উম্মে হানী- মুহাম্মদের গোপন প্রণয়
সূচিপত্র
- 1 ভূমিকা
- 2 উম্মে হানী কে ছিলেন?
- 3 গায়রে মাহরাম কি?
- 4 বাল্যকালের প্রেম
- 5 আবু তালিব ও খাদিজার মৃত্যু
- 6 মেরাজের রাতের ঘটনা
- 7 নবী মুহাম্মদের শরীরের বর্ণনা
- 8 মুহাম্মদের ভয়ে স্বামীর পলায়ন
- 9 উম্মে হানীর অনুরোধ রক্ষা
- 10 বার্ধক্যেও সেই প্রেম অটুট ছিল
- 11 নবী মুহাম্মদের সাথে মেলামেশা
- 12 বোন নাকি কৈশোরের প্রেমিকা?
- 13 উপসংহার
ভূমিকা
নবী মুহাম্মদ যখন ইসরা বা মেরাজে যান, অনেক ইসলামিক রেফারেন্সেই দেখা যায়, উনি সেই রাতে অবস্থান করছিলেন উম্মে হানী নামক এক নারীর বাসায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কে ছিলেন এই নারী? এবং নবী মুহাম্মদই বা কেন এই নারীর গৃহে সেই রাতে অবস্থা করছিলেন? সেই রাতে নবী মুহাম্মদ এবং উম্মে হানীর সাথে আর কে কে ছিল? নবী মুহাম্মদের সাথে তার সম্পর্কই বা কী ছিল? ইসলামের কঠোর এবং কঠিন বিধান অনুসারে, স্বামী বা আপন ভাই ছাড়া আর কারো সাথে মেলামেশা, দেখা সাক্ষাত, ইত্যাদি একজন সাচ্চা মুমিনের জন্য সম্পূর্ণ গর্হিত কাজ। যাদের সাথে বিবাহ বৈধ, তাদের সাথে মেলামেশা, দেখাসাক্ষাৎ এমনকি কথাবার্তাতেও রয়েছে নানাবিধ নিষেধাজ্ঞা। অথচ, ইসলামের রেফারেন্সেই দেখা যায়, বিবাহ বৈধ এমন নারীর বাড়িতে নবী রীতিমত রাত্রিযাপন করতেন। মুসলিমদের পক্ষ থেকে অনেকে যুক্তি দেখাবেন, তখনো পর্দার বিধান নাজিল হয় নি, তাই নবী এমনটি করেছেন। কিন্তু পর্দার বিধান নাজিলের পরেও নবী একইভাবে উম্মে হানীর সাথে দেখাসাক্ষাৎ করেছেন। মেলামেশা খানাপিনা সবই করেছেন। আবার, ইসলামের প্রাথমিক সময়েও কোন বিষয়ের বিধান নাজিলের আগেও নবী কোন হারাম কাজ করেছেন, অনেক ইসলামিক স্কলারই তা স্বীকার করেন না। যেমন, অধিকাংশ ইসলামিক স্কলার মনে করেন, কোরআন নাজিলের পূর্বেও নবী কখনো জিনা করেন নি, মদ খান নি, মূর্তি পুজাও করেন নি। তাহলে ধরে নিতে হচ্ছে, কোরআনে পর্দার বিধান নাজিলের আগেও তিনি বিবাহ বৈধ এমন নারীর সাথে মেলামেশাও করেন নি। তাহলে উম্মে হানীর সাথে তার সম্পর্ক কী ছিল, সেই প্রশ্নের জবাবে অনেক ইসলামিক স্কলারই বলে থাকেন, উম্মে হানীকে নবী নিজের বোনের মত মনে করতেন। নাস্তিকরা নাকি বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ, যারা ভাই বোনের এই পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে কুৎসা রটনা করে!
কিন্তু আসলেই কী তার সাথে নবীর ভাইবোনের মত সম্পর্ক ছিল? সেই বিষয়েই আজকের আলোচনা। পাঠকগণ ইসলামিক রেফারেন্সগুলো পর্যালোচনা করবেন, এবং নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন, উম্মে হানীর সাথে নবী মুহাম্মদের সম্পর্ক ভাইবোনের পবিত্র সম্পর্ক ছিল, নাকি পুরোটাই শরৎচন্দ্রের দেবদাসের মত এক অতৃপ্ত প্রেমের গল্প ছিল।
উম্মে হানী কে ছিলেন?
উম্মে হানীর আসল নাম ছিলো ফাখিতা বা ফাকিতাহ্ মতান্তরে হিন্দ। তিনি ছিলেন মুহাম্মদের আপন চাচা আবূ তালিবের কন্যা। তার পিতার নাম আবূ তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিব ও মাতার নাম ছিলো ফাতিমা বিনতে আসাদ। তিনি জাফর, আকিল ও ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর বোন ছিলেন। মুহাম্মদের পিতামাতার মৃত্যুর পরে সে প্রথমে দাদা আবদুল মুত্তালিব এবং পরে চাচা আবূ তালিবের কাছে আশ্রিত হিসেবে থাকেন। চাচাতো ভাই-বোনদের সাথে ছোটবেলা থেকেই তিনি একসাথে বড় হয়েছেন। উল্লেখ্য, সেই সময়ে সেই অঞ্চলে চাচাতো ভাইবোনদের মধ্যে বিবাহ খুব একটি খারাপ বিষয় বলে মনে করা হতো না। একে অজাচার হিসেবেও চিহ্নিত করা হতো না। কোরআনেও চাচাতো ভাইবোন বা ফার্স্ট ব্লাড কাজিনদের মধ্যে বিবাহ এবং যৌন সম্পর্কের বিষয়টিকে হালাল করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে যা ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করা হয় এবং যেই কাজটি নিরুৎসাহিত করা হয়।
গায়রে মাহরাম কি?
যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য শরীয়তে জায়েজ নয় এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে। বস্তুতঃ গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগ হয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারী পূর্ণ পর্দা করে সামনে যাবে। নবী মুহাম্মদ ছিলেন উম্মে হানীর গায়রে মাহরাম, অর্থাৎ তার সাথে বিবাহ বৈধ। মাহরাম বাদে সমস্ত পুরুষই মুমিনা নারীর জন্য গায়রে মাহরাম। এমনকি নিজ পরিবারের চাচাতো-খালাতো-মামাতো-ফুপাতো ভাই, দুলাভাই, দেবর, ভাসুর, চাচা-মামা-খালু-ফুপা-শ্বশুর এরা সবাই গায়রে মাহরাম। এদের সামনে ইসলামের রীতি অনুসারে যাওয়া, মেলামেশা, দেখাসাক্ষাৎ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বাল্যকালের প্রেম
ইসলামের ইতিহাসে উম্মে হানীর শৈশব-কৈশাের জীবনের কথা তেমন কিছু জানা যায় না। তবে বিয়ে সম্পর্কে দু’একটি বর্ণনা দেখা যায়। যেমন মুহাম্মদের নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে মুহাম্মদ তার চাচা আবূ তালিবের নিকট উম্মু হানীর বিয়ের পয়গাম পাঠান। একই সঙ্গে হুমায়রা ইবনে আবি ওয়াহাব বা হুবায়রা ইবন ‘আমর ইবন ‘আয়িয আল-মাখযুমী (Hubayra ibn Abi Wahb)ও পাঠান। চাচা হুবায়রার প্রস্তাব গ্রহণ করে উম্মু হানীকে তার সাথে বিয়ে দেন। মুহাম্মদ সেই সময়ে অত্যন্ত দুঃখিত হন এবং দুঃখ নিয়ে বলেন, চাচা! আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হুবায়রার সাথে তার বিয়ে দিলেন? চাচা বললেন : ভাতিজা! আমরা তার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করেছি। সম্মানীয়দের সমকক্ষ সম্মানীয়রাই হয়ে থাকে।
এর থেকে বোঝা যায়, নবী মুহাম্মদকে তার চাচা আবূ তালিব সম্মানীয় এবং তাদের সমকক্ষ মনে করেন নি। শুধুমাত্র পিতামাতাহীন এতিম এবং সহায় সম্বলহীন দরিদ্র হওয়ার অপরাধে তার নবী মুহাম্মদের মনের এই সুপ্ত কামনা, তার বাল্যকালের প্রেম পূর্ণতা পায় নি। পরবর্তীতে অর্থবিত্তহীন মুহাম্মদ রাগে দুঃখে কষ্টে বেশি বয়সী এবং ধনকুবের হযরত খাদিজাকে তিনি বিয়ে করেন কিনা, তা জানা যায় না। তবে এমনটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এই বিবরণটুকু পড়ে নিন আসহাবে রাসুলের জীবনকথা গ্রন্থ থেকে [1]

কিন্তু উম্মে হানীর সাথে বিয়ে না হলেও, একজন কী আরেকজনার থেকে দূরে থাকতেন? রাতের বেলা কান পেতে একজন কী আরেকজনার কণ্ঠ শুনতেন? একটি হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ রাতের বেলা কিরাআত পাঠ করতেন, উম্মে হানী তার বাসার ছাদ থেকে তা কান পেতে শুনতেন। অর্থাৎ, শারীরিকভাবে দূরে থাকলেও, মন থেকে তারা দূরে ছিলেন না। [2]

আবু তালিব ও খাদিজার মৃত্যু
প্রায় সকল ইসলামিক তথ্য সূত্র থেকেই জানা যায়, নবী মুহাম্মদের ব্যবসায়ী ধনকুবের স্ত্রী বিবি খাদিজা, যার বাসাতে নবী ঘরজামাই হিসেবে ছিলেন, যাকে বিবাহ করে তিনি ধনী হয়েছিলেন, তিনি ৬১৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। প্রায় কাছাকাছি সময়ে আবু তালিবেরও মৃত্যু ঘটে। অর্থাৎ এই কথা খুব জোর দিয়েই বলা যায়, মিরাজের সময়ে নবী মুহাম্মদের স্ত্রী খাদিজা জীবিত ছিলেন না। এই বিষয়ে সীরাতুল মুস্তফা গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মেরাজের ঘটনার আগেই এদের মৃত্যু ঘটে [3] ।


মেরাজের রাতের ঘটনা
খুব ভালভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, মেরাজের ঘটনার সময়ে নবী মুহাম্মদের স্ত্রী খাদিজা আর জীবিত নেই। খাজিদার মৃত্যুতে নিশ্চিতভাবেই নবী দুঃখিত ছিলেন। ঐদিকে উম্মে হানীর পিতা আবু তালিবেরও সেই কাছাকাছি সময়ে মৃত্যু ঘটে। এরকম সময়ে নবীর মনে পুরনো প্রেম জেগে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু বলে আমার মনে হয় না। সব মানুষই দুঃখের সময়, শোকের সময় প্রিয় মানুষদের সান্নিধ্য চায়। এটিই মানুষের স্বভাব।
অনেক ইসলামিক এপোলোজিস্টই দাবী করেন, মেরাজ বা ইসরার রাতে উম্মে হানীর সাথে উম্মে হানীর স্বামী হুবায়রা ইবন ‘আমর ইবন ‘আয়িয আল-মাখযুমীও ছিলেন। এর কারণ হিসেবে উনারা বলেন, বিবরণটিতে উম্মে হানীর কাছ থেকে “আমরা” শব্দটি এসেছে, অর্থাৎ সেই রাতে উম্মে হানীর স্বামী বাইরে ছিলে না। উম্মে হানী, উম্মে হানীর স্বামী এবং নবী মুহাম্মদ, এরা সবাই মিলে নাকি সেই রাতে নামাজ আদায় করছিলেন! অথচ, আরেকটি বিবরণ থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদের ভয়ে উম্মে হানীর স্বামী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, যেটি পরে আলোচনা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, যেই লোক নবী মুহাম্মদকে বাসায় ডেকে রাতে বউ সহ একত্রে নামাজ পড়তেন, সেই লোক মক্কা বিজয়ের পরে নিশ্চয়ই নবী মুহাম্মদের আতঙ্কে দেশ ছেড়ে পালাবেন না, তাই না? তাছাড়া, আরো জরুরি বিষয় হচ্ছে, বেশিরভাগ সূত্র থেকে জানা যায়, উম্মে হানী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন মক্কা বিজয়ের পরে [4] । তাহলে হিজরতের পূর্বে মুহাম্মদ মক্কায় থাকাকালীন সময়ই উনারা একসাথে কেন নামাজ আদায় করতেন? সেই রাতে তো উম্মে হানী মুসলিমই ছিলেন না, তাহলে রাতের বেলা তারা নামাজ আদায় না করে থাকলে কী করতেন? হিসেব কিছুতেই মিলছে না কিন্তু। আসুন বর্ণনাগুলো পড়ি [5] [6] –

মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বলেন, মুহাম্মদ ইবন সাইব কালবী…. উম্মে হানী বিনতে আবু তালিব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-এর মিরাজ সম্পর্কে বলেন, যেই রাত্রে রাসুলুল্লাহ(ﷺ)-এর মিরাজ সংঘটিত হয় সেই রাতে তিনি আমার বাড়ীতে শায়িত ছিলেন। ঈশার সলাত শেষে তিনি ঘুমিয়ে যান। আমরাও ঘুমিয়ে যাই। ফজরের সামান্য আগে তিনি আমাদেরকে জাগালেন। তিনি সালাত পড়লেন এবং আমরাও তাঁর সাথে (ফজরের) সালাত পড়লাম তখন তিনি বললেনঃ হে উম্মে হানী, তোমরা তো দেখেছো আমি তোমাদের সাথে ঈশার সালাত পড়ে তোমাদের এখানেই শুয়ে পড়ি। কিন্তু এরপরে আমি বাইতুল মুকাদ্দাস গমন করি এবং সেখানে সলাত আদায় করি। এখন ফজরের সলাত তোমাদের সাথে পড়লাম যা তোমরা দেখলে। উম্মে হানী বলেন, এই বলে তিনি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। আমি তাঁর চাদরের কিনারা ধরে ফেললাম। ফলে তাঁর পেট থেকে কাপড় সরে গেল। তা দেখতে ভাঁজ করা কিবতী বস্ত্রের মত স্বচ্ছ ও মসৃণ। আমি বললাম : হে আল্লাহর নবী! আপনি এ কথা লোকদের কাছে প্রকাশ করবেন না। অন্যথায় তারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলবে এবং আপনাকে কষ্ট দেবে। কিন্তু তিনি বললেন : আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তাদের কাছে এ ঘটনা ব্যক্ত করব। তখন আমি আমার এক হাবশী দাসীকে বললাম ; বসে আছো কেন, জলদি, রাসূলুল্লাহ্(ﷺ)-এর সঙ্গে যাও, তিনি লোকদের কি বলেন তা শোনো, আর দেখো তারা কী মন্তব্য করে।


এবারে আসুন একটি হাদিস পড়ি, যেখানে বলা হচ্ছে, কোন পুরুষ কোন প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর কাছে কিছুতেই রাত যাপন করবে না; যদি না সে তার স্বামী হয় অথবা মুহরিম হয় [7],
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪০/ সালাম
পরিচ্ছেদঃ ৮. নির্জনে অনাত্মীয়া স্ত্রীলোকের কাছে অবস্থান করা এবং তার কাছে প্রবেশ করা হারাম
৫৪৮৬। ইয়াহইয়াহ ইবনু ইয়াহইয়া, আলী ইবনু হুজর, ইবনু সাব্বাহ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! কোন পুরুষ কোন প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর কাছে কিছুতেই রাত যাপন করবে না; তবে যদি সে তার স্বামী হয় অথবা মাহরাম হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
নবী মুহাম্মদের শরীরের বর্ণনা
ইসরার রাতে নবী মুহাম্মদ চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে, উম্মে হানী তার চাদরের এক কোনা ধরে টেনে ফেলেন। ফলে নবীর পেটের একাংশ বেরিয়ে যায়। উম্মে হানী সেই পেটের সৌন্দর্য্যের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, মুহাম্মদের পেট মিসরীয় কিবতী ভাঁজ করা কাতান বস্ত্রের মত ছিল। নবীর সাহাবী, হাদিস বর্ণনাকারী এবং একজন সৎ চরিত্রের মুমিনা নারীর জন্য গায়রে মাহরাম একজন বেগানা একজন পুরুষের শরীরের অংশ দেখে ফেলা, তা দেখে মুগ্ধ হওয়া এবং তার সৌন্দর্য্য বর্ণনা করা কতটা ইসলামিক, তা ইসলামের স্কলাররাই ভাল বলতে পারবেন। [8] [6]
নবীর নগ্ন পেটের এই সৌন্দর্যের বর্ণনা তার কোনো স্ত্রীর কাছেও পাওয়া যায়না। কেবল উম্মে হানীই এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তিনি একাধিকবার এই পেট দেখেছেন, এবং সেই সাথে তার হাসিরও প্রশংসা করেছেন। উম্মে হানী বলতেন, “আমি আল্লাহর রাসুলের চাইতে সুন্দর হাসি আর কারও মুখে দেখি নি। আর আমি যখনই আল্লাহর রাসুলের পেট দেখতাম তখনই আমার মনে পড়ে যেত। আমি মক্কা বিজয়ের দিনে উনার মাথায় চারটি বেণী বাঁধা দেখেছি। [9]
এই বেণীর বর্ণনা সহি হাদিসেও এসেছে।
সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
অধ্যায়ঃ ৩. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চুল
পরিচ্ছেদঃ তিনি চুলের মধ্যে বেণী বাঁধতেন
২৬। উম্মে হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি চুলের চারটি বেণী বাঁধা অবস্থায় দেখেছি।
(মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭৪৩০; মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/২০৪৮৩।)
হাদিসের মানঃ সহিহ
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)
মুহাম্মদের ভয়ে স্বামীর পলায়ন
নবী মুহাম্মদের ভয়ে উম্মে হানীর স্বামী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি মক্কা থেকে পালিয়ে নাজরানের দিকে চলে যান। স্ত্রী উম্মে হানীর ইসলাম গ্রহণের খবর শুনে তাঁকে তিরস্কার করে একটি কবিতা তিনি রচনা করেন। কবিতাটির কিছু অংশ সীরাতের বিভিন্ন গ্রন্থে দেখা যায়। নিম্নের চরণগুলােতে মক্কা থেকে পালিয়ে যাবার কারণ স্ত্রীর নিকট ব্যাখ্যা করেছেনঃ [10]
“তােমার জীবনের শপথ! আমি ভীরুতার কারণে ও হত্যার ভয়ে মুহাম্মাদ ও তার সঙ্গীদেরকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে আসিনি। তবে আমি নিজের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছি, তাতে বুঝেছি এ যুদ্ধে আমার তীর ও তরবারি যথেষ্ট নয়। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছি। কিন্তু যখন আমার অবস্থান সংকীর্ণ হওয়ার ভয় করেছি তখন ফিরে এসেছি যেমন বাঘ তার শাবকের কাছে ফিরে আসে।”


অথচ, উম্মে হানীর এক কথায় নবী মুহাম্মদ মক্কা বিজয়ের দিনে কয়েকজন মুশরিককে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, যাদেরকে আলী হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। এই কথা নিশ্চতভাবেই বলা যায়, উম্মে হানীর স্বামীকেও নবী মুহাম্মদ ক্ষমা করতেন এবং নিরাপত্তাই দিতেন। তারপরেও কেন উম্মে হানীর স্বামীর পালিয়ে জীবন রক্ষা করতে হলো, তা এক বিষ্ময়কর ঘটনা। উপরের আসহাবে রাসুলের জীবনকথা বইটির পাতা থেকেই যা স্পষ্ট।
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৯/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৬৭. নারীর দেয়া নিরাপত্তা সম্পর্কে
২৭৬৩। উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি মক্কা বিজয়ের দিন মুশরিকদের এক লোককে আশ্রয় দেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁকে বিষয়টি অবহিত করায় তিনি বললেনঃ তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছো ‘আমরাও তাকে আশ্রয় দিলাম এবং তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছো, ‘আমরাও তাকে নিরাপত্তা দিলাম।(1)
(1). সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)
কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। কে ছিল সেই কয়েকজন মুশরিক, যাদেরকে উম্মে হানী আশ্রয় দিয়েছিলেন? তারা ছিলেন উম্মে হানীর স্বামী হুবায়রা ইবন ‘আমর ইবন ‘আয়িয আল-মাখযুমী-এর দুইজন ভাই, অর্থাৎ উম্মে হানীর দেবর। তাদের নাম ছিল আবদুল্লাহ বিন আবি রাবিয়া আল-মাখযুমি ও আল হারিথ বিন হিশাম। প্রসিদ্ধ ইসলামিক ইতিহাসবিদ মুহাম্মদ বিন আমর আল ওয়াকিদীর বর্ণনায় সেইদিনের ঘটনা বিস্তারিত জানা যায়। তবে ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইবনে হাজার আসকালানি তাকে অসীম জ্ঞানের অধিকারী বললেও তার নানা সমালোচনা করেছেন, সেই কারণে আল ওয়াকিদীর বর্ণনা এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে না। আগ্রহী পাঠকগণ The Life of Muhammad: Al-Waqidi’s Kitab al-Maghazi বইটি নিজ উদ্যোগে কিনে পড়তে পারেন।
উম্মে হানীর অনুরোধ রক্ষা
উম্মে হানীর অনুরোধে কয়েকজন মুশরিককে হত্যা করতে বাধা দেন মুহাম্মদ, যেখানে হযরত আলী তাদের হত্যা করার সংকল্প করে ফেলেছিল। [11] [12]
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ৮/ সালাত
পরিচ্ছেদঃ ২৪৫। এক কাপড় গায়ে জড়িয়ে সালাত আদায় করা করা।
৩৫০। ইসমা’ঈল ইবনু আবূ উওয়ায়স (রহঃ) …. উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব (রাঃ) বলেনঃ আমি বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে রখেছেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ কে? আমি উত্তর দিলামঃ আমি উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব। তিনি বললেনঃ মারহাবা, হে উম্মে হানী! গোসল করার পরে তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত শেষ করলে তাঁকে আমি বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সহোদর ভাই (‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)) এক লোককে হত্যা করতে চায়, অথচ আমি সে লোকটিকে আশ্রয় দিয়েছি। সে লোকটি হুবায়রার ছেলে অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে উম্মে হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাঁকে আশ্রয় দিলাম। উম্মে হানী (রাঃ) বলেনঃ তখন ছিল চাশতের সময়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৯৬৯. মহিলাদের পক্ষ থেকে কাউকে নিরাপত্তা ও আশ্রয় প্রদান
২৯৪৭। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … উম্মে হানী বিনতে আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তখন তাঁকে এ অবস্থায় পেলাম যে, তিনি গোসল করছিলেন এবং তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, ইনি কে? আমি বললাম, আমি উম্মে হানী বিনতে আবূ তালিব। তখন তিনি বললেন, মারহাবা হে উম্মে হানী! যখন তিনি গোসল থেকে ফারেগ হলেন, একখানি কাপড় শরীরে জড়িয়ে আট রাকাআত সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়িয়ে আদায় করলেন। তারপর আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সহোদর ভাই আলী (রাঃ) হুবাইরার অমুক পুত্রকে হত্যা করার সংকল্পে করছে, আর আমি তাকে আশ্রয় দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাকে আশ্রয় দিয়েছি। উম্মে হানী (রাঃ) বলেন, তা চাশতের সময় ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)
বার্ধক্যেও সেই প্রেম অটুট ছিল
শুধু যে বাল্যকালেই নবী মুহাম্মদ উম্মে হানীকে ভালবাসতেন তাই নয়, বার্ধক্যেও সেই প্রেম অটুট ছিল। বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও নবী মুহাম্মদ তাকে বিয়ের আবারো প্রস্তাব দেন। সেই সময়ে মুহাম্মদ বিপুল অর্থ সম্পদ এবং প্রতিপত্তির মালিক। তার রয়েছে অনেকগুলো স্ত্রী এবং দাসীদের হেরেম। কিন্তু সেই সময়েও উম্মে হানী সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৪৫। সহাবা (রাযিঃ)-গণের ফাযীলাত (মর্যাদা)
পরিচ্ছেদঃ ৪৯. কুরায়শ নারীদের ফাযীলাত
৬৩৫৩-(…/…) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ ও ‘আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালিবের কন্যা উম্মু হানী (রাযিঃ) এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো বার্ধক্যে পৌছে গেছি এবং আমার সন্তানাদিও রয়েছে। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ উটে আরোহণকারিণীদের মধ্যে (তুমি) সর্বোত্তম নারী। তারপর মা’মার (রাবী) ইউনুস বর্ণিত হাদীসের হুবহু উল্লেখ করেন। কিন্তু তার বর্ণনায় এতটুকু উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেন, অর্থাৎ “তারা শৈশবে সন্তানের প্রতি খুবই স্নেহশীল ও যত্নশীল”। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬২২৯, ইসলামিক সেন্টার ৬২৭৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৪৬/ সাহাবী (রাঃ) গণের ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ৪৯. কুরায়শী মহিলাদের ফযীলত
৬২২৯। মুহাম্মাদ ইবনু রাফি ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালিবের কন্যা উম্মে হানীকে বিবাহের পয়গাম পাঠালেন। তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তো বার্ধক্যে উপনীত হয়েছি এবং আমার সন্তান সন্ততি আছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সর্বাপেক্ষা উত্তম নারী। যারা উটে আরোহণ করে ……। এরপর মা’মার ইউনূস বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তরে তার বর্ণনায় এতটুকু পার্থক্য যে, তিনি বলেন,أَحْنَاهُ عَلَى وَلَدٍ فِي صِغَرِهِ অর্থাৎ “তারা শৈশবে সন্তানের প্রতি মেহেরবান ও যত্নশীল হয়ে থাকেন।”
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
হাদিসটিতে লক্ষ্য করুন, নবী মুহাম্মদ বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার সাথে উটে আরোহণকারী নারী হিসেবে উম্মে হানীকে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, উটে আরোহণকারী নারীকে বিবাহের জন্য উত্তম নারী বলে নবীর কেন মনে হলো? উটে চড়া মেয়ে বিবাহ করলে কী কী সুবিধা পাওয়া যায়? আসুন প্রাসঙ্গিকভাবে উট বা ঘোড়া বা মহিষের মত প্রাণীর ওপর চড়া একজন নারীর ছবি দেখে নিই,

তিরমিযী শরীফেও এই বিবাহের প্রস্তাবের হাদিসটি পাওয়া যায় [13] –

এমনকি সূরা আহযাবের ৫০ নম্বর আয়াতটি যে সকল নারীদের জন্য অবতীর্ণ হয়েছিল উম্মে হানী ছিলেন তাদের একজন। তিনি হিজরতকারীদের অন্তর্ভুক্ত চাচাতো বোন না হলেও যদি রাজী হতেন নিজেকে সমর্পণ বা হেবা বা ন্যস্ত করতে তাহলেই হয়ত এই প্রেম পূর্ণতা পেয়ে যেত। আমরা সেটি জানতে পারি তাফসীর থেকে। [14]

নবী মুহাম্মদের সাথে মেলামেশা
সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মাঝেমাঝেই উম্মে হানীর বাড়িতে যেতেন। দেখাসাক্ষাৎ, কথাবার্তা বলতেন, খানাপিনা করতেন। [15]
সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ২৮/ খাদ্য সম্পর্কিত
পরিচ্ছেদঃ সিরকা।
১৮৪৮। আবূ কুরায়ব (রহঃ) … উম্মে হানী বিনত আবূ তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমার কাছে এলেন এবং বললেন, তোমাদের কাছে কিছু আছে কি? আমি বললাম, শুকনো রুটির কয়েকটি টুকরা ও সিরকা ছাড়া আর কিছুই নেই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা-ই নিয়ে আস, যে বাড়িতে সিরকা আছে যে বাড়িতে সালনের কোন অভাব আছে বলে বলা যায় না। হাসান, সহীহাহ ২২২০, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৮৪১ (আল মাদানী প্রকাশনী)
এ হাদীসটি হাসান; এ সূত্রে গারীব। উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর রিওয়ায়াত হিসাবে এ সূত্র ছাড়া এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই। উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা আলী (রাঃ)-এর অনেক দিন পর ইন্তিকাল করেন।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)
আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, একই পাত্র থেকে নবী মুহাম্মদ এবং উম্মে হানী পানীয় পান করতেন [16] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৮/ সওম (রোযা)
পরিচ্ছেদঃ ৭৩. এ ব্যাপারে অনুমতি প্রসঙ্গে
২৪৫৬। উম্মু হানী (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন ফাতিমাহ (রাযি.) এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাম পাশে বসলেন আর উম্মু হানী (রাযি.) বসলেন তাঁর ডান পাশে। বর্ণনাকারী বলেন, এক দাসী এক পাত্র পানীয় এনে তাঁকে দিলে তিনি তা থেকে কিছু পান করার পর উম্মু হানীর দিকে পাত্রটি এগিয়ে দিলেন এবং তিনি তা থেকে পান করলেন। উম্মু হানী (রাযি.) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে এখন ইফতার করলাম, আমি তো সওম রেখেছিলাম! তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি এগুলো কাযা করতে চাও? তিনি বললেন, না। তিনি বললেনঃ যদি তা নফল (সওম) হয় তাহলে কোনো ক্ষতি নেই।(1)
সহীহ।
(1). তিরমিযী, বায়হাক্বী, দারিমী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)
আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, একই পাত্র থেকে থেকে প্রথমে মুহাম্মদ, এরপরে উম্মে হানী শরবত পান করতেন [17] –


আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, মক্কা বিজয়ের দিনে মুহাম্মদ এবং উম্মে হানী পাশাপাশি বসে পানীয় পান করেছিলেন। অর্থাৎ, ততদিনে পর্দার বিধান নাজিল হয়ে গেছে। পর্দার বিধান নাজিলের পরেও বিবাহ বৈধ এমন নারীর সাথে মুহাম্মদের পাশাপাশি বসে পানীয় পান করা কতটা ইসলাম সম্মত, তা ইসলামের আলেমগণই ভাল বলতে পারবেন [18] –
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৮/ সওম
পরিচ্ছেদঃ ২৬৩. রোযার জন্য নিয়্যাত না করার অনুমতি।
২৪৪৮. উসমান ইবন আবূ শায়বা …. উম্মে হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (রাবী) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন বিজয়ের পর ফাতিমা (রাঃ) আগমন করেন। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বামদিকে উপবেশন করেন এবং উম্মে হানী (রাঃ) ডানদিকে। তিনি (রাবী) বলেন, এ সময় জনৈক দাসী একটি পাত্রে কিছু পানীয় দ্রব্য এনে পেশ করলে তিনি তা পান করেন। এরপর তিনি এর অবশিষ্টাংশ উম্মে হানীকে পান করতে দেন। তিনি তা পান করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তো ইফতার করলাম, কিন্তু আমি যে রোযা ছিলাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি কোন কাযা রোযা আদায় করছিলে? তিনি বলেন, না। তিনি বলেন, যদি তা নফল রোযা হয়, তবে এতে তোমার কোন ক্ষতি হবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ)
আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, মক্কা বিজয়ের দিনে যেন অনেক দিনের প্রতীক্ষার শেষে উম্মে হানীর বাসায় যান নবী মুহাম্মদ। গিয়ে গোছল করেন নবী মুহাম্মদ। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সময়ে উম্মে হানীর স্বামী কোথায় ছিল? তিনি তো নবী মুহাম্মদের ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাহলে, বাড়িতে আর কে কে ছিল সেইদিন? [19]
সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৩/ বিতর
পরিচ্ছেদঃ দ্বিপ্রহরের সালাত।
৪৭৪. আবূ মূসা মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ….. আবদুর রহমান ইবনু আবী লায়লা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেনঃ উম্মু হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা ব্যতীত আমার নিকট আর কেউ একথা বর্ণনা করেন নি যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এই সালাত (আয-যুহা) আদায় করতে দেখেছেন। উম্মু হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে, রাসূল ফতহে মক্কার দিন (মক্কা বিজয়ের দিন) তাঁর ঘরে এলেন এবং গোসল করলেন। এরপর আট রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এর চেয়ে সংক্ষিপ্ত সালাত আদায় করতে আমি তাঁকে আর কখনও দেখিনি। তবে তাঁর এই সালাতে তিনি রুকূ ও সিজদা পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করেছিলেন। – ইবনু মাজাহ ১৩৭৯, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪ (আল মাদানী প্রকাশনী)
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান-সহীহ। ইমাম আহমদ এই বিষয়ে উম্মু হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর রিওয়ায়াতটিকেই সর্বাধিক সহীহ বলে মনে করেন। এই বিষয়ে একটি হাদীসসের রাবী অপর এক সাহাবী নুআয়ম রাদিয়াল্লাহু আনহু (এর পিতার নাম) সম্পর্কে ঐতিহাসিকভাবে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেনঃ তিনি হচ্ছেন নুআয়ম ইবনু খাম্মার, কারো কারো মত হ’ল, ইবনু আম্মার, কেউ কেউ বলেনঃ ইবনু হাব্বার, কারো কারো মতে ইবনু হাম্মাম। তবে শুদ্ধ হ’ল ইবনু হাম্মার। রাবী আবূ নু’আয়ম রাদিয়াল্লাহু আনহু এই বিষয়ে সন্দেহের শিকার হয়েছেন। তিনি তাকে ভুল করে ইবনু ইবনু খাম্মার বলে উল্লেখ করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি এর উল্লেখ ছেড়ে দেন এবং (পিতার নাম উল্লেখ করা ছাড়াই) নু’আয়ম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ নু’আয়ম (রহঃ) থেকে আমাকে এই সম্পর্কে রিওয়ায়াত করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুর রহমান ইবনু আবূ লাইলা (রহঃ)
বোন নাকি কৈশোরের প্রেমিকা?
পুরো ঘটনাটি পড়ার পরে যেই বিষয়গুলো পরিষ্কার, তা হচ্ছে, নবী মুহাম্মদের সাথে সেই বাল্য জীবন থেকেই ছিল উম্মে হানীর খুবই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। এমনকি, বিয়ে করতেও চেয়েছিলেন নবীও মুহাম্মদ। বিয়ে যেহেতু করতে চেয়েছিলেন, বুঝতে সমস্যা হয় না যে, উম্মে হানীর প্রতি তার ছিল সীমাহীন প্রেম। কিন্তু চাচা আবূ তালিব তার মত সহায় সম্বলহীন এতিম মুহাম্মদকে নিজের মেয়ের জামাই করার উপযুক্ত মনে করেন নি। এরপরে মুহাম্মদ খাদিজাকে বিয়ে করে নিজের অবস্থার পরিবর্তন করেন। কিন্তু ততদিনে উম্মে হানী তো আরেকজনার স্ত্রী। উম্মে হানীর প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সেই শোকে কিংবা তার বিরহেই কিনা জানা নেই, নবী মুহাম্মদ হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যান করতে চলে যেতেন। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, প্রেমিকাকে অন্যের স্ত্রী হিসেবে দেখে উনি প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন কিনা জানা যায় না। তবে এই ঘটনাগুলো পড়লে মনে হয়, প্রেমে ব্যর্থতাও তার সমাজ ও ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে একটি প্রভাবক হয়ে থাকতে পারে। হয়তো লাত মানাত উজ্জা দেবীর কাছে তিনি কামনা করেছিলেন, তার প্রেম যেন সফল হয়। কিন্তু তা না হওয়ায় হয়তো উনি সেই সব মূর্তির প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। মনের দুঃখে চলে যেতেন হেরা গুহায়। সেখানে তিনি শরৎচন্দ্রের দেবদাসের মতই কোন ধরণের মাদক সেবন করতেন কিনা জানা যায় না। সেইখানেই তার কাছে আগমন ঘটে জিব্রাইল নামক এক অলৌকিক সত্ত্বার, যিনি ওহী নিয়ে আসেন। এরপরে নবীর জীবনে ঘটে নানা পরিবর্তন। মৃদুভাষী বালকটি ক্রমশ হয়ে ওঠে যুদ্ধবাজ, ধর্ষক এবং লুটেরা। দখল করেন মক্কা নগরী। নবীর ভয়ে মক্কা ছেড়ে পালান উম্মে হানীর স্বামী। কেন পালালেন, কেন এত ভয় পেলেন, তা খুবই অদ্ভুত ঘটনা। এরপরে নবী আবারো বিয়ে করতে চাইলেন উম্মে হানীকে। কিন্তু এবারেও ফিরিয়ে দিলেন উম্মে হানী। কেন দিলেন, কী ছিল সেই কারণ, নবীর এই ভয়াবহ যুদ্ধবাজ রূপ দেখেই কিনা, তা জানা যায় না। হয়তো সেই বাল্যকালে যেই কোমল ছেলেটির প্রেমে উম্মে হানী পড়েছিল, তখনকার আগ্রাসী বর্বর এবং এতগুলো স্ত্রী আর দাসীকে নিয়ে রীতিমত হেরেম তৈরি করে বসা মুহাম্মদের সাথে তার কোন মিল ছিল না। তাই হয়তো তিনি বলেছেন [20] –
আল্লাহর কসম! আমি তো জাহেলী যুগেই আপনাকে ভালবাসতাম।

প্রশ্ন হচ্ছে, উম্মে হানীকে নিজের আপন বোনের মতই যদি নবী মুহাম্মদ মনে করতেন, তাহলে বারবার বিবাহের প্রস্তাব দেবেন কেন?
উপসংহার
উপরে উপস্থাপিত তথ্যগুলো সবই ইসলামিক রেফারেন্স থেকেই সংগ্রহ করা। নাস্তিকগণ মুহাম্মদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার উদ্দেশ্যে এই তথ্যগুলো কোনটিই তৈরি করে নি। তাই সহিহ নয়, অনুবাদে ভুল রয়েছে, এইধরণের চিরাচরিত কুযুক্তি বাদ দিয়ে প্রত্যেকেরই সত্য অনুধাবন করা জরুরি। আলোচনা থেকে এটি মোটামুটি স্পষ্টই যে, নবী মুহাম্মদের সাথে উম্মে হানীর একটি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কটি ভাইবোনের নাকি প্রেমিক প্রেমিকার, তা সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি। উল্লেখ্য, নাস্তিকগণ মুহাম্মদের সাথে উম্মে হানীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, প্রেম, যৌন সম্পর্ক বা যাই থাকুক না কেন, তাতে বিন্দুমাত্র আপত্তি করে না। যেকোন মানুষের প্রেম ভালবাসার অধিকারকে আমরা সম্মান জানাই। সেই সাথে, বাল্যকালে মুহাম্মদের সাথে উম্মে হানীর বিয়ে না হওয়ায় মুহাম্মদের ভেতরে যেই ক্ষোভ এবং দুঃখের সৃষ্টি হয়েছিল, তার সমব্যথী। শুধুমাত্র এতিম এবং সহায় সম্বলহীন হওয়ায় দুইজন ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ মানুষকে আলাদা করা কিছুতেই মানবিক কাজ নয়। এই লেখাতে শুধুমাত্র ইসলামের দ্বিচারিতার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে ইসলাম মানুষের স্বাভাবিক প্রেম বা ভালবাসাকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। শুধুমাত্র বিবাহ এবং দাসী ভোগ ছাড়া ইসলামে প্রেম ভালবাসার কোন জায়গা নেই।
তথ্যসূত্রঃ
- আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, মহিলা সাহাবী, মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৮ [↑]
- সুনানু ইবনে মাজাহ, বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৯১, হাদিস নম্বরঃ ১৩৪৯ [↑]
- সীরাতুল মুস্তফা, আল্লামা ইদরিস কান্ধলবী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ২৩৬, ২৪৯, ২৫০ [↑]
- সীরাতুল মুস্তফা (সা), আল্লামা ইদরিস কান্ধলবী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৩ [↑]
- তাফসির ইবন কাসির, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫১ [↑]
- সীরাতুন নবী (সা.), ইবন হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৬ [↑][↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর-৫৪৮৬ [↑]
- আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, মহিলা সাহাবী, মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৯ [↑]
- আল ওয়াকেদী, পৃষ্ঠাঃ ৪২৭[↑]
- আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, মহিলা সাহাবী, মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৯, ১০০ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর ৩৫০ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৪৭ [↑]
- তিরমিযী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮৮, হাদিস নম্বরঃ ৩২১৩ [↑]
- তাফসীর ইবনে কাসির, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৩২[↑]
- সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৮৪৮ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ২৪৫৬ [↑]
- তিরমিযী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮৮, হাদিস নম্বরঃ ৩২১৩ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৪৪৮ [↑]
- সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪ [↑]
- আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, মহিলা সাহাবী, মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০১ [↑]
মক্কা বিজয়ের দিন হযরত দুই জায়গায় গোসল করলেন এমনটাই পেলাম।
১ম বার: ফাতিমা (রাঃ) কাপড় টেনে রেখেছেন আর হযরত গোসল করতেছেন তখন হানি হযরতের সাথে দেখা করতে গেলো।
২য় বার : মক্কা বিজয়ের দিন হানির বাড়িতে গোসল করলেন এবং সংক্ষিপ্ত করে আট রাকাত নামাজ আদায় করলেন।
একি দিনে দুবার স্নান করার দরকার কি? পরস্পর সাংঘর্ষিক কথা মনে হচ্ছে।
তথ্যবহুল ও শক্তিশালী একটি লেখা। বিশেষ করে শেষের দিকে ‘বোন নাকি কৈশোরের প্রেমিকা’ অংশে মোহাম্মদের জীবনব্যাপী কর্মকান্ডের চিত্রায়ন ও এই ঘটনার সাথে যোগসূত্র স্থাপনের সাইকোলজিক্যাল প্রোফাইলিংটা অসামান্য হয়েছে। ধন্যবাদ ভাই এমন একটা লেখার জন্য।
একটা হাদীস আছে মক্কা বিজয়ের দিন। অপর আরেকটি হাদীস আছে মক্কা বিজয়ের বছর।
অতএব দুটি একই দিন হল কিভাবে? বছরের কোনো একটা দিন ও তো হতে পারে।
সত্য সন্ধানীদেরকে এই লেখাটি পড়ে নেবারও আহ্বান রইলো।
“মিরাজের ঘটনায় রাসুল(ﷺ) ও উম্মে হানী(রা.) এর উপর ইসলামবিরোধীদের নোংরা অপবাদের জবাব”
ভাইজান,,,,আপনার এই পোস্টটা পড়েছি, ভালো লেগেছে আপনি যদি এই ইসলামবিদ্বেষীর মতো করে আরেকটা কাউন্টার পোস্ট বের করতেন তাহলে ভালো হতো।
উম্মে হানীর স্বামী মক্কা ত্যাগ করেন মক্কা বিজয়ের পরে কিন্তু মেরাজ এর অনেক আগেই সংগঠিত হয়। আর হাদিস গুলোকে অনেকেই মিথ্যা বলেছেন। আর এছাড়াও হাদিসের প্রথম অংশ বিশ্বাস করলেন আর হাদিসের পরের অংশে যে মুজেযার কথা বললেন তা মেনেছেন?
ভাইজান,,,আপনার এই লেখাটি পড়েছি। খুব ভালো লেগেছে। যদি আসিফের লেখাটার একটা এইরকম করে কাউন্টার বের করতেন তাহলে ভালো হতো।
Shongshoy.com এ যে সব বিষয়ে article লেখা উচিত:
¤মিরাজের অযৌক্তিকতা বিষয়ক
¤কোরানের উত্তরাধিকারের ভুল সম্পর্কে এবং ফাজায়েল নীতি বা আউল নীতির অসারতা সম্পর্কে
¤আব্দুল্লাহ ইবনে সাদের ইসলাম ত্যাগ এর বিষয়ে
¤মুমিনদের তথাকথিত মিথ- “মুহাম্মদকে ব্রিটেনের জাদুঘর Superman উপাধি দিয়েছে” ~ এই বিষয়ে প্রকৃত সত্য সম্পর্কে
গঠনমূলক আলোচনা!????বেশ ভাল লাগলো✌
গঠনমূলক লেখা! ভাল লাগলো????
পুরোটাই ফালতু আলোচনায় ভরপুর। আর এরা বলে গঠনমূলক, অসামান্য।
outstanding opinion and logic ????
আরবী থেকে যখন বাংলায় অনুবাদ করা হয় তখন সব কিছু ঠিক থাকে না। হাদিস এর ইংরেজি কি একটু জানা দরকার। রসূল সদস্য ছিলেন মানুষ এবং আপনি আমিও মানুষ আমাদের মাঝে কিছু পার্থক্য থাকা দরকার, পার্থক্য অবশ্যই আছে। যদি আমি এবং রসূলকে এক মনে করি তাহলে আর আমার কিছু বলার নাই। মহানবী হযরত মোহাম্মদ কে কিছু ক্ষেত্রে অনুকরণ করতে হবে কিছু ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ কে যে কটা বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল আমাদেরকে সেকন্ড বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয় নাই। সুতরাং তাকে নিয়ে সমালোচনা করি।
মুমিনরা কখনো নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পড়বেনা।
মিরাজের আগে যদি নামাজ ফরজ না হয় তাহলে উম্মে হানির ঘরে তারা একসাথে এশার নামাজ কেন পড়ছিল (সেটা তো মিরাজ হওয়ার কিছুক্ষণ আগের ঘটনা)? আর মক্কা বিজয়ের আগে যদি উম্মে হানি মুসলিমই না হয় তাহলে মিরাজের সময় সে নামাজ কেন পড়েছিল?
ভাই, আপনি যে হাদিসটি উল্লেখ করলেন তার শেষাংশটি কেন বাদ দিলেন ? আপনি এই শেষ অংশটি বাদ দিলেন কেননা সেখানে রাসূল (সা) এর নবুয়তের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।। অনুরোধ করতেছি মুক্তচিন্তার নামে কুচিন্তা বাদ দিন।। সত্যতা যাচাই করে আপনার ব্লগে পোস্ট দিন।। বিভ্রান্ত মস্তিষ্ক নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অধিকার আপনার নেই।।
আমি অনুরোধ করতেছি “মিরাজের ঘটনায় রাসূল (সাঃ) উম্মে হানি (র) ওপর ইসলাম বিরোধীদের নোংরা অপবাদের জবাব “পোস্টটি পড়ার জন্য।
I confused.
হাদিস থেকে প্রমাণ দিয়ে সুন্দর লিখেছেন।
আল্লাহতায়ালা আপনাকে দীর্ঘায়ু দান করুক।
আমিন।
ঘটনাগুলোকে সম্পূর্নরুপে বিপরীক করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে. কথাগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন
মুসলমানরা এসব বিষয় নিয়ে তো লজ্জিত
তাই তো তারা সরাসরি প্রতিবাদ জানাতে পারে না. ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বা
তেনা পেঁচিয়ে প্রতিবাদ জানায়.
ভাই কোনভাবে নিম্নোক্ত লেখাটি পড়ুন সকল সংশয় দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ-
حول ما روي أن النبي صلى الله عليه وسلم بات في بيت أم هاني ليلة الإسراء والمعراج .
306287
تاريخ النشر : 19-06-2019
المشاهدات : 35199
الخط
السؤال
هل أم هانئ ابنة عم الرسول صلى الله عليه وسلم تعد محرما للنبي صلى الله عليه وسلم ؛ لأنه في ليلة الإسراء والمعراج ذكر أنه أسري به من بيت أم هانئ ؟
الجواب
ذات صلة
الحمد لله.
أم هانئ بنت أبي طالب رضي الله عنها ، لم تكن من محارم النبي صلى الله عليه وسلم ، فقد كانت متزوجة من هبيرة بن عمرو ، ثم أسلمت ، ولم يسلم زوجها ، وثبت أن النبي صلى الله عليه وسلم خطبها بعد ذلك ، إلا أنها قالت بأنها كبرت ، ولها عيال .
والحديث أخرجه مسلم في “صحيحه” (201) ، من حديث أَبِي هُرَيْرَةَ، : ” أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، خَطَبَ أُمَّ هَانِئٍ ، بِنْتَ أَبِي طَالِبٍ فَقَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ ، إِنِّي قَدْ كَبِرْتُ ، وَلِي عِيَالٌ ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : نِسَاءُ قُرَيْشٍ خَيْرُ نِسَاءٍ رَكِبْنَ الْإِبِلَ ، أَحْنَاهُ عَلَى وَلَدٍ فِي صِغَرِهِ ، وَأَرْعَاهُ عَلَى زَوْجٍ فِي ذَاتِ يَدِهِ .
وينظر للفائدة : جواب السؤال رقم : (286601) .
وأما ما استشكله السائل الكريم من كون النبي صلى الله عليه وسلم كان ليلة الإسراء نائما في بيتها : فغير صحيح ، ولم يثبت أن النبي صلى الله عليه وسلم كان نائما ليلة الإسراء في بيت أم هانئ ، وإنما كان في بيته صلى الله عليه وسلم .
ويدل على ذلك الحديث الذي أخرجه البخاري في “صحيحه” (349) ، ومسلم في “صحيحه” (163) ، من حديث أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ: ” كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: فُرِجَ عَنْ سَقْفِ بَيْتِي وَأَنَا بِمَكَّةَ ، فَنَزَلَ جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَفَرَجَ صَدْرِي ، ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ، ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا ، فَأَفْرَغَهُ فِي صَدْرِي ، ثُمَّ أَطْبَقَهُ ، ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي ، فَعَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا .. ثم ساق الحديث .
أما الروايات التي فيها أنه كان صلى الله عليه وسلم نائما في بيت أم هانئ ليلة الإسراء والمعراج فإنها لا تثبت ، وبيان ذلك كما يلي :
الرواية الأولى :
أخرجها ابن أبي عاصم في “الآحاد والمثاني” (39) ، والطبراني في “المعجم الكبير” (24/432) ، من طريق عَبْدِ الْأَعْلَى بْنِ أَبِي الْمُسَاوِرِ، قَالَ: سَمِعْتُ عِكْرِمَةَ ، يَقُولُ: ” أَخْبَرَتْنِي أُمُّ هَانِئٍ بِنْتُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، قَالَتْ: ” بَاتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدِي لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ ، فَذَكَرَ أَمْرَهُ وَكَيْفَ أُسْرِيَ بِهِ قَالَ: وَإِنِّي أُرِيدُ أَنْ أَخْرُجَ إِلَى قُرَيْشٍ فَأُخْبِرَهُمْ فَأَخْبَرَهُمْ فَكَذَّبُوهُ ، وَصَدَّقَهُ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، فَسُمِّيَ مِنْ يَوْمَئِذٍ الصِّدِّيقَ “.
وإسناده تالف ، فيه عبد الأعلى بن أبي المساور .
قال الذهبي في “تاريخ الإسلام” (4/428) :” ضَعَّفَهُ الْكُلُّ ، قَالَ ابْنُ مَعِينٍ: لَيْسَ بِشَيْءٍ ، وَقَالَ الْبُخَارِيُّ: مُنْكَرُ الْحَدِيثِ ، وَقَالَ النَّسَائِيُّ وَغَيْرُهُ: مَتْرُوكٌ “. انتهى
ولذا ضعف الهيثمي هذه الرواية في “مجمع الزوائد” (1/450) ، فقال :” رواه الطبراني في الكبير ، وفيه عبد الأعلى بن أبي المساور ، متروك كذاب “. انتهى
الرواية الثانية :
أخرجها الطبري في “تفسيره” (14/414) ، من طريق محمد بن إسحاق ، قَالَ: حدثني مُحَمَّدُ بْنُ السَّائِبِ ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ بَاذَامَ ، عَنْ أُمِّ هَانِئِ بِنْتِ أَبِي طَالِبٍ ، فِي مَسْرَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهَا كَانَتْ تَقُولُ: ” مَا أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا وَهُوَ فِي بَيْتِي نَائِمٌ عِنْدِي تِلْكَ اللَّيْلَةَ ، فَصَلَّى الْعِشَاءَ الْآخِرَةَ ، ثُمَّ نَامَ وَنِمْنَا ، فَلَمَّا كَانَ قُبَيْلَ الْفَجْرِ أَهَبَّنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَلَمَّا صَلَّى الصُّبْحَ وَصَلَّيْنَا مَعَهُ قَالَ: يَا أُمَّ هَانِئٍ لَقَدْ صَلَّيْتُ مَعَكُمُ الْعِشَاءَ الْآخِرَةَ كَمَا رَأَيْتِ بِهَذَا الْوَادِي ، ثُمَّ جِئْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ فَصَلَّيْتُ فِيهِ ، ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلَاةَ الْغَدَاةِ مَعَكُمُ الْآنَ كَمَا تَرَيْنَ “.
وإسناده تالف أيضا ، فيه محمد بن السائب الكلبي ، كذاب .
قال ابن أبي حاتم في “الجرح والتعديل” (7/271) :” سألت أبى عن محمد بن السائب الكلبى فقال : الناس مجتمعون على ترك حديثه ، لا يشتغل به ، هو ذاهب الحديث ” انتهى .
ثم هذه الروايات مخالفة لما رُوي عن أم هانئ أيضا ، أنها ذكرت أن النبي صلى الله عليه وسلم أسري به من المسجد الحرام .
وهذه الرواية أخرجها أبو يعلى في “معجمه” (10) ، من طريق مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْوَسَاوِسِيُّ ، قَالَ: حَدَّثَنَا ضَمْرَةُ بْنُ رَبِيعَةَ ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي عَمْرٍو السَّيْبَانِيِّ ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ مَوْلَى أُمِّ هَانِئٍ ، عَنْ أُمِّ هَانِئٍ ، قَالَتْ: ” دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِغَلَسٍ ، وَأَنَا عَلَى فِرَاشِي ، فَقَالَ: شَعَرْتُ أَنِّي نِمْتُ اللَّيْلَةَ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ، فَأَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ ، فَذَهَبَ بِي إِلَى بَابِ الْمَسْجِدِ… ” ثم ساق الحديث .
وإسنادها ضعيف أيضا ، فيه أبو صالح مولى أم هانئ ، ومحمد بن إسماعيل الوساوسي ، وكلاهما ضعيف .
إلا أن هذا الطريق أمثل من سابقيه ، ولذا قال الحافظ ابن حجر في “الإصابة” (8/332) :” وهذا أصحّ من رواية الكلبيّ ، فإنّ في روايته من المنكر: أنه صلّى العشاء الآخرة والصبح معهم ، وإنما فرضت الصّلاة ليلة المعراج ، وكذا نومه الليلة في بيت أم هانئ ، وإنما نام في المسجد ” انتهى.
وينظر للفائدة : جواب السؤال رقم : (45696) .
والله أعلم .