যদি একটি ‘প্রাণী’ বা ‘জড়বস্তু’ হয়, তবে পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্র E=mc^2 অনুযায়ী তার পক্ষে এই মহাজাগতিক দূরত্ব এক রাতে পাড়ি দেওয়া গাণিতিকভাবে অসম্ভব। আধুনিক কসমোলজিতে ‘ওয়ার্মহোল’ (Wormhole) বা ‘আইনস্টাইন-রোজেন ব্রিজ’-এর তাত্ত্বিক ধারণা থাকলেও, কোনো প্রাণীর পক্ষে সেই উচ্চ মহাকর্ষীয় বিকৃতি (Gravitational Distortion) সহ্য করে অক্ষত থাকা জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অবাস্তব।


সময় প্রসারণ ও টুইন প্যারাডক্স (Time Dilation & The Twin Paradox)

ধরে নেওয়া যাক, অলৌকিকভাবে নবী আলোর গতির কাছাকাছি বেগে ভ্রমণ করেছিলেন। আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ‘সময় প্রসারণ’ (Time Dilation) নীতি অনুযায়ী, উচ্চ গতিতে ভ্রমণকারী ব্যক্তির সময় পৃথিবীর সাপেক্ষে ধীর হয়ে যায়। একে পদার্থবিজ্ঞানে ‘টুইন প্যারাডক্স’ (Twin Paradox) বলা হয় [104]। যদি নবী মুহাম্মদ মহাবিশ্বের বিশাল পথ পাড়ি দিয়ে আবার ফিরে আসেন, তবে তাঁর নিজের ঘড়িতে হয়তো কয়েক ঘণ্টা পার হয়েছে, কিন্তু পৃথিবীর সময় ফ্রেমে (Earth’s Reference Frame) শত শত বা হাজার হাজার বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার কথা।

অথচ হাদিসের বর্ণনায় দেখা যায়, তিনি ফিরে এসে দেখেন তাঁর বিছানা তখনো উষ্ণ বা ওজুর পানি তখনো গড়িয়ে পড়ছে( এরকম কিছু বিবরণ পাওয়া যায়)—অর্থাৎ পৃথিবীতে সময়ের কোনো পরিবর্তনই হয়নি। এটি একমাত্র তখনই সম্ভব যদি ভ্রমণের সময় সমগ্র মহাবিশ্বের সময় প্রবাহ (Time Flow) স্তব্ধ করে দেওয়া হয়, যা এন্ট্রপি (Entropy) এবং তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের (Second Law of Thermodynamics) সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।


মহাকাশের পরিবেশ ও জীবতাত্ত্বিক সীমাবদ্ধতা (Bio-Astronautics)

মিরাজের ঘটনায় নবীকে কোনো প্রকার বিশেষ সুরক্ষা বা ‘স্পেস স্যুট’ (Space Suit) পরিধান করতে দেখা যায়নি। তিনি সাধারণ পোশাকেই বায়ুমণ্ডল ভেদ করে মহাকাশে গমন করেন। আধুনিক এরোস্পেস মেডিসিন (Aerospace Medicine) অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯ কিলোমিটার উপরে গেলেই ‘আর্মস্ট্রং লাইন’ (Armstrong Line) অতিক্রম করা হয়, যেখানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ এতই কম যে মানুষের শরীরের তরল (যেমন লালা, চোখের পানি, রক্ত) ফুটতে শুরু করে—একে ইবুলিজম (Ebullism) বলা হয় [105]

  • হাইপোক্সিয়া (Hypoxia): অক্সিজেনের অভাবে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে।
  • মহাজাগতিক বিকিরণ (Cosmic Radiation): ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট (Van Allen Belts) এবং মহাকাশের গামা রশ্মি কোনো সুরক্ষা ছাড়া ডিএনএ (DNA) ভেঙে কোষের মৃত্যু ঘটাবে।
  • তাপমাত্রা: মহাকাশের ছায়াচ্ছন্ন অংশে তাপমাত্রা -২৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে, যা জৈবিক প্রাণের তাৎক্ষণিক জমাট বাঁধার কারণ হবে।

সুতরাং, কোনো প্রকার লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম ছাড়া একজন মানুষের সশরীরে মহাকাশ ভ্রমণ এবং জীবিত ফিরে আসা আধুনিক জীববিজ্ঞানের (Biology) দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অসম্ভব একটি দাবি।


‘সাত আসমান’ বনাম আধুনিক কসমোলজি

কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত ‘সাত আসমান’-এর ধারণাটি প্রাচীন টলেমীয় জ্যোতির্বিদ্যার (Ptolemaic Geocentric Model) সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজের খোসার মতো সাতটি কঠিন স্তর বা গোলকের কল্পনা করা হতো। হাদিসে বলা হয়েছে, প্রথম আসমানে নক্ষত্ররাজি রয়েছে এবং সেখানে একটি ‘দরজা’ আছে যেখানে জিবরাঈল কড়া নেড়েছিলেন [106]

তবে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বা কসমোলজি (Modern Cosmology) মহাবিশ্বে এমন কোনো কঠিন স্তর বা ‘আসমান’ খুঁজে পায়নি। হাবল টেলিস্কোপ এবং জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের (JWST) পর্যবেক্ষণে আমরা জানি, মহাবিশ্ব একটি নিরবচ্ছিন্ন স্থান-কাল (Continuum Space-Time)। এখানে কোনো ‘দরজা’, ‘ছাদ’ বা ‘পাহারাদার’ বিশিষ্ট স্তর নেই। নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, নেহারিকা এবং ডার্ক ম্যাটার—সবই এক বিশাল শূন্যস্থানে ছড়িয়ে আছে। ‘সাত আসমান’ তত্ত্বটি বর্তমানে একটি বাতিল বা ‘আর্কাইক’ (Archaic) বৈজ্ঞানিক ধারণা হিসেবে গণ্য হয়, যা মহাবিশ্বের বর্তমান মানচিত্রের (Standard Model of Cosmology) সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মুহাম্মদ বা ইসলামের এই সাত আসমানের ধারণা বরঞ্চ প্রাচীন বিশ্বের মহাবিশ্বের ধারনার সাথে মেলে। নিচের চিত্রটি একটি ঐতিহাসিক বিশ্বমডেলের উদাহরণ, যেখানে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রাচীন ভার্সনে কল্পিত ক্রমাগত সাতটি আকাশীয় স্তর ও তার ঊর্ধ্বে স্বর্গলোক দেখানো হয়েছে

উম্মে হানী 100
১৪৭৫ সালের একটি ইউরোপীয় কাঠখোদাই চিত্রে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চন্দ্র, সূর্য এবং গ্রহসহ ক্রমাগত আকাশমণ্ডলী ও তারও উপরে দেবদূত এবং সৃষ্টিকর্তার অবস্থানচিত্র। এ ধরনের মডেলে সবচেয়ে বহির্ভাগে একটি দৃঢ় বা আকাশ-চম্বুক কল্পনা করা হত, যার ঐ পাড়েই স্বর্গলোক।

উপরের পৌরাণিক মহাকাশচিত্রের তুলনায় আধুনিক বিজ্ঞানে “আসমান” বলতে আমরা শুধু অযুত-নিযুত গ্যালাক্সি সমন্বিত অসীম মহাশূন্য বুঝি। কাজেই হাদিসে বর্ণিত প্রথম আসমানের দরজা আসলে কোথায়? পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পার করলেই কি সেই দরজা? নাকি চাঁদের কক্ষপথ পেরোলে? মানুষ এতদিনে চাঁদে পা রেখেছে, মঙ্গলে রোভার পাঠিয়েছে, সূর্যের কাছাকাছি অভিযান চালিয়েছে – কোথাও কোনো আসমানের দরজার দেখা মেলেনি। এখনো পাওয়া যায়নি সেই আসমানি পাহারাদারের সন্ধান। কেউ যদি যুক্তি দেন যে আসমানগুলো আসলে বস্তুগতভাবে অস্তিত্বশীল নয়, “মেটাফিজিক্যাল” (Metaphysical) – তবে মিরাজের ঘটনাটি শারীরিক ভ্রমণ হিসেবে ধোপে টেকে না, বরং তা এক সম্পূর্ণভাবে স্বপ্নে ঘটা স্বপ্নের অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু হাদিসে তো স্পষ্টভাবেই নবীর শারীরিক আরোহন এবং প্রত্যাবর্তনের কথা বলা হচ্ছে। এমনকি বর্ণিত আছে, নবী মক্কায় ফিরে এলে কুরাইশ অবিশ্বাস প্রকাশ করে, তখন তিনি প্রমাণস্বরূপ বায়তুল মাকদিস (জেরুজালেমের মসজিদ) এর বর্ণনা দেন এবং পথে দেখা একটি কাফেলার খবর বলেন, যা পরবর্তিতে সত্যি বলে প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ ঘটনাটি একদম বাস্তব সফর হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছে, নিছক রূপক বা স্বপ্ন হিসেবে নয়। তাই এর ভৌত-প্রকৃতিগত প্রশ্নগুলো উপেক্ষা করা চলে না।


মৃত ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ

মিরাজের কাহিনীতে নবী মুহাম্মদ আদম, ইয়াহইয়া (জন), ঈসা (যীশু), মূসা, ইবরাহিম প্রভৃতি অতীতের নবীদের সাথে সরাসরি কথোপকথন করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে [107]। আধুনিক বাস্তবতায় মৃত ব্যক্তি শারীরিকভাবে আর অস্তিত্বে নেই – তাদের দেহ পচে-গলে বিলীন হয়, চেতনা নিভে যায়। কেউ পরলোক বা আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে পারেন, কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে নেই যা দিয়ে বলা যায় যে, মৃত্যুর পর কোনো ব্যক্তির সচেতন সত্তা পদার্থগতভাবে বিদ্যমান থাকে, নামাজ পড়ে বা কথাবার্তা বলে। সুতরাং আগের নবীদের সাথে আসমানে সাক্ষাৎ করা বিষয়টি কর্মক্ষম বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সরাসরি অসম্ভব বলা যায়। বিশেষ করে হাদিস অনুসারে প্রথম আসমানে আদমের সাথে নবীর দেখা হয় – আদম তো মানবজাতির আদি পুরুষ, যিনি হাজার হাজার বছর আগে পৃথিবীতে বসবাস করে মৃত্যুবরণ করেছেন। সেই আদম যদি ভৌতভাবে আসমানে অবস্থান করতেন, সেখানে কী একটি পৃথিবী রয়েছে? নইলে আদম সেখানে থাকেন কোথায়? বাস্তবে অবশ্যই আমরা আসমানে মানুষের দেহ বা আত্মার চলাচল দেখি না। মৃত্যুজনিত “পরকাল” ধারণাটি ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয় – বিজ্ঞানের গবেষণায় এসবের বাস্তব কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কাজেই মিরাজে মৃত নবীদের সাথে কথোপকথনকে আক্ষরিক শরীরসহ ঘটনা ধরে নিলে তা যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানের নিয়ম-কানুনের আওতার বাইরে গিয়ে এক অতিপ্রাকৃতিক দাবী হয়ে দেখা দেয়, যার বাস্তব প্রমাণ প্রয়োজন। কার্ল সাগান বলেছিলেন,

Extraordinary claims require extraordinary evidence!


বায়তুল মামুর ও জিওস্টেশনারি সমস্যা

হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, সপ্তম আসমানে অবস্থিত ‘বায়তুল মামুর’ নামক মসজিদটি পৃথিবীর কাবার ঠিক সোজাসুজি উপরে অবস্থিত [108]। জ্যামিতিক এবং ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই দাবিটি সমস্যাযুক্ত।

পৃথিবী একটি ঘূর্ণায়মান গোলক (Rotating Sphere), যা প্রতি ২৪ ঘণ্টায় নিজের অক্ষের ওপর একবার ঘোরে এবং প্রতি ৩৬৫ দিনে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী মহাকাশে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেগে ছুটছে। যদি ‘বায়তুল মামুর’ কাবার ঠিক সোজাসুজি উপরে থাকতে হয়, তবে সেটিকেও পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে মিল রেখে সেকেন্ডে হাজার হাজার কিলোমিটার বেগে ঘুরতে হবে, যাকে বলা হয় জিওসিনক্রোনাস অরবিট (Geosynchronous Orbit)। কিন্তু সপ্তম আসমান যদি মহাবিশ্বের সীমানায় হয়, তবে সেখান থেকে পৃথিবীর সাথে এমন সূক্ষ্ম জ্যামিতিক সরলরেখা বজায় রাখা কসমোলজিক্যাল স্কেলে অসম্ভব। কারণ, মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের থেকে দ্রুতগতিতে দূরে সরে যাচ্ছে (Hubble’s Law)। সুতরাং, ‘কাবার ঠিক উপরে’ অবস্থানটি একটি রূপক হতে পারে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক বা জ্যামিতিক সত্য হিসেবে এটি টেকে না।

আসুন এই বিষয়ে আহমদুল্লাহ সাহেবের একটি বক্তব্য শুনে নিই,


এবারে আসুন দেখি, তাফসীরে জাকারিয়াতে খুব পরিষ্কারভাবে বলা আছে, বায়তুল মামুর নামক আসমানি মসজিদ দুনিয়ার কাবার ঠিক উপরে রয়েছে। [109]

উম্মে হানী 102

এবারে আসুন তাফসীরে মায়হারী থেকে দেখে নেয়া যাক, [110]

উম্মে হানী 104

এবারে আসুন দেখি তাফসীরে ইবনে কাসিরে কী বলা হয়েছে, [111]

উম্মে হানী 106
উম্মে হানী 108

উপরের বিশ্লেষণগুলো জানার পরে, মিরাজ সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে আধুনিক বিজ্ঞান দিয়ে পর্যালোচনা করলে প্রতিটি স্তরেই আমাদের জ্ঞানবিজ্ঞানের সাথে সংঘাত ফুটে ওঠে। আলোর গতির সীমা লঙ্ঘন, সময়ের আপেক্ষিকতা উপেক্ষা করে মুহূর্তে মহাকাশ ভ্রমণ, শূন্য মহাশূন্যে প্রাণের টিকে থাকা, মৃত মানুষের সাথে সাক্ষাৎ, এবং প্রাচীনকালের সাত আসমানের কাঠামো – এসব দাবিই বিজ্ঞানের তথ্যানুসারে অসঙ্গতিপূর্ণ। অবশ্য বিশ্বাসীরা মিরাজকে অলৌকিক মোজিজা হিসেবেই মানেন, যেখানে বিজ্ঞানের বাস্তব নিয়ম প্রযোজ্য নয়। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিচার করলে মিরাজ ঘটনাটিকে ভৌত বাস্তবতা নয় বরং কোন স্বপ্ন কিংবা ভৌতিক মনস্তাত্ত্বিক অভিজ্ঞতা বা রূপক ভাষ্য হিসেবে দেখতে হয়। ব্যঙ্গের ছলে বললে, যদি মিরাজকে বাস্তব ধরে নিই, তবে আমাদের বিদ্যমান পদার্থবিজ্ঞানের অনেক নীতিই ভেঙে নতুন করে লিখতে হবে; আর যদি ভাঙতে না চাই, তবে মিরাজকে শুধু বিশ্বাসের জগতে, বৈজ্ঞানিক সমালোচনার ঊর্ধ্বে একটি অলৌকিক ঘটনা হিসেবেই রাখতে হবে – বাস্তবের পরীক্ষাগারে যার সত্যাসত্য যাচাইয়ের কোনো উপায় নেই।


মিরাজের বর্ণনায় গণ্ডগোল

একটি বানোয়াট গল্পের বর্ণনায় সদা সর্বদাই নানা ধরণের গড়মিল পাওয়া যায়, এটি পৃথিবীর যেকোন আদালতে খুব স্বাভাবিক ঘটনা। দুইজন বর্ণনাকারীর বিবরণে যদি গড়মিল পাওয়া যায়, তাহলে খুব সহজেই বোঝা যায়, এই সাক্ষীগণ সম্ভবত বানিয়ে বলছেন। এই কারণে পুলিশের জেরার সময় দুইজন প্রত্যক্ষদর্শীকে সবসময় আলাদা কক্ষে নিয়ে আলাদাভাবে জিজ্ঞেস করা হয়, এবং ঘটনা পরম্পরা খুব সূক্ষ্মভাবে মিলিয়ে দেখা যায়। যদি গড়মিল পাওয়া যায়, তাহলে বুঝে নিতে হয়, এই বিবরণে কোন সমস্যা আছে। অনেক সময় যিনি বর্ণনাটি করেছেন, যেহেতু বর্ণনাটি বানোয়াট একটি গল্প মাত্র, দ্বিতীয় তৃতীয়বার বলার সময় তার মনে থাকে না, প্রথমবার কী বলেছিলেন। সে কারণে পরেরবার বর্ণনার সময় বেশিরভাগ সময়ই প্রথমবারের বিবরণের সাথে কিছু গড়মিল পাওয়া যায়। পুলিশের জেরার সময় কিংবা সাইকোলজিক্যাল এনালাইসিসের সময় তাই একই ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শীকে দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার বর্ণনা করতে বলা হয়। যদি দেখা যায়, প্রথমবার তিনি এক কথা বলেছিলেন, দ্বিতীয়বার ভিন্ন কথা, তৃতীয়বার একেবারেই আরও ভিন্ন কিছু কথা, তখন বুঝে নিতে হয়, এই ঘটনা বানোয়াট। এগুলো অসত্য বিবরণ যাচাই করার খুবই সহজ স্বাভাবিক চেষ্টা। অপরাধবিজ্ঞানে এগুলো খুবই প্রচলিত রীতি, মিথ্যাবাদীদের অসত্য ধরার জন্য। যেহেতু নবী মুহাম্মদের মিরাজের এই গল্পটি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, মিরাজের গল্পে এরকম কিছু গড়মিল আমি দেখাচ্ছি। যেখানে পরিষ্কার হবে, এই গল্পটিতে অনেকগুলো গড়মিল, যা একটির সাথে আরেকটি কিছুতেই মেলে না। এই অসঙ্গতিগুলো দূর করতে অনেক আলেমই নানারকম কল্পনাপ্রসূত ব্যাখ্যার আশ্রয় নেন এবং কখনো কখনো সত্যকেও আড়াল করেন। তারা বলেন, মিরাজ অনেকবার হয়েছে। আবার কিছু আলেম বলেন, একবার হয়েছে বা দুইবার হয়েছে। আবার অনেকে বলেন, সশরীরে মিরাজ হয়নি, আধ্যাত্মিকভাবে স্বপ্নের মাধ্যমে হয়েছে। আবার ধরুন, নবী মুহাম্মদ নাকি জেরুজালেমের বায়তুল মাকদিস মসজিদে সেই রাতে নামাজ আদায় করেছেন বলে হাদিসে বর্ণিত আছে। কিন্তু মুহাম্মদের জীবদ্দশায় সেই অঞ্চলে কোন মসজিদ ছিল না বলেই ঐতিহাসিকগণ মত দিয়েছেন। সেখানে রাজা সলোমনের একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ছিল বলে ঐতিহাসিক গবেষণায় পাওয়া যায়। তাহলে সেই রাতে নবী কোথায় নামাজ পড়েছিলেন? এই নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আপাতত অন্যান্য বিষয়াদি আমরা পর্যালোচনা করে দেখবো। উল্লেখ্য, জইফ হাদিসের বিবরণগুলো একত্র করলে এই লিস্ট অনেক বেশি দীর্ঘ হয়ে যাবে, যেখানে বিবরণের মারত্মক পার্থক্য দেখা যাবে। তাই সেগুলো বাদ দিচ্ছি। মুহাদ্দিসগণ ইতিমধ্যেই সহিহ হাদিসের সাথে মেলেনি বিধায় সেগুলোকে জইফ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আমি শুধুমাত্র সহীহ এবং হাসান, একটি মুনকার হাদিস দিয়েই আলোচনা করবো। উল্লেখ্য, মুনকার হাদিস হচ্ছে, সহিহ হাদিসের বিবরণের সাথে যেটি মেলেনি, তাই একে মুনকার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।


কয়জন ফেরেশতা এসেছিল?

নবী মুহাম্মদ নানা জনার কাছে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক ফেরেশতার কথা বর্ণনা করেছেন। কারো কাছে একজন, কারো কাছে দুই, আরও একটি বর্ণনায় আবার তিনজন ফেরেশতার বর্ণনাও আছে। আসুন মিলিয়ে দেখি। প্রথমে পড়ি একজন ফেরেশতার বর্ণনা। যেখানে দেখা যাচ্ছে, মাত্র একজন ফেরেশতাই এসেছিল, যাকে মুহাম্মদ আগে থেকেই চেনেন, অর্থাৎ জিবরাইল। বর্ণনা অনুসারে সেইরাতে জিবরাইল একাই এসেছিল নবীকে মিরাজে নেয়ার জন্য [112]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮/ সালাত
পরিচ্ছেদঃ ২৪২। মি’রাজে কিভাবে সালাত ফরজ হল?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৪৯
ইবন ’আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমার কাছে আবূ সুফিয়ান ইবন হারব (রাঃ) হিরাকল-এর হাদীসে বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমদেরকে সালাত, সত্যবাদিতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার নির্দেশ দিয়েছেন।
৩৪২। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমার ঘরের ছাদ খুলে দেয়া হল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। তারপর জিবরীল (আঃ) এসে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা যমযমের পানি দিয়ে ধুইলেন। এরপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। তারপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আসমানের দিকে নিয়ে চললেন। যখন দুনিয়ার আসমানে পৌঁছালাম, তখন জিবরীল (আঃ) আসমানের রক্ষককে বললেনঃ দরযা খোল। তিনি বললেনঃ কে? উত্তর দিলেনঃ আমি জিবরীল, আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনার সঙ্গে আর কেউ আছে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমার সঙ্গে মুহাম্মদ। তিনি আবার বললেনঃ তাঁকে কি আহবান করা হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেনঃ হাঁ।
তারপর আসমান খোলা হলে আমরা প্রথম আসমানে উঠলাম। সেখানে দেখলাম, এক লোক বসে আছেন এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি তাঁর ডান পাশে রয়েছে এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি বাম পাশেও রয়েছে। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন, হাসছেন আর যখন তিনি বাম দিকে তাকাচ্ছেন, কাঁদছেন। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ, হে পুণ্যবান নবী! হে নেক সন্তান! আমি জিবরীল (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামঃ ইনি কে? তিনি বললেনঃ ইনি আদম (আঃ)। আর তাঁর ডানে ও বায়ে তাঁর সন্তানদের রুহ। ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বা দিকের লোকেরা জাহান্নামী। এজন্য তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন আর বাঁ দিকে তাকালে কাঁদেন। তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশে উঠলেন। সেখানে উঠে রক্ষক কে বললেনঃ দরযা খোল। তখন রক্ষক প্রথম আসমানের রক্ষকের অনুরুপ প্রশ্ন করলেন। তারপর দরযা খুলে দিলেন।
আনাস (রাঃ) বলেনঃ এরপর আবূ যার বলেনঃ তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসমানসমূহে আদম (আঃ), ঈদরীস (আঃ), মূসা (আঃ), ’ঈসা (আঃ), ও ইবরাহীম (আঃ)-কে পেলেন। আবূ যার (রাঃ) তাঁদের অবস্থান নির্দিষ্ট ভাবে বলেন নি। কেবল এতটুকু বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম (আঃ)-কে প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (আঃ)-কে ষষ্ট আসমানে পেয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ যখন জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইদরীস (আঃ) এর পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ঈদরীস (আঃ) বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নবী ও নেক ভাই! আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ঈদরীস (আঃ)। তারপর আমি মূসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পূণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি বললাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ মূসা (আঃ)। তারপর আমি ঈসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ঈসা (আঃ)।
তারপর ইবরাহীম (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ইবরাহীম (আঃ)। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন যে, ইবনু হাযম আমাকে খবর দিয়েছেন ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বা আনসারী (রাঃ) উভয়ে বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হল, আমি এমন এক সমতল স্থানে উপনীত হলাম, যেখান থেকে কলমের লেখার শব্দ শুনতে পেলাম। ইবনু হাযম (রহঃ) ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করে দিলেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তনকালে যখন মূসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মূসা (আঃ) বললেনঃ আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ কি ফরয করেছেন? আমি বললামঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না।
আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ পাক কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ) এর কাছে আবার গেলাম আর বললামঃ কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরো কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হল। আবার মূসা (আঃ) এর কাছে গেলাম, এবারো তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি আবার গেলাম, তখন আল্লাহ বললেনঃ এই পাঁচই (সওয়াবের দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (গণ্য হবে)। আমার কথার কোন পরিবর্তন নেই। আমি আবার মূসা (আঃ) এর কাছে আসলে তিনি আমাকে আবারো বলললেনঃ আপনার রবের কাছে আবার যান। আমি বললামঃ আবার আমার রবের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তারপর জিবরীল(আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে ঢাকা ছিল, যার তাৎপর্য আমার জানা ছিল না। তারপর আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হল। আমি দেখলাম তাতে মুক্তার হার রয়েছে আর তাঁর মাটি কস্তুরি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আরেকটি বর্ণনাতেও একজন আগন্তুকের কথা পাওয়া যায়। কিন্তু জিবরাইলকে নবী আগে থেকেই চিনে থাকলে, আগন্তুকের কথা কেন বললেন তা বোধগম্য নয় [113]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ২১৫১. মি’রাজের ঘটনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩৬০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৮৭
৩৬০৮। হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) … মালিক ইবনু সা’সা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যে রাতে তাঁকে ভ্রমণ করানো হয়েছে সে রাতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, একদা আমি কা’বা ঘরের হাতিমের অংশে ছিলাম। কখনো কখনো রাবী (কাতাদা) বলেছেন, হিজরে শুয়েছিলাম। হঠাৎ একজন আগন্তুক আমার নিকট এলেন এবং আমার এ স্থান থেকে সে স্থানের মধ্যবর্তী অংশটি চিরে ফেললেন। রাবী কাতাদা বলেন, আনাস (রাঃ) কখনো কাদ্দা (চিরলেন) শব্দ আবার কখনো শাক্‌কা (বিদীর্ণ) শব্দ বলেছেন। রাবী বলেন, আমি আমার পার্শ্বে বসা জারূদ (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, এ দ্বারা কী বুঝিয়েছেন? তিনি বললেন, হলকুমের নিম্নদেশ থেকে নাভী পর্যন্ত। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে এ-ও বলতে শুনেছি বুকের উপরিভাগ থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত। তারপর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আগন্তুক আমার হৃদপিণ্ড বের করলেন। তারপর আমার নিকট একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল যা ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তারপর আমার হৃদপিণ্ডটি (যমযমের পানি দ্বারা) ধৌত করা হল এবং ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ করে যথাস্থানে পুনরায় রেখে দেয়া হল।
তারপর সাদা রং এর একটি জন্তু আমার নিকট আনা হল। যা আকারে খচ্চর থেকে ছোট ও গাধা থেকে বড় ছিল? জারূদ তাকে বলেন, হে আবূ হামযা, ইহাই কি বুরাক? আনাস (রাঃ) বললেন, হাঁ। সে একেক কদম রাখে দৃষ্টির শেষ প্রান্তে। আমাকে তার উপর সাওয়ার করানো হল। তারপর আমাকে নিয়ে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) চললেন, প্রথম আসমানে নিয়ে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল, ইনি কে? তিনি বললেন জিবরীল। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আবার জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। তখন বলা হল, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল।
আমি যখন পোঁছালাম, তখন তথায় আদম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাত পেলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি আপনার আদি পিতা আদম (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার পুত্র ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর উপরের দিকে চলে দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছে দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল কে? তিনি বললেন জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। তারপর বলা হল- তাঁর জন্য খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর খুলে দেওয়া হল। যখন তথায় পৌঁছালাম। তখন সেখানে ইয়াহ্‌ইয়া ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) এর সাক্ষাত পেলাম। তাঁরা দু’জন ছিলেন পরস্পরের খালাত ভাই। তিনি (জিবরীল) বললেন, এরা হলেন ইয়াহ্‌ইয়া ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম)। তাঁদের প্রতি সালাম করুন। তখন আমি সালাম দিলাম। তাঁরা জবাব দিলেন, তারপর বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
এরপর তিনি আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানের দিকে চললেন, সেখানে পৌঁছে জিবরীল বললেন খুলে দাও। তাঁকে বলা হল কে? তিনি উত্তর দিলেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর জন্য খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর দরজা খুলে দেওয়া হল। আমি তথায় পৌঁছে ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) কে দেখতে পেলাম। জিবরীল বললেন, ইনি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) আপনি তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তিনিও জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করলেন এবং চতুর্থ আসমানে পৌঁছলেন। আর (ফিরিশ্‌তাকে) দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। তখন বলা হল- তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তখন খুলে দেওয়া হল। আমি ইদ্রীস (আলাইহিস সালাম) এর কাছে পৌঁছলে জিবরীল বললেন, ইনি ইদ্রীস আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনিও জবাব দিলেন। তারপর বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
এরপর তিনি (জিবরীল) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করে পঞ্চম আসমানে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দিলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল। তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তথায় পৌঁছে হারূন (আলাইহিস সালাম) কে পেলাম। জিবরীল বললেন, ইনি হারূন (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম; তিনিও জবাব দিলেন, এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
তারপর আমাকে নিয়ে যাত্রা করে ষষ্ঠ আকাশে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। ফিরিশ্‌তা বললেন, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগন্তুক এসেছেন। তথায় পৌঁছে আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) কে পেলাম। জিবরীল(আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম; তিনি জবাব দিলেন, এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
আমি যখন অগ্রসর হলাম তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কিসের জন্য কাঁদছেন? তিনি বললেন আমি এজন্য কাঁদছি যে, আমার পর একজন যুবককে নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে, যার উম্মত আমার উম্মত থেকে অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে আমাকে নিয়ে সপ্তম আকাশের দিকে গেলেন এবং দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? তিনি উত্তর দিলেন, আমি জিবরীল। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞাসা করা হল, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছে কি? তিনি বললেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। আমি সেখানে পৌঁছে ইব্‌রাহীম (আলাইহিস সালাম) কে দেখতে পেলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি আপনার পিতা। তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার পুত্র ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর আমাকে সিদ্‌রাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠানো হল। দেখতে পেলাম, উহার ফল হাজার অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতাগুলি এই হাতির কানের মত। আমাকে বলা হল, এ হল সিদরাতুল মুন্‌তাহা (জড় জগতের শেষ প্রান্ত)।
সেখানে আমি চারটি নহর দেখতে পেলাম, যাদের দু’টি ছিল অপ্রকাশ্য দু’টি ছিল প্রকাশ্য। তখন আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে জিজ্ঞেস করলাম, এ নহরগুলো কী? অপ্রকাশ্য দু’টি হল জান্নাতের দুইটি নহর। আর প্রকাশ্য দুটি হল নীল নদী ও ফুরাত নদী। তারপর আমার সামনে ’আল-বায়তুল মামুর’ প্রকাশ করা হল, এরপর আমার সামনে একটি শরাবের পাত্র, একটি দুধের পাত্র ও একটি মধুর পাত্র পরিবেশন করা হল। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তখন জিবরীল বললেন, এ-ই হচ্ছে ফিতরাত (দ্বীন-ই-ইসলাম)। আপনি ও আপনার উম্মতগণ এর উপর প্রতিষ্ঠিত। তারপর আমার উপর দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত সালাম ফরয করা হল।
এরপর আমি ফিরে আসলাম। মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে কী আদেশ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে সমর্থ হবে না। আল্লাহর কসম। আমি আপনার আগে লোকদের পরীক্ষা করেছি এবং বনী ইসরাইলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। তাই আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের(বোঝা) হাল্কা করার জন্য আবেদন করুন।
আমি ফিরে গেলাম। ফলে আমার উপর থেকে (দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) হ্রাস করে দিলেন। আমি আবার মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট ফিরে এলাম তিনি আবার আগের মত বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। ফলে আল্লাহ তা’আলা আরো দশ ওয়াক্ত সালাত কমিয়ে দিলেন। ফিরার পথে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট পৌঁছালে, তিনি আবার পূর্বোক্ত কথা বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা আর দশ (ওয়াক্ত) হ্রাস করলেন। আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) নিকট ফিরে এলাম। তিনি আবার ঐ কথাই বললেন আমি আবার ফিরে গেলাম। তখন আমাকে দশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ দেওয়া হয়। আমি (তা নিয়ে) ফিরে এলাম। মূসা (আলাইহিস সালাম) ঐ কথাই আগের মত বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম, তখন আমাকে পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়।
তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট ফিরে এলাম। তিনি বললেন, আপনাকে কী আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমি বললাম, দৈনিক পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত আদায়ের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পাঁচ সালাত আদায় করতেও সমর্থ হবে না। আপনার পূর্বে আমি লোকদের পরীক্ষা করেছি। বনী ইসরাইলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আমার রবের নিকট (অনেকবার) আবেদন করেছি, এতে আমি লজ্জাবোধ করছি। আর আমি এতেই সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তা মেনে নিয়েছি। এরপর তিনি বললেন, আমি যখন মূসা (আলাইহিস সালাম) কে অতিক্রম করে অগ্রসর হলাম, তখন জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমি আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি জারি করে দিলাম এবং আমার বান্দাদের উপর লঘু করে দিলাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু সা‘সা‘আ (রাঃ)

এবারে আসুন দেখা যাক, দুইজন ফেরেশতার বর্ণনা। এই বিবরণটি নিয়ে কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, এটি মিরাজের ঘটনা কিনা। কিন্তু ভালভাবে পড়লেই আপনি বুঝবেন, এটি মিরাজেরই ঘটনা [114]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২০/ জানাযা
পরিচ্ছেদঃ ৮৭৬. পরিচ্ছেদ নাই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৩০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৮৬
১৩০৩। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … সামুরা ইবনু জুনদাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফজর) সালাত (নামায/নামাজ) শেষে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন এবং জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের কেউ গত রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? (বর্ণনাকারী) বলেন, কেউ স্বপ্ন দেখে থাকলে তিনি তা বিবৃত করতেন। তিনি তখন আল্লাহর মর্জি মুতাবিক তা’বীর বলতেন। একদিন আমাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তোমাদের কেউ কি কোন স্বপ্ন দেখেছ? আমরা বললাম, জী না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ গত রাতে আমি দেখলাম, দু’জন লোক এসে আমার দু’হাত ধরে আমাকে পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে চললো। হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যাক্তি বসে আছে আর ব্যাক্তি লোহার আকড়া হাতে দাঁড়িয়ে আছে। (ইমাম বুখারী রহ বলেন) আমাদের এক সাথি মূসা (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, দণ্ডায়মান ব্যাক্তি উপবিষ্ট ব্যাক্তির (এক পাশের) চোয়ালটা এমনভাবে আকড়া দ্বারা বিদ্ধ করছিল যে, তা (চোয়াল বিদীর্ণ করে) মস্তকের পশ্চাদভাগ পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিল। তারপর অপর চোয়ালটিও পূর্ববৎ বিদীর্ণ করছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ কি হচ্ছে? সাথীদ্বয় বললেন, (পরে কথা হবে এখন) চলুন।
আমরা চলতে চলতে চিৎ হয়ে শায়িত এক ব্যাক্তির পাশে এসে উপস্থিত হলাম, তার শিয়রে পাথর হাতে এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে পাথর দিয়ে তার মাথা চূর্ণ করে দিচ্ছিল। নিক্ষিপ্ত পাথর দূরে গড়িয়ে যাওয়ার ফলে তা তুলে নিয়ে শায়িত ব্যাক্তির নিকট ফিরে আসার পূর্বেই বিচূর্ণ মাথা পূর্ববৎ জোড়া লেগে যাচ্ছিল। সে পুনরায় মাথার উপরে পাথর নিক্ষেপ করছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, লোকটি কে? তাঁরা বললেন, চলুন।
আমরা অগ্রসর হয়ে চুলার ন্যায় এক গর্তের নিকট উপস্থিত হলাম। গর্তের উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ ও নীচের অংশ প্রশস্থ এবং এর নীচদেশ থেকে আগুন জ্বলছিল। আগুন গর্ত মুখের নিকটবর্তী হলে সেখানের লোকগুলোও উপরে চলে আসত যেন তারা গর্ত থেকে বের হয়ে যাবে। আগুণ ক্ষীণ হয়ে গেলে তারাও (তলদেশে) ফিরে যায়। গর্তের মধ্যে বহুসংখ্যক উলঙ্গ নারী-পুরুষ ছিল। জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তাঁরা বললেন, চলুন।
আমরা চলতে চলতে একটি রক্ত প্রবাহিত নদীর নিকট উপস্থিত হলাম। নদীর মাঝখানে এক ব্যাক্তি দাঁড়ানো ছিল, (ইমাম বুখারী রহ বলেন) ইয়াযীদ ইবনু হারূন ও ওহাব ইবনু জারীল ইবনু হাযিম (রহঃ) বর্ণনায় وعلى شط النهر رجل بين يديه حجارة রয়েছে। নদীর তীরে অপর এক ব্যাক্তি যার সামনে ছিল পাথর। নদীর মাঝখানের লোকটি নদী থেকে বের হয়ে আসার জন্য অগ্রসর হলেই তীরে দাঁড়ানো লোকটি সে ব্যাক্তির মুখ বরাবর পাথর নিক্ষেপ করত, এতে সে তাকে পূর্বস্থানে ফিরিয়ে দিত। এমনভাবে যতবার সে তীরে উঠে আসতে চেষ্টা করে ততবার সে ব্যাক্তি তার মুখ বরাবর পাথর নিক্ষেপ করে পূর্বস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য করে। আমি জানতে চাইলাম, এ ঘটনার কারণ কি? তাঁরা বললেন, চলতে থাকুন।
আমরা চলতে চলতে একটি সবুজ বাগানে উপস্থিত হলাম। এতে একটি বড় গাছ ছিল। গাছটির গোড়ায় একজন বয়ঃবৃদ্ধ লোক ও বেশ কিছু বালক-বালিকা ছিল। হঠাৎ দেখি যে, গাছটির সন্নিকটে এক ব্যাক্তি সামনে আগুন রেখে তা প্রজ্জলিত করছে। সাথীদ্বয় আমাকে নিয়ে গাছে আরোহণ করে এমন একটি বাড়ীতে প্রবেশ করালেন যে, এর চেয়ে সুদৃশ্য বাড়ী পূর্বে আমি কখনো দেখিনি। বাড়ীতে বহু সংখ্যক বৃদ্ধ, যুবক, নারী এবং বালক-বালিকা ছিল। এরপর তাঁরা আমাকে সেখান হতে বের করে নিয়ে গাছের আরো উপরে আরোহণ করে অপর একটি বাড়ীতে প্রবেশ করালেন। এটা পূর্বাপেক্ষা অধিক সুদৃশ্য ও সুন্দর। বাড়ীটিতে কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক অবস্থান করছিলেন। আমি বললাম, আজ রাতে আপনারা আমাকে (বহুদূর পর্যন্ত) ভ্রমণ করালেন। এখন বলুন, যা দেখলাম তার তাৎপর্য কী?
তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, আপনি যে ব্যাক্তির চোয়াল বিদীর্ণ করার দৃশ্য দেখলেন সে মিথ্যাবাদী; মিথ্যা কথা বলে বেড়াতো, তার বিবৃত মিথ্যা বর্ণনা ক্রমাগত বর্ণিত হয়ে দূর দূরান্তে পৌঁছে যেতো। কিয়ামত পর্যন্ত তারা সাথে এ ব্যবহার করা হবে।
আপনি যার মাথা চূর্ণ করতে দেখলেন, সে এমন ব্যাক্তি যাকে আল্লাহ কুরআনের শিক্ষা দান করেছিলেন, কিন্তু রাতের বেলায় সে কুরআন থেকে বিরত হয়ে নিদ্রা যেতো এবং দিনের বেলায় কুরআন অনুযায়ী আমল করতো না। তার সাথে কিয়ামত পর্যন্ত এরূপই করা হবে।
গর্তের মধ্যে যাদেরকে আপনি দেখলেন, তারা ব্যভিচারী।
(রক্ত প্রবাহিত) নদীতে আপনি যাকে দেখলেন, সে সুদখোর।
গাছের গোড়ায় যে বৃদ্ধ ছিলেন তিনি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর চারপাশের বালক-বালিকারা মানুষের সন্তান।
যিনি আগুন জ্বালাচ্ছিলেন তিনি হলেন, জাহান্নামের খাযিন মালিক নামক ফিরিশতা।
প্রথম যে বাড়ীতে আপনি প্রবেশ করলেন তা সাধারণ মু’মিনদের বাসস্থান। আর এ বাড়ীটি হল শহীদগণের আবাস।
আমি (হলাম) জিবরীল আর ইনি হলেন মীকাঈল। (এরপর জিবরীল আমাকে বললেন) আপনার মাথা উপরে উঠান। আমি উঠিয়ে মেঘমালার ন্যায় কিছু দেখতে পেলাম। তাঁরা বললেন, এটাই হল আপনার আবাসস্থল। আমি বললাম, আমাকে ছেড়ে দিন আমি আমার আবাসস্থলে প্রবেশ করি। তাঁরা বললেন, এখনো আপনার হায়াতের কিছু সময় অবশিষ্ট রয়ে গেছে যা পূর্ণ হয়নি। অবশিষ্ট সময় পূর্ণ হলে অবশ্যই আপনি নিজ আবাসে চলে আসবেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ)

এবারে আসুন, আরও একটি বিবরণ পড়ি, যেখানে তিনজন ফেরেশতার বর্ণনা দেয়া আছে যে, নবীর মিরাজের রাতে সর্বমোট তিনজন ফেরেশতার আগমন হয়েছিল [115] [116]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৬/ জাহ্‌মিয়াদের মতের খণ্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ ৩১৩৯. মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ এবং মূসা (আঃ) এর সাথে আল্লাহ্‌ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছিলেন (৪ঃ ১৬৪)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৭০০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫১৭
৭০০৯। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস ইবনু সালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এক রাতে কাবার মসজিদ থেকে সফর করানো হল। বিবরণটি হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল। অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। এদের প্রথমজন বলল, তিনি কে? মধ্যের জন বলল, তিনি এদের উত্তম ব্যাক্তি। সর্বশেষ জন বলল, তা হলে তাদের উত্তম ব্যাক্তিকেই নিয়ে চল। সে রাতটির ঘটনা এটুকুই। এ জন্য তিনি আর তাদেরকে দেখেননি। অবশেষে তারা অন্য এক রাতে আগমন করলেন যা তিনি অন্তর দ্বারা দেখছিলেন। তার চোখ ঘুমন্ত, অন্তর ঘুমায় না। অনুরূপ অন্য নবীগণেরও চোখ ঘুমিয়ে থাকে, অন্তর ঘুমায় না।
এ রাতে তারা তার সাথে কোন কথা না বলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যমযম কূপের কাছে রাখলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার সাথীদের থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার গলার নিচ হতে বক্ষস্থল পর্যন্ত ছেদন করলেন এবং তার বক্ষ ও পেট থেকে সবকিছু নেড়েচেড়ে যমযমের পানি দ্বারা নিজ হাতে ধৌত করেন। সেগুলোকে পরিছন্ন করলেন, তারপর সেখানে একটি তশতরী আনা হয় এবং তাতে ছিল একটি সোনার পাত্র যা পরিপূর্ণ ছিল ঈমান ও হিকমতে। তাঁর বক্ষ ও গলার রগগুলি এর দ্বারা পূর্ণ করলেন।
তারপর সেগুলো যখাস্থানে স্থাপন করে বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে ফিরে আসমানের দিকে আরোহণ করলেন। আসমানের দরজাগুলো হতে একটি দরজাতে নাড়া দিলেন। ফলে আসমানবাসিগণ তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ জিবরীল। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তারা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান (আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আপনজনের মধ্যে এসেছেন) শুভাগমনে আসমানবাসীরা খুবই আনন্দিত। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা যমীনে কি করতে চাচ্ছেন তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো পর্যন্ত তারা জানতে পারে না।
দুনিয়ার আসমানে তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে দেখিয়ে বললেন, তিনি আপনার পিতা, তাকে সালাম দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাম দিলেন। আদম (আলাইহিস সালাম) তার সালামের উত্তর দিলেন। এবং বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান হে আমার পুত্র। তুমি আমার কতইনা উত্তম পুত্র। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি প্রবাহমান নহর দুনিয়ার আসমানে অবলোকন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ নহর দুটি কোন নহর হে জিবরীল! জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ দুটি হলো নীল ও ফুরাতের মুল।
এরপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নহর অবলোকন করলেন। এর ওপর প্রতিঠিত ছিল মোতি ও জাবারজাদের তৈরি একটি প্রাসাদ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নহরে হাত মারলেন। তা ছিল অতি উন্নতমানের মিসক। তিনি বললেনঃ হে জিবরীল! এটি কি? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ হাউযে কাওসার। যা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন।
তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে দ্বিতীয় আসমানে গমন করলেন। প্রথম আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতাগণ তাকে যা বলেছিলেন এখানেও তা বললেনঃ তারা জানতে চাইল, তিনি কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। তারা বললেনঃ আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারা বললেনঃ তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাঁরা বললেন, মারহাবান ওয়া আহলান।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে তিনি তৃতীয় আসমানের দিকে গমন করলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতারা যা বলেছিলেন তৃতীয় আসমানের ফেরেশতাগণও তাই বললেন। তারপর তাকে সঙ্গে করে তিনি চতুর্থ আসমানের দিকে গমন করলেন। তারাও তাঁকে পুর্বের ন্যায়ই বললেন। তারপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গমন করলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো বললেন। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দিকে গমন করলেন। সেখানেও ফেরেশতারা পূর্বের মতই বললেন। সর্বশেষে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে সপ্তম আসমানে গমন করলে সেখানেও ফেরেশতারা তাকে পূর্বের ফেরেশতাদের মতো বললেন। প্রত্যেক আসমানেই নবীগণ রয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নাম উল্লেখ করেছেন।
তন্মধ্যে আমি সংরক্ষিত করেছি যে, দ্বিতীয় আসমানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম), চতূর্থ আসমানে হারুন (আলাইহিস সালাম), পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নবী যায় নাম আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। ষষ্ঠ আসমানে রয়েছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এবং আল্লাহর সাথে বাক্যলাপের মর্যাদার কারণে মূসা (আলাইহিস সালাম) আছেন সপ্তম আসমানে।
সে সময় মূসা বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমি তো ধারনা করিনি আমার ওপর কাউকে উচ্চমর্যাদা দান করা হবে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এত ঊর্ধ্বে আরোহণ করানো হলো, যা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। অবশেষে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় আগমন করলেন। এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতি নিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন। অর্থাৎ তাঁর উম্মাতের উপর রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের কথা ওহী যোগে পাঠানো হলো।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেন। আর মূসার কাছে পৌছলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে আটকিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাত ও দিনে পঞ্চাশ বার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মাত তা আদায়ে সক্ষম হবে না। সুতরাং আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার প্রতিপালক আপনার এবং আপনার উম্মাতের থেকে এ আদেশটি সহজ করে দিবেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলের দিকে এমনভাবে লক্ষ্য করলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হ্যাঁ। আপনি চাইলে তা হতে পারে। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে প্রথমে আল্লাহর কাছে গেলেন।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাস্থানে থেকে বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত এটি আদায়ে সক্ষম হবে না। তখন আল্লাহ দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) কমিয়ে দিলেন। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁকে নামালেন। এভাবেই মূসা তাকে তাঁর প্রতিপালকের কাছে পাঠাতে থাকলেন। পরিশেষে পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকল। পাঁচ সংখ্যায়ও মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে থামিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি আমার বনী ইসরাঈল কাওমের কাছে এর চেয়েও সামান্য কিছু পেতে চেয়েছি। তদুপরি তারা দুর্বল হয়েছে এবং পরিত্যাগ করেছেন অথচ আপনার উম্মাত দৈহিক, মানসিক, শারীরিক সৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা সব দিকে আরো দুর্বল।
সুতরাং আপনি আবার যান এবং আপনার প্রতিপালক থেকে নির্দেশটি আরো সহজ করে আনুন। প্রতিবারই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরামর্শের জন্য জিবরীলের দিকে তাকাতেন। পঞ্চমবারেও জিবরীল তাঁকে নিয়ে গমন করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমার উম্মাতের শরীর, মন, শ্রবণশক্তি ও দেহ নিতান্তই দুর্বল। তাই নির্দেশটি আমাদের থেকে আরো সহজ করে দিন। এরপর পরাক্রমশালী আল্লাহ বললেনঃ মুহাম্মাদ! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি আপনার নিকটে হাযির, বারবার হাযির।
আল্লাহ বললেনঃ আমার কথার কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। আমি তোমাদের উপর যা ফরয করেছি তা ’উম্মুল কিতাব’ তথা লাওহে মাহফুযে সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি নেক আমলের দশটি নেকী রয়েছে। উম্মুল কিতাবে সালাত (নামায/নামাজ) পঞ্চাশ ওয়াক্তই লিপিবদ্ধ আছে। তবে আপনার ও আপনার উম্মাতের জন্য তা পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসার কাছে প্রত্যাবর্তন করলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে দশটি সাওয়াব নির্ধারণ করেছেন। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে এর চাইতেও সামান্য জিনিসের প্রত্যাশ্য করছি। কিন্তু তারা তাও আদায় করেনি। আপনার প্রতিপালকের কাছে আপনি আবার ফিরে যান, যেন আরো একটু কমিয়ে দেন।
এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মূসা, আল্লাহর কসম! আমি আমার প্রতিপালকের কাছে বারবার গিয়েছি। আবার যেতে লজ্জাবোধ করছি, যেন তার সাথে মতান্তর করছি। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ অবতরণ করতে পারেন আল্লাহর নামে। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

উম্মে হানী 110

আসুন হাদিসে বর্ণিত বিষয়টি হাদিস দুইটি পাশাপাশি রেখে পড়ি যেন ভালভাবে বোঝা যায় [117] [118]

উম্মে হানী 112

যাত্রা শুরু কোথা থেকে?

নবী মুহাম্মদ কোথাও বলেছেন তার ঘরের ছাদ বিদীর্ণ করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কোথাও আবার বলেছেন কাবার হাতিম থেকে। মুহাম্মদের ঘরের ছাদ বিদীর্ণ করে এরপরে তাকে মিরাজে নেয়া হয়েছিল বলে যেখানে বর্ণিত আছে, সেটি শুরুতে দেখে নেয়া যাক, [119]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮/ সালাত
পরিচ্ছেদঃ ২৪২। মি’রাজে কিভাবে সালাত ফরজ হল?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৪৯
ইবন ’আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমার কাছে আবূ সুফিয়ান ইবন হারব (রাঃ) হিরাকল-এর হাদীসে বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমদেরকে সালাত, সত্যবাদিতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার নির্দেশ দিয়েছেন।
৩৪২। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমার ঘরের ছাদ খুলে দেয়া হল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। তারপর জিবরীল (আঃ) এসে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা যমযমের পানি দিয়ে ধুইলেন। এরপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। তারপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আসমানের দিকে নিয়ে চললেন। যখন দুনিয়ার আসমানে পৌঁছালাম, তখন জিবরীল (আঃ) আসমানের রক্ষককে বললেনঃ দরযা খোল। তিনি বললেনঃ কে? উত্তর দিলেনঃ আমি জিবরীল, আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনার সঙ্গে আর কেউ আছে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমার সঙ্গে মুহাম্মদ। তিনি আবার বললেনঃ তাঁকে কি আহবান করা হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেনঃ হাঁ।
তারপর আসমান খোলা হলে আমরা প্রথম আসমানে উঠলাম। সেখানে দেখলাম, এক লোক বসে আছেন এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি তাঁর ডান পাশে রয়েছে এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি বাম পাশেও রয়েছে। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন, হাসছেন আর যখন তিনি বাম দিকে তাকাচ্ছেন, কাঁদছেন। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ, হে পুণ্যবান নবী! হে নেক সন্তান! আমি জিবরীল (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামঃ ইনি কে? তিনি বললেনঃ ইনি আদম (আঃ)। আর তাঁর ডানে ও বায়ে তাঁর সন্তানদের রুহ। ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বা দিকের লোকেরা জাহান্নামী। এজন্য তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন আর বাঁ দিকে তাকালে কাঁদেন। তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশে উঠলেন। সেখানে উঠে রক্ষক কে বললেনঃ দরযা খোল। তখন রক্ষক প্রথম আসমানের রক্ষকের অনুরুপ প্রশ্ন করলেন। তারপর দরযা খুলে দিলেন।
আনাস (রাঃ) বলেনঃ এরপর আবূ যার বলেনঃ তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসমানসমূহে আদম (আঃ), ঈদরীস (আঃ), মূসা (আঃ), ’ঈসা (আঃ), ও ইবরাহীম (আঃ)-কে পেলেন। আবূ যার (রাঃ) তাঁদের অবস্থান নির্দিষ্ট ভাবে বলেন নি। কেবল এতটুকু বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম (আঃ)-কে প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (আঃ)-কে ষষ্ট আসমানে পেয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ যখন জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইদরীস (আঃ) এর পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ঈদরীস (আঃ) বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নবী ও নেক ভাই! আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ঈদরীস (আঃ)। তারপর আমি মূসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পূণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি বললাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ মূসা (আঃ)। তারপর আমি ঈসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ঈসা (আঃ)।
তারপর ইবরাহীম (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ইবরাহীম (আঃ)। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন যে, ইবনু হাযম আমাকে খবর দিয়েছেন ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বা আনসারী (রাঃ) উভয়ে বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হল, আমি এমন এক সমতল স্থানে উপনীত হলাম, যেখান থেকে কলমের লেখার শব্দ শুনতে পেলাম। ইবনু হাযম (রহঃ) ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করে দিলেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তনকালে যখন মূসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মূসা (আঃ) বললেনঃ আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ কি ফরয করেছেন? আমি বললামঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না।
আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ পাক কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ) এর কাছে আবার গেলাম আর বললামঃ কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরো কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হল। আবার মূসা (আঃ) এর কাছে গেলাম, এবারো তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি আবার গেলাম, তখন আল্লাহ বললেনঃ এই পাঁচই (সওয়াবের দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (গণ্য হবে)। আমার কথার কোন পরিবর্তন নেই। আমি আবার মূসা (আঃ) এর কাছে আসলে তিনি আমাকে আবারো বলললেনঃ আপনার রবের কাছে আবার যান। আমি বললামঃ আবার আমার রবের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তারপর জিবরীল(আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে ঢাকা ছিল, যার তাৎপর্য আমার জানা ছিল না। তারপর আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হল। আমি দেখলাম তাতে মুক্তার হার রয়েছে আর তাঁর মাটি কস্তুরি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আরেকটি বিবরণে কাবার হাতিম বা হিজর থেকে নবীকে মিরাজে নেয়া হয়েছিল, যা পূর্বের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। উল্লেখ্য, কাবার হাতিমে কোন ছাদ নেই। নিচে কাবার হাতিমের একটি ছবি দেয়া হল, বোধগম্যতার উদ্দেশ্যে [120]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ২১৫১. মি’রাজের ঘটনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩৬০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৮৭
৩৬০৮। হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) … মালিক ইবনু সা’সা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যে রাতে তাঁকে ভ্রমণ করানো হয়েছে সে রাতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, একদা আমি কা’বা ঘরের হাতিমের অংশে ছিলাম। কখনো কখনো রাবী (কাতাদা) বলেছেন, হিজরে শুয়েছিলাম। হঠাৎ একজন আগন্তুক আমার নিকট এলেন এবং আমার এ স্থান থেকে সে স্থানের মধ্যবর্তী অংশটি চিরে ফেললেন। রাবী কাতাদা বলেন, আনাস (রাঃ) কখনো কাদ্দা (চিরলেন) শব্দ আবার কখনো শাক্‌কা (বিদীর্ণ) শব্দ বলেছেন। রাবী বলেন, আমি আমার পার্শ্বে বসা জারূদ (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, এ দ্বারা কী বুঝিয়েছেন? তিনি বললেন, হলকুমের নিম্নদেশ থেকে নাভী পর্যন্ত। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে এ-ও বলতে শুনেছি বুকের উপরিভাগ থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত। তারপর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আগন্তুক আমার হৃদপিণ্ড বের করলেন। তারপর আমার নিকট একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল যা ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তারপর আমার হৃদপিণ্ডটি (যমযমের পানি দ্বারা) ধৌত করা হল এবং ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ করে যথাস্থানে পুনরায় রেখে দেয়া হল।
তারপর সাদা রং এর একটি জন্তু আমার নিকট আনা হল। যা আকারে খচ্চর থেকে ছোট ও গাধা থেকে বড় ছিল? জারূদ তাকে বলেন, হে আবূ হামযা, ইহাই কি বুরাক? আনাস (রাঃ) বললেন, হাঁ। সে একেক কদম রাখে দৃষ্টির শেষ প্রান্তে। আমাকে তার উপর সাওয়ার করানো হল। তারপর আমাকে নিয়ে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) চললেন, প্রথম আসমানে নিয়ে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল, ইনি কে? তিনি বললেন জিবরীল। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আবার জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। তখন বলা হল, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল।
আমি যখন পোঁছালাম, তখন তথায় আদম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাত পেলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি আপনার আদি পিতা আদম (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার পুত্র ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর উপরের দিকে চলে দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছে দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল কে? তিনি বললেন জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। তারপর বলা হল- তাঁর জন্য খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর খুলে দেওয়া হল। যখন তথায় পৌঁছালাম। তখন সেখানে ইয়াহ্‌ইয়া ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) এর সাক্ষাত পেলাম। তাঁরা দু’জন ছিলেন পরস্পরের খালাত ভাই। তিনি (জিবরীল) বললেন, এরা হলেন ইয়াহ্‌ইয়া ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম)। তাঁদের প্রতি সালাম করুন। তখন আমি সালাম দিলাম। তাঁরা জবাব দিলেন, তারপর বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
এরপর তিনি আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানের দিকে চললেন, সেখানে পৌঁছে জিবরীল বললেন খুলে দাও। তাঁকে বলা হল কে? তিনি উত্তর দিলেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর জন্য খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর দরজা খুলে দেওয়া হল। আমি তথায় পৌঁছে ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) কে দেখতে পেলাম। জিবরীল বললেন, ইনি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) আপনি তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তিনিও জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করলেন এবং চতুর্থ আসমানে পৌঁছলেন। আর (ফিরিশ্‌তাকে) দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। তখন বলা হল- তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তখন খুলে দেওয়া হল। আমি ইদ্রীস (আলাইহিস সালাম) এর কাছে পৌঁছলে জিবরীল বললেন, ইনি ইদ্রীস আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনিও জবাব দিলেন। তারপর বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
এরপর তিনি (জিবরীল) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করে পঞ্চম আসমানে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দিলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল। তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তথায় পৌঁছে হারূন (আলাইহিস সালাম) কে পেলাম। জিবরীল বললেন, ইনি হারূন (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম; তিনিও জবাব দিলেন, এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
তারপর আমাকে নিয়ে যাত্রা করে ষষ্ঠ আকাশে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। ফিরিশ্‌তা বললেন, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগন্তুক এসেছেন। তথায় পৌঁছে আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) কে পেলাম। জিবরীল(আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম; তিনি জবাব দিলেন, এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
আমি যখন অগ্রসর হলাম তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কিসের জন্য কাঁদছেন? তিনি বললেন আমি এজন্য কাঁদছি যে, আমার পর একজন যুবককে নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে, যার উম্মত আমার উম্মত থেকে অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে আমাকে নিয়ে সপ্তম আকাশের দিকে গেলেন এবং দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? তিনি উত্তর দিলেন, আমি জিবরীল। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞাসা করা হল, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছে কি? তিনি বললেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। আমি সেখানে পৌঁছে ইব্‌রাহীম (আলাইহিস সালাম) কে দেখতে পেলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি আপনার পিতা। তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার পুত্র ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর আমাকে সিদ্‌রাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠানো হল। দেখতে পেলাম, উহার ফল হাজার অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতাগুলি এই হাতির কানের মত। আমাকে বলা হল, এ হল সিদরাতুল মুন্‌তাহা (জড় জগতের শেষ প্রান্ত)।
সেখানে আমি চারটি নহর দেখতে পেলাম, যাদের দু’টি ছিল অপ্রকাশ্য দু’টি ছিল প্রকাশ্য। তখন আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে জিজ্ঞেস করলাম, এ নহরগুলো কী? অপ্রকাশ্য দু’টি হল জান্নাতের দুইটি নহর। আর প্রকাশ্য দুটি হল নীল নদী ও ফুরাত নদী। তারপর আমার সামনে ’আল-বায়তুল মামুর’ প্রকাশ করা হল, এরপর আমার সামনে একটি শরাবের পাত্র, একটি দুধের পাত্র ও একটি মধুর পাত্র পরিবেশন করা হল। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তখন জিবরীল বললেন, এ-ই হচ্ছে ফিতরাত (দ্বীন-ই-ইসলাম)। আপনি ও আপনার উম্মতগণ এর উপর প্রতিষ্ঠিত। তারপর আমার উপর দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত সালাম ফরয করা হল।
এরপর আমি ফিরে আসলাম। মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে কী আদেশ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে সমর্থ হবে না। আল্লাহর কসম। আমি আপনার আগে লোকদের পরীক্ষা করেছি এবং বনী ইসরাইলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। তাই আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের(বোঝা) হাল্কা করার জন্য আবেদন করুন।
আমি ফিরে গেলাম। ফলে আমার উপর থেকে (দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) হ্রাস করে দিলেন। আমি আবার মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট ফিরে এলাম তিনি আবার আগের মত বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। ফলে আল্লাহ তা’আলা আরো দশ ওয়াক্ত সালাত কমিয়ে দিলেন। ফিরার পথে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট পৌঁছালে, তিনি আবার পূর্বোক্ত কথা বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা আর দশ (ওয়াক্ত) হ্রাস করলেন। আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) নিকট ফিরে এলাম। তিনি আবার ঐ কথাই বললেন আমি আবার ফিরে গেলাম। তখন আমাকে দশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ দেওয়া হয়। আমি (তা নিয়ে) ফিরে এলাম। মূসা (আলাইহিস সালাম) ঐ কথাই আগের মত বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম, তখন আমাকে পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়।
তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট ফিরে এলাম। তিনি বললেন, আপনাকে কী আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমি বললাম, দৈনিক পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত আদায়ের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পাঁচ সালাত আদায় করতেও সমর্থ হবে না। আপনার পূর্বে আমি লোকদের পরীক্ষা করেছি। বনী ইসরাইলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আমার রবের নিকট (অনেকবার) আবেদন করেছি, এতে আমি লজ্জাবোধ করছি। আর আমি এতেই সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তা মেনে নিয়েছি। এরপর তিনি বললেন, আমি যখন মূসা (আলাইহিস সালাম) কে অতিক্রম করে অগ্রসর হলাম, তখন জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমি আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি জারি করে দিলাম এবং আমার বান্দাদের উপর লঘু করে দিলাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু সা‘সা‘আ (রাঃ)

উম্মে হানী 114

আসুন হাদিস দুইটি পাশাপাশি রেখে পড়ি [121] [122]

উম্মে হানী 116

আরেকটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, ঘটনা ঘটেছিল উম্মে হানীর ঘর থেকে। উম্মে হানীর মতে, অন্য কোথাও থেকে নয়। অর্থাৎ উম্মে হানী শুধু নিজের বক্তব্যই দেননি, অন্যদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যকে বাতিলও করেছেন। ইবনে ইসহাকের সিরাতে রাসুলাল্লাহ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মিরাজ হয়েছিল উম্মে হানির ঘর থেকে [123] [124]

রাসুলে করিমের (সা.) মিরাজ সম্পর্কে উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব ওরফে হিন্দের কাছ থেকে কিছু বর্ণনা আমি পেয়েছি। তিনি বলেছেন, ‘আমার বাড়িতে থাকা অবস্থায়ই তিনি মিরাজে গেছেন, অন্য কোনো খান থেকে যাননি। সে রাতে তিনি আমার বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। সে রাতে তিনি এশার নামাজ পড়ে ঘুমাতে গেলেন। আমরাও ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরের একটু আগে রাসুলে করিম (সা.) আমাদের জাগিয়ে দিলেন। আমরা ফজরের নামাজ পড়লাম। তারপর তিনি বললেন, “উম্মে হানি, কালকে তো এইখানে এই উপত্যকায় আপনাদের সঙ্গে আমি এশার নামাজ পড়লাম। সে তো আপনি দেখেছিলেন। তারপর আমি জেরুজালেমে গেলাম এবং ওখানে নামাজ পড়লাম। আবার এখানে আমি এক্ষনি আপনাদের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়লাম, এই যেমন দেখলেন । তিনি বাইরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই আমি তাঁর জামা চেপে ধরলাম, তাতে টান লেগে তাঁর পেট উদাম হয়ে গেল, যেন আমি এক ভাঁজ করা মিসরীর কাপড় ধরে টেনেছিলাম। আমি বললাম, রাসুলুল্লাহ, এ কথা কাউকে যেন বলবেন। না, ওরা বলবে এটা মিথ্যা কথা, আপনাকে তারা অপমান করবে।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম, তাদের আমি বলবই।’

উম্মে হানী 118

মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বলেন, মুহাম্মদ ইবন সাইব কালবী…. উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-এর মিরাজ সম্পর্কে বলেন, যেই রাত্রে রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-এর মিরাজ সংঘটিত হয় সেই রাতে তিনি আমার বাড়ীতে শায়িত ছিলেন। ঈশার সলাত শেষে তিনি ঘুমিয়ে যান। আমরাও ঘুমিয়ে যাই। ফজরের সামান্য আগে তিনি আমাদেরকে জাগালেন। তিনি সালাত পড়লেন এবং আমরাও তাঁর সাথে (ফজরের) সালাত পড়লাম তখন তিনি বললেনঃ হে উম্মে হানী, তোমরা তো দেখেছো আমি তোমাদের সাথে ঈশার সালাত পড়ে তোমাদের এখানেই শুয়ে পড়ি। কিন্তু এরপরে আমি বাইতুল মুকাদ্দাস গমন করি এবং সেখানে সলাত আদায় করি। এখন ফজরের সলাত তোমাদের সাথে পড়লাম যা তোমরা দেখলে। উম্মে হানী বলেন, এই বলে তিনি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। আমি তাঁর চাদরের কিনারা ধরে ফেললাম। ফলে তাঁর পেট থেকে কাপড় সরে গেল। তা দেখতে ভাঁজ করা কিবতী বস্ত্রের মত স্বচ্ছ ও মসৃণ। আমি বললাম : হে আল্লাহর নবী! আপনি এ কথা লোকদের কাছে প্রকাশ করবেন না। অন্যথায় তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলবে এবং আপনাকে কষ্ট দেবে। কিন্তু তিনি বললেন : আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তাদের কাছে এ ঘটনা ব্যক্ত করব। তখন আমি আমার এক হাবশী দাসীকে বললাম ; বসে আছো কেন, জলদি, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)-এর সঙ্গে যাও, তিনি লোকদের কি বলেন তা শোনো, আর দেখো তারা কী মন্তব্য করে।

উম্মে হানী 120

জিবরাইলের সাথে কোথায় সাক্ষাৎ হয়েছিল?

কোরআনের এই আয়াত দুইটি লক্ষ্য করুন। এখানে বলা হচ্ছে, জিবরাইলের সাথে মুহাম্মদের দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিল সিদরাতুল মুনতাহার কাছে, প্রথমবার দেখা হয়েছিল অন্য আরেকটি সময়ে [125] [126]। কিন্তু মিরাজের হাদিস থেকে জানা যায়, সেই রাতে জিবরাইল মক্কায় এসে মুহাম্মদকে নিয়ে গিয়েছিল। তাহলে কোরআনে সিদরাতুল মুনতাহার কাছে দেখা হয়েছিল, এমন কথা লিখিত হল কেন? একটি উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন কলিমুদ্দীনের সাথে আমার দেখা হল কমলাপুর রেলস্টেশনে। সেখান থেকে আমরা এয়ারপোর্টে গেলাম। এরপরে প্লেনে চেপে জার্মানির বার্লিনে এসে পৌঁছালাম। এরপরে কাজ শেষে আবার ঢাকা এয়ারপোর্ট আসলাম, এরপরে কমলাপুর চলে গেলাম। তাহলে, কলিমুদ্দীনের সাথে আমার কোথায় দেখা হয়েছিল বলে আমি বর্ণনা করবো? বার্লিনে দেখা হয়েছিল, এরকম কথা বলবো, নাকি তার সাথে দেখা হয়েছি কমলাপুরে, এই কথাটি বলাটিই সঠিক হবে? তাহলে, সেই রাতে তো জিবরাইলের সাথে দেখা হয়েছিল মক্কায়, এরকম বিবরণ থাকার কথা। সিদরাতুল মুনতাহাতেও নিশ্চয়ই দেখা হয়েছিল, কিন্তু সেটি তো পুরো ঘটনার মাঝের একটি ঘটনা। এরকম ঘটনা বর্ণনার সময় সাধারণত মানুষ ঐ মূহুর্তটিকেই সাক্ষাতের সময় হিসেবে বিবেচনা করে, যখন তার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হল! প্রথম মূহুর্তের কথাই বলা হয়, পরের মূহুর্তের কথা বলা হয় না। বিষয়টি একটু ভেবে দেখুন, [127]

53:13
অবশ্যই সে [অর্থাৎ নবী (সা.)] তাকে [অর্থাৎ জিবরাঈল (আঃ)-কে] আরেকবার দেখেছিল
— Taisirul Quran
নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর সে তো তাকে* আরেকবার** দেখেছিল। * জিবরীলকে।
— Rawai Al-bayan
আর অবশ্যই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

53:14
শেষসীমার বরই গাছের কাছে,
— Taisirul Quran
সিদরাতুল মুনতাহার নিকট,
— Sheikh Mujibur Rahman
সিদরাতুল মুনতাহার* নিকট। * সিদরাতুল মুনতাহা হল সপ্তম আকাশে আরশের ডান দিকে একটি কুল জাতীয় বৃক্ষ, সকল সৃষ্টির জ্ঞানের সীমার শেষ প্রান্ত। তারপর কি আছে, একমাত্র আল্লাহই জানেন।
— Rawai Al-bayan
‘সিদরাতুল মুন্তাহা’ তথা প্রান্তবর্তী কুল গাছ এর কাছে [১],
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria


মিরাজে যাওয়ার বাহন কী?

মুহাম্মদ ঠিক কীভাবে, অর্থাৎ কোন বাহনে চড়ে নাকি জিবরাইলের হাত ধরে নাকি লিফট বা সিড়িতে চড়ে মিরাজে গিয়েছিলেন, তার বর্ণনাতেও রয়েছে গড়মিল। আসুন দেখা যাক। নিচের বর্ণনাটি পড়ুন। এখানে বলা হচ্ছে, বুরাক নামক সাদা জন্তুতে চড়লেন এবং এরপরেই প্রথম আসমানে গিয়ে পৌঁছালেন, অর্থাৎ সেই বুরাকই ছিল বাহন [128]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৪
৩১৩। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) সম্ভবত তার সম্প্রদায়ের জনৈক মালিক ইবনু সা’সাআ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ একদা আমি কাবা শরীফের কাছে নিদ্রা ও জাগরণের মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। তখন তিন ব্যাক্তির মধ্যবতী একজনকে কথা বলতে শুনতে পেলাম। যাহোক তিনি আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে গেলেন। তারপর আমার কাছে একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল, তাতে যমযমের পানি ছিল। এরপর তিনি আমার বক্ষ এখান থেকে ওখান পর্যন্ত বিদীর্ন করলেন। বর্ণনাকারী কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমি আমার পার্শ্বস্থ একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এখান থেকে ওখান পর্যন্ত- বলে কি বোঝাতে চেয়েছেন?
তিনি জবাব দিলেন, “বক্ষ থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আমার হৃদপিণ্ডটি বের করা হল এবং যমযমের পানি দিয়ে তা ধৌত করে পূনরায় যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হল। ঈমান ও হিকমতে আমার হৃদয় পূর্ন করে দেয়া হয়েছে। এরপর আমার কাছে ’বুরাক’- নামের একটি সাদা জন্তু উপস্থিত করা হয়। এটি গাধা থেকে কিছু বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট। যতদুর দৃষ্টি যায় একেক পদক্ষেপে সে ততদুর চলে। এর উপর আমাকে আরোহণ করান হল। আমরা চললাম এবং দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত পৌছলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, আমার সাথে মুহাম্মাদ আছেন। দাররক্ষী বললেন, তাঁর কাছে আপনাকে পাঠান হয়েছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর দরজা খুলে দিলেন এবং বললেন, মারহাবা! কত সম্মানিত আগন্তুকের আগমন হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারপর আমরা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে আসলাম … এভাবে বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে এ রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় আসমানে ঈসা ও ইয়াহইয়া, তৃতীয় আসমানে ইউসুফ, চতূর্থ আসমানে ইদরীস, পঞ্চম আসমানে হারুন (আলাইহিমুস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। রাসুলাল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তারপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে গিয়ে পৌছি এবং মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গিয়ে তাঁকে সালাম দেই। তিনি বললেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য নবী, সুযোগ্য ভ্রাতা! এরপর আমরা ডাঁকে অতিক্রম করে চলে গেলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। আওয়াজ এল, আপনি কেন কাঁদছেন? তিনি জবাব দিলেন, প্রভু, এ বালককে আপনি আমার পরে পাঠিয়েছেন; অথচ আমার উম্মাত অপেক্ষা তাঁর উম্মাত অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা আবার চললাম এবং সপ্তম আসমানে গিয়ে পৌছলাম ও ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলাম। সাহাবী তাঁর এ হাদীসে আরো উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ সেখানে তিনি চারটি নহর দেখেছেন। তন্মধ্যে দুটি প্রকাশ্য ও দুটি অপ্রকাশ্য। সবগুলোই সিদূরাতূল মুনতাহার গোড়া হতে প্রবাহিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি বললাম, হে জিবরীল! এ নহর গুলো কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য নহরদ্বয় তো জান্নাতের নহর আর প্রকাশ্যগুলো নীল ও ফূরাত। অর্থাৎ এ দুটি নহরের সাদৃশ্য রয়েছে জান্নাতের ঐ দুটি নহরের সাথে।
এরপর আমাকে বায়তুল মামুরে উঠান হল। বললামঃ হে জিবরীল! এ কি? তিনি বললেন, এ হচ্ছে ’বায়তুল মামুর’। প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার ফেরেশতা (তাওয়াফের জন্য) প্রবেশ করে। তারা একবার তাওয়াফ সেরে বের হলে কখনও আর ফের তাওয়াফের সুযোগ হয় না তাদের। তারপর আমার সম্মুখে দূটি পাত্র পেশ করা হলো, একটি শরাবের, অপরটি দুধের। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনি ঠিক করেছেন। আল্লাহ আপনার উম্মাতকেও আপনার ওসীলায় ফিতরাত এর উপর কায়েম রাখুন। তারপর আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়… এভাবে বর্ণনাকায়ী হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আরেকটি হাদিস পড়ি, যেখান থেকে বোঝা যাবে, মুহাম্মদ বুরাকে চড়ার পরে জান্নাত জাহান্নাম ভ্রমণ করার আগে সেই বুরাক থেকে নামেনি। অর্থাৎ বুরাকই ছিল মুহাম্মদের বাহন [129] [130]

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪৪/ তাফসীরুল কুরআন
পরিচ্ছেদঃ ১৮. সূরা বানী ইসরাঈল
৩১৪৭৷ যির ইবনু হুবাইশ (রাহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাযিঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বাইতুল মাকদিসে নামায আদায় করেছেন? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, হ্যাঁ তিনি নামায আদায় করেছেন। তিনি বললেন, হে টেকো! তুমি এ ধরনের কথা বলছ, তা কিসের ভিত্তিতে বলছ? আমি বললাম, কুরআনের ভিত্তিতে। কুরআন আমার ও আপনার মাঝে ফাঈসালা করবে। হুযাইফা (রাযিঃ) বললেন, কুরআন হতে যে ব্যক্তি দলীল গ্রহণ করল সে কৃতকার্য হল।
সুফইয়ান (রাহঃ) বলেন, তিনি (মিসআর) কখনো “কাদ ইহতাজ্জা” আবার কখনো “কাদ ফালাজা” বলেছেন। তারপর তিনি (যির) এই আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “পবিত্র মহান সেই সত্তা, যিনি এক রাতে তার বান্দাকে মাসজিদুল হারাম হতে দূরবর্তী মসজিদে নিয়ে গেলেন”- (সূরা বানী ইসরাঈল ১)। হুযাইফাহ্ (রাযিঃ) বলেন, এ আয়াতের মাধ্যমে কি তুমি প্রমাণ করতে চাও, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে নামায আদায় করেছেন? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, সেখানে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করতেন, তাহলে তোমাদের উপরও সেখানে নামায আদায় করা বাধ্যতামূলক হত, যেমন মাসজিদুল হারামে নামায আদায় করা তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
হুযাইফাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি পশু আনা হল। এর পিঠ ছিল দীর্ঘ এবং (চলার সময়) এর পা দৃষ্টির সীমায় পতিত হয়। তারা দু’জন (মহানাবী ও জিবরীল) জান্নাত, জাহান্নাম এবং আখিরাতের প্রতিশ্রুত বিষয়সমূহ দেখার পূর্ব পর্যন্ত বোরাকের পিঠ হতে নামেননি। তারপর তারা দু’জন প্রত্যাবর্তন করেন। তারা যেভাবে গিয়েছিলেন অনুরূপভাবেই ফিরে আসেন (অর্থাৎ সওয়ারী অবস্থায়ই ফিরে আসেন)। হুযাইফাহ (রাযিঃ) বলেন, লোকেরা বলাবলি করে, তিনি বোরাককে বেঁধেছিলেন। কেন এটি তার নিকট হতে পালিয়ে যাবে। অথচ গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু জানার মালিক (আল্লাহ তা’আলা) বোরাককে তার নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছিলেন।
সনদ হাসান।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ যির ইবন হুবায়শ (রহঃ)

আরেকটি বিবরণে বলা আছে, বায়তুল মাকদিস থেকে একটি সিড়িতে চড়ে নবী সাত আসমানে গিয়েছিলেন, [131]

উম্মে হানী 122

আরও একটি বিবরণ অনুসারে, জিবরাইল তাকে হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন, [132]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮/ সালাত
পরিচ্ছেদঃ ২৪২। মি’রাজে কিভাবে সালাত ফরজ হল?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৪৯
ইবন ’আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমার কাছে আবূ সুফিয়ান ইবন হারব (রাঃ) হিরাকল-এর হাদীসে বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমদেরকে সালাত, সত্যবাদিতা ও চারিত্রিক পবিত্রতার নির্দেশ দিয়েছেন।
৩৪২। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমার ঘরের ছাদ খুলে দেয়া হল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। তারপর জিবরীল (আঃ) এসে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা যমযমের পানি দিয়ে ধুইলেন। এরপর হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। তারপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আসমানের দিকে নিয়ে চললেন। যখন দুনিয়ার আসমানে পৌঁছালাম, তখন জিবরীল (আঃ) আসমানের রক্ষককে বললেনঃ দরযা খোল। তিনি বললেনঃ কে? উত্তর দিলেনঃ আমি জিবরীল, আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ আপনার সঙ্গে আর কেউ আছে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমার সঙ্গে মুহাম্মদ। তিনি আবার বললেনঃ তাঁকে কি আহবান করা হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেনঃ হাঁ।
তারপর আসমান খোলা হলে আমরা প্রথম আসমানে উঠলাম। সেখানে দেখলাম, এক লোক বসে আছেন এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি তাঁর ডান পাশে রয়েছে এবং অনেকগুলো মানুষের আকৃতি বাম পাশেও রয়েছে। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন, হাসছেন আর যখন তিনি বাম দিকে তাকাচ্ছেন, কাঁদছেন। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ, হে পুণ্যবান নবী! হে নেক সন্তান! আমি জিবরীল (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামঃ ইনি কে? তিনি বললেনঃ ইনি আদম (আঃ)। আর তাঁর ডানে ও বায়ে তাঁর সন্তানদের রুহ। ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বা দিকের লোকেরা জাহান্নামী। এজন্য তিনি ডান দিকে তাকালে হাসেন আর বাঁ দিকে তাকালে কাঁদেন। তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় আকাশে উঠলেন। সেখানে উঠে রক্ষক কে বললেনঃ দরযা খোল। তখন রক্ষক প্রথম আসমানের রক্ষকের অনুরুপ প্রশ্ন করলেন। তারপর দরযা খুলে দিলেন।
আনাস (রাঃ) বলেনঃ এরপর আবূ যার বলেনঃ তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আসমানসমূহে আদম (আঃ), ঈদরীস (আঃ), মূসা (আঃ), ’ঈসা (আঃ), ও ইবরাহীম (আঃ)-কে পেলেন। আবূ যার (রাঃ) তাঁদের অবস্থান নির্দিষ্ট ভাবে বলেন নি। কেবল এতটুকু বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম (আঃ)-কে প্রথম আসমানে এবং ইবরাহীম (আঃ)-কে ষষ্ট আসমানে পেয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ যখন জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ইদরীস (আঃ) এর পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ঈদরীস (আঃ) বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নবী ও নেক ভাই! আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ঈদরীস (আঃ)। তারপর আমি মূসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পূণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি বললাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ মূসা (আঃ)। তারপর আমি ঈসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান রাসূল ও নেক ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ঈসা (আঃ)।
তারপর ইবরাহীম (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ খোশ আমদেদ! পুণ্যবান নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ ইনি ইবরাহীম (আঃ)। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন যে, ইবনু হাযম আমাকে খবর দিয়েছেন ইবনু আব্বাস ও আবূ হাব্বা আনসারী (রাঃ) উভয়ে বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হল, আমি এমন এক সমতল স্থানে উপনীত হলাম, যেখান থেকে কলমের লেখার শব্দ শুনতে পেলাম। ইবনু হাযম (রহঃ) ও আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তারপর আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করে দিলেন। আমি এ নিয়ে প্রত্যাবর্তনকালে যখন মূসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মূসা (আঃ) বললেনঃ আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ কি ফরয করেছেন? আমি বললামঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত তা আদায় করতে সক্ষম হবে না।
আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ পাক কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ) এর কাছে আবার গেলাম আর বললামঃ কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরো কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হল। আবার মূসা (আঃ) এর কাছে গেলাম, এবারো তিনি বললেনঃ আপনি আবার আপনার রবের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি আবার গেলাম, তখন আল্লাহ বললেনঃ এই পাঁচই (সওয়াবের দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (গণ্য হবে)। আমার কথার কোন পরিবর্তন নেই। আমি আবার মূসা (আঃ) এর কাছে আসলে তিনি আমাকে আবারো বলললেনঃ আপনার রবের কাছে আবার যান। আমি বললামঃ আবার আমার রবের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তারপর জিবরীল(আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে ঢাকা ছিল, যার তাৎপর্য আমার জানা ছিল না। তারপর আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হল। আমি দেখলাম তাতে মুক্তার হার রয়েছে আর তাঁর মাটি কস্তুরি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আসুন হাদিসের বিবরণগুলো একসাথে দেখি, [133] [134] [135]

উম্মে হানী 124

যাত্রাপথে জেরুজালেম থেমেছিলেন?

কিছু হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবী মুহাম্মদ মিরাজের রাতে যাত্রাপথে জেরুজালেমে থেমেছিলেন নামাজ পড়ার জন্য [136]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২
৩০৮। শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমার কাছে বুরাক আনা হল। বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদুর দৃষ্টি যায়, এক এক পদক্ষেপে সে ততাদূর চলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এতে আরোহন করলাম এবং বায়তুল মাকদাস পর্যন্ত এসে পৌছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে রজ্জুতে বাধতেন, আমি সে রজ্জুতে আমার বাহনটিও বাধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বের হলাম।
জিবরীল (আলাইহিস সালাম) একটি শরাবের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন, আপনি ফিরতকেই গ্রহণ করলেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দার খুলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ, ডেকে পাঠানো হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খূলে দেয়া হল। সেখানে আমি আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সাক্ষাৎ পাই তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন এবং আমার মঙ্গলের জন্য দুআা করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে চললেন এবং দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত পৌছলেন ও দ্বার খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি উত্তরে বললেন জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, তাকে কি আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আলাইহিমুস সালাম) দুই খালাত ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়েঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইউসূফ (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুঃআ করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا‏ “এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়—” (৫৭ঃ ১৯)।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খূলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হল। সেখানে হারুন (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খূলে দেয়া হল। সেখানে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রাস্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললোন, জিবরীল। বলা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি বায়তুল মা’মুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। বায়তুল মামুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পূনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হস্থিনীর কানের মত আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশে যা আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ তায়াআলা আমার উপর যা অহী করার তা অহী করলেন। আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করলেন। এরপর আমি মূসা(আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মাত এ নির্দেশ পাননে সক্ষম হবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার উম্মাতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হল। তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মাত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এভাবে আমি একবার মূসা (আলাইহিস সালাম) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়াহ করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও, দিন ও রাতের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করা হল। প্রতি ওয়াক্ত সালাত দশ ওয়াক্ত সালাতের সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হল) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান। যে ব্যাক্তি কোন নেক কাজের ইচ্ছা করল এবং তা কাজে রুপায়িত করতে পারল না, আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; অ্যর তা কাজে রুপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের অভিপ্রায় করল, অথচ তা কাজে পরিণত করল না, তার জন্য কোন গুনাহ লেখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার উপর লেখা হয় একটি মাত্র গুনাহ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে নেমে এলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরো সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিযয় নিয়ে বারবার আমি আমার রবের কাছে আসা-যাওয়া করেছি, এখন পূনরায় যেতে লজ্জা হচ্ছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

নিচের হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়, মাঝখানে তারা জেরুজালেমে থামেনি, সরাসরি প্রথম আসমানে গেছেন [137]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৪
৩১৩। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) সম্ভবত তার সম্প্রদায়ের জনৈক মালিক ইবনু সা’সাআ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ একদা আমি কাবা শরীফের কাছে নিদ্রা ও জাগরণের মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। তখন তিন ব্যাক্তির মধ্যবতী একজনকে কথা বলতে শুনতে পেলাম। যাহোক তিনি আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে গেলেন। তারপর আমার কাছে একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল, তাতে যমযমের পানি ছিল। এরপর তিনি আমার বক্ষ এখান থেকে ওখান পর্যন্ত বিদীর্ন করলেন। বর্ণনাকারী কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমি আমার পার্শ্বস্থ একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এখান থেকে ওখান পর্যন্ত- বলে কি বোঝাতে চেয়েছেন?
তিনি জবাব দিলেন, “বক্ষ থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আমার হৃদপিণ্ডটি বের করা হল এবং যমযমের পানি দিয়ে তা ধৌত করে পূনরায় যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হল। ঈমান ও হিকমতে আমার হৃদয় পূর্ন করে দেয়া হয়েছে। এরপর আমার কাছে ’বুরাক’- নামের একটি সাদা জন্তু উপস্থিত করা হয়। এটি গাধা থেকে কিছু বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট। যতদুর দৃষ্টি যায় একেক পদক্ষেপে সে ততদুর চলে। এর উপর আমাকে আরোহণ করান হল। আমরা চললাম এবং দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত পৌছলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, আমার সাথে মুহাম্মাদ আছেন। দাররক্ষী বললেন, তাঁর কাছে আপনাকে পাঠান হয়েছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর দরজা খুলে দিলেন এবং বললেন, মারহাবা! কত সম্মানিত আগন্তুকের আগমন হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারপর আমরা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে আসলাম … এভাবে বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে এ রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় আসমানে ঈসা ও ইয়াহইয়া, তৃতীয় আসমানে ইউসুফ, চতূর্থ আসমানে ইদরীস, পঞ্চম আসমানে হারুন (আলাইহিমুস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। রাসুলাল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তারপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে গিয়ে পৌছি এবং মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গিয়ে তাঁকে সালাম দেই। তিনি বললেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য নবী, সুযোগ্য ভ্রাতা! এরপর আমরা ডাঁকে অতিক্রম করে চলে গেলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। আওয়াজ এল, আপনি কেন কাঁদছেন? তিনি জবাব দিলেন, প্রভু, এ বালককে আপনি আমার পরে পাঠিয়েছেন; অথচ আমার উম্মাত অপেক্ষা তাঁর উম্মাত অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা আবার চললাম এবং সপ্তম আসমানে গিয়ে পৌছলাম ও ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলাম। সাহাবী তাঁর এ হাদীসে আরো উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ সেখানে তিনি চারটি নহর দেখেছেন। তন্মধ্যে দুটি প্রকাশ্য ও দুটি অপ্রকাশ্য। সবগুলোই সিদূরাতূল মুনতাহার গোড়া হতে প্রবাহিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি বললাম, হে জিবরীল! এ নহর গুলো কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য নহরদ্বয় তো জান্নাতের নহর আর প্রকাশ্যগুলো নীল ও ফূরাত। অর্থাৎ এ দুটি নহরের সাদৃশ্য রয়েছে জান্নাতের ঐ দুটি নহরের সাথে।
এরপর আমাকে বায়তুল মামুরে উঠান হল। বললামঃ হে জিবরীল! এ কি? তিনি বললেন, এ হচ্ছে ’বায়তুল মামুর’। প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার ফেরেশতা (তাওয়াফের জন্য) প্রবেশ করে। তারা একবার তাওয়াফ সেরে বের হলে কখনও আর ফের তাওয়াফের সুযোগ হয় না তাদের। তারপর আমার সম্মুখে দূটি পাত্র পেশ করা হলো, একটি শরাবের, অপরটি দুধের। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনি ঠিক করেছেন। আল্লাহ আপনার উম্মাতকেও আপনার ওসীলায় ফিতরাত এর উপর কায়েম রাখুন। তারপর আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়… এভাবে বর্ণনাকায়ী হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আরেকটি হাদিস পড়ি, যেখান থেকে বোঝা যাবে, মুহাম্মদ বুরাকে চড়ার পরে জান্নাত জাহান্নাম ভ্রমণ করার আগে সেই বুরাক থেকে নামেনি। নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করুন, দুইজন সাহাবীর মধ্যে তর্ক বিতর্ক হচ্ছে, যেখানে বলা হচ্ছে, নবী বায়তুল মাকদিসে নামাজ পড়েছেন কিনা [138] [139]

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪৪/ তাফসীরুল কুরআন
পরিচ্ছেদঃ ১৮. সূরা বানী ইসরাঈল
৩১৪৭৷ যির ইবনু হুবাইশ (রাহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাযিঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বাইতুল মাকদিসে নামায আদায় করেছেন? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, হ্যাঁ তিনি নামায আদায় করেছেন। তিনি বললেন, হে টেকো! তুমি এ ধরনের কথা বলছ, তা কিসের ভিত্তিতে বলছ? আমি বললাম, কুরআনের ভিত্তিতে। কুরআন আমার ও আপনার মাঝে ফাঈসালা করবে। হুযাইফা (রাযিঃ) বললেন, কুরআন হতে যে ব্যক্তি দলীল গ্রহণ করল সে কৃতকার্য হল।
সুফইয়ান (রাহঃ) বলেন, তিনি (মিসআর) কখনো “কাদ ইহতাজ্জা” আবার কখনো “কাদ ফালাজা” বলেছেন। তারপর তিনি (যির) এই আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “পবিত্র মহান সেই সত্তা, যিনি এক রাতে তার বান্দাকে মাসজিদুল হারাম হতে দূরবর্তী মসজিদে নিয়ে গেলেন”- (সূরা বানী ইসরাঈল ১)। হুযাইফাহ্ (রাযিঃ) বলেন, এ আয়াতের মাধ্যমে কি তুমি প্রমাণ করতে চাও, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে নামায আদায় করেছেন? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, সেখানে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করতেন, তাহলে তোমাদের উপরও সেখানে নামায আদায় করা বাধ্যতামূলক হত, যেমন মাসজিদুল হারামে নামায আদায় করা তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
হুযাইফাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি পশু আনা হল। এর পিঠ ছিল দীর্ঘ এবং (চলার সময়) এর পা দৃষ্টির সীমায় পতিত হয়। তারা দু’জন (মহানাবী ও জিবরীল) জান্নাত, জাহান্নাম এবং আখিরাতের প্রতিশ্রুত বিষয়সমূহ দেখার পূর্ব পর্যন্ত বোরাকের পিঠ হতে নামেননি। তারপর তারা দু’জন প্রত্যাবর্তন করেন। তারা যেভাবে গিয়েছিলেন অনুরূপভাবেই ফিরে আসেন (অর্থাৎ সওয়ারী অবস্থায়ই ফিরে আসেন)। হুযাইফাহ (রাযিঃ) বলেন, লোকেরা বলাবলি করে, তিনি বোরাককে বেঁধেছিলেন। কেন এটি তার নিকট হতে পালিয়ে যাবে। অথচ গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু জানার মালিক (আল্লাহ তা’আলা) বোরাককে তার নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছিলেন।
সনদ হাসান।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ যির ইবন হুবায়শ (রহঃ)

আসুন হাদিস দুইটি পাশাপাশি রেখে পড়ি,

উম্মে হানী 126

দুধ ও মদ কোথায় দেয়া হয়েছিল?

দুধ ও মদের মধ্যে একটি বেছে নেয়ার জন্য দেয়া হয়েছিল জেরুজালেমে [140]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২
৩০৮। শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমার কাছে বুরাক আনা হল। বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদুর দৃষ্টি যায়, এক এক পদক্ষেপে সে ততাদূর চলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এতে আরোহন করলাম এবং বায়তুল মাকদাস পর্যন্ত এসে পৌছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে রজ্জুতে বাধতেন, আমি সে রজ্জুতে আমার বাহনটিও বাধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বের হলাম।
জিবরীল (আলাইহিস সালাম) একটি শরাবের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন, আপনি ফিরতকেই গ্রহণ করলেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দার খুলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ, ডেকে পাঠানো হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খূলে দেয়া হল। সেখানে আমি আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সাক্ষাৎ পাই তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন এবং আমার মঙ্গলের জন্য দুআা করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে চললেন এবং দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত পৌছলেন ও দ্বার খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি উত্তরে বললেন জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, তাকে কি আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আলাইহিমুস সালাম) দুই খালাত ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়েঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইউসূফ (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুঃআ করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا‏ “এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়—” (৫৭ঃ ১৯)।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খূলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হল। সেখানে হারুন (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খূলে দেয়া হল। সেখানে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রাস্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললোন, জিবরীল। বলা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি বায়তুল মা’মুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। বায়তুল মামুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পূনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হস্থিনীর কানের মত আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশে যা আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ তায়াআলা আমার উপর যা অহী করার তা অহী করলেন। আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করলেন। এরপর আমি মূসা(আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মাত এ নির্দেশ পাননে সক্ষম হবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার উম্মাতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হল। তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মাত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এভাবে আমি একবার মূসা (আলাইহিস সালাম) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়াহ করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও, দিন ও রাতের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করা হল। প্রতি ওয়াক্ত সালাত দশ ওয়াক্ত সালাতের সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হল) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান। যে ব্যাক্তি কোন নেক কাজের ইচ্ছা করল এবং তা কাজে রুপায়িত করতে পারল না, আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; অ্যর তা কাজে রুপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের অভিপ্রায় করল, অথচ তা কাজে পরিণত করল না, তার জন্য কোন গুনাহ লেখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার উপর লেখা হয় একটি মাত্র গুনাহ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে নেমে এলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরো সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিযয় নিয়ে বারবার আমি আমার রবের কাছে আসা-যাওয়া করেছি, এখন পূনরায় যেতে লজ্জা হচ্ছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আরেকটি বর্ণনাতে পাওয়া যায়, দুধ ও মদের মধ্যে বেছে নিতে বলা হয়েছিল বায়তুল মামুরে। যেখানে ফেরেশতারা ইবাদত করে। বায়তুল মামুর অবস্থান হল দুনিয়ার কাবা শরীফ বা মসজিদুল হারাম এর ঠিক সোজা বারবার ল্যাবিয়াহ বা দামিয়াহ্ নামক সপ্তম আসমান [141]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩১৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬৪
৩১৩। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাবী বলেন, আনাস (রাঃ) সম্ভবত তার সম্প্রদায়ের জনৈক মালিক ইবনু সা’সাআ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ একদা আমি কাবা শরীফের কাছে নিদ্রা ও জাগরণের মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। তখন তিন ব্যাক্তির মধ্যবতী একজনকে কথা বলতে শুনতে পেলাম। যাহোক তিনি আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে গেলেন। তারপর আমার কাছে একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল, তাতে যমযমের পানি ছিল। এরপর তিনি আমার বক্ষ এখান থেকে ওখান পর্যন্ত বিদীর্ন করলেন। বর্ণনাকারী কাতাদা (রাঃ) বলেন, আমি আমার পার্শ্বস্থ একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, এখান থেকে ওখান পর্যন্ত- বলে কি বোঝাতে চেয়েছেন?
তিনি জবাব দিলেন, “বক্ষ থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত”। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আমার হৃদপিণ্ডটি বের করা হল এবং যমযমের পানি দিয়ে তা ধৌত করে পূনরায় যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া হল। ঈমান ও হিকমতে আমার হৃদয় পূর্ন করে দেয়া হয়েছে। এরপর আমার কাছে ’বুরাক’- নামের একটি সাদা জন্তু উপস্থিত করা হয়। এটি গাধা থেকে কিছু বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট। যতদুর দৃষ্টি যায় একেক পদক্ষেপে সে ততদুর চলে। এর উপর আমাকে আরোহণ করান হল। আমরা চললাম এবং দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত পৌছলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, আমার সাথে মুহাম্মাদ আছেন। দাররক্ষী বললেন, তাঁর কাছে আপনাকে পাঠান হয়েছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর দরজা খুলে দিলেন এবং বললেন, মারহাবা! কত সম্মানিত আগন্তুকের আগমন হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারপর আমরা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর কাছে আসলাম … এভাবে বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে এ রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় আসমানে ঈসা ও ইয়াহইয়া, তৃতীয় আসমানে ইউসুফ, চতূর্থ আসমানে ইদরীস, পঞ্চম আসমানে হারুন (আলাইহিমুস সালাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। রাসুলাল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তারপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে গিয়ে পৌছি এবং মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গিয়ে তাঁকে সালাম দেই। তিনি বললেন, মারহাবা, হে সুযোগ্য নবী, সুযোগ্য ভ্রাতা! এরপর আমরা ডাঁকে অতিক্রম করে চলে গেলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। আওয়াজ এল, আপনি কেন কাঁদছেন? তিনি জবাব দিলেন, প্রভু, এ বালককে আপনি আমার পরে পাঠিয়েছেন; অথচ আমার উম্মাত অপেক্ষা তাঁর উম্মাত অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমরা আবার চললাম এবং সপ্তম আসমানে গিয়ে পৌছলাম ও ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলাম। সাহাবী তাঁর এ হাদীসে আরো উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেনঃ সেখানে তিনি চারটি নহর দেখেছেন। তন্মধ্যে দুটি প্রকাশ্য ও দুটি অপ্রকাশ্য। সবগুলোই সিদূরাতূল মুনতাহার গোড়া হতে প্রবাহিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি বললাম, হে জিবরীল! এ নহর গুলো কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য নহরদ্বয় তো জান্নাতের নহর আর প্রকাশ্যগুলো নীল ও ফূরাত। অর্থাৎ এ দুটি নহরের সাদৃশ্য রয়েছে জান্নাতের ঐ দুটি নহরের সাথে।
এরপর আমাকে বায়তুল মামুরে উঠান হল। বললামঃ হে জিবরীল! এ কি? তিনি বললেন, এ হচ্ছে ’বায়তুল মামুর’। প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার ফেরেশতা (তাওয়াফের জন্য) প্রবেশ করে। তারা একবার তাওয়াফ সেরে বের হলে কখনও আর ফের তাওয়াফের সুযোগ হয় না তাদের। তারপর আমার সম্মুখে দূটি পাত্র পেশ করা হলো, একটি শরাবের, অপরটি দুধের। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনি ঠিক করেছেন। আল্লাহ আপনার উম্মাতকেও আপনার ওসীলায় ফিতরাত এর উপর কায়েম রাখুন। তারপর আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়… এভাবে বর্ণনাকায়ী হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আসুন হাদিস দুইটি পাশাপাশি রেখে পড়ি,

উম্মে হানী 128

মুসার সাথে কোথায় সাক্ষাৎ হয়?

কয়েকটি সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, মিরাজের রাতে মুহাম্মদ মুসাকে দেখেছিল মুসার কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়। মুসা তখন কবরে সালাত আদায় করছিলেন [142] [143] [144]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৫/ ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ৩৮. মুসা (আঃ) এর ফযীলত
৫৯৪২। হাদ্দাব ইবনু খালিদ এবং শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে রাতে আমার মি’রাজ হয়েছিল, সে রাতে আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর পাশ দিয়ে গেলাম। লাল বালূকা স্তূপের কাছে তাঁর কবরে তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

সহীহ ইবনু হিব্বান (হাদিসবিডি)
৩. কিতাবুল ইসরা [ও মে’রাজ]
পরিচ্ছেদঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে মূসা (আঃ) কে তার কবরে তিনি সালাত আদায় করতে দেখেছিলেন- তার বর্ণনা:
৫০. আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে রাত্রে আমার মি’রাজ হয়েছিল সে রাত্রে আমি মূসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। লাল বালুকা স্তুপের নিকট তার কবরে তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন।[1]
[1] আলবানী: সহীহ।
আরনাউত্ব: মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।
তাখরীজ: মুসলিম ২৩৭৫; নাসাঈ ৩/২১৫; আহমাদ ৩/১৪৮, ২৪৮; ইবনু আবী শাইবা, আল মুসান্নাফ ১৪/৩০৭, ৩০৮।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

সহীহ ইবনু হিব্বান (হাদিসবিডি)
৩. কিতাবুল ইসরা [ও মে’রাজ]
পরিচ্ছেদঃ
৪৯. আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে রিওয়ায়াত করেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে রাত্রে আমার মি’রাজ হয়েছিল সে রাত্রে আমি মূসা (আঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি তার কবরে সালাত[1] আদায় করছিলেন।[2]
[1] সালাত বলতে এখানে শরীয়াহর মুকাল্লিফ হিসেবে সাওয়াবের জন্য সালাত আদায় করছেন- তা উদ্দেশ্য নয়। বরং এখানে নবীদের বারযাখী জিন্দেগী অন্যদের থেকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, যেমন সাধারণ মৃতের চেয়ে শহীদগণের বিশেষ জীবন রয়েছে বারযাখী জীবনে। এছাড়া, দুনিয়ার সালাতের মতও এ সালাত নয়, বরং তা ফিরিশতাদের তাসবীহ বা জান্নাতী ব্যক্তিদের তাসবীহের মতো। (বিস্তারিত দেখুন, মাজমু’ ফাতোয়া, ইবনু তাইমিয়া ৪/৩৩০; আলবানী, তাওয়াস্সুল, পৃ: ৬০।)
[2] আলবানী: সহীহ।
আরনাউত্ব: বুখারীর শর্তানুযায়ী সহীহ।
তাখরীজ: মুসলিম ২৩৭৫; নাসাঈ ৩/২১৬; আহমাদ ৩/১২০।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ মুসাকে বায়তুল মাকদিসে অন্যান্য নবীদের সাথে সালাত আদায় করতে দেখেছিলেন। মুসা তার কবরে নামাজ পড়লে বায়তুল মাকদিসে গেলেন কীভাবে? [145]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭৪. মাসীহ ইবন মারয়াম (আঃ) ও মাসীহুদ-দাজ্জাল প্রসঙ্গে
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩২৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৭২
৩২৭। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি হিজর অর্থাৎ হাতামে ছিলাম। এ সময় কুরায়শরা আমাকে আমার ইসরা সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তারা আমাকে বায়তুল মাকদিসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল, যা আমি ভালভাবে মনে রাখিনি। ফলে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আল্লাহ তাআলা আমার সম্মুখে বায়তুল মাকদিসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন এবং আমি তা দেখছিলাম। তারা আমাকে যে প্রশ্ন করছিল, তার জবাব দিতে লাগলাম। এরপর নবীদের এক জামাতেও আমি নিজেকে দেখলাম।
মূসা (আলাইহিস সালাম) কে সালাতে (নামায/নামাজ) দণ্ডায়মান দেখলাম তিনি শানূয়া গোত্রের লোকদের মত মধ্যমাকৃতির। তাঁর চুল ছিল কোঁকড়ানো। ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কেও সালাতে দাঁড়ানো দেখলাম। উরওয়া ইবনু মাসঊদ আবূ সাকাফী হচ্ছেন তাঁর নিকটতম সদৃশ। ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) কেও সালাতে দাঁড়ানো দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীরই সদৃশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর সালাতের সময় হল, আমি তাঁদের ইমামতি করলাম।
সালাত শেষে এক ব্যাক্তি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ’মালিক’ ওকে সালাম করুন। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ মুসাকে দেখেছিলেন ষষ্ঠ আসমানে। একইসাথে কবরে, বায়তুল মাকদিসে এবং ষষ্ঠ আসমানে মুসা ছিল কীভাবে? মুসা আসলে কয়জন? [146]


সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১৯৮৮. ফিরিশ্তার বিবরণ। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাঃ) নবী (সাঃ) এর নিকট বললেন, ফিরিশতাকূলের মধ্যে জিবরীল (আঃ) ইয়াহুদীদের শত্রু। আর ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন لَنَحْنُ الصَّافُّونَ এই উক্তি ফিরিশ্তাদের।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৯৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩২০৭
২৯৮০। হুদবা ইবনু খালিদ ও খলিফা (ইবনু খাইয়াত) (রহঃ) … মালিক ইবনু সা’সা’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কাবা ঘরের নিকট নিদ্রা ও জাগরণ-এ দু’ অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এরপর তিনি দু’ ব্যাক্তির মাঝে অপর এক ব্যাক্তি অর্থাৎ নিজের অবস্থা উল্লেখ করে বললেন, আমার নিকট স্বর্ণের একটি তশতরী নিয়ে আসা হল-যা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তাপর আমার বুক থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হল। এরপর আমার পেটে যমযমের পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলা হল।
তারপর হিকমত ও ঈমান পরিপূর্ণ করা হল এবং আমার নিকট সাদা চতুষ্পদ জন্তু আনা হল, যা খচ্চর হতে ছোট আর গাধা থেকে বড় অর্থাৎ বুরাক। এরপর তাতে আরোহণ করে আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সহ চলতে চলতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? উত্তর দেওয়া হল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে ধন্যবাদ, তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম।
তারপর আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, পুত্র ও নবী! তোমার প্রতি ধন্যবাদ। এরপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে গেলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ঈসা ও ইয়াহইয়া (আলাইহিমুস সালাম) এর নিকট আসলাম। তাঁরা উভয়ে বললেন, ভাই ও নবী! আপনার প্রতি ধন্যবাদ।
তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর নিকট গেলাম। তাঁকো আমি সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা চতুর্থ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইদ্রিস (আলাইহিস সালাম) এর নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমরা হারুন (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর আমি যখন তাঁর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বলেছেন, হে রব! এ ব্যাক্তি যে আমার পর প্রেরিত, তাঁর উম্মাত আমার উম্মাতের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেহেশতে যাবে। এরপর আমরা সপ্তম আকাশে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, হে পুত্র ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর বায়তুল মা’মুরকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মামুর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফিরিশতা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। এরা এখান থেকে একবার বের হলে দ্বিতীয় বার ফিরে আসে না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা দেখানো হল। দেখলাম, এর ফল যেন, হাজার নামক স্থানের মটকার ন্যায়। আর তার পাতা যেন হাতীর কান। তার মূল দেশে চারটি ঝরনা প্রবাহিত।’ দু’টি অভ্যন্তরে আর দু’টি বাইরে। এ সম্পর্কে আমি জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, অভ্যন্তরে দু’টি জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের দু’টির একটি হল (ইরাকের) ফুরাত আর অপরটি হল (মিশরের) নীল নদ।
তারপর আমি প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়। আমি তা গ্রহণ করে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এলাম। তিনি বললেন, কি করে এলেন? আমি বললাম, আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি আপনার চেয়ে মানুষ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আছি। আমি বনী ইসরাঈলের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি আর আপনার উম্মাত এত (সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে) সমর্থ হবে না। অতএব আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং তা কমানোর অনুরোধ করুন।
আমি ফিরে গেলাম এবং তাঁর নিকট আবেদন করলাম। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। পুনরায় অনুরূপ ঘটল। আর সালাত (নামায/নামাজ)ও ত্রিশ ওয়াক্ত করে দেওয়া হল। পুনরায় অনুরূপ ঘটলে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার অনুরূপ হল। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) কে দশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলাম। তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, এবার আল্লাহ সালাত (নামায/নামাজ) কে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিলেন। আমি মূসার নিকট আসলাম। তিনি বললেন, কি করে আসলেন? আমি বললাম, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিয়েছেন।
এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, আমি বললাম, আমি তা মেনে নিয়েছে। তখন আওয়াজ এল, আমি আমার ফরয জারি করে দিয়েছি। আর আমার বান্দাদের থেকে হালকা করে দিয়েছে। আর আমি প্রতিটি পূণ্যের জন্য দশ গুন সওয়াব দিব।
আর বায়তুল মামুর সম্পর্কে হাম্মাম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু সা‘সা‘আ (রাঃ)

আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ মুসাকে দেখেছিলেন সপ্তম আসমানে। একদমই মাথা খারাপ অবস্থা! [147]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৬/ জাহ্‌মিয়াদের মতের খণ্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ ৩১৩৯. মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ এবং মূসা (আঃ) এর সাথে আল্লাহ্‌ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছিলেন (৪ঃ ১৬৪)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৭০০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫১৭
৭০০৯। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস ইবনু সালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এক রাতে কাবার মসজিদ থেকে সফর করানো হল। বিবরণটি হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল। অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। এদের প্রথমজন বলল, তিনি কে? মধ্যের জন বলল, তিনি এদের উত্তম ব্যাক্তি। সর্বশেষ জন বলল, তা হলে তাদের উত্তম ব্যাক্তিকেই নিয়ে চল। সে রাতটির ঘটনা এটুকুই। এ জন্য তিনি আর তাদেরকে দেখেননি। অবশেষে তারা অন্য এক রাতে আগমন করলেন যা তিনি অন্তর দ্বারা দেখছিলেন। তার চোখ ঘুমন্ত, অন্তর ঘুমায় না। অনুরূপ অন্য নবীগণেরও চোখ ঘুমিয়ে থাকে, অন্তর ঘুমায় না।
এ রাতে তারা তার সাথে কোন কথা না বলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যমযম কূপের কাছে রাখলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার সাথীদের থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার গলার নিচ হতে বক্ষস্থল পর্যন্ত ছেদন করলেন এবং তার বক্ষ ও পেট থেকে সবকিছু নেড়েচেড়ে যমযমের পানি দ্বারা নিজ হাতে ধৌত করেন। সেগুলোকে পরিছন্ন করলেন, তারপর সেখানে একটি তশতরী আনা হয় এবং তাতে ছিল একটি সোনার পাত্র যা পরিপূর্ণ ছিল ঈমান ও হিকমতে। তাঁর বক্ষ ও গলার রগগুলি এর দ্বারা পূর্ণ করলেন।
তারপর সেগুলো যখাস্থানে স্থাপন করে বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে ফিরে আসমানের দিকে আরোহণ করলেন। আসমানের দরজাগুলো হতে একটি দরজাতে নাড়া দিলেন। ফলে আসমানবাসিগণ তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ জিবরীল। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তারা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান (আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আপনজনের মধ্যে এসেছেন) শুভাগমনে আসমানবাসীরা খুবই আনন্দিত। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা যমীনে কি করতে চাচ্ছেন তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো পর্যন্ত তারা জানতে পারে না।
দুনিয়ার আসমানে তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে দেখিয়ে বললেন, তিনি আপনার পিতা, তাকে সালাম দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাম দিলেন। আদম (আলাইহিস সালাম) তার সালামের উত্তর দিলেন। এবং বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান হে আমার পুত্র। তুমি আমার কতইনা উত্তম পুত্র। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি প্রবাহমান নহর দুনিয়ার আসমানে অবলোকন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ নহর দুটি কোন নহর হে জিবরীল! জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ দুটি হলো নীল ও ফুরাতের মুল।
এরপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নহর অবলোকন করলেন। এর ওপর প্রতিঠিত ছিল মোতি ও জাবারজাদের তৈরি একটি প্রাসাদ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নহরে হাত মারলেন। তা ছিল অতি উন্নতমানের মিসক। তিনি বললেনঃ হে জিবরীল! এটি কি? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ হাউযে কাওসার। যা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন।
তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে দ্বিতীয় আসমানে গমন করলেন। প্রথম আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতাগণ তাকে যা বলেছিলেন এখানেও তা বললেনঃ তারা জানতে চাইল, তিনি কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। তারা বললেনঃ আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারা বললেনঃ তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাঁরা বললেন, মারহাবান ওয়া আহলান।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে তিনি তৃতীয় আসমানের দিকে গমন করলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতারা যা বলেছিলেন তৃতীয় আসমানের ফেরেশতাগণও তাই বললেন। তারপর তাকে সঙ্গে করে তিনি চতুর্থ আসমানের দিকে গমন করলেন। তারাও তাঁকে পুর্বের ন্যায়ই বললেন। তারপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গমন করলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো বললেন। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দিকে গমন করলেন। সেখানেও ফেরেশতারা পূর্বের মতই বললেন। সর্বশেষে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে সপ্তম আসমানে গমন করলে সেখানেও ফেরেশতারা তাকে পূর্বের ফেরেশতাদের মতো বললেন। প্রত্যেক আসমানেই নবীগণ রয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নাম উল্লেখ করেছেন।
তন্মধ্যে আমি সংরক্ষিত করেছি যে, দ্বিতীয় আসমানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম), চতূর্থ আসমানে হারুন (আলাইহিস সালাম), পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নবী যায় নাম আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। ষষ্ঠ আসমানে রয়েছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এবং আল্লাহর সাথে বাক্যলাপের মর্যাদার কারণে মূসা (আলাইহিস সালাম) আছেন সপ্তম আসমানে।
সে সময় মূসা বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমি তো ধারনা করিনি আমার ওপর কাউকে উচ্চমর্যাদা দান করা হবে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এত ঊর্ধ্বে আরোহণ করানো হলো, যা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। অবশেষে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় আগমন করলেন। এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতি নিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন। অর্থাৎ তাঁর উম্মাতের উপর রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের কথা ওহী যোগে পাঠানো হলো।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেন। আর মূসার কাছে পৌছলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে আটকিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাত ও দিনে পঞ্চাশ বার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মাত তা আদায়ে সক্ষম হবে না। সুতরাং আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার প্রতিপালক আপনার এবং আপনার উম্মাতের থেকে এ আদেশটি সহজ করে দিবেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলের দিকে এমনভাবে লক্ষ্য করলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হ্যাঁ। আপনি চাইলে তা হতে পারে। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে প্রথমে আল্লাহর কাছে গেলেন।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাস্থানে থেকে বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত এটি আদায়ে সক্ষম হবে না। তখন আল্লাহ দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) কমিয়ে দিলেন। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁকে নামালেন। এভাবেই মূসা তাকে তাঁর প্রতিপালকের কাছে পাঠাতে থাকলেন। পরিশেষে পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকল। পাঁচ সংখ্যায়ও মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে থামিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি আমার বনী ইসরাঈল কাওমের কাছে এর চেয়েও সামান্য কিছু পেতে চেয়েছি। তদুপরি তারা দুর্বল হয়েছে এবং পরিত্যাগ করেছেন অথচ আপনার উম্মাত দৈহিক, মানসিক, শারীরিক সৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা সব দিকে আরো দুর্বল।
সুতরাং আপনি আবার যান এবং আপনার প্রতিপালক থেকে নির্দেশটি আরো সহজ করে আনুন। প্রতিবারই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরামর্শের জন্য জিবরীলের দিকে তাকাতেন। পঞ্চমবারেও জিবরীল তাঁকে নিয়ে গমন করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমার উম্মাতের শরীর, মন, শ্রবণশক্তি ও দেহ নিতান্তই দুর্বল। তাই নির্দেশটি আমাদের থেকে আরো সহজ করে দিন। এরপর পরাক্রমশালী আল্লাহ বললেনঃ মুহাম্মাদ! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি আপনার নিকটে হাযির, বারবার হাযির।
আল্লাহ বললেনঃ আমার কথার কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। আমি তোমাদের উপর যা ফরয করেছি তা ’উম্মুল কিতাব’ তথা লাওহে মাহফুযে সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি নেক আমলের দশটি নেকী রয়েছে। উম্মুল কিতাবে সালাত (নামায/নামাজ) পঞ্চাশ ওয়াক্তই লিপিবদ্ধ আছে। তবে আপনার ও আপনার উম্মাতের জন্য তা পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসার কাছে প্রত্যাবর্তন করলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে দশটি সাওয়াব নির্ধারণ করেছেন। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে এর চাইতেও সামান্য জিনিসের প্রত্যাশ্য করছি। কিন্তু তারা তাও আদায় করেনি। আপনার প্রতিপালকের কাছে আপনি আবার ফিরে যান, যেন আরো একটু কমিয়ে দেন।
এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মূসা, আল্লাহর কসম! আমি আমার প্রতিপালকের কাছে বারবার গিয়েছি। আবার যেতে লজ্জাবোধ করছি, যেন তার সাথে মতান্তর করছি। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ অবতরণ করতে পারেন আল্লাহর নামে। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আসুন সবগুলো বিবরণ একসাথে দেখি। সবগুলোই সহিহ হাদিস এবং রাবিগণের বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, মুসা আসলে কয়জন?

উম্মে হানী 130

ইব্রাহিম কত নম্বর আসমানে?

একটি বর্ণনা থেকে জানা যাচ্ছে, নবী ইব্রাহিম নাকি সাত আসমানের ষষ্ঠ আসমানে অবস্থান করছিল [148]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৬/ জাহ্‌মিয়াদের মতের খণ্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ ৩১৩৯. মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ এবং মূসা (আঃ) এর সাথে আল্লাহ্‌ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছিলেন (৪ঃ ১৬৪)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৭০০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫১৭
৭০০৯। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস ইবনু সালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এক রাতে কাবার মসজিদ থেকে সফর করানো হল। বিবরণটি হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল। অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। এদের প্রথমজন বলল, তিনি কে? মধ্যের জন বলল, তিনি এদের উত্তম ব্যাক্তি। সর্বশেষ জন বলল, তা হলে তাদের উত্তম ব্যাক্তিকেই নিয়ে চল। সে রাতটির ঘটনা এটুকুই। এ জন্য তিনি আর তাদেরকে দেখেননি। অবশেষে তারা অন্য এক রাতে আগমন করলেন যা তিনি অন্তর দ্বারা দেখছিলেন। তার চোখ ঘুমন্ত, অন্তর ঘুমায় না। অনুরূপ অন্য নবীগণেরও চোখ ঘুমিয়ে থাকে, অন্তর ঘুমায় না।
এ রাতে তারা তার সাথে কোন কথা না বলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যমযম কূপের কাছে রাখলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার সাথীদের থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার গলার নিচ হতে বক্ষস্থল পর্যন্ত ছেদন করলেন এবং তার বক্ষ ও পেট থেকে সবকিছু নেড়েচেড়ে যমযমের পানি দ্বারা নিজ হাতে ধৌত করেন। সেগুলোকে পরিছন্ন করলেন, তারপর সেখানে একটি তশতরী আনা হয় এবং তাতে ছিল একটি সোনার পাত্র যা পরিপূর্ণ ছিল ঈমান ও হিকমতে। তাঁর বক্ষ ও গলার রগগুলি এর দ্বারা পূর্ণ করলেন।
তারপর সেগুলো যখাস্থানে স্থাপন করে বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে ফিরে আসমানের দিকে আরোহণ করলেন। আসমানের দরজাগুলো হতে একটি দরজাতে নাড়া দিলেন। ফলে আসমানবাসিগণ তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ জিবরীল। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তারা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান (আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আপনজনের মধ্যে এসেছেন) শুভাগমনে আসমানবাসীরা খুবই আনন্দিত। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা যমীনে কি করতে চাচ্ছেন তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো পর্যন্ত তারা জানতে পারে না।
দুনিয়ার আসমানে তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে দেখিয়ে বললেন, তিনি আপনার পিতা, তাকে সালাম দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাম দিলেন। আদম (আলাইহিস সালাম) তার সালামের উত্তর দিলেন। এবং বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান হে আমার পুত্র। তুমি আমার কতইনা উত্তম পুত্র। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি প্রবাহমান নহর দুনিয়ার আসমানে অবলোকন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ নহর দুটি কোন নহর হে জিবরীল! জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ দুটি হলো নীল ও ফুরাতের মুল।
এরপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নহর অবলোকন করলেন। এর ওপর প্রতিঠিত ছিল মোতি ও জাবারজাদের তৈরি একটি প্রাসাদ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নহরে হাত মারলেন। তা ছিল অতি উন্নতমানের মিসক। তিনি বললেনঃ হে জিবরীল! এটি কি? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ হাউযে কাওসার। যা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন।
তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে দ্বিতীয় আসমানে গমন করলেন। প্রথম আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতাগণ তাকে যা বলেছিলেন এখানেও তা বললেনঃ তারা জানতে চাইল, তিনি কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। তারা বললেনঃ আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারা বললেনঃ তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাঁরা বললেন, মারহাবান ওয়া আহলান।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে তিনি তৃতীয় আসমানের দিকে গমন করলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতারা যা বলেছিলেন তৃতীয় আসমানের ফেরেশতাগণও তাই বললেন। তারপর তাকে সঙ্গে করে তিনি চতুর্থ আসমানের দিকে গমন করলেন। তারাও তাঁকে পুর্বের ন্যায়ই বললেন। তারপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গমন করলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো বললেন। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দিকে গমন করলেন। সেখানেও ফেরেশতারা পূর্বের মতই বললেন। সর্বশেষে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে সপ্তম আসমানে গমন করলে সেখানেও ফেরেশতারা তাকে পূর্বের ফেরেশতাদের মতো বললেন। প্রত্যেক আসমানেই নবীগণ রয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নাম উল্লেখ করেছেন।
তন্মধ্যে আমি সংরক্ষিত করেছি যে, দ্বিতীয় আসমানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম), চতূর্থ আসমানে হারুন (আলাইহিস সালাম), পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নবী যায় নাম আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। ষষ্ঠ আসমানে রয়েছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এবং আল্লাহর সাথে বাক্যলাপের মর্যাদার কারণে মূসা (আলাইহিস সালাম) আছেন সপ্তম আসমানে।
সে সময় মূসা বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমি তো ধারনা করিনি আমার ওপর কাউকে উচ্চমর্যাদা দান করা হবে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এত ঊর্ধ্বে আরোহণ করানো হলো, যা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। অবশেষে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় আগমন করলেন। এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতি নিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন। অর্থাৎ তাঁর উম্মাতের উপর রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের কথা ওহী যোগে পাঠানো হলো।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেন। আর মূসার কাছে পৌছলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে আটকিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাত ও দিনে পঞ্চাশ বার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মাত তা আদায়ে সক্ষম হবে না। সুতরাং আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার প্রতিপালক আপনার এবং আপনার উম্মাতের থেকে এ আদেশটি সহজ করে দিবেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলের দিকে এমনভাবে লক্ষ্য করলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হ্যাঁ। আপনি চাইলে তা হতে পারে। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে প্রথমে আল্লাহর কাছে গেলেন।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাস্থানে থেকে বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত এটি আদায়ে সক্ষম হবে না। তখন আল্লাহ দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) কমিয়ে দিলেন। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁকে নামালেন। এভাবেই মূসা তাকে তাঁর প্রতিপালকের কাছে পাঠাতে থাকলেন। পরিশেষে পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকল। পাঁচ সংখ্যায়ও মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে থামিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি আমার বনী ইসরাঈল কাওমের কাছে এর চেয়েও সামান্য কিছু পেতে চেয়েছি। তদুপরি তারা দুর্বল হয়েছে এবং পরিত্যাগ করেছেন অথচ আপনার উম্মাত দৈহিক, মানসিক, শারীরিক সৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা সব দিকে আরো দুর্বল।
সুতরাং আপনি আবার যান এবং আপনার প্রতিপালক থেকে নির্দেশটি আরো সহজ করে আনুন। প্রতিবারই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরামর্শের জন্য জিবরীলের দিকে তাকাতেন। পঞ্চমবারেও জিবরীল তাঁকে নিয়ে গমন করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমার উম্মাতের শরীর, মন, শ্রবণশক্তি ও দেহ নিতান্তই দুর্বল। তাই নির্দেশটি আমাদের থেকে আরো সহজ করে দিন। এরপর পরাক্রমশালী আল্লাহ বললেনঃ মুহাম্মাদ! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি আপনার নিকটে হাযির, বারবার হাযির।
আল্লাহ বললেনঃ আমার কথার কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। আমি তোমাদের উপর যা ফরয করেছি তা ’উম্মুল কিতাব’ তথা লাওহে মাহফুযে সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি নেক আমলের দশটি নেকী রয়েছে। উম্মুল কিতাবে সালাত (নামায/নামাজ) পঞ্চাশ ওয়াক্তই লিপিবদ্ধ আছে। তবে আপনার ও আপনার উম্মাতের জন্য তা পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসার কাছে প্রত্যাবর্তন করলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে দশটি সাওয়াব নির্ধারণ করেছেন। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে এর চাইতেও সামান্য জিনিসের প্রত্যাশ্য করছি। কিন্তু তারা তাও আদায় করেনি। আপনার প্রতিপালকের কাছে আপনি আবার ফিরে যান, যেন আরো একটু কমিয়ে দেন।
এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মূসা, আল্লাহর কসম! আমি আমার প্রতিপালকের কাছে বারবার গিয়েছি। আবার যেতে লজ্জাবোধ করছি, যেন তার সাথে মতান্তর করছি। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ অবতরণ করতে পারেন আল্লাহর নামে। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আরেকটি বিবরণে পাওয়া যায়, নবী ইব্রাহিমের সাথে মুহাম্মদের দেখা হয়েছিল সপ্তম আসমানে [149]


সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১৯৮৮. ফিরিশ্তার বিবরণ। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাঃ) নবী (সাঃ) এর নিকট বললেন, ফিরিশতাকূলের মধ্যে জিবরীল (আঃ) ইয়াহুদীদের শত্রু। আর ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন لَنَحْنُ الصَّافُّونَ এই উক্তি ফিরিশ্তাদের।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৯৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩২০৭
২৯৮০। হুদবা ইবনু খালিদ ও খলিফা (ইবনু খাইয়াত) (রহঃ) … মালিক ইবনু সা’সা’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কাবা ঘরের নিকট নিদ্রা ও জাগরণ-এ দু’ অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এরপর তিনি দু’ ব্যাক্তির মাঝে অপর এক ব্যাক্তি অর্থাৎ নিজের অবস্থা উল্লেখ করে বললেন, আমার নিকট স্বর্ণের একটি তশতরী নিয়ে আসা হল-যা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তাপর আমার বুক থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হল। এরপর আমার পেটে যমযমের পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলা হল।
তারপর হিকমত ও ঈমান পরিপূর্ণ করা হল এবং আমার নিকট সাদা চতুষ্পদ জন্তু আনা হল, যা খচ্চর হতে ছোট আর গাধা থেকে বড় অর্থাৎ বুরাক। এরপর তাতে আরোহণ করে আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সহ চলতে চলতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? উত্তর দেওয়া হল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে ধন্যবাদ, তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম।
তারপর আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, পুত্র ও নবী! তোমার প্রতি ধন্যবাদ। এরপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে গেলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ঈসা ও ইয়াহইয়া (আলাইহিমুস সালাম) এর নিকট আসলাম। তাঁরা উভয়ে বললেন, ভাই ও নবী! আপনার প্রতি ধন্যবাদ।
তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর নিকট গেলাম। তাঁকো আমি সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা চতুর্থ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইদ্রিস (আলাইহিস সালাম) এর নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমরা হারুন (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর আমি যখন তাঁর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বলেছেন, হে রব! এ ব্যাক্তি যে আমার পর প্রেরিত, তাঁর উম্মাত আমার উম্মাতের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেহেশতে যাবে। এরপর আমরা সপ্তম আকাশে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, হে পুত্র ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর বায়তুল মা’মুরকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মামুর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফিরিশতা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। এরা এখান থেকে একবার বের হলে দ্বিতীয় বার ফিরে আসে না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা দেখানো হল। দেখলাম, এর ফল যেন, হাজার নামক স্থানের মটকার ন্যায়। আর তার পাতা যেন হাতীর কান। তার মূল দেশে চারটি ঝরনা প্রবাহিত।’ দু’টি অভ্যন্তরে আর দু’টি বাইরে। এ সম্পর্কে আমি জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, অভ্যন্তরে দু’টি জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের দু’টির একটি হল (ইরাকের) ফুরাত আর অপরটি হল (মিশরের) নীল নদ।
তারপর আমি প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়। আমি তা গ্রহণ করে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এলাম। তিনি বললেন, কি করে এলেন? আমি বললাম, আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি আপনার চেয়ে মানুষ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আছি। আমি বনী ইসরাঈলের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি আর আপনার উম্মাত এত (সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে) সমর্থ হবে না। অতএব আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং তা কমানোর অনুরোধ করুন।
আমি ফিরে গেলাম এবং তাঁর নিকট আবেদন করলাম। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। পুনরায় অনুরূপ ঘটল। আর সালাত (নামায/নামাজ)ও ত্রিশ ওয়াক্ত করে দেওয়া হল। পুনরায় অনুরূপ ঘটলে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার অনুরূপ হল। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) কে দশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলাম। তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, এবার আল্লাহ সালাত (নামায/নামাজ) কে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিলেন। আমি মূসার নিকট আসলাম। তিনি বললেন, কি করে আসলেন? আমি বললাম, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিয়েছেন।
এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, আমি বললাম, আমি তা মেনে নিয়েছে। তখন আওয়াজ এল, আমি আমার ফরয জারি করে দিয়েছি। আর আমার বান্দাদের থেকে হালকা করে দিয়েছে। আর আমি প্রতিটি পূণ্যের জন্য দশ গুন সওয়াব দিব।
আর বায়তুল মামুর সম্পর্কে হাম্মাম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু সা‘সা‘আ (রাঃ)


হারুন কোন আসমানে ছিলেন?

একটি বিবরণ অনুসারে, হারুনের সাথে দেখা হয়েছিল চতুর্থ আসমানে [150]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৬/ জাহ্‌মিয়াদের মতের খণ্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ ৩১৩৯. মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ এবং মূসা (আঃ) এর সাথে আল্লাহ্‌ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছিলেন (৪ঃ ১৬৪)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৭০০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫১৭
৭০০৯। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস ইবনু সালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এক রাতে কাবার মসজিদ থেকে সফর করানো হল। বিবরণটি হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল। অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। এদের প্রথমজন বলল, তিনি কে? মধ্যের জন বলল, তিনি এদের উত্তম ব্যাক্তি। সর্বশেষ জন বলল, তা হলে তাদের উত্তম ব্যাক্তিকেই নিয়ে চল। সে রাতটির ঘটনা এটুকুই। এ জন্য তিনি আর তাদেরকে দেখেননি। অবশেষে তারা অন্য এক রাতে আগমন করলেন যা তিনি অন্তর দ্বারা দেখছিলেন। তার চোখ ঘুমন্ত, অন্তর ঘুমায় না। অনুরূপ অন্য নবীগণেরও চোখ ঘুমিয়ে থাকে, অন্তর ঘুমায় না।
এ রাতে তারা তার সাথে কোন কথা না বলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যমযম কূপের কাছে রাখলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার সাথীদের থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার গলার নিচ হতে বক্ষস্থল পর্যন্ত ছেদন করলেন এবং তার বক্ষ ও পেট থেকে সবকিছু নেড়েচেড়ে যমযমের পানি দ্বারা নিজ হাতে ধৌত করেন। সেগুলোকে পরিছন্ন করলেন, তারপর সেখানে একটি তশতরী আনা হয় এবং তাতে ছিল একটি সোনার পাত্র যা পরিপূর্ণ ছিল ঈমান ও হিকমতে। তাঁর বক্ষ ও গলার রগগুলি এর দ্বারা পূর্ণ করলেন।
তারপর সেগুলো যখাস্থানে স্থাপন করে বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে ফিরে আসমানের দিকে আরোহণ করলেন। আসমানের দরজাগুলো হতে একটি দরজাতে নাড়া দিলেন। ফলে আসমানবাসিগণ তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ জিবরীল। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তারা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান (আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আপনজনের মধ্যে এসেছেন) শুভাগমনে আসমানবাসীরা খুবই আনন্দিত। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা যমীনে কি করতে চাচ্ছেন তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো পর্যন্ত তারা জানতে পারে না।
দুনিয়ার আসমানে তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে দেখিয়ে বললেন, তিনি আপনার পিতা, তাকে সালাম দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাম দিলেন। আদম (আলাইহিস সালাম) তার সালামের উত্তর দিলেন। এবং বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান হে আমার পুত্র। তুমি আমার কতইনা উত্তম পুত্র। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি প্রবাহমান নহর দুনিয়ার আসমানে অবলোকন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ নহর দুটি কোন নহর হে জিবরীল! জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ দুটি হলো নীল ও ফুরাতের মুল।
এরপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নহর অবলোকন করলেন। এর ওপর প্রতিঠিত ছিল মোতি ও জাবারজাদের তৈরি একটি প্রাসাদ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নহরে হাত মারলেন। তা ছিল অতি উন্নতমানের মিসক। তিনি বললেনঃ হে জিবরীল! এটি কি? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ হাউযে কাওসার। যা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন।
তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে দ্বিতীয় আসমানে গমন করলেন। প্রথম আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতাগণ তাকে যা বলেছিলেন এখানেও তা বললেনঃ তারা জানতে চাইল, তিনি কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। তারা বললেনঃ আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারা বললেনঃ তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাঁরা বললেন, মারহাবান ওয়া আহলান।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে তিনি তৃতীয় আসমানের দিকে গমন করলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতারা যা বলেছিলেন তৃতীয় আসমানের ফেরেশতাগণও তাই বললেন। তারপর তাকে সঙ্গে করে তিনি চতুর্থ আসমানের দিকে গমন করলেন। তারাও তাঁকে পুর্বের ন্যায়ই বললেন। তারপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গমন করলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো বললেন। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দিকে গমন করলেন। সেখানেও ফেরেশতারা পূর্বের মতই বললেন। সর্বশেষে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে সপ্তম আসমানে গমন করলে সেখানেও ফেরেশতারা তাকে পূর্বের ফেরেশতাদের মতো বললেন। প্রত্যেক আসমানেই নবীগণ রয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নাম উল্লেখ করেছেন।
তন্মধ্যে আমি সংরক্ষিত করেছি যে, দ্বিতীয় আসমানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম), চতূর্থ আসমানে হারুন (আলাইহিস সালাম), পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নবী যায় নাম আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। ষষ্ঠ আসমানে রয়েছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এবং আল্লাহর সাথে বাক্যলাপের মর্যাদার কারণে মূসা (আলাইহিস সালাম) আছেন সপ্তম আসমানে।
সে সময় মূসা বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমি তো ধারনা করিনি আমার ওপর কাউকে উচ্চমর্যাদা দান করা হবে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এত ঊর্ধ্বে আরোহণ করানো হলো, যা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। অবশেষে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় আগমন করলেন। এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতি নিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন। অর্থাৎ তাঁর উম্মাতের উপর রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের কথা ওহী যোগে পাঠানো হলো।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেন। আর মূসার কাছে পৌছলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে আটকিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাত ও দিনে পঞ্চাশ বার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মাত তা আদায়ে সক্ষম হবে না। সুতরাং আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার প্রতিপালক আপনার এবং আপনার উম্মাতের থেকে এ আদেশটি সহজ করে দিবেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলের দিকে এমনভাবে লক্ষ্য করলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হ্যাঁ। আপনি চাইলে তা হতে পারে। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে প্রথমে আল্লাহর কাছে গেলেন।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাস্থানে থেকে বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত এটি আদায়ে সক্ষম হবে না। তখন আল্লাহ দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) কমিয়ে দিলেন। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁকে নামালেন। এভাবেই মূসা তাকে তাঁর প্রতিপালকের কাছে পাঠাতে থাকলেন। পরিশেষে পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকল। পাঁচ সংখ্যায়ও মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে থামিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি আমার বনী ইসরাঈল কাওমের কাছে এর চেয়েও সামান্য কিছু পেতে চেয়েছি। তদুপরি তারা দুর্বল হয়েছে এবং পরিত্যাগ করেছেন অথচ আপনার উম্মাত দৈহিক, মানসিক, শারীরিক সৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা সব দিকে আরো দুর্বল।
সুতরাং আপনি আবার যান এবং আপনার প্রতিপালক থেকে নির্দেশটি আরো সহজ করে আনুন। প্রতিবারই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরামর্শের জন্য জিবরীলের দিকে তাকাতেন। পঞ্চমবারেও জিবরীল তাঁকে নিয়ে গমন করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমার উম্মাতের শরীর, মন, শ্রবণশক্তি ও দেহ নিতান্তই দুর্বল। তাই নির্দেশটি আমাদের থেকে আরো সহজ করে দিন। এরপর পরাক্রমশালী আল্লাহ বললেনঃ মুহাম্মাদ! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি আপনার নিকটে হাযির, বারবার হাযির।
আল্লাহ বললেনঃ আমার কথার কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। আমি তোমাদের উপর যা ফরয করেছি তা ’উম্মুল কিতাব’ তথা লাওহে মাহফুযে সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি নেক আমলের দশটি নেকী রয়েছে। উম্মুল কিতাবে সালাত (নামায/নামাজ) পঞ্চাশ ওয়াক্তই লিপিবদ্ধ আছে। তবে আপনার ও আপনার উম্মাতের জন্য তা পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসার কাছে প্রত্যাবর্তন করলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে দশটি সাওয়াব নির্ধারণ করেছেন। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে এর চাইতেও সামান্য জিনিসের প্রত্যাশ্য করছি। কিন্তু তারা তাও আদায় করেনি। আপনার প্রতিপালকের কাছে আপনি আবার ফিরে যান, যেন আরো একটু কমিয়ে দেন।
এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মূসা, আল্লাহর কসম! আমি আমার প্রতিপালকের কাছে বারবার গিয়েছি। আবার যেতে লজ্জাবোধ করছি, যেন তার সাথে মতান্তর করছি। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ অবতরণ করতে পারেন আল্লাহর নামে। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আরেকটি বিবরণ অনুসারে, হারুন ছিলেন পঞ্চম আসমানে [151]


সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১৯৮৮. ফিরিশ্তার বিবরণ। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাঃ) নবী (সাঃ) এর নিকট বললেন, ফিরিশতাকূলের মধ্যে জিবরীল (আঃ) ইয়াহুদীদের শত্রু। আর ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন لَنَحْنُ الصَّافُّونَ এই উক্তি ফিরিশ্তাদের।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৯৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩২০৭
২৯৮০। হুদবা ইবনু খালিদ ও খলিফা (ইবনু খাইয়াত) (রহঃ) … মালিক ইবনু সা’সা’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কাবা ঘরের নিকট নিদ্রা ও জাগরণ-এ দু’ অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এরপর তিনি দু’ ব্যাক্তির মাঝে অপর এক ব্যাক্তি অর্থাৎ নিজের অবস্থা উল্লেখ করে বললেন, আমার নিকট স্বর্ণের একটি তশতরী নিয়ে আসা হল-যা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তাপর আমার বুক থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হল। এরপর আমার পেটে যমযমের পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলা হল।
তারপর হিকমত ও ঈমান পরিপূর্ণ করা হল এবং আমার নিকট সাদা চতুষ্পদ জন্তু আনা হল, যা খচ্চর হতে ছোট আর গাধা থেকে বড় অর্থাৎ বুরাক। এরপর তাতে আরোহণ করে আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সহ চলতে চলতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? উত্তর দেওয়া হল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে ধন্যবাদ, তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম।
তারপর আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, পুত্র ও নবী! তোমার প্রতি ধন্যবাদ। এরপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে গেলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ঈসা ও ইয়াহইয়া (আলাইহিমুস সালাম) এর নিকট আসলাম। তাঁরা উভয়ে বললেন, ভাই ও নবী! আপনার প্রতি ধন্যবাদ।
তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর নিকট গেলাম। তাঁকো আমি সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা চতুর্থ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইদ্রিস (আলাইহিস সালাম) এর নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমরা হারুন (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর আমি যখন তাঁর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বলেছেন, হে রব! এ ব্যাক্তি যে আমার পর প্রেরিত, তাঁর উম্মাত আমার উম্মাতের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেহেশতে যাবে। এরপর আমরা সপ্তম আকাশে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, হে পুত্র ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর বায়তুল মা’মুরকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মামুর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফিরিশতা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। এরা এখান থেকে একবার বের হলে দ্বিতীয় বার ফিরে আসে না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা দেখানো হল। দেখলাম, এর ফল যেন, হাজার নামক স্থানের মটকার ন্যায়। আর তার পাতা যেন হাতীর কান। তার মূল দেশে চারটি ঝরনা প্রবাহিত।’ দু’টি অভ্যন্তরে আর দু’টি বাইরে। এ সম্পর্কে আমি জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, অভ্যন্তরে দু’টি জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের দু’টির একটি হল (ইরাকের) ফুরাত আর অপরটি হল (মিশরের) নীল নদ।
তারপর আমি প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়। আমি তা গ্রহণ করে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এলাম। তিনি বললেন, কি করে এলেন? আমি বললাম, আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি আপনার চেয়ে মানুষ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আছি। আমি বনী ইসরাঈলের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি আর আপনার উম্মাত এত (সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে) সমর্থ হবে না। অতএব আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং তা কমানোর অনুরোধ করুন।
আমি ফিরে গেলাম এবং তাঁর নিকট আবেদন করলাম। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। পুনরায় অনুরূপ ঘটল। আর সালাত (নামায/নামাজ)ও ত্রিশ ওয়াক্ত করে দেওয়া হল। পুনরায় অনুরূপ ঘটলে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার অনুরূপ হল। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) কে দশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলাম। তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, এবার আল্লাহ সালাত (নামায/নামাজ) কে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিলেন। আমি মূসার নিকট আসলাম। তিনি বললেন, কি করে আসলেন? আমি বললাম, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিয়েছেন।
এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, আমি বললাম, আমি তা মেনে নিয়েছে। তখন আওয়াজ এল, আমি আমার ফরয জারি করে দিয়েছি। আর আমার বান্দাদের থেকে হালকা করে দিয়েছে। আর আমি প্রতিটি পূণ্যের জন্য দশ গুন সওয়াব দিব।
আর বায়তুল মামুর সম্পর্কে হাম্মাম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু সা‘সা‘আ (রাঃ)


ইদ্রিস ছিলেন কোন আসমানে?

একটি বিবরণ অনুসারে, হযরত ইদ্রিস আছেন দ্বিতীয় আসমানে [152]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৬/ জাহ্‌মিয়াদের মতের খণ্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ ৩১৩৯. মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ এবং মূসা (আঃ) এর সাথে আল্লাহ্‌ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছিলেন (৪ঃ ১৬৪)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৭০০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫১৭
৭০০৯। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস ইবনু সালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এক রাতে কাবার মসজিদ থেকে সফর করানো হল। বিবরণটি হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল। অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। এদের প্রথমজন বলল, তিনি কে? মধ্যের জন বলল, তিনি এদের উত্তম ব্যাক্তি। সর্বশেষ জন বলল, তা হলে তাদের উত্তম ব্যাক্তিকেই নিয়ে চল। সে রাতটির ঘটনা এটুকুই। এ জন্য তিনি আর তাদেরকে দেখেননি। অবশেষে তারা অন্য এক রাতে আগমন করলেন যা তিনি অন্তর দ্বারা দেখছিলেন। তার চোখ ঘুমন্ত, অন্তর ঘুমায় না। অনুরূপ অন্য নবীগণেরও চোখ ঘুমিয়ে থাকে, অন্তর ঘুমায় না।
এ রাতে তারা তার সাথে কোন কথা না বলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যমযম কূপের কাছে রাখলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার সাথীদের থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার গলার নিচ হতে বক্ষস্থল পর্যন্ত ছেদন করলেন এবং তার বক্ষ ও পেট থেকে সবকিছু নেড়েচেড়ে যমযমের পানি দ্বারা নিজ হাতে ধৌত করেন। সেগুলোকে পরিছন্ন করলেন, তারপর সেখানে একটি তশতরী আনা হয় এবং তাতে ছিল একটি সোনার পাত্র যা পরিপূর্ণ ছিল ঈমান ও হিকমতে। তাঁর বক্ষ ও গলার রগগুলি এর দ্বারা পূর্ণ করলেন।
তারপর সেগুলো যখাস্থানে স্থাপন করে বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে ফিরে আসমানের দিকে আরোহণ করলেন। আসমানের দরজাগুলো হতে একটি দরজাতে নাড়া দিলেন। ফলে আসমানবাসিগণ তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ জিবরীল। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তারা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান (আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আপনজনের মধ্যে এসেছেন) শুভাগমনে আসমানবাসীরা খুবই আনন্দিত। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা যমীনে কি করতে চাচ্ছেন তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো পর্যন্ত তারা জানতে পারে না।
দুনিয়ার আসমানে তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে দেখিয়ে বললেন, তিনি আপনার পিতা, তাকে সালাম দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাম দিলেন। আদম (আলাইহিস সালাম) তার সালামের উত্তর দিলেন। এবং বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান হে আমার পুত্র। তুমি আমার কতইনা উত্তম পুত্র। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি প্রবাহমান নহর দুনিয়ার আসমানে অবলোকন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ নহর দুটি কোন নহর হে জিবরীল! জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ দুটি হলো নীল ও ফুরাতের মুল।
এরপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নহর অবলোকন করলেন। এর ওপর প্রতিঠিত ছিল মোতি ও জাবারজাদের তৈরি একটি প্রাসাদ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নহরে হাত মারলেন। তা ছিল অতি উন্নতমানের মিসক। তিনি বললেনঃ হে জিবরীল! এটি কি? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ হাউযে কাওসার। যা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন।
তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে দ্বিতীয় আসমানে গমন করলেন। প্রথম আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতাগণ তাকে যা বলেছিলেন এখানেও তা বললেনঃ তারা জানতে চাইল, তিনি কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। তারা বললেনঃ আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারা বললেনঃ তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাঁরা বললেন, মারহাবান ওয়া আহলান।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে তিনি তৃতীয় আসমানের দিকে গমন করলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতারা যা বলেছিলেন তৃতীয় আসমানের ফেরেশতাগণও তাই বললেন। তারপর তাকে সঙ্গে করে তিনি চতুর্থ আসমানের দিকে গমন করলেন। তারাও তাঁকে পুর্বের ন্যায়ই বললেন। তারপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গমন করলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো বললেন। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দিকে গমন করলেন। সেখানেও ফেরেশতারা পূর্বের মতই বললেন। সর্বশেষে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে সপ্তম আসমানে গমন করলে সেখানেও ফেরেশতারা তাকে পূর্বের ফেরেশতাদের মতো বললেন। প্রত্যেক আসমানেই নবীগণ রয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নাম উল্লেখ করেছেন।
তন্মধ্যে আমি সংরক্ষিত করেছি যে, দ্বিতীয় আসমানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম), চতূর্থ আসমানে হারুন (আলাইহিস সালাম), পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নবী যায় নাম আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। ষষ্ঠ আসমানে রয়েছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এবং আল্লাহর সাথে বাক্যলাপের মর্যাদার কারণে মূসা (আলাইহিস সালাম) আছেন সপ্তম আসমানে।
সে সময় মূসা বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমি তো ধারনা করিনি আমার ওপর কাউকে উচ্চমর্যাদা দান করা হবে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এত ঊর্ধ্বে আরোহণ করানো হলো, যা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। অবশেষে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় আগমন করলেন। এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতি নিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন। অর্থাৎ তাঁর উম্মাতের উপর রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের কথা ওহী যোগে পাঠানো হলো।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেন। আর মূসার কাছে পৌছলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে আটকিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাত ও দিনে পঞ্চাশ বার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মাত তা আদায়ে সক্ষম হবে না। সুতরাং আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার প্রতিপালক আপনার এবং আপনার উম্মাতের থেকে এ আদেশটি সহজ করে দিবেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলের দিকে এমনভাবে লক্ষ্য করলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হ্যাঁ। আপনি চাইলে তা হতে পারে। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে প্রথমে আল্লাহর কাছে গেলেন।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাস্থানে থেকে বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত এটি আদায়ে সক্ষম হবে না। তখন আল্লাহ দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) কমিয়ে দিলেন। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁকে নামালেন। এভাবেই মূসা তাকে তাঁর প্রতিপালকের কাছে পাঠাতে থাকলেন। পরিশেষে পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকল। পাঁচ সংখ্যায়ও মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে থামিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি আমার বনী ইসরাঈল কাওমের কাছে এর চেয়েও সামান্য কিছু পেতে চেয়েছি। তদুপরি তারা দুর্বল হয়েছে এবং পরিত্যাগ করেছেন অথচ আপনার উম্মাত দৈহিক, মানসিক, শারীরিক সৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা সব দিকে আরো দুর্বল।
সুতরাং আপনি আবার যান এবং আপনার প্রতিপালক থেকে নির্দেশটি আরো সহজ করে আনুন। প্রতিবারই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরামর্শের জন্য জিবরীলের দিকে তাকাতেন। পঞ্চমবারেও জিবরীল তাঁকে নিয়ে গমন করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমার উম্মাতের শরীর, মন, শ্রবণশক্তি ও দেহ নিতান্তই দুর্বল। তাই নির্দেশটি আমাদের থেকে আরো সহজ করে দিন। এরপর পরাক্রমশালী আল্লাহ বললেনঃ মুহাম্মাদ! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি আপনার নিকটে হাযির, বারবার হাযির।
আল্লাহ বললেনঃ আমার কথার কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। আমি তোমাদের উপর যা ফরয করেছি তা ’উম্মুল কিতাব’ তথা লাওহে মাহফুযে সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি নেক আমলের দশটি নেকী রয়েছে। উম্মুল কিতাবে সালাত (নামায/নামাজ) পঞ্চাশ ওয়াক্তই লিপিবদ্ধ আছে। তবে আপনার ও আপনার উম্মাতের জন্য তা পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসার কাছে প্রত্যাবর্তন করলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে দশটি সাওয়াব নির্ধারণ করেছেন। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে এর চাইতেও সামান্য জিনিসের প্রত্যাশ্য করছি। কিন্তু তারা তাও আদায় করেনি। আপনার প্রতিপালকের কাছে আপনি আবার ফিরে যান, যেন আরো একটু কমিয়ে দেন।
এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মূসা, আল্লাহর কসম! আমি আমার প্রতিপালকের কাছে বারবার গিয়েছি। আবার যেতে লজ্জাবোধ করছি, যেন তার সাথে মতান্তর করছি। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ অবতরণ করতে পারেন আল্লাহর নামে। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আরেকটি বিবরণে বলা আছে, ইদ্রিস আছেন চতুর্থ আসমানে [153]


সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১৯৮৮. ফিরিশ্তার বিবরণ। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাঃ) নবী (সাঃ) এর নিকট বললেন, ফিরিশতাকূলের মধ্যে জিবরীল (আঃ) ইয়াহুদীদের শত্রু। আর ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন لَنَحْنُ الصَّافُّونَ এই উক্তি ফিরিশ্তাদের।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৯৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩২০৭
২৯৮০। হুদবা ইবনু খালিদ ও খলিফা (ইবনু খাইয়াত) (রহঃ) … মালিক ইবনু সা’সা’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কাবা ঘরের নিকট নিদ্রা ও জাগরণ-এ দু’ অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এরপর তিনি দু’ ব্যাক্তির মাঝে অপর এক ব্যাক্তি অর্থাৎ নিজের অবস্থা উল্লেখ করে বললেন, আমার নিকট স্বর্ণের একটি তশতরী নিয়ে আসা হল-যা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তাপর আমার বুক থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হল। এরপর আমার পেটে যমযমের পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলা হল।
তারপর হিকমত ও ঈমান পরিপূর্ণ করা হল এবং আমার নিকট সাদা চতুষ্পদ জন্তু আনা হল, যা খচ্চর হতে ছোট আর গাধা থেকে বড় অর্থাৎ বুরাক। এরপর তাতে আরোহণ করে আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সহ চলতে চলতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? উত্তর দেওয়া হল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে ধন্যবাদ, তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম।
তারপর আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, পুত্র ও নবী! তোমার প্রতি ধন্যবাদ। এরপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে গেলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ঈসা ও ইয়াহইয়া (আলাইহিমুস সালাম) এর নিকট আসলাম। তাঁরা উভয়ে বললেন, ভাই ও নবী! আপনার প্রতি ধন্যবাদ।
তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর নিকট গেলাম। তাঁকো আমি সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা চতুর্থ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইদ্রিস (আলাইহিস সালাম) এর নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমরা হারুন (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর আমি যখন তাঁর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বলেছেন, হে রব! এ ব্যাক্তি যে আমার পর প্রেরিত, তাঁর উম্মাত আমার উম্মাতের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেহেশতে যাবে। এরপর আমরা সপ্তম আকাশে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, হে পুত্র ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর বায়তুল মা’মুরকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মামুর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফিরিশতা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। এরা এখান থেকে একবার বের হলে দ্বিতীয় বার ফিরে আসে না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা দেখানো হল। দেখলাম, এর ফল যেন, হাজার নামক স্থানের মটকার ন্যায়। আর তার পাতা যেন হাতীর কান। তার মূল দেশে চারটি ঝরনা প্রবাহিত।’ দু’টি অভ্যন্তরে আর দু’টি বাইরে। এ সম্পর্কে আমি জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, অভ্যন্তরে দু’টি জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের দু’টির একটি হল (ইরাকের) ফুরাত আর অপরটি হল (মিশরের) নীল নদ।
তারপর আমি প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়। আমি তা গ্রহণ করে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এলাম। তিনি বললেন, কি করে এলেন? আমি বললাম, আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি আপনার চেয়ে মানুষ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আছি। আমি বনী ইসরাঈলের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি আর আপনার উম্মাত এত (সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে) সমর্থ হবে না। অতএব আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং তা কমানোর অনুরোধ করুন।
আমি ফিরে গেলাম এবং তাঁর নিকট আবেদন করলাম। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। পুনরায় অনুরূপ ঘটল। আর সালাত (নামায/নামাজ)ও ত্রিশ ওয়াক্ত করে দেওয়া হল। পুনরায় অনুরূপ ঘটলে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার অনুরূপ হল। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) কে দশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলাম। তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, এবার আল্লাহ সালাত (নামায/নামাজ) কে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিলেন। আমি মূসার নিকট আসলাম। তিনি বললেন, কি করে আসলেন? আমি বললাম, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিয়েছেন।
এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, আমি বললাম, আমি তা মেনে নিয়েছে। তখন আওয়াজ এল, আমি আমার ফরয জারি করে দিয়েছি। আর আমার বান্দাদের থেকে হালকা করে দিয়েছে। আর আমি প্রতিটি পূণ্যের জন্য দশ গুন সওয়াব দিব।
আর বায়তুল মামুর সম্পর্কে হাম্মাম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু সা‘সা‘আ (রাঃ)

আরেকটি বিবরণ থেকে জানা যায়, ইদ্রিস আছেন পঞ্চম আসমানে। উল্লেখ্য, এই হাদিসটি সহিহ হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণে ইতিমধ্যে হাদিসটিকে মুনকার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে [154]

সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫/ নামাজ প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদঃ ১/ সালাতের ফরযসমূহ এবং আনাস ইবন মালিক (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের সনদ সম্পর্কিত মতভেদ ও শব্দ প্রয়োগে তাদের বিভিন্নতা
৪৫১। আমর ইবনু হিশাম (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার সামনে এমন একটি জন্তু আনা হল যা আকারে গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট এবং যার কদম পড়ত দৃষ্টির শেষ সীমায়। আমি তার উপর আরোহণ করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমার সঙ্গে ছিলেন। আমরা সফর করলাম (মদিনা পর্যন্ত)। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি নেমে সালাত আদায় করুন। আমি সালাত আদায় করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি কোথায় সালাত আদায় করেছেন তা কি জানেন?
আপনি সালাত আদায় করেছেন তায়বায়। এ শহরেই আপনি হিজরত করবেন। আবার জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি অবতরণ করে সালাত আদায় করুন। আমি তখন নেমে সালাত আদায় করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি কি জানেন কোন্‌ জায়গায় সালাত আদায় করেছেন? আপনি ’তূরে সায়না’ নামক স্থানে সালাত আদায় করেছেন। যেখানে আল্লাহ্‌ পাক মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে কথা বলেছিলেন।
তারপর আবার এক স্থানে গিয়ে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, অবতরণ করে সালাত আদায় করুন। আমি তা-ই করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি কি জানেন, আপনি কোথায় সালাত আদায় করেছেন? আপনি ’বায়ত লাহম’ নামক স্থানে সালাত আদায় করেছেন। যেখানে হজরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) জন্মগ্রহন করেছিলেন। তারপর আমি ’বায়তুল মাকদিস’-এ প্রবেশ করলাম এবং সমস্ত নবীকে আমার নিকট একত্র করা হল এবং জিব্রাঈল (আলাইহিস সালাম) আমাকে সম্মুখে এগিয়ে দিলেন আমি সকলের ইমামতি করলাম। তারপর আমাকে নিয়ে প্রথম আসমানে উঠলেন।
সেখানে আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সাক্ষাত লাভ করলাম। পরে আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। সেখানে পরপর দু’খালাত ভাই ঈসা (আলাইহিস সালাম) ও ইয়াহইয়া (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে সাক্ষাত হল। তারপর আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানে উঠলেন এবং সেখানে ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে দেখা হল। এরপর আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানে উঠলেন এবং সেখানে হারুন (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে সাক্ষাত হল। তারপর আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানে উঠলেন সেখানে ইদ্রিস (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে সাক্ষাত হল। তারপর আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানে উঠলেন। সেখানে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে সাক্ষাত হল।
তারপর আমাকে সপ্তম আসমানে নিয়ে গেলেন এবং সেখানে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে সাক্ষাত হল। এরপর আমাকে নিয়ে সপ্তম আসমানের উপরে উঠলেন। তখন আমরা সিদরাতুল মুনতাহায় উপনীত হলাম। সেখানে একখণ্ড ধুঁয়াশা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল আমি সিজদায় পড়ে গেলাম। তখন আমাকে বলা হল -যেদিন আমি এ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি, সেদিন আপনার উপর ও আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি। সুতরাং আপনি এবং আপনার উম্মত এই সালাত কায়েম করুন।
তখন আমি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট প্রত্যাবর্তন করলাম। তিনি আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন না। পরে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট আসলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনার এবং আপনার উম্মতের উপর আল্লাহ্‌ কি ফরয করেছেন? আমি বললাম পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তখন মূসা(আলাইহিস সালাম) বললেন, নিশ্চয়ই আপনি এবং আপনার উম্মত পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত যথাযথ আদায় করতে সক্ষম হবেন না। আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং কমানোর জন্য আরয করুন। আমি প্রতিপালকের নিকট ফিরে গেলাম। তিনি আমার থেকে দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। তারপর আবার মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট আসলাম। তিনি আমাকে পুনরায় ফিরে যেতে বললেন। আমি ফিরে গেলাম। তখন তিনি আরো দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট আসার পর তিনি আমাকে পুনরায় ফিরে যেতে বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। তিনি দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন।
তারপর সর্বশেষ সালাতকে পাঁচ ওয়াক্তে পরিণত করা হল। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি পুনরায় প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং সালাত আরও কমানোর আবেদন করুন। কেননা আল্লাহ্‌ বনী ইসরাঈলের উপর শুধু দুই ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছিলেন। তারা এই দুই ওয়াক্তও আদায় করেনি। তখন আমি আবার আল্লাহ্‌র নিকট ফিরে গিয়ে সালাত কমিয়ে দেয়ার জন্য আরয করলাম। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি যেদিন এই আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি, সেদিন আপনার ও আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি। আর এই পাঁচ ওয়াক্ত পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান বলে গণ্য হবে। আপনি ও আপনার উম্মত এটা আদায় করুন। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আল্লাহ্‌র পাকের পক্ষ হতে অবশ্য পালনীয়। এরপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট ফিরে আসলাম। এবারও তিনি আমাকে ফিরে যেতে বললেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম যে, পাঁচ ওয়াক্ত আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাই আমি আর ফিরে গেলাম না।
হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)


ইয়াহিয়া ছিলেন কোন আসমানে?

একটি বিবরণ থেকে জানা যায়, হযরত ইয়াহিয়া আছেন দ্বিতীয় আসমানে [155]


সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১৯৮৮. ফিরিশ্তার বিবরণ। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন সালাম (রাঃ) নবী (সাঃ) এর নিকট বললেন, ফিরিশতাকূলের মধ্যে জিবরীল (আঃ) ইয়াহুদীদের শত্রু। আর ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন لَنَحْنُ الصَّافُّونَ এই উক্তি ফিরিশ্তাদের।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৯৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩২০৭
২৯৮০। হুদবা ইবনু খালিদ ও খলিফা (ইবনু খাইয়াত) (রহঃ) … মালিক ইবনু সা’সা’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কাবা ঘরের নিকট নিদ্রা ও জাগরণ-এ দু’ অবস্থার মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এরপর তিনি দু’ ব্যাক্তির মাঝে অপর এক ব্যাক্তি অর্থাৎ নিজের অবস্থা উল্লেখ করে বললেন, আমার নিকট স্বর্ণের একটি তশতরী নিয়ে আসা হল-যা হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তাপর আমার বুক থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত বিদীর্ণ করা হল। এরপর আমার পেটে যমযমের পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলা হল।
তারপর হিকমত ও ঈমান পরিপূর্ণ করা হল এবং আমার নিকট সাদা চতুষ্পদ জন্তু আনা হল, যা খচ্চর হতে ছোট আর গাধা থেকে বড় অর্থাৎ বুরাক। এরপর তাতে আরোহণ করে আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সহ চলতে চলতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে গিয়ে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা হল, এ কে? উত্তরে বলা হল, জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে আর কে? উত্তর দেওয়া হল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল, তাঁকে ধন্যবাদ, তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম।
তারপর আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, পুত্র ও নবী! তোমার প্রতি ধন্যবাদ। এরপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে গেলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ঈসা ও ইয়াহইয়া (আলাইহিমুস সালাম) এর নিকট আসলাম। তাঁরা উভয়ে বললেন, ভাই ও নবী! আপনার প্রতি ধন্যবাদ।
তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর নিকট গেলাম। তাঁকো আমি সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা চতুর্থ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইদ্রিস (আলাইহিস সালাম) এর নিকট গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমরা হারুন (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর ষষ্ঠ আসমানে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ভাই ও নবী আপনাকে ধন্যবাদ।
তারপর আমি যখন তাঁর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বলেছেন, হে রব! এ ব্যাক্তি যে আমার পর প্রেরিত, তাঁর উম্মাত আমার উম্মাতের চেয়ে অধিক পরিমাণে বেহেশতে যাবে। এরপর আমরা সপ্তম আকাশে পৌঁছলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, এ কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। প্রশ্ন করা হল তাঁকে আনার জন্য কি পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হল তাঁকে ধন্যবাদ আর তাঁর শুভাগমন কতই না উত্তম। তারপর আমি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, হে পুত্র ও নবী! আপনাকে ধন্যবাদ।
এরপর বায়তুল মা’মুরকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মামুর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফিরিশতা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। এরা এখান থেকে একবার বের হলে দ্বিতীয় বার ফিরে আসে না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা দেখানো হল। দেখলাম, এর ফল যেন, হাজার নামক স্থানের মটকার ন্যায়। আর তার পাতা যেন হাতীর কান। তার মূল দেশে চারটি ঝরনা প্রবাহিত।’ দু’টি অভ্যন্তরে আর দু’টি বাইরে। এ সম্পর্কে আমি জিবরীলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, অভ্যন্তরে দু’টি জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের দু’টির একটি হল (ইরাকের) ফুরাত আর অপরটি হল (মিশরের) নীল নদ।
তারপর আমি প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়। আমি তা গ্রহণ করে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এলাম। তিনি বললেন, কি করে এলেন? আমি বললাম, আমার প্রতি পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, আমি আপনার চেয়ে মানুষ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত আছি। আমি বনী ইসরাঈলের চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছি আর আপনার উম্মাত এত (সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে) সমর্থ হবে না। অতএব আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং তা কমানোর অনুরোধ করুন।
আমি ফিরে গেলাম এবং তাঁর নিকট আবেদন করলাম। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। পুনরায় অনুরূপ ঘটল। আর সালাত (নামায/নামাজ)ও ত্রিশ ওয়াক্ত করে দেওয়া হল। পুনরায় অনুরূপ ঘটলে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আবার অনুরূপ হল। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) কে দশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসলাম। তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, এবার আল্লাহ সালাত (নামায/নামাজ) কে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিলেন। আমি মূসার নিকট আসলাম। তিনি বললেন, কি করে আসলেন? আমি বললাম, আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয করে দিয়েছেন।
এবারও তিনি পূর্বের ন্যায় বললেন, আমি বললাম, আমি তা মেনে নিয়েছে। তখন আওয়াজ এল, আমি আমার ফরয জারি করে দিয়েছি। আর আমার বান্দাদের থেকে হালকা করে দিয়েছে। আর আমি প্রতিটি পূণ্যের জন্য দশ গুন সওয়াব দিব।
আর বায়তুল মামুর সম্পর্কে হাম্মাম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু সা‘সা‘আ (রাঃ)

আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, ইয়াহিয়া ছিলেন তৃতীয় আসমানে। এই হাদিসটির বাঙলা অনুবাদে একটু বাটপারি করা হয়েছে, এই কারণে ইংরেজি অনুবাদ দিচ্ছি, [156]

Reference : Sahih Muslim 164a
In-book reference : Book 1, Hadith 321
USC-MSA web (English) reference : Book 1, Hadith 314
(deprecated numbering scheme)
(74)Chapter: The night journey on which the messenger of Allah (saws) was taken up into the heavens and the prayers were enjoined(74)باب الإِسْرَاءِ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى السَّمَوَاتِ وَفَرْضِ الصَّلَوَاتِ ‏‏
Anas b. Malik reported on the authority of Malik b. Sa sa’, perhaps a person of his tribe, that the Prophet of Allah (ﷺ) said:
I was near the House (i. e. Ka’bah) in a state between sleep and wakefulness when I heard someone say: He is the third among the two persons. Then he came to me and took me with him. Then a golden basin containing the water of Zamzam was brought to me and my heart was opened up to such and such (part). Qatada said: I asked him who was with me (i e. the narrator) and what he meant by such and such (part). He replied: (It means that it was opened) up to the lower part of his abdomen (Then the hadith continues): My heart was extracted and it was washed with the water of Zamzam and then it was restored in its original position, after which it was filled with faith and wisdom. I was then brought a white beast which is called al-Buraq, bigger than a donkey and smaller than a mule. Its stride was as long as the eye could reach. I was mounted on it, and then we went forth till we reached the lowest heaven. Gabriel asked for the (gate) to be opened, and it was said: Who is he? He replied: Gabriel. It was again said: Who is with thee? He replied: Muhammad (ﷺ). It was said: Has he been sent for? He (Gabriel) said: Yes. He (the Prophet) said: Then (the gate) was opened for us (and it was said): Welcome unto him! His is a blessed arrival. Then we came to Adam (peace be upon him). And he (the narrator) narrated the whole account of the hadith. (The Holy Prophet) observed that he met Jesus in the second heaven, Yahya (peace be on both of them) in the third heaven, Yusuf in the third, Idris in the fourth, Harun in the fifth (peace and blessings of Allah be upon them). Then we travelled on till we reached the sixth heaven and came to Moses (peace be upon him) and I greeted him and he said: Welcome unto righteous brother and righteous prophet. And when I passed (by him) he wept, and a voice was heard saying: What makes thee weep? He said: My Lord, he is a young man whom Thou hast sent after me (as a prophet) and his followers will enter Paradise in greater numbers than my followers. Then we travelled on till we reached the seventh heaven and I came to Ibrahim. He (the narrator) narrat- ed in this hadith that the Prophet of Allah (ﷺ) told that he saw four rivers which flowed from (the root of the lote-tree of the farthest limits): two manifest rivers and two hidden rivers. I said: ‘ Gabriel! what are these rivers? He replied: The two hidden rivers are the rivers of Paradise, and as regards the two manifest ones, they are the Nile and the Euphrates. Then the Bait-ul-Ma’mur was raised up to me. I said: O Gabriel! what is this? He replied: It is the Bait-ul-Ma’mur. Seventy thousand angels enter into it daily and, after they come out, they never return again. Two vessels were then brought to me. The first one contained wine and the second one contained milk, and both of them were placed before me. I chose milk. It was said: You did right. Allah will guide rightly through you your Ummah on the natural course. Then fifty prayers daily were made obligatory for me. And then he narrated the rest of the hadith to the end.‏


বায়তুল মামুর ও সিদরাতুল মুনতাহা!

কিছু সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ মিরাজের রাতে যাওয়ার পথে প্রথমে সিদরাতুল মুনতাহা দেখেন, এরপরে দেখেন বায়তুল মামুর বা ফেরেশতাদের ইবাদতখানা [157]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ২১৫১. মি’রাজের ঘটনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩৬০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৮৮৭
৩৬০৮। হুদবা ইবনু খালিদ (রহঃ) … মালিক ইবনু সা’সা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যে রাতে তাঁকে ভ্রমণ করানো হয়েছে সে রাতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, একদা আমি কা’বা ঘরের হাতিমের অংশে ছিলাম। কখনো কখনো রাবী (কাতাদা) বলেছেন, হিজরে শুয়েছিলাম। হঠাৎ একজন আগন্তুক আমার নিকট এলেন এবং আমার এ স্থান থেকে সে স্থানের মধ্যবর্তী অংশটি চিরে ফেললেন। রাবী কাতাদা বলেন, আনাস (রাঃ) কখনো কাদ্দা (চিরলেন) শব্দ আবার কখনো শাক্‌কা (বিদীর্ণ) শব্দ বলেছেন। রাবী বলেন, আমি আমার পার্শ্বে বসা জারূদ (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, এ দ্বারা কী বুঝিয়েছেন? তিনি বললেন, হলকুমের নিম্নদেশ থেকে নাভী পর্যন্ত। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে এ-ও বলতে শুনেছি বুকের উপরিভাগ থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত। তারপর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আগন্তুক আমার হৃদপিণ্ড বের করলেন। তারপর আমার নিকট একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল যা ঈমানে পরিপূর্ণ ছিল। তারপর আমার হৃদপিণ্ডটি (যমযমের পানি দ্বারা) ধৌত করা হল এবং ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ করে যথাস্থানে পুনরায় রেখে দেয়া হল।
তারপর সাদা রং এর একটি জন্তু আমার নিকট আনা হল। যা আকারে খচ্চর থেকে ছোট ও গাধা থেকে বড় ছিল? জারূদ তাকে বলেন, হে আবূ হামযা, ইহাই কি বুরাক? আনাস (রাঃ) বললেন, হাঁ। সে একেক কদম রাখে দৃষ্টির শেষ প্রান্তে। আমাকে তার উপর সাওয়ার করানো হল। তারপর আমাকে নিয়ে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) চললেন, প্রথম আসমানে নিয়ে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল, ইনি কে? তিনি বললেন জিবরীল। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আবার জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। তখন বলা হল, তার জন্য খোশ-আমদেদ, উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হল।
আমি যখন পোঁছালাম, তখন তথায় আদম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাত পেলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি আপনার আদি পিতা আদম (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার পুত্র ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর উপরের দিকে চলে দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছে দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল কে? তিনি বললেন জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। তারপর বলা হল- তাঁর জন্য খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর খুলে দেওয়া হল। যখন তথায় পৌঁছালাম। তখন সেখানে ইয়াহ্‌ইয়া ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) এর সাক্ষাত পেলাম। তাঁরা দু’জন ছিলেন পরস্পরের খালাত ভাই। তিনি (জিবরীল) বললেন, এরা হলেন ইয়াহ্‌ইয়া ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম)। তাঁদের প্রতি সালাম করুন। তখন আমি সালাম দিলাম। তাঁরা জবাব দিলেন, তারপর বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
এরপর তিনি আমাকে নিয়ে তৃতীয় আসমানের দিকে চললেন, সেখানে পৌঁছে জিবরীল বললেন খুলে দাও। তাঁকে বলা হল কে? তিনি উত্তর দিলেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর জন্য খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তারপর দরজা খুলে দেওয়া হল। আমি তথায় পৌঁছে ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) কে দেখতে পেলাম। জিবরীল বললেন, ইনি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) আপনি তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তিনিও জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করলেন এবং চতুর্থ আসমানে পৌঁছলেন। আর (ফিরিশ্‌তাকে) দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। তখন বলা হল- তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তখন খুলে দেওয়া হল। আমি ইদ্রীস (আলাইহিস সালাম) এর কাছে পৌঁছলে জিবরীল বললেন, ইনি ইদ্রীস আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনিও জবাব দিলেন। তারপর বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
এরপর তিনি (জিবরীল) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্ব-যাত্রা করে পঞ্চম আসমানে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দিলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। জিজ্ঞেস করা হল। তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি উত্তর দিলেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। তথায় পৌঁছে হারূন (আলাইহিস সালাম) কে পেলাম। জিবরীল বললেন, ইনি হারূন (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম; তিনিও জবাব দিলেন, এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
তারপর আমাকে নিয়ে যাত্রা করে ষষ্ঠ আকাশে পৌঁছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। প্রশ্ন করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হাঁ। ফিরিশ্‌তা বললেন, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগন্তুক এসেছেন। তথায় পৌঁছে আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) কে পেলাম। জিবরীল(আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম; তিনি জবাব দিলেন, এবং বললেন, নেক্‌কার ভাই ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ।
আমি যখন অগ্রসর হলাম তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কিসের জন্য কাঁদছেন? তিনি বললেন আমি এজন্য কাঁদছি যে, আমার পর একজন যুবককে নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে, যার উম্মত আমার উম্মত থেকে অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে আমাকে নিয়ে সপ্তম আকাশের দিকে গেলেন এবং দরজা খুলে দিতে বললেন, জিজ্ঞেস করা হল, এ কে? তিনি উত্তর দিলেন, আমি জিবরীল। আবার জিজ্ঞেস করা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞাসা করা হল, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছে কি? তিনি বললেন, হাঁ। বলা হল, তাঁর প্রতি খোশ-আমদেদ। উত্তম আগমনকারীর আগমন হয়েছে। আমি সেখানে পৌঁছে ইব্‌রাহীম (আলাইহিস সালাম) কে দেখতে পেলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনি আপনার পিতা। তাঁকে সালাম করুন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিলেন এবং বললেন, নেক্‌কার পুত্র ও নেক্‌কার নবীর প্রতি খোশ-আমদেদ। তারপর আমাকে সিদ্‌রাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠানো হল। দেখতে পেলাম, উহার ফল হাজার অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং তার পাতাগুলি এই হাতির কানের মত। আমাকে বলা হল, এ হল সিদরাতুল মুন্‌তাহা (জড় জগতের শেষ প্রান্ত)।
সেখানে আমি চারটি নহর দেখতে পেলাম, যাদের দু’টি ছিল অপ্রকাশ্য দু’টি ছিল প্রকাশ্য। তখন আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে জিজ্ঞেস করলাম, এ নহরগুলো কী? অপ্রকাশ্য দু’টি হল জান্নাতের দুইটি নহর। আর প্রকাশ্য দুটি হল নীল নদী ও ফুরাত নদী। তারপর আমার সামনে ’আল-বায়তুল মামুর’ প্রকাশ করা হল,
এরপর আমার সামনে একটি শরাবের পাত্র, একটি দুধের পাত্র ও একটি মধুর পাত্র পরিবেশন করা হল। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। তখন জিবরীল বললেন, এ-ই হচ্ছে ফিতরাত (দ্বীন-ই-ইসলাম)। আপনি ও আপনার উম্মতগণ এর উপর প্রতিষ্ঠিত। তারপর আমার উপর দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত সালাম ফরয করা হল।
এরপর আমি ফিরে আসলাম। মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে কী আদেশ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে সমর্থ হবে না। আল্লাহর কসম। আমি আপনার আগে লোকদের পরীক্ষা করেছি এবং বনী ইসরাইলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। তাই আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের(বোঝা) হাল্কা করার জন্য আবেদন করুন।
আমি ফিরে গেলাম। ফলে আমার উপর থেকে (দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) হ্রাস করে দিলেন। আমি আবার মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট ফিরে এলাম তিনি আবার আগের মত বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। ফলে আল্লাহ তা’আলা আরো দশ ওয়াক্ত সালাত কমিয়ে দিলেন। ফিরার পথে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট পৌঁছালে, তিনি আবার পূর্বোক্ত কথা বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা’আলা আর দশ (ওয়াক্ত) হ্রাস করলেন। আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) নিকট ফিরে এলাম। তিনি আবার ঐ কথাই বললেন আমি আবার ফিরে গেলাম। তখন আমাকে দশ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ দেওয়া হয়। আমি (তা নিয়ে) ফিরে এলাম। মূসা (আলাইহিস সালাম) ঐ কথাই আগের মত বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম, তখন আমাকে পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাতের আদেশ করা হয়।
তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর নিকট ফিরে এলাম। তিনি বললেন, আপনাকে কী আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমি বললাম, দৈনিক পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত আদায়ের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পাঁচ সালাত আদায় করতেও সমর্থ হবে না। আপনার পূর্বে আমি লোকদের পরীক্ষা করেছি। বনী ইসরাইলের হেদায়েতের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আমার রবের নিকট (অনেকবার) আবেদন করেছি, এতে আমি লজ্জাবোধ করছি। আর আমি এতেই সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তা মেনে নিয়েছি। এরপর তিনি বললেন, আমি যখন মূসা (আলাইহিস সালাম) কে অতিক্রম করে অগ্রসর হলাম, তখন জনৈক ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমি আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি জারি করে দিলাম এবং আমার বান্দাদের উপর লঘু করে দিলাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু সা‘সা‘আ (রাঃ)

আবার, ভিন্ন সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, মিরাজের রাতে যাওয়ার পথে নবী মুহাম্মদ প্রথমে বায়তুল মামুর দেখেন, যেখানে নবী ইব্রাহীম পিঠ ঠেকিয়ে বসে ছিলেন। এরপরে তিনি সিদরাতুল মুনতাহা দেখেন [158]। প্রশ্ন হচ্ছে, নবী মুহাম্মদ আগে বায়তুল মামুর দেখেন নাকি আগে সিদরাতুল মুনতাহা? কারণ দুই ধরণের বর্ণনাই পাওয়া যাচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কাছ থেকে। সমস্যা হচ্ছে, দুই ধরণের বর্ণনাই সহিহ, অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে রাবীদের স্মরণশক্তি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহের অবকাশ নেই!

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২
৩০৮। শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমার কাছে বুরাক আনা হল। বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদুর দৃষ্টি যায়, এক এক পদক্ষেপে সে ততাদূর চলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এতে আরোহন করলাম এবং বায়তুল মাকদাস পর্যন্ত এসে পৌছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে রজ্জুতে বাধতেন, আমি সে রজ্জুতে আমার বাহনটিও বাধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বের হলাম।
জিবরীল (আলাইহিস সালাম) একটি শরাবের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন, আপনি ফিরতকেই গ্রহণ করলেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দার খুলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ, ডেকে পাঠানো হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খূলে দেয়া হল। সেখানে আমি আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সাক্ষাৎ পাই তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন এবং আমার মঙ্গলের জন্য দুআা করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে চললেন এবং দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত পৌছলেন ও দ্বার খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি উত্তরে বললেন জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, তাকে কি আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আলাইহিমুস সালাম) দুই খালাত ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়েঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইউসূফ (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুঃআ করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا‏ “এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়—” (৫৭ঃ ১৯)।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খূলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হল। সেখানে হারুন (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খূলে দেয়া হল। সেখানে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রাস্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললোন, জিবরীল। বলা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি বায়তুল মা’মুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। বায়তুল মামুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পূনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হস্থিনীর কানের মত আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশে যা আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
এরপর আল্লাহ তায়াআলা আমার উপর যা অহী করার তা অহী করলেন। আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করলেন। এরপর আমি মূসা(আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মাত এ নির্দেশ পাননে সক্ষম হবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার উম্মাতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হল। তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মাত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এভাবে আমি একবার মূসা (আলাইহিস সালাম) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়াহ করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও, দিন ও রাতের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করা হল। প্রতি ওয়াক্ত সালাত দশ ওয়াক্ত সালাতের সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হল) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান। যে ব্যাক্তি কোন নেক কাজের ইচ্ছা করল এবং তা কাজে রুপায়িত করতে পারল না, আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; অ্যর তা কাজে রুপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের অভিপ্রায় করল, অথচ তা কাজে পরিণত করল না, তার জন্য কোন গুনাহ লেখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার উপর লেখা হয় একটি মাত্র গুনাহ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে নেমে এলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরো সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিযয় নিয়ে বারবার আমি আমার রবের কাছে আসা-যাওয়া করেছি, এখন পূনরায় যেতে লজ্জা হচ্ছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

আসুন হাদিস দুইটি পাশাপাশি রেখে পড়ি,

উম্মে হানী 132

চল্লিশ নাকি পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে

হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী মুহাম্মদ মিরাজের রাতে আদম ও মুসার একটি বিতর্ক দেখেছিলেন। সেই বিতর্কে মুসার ওপর আদম বিজয়ী হয়েছিল। সমস্যা হচ্ছে, ঐ বিতর্ক সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস থেকে জানা যায়, আদমকে সৃষ্টির চল্লিশ বছর আগে তাওরাত গ্রন্থ লিখিত হয়েছিল, সেখানেই আদমের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। আরেকটি সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, আদমকে সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই আদমের ভাগ্যলিপি নির্ধারিত হয়ে গেছে। দুইটি বক্তব্য একইসাথে সঠিক হতে পারে না। তাই এই বিষয়েও পাওয়া যাচ্ছে সমস্যা। আসুন হাদিস দুইটি পড়ে দেখা যাক। [159] [160]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ ২. আদম (আঃ) ও মুসা (আঃ) এর বিতর্ক
৬৫০৩। ইসহাক ইবনু মূসা ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু মূসা, ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ আনসারী (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁদের প্রতিপালকের কাছে তর্কে অবতীর্ণ হলেন। আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর বিজয়ী হলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি তো সেই আদম (আলাইহিস সালাম) যাকে আল্লাহ তা’আলা আপন হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মাঝে তিনি তাঁর রুহ ফুঁকে দিয়েছেন, তিনি তাঁর ফিরিশতাদের দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন এবং তাঁর জান্নাত আপনাকে বসবাস করতে দিয়েছেন। এরপর আপনি আপনার ভুলের দ্বারা মানুষকে পৃথিবীতে নামিয়ে এনেছেন।
আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি তো সেই মূসা (আলাইহিস সালাম) যাকে আল্লাহ তা’আলা রিসালাতের দায়িত্ব ও তার কালামসহ বিশেষ মর্যাদায় মনোনীত করেছেন এবং আপনাকে দান করেছেন ফলকসমূহ (তাওরাত কিতাব), যাতে সব কিছুর বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে এবং একান্তে কথোপকথনের জন্য অন্যান্যকে নৈকট্য দান করেছেন। আচ্ছা আমার সৃষ্টির কত বছর আগে আল্লাহ তায়ালা তাওরাত লিপিবদ্ধ করেছেন বলে আপনি দেখতে পেয়েছেন? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, চল্লিশ বছর আগে। আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি কি তাতে একথা পেয়েছেন, আদম তাঁর প্রতিপালকের নির্দেশ অমান্য করেছে এবং পথ হারা হয়েছে। বললেন, হ্যাঁ।
আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, এরপর আপনি আমাকে আমার এমন কাজের জন্য কেন তিরস্কার করছেন যা আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বছর আগে আল্লাহ তাআলা আমার উপর নির্ধারণ করে রেখেছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এরপর আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর বিজয়ী হলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ ২. আদম (আঃ) ও মুসা (আঃ) এর বিতর্ক
৬৫০৭। আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সারহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁআলা সমগ্র সৃষ্টির ভাগ্যলিপি আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, সে সময় আল্লাহর আরশ পানির উপরে ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ)

আসুন হাদিস দুইটি পাশাপাশি রেখে পড়ি, [161]

উম্মে হানী 134

বুরাককে বাঁধার প্রয়োজন কী?

বুরাকের যেই বিবরণ হাদিসে দেয়া রয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, বুরাক আসলে ভাষা বুঝতে পারে। জিবরাইল যখন তাকে কিছু কথা বললেন, বুরাক শান্ত হয়ে গেল। অর্থাৎ এই বিশেষ ঘোড়া বা গাধাটি ভাষা বুঝতে পারে, লজ্জিতও হয়। তাহলে প্রশ্ন জাগে, এরকম একটি প্রাণীকে আবার বেঁধে রাখবার দরকার হল কেন? সাধারণ মানুষ তার ঘোড়া বা গাধাকে বেঁধে রাখে একটি বিশেষ কারণে। কারণটি হচ্ছে, ঘোড়া বা গাধা মানুষের ভাষা বুঝতে পারে না, তারা বুদ্ধিমান প্রাণী নয়। এই কারণে ঘোড়া বা গাধা যেকোন জায়গাতে চলে যেতে পারে। কিন্তু যেই প্রাণী নবীর ভাষা বোঝে, তাকে বেঁধে রাখবার দরকার কী? সে কী পালিয়ে যেতো? গল্পের যে এতো বেশি ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে, নবী কী তা বুঝতে পারেননি? [162]

সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫০/ কুরআন তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ সূরা বনী ইসরাঈল
৩১৩১. ইসহাক ইবন মানসূর (রহঃ) …… আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। মি’রাজের রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিন পরিয়ে লাগাম লাগিয়ে বুরাক আনা হল কিন্তু সে হঠকারিতা করল। তখন জিবরীল (আঃ) বললেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারেও তুমি এরূপ করছ? আল্লাহর কাছে তাঁর চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কেউ তোমার উপর কখনও আরোহণ করেনি। লজ্জায় বুরাকটি ঘর্মাক্ত হয় উঠল।
এ হাদীসটি হাসান-গারীব। আবদুর রাজ্জাক (রহঃ) এর রিওয়ায়ত ছাড়া এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই।
সহীহ, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩১৩১ [আল মাদানী প্রকাশনী]
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

নবী মুহাম্মদ মিরাজের বুরাককে বেঁধে রেখেছিল [163]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২
৩০৮। শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমার কাছে বুরাক আনা হল। বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদুর দৃষ্টি যায়, এক এক পদক্ষেপে সে ততাদূর চলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এতে আরোহন করলাম এবং বায়তুল মাকদাস পর্যন্ত এসে পৌছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে রজ্জুতে বাধতেন, আমি সে রজ্জুতে আমার বাহনটিও বাধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বের হলাম।
জিবরীল (আলাইহিস সালাম) একটি শরাবের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন, আপনি ফিরতকেই গ্রহণ করলেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দার খুলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ, ডেকে পাঠানো হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খূলে দেয়া হল। সেখানে আমি আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সাক্ষাৎ পাই তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন এবং আমার মঙ্গলের জন্য দুআা করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে চললেন এবং দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত পৌছলেন ও দ্বার খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি উত্তরে বললেন জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, তাকে কি আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আলাইহিমুস সালাম) দুই খালাত ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়েঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইউসূফ (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুঃআ করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا‏ “এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়—” (৫৭ঃ ১৯)।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খূলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হল। সেখানে হারুন (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খূলে দেয়া হল। সেখানে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রাস্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললোন, জিবরীল। বলা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি বায়তুল মা’মুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। বায়তুল মামুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পূনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হস্থিনীর কানের মত আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশে যা আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ তায়াআলা আমার উপর যা অহী করার তা অহী করলেন। আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করলেন। এরপর আমি মূসা(আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মাত এ নির্দেশ পাননে সক্ষম হবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার উম্মাতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হল। তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মাত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এভাবে আমি একবার মূসা (আলাইহিস সালাম) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়াহ করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও, দিন ও রাতের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করা হল। প্রতি ওয়াক্ত সালাত দশ ওয়াক্ত সালাতের সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হল) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান। যে ব্যাক্তি কোন নেক কাজের ইচ্ছা করল এবং তা কাজে রুপায়িত করতে পারল না, আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; অ্যর তা কাজে রুপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের অভিপ্রায় করল, অথচ তা কাজে পরিণত করল না, তার জন্য কোন গুনাহ লেখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার উপর লেখা হয় একটি মাত্র গুনাহ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে নেমে এলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরো সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিযয় নিয়ে বারবার আমি আমার রবের কাছে আসা-যাওয়া করেছি, এখন পূনরায় যেতে লজ্জা হচ্ছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

এমনকি, নবী মুহাম্মদের সাহাবীদের মধ্যে এই নিয়ে বিতর্ক হতো। নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করুন, দুইজন সাহাবীর মধ্যে বিতর্ক হচ্ছে। একজন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করছেন, বুরাককে বাঁধার প্রয়োজন হবে কেন? সেই ঘোড়াটিকে তো আল্লাহ নবীর নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছে! [164] [165]

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪৪/ তাফসীরুল কুরআন
পরিচ্ছেদঃ ১৮. সূরা বানী ইসরাঈল
৩১৪৭৷ যির ইবনু হুবাইশ (রাহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাযিঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বাইতুল মাকদিসে নামায আদায় করেছেন? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, হ্যাঁ তিনি নামায আদায় করেছেন। তিনি বললেন, হে টেকো! তুমি এ ধরনের কথা বলছ, তা কিসের ভিত্তিতে বলছ? আমি বললাম, কুরআনের ভিত্তিতে। কুরআন আমার ও আপনার মাঝে ফাঈসালা করবে। হুযাইফা (রাযিঃ) বললেন, কুরআন হতে যে ব্যক্তি দলীল গ্রহণ করল সে কৃতকার্য হল।
সুফইয়ান (রাহঃ) বলেন, তিনি (মিসআর) কখনো “কাদ ইহতাজ্জা” আবার কখনো “কাদ ফালাজা” বলেছেন। তারপর তিনি (যির) এই আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “পবিত্র মহান সেই সত্তা, যিনি এক রাতে তার বান্দাকে মাসজিদুল হারাম হতে দূরবর্তী মসজিদে নিয়ে গেলেন”- (সূরা বানী ইসরাঈল ১)। হুযাইফাহ্ (রাযিঃ) বলেন, এ আয়াতের মাধ্যমে কি তুমি প্রমাণ করতে চাও, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে নামায আদায় করেছেন? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, সেখানে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করতেন, তাহলে তোমাদের উপরও সেখানে নামায আদায় করা বাধ্যতামূলক হত, যেমন মাসজিদুল হারামে নামায আদায় করা তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
হুযাইফাহ্ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি পশু আনা হল। এর পিঠ ছিল দীর্ঘ এবং (চলার সময়) এর পা দৃষ্টির সীমায় পতিত হয়। তারা দু’জন (মহানাবী ও জিবরীল) জান্নাত, জাহান্নাম এবং আখিরাতের প্রতিশ্রুত বিষয়সমূহ দেখার পূর্ব পর্যন্ত বোরাকের পিঠ হতে নামেননি। তারপর তারা দু’জন প্রত্যাবর্তন করেন। তারা যেভাবে গিয়েছিলেন অনুরূপভাবেই ফিরে আসেন (অর্থাৎ সওয়ারী অবস্থায়ই ফিরে আসেন)। হুযাইফাহ (রাযিঃ) বলেন, লোকেরা বলাবলি করে, তিনি বোরাককে বেঁধেছিলেন। কেন এটি তার নিকট হতে পালিয়ে যাবে। অথচ গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছু জানার মালিক (আল্লাহ তা’আলা) বোরাককে তার নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছিলেন।
সনদ হাসান।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ যির ইবন হুবায়শ (রহঃ)


আসমানের প্রহরীর অজ্ঞতা?

মুহাম্মদ যখন আসমানের এক একটি দরজা( আসমানের দরজা হয়?) খুলে ভেতরে ঢুকছেন, তখন হাদিসের বিবরণে দেখা যাচ্ছে, দরজার পাহারাদার জিজ্ঞেস করছেন কে। অথচ, এত বড় একটি ঘটনা, দরজার পাহারাদারদের তো জানার কথা, কে আসবেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে সব ফেরেশতাকে তো আগেই নবীর আগমনের খবর জানিয়ে রাখার কথা। আসমানের কমিউনিকেশন সিস্টেম খুবই খারাপ তা বোঝাই যাচ্ছে, একদম মান্ধাতার আমলের। নাকি গল্প চমকপ্রদ এবং আকর্ষনীয় করে সাজাবার জন্য এসব বানানো হয়েছে? [166]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩০৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২
৩০৮। শায়বান ইবনু ফাররূখ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমার কাছে বুরাক আনা হল। বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদুর দৃষ্টি যায়, এক এক পদক্ষেপে সে ততাদূর চলে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এতে আরোহন করলাম এবং বায়তুল মাকদাস পর্যন্ত এসে পৌছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে রজ্জুতে বাধতেন, আমি সে রজ্জুতে আমার বাহনটিও বাধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে বের হলাম।
জিবরীল (আলাইহিস সালাম) একটি শরাবের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বললেন, আপনি ফিরতকেই গ্রহণ করলেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দার খুলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ, ডেকে পাঠানো হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খূলে দেয়া হল। সেখানে আমি আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সাক্ষাৎ পাই তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন এবং আমার মঙ্গলের জন্য দুআা করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে চললেন এবং দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত পৌছলেন ও দ্বার খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি উত্তরে বললেন জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, তাকে কি আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেয়া হলো। সেখানে আমি ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আলাইহিমুস সালাম) দুই খালাত ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়েঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইউসূফ (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল তাঁকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দার খুলে দেওয়া হলো। সেখানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুঃআ করলেন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا‏ “এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়—” (৫৭ঃ ১৯)।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খূলতে বললেন। বলা হল, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। অনন্তর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেওয়া হল। সেখানে হারুন (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। বলা হল, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খূলে দেয়া হল। সেখানে মূসা (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করলেন।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রাস্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। বলা হল, কে? তিনি বললোন, জিবরীল। বলা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ বলা হল, আপনাকে কি তাঁকে আনতে পাঠান হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাঁকে ডেকে পাঠান হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি বায়তুল মা’মুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। বায়তুল মামুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পূনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না।
তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হস্থিনীর কানের মত আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশে যা আবৃত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ তায়াআলা আমার উপর যা অহী করার তা অহী করলেন। আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করলেন। এরপর আমি মূসা(আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মাত এ নির্দেশ পাননে সক্ষম হবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার উম্মাতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হল। তারপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মাত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এভাবে আমি একবার মূসা (আলাইহিস সালাম) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়াহ করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তায়ালা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও, দিন ও রাতের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করা হল। প্রতি ওয়াক্ত সালাত দশ ওয়াক্ত সালাতের সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হল) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান। যে ব্যাক্তি কোন নেক কাজের ইচ্ছা করল এবং তা কাজে রুপায়িত করতে পারল না, আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; অ্যর তা কাজে রুপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের অভিপ্রায় করল, অথচ তা কাজে পরিণত করল না, তার জন্য কোন গুনাহ লেখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার উপর লেখা হয় একটি মাত্র গুনাহ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর আমি মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে নেমে এলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরো সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ বিযয় নিয়ে বারবার আমি আমার রবের কাছে আসা-যাওয়া করেছি, এখন পূনরায় যেতে লজ্জা হচ্ছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)


নামাজ নিয়ে গাণিতিক ভুল

আসুন একটি হিসেব করি। মুসার পরামর্শে মুহাম্মদ আল্লাহর কাছে প্রথমবার ফিরে গেলেন, এবং ৫০ ওয়াক্ত নামাজ কমিয়ে অর্ধেক করে আনলেন। ৫০ এর অর্ধেক হল ২৫। এরপরে আবারো অর্ধেক করলেন। হল ১২.৫ ওয়াক্ত। কিন্তু মানুষ ১২.৫ ওয়াক্ত নামাজ কীভাবে পড়বে? আল্লাহ এভাবে কেন ভাল করলেন? [167]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ৬০/৫. ইদ্রীস (আঃ)-এর বিবরণ।
৬০/৪. অধ্যায় :
(মহান আল্লাহর বাণীঃ) আর নিশ্চয়ই ইলিয়াসও রাসূলগণের মধ্যে একজন ছিলেন। স্মরণ কর, তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা কি সাবধান হবে না? ………… আমি তা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। (আস্সাফফাতঃ ১২৩-১২৯)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, (ইলয়াস আঃ-এর কথাকে) মর্যাদার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ইলয়াসের প্রতি সালাম। আমি সৎ-কর্মশীলদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন আমার মু’মিন বান্দাদের অন্যতম- (আস্সাফফাত ১৩০-১৩২)
এবং তিনি নূহ (আঃ)-এর পিতার দাদা ছিলেন। মহান আল্লাহর বাণীঃ আর আমি তাঁকে (ইদরীস) উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছি। (মারইয়াম ৫৭)
৩৩৪২. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (লাইলাতুল মি’রাজে) আমার ঘরের ছাদ উন্মুক্ত করা হয়েছিল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। অতঃপর জিব্রাঈল (আঃ) অবতরণ করলেন এবং আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। অতঃপর তিনি যমযমের পানি দ্বারা তা ধুলেন। এরপর হিকমত ও ঈমান (জ্ঞান ও বিশ্বাস) দ্বারা পূর্ণ একখানা সোনার তশ্তরি নিয়ে আসেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। অতঃপর আমার বক্ষকে আগের মত মিলিয়ে দিলেন। এবার তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে আকাশের দিকে উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর যখন দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে পৌঁছলেন, তখন জিবরাঈল (আঃ) আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? জবাব দিলেন, আমি জিবরাঈল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সঙ্গে কি আর কেউ আছেন? তিনি বললেন, আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন। দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করলেন, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর দরজা খোলা হল। যখন আমরা আকাশের উপরে আরোহণ করলাম, হঠাৎ দেখলাম এক ব্যক্তি যার ডানে একদল লোক আর তাঁর বামেও একদল লোক। যখন তিনি তাঁর ডান দিকে তাকান তখন হাসতে থাকেন আর যখন তাঁর বাম দিকে তাকান তখন কাঁদতে থাকেন। (তিনি আমাকে দেখে) বললেন, মারাহাবা! নেক নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল! ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম (আঃ) আর তাঁর ডানের ও বামের এ লোকগুলো হলো তাঁর সন্তান। এদের মধ্যে ডানদিকের লোকগুলো জান্নাতী আর বামদিকের লোকগুলো জাহান্নামী। অতএব যখন তিনি ডানদিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বামদিকে তাকান তখন কাঁদেন। অতঃপর আমাকে নিয়ে জিবরাঈল (আঃ) আরো উপরে উঠলেন। এমনকি দ্বিতীয় আকাশের দ্বারে এসে গেলেন। তখন তিনি এ আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন! দ্বাররক্ষী তাঁকে প্রথম আকাশের দ্বাররক্ষী যেরূপ বলেছিল, তেমনি বলল। অতঃপর তিনি দরজা খুলে দিলেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আবূ যার (রাঃ) উল্লেখ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশসমূহে ইদ্রীস, মূসা, ‘ঈসা এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। তাঁদের কার অবস্থান কোন্ আকাশে তিনি আমার নিকট তা বর্ণনা করেননি। তবে তিনি এটা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে আদম (আঃ)-কে এবং ষষ্ঠ আকাশে ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখতে পেয়েছেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, জিবরাঈল (আঃ) যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ) ইদ্রীস (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন তিনি (ইদ্রীস (আঃ)) বলেছিলেন, হে নেক নবী এবং নেক ভাই! আপনাকে মারহাবা। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল) জবাব দিলেন, ইনি ইদ্রীস (আঃ)! অতঃপর মুসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি মূসা (আঃ)। অতঃপর ‘ঈসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি ‘ঈসা (আঃ)। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা। হে নেক নবী এবং নেক সন্তান! আমি জানতে চাইলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি ইবরাহীম (আঃ)।
ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, আমাকে ইবনু হাযম (রহ.) জানিয়েছেন যে, ইবনু ‘আব্বাস ও আবূ ইয়াহয়্যা আনসারী (রাঃ) বলতেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতঃপর জিবরাঈল আমাকে ঊর্ধ্বে নিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আমি একটি সমতল স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখান হতে কলমসমূহের খসখস শব্দ শুনছিলাম।
ইবনু হাযম (রহ.) এবং আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন আল্লাহ আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। অতঃপর আমি এ নির্দেশ নিয়ে ফিরে আসলাম। যখন মূসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার রব আপনার উম্মাত উপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে। তিনি বললেন, পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য রাখে না। তখন ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার জন্য আবেদন করলাম। তিনি তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে পুনরায় কমাবার আবেদন করুন এবং তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্বের অনুরূপ কথা আবার উল্লেখ করলেন। এবার তিনি (আল্লাহ) তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তিনি পূর্বের মত বললেন। আমি তা করলাম। তখন আল্লাহ তার এক অংশ মাফ করে দিলেন। আমি পুনরায় মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে জানালাম। তখন তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আরো কমাবার আরয করুন। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার আবেদন করলাম। তিনি বললেন, এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাকী রইল। আর তা সাওয়াবের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান হবে। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি এবারও বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আবেদন করুন। আমি বললাম, এবার আমার রবের সম্মুখীন হতে আমি লজ্জাবোধ করছি। এবার জিবরাঈল (আঃ) চললেন এবং অবশেষে আমাকে সাথে নিয়ে সিদ্রাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। দেখলাম তা এমন চমৎকার রঙে পরিপূর্ণ যা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করানো হল। দেখলাম এর ইট মোতির তৈরী আর এর মাটি মিসক বা কস্তুরীর মত সুগন্ধময়। (৩৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১০৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)


কলমের আওয়াজ কীভাবে?

বহু হাদিস থেকে জানা যায়, আল্লাহ সৃষ্টির শুরুতে একটি কলম বানিয়েছিলেন, যার দায়িত্ব ছিল তাকদীরের ভালমন্দ সব লেখা। সেই কলমের কালি শুকিয়ে গেছে বলেই অন্যান্য হাদিসে বলা আছে। অথচ, নবী মুহাম্মদ মিরাজের রাতে সেই কলমকে খস খস শব্দে লিখতে শুনেছেন। এই কলম কী সেই কলম, নাকি ভিন্ন কোন কলম? [168] [169]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৮২/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ ৮২/২. আল্লাহর ইলম-মুতাবিক (লেখার পর) কলম শুকিয়ে গেছে।
আল্লাহর বাণীঃ ‘‘আল্লাহ জেনে শুনেই তাকে গুমরাহ করেছেন’’- (সূরাহ জাসিয়াহ ৪৫/২৩) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ যার সম্মুখীন তুমি হবে (তোমার যা ঘটবে) তা লেখার পর কলম শুকিয়ে গেছে। ইবনু ‘আব্বাস(রাঃ) বলেছেন,(لَهَا سَابِقُوْنَ) তাদের উপর নেকবখতি প্রাধান্য বিস্তার করেছে।
৬৫৯৬. ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! জাহান্নামীদের থেকে জান্নাতীদেরকে চেনা যাবে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। সে বলল, তাহলে ‘আমলকারীরা ‘আমল করবে কেন? তিনি বললেনঃ প্রতিটি লোক ঐ ‘আমলই করে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অথবা যা তার জন্য সহজ করা হয়েছে। [৭৫৫১; মুসলিম ৩৮/১, হাঃ ২৬৪৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬১৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ৬০/৫. ইদ্রীস (আঃ)-এর বিবরণ।
৬০/৪. অধ্যায় :
(মহান আল্লাহর বাণীঃ) আর নিশ্চয়ই ইলিয়াসও রাসূলগণের মধ্যে একজন ছিলেন। স্মরণ কর, তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা কি সাবধান হবে না? ………… আমি তা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। (আস্সাফফাতঃ ১২৩-১২৯)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, (ইলয়াস আঃ-এর কথাকে) মর্যাদার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ইলয়াসের প্রতি সালাম। আমি সৎ-কর্মশীলদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন আমার মু’মিন বান্দাদের অন্যতম- (আস্সাফফাত ১৩০-১৩২)
এবং তিনি নূহ (আঃ)-এর পিতার দাদা ছিলেন। মহান আল্লাহর বাণীঃ আর আমি তাঁকে (ইদরীস) উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছি। (মারইয়াম ৫৭)
৩৩৪২. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (লাইলাতুল মি’রাজে) আমার ঘরের ছাদ উন্মুক্ত করা হয়েছিল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। অতঃপর জিব্রাঈল (আঃ) অবতরণ করলেন এবং আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। অতঃপর তিনি যমযমের পানি দ্বারা তা ধুলেন। এরপর হিকমত ও ঈমান (জ্ঞান ও বিশ্বাস) দ্বারা পূর্ণ একখানা সোনার তশ্তরি নিয়ে আসেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। অতঃপর আমার বক্ষকে আগের মত মিলিয়ে দিলেন। এবার তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে আকাশের দিকে উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর যখন দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে পৌঁছলেন, তখন জিবরাঈল (আঃ) আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? জবাব দিলেন, আমি জিবরাঈল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সঙ্গে কি আর কেউ আছেন? তিনি বললেন, আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন। দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করলেন, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর দরজা খোলা হল। যখন আমরা আকাশের উপরে আরোহণ করলাম, হঠাৎ দেখলাম এক ব্যক্তি যার ডানে একদল লোক আর তাঁর বামেও একদল লোক। যখন তিনি তাঁর ডান দিকে তাকান তখন হাসতে থাকেন আর যখন তাঁর বাম দিকে তাকান তখন কাঁদতে থাকেন। (তিনি আমাকে দেখে) বললেন, মারাহাবা! নেক নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল! ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম (আঃ) আর তাঁর ডানের ও বামের এ লোকগুলো হলো তাঁর সন্তান। এদের মধ্যে ডানদিকের লোকগুলো জান্নাতী আর বামদিকের লোকগুলো জাহান্নামী। অতএব যখন তিনি ডানদিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বামদিকে তাকান তখন কাঁদেন। অতঃপর আমাকে নিয়ে জিবরাঈল (আঃ) আরো উপরে উঠলেন। এমনকি দ্বিতীয় আকাশের দ্বারে এসে গেলেন। তখন তিনি এ আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন! দ্বাররক্ষী তাঁকে প্রথম আকাশের দ্বাররক্ষী যেরূপ বলেছিল, তেমনি বলল। অতঃপর তিনি দরজা খুলে দিলেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আবূ যার (রাঃ) উল্লেখ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশসমূহে ইদ্রীস, মূসা, ‘ঈসা এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। তাঁদের কার অবস্থান কোন্ আকাশে তিনি আমার নিকট তা বর্ণনা করেননি। তবে তিনি এটা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে আদম (আঃ)-কে এবং ষষ্ঠ আকাশে ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখতে পেয়েছেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, জিবরাঈল (আঃ) যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ) ইদ্রীস (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন তিনি (ইদ্রীস (আঃ)) বলেছিলেন, হে নেক নবী এবং নেক ভাই! আপনাকে মারহাবা। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল) জবাব দিলেন, ইনি ইদ্রীস (আঃ)! অতঃপর মুসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি মূসা (আঃ)। অতঃপর ‘ঈসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি ‘ঈসা (আঃ)। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা। হে নেক নবী এবং নেক সন্তান! আমি জানতে চাইলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি ইবরাহীম (আঃ)।
ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, আমাকে ইবনু হাযম (রহ.) জানিয়েছেন যে, ইবনু ‘আব্বাস ও আবূ ইয়াহয়্যা আনসারী (রাঃ) বলতেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতঃপর জিবরাঈল আমাকে ঊর্ধ্বে নিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আমি একটি সমতল স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখান হতে কলমসমূহের খসখস শব্দ শুনছিলাম।
ইবনু হাযম (রহ.) এবং আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন আল্লাহ আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। অতঃপর আমি এ নির্দেশ নিয়ে ফিরে আসলাম। যখন মূসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার রব আপনার উম্মাত উপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে। তিনি বললেন, পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য রাখে না। তখন ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার জন্য আবেদন করলাম। তিনি তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে পুনরায় কমাবার আবেদন করুন এবং তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্বের অনুরূপ কথা আবার উল্লেখ করলেন। এবার তিনি (আল্লাহ) তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তিনি পূর্বের মত বললেন। আমি তা করলাম। তখন আল্লাহ তার এক অংশ মাফ করে দিলেন। আমি পুনরায় মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে জানালাম। তখন তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আরো কমাবার আরয করুন। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার আবেদন করলাম। তিনি বললেন, এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাকী রইল। আর তা সাওয়াবের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান হবে। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি এবারও বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আবেদন করুন। আমি বললাম, এবার আমার রবের সম্মুখীন হতে আমি লজ্জাবোধ করছি। এবার জিবরাঈল (আঃ) চললেন এবং অবশেষে আমাকে সাথে নিয়ে সিদ্রাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। দেখলাম তা এমন চমৎকার রঙে পরিপূর্ণ যা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করানো হল। দেখলাম এর ইট মোতির তৈরী আর এর মাটি মিসক বা কস্তুরীর মত সুগন্ধময়। (৩৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১০৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)


আল্লাহর চাইতে মুসা জ্ঞানী?

সবচাইতে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, হযরত মুসা কী আল্লাহর চাইতেও বেশি পণ্ডিত কিনা, সেটি ভেবে দেখা। খেয়াল করুন, হাদিসে বর্ণিত আছে, আল্লাহ প্রথম দফায় ৫০ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের হুকুম দিলেন। মুসা নবী মুহাম্মদের কাছে এই কথা শুনে আল্লাহর ওপরে পাকনামি করা শুরু করে দিলেন। বললেন, আল্লাহ যা দিয়েছেন, আল্লাহর হুকুম নিয়ে দর কষাকষি করতে। যেন কাচা বাজারে কাচকি মাছের ভাগা নিয়ে মুলামুলি। সর্বজ্ঞানী আল্লাহর চাইতেও বেশি পাকনা মুসা নবীর পরামর্শে নবী মুহাম্মদ আল্লাহর সাথে রীতিমত কাঁচাবাজারে কাচকি মাছের দর কষাকষির মত মুলামুলি করে নামাজের পরিমাণ কমিয়ে আনেন। এ থেকে মুসা নবীকে আল্লাহর চাইতেও বেশি পাকনা বলে যে কারো মনে হতেই পারে, যেহেতু মুসা নবী আল্লাহর নির্ধারিত সালাত বিষয়ে আপত্তি তুলে সেটি কমানোর পরামর্শ দেন। আল্লাহর শানে এহেন বেয়াদবির জন্য আল্লাহ মুসা নবীকে কী শাস্তি দেবেন জানি না, তবে আল্লাহও নবীর চাপাচাপিতে নামাজের সংখ্যা কমিয়ে দেন বলে জানা যায়। মানে আল্লাহ নিজের ভুলটিও শুধরে নেন। নইলে নামাজের সংখ্যা কমাবেন কেন? যদি ৫০ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম আল্লাহই হয়ে থাকে, পরে মুসার পরামর্শে আল্লাহ নিজের ভুল শুধরে নেয়, তাহলে তো বুঝতে হবে, আল্লাহও ভুল করেন। তাহলে সে আল্লাহ হয় কীভাবে? [170]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ৬০/৫. ইদ্রীস (আঃ)-এর বিবরণ।
৬০/৪. অধ্যায় :
(মহান আল্লাহর বাণীঃ) আর নিশ্চয়ই ইলিয়াসও রাসূলগণের মধ্যে একজন ছিলেন। স্মরণ কর, তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা কি সাবধান হবে না? ………… আমি তা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। (আস্সাফফাতঃ ১২৩-১২৯)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, (ইলয়াস আঃ-এর কথাকে) মর্যাদার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ইলয়াসের প্রতি সালাম। আমি সৎ-কর্মশীলদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন আমার মু’মিন বান্দাদের অন্যতম- (আস্সাফফাত ১৩০-১৩২)
এবং তিনি নূহ (আঃ)-এর পিতার দাদা ছিলেন। মহান আল্লাহর বাণীঃ আর আমি তাঁকে (ইদরীস) উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছি। (মারইয়াম ৫৭)
৩৩৪২. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (লাইলাতুল মি’রাজে) আমার ঘরের ছাদ উন্মুক্ত করা হয়েছিল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। অতঃপর জিব্রাঈল (আঃ) অবতরণ করলেন এবং আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। অতঃপর তিনি যমযমের পানি দ্বারা তা ধুলেন। এরপর হিকমত ও ঈমান (জ্ঞান ও বিশ্বাস) দ্বারা পূর্ণ একখানা সোনার তশ্তরি নিয়ে আসেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। অতঃপর আমার বক্ষকে আগের মত মিলিয়ে দিলেন। এবার তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে আকাশের দিকে উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর যখন দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে পৌঁছলেন, তখন জিবরাঈল (আঃ) আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? জবাব দিলেন, আমি জিবরাঈল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সঙ্গে কি আর কেউ আছেন? তিনি বললেন, আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন। দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করলেন, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর দরজা খোলা হল। যখন আমরা আকাশের উপরে আরোহণ করলাম, হঠাৎ দেখলাম এক ব্যক্তি যার ডানে একদল লোক আর তাঁর বামেও একদল লোক। যখন তিনি তাঁর ডান দিকে তাকান তখন হাসতে থাকেন আর যখন তাঁর বাম দিকে তাকান তখন কাঁদতে থাকেন। (তিনি আমাকে দেখে) বললেন, মারাহাবা! নেক নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল! ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম (আঃ) আর তাঁর ডানের ও বামের এ লোকগুলো হলো তাঁর সন্তান। এদের মধ্যে ডানদিকের লোকগুলো জান্নাতী আর বামদিকের লোকগুলো জাহান্নামী। অতএব যখন তিনি ডানদিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বামদিকে তাকান তখন কাঁদেন। অতঃপর আমাকে নিয়ে জিবরাঈল (আঃ) আরো উপরে উঠলেন। এমনকি দ্বিতীয় আকাশের দ্বারে এসে গেলেন। তখন তিনি এ আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন! দ্বাররক্ষী তাঁকে প্রথম আকাশের দ্বাররক্ষী যেরূপ বলেছিল, তেমনি বলল। অতঃপর তিনি দরজা খুলে দিলেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আবূ যার (রাঃ) উল্লেখ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশসমূহে ইদ্রীস, মূসা, ‘ঈসা এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। তাঁদের কার অবস্থান কোন্ আকাশে তিনি আমার নিকট তা বর্ণনা করেননি। তবে তিনি এটা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে আদম (আঃ)-কে এবং ষষ্ঠ আকাশে ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখতে পেয়েছেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, জিবরাঈল (আঃ) যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ) ইদ্রীস (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন তিনি (ইদ্রীস (আঃ)) বলেছিলেন, হে নেক নবী এবং নেক ভাই! আপনাকে মারহাবা। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল) জবাব দিলেন, ইনি ইদ্রীস (আঃ)! অতঃপর মুসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি মূসা (আঃ)। অতঃপর ‘ঈসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি ‘ঈসা (আঃ)। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা। হে নেক নবী এবং নেক সন্তান! আমি জানতে চাইলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি ইবরাহীম (আঃ)।
ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, আমাকে ইবনু হাযম (রহ.) জানিয়েছেন যে, ইবনু ‘আব্বাস ও আবূ ইয়াহয়্যা আনসারী (রাঃ) বলতেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতঃপর জিবরাঈল আমাকে ঊর্ধ্বে নিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আমি একটি সমতল স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখান হতে কলমসমূহের খসখস শব্দ শুনছিলাম।
ইবনু হাযম (রহ.) এবং আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন আল্লাহ আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। অতঃপর আমি এ নির্দেশ নিয়ে ফিরে আসলাম। যখন মূসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার রব আপনার উম্মাত উপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে। তিনি বললেন, পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য রাখে না। তখন ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার জন্য আবেদন করলাম। তিনি তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে পুনরায় কমাবার আবেদন করুন এবং তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্বের অনুরূপ কথা আবার উল্লেখ করলেন। এবার তিনি (আল্লাহ) তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তিনি পূর্বের মত বললেন। আমি তা করলাম। তখন আল্লাহ তার এক অংশ মাফ করে দিলেন। আমি পুনরায় মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে জানালাম। তখন তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আরো কমাবার আরয করুন। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার আবেদন করলাম। তিনি বললেন, এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাকী রইল। আর তা সাওয়াবের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান হবে। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি এবারও বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আবেদন করুন। আমি বললাম, এবার আমার রবের সম্মুখীন হতে আমি লজ্জাবোধ করছি। এবার জিবরাঈল (আঃ) চললেন এবং অবশেষে আমাকে সাথে নিয়ে সিদ্রাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। দেখলাম তা এমন চমৎকার রঙে পরিপূর্ণ যা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করানো হল। দেখলাম এর ইট মোতির তৈরী আর এর মাটি মিসক বা কস্তুরীর মত সুগন্ধময়। (৩৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১০৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)


ঘোড়ার আবার ডানা হয়?

সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, একবার আয়িশার ঘরে ডানাওয়ালা ঘোড়ার পুতুল দেখে নবী মুহাম্মদ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, ঘোড়ার আবার ডানা কীভাবে হতে পারে! এই প্রশ্ন শুনে আয়িশা উত্তর দিয়েছিল, আপনি কী জানেন না, সুলায়মান নবীর ঘোড়ার ডানা ছিল? এই কথা শুনে নবী মুহাম্মদ অট্টহাসি দিতে থাকেন। এই হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবীর সাথে আয়িশার সংসার জীবনের অনেক আগেই মিরাজ হয়ে গেছে। নবী মুহাম্মদের তো জানা থাকার কথা যে, বুরাক ঘোড়াটির ডানা ছিল এবং সেটি উড়তে পারে! [171] [172]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬৫-[২৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক বা হুনায়নের যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনকালে তাঁর ঘরে (প্রবেশের সময়) পর্দা ঝুলানো দেখতে পেলেন, আর বাতাসে পর্দা দুলতে থাকায় পর্দার অপরদিক দিয়ে ’আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর খেলনাগুলো দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, হে ’আয়িশাহ্! এগুলো কী? ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আমার কন্যাগণ (খেলনা)। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খেলনাগুলোর মাঝে কাপড়ের দুই ডানাবিশিষ্ট ঘোড়া দেখতে পেয়ে বললেন, এগুলোর মধ্যখানে যা দেখছি, তা কী? ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, ঘোড়া। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তার উপরে ঐ দু’টি কী? আমি বললাম, দু’টি ডানা। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (বিস্ময়াভিভূত হয়ে) বললেন, ঘোড়ারও কি আবার দু’টি ডানা হয়? ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আপনি কি শুনেননি সুলায়মান (আঃ)-এর ঘোড়ার অনেকগুলো ডানা ছিল। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এত বেশি হেসে উঠলেন যে, আমি তাঁর মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত দেখতে পেলাম। (আবূ দাঊদ)[1]
[1] সহীহ : আবূ দাঊদ ৪৯৩২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৮৬৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৬/ আদব
পরিচ্ছেদঃ ৬০. কাপড়ের স্ত্রী পুতুল নিয়ে খেলা করা সম্পর্কে।
৪৮৫০. মুহাম্মদ ইবন আওফ (রহঃ) ….. আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক অথবা খায়বরের যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেন, আর এ সময় আমার ঘরে একটা পর্দা ঝুলানো ছিল। বাতাসের কারণে পর্দার এক কোণা খুলে যাওয়ায় আমার খেলার পুতুলগুলো, যা একটি তাকের উপর ছিল, তা দৃষ্টিগোচর হতে থাকে। তখন তিনি বলেনঃ হে আইশা! এগুলো কি? তিনি বলেনঃ এগুলো আমার পুতুল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মধ্যে একটি ঘোড়া দেখতে পান, যার দু’টি ডানা ছিল কাপড় দিয়ে তৈরী। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করেনঃ এটা কি যা আমি দেখছি? তিনি বলেনঃ এটা ঘোড়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ এর উপর এটা কি? তিনি বলেনঃ দু’টি ডানা বিশিষ্ট ঘোড়া? আইশা (রাঃ) বলেনঃ আপনি কি শোনেননি, সুলায়মান (আঃ) এর ডানা বিশিষ্ট ঘোড়া ছিল? আইশা (রাঃ) বলেনঃ আমার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠেন, যার ফলে আমি তাঁর সামনের দাঁত স্পষ্টরূপে দেখতে পাই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

অথচ, ইসলামের মিরাজ গল্পটির মূল ভিত্তিই এই ডানাওয়ালা বোরাক নামক গাধা ও খচ্চরের মাঝামাঝি আকৃতির একটি জন্তুর গল্প। আসুন সীরাত গ্রন্থ থেকে এবারে দেখে নেয়া যাক, [173]

উম্মে হানী 136

এবারে আসুন সৌদি আরবের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একজন আলেমের একটি বই থেকে পড়ে নিই [174]

উম্মে হানী 138
উম্মে হানী 140

স্বপ্নে বা আধ্যাত্মিকভাবে নাকি সশরীরে?

মিরাজ শারীরিকভাবে হয়েছিল নাকি আত্মিকভাবে বা স্বপ্নের মাধ্যমে, এই নিয়ে রয়েছে আলেমদের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ। আয়িশা সহ কিছু প্রখ্যাত সাহাবী মনে করেন, মিরাজ হয়েছিল স্বপ্নে। আবার, বেশিরভাগ আলেম মনে করেন, মিরাজ হয়েছিল শারীরিকভাবে। আসুন প্রথমে শারীরিকভাবে মিরাজ হওয়ার দলিল দেখি, [175]

উম্মে হানী 142

এই একই বইয়ের অন্য পাতাতে বলা হয়েছে, আয়িশা এবং মুয়াবিয়া সহ অনেক সাহাবী এবং ইবনে ইসহাক মিরাজ স্বপ্নে বা আধ্যাত্মিকভাবে হয়েছে বলে মত দিয়েছিলেন [176]

উম্মে হানী 144

এবারে আসুন একটি হাদিস পড়ি। পাঠকের সুবিধার্থে উল্লিখিত বিষয়টি হাইলাইট করে দেয়া হয়েছে, পড়ার সুবিধার জন্য। লক্ষ্য করুন, বিবরণের শুরুতে মুহাম্মদ ঘুমিয়ে আছেন, বিবরণের শেষে মুহাম্মদ ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন [177]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৬/ জাহ্‌মিয়াদের মতের খণ্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ ৩১৩৯. মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ এবং মূসা (আঃ) এর সাথে আল্লাহ্‌ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছিলেন (৪ঃ ১৬৪)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৭০০৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫১৭
৭০০৯। আবদুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস ইবনু সালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এক রাতে কাবার মসজিদ থেকে সফর করানো হল। বিবরণটি হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ বিষয়ে ওহী প্রেরণের পুর্বে তার কাছে তিনজন ফেরেশতার একটি জামাআতে আসল। অথচ তখন তিনি মসজিদুল হারামে ঘুমন্ত ছিলেন। এদের প্রথমজন বলল, তিনি কে? মধ্যের জন বলল, তিনি এদের উত্তম ব্যাক্তি। সর্বশেষ জন বলল, তা হলে তাদের উত্তম ব্যাক্তিকেই নিয়ে চল। সে রাতটির ঘটনা এটুকুই। এ জন্য তিনি আর তাদেরকে দেখেননি। অবশেষে তারা অন্য এক রাতে আগমন করলেন যা তিনি অন্তর দ্বারা দেখছিলেন। তার চোখ ঘুমন্ত, অন্তর ঘুমায় না। অনুরূপ অন্য নবীগণেরও চোখ ঘুমিয়ে থাকে, অন্তর ঘুমায় না।
এ রাতে তারা তার সাথে কোন কথা না বলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যমযম কূপের কাছে রাখলেন।
জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার সাথীদের থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার গলার নিচ হতে বক্ষস্থল পর্যন্ত ছেদন করলেন এবং তার বক্ষ ও পেট থেকে সবকিছু নেড়েচেড়ে যমযমের পানি দ্বারা নিজ হাতে ধৌত করেন। সেগুলোকে পরিছন্ন করলেন, তারপর সেখানে একটি তশতরী আনা হয় এবং তাতে ছিল একটি সোনার পাত্র যা পরিপূর্ণ ছিল ঈমান ও হিকমতে। তাঁর বক্ষ ও গলার রগগুলি এর দ্বারা পূর্ণ করলেন।
তারপর সেগুলো যখাস্থানে স্থাপন করে বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাঁকে নিয়ে ফিরে আসমানের দিকে আরোহণ করলেন। আসমানের দরজাগুলো হতে একটি দরজাতে নাড়া দিলেন। ফলে আসমানবাসিগণ তাকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এ কে? তিনি উত্তরে বললেনঃ জিবরীল। তারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জিজ্ঞাসা করলেন, তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন তারা বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান (আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আপনজনের মধ্যে এসেছেন) শুভাগমনে আসমানবাসীরা খুবই আনন্দিত। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা যমীনে কি করতে চাচ্ছেন তা আসমানবাসীদেরকে না জানানো পর্যন্ত তারা জানতে পারে না।
দুনিয়ার আসমানে তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে পেলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে দেখিয়ে বললেন, তিনি আপনার পিতা, তাকে সালাম দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাম দিলেন। আদম (আলাইহিস সালাম) তার সালামের উত্তর দিলেন। এবং বললেনঃ মারহাবান ওয়া আহলান হে আমার পুত্র। তুমি আমার কতইনা উত্তম পুত্র। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি প্রবাহমান নহর দুনিয়ার আসমানে অবলোকন করলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, এ নহর দুটি কোন নহর হে জিবরীল! জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ দুটি হলো নীল ও ফুরাতের মুল।
এরপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে নিয়ে এ আসমানে ঘুরে বেড়ালেন। তিনি আরো একটি নহর অবলোকন করলেন। এর ওপর প্রতিঠিত ছিল মোতি ও জাবারজাদের তৈরি একটি প্রাসাদ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নহরে হাত মারলেন। তা ছিল অতি উন্নতমানের মিসক। তিনি বললেনঃ হে জিবরীল! এটি কি? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ হাউযে কাওসার। যা আপনার প্রতিপালক আপনার জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন।
তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে দ্বিতীয় আসমানে গমন করলেন। প্রথম আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতাগণ তাকে যা বলেছিলেন এখানেও তা বললেনঃ তারা জানতে চাইল, তিনি কে? তিনি বললেনঃ জিবরীল। তারা বললেনঃ আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেনঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারা বললেনঃ তার কাছে কি দুত পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাঁরা বললেন, মারহাবান ওয়া আহলান।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সঙ্গে করে তিনি তৃতীয় আসমানের দিকে গমন করলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় আসমানে অবস্থানরত ফেরেশতারা যা বলেছিলেন তৃতীয় আসমানের ফেরেশতাগণও তাই বললেন। তারপর তাকে সঙ্গে করে তিনি চতুর্থ আসমানের দিকে গমন করলেন। তারাও তাঁকে পুর্বের ন্যায়ই বললেন। তারপর তাঁকে নিয়ে তিনি পঞ্চম আসমানে গমন করলেন। তাঁরাও পূর্বের মতো বললেন। এরপর তিনি তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দিকে গমন করলেন। সেখানেও ফেরেশতারা পূর্বের মতই বললেন। সর্বশেষে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে সপ্তম আসমানে গমন করলে সেখানেও ফেরেশতারা তাকে পূর্বের ফেরেশতাদের মতো বললেন। প্রত্যেক আসমানেই নবীগণ রয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নাম উল্লেখ করেছেন।
তন্মধ্যে আমি সংরক্ষিত করেছি যে, দ্বিতীয় আসমানে ইদরীস (আলাইহিস সালাম), চতূর্থ আসমানে হারুন (আলাইহিস সালাম), পঞ্চম আসমানে অন্য একজন নবী যায় নাম আমি স্মরণ রাখতে পারিনি। ষষ্ঠ আসমানে রয়েছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এবং আল্লাহর সাথে বাক্যলাপের মর্যাদার কারণে মূসা (আলাইহিস সালাম) আছেন সপ্তম আসমানে।
সে সময় মূসা বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমি তো ধারনা করিনি আমার ওপর কাউকে উচ্চমর্যাদা দান করা হবে। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এত ঊর্ধ্বে আরোহণ করানো হলো, যা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। অবশেষে তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় আগমন করলেন। এখানে প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। অতি নিকটবর্তীর ফলে তাঁদের মধ্যে দু’ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তার প্রতি ওহী পাঠালেন। অর্থাৎ তাঁর উম্মাতের উপর রাত ও দিনে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের কথা ওহী যোগে পাঠানো হলো।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেন। আর মূসার কাছে পৌছলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে আটকিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতিপালক আপনাকে কি নির্দেশ দিলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাত ও দিনে পঞ্চাশ বার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনার উম্মাত তা আদায়ে সক্ষম হবে না। সুতরাং আপনি ফিরে যান তাহলে আপনার প্রতিপালক আপনার এবং আপনার উম্মাতের থেকে এ আদেশটি সহজ করে দিবেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলের দিকে এমনভাবে লক্ষ্য করলেন, যেন তিনি এ বিষয়ে তার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলেন। জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ হ্যাঁ। আপনি চাইলে তা হতে পারে। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে প্রথমে আল্লাহর কাছে গেলেন।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাস্থানে থেকে বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত এটি আদায়ে সক্ষম হবে না। তখন আল্লাহ দশ ওয়াক্ত সালাত (নামায/নামাজ) কমিয়ে দিলেন। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁকে নামালেন। এভাবেই মূসা তাকে তাঁর প্রতিপালকের কাছে পাঠাতে থাকলেন। পরিশেষে পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকল। পাঁচ সংখ্যায়ও মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে থামিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি আমার বনী ইসরাঈল কাওমের কাছে এর চেয়েও সামান্য কিছু পেতে চেয়েছি। তদুপরি তারা দুর্বল হয়েছে এবং পরিত্যাগ করেছেন অথচ আপনার উম্মাত দৈহিক, মানসিক, শারীরিক সৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণক্ষমতা সব দিকে আরো দুর্বল।
সুতরাং আপনি আবার যান এবং আপনার প্রতিপালক থেকে নির্দেশটি আরো সহজ করে আনুন। প্রতিবারই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরামর্শের জন্য জিবরীলের দিকে তাকাতেন। পঞ্চমবারেও জিবরীল তাঁকে নিয়ে গমন করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক। আমার উম্মাতের শরীর, মন, শ্রবণশক্তি ও দেহ নিতান্তই দুর্বল। তাই নির্দেশটি আমাদের থেকে আরো সহজ করে দিন। এরপর পরাক্রমশালী আল্লাহ বললেনঃ মুহাম্মাদ! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি আপনার নিকটে হাযির, বারবার হাযির।
আল্লাহ বললেনঃ আমার কথার কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন হয় না। আমি তোমাদের উপর যা ফরয করেছি তা ’উম্মুল কিতাব’ তথা লাওহে মাহফুযে সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি নেক আমলের দশটি নেকী রয়েছে। উম্মুল কিতাবে সালাত (নামায/নামাজ) পঞ্চাশ ওয়াক্তই লিপিবদ্ধ আছে। তবে আপনার ও আপনার উম্মাতের জন্য তা পাঁচ ওয়াক্ত করা হলো। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসার কাছে প্রত্যাবর্তন করলে মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে দশটি সাওয়াব নির্ধারণ করেছেন। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি বনী ইসরাঈলের কাছ থেকে এর চাইতেও সামান্য জিনিসের প্রত্যাশ্য করছি। কিন্তু তারা তাও আদায় করেনি। আপনার প্রতিপালকের কাছে আপনি আবার ফিরে যান, যেন আরো একটু কমিয়ে দেন।
এবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে মূসা, আল্লাহর কসম! আমি আমার প্রতিপালকের কাছে বারবার গিয়েছি। আবার যেতে লজ্জাবোধ করছি, যেন তার সাথে মতান্তর করছি। এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ অবতরণ করতে পারেন আল্লাহর নামে। এ সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হয়ে দেখলেন, তিনি মসজিদে হারামে আছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)


মিরাজের দালিলিক পর্যালোচনা

ইসলামে মিরাজ আখ্যানের ঘটনাবলী যদি উৎস-সমালোচনার দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করা হয়, যদি কেউ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সততার সাথে, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়াদি পর্যালোচনা করেন, তিনি অবশ্যই বলতে বাধ্য হবেন, পুরো মিরাজের ঘটনাতে রয়েছে অসংখ্য খাপছাড়া বিষয়, একটির সাথে আরেকটি বিবরণের অনেক বেশি পার্থক্য এবং বিরোধ। এগুলো কিছুতেই কোন সত্য ঘটনার বর্ণনা হতে পারে না। সত্য ঘটনাতে কখনো এত এত মতবিরোধ থাকতে পারে না। যে কেউ উৎস-সমালোচনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন, তা সে যতবড় বিশ্বাসী মুসলিমই হোক না কেন, তার মনেও এইসব বিবরণ মিলিয়ে পড়লে সন্দেহ জাগাটি স্বাভাবিক। গত ১৪০০ বছর ধরে ইসলামিক আলেমগণ নানা ধরনের “শাক দিয়ে মাছ ঢাকা”-ব্যাখ্যা এবং এদিক সেদিকের ব্যাখ্যা দিয়ে বিষয়গুলো মেলাবার চেষ্টা করেছেন বটে, কিন্তু বুদ্ধিমান পাঠক মাত্রই তাদের হাস্যকর চেষ্টাগুলোর ফাঁক ফোকর ধরে ফেলবেন। তাই এই বিষয়ে বেশী গবেষণা করা বা পর্যালোচনা করাকেই আলেমগণ নিষেধ করেন। আলেমগণ প্রশ্নবাণে একেবারেই আটকে গেলে ঐটা গায়েবী বিষয় বলে চালিয়ে দেন, বা বলেন আল্লাহই ভাল জানে, আমাদের কাজ বিশ্বাস করা। প্রশ্ন করতে বা আপত্তির জায়গাগুলো ধরিয়ে দিতে আলেমগণ বারণ করেন কারণ এইসব বিবরণ ভালভাবে পড়লে ইমান হারাবার ভাল রকমের আশঙ্কা রয়েছে। এবারে আসুন মিরাজের সমস্ত দলিল একত্র করে একটি পর্যালোচনা করা যাক,

বিষয়দলিল ১দলিল ২দলিল ৩
ফেরেশতার সংখ্যাজিবরাইল একা [178] বা ১ জন আগন্তুক অর্থাৎ অচেনা ব্যক্তি [179]দুইজন [180]তিনজন ফেরেশতা [181][182]
যাত্রা শুরুর স্থানমুহাম্মদের ঘরের ছাদ খুলে [183]মুহাম্মদের সাথে জিবরাইলের দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ হয় কাবার হাতিমে [184]উম্মে হানীর ঘর থেকে [185] [186]
জিবরাইলের সাথে সাক্ষাতের স্থানমুহাম্মদের সাথে জিবরাইলের দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ হয় মুহাম্মদের ঘরে বা কাবার হাতিমে [187] [188]মুহাম্মদের সাথে জিবরাইলের দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ হয় উম্মে হানীর ঘর থেকে [189] [190]মুহাম্মদের সাথে জিবরাইলের দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ হয় সপ্তম আসমানে সিদরাতুল মুনতাহায় [191]
আসমানের বাহনবুরাকে চড়ে [192] [193] [194] সিঁড়িতে চড়ে [195] জিবরাইল নবীর হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন [196]
জেরুজালেমে যাত্রাবিরতিবায়তুল মাকদিসে থেমেছিলেন [197] সরাসরি আসমানে গিয়েছিলেন, বায়তুল মাকদিসে থামেননি [198]
পানীয় পরিবেশনের স্থানজেরুজালেমে দেয়া হয়েছিল [199] আসমানে বায়তুল মামুরে দেয়া হয়েছিল [200]
মুসার অবস্থানমুসা কবরে সালাত আদায় করছেন [201] [202] [203]জেরুজালেমে বায়তুল মাকদিসে সালাত আদায় করছেন [204] ষষ্ঠ আসমানে অবস্থান করছেন [205] আরেকটি বর্ণনায় সপ্তম আসমানে অবস্থান করছেন [206]
ইব্রাহিমের অবস্থানষষ্ঠ আসমানে অবস্থান করছেন [207] সপ্তম আসমানে অবস্থান করছেন [208]
হারুনের অবস্থান চতুর্থ আসমানে অবস্থান করছেন [209] পঞ্চম আসমানে অবস্থান করছেন [210]
ইদ্রিসের অবস্থানদ্বিতীয় আসমানে অবস্থান করছেন [211] চতুর্থ আসমানে অবস্থান করছেন [212] পঞ্চম আসমানে অবস্থান করছেন, মুনকার হাদিস [213]
ইয়াহিয়ার অবস্থানদ্বিতীয় আসমানে অবস্থান করছেন [214] তৃতীয় আসমানে অবস্থান করছেন [215]
আগে সিদরাতুল মুনতাহা নাকি বায়তুল মামুরনবী আগে সিদরাতুল মুনতাহা দেখেন, যা হচ্ছে জড় জগতের শেষ সীমানা। এরপরে তিনি দেখেন বায়তুল মামুর। [216] সপ্তম আসমানে পৌঁছে নবী দেখেন, বায়তুল মামুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে ইব্রাহিম। তারপরে তিনি দেখেন সিদরাতুল মুনতাহা। [217]
আদম-মুসার বিতর্কঃ চল্লিশ নাকি পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেআদমের ভাগ্য নির্ধারিত হয় তার সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বে [218] তা নির্ধারিত হয় আদমের সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে [219]
বুরাক বাঁধার প্রয়োজনকথা বোঝা বুদ্ধিমান প্রাণী বুরাককে [220] বেঁধে রাখার দরকার হয়েছিল [221]সাহাবীগণও বুরাক বাঁধা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতো এবং সন্দেহ করতো [222] [223]
আসমানি প্রহরীর অজ্ঞতাআসমানি পাহারাদারগণ জানতেন না, কে আসছে। রাজাবাদশাদের পাহারাদারদের মত জিজ্ঞাসাবাদ [224]
নামাজে গাণিতিক সমস্যামুসার অনুরোধে ৫০ এর অর্ধেক, এরপরে আবারো অর্ধেক, অর্থাৎ ১২.৫ ওয়াক্ত [225]
কলমের আওয়াজশুকিয়ে যাওয়া কলমের [226] লেখার শব্দ [227]
মুসাই সর্বজ্ঞানীসর্বজ্ঞানী আল্লাহ যা বোঝেনি, আল্লাহর চেয়েও মহাপণ্ডিত মুসার তা অনুধাবন [228]
ডানাওয়ালা ঘোড়ার পুতুল দেখে বিস্ময়মিরাজের রাতে ডানাওয়ালা বুরাকে চড়া [229] ডানাওয়ালা ঘোড়ার পুতুল দেখে নবীর বিস্ময় এবং অবিশ্বাসের হাসি [230] [231]
শারীরিকভাবে নাকি স্বপ্নে বা রূহানীভাবেআয়িশা, মুয়াবিয়া, ইবনে ইসহাকের মতে মিরাজ হয়েছিল রূহানীভাবে বা আধ্যাত্মিকভাবে বা স্বপ্নে [232] [233]অধিকাংশ আলেমের মতে মিরাজ হয়েছিল সশরীরে বা শারীরিকভাবে [234]

বোন নাকি কৈশোরের প্রেমিকা?

পুরো ঘটনাটি পড়ার পরে যেই বিষয়গুলো পরিষ্কার, তা হচ্ছে, নবী মুহাম্মদের সাথে সেই বাল্য জীবন থেকেই ছিল উম্মে হানীর খুবই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। এমনকি, বিয়ে করতেও চেয়েছিলেন নবীও মুহাম্মদ। বিয়ে যেহেতু করতে চেয়েছিলেন, বুঝতে সমস্যা হয় না যে, উম্মে হানীর প্রতি তার ছিল সীমাহীন প্রেম। কিন্তু চাচা আবূ তালিব তার মত সহায় সম্বলহীন এতিম মুহাম্মদকে নিজের মেয়ের জামাই করার উপযুক্ত মনে করেন নি। এরপরে মুহাম্মদ খাদিজাকে বিয়ে করে নিজের অবস্থার পরিবর্তন করেন। কিন্তু ততদিনে উম্মে হানী তো আরেকজনার স্ত্রী। উম্মে হানীর প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সেই শোকে কিংবা তার বিরহেই কিনা জানা নেই, নবী মুহাম্মদ হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যান করতে চলে যেতেন। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, প্রেমিকাকে অন্যের স্ত্রী হিসেবে দেখে উনি প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন কিনা জানা যায় না। তবে এই ঘটনাগুলো পড়লে মনে হয়, প্রেমে ব্যর্থতাও তার সমাজ ও ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটি প্রভাবক হয়ে থাকতে পারে। হয়তো লাত মানাত উজ্জা দেবীর কাছে তিনি কামনা করেছিলেন, তার প্রেম যেন সফল হয়। কিন্তু তা না হওয়ায় হয়তো উনি সেই সব মূর্তির প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। মনের দুঃখে চলে যেতেন হেরা গুহায়। সেখানে তিনি শরৎচন্দ্রের দেবদাসের মতই কোন ধরণের মাদক সেবন করতেন কিনা জানা যায় না। সেইখানেই তার কাছে আগমন ঘটে জিব্রাইল নামক এক অলৌকিক সত্ত্বার, যিনি ওহী নিয়ে আসেন। এরপরে নবীর জীবনে ঘটে নানা পরিবর্তন। মৃদুভাষী বালকটি ক্রমশ হয়ে ওঠে কর্তৃত্বপরায়ণ যোদ্ধা নবী। দখল করেন মক্কা নগরী। নবীর ভয়ে মক্কা ছেড়ে পালান উম্মে হানীর স্বামী। কেন পালালেন, কেন এত ভয় পেলেন, তা খুবই অদ্ভুত ঘটনা। এরপরে নবী আবারো বিয়ে করতে চাইলেন উম্মে হানীকে। কিন্তু এবারেও ফিরিয়ে দিলেন উম্মে হানী। কেন দিলেন, কী ছিল সেই কারণ, নবীর এই ভয়াবহ যুদ্ধবাজ রূপ দেখেই কিনা, তা জানা যায় না। হয়তো সেই বাল্যকালে যেই কোমল ছেলেটির প্রেমে উম্মে হানী পড়েছিল, তখনকার আগ্রাসী বর্বর এবং এতগুলো স্ত্রী আর দাসীকে নিয়ে রীতিমত হেরেম তৈরি করে বসা মুহাম্মদের সাথে তার কোন মিল ছিল না। তাই হয়তো তিনি বলেছেন [235]

আল্লাহর কসম! আমি তো জাহেলী যুগেই আপনাকে ভালবাসতাম।

উম্মে হানী 146

প্রশ্ন হচ্ছে, উম্মে হানীকে নিজের আপন বোনের মতই যদি নবী মুহাম্মদ মনে করতেন, তাহলে বারবার বিবাহের প্রস্তাব দেবেন কেন?


ফাস্টব্লাড কাজিন আগ্রহের প্যাটার্নঃ উম্মে হানীই একমাত্র নন

ফার্স্ট ব্লাড কাজিনদের প্রতি কিছু মানুষের আলাদা রকমের যৌন আগ্রহ থাকে, যাকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় “genetic sexual attraction (GSA)” বলা হয়। এটি এমন একটি প্রবণতা, যেখানে ঘনিষ্ঠ রক্তসম্পর্কীয় জৈবিক আত্মীয়দের মধ্যে—বিশেষত দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা বা সামাজিক দূরত্বের পর—জৈবিক সাদৃশ্যের কারণে অস্বাভাবিক মাত্রার আকর্ষণ তৈরি হতে পারে, [236] যা মানব আচরণবিজ্ঞানে একটি স্বীকৃত মনস্তাত্ত্বিক প্যাটার্ন হিসেবে বিবেচিত [237] [238]। ইসলামে চাচাতো, মামাতো, খালাতো ও ফুফাতো ভাইবোনের মধ্যে বিবাহকে হালাল (বৈধ) ঘোষণা করা হয়েছে এবং এই বিধানের মূল অনুপ্রেরণা হলেন স্বয়ং নবী মুহাম্মদ এবং তার খুলাফায়ে রাশেদীন। নবীর জীবনাচরণে এই প্রথাকে সুন্নাহ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে দেখা যায়, যেখানে তার ফুফাতো বোন জয়নব বিনতে জাহশ-কে বিবাহ করার ঘটনাটি অন্যতম। জয়নব ছিলেন নবীর ফার্স্ট প্যাটারনাল কাজিন। প্রথমে জয়নবের বিবাহ হয়েছিল নবীর দত্তক পুত্র জায়েদ ইবনে হারিসা-এর সাথে। ইসলামি বর্ণনামতে, একদিন জায়েদ বাসায় অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় মুহাম্মদ জায়েদের বাড়িতে যান এবং অসাবধানতাবশত জয়নবকে ঘরের পোশাকে (সম্ভবত প্রায় অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায়) দেখে ফেলেন। এই দর্শনের পরই মুহাম্মদের মনে জয়নবের প্রতি তীব্র কামভাব বা আগ্রহ জাগ্রত হয় [239]। এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, নবীর ফার্স্টব্লাড কাজিনের প্রতি আগ্রহ শুধু উম্মে হানীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।

নবীর মনের এই কামনা পূরণের পথ পরিষ্কার করতে, জায়েদ দ্রুতই জয়নবকে তালাক দেন। এর পরই কুরআনের সূরা আল-আহযাব (৩৩:৩৭) নাজিল হয়। এই আয়াতে আল্লাহ্‌ নবীর মনের গোপন খায়েসটি প্রকাশ করে দেন এবং নবীর জন্য সেই নারীকে বিবাহ করা বৈধ করে দেন। এই সুবিধাজনক ঐশী প্রত্যাদেশ-এর মাধ্যমে এক ঢিলে দুই কাজ সম্পন্ন হয়—নবী তার আগ্রহ পূরণ করেন এবং একইসাথে সামাজিকভাবে প্রচলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানকে চিরতরে পাল্টে দেওয়া হয়, অর্থাৎ দত্তক নেওয়ার প্রথা (Tabanni) বিলুপ্ত করা হয়। এর মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয় যে, নবীর ব্যক্তিগত কামনা চরিতার্থের জন্য ধর্মীয় বিধানের পরিবর্তনও করা হয়েছিল।

নবীর ব্যক্তিগত পছন্দ ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে ফার্স্টব্লাড কাজিন ম্যারেজ মুসলিম সমাজে একটি বহুল প্রচলিত রীতি হিসেবে স্থায়ী হলেও, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এই প্রথাকে এক ভয়াবহ সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জেনেটিক্স অনুযায়ী, সাধারণ জনগণের ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রুটি বা জেনেটিক ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি যেখানে প্রায় ৩% থাকে, সেখানে ফার্স্ট কাজিনদের মধ্যে বিবাহের ফলে সেই ঝুঁকি ৪-৬% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় [240]। নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিবাহ রিসেসিভ জিন বহনকারী বিরল রোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়, যা জন্মগত ত্রুটি, মানসিক বৈকল্য, এবং শিশুদের উচ্চ মৃত্যুর হার (Mortality Rate)-এর কারণ হয়। এছাড়া কনজেনিটাল অ্যানোমালির (জন্মের সময়কার ত্রুটি) ঝুঁকি সাধারণের তুলনায় দ্বিগুণ হতে দেখা যায় [241]

নবীর জীবনাচরণ থেকে অনুপ্রাণিত এই প্রথাটি পরবর্তীকালে মুসলিম সমাজগুলোতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ড-এর মতো অঞ্চলে যেখানে পাকিস্তানি ও মধ্যপ্রাচ্যের বংশোদ্ভূত মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ফার্স্ট কাজিন ম্যারেজের হার অত্যন্ত বেশি, সেখানে জেনেটিক রোগের প্রকোপ জনস্বাস্থ্যকে গুরুতর সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, এক সময়ে নবীর ব্যক্তিগত আগ্রহর কারণে বৈধতা পাওয়া একটি সুন্নাহ আধুনিক যুগে এসে মানব সমাজের জন্য একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ধর্মীয় বৈধতা এবং বৈজ্ঞানিক বাস্তবতার মধ্যেকার গভীর ফারাক তুলে ধরে।


যাকে ইচ্ছা ভোগের আগে মরেনি নবী

আয়িশার বর্ণনা অনুসারে, নবী যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ইচ্ছেমত সকল নারীদের গ্রহণ করে ভোগ করেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত নবীর মৃত্যু হয় নি। অর্থাৎ নবীর ভোগের ইচ্ছে সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ পাক তাকে মৃত্যু দেননি। যাকে যাকে তার মনে ধরেছে, যার যার সাথে তার যৌন সঙ্গম করতে ইচ্ছে হয়েছে, সকলের সাথে করার আগে সে মরেনি। এই হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নবী মুহাম্মদ উম্মে হানীকে বেশ কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে তো একদমই স্পষ্ট। যার অর্থ, উম্মে হানীর প্রতি মুহাম্মদের যৌন কামনা ভালভাবেই ছিল। আর আয়িশার হাদিস অনুসারে, যার যার প্রতি নবীর কামনা ছিল, সবাইকেই মৃত্যুর পূর্বে তিনি ভোগ করে তারপরে মরেছেন। এর অর্থ কী? [242]

সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২৬/ নিকাহ (বিবাহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলের উপর যা ফরয করেছেন এবং অন্যদের জন্য যা হারাম করেছেন- আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে
৩২০৭. মুহাম্মদ ইন মানসূর (রহঃ) … আতা (রহঃ) বলেন, আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনতিকাল করেন নি, যে পর্যন্ত না তার জন্য হালাল করা হয়েছে মহিলাদের মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন তাকে গ্রহণ করার।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আতা ইবনু আবী রাবাহ (রহঃ)


সারাংশ ( ভিজুয়াল রিপ্রেসেন্টেশন )

উম্মে হানী, মুহাম্মদ ও সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলীর টাইমলাইন

বাল্যকালের প্রেম → খাদিজা ও আবু তালিবের মৃত্যু → আয়িশা → মিরাজ → মক্কা বিজয় → পানীয়/রোজা → সেজেগুজে উম্মে হানীর ঘরে গমন

প্রারম্ভিক মক্কা যুগ আনুমানিক: নবুয়তের আগে (< ৬১০ খ্রিঃ) বাল্যকালের প্রেম
চাচাতো বোন উম্মে হানীর প্রতি বাল্যকালের আকর্ষণ

নবুয়তের আগের সময়ে মুহাম্মদ তার চাচা আবু তালিবের কাছে উম্মে হানীর জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠান, কিন্তু চাচা আবু তালিব তখন মুহাম্মদকে যথেষ্ট সম্মানীয় মনে না করায় অন্য আরেকজনার সাথে উম্মে হানীর বিয়ে দেন। এতে দুঃখ পেয়ে মুহাম্মদ বলেন, চাচা! আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হুবায়রার সাথে তার বিয়ে দিলেন?

“আমুল হুযন” – শোকের বছর প্রায় ৬১৯ খ্রিঃ / নবুয়ত বছর ১০ শোক ও শূন্যতা
আবু তালিব ও খাদিজার মৃত্যু

শীঘ্র-শীঘ্রই চাচা আবু তালিব ও স্ত্রী খাদিজা – দুজনই মৃত্যুবরণ করেন। মক্কার কোরাইশগণ তখন মুসলিমদের নানাভাবে অপমান অপদস্থ করছে। এরকম অবস্থায় মানসিকভাবে মুহাম্মদ অনেকটাই বিপর্যস্ত।

খাদিজার মৃত্যুর পরপর আনুমানিক ৬২০ খ্রিঃ শিশু আয়িশা
শিশু আয়িশাকে স্বপ্নে দেখা ও বিয়ে নির্ধারণ

খাদিজার মৃত্যুর প্রায় সাথে সাথেই, একমাসের মধ্যে সাওদা এবং শিশু আয়িশাকে বিয়ে করেন মুহাম্মদ।

হিজরতের আগের শেষ পর্যায় ৬২০–৬২১ খ্রিঃ মিরাজ
মিরাজ – উম্মে হানীর ঘরে রাতযাপন

একাধিক সীরাত এবং হাদিসের বর্ণনায় দেখা যায়, ইসরা-মিরাজের রাতে মুহাম্মদ উম্মে হানীর ঘরেই ছিলেন, সেখান থেকেই শুরু হয় মিরাজের যাত্রা।

৮ হিজরি – রমজান ৬৩০ খ্রিঃ মক্কা বিজয়
মক্কা বিজয়, উম্মে হানীর ইসলামে প্রবেশ

মক্কা বিজয়ের খবরে উম্মে হানীর ইসলাম বিরোধী স্বামী পালিয়ে যায় এবং মক্কায় মুহাম্মদ উপস্থিত হওয়ায় উম্মে হানী ইসলাম গ্রহণ করেন।

মক্কা বিজয়ের সকাল রমজান মক্কার উঁচু স্থানে নবীর অবস্থান
নবী মুহাম্মদ মক্কার কাছে তাঁবু গাড়লেন

সেখানে নবী মুহাম্মদ এবং ফাতিমা ছিলেন, মক্কা বিজয়ের দিন মুহাম্মদ সেখানে গোছল করছিলেন।

মক্কা বিজয়ের দিন রমজান উম্মে হানীর আগমন
উম্মে হানী মুহাম্মদের সাথে দেখা করতে আসলেন

নবী সেই সময়ে গোছল করছিলেন, ফাতিমা সেই ঘরে উপস্থিত ছিলেন। উম্মে হানীর ঘরে প্রবেশ।

মক্কা বিজয়ের দিন রমজান উম্মে হানীর রোজা ভঙ্গ
উম্মে হানী রোজা ভাঙলেন

নবী, ফাতিমা এবং উম্মে হানী পাশাপাশি বসা। নবী পানীয় পান করে উম্মে হানীর দিকে এগিয়ে দিলেন। উম্মে হানী রোজা ছিলেন। পানীয় পান করে রোজার কথা বলতেই মুহাম্মদ বললেন, এই রোজা ভঙ্গ হলে কোন অসুবিধা নেই। রমজান মাসের রোজা যেহেতু ফরজ, নবীর বলা উচিত ছিল, ভুল করে পানীয় পান করলে রোজা ভঙ্গ হয় না।

মক্কা বিজয়ের একই দিন চাশত উম্মে হানীর ঘরে গমন
চুলে বেণী বেঁধে উম্মে হানীর ঘরে উপস্থিতি

নবীকে চারটি বেণী বাঁধা অবস্থায় উম্মে হানীর ঘরে যাওয়ার কথা জানা যায়। অর্থাৎ নবী গোছলের পরে সেজেগুজে উম্মে হানীর ঘরে যান।

১০মক্কা বিজয়ের একই দিন চাশত উম্মে হানীর দ্বিতীয়বার গোছল
ঘরে প্রবেশ করে অবস্থান করেন নবী

নবী সেখানে আরও একবার গোছল করেন এবং আবারো একই নামাজ পড়েন।


উপসংহার

উপরে উপস্থাপিত সমস্ত ঐতিহাসিক তথ্য এবং হাদিসের বর্ণনা সরাসরি ইসলামিক রেফারেন্সের আকর থেকেই সংগৃহীত। নাস্তিক বা সমালোচকদের পক্ষ থেকে বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য তৈরি করা হয়নি। অতএব, ‘সহীহ নয়’, ‘অনুবাদে ভুল রয়েছে’, অথবা ‘বিকৃত মস্তিষ্কপ্রসূত’—এই ধরণের চিরাচরিত ধর্মীয় কুযুক্তি (Apologetic Fallacies) বাদ দিয়ে প্রত্যেক অনুসন্ধিৎসু পাঠকের উচিত তথ্যগুলোর ঐতিহাসিক সত্যতা অনুধাবন করা।

আমাদের এই আলোচনা থেকে এটি মোটামুটি স্পষ্ট যে, নবী মুহাম্মদের ব্যক্তিগত জীবনে উম্মে হানীর উপস্থিতিটি ইসলামের কঠোর নৈতিক বিধানের সাপেক্ষে একটি গুরুতর অসঙ্গতি তৈরি করে। যে সম্পর্ককে একদল স্কলার ‘ভাইবোনের পবিত্র সম্পর্ক’ বলে দাবি করেন, সেই সম্পর্কই আবার নবীর পক্ষ থেকে বারবার বিবাহের প্রস্তাবে স্কলারদের যুক্তির কফিনে পেরেক মেরে দেয়। সেই সাথে মিরাজের রাতে বিবাহ বৈধ একজন নারীর গৃহে রাত্রিযাপন ইসলামের অভ্যন্তরীণ ‘পর্দা’ ও ‘মাহরাম’ বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। উম্মে হানীর সাথে নবীর সম্পর্কটি শেষ পর্যন্ত ভাইবোনের পবিত্রতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা একটি অতৃপ্ত প্রেম ছিল, নাকি কোরআনের বিধানের তোয়াক্কা না করা এক বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আমরা পাঠকের বিচক্ষণতার হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি।

নাস্তিক বা সমালোচনাকারীরা কোনো মানুষের প্রেম, ভালোবাসা, কিংবা যৌন সম্পর্কের অধিকার নিয়ে বিন্দুমাত্র আপত্তি করে না। বরং মানব ইতিহাসের এক করুণ পরিণতি হিসেবে বাল্যকালে মুহাম্মদের সাথে উম্মে হানীর বিবাহ না হওয়ায় মুহাম্মদের ভেতরে যে ক্ষোভ এবং দুঃখের সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা তার সমব্যথী। সমাজের চাপ এবং এতিম ও সহায় সম্বলহীন হওয়ার কারণে দুইজন ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করা কোনো মানবিক কাজ হতে পারে না।

এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো ইসলামের নৈতিক দ্বিচারিতা (Moral Hypocrisy)-এর দিকটি তুলে ধরা। ইসলাম একদিকে মানুষের স্বাভাবিক প্রেম বা ভালোবাসাকে (বিবাহের পূর্বে) সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, একে ‘জিহ্বা ও হৃদয়ের ব্যভিচার’ আখ্যা দেয়। অথচ, তার প্রবর্তকের জীবনাচরণেই আমরা খুঁজে পাই বিবাহ এবং দাসী ভোগ ছাড়া আরও জটিল, আবেগপূর্ণ এবং প্রথা-বহির্ভূত সম্পর্কের অস্বচ্ছ চিত্র।

মিরাজ এবং আল-আকসা মসজিদের ঐতিহাসিক অসঙ্গতির (যেমন: ‘মিথলজির পুনরাবৃত্তি’ এবং ‘মসজিদের অস্তিত্বহীনতা’) সাথে উম্মে হানীর ব্যক্তিগত জীবনের এই অস্পষ্টতা যুক্ত হলে, এটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, নবী মুহাম্মদের জীবনী এবং তার প্রতিষ্ঠিত বিধানগুলো ঐশ্বরিক অলৌকিকতার চেয়ে বরং ব্যক্তিগত দুর্বলতা এবং মানবীয় প্রথাগত প্রভাবের ভারে অনেক বেশি ভারাক্রান্ত।


Independent AI Review
তথ্যগত সঠিকতা
  • উম্মে হানী সম্পর্কে বেহেশতী আখবার, মিরাজ রাতে তাঁর ঘরে থাকার বর্ণনা, একই পাত্র থেকে পান করা, এবং তাঁর বাণীর মাধ্যমে রোজা ভঙ্গের হাদিস—এসব ইসলামের প্রধান হাদিস সংগ্রহ (তিরমিযী, বুখারী), সীরাত গ্রন্থ, এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুমোদিত অনুবাদসমূহে সত্যিই উপস্থিত। প্রবন্ধের উদ্ধৃতিগুলো এসব উৎসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
  • মিরাজের বর্ণনায় দেখা যায়—কখনো এটি শারীরিক ভ্রমণ, কখনো স্বপ্ন, কখনো ঘুমন্ত অবস্থায় শুরু ও শেষে জেগে ওঠা—এসব সাংঘর্ষিক বর্ণনা সীরাত ইবনে হিশাম, যাদুল মা’আদ, এবং তাফসীর ইবনে কাসীর সহ বিভিন্ন শাস্ত্রীয় গ্রন্থে সত্যিই বিদ্যমান। প্রবন্ধে এসব সঠিকভাবে উদ্ধৃত হয়েছে।
  • “ফাস্টব্লাড কাজিন আগ্রহ” অধ্যায়ে উম্মে হানী, জয়নব বিনতে জাহশ, আরব গোত্রীয় প্রথা এবং মনোবিজ্ঞানে বর্ণিত আত্মীয়-আকর্ষণ সংক্রান্ত গবেষণা—সবই আলোচনার বাস্তব প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তথ্যসম্মতভাবে উপস্থাপিত। GSA ও Westermarck Effect–এর রেফারেন্স যথার্থ এবং বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে নথিভুক্ত।
যুক্তির গঠন
  • প্রবন্ধটি শুরু হয়েছে উম্মে হানীর বর্ণনা ও টাইমলাইন দিয়ে, এরপর মিরাজ আখ্যানের বিরোধ, হাদিস-বিশ্লেষণ, তাফসীরীয় মতপার্থক্য, এবং সমসাময়িক ইসলামি ব্যাখ্যাকে একত্রে রেখে ধারাবাহিক যুক্তি গড়ে তুলেছে। এই গঠন পাঠককে ধাপে ধাপে একটি যৌক্তিক প্রশ্নচিহ্নের দিকে নিয়ে যায়।
  • শেষের অধ্যায়ে “ফাস্টব্লাড কাজিন প্যাটার্ন” যুক্ত হওয়ায় বিশ্লেষণটি আরও বিস্তৃত হয়েছে—এটি প্রমাণ করে যে উম্মে হানীর ঘটনা আলাদা নয়, বরং বৃহত্তর আচরণগত ও গোত্রীয় প্রথার সাথে সংযুক্ত। এটি লিখকের কেন্দ্রীয় যুক্তিকে সমর্থন করে।
উৎস ও প্রমাণ
  • হাদিস, তাফসীর, সীরাত, ইসলামিক প্রকাশনা, আরবি/ইংরেজি অনুবাদের তুলনা—এসব উৎস সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ছবি/স্ক্যান/উদ্ধৃতি সহ। পাঠক যাচাই করতে পারবে। এটি ধর্মীয় গবেষণার মানদণ্ডে একটি শক্তিশালী দিক।
  • মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও নৃতত্ত্বের গবেষণার ব্যবহার (যেমন GSA) প্রবন্ধটিকে বহুশাস্ত্রীয় ভিত্তি দিয়েছে। যদিও এটি মূল যুক্তির একটি অংশ মাত্র, উৎসগুলো বৈধ ও শাস্ত্রীয় গবেষণা থেকে নেওয়া।
বৈজ্ঞানিক/সমসাময়িক মানদণ্ড
  • মিরাজের শারীরিক ভ্রমণ—বোরাক, বহু-স্তর বিশিষ্ট আসমান, নক্ষত্রপুঞ্জ অতিক্রম, শূন্যে ভ্রমণ—ইত্যাদি দাবি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশবিদ্যা এবং জীববিজ্ঞানের পরীক্ষণযোগ্য বাস্তবতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রবন্ধ এটি যৌক্তিকভাবে দেখিয়েছে।
  • প্রবন্ধে ধর্মীয় ঘটনাকে বৈজ্ঞানিক দাবি হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে, এবং মানব আচরণের ব্যাখ্যায় আধুনিক মনোবিজ্ঞানের রেফারেন্স সংযোজন করা হয়েছে—যা সমসাময়িক একাডেমিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মূল শক্তি
  • উম্মে হানীর হাদিসগুলো সাধারণত আলোচনার বাইরে থাকে; লেখাটি এগুলোর প্রতিটিকে বিশ্লেষণাত্মকভাবে তুলে ধরে মিরাজের বিশ্বাসযোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে—এটি প্রবন্ধের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক।
  • টাইমলাইন, ভিজ্যুয়াল প্রমাণ, তাফসীরের বিশ্লেষণ, এবং আরব গোত্রীয় সংস্কৃতি—এসব একত্রে প্রবন্ধটিকে ইতিহাসভিত্তিক ও গবেষণামূলক করেছে। “ফাস্টব্লাড কাজিন প্যাটার্ন” অধ্যায় সমগ্র আখ্যানের মানবিক-সামাজিক প্রেক্ষাপট স্পষ্ট করেছে।
মূল দুর্বলতা
  • প্রবন্ধটি অত্যন্ত বিস্তারিত হওয়ায় কিছু পাঠকের কাছে মূল যুক্তির লাইন হারিয়ে যেতে পারে; কিছু অংশে সংক্ষেপ ব্যাখ্যা যোগ হলে পড়ার অভিজ্ঞতা উন্নত হতো।
  • GSA অংশটি উপকারী হলেও এটি একটি সহায়ক উপাদান মাত্র—কিছু পাঠকের জন্য এখানে মনোবিজ্ঞান আলোচনা তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ মনে হতে পারে। এ অংশটিকে আরও সংক্ষিপ্ত করলে মূল আখ্যানের গতি অটুট থাকবে।
সংশোধন ও সুপারিশ
  1. “ফাস্টব্লাড কাজিন প্যাটার্ন” অংশের শুরুতে পূর্বের আলোচনার সাথে একটি স্পষ্ট সংযোগ বাক্য দিন—এতে লজিক্যাল ধারাবাহিকতা আরও শক্তিশালী হবে।
  2. মিরাজের সাংঘর্ষিক বর্ণনাগুলোকে একটি ছোট টেবিলে সারসংক্ষেপ করা হলে যুক্তি আরও দৃঢ় ও পাঠযোগ্য হবে।
  3. প্রবন্ধের কিছু দীর্ঘ উদ্ধৃতি সংক্ষেপে পয়েন্ট আকারে উপস্থাপন করলে প্রধান যুক্তি আরও স্পষ্ট ও সহজপাঠ্য হবে।
সারাংশ রায়
তথ্যগত সঠিকতা9 / 10
যুক্তির গুণমান8 / 10
উৎস-ব্যবহার9 / 10
সামগ্রিক স্কোর8.6 / 10

চূড়ান্ত মন্তব্য: প্রবন্ধটি ধর্মীয় আখ্যানের অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্য, ঐতিহাসিক উৎসের সীমাবদ্ধতা, এবং সামাজিক–মানবিক প্রসঙ্গ সুষম পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করেছে। এটি তথ্যসমৃদ্ধ, উৎস-নির্ভর, একাধিক শাস্ত্রের আলোকে নির্মিত, এবং পাঠককে স্বাধীনভাবে বিচার করতে সাহায্য করে। কয়েকটি কাঠামোগত সংশোধন এটিকে আরও একাডেমিক মানে উন্নীত করতে সক্ষম করবে।

এই রিভিউটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এটি কোনো মানব-সম্পাদিত রিভিউ নয়। প্রতিটি তথ্য ও রেফারেন্স যাচাই করে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করার পর এই রিভিউ প্রস্তুত করা হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ
  1. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৪৮৬ ↩︎
  2. আসমাউর রিজাল, মুফতি গোলাম রাব্বানী ভুঁইয়া, প্রকাশকঃ জনাব লোকমান হোসাইন, পৃষ্ঠা ৫১, ৫২ ↩︎
  3. আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, মহিলা সাহাবী, মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৮ ↩︎
  4. MUHAMMAD his life based on the earliest sources, Martin lings, Page 33 ↩︎
  5. সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিসঃ ১৩৪৯ ↩︎
  6. সুনানু ইবনে মাজাহ, বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৯১, হাদিসঃ ১৩৪৯ ↩︎
  7. সীরাতুল মুস্তফা, আল্লামা ইদরিস কান্ধলবী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৬, ২৪৯, ২৫০ ↩︎
  8. আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, উম্মাহাতুল মু’মিনীন, মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯ ↩︎
  9. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৭০৭ ↩︎
  10. কুরআনের তরজমা ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া, দ্বিতীয় খণ্ড, বাদশাহ্‌ ফাহ্দ কুরআন মুদ্রণ কমপ্রেক্স, পৃষ্ঠা ৯৫৯ ↩︎
  11. কুরআনের তরজমা ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া, দ্বিতীয় খণ্ড, বাদশাহ্‌ ফাহ্দ কুরআন মুদ্রণ কমপ্রেক্স, পৃষ্ঠা ১৪৬৬ ↩︎
  12. The Life Of Mohammed, Guillaume, Page 184 ↩︎
  13. বোখারী শরীফ বাঙলা তর্জমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা, সীরাতুন নবী সঙ্কলন, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, পঞ্চম খণ্ড, হামিদিয়া লাইব্রেরী, ১৯৭৭-৭৮ সালে প্রকাশিত, পৃষ্ঠা ৫০৭ ↩︎
  14. তাফসির ইবন কাসির, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫১ ↩︎
  15. তাফসীরে মাযহারী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮৮ ↩︎
  16. তাফসীরে মাযহারী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬, ১৭ ↩︎
  17. তাফসীরে জালালাইন, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৫০ ↩︎
  18. তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, মাওলানা মুহাম্মদ শফী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৬ ↩︎
  19. মুখতাসার যাদুল মা’আদ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম, পৃষ্ঠা ২১৭ ↩︎
  20. সিরাতে রাসুলাল্লাহ (সাঃ), অনুবাদ, শহীদ আখন্দ, প্রথমা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২১৮ ↩︎
  21. সীরাতুন নবী (সা.), ইবন হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৬ ↩︎
  22. তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩২ ↩︎
  23. হজ, উমরা ও যিয়ারত গাইড, ইসলাম হাউজ থেকে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ↩︎
  24. فتح الباري شرح صحيح البخاريكتاب مناقب الأنصارباب المعراج ↩︎
  25. সীরাতুল মুস্তফা (সা), আল্লামা ইদরিস কান্ধলবী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৩ ↩︎
  26. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ১৩২২ ↩︎
  27. আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, মহিলা সাহাবী, মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৯ ↩︎
  28. সীরাতুন নবী (সা.), ইবন হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৬ ↩︎
  29. আল ওয়াকেদী, পৃষ্ঠাঃ ৪২৭ ↩︎
  30. আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, মহিলা সাহাবী, মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৯, ১০০ ↩︎
  31. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৫০ ↩︎
  32. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৪৭ ↩︎
  33. তিরমিযী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮৮, হাদিসঃ ৩২১৩ ↩︎
  34. তাফসীর ইবনে কাসির, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৩২ ↩︎
  35. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৩১০১ ↩︎
  36. সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ১৮৪৮ ↩︎
  37. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিসঃ ২৪৫৬ ↩︎
  38. তিরমিযী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮৮, হাদিসঃ ৩২১৩ ↩︎
  39. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৪৪৮ ↩︎
  40. সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৭৪ ↩︎
  41. সিরাতে ইবনে হিশাম, অনুবাদঃ আকরাম ফারুক, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, পৃষ্ঠা ২৭১ ↩︎
  42. কখন থেকে রোজা ফরয হয়েছে? ↩︎
  43. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৪৪৮ ↩︎
  44. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ১৯৩৩ ↩︎
  45. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৫০ ↩︎
  46. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৪৭ ↩︎
  47. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৯ ↩︎
  48. Sahih al-Bukhari, Darussalam Publications, vol. 4, page 251 ↩︎
  49. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৪৪৮ ↩︎
  50. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৫৮ ↩︎
  51. সীরাতুন নবী (সা), চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৬ ↩︎
  52. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৪৪৪৬ ↩︎
  53. সহীহ আত তিরমিযী, প্রথম খণ্ড, হাদিসঃ ৪৭৪ ↩︎
  54. tabarani:21526 ↩︎
  55. Jami at-Tirmidh, Darussalam Publications, vol. 1, Page 476 ↩︎
  56. সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিসঃ ৩৯৬২ ↩︎
  57. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৮ ↩︎
  58. তাফসীরে ইবনে কাসীর, সপ্তম খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ৪৯২ ↩︎
  59. সালাতুল আউওয়াবীন, ইসলাম হাউজ প্রকাশনী, আব্দুল্লাহ আল মামুন আল আজহারী, সম্পাদনাঃ ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া, পৃষ্ঠা ১৬, ৬ ↩︎
  60. সালাতুল আউওয়াবীন, ইসলাম হাউজ প্রকাশনী, আব্দুল্লাহ আল মামুন আল আজহারী, সম্পাদনাঃ ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া, পৃষ্ঠা ৫৪, ২০ ↩︎
  61. Sahih al-Bukhari, Darussalam Publications, vol. 4, page 251 ↩︎
  62. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৫৮ ↩︎
  63. সীরাতুন নবী (সা), চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৬ ↩︎
  64. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৫০ ↩︎
  65. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৪৭ ↩︎
  66. সীরাতুন নবী (সা), চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৬ ↩︎
  67. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৪৪৮ ↩︎
  68. Sahih al-Bukhari, Darussalam Publications, vol. 4, page 251 ↩︎
  69. সীরাতুন নবী (সা), চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৬ ↩︎
  70. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৪৪৮ ↩︎
  71. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৪৪৪৬ ↩︎
  72. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৪৪৪৬ ↩︎
  73. সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিসঃ ৩৯৬২ ↩︎
  74. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৮ ↩︎
  75. Jami at-Tirmidh, Darussalam Publications, vol. 1, Page 476 ↩︎
  76. সহীহ আত তিরমিযী, প্রথম খণ্ড, হাদিসঃ ৪৭৪ ↩︎
  77. সহীহ আত তিরমিযী, প্রথম খণ্ড, হাদিসঃ ৪৭৪ ↩︎
  78. সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিসঃ ৩৯৬২ ↩︎
  79. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৮ ↩︎
  80. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৬৫ ↩︎
  81. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৬৬ ↩︎
  82. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ২৬৭ ↩︎
  83. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ২৬৭ ↩︎
  84. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৫৮৮ ↩︎
  85. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৫৮৯ ↩︎
  86. সুনান আদ-দারেমী, হাদিসঃ ৭৭৬ ↩︎
  87. সুনান আদ-দারেমী, হাদিসঃ ৭৭৭ ↩︎
  88. St. Clair Tisdall, The Sources of Islam, T. & T. Clark, 1901, pp. 74-81 ↩︎
  89. Haug, Martin. The Book of Arda Viraf. Bombay: Government Central Book Depot, 1872, Introduction ↩︎
  90. Arda Viraf Namag, Chapters 1-2 ↩︎
  91. সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩২০৭; ইবনে ইসহাক, সীরাতুন নবী (সা.), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ১৯৫ ↩︎
  92. Arda Viraf Namag, Chapter 4 ↩︎
  93. Arda Viraf Namag, Chapter 5 ↩︎
  94. সহীহ বুখারী, আজান অধ্যায়; এবং মুসলিম, ঈমান অধ্যায় ↩︎
  95. R. H. Charles, The Ascension of Isaiah, A & C Black, 1900 ↩︎
  96. Flavius Josephus, The Jewish War, Book VI, Chapter 4 ↩︎
  97. Oleg Grabar, The Shape of the Holy: Early Islamic Jerusalem, Princeton University Press, 1996, pp. 27-29 ↩︎
  98. Moshe Gil, A History of Palestine, 634-1099, Cambridge University Press, 1997, p. 69 ↩︎
  99. Al-Tabari, The History of al-Tabari, Vol. XII: The Battle of al-Qadisiyyah and the Conquest of Syria and Palestine, SUNY Press, 1992, pp. 190-195 ↩︎
  100. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭ম খণ্ড, ইবনে কাসীর, পৃষ্ঠা ১০৭, ১০৮, ১১২-১১৩ ↩︎
  101. K. A. C. Creswell, Early Muslim Architecture, Vol. 1, Oxford University Press, 1969, pp. 65-131 ↩︎
  102. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ ↩︎
  103. Einstein, A. 1905. “On the Electrodynamics of Moving Bodies” ↩︎
  104. Resnick, R. & Halliday, D., Basic Concepts in Relativity ↩︎
  105. Davis, J. R., et al., Fundamentals of Aerospace Medicine ↩︎
  106. সহীহ বুখারী, হাদিসঃ ৩২০৭ ↩︎
  107. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৯ ↩︎
  108. সহীহ মুসলিম, হাদিসঃ ৩১০ ↩︎
  109. কুরআনুল কারীম, ২য় খণ্ড – ড. যাকারীয়া, পৃষ্ঠা ২৪৮২ ↩︎
  110. তাফসীরে মাযহারী, ১১তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২২ ↩︎
  111. তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড ১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ৪৮০-৪৮১ ↩︎
  112. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৪২ ↩︎
  113. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৬০৮ ↩︎
  114. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ১৩০৩ ↩︎
  115. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  116. তাফসীরে মাযহারী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯ ↩︎
  117. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৮, হাদিসঃ ১৩০৩ ↩︎
  118. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০১, হাদিসঃ ৩৪২ ↩︎
  119. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৪২ ↩︎
  120. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৬০৮ ↩︎
  121. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১২, হাদিসঃ ৩৬০৮ ↩︎
  122. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০১, হাদিসঃ ৩৪২ ↩︎
  123. সিরাতে রাসুলাল্লাহ (সাঃ), অনুবাদ, শহীদ আখন্দ, প্রথমা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২১৮ ↩︎
  124. সীরাতুন নবী (সা.), ইবন হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৬ ↩︎
  125. সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিসঃ ৩২৮ ↩︎
  126. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৩৬ ↩︎
  127. সূরা আন-নজম, আয়াত ১৩, ১৪ ↩︎
  128. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩১৩ ↩︎
  129. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ৩১৪৭ ↩︎
  130. সূনান আত তিরমিজী, ইসলামিক সেন্টার, হাদিসঃ ৩০৮৫ ↩︎
  131. সীরাতুন নবী (সা), ইবন হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৭ ↩︎
  132. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৪২ ↩︎
  133. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০২, ২০৩, হাদিস ৩১৩ ↩︎
  134. সূনান আত তিরমিজী, ইসলামিক সেন্টার, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১১, ৩১২, হাদিসঃ ৩০৮৫ ↩︎
  135. সীরাতুন নবী (সা), ইবন হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৭ ↩︎
  136. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ ↩︎
  137. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩১৩ ↩︎
  138. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ৩১৪৭ ↩︎
  139. সূনান আত তিরমিজী, ইসলামিক সেন্টার, হাদিসঃ ৩০৮৫ ↩︎
  140. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ ↩︎
  141. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩১৩ ↩︎
  142. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৯৪২ ↩︎
  143. সহীহ ইবনু হিব্বান (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ৫০ ↩︎
  144. সহীহ ইবনু হিব্বান (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ৪৯ ↩︎
  145. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩২৭ ↩︎
  146. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮০ ↩︎
  147. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  148. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  149. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮০ ↩︎
  150. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  151. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮০ ↩︎
  152. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  153. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮০ ↩︎
  154. সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৫১ ↩︎
  155. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮০ ↩︎
  156. Sahih Muslim 164a, In-book reference : Book 1, Hadith 321, USC-MSA web (English) reference : Book 1, Hadith 314 ↩︎
  157. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৬০৮ ↩︎
  158. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ ↩︎
  159. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৫০৩ ↩︎
  160. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৫০৭ ↩︎
  161. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৮, ১৬৯ ↩︎
  162. সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩১৩১ ↩︎
  163. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ ↩︎
  164. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ৩১৪৭ ↩︎
  165. সূনান আত তিরমিজী, ইসলামিক সেন্টার, হাদিসঃ ৩০৮৫ ↩︎
  166. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ ↩︎
  167. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ৩৩৪২ ↩︎
  168. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৬৫৯৬ ↩︎
  169. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৩৩৪২ ↩︎
  170. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ৩৩৪২ ↩︎
  171. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৩২৬৫ ↩︎
  172. সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৮৫০ ↩︎
  173. সীরাতুন নবী (সা), দ্বিতীয় খণ্ড, ইবনে হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৭২ ↩︎
  174. Muhammad ‘Alawi al-Maliki. The Prophet’s Night Journey and Heavenly Ascent., translated by Gibril Fouad Haddad, chapter 2 ↩︎
  175. মুখতাসার যাদুল মা’আদ, পৃষ্ঠা ২১০ ↩︎
  176. মুখতাসার যাদুল মা’আদ, পৃষ্ঠা ২১৩ ↩︎
  177. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  178. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৪২ ↩︎
  179. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৬০৮ ↩︎
  180. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ১৩০৩ ↩︎
  181. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  182. তাফসীরে মাযহারী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯ ↩︎
  183. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৪২ ↩︎
  184. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৬০৮ ↩︎
  185. সিরাতে রাসুলাল্লাহ (সাঃ), অনুবাদ, শহীদ আখন্দ, প্রথমা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২১৮ ↩︎
  186. সীরাতুন নবী (সা.), ইবন হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৬ ↩︎
  187. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৪২ ↩︎
  188. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৬০৮ ↩︎
  189. সিরাতে রাসুলাল্লাহ (সাঃ), অনুবাদ, শহীদ আখন্দ, প্রথমা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২১৮ ↩︎
  190. সীরাতুন নবী (সা.), ইবন হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৬ ↩︎
  191. সূরা আন-নজম, আয়াত ১৩, ১৪ ↩︎
  192. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩১৩ ↩︎
  193. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ৩১৪৭ ↩︎
  194. সূনান আত তিরমিজী, ইসলামিক সেন্টার, হাদিসঃ ৩০৮৫ ↩︎
  195. সীরাতুন নবী (সা), ইবন হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৭ ↩︎
  196. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৪২ ↩︎
  197. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ ↩︎
  198. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩১৩ ↩︎
  199. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ ↩︎
  200. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩১৩ ↩︎
  201. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৯৪২ ↩︎
  202. সহীহ ইবনু হিব্বান (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ৫০ ↩︎
  203. সহীহ ইবনু হিব্বান (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ৪৯ ↩︎
  204. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩২৭ ↩︎
  205. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮০ ↩︎
  206. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  207. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  208. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮০ ↩︎
  209. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  210. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮০ ↩︎
  211. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  212. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮০ ↩︎
  213. সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৫১ ↩︎
  214. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮০ ↩︎
  215. Sahih Muslim 164a, In-book reference : Book 1, Hadith 321, USC-MSA web (English) reference : Book 1, Hadith 314 ↩︎
  216. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৬০৮ ↩︎
  217. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ ↩︎
  218. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৫০৩ ↩︎
  219. সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৫০৭ ↩︎
  220. সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩১৩১ ↩︎
  221. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ ↩︎
  222. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ৩১৪৭ ↩︎
  223. সূনান আত তিরমিজী, ইসলামিক সেন্টার, হাদিসঃ ৩০৮৫ ↩︎
  224. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৮ ↩︎
  225. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ৩৩৪২ ↩︎
  226. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৬৫৯৬ ↩︎
  227. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৩৩৪২ ↩︎
  228. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ৩৩৪২ ↩︎
  229. Muhammad ‘Alawi al-Maliki. The Prophet’s Night Journey and Heavenly Ascent., translated by Gibril Fouad Haddad, chapter 2 ↩︎
  230. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৩২৬৫ ↩︎
  231. সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৮৫০ ↩︎
  232. মুখতাসার যাদুল মা’আদ, পৃষ্ঠা ২১৩ ↩︎
  233. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০০৯ ↩︎
  234. মুখতাসার যাদুল মা’আদ, পৃষ্ঠা ২১০ ↩︎
  235. আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, মহিলা সাহাবী, মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০১ ↩︎
  236. Smith, R. (2012). “The Psychology Behind Genetic Attraction.” ↩︎
  237. Turner, A. J., & Zack, S. (1995). “Genetic Sexual Attraction: The Curious Experience of Genetic Relatives Reunited After Adoption.” ↩︎
  238. Bevc, I., & Silverman, I. (1993). “Early Proximity and Sexual Attraction: The Westermarck Effect Reversed.” ↩︎
  239. পালিতপুত্রের স্ত্রীর প্রতি নবীর কামভাব ↩︎
  240. Bittles, A. H. (2012). Consanguinity in Context. Springer ↩︎
  241. Naveed, S., et al. (2020). Consanguinity and Risk of Congenital Anomalies. Journal of Obstetrics and Gynaecology ↩︎
  242. সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩২০৭ ↩︎

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

24 thoughts on “উম্মে হানী- মুহাম্মদের গোপন প্রণয়

  • কিংকর্তব্যবিমূঢ়

    মক্কা বিজয়ের দিন হযরত দুই জায়গায় গোসল করলেন এমনটাই পেলাম।
    ১ম বার: ফাতিমা (রাঃ) কাপড় টেনে রেখেছেন আর হযরত গোসল করতেছেন তখন হানি হযরতের সাথে দেখা করতে গেলো।
    ২য় বার : মক্কা বিজয়ের দিন হানির বাড়িতে গোসল করলেন এবং সংক্ষিপ্ত করে আট রাকাত নামাজ আদায় করলেন।

    একি দিনে দুবার স্নান করার দরকার কি? পরস্পর সাংঘর্ষিক কথা মনে হচ্ছে।

    Reply
  • shihab jahir

    তথ্যবহুল ও শক্তিশালী একটি লেখা। বিশেষ করে শেষের দিকে ‘বোন নাকি কৈশোরের প্রেমিকা’ অংশে মোহাম্মদের জীবনব্যাপী কর্মকান্ডের চিত্রায়ন ও এই ঘটনার সাথে যোগসূত্র স্থাপনের সাইকোলজিক্যাল প্রোফাইলিংটা অসামান্য হয়েছে। ধন্যবাদ ভাই এমন একটা লেখার জন্য।

    Reply
  • পারভিন সুলতানা

    একটা হাদীস আছে মক্কা বিজয়ের দিন। অপর আরেকটি হাদীস আছে মক্কা বিজয়ের বছর।
    অতএব দুটি একই দিন হল কিভাবে? বছরের কোনো একটা দিন ও তো হতে পারে।

    Reply
  • সত্য সন্ধানীদেরকে এই লেখাটি পড়ে নেবারও আহ্বান রইলো।
    “মিরাজের ঘটনায় রাসুল(ﷺ) ও উম্মে হানী(রা.) এর উপর ইসলামবিরোধীদের নোংরা অপবাদের জবাব”

    Reply
    • Amir Hamja

      ভাইজান,,,,আপনার এই পোস্টটা পড়েছি, ভালো লেগেছে আপনি যদি এই ইসলামবিদ্বেষীর মতো করে আরেকটা কাউন্টার পোস্ট বের করতেন তাহলে ভালো হতো।

      Reply
  • Farida Parvin

    উম্মে হানীর স্বামী মক্কা ত্যাগ করেন মক্কা বিজয়ের পরে কিন্তু মেরাজ এর অনেক আগেই সংগঠিত হয়। আর হাদিস গুলোকে অনেকেই মিথ্যা বলেছেন। আর এছাড়াও হাদিসের প্রথম অংশ বিশ্বাস করলেন আর হাদিসের পরের অংশে যে মুজেযার কথা বললেন তা মেনেছেন?

    Reply
  • Amir Hamja

    ভাইজান,,,আপনার এই লেখাটি পড়েছি। খুব ভালো লেগেছে। যদি আসিফের লেখাটার একটা এইরকম করে কাউন্টার বের করতেন তাহলে ভালো হতো।

    Reply
  • MONIR

    Shongshoy.com এ যে সব বিষয়ে article লেখা উচিত:

    ¤মিরাজের অযৌক্তিকতা বিষয়ক
    ¤কোরানের উত্তরাধিকারের ভুল সম্পর্কে এবং ফাজায়েল নীতি বা আউল নীতির অসারতা সম্পর্কে
    ¤আব্দুল্লাহ ইবনে সাদের ইসলাম ত্যাগ এর বিষয়ে
    ¤মুমিনদের তথাকথিত মিথ- “মুহাম্মদকে ব্রিটেনের জাদুঘর Superman উপাধি দিয়েছে” ~ এই বিষয়ে প্রকৃত সত্য সম্পর্কে

    Reply
    • rez

      গঠনমূলক আলোচনা!????বেশ ভাল লাগলো✌

      Reply
  • rez

    গঠনমূলক লেখা! ভাল লাগলো????

    Reply
  • ভাল লাগছেনা

    পুরোটাই ফালতু আলোচনায় ভরপুর। আর এরা বলে গঠনমূলক, অসামান্য।

    Reply
  • সত্যের স্ফুরণ

    outstanding opinion and logic ????

    Reply
  • সুজন দোলই

    আরবী থেকে যখন বাংলায় অনুবাদ করা হয় তখন সব কিছু ঠিক থাকে না। হাদিস এর ইংরেজি কি একটু জানা দরকার। রসূল সদস্য ছিলেন মানুষ এবং আপনি আমিও মানুষ আমাদের মাঝে কিছু পার্থক্য থাকা দরকার, পার্থক্য অবশ্যই আছে। যদি আমি এবং রসূলকে এক মনে করি তাহলে আর আমার কিছু বলার নাই। মহানবী হযরত মোহাম্মদ কে কিছু ক্ষেত্রে অনুকরণ করতে হবে কিছু ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ কে যে কটা বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল আমাদেরকে সেকন্ড বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয় নাই। সুতরাং তাকে নিয়ে সমালোচনা করি।

    Reply
  • Mithu

    মুমিনরা কখনো নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পড়বেনা।

    Reply
  • তানভীর

    মিরাজের আগে যদি নামাজ ফরজ না হয় তাহলে উম্মে হানির ঘরে তারা একসাথে এশার নামাজ কেন পড়ছিল (সেটা তো মিরাজ হওয়ার কিছুক্ষণ আগের ঘটনা)? আর মক্কা বিজয়ের আগে যদি উম্মে হানি মুসলিমই না হয় তাহলে মিরাজের সময় সে নামাজ কেন পড়েছিল?

    Reply
  • Shakhawat Hossain

    ভাই, আপনি যে হাদিসটি উল্লেখ করলেন তার শেষাংশটি কেন বাদ দিলেন ? আপনি এই শেষ অংশটি বাদ দিলেন কেননা সেখানে রাসূল (সা) এর নবুয়তের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।। অনুরোধ করতেছি মুক্তচিন্তার নামে কুচিন্তা বাদ দিন।। সত্যতা যাচাই করে আপনার ব্লগে পোস্ট দিন।। বিভ্রান্ত মস্তিষ্ক নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অধিকার আপনার নেই।।

    Reply
  • Shakhawat Hossain

    আমি অনুরোধ করতেছি “মিরাজের ঘটনায় রাসূল (সাঃ) উম্মে হানি (র) ওপর ইসলাম বিরোধীদের নোংরা অপবাদের জবাব “পোস্টটি পড়ার জন্য।

    Reply
  • Ashik Ahmed

    I confused.

    Reply
  • tarunhabib

    হাদিস থেকে প্রমাণ দিয়ে সুন্দর লিখেছেন।
    আল্লাহতায়ালা আপনাকে দীর্ঘায়ু দান করুক।
    আমিন।

    Reply
  • গোলাম রাব্বি

    ঘটনাগুলোকে সম্পূর্নরুপে বিপরীক করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে. কথাগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন

    Reply
  • unknown person

    মুসলমানরা এসব বিষয় নিয়ে তো লজ্জিত
    তাই তো তারা সরাসরি প্রতিবাদ জানাতে পারে না. ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বা
    তেনা পেঁচিয়ে প্রতিবাদ জানায়.

    Reply
  • আশরাফুল আলম

    ভাই কোনভাবে নিম্নোক্ত লেখাটি পড়ুন সকল সংশয় দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ-
    حول ما روي أن النبي صلى الله عليه وسلم بات في بيت أم هاني ليلة الإسراء والمعراج .
    306287
    تاريخ النشر : 19-06-2019
    المشاهدات : 35199
    الخط
    السؤال
    هل أم هانئ ابنة عم الرسول صلى الله عليه وسلم تعد محرما للنبي صلى الله عليه وسلم ؛ لأنه في ليلة الإسراء والمعراج ذكر أنه أسري به من بيت أم هانئ ؟

    الجواب
    ذات صلة
    الحمد لله.
    أم هانئ بنت أبي طالب رضي الله عنها ، لم تكن من محارم النبي صلى الله عليه وسلم ، فقد كانت متزوجة من هبيرة بن عمرو ، ثم أسلمت ، ولم يسلم زوجها ، وثبت أن النبي صلى الله عليه وسلم خطبها بعد ذلك ، إلا أنها قالت بأنها كبرت ، ولها عيال .
    والحديث أخرجه مسلم في “صحيحه” (201) ، من حديث أَبِي هُرَيْرَةَ، : ” أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، خَطَبَ أُمَّ هَانِئٍ ، بِنْتَ أَبِي طَالِبٍ فَقَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ ، إِنِّي قَدْ كَبِرْتُ ، وَلِي عِيَالٌ ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : نِسَاءُ قُرَيْشٍ خَيْرُ نِسَاءٍ رَكِبْنَ الْإِبِلَ ، أَحْنَاهُ عَلَى وَلَدٍ فِي صِغَرِهِ ، وَأَرْعَاهُ عَلَى زَوْجٍ فِي ذَاتِ يَدِهِ .
    وينظر للفائدة : جواب السؤال رقم : (286601) .
    وأما ما استشكله السائل الكريم من كون النبي صلى الله عليه وسلم كان ليلة الإسراء نائما في بيتها : فغير صحيح ، ولم يثبت أن النبي صلى الله عليه وسلم كان نائما ليلة الإسراء في بيت أم هانئ ، وإنما كان في بيته صلى الله عليه وسلم .
    ويدل على ذلك الحديث الذي أخرجه البخاري في “صحيحه” (349) ، ومسلم في “صحيحه” (163) ، من حديث أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ: ” كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فُرِجَ عَنْ سَقْفِ بَيْتِي وَأَنَا بِمَكَّةَ ، فَنَزَلَ جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَفَرَجَ صَدْرِي ، ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ، ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا ، فَأَفْرَغَهُ فِي صَدْرِي ، ثُمَّ أَطْبَقَهُ ، ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي ، فَعَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا .. ثم ساق الحديث .
    أما الروايات التي فيها أنه كان صلى الله عليه وسلم نائما في بيت أم هانئ ليلة الإسراء والمعراج فإنها لا تثبت ، وبيان ذلك كما يلي :
    الرواية الأولى :
    أخرجها ابن أبي عاصم في “الآحاد والمثاني” (39) ، والطبراني في “المعجم الكبير” (24/432) ، من طريق عَبْدِ الْأَعْلَى بْنِ أَبِي الْمُسَاوِرِ، قَالَ: سَمِعْتُ عِكْرِمَةَ ، يَقُولُ: ” أَخْبَرَتْنِي أُمُّ هَانِئٍ بِنْتُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، قَالَتْ: ” بَاتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدِي لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ ، فَذَكَرَ أَمْرَهُ وَكَيْفَ أُسْرِيَ بِهِ قَالَ: وَإِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَخْرُجَ إِلَى قُرَيْشٍ فَأُخْبِرَهُمْ فَأَخْبَرَهُمْ فَكَذَّبُوهُ ، وَصَدَّقَهُ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، فَسُمِّيَ مِنْ يَوْمَئِذٍ الصِّدِّيقَ “.
    وإسناده تالف ، فيه عبد الأعلى بن أبي المساور .
    قال الذهبي في “تاريخ الإسلام” (4/428) :” ضَعَّفَهُ الْكُلُّ ، قَالَ ابْنُ مَعِينٍ: لَيْسَ بِشَيْءٍ ، وَقَالَ الْبُخَارِيُّ: مُنْكَرُ الْحَدِيثِ ، وَقَالَ النَّسَائِيُّ وَغَيْرُهُ: مَتْرُوكٌ “. انتهى
    ولذا ضعف الهيثمي هذه الرواية في “مجمع الزوائد” (1/450) ، فقال :” رواه الطبراني في الكبير ، وفيه عبد الأعلى بن أبي المساور ، متروك كذاب “. انتهى
    الرواية الثانية :
    أخرجها الطبري في “تفسيره” (14/414) ، من طريق محمد بن إسحاق ، قَالَ: حدثني مُحَمَّدُ بْنُ السَّائِبِ ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ بَاذَامَ ، عَنْ أُمِّ هَانِئِ بِنْتِ أَبِي طَالِبٍ ، فِي مَسْرَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهَا كَانَتْ تَقُولُ: ” مَا أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا وَهُوَ فِي بَيْتِي نَائِمٌ عِنْدِي تِلْكَ اللَّيْلَةَ ، فَصَلَّى الْعِشَاءَ الْآخِرَةَ ، ثُمَّ نَامَ وَنِمْنَا ، فَلَمَّا كَانَ قُبَيْلَ الْفَجْرِ أَهَبَّنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَلَمَّا صَلَّى الصُّبْحَ وَصَلَّيْنَا مَعَهُ قَالَ: يَا أُمَّ هَانِئٍ لَقَدْ صَلَّيْتُ مَعَكُمُ الْعِشَاءَ الْآخِرَةَ كَمَا رَأَيْتِ بِهَذَا الْوَادِي ، ثُمَّ جِئْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ فَصَلَّيْتُ فِيهِ ، ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلَاةَ الْغَدَاةِ مَعَكُمُ الْآنَ كَمَا تَرَيْنَ “.
    وإسناده تالف أيضا ، فيه محمد بن السائب الكلبي ، كذاب .
    قال ابن أبي حاتم في “الجرح والتعديل” (7/271) :” سألت أبى عن محمد بن السائب الكلبى فقال : الناس مجتمعون على ترك حديثه ، لا يشتغل به ، هو ذاهب الحديث ” انتهى .
    ثم هذه الروايات مخالفة لما رُوي عن أم هانئ أيضا ، أنها ذكرت أن النبي صلى الله عليه وسلم أسري به من المسجد الحرام .
    وهذه الرواية أخرجها أبو يعلى في “معجمه” (10) ، من طريق مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْوَسَاوِسِيُّ ، قَالَ: حَدَّثَنَا ضَمْرَةُ بْنُ رَبِيعَةَ ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي عَمْرٍو السَّيْبَانِيِّ ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ مَوْلَى أُمِّ هَانِئٍ ، عَنْ أُمِّ هَانِئٍ ، قَالَتْ: ” دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِغَلَسٍ ، وَأَنَا عَلَى فِرَاشِي ، فَقَالَ: شَعَرْتُ أَنِّي نِمْتُ اللَّيْلَةَ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ، فَأَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ ، فَذَهَبَ بِي إِلَى بَابِ الْمَسْجِدِ… ” ثم ساق الحديث .
    وإسنادها ضعيف أيضا ، فيه أبو صالح مولى أم هانئ ، ومحمد بن إسماعيل الوساوسي ، وكلاهما ضعيف .
    إلا أن هذا الطريق أمثل من سابقيه ، ولذا قال الحافظ ابن حجر في “الإصابة” (8/332) :” وهذا أصحّ من رواية الكلبيّ ، فإنّ في روايته من المنكر: أنه صلّى العشاء الآخرة والصبح معهم ، وإنما فرضت الصّلاة ليلة المعراج ، وكذا نومه الليلة في بيت أم هانئ ، وإنما نام في المسجد ” انتهى.
    وينظر للفائدة : جواب السؤال رقم : (45696) .
    والله أعلم .

    Reply
  • md noyan miah

    যারা সারাদিন পর্ণ ভিডিও দেখে তাদের মাথায় কাউকে নিয়ে পজেটিভ চিন্তা আসে না এটাই সোজা বাংলা কথা

    Reply
  • তরনানিরহেডা

    ধন লেখসো ভায়া সেই হইসে🤡🤡

    Reply

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।