কোরআন সংকলন এবং পরিমার্জনের ইতিহাস
সূচিপত্র
- 1 ভূমিকা
- 2 কোরআন
- 3 ওহী নাজিলের পদ্ধতি
- 4 কোরআন সংরক্ষণ
- 5 কোরআন নিয়ে বিতর্কিত বিষয়াদি
- 5.1 কোরআনের আয়াত অক্ষয়
- 5.2 কোরআনে সর্বমোট আয়াতের সংখ্যা
- 5.3 কোরআনের প্রথম সূরা কোনটি?
- 5.4 কোরআনের শেষ সূরা কোনটি?
- 5.5 সূরা তওবা কী স্বতন্ত্র সূরা?
- 5.6 বিসমিল্লাহ কী প্রতিটি সূরার অংশ
- 5.7 সূরার নামকরণ কে বা কারা করেছিল?
- 5.8 কোরআন কয়টি ভাষায় নাজিল হয়েছে
- 5.9 কোরআনের আয়াত ভুলে যেতেন মুহাম্মদ
- 5.10 কোরআনের ছাগলে খাওয়া আয়াত
- 5.11 কোরআনে দুধপান বিষয়ক আয়াত
- 5.12 রজম ও উমরের আশঙ্কা
- 5.13 হযরত উমরের আরো বক্তব্য
- 5.14 হযরত উসমানের স্বীকারোক্তি
- 5.15 ইদ্দতের আয়াত
- 5.16 বছর পরে আয়াতে শব্দ সংযোজন
- 5.17 সূরা নুরে ভুল শব্দ
- 5.18 ইবনে আব্বাসের আরো বিরোধ
- 5.19 সূরা ইউনুসের একটি শব্দ
- 5.20 সুরা আনফালে ইয়ামালুন ও তা’মালুন
- 5.21 আবদুল্লাহ ইবনে উমর এর বক্তব্য
- 5.22 আবূ খুযায়মা আনসারী
- 5.23 আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ
- 5.24 হুজাইফা ইবনে ইয়ামান
- 5.25 উবাই ইবনে কাব
- 5.26 দু ‘টি অতিরিক্ত সূরা
- 5.27 আরো একটি হারানো সূরা
- 5.28 আরো হারিয়ে যাওয়া আয়াত
- 5.29 অন্ধের অনুরোধে আয়াত পরিবর্তন
- 5.30 শয়তানের আয়াত
- 5.31 অনুরোধের আয়াত
- 5.32 আয়াত নামার আতঙ্ক
- 5.33 আয়েশার সন্দেহ
- 5.34 শিক্ষিত ওহী লেখকের ধর্মত্যাগ
- 5.35 আবদুল্লাহ ইবনে সাদ এর ঘটনা
- 5.36 মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদের শেষ বক্তব্য
- 6 আল্লাহর বাণী কী অপরিবর্তনীয়?
- 7 মুহাম্মদের করুণ মৃত্যু
- 8 উপসংহার
- 9 তথ্যসূত্র
ভূমিকা
মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি বিশ্বাস বা দাবী হচ্ছে, কোরআন হচ্ছে মানব ইতিহাসের একমাত্র অবিকৃত গ্রন্থ যা আল্লাহ পাক যেভাবে নাজিল করেছিলেন, ঠিক সেরকম অবস্থাতেই আমরা এখনও দেখতে পাই। এমনকি, এর একটি শব্দ বা একটি অক্ষরও এই পর্যন্ত কেউ পরিবর্তন করতে পারে নি। অর্থাৎ, এর কিছুমাত্র এখন পর্যন্ত বিকৃতিসাধন হয় নি। অন্যদিকে বাইবেল থেকে শুরু করে অন্যান্য সকল ধর্মগ্রন্থই মানুষের দ্বারা বিকৃত এবং দূষিত। যা আল্লাহ যেভাবে প্রেরণ করেছিলেন, সেভাবে আর নেই। যদিও বাইবেল সংকলনের খ্রিষ্টীয় ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাইবেলের সংকলনকে খ্রিস্টানরা ঈশ্বর দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে মনে করেন। অর্থাৎ, বাইবেল যেভাবে সংকলিত হয়েছিল, খ্রিস্টীয় বিশ্বাস মতে তা ঈশ্বরের ইচ্ছাতে ঈশ্বরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে হয়েছিল। খ্রিস্টীয় বিশ্বাস অনুসারে পরিবর্তনগুলোও ঈশ্বরের ইচ্ছাতে হয়েছিল। তাই খ্রিস্টানগণ দাবী করেন, বাইবেলেও কোন ভুল নেই। কারণ পরিবর্তনগুলো স্বয়ং ঈশ্বরই ঘটিয়েছেন।
এই দিক দিয়ে মুসলিমদের দাবী একটু ভিন্ন রকম। মুসলিমগণ মনে করেন, কোরআনই একমাত্র শুদ্ধতম ঐশি গ্রন্থ, যার কিছুমাত্র কোন পরিবর্তন হয় নি। তারা শুধু মনেই করেন না, রীতিমত বিশ্বাস করেন যে, কোরআন একমাত্র ঐশি কেতাব যা মুহাম্মদের আমলেই আল্লাহর পাকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নাজিল হয়েছিল। অধিকাংশ মুসলিম মনে করেন, কোরআন আল্লাহ পাকের কাছ থেকে যেভাবে নাজিল হয়েছিল ঠিক সেভাবেই এখন আমরা পাই। এবং এটি কোন মানুষের দ্বারাই বিন্দুমাত্র পরিমাণ দূষিত হয় নি, নতুন সংযোজন বিয়োজন পরিমার্জন কিছুই হয় নি। এই দাবীগুলো শোনার পরে আমাদের বিষয়টি গবেষণা করে দেখার প্রয়োজন হয়ে যায়, আসলেই এই দাবীগুলোর সত্যতা কতটুকু। তা নিয়ে আলোচনাই এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য।
অনেক ধার্মিক মানুষ প্রমাণ দেখাতে চেষ্টা করবেন যে, কোরআন হাদিসেই বলা আছে যে, কোরআন অবিকৃত এবং সব ধরণের দূষণমুক্ত। কিন্তু এই ধরণের দাবী একটি খুব সাধারণমানের হেত্বাভাস বা লজিক্যাল ফ্যালাসি। যাকে বলা হয়, চক্রাকার কুযুক্তি বা Circular logic Fallacy [1] । যেমন ধরুন,
প্রশ্ন-১ বাইবেল যে সত্য তার প্রমাণ কী?
উত্তর-১ বাইবেল সত্য কারণ ঈশ্বর বলেছেন বাইবেল সত্য।
প্রশ্ন-২ ঈশ্বর যে সত্য তার প্রমাণ কী?
উত্তর-২ ঈশ্বর সত্য কারণ বাইবেলে লেখা আছে ঈশ্বর সত্য।
উপরের দাবী দুটো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, একটি দাবী আরেকটি দাবীকে সত্য প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এই দাবী দুটো একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। এর কোনটাই প্রমাণিত নয়, তবে একটি আরেকটি দাবীর প্রমাণ হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছে। যুক্তিবিদ্যায় একে বলে চক্রাকার যুক্তি বা সার্কুলার লজিক। তাই এই ধরণের যুক্তিকে যুক্তিবিদ্যায় গ্রহণ করা হয় না, এবং এগুলোকে কুযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই এই ধরণের দাবী আসলে যৌক্তিক আলোচনায় গ্রহণযোগ্য হয় না। তাহলে প্রশ্ন আসে, আমরা কেন কোরআন হাদিসের রেফারেন্সগুলোকে উল্লেখ করছি?
কোরআন হাদিস এবং ইসলামিক ক্লাসিক্যাল যুগের রেফারেন্সগুলো আমরা উল্লেখ করছি কোরআন বা মুসলিমদের দাবীগুলোর স্ববিরোধী চরিত্র দেখাবার জন্য। আসলে আম মুসলিমদের অনেকেই জানেন না, ইসলামের রেফারেন্সগুলোই ইসলামকে ভুল প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। ইহুদী নাসারা নাস্তিকদের ষড়যন্ত্র ছাড়াই, শুধুমাত্র ইসলামের রেফারেন্স দিয়েই ইসলামকে ভুল প্রমাণ করা যায়। সেটাই আমরা এই লেখাটিতে দেখবো।
কোরআনে বলা আছে, কোরআনের সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ পাক নিজেই নিয়েছেন। এই বিষয়ে কোরআনেই বলা হয়েছে, [2]
নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।
— Taisirul Quran
আমিই জিকর (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই উহার সংরক্ষক।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় আমি কুরআন* নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী। * الذكر দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, লাওহে মাহফুজে যেভাবে আল্লাহ সৃষ্টির আদিতে কোরআন লিখেছিলেন, আজকে আমাদের কাছে যেই কোরআন রয়েছে, দুটো কী একই রকম? এটি ইসলামের মূল ভিত্তি নিয়ে একটি বড় ধরণের প্রশ্ন। কারণ এই বিশ্বাসটি যদি ভুল প্রমাণ হয়, তাহলে ইসলামের মূল ভিত্তিই ধ্বংস হয়ে যায়। এমনকি, আল্লাহ পাকের অনুপ্রেরণাতেও যদি কোরআন যেভাবে নাজিল হয়েছিল, তাতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন সাধন হয়ে থাকে, তাহলে তা খ্রিস্টানদের দাবীর মতই হয়ে যায়। কারণ খ্রিস্টানরাও একই দাবী করে থাকেন যে, গসপেল লেখকরা ঈশ্বরের অনুপ্রেরণাতেই গসপেল লিখেছেন। যাকে আবার মুসলিমগণ বিকৃত বলছেন। তাই এই যুক্তিটি খ্রিস্টানদের বেলাতে মুসলিমরা গ্রহণ না করলে, মুসলিমদের বেলাতেও আর খাটে না।
উল্লেখ্য, মুসলিমদের দাবী যেহেতু এরকম যে, তাদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন এই পর্যন্ত বিন্দু পরিমান বিকৃত বা মানুষের দ্বারা দূষিত হয় নি, ঠিক লাওহে মাহফুজে আল্লাহ পাক সৃষ্টির শুরুতে যেভাবে লিখেছিলেন, এখনো বর্তমান সময়ের কোরআনে তেমনটিই আমরা পাই, তাই যদি সামান্যতম বিকৃতও প্রমাণ করা যায়, তাহলে তাদের দাবীটি ভুল বলে গণ্য হবে। এই দাবীটি ভুল প্রমাণ করতে শতকরা ৫ ভাগ বা ১০ ভাগ কিংবা ১০০ ভাগ ভুল প্রমাণের প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র একটি ভুল বা বিকৃতিই যথেষ্ট। কারণ কোরআনেই বলা রয়েছে, [3]
আমি এ কুরআনকে ভাগে ভাগে বিভক্ত করেছি যাতে তুমি থেমে থেমে মানুষকে তা পাঠ করে শুনাতে পার, কাজেই আমি তা ক্রমশঃ নাযিল করেছি।
— Taisirul Quran
আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খন্ড খন্ডভাবে যাতে তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে; এবং আমি তা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর কুরআন আমি নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে।
— Rawai Al-bayan
আর আমরা কুরআন নাযিল করেছি খণ্ড খণ্ডভাবে যাতে আপনি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারেন ক্রমে ক্রমে এবং আমরা তা পর্যায়ক্রমে নাযিল করেছি [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
মুহীউদ্দীন খানের অনুবাদে বলা আছে, [4]
আমি কোরআনকে যতিচিহ্ন সহ পৃথক পৃথকভাবে পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে আপনি একে লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং আমি একে যথাযথ ভাবে অবতীর্ণ করেছি।
তাই আল্লাহ পাকই যা পারফেক্ট বা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছেন, সেটিকে আর পুনরায় যথাযথ করার কোন কারণ বা যুক্তি থাকতে পারে না। কারণ মানুষ এমনকি নবী মুহাম্মদ বা তার সাহাবা, তাবে তাবেইনও সেখানে সামান্যতম হাত লাগালেই তা দূষিত হবে। তারপরেও, আমরা আলোচ্য লেখাটিতে কোরআনে বিভিন্ন প্রকারের বিকৃতি বা মানুষের দ্বারা সংস্কার বা পরিমার্জন আলোচনা করবো। সেটি পড়ার পরে পাঠকগণই সিদ্ধান্ত নেবেন, কোরআন অবিকৃত গ্রন্থ নাকি তা বহুসংখ্যকবার পরিমার্জিত, সংশোধিত গ্রন্থ। যদিও আমরা ভালভাবেই জানি, সবকিছুরই একটি তৈরি উত্তর সদাসর্বদা মুমিন ভাইদের কাছে থাকে, আর সেটি হচ্ছে, সবই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা! কিন্তু সেটি যুক্তি হলে বাইবেল বা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থকে মুসলিমগণ কোন যুক্তিতে দূষিত বলেন, তা বোধগম্য নয়। আল্লাহর ইচ্ছা বা অনিচ্ছা যাই হোক, আমি যৌক্তিক আলোচনা এবং মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারার চেষ্টা হিসেবেই এই লেখাটি লিখছি। এই লেখাটিও সেই অর্থে আল্লাহরই ইচ্ছা। নইলে আমি লিখলাম কীভাবে?
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ
এই লেখাটিতে যে সমস্ত রেফারেন্স নেয়া হয়েছে, সেগুলো সবই সবচাইতে নির্ভরযোগ্য এবং বিশুদ্ধ ইসলামিক গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা। যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে সঠিক তথ্যগুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে। তারপরেও কোথাও কোন ত্রুটি পাওয়া গেলে লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণের অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। বানান ভুল বা তথ্যগত ভুল কেউ পেলে বিনা দ্বিধায় সংশোধন করে দিন। আপনার সংশোধনী সঠিক হলে কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এই লেখাটি আপনার কোমল ধর্মীয় অনুভূতির জন্য মারাত্মক আঘাত বলে বিবেচিত হতে পারে। তাই আপনার ধর্মীয় অনুভূতি কোমল হলে লেখাটি এখনই পড়া বন্ধ করুন এবং নিজের ধর্মীয় অনুভূতিকে রক্ষা করুন। এই সতর্কতার পরেও যদি লেখাটি পড়তে চান, নিজ দায়িত্বে প্রাপ্তবয়ষ্ক শিক্ষিত সভ্য মানুষের মত পড়ুন। আপনার ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করার জন্য অন্য কাউকে দায়ী করবেন না।
এই লেখাটিতে যেসকল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা হবে, তারা হচ্ছেন, হযরত মুহাম্মদ নিজে, আবু বকর, উমর, উসমান, আলী, আয়েশা, আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর, উমরের ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে উমর, আবূ খুযায়মা আনসারী, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, উবাই ইবনে কাব, আবদুল্লাহ ইবনে সাদ এবং আরো অনেকে। এরা প্রত্যেকেই নবী মুহাম্মদের অত্যন্ত ঘনিষ্ট এবং মুহাম্মদ অসংখ্যবার এদের প্রশংসা করেছেন। তাই উনাদের বক্তব্যগুলো গুরুত্ব পাবে, সেটিই স্বাভাবিক।
আমি খুব ভালভাবেই জানি, যারা ইসলামে বিশ্বাস করেন তারা নানাভাবে প্রতিটি তথ্যকে মিথ্যা, ভুল, ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্র, কাফেরদের চক্রান্ত, নাস্তিকদের মিথ্যাচার, দুর্বল বর্ণনা, জাল জইফ, হ্যান ত্যান নানা কথা বলে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করে যাবেন। কারণ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অক্ষুণ্ণ রাখতে এছাড়া উনাদের আর কোন পথ নেই। যেভাবেই হোক, উনারা চেষ্টা করে যাবেন উনাদের বিশ্বাসকে সঠিক বলে ধরে নিতে। কিন্তু উনাদের বিশ্বাস বিষয়ে আমার কোন আলোচনা নেই। উনারা চাইলে যেকোন কিছুই বিশ্বাস করতে পারেন। আমি শুধুমাত্র তথ্যসূত্রগুলো একত্র করছি। পাঠকগণ রেফারেন্সগুলো যাচাই করে দেখবেন অনুগ্রহ করে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
অসংখ্য বইপত্র, আর্টিকেল এবং ইন্টারনেটের কল্যানে অসংখ্য লেখা আমাকে এই লেখাটি সমৃদ্ধ করতে সহযোগীতা করেছে। তাদের সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। উনাদের অসংখ্য লেখা না পড়লে আমি এই সংকলনটি তৈরি করতে পারতাম না।
কোরআন
কোরআন কী?
কোরআন (আরবি: القرآن বা আল্-কুর্’আন) শব্দের অর্থ হচ্ছে পঠিত বা পাঠ করা বা আবৃত্তি করা। কোরআন শব্দের উৎপত্তি ক্বারউন নামক শব্দ থেকে যার অর্থ পঠিত, যা অধিক পাঠ করা হয়, মিলিত। এই বিষয়ে খানিকটা মতবিরোধ রয়েছে। দু’টি প্রধান মতামত হচ্ছে,
১) এই শব্দটি এসেছে al-Qar` মানে হচ্ছে `সংকলন করা` বা ‘সংগ্রহ করা’
২) এই শব্দটি এসেছে `Qara` থেকে যার মানে হচ্ছে ‘পাঠ করা’। এই মতামতটিই বেশিরভাগ ইসলামি স্কলার মেনে নেন। [5]
উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে আমরা যেই কোরআন দেখি, বা পড়ি, সেটি সংকলিত হয়েছিল খলিফা উসমানের আমলে। এই বিষয়টি স্মরণ রেখেই লেখাটি পড়তে হবে।
কোরআন কী আল্লাহর সৃষ্টি?
ইসলামের প্রথম যুগের বেশ পরে তৎকালীন আলেমদের মধ্যে একটি প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে, কোরআন কি অনাদি অনন্ত, নাকি আল্লাহ পাকের সৃষ্ট? মু‘তাযিলী দার্শনিকগণ কোরআন মজীদকে আল্লাহর সৃষ্ট বলে দাবী করেন এবং অদৃষ্টবাদী (জাবারী) আলেমগণ কোরআনকে অনাদি বলে দাবী করেন। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে কাফের ও মুরতাদ এবং হত্যাযোগ্য বলে ফতোয়া দিতে শুরু করে। পরবর্তীতে আব্বাসীয় খিলাফতে শাসকরা বহু আলেমকে এই দ্বন্দ্বে হত্যা করে। বর্তমানে শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে মুসলমানদের মধ্যে মোটামুটিভাবে এ ধারণা বিরাজ করে যে, যেহেতু আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া আর কোনো কিছুই অনাদি নয়, সুতরাং কোরআন মজীদও অনাদি নয়, তথা আল্লাহ্ কর্তৃক সৃষ্ট। কিন্তু পরবর্তীকালে ইবনে তাইমীয়াহ্ ও ‘আবদুল ওয়াহ্হাব্ নজদীর মাধ্যমে ইসলামে যে গোঁড়া ইফরাত্বী ধারা গড়ে ওঠে তারা এ বিষয়টিকে নতুন করে গুরুত্ব প্রদান করে এবং যারা কোরআনকে অনাদি বলে স্বীকার করে না তাদেরকে কাফের বলে অভিহিত করে।
‘কোরআন আল্লাহর সৃষ্টি নয়’- এই বিষয়ে বেশ কিছু বিখ্যাত ইসলামিক আলেমের মতামত পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে,
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রা. বলেন,
“কোরআন আল্লাহ কালাম (বাণী); মাখলুক বা সৃষ্ট নয়। যে ব্যক্তি মনে করে যে, কোরআন আল্লাহর মাখলুক (সৃষ্ট) সে জাহমী-কাফির। আর যে ব্যক্তি কোরআন আল্লাহর কালাম বলে চুপ থাকে- মাখলুক না কি মাখলুক নয় সে ব্যাপারে কোন মন্তব্য করে না-সে ১ম ব্যক্তির থেকেও নিকৃষ্ট।
ইমাম ইবনে আব্দুল ইয আল হানাফি (তাহাবীয়া গ্রন্থের ভাষ্যকার), বলেন:
“চার মাযহাব সহ পূর্বসূরি ও পরবর্তী মনিষীদের সকলেই একমত যে, আল্লাহর কালাম মাখলুক নয়।
ইমাম ইবনে তাইয়িমা রাহ .এর ব্যাপারে অত্যন্ত দৃঢ়তা সূলভ বক্তব্য আছে। তিনি ‘কোরআন আল্লাহর সৃষ্টি’ মতবাদে বিশ্বাসীদেরকে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে জবাব দিয়েছেন।
শায়খ হাফেয আল হাকামী রহ. বলেন:
“কোরআন প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর কালাম বা বাণী। অক্ষর-সমূহ এবং তার অর্থ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। এ নয় যে, আল্লাহর কালাম বলতে শুধু কুরআনের শব্দগুলোকে বুযায়। এমনিভাবে শব্দ ছাড়া শুধু অর্থগুলোর নাম আল্লাহর কালাম নয়। আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মাধ্যমে কথা বলেছেন এবং তাঁর নবির উপর অহি আকারে তা নাযিল করেছেন। মুমিনগণ তা বিশ্বাস করেছে।
সুতরাং আঙ্গুলের মাধ্যমে কোরআন লিখা, জবানের মাধ্যমে তা তেলাওয়াত করা, অন্তরের মাধ্যমে তা মুখস্থ করা, কান দিয়ে শুনা এবং চোখ দিয়ে দেখলেই তা আল্লাহর কালাম থেকে বের হয়ে যায় না। আঙ্গুল, কালি, কলম এবং কাগজ এগুলোর সবই আল্লাহর সৃষ্টি । কিন্তু এ সব দিয়ে যা লেখা হয়েছে তা সৃষ্টি নয়। ঠিক তেমনি জবান এবং আওয়াজ আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু জবান দিয়ে তা তেলাওয়াত করা হচ্ছে তা মাখলুক তথা সৃষ্টি নয়। বক্ষসুমহ আল্লাহর সৃষ্টি, কিন্তু তাতে যে কোরআন সংরক্ষিত আছে, তা মাখলুক নয়। কান-সমূহ আল্লাহর সৃষ্টি কিন্তু কান দিয়ে কোরআন আমরা শুনছি, তা মাখলুক নয়।
অধিকাংশ ইসলামিক আলেমের মত হচ্ছে, কোরআন হচ্ছে আল্লাহর কালাম। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। আল্লাহর কাছে তা পুনরায় ফেরত যাবে। আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাত বা গুণাগুন বা বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে বলবে আল্লাহর কোন সিফত বা গুণ হচ্ছে সৃষ্টি বা মাখলুক, সে কাফের ও মুরতাদ। তাকে পুনরায় ইসলামে ফেরত আসতে বলা হবে। ফিরে আসলে তো ভাল, অন্যথায় তাকে কাফের হিসেবে হত্যা করা হবে। এই বিষয়ে আরো জানার জন্য [6] [7] পড়ুন। উল্লেখ্য, এই অংশে উল্লেখিত তিনটি রেফারেন্স একটি ইসলামিক ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করা ছাড়া নেয়া হয়েছে।
কোরআন কী সরাসরি আল্লাহর বাণী?
বেশিরভাগ মুসলমানই এই কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, কোরআনের প্রতিটি বাক্য হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর মুখ থেকে মানুষের জন্য সুনির্দিষ্ট বাণী বা নির্দেশনা কিংবা বলা যেতে পারে জীবন বিধান। কোরআনেই বলা আছে, [8]
এবং এটা কোন কবির কালাম নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর।
এবং এটা কোন অতীন্দ্রিয়বাদীর কথা নয়; তোমরা কমই অনুধাবন কর।
এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ।
সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত,
তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম,
অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা।
তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।
ধরে নিচ্ছি কোরআন আল্লাহর সরাসরি বানী, এবং তা সৃষ্টির আদিকাল থেকে লাওহে মাহফুজে লিখিতভাবে সংরক্ষিত ছিল। এরপরে নবী মুহাম্মদ নবুয়ত লাভ করেন, জিব্রাইলের মাধ্যমে আল্লাহ সেই পবিত্র কেতাবে আল্লাহ পাক যা বলেছিলেন তা মুহাম্মদের কাছে প্রেরণ করেন। এসব ধরে নিলে বোঝা যাচ্ছে, কোরআনের মূল বক্তা আল্লাহ পাক, এবং নবী মুহাম্মদের ওপর তা নাজিল হয়েছে মাত্র। জিব্রাইল ছিলেন বাহক মাত্র, মুহাম্মদ ছিলেন মেসেজঞ্জার নবী/রাসুল। জিব্রাইল এবং মুহাম্মদের দায়িত্ব ছিল, আল্লাহ পাক যা সরাসরি বলেছেন, হুবুহু সেইসব আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। নিজেরা সেই কথাগুলোর মধ্যে কোন বক্তব্য না ঢোকানো বা কোন কথার সামান্যতম কোন পরিবর্তন না করা। কিন্তু কোরআনে এই ধারাটি ঠিক রাখা হয় নি। কোথাও আল্লাহ বলছেন, কোথাও নবী বলছেন, আবার কোথাও মনে হচ্ছে এগুলো জিব্রাইলের বক্তব্য, আবার কোথাও আল্লাহর বান্দারা আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলছেন। এরকম অসংখ্য সূরা পাওয়া যায়, সেখানে এক এক সময় বক্তা এক এক রকম। সব যে আল্লাহর সরাসরি বক্তব্য না, তার অসংখ্য প্রমাণ আছে। যেমন ধরুন, নিচের সূরাটি। এই সূরাটি কী কোন অবস্থাতেই আল্লাহর বক্তব্য বলে মেনে নেয়া যায়? তাহলে আল্লাহ কোন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছে? স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, বক্তব্যগুলো অন্য কারো, সরাসরি আল্লাহর বক্তব্য হতেই পারে না।
- পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
- আল্লাহরই জন্য সমস্ত প্রশংসা, যিনি বিশ্বজগতের রাব্ব।
- যিনি পরম দয়ালু, অতিশয় করুণাময়।
- যিনি বিচার দিনের মালিক।
- আমরা আপনারই ইবাদাত করছি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাচ্ছি।
- আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।
- তাদের পথ, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি আপনার গযব বর্ষিত হয়েছে, তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। ( সূরা ফাতিহা )
যেমন ধরুন, করিম বলছে তার ছেলেকে রহিমকেঃ
হে রহিম, বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাও, যা তোমার শরীরের জন্য ভাল।
অথবাঃ
হে রহিম, বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাও, যা আমি তোমার জন্য নিয়ে আসি। নিশ্চয়ই আমি উত্তম খাবার বাজার থেকে কিনে আনি।
কিন্তু এই কথা পিতা করিম তার ছেলে রহিমকে কখনই বলবে না, এরকম কেউ বললে কথাগুলো তার ছেলে রহিমের বক্তব্য বলেই বোঝা যাবেঃ
- শুরু করছি বাজার থেকে উত্তম খাবার নিয়ে আসা পিতা করিমের নামে
- সম্মানীত পিতা করিমই উত্তম খাবার বাজার করে আনেন
- যিনি অত্যন্ত দয়ালু, খুবই উদার
- বাজারের তাজা সবজি আর মাছ উনিই সবচেয়ে ভাল চেনেন
- আমরা আপনার কাছ থেকেই স্কুল টিফিনের টাকা পাই
- আমরা আপনার কাছ থেকেই স্কুলের বেতনের টাকা চাই
- হে পিতা, আমাদেরকে বিকাল বেলা ফুটবল খেলতে দিন
- আর যারা আপনার খাবার খেয়ে আপনার তোষামোদি করে না,
- আপনার মাথা আর পিঠ টিপে দেয় না,
- তাদের ওপর গযব নাজিল করুন
আবার যেমন নিচের সূরাটি লক্ষ্য করি –
- হে মানবসমাজ, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। [9]
- যে কেউ আল্লাহ ও রাসুলের অবাধ্যতা করে ও তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। [10]
- আর তোমরা আকাংক্ষা করো না এমন বিষয়ে যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের একের ওপর অন্যের শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ, নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত। [11]
উপরের সূরার আয়াতগুলো পড়ে স্পষ্টই মনে হচ্ছে, কথাগুলো সরাসরি আল্লাহ পাকের কথা নয়। মুহাম্মদের কথা, জিব্রাইল কিংবা অন্য কারো। কোরআনের প্রতিটি শব্দ যদি আল্লাহ পাকেরই বক্তব্য হয়ে থাকে, তাহলে এই সূরাগুলো হওয়ার কথা নিম্নরূপঃ
- হে মানবসমাজ, তোমরা তোমাদের পালনকর্তা অর্থাৎ আমাকে ভয় কর, আমি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছি ও আমি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছি।
- যে কেউ আমার এবং আমার রাসুলের অবাধ্যতা করে ও তার সীমা অতিক্রম করে, আমি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবো।
- আর তোমরা আকাংক্ষা করো না এমন বিষয়ে যাতে আমি তোমাদের একের ওপর অন্যের শ্রেষ্টত্ব দান করেছি। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ, নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আমার কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আমি সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত।
কোরআনের ৫১ নম্বর সূরাটি হচ্ছে সূরা যারিয়াত। এই সূরাটির ৪৬ থেকে শুরু করে ৫১ নম্বর আয়াত আসুন পড়ে দেখা যাক, [12] –
৪৬। আর ইতঃপূর্বে নূহের কওমকেও (আমি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম)। নিশ্চয় তারা ছিল ফাসিক কওম।
৪৭। আর আমি হাতসমূহ দ্বারা আকাশ নির্মাণ করেছি এবং নিশ্চয় আমি শক্তিশালী।
৪৮। আর আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কতইনা সুন্দর বিছানা প্রস্তুতকারী!
৪৯। আর প্রত্যেক বস্তু থেকে আমি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আশা করা যায়, তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।
৫০। অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তো তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী।
৫১। আর তোমরা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ নির্ধারণ করো না; আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী।
প্রশ্ন হচ্ছে, ৪৯ নম্বর আয়াত পর্যন্ত আমি বলতে যদি আল্লাহকে বোঝানো হয়, তাহলে ৫০ এবং ৫১ নম্বর আয়াতে এই আমিটি আসলে কে? একই সূরার এক আয়াতে আমি বলতে যদি আল্লাহকে বোঝানো হয়, অর্থাৎ আয়াতটি সরাসরি আল্লাহর বাণী হয়ে থাকে, পরের আয়াতে আমি বলতে নবীর কথা বোঝানো হচ্ছে কেন? আসুন আরো একটি সূরার দুইটি আয়াত পড়ে দেখি [13] –
১
আলিফ, লাম, রা; এটা এমন একটা গ্রন্থ, এর আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর সবিস্তারে ব্যাখ্যাকৃত মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞের নিকট হতে।
— Taisirul Quran
আলিফ লাম রা। এটি (কুরআন) এমন কিতাব যার আয়াতগুলি (প্রমাণাদী দ্বারা) মাযবূত করা হয়েছে। অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে; প্রজ্ঞাময়ের (আল্লাহর) পক্ষ হতে।
— Sheikh Mujibur Rahman
আলিফ-লাম-রা। এটি কিতাব যার আয়াতসমূহ সুস্থিত করা হয়েছে, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্ত্বার পক্ষ থেকে।
— Rawai Al-bayan
আলিফ–লাম-রা, এ কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট [১], সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত [২] প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্তার কাছ থেকে [৩];
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
২
(এটা শিক্ষা দেয়) যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ‘ইবাদাত করবে না, আমি অবশ্যই তাঁর পক্ষ হতে তোমাদের জন্য ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাতা।
— Taisirul Quran
এ (উদ্দেশে) যে, আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদাত করনা; আমি (নাবী) তাঁর (আল্লাহর) পক্ষ হতে তোমাদেরকে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
— Sheikh Mujibur Rahman
(এ মর্মে) যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করো না। নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য তাঁর পক্ষ থেকে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
— Rawai Al-bayan
যে, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করো না [১], নিশ্চয় আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা [২]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তাহলে, এই সূরাগুলোর এইসব বক্তব্য কী আল্লাহ নিজ মুখে বলেছেন? নাকি আল্লাহ বলেছেন একভাবে, জিব্রাইল বলেছে আরেকভাবে, আর মুহাম্মদ লিখেছে আরেকভাবে? মানে, ব্যক্তিভেদে বক্তব্যের কী পরিবর্তিত হয়েছে? সরাসরি আল্লাহর বানী হলে তো অন্যরকম হওয়া উচিত ছিল। যেমন ধরুন, সূরা কাউসার এর আয়াতগুলো পড়ি [14] –
আমি তোমাকে (হাওযে) কাওসার দান করেছি।
— Taisirul Quran
আমি অবশ্যই তোমাকে কাওছার দান করেছি,
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় আমি তোমাকে আল-কাউসার দান করেছি।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় আমরা আপনাকে কাউছার [১] দান করেছি।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা ফাতিহা নিয়ে আলোচনার সময় মুমিন ভাইদের বক্তব্য থাকে, সূরা ফাতিহা নাজিল হয়েছে এমনভাবে যেন বান্দারা তা পড়তে পারে। এটি যদি আল্লাহ পাকের বক্তব্য হিসেবে নাজিল হতো, তাহলে কেউ এই সূরাটি নামাজের সাথে পড়তে পারতো না। মুসুল্লিদের পড়ার সুবিধার্থেই সূরাটি এমনভাবে নাজিল হয়েছে। কারণ এভাবে না নাজিল হলে বান্দারা সূরাটি পড়ার সময় সেটি কোন সেন্স মেইক করতো না। কিন্তু একই কথা কী সূরা আল কাউসারের জন্য প্রযোজ্য নয়? এই সূরাটি যখন মুসুল্লিরা নামাজের মাঝে পড়েন, তারা আরবি ভাষাতে বলেন, নিশ্চয়ই আমি (মানে যিনি সূরাটি পড়ছেন তিনি) মুহাম্মদকে আল কাউসার দান করেছি। এর অর্থ হয়, মুসুল্লিরা মুহাম্মদকে কিছু একটা দিচ্ছেন। এই কথাটি কোন অর্থ বহন করে?
এবারে আসুন আরেকটি আয়াত পড়ি। লক্ষ্য করুন, আল্লাহ নিজেই নিজের কসম কেটে কিছু কথা বলছেন। এটি কেমন কথা যে, আল্লাহ নিজেই নিজের কসম দিচ্ছে! নাকি সত্য কথাটি হচ্ছে, এই আয়াতগুলো লেখার সময় তালগোল পাকিয়ে লেখা হয়েছে, যার কারণে কোন কথাটি মুহাম্মদের, কোন কথাটি জিবরাইলের আর কোন কথাটি আল্লাহর সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি? [15]
আল্লাহর কসম! তোমার পূর্বে আমি বহু জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু শয়ত্বান তাদের কাছে তাদের কার্যকলাপকে শোভনীয় করে দিয়েছিল, আর আজ সে-ই তাদের অভিভাবক, তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।
— Taisirul Quran
শপথ আল্লাহর! আমি তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; কিন্তু শাইতান ঐ সব জাতির কার্যকলাপ তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল; সুতরাং সে’ই আজ তাদের অভিভাবক এবং তাদেরই জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
— Sheikh Mujibur Rahman
আল্লাহর শপথ, আমি তোমার পূর্বে বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর শয়তান তাদের জন্য তাদের কর্মকে শোভিত করেছে। তাই আজ সে তাদের অভিভাবক। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক আযাব।
— Rawai Al-bayan
শপথ আল্লাহ্র! আমরা আপনার আগেও বহু জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি; কিন্তু শয়তান ঐসব জাতির কার্যকলাপ তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল; কাজেই সে –ই আজ [১] তাদের অভিভাকক আর তাদেরই জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে সূরা মুমতাহিনার ৭ নম্বর আয়াতটির বাঙলা এবং ইংরেজি অনুবাদ পড়ি [16]। বলুন তো, যিনি সকল কিছুর তাকদীর সৃষ্টির পূর্বেই লিখে রেখেছেন, সেই আল্লাহ পাক কেন নিজের বক্তব্যের মধ্যে সম্ভবত শব্দটি ব্যবহার করবেন? আমরা সাধারণ মানুষ নিজের কোন কাজের বিষয়ে আশা করা যায় বা সম্ভবত বা হয়তো শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকি। মাঝে মাঝে আমরা বলি, সম্ভবত আমি আজকে দুপুরে ইলিশ মাছ খাবো। বা আশা করি আজকে আমি ইলিশ মাছ খাবো। এর কারণ হচ্ছে, আমরা নিশ্চিতভাবে সবকিছু জানি না। অনেক কিছু বিচার বিবেচনা করে সাধারণ কিছু ধারণা করতে পারি। যদি বাসায় ইলিশ মাছ রান্না হয়ে থাকে, তার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, সম্ভবত আজ দুপুরে আমরা ইলিশ মাছ খাবো। কিন্তু ভিন্ন কিছুও ঘটতে পারে। যেমন ইলিশ মাছটি যদি বেড়াল খেয়ে যায়, তাহলে আর আমার ইলিশ মাছ খাওয়া আজ হবে না। এগুলো হচ্ছে নানা ধরণের সম্ভাবনা, তাই আমরা হয়তো বা সম্ভবত শব্দগুলো ব্যবহার করে থাকি। তবে আমরা আশাকরি সাম্ভাব্যতার ভিত্তিতে।
কিন্তু আল্লাহর ক্ষেত্রে তো এরকম শব্দ ব্যবহারের কোন কারণ নেই। কারণ আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই সবকিছু জানেন। এর আরবি শব্দটি লক্ষ্য করুন, শব্দটির অর্থ হয়তো, সম্ভবত, আশা করা যায় ইত্যাদি। তাহলে আল্লাহও কী কোন ঘটনা সম্পর্কে অনিশ্চিত? তিনিও কী আশা করেন? কেন করেন? কার কাছে আশা করছেন তিনি? তাহলে, এই কথাটি তো কোনভাবেই আল্লাহর কথা হতে পারে না। আল্লাহ নিজের সম্পর্কে কেন সম্ভবত শব্দটি ব্যবহার করে কিছু বলবেন? তাহলে কথাটি কী জিব্রাইলের, নাকি নবীর? নাকি আমাদের মত সাধারণ মানুষের? আল্লাহ লওহে মাহফুজে আসলে কী লিখে রেখেছিলেন? সম্ভবত আমি এটি করবো, সেটি করবো? সেটি কীভাবে সম্ভব? [17]
সম্ভবত আল্লাহ তোমাদের মধ্যে আর তাদের মধ্যেকার যাদেরকে তোমরা শত্রু বানিয়ে নিয়েছ তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিবেন (তাদের মুসলিম হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে)। আল্লাহ বড়ই শক্তিমান, আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু।
— Taisirul Quran
যাদের সাথে তোমাদের শত্রুতা রয়েছে সম্ভবতঃ আল্লাহ তাদের ও তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিবেন; আল্লাহ সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু।
— Sheikh Mujibur Rahman
যাদের সাথে তোমরা শত্রুতা করছ, আশা করা যায় আল্লাহ তোমাদের ও তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আর আল্লাহ সর্ব শক্তিমান এবং আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
— Rawai Al-bayan
যাদের সাথে তোমাদের শক্ৰতা রয়েছে সম্ভবত আল্লাহ তাদের ও তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন [১] এবং আল্লাহ্ ক্ষমতাবান। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
Perhaps Allah will put, between you and those to whom you have been enemies among them, affection. And Allah is competent,1 and Allah is Forgiving and Merciful.
— Saheeh International
অনেক মুসলিমই বলবেন, এগুলো আল্লাহ পাক বলে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, কীভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করতে হয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এই সূরাটিও কী আল্লাহর মুখের বাণী? [18]
তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।
এরকম অসংখ্য সূরা আছে, যেখানে মূল বক্তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ বলেই বোঝা যায়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহ মুহাম্মদের কাছে সূরাটি একভাবে পাঠিয়েছিলেন, আর মুহাম্মদ সূরাটি নিজের মত করে বলেছেন। আল্লাহ আসলে বলেছিলেন,
আমি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবো, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আমি(আল্লাহ) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আমার (আল্লাহর) প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আমার (আল্লাহর) দল। জেনে রাখ, আমার (আল্লাহর) দলই সফলকাম হবে।
এই বক্তব্যটি জিব্রাইলকে বলা হয়েছিল, যেখানে জিব্রাইল কথাটি শুনে মুহাম্মদকে বলেছেন, মুহাম্মদ মুসলিমদের বলেছেন। যার কারণে বাচ্য পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
যেমন ধরুন, আল্লাহ বলছেঃ “আমি সর্বশক্তিমান। আমি সব করতে সক্ষম।” এই কথাটি জিব্রাইল শুনলো। এবং তিনি মুহাম্মদকে বললেন, “আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি সব করতে সক্ষম।” মুহাম্মদ কথাটি শুনলো। এবং তিনি মুসলিমদের বললেন যে, আল্লাহর কাছ থেকে ওহী আসলো যে, আল্লাহ জানিয়েছেন, “আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি সব করতে সক্ষম। ”
লক্ষ্য করে দেখুন, একই বক্তব্য, তিনজনার কাছে এসে বক্তব্যগুলোর কিছু পরিবর্তন ঘটে গেল। তাহলে, কোরআনে মুহাম্মদ বা জিব্রাইল বা বান্দাদের যেসকল বক্তব্য পাওয়া যায়, সেগুলো তো আল্লাহর সরাসরি বক্তব্য হতে পারে না। আল্লাহ তো কথাগুলো সেভাবে বলবেন না।
আবার ধরুন, নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করুনঃ [19]
তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে।
এবারে ভেবে বলুন তো, উপরের আয়াতে তিনিই কে এবং আমি কে? একই বাক্যের মধ্যে যদি তিনি এবং আমি ব্যবহৃত হয়, তা কী একই জনকে উদ্দেশ্য করে বলা হতে পারে?
তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ সৃজন করেছেন যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি।
তিনিই তোমাদের কে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অনন্তর একটি হচ্ছে তোমাদের স্থায়ী ঠিকানা ও একটি হচ্ছে গচ্ছিত স্থল। নিশ্চয় আমি প্রমাণাদি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি তাদের জন্যে, যারা চিন্তা করে।
লক্ষ্য করুন, একই আয়াতে একবার বলা হচ্ছে তিনি, আবার বলা হচ্ছে আমি। এই আয়াতটির মূল বক্তা কে? আল্লাহ, নবী, জিব্রাইল না বান্দা?
আবার ধরুন, নিচের আয়াতটি যদি পর্যালোচনা করিঃ [22]
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।
উপরের সূরার আয়াতটি কার বক্তব্য? প্রথম লাইনটি আল্লাহ বা নবী বা জিব্রাইলের বক্তব্য হতে পারে। কিন্তু পরের লাইনগুলো তো পরিষ্কারভাবেই মানুষের বক্তব্য। কোন মানুষের প্রার্থণা, বা প্রত্যাশা। মানুষের কথাবার্তা কোরআনে আল্লাহর বানী হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে কীভাবে? তাছাড়া, আল্লাহ শুরুর লাইনে যেখানে বলেই দিচ্ছেন, আল্লাহ সাধ্যাতীত কাজের ভার কারো ওপর চাপান না, পরের লাইনে আবার বলা হচ্ছে, আমাদের ওপর এমন ভার চাপিও না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। পূর্ববর্তীদের ওপর যা চালিয়েছো! আয়াতটির মধ্যে প্রবল স্ববিরোধীতা লক্ষ্য করছেন?
আসুন আরেকটি আয়াত পড়ি। এখানে পড়ে বলুন তো, এটি কার বাণী, আল্লাহর, জিবরাইলের নাকি মুহাম্মদের? [23]
তোমরা যে সব বিষয়ে মতভেদ কর তার মীমাংসা আল্লাহর উপর সোপর্দ. সেই আল্লাহই আমার প্রতিপালক, আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি, আর তাঁরই অভিমুখী হই।
— Taisirul Quran
তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন, ওর মীমাংসাতো আল্লাহরই নিকট। বলঃ তিনিই আল্লাহ! আমার রাব্ব। আমি নির্ভর করি তাঁর উপর এবং আমি তাঁরই অভিমুখী!
— Sheikh Mujibur Rahman
আর যে কোন বিষয়েই তোমরা মতবিরোধ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে; তিনিই আল্লাহ, আমার রব; তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই।
— Rawai Al-bayan
আর তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ করা না কেন-–তার ফয়সালা তো আল্লাহরই কাছে। তিনিই আল্লাহ্ — আমার রব; তাঁরই উপর আমি নির্ভর করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এরকম ভাষাগত এবং ব্যাকরণগত আরো অসংখ্য সমস্যা পাওয়া যায়, যার তালিকা আমরা ভবিষ্যতে প্রস্তুত করবো বলে আশা রাখি। আপাতত অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করছি।
আল্লাহর বাণীতে অসামাঞ্জস্য
কোরআন আল্লাহর বাণী হয়ে থাকলে, কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে নানা ধরণের অসামাঞ্জস্য কেন পাওয়া যায়, সেটি একটি চিন্তার বিষয়। দীর্ঘ ২৩ বছরে ক্রমে ক্রমে কোরআন নাজিল হয়েছিল বলে আমরা জানি। সেই কারণেই কী নানা ধরণের সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়? এই লেখাতেই আমরা দলিল প্রমাণ পেশ করবো, যেখানে দেখা যাবে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নাজিল হওয়ার কারণে খোদ নবী মুহাম্মদ কোরআনের আয়াত ভুলে যেতেন। মানুষ হিসেবে ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। এই ভুলে যাওয়ার কারণেই কী এক এক সময় এক এক আয়াত নাজিল হয়ে যেত, যা আসলে পরস্পর বিরোধী বা একটি অন্যটিকে ভুল প্রমাণ করে? আসুন একটি উদাহরণ দেখি।
কোরআনে জাহান্নামীদের খাদ্য সম্পর্কে সূরা আল গাশিয়াহ্তে বলা হয়েছে, কাঁটাযুক্ত গুল্ম ছাড়া তাদের সেখানে আর কোন খাবার দেয়া হবে না। [24]
তাদেরকে খাদ্য হিসাবে শিবরিক নামীয় নোংরা ও দুর্গন্ধময় তৃণলতা যা শুকিয়ে গেলে বিষাক্ত হয়ে যায় তা ব্যতীত অন্য কোন খাবার দেয়া হবে না।
— Bengali Mokhtasar
কাঁটাযুক্ত শুকনো ঘাস ছাড়া তাদের জন্য আর কোন খাদ্য থাকবে না।
— Taisirul Quran
তাদের জন্য বিষাক্ত কন্টক ব্যতীত খাদ্য নেই –
— Sheikh Mujibur Rahman
তাদের জন্য কাঁটাবিশিষ্ট গুল্ম ছাড়া কোন খাদ্য থাকবে না।
— Rawai Al-bayan
তাদের জন্য খাদ্য থাকবে না কাঁটাযুক্ত গুল্ম ছাড়া [১] ,
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
অবাক কাণ্ড হচ্ছে, সূরা আল হাক্কাহ এর একটি আয়াতে বলা হয়েছে আরেকটি খাদ্যের কথা, যা ছাড়া অন্য কোন খাদ্য থাকবে না। আসুন সেই আয়াতটি দেখি [25] –
তার খাবারের জন্য জাহান্নামীদের শরীরের পুঁজ ব্যতীত অন্য কোন খাদ্য থাকবে না।
— Bengali Mokhtasar
ক্ষত হতে পড়া পুঁজ ছাড়া কোন খাদ্য নেই,
— Taisirul Quran
এবং কোন খাদ্য থাকবেনা, ক্ষতনিঃসৃত স্রাব ব্যতীত।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর ক্ষত-নিংসৃত পূঁজ ছাড়া কোন খাদ্য থাকবে না,
— Rawai Al-bayan
আর কোনো খাদ্য থাকবে না ক্ষত নিঃসৃত স্রাব ছাড়া,
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আরো অদ্ভুত কাণ্ড হচ্ছে, সূরা আস সাফফাতে বলা হয়েছে আরো একটি খাদ্যের কথা, আরেকটি গাছের কথা। আসুন সেই আয়াতগুলোও পড়ি, [26]
উপরোল্লিখিত এই স্থায়ী নিয়ামত যা আল্লাহ সেসব বান্দার উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করেছেন যাদেরকে তিনি তাঁর আনুগত্যের জন্য খাঁটি করেছেন তা সম্মান ও অবস্থানের ক্ষেত্রে উত্তম, না কি ‘যাক্কুম’ নামক কুরআনের অভিশপ্ত বৃক্ষ যা কাফিরদের খাদ্য। যা না পুষ্ট করে, না ক্ষুধা নিবারণ করে?!
— Bengali Mokhtasar
আপ্যায়ন হিসেবে এটা উত্তম, না, (জাহান্নামের) জাক্কুম গাছ?
— Taisirul Quran
আপ্যায়নের জন্য কি এটাই শ্রেষ্ঠ, না কি যাক্কুম বৃক্ষ?
— Sheikh Mujibur Rahman
আপ্যায়নের জন্য এগুলো উত্তম না যাক্কূম* বৃক্ষ? * অতি তিক্ত স্বাদযুক্ত জাহান্নামের এক গাছ।
— Rawai Al-bayan
আপ্যায়নের জন্য কি এটাই শ্রেয়, না যাক্কুম গাছ?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
কাফিররা এর তিতা ও বিস্বাদ ফল ভক্ষণ করবে এবং তা দিয়ে তাদের খালি উদর পূর্ণ করবে।
— Bengali Mokhtasar
জাহান্নামের অধিবাসীরা তাত্থেকে খাবে আর তা দিয়ে পেট পূর্ণ করবে।
— Taisirul Quran
ওটা হতে তারা আহার করবে এবং উদর পূর্ণ করবে ওটা দ্বারা।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় তারা তা থেকে খাবে এবং তা দিয়ে পেট ভর্তি করবে।
— Rawai Al-bayan
তারা তো এটা থেকে খাবে এবং উদর পূর্ণ করবে এটা দিয়ে [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এ আয়াতগুলো যদি কোন মানুষের লিখিত হতো, তাহলে আমরা সহজেই ব্যাখ্যা করতে পারতাম যে, জাহান্নামে এই তিন ধরণের খাবারই দেয়া হবে। মানুষের ভুল ত্রুটি হতে পারে, হয়তো ভুলে গেছেন আগে কী বলেছেন। তাই লিখেছেন ঐ খাবার ছাড়া আর কিছু দেয়া হবে না। কিন্তু আল্লাহ থেকে আসা আয়াতে কীভাবে এরকম মারাত্মক ভুল থাকতে পারে? ২৩ বছরে মানুষের ভুলে যাওয়া মেনে নেয়া যায়, কিন্তু আল্লাহর কোরআন, তাও আবার সেটি লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত, সেটিতে কীভাবে এরকম ত্রুটি থাকে?
লাওহে মাহফুজ কী?
লাওহে মাহফুজ কাকে বলে, এই নিয়ে মুসলিমগণদের মধ্যেই নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। এই বিষয়ে জেনে নিই। [27]
- ইবনে মানযুর বলেন:
লাওহেঃ “কাঠের প্রশস্ত যে কোন পৃষ্ঠকে লাওহ বলে।” - আযহারি বলেনঃ কাঠের পৃষ্ঠকে লাওহ বলা হয়। কাঁধের হাড়ের ওপর যদি কিছু লেখা হয় সেটাকেও লাওহ বলা হয়। যেটার উপর কিছু লেখা হয় সেটাই লাওহ।
মানে সুরক্ষিত ফলক। আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছাসমূহের সংরক্ষণাগার। - ইবনে কাছির বলেন:
লাওহে মাহফুযে তথা সুরক্ষিত ফলকে রয়েছেঃ অর্থাৎ এটি উচ্চ পরিষদ কর্তৃক সংযোজন, বিয়োজন, বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে সংরক্ষিত।(তাফসিরে ইবনে কাছির (৪/৪৯৭, ৪৯৮) - ইবনুল কাইয়্যেম বলেনঃ
এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, শয়তানদের পক্ষে কুরআন নিয়ে অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ কুরআন যে স্থানে রয়েছে সে স্থানটি শয়তান সেখানে পৌঁছা থেকে সংরক্ষিত। এবং কুরআন নিজেও সংরক্ষিত; কোন শয়তান এতে সংযোজন-বিয়োজন করার ক্ষমতা রাখে না।
আল্লাহ্ তাআলা কুরআন যে আধারে রয়েছে সে আধার সংরক্ষণ করেছেন এবং কুরআনকেও যাবতীয় সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করেছেন। কুরআনের শব্দাবলি যেভাবে হেফাযত করেছেন অনুরূপভাবে কুরআনের অর্থকেও বিকৃতি থেকে হেফাযত করেছেন। কুরআনের কল্যাণে এমন কিছু ব্যক্তিকে নিয়োজিত করেছেন যারা কোন প্রকার বাড়তি বা কমতি ছাড়া কুরআনের হরফগুলো মুখস্ত রাখে এবং এমন কিছু ব্যক্তি নিয়োজিত করেছেন যারা কুরআনের অর্থকে বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করে।”(দেখুন: আত-তিবইয়ান ফি আকসামিল কুরআন, পৃষ্ঠা-৬২) - কিছু কিছু তাফসিরে এসেছে যে, ‘লাওহে মাহফুয’ হচ্ছে- ইস্রাফিলের কপালে; অথবা সবুজ রঙের মণি দিয়ে তৈরী এক প্রকার সৃষ্টি; কিংবা এ জাতীয় অন্যান্য ব্যাখ্যা।
কোরআনের আদি ভাষা কী?
শুরুতেই যেই প্রশ্নটি আসে, তা হচ্ছে, লাওহে মাহফুজে আল্লাহ পাকের লিখিত কোরআনের ভাষা কী ছিল? সেটি অর্থাৎ আল্লাহ পাকের মাতৃভাষা কী আরবি? নাকি আল্লাহ পাক এবং ফেরেশতাদের অন্য কোন ভাষা ছিল? সেই ভাষাটি কী? এবং সেই ভাষা থেকে আরবি ভাষাতে অনুবাদ কে করলো? কোনকিছু অনুবাদ করা হলে ভাষাগত কারণে নানাবিধ গরমিল থাকে। তাই অনুবাদের আগে সেটি কোন ভাষাতে ছিল তা জানা জরুরি। আল্লাহ পাক যে শব্দ উচ্চারণ করেন, তা আমরা হাদিস থেকে জানি। তিনি শব্দ উচ্চারণ করে থাকলে সেই শব্দ এবং বাক্যগুলো কোন ভাষাতে ছিল, সেটি গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন।
প্রাচীনকালে আরব উপদ্বীপ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায়, প্রচলিত পুরাতন আরবি ভাষার দুটি শাখা ছিল। প্রথমটি ছিল সাফাইটিক (Safaitic), যা ১০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। আরেকটি আরবি ভাষার প্রকরণ ছিল হিসমাইক (Hismaic) যা ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এই পুরাতন আরবি উপভাষাসমূহ এরপরে একত্রিত হয়ে নানা সংযোজন বিয়োজনের পরে ক্লাসিক্যাল আরবি ভাষার উদ্ভব হয়। কোরআন এবং অন্যান্য সাহিত্য রচনা লেখার জন্য সেই ক্লাসিক্যাল আরবি ভাষাই ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত আরবি ভাষার মধ্যে উচ্চারণগত নানা বৈচিত্র্য ছিল। কোরআন কুরাইশদের উচ্চারণরীতি অনুসরণ করে রচিত হয়েছিল বলে জানা যায়। পরবর্তীতে নানা গোত্রের ভিন্ন ভিন্ন ডায়লেক্ট একত্রিত করে কোরআন সংকলনের সময় কিছু সমস্যার উদ্রেক হয়েছিল। সবকিছু এই লেখাটিতে অন্তর্ভূক্ত করলে এই লেখাটি অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে বিধায় সে বিষয়ে আলাদা লেখা পড়তে পারেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত পড়ার জন্য এই লেখাটি পড়তে হবে। [28]
কোরআন কখন প্রথম লিখিত?
ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন, মুসলমানরা বিশ্বাস করে এটি আল্লাহর দ্বারা প্রেরিত সর্বশেষ আসমানি কেতাব। প্রথম অবস্থায় সৃষ্টির শুরুতে আল্লাহ পাক লাওহে মাহফুজ নামক জায়গাতে কোরআন লেখেন, লিপিবদ্ধ করেন, এবং এরপরে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ, কোরআনে কোন কোন সূরা অন্তর্ভূক্ত থাকবে, সেগুলো কেমন হবে, সেগুলোর ভাষা এবং বাক্যের গঠন কেমন হবে, কোন কোন চরিত্র নিয়ে আলোচনা থাকবে, এই সবই আসলে মহাবিশ্ব সৃষ্টির একদম শুরুতে আল্লাহ পাক লিখে রাখেন। এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পৃথিবীতে নবী মুহাম্মদকে প্রেরণ এবং তার মাধ্যমে কোরআন নাজিলের বিষয়টি আল্লাহ সেই শুরুতেই নির্ধারণ করে ফেলেন। এরপরে কোরআন নাজিলের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নবী মুহাম্মদকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। কোরআনের আয়াত সমূহ নাজিলের জন্য উপযুক্ত প্রেক্ষাপট এবং ঘটনাবলী আল্লাহ পাক নিজেই সৃষ্টি করেন, এবং সেই পরিকল্পনা অনুসারে কোরআন নাজিল করেন। কারণ উপযুক্ত প্রেক্ষাপট না ঘটলে আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা সম্পন্ন হতো না। [29]
বরং এটা মহান কোরআন, লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ।
নিচের হাদিসটি এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নিচের হাদিসটিতে পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে যে [30] [31] –
সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৫/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ নাই।
২১৫৮. ইয়াহইয়া ইবন মূসা (রহঃ) ….. আবদুল ওয়াহিদ ইবন সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার মক্কায় এলাম। সেখানে আতা ইবন আবু রাবাহ (রহঃ) এর সঙ্গে দেখা করলাম। তাঁকে বললামঃ হে আবূ মুহাম্মদ, বাসরাবাসরীরা তো তাকদীরের অস্বীকৃতিমূলক কথা বলে। তিনি বললেনঃ প্রিয় বৎস, তুমি কি কুরআন তিলাওয়াত কর? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ সূরা আয-যুখরুখ তিলাওয়াত কর তো। আমি তিলাওয়াত করলামঃ
হা-মীম, কসম সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি তা অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় কুরআন রূপে, যাতে তোমরা বুঝতে পার। তা রয়েছে আমার কাছে উম্মূল কিতাবে, এ তো মহান, জ্ঞান গর্ভ (৪৩ঃ ১, ২, ৩, ৪)।
তিনি বললেনঃ উম্মূল কিতাব কি তা জান? আমি বললামঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এ হল একটি মহাগ্রন্থ, আকাশ সৃষ্টিরও পূর্বে এবং যমীন সৃষ্টিরও পূর্বে আল্লাহ তাআলা তা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এতে আছে ফির‘আওন জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত, এতে আছে তাব্বাত ইয়াদা আবী লাহাবীও ওয়া তাব্বা (تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ) আবূ লাহাবের দুটি হাত ধ্বংস হয়েছে আর ধ্বংস হয়েছে সে নিজেও।
আতা (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যতম সাহাবী উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর পুত্র ওয়ালীদ (রহঃ)-এর সঙ্গে আমি সাক্ষাত করেছিলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলামঃ মৃত্যুর সময় তোমার পিতা কি ওয়াসীয়ত করেছিলেন?
তিনি বললেনঃ তিনি আমাকে কাছে ডাকলেন। বললেনঃ হে প্রিয় বৎস, আল্লাহকে ভয় করবে। যেনে রাখবে যতক্ষণ না আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং তাকদীরের সব কিছুর ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনবে ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি কখনো আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারবে না। তা ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় যদি তোমার মৃত্যু হয় তবে জাহান্নামে দাখেল হতে হবে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন। এরপর একে নির্দেশ দিলেন, লিখ, সে বললঃ কি লিখব? তিনি বললেনঃ যা হয়েছে এবং অনন্ত কাল পর্যন্ত যা হবে সব তাকদীর লিখ। সহীহ, সহিহহ ১৩৩, তাখরিজুত তহাবিয়া ২৩২, মিশকাত ৯৪, আযযিলাল ১০২, ১০৫, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৫৫ (আল মাদানী প্রকাশনী)
(আবু ঈসা বলেন) এ হাদীসটি এ সূত্রে গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
ইসলামিক বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহ ফেরেশতা জিব্রাইল এর মাধ্যমে ইসলামিক নবী মুহাম্মাদ এর কাছে মৌখিকভাবে কোরআনের আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন। তবে শুধুমাত্র যে জিব্রাইল মারফতই কোরআন নাজিল হয়েছে, সেটিও সত্য নয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারেই কোরআন নাজিল হয়েছে বেশ কয়েকটি উপায়ে।
আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা
অনেকেই বলে থাকেন, আদম নিজ ইচ্ছাতেই সজ্ঞানে নিজের ফ্রি উইল বা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করে গন্দম খাওয়ার অপরাধ করেছিল। তাই এর সম্পূর্ণ দায় আদম এবং হাওয়ার। এখানে আল্লাহ পাকের কোন দায় ছিল না। আবার অনেকে বলেন, এটি ছিল আল্লাহ পাকের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। আল্লাহ পাকই ঠিক সেইরকম পরিস্থিতিই সৃষ্টি করেছিলেন, যেন আদম সেই ফল খায় এবং পৃথিবীতে নির্বাসিত হয়। কারণ পৃথিবীতে নির্বাসিত না হলে আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা সফল হতো না। যদি আল্লাহ পাকই সেরকম পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে আদমকে দিয়ে তিনি গন্দম খাইয়েছেন, এবং শয়তানকেও একই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। সেই বিষয়টি আশাকরি এই রেফারেন্সগুলো যাচাই করবার পরে আপনাদের কাছে খোলাসা হয়ে যাবে।
শুরুতেই এই সম্পর্কিত সহিহ হাদিসগুলো পড়ে নিই। [32] [33]
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ ২. আদম (আঃ) ও মুসা (আঃ) এর বিতর্ক
৬৫০১। মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম, ইবরাহীম ইবনু দীনার, ইবনু আবূ উমর মাক্কী ও আহমাদ ইবনু আবদ দাব্বিয়্যু ও তাঊস (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম (আলাইহিস সালাম) ও মূসা (আলাইহিস সালাম) এর মধ্যে বিতর্ক হয়। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে আদম! আপনি আমাদের পিতা, আপনি আমাদের বঞ্চিত করেছেন এবং জান্নাত থেকে আমাদের বের করে দিয়েছেন। তখন আদম (আলাইহিস সালাম) তাঁকে বললেন, আপনি তো মূসা। আল্লাহ তা’আলা আপনার সঙ্গে কথা বলে আপনাকে মনোনীত (সম্মানিত) করেছেন এবং আপনার জন্য তার হাতে লিখে (কিতাব তাওরাত) দিয়েছেন। আপনি কি এমন বিষয়ে আমাকে তিরস্কার করছেন যা আমার সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বে আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে রেখেছেন।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আদম (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর তর্কে বিজয়ী হলেন।
আর ইবনু আবূ উমর ও ইবনু আবাদাহ বর্ণিত হাদীসে তাদের একজন বলেছেন,خَطَّ অন্যজন বলেছেন,كَتَبَ তিনি তার হাতে তোমার জন্য তাওরাত লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
অর্থাৎ, আদমকে সৃষ্টির বহু পূর্বেই আল্লাহ পাক সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা করে রাখেন যে, তিনি পৃথিবীতে মানুষ পাঠাবেন, এবং মানুষের কাছে ওহী পাঠাবেন। তিনি যেহেতু সূরা লাহাবের মত নির্দিষ্ট মানুষকে উদ্দেশ্য করে কী সূরা নাজিল হবে, সেটিও সৃষ্টির শুরুতে সেই লাওহে মাহফুজে লিখে রাখেন, সেহেতু আবু লাহাবের জন্ম হবে, সে কাফের হবে, নবী মুহাম্মদের বিরোধীতা করবে, এই সবই আগে থেকে নির্দিষ্ট করা ছিল। আবু লাহাব যদি সেইদিনই ইসলাম গ্রহণ করে ফেলতো, তাহলে আল্লাহ পাকের আগে থেকে লিখে রাখা সূরা লাহাব পরিবর্তন করতে হতো। অর্থাৎ এখানে আবু লাহাবের স্বাধীন কোন ইচ্ছাশক্তি ছিল না। তার কাফের হওয়াটাই অবশ্যম্ভাবী ছিল।
আলোচনার খাতিরে, আবু বকর এবং আবু লাহাব এই দুইজনকে উদাহরণ হিসেবে ধরে নিই। আল্লাহ আবু লাহাবের বিরুদ্ধে সূরা লিখে বসে আছে সেই সৃষ্টির শুরুতে। এবং আবু বকর যে নবীর বন্ধু হবে, সেটাও পূর্ব নির্দিষ্ট। এখন, এমন হওয়া কী সম্ভব ছিল যে, আবু বকর স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি কাজে লাগিয়ে কাফের হলেন, আর আবু লাহাবা হয়ে গেলেন মুসলিম? না, এমনটি সম্ভব ছিল না। কারণ তাহলে আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা পুরোটাই নষ্ট হতো। তখন হয়তো ধ্বংস হোক আবু বকরের হস্তদ্বয় বলে আল্লাহ পাকের ঘৃণাত্মক সূরা নাজিল করতে হতো। কিন্তু এমনটি আদৌ সম্ভব ছিল না। কারণ আল্লাহ পাক আবু লাহাবের বিরুদ্ধে সূরা আগে থেকেই লিখে রেখেছেন।
এই বিষয়ে আরো কিছু সহিহ হাদিস দেখে নেয়া যাক [34] [35]
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ ২. আদম (আঃ) ও মুসা (আঃ) এর বিতর্ক
৬৫০৭। আবূ তাহির আহমাদ ইবনু আমর ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু সারহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁআলা সমগ্র সৃষ্টির ভাগ্যলিপি আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, সে সময় আল্লাহর আরশ পানির উপরে ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ)
সূরা লাহাবটি আল্লাহ পাক সেই মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুতে লিখিতভাবে লাওহে মাহফুজে সংরক্ষণ করেন। এরপরে আবু লাহাবের সাথে ইসলামের নবি হযরত মুহাম্মদের দীর্ঘমেয়াদি শত্রুতা সৃষ্টি করেন, যেন এই সূরাটি প্রেরণ করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এবং আবু লাহাবের অন্তরে মোহর মেরে দেন, যেন আবু লাহাব কোন অবস্থাতেই ইসলাম গ্রহণ না করে। কারণ আবু লাহাব ইসলাম গ্রহণ করে ফেললে আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা ধ্বংস হয়ে যেতো। আল্লাহ পাক যেই আবু লাহাব সূরাটি সৃষ্টির আদিতে লিখে রেখেছিলেন, তা আর নাজিলের প্রয়োজন হতো না। তখন আবু লাহাবের সূরাটিকে আবার আল্লাহ পাকের পালটে ফেলতে হতো। তাই আবু লাহাবের সাথে মুহাম্মদের শত্রুতা আল্লাহ পাক নিশ্চিতভাবেই সচেতনভাবে তৈরি করেছিলেন, সূরাটি নাজিলের পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। আল্লাহ পাক কোরআনে নিজেই বলেছেন [36] [37]
আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।
যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
উপরের আয়াত দু’টো থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, আবু লাহাবের মত কয়েকজনকে বা বহু সংখ্যক মানূষকে আল্লাহ পাক নিজেই পথভ্রষ্ট করেছিলেন, সূরা আবু লাহাব নাজিলের পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য। আবু লাহাবের মত মানুষগণ যদি সেই সময় ইসলাম কবুল করে নিতো, আল্লাহ যদি আবু লাহাবকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে তার মন নরম করে দিতেন, তাহলে আল্লাহ পাকের আগে থেকে লিখে রাখা ঐ সূরাটি অর্থহীন হয়ে যেতো। সেটা আর নাজিলের দরকার হতো না। তাই বোঝা যাচ্ছে, ইসলামী বিশ্বাস অনুসারেই, সকল কিছুই পরিকল্পিত এবং পূর্ব নির্ধারিত। এখানে আবু লাহাবের মত সামান্য মানুষের চাইতে জরুরি হচ্ছে, আল্লাহ পাকের মহাপরিকল্পনা।
তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না, গন্দম ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে আদমের তেমন কোন অপরাধ ছিল না, যেহেতু সেটি আল্লাহর পরিকল্পনারই অংশ। শয়তান এবং আদম তার পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করেছে মাত্র। এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, ইবলিশ বা শয়তান যে আল্লাহ পাকের নির্দেশ অমান্য করবেন, হযরত আদমকে সিজদা করতে রাজি হবেন না, এটি ছিল আল্লাহ পাকের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। কারণ সেদিন যদি ইবলিশ আদমকে সিজদা করতো, তাহলে আদমকে পৃথিবীতে পাঠাবার প্রয়োজনও হতো না, পৃথিবীতে মানুষ জাতি এবং মানব সভ্যতার বিকাশ হতো না, এবং নবী মুহাম্মদকে পাঠিয়ে মানুষকে হেদায়াতেরও দরকার হতো না। নবী মুহাম্মদকে পাঠিয়ে মানুষকে যেহেতু হেদায়াত করতেই হবে, কোরআন নাজিল করতেই হবে, সেহেতু ইবলিশকে সেই সময়ে আল্লাহর আদেশ অমান্য করতেই হতো। নইলে আল্লাহ পাকের এক বিশাল পরিকল্পনা মাঠে মারা যেতো।
এতো গেল ইসলামী বিশ্বাসের আলোচনা। কিন্তু সত্যিকার ভাবে কোরআন কবে প্রথমবার লিখিত হয়েছিল?
শবে কদরের রাত
কোরআন থেকে আমরা জানতে পারি, আল্লাহ পাক লাওহে মাহফুজে প্রথম কোরআন লিপিবদ্ধ করেন, এবং শবে কদরের রাতে তিনি একসাথে পুরো কোরআন প্রথম আসমানে নাজিল করেন। সেখান থেকে ধাপে ধাপে মুহাম্মদের কাছে জিব্রাইল ওহী নিয়ে আসতো। কিন্তু সেটি সত্য হলে, লাওহে মাহফুজ থেকে একবার কোরআনের আয়াত চলে আসার পরে সেটি আবারো সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন সম্ভব নয়। আল্লাহর পাঠানো আয়াত যে সংশোধিত, পরিমার্জিত, পরিশোধিত হয়েছে, নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো সংস্কার করতে হয়েছে, এই লেখার পরবর্তী অংশে সেগুলোর অসংখ্য প্রমাণ পাবেন। অথচ কোরআনেই বলা আছে, [38] [39]
নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।
আল্লাহ কোরআনের অন্যত্র ঘোষণা বলেন,
হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ কোরআন হুবুহু যেমন আছে তেমন একই রাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে নাজিল হয়ে থাকলে, আল্লাহর হুকুমে কোন আয়াতের সংশোধন করতে হলে, সেই সংশোধিত আয়াতগুলো কোথা থেকে আসতো? পরিবর্তনগুলো কী লাওহে মাহফুজে লিখিত কোরআনে সংশোধন করা হয়েছে? নাকি লাওহে মাহফুজে যা লেখা, আমাদের আজকের কোরআন ভিন্ন রকম?
আরো ভালভাবে বুঝি। প্রথমে লাওহে মাহফুজে লিখিত হলো। সেটি হুবুহু প্রথম আসমানে আসলো। এরপরে জিব্রাইল ওহী নিয়ে আসলো। মুহাম্মদ তা সবাইকে শোনালেন। এরপরে আরশে বসা আল্লাহ আবার তার পাঠানো আয়াতের সংশোধনী পাঠালেন। জিব্রাইল আবার আরশে গিয়ে লাওহে মাহফুজ থেকে সংশোধনী নিয়ে প্রথম আসমানে আসলেন। সেইখান থেকে আবার মুহাম্মদের কাছে সংশোধত ওহী আসলো। মুহাম্মদ আবারো তার অনুসারীদের নতুন এবং সংশোধিত আয়াত পড়ে শোনালেন। খুবই ভয়াবহ কাণ্ডকারখানা!
ওহী নাজিলের পদ্ধতি
ওহী হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক রাসূলদের প্রতি প্রেরিত বার্তা বা নির্দেশনা। ইসলামী বিশ্বাস মতে কোরআন নাজিল হয়েছিল বেশ কয়েকটি পদ্ধতিতে।
ঘণ্টা ধ্বনির পদ্ধতি
হারেস ইবনে হিশাম (রা.) রাসুল (সা.) কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ওহি আসে ঘণ্টার আওয়াজের মতো। এটা আামার জন্য সবচেয়ে কষ্টকর।’ [40] [41] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ ওহীর সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১/ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল
২। আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার প্রতি ওহী কিভাবে আসে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন সময় তা ঘন্টাধ্বনির ন্যায় আমার নিকট আসে। আর এটি-ই আমার উপর সবচাইতে কষ্টদায়ক হয় এবং তা সমাপ্ত হতেই ফিরিশতা যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নিই, আবার কখনো ফিরিশতা মানুষের আকৃতিতে আমার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি প্রচন্ড শীতের দিনে ওহী নাযিলরত অবস্থায় তাঁকে দেখেছি। ওহী শেষ হলেই তাঁর কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়ত।
তাহক্বীক: মারফু হাদিস।
তাখরীজ: ( বুখারীঃ তা.পা ২, ৩২১৫; তিরমিযীঃ ৩৯৯৪; নাসাঈঃ ৯৪২; আহমাদঃ ২৬৯৫২; মুয়াত্তাঃ ৪৭৯। মুসলিম ৪৩/২৩, হা: ২৩৩৩ , আহমাদ ২৫৩০৭ ( আধুনিক প্রকাশনী. ২ , ই.ফা. ২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
ঠিক একইসাথে, মুহাম্মদ এটিও বলেছেন যে, ঘণ্টা হচ্ছে শয়তানের বাঁশি। [42]
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৮/ পোশাক ও সাজসজ্জা
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২২. সফরে কুকুর ও ঘণ্টা রাখা মাকরূহ
৫৩৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতায়বা ও ইবনু হুজর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঘন্টা শয়তানের বাঁশি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তারমানে দেখা যাচ্ছে, নবীর কাছে যখন ওহী আসতো, তখন ঘণ্টাধ্বনির শব্দ হতো। আবার ঘণ্টা হচ্ছে শয়তানের বাঁশি, এটিও নবীরই বক্তব্য।
মানবাকৃতিতে ফেরেশতার আগমন
মুহাম্মদের কাছে হজরত জিবরাঈল মানবাকৃতিতে আসতেন। এ সম্পর্কে মুহাম্মদ বলেছেন, ‘কখনও কখনও ফেরেশতা মানবাকৃতি ধারণ করে আমার কাছে আসত। এ পদ্ধতিটি আমার জন্য সহজ ছিল।’ সাহাবিদের মধ্যে দাহয়িয়াতুল কালবি এর চেহারা নিয়ে জিবরাঈল আসতেন। এর কারণ হিসেবে মুহাদ্দিসরা বলেন, ‘এ সাহাবি অত্যধিক সুদর্শন ছিলেন। এতই সুন্দর ছিলেন যে, কখনও কখনও মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে চলতেন।’ (উমদাতুল কারি : ১/৪৭)। তাছাড়া একবার অপরিচিত লোকের বেশে জিবরাঈল নবীর কাছে এসেছিলেন বলে হজরত উমর থেকে বর্ণিত একটি হাদিস রয়েছে।
অন্তরে ঢেলে দেয়া
মুহাম্মদের অন্তরে কিছু কথা আল্লাহপাক সরাসরি ঢেলে দিতেন। আবার জিবরাঈলের মাধ্যমেও ঢেলে দিতেন। এ ক্ষেত্রে জিবরাঈল এর সামনে আসার দরকার হতো না। আবার কোনো কথা বলারও প্রয়োজন হতো না।
সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা
আল্লাহ সরাসরি নবীর সঙ্গে কথা বলতেন এ পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে হজরত মুসার ওপরও ওহি আসত।
ফেরেশতার মাধ্যমে প্রেরিত
ফেরেশতা জিবরাঈল এর মাধ্যমে প্রেরিত ওহিকে ওহিয়ে মালাকি বলে। কখনও ফেরেশতা পর্দার আড়ালে থেকে ওহি বলে চলে যান। আবার কখনও সামনে থেকে ওহি শুনিয়ে দেন। ফেরেশতা কখনও মানবাকৃতিতে আসেন। আবার কখনও নিজ সুরতে আসেন। মুহাম্মদ জিবরাঈলকে মোট তিনবার নিজ আকৃতিতে দেখেছিলেনঃ নবুয়তের প্রথম দিকে একবার, মিরাজের রাতে একবার, আরেকবার নবী নিজেই জিবরাঈল এর আকৃতি দেখতে চেয়েছিলেন।
স্বপ্ন দেখা
স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা নবীদের তার নির্দেশ জানিয়ে দিতেন। যেমন ইবরাহিম কে স্বপ্নে বলে দিয়েছেন ছেলে ইসমাঈলকে কোরবানি করতে হবে। আবার নবী মুহাম্মদ স্বপ্নের মাধ্যমে ওমরা করার নির্দেশ পেয়েছিলেন। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনা ঘটে। (শরহে ফায়জুল কাবির : ২৪)। আয়েশা বলেন, ‘ঘমুন্ত অবস্থায় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে রাসুল (সা.) এর ওপর ওহির সূচনা হয়। ওই সময় স্বপ্নযোগে তিনি যা প্রত্যক্ষ করতেন, সকালে তা সত্য হয়ে ধরা দিত।’ [43]
অন্য ফেরেশতা দ্বারা
নবুয়তের শুরুর দিকে কয়েক বছর, বিভিন্ন বর্ণনা মতে তিন বছর জিবরাঈল ওহি নিয়ে আসেননি। তখন আরেক ফেরেশতা ইসরাফিল ওহি নিয়ে আসতেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু ঐসময়ে জিব্রাইল কেন আসতেন না, তা জানা যায় না। ফেরেশতা জিব্রাইল কী সেই সময়ে অসুস্থ ছিলেন, যে তার কাজ অন্য ফেরেশতার করতে হতো?
কোরআন সংরক্ষণ
মুহাম্মদের আমলে কোরআন সংরক্ষণ
হযরত মুহাম্মদের জীবিত অবস্থায় কোরআন একত্র অবস্থায় ছিল না বলেই প্রখ্যাত সাহাবী যায়েদ ইবনে সাবেত বর্ণনা করেছেন [44]-
যায়েদ ইবনে সাবেত (রা) বর্ণনা করেছেনঃ “নবীজী (সা) ইন্তেকাল করলেন এবং তখনও কোরআন শরীফ এক জায়গায় একত্র করা হয় নি।”
হযরত মুহাম্মদের আমলে কোরআন সংরক্ষণের জন্য মুহাম্মদ যেই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন, তা হচ্ছে পুরো কোরআন মুখস্থ করা। কোরআনে হাফেজদের মধ্যে প্রধান ছিলেন [45]-
হজরত আবু বকর, উমর, ওসমান, আলী, তালহা, সাআদ, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হুজায়ফা বিন ইয়ামান, হজরত সালেম, আবু হুরায়রা, ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস, আমর ইবনুল আস, আবদুল্লাহ বিন আমর, মুয়াবিয়া, ইবনে জুবাইর, আবদুল্লাহ বিন আস্ সায়েব, আয়েশা, হাফসা, উম্মে সালমা, উম্মে ওয়ারাকা, উবাই ইবনে কাআব, মাআজ ইবনে জাবাল, আবু হুলাইমা মাআজ, জায়েদ ইবনে সাবেত, আবুদ্ দারদা, মুজাম্মা বিন জারিয়া, মাসলামা বিন মুখাল্লিদ, আনাস ইবনে মালেক, উকবা বিন আমের, তামিম দারেমি, আবু মুসা আশআরি এবং হজরত আবু জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ।
সেই সাথে, কোরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ করার জন্য তিনি চল্লিশজন ওহি লেখক নিযুক্ত করেছেন। সে সময় কাগজ ছাড়াও পাথর, চামড়া, খেজুরের ডাল, বাঁশের টুকরা, গাছের পাতা এবং চতুষ্পদ জন্তুর হাড্ডির ওপর কোরআন লিখে রাখা হতো। অসংখ্য হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবীর সময়ে কোরআন বলে কোন গ্রন্থ ছিল না। তবে সাহাবায়ে কেরামের কারো কারো কাছে ব্যক্তিগতভাবে কোরআনের অসম্পূর্ণ কপি বিদ্যমান ছিল। একটি হাদিসে কোরআন সংকলনের কথা শুনে আবূ বাকর উমারকে বলেন, এমন কাজ কিভাবে আপনি করবেন, যে কাজ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি? অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ তার জীবদ্দশায় এই কাজটি করেননি [46]। তবে বুখারি শরিফের এক বর্ণনায় এসেছে, কোরআন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে হজরত ইবনে উমর বলেন, ‘রাসুল (সা.) কোরআন নিয়ে (অর্থাৎ কোরআনের অসম্পূর্ণ কপি নিয়ে) শত্রুদের ভূখণ্ডে সফর করতে নিষেধ করেছেন।’ [47]
কোরআন হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা
কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন [48] –
আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
আল্লাহ পাকের এই সরাসরি কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়ার পরেও, কোরআন হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। হযরত মুহাম্মদের যুগে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বস্তুর ওপর কোরআন সংরক্ষিত ছিল, তাই হজরত আবু বকরের খেলাফতের সময় বিক্ষিপ্ত অংশগুলো একত্র করে সংরক্ষণের প্রতি মনোযোগী হয়েছেন। হযরত উমরের আশঙ্কা ছিল, যুদ্ধে বহুসংখ্যক কোরআনে হাফেজের মৃত্যু হওয়ায় কোরআনের বড় অংশই হারিয়ে যাবে। সেই আশঙ্কা থেকেই তিনি কোরআনের আয়াতগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে বারবার তাগাদা দিতে থাকেন। অর্থাৎ আল্লাহ পাক নিজেই যা সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন, আল্লাহপাকের সরাসরি দায়িত্ব নেয়ার পরেও উমর তা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলেন এবং তা আসলে সংরক্ষণের মূল ভূমিকা যিনি পালন করেছিলেন তিনি হচ্ছেন হযরত উমর। [49] [50]
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৮ঃ কুরআনের মর্যাদা
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ – কিরাআতের ভিন্নতা ও কুরআন সংকলন প্রসঙ্গে
২২২০-(১০) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়ামামার যুদ্ধের পর পর খলীফাতুর রসূল আবূ বাকর (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি গেলাম। দেখলাম ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তাঁর কাছে উপবিষ্ট। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, ‘উমার আমার কাছে এসে খবর দিলেন, ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক কুরআনের হাফেয শহীদ হয়ে গেছেন। আমার আশংকা হয়, বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে এভাবে হাফেয শহীদ হতে থাকলে কুরআনের অনেক অংশ লোপ পেয়ে যাবে। তাই আমি সঙ্গত মনে করি যে, আপনি কুরআনকে মাসহাফ বা কিতাব আকারে একত্রিত করতে হুকুম দেবেন। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, আমি ‘উমারকে বললাম, এমন কাজ কিভাবে আপনি করবেন, যে কাজ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি? ‘উমার (রাঃ) উত্তরে বললেন, আল্লাহর শপথ। এটা হবে একটা উত্তম কাজ। ‘উমার (রাঃ) এভাবে আমাকে বার বার বলতে লাগলেন। অতঃপর আল্লাহ এ কাজের গুরুত্ব বুঝার জন্য আমার হৃদয় খুলে দিলেন এবং আমিও এ কাজ করা সঙ্গত মনে করলাম।
…
(বুখারী)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ৪৯৮৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৩৭২, সহীহ ইবনু হিববান ৪৫০৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আবু বকরের আমলে কোরআন
আবু বকর যেই কোরআন সংকলন করেন তাকে আদি কোরআন বলা হয়। এই কোরআন মুহাম্মদের বর্ণিত ধারাক্রম অনুসারে প্রস্তুত করা হয়েছে। সূরাগুলো আলাদা রেখে দেওয়া হয়েছে; সূরার ক্রমধারা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। এটি সাত হরফ বা সাত কেরাতে লেখা হয়েছে। এ কপিটি হীরার হস্তাক্ষরে লেখা হয়েছে। এই কোরআনে শুধুমাত্র সেই সব আয়াত যুক্ত হয়েছিল, যেগুলো রহিত হয়নি। [51]
এই আদি কোরআনটি আবু বকরের পরে হযরত উমর এর কাছে সংরক্ষিত থাকে। এরপরে সেটি আসে হযরত হাফসা এর কাছে, যিনি হযরত মুহাম্মদের স্ত্রী এবং উমরের কন্যা ছিলেন। এরপরে হযরত উসমান কোরআন সংকলনের কাজে হাত দেন, এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্রমধারা অনুসারে কোরআন সংকলন করেন। যা ছিল আবু বকরের কোরআন থেকে অনেকটাই ভিন্ন। উসমানের কোরআনের সাথে আবু বকরের আদি কোরআনের পার্থক্য লক্ষ্য করে সেই সময়ে সেই আদি কোরআনটি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। [52] [53] –
উসমানের কোরআন এবং হত্যাকাণ্ড
বর্তমান সময়ে আমরা যেই কোরআন দেখি, সেটি সংকলন করেছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান। সংকলনের পরে হযরত উসমান ঘোষণা দিলেন যে, যার কাছে যত কোরআন আছে সেগুলো সব পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যখন কুফাতে শোনা গেল যে, তাদের কাছে সংরক্ষিত সব কোরআনের আয়াত পুড়িয়ে দিয়ে শুধুমাত্র যায়েদ ইবন সাবেতের মুসহাফ এখন থেকে ব্যবহার করতে হবে, আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ এর বিরোধিতা করলেন। এই হুকুম শুনে তিনি কুফা শহরে এইভাবে খুৎবা দিলেন [54] –
কোরআনের পাঠে লোকেরা ছলনার দোষে পরেছে। আমি এর পাঠ বেশি পছন্দ করি (মুহাম্মদের), যার পাঠ আমি যায়েদ বিন সাবেতের পাঠ থেকে বেশি ভালবাসি। আল্লাহ্র কসম! যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ)-এর মুখ থেকে সত্তরেরও বেশী সূরা শিখেছি যখন যায়েদ ইবন সাবেত যুবক ছিলেন, এর মাত্র দুইটি কেশপাশ চুল ছিল এবং যুবকদের সাথে তখন খেলা করতেন।”
মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিজি লিখেছেন [55] [56] –
যুহরী (র) বলেনঃ ইবায়দুল্লাহ্ ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উতবা বলেছেন যে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ (রা) যায়েদ ইবনে ছাবিতের এ তৈরী কপি পছন্দ করেন নি। তিনি বলেছেনঃ “হে মুসলিম সম্প্রদায়!” কুরআনের মুসহাফ লিপিবদ্ধ করার কাজে আমাকে দূরে রাখা হয়েছে আর এর দায়িত্ব বহন করেছে এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহ্র শপথ আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন সে ছিল এক কাফিরের ঔরসে। (এই কথা বলে তিনি যায়েদ ইবনে ছাবিতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন)। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ (রা) বলেছেনঃ হে ইরাকবাসী! তোমাদের কাছে যে মুসহাফগুলো রয়েছে সেগুলো লুকিয়ে রাখ।
ইবনে আবু দাউদের কিতাবুল মাসাহিফ গ্রন্থে আছে যে ইবনে মাসউদ বলতেন [57] –
আমি সরাসরি আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) থেকে সত্তর সূরা পেয়েছি যখন যায়েদ বিন সাবেত তখনও একজন বাচ্চা মানুষ ছিল—এখন আমি কি ত্যাগ করব যেটা আমি আল্লাহ্র রাসূল থেকে সরাসরি পেয়েছি?”
উসমানের এই সংকলন কী অন্যদের কাছে বিতর্কের উর্ধ্বে ছিল? ইসলামের অনুসারী অন্যান্য সাহাবীগণ কী উনার এই সংকলনের পদ্ধতি সম্পর্কে একমত ছিলেন? সেটি ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে, আমাদের জানা দরকার, হযরত উসমানের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল। [58]
প্রশ্ন হচ্ছে, খলিফা উসমানকে কিতাবুল্লাহ বা কোরআনে পরিবর্তনের অভিযোগে অভিযুক্ত কারী এই মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে ছিলেন? হ্যাঁ, তিনি ছিলেন খোদ প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের সন্তান এবং অত্যান্ত ধার্মিক একজন মুসলিম হিসেবে যিনি ছিলেন বিখ্যাত।
> নোকতা সংযোজন
প্রাচীন আরবী ভাষাতে নোকতা সংযোজন করার রীতি প্রচলিত ছিল না। মুহাম্মদ যখন তাঁর সাহাবীদেরকে দিয়ে কোরআন লিখিয়েছিলেন, তখন কোরআনের অক্ষরগুলোর মধ্যেও কোনো নোকতা বা হরকত ছিলো না।হযরত উসমানের আমলে সংকলিত কোরআনের কপি বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করার সাথে সাথে তাই তেলাওয়াতকারীও পাঠিয়েছিলেন। সেই আমলে হরফে নোকতা সংযোজন করাকে দোষণীয় এবং হারাম কাজ মনে করা হত। কিন্তু ইসলামি সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করায় অনারব লোকদের উচ্চারণ জনিত সমস্যা লক্ষ্য করে নোকতা সংযোজিত করা হয়।
বিখ্যাত ব্যাকরণবিদ তাবে’ঈ হযরত আবুল আসাওয়াদ দোয়ালী (র) আনজাম অথবা হযরত আলী সর্বপ্রথম নোকতা প্রচলন করেন বলে জানা যায়। তবে সুনিশ্চিতভাবে জানা যায় না, কে নোকতার প্রচলন করেছিলেন।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, খোদ নবী মুহাম্মদ যেই কাজটি করেন নি, তা অন্যরা করে কোরআন দূষিত করতে পারে কিনা!
> হরকত সংযোজন
প্রাথমিক কোরআনে হরকত বা যবর-যের-পেশ ইত্যাদিও ছিল না। এই বিষয়ে নানা মতামত পাওয়া যায়। কেউ মনে করেন আবুল আসওয়াদ দোয়ালী হরকত প্রবর্তন করেন। অনেকের মত হচ্ছে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ইয়াহইয়া ইবনে ইয়ামার ও নসর ইবন আসেম লাইসীর দ্বারা এ কাজ করিয়েছিলেন। মজার বিষয় হচ্ছে, আবুল আসওয়াদ দোয়ালীর প্রবর্তিত হরকতগুলো আবার আজকের সময়ে প্রচলিত হরকতের মত ছিল না। সেই হরকতগুলো আবারো পরিবর্তিত হয়।
আলীর কোরআন এবং শিয়া মুসলিমগণ
ইসলামের প্রধান দুইটি ধারা হচ্ছে সুন্নী ইসলাম এবং শিয়া ইসলাম। ইতিহাসে সুন্নীগণ শিয়াদের নানাভাবে কাফের ঘোষণা করেছে, আবার শিয়ারাও সুন্নীদের কাফের ঘোষণা করেন। দুই পক্ষই নিজেদের ইমান আকিদাকেই সহিহ ইসলাম বলে গণ্য করেন। কারা আসলেই সহিহ সেই বিতর্কে যাচ্ছি না, তবে শিয়াদের ইমান আকিদা অনুসারে কোরআন বিকৃত হয়েছে। শিয়া অনুসারিগণ মনে করে আলী ব্যক্তিগত ভাবে কোরআনের একটি অনুলিপি তৈরী করেছিলেন। যেটি সংকলিত হয়েছিল নবী মুহাম্মদের ইন্তেকালের ছয় মাসের মধ্যে। আর তাদের মতে এটিই পবিত্র আল কোরআনের প্রথম ও পরিপূর্ণ সংকলন।
শিয়া মুসলিমদের একটি দল দাবী করেন, আলী পবিত্র কোরআনের সম্পূর্ণ অংশ লিপিবদ্ধ করেছেন। যেখানে আয়াত, সূরা, পারা ইত্যাদির নির্ভুল বর্ণনা ছিল। যার মধ্যে কোন কিছুই বাদ পড়ে নি। এমনকি একটি একক অক্ষর আলিফ বা লাম পর্যন্তও না। তবে কোরআনের সংকলকগণ এটাকে গ্রহণ করে নাই।
তারা বিশ্বাস করেন আলী কর্তৃক লিপিবদ্ধ কোরআন ছিল সবচেয়ে উপযুক্ত, তবে খলিফা উসমান সেটি গ্রহণ করেন নি। তারা এটাও বিশ্বাস করেন, কোরআনের সূরা পরিবর্তন করা হয়েছে, পাঠ পদ্ধতির কিছু অংশ পরিবর্তন এনেছে, তাবদিল, করে উম্মা থেকে ইমমা করা হয়েছে।
শিয়াদের মতে, হযরত আলী যেই কোরআন সংকলন করেছিলেন, সেটিই বিশুদ্ধ এবং দূষণমুক্ত। শিয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য “হাদিস” গ্রন্থ হচ্ছে, মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনীর ‘আল কাফী’ (الكافي)। এই গ্রন্থে “ইমামগণই আল-কোরআনকে পরিপূর্ণ সংকলন করেন এবং তারাই তার পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে” শিরোনামের অধীনে বলা হয়েছেঃ
জাবের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবূ জাফর(আ) -কে বলতে শুনেছি, মানুষের মধ্যে মিথ্যাবাদী ছাড়া কেউ দাবি করতে পারে না যে, আল্লাহ যেভাবে কোরআন নাযিল করেছেন, সে তা পরিপূর্ণভাবে সেভাবে সংকলন করেছে; বরং আলী ইবন আবি তালিব ও তার পরবর্তী ইমামগণই আল্লাহ যেভাবে তা নাযিল করেছেন, ঠিক সেভাবে সংকলন ও সংরক্ষণ করেছেন।
তিনি আরো বলেন [59] –
আবূ আবদিল্লাহ (জাফর সাদিক) বললেন: “… যতক্ষণ না কায়েম বা মাহদীর উত্থান ঘটবে, যখন সে কায়েম বা মাহদীর উত্থান হবে, তখন আল্লাহর কিতাবকে তার সীমারেখায় রেখে পাঠ করা হবে; আর তিনি কোরআনের ঐ কপিটি বের করবেন, যা আলী(আ) লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
তিনি আরো বর্ণনা করেন [60] –
আবূ আবদিল্লাহ(আ) (জাফর সাদিক) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নিশ্চয় জিবরাঈল আ. যে কুরআন মুহাম্মাদ(ﷺ) এর নিকট নিয়ে এসেছে, তাতে আয়াত সংখ্যা সতের হাজার।
প্রখ্যাত শিয়া আলেম নুরী আত-তাবারসী ‘ফসলুল খিতাব’ গ্রন্থে বলেন [61] –
আমীরুল মুমিনীনের হযরত আলী(রা) এর কাছে একটি বিশেষ কুরআন ছিল, যা তিনি রাসূলুল্লাহ(ﷺ) ইন্তিকালের পর নিজেই সংকলন করেন এবং তা জনসমক্ষে পেশ করেন; কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করে। অতঃপর তিনি তা তাদের দৃষ্টি থেকে গোপন করে রাখেন; আর তা ছিল তার সন্তান তথা বংশধরের নিকট সংরক্ষিত, ইমামত তথা নেতৃত্বের সকল বৈশিষ্ট্য ও নবুয়তের ভাণ্ডারের মত যার উত্তরাধিকারী হয় এক ইমাম থেকে অপর ইমাম। আর তা প্রমাণ (মাহদী) এর নিকট সংরক্ষিত রয়েছে। “আল্লাহ আল্লাহ দ্রুত তাকে মুক্ত করে দিন”- তিনি তখন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন এবং তাদেরকে তা পাঠ করার নির্দেশ দিবেন; আর তা সংকলন, সূরা ও আয়াতসমূহের ধারাবাহিকতার দিক থেকে বিদ্যমান এই কুরআনের বিপরীত; এমনকি শব্দসমূহও কম-বেশি করার দৃষ্টিকোণ থেকে তার বিপরীত। আর যেখানে সত্য আলী’র সাথে; আর আলী সত্যের সাথে, সেখানে বিদ্যমান কুরআনের মধ্যে উভয়দিক থেকেই পরিবর্তন রয়েছে; আর এটাই উদ্দেশ্য।
আরেকজন প্রখ্যাত শিয়া মোল্লা হাসান বলেন [62] –
আহলে বাইত তথা নবী পরিবারের সুত্রে বর্ণিত এসব কাহিনী ও অন্যান্য বর্ণনাসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, আমাদের মধ্যে প্রচলিত কুরআন মুহাম্মাদ(ﷺ) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের মত পরিপূর্ণ নয়; বরং তার মাঝে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার পরিপন্থী আয়াত যেমন রয়েছে; আবার তেমনি পরিবর্তিত ও বিকৃত আয়াতও রয়েছে। আর তার থেকে অনেক কিছু বিলুপ্ত করা হয়েছে; তন্মধ্যে অনেক জায়গায় আলী’র নাম বিলুপ্ত করা হয়েছে; আবার একাধিক বার “آل محمد” (মুহাম্মদের বংশধর) শব্দটি বিলুপ্ত করা হয়েছে; আরও বিলুপ্ত করা হয়েছে মুনাফিকদের নামসমূহ এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এটা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পছন্দসই ক্রমধারা অনুযায়ী সাজানোও নয়।
উল্লেখ্য, শিয়াদের ইমান আকিদা সম্পর্কে বাঙলায় প্রকাশিত বইগুলো খুবই অল্প এবং সেগুলো মৌলবাদী ধর্মান্ধ সুন্নী মুসলিমদের কারণে পাওয়া মুশকিলের ব্যাপার। তবে বাঙলাদেশের সুন্নী মুসলিমদের লিখিত কয়েকটি গ্রন্থে শিয়াদের সমালোচনা থেকে শিয়াদের বিশ্বাস সম্পর্কে ভালভাবে জানা যায়। বইগুলো নিচে ডাউনলোড লিঙ্ক সহ দেয়া হচ্ছে। ( গ্রন্থ সহায়ক ১২, ১৩ )
কোরআন নিয়ে বিতর্কিত বিষয়াদি
কোরআনের আয়াত অক্ষয়
আল্লাহ কোরআনে অসংখ্যবার ঘোষণা করেছেন, কোরআনের প্রতিটি অক্ষর, বাক্য, এমনকি যতিচিহ্ন পর্যন্ত শাশ্বত এবং অক্ষয়। কোরআনে বলা রয়েছে, [63]
আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
হাদিসে কুদসী এবং সহিহ মুসলিমেও বর্ণিত রয়েছে, [64]
‘আমি আপনার ওপর এমন কিতাব অবতীর্ণ করব, যাকে পানি ধুয়ে নিতে পারবে না।”
এখানে পানি দিয়ে ধুয়ে যাওয়া বলতে কোন অবস্থাতেই হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখেই নিচের প্রতিটি অংশ মন দিয়ে পড়তে হবে।
কোরআনে সর্বমোট আয়াতের সংখ্যা
সুদীর্ঘ ২২ বছর ২ মাস ২২ দিন ধরে সম্পূর্ণ কোরআন অবতীর্ণ হয়। কুরআনের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় ৬০৯ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর যখন মুহাম্মাদের বয়স প্রায় ৪০ বছর এবং অবতরণ শেষ হয় মুহাম্মাদের তিরোধানের বছর অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে। ইসলামী ইতিহাস অনুসারে দীর্ঘ প্রায় তেইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে এটি ইসলামের নবী মুহাম্মাদের নিকট অবতীর্ণ হয়। অধিকাংশ ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ মনে করেন, কোরআনের আয়াতের মোট সংখ্যা সেই আদিতে যা ছিল এখনো তাই আছে। তার সামান্যতম কোন পরিবর্তন হয় নি। অধিকাংশ মুসলিম বিশ্বাস করেন, কোরআন অপরিবর্তনীয় এবং এ সম্পর্কে কোরআনেও বলা রয়েছেঃ [65]
আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
কিন্তু সত্য হচ্ছে, কোরআনের আয়াতের সংখ্যা আসলে কত, তা নিয়ে ইসলামের অনুসারীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। বিভিন্ন জনের মতামত অনুযায়ী এই সংখ্যাটি ৬০০০/ ৬২০৪/ ৬২১৪/ ৬২১৯/ ৬২২৫/ ৬২২৬/ ৬২৩৬/ ৬২১৬/ ৬২৫০/ ৬২১২/ ৬২১৮/ ৬৬৬৬/ ৬২২১/ ৬৩৪৮, অর্থাৎ আয়াত ঠিক কয়টি, তা সেই সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু বলা যায় না। আয়াতের পাশাপাশি অক্ষর ও শব্দের সংখ্যা নিয়েও প্রচুর মতানৈক্য রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই নিয়ে ঘটে গেছে বহু রক্তারক্তি কাণ্ড। [66]
এবারে দেখি, কোরআনের আয়াত সংখ্যা, শব্দের সংখ্যা, অক্ষর সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধের নমুনা। তাফসীরে জালালাইনে বলা হচ্ছে [67] –
আবার, এ কে এম এনামুল হক লিখিত কোরআন হাদিস সংকলনের ইতিহাস গ্রন্থে বলা হচ্ছে, [68]
কোরআনের প্রথম সূরা কোনটি?
শুরুতেই যেই প্রশ্নটি আমাদের মনে জাগে, তা হচ্ছে, কোরআনের প্রথম সূরা কোনটি? আমরা সকলেই জানি, ৪০ বছর বয়সে হেরা পর্বতের গুহায় ইসলামের নবী মুহাম্মদের কাছে প্রথম ফেরেশতা জিব্রাইল আসে, এবং তখন নিচের সূরাটি নাজিল হয়। এই গল্পগুলো আমরা সাধারণত আমাদের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে পড়ে থাকি। এই বিষয়ে হাদিসটি দেখে নিই [69] –
এমনিভাবে হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে ওহী এলো। তাঁর কাছে ফিরিশতা এসে বললেন, পড়ুন’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “আমি বললাম, আমি পড়িনা’। তিনি বলেনঃ তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন’। আমি বললামঃ আমিতো পড়ি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে চাপ দিলেন যে, আমার অত্যন্ত কষ্ট হল। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ পড়ুন’। আমি জবাব দিলাম, আমিতো পড়িনা’। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়ুন আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়ুন আর আপনার রব্ মহামহিমান্বিত। ” (৯৬: ১-৩)
তাখরীজ: ( বুখারীঃ তা.পা ৩, ৩৩৯২, ৪৯৫৩, ৪৯৫৫, ৪৯৫৬, ৪৯৫৭, ৬৯৮২; মুসলিম ১/৭৩ হাঃ ১৬০, আহমদ ২৬০১৮ ( আ.প্রঃ ৩, ইঃফাঃ ৩)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তাহলে আমরা বুঝতে পারছি, জিব্রাইল প্রথমবার যখন নবী মুহাম্মদের কাছে আসে, তিনি নিয়ে আসেন সূরা আলাকের ১ থেকে ৩ নম্বর আয়াত। অর্থাৎ, আল্লাহ পাক যেভাবে কোরআন নাজিল করেন, সেই অনুসারে, সূরা আলাকের থাকার কথা সর্বপ্রথমে। কিন্তু আমাদের সময়ে যেই কোরআন পাওয়া যায়, সেখানে সূরা আলাকের স্থান হচ্ছে ৯৬ নম্বরে। কিন্তু সূরা আলাক ৯৬ নম্বরে কিভাবে গেল? কে ঠিক করলো, সূরা আলাক ৯৬ নম্বরে স্থান পাবে? আল্লাহ কি এই বিষয়ে কোন দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন? দিয়ে থাকলে, সেই দিক নির্দেশনা কোথায়? আর না দিয়ে থাকলে, আল্লাহ যেই ক্রমানুসারে নাজিল করেছেন, সেই ক্রম ভঙ্গ করে সূরা ফাতিহাকে প্রথমে দেয়ার দুঃসাহস কে করলো?
কিন্তু এখানেই আলোচনা শেষ নয়। কোরআনের প্রথম নাজিল হওয়া আয়াত কোনটি তা নিয়ে রয়েছে আরো কিছু মতামত।
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) -এর বর্ণনা অনুযায়ী সূরা আল মুদ্দাছ্ছির সর্বপ্রথম নাযিল হওয়া সূরা। বুখারী ও মুসলিমে এসেছে-
عن أبي سلمة بن عبد الرحمن ابن عوف قال: سألت جابر بن عبد الله، أي القرآن أنزل قبل؟ قال : يا أيها المدثر ‘আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাযি. কে জিজ্ঞাসা করলাম, কুরআনের কোন অংশ পূর্বে নাযিল হয়েছে? তিনি বললেন, يا أيها المدثر
এছাড়া আবু মায়সারা (রা.) বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী আল কুরআনের সর্বপ্রথম নাযিল হওয়া সূরা হলো সূরা আল ফাতিহা। [70]
কিন্তু কোরআন সংকলনের সময় আয়েশার হাদিসকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্য মতামতটিকে গুরুত্ব দিয়ে সূরা ফাতিহাকেই সর্বপ্রথম সূরা হিসেবে সংকলনে স্থান দেয়া হয়।
সেটি যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে নাজিলের ক্রম অনুসারে কোরআন সঠিকভাবে সংকলিত হয় নি কেন? এই বিষয়ে কী আল্লাহর কোন নির্দেশনা ছিল?
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়তে হবে। [71]
কোরআনের শেষ সূরা কোনটি?
প্রথম সূরার মত শেষ সূরা নিয়েও রয়েছে প্রচুর বিতর্ক। অনেকেই বলে থাকেন, সূরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতই হচ্ছে কোরআনের শেষ আয়াত, কারণ এখানে বলা হচ্ছে, [72]
আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।
সমস্যা হচ্ছে, দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দেয়ার পরে আল্লাহ পাকের আবারো সূরা নাজিলের কেন প্রয়োজন হলো? দ্বীন যদি ওই আয়াতের মাধ্যমে পুর্নাঙ্গই হয়ে গিয়ে থাকে, এর পরে আবার আয়াত নাজিল হওয়ার তো কথা নয়। এই নিয়েও রয়েছে প্রচুর বিতর্ক। বিভিন্ন জনার বিভিন্ন অভিমত এখানে উল্লেখ করা হলো।
প্রথম অভিমতঃ রিবা বা সুদ বিষয়ক আয়াত সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত।
ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: সর্বশেষে নাযিল-হওয়া আয়াত হলো আয়াতুর রিবা (সুদ বিষয়ক আয়াত) অর্থাৎ [73]
‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও’
হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ [74] [75]
আল কুরআনের সর্বশেষ যা নাযিল হয়েছে, তা হলো ‘রিবা’র আয়াত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ব্যাখ্যা করার পূর্বেই পরলোকগত হন। অতএব তোমরা সুদ ও সন্দেহ পরিত্যাগ করো।’
( তাফসীরে তাবারী, খণ্ডঃ ৬, পৃঃ ৩৮ )
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমর (রা.) আমাদের উদ্দেশ্য করে খুতবা দিলেন, অতঃপর তিনি বললেন: নিশ্চয় সর্বশেষ নাযিল হওয়া কুরআন হলো ‘রিবা’র আয়াত।’
(সূয়ুতী, আল ইতকান, খণ্ড:৬, পৃ:৩৫)
এছাড়া শায়খ মাহমুদ শাকের বলেছেন যে হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদের (দ্র: তাফসীরে তাবারী, খণ্ডঃ ৬, পৃঃ ৩৯)
দ্বিতীয় অভিমতঃ কিছু কিছু তাফসিরবিদদের মতে আল কুরআনের সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত হলো [76] –
আর তোমরা সে দিনের ভয় কর, যে দিন তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে সে যা উপার্জন করেছে, তা পুরোপুরি দেয়া হবে। আর তাদের যুলম করা হবে না
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল কুরানের সর্বশেষ যা নাযিল হয়েছে, তা হলো وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ (নাসাঈ; বায়হাকী, )
ইবনে মারদুবেহ ও ইবনে জারীর তাবারীও ইবনে আব্বাস (রা.). থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [77] [78]
তৃতীয় অভিমতঃ কারো কারো মতে আলা কুরআনের সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত হলো সূরা নিসার কালালাহ সম্পর্কিত আয়াতটি। কালালাহ হলো পিতামাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি। ইরশাদ হয়েছে-
তারা তোমার কাছে সমাধান চায়। বল,‘আল্লাহ তোমাদেরকে সমাধান দিচ্ছেন কালালা (‘পিতা মাতাহীন নিঃসন্তানকে ‘কালালা’ বলা হয়) সম্পর্কে। কোনো ব্যক্তি যদি মারা যায় এমন অবস্থায় যে, তার কোনো সন্তান নেই এবং তার এক বোন রয়েছে, তবে সে যা রেখে গিয়েছে বোনের জন্য তার অর্ধেক, আর সে (মহিলা) যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। কিন্তু যদি তারা (বোনেরা) দু’জন হয়, তবে সে যা রেখে গিয়েছে তাদের জন্য তার দুই তৃতীয়াংশ। আর যদি তারা কয়েক ভাই বোন পুরুষ ও নারী হয়, তবে পুরুষের জন্য দুই নারীর অংশের সমান হবে’। আল্লাহ তোমাদেরকে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যাতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও এবং আল্লাহ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সর্বজ্ঞ’-(সূরা আন নিসা: ১৭৬)। (বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
উক্ত বর্ণনার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে তা মূলত মিরাছ তথা মৃতব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদের ভাগবণ্টন বিষয়ক হুকুম-আহকাম বর্ণনার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ আয়াত।
চতুর্থ অভিমতঃ কারো কারো মতে সূরা তাওবার ১২৮ নং আয়াত হলো সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার বাণী, [79]
‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিজদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তা তার জন্য কষ্টদায়ক যা তোমাদেরকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আত-তাওবা:১২৮)। (বর্ণনায় হাকেম)
এ আয়াতের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তা মূলত সূরায়ে বারাআত তথা সূরা তাওবার শেষ আয়াত। অর্থাৎ সূরা তাওবার আয়াতসমূহের মধ্যে এটি হলো সর্বশেষে নাযিল হওয়া আয়াত।
পঞ্চম অভিমতঃ কারো কারো মতে সূরা আল মায়েদা হলো সর্বশেষ নাযিল হওয়া সূরা। তিরমিযী ও হাকেম আয়াশা (রা.) থেকে এ বিষয়ক একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। এ মতের খণ্ডনে বলা হয়েছে যে সূরা মায়েদা মূলত হালাল হারাম বর্ণনার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সূরা যার কোনো হুকুমই মানসুখ হয়নি।
সূরা তওবা কী স্বতন্ত্র সূরা?
তাফসীরে ইবনে কাসীর [80] থেকে জানা যায়, সূরা তওবা যে স্বতন্ত্র সূরা, এটি ছিল উসমানের ধারণা। মুহাম্মদ এই বিষয়ে কিছু বলে যান নি। সূরা তওবার শুরুতে তাই বিসমিল্লাহও পড়া হয় না। এখন লাওহে মাহফুজের কোরআনে সূরা তওবা আলাদা সূরা নাকি তা সূরা আনফালের অংশ, তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, উসমানের ধারণার ওপর যা প্রতিষ্ঠিত, তা কি আমরা শতভাগ শুদ্ধ হিসেবে গণ্য করতে পারি?
আরো বিবরণ পাওয়া যায় সুনানু আবু দাউদ শরীফের হাদিস থেকে। [81]
বিসমিল্লাহ কী প্রতিটি সূরার অংশ
উপরে যেই হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, সেখানে বলা হচ্ছে, “বিসমিল্লাহ” সূরা নামল এর আয়াত, অন্য কোন সূরার আয়াত নয়। এই আয়াতটি নাজিল হওয়ার পরে মুহাম্মদ প্রতিটি সূরার শুরুতে এটি পড়তেন। তার মানে, এই আয়াতটি নাজিল হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটি সূরা নাজিল হয়েছিল বিসমিল্লাহ ছাড়া। তাহলে, আল্লাহ যেহেতু আগের সূরাগুলোতে বিসমিল্লাহ যুক্ত করে দেন নি, বর্তমান কোরআনে প্রতিটি সূরার শুরুতে (সূরা তওবা বাদে) বিসমিল্লাহ কেন কোরআনে অন্তর্ভূক্ত হলো? আল্লাহ তো আগের ঐ সূরাগুলো বিসমিল্লাহ ছাড়াই নাজিল করেছিলেন।
এই বিষয়ে তাফসীরে জালালাইনে কী বলা রয়েছে, তা পড়ে নিই [82] –
সূরার নামকরণ কে বা কারা করেছিল?
আমাদের অনেকের মনেই এই স্বাভাবিক প্রশ্নটি জাগে, সূরা ফাতিহা বা অন্যান্য সূরাগুলোর নামটি কে দিয়েছেল? স্বয়ং আল্লাহ পাক, নাকি অন্য কেউ? তাহলে একই সূরার বিভিন্ন নাম হয় কীভাবে? কোন নামটি আল্লাহ পাক কর্তৃক নির্ধারিত? নাকি আল্লাহ সূরার নামগুলো নিজে দেন নি, মুহাম্মদ বা তার সাহাবীগণ খেয়াল খুশিমতো নাম দিয়েছেন? যেমন সূরা ফাতিহার নাম যে সূরা ফাতিহা, এটি আল্লাহ পাক কোথায় বলেন দিয়েছেন? না বলে থাকলে, এই নামকরণ কার করা? আল্লাহ যদি নাম নির্ধারণ নাই করে থাকেন, কার এতবড় দুঃসাহস যে ঐ সূরাগুলোর নাম কোরআনে অন্তর্ভূক্ত করলো? অসংখ্য ইসলামিক রেফারেন্স থেকে সূরা ফাতিহার যেসকল নাম জানা যায়, সেগুলো হচ্ছে,
- ফাতিহাতুলঃ ফাতিহা অর্থ ভূমিকা বা শুরু। যেহেতু ইহার মাধ্যমে নামাজ শুরু করা হয় এবং যেহেতু কোরআন মযীদেরও শুরুতে ইহা লিখিত হয়েছে, তাই মুহাম্মদ এটিকে ফাতিহাতুল কিতাব হিসেবে নামকরণ করেছেন।
- আস্ সাবউল মাছানীঃ যেহেতু নামাজের প্রতিটি রাকআতে এই সূরাটি বারবার পাঠ করা হয়, তাই এটিকে সাবউল মাছানী বলা হয়।
- উম্মুল কুরআনঃ উম্ম অর্থ মূল। সূরা ফাতিহার মধ্যে যেহেতু সমগ্র কোরআনের সারাংশ বিদ্যমান তাই এটিকে মুহাম্মদ উম্মুল কোরআন হিসেবে নামকরণ করেছেন।
- উম্মুল কিতাবঃ মুহাম্মদ এটিকে উম্মুল কিতাব হিসেবে নামকরণ করেছেন।
- আল-কুরআনুল আযীমঃ মুহাম্মদ বলেন, এটি হচ্ছে বারবার পঠিতব্য সাতটি আয়াত এবং আল-কুরআনুল আযীম।
- ফাতিহাতুল কুরআনঃ ফাতিহাতুল কিতাব আর ফাতিহাতুল কোরআন একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
- আল ওয়াফিয়াঃ সমস্ত কুরআনের অর্থ যেহেতু ইহাতে পূর্ণরূপে বিদ্যমান তাই এটাকে ওয়াফিয়া বলা হয়েছে। সুফইয়ান বিন উয়াইনা এই নামে নামকরণ করেছেন।
- আল-কাফিয়াঃ নামাযে যেহেতু শুধু সূরা ফাতিহা পড়লে যথেষ্ট হয় আর এটা ছাড়া অন্য সূরা দিয়ে যেহেতু নামাজ পূর্ণ হয় না তাই এটাকে কাফিয়া বলা হয়।
- আল-আসাসঃ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীছে এই নামটি বর্ণিত হয়েছে। আল কাসাস মানে মূল।
- আশ্ শাফিয়া বা আশ্ শিফাঃ কেননা মুহাম্মদ বলেছেন, সূরা ফাতিহাতে রয়েছে প্রতিটি বিষাক্ত সাঁপ-বিচ্ছুর কামড়ের শিফা বা আরোগ্য।
- সূরাতুল হামদ্ঃ যেহেতু এই সূরার প্রথমেই আলহামদ শব্দটি এসেছে, তাই একে সূরাতুল হামদ বলা হয়।
- আস্ সালাহঃ হাদীছে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নামাজকে বান্দা এবং আমার মাঝে দুইভাগে বিভক্ত করেছি। এখানে নামাজ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সূরা ফাতিহা।
- আর্ রুকইয়াহঃ যেহেতু এই সূরা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা হয়, তাই মুহাম্মদ একে এই নামে নামকরণ করেছেন।
এছাড়াও এই সূরাটির আরো অনেকগুলো নাম রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আসল নাম কোনটি? একই সূরার এতগুলো নাম থাকার যৌক্তিকতা কী? আল্লাহ পাক আসলে কোন নামে সূরাটি লিখেছিলেন? নাকি আল্লাহ পাক শুধু সূরাটি লিখেছিলেন, সূরাটির নামকরণ মুহাম্মদের পরে তার অনুসারীগণ কোন সুনির্দিষ্ট ওহী ছাড়াই যার যেমন মনে হয় করে ফেলেছিলেন?
কোরআন কয়টি ভাষায় নাজিল হয়েছে
কোরআনকে মোট সাতটি উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল করা হয়েছিল। হযরত উসমান কোরআন বিকৃত হয়ে যাবে এই অযুহাত দেখিয়ে শুধুমাত্র কুরাইশদের উচ্চারণে কোরআন সংকলনের সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে স্বয়ং মুহাম্মদের নির্দেশ ছিল যে, তোমাদের জন্য যেই পদ্ধতি সহজতর, তোমরা সেই পদ্ধতিতেই পড়। [83] [84]
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৩/ ফাজায়ীলুল কুরআন
পরিচ্ছদঃ ২৩৯৯. কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল হয়েছে।
৪৬২৬। সাঈদ উব্ন উফায়র (রহঃ) … উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
… এবারও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবেও কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এ কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা সহজতর, সে পদ্ধতিতেই তোমরা পাঠ কর।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এই বিষয়ে [85] আরো জানতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন। Dr. Shabir Ally একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার। পুরো ভিডিওটি ইউটিউবে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন, এখানে অংশবিশেষ দেয়া হচ্ছে- ভিডিও
কোরআনের আয়াত ভুলে যেতেন মুহাম্মদ
আল্লাহ পাক ওহী নাজিলের সময় মুহাম্মদকে ভালভাবে আয়াতগুলো পড়িয়ে দিতেন, যেন মুহাম্মদ আবার সেগুলো ভুলে না যায়। কোরআনেই সেটি বলা হয়েছে [86]
আমি তোমাকে পড়িয়ে দেব, যার ফলে তুমি ভুলে যাবে না।
— Taisirul Quran
অচিরেই আমি তোমাকে পাঠ করাব, ফলে তুমি বিস্মৃত হবেনা –
— Sheikh Mujibur Rahman
আমি তোমাকে পড়িয়ে দেব অতঃপর তুমি ভুলবে না।
— Rawai Al-bayan
শীঘ্রই আমরা আপনাকে পাঠ করাব, ফলে আপনি ভুলবেন না [১] ,
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
কিন্তু এত সতর্কতার পরেও আয়াত ভুলে যেতেন নবী। অন্য কেউ বললে তার মাঝে মাঝে মনে পড়ে যেতো আয়াতগুলো। স্বাভাবিকভাবেই, বোঝা যায় যে, তার স্মৃতিশক্তি এতটা প্রখর ছিল না [87] –
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ইবনে কাসীরের তাফসীরে [88] বর্ণিত আছে,
নিচের হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ [89]
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৬৭/ দু’আ
পরিচ্ছেদঃ ২৬৩২. আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ তুমি দু’আ করবে …. (৯ঃ ১০৩) আর যিনি নিজেকে বাদ দিয়ে কেবল নিজের ভাই এর জন্য দু’আ করেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, নাবী (সাঃ) দু‘আ করেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি ‘উবায়দ আবূ আমিরকে মাফ করুন। হে আল্লাহ! আপনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়সের গুনাহ মাফ করে দিন।
৫৮৯৬। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যাক্তিকে মসজিদে কুরআন তিলাওয়াত করতে বললেন। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ তার উপর রহমত করুন। সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি অমুক অমুক সূরা থেকে ভুলে গিয়েছিলাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
Narrated `Aisha:
The Prophet (ﷺ) heard a man reciting (the Qur’an) in the mosque. He said,” May Allah bestow His Mercy on him, as he made me remember such and-such Verse which I had missed in such-and-such Sura.“
নবী মুহাম্মদ আয়াত ভুলে যাওয়ার বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে আল্লাহর কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছেন। [90] [91]
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৭। কুরআনের মর্যাদাসমূহ ও এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়
পরিচ্ছদঃ ১. কুরআন সংরক্ষণে যত্নবান হওয়ার নির্দেশ, অমুক আয়াত ভুল গিয়েছি বলার অপছন্দনীয়তা ও আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে বলার বৈধতা প্রসঙ্গে
১৭২৭-(২২৯/…) ইবনু নুমায়র এবং ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) (শব্দাবলী তার) …. শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) বলেছেনঃ এই পবিত্র গ্রন্থের আবার কখনো বলেছেন এ কুরআনের রক্ষণাবেক্ষণ কর। কেননা মানুষের মন থেকে তা এক পা বাঁধা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও (অধিক বেগে) পলায়নপর। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) আরো বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা কেউ যেন এ কথা না বলে যে, আমি (কুরআন মাজীদের) অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি। বরং তার থেকে আয়াতগুলো বিস্মৃত হয়ে গিয়েছে (এরূপ বলা উত্তম)। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭১২, ইসলামীক সেন্টার ১৭১৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৭। কুরআনের মর্যাদাসমূহ ও এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়
পরিচ্ছদঃ ১. কুরআন সংরক্ষণে যত্নবান হওয়ার নির্দেশ, অমুক আয়াত ভুল গিয়েছি বলার অপছন্দনীয়তা ও আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে বলার বৈধতা প্রসঙ্গে
১৭২৮-(২৩০/…) মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ….. শাকীক ইবনু সালামাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদকে বলতে শুনেছি। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেনঃ কোন ব্যক্তির পক্ষে এরূপ কথা বলা খুবই খারাপ যে, সে অমুক অমুক সূরাহ বা অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছে। বরং বলবে যে ঐগুলো (সূরাহ বা আয়াত) তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৭১৩, ইসলামীক সেন্টার ১৭২০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
কোরআনের ছাগলে খাওয়া আয়াত
কোরআনে সামান্যতম কোন পরিবর্তন বা পরিমার্জনা হয় নি, যেমন ছিল তেমনই রয়েছে, এই ধারণার ভিত্তিতে সবচাইতে বড় আঘাত হচ্ছে, কোরআনের হারিয়ে যাওয়া আয়াতের কথা, যা আয়েশার হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি। আল্লাহ পাক দ্বারা প্রেরিত আয়াত কীভাবে ছাগলে খেয়ে যায়, যার কারণে আয়াতটি আর খুঁজে পাওয়া যায় না, যেই আয়াতগুলো বর্তমান কোরআনে অনুপস্থিত, তা বিশ্বাসী মুসলিমদের কাছে এখনো একটি বড় প্রশ্ন। [92]
পরিচ্ছদঃ ৯/৩৬. বয়স্ক লোকে দুধ পান করলে।
২/১৯৪৪। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে।
মাজাহ ১৯৪৪ সহীহুল বুখারী ১৪৫২, নাসায়ী ৩৩০৭, ২০৬২, মুয়াত্তা মালেক ১২৯৩, দারেমী ২২৫৩, তা’লীক ইবনু মাজাহ। তাহকীক আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাসানুল হাদিস। আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, তিনি সালিহ। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৫০৫৭, ২৪/৪০৫ নং পৃষ্ঠা)
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
কোরআনে দুধপান বিষয়ক আয়াত
শুধু তাই নয়, সহিহ হাদিস থেকেও জানা যায়, কোরআনে দুধপান সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয়েছিল, যা বর্তমান কোরআনে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। [93] [94] [95]
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৮। দুধপান
পরিচ্ছদঃ ৬. (কোন মহিলার দুধ) পাঁচ চুমুক খাওয়াতে হারাম সাব্যস্ত হওয়া প্রসঙ্গে
৩৪৯০-(২৫/…) আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ আল কা’নাবী (রহঃ) ….. আমরাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশাহ (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছেন, যখন তিনি দুধপানের ঐ পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করলেন যার দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়। আমরাহ বললেন যে, আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেছিলেন, আল-কোরআনে নাযিল হয় عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ “নির্ধারিত দশবার দুধপানে”। অতঃপর নাযিল হয় خَمْسٌ مَعْلُومَاتٌ “নির্ধারিত পাঁচবার দুধপানে।” (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৬৩, ইসলামীক সেন্টার. ৩৪৬২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান
পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৩৪৬৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোরআনে এই আয়াতটি নাযিল হয়েছিলঃ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ‘দশবার দুধপানে হারাম সাবিত হয়।’ তারপর তা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ এর দ্বারা। (পাঁচবার পান দ্বারা হুরমত সাব্যস্ত হয়) তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসাবে তিলাওয়াত করা হত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এবারে আসুন মুয়াত্তা মালিকের একটি হাদিস থেকে দেখি, মুহাম্মদের মৃত্যুর সময়ও সেই পাঁচবার দুধপানের আয়াতটি তিলওয়াত করা হতো। প্রশ্ন হচ্ছে, মুহাম্মদের মৃত্যুর সময় যেই আয়াত তিলাওয়াত করা হতো, মুহাম্মদের মৃত্যুর পরে সেই আয়াত মানসুখ বা রহিত করলো কে?
মুয়াত্তা মালিক
৩০. সন্তানের দুধ পান করানোর বিধান সম্পর্কিত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ৩. দুধ পান করানোর বিবিধ বিষয়
রেওয়ায়ত ১৭. আমরা বিনত আবদির রহমান (রহঃ) হইতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্নী আয়েশা (রাঃ) বলিয়াছেনঃ কুরআনে যাহা অবতীর্ণ হইয়াছিল তাহাতে দশবার দুধ চোষার কথা নির্ধারিত ছিল, যাহা হারাম করিবে, তারপর উহা রহিত হইয়া যায় নির্ধারিত পাঁচবার দুগ্ধ চোষার (অবতীর্ণ হুকুমের) দ্বারা। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ওফাত হয় তখনও সেই পাঁচবার দুধ চোষার (হুকুমের অংশ) সম্মিলিত আয়াত তিলাওয়াত করা হইত।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ ইহার উপর আমল নাই। অর্থাৎ পাঁচবারের উপর আমল নাই। দুগ্ধ পান অল্প হউক বা বেশি হউক বিবাহ সম্পর্ক হারাম করিবে।
হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
বর্ণনাকারীঃ আমরাহ বিনতু আবদুর রহমান (রহঃ)
রজম ও উমরের আশঙ্কা
এরকম আরো অনেকগুলো হাদিস রয়েছে, যেগুলো পড়ে বোঝা যাচ্ছে, কোরআনে আরো বেশ কিছু আয়াত ছিল, সেগুলো কেউ না কেউ মুছে ফেলেছে বা অন্তর্ভূক্ত করার সময় বাদ দিয়েছে। নিচের হাদিসটি দেখুন, এখানে বলা হচ্ছে এই আয়াতটি মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে [96] –
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৩০। অপরাধের (নির্ধারিত) শাস্তি
পরিচ্ছদঃ ৪. ব্যভিচারের জন্য বিবাহিতকে রজম করা
৪৩১০-(১৫/১৬৯১) আবূ তাহির ও হারমালাহ্ ইবনু ইয়াহইয়াহ্ (রহঃ) ….. ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “উমর ইবনু খাত্তাব (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বারের উপর বসা অবস্থায় বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়ের মধ্যে آيَةُ الرَّجْمِ (ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপের আয়াত) রয়েছে। তা আমরা পাঠ করেছি, স্মরণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। সুতরাং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যভিচারের জন্য রজম করার হুকুম বাস্তবায়ন করেছেন। তার পরবর্তী সময়ে আমরাও (ব্যভিচারের জন্য) রজমের হুকুম বাস্তবায়িত করেছি। আমি ভয় করছি যে, দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর কেউ এ কথা হয়তো বলবে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে (ব্যভিচারের শাস্তি) রজমের নির্দেশ পাই না। তখন আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত এ ফরয কাজটি পরিত্যাগ করে তারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাবে বিবাহিত নর-নারীর ব্যভিচারের শাস্তি رجم (পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা) এর হুকুম সাব্যস্ত। যখন সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমাণিত হয়, কিংবা গর্ভবতী হয়, অথবা সে নিজে স্বীকার করে।* (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৭১, ইসলামিক সেন্টার ৪২৭১)
* এ আয়াতটি তিলাওয়াত মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে কিন্তু আয়াতটির হুকুম এখনো বহাল রয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, হুকুম বহাল রেখে তিলাওয়াত মানসুখ বা রহিত কেন করা হলো? [97] [98]
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩০/ অপরাধের শাস্তি
পরিচ্ছদঃ ৪. ব্যভিচারের জন্য বিবাহিতকে রজম করা
৪২৭১। আবূ তাহির ও হারামালা ইবনু ইয়াহইয়াহ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বারের উপর বসা অবস্থায় বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্য ধর্ম সহকারে প্রেরণ করেছেন এবং তার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়ের মধ্যে آيَةُ الرَّجْمِ (ব্যাভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপের আয়াত) রয়েছে। তা আমরা পাঠ করেছি, স্মরণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ব্যাভিচারের জন্য) রজম (এর হুকুম বাস্তবায়িত) করেছি। আমি ভয় করছি যে, দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ একথা হয়তো বলবে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে (ব্যভিচারের শাস্তি) রজমের নির্দেশ পাচ্ছিনা। তখন আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত এই ফরয কাজটি পরিত্যাগ করে তারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে। নিশ্চই আল্লাহর কিতাবে বিবাহিত নর-নারীর ব্যাভিচারের শাস্তি رجم (পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা) এর হুকুম বাস্তব বিষয়। যখন সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমাণিত হয়, কিংবা গর্ভ প্রকাশ পায়, অথবা (সে নিজে) স্বীকার করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
পরিচ্ছদঃ ২৩. রজম সম্পর্কে
৪৪১৮। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তার ভাষণে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তাঁর উপর কিতাব নাযিল করেছেন। আর তিনি তাঁর উপর যা নাযিল করেছেন, রজম সংক্রান্ত আয়াত তার অন্তর্ভুক্ত। আমরা তা পাঠ করেছি এবং সংরক্ষণ করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন আর আমরাও তাঁর পরে রজম করেছি। তবে আমার আশঙ্কা হচ্ছে, কাল প্রবাহের দীর্ঘতায় কেউ হয় তো বলবে, আমরা তো আল্লাহর নাযিলকৃত তিাবে রজমের আয়াত পাইনি।
ফলে তারা আল্লাহর নাযিলকৃত একটা ফরজ পরিত্যাগ করে পথভ্রষ্ট হবে। জেনে রাখো বিবাহিত নারী-পুরুষ ব্যভিচারের অপরাধে দায়ী প্রমাণিত হলে অথবা অন্তঃসত্তা হলে অথবা স্বীকারোক্তি করলে তাদেরকে রজম করা অবধারিত। আল্লাহর কসম! লোকেরা যদি একথা না বলতো যে, উমার আল্লাহর কিতাবে কিছু বর্ধিত করেছেন। তাহলে আমি অবশ্যই এ আয়াত লিখে দিতাম।(1)
সহীহ।
(1). বুখারী, মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মুহাম্মদ নিজেই ইহুদীদের ভৎসনা করতেন এই বলে যে, তারা আল্লাহর বাণীকে পরিবর্তন করে রজমের নির্দেশনা আর পালন করছে না। আল্লাহর কঠিন নির্দেশনা জেনাকারীর রজমকে তারা বাদ দিয়ে ফেলেছে। মুহাম্মদ আল্লাহর সেই নীতিকে আবার পুনর্জীবন দান করেছেন। এই বলে ইহুদীদের ভৎসনা করা মুহাম্মদের কোরআনেই এখন আর রজমের আয়াতটি নেই। [99]
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
পরিচ্ছদঃ ২৬. দু’ ইয়াহুদীকে রজম করার ঘটনা
৪৪৪৮। আল-বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, বেত্রাঘাতকৃত জনৈক ইয়াহুদীর মুখমন্ডল কালিমালিপ্ত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তাদের ডেকে প্রশ্ন করলেনঃ তোমরা কি যেনাকারীর এরূপ শাস্তির হুকুম পেয়েছ? তারা বললো, হ্যাঁ। অতএব তিনি তাদের একজন আলিমকে ডেকে বললেনঃ তোমাকে সেই আল্লাহর কসম করে বলছি যিনি মূসা (আঃ)-এর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করেছেন! তোমাদের কিতাবে যেনাকারীদের এরূপ শাস্তির কথা উল্লেখ পেয়েছে কি? সে বললো, হে আল্লাহ! না। আপনি যদি এ বিষয়ে আমাকে আল্লাহর কসম না দিতেন, তাহলে আমি অবশ্যই আপনাকে বলতাম না।
আমরা আমাদের কিতাবে যেনাকারীর শাস্তি রজমের উল্লেখ পেয়েছি। কিন্তু আমাদের অভিজাত সমাজে যেনার বিস্তার ঘটলে আমরা কোনো মর্যাদাসম্পন্ন লোককে এ অপরাধে ধরতে পারলেও ছেড়ে দিতাম; তবে দুর্বলদের কাউকে পেলে তার উপর শাস্তি বাস্তবায়িত করতাম। অতঃপর আমরা সকলকে আহবান করে বললাম, চলুন, আমরা যেনার শাস্তির ব্যাপারে সকলে ঐকমত্যে পৌঁছে এমন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই, যাতে সকল শ্রেণীর লোকদের উপর তা বাস্তবায়িত করা যায়। অতঃপর আমরা এর শাস্তিস্বরূপ মুখমন্ডল কালিমালিপ্ত করে অপমান করা এবং বেত্রাঘাত করাতে একমত হই এবং ‘রজম’ পরিত্যাগ করি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি যে তোমার নির্দেশকে পুনর্জীবন দান করেছি, তারা একে প্রাণহীন করার পর। অতঃপর তাঁর নির্দেশে অপরাধীকে রজম করা হয়। অতঃপর মহান আল্লাহ ইয়াহুদীদের সম্পর্কে এ আয়াতগুলো নাযিল করেনঃ ‘‘হে রাসূল! তোমাকে যেন দুঃখ না দেয় যারা কুফরীর দিকে দ্রুত ধাবিত হয় … তারা বলে, তোমাদেরকে এরূপ বিধান দেয়া হলে তোমরা তা গ্রহণ করো অন্যথায় তোমরা বর্জন করো … আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফির (ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে) … আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই যালিম (ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে) … আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারা পাপাচারী’’ (সূরা আল-মায়িদাহঃ ৪১-৪৭)। তিনি বলেন, এ আয়াতগুলো কাফির অবাধ্যদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।(1)
সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এবারে আসুন আরেকটি হাদিসের ব্যাখ্যা থেকে পড়িঃ [100]
মুসনাদে আহমদ থেকে আরো দুইটি হাদিস পড়ে নিই( প্রথমটি দীর্ঘ হাদিস হওয়ায় অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেয়া হচ্ছে), [101] [102]
মুসনাদে আহমাদ
মুসনাদে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) [উমারের বর্ণিত হাদীস]
পরিচ্ছেদঃ
৩৯১। …
কিছুক্ষণ পরেই উমার (রাঃ) আবির্ভূত হলেন। আমি তাকে দেখেই বললাম, আজ সন্ধ্যায় উনি এমন এক ভাষণ দেবেন, যা তার আগে আর কেউ দেয়নি। এরপর উমার (রাঃ) মিম্বারে বসলেন। মুয়াযযিনের আযান দেয়া শেষ হলে উমার দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। তারপর বললেনঃ হে জনতা, আমি আজ এমন একটা কথা বলতে যাচ্ছি, যা নেহাৎ ভাগ্যক্রমেই আমি বলার সুযোগ পাচ্ছি। জানিনা, হয়তো আমার আয়ুষ্কালের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েই এটা বলতে পারছি। যারা আমার এ বক্তব্যকে মনে রাখবে ও বুঝবে, তারা যেন তাদের যাত্রার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত গিয়েও তা প্রচার করে। আর যে মনে রাখতে পারবে না ও বুঝবে না সে আমার নামে মিথ্যা প্রচার করুক -এটা আমি অনুমোদন করি না।
নিশ্চয় আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন এবং তার ওপর কিতাব নাযিল করেছেন। তার ওপর যা কিছু নাযিল করেছেন, রজম সংক্রান্ত আয়াতও তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা তা পড়েছি ও বুঝেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও রজম করেছেন, তার পরে আমরাও করেছি। আমার আশঙ্কা হয় যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হবার পর এক সময় লোকেরা বলতে পারে, আল্লাহর কিতাবে আমরা রজম সংক্রান্ত আয়াত পাইনা। এভাবে আল্লাহর নাযিল করা একটা ফারয বর্জন করে তারা বিপথগামী হয়ে যাবে। বস্তুতঃ বিবাহিত নারী ও পুরুষ ব্যভিচার করলে তার ওপর রজম চালু করা আল্লাহর কিতাবের আওতাভুক্ত একটা অকাট্য সত্য বিধি, যখন তার ওপর সাক্ষ্য, স্বীকারোক্তি বা গর্ভধারণ পাওয়া যাবে।
…
[বুখারী, মুসলিম, ইবনু হিব্বান, মুসনাদে আহমাদ-১৫৪, ১৫৬, ২৪৯]
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মুসনাদে আহমাদ
মুসনাদে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) (উমারের বর্ণিত হাদীস)
পরিচ্ছেদঃ
৩৫২। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) বলেন, উমার (রাঃ) একবার হজ্জ করলেন। ঐ সময় তিনি জন সমক্ষে একটা ভাষণ দিতে চাইলেন। আবদুর রহমান ইবনে আওফ বললেন, আপনার নিকট উচ্ছৃংখল জনতা উপস্থিত। এমতাবস্থায় আপনার ভাষণ দান মদীনায় আসা পর্যন্ত স্থগিত রাখুন। পরে তিনি যখন মদীনায় পৌছলেন, আমি তার নিকট মিম্বারের কাছেই উপস্থিত হলাম। শুনলাম, তিনি বলছেনঃ অনেকেই বলে থাকে, রজম আবার কী? আল্লাহর কিতাবে তো ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে কেবল বেত্ৰাঘাতেরই উল্লেখ রয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম (পাথর মেরে হত্যা) করেছেন এবং তার পরে আমরাও রজম করেছি। এমন আশঙ্কা যদি না থাকতো যে, মানুষ অভিযোগ তুলবে যে, উমার আল্লাহর কিতাবে এমন জিনিস সংযোজন করেছে, যা তাতে নেই, তাহলে আমি রজম সংক্রান্ত আয়াতটি যেভাবে নাযিল হয়েছে সেভাবে কুরআনে সংযোজন করতাম। (৩৯১ নং হাদীস দ্রষ্টব্য)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
হযরত উমরের আরো বক্তব্য
নানা উচ্চারণের কোরআনের আয়াত উচ্চারণ শুনে খোদ উমর ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। তিনি এই নিয়ে রাগও প্রকাশ করেছিলেন। পরে নবী তাকে বোঝান, এইসব উচ্চারণেই কোরআন নাজিল হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে খলিফা উসমান শুধুমাত্র কুরাইশদের উচ্চারণ রেখে বাদবাকী সব উচ্চারণের কোরআন পুড়িয়ে দেন। [103]
হযরত উসমানের স্বীকারোক্তি
আধুনিক কোরআনের সংকলনকারী হযরত উসমান নিজেও স্বীকার করেছেন যে, কোরআনে কিছু ভুল উচ্চারণের শব্দ লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে, যা পড়ার সময় সঠিক করে নেয়ার দরকার হয়। এই বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এভাবেই সেগুলো থাকতে দাও। কারণ এগুলো দ্বারা বড় কোন পরিবর্তন ঘটছে না। যেমন হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল করা হচ্ছে না। [104]
ইদ্দতের আয়াত
ইদ্দতের সময়সীমা কতদিন হবে, আল্লাহ পাক এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রেরণ করলেন যে, তারা পূর্ণ একবছর স্বামীগৃহে অবস্থান করে ইদ্দত পালন করবে। ইদ্দতের সময়ে তাদের জন্য বিবাহ করা নিষিদ্ধ। এই একবছর ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণ সম্পদ যেন স্বামী তাদেরকে অসিয়ত করে যায়। [105]
আর যখন তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে তখন স্ত্রীদের ঘর থেকে বের না করে এক বছর পর্যন্ত তাদের খরচের ব্যাপারে ওসিয়ত করে যাবে। অতঃপর যদি সে স্ত্রীরা নিজে থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে সে নারী যদি নিজের ব্যাপারে কোন উত্তম ব্যবস্থা করে, তবে তাতে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী বিজ্ঞতা সম্পন্ন।
আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী খরচ দেয়া পরহেযগারদের উপর কর্তব্য।
কিন্তু নবী মুহাম্মদের সাহাবীগণ বহুবিবাহে যেভাবে আসক্ত ছিল, বিধবা নারীদের পুরো একবছর বিবাহ নিষিদ্ধ থাকা তাদের ঠিক মনমতো হয় নি। পরবর্তীতে এই আয়াত বাদ দিয়ে নতুন আয়াত পাঠানো হলো। সেখানে বলা হলো, এক বছর ইদ্দত পালনের দরকার নেই, চার মাস দশ দিন করলেই হবে। মানে, পারফেক্ট প্ল্যানার আল্লাহ পাক শুরুতে যেই নির্দেশনাটি দিয়েছিলেন, আগের নির্দেশটি রহিত বা মানসুখ করে তা তুলে নিয়ে নতুন বিধান দিলেন। আগে শুধু স্বামীগৃহে থেকে ইদ্দত পুরো করতে হতো। নতুন বিধান অনুসারে, যেখানে খুশি থাকতে পারবে, স্বামীগৃহে কিংবা স্বামীগৃহের বাইরে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মানসুখ বা রহিত হয়ে যাওয়া আয়াত কোরআনে এখনো রয়ে গেল কীভাবে? অন্যান্য অনেক রহিত আয়াত তো বাদ দেয়া হলো, এটি কেন থাকলো?
এই বিষয়ে তাফসীরে ইবনে কাসীর [106] থেকে এর তাফসীর পড়ে নিই-
বছর পরে আয়াতে শব্দ সংযোজন
তাফসির গ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়, সূরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে শুরুর দিকে মিনাল ফাজরি শব্দটি ছিল না। এই শব্দটি না থাকার কারণে সাহাবীদের মধ্যে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিতে থাকে। অনেকেই আয়াতটির অর্থ সঠিকভাবে না বুঝে ভুল করা শুরু করে। এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে প্রায় বছরখানেক পরে এই শব্দটি আয়াতটির সাথে যুক্ত করা হয়, যেন সাহাবীদের মধ্যে এই নিয়ে আর কোন মতবিরোধ না তৈরি হয়। অর্থাৎ সাহাবীদের বুঝতে সমস্যা হওয়ায় আল্লাহ তার আয়াত খানিকটা সংশোধন করেন। আসুন তাফসির গ্রন্থ থেকে দেখে নিই, [107]
সূরা নুরে ভুল শব্দ
তাফসীরে ইবনে কাসীর [108] থেকে জানা যায়, ইবনে আব্বাসের মতে সূরা নূরের একটি শব্দ ভুল লেখা হয়েছে। ইবনে আব্বাস মুহাম্মদের বিখ্যাত সাহাবী, যার জ্ঞানের প্রশংসায় খোদ মুহাম্মদ বহুবার পঞ্চমুখ হয়েছেন।
ইবনে আব্বাসের আরো বিরোধ
নবী মুহাম্মদের অত্যন্ত প্রখ্যাত সাহাবী ইবনে আব্বাস বর্তমান কোরআনে আরো বেশ কয়েকটি ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। যার একটি হচ্ছে, সূরা শুয়ারার ২১৪ নম্বর আয়াতের কথা, যেই আয়াতে একটি বাক্য বর্তমান কোরআনে নেই, অথচ ইবনে আব্বাসের মতে এই আয়াতে আরো একটি বাক্য ছিল। আসুন প্রথমে কোরআনের আয়াতটি দেখে নিই, [109] –
আর তুমি সতর্ক কর তোমার নিকটাত্মীয় স্বজনদের
— Taisirul Quran
তোমার নিকটতম আত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক কর।
— Rawai Al-bayan
আর আপনার নিকটস্থ জ্ঞাতি-গোষ্ঠীকে সতর্ক করুন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে আসুন দেখা যাক, ইবনে আব্বাস এই আয়াতটি কীভাবে বর্ণনা করেছেন, যেখানে “এবং তাদের মধ্য থেকে তোমার নিষ্ঠাবান সম্প্রদায়কেও “ বাক্যটি অতিরিক্ত যা বর্তমান কোরআনে নেই [110] [111] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৮২. কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী জাহান্নামী; সে কোন শাফায়াত পাবে না এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী বান্দার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও তার উপকারে আসবে না
৪০২। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আ’লা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই মর্মে আয়াত নাযিল হয় (অর্থ) “তোমার নিকট-আত্নীয়বর্গকে সতর্ক করে দাও, (২৬ঃ ২১৪)। এবং তাদের মধ্য থেকে তোমার নিষ্ঠাবান সম্প্রদায়কেও।” তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এলেন এবং সাফা পর্বতে উঠে উচ্চস্বরে ডাক দিলেনঃ হায়, মন্দ প্রভাত! সকলে বলাবলি করতে লাগল, কে এই ব্যাক্তি যে ডাক দিচ্ছে? লোকেরা বলল, মুহাম্মাদ। তারপর সবাই তাঁর কাছে উপস্থিত হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে অমুকের বংশধর! হে অমূকের বংশধর! হে অমুকের বংশধর! হে আবদ মানাফের বংশধর! হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! এতে সবাই তাঁর কাছে সমবেত হল।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জী জিজ্ঞেস করলেনঃ দেখ যদি আমি তোমাদের এই সংবাদ দেই যে, এই পর্বতের পাদদেশে শত্রু সৈন্য এসে পড়েছে, তবে কি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে? তারা উত্তর করল, তোমাকে কখনো মিথ্যা বলতে তো আমরা দেখিনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাদের সতর্ক করছি সামনের কঠোর আযাব সম্পর্কে। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ লাহাব তখন এই বলে উঠে গেল “ধ্বংস হও, তুমি এ জন্যই কি আমাদের একত্র করেছিলে?” তখন এই সূরা অবতীর্ণ হয়ঃ ধবংস আবূ লাহাবের দুই হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও সূরার শেষ পর্যন্ত। (১১১ঃ ১-৫)। অবশ্য রাবী আমাশوَتَبَّ এর স্থলেوَقَدْ تَبَّ পাঠ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
ইবনে আব্বাস আরো কিছু কোরআনের আয়াত ভিন্নভাবে পড়তেন বলেই জানা যায়। আসুন ইবনে আব্বাসের আরো একটি ভিন্নভাবে কোরআনের আয়াত সূরা কাহফের ৭৯-৮০ নম্বর আয়াত পড়ার উদাহরণ দেখি [112] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ৬৫/১৮/২. পরিচ্ছেদ নাই।
(وَإِذْ قَالَ مُوْسٰى لِفَتَاهُ لَا أَبْرَحُ حَتّٰىٓأَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا) زَمَانًا وَجَمْعُهُ أَحْقَابٌ.
আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ স্মরণ কর, যখন মূসা স্বীয় যুবক সঙ্গীকে বলেছিলেনঃ আমি অবিরত চলতে থাকব যে পর্যন্ত না দুই সাগরের মিলনস্থলে পৌঁছি, অথবা এভাবে আমি দীর্ঘকাল চলতে থাকব। (সূরাহ কাহাফ ১৮/৬০)
حُقُبًا অর্থ যুগ, তার বহুবচন أَحْقَابٌ।
৪৭২৫. সা’ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ’আব্বাসকে বললাম, নওফ আল-বাক্কালীর ধারণা, খাযিরের সাথী মূসা, তিনি বনী ইসরাঈলের নবী মূসা (আঃ) ছিলেন না। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহর দুশমন[1] মিথ্যা কথা বলেছে। [ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন] উবাই ইবনু কা’আব (রাঃ) আমাকে বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, মূসা (আঃ) একবার বনী ইসরাঈলের সম্মুখে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হল, কোন্ ব্যক্তি সবচেয়ে জ্ঞানী? তিনি বললেন, আমি। এতে আল্লাহ্ তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হলেন। কেননা এ জ্ঞানের ব্যাপারটিকে তিনি আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেননি। আল্লাহ্ তাঁর প্রতি ওয়াহী পাঠালেন, দু-সমুদ্রের সংযোগস্থলে আমার এক বান্দা রয়েছে, সে তোমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী। মূসা (আঃ) বললেন, ইয়া রব, আমি কীভাবে তাঁর সাক্ষাৎ পেতে পারি? আল্লাহ্ বললেন, তোমার সঙ্গে একটি মাছ নাও এবং সেটা থলের মধ্যে রাখ, যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে সেখানেই। তারপর তিনি একটি মাছ নিলেন এবং সেটাকে থলের মধ্যে রাখলেন। অতঃপর রওনা দিলেন। আর সঙ্গে চললেন তাঁর খাদেম ’ইউশা’ ইবনু নূন।
তাঁরা যখন সমুদ্রের ধারে একটি বড় পাথরের কাছে এসে হাজির হলেন, তখন তারা উভয়েই তার ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় মাছটি থলের ভিতর লাফিয়ে উঠল এবং থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে চলে গেল। ’’মাছটি সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।’’ আর মাছটি যেখান দিয়ে চলে গিয়েছিল, আল্লাহ্ সেখান থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিলেন এবং সেখানে একটি সুড়ঙ্গের মত হয় গেল। যখন তিনি জাগ্রত হলেন, তাঁর সাথী তাঁকে মাছটির সংবাদ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন। সেদিনের বাকী সময় ও পরবর্তী রাত তাঁরা চললেন। যখন ভোর হল, মূসা (আঃ) তাঁর খাদিমকে বললেন ’আমাদের সকালের আহার আন, আমরা তো আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ যে স্থানের[2] নির্দেশ করেছিলেন, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে মূসা (আঃ) ক্লান্ত হননি। তখন তাঁর খাদিম তাঁকে বলল, ’’আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখন্ডে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শায়ত্বনই এ কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি বিস্ময়করভাবে নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।’’
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মাছটি তার পথ করে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল এবং মূসা (আঃ) ও তাঁর খাদেমকে তা আশ্চর্যান্বিত করে দিয়েছিল। মূসা (আঃ) বললেনঃ ’’আমরা তো সে স্থানটিরই খোঁজ করছিলাম। তারপর তাঁরা নিজদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা উভয়ে তাঁদের পদচিহ্ন ধরে সে শিলাখন্ডের কাছে ফিরে আসলেন। সেখানে এক ব্যক্তিকে কাপড়ে জড়ানো অবস্থায় পেলেন। মূসা (আঃ) তাকে সালাম দিলেন। খাযির (আঃ) বললেন, তোমাদের এ স্থলে ’সালাম’ আসলো কোত্থেকে? তিনি বললেন, আমি মূসা। খাযির (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা? তিনি বললেন, হাঁ, আমি আপনার কাছে এসেছি এ জন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন। তিনি বললেন, তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করতে পারবে না।’’ হে মূসা! আল্লাহর জ্ঞান থেকে আমাকে এমন কিছু জ্ঞান দান করা হয়েছে যা তুমি জান না আর তোমাকে আল্লাহ্ তাঁর জ্ঞান থেকে যে জ্ঞান দান করেছেন, তা আমি জানি না।
মূসা (আঃ) বললেন, ’’ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।’’ তখন খাযির (আঃ) তাঁকে বললেন, ’’আচ্ছা, তুমি যদি আমার অনুসরণ করই, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবে না, যতক্ষণ আমি তোমাকে সে সম্পর্কে না বলি। তারপর উভয়ে চললেন।’’ তাঁরা সুমদ্রের পাড় ধরে চলতে লাগলেন, তখন একটি নৌকা যাচ্ছিল। তাঁরা তাদের নৌকায় উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারে নৌকার চালকদের সঙ্গে আলাপ করলেন। তারা খাযির (আঃ)-কে চিনে ফেলল। তাই তাদেরকে বিনা পারিশ্রমিকে নৌকায় উঠিয়ে নিল। ’’যখন তাঁরা উভয়ে নৌকায় উঠলেন’’ খাযির (আঃ) কুড়াল দিয়ে নৌকার একটি তক্তা ছিদ্র করে দিলেন। মূসা (আঃ) তাঁকে বললেন, এ লোকেরা তো বিনা মজুরিতে আমাদের বহন করছে, অথচ আপনি এদের নৌকাটি নষ্ট করছেন। আপনি নৌকাটি ছিদ্র করে ফেললেন, যাতে আরোহীরা ডুবে যায়। আপনি তো এক অন্যায় কাজ করলেন, (খাযির বললেন) আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করতে পারবে না। মূসা বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যাপারে অতিরিক্ত কঠোরতা করবেন না।’’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মূসা (আঃ)-এর প্রথম এ অপরাধটি ভুল করে হয়েছিল। তিনি বললেন, এরপরে একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার পার্শ্বে বসে ঠোঁট দিয়ে সমুদ্রে এক ঠোকর মারল। খাযির (আঃ) মূসা (আঃ)-কে বললেন, এ সমুদ্র হতে চড়ুই পাখিটি যতটুকু পানি ঠোঁটে নিল, আমার ও তোমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের তুলনায় ততটুকু। তারপর তাঁরা নৌকা থেকে নেমে সমুদ্রের পাড় ধরে চলতে লাগলেন। এমতাবস্থায় খাযির (আঃ) একটি বালককে অন্য বালকদের সঙ্গে খেলতে দেখলেন। খাযির (আঃ) হাত দিয়ে ছেলেটির মাথা ধরে তাকে হত্যা করলেন। মূসা (আঃ) খাযির (আঃ)-কে বললেন, ’’আপনি কি প্রাণের বদলা ব্যতিরেকেই নিষ্পাপ একটি প্রাণকে হত্যা করলেন? আপনি তো চরম এক অন্যায় কাজ করলেন। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারবে না।’’
নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ অভিযোগটি ছিল প্রথমটির অপেক্ষাও মারাত্মক। [মূসা (আঃ) বললেন] এরপর যদি আমি আপনাকে কোন ব্যাপারে প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না; আপনার কাছে আমার ওযর আপত্তি চূড়ান্তে পৌঁছেছে। তারপর উভয়ে চলতে লাগলেন। শেষে তারা এক বসতির কাছে পৌঁছে তার বাসিন্দাদের কাছে খাদ্য চাইলেন। কিন্তু তারা তাদের আতিথেয়তা করতে অস্বীকৃতি জানাল। তারপর সেখানে তারা এক পতনোন্মুখ দেয়াল দেখতে পেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, সেটি ঝুঁকে পড়েছিল। খাযির (আঃ) নিজ হাতে সেটি সোজা করে দিলেন। মূসা (আঃ) বললেন, এ লোকদের কাছে আমরা এলাম, তারা আমাদের খাদ্য দিল না এবং আমাদের আতিথেয়তাও করল না। ’’আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। তিনি বললেন, এখানেই তোমার এবং আমার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটল। …..যে বিষয়ে তুমি ধৈর্যধারণ করতে পারনি, এ তার ব্যাখ্যা।’’
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার মনের বাসনা যে, যদি মূসা (আঃ) আর একটু ধৈর্যধারণ করতেন, তাহলে আল্লাহ্ তাঁদের আরও ঘটনা আমাদের জানাতেন। সা’ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) এভাবে এ আয়াত পাঠ করতেন- وَكَانَاَمَا مَهُمْ مَلِكٌيَّاخُذُ كُلَّ سَفِيْنَةٍ صَالِحَةً غَصْبًا
নিচের আয়াতটি এভাবে পাঠ করলেন- وَأَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ كَافِرًا وَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ [৭৪]] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৩৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৩৬৬)
[1] নওফ আল-বাককালী- সে একজন মুসলিম। ইব্নু ‘আববাস তাকে আল্লাহর দুশমন বলেছেন রাগান্বিত অবস্থায়।
[2] স্থানঃ যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)
সূরা ইউনুসের একটি শব্দ
সূরা ইউনুসের ২২ নম্বর আয়াতে একটি শব্দ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ছিলেন একজন আরবী ভাষার শিক্ষক। তিনি হযরত উসমানের কোরআনের কিছু শব্দ পরিবর্তন করেন বলে জানা যায়। যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাফসীরে জালালাইনের গ্রন্থ থেকে। লক্ষ্য করে দেখুন, জালালাইনের তাফসীরে দুইটি শব্দের পাঠের কথা বর্ণিত রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, লাওহে মাহফুজের কোরআনে কোন শব্দটি আছে? [113]
সুরা আনফালে ইয়ামালুন ও তা’মালুন
সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতের উচ্চারণ হচ্ছে,
অক্বা-তিলূ হুম্ হাত্তা-লা-তাকূনা ফিত্নাতুঁও অইয়াকূনাদ্ দীনু কুল্লুহূ লিল্লা-হি ফাইনিন্তাহাও ফাইন্নাল্লা-হা বিমা-ইয়া’মালূনা বার্ছী
ইয়ামালুন শব্দের অর্থ তারা করে। অথচ, ক্বারী ইয়াকুব এই শব্দটিকে উচ্চারণ করতেন তা’মালুন, যার অর্থ তোমরা করো। এই শব্দটির পরিবর্তনে পুরো আয়াতটির অর্থের অনেকখানি পরিবর্তন হয়ে যায়। বিষয়টি তাফসীরে মাযহারী থেকে জানা যায়। [114]
আবদুল্লাহ ইবনে উমর এর বক্তব্য
প্রখ্যাত সাহাবী এবং হাদিস ও ফিকহের অন্যতম বড় পন্ডিত আবদুল্লাহ ইবনে উমর ছিলেন হযরত উমরের পুত্র। তিনি ১৬৩০টি নির্ভরযোগ্য হাদিস বর্ণনা করেছেন। নবী মুহাম্মদ তাকে ‘সৎ লোক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হাদিসটি নিচে দেখুন [115] ।
তিনি বলেছেন, [116]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে সূরা আহযাবের প্রায় দু’শটি আয়াত তেলাওয়াত করা হতো। কিন্তু কুরআন সংকলন করার সময় উসমান কেবলমাত্র যা বর্তমান কোরআনে বিদ্যমান তা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
Abu Ubaid said: “IsnuTil b. Ibrahlm reported to us, from Ayyub, from Nafi from Ibn
“Umar, who said: ‘None of you should say that he has full knowledge of the Qur’an; how could
he know what full knowledge is! So much of the Qur’an has passed him by! Let him say instead:
‘I have taken of the Qur’an that which was present.”
12
He also said: “Ibn Abu Maryam reported to us from Ibn Lahfa, from Abu ‘1-Aswad, from
“Urwa b. ‘1-Zubair, that A’isha said: “During the time of the Prophet (s) two hundred verses of the chapter ‘1-Ahzab were recited but when compiling the Qur’an Uthman was only able to collect what now exists.”
আবূ খুযায়মা আনসারী
নিচের হাদিসটির শেষের অংশ মন দিয়ে পড়ুন। কিছু আয়াতের একমাত্র বর্ণনাকারী ছিলেন আবূ খুযায়মা আনসারী। যেটি যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। [117]
এমনকি আমি সূরা তওবার শেষাংশ আবূ খুযায়মা আনসারী (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করলাম। এ অংশটুকু তিনি ব্যতীত আর কারো কাছে আমি পাইনি। আয়াতগুলো হচ্ছে এইঃ তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছে এক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছে। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মু’মিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। এরপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলো, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই। আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি (১২৮-১২৯)।
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৩/ ফাজায়ীলুল কুরআন
পরিচ্ছদঃ ২৩৯৮. নবী (সাঃ) এর কাতিব
৪৬২৩। ইয়াহ্ইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওহী লিখতে। সুতরাং তুমি কুরআনের আয়াতগুলো অনুসন্ধান কর। এরপর আমি অনুসন্ধান করলাম। শেষ পর্যায়ে সূরা তওবার শেষ দু’টো আয়াত আমি আবূ খুযায়মা আনসারী (রাঃ) এর কাছে পেলাম। তিনি ব্যতীত আর কারো কাছে আমি এর সন্ধান পায়নি। আয়াত দু’টো হচ্ছে এইঃ “তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের কাছে এক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছে। তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মু’মিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। তারপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলবে, আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহাআরশের অধিপতি”। (৯: ১২৮-১২৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আরো একটি আয়াত রয়েছে, যেই আয়াতটি শুধুমাত্র খুযাইমা আনসারীর কাছ থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। অন্য কোন হাফেজ আয়াতটি বলতে পারেননি। আয়াতটি হচ্ছে সূরা আহজাবের ২৩ নম্বর আয়াত [118] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫৩. মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সংগে তাদের কৃত অঙ্গীরকার পূর্ণ করে দেখিয়েছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি। (৩৩ঃ ২০)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৬১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮০৭
২৬১২। আবূল ইয়ামান ও ইসমাঈল (রহঃ) … যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কুরআনের আয়াতসমূহ একত্রিত কতে একটি মুসহাফে লিপিবদ্ধ করলাম, তখন সুরা আহযাবের একটি আয়াত পেলাম না। যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পড়তে শুনেছি। একমাত্র খুযাইমা আনসারী (রাঃ)-এর কাছে পেলাম। যার সাক্ষ্যকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ব্যাক্তির সাক্ষ্যের সমান সাব্যস্ত করেছিলেন। সে আয়াতটি হলঃمِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত তাদের ওয়াদা পূরণ করেছেন। (৩৩ঃ ২৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)
সেই সাথে বোঝা যাচ্ছে, ঐ সময় কোরআনে হাফেজের সংখ্যা এতটাই কমে গিয়েছিল যে, কিছু আয়াত শুধুমাত্র একজন মানুষ জানতেন। আর কেউ সেই আয়াতগুলো জানতেন না। তাহলে এরকম হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয় যে, যেসকল হাফেজ মারা গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন, যারা কোরআনের কোন না কোন আয়াতের একমাত্র সাক্ষী বা মুখস্তকারী। যেই আয়াতগুলো আর কখনই খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার অনেক সময় শুধুমাত্র একজন বর্ণনাকারী হওয়ায় কোরআনের কিছু আয়াত নেয়া হয় নি। যা পরে আলোচনা করা হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ
নিচের হাদিসটি পড়ুন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ হযরত উসমানের আমলেও জীবিত ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ সম্পর্কে খোদ নবীই বলেছেন তার থেকেই কোরআনের শিক্ষা গ্রহণ করতে। [119]
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২১০৬. আবু হুযায়ফা (রাঃ) এর মাওলা (আযাদকৃত গোলাম) সালিম (রাঃ) এর মর্যাদা
৩৪৮৭। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) … মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) এর মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর আলোচনা হলে তিনি বললেন, আমি এই ব্যাক্তিকে ঐদিন থেকে অত্যন্ত ভালবাসি যেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা চার ব্যাক্তি থেকে কুরআন শিক্ষা কর, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ সর্বপ্রথম তাঁর নাম উল্লেখ করলেন, আবূ হুযায়ফা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম সালিম, উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) ও মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে। শেষোক্ত দু’জনের মধ্যে কার নাম আগে উল্লেখ করছিলেন শুধু এ কথাটুকু আমার স্মরণ নেই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যার কোরআন তিলাওয়াত শুনে খোদ নবী মুহাম্মদ পর্যন্ত কান্নায় ভেঙ্গে পরতেন। [120]
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৮ঃ কুরআনের মর্যাদা
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ – (কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব)
২১৯৫-(৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে বসে আমাকে বললেন, তুমি আমার সামনে কুরআন পড়ো (আমি তোমার কুরআন পড়া শুনব)। (তাঁর কথা শুনে) আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সামনে আমি কুরআন পড়ব? অথচ এ কুরআন আপনার ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কুরআন আমি অন্যের মুখে শুনতে পছন্দ করি। অতঃপর আমি সূরা আন্ নিসা পড়তে শুরু করলাম। আমি ‘‘তখন কেমন হবে আমি যখন প্রত্যেক উম্মাতের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আপনাকেও সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব এদের বিরুদ্ধে’’ এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এখন বন্ধ করো। এ সময় আমি তাঁর দিকে তাকালাম। দেখলাম তাঁর দু’ চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। (বুখারী, মুসলিম)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ৫০৫০, মুসলিম ৮০০, আবূ দাঊদ ৩৬৬৮, তিরমিযী ৩০২৫, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৩০৩০৩, আহমাদ ৩৬০৬, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৪৬০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৫৭, শু‘আবূল ঈমান ৯৮৯২।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সেই সাথে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ গর্ব করে বলেছেন, তিনি কোরআনের প্রতিটি সূরা এবং প্রতিটি আয়াত, তার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবগত। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, একটি সূরার কয়েকটি আয়াতের শুধুমাত্র একজন বর্ণনাকারী পাওয়া গেল কীভাবে? [121] [122]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৬/ আল-কুরআনের ফাযীলাতসমূহ
পরিচ্ছদঃ ৬৬/৮. নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে সব সহাবী ক্বারী ছিলেন।
৫০০২. মাসরূক (রহ.) হতে বর্ণিত। ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, আল্লাহর কিতাবের অবতীর্ণ প্রতিটি সূরাহ সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোন্ ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে উট পৌঁছতে পারে, তাহলে সওয়ার হয়ে সেখানে পৌঁছে যেতাম। (মুসলিম ৪৪/২২, হাঃ ২৪৬৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহিহ হাদিস দুটোই একসাথে মেনে নেয়া একটু কষ্টকর। এখানে দুইটি ঘটনা সত্য হতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ সমস্ত আয়াত জানতেন, সেটি সত্য হলে আবূ খুযায়মা আনসারী নিজেই আয়াত বানিয়ে কোরআনে ঢুকিয়েছে, নতুবা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ অনেক আয়াত জানতেন না। দুটোই একই সাথে সত্য হওয়া সম্ভব নয়।
উসমানের কোরআন যখন সংকলিত হয়, সেই সংকলন দেখার পরে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর একটি মন্তব্য এখানে গুরুত্বপূর্ণঃ
“The people have been guilty of deceit in the reading of the Qur’an. I like it better to read according to the recitation of him (Prophet) whom I love more than that of Zayd Ibn Thabit,”
(Ibn Sa’d, Kitab al-Tabaqat al-Kabir, Vol. 2, p.444).
সেই আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ একাধিকবার বিভিন্ন জায়গাতেই বলেছেন, সূরা নাস এবং সূরা ফালাক আদৌ কোরআনে অন্তর্ভূক্ত সূরা নয়। এই দুই সূরাকে উনি নিজেই নিজের লিখিত কোরআনে অন্তর্ভূক্ত করেন নি [123] –
এইসব তথ্যসূত্র থেকে বোঝা যাচ্ছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর মত গুরুত্বপুর্ণ সাহাবী পর্যন্ত উসমানের কোরআন সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেছেন। শুধু দ্বিমতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, হযরত উসমানের কোরআন সংকলের পরে হযরত উসমান ঘোষণা দিলেন যে, যার কাছে যত ধরণের কোরআন বা কোরআনের আয়াত রয়ে গেছে সেগুলো সব পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যখন কুফাতে শোনা গেল যে তাদের কাছে সংরক্ষিত সব কোরআনের আয়াত পুড়িয়ে দিয়ে শুধুমাত্র যায়েদ ইবন সাবেতের মুসহাফ এখন থেকে ব্যবহার করতে হয়, আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ এর বিরোধিতা করলেন। এই হুকুম শুনে তিনি কুফা শহরে এইভাবে খুৎবা দিলঃ ( উপরে একবার এই তথ্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে )
কোরআনের পাঠে লোকেরা ছলনার দোষে পরেছে। আমি এর পাঠ বেশি পছন্দ করি (মুহাম্মদের), যার পাঠ আমি যায়েদ বিন সাবেতের পাঠ থেকে বেশি ভালবাসি। আল্লাহ্র কসম! যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ)-এর মুখ থেকে সত্তরেরও বেশী সূরা শিখেছি যখন যায়েদ ইবন সাবেত যুবক ছিলেন, এর মাত্র দুইটি কেশপাশ চুল ছিল এবং যুবকদের সাথে তখন খেলা করতেন।”
[54]
তিরমিজী শরীফের এই হাদিসটিও পড়ে নিই, [124]
সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫০/ কুরআন তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ সূরা তাওবা
৩১০৪. মুহাম্মাদ ইবন বাশশার (রহঃ) ….. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু উছমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে এলেন। উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন আরমেনিয়া ও আযারবায়জান বিজয়ে ইরাকবাসীদের সঙ্গে শামবাসীদেরও যুদ্ধ-যাত্রার জন্য প্রস্তুত করছিলেন। হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরআনের (পাঠের) ক্ষেত্রে এদের পরস্পর মতানৈক্য দেখেছিলেন। তিনি উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বললেনঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! ইয়াহূদ নাসারারা যেরূপ মতানৈক্যে লিপ্ত হয়েছিল, আল্লাহর কিতাবে সেরূপ মতানৈক্যে লিপ্ত হওয়ার পূর্বে এ উম্মতকে আপনি রক্ষা করুন।
তখন উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহ এই বলে হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর কাছে লোক পাঠালেন যে, আপনার কাছে রক্ষিত কুরআনের লিপিবদ্ধ কপিগুলো আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, আমরা এটির বিভিন্ন কপি করে পুনরায় আপনার কাছে ফেরত পাঠাব।
হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা কুরআনের লিপিবদ্ধ কপিগুলো উছমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যায়দ ইবন ছাবিত, সাঈদ ইবন আস, আবদুর রহমান ইবন হারিছ ইবন হিশাম ও আবদুল্লাহ্ ইবন যুবায়র রাদিয়াল্লাহু আনহুম-এর কাছে কপিগুলো পাঠিয়ে বললেন যে, তোমরা এই কপিগুলো মুসহাফে লিপিবদ্ধ কর। এই তিনজন কুরায়শী গ্রুপকে বললেনঃ তোমাদের এবং যায়দ ইবন ছাবিতের মাঝে মতানৈক্য দেখা গেলে কুরায়শী ভাষা অনুসারে তা লিপিবদ্ধ করবে। কেননা কুরআন কুরায়শদের ভাষা অনুসারেই নাযিল হয়েছে।
যা হোক, তারা কুরআনের লিপিবদ্ধ কপিগুলো বিভিন্ন মুসহাফে লিপিবদ্ধ করেন। উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বিভিন্ন দিকে তাদের কপি করা মুসহাফগুলো পাঠালেন।
যুহরী (রহঃ) বলেনঃ খারিজা ইবন যায়দ আমাকে বর্ণনা করেন যে, যায়দ ইবন ছাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমি খূঁজে পাচ্ছিলাম না। অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তা পাঠ করতে আমি শুনেছি। সেটি হলঃ
مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ
মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। এদের কেউ কেউ শাহাদত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। (৩৩ : ২৩)
পরে তালাশ করে খুযায়মা ইবন ছাবিত কিংবা আবূ খুযায়মার কাছে সেটি পেলাম এবং উক্ত সূরায় তা যুক্ত করে দিলাম।
যুহরী (রহঃ) বলেনঃ একদিন তারাالتابوت এবংالتابوه নিয়ে মতানৈক্য করেন। কুরায়শীরা বললেনঃ التابوت যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃالتابوه তাঁদের এ মতানৈক্যের বিষয়টি উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে পেশ করা হলে তিনি বললেনঃ তোমরাالتابوت লিখ। কেননা কুরআন কুরায়শের ভাষায় নাযিল হয়েছে।
যুহরী বলেনঃ উবায়দুল্লাহ ইবন উতবা বলেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু যায়দ ইবন ছাবিতের এ তৈরী কপি পছন্দ করেন নি। তিনি বলেছেনঃ হে মুসলিম সম্প্রদায়! কুরআনের মুসহাফ লিপিবদ্ধ করার কাজে আমাকে দূরে রাখা হয়েছে আর এর দায়িত্ব বহন করেছে এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহর কসম আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন সে ছিল এক কাফিরের ঔরসে। (এই কথা বলে তিনি যায়দ ইবন ছাবিতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন)।
আবদুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ হে ইরাকবাসী! তোমাদের কাছে যে মুসহাফগুলো রয়েছে সেগুলো লুকিয়ে রাখ। আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেনঃ
وَمَنْ يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
এবং কেউ অন্যায়ভাবে কিছু গোপন করলে যা সে অন্যায়ভাবে গোপন করবে কিয়ামতের দিন সে তা নিয়ে আসবে। (৩ : ১৬১) সুতরাং তোমরা তোমাদের মুসহাফসহ আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবে। যুহরী বলেনঃ বিশিষ্ট সাহাবীগণের অনেকই ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর এ বক্তব্য অপছন্দ করেছেন বলে আমি সংবাদ পেয়েছি।
সহীহ, বুখারি ৪৯৮৭, ৪৯৮৮, মাকতু, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩১০৪ [আল মাদানী প্রকাশনী]
(আবু ঈসা বলেন) হাদীসটি হাসান-সহীহ। এটি হল যুহরী (রহঃ) -এর রিওয়ায়ত। তাঁর রিওয়ায়ত ছাড়া এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিজি লিখেছেন,
যুহরী (র) বলেনঃ ইবায়দুল্লাহ্ ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উতবা বলেছেন যে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ (রা) যায়েদ ইবনে ছাবিতের এ তৈরী কপি পছন্দ করেন নি। তিনি বলেছেনঃ “হে মুসলিম সম্প্রদায়!” কুরআনের মুসহাফ লিপিবদ্ধ করার কাজে আমাকে দূরে রাখা হয়েছে আর এর দায়িত্ব বহন করেছে এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহ্র শপথ আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন সে ছিল এক কাফিরের ঔরসে। (এই কথা বলে তিনি যায়েদ ইবনে ছাবিতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন)। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ (রা) বলেছেনঃ হে ইরাকবাসী! তোমাদের কাছে যে মুসহাফগুলো রয়েছে সেগুলো লুকিয়ে রাখ।
[55]
[125]
ইবনে আবু দাউদের কিতাবুল মাসাহিফ গ্রন্থে আছে যে ইবনে মাসউদ বলতেন,
আমি সরাসরি আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) থেকে সত্তর সূরা পেয়েছি যখন যায়েদ বিন সাবেত তখনও একজন বাচ্চা মানুষ ছিল—এখন আমি কি ত্যাগ করব যেটা আমি আল্লাহ্র রাসূল থেকে সরাসরি পেয়েছি?”
[126]
এবারে আসুন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও তাঁর ফিকাহ গ্রন্থ থেকে এই অংশটুকু পড়ি [127] –
হুজাইফা ইবনে ইয়ামান
হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (মৃত্যু-৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ/৩৬ হিজরী) মুহাম্মদের একজন বিশিষ্ট সাহাবা ছিলেন। যিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা সেনাপতি ও দেশ বিজেতা এবং প্রখর জ্ঞানের অধিকারী। উনার বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমান কোরআনে যে সূরা বারা’আত (সূরা তাওবা) আছে, তা প্রকৃত সূরার এক চতুর্থাংশ মাত্র [128] –
উবাই ইবনে কাব
নিচের হাদিসটি পড়ুন। উবাই ইবনে কাব ছিলেন সেই ক’জনের একজন যারা নবী এর মৃত্যুর পূর্বেই কুরআন হাফেজ ছিলেন। যার সম্পর্কে উমর বলেছেন, উনিই সর্বোত্তম ক্বারী। তার সম্পর্কে সহিহ হাদিস রয়েছে যে, আল্লাহ পাকও তার নাম উচ্চারণ করেছেন। [129] , [130] তার থেকে প্রাপ্ত অনেক আয়াত বাদ দেয়া হয়।
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৬/ আল-কুরআনের ফাযীলাতসমূহ
পরিচ্ছদঃ ৬৬/৮. নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে সব সহাবী ক্বারী ছিলেন।
৫০০৫. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, ‘আলী (রাঃ) আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম বিচারক এবং উবাই (রাঃ) আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম কারী। এতদ্সত্ত্বেও তিনি যা তিলাওয়াত করেছেন, আমরা তার কিছু অংশ বাদ দিই, অথচ তিনি বলছেন, আমি তা আল্লাহর রাসূলের যবান থেকে শুনেছি, কোন কিছুর বিনিময়ে আমি তা ত্যাগ করব না। আল্লাহ্ বলেছেন, ‘‘আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা ভুলিয়ে দিলে তা হতে উত্তম কিংবা তার মত কোন আয়াত এনে দিই।’’ ৪৪৮১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৩৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সেই প্রখ্যাত সাহাবী, যার নাম আল্লাহ নিজেই উচ্চারণ করেছেন, সেই উবাই ইবনে কাব কোরআনের সংকলন বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদের সাথেই একমত ছিলেন। বর্তমান কোরআনের অনেক কিছুর সাথেই উনার দ্বিমতের কথা জানা যায়। [131]
দু ‘টি অতিরিক্ত সূরা
কিছু বিবরণে পাওয়া যায়, কোরআনে আরো দুইটি অতিরিক্ত সূরা ছিল, যা বর্তমান কোরআনে অনুপস্থিত। জালালুদ্দিন সুয়ুতির আল ইত্বকান গ্রন্থে পাওয়া যায়ঃ
এবং উবাই(রা) এর মুসহাফে ছিল ১১৬টি(সূরা/অধ্যায়) এবং শেষ থেকে তিনি লিপিবদ্ধ করেন সূরা হাফদ এবং খাল’।
[132]
উবাই ইবনে কা’ব তাঁর মুসহাফে যে কোরআনের যেই অংশটুকু লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তাও জালালুদ্দিন সুয়ুতি তার আল ইতকান গ্রন্থে বর্ণণা করেছেনঃ
হে আল্লাহ, আমরা শুধু আপনার কাছেই সাহায্য চাই, শুধু আপনার কাছেই ক্ষমা চাই, আপনার গুণগান করি, আপনার অকৃতজ্ঞ হই না, আর যারা আপনার অবাধ্য তাদের থেকে আলাদা ও বিচ্ছিন্ন হই। হে আল্লাহ, আমরা শুধু আপনারই ইবাদত করি, শুধু আপনার নিকট প্রার্থনা করি, শুধু আপনার প্রতি নত হই(সিজদাহ করি), আপনার দিকে ধাবিত হই।আর আমরা আপনার কঠিন শাস্তিকে ভয় করি, আপনার দয়ার আশা রাখি।নিশ্চয়ই আপনার শাস্তি তো অবিশ্বাসীদের জন্য নির্ধারিত।
[133]
এই বিষয়ে ইসলামিস্টগণ বলে থাকেন, এটি কোন স্বতন্ত্র সূরা নয়, বরঞ্চ আল্লাহ পাক নবীকে একটি দোয়া শিখিয়েছেন, যা উবাই ইবনে কা’ব সূরা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে ফেলেছেন। এটি হচ্ছে দোয়া কুনুত। অথচ, সূরা ফাতিহা পড়লেও বোঝা যায়, সেটি আসলে একটি দোয়া। তাহলে, ফাতিহা অন্তর্ভূক্ত হয়ে থাকলে, এই সূরাটি কেন অন্তর্ভূক্ত করা হলো না?
কিন্তু, ইসলামিস্টদের এই দাবী ধোপে টিকে না, কারণ সহিহ হাদিসেও বিষয়টি বর্ণিত রয়েছে। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, ঐটি শুধুমাত্র দোয়াই ছিল না, আয়াতও ছিল। [134]
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২১৯২. রাজী, রিল, যাক্ওয়ান, বিরে মাউনার যুদ্ধ এবং আযাল, কারাহ, আসিম ইব্ন সাবিত, খুবায়ব (রা) ও তার সংগীদের ঘটনা। ইব্ন ইসহাক (র) বলেন, আসিম ইব্ন উমর (রা) বর্ণনা করেছেন যে, রাজীর যুদ্ধ উহুদের যুদ্ধের পর সংঘটিত হয়েছিল
৩৭৯০। … এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছালে তিনি এক মাস পর্যন্ত ফজরের সালাতে আরবের কতিপয় গোত্র তথা রিল, যাক্ওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদোয়া করে কুনূত পাঠ করেন। আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তাদের সম্পর্কিত কিছু আয়াত আমরা পাঠ করতাম। অবশ্য পরে এর তিলাওয়াত রহিত হয়ে যায়।
একটি আয়াত ছিল- بَلِّغُوا عَنَّا قَوْمَنَا، أَنَّا لَقِينَا رَبَّنَا، فَرَضِيَ عَنَّا وَأَرْضَانَا “আমাদের কওমের লোকদের জানিয়ে দাও। আমরা আমাদের প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছে গিয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ট করেছেন। কাতাদা (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তাঁকে বলেছেন, আল্লাহর নাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মাস পর্যন্ত ফজরের সালাতে আরবের কতিপয় গোত্র- তথা রি’ল, যাকওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদোয়া করে কুনূত পাঠ করেছেন।
(ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর উস্তাদ) খলীফা (রহঃ) এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, ইবনু যুরায় (রহঃ) সাঈদ ও কাতাদা (রহঃ) এর মাধ্যমে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা ৭০ জন সকলেই ছিলেন আনসার। তাঁদেরকে বি’রে মাউনা নামক স্থানে শহীদ করা হয়েছিল। (ইমাম বুখারী (রহঃ)) বলেন, এখানে قُرْآن শব্দটি কিতাব বা অনুরুপ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আরো একটি হারানো সূরা
আবু মুসা আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস আশ আশয়ারী’ যিনি ‘আবু মুসা আল-আশয়ারি’ নামেই বেশি পরিচিত, তিনি ছিলেন মুহাম্মদের সহচর ছিলেন এবং ইসলামের প্রথম দিকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় বসরা ও কুফার গভর্নর ছিলেন এবং পারস্যের প্রথম দিকে মুসলিম বিজয়ের সাথে জড়িত ছিলেন। উনার কাছ থেকে জানা যায়, কোরআনের একটি হারিয়ে যাওয়া সূরার কথা। [135]
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৩/ যাকাত
পরিচ্ছদঃ ৩১. পার্থিব সম্পদের প্রতি লোভ করা অপছন্দনীয়
২২৯০। সুওয়ায়দ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবুল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) কে বসরাবাসী ক্বারীগনের নিকট প্রেরণ করা হল। তিনি তথায় গিয়ে এমন তিনশ লোকের সাক্ষাৎ পেলেন, যারা কুরআনের ক্বারী ছিলেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনারা বসরা শহরের সম্রান্ত লোক এবং আল কুরআনের ক্বারী, আপনারা আল-কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকুন। বহুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে আপনাদের মন যেন কঠিন না হয়ে যায়, যেমন পূর্বেকার লোকদের মন কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আমি একটি সূরা পাঠ করতাম যা দৈর্ঘ ও কাঠিন্যের দিক থেকে সূরা (বারা-আত) তাওবার অনুরূপ। আমাদেরকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তার থেকে এ কথাটি আমার স্মরণ আছে “যদি আদম সন্তানের জন্য দুই মাঠ পরিপূর্ণ ধন-দৌলত হয়, তবে সে তৃতীয় মাঠ অবশ্যই খুজে বেড়াবে। মাটি ব্যতীত অন্য কিছু আদম সন্তানের পেট পুরা করতে পারবে না”।
আমি অন্য একটি সূরাও পাঠ করতাম যা কোন একটি মুশাববিহতের সম পরিমাণ (দৈর্ঘ্য)। আমাদেরকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তা থেকে আমার এতটুকু মুখস্থ আছেঃ “হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা তোমরা কেন বল”? বললে তা সাক্ষ্য তা সাক্ষ্য স্বরুপ তোমাদের গর্দানে লিখে দেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে কিয়ামতের দিন তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৩। যাকাত
পরিচ্ছদঃ ৩৯. আদাম সন্তানের যদিও সম্পদের দুটি উপত্যকা থাকে তবু সে তৃতীয়টি অনুসন্ধান করবে
২৩০৯-(১১৯/১০৫০) সুওয়াইদ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ….. আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ মূসা আল আশ’আরী (রাযীঃ) একবার বাসরার কারীদেরকে (আলিমদের) ডেকে পাঠালেন। অতঃপর সেখানকার তিনশ’ কারী তার কাছে আসলেন এবং কুরআন পাঠ করলেন। তিনি (তাদের উদ্দেশে) বললেন, আপনারা বাসরার মধ্যে উত্তম লোক এবং সেখানকার কারী। সুতরাং আপনারা অনবরত কুরআন পাঠ করতে থাকুন। অলসতায় দীর্ঘ সময় যেন কেটে না যায়। তাহলে আপনাদের অন্তর কঠিন হয়ে যেতে পারে যেমন আপনাদের পূর্ববর্তী একদল লোকের অন্তর কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আমরা একটি সূরা পাঠ করতাম যা দীর্ঘ এবং কঠোর ভীতি প্রদর্শনের দিক থেকে সূরা বারাআতের সমতুল্য। পরে তা আমি ভুলে গেছি। তবে তার এতটুকু মনে রেখেছি- “যদি কোন আদাম সন্তান দুই উপত্যকা সম্পদের মালিক হয়ে যায় তাহলে সে তৃতীয় আর একটি উপত্যকা ভর্তি সম্পদ পেতে চাইবে। মাটি ছাড়া আর কোন কিছুতেই আদাম সন্তানের পেট ভরে না।” আমি আরো একটি সূরা পাঠ করতাম যা মুসাব্বিহাত (গুণগানপূর্ণ) সূরাগুলো সমতুল্য। তাও আমি ভুলে গেছি, শুধু তা থেকে এ আয়াতটি মনে আছে– “হে ঈমানদারগণ! তোমরা কেন এমন কথা বল যা কর না”- (সুরাহু সফ ৬১ঃ ২)। আর যে কথা তোমরা শুধু মুখে আওড়াও অথচ করো না তা তোমাদের ঘাড়ে সাক্ষী হিসেবে লিখে রাখা হয়। কিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৮৭, ইসলামীক সেন্টার ২২৮৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আরো হারিয়ে যাওয়া আয়াত
সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, কোরআনে আরো কিছু আয়াত নাজিল হওয়ার পরে সাহাবীগণ সেগুলো পাঠ করতেন, পরে সেগুলো মানসুখ হয়ে যায়, এবং সেই কারণে কোরআন থেকে সেগুলো বাদ যায়। সেই আয়াতগুলো কবে মানসুখ হলো, কেন মানসুখ হলো, সেগুলো বোধগম্য নয় [136] [137] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৭৫০. যে আল্লাহর রাস্তায় আহত হলো কিংবা বর্শা বিদ্ধ হল
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৬০৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮০১
২৬০৭। হাফস ইবনু উমর (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু সুলায়মের সত্তর জন লোকের একটি দলকে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বানু আমিরের কাছে পাঠান। দলটি সেখানে পৌছলে আমার মামা (হারাম ইবনু মিলহান) তাদেরকে বললেন, আমি সবার আগে বানু আমিরের কাছে যাব। যদি তারা আমাকে নিরাপত্তা দেয় আর আমি তাদের কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী পৌছাতে পারি, (তবে তো ভাল) অন্যথায় তোমরা আমার কাছেই থাকবে। তারপর তিনি এগিয়ে গেলেন। কাফিররা তাঁকে নিরাপত্তা দিল, কিন্তু তিনি যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী শোনাতে লাগলেন, সেই সময় আমির গোত্রীয়রা এক ব্যাক্তিকে ইঙ্গিত করল। আর সেই ব্যাক্তি তাঁর প্রতি তীর মারল এবং তীর শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন আল্লাহু আকবর, কাবার রবের কসম! আমি সফলকাম হয়েছি। তারপরে কাফিররা তাঁর অন্যান্য সঙ্গীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং সকলকে শহীদ করল, কিন্তু একজন খোঁড়া ব্যাক্তি বেঁচে গেলেন, তিনি পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন।
হাম্মাম (রহঃ) অতিরিক্ত উল্লেখ করেন, আমার মনে হয় তাঁর সাথে অন্য একজন ছিলেন। তারপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খবর দিলেন, প্রেরিত দলটি তাদের রবের সাথে মিলিত হয়েছে। তিনি (রব) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের সন্তুষ্ট করেছেন। (রাবী বলেন) আমরা এই আয়াতটি পাঠ করতাম, আমাদের কওমকে জানিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সাথে মিলিত হয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরও সন্তুষ্ট করেছেন। পরে এ আয়াতটি মানসুখ হয়ে যায়। তারপর আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি অবাধ্যতার দরুন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রমাগত চল্লিশ দিন রি’ল, যাকওয়ান, বানু লিহয়ান ও বানু উসায়্যার বিরুদ্ধে দু’আ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৭৬০. আল্লাহ তা’আলার এ বাণী যাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, তাদের মর্যাদাঃ যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের কখনো মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত …. আল্লাহ মুমিনগণের শ্রমফল নষ্ট করে দেন না। (আলে ‘ইমরান : ৩:১৬৯ – ১৭১)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৬১৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৮১৪
২৬১৯। ইসমাইল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যারা বীরে মাউনায় শরীক সাহাবীদের শহীদ করেছিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই রি’ল ও যাকওয়ানের বিরুদ্ধে ত্রিশ দিন পর্যন্ত ফজরে দুয়া করেছিলেন এবং উসাইয়্যা গোত্রের বিরুদ্ধেও যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, বী’রে মাউনার কাছে শহীদ সাহাবীদের সম্পর্কে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা আমরা পাঠ করেছি। পরে তা, মানসুখ হয়ে যায়। (আয়াতটি হলঃ)
بَلِّغُوا قَوْمَنَا أَنْ قَدْ لَقِينَا رَبَّنَا فَرَضِيَ عَنَّا وَرَضِينَا عَنْهُ
অর্থঃ তোমরা আমাদের কওমের কাছে এ সংবাদ পৌছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সাক্ষাত লাভ করেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং আমরাও তার প্রতি সন্তুষ্ট।”
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
অন্ধের অনুরোধে আয়াত পরিবর্তন
একবার মুহাম্মদের কাছে একটি আয়াত নাজিল হলো। মুহাম্মদের পাশে ছিল একজন অন্ধ সাহাবী, যার নাম আমর ইবন উম্মে মাকতুম। ঐ আয়াতে অন্ধদের বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা হয় নি। এই কারণে তিনি মুহাম্মদের কাছে জানতে চাইলেন, অন্ধদের বেলায় কী হবে? মুহাম্মদ তাৎক্ষণিক আগের আয়াতটি বদলে অর্থাৎ একটু আগে বলা আয়াতটি পরিবর্তন করে নতুন আয়াত নাজিল করলেন। সর্বজ্ঞানী আল্লাহ পাক যেই আয়াত শুরুতে নাজিল করেছিলেন, তাতে সংশোধনী আনতে হলো। অর্থাৎ, ঐ অন্ধ ব্যক্তি পাশে না থাকলে আগের আয়াতটিই এখনো মুসলিমগণ পড়তো। অন্যান্য যে সকল আয়াত নাজিল হয়েছে, আয়াত নাজিলের সময় পাশে অন্ধ, প্রতিবন্ধী বা অন্যান্য মানুষজন যদি বসে থাকতেন, সেই আয়াতগুলোও হয়তো বদলে যেতো। ঘটনাটি বর্ণিত আছে সহিহ বুখারী শরীফে [138] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৬/ আল-কুরআনের ফাযীলাতসমূহ
পরিচ্ছেদঃ ৬৬/৪. নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাতিব (ওয়াহী লিখক)
৪৯৯০. বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, لَايَسْتَوِي الْقَاعِدُوْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ ….وَالْمُجَاهِدُوْنَ فِيْسَبِيْلِ اللهِ আয়াতটি অবতীর্ণ হলে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যায়দকে আমার কাছে ডেকে আন এবং তাকে বল সে যেন কাষ্ঠখন্ড, দোয়াত এবং কাঁধের হাড় (রাবী বলেন- অথবা তিনি বলেছেন, কাঁধের হাড় এবং দোয়াত) নিয়ে আসে। এরপর তিনি বললেন, লিখ। এ সময় অন্ধ সাহাবী আমর ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, আমি তো অন্ধ, আমার ব্যাপারে আপনার কী নির্দেশ? এ কথার প্রেক্ষিতে পূর্বোক্ত আয়াতের পরিবর্তে অবতীর্ণ হলঃ ’’সমান নয় সেসব মু’মিন যারা বিনা ওজরে ঘরে বসে থাকে এবং ঐসব মু’মিন যারা আল্লাহর পথে নিজেদের জানমাল দিয়ে জিহাদ করে’’- (সূরাহ আন-নিসা ৪/৯৫)। [২৮৩১] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬২৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ বারা’আ ইবনু আযিব (রাঃ)
শয়তানের আয়াত
নবী মুহাম্মদের মুখে নাকি একবার শয়তান আয়াত ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এই সূরার এই আয়াতগুলোকেই শয়তানের আয়াত বলা হয়। পরবর্তীতে মুহাম্মদ আয়াতগুলো সংশোধন করে সবাইকে বলেছিলেন, ঐ আয়াতগুলো শয়তানের ধোঁকায় তার মুখ থেকে বেড়িয়েছিল। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, সূরা আন-নাজমের আয়াত মুহাম্মদের মুখে শুনে একই সাথে মুশরিক অর্থাৎ সেই সময়ের মূর্তি পুজারীগণ এবং মুসলিমরা একই সাথে সবাই মিলে মিশে সিজদা করেছিল। নিচের হাদিসগুলো পড়ুন [139] [140]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছদঃ ৬৫/৫৩/৭. আল্লাহর বাণীঃ অতএব আল্লাহ্কে সাজদাহ্ কর এবং তাঁরই ‘ইবাদাত কর। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/৬২)
৪৮৬২. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ নাজমের মধ্যে সাজদাহ্ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে মুসলিম, মুশরিক, জিন ও মানব সবাই সাজদাহ্ করল। আইয়ুব (রহ.)-এর সূত্রে ইব্রাহীম ইবনু তাহ্মান (রহ.) উপরোক্ত বর্ণনার অনুসরণ করেছেন; তবে ইবনু উলাইয়াহ (রহ.) আইয়ূব (রহ.)-এর সূত্রে ইবনু ‘আববাস (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ করেননি। (১০৭১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ৪/ কিতাবুল জুমু’আ (জুমু’আর নামায)
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
পরিচ্ছদঃ ৫১. সূরা আন-নাজমের সাজদাহ
৫৭৫। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা নাজম-এ সাজদাহ করেছেন। মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও মানুষ সবাই তার সাথে সাজদাহ করেছেন। -সহীহ। বুখারী, কিসসাতুল গারানীক— (১৮, ২৫, ৩১ পৃঃ), বুখারী।
আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ অনুচ্ছেদে ইবনু মাসউদ ও আবু হুরাইরা (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। একদল বিদ্বানের মতে সূরা নাজম-এ সাজদাহ রয়েছে। একদল সাহাবা ও তাবিঈনের মতে মুফাসসাল সূরাসমূহে কোন সাজদাহ নেই। মালিক ইবনু আনাস এই মতের সমর্থক। কিন্তু প্রথম দলের মতই বেশি সহীহ। সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারাক, শাফিঈ ও আহমাদ প্রথম মতের সমর্থক। (অর্থাৎ মুফাসসাল সূরায় সাজদাহ আছে)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
উপরের হাদিসটি থেকে জানা যায়, সূরা নাজমের আয়াত আবৃত্তি করার পরে শুধু মুসলিমগণই নয়, মুশরিকরাও নবী মুহাম্মদের সাথে তার অনুসরণ করে সকলে সিজদা করলো। কিন্তু সেই সময়ে তো মুহাম্মদের সাথে মুশরিকদের চরম দ্বন্দ্ব এবং শত্রুতা চলছে। কী এমন হলো, যার ফলে নবী মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীরা, সেই সাথে মুশরিকরাও তারই সাথে একত্রে কোরআনের একটি সূরার সাথে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করলো? এমন কী ঘটে গেল? এরকম তো হওয়ার কথা নয়। ভেবে দেখুন, এত বড় আশ্চর্য ঘটনা কীভাবে ঘটে? এর জন্য আমাদের যেতে হবে তাফসীরে জালালাইনের কাছে।
তাফসীরে জালালাইন থেকে সূরা হাজ্জ এর ৫২ এবং ৫৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর পড়ে নিই [141] –
অর্থাৎ, মুহাম্মদ একবার মুশরিক ও মুসলিমদের সমাবেশে একটি সূরা পড়েছিল, যেই সূরাতে লাত এবং উজ্জা দেবীর প্রশংসামূলক বাক্য ছিল। পরবর্তীতে তিনি বলেন, ঐ সময়ে শয়তান তার মুখে লাত ও উজ্জা দেবীর প্রশংসামূলক বাক্য ঢুকিয়ে দিয়েছে, সেগুলো আসলে আল্লাহর কাছ থেকে আসে নি। এই বিষয়ে তাফসীরে ইবনে কাসীর এর সূরা হাজ্জ এর ৫২, ৫৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর যা বলা আছে [142] –
এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বলা আছে এই লেখাটিতে [143]
অনুরোধের আয়াত
বাঙলাদেশের রেডিও টিভি যারা শোনেন বা দেখেন, তারা অনেকেই অনুরোধের আসর টাইপের কিছু অনুষ্ঠান দেখে থাকবেন। সেখানে দর্শক শ্রোতাগণ কোন গান বাজাতে অনুরোধ করে, এবং অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সেই অনুরোধের ভিত্তিতে গান শোনান। কিন্তু কোরআনেও কিন্তু অনুরোধের আয়াত নাজিল হয়েছে।
উমরের কাকুতিমিনতি ও বারবার অনুরোধেও কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল বলে জানা যায় সহিহ হাদিস থেকেই। উমর এই নিয়ে রীতিমত গর্বও করতেন যে, অন্তত তিনটি বিষয়ে উনার পরামর্শে আল্লাহ পাক আয়াত নাজিল করেন [144] [145] [146] –
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫২/ তাফসীর
৪৪২৭। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার কাছে ভাল ও মন্দ লোক আসে। আপনি যদি উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের ব্যাপারে পর্দার আদেশ দিতেন (তবে ভাল হত) তারপর আল্লাহ্ তা’আলা পর্দার আয়াত নাযিল করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪০/ সালাম
পরিচ্ছদঃ ৭. মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য স্ত্রীলোকের বাইরে যাওয়ার বৈধতা
৫৪৮৪। আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় রাতের বেলা ‘মানাসি’ এর দিকে বেরিয়ে যেতেন। الْمَنَاصِع (মানাসি) হল প্রশস্ত ময়দান। ওদিকে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতেন, আপনার স্ত্রীগণের প্রতি পর্দা বিধান করুন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেননি। কোন এক রাতে ইশার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা সাওদা বিনত যাম’আ (রাঃ) বের হলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী মহিলা। উমার (রাঃ) তাঁকে ডাক দিয়ে বললেন, হে সাওদা! আমরা তোমাকে চিনে ফেলেছি। পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার প্রতি প্রবল আকাঙ্ক্ষায় (তিনি এরূপ করলেন)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আল্লাহর তাআলা পর্দা-বিধি নাযিল করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৮/ সালাত
পরিচ্ছদঃ ২৭৩। কিবলা সম্পর্কে বর্ণনা।
৩৯৩। আমার ইবনু ‘আওন (রহঃ) …. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমর (রাঃ) বলেছেনঃ তিনটি বিষয়ে আমার অভিমত আল্লাহর অহির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। আমি বলেছিলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা যদি মাকামে ইবরাহীম কে সালাতের স্থান বানাতে পারতাম! তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ (وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى) “তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান বানাও” (২ : ১২৫)
(দ্বিতীয়) পর্দার আয়াত, আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যদি আপনার সহধর্মিনীগনকে পর্দার আদেশ করতেন! কেননা, সৎ ও অসৎ সবাই তাদের সাথে কথা বলে। তখন পর্দার আয়াত নাযিল হয়।
আর একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণীগণ অভিমান সহকারে তাঁর নিকট উপস্থিত হন। তখন আমি তাদেরকে বললামঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তোমাদের তালাক দেয়, তাহলে তাঁর রব তাঁকে তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী দান করবেন। (৬৬ : ৫) তখন এ আয়াত নাযিল হয়।
(অপর সনদে ইবন আবু মারয়াম (রহঃ) …. আনাস (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে।)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
খেয়াল করে দেখুন, উমরের পরামর্শ আর সেই মহাবিশ্বের শুরুতে লাওহে মাহফুজে লিখে রাখা আল্লাহ পাকের আয়াতের মধ্যে কত মিল! এবারে আসুন বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ নসরুল বারীতে এই বিষয়ে কী বলা আছে জেনে নেয়া যাক, [147]
Alī ibn Ahmad al-Wāhidī এর Asbāb al-Nuzūl গ্রন্থ থেকে জানা যায়, কোরআনের আরো একটি আয়াত উমরের মতামত অনুসারে নাজিল হয়েছিল [148] – ( গ্রন্থ সহায়ক ১৪ )
আয়াত নামার আতঙ্ক
হযরত মুহাম্মদের সাহাবীরা রীতিমত আয়াত নামার আতঙ্কে থাকতেন, যা সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়। তারা ভয় পেতেন যে, এই বুঝি আল্লাহ আরেক আয়াত নাজিল করে বসে। এই আতঙ্কে তারা নবীর স্ত্রীদের সাথে অবাধে হাসাহাসি ঠাট্টামশকরা করতে পারতেন না। তবে নবীজির মৃত্যুর পরে তারা অবাধে হাসিঠাট্টা করতে পারতেন। কারণ তখন আর ক্ষেপে গিয়ে হুটহাট আয়াত নামার কোন সম্ভাবনা ছিল না [149] –
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৪/ বিয়ে-শাদী
পরিচ্ছদঃ ২৫০৫. নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার ওসীয়ত
৪৮০৮। নুআয়ম (রহঃ) … ইবন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় আমাদের স্ত্রীদের সাথে কথা-বার্তা ও হাসি-ঠাট্টা থেকে দূরে থাকতাম এই ভয়ে যে, এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে কোন ওহী নাযিল হয়ে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তেকালের পর আমরা তাদের সাথে অবাধে কথা-বার্তা ও হাসি-ঠাট্টা করতাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
প্রশ্ন হচ্ছে, নবীর সাহাবীগণও কী মুহাম্মদের হুটহাট আয়াত নামাবার অভ্যাস সম্পর্কে জানতেন? কারণ, আল্লাহ পাক যদি আয়াত লাওহে মাহফুজে লিখেই রাখেন, সেটা তো নামবেই। সাহাবীগণ হাসাহাসি করুক কিংবা না করুক। উনারা কেন এই আতঙ্কে থাকবেন? তার মানে কী, উনাদের মনেও নবী সম্পর্কে সন্দেহ ছিল? নবীর যত্রতত্র আয়াত নামাবার অভ্যাসের কারণে সাহাবীরা বিরক্ত ছিল?
আয়েশার সন্দেহ
আয়েশার সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, আয়েশা একসময় খানিকটা বিরক্ত হয়েই নবী মুহাম্মদকে বলেছিলেন, আল্লাহ আপনার ইচ্ছা অনুসারে সাথে সাথে আয়াত নাজিল করেন। হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আয়েশার মন আমাদের ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করে [150] –
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৪/ বিয়ে-শাদী
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২৪৫৫. কোন মহিলা কোন পুরুষের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পারে কিনা ?
৪৭৪০। মুহাম্মাদ ইবনু সালাম (রহঃ) … হিশামের পিতা উরওয়া থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যে সব মহিলা নিজেদেরকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সমর্পণ করেছিলেন, খাওলা বিনতে হাকীম তাদেরই একজন ছিলেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, মহিলাদের কি লজ্জা হয় না যে, নিজেদের পুরপুরুষের কাছে সমর্পণ করছে? কিন্তু যখন কুরআন ের এ আয়াত অবর্তীর্ণ হল- “হে মুহাম্মাদ! তোমাকে অধিকার দেয়া হল যে নিজ স্ত্রীগণের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আলাদা রাখতে পার।” আয়িশা (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মনে হয়, আপনার রব আপনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার ত্বড়িৎ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। উক্ত হাদীসটি আবূ সাঈদ মুয়াদ্দিব, মুহাম্মাদ ইবনু বিশর এবং আবদাহ্ হিশাম থেকে আর হিশাম তার পিতা হতে একে অপরের চেয়ে কিছু বেশী-কমসহ আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
শিক্ষিত ওহী লেখকের ধর্মত্যাগ
সহিহ হাদিস থেকে এটিও জানা যায়, একজন শিক্ষিত খ্রিস্টান ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে মুহাম্মদ তাকে ওহী লেখার দায়িত্ব দেন। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই সে ইসলাম ত্যাগ করে চলে যায়। তার বক্তব্য ছিল, সে মুহাম্মদকে যা লিখে দিতো তার চাইতে বেশি মুহাম্মদ জানতো না। তার মৃত্যুর পরে কে বা কারা তাকে কবর থেকে বের করে ফেলতো। হাদিসটির দাবী হচ্ছে, কবরের মাটিই তাকে কবর থেকে বাইরে নিক্ষেপ করতো। কিন্তু সেটি সত্য হয়ে থাকলে, পৃথিবীতে এখন লক্ষ লক্ষ ইসলাম ত্যাগী এবং মুহাম্মদের কঠোর সমালোচক আছেন। তাদের সকলের কবরেই তো এরকম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরকম তো কখনো শোনা যায় না। এর অর্থ হচ্ছে, সেই সময়ে নবীরই কোন অনুসারীকে দিয়ে নবী হয়তো কাজটি করাতেন, বা নবী নিজেই করতেন। এই হাদিসটি সহিহ মুসলিম শরীফেও রয়েছে, তবে খ্রিস্টান ব্যক্তির বক্তব্য বাদ দিয়েইমাম মুসলিম হাদিসটি সংকলন করেছেন।
উল্লেখ্য, নবী রাতের বেলা একা একা ঘর থেকে বের হয়ে যেতেন, যার প্রমাণ আরেকটি হাদিস থেকে পাওয়া যায়। যেখানে দেখা যায়, আয়িশা তার পিছু নিয়েছিল। তাই সেই ব্যক্তির কবর মুহাম্মদ নিজেই খুড়ে আসতেন কিনা, সেটিও একটি সম্ভাবনা হতে পারে। হাদিসটি নিচে বর্ণনা করা হলো। এই কারণে মুহাম্মদ আয়িশার ওপর রেগে তার গায়ে হাতও তুলেছিলেন [151]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬১/ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
পরিচ্ছেদঃ ৬১/২৫. ইসলামে নুবুওয়াতের নিদর্শনাবলী।
৩৬১৭. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক খ্রিস্টান ব্যক্তি মুসলিম হল এবং সূরা বাকারাহ ও সূরা আলে-ইমরান শিখে নিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সে ওহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিস্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ -কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ্ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিস্টানরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিস্টানরা বলতে লাগল- এটা মুহাম্মাদ এবং তাঁর সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের হতে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মাদ ও তাঁর সাহাবীদের কান্ড। তাদের নিকট হতে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে দাফন করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল। (মুসলিম ৫০/৫০ হাঃ ২৭৮১, আহমাদ ১৩৩২৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৫৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
আল-লুলু ওয়াল মারজান
৫০/ মুনাফিক ও তাদের হুকুম
পরিচ্ছেদঃ (মুনাফিক ও তাদের হুকুম)
১৭৭২. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক খ্রিস্টান ব্যক্তি মুসলিম হল এবং সূরাহ বাকারাহ ও সূরাহ আলে-ইমরান শিখে নিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সে ওহী লিখত। অতঃপর সে আবার খ্রিস্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মাদ-কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না। (নাউজুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ্ তাকে মৃত্যু দিলেন। খ্রিস্টানরা তাকে দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। এটা দেখে খ্রিস্টানরা বলতে লাগল- এটা মুহাম্মাদ এবং তার সাহাবীদেরই কাজ। যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের হতে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদূর পারা যায় গভীর করে কবর খুঁড়ে তাকে আবার দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মাদ ও তাঁর সাহাবীদের কাণ্ড। তাদের নিকট হতে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর হতে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে দাফন করল। পরদিন ভােরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা লাশটি ফেলে রাখল।
সহীহুল বুখারী, পর্ব ৬১ : মর্যাদা ও গুণাবলী, অধ্যায় ২৫, হাঃ ৩৬১৭; মুসলিম, পর্ব ৫০ : মুনাফিক ও তাদের হুকুম, অধ্যায়, হাঃ ২৭৮১
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
হযরত আয়শা হতে বর্ণিত, রাতের অন্ধকারে ঘর থেকে বের হয়ে গেলে, আয়িশা পিছু নেয়ার কারণে তিনি (মুহাম্মদ) আমাকে বুকের ওপর আঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল [152] [153] –
সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৭/ স্ত্রীর সাথে ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ৪. আত্মাভিমান
৩৯৬৫. সুলায়মান ইবন দাউদ (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আমার ব্যাপারে কি তোমাদেরকে বর্ণনা করব না? আমরা বললাম, কেন করবেন না? তিনি বললেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআমার পালার রাতে (ইশার সালাত আদায়ের পর) ফিরে আসলেন। তারপর তার জুতা পায়ের দিকে রাখলেন, তাঁর চাদর রেখে দিলেন এবং তাঁর একটি লুঙ্গি বিছানার উপর বিছালেন।
তারপর তিনি মাত্র এতটুকু সময় অবস্থান করলেন যতক্ষণে তাঁর ধারণা হল যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপর উঠে আস্তে করে জুতা পরলেন এবং আস্তে করে তার চাদর নিলেন। তারপর আস্তে করে দরজা খুললেন এবং বের হয়ে আস্তে দরজা চাপিয়ে দিলেন। আর আমি মাথার উপর দিয়ে কামিজটি পরিধান করলাম, ওড়না পরলাম এবং চাদরটি গায়ে আবৃত করলাম ও তার পিছনে চললাম, তিনি বাকীতে আসলেন এবং তিনবার হাত উঠালেন ও বহুক্ষণ দাঁড়ালেন, তারপর ফিরে আসছিলেন। আমিও ফিরে আসছিলাম। তিনি একটু তীব্রগতিতে চললেন, আমিও তীব্রগতিতে চললাম, তিনি দৌড়ালেন, আমিও দৌড়ালাম। তিনি পৌছে গেলেন, তবে আমি তার আগে পৌছে গেলাম।
ঘরে প্রবেশ করেই শুয়ে পড়লাম। তিনিও প্রবেশ করলেন এবং বললেনঃ হে আয়েশা! কি হয়েছে তোমার পেট যে ফুলে গেছে। বর্ণনাকারী সুলায়মান বলেন, ইবন ওয়াহাব (رابية) এর পরিবর্তে (حشيا) দ্রুত চলার কারণে হাঁপিয়ে ওঠা শব্দটি বলেছেন বলে ধারণা করছি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘটনা কি বল, নচেৎ আল্লাহ্ যিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত, তিনিই আমাকে খবর দিবেন।
আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক এবং ঘটনাটির বর্ণনা দিলাম। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমিই সেই (ছায়ামূর্তি) যা আমি আমার সামনে দেখছিলাম? আমি বললাম, হ্যাঁ। আয়েশা (রাঃ) বললেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বক্ষে একটি মুষ্ঠাঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি ধারণা করেছ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর যুলুম করবে? আয়েশ্ম (রাঃ) বললেন, লোক যতই গোপন করুক না কেন, আল্লাহ্ তা নিশ্চিত জানেন।
রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি যখন আমাকে দেখছিলে তখন জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসেছিলেন। তুমি যে (শুয়ে যাওয়ায়) কাপড় খুলে ফেলেছ। তাই জিবরীল (আঃ) প্রবেশ করেননি। তোমার থেকে গোপন করে আমাকে ডাকলেন, আমিও তোমার থেকে গোপন করে উত্তর দিলাম। মনে করলাম, তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। তোমাকে জাগিয়ে দেওয়াটা পছন্দ করলাম না এবং এ ভয়ও ছিল যে, (আমি চলে যাওয়ার কারণে) তুমি নিঃসঙ্গতা বােধ করবে। জিবরীল (আঃ) আমাকে নির্দেশ দিলে বাকীতে অবস্থানকারীদের কাছে যাই এবং তাদের রব্বের কাছে তাদের জন্য ক্ষমা চাই।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ)
আবদুল্লাহ ইবনে সাদ এর ঘটনা
প্রথমেই বলে নেয়া দরকার, মক্কা বিজয়ের সময় হযরত মুহাম্মদ উসমানের দুধভাই প্রখ্যাত ওহী লেখক আবু ইয়াহইয়া আবদুল্লাহ ইবন সাদ ইবন সারাহ আল আমিরি আল কুরাইশীকে হত্যার নির্দেশ দেন। তিনি আগে মুসলিম ছিলেন, পরে ইসলাম ত্যাগ করে মক্কায় পালিয়ে আসেন। তাকে নিয়ে মুহাম্মদের খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছিল। কারণ সেই সময় উসমান সুপারিশ করেন যে, তাকে যেন ক্ষমা করা হয়। মুহাম্মদ না পারছিলেন তাকে হত্যা করতে, না পারছিলেন জীবিত রাখতে। এক অস্বস্তিকর উভয় সঙ্কট উপস্থিত হয়েছিল। মনে মনে চাচ্ছিলেন, কেউ তাকে হত্যা করুক, কিন্তু চক্ষুলজ্জার খাতিরে তা করতেও পারছিলেন না। এর পরিষ্কার বিবরণ পাওয়া যায় আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে [154]
কিন্তু কী এমন ঘটেছিল, কে ছিল এই লোক? যাকে মুহাম্মদ এত তীব্রভাবে ঘৃণা করতো যে, তাকে হত্যার হুকুম দিয়েছিল এবং উসমানের সুপারিশের পরেও মনে মনে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল? এর বিবরণ পাওয়া যায় তাফসীরে মাযহারীতে [155] –
সহিহ হাদিস থেকেও জানা যায়, মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পরে সে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য হয়, কিন্তু মুহাম্মদ তাকে হত্যার ইচ্ছাই করেছিলেন [156] –
সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৯/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ২১. ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার আগে, কোন বিধর্মী বন্দীকে হত্যা করা।
২৬৭৪. ’উসমান ইবন আবূ শায়বা (রহঃ) …. সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারজন ও দুইজন মহিলা ব্যতীত অন্যান্য সকলকে নিরাপত্তা প্রদান করেন এবং তিনি তাদের নামও ঘোষণা করেন। আর ইবন আবূ সারাহ্ … এরপর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাবী সা’দ বলেনঃ ইবন রাবী সারাহ্ ’উছমান (রাঃ) এর নিকট আত্মগোপন করে থাকেন। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়াত গ্রহণের জন্য সকলকে আহ্বান জানান, তখন উছমান (রাঃ) তাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং তাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড় করে দেন এবং বলেনঃ হে আল্লাহর নবী! আপনি ’আবদুল্লাহকে বায়াত করান। তিনি তাঁর মাথা উঠান এবং তিনবার তার দিকে তাকান এবং প্রত্যক বারই বায়াত করাতে অস্বীকার করেন।
তৃতীয় বারের পর তিনি তাকে বায়াত করান, পরে তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বলেনঃ তোমাদের মাঝে এমন কোন চালাক লোক কি ছিল না, যখন সে আমাকে দেখল যে, আমি তাকে বায়াত করাচ্ছি না, তখন কেন সে তাকে হত্যা করল না? তাঁরা (সাহাবীরা) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা তো আপনার অন্তরের কথা বুঝতে পারিনি। আপনি (এ ব্যাপারে) চোখ দিয়ে কেন আমাদেরকে ইশারা করলেন না? তিনি বললেনঃ কোন নবীর জন্য এ উচিত নয় যে, সে চোরা দৃষ্টিতে তাকাবে।
আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেনঃ আবদুল্লাহ্ ছিলেন ’উছমান (রাঃ) এর দুধ ভাই এবং ওয়ালীদ ইবন ’উকবা ছিলেন ’উছমান (রাঃ) এর বৈমাত্রেয় ভাই। উছমান (রাঃ) তাঁর শাসনামলে মদ্যপানের অভিযোগে তাকে শাস্তি দেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)
আসুন কোরআনের সেই আয়াতটি পড়ে নিই, পড়ে দেখুন আয়াতটির বাক্যের গঠনের সমস্যা [157]
Then We made the sperm-drop into a clinging clot, and We made the clot into a lump [of flesh], and We made [from] the lump, bones, and We covered the bones with flesh; then We developed him into another creation. So blessed is Allāh, the best of creators.
— Saheeh International
পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাট বাঁধা রক্তে, অতঃপর মাংসপিন্ডকে পরিণত করি হাড্ডিতে, অতঃপর হাড্ডিকে আবৃত করি মাংস দিয়ে, অতঃপর তাকে এক নতুন সৃষ্টিতে উন্নীত করি। কাজেই সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কতই না মহান!
— Taisirul Quran
পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি মাংসপিন্ডে এবং মাংসপিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থিপঞ্জরকে ঢেকে দিই মাংস দ্বারা; অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টি রূপে; অতএব নিপুণতম স্রষ্টা আল্লাহ কত কল্যাণময়!
— Sheikh Mujibur Rahman
তারপর শুক্রকে আমি ‘আলাকায় পরিণত করি। তারপর ‘আলাকাকে গোশতপিন্ডে পরিণত করি। তারপর গোশতপিন্ডকে হাড়ে পরিণত করি। তারপর হাড়কে গোশ্ত দিয়ে আবৃত করি। অতঃপর তাকে অন্য এক সৃষ্টিরূপে গড়ে তুলি। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত বরকতময়!
— Rawai Al-bayan
মৃত্যুশয্যায় মুহাম্মদের শেষ বক্তব্য
সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, মৃত্যুশয্যায় রোগে কাতরাতে কাতরাতে মুহাম্মদ তার উম্মতদের উদ্দেশ্যে কিছু লিখে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উমরের নির্দেশে তাকে লিখতে দেয়া হয় নি। এই নিয়ে সাহাবীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষও ছিল। রীতিমত ঝগড়া এবং মারামারির উপক্রমও হয়ে যাচ্ছিল। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে শেষবেলায় কী বলতে চেয়েছিল মুহাম্মদ? তা আর জানা যায় নি [158] [159] [160] –
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩/ ইলম বা জ্ঞান
পরিচ্ছেদঃ ৮১। ইলম লিপিবদ্ধ করা
১১৫। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যখন বেড়ে গেল তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে কাগজ কলম নিয়ে এস, আমি তোমাদের এমন কিছু লিখে দিব যাতে পরবর্তীতে তোমরা ভ্রান্ত না হও। ‘উমর (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যন্ত্রণা প্রবল হয়ে গেছে (এমতাবস্থায় কিছু বলতে বা লিখতে তাঁর কষ্ট হবে)। আর আমাদের কাছে তো আল্লাহর কিতাব রয়েছে, যা আমাদের জন্য যথেষ্ট। এতে সাহাবীগণের মধ্য মতবিরোধ দেখা দিল এবং শোরগোল বেড়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। আমার কাছে ঝগড়া-বিবাদ করা উচিত নয়। এ পর্যন্ত বর্ণনা করে ইবনু আব্বাস (রাঃ) (যেখানে বসে হাদীস বর্ণনা করছিলেন সেখান থেকে) এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন যে, ‘হায় বিপদ, সাংঘাতিক বিপদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর লেখনীর মধ্যে যা বাধ সেধেছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৫/ রুগী
পরিচ্ছেদঃ ৭৫/১৭. তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও, রোগীর এ কথা বলা।
৫৬৬৯. ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের সময় আগত হল, তখন ঘরের মধ্যে অনেক মানুষের জমায়েত ছিল। যাঁদের মধ্যে ’উমার ইবনু খত্তাব-ও ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রোগ কাতর অবস্থায়) বললেনঃ লও, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেব, যাতে পরবর্তীতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও। তখন ’উমার (রাঃ) বললেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর রোগ যন্ত্রণা তীব্র হয়ে উঠেছে, আর তোমাদের কাছে কুরআন মাওজুদ। আর আল্লাহর কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এ সময়ে আহলে বাইতের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হল। তাঁরা বাদানুবাদে প্রবৃত্ত হলেন, তন্মধ্যে কেউ কেউ বলতে লাগলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কাগজ পৌঁছে দাও এবং তিনি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেবেন, যাতে পরবর্তীতে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট না হও। আবার তাদের মধ্যে ’উমার (রাঃ) যা বললেন, তা বলে যেতে লাগলেন। এভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাঁদের বাকবিতন্ডা ও মতভেদ বেড়ে চলল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা উঠে যাও।
’উবাইদুল্লাহ (রহঃ) বলেনঃ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলতেন, বড় মুসীবত হল লোকজনের সেই মতভেদ ও তর্ক-বিতর্ক, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সেই লিখে দেয়ার মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। [১১৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
আল্লাহর বাণী কী অপরিবর্তনীয়?
কোরআনে আল্লাহ পাক নিজেই গর্ব করে ঘোষণা করেছেন যে, আল্লাহ পাকের নাজিল কৃত আয়াত অপরিবর্তনীয়, সামান্যতম হেরফের যার হতে পারে না, এবং সেই সব আয়াত শাশ্বত বাণী।
অপরিবর্তনীয়
কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন [161] [162] –
তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।
আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর বাক্যের কোন পরিবর্তনকারী নেই। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকেঃ [163]
কোরআনে এটিও বলা আছে [164] –
আপনার পূর্ববর্তী অনেক পয়গম্বরকে মিথ্যা বলা হয়েছে। তাঁরা এতে ছবর করেছেন। তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছে পর্যন্ত তারা নির্যাতিত হয়েছেন। আল্লাহর বানী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। আপনার কাছে পয়গম্বরদের কিছু কাহিনী পৌঁছেছে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে এর তাফসীরটিও দেখি [165] –
পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংস্কারযোগ্য
আবার একইসাথে, আল্লাহ পাকের অনেক আয়াতের পরিবর্তন পরিমার্জন এবং সংস্কার এসেছে। যার যুক্তি হিসেবে ইসলামিক আলেমগণ বলেন, আল্লাহ আয়াত নাজিল করতে পারলে তার পরিবর্তনও আল্লাহ করতে পারেন। এই নিয়ে মুহাম্মদের আমলেই অসংখ্য ইহুদী প্রশ্ন করেছিল যে, নবী মুহাম্মদকে আল্লাহ পাক একবার একটি নির্দেশ দিয়ে পরে আবার তা বদলে দেয় কীভাবে? আল্লাহ পাকের নিজের কথাই এভাবে ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন করেন কেন?
এমনকি, এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, নবী মুহাম্মদের ওপর আয়াত নাজিল হওয়ার পরে নবী মুহাম্মদ তা ভুলে গিয়েছিলেন। তখন তিনি যুক্তি হিসেবে বলেছেন, আল্লাহ পাকই ঐ আয়াত তাকে ভুলিয়ে নতুন আয়াত দিয়েছেন। এই যুক্তি কতটা যুক্তি আর কতটা গোঁজামিল, তা পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি।
এই নিয়ে ইহুদীরা যখন হাসাহাসি করতো, আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, আল্লাহ কারো কাছে জবাবদিহি করেন না। চিন্তা করে দেখুন, বিষয়টি কতটা যুক্তিযুক্ত।
উল্লেখ্য, বেশ কিছু বিষয়ে আল্লাহ পাক তার নিজের দেয়া আইনই পরিবর্তন করেছেন। সেগুলো হচ্ছে [166] –
- প্রথম অবস্থায় আয়াত নাজিল হয়েছিল যে, নারীর ইদ্দত হবে একবছর। কিন্তু পরবর্তীতে সেই আয়াত বদলে চারমাস দশদিনের বিধান দেয়া হয়।
- প্রথম অবস্থায় মুজাহির নারীকে পরীক্ষা করার হুকুম জাড়ি হয়। পরবর্তীতে এই বিধান তুলে নেয়া হয়।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
শানে নুযূল : ইহুদিরা তাওরাতকে ‘নসখ’ -এর অযোগ্য মনে করত। তারা কুরআনেরও অনেক বিধান রহিত হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি করেছে। ভর্ৎসনা করে বলেছে মুহাম্মদ তার অনুসারীদেরকে একবার এক হুকুম প্রদান করে আবার তা থেকে বারণ করে। এ ধরনের কথা বলে ইহুদিরা মুসলমানদের অন্তরে এ সন্দেহ সৃষ্টির পাঁয়তারা করত যে, তোমরা তো বল- আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আমাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার সবটুকুই ‘খায়ের’ বা কল্যাণকর। যদি তাই হয়, তাহলে তা রহিত হওয়ার অর্থ কি? যদি প্রথম হুকুমটি ভালো হয়ে থাকে, তাহলে দ্বিতীয়টি খারাপ হবে। আর দ্বিতীয়টি ভালো হলে প্রথমটি খারাপ হবে । অথচ আল্লাহ তা’আলার ওহী এবং হুকুম খারাপ হওয়া অসম্ভব। তাদের এহেন বক্তব্য খণ্ডন করার জন্য আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, আসমান জমিনের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহ তা’আলার হাতে। তিনি যা ভালো মনে করেন, যে সময় যে বিধান তাঁর হিকমত অনুযায়ী হয়, তা-ই প্রয়োগ করেন এবং পূর্বের কোনো বিধান রহিতও করেন। এটি তার কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। -[তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন : আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (র.) খ. ১, পৃ. ১৯৬]
অর্থাৎ শব্দসহ মানসুখ হবে না; বরং শুধু বিধানটি মানসুখ হবে। তেলাওয়াত বাকী থাকবে। এটি -এর দ্বিতীয় সূরত । একে বলা হয়। যেমন – haji না ভাল ল এটির তেলাওয়াত বাকী আছে; কিন্তু বিধানটি রহিত হয়ে গেছে।
দু’প্রকার : কুরআনে কারীমে নসখ দু’রকম হয়েছে-
১. একটি মানসুখ হুকুমের স্থলে অন্য বিধান নাজিল করা। যেমন- এক বছরের ইদ্দত রহিত করে চার মাস দশ দিনের বিধান দেওয়া হয়েছে।
২. প্রথম বিধান রহিত করে আর কোনো নতুন বিধান না দেওয়া। যেমন প্রথম দিকে মুহাজির নারীকে পরীক্ষা করার বিধান ছিল। পরবর্তীতে তা রহিত করা হয়েছে।
ফায়দা : যদি মুফাসসির (র.) এ এন এর স্থলে । বলতেন, তাহলে বক্তব্যটি অধিকতর সুস্পষ্ট হতো। কেননা মুফাসসির (র.)-এর ইবারতে অপর একটি কেরাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে, যা অশুদ্ধ। আর তা হলো …… এই সূরতটি শব্দ ও অর্থ উভয় দিক থেকেই অসঠিক । শব্দগতভাবে এ জন্য যে, এই কেরাতটি বর্ণিত নেই । আর অর্থগতভাবে অসঠিক এ জন্য যে, আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তথা ভুলে যাওয়ার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে না। [জামালাইন খ. ১, পৃ. ১৯৭]
মুফাসসির (র.) যদি না বলেying বলতেন, তাহলে ভালো হতো । কেননা শব্দটি ও এবং তা। মাসদার থেকে নির্গত; 3 থেকে নয় । সুতরাং বলা হবে মূলবর্ণ থেকে নির্গত । -[হাশিয়ায়ে জামাল খ. ১, পৃ. ১৩৭] STU : উভয়ের মাঝে -এর সম্পর্ক। হযরত জিবরাঈল (আ.)-কে নসখের হুকুম দেওয়া মানে নবীজীকেই হুকুম দেওয়া । আর নবীজীকে হুকুম দেওয়া মানে হযরত জিবরাঈল (আ.)-কে হুকুম দেওয়া।
বান্দাদের জন্য অধিকতর উপকারী। এর দ্বারা এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আয়াতে বর্ণিত বা উত্তম হওয়াটা বান্দাদের উপকারের ভিত্তিতে। এ ভিত্তিতে নয় যে, কুরআনের কোনো আয়াত অপর আয়াতের তুলনায় উত্তম । কেননা আল্লাহ তা’আলার কালাম পুরোটাই কল্যাণ। [হাশিয়ায়ে জালালাইন, পৃ. ১৬]
আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে মদ্যপান হালাল এবং হারাম হওয়ার বিধান। এই আয়াতগুলো থেকে আল্লাহ পাকের সিদ্ধান্তহীনতা এবং বারবার নিয়ম পরিবর্তনের স্পষ্ট প্রমাণ মেলে। আসুন আয়াতগুলো দেখি [167] –
আর খেজুর ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা মদ ও উত্তম খাদ্য প্রস্তুত কর, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।
— Taisirul Quran
আর খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তোমরা খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর থেকে মাদক* ও উত্তম রিয্ক গ্রহণ কর। নিশ্চয় এতে এমন কওমের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা বুঝে। * ইমাম তাবারী বলেন, আয়াতটি মাদক নিষিদ্দ হওয়ার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে।
— Rawai Al-bayan
আর খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক [১]; নিশ্চয় এতে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন [২]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
And from the fruits of the palm trees and grapevines you take intoxicant and good provision.1 Indeed in that is a sign for a people who reason.
— Saheeh International
এরপরে নাজিল হওয়া আয়াতে বলা হয়, মদে উপকারও আছে, অপকারও আছে [168] –
তোমাকে লোকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বল, ‘ঐ দু’টোতে আছে ভয়ঙ্কর গুনাহ এবং মানুষের জন্য উপকারও কিন্তু এ দু’টোর পাপ এ দু’টোর উপকার অপেক্ষা অধিক’। তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কী তারা ব্যয় করবে? বল, ‘যা উদ্বৃত্ত’। এভাবে আল্লাহ তোমাদের প্রতি আদেশাবলী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর ।
— Taisirul Quran
মাদক দ্রব্য ও জুয়া খেলা সম্বন্ধে তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে। তুমি বলঃ এ দু’টোর মধ্যে গুরুতর পাপ রয়েছে এবং কোন কোন লোকের (কিছু) উপকার আছে, কিন্তু ও দু’টোর লাভ অপেক্ষা পাপই গুরুতর; তারা তোমাকে (আরও) জিজ্ঞেস করছে, তারা কি (পরিমান) ব্যয় করবে? তুমি বলঃ যা তোমাদের উদ্ধৃত্ত; এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করেন যেন তোমরা চিন্তা-ভাবনা কর।
— Sheikh Mujibur Rahman
তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, এ দু’টোয় রয়েছে বড় পাপ ও মানুষের জন্য উপকার। আর তার পাপ তার উপকারিতার চেয়ে অধিক বড়। আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে। বল, ‘যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত’। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।
— Rawai Al-bayan
লোকেরা আপনাকে মদ [১] ও জুয়া [২] সম্পর্কে জিজ্জেস করে। বলুন, ‘দু’টোর মধ্যেই আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও ; আর এ দু’টোর পাপ উপকারের চেয়ে অনেক বড়’। আর তারা আপনাকে জিজ্জেস করে কি তারা ব্যায় করবে ? বলুন, যা উদ্বৃত্ত [৩]। এভাবে আল্লাহ্ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
They ask you about wine1 and gambling. Say, “In them is great sin and [yet, some] benefit for people. But their sin is greater than their benefit.” And they ask you what they should spend. Say, “The excess [beyond needs].” Thus Allah makes clear to you the verses [of revelation] that you might give thought
— Saheeh International
পরবর্তী সময়ে হযরত আলী মদ্যপ অবস্থায় ভুল সূরা পড়ে নামাজ পড়াবার কারণে মদ পান করে নামাজ পড়ানো বা পড়া নিষিদ্ধ হয়, যেটি জানা যায় একটি সহিহ হাদিস থেকে [169] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২১/ পানীয় দ্রব্য
পরিচ্ছেদঃ ১. মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা
৩৬৭১। আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা আনসার গোত্রের এক লোক তাকে ও আব্দুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-কে দা‘ওয়াত করে উভয়কে মদ পান করালেন তা হারাম হওয়ার পূর্বে। অতঃপর মাগরিবের সালাতে আলী (রাঃ) তাদের ইমামতি করলেন। তিনি সূরা ‘‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’’ পাঠ করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। অতঃপর এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন মাতাল অবস্থায় থাকো তখন সালাতের কাছেও যেও না। সালাত তখনই পড়বে, যখন তোমরা কি বলছো তা সঠিকরূাপ বুঝতে পারো।’’ (সূরা আন-নিসাঃ ৪৩)[1]
সহীহ।
[1]. তিরযযী। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ)
এই সময়েই নাজিল হয়, মাতাল অবস্থায় যেন মুমিনরা নামাজের কাছাকাছি না যায়। যা থেকে বোঝা যায়, মদ খাওয়াকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতিই দেয়া হয়েছে। এবং এটি তখনও নিষিদ্ধ হয় নি।[170]
হে ঈমানদারগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সলাতের নিকটবর্তী হয়ো না যতক্ষণ না তোমরা যা বল, তা বুঝতে পার এবং অপবিত্র অবস্থায়ও (সলাতের কাছে যেও না) গোসল না করা পর্যন্ত (মসজিদে) পথ অতিক্রম করা ব্যতীত; এবং যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক; অথবা তোমাদের কেউ শৌচস্থান হতে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী সঙ্গম করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর, আর তা দিয়ে তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসহ কর; আল্লাহ নিশ্চয়ই পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
— Taisirul Quran
হে মু’মিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের কাছেও যেওনা, যখন নিজের উচ্চারিত বাক্যের অর্থ নিজেই বুঝতে সক্ষম নও – এ অবস্থায় অথবা গোসল যরুরী হলে তা সমাপ্ত না করে সালাতের জন্য দান্ডায়মান হয়োনা। কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র। যদি তোমরা পীড়িত হও, কিংবা প্রবাসে অবস্থান কর অথবা তোমাদের মধ্যে কেহ পায়খানা হতে প্রত্যাগত হয় কিংবা রমণী স্পর্শ করে এবং পানি না পাওয়া যায় তাহলে বিশুদ্ধ মাটির অম্বেষণ কর, তদ্বারা তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ মুছে ফেল; নিশ্চয়ই আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।
— Sheikh Mujibur Rahman
হে মুমিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা বুঝতে পার যা তোমরা বল এবং অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না তোমরা গোসল কর, তবে যদি তোমরা পথ অতিক্রমকারী হও*। আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা থেকে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সম্ভোগ কর, তবে যদি পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটিতে তায়াম্মুম কর** । সুতরাং তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত মাসেহ কর। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। * তাহলে তার কথা ভিন্ন, সে গোসল না করেও শুধু তায়াম্মুম করে নামায পড়তে পারবে। কেউ কেউ বলেছেন, এখানে সালাত অর্থ সালাত আদায়স্থল। তাহলে অর্থ হবে, তোমরা অপবিত্র অবস্থায় সালাত আদায়স্থল তথা মসজিদে যেতে পারবে না। তবে পথ অতিক্রমের উদ্দেশ্যে যাওয়া যাবে। (যুবদাতুত-তাফসীর)।
— Rawai Al-bayan
হে মুমিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় [১] তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার [২] এবং যদি তোমরা মুসাফির না হও তবে অপবিত্র অবস্থাতেও নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর [৩]। আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম কর [৪]। সুতরাং মাসেহ কর তোমরা তোমাদের চেহারা ও হাত, নিশ্চয় আল্লাহ পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
O you who have believed, do not approach prayer while you are intoxicated until you know what you are saying1 or in a state of janābah,2 except those passing through [a place of prayer], until you have washed [your whole body]. And if you are ill or on a journey or one of you comes from the place of relieving himself or you have contacted women [i.e., had sexual intercourse] and find no water, then seek clean earth and wipe over your faces and your hands [with it]. Indeed, Allah is ever Pardoning3 and Forgiving.
— Saheeh International
এরপরে নাজিল হয়, মদ সম্পর্কে পরিপূর্ণ এবং শেষ বিধান। কোরআনের আয়াতে মদকে স্পষ্টভাবে নাপাক বলা হয়। মদকে উল্লেখ করা হয়, শয়তানি কর্ম ও পরস্পর লড়াই বিদ্বেষের উৎস হিসাবে। মূলত এই আয়াতের মাধ্যমে মদকে হারাম ঘোষনা করা হয়। যা সর্বশেষ আয়াত বিধায় এটিই কোরআনের আইন হিসেবে গণ্য হবে [171] –
5:90
হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া আর মূর্তী ও ভাগ্য নির্ধারক তীর ঘৃণিত শয়তানী কাজ, তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সাফল্যমন্ডিত হতে পার।
— Taisirul Quran
হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ইত্যাদি এবং লটারীর তীর, এ সব গর্হিত বিষয়, শাইতানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণ রূপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়।
— Sheikh Mujibur Rahman
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
— Rawai Al-bayan
হে মুমিনগণ! মদ [১], জুয়া, পূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয় করার শর [২] তো কেবল ঘৃণার বস্তু, শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা সেগুলোকে বর্জন কর –যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার [৩]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
O you who have believed, indeed, intoxicants, gambling, [sacrificing on] stone altars [to other than Allah], and divining arrows are but defilement from the work of Satan, so avoid1 it that you may be successful.
— Saheeh International
5:91
মদ আর জুয়ার মাধ্যমে শয়তান তো চায় তোমাদের মাঝে শত্রুতা আর বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে, আল্লাহর স্মরণ আর নামায থেকে তোমাদেরকে বাধা দিতে। কাজেই তোমরা কি এসব থেকে বিরত থাকবে?
— Taisirul Quran
শাইতানতো এটাই চায় যে, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শক্রতা ও হিংসা সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহর স্মরণ হতে ও সালাত হতে তোমাদেরকে বিরত রাখে। সুতরাং এখনো কি তোমরা নিবৃত্ত হবেনা?
— Sheikh Mujibur Rahman
শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?
— Rawai Al-bayan
শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাঁধা দিতে। তবে কি তোমরা বিরত হবে না [১]?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
Satan only wants to cause between you animosity and hatred through intoxicants and gambling and to avert you from the remembrance of Allah and from prayer. So will you not desist?
— Saheeh International
আসুন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম মিজানুর রহমান আজহারীর মুখ থেকে এই পুরো বিষয়টি শুনে নিই,
এরকম আরো বেশ কিছু বিষয়ে আল্লাহ পাক পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন, যার যুক্তি হিসেবে তাফসীর লেখকগণ বলেছেন, একজন ডাক্তার যেমন রোগীর অবস্থা বুঝে ঔষধ পরিবর্তন করতে পারে, তেমনি আল্লাহ পাকও মাঝে মাঝে আদেশ নিষেধ পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু ডাক্তারের ঔষধ পরিবর্তন আর আল্লাহর আদেশ পরিবর্তন কী এক হতে পারে? [172]
একজন ডাক্তারের কাছে সকল তথ্য থাকা সম্ভব নয়। সেই কারণে তিনি এক ঔষধ দিয়ে পরীক্ষা করতে পারে। কারণ আসল রোগটি কী, তিনি হয়তো নিশ্চিতভাবে বোঝেন নি। নানা ধরণের পরীক্ষার পরেও একদম শতভাগ নিশ্চিতভাবে রোগ নির্ণয় ডাক্তারের পক্ষে কখনই সম্ভব নয়। কারণ মানুষের শরীর অত্যন্ত জটিল। আর ডাক্তারের জ্ঞানও সীমাবদ্ধ। কিন্তু আল্লাহর তো সেই সীমাবদ্ধতা নেই। যিনি সব জ্ঞানের অধিকারী, পরে কী হবে সেটাও তো তিনি ভালভাবেই অবগত থাকার কথা। তাহলে তিনি কেন আদেশ নিষেধ পরিবর্তন করবেন?
ধরে নিচ্ছি, আল্লাহ পাক প্রথমে আয়াত নাজিল করলেন, নারীর ইদ্দত হবে একবছর। তিনি তো সব দেখে শুনে বুঝেই এই নির্দেশ জাড়ি করবেন, নাকি? কোথায় কী কী সমস্যা হতে পারে, কোন নারীর কী কী বিষয় ঘটতে পারে, সবই তো তার জানা। তাহলে প্রথমে একবছরের ইদ্দত, পরে আবার তা পরিবর্তন করে চারমাস দশদিনের ইদ্দত পালনের নির্দেশের মানে কী? তার মানে কী, প্রথম নির্দেশটি সঠিক ছিল না? সেই সময়ে আল্লাহর জ্ঞানের অভাব ছিল? সে ঠিকভাবে না বুঝেই, চিন্তাভাবনা না করেই একবছরের ইদ্দতের নির্দেশ দিয়ে ফেলেছিল? পরে যদি সংশোধনেরই দরকার হয়, তাহলে এটি মহান সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞানী আল্লাহর সরাসরি বক্তব্য কীভাবে হয়?
এবারে আসুন এই সম্পর্কিত আয়াতগুলো দেখিঃ [173]
আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?
এবারে তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে পড়ি [174] –
এবারে কোরআনের একটি আয়াত পড়ে নিই, [175]
এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।
নসেখ মানসুখ কাকে বলে?
ناسخ (নাসিখুন) ইস্মে ফায়িল এর একবচন। نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে নির্গত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি। তবে ناسخ (নাসিখুন) শব্দের অর্থ হচ্ছে ব্যাখাকারী।
منسوخ (মানসূখুন) শব্দটি অনুরূপ نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে উদগত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি।
এই বিষয় দুইটি নিয়ে সাধারণত আম মৌলানারা কখনো মুখ খোলেন না। তবে ইসলাম নিয়ে পড়ালেখা করলে বিভিন্ন সময় ইসলামিক আলেমদের বইপত্রগুলোতে নাসেখ মানসুখ শব্দগুলো পাওয়া যায়। এই শব্দগুলো খুব ভালভাবে জানা এবং বোঝা ইসলামকে সামগ্রিকভাবে বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাসেখের অর্থ হলো, যা রহিত করে। ‘নসখ’ এর বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে ‘মানসুখ’ শব্দটি। মানসুখ অর্থ হচ্ছে, যা রহিত করা হয়েছে। কোরআনের কিছু আয়াতকে ‘মানসুখ’ বা রহিত আয়াত এবং আরো কিছু আয়াতকে ‘নসখ’ বা পরিমার্জিত আয়াত বলা হয়। নসখ আয়াতের বিধান দ্বারা মানসুখ আয়াতের বিধান রহিত ও প্রতিস্থাপিত হয়। অর্থাৎ, আল্লাহ পাক মাঝে মাঝেই বিভিন্ন আয়াত নাজিল করে, সেই আয়াত আবার রহিত করেছেন, নতুন আয়াত নাজিল করেছেন। বিষয়টি কোরআনের অবিকৃত হওয়ার বিরুদ্ধে এক বিশাল ধাক্কা। যদিও মুসলিমগণ এখানেও মুখ উচিয়ে বলবেন, এই সংস্কার, পরিমার্জনাও আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছে।
এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন;
আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?
সেই সাথে, সহিহ হাদিসেও এই বিষয়ে পরিষ্কার বলা আছে যে, আল্লাহ পাকের নাজিলকৃত কোন কোন আয়াত বাতিল হতে পারে। [178]
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫২/ তাফসীর
হাদিস নাম্বার: ৪১৭৪
৪১৭৪। উমাইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে বললাম যে, এ আয়াত তো অন্য আয়াত দ্বারা মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে। অতএব উক্ত আয়াত আপনি মুসহাফে লিখেছেন (অথবা রাবী বলেন) কেন বর্জন করছেন না, তখন তিনি (উসমান (রাঃ)) বললেন, হে ভাতিজা আমি মুসহাফের স্থান থেকে কোন জিনিস পরিবর্তন করব না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এ থেকে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়, আল্লাহ পাক তার নাজিলকৃত আয়াতসমূহে মাঝে মাঝে পরিবর্তন আনেন। প্রয়োজনমাফিক তিনি সংশোধন করেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সংশয় ডট কমের সংকলন দেখুন।
মুহাম্মদের সাহাবীগণ, তাবে তাবেইন এবং প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলারগণের মত হচ্ছে, অন্তত পাঁচশ আয়াত রহিত হয়ে গেছে। এসব আয়াতের বিধান এখন আর কার্যকর নয়, যদিও এর প্রায় সবই এখনো কোরআনে রয়েছে। নাসেখ মানসুখের ওপর ভিত্তি করে কোরআনের সূরাগুলোকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ
- ৩০টি সূরায় নাসেখ মানসুখ উভয় ধরণের আয়াত রয়েছে। অর্থাৎ, এসব সূরায় বিধান রহিতকারী আয়াতও রয়েছে, পাশাপাশি পুরাতন বিধান সমৃদ্ধ আয়াতও রয়েছে।
- ৩৬টি সূরায় শুধু মানসুখ আয়াতসমূহ রয়েছে। এদেরকে যে আয়াতগুলো রহিত করেছে, সেগুলো অন্য সূরায় স্থান পেয়েছে কিংবা এদের পরিবর্তে অন্য কোন আয়াত পাঠানো হয়নি।
- ৬টি সূরায় শুধু নসখ আয়াতসমূহ রয়েছে। এই আয়াতগুলো যাদেরকে রহিত করেছে, সেগুলো অন্য সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে।
- ৪২টি সূরায় নসখ বা মানসুখ জাতীয় কোন আয়াত নেই। এগুলো ঝামেলামুক্ত।
আসুন শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী এর খ্যাতনাম গ্রন্থ আল ফাউযুল কবীর ফি উসুলিত তাফসীর থেকে সরাসরি পড়ি। [179]
এবারে আসুন প্রখ্যাত আলেম ড. আবু বকর যাকারিয়ার মুখ থেকেই সরাসরি শুনি, নাসেখ মানসুখ বিষয়টি সম্পর্কে,
মুহাম্মদের করুণ মৃত্যু
মুসলিমদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, [180]
এটা (কোরআন) বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ।
সে (মুহাম্মদ) যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত,
তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম,
অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা/প্রধান ধমনী।
তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।
এবারে আসুন, সেই হাদিসসমূহ দেখে নিই [181] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫১৩। ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত ছিলেন তখন উম্মু মুবাশশির (রাঃ) তাঁকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার রোগ সম্পর্কে কি ভাবছেন? আর আমি আমার ছেলের রোগ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন নই সেই বিষ মেশানো বকরীর গোশত ব্যতীত যা সে খায়বারে আপনার সঙ্গে খেয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমিও ঐ বিষ ছাড়া আমার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নই। এ মুহূর্তে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিচ্ছে।(1)
সনদ সহীহ।
(1). আবূ দাঊদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ্ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ)
আরো কয়েকটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, নবী মুহাম্মদ তার প্রধান ধমনী কেটে দেয়ার মত যন্ত্রণা অনুভব করতেন [182] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ৬. কাউকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলে কি তাকেও হত্যা করা হবে?
৪৫১২। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া গ্রহণ করতেন কিন্তু সাদাকাহ গ্রহণ করতেন না। বর্ণনাকারী বলেন, খায়বারের এক ইয়াহুদী মহিলা একটি ভুনা বকরীতে বিষ মিশিয়ে তাঁকে হাদিয়া দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা আহার করেন এবং লোকজনও আহার করে। তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও। কারণ এটি আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, এটি বিষযুক্ত। (বিষক্রিয়ার ফলে) বিশর ইবনুল বারাআত ইবনু মা‘রূর আল-আনসারী (রাঃ) মারা যান। তিনি ইয়াহুদী মহিলাকে ডেকে এনে প্রশ্ন করেনঃ তুমি যা করলে তা করতে তোমাকে কিসে প্ররোচিত করেছে?
সে বললো, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি যা করেছি তাতে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি বাদশাহ হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে পরে তাকে হত্যা করা হলো। অতঃপর তিনি যে ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন সেই সম্পর্কে বলেনঃ আমি সর্বদা সেই লোকমার ব্যথা অনুভব করছি যা আমি খায়বারে খেয়েছিলাম। এই সময়ে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিয়েছে।(1)
হাসান সহীহ।
(1). বুখারী, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
এবারে আসুন আরো দেখি, মহাবিশ্বের স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাকের সর্বাপেক্ষা প্রিয় মানুষ, সর্বাপেক্ষা প্রিয় রাসুল নবী মুহাম্মদের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল [183] [184] [185] –
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২২৪৭. নাবী (সাঃ) এর রোগ ও তাঁর ওফাত। মহান আল্লাহর বাণীঃ আপনিতো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল। এরপর কিয়ামত দিবসে তোমরা পরস্পর তোমাদের প্রতিপালকের সম্মুখে বাক-বিতন্ডা করবে (৩৯ঃ ৩০,৩১) ইউনুস (রহঃ) যুহরী ও উরওয়া (রহঃ) সুত্রে বলেন, আয়শা (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাঃ) যে রোগে ইন্তিকাল করেন সে সময় তিনি বলতেন, হে আয়শা! আমি খায়বারে (বিষযুক্ত) যে খাদ্য ভক্ষণ করেছিলাম, আমি সর্বদা তার যন্ত্রণা অনুভব করছি। আর এখন সেই সময় আগত, যখন সে বিষক্রিয়ার আমার প্রাণবায়ু বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে
সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ৬/ জানাযা
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬/৬৫. নাবী ﷺ -এর ইনতিকাল ও তাঁর কাফন-দাফন।
৩/১৬২৯। আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যু যন্ত্রণা তীব্রভাবে অনুভব করেন, তখন ফাতেমাহ (রাঃ) বলেন, হায় আমার আব্বার কত কষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আজকের দিনের পরে তোমার আব্বার আর কোন কষ্ট থাকবে না। তোমার আব্বার নিকট এমন জিনিস উপস্থিত হয়েছে, যা কিয়ামাত পর্যন্ত কাউকে ছাড়বে না।
সহীহুল বুখারী ৪৪৬২, আহমাদ ১৬০২৬, সহীহাহ ১৬৩৮, মুখতাসার শামাযিল ৩৩৪, বুখারী শেষ বাক্য বাদ দিয়ে। তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১০/ কাফন-দাফন
পরিচ্ছদঃ মৃত্যুর সময় কষ্ট হওয়া।
৯৮১. হাসান ইবনুুস সাববাহ আল-বাগদাদী (রহঃ) …… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, মৃত্যুর সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যে কষ্ট হতে দেখেছি এরপর কারো মৃত্যুর সময় আসান হতে দেখতে আমার আর কোন ঈর্ষা হয় না। – মুখতাসার শামাইল মুহাম্মাদিয়া ৩২৫, বুখারি, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৯৭৯ (আল মাদানী প্রকাশনী)
রাবী বলেন, আমি এই হাদিস সম্পর্কে আবূ যুরআ (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বলেছিলাম, রাবী আব্দুর রাহমান ইবনুল আলা কে? তিনি বললেন, ইনি হলেন আলা ইবনুল লাজলাজ। তাঁকে এইরূপেই আমরা জানি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বলা বাহুল্য, হযরত মুহাম্মদের মৃত্যু যেকোন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর চাইতে বহুগুণ যন্ত্রণাদায়ক হয়েছিল, তা এই হাদিসগুলো থেকেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। এ থেকে আসলে কোন সিদ্ধান্তে যাওয়া যায় না। তারপরেও মুহাম্মদের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর হওয়া, করুণ মৃত্যু হওয়া, প্রচণ্ড কষ্ট ভোগ করার কারণ কী হতে পারে, তার উত্তরে ইসলামিস্টগণ হয়তো আমাদের নানাভাবে বুঝ দেবেন।
উপসংহার
পুরো আলোচনা থেকে আমরা যেই বিষয়গুলো প্রমাণ পেলাম, কোরআন আল্লাহর সৃষ্টি নাকি আল্লাহর গুণ, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিতর্ক রয়েছে লাওহে মাহফুজ নিয়ে, কোরআনের ভাষা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, প্রথমবার কোরআন লেখা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, মুহাম্মদের আমলে কোরআন সংকলন, কোরআনের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নিয়েও খোদ খলিফাদের মধ্যে ভয় ছিল, আবু বকর, উমর এবং আলীর কোরআন নিয়ে হয়েছে ইসলামের প্রধান দুটি ভাগ, উসমানের কোরআন নিয়ে রীতিমত রক্তারক্তি ও হত্যা, সর্বমোট আয়াতের সংখ্যা এবং সূরার সংখ্যা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, কোরআনের আয়াত ছাগলে খেয়ে যাওয়ায় সেই আয়াতটি আর পাওয়া যায় নি, সূরা তওবা আরেকটি সূরার অংশ নাকি স্বতন্ত্র সূরা তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, প্রথম এবং শেষ সূরা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, নাজিলের ক্রমানুসারে কোরআনে সূরাগুলোর সিরিয়াল নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, কোরআনের অনেক অংশ নবী মুহাম্মদ খোদ ভুলে গিয়েছিলেন, আবার আল্লাহ নিজেই কোরআনের অনেক আয়াতের সংশোধনী প্রেরণ করেছিলেন, শয়তানের আয়াত নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, এবং মুহাম্মদের মৃত্যুশয্যায় তিনি কী লিখে যেতে চেয়েছিলেন, তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।
এতকিছুর পরে আরো বহু বহু বিতর্ক রয়েছে গেছে, যার সহজ উত্তম ইসলামিস্টগণ দেন যে, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। কিন্তু, সেটি কতটুকু যুক্তি, আর কতটুকু বিশ্বাস, তা পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি।
এত অসংখ্য সমস্যা, জটিলতা, কোন আয়াত মানসুখ, কোন আয়াত আছে নাকি নেই, এই সব বিতর্ক এবং তা নিয়ে রীতিমত রক্তারক্তি ঘটনা ঘটার পরেও কেউ যখন বলেন, আল্লাহ পাক ঠিক যেভাবে কোরআন নাজিল করেছেন, তার বিন্দুমাত্র কোন পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংস্কার কিছুই হয় নি, যেভাবে লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত এখন সেভাবেই আছে, তখন বিষয়টি হাস্যরসাত্মক একটি ব্যাপারে পরিণত হয়।
সহায়ক গ্রন্থসমূহ
১ ) কোরআনের বাংলা অনুবাদগুলো Quran.com এর মুহিউদ্দিন খান এর অনুবাদ থেকে নেয়া হয়েছে।
২ ) বাংলা তাফসির কুর’আনুল কারিম – অনুবাদঃ প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান
৩ ) আল কুরআনুল কারীম সরল অর্থানুবাদ – আল বায়ান ফাউন্ডেশন
৪ ) তাহফীমুল কোরআন। সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী। সব খণ্ড একসাথে
৫ ) সহিহ বুখারী শরীফ। মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিযবাহ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন (১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ খণ্ড)
৬ ) সহিহ বুখারী। মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিযবাহ। তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ খণ্ড
৭ ) সহিহ মুসলিম। ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ ইবনে মুসলিম আল কুশাইরী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ খণ্ড
৮ ) সহিহ মুসলিম শরীফ। ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ ইবনে মুসলিম আল কুশাইরী। বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার। (১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ খণ্ড)
৯ ) সুনানে আবু দাউদ শরীফ। আবু দাউদ সুলায়মান ইবনুল আশ’আস আস-সিজিস্তানী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। খণ্ড ১ ২ ৩ ৪
১০ ) সূনানু নাসাঈ শরীফ। ইমাম আবু আবদির রহমান আহমদ ইবন শু’আয়ব আন্-নাসাঈ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ১ ২ ৩ ৪ খণ্ড
১১ ) সুনানু ইবনে মাজাহ। আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মাজাহ আল-রাবি আল-কুয়াজুইনী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। ১ ২ ৩ খণ্ড
১২ ) সহিহ আত-তিরমিযী । হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী। তাহক্বীক আল্লামা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী। খণ্ড ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬
১৩ ) তাফসীরে ইবনে কাসীর- হাফেজ আল্লামা ইমাম্মুদিন ইবনু কাসীর (রহঃ)। তাফসীর পাবলিকেশন্স কমিটি। ১,২,৩ ৪,৫,৬,৭ ৮,৯,১০,১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
১৪ ) তাফসীরে ইবনে কাসীর|ইসলামিক ফাউন্ডেশন
১৫ ) তাফসীরে জালালাইন। জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী। ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী। ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ খণ্ড
১৬ ) তাফসীরে মাযহারী। আল্লামা কাজী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী। হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী। সব খণ্ড একত্রে।
১৭ ) আল ফাউযুল কবীর ফি উসুলিত তাফসীর
১৮ ) শিয়া আকিদার অসারতা । শাইখ মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার আত-তুনসাবী ।
১৯ ) কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ।
২০ ) Asbāb al-Nuzūl By: Alī ibn Ahmad al-Wāhidī
২১ ) আল ইত্বকান ইংরেজি
তথ্যসূত্র
- Circular reasoning [↑]
- কোরআন, সূরা হিজর, আয়াত ৯ [↑]
- কোরআন, সূরা আল ইসরা, আয়াত ১০৬ [↑]
- কোরআন, সূরা আল ইসরা, আয়াত ১০৬ [↑]
- WHAT IS THE MEANING OF THE WORD ‘QURAN’? [↑]
- The Qur’an is the word of Allah, may He be exalted, and is not created [↑]
- Doubts about the creation of the Qur’aan [↑]
- কোরআন, সূরা আল হাক্কাহ, আয়াত ৪১ – ৪৭ [↑]
- কোরআন, সূরা নিসা, আয়াত ১ [↑]
- কোরআন, সূরা নিসা, আয়াত ১৪ [↑]
- কোরআন, সূরা নিসা, আয়াত ৩২ [↑]
- সূরা যারিয়াত, আয়াত ৪৬- ৫১ [↑]
- কোরআন, সূরা হুদ, আয়াত ১, ২ [↑]
- কোরআন, সূরা আল কাউসার, আয়াত ১ [↑]
- কোরআন, ১৬ঃ৬৩ [↑]
- কোরআন, সূরা মুমতাহিনা, আয়াত ৭ [↑]
- কোরআন, সূরা মুমতাহিনা, আয়াত ৭ [↑]
- কোরআন, সূরা আল মুজাদালাহ, আয়াত ২২ [↑]
- কোরআন ৬ঃ৯৯ [↑]
- কোরআন ৬ঃ৯৭ [↑]
- কোরআন ৬ঃ৯৮ [↑]
- কোরআন ২ঃ ২৮৬ [↑]
- সূরা আশ-শুয়ারা, আয়াত ১০ [↑]
- সূরা আল গাশিয়াহ্, আয়াত ৬ [↑]
- সূরা আল হাক্কাহ, আয়াত ৩৬ [↑]
- সূরা আস সাফফাত, আয়াত ৬২, ৬৬ [↑]
- ‘লাওহে মাহফুয’ বলতে কি বুঝায়? এর অর্থ কি? [↑]
- কোরআন বিকৃতি ও সাত আহরুফের সাতকাহন [↑]
- কোরআন ৮৫ঃ২১-২২ [↑]
- সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২১৫৮ [↑]
- সুনান আত-তিরমিযী, হুসাইন আল-মাদানী প্রকাশনী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫০-২৫১ [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৫০১ [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৬-১৬৭ [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৫০৭ [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৯ [↑]
- কোরআন ১৮:১৭ [↑]
- কোরআন ৭:১৭৮ [↑]
- কোরআন, সূরা আল-কদর, আয়াত ১-৫ [↑]
- কোরআন, সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ১-৪ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ২ [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫৩৬৪, ৫৩৬৫, ৫৩৬৬ [↑]
- সহিহ বুখারী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রথম খণ্ড। হাদিস নম্বর ৩ [↑]
- ইবনে হাজর আহ্মদ বিন আলী বিন মুহাম্মদ ‘আস্কালানী, ফাত-আল-বারি (কাইরো (১৯৩৯), ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯ [↑]
- আল-ইত্বকান, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৩-৭৪ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ২২২০ [↑]
- বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৯ [↑]
- কোরআন হিজরঃ৯ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) হাদিস নম্বরঃ ২২২০ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৬ [↑]
- তারিখুল কোরআনিল কারিম। তাহের আল কুরদি। প্রথম খণ্ড। পৃষ্ঠা ২৮ [↑]
- উলুমুল কোরআন, তকি্ব উসমানি, পৃষ্ঠা ১৮৬-১৮৭ [↑]
- তারীখে ইসলাম, সাইয়েদ মুহাম্মদ আমীমুল ইসলাম, আধুনিক প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২৮ [↑]
- কিতাবুল তাবাকাত আল-কবির, ইবন সা’দ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৪ [↑][↑]
- জামিউত তিরমিযী, সোলেমানিয়া বুক হাউস, পৃষ্ঠা ৮৫১ [↑][↑]
- Jami’ at-Tirmidhi Vol. 5, Book 44, Hadith 3104 [↑]
- কিতাবুল মাসাহিফ, ইবন আবি দাউদ, পৃষ্ঠা ১৫ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩২-৩৩৩ [↑]
- উসুলুল কাফী (ভারতীয় সংস্করণ), মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী,পৃষ্ঠা ৬৭ [↑]
- উসুলুল কাফী(ভারতীয় সংস্করণ)। মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী। পৃষ্ঠা ৬৭১ [↑]
- ফসলুল খিতাব, পৃষ্ঠা ৯৭ [↑]
- তাফসীরুস সাফী। মোল্লা হাসান। পৃষ্ঠা ১৩ [↑]
- কোরআন হিজরঃ৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৯৪৩ [↑]
- কোরআন ১৫ঃ৯ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৯ [↑]
- তাফসীতে জালালাইন, জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯ [↑]
- কোরআন হাদিস সংকলনের ইতিহাস, এ কে এম এনামুল হক, পৃষ্ঠা ৬৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ৩ [↑]
- দালাইলুল নুবুওয়াহ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫৭-১৫৮ [↑]
- নাজিলের সময়ানুক্রমে কুরআনের সূরাসমূহের সিরিয়াল [↑]
- কোরআন, সূরা মায়িদা, আয়াত ৩ [↑]
- কোরআন, সূরা আল বাকারা, আয়াত ২৭৮ [↑]
- তাফসীরে তাবারী, খণ্ডঃ ৬, পৃঃ ৩৮ [↑]
- সূয়ুতী, আল ইতকান, খণ্ডঃ ৬, পৃঃ ৩৫ [↑]
- কোরআন, সূরা আল বাকারা, আয়াত ২৮১ [↑]
- আদ্দুররুল মানসুর, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭০[↑]
- তাবারী, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১ [↑]
- কোরআন, সূরা আত-তাওবা, আয়াত ১২৮ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১২-৫১৩ [↑]
- সুনানু আবু দাউদ শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৭-৪২৮, হাদিস নম্বর ৭৮৬-৭৮৭ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬২৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৬২৬ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪১, হাদিস নম্বরঃ ৪৬২৬ [↑]
- বিস্তারিতঃ কোরআন বিকৃতি ও সাত আহরুফের সাতকাহন [↑]
- কোরআন, সূরা আল-আলা, আয়াত ৮৭ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৬, হাদিস নম্বর ৪৬৬৭, ৪৬৬৮, ৪৬৬৯ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬২৬ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫৮৯৬ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ১৭২৭ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ১৭২৮ [↑]
- সুনানু ইবনে মাজাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৯৬ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৯০ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৬৬ [↑]
- সহিহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, পঞ্চম খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৬১-৩৪৬২, পৃষ্ঠা ১০০-১০১ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৪৩১০ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪২৭১ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), আল্লামা আলবানী একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৪৪১৮ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), আল্লামা আলবানী একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪৮ [↑]
- সহীহুল বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২০১ [↑]
- মুসনাদে আহমাদ, আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদিস নম্বরঃ ৩৯১ [↑]
- মুসনাদে আহমাদ, আহমদ ইবনে হাম্বল, হাদিস নম্বরঃ ৩৫২ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪১ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, আল্লামা কাজী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪৮-৩৪৯ [↑]
- কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২৪০-২৪১ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১০-৩১১ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮৪, ৩৮৫ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৪ [↑]
- সূরা শুয়ারা, আয়াত ২১৪ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪০২ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৩-২৫৪, হাদিস নম্বরঃ ৪০২ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৭২৫ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৮ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, আল্লামা কাজী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৯ [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮,২৯,হাদিস নম্বরঃ ৬১৪৫ [↑]
- আল ইতকান, পৃষ্ঠা ১২-১৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৬, হাদিস নম্বরঃ ৪৬২১ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৬১২ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৮৭ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস একাডেমি, হাদিস নম্বরঃ ২১৯৫ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৫০০২ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪৭, হাদিস নম্বরঃ ৫০০২ [↑]
- তাফহীমুল কুরআন, সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী, খণ্ড ১৯, পৃষ্ঠা ৩২০ [↑]
- সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩১০৪ [↑]
- Jami’ at-Tirmidhi Vol. 5, Book 44, Hadith 3104 [↑]
- ইবন আবি দাউদ, কিতাবুল মাসাহিফ, পৃষ্ঠা ১৫ [↑]
- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও তাঁর ফিকাহ, ডঃ হানাফী রাযী, আবুল বাশার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম অনূদিত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৯৪-৯৫ [↑]
- আল ইত্বকান, পৃষ্ঠা ১৫ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৭। হাদিস নম্বরঃ ৩৫৩৬, ৩৫৩৭ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ৪৬৩৯ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯ [↑]
- আল ইতকান, জালালুদ্দিন সুয়ুতি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২২৬ [↑]
- আল ইতকান, জালালুদ্দিন সুয়ুতি, ১/২২৭ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৬, হাদিস নম্বরঃ ৩৭৯০ [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৬৫, হাদিস নম্বরঃ ২২৯০ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৬০৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৬১৯ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৯-৩৪০, হাদিস নম্বরঃ ৪৬২৪ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৪৮৬২ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৯৮, ৪৪৯৯ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯২-৩৯৩ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮১-৪৮৩ [↑]
- শয়তানের আয়াত বা স্যাটানিক ভার্সেস [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৭ [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৭ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২৬ [↑]
- নসরুল বারী, শরহে সহিহ বুখারী, নবম খণ্ড, শিবলী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৯৩, ৯৪ [↑]
- Asbāb al-Nuzūl, Alī ibn Ahmad al-Wāhidī , পৃষ্ঠা ১১৪ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৫৯, হাদিস নম্বরঃ ৪৮০৮ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৪, হাদিস নম্বরঃ ৪৭৪০ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৬১৭ [↑]
- সূনান নাসাঈ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬৫ [↑]
- সহিহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, তৃতীয় খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ২১২৮ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১১ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, আল্লামা কাজী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬০-২৬১ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ২৬৭৪ [↑]
- কোরআন, সূরা আল-মুমিনুন | আয়াতঃ ১৪ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১১৫ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৫৬৬৯ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮০-৮১ [↑]
- কোরআন, সূরা ইউনুস, আয়াত ৬৪ [↑]
- কোরআন, সূরা আল-আনাম, আয়াত ১১৫ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭ [↑]
- কোরআন ৬ঃ৩৪ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৪৯ [↑]
- তাফসীতে জালালাইন, প্রথম খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২৭৭ [↑]
- কোরআন, সূরা নাহল, আয়াত ৬৭ [↑]
- কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২১৯ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৩৬৭১ [↑]
- কোরআন, সূরা নিসা, আয়াত ৪৩ [↑]
- কোরআন, সূরা মায়িদা, আয়াত ৯০-৯১ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, জালালুদ্দিন মহল্লী এবং জালালুদ্দিন সুয়ুতী, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭৯ [↑]
- কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ১০৬ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬২৩-৬২৭ [↑]
- কোরআন, সূরা আন নাহল, আয়াত ১০১ [↑]
- সূরা নাহলঃ ১০১ [↑]
- সূরা বাকারাঃ ১০৬ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নাম্বারঃ ৪১৭৪ [↑]
- আল ফাউযুল কবীর ফি উসুলিত তাফসীর, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী [↑]
- কোরআন, সূরা হাক্কাহ, আয়াত ৪৩-৪৭ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৫১৩ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৫১২ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৩-৩৪। অনুচ্ছেদঃ ২২৪৭ [↑]
- সুনানু ইবনে মাজাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৪-৭৫। হাদিস নম্বরঃ ১৬২৯ [↑]
- সহিহ আত-তিরমিযী, হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী, তাহক্বীক আল্লামা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০৪, হাদিস নম্বরঃ ৯৭৯ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"
এক কথায় অপূর্ব❤????
Apurva
It’s a really good job
Wonderful post, Islam and another religion`s content is verify by this post
Many many thanks
পশ্চিমা ইতিহাসবিদ থিওফেন এর প্রবন্ধের একটি পাতা, যার সাথে ধর্মের সম্পর্ক থাকতে পারে
বাইজেন্টাইন ইতিহাসবিদ থিওফেন হচ্ছেন সবচেয়ে প্রাচীন গ্রীক ইতিহাসবিদ, একমাত্র যিনি অত্যন্ত যত্ন করে প্রাচীন গ্রীক, বাইজেন্টাইন ও পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রাচীন ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেn। তার সেই বিরাট ইতিহাস বইতে একটি ছোট কাহিনী পাওয়া যায়, যার সাথে সাথে ইসলামের নবী ও ধর্মের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে দীর্ঘকাল থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। বলা প্রয়োজন, এটি হচ্ছে ইসলাম সম্বন্ধে প্রাচীন পশ্চিমের ইতিহাসবিদের লেখা একমাত্র তথ্য। মুসলমান ধর্ম প্রচারকেরা দের ধর্ম সম্বন্ধে যা প্রচার করে এটিতে তার প্রতিফলন না থাকায় দীর্ঘকাল তারা এটি সত্য হতে পারে বলে স্বীকার করে নি, এবং এখনও স্বীকার করে না। তবে, সাম্প্রতিক কালে ইসলামের যে ইতিহাস জানা যাচ্ছে তা সত্য বলে ধরে নিলে এটিকেও সত্য বলে ধরে নেয়া সম্ভব হবে। এই লেখাটির ইংরেজী অনেক অনুবাদ পাওয়া যায়। নীচে বাংলায় যা লেখা হয়েছে তা ‘সিরিল ম্যাঙ্গো’ র করা ইংরেজী অনুবাদের বাংলা ভার্সন।। নীচে ম্যাঙ্গো’র ইংরেজী মূল অনুবাদটিও দেয়া হয়েছে।
ইতিহাসবিদ থিওফেন কনফেসর (মৃত্যু। ৮২২)ঃ থিওফেন কনফেসর একজন উন্নত রুচির মানুষ ছিলেন, যার চেহারা ছিল সুন্দর এবং যিনি খেলাধুলা পছন্দ করতেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি কন্সটান্টিনোপল-বিথিনিয়া এলাকায় বাস করেছেন । তার শিক্ষা বেশী না থাকলেও নিজের প্রতিটি লেখা চূড়ান্ত সততার সঙ্গে সম্পাদন করতেন। তিনি তার গ্রন্থে ইউরোপের প্রাচীন ইতিহাস ধারাবাহিক ভাবে অত্যন্ত সংক্ষেপে বর্ননা করেছে। এই ইতিহাসের বইতে সম্ভবতঃ ইসলাম সম্বন্ধে বর্ননাটি একেবারে ছোট, এক পৃষ্ঠারও কম।
সিরিল ম্যাঙ্গো ঃ সিরিল ম্যাঙ্গ’র সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার সুনাম রয়েছে। তিনি থিওফেন কনফেসরের ইতিহাস বইটি অনুবাদ কজরেন দীর্ঘ পনেরো বতসর ধরে। নীচের লেখাটি এই গ্রন্থের ৪৬৪ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে।
(থিওফেনের ইতিহাস বইয়ের ক্রমঃ ৩৩৩) এই বৎসর সারাসিনদের ভন্ড নবী মৌয়ামেড (Mouamed) মারা যায়। মৃত্যুর পূর্বে সে তার আত্মীয় আবৌবাচারস (Aboubacharos)কে তার স্থলাভিষিক্ত করে যায়। একই সময় তার প্রতিপত্তি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং সকলে ভীত হয়ে পড়ে। শুরুতে ভুল পথে চালিত ইহুদীরা তাকে তাদের নবী মোসেস যিনি ঈস্বরের সাথে কথা বলেছিলেন, তার অবতার বলে মনে করেছিল। (অন্য অনুবাদ থেকে সংগৃহীতঃ পরে তাদের উটের মাংস খাওয়া দেখে তাদের ভুল ভাঙ্গে। তাদের আর ফিরে যাবার পথ ছিল না বলে ) তারা তাকে তাদের নবী হিসেবে গ্রহন করে । তাদের সংখ্যা ছিল দশ এবং তারা তার সাথেই থেকে যায়।
মৌয়ামেড এর উৎস সম্বন্ধে জানা যায়, সে আব্রাহামের পুত্র ইসমাইলের বংশে জন্মেছিল। আব্রাহামের দুই ছেলে ছিল- মৌডারোস (Moudaros) এবং রাবিয়াস (Rabias.) মৌডারোস এর পুত্র ছিল কৌরাসস, থেমাইমস, আসাডোস (Kourasos, Kaisos, Themimes, Asados, ) এবং অন্যান্য। এরা সবাই মিডিনাইট (Midianite) মরুভূমিতে গবাদি পশু চড়াতো এবং তাবুতে বাস করতো । এ ছাড়া লেকটান নামে অন্য এক গোত্রের লোকেরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকতো।
মৌয়ামেড এতিম ও দুস্থ ছিল । সে চাডিগা (Chadiga ) নামে তার এক আত্মীয়ের কাছে চাকরী নিয়েছিল। এই কাজে সে উটের সাহায্যে মিসর এবং প্যালেস্টাইনে ব্যবসা করতো। ধীরে ধীরে সে এই মহিলাকে অধিকার করে ফেলে । পরে সে তাকে বিয়ে করে এবং তার উট সহ যাবতীয় সম্পত্তি দখল করে। প্যালেস্টাইন গিয়ে সে সেখানকার ইহুদী ও খৃষ্টানদের ধর্মীয় নানা বিষয় জানতে চায়।
মৌয়ামেড এর মৃগী রোগ ছিল। এই খবর জানার পর সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে চাডিগা এমন একজন গরীব এবং মৃগী রোগ আক্রান্ত লোককে বিয়ে করার জন্য অনুতপ্ত হয়ে পড়ে। মৌয়ামেড তার স্ত্রীকে বলে, “আমি জিব্রাইল নামের এক স্বর্গীয় দূতকে দেখি এবং তাকে দেখলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ি।“ চাডিগা তার বন্ধুর পরিচিত একজন তান্ত্রিকের সাথে যোগাযোগ করে। এই তান্ত্রিক মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য ইতিপূর্বে বিতাড়িত হয়েছিল। চাডিগা তাকে দূতের নাম সহ সব কাহিনী জানায় । চাডিগাকে খুশী করার জন্য তান্ত্রিক বলে, “মৌয়ামেড ঠিকই বলেছে। এই দূতকেই আগের সব নবীদের কাছে পাঠানো হয়েছিল”।
চাডিকা ছিল প্রথম মহিলা যে এই কথা বিশ্বাস করে । সে তার গোত্রের অন্য মহিলাদের জানায় যে মৌয়ামেড একজন নবী। প্রথমে শুধুমাত্র মেয়েদের মধ্যে একথা প্রচার হতে থাকে । এর পর প্রথম যে পুরুষ একথা জানে সে হলো আবুবাচোরাস, মৌয়ামেড উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করে ছিল। এত্রিবোস (Ethribos) এলাকায় এ কাহিনী প্রচার হতে থাকে। শেষ পর্য্যন্ত তা পরিনত হয় যুদ্ধে। প্রথমে গোপনে প্রচার হতে থাকে দশ বছর ব্যাপী, পরে আরো দশ বছর এবং তার পরে প্রকাশ্যে নয় বৎসর।
মৌয়ামেড তার লোকদের শিখিয়েছিল, ‘যে তার শত্রুকে হত্যা করবে বা শত্রুর হাতে নিহত হবে সে স্বর্গে যাবে’। মৌয়ামেড আরো বলেছিল, ‘স্বর্গে পাওয়া যাবে প্রচুর মাংস , সঙ্গম করার জন্য মেয়ে, সেখানে আছে মদ, মধু আর দুধের নদী। আর ঐ মেয়েরা হবে একেবারে ভিন্ন রকমের । সেখানে সঙ্গম হবে দীর্ঘস্থায়ী, সুখ থাকবে অফুরন্ত, সেখানে থাকবে ভোগ বিলাসের জন্য আরো অনেক কিছু’। সে আরো বলেছিল, মানুষের অপরের জন্য সহানুভূতি থাকা উচিত, এবং যারা ভূল করে তাদের সংশোধন করা উচিত।
সিরিল ম্যাঙ্গো’ র করা ইংরেজী অনুবাদ। ঃ
Translated by Cyril Mango:
[333] In this year died Mouamed, the leader and false prophet of the Saracens, after appointing his kinsman Aboubacharos (to his chieftainship).[1] At the same time his repute spread abroad) and everyone was frightened. At the beginning of his advent the misguided Jews thought he was the Messiah who is awaited by them, so that some of their leaders joined him and accepted his religion while forsaking that of Moses, who saw God. Those who did so were ten in number, and they remained with him until his murder.[2] But when they saw him eating camel meat, they realized that he was not the one they thought him to be, and were at a loss what to do; being afraid to abjure his religion, those wretched men taught him illicit things directed against us, Christians, and remained with him.
I consider it necessary to give an account of this man’s origin. He was descended from a very widespread tribe, that of Ishmael, son of Abraham; for Nizaros, descendant of Ishmael, is recognized as the father of them all. He begot two sons, Moudaros and Rabias. Moudaros begot Kourasos, Kaisos, Themimes, Asados, and others unknown.[3] All of them dwelt in the Midianite desert and kept cattle, themselves living in tents. There are also those farther away who are not of their tribe, but of that of lektan, the so-called Amanites, that is Homerites. And some of them traded on their camels. Being destitute and an orphan, the aforesaid Mouamed decided to enter the service of a rich woman who was a relative of his, called Chadiga, as a hired worker [334] with a view to trading by camel in Egypt and Palestine. Little by little he became bolder and ingratiated himself with that woman, who was a widow, took her as a wife, and gained possession of her camels and her substance. Whenever he came to Palestine he consorted with Jews and Christians and sought from them certain scriptural matters. He was also afflicted with epilepsy. When his wife became aware of this, she was greatly distressed, inasmuch as she, a noblewoman, had married a man such as he, who was not only poor, but also an epileptic. He tried deceitfully to placate her by saying, ‘I keep seeing a vision of a certain angel called Gabriel, and being unable to bear his sight, I faint and fall down.’ Now, she had a certain monk [4] living there, a friend of hers (who had been exiled for his depraved doctrine), and she related everything to him, including the angel’s name. Wishing to satisfy her, he said to her, ‘He has spoken the truth, for this is the angel who is sent to all the prophets.’ When she had heard the words of the false monk, she was the first to believe in Mouamed and proclaimed to other women of her tribe that he was a prophet. Thus, the report spread from women to men, and first to Aboubacharos, whom he left as his successor. This heresy prevailed in the region of Ethribos, in the last resort by war: at first secretly, for ten years, and by war another ten, and openly nine.[5] He taught his subjects that he who kills an enemy or is killed by an enemy goes to Paradise; and he said that this paradise was one of carnal eating and drinking and intercourse with women, and had a river of wine, honey, and milk, and that the women were not like the ones down here, but different ones, and that the intercourse was long-lasting and the pleasure continuous; and other things full of profligacy and stupidity; also that men should feel sympathy for one another and help those who are wronged. (Check in google.com)
জিহাদী ধর্মের পর্দা উন্মোচন
(প্রায় ১৪০০ বছর আগে মোহাম্মাদ নামে একজন লোক ধর্মযুদ্ধ বা জিহাদের মাধ্যমে সারা পৃথিবী দখলের একটি রাজনৈতিক প্রকল্প চালু করে । দীর্ঘকাল একটি ধর্ম নামে পরিচিত ছিল। সাম্প্রতিক কালে উন্নততর অনুবাদ ব্যবস্থা, ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জিহাদী রাষ্ট্রগুলির নিয়ন্ত্রন-ব্যর্থতার ফলে ঐ প্রকল্পের অবিকৃত তথ্য আধুনিক বিশ্বের গোচরীভূত হয়েছে। এই দীর্ঘ সময় তারা এই নোংরা এবং সভ্য মানুষের কাছে অগ্রহনযোগ্য তথ্যগুলি কি করে বিকৃত ভাবে প্রচারে সক্ষম হয়েছিল, সেটাই এখন এক বিরাট বিস্ময় ।)
কি ভাবে এলো- দুটি অমানবিক, অনৈতিক ও নোংরা আইন?
চারিদিকে খোলা মরুভূমি, গাছ বলতে কিছু কাঁটা ঝোপ ঝাড় । বিশাল বালুকাময় জমির মধ্যে এখানে ওখানে খেজুর পাতায় ঘেরা বড় বড় বাড়ীর মধ্যে ছোট ছোট কুটীর । এক এক জন পুরুষের অনেকগুলি বউ। তারা আলাদা কুটীরে বাস করতো। রাতের বেলা স্বামীদেরকে একবার এই বউএর র ঘরে তার পর ঐ বউএর ঘরে যাতায়াত করতো হতো । সব বাড়ীর বৌ ঝি দের আবার রাতের বেলা পেট খালি করতে একটু দূরের খোলা মাঠে যেতে হতো। কেবলমাত্র রাতেই তারা এ কাজ করতে পারতো। এই সুযোগে কে যে কার ঘরে ঢুকতো তার হিসাব রাখা যেতো না । ফলাফল? জারজ সন্তান । যেহেতু বন্ধ করার উপায় ছিল না তাই এ নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা ছিল না । তবে যদি দেখা যেতো, বাপের মৃত্যুর ৩ বা ৪ বছর পর সন্তান হয়েছে, তাহলে তা লোকেরা ভাল ভাবে নিতো না । শিশুর জন্মের পর প্রথম কাজ ছিল দাই ঠিক করা। মক্কার কোন বাড়িতে সন্তান হয়েছে খবর পেলেই মরুচারী গরীব বেদুইন রমনীরা এসে শিশুকে নিয়ে যেতো । স্তনপান কাল শেষ হলে শিশুকে বাড়িতে ফিরিয়ে যেতো। বিনিময়ে পেতো উট, বকরী বা নগদ মুদ্রা। এই শিশুটির ক্ষেত্রে অজ্ঞাত করনে ঘটলো ব্যতিক্রম । তার জন্য এমন দাই চাওয়া হলো, যে পাচ বছর পর্য্যন্ত শিশুকে নিজের কাছে রাখতে পারবে। এই সময়কাল পরে সে বাড়িতে ফিরে এসেছিল । অন্য আত্মীয়রা তাকে দেখে খূশী না হলেও তার দাদা খুব খুশী হয়েছিল। এর কিছুদিন পর প্রথমে তার মা এবং পরে তার দাদা মারা যায় । তাকে প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য বাড়ির লোকেরা তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। কাছেই ছিল পৌত্তলকদের মন্দির, কাবা। বিভিন্ন পৌত্তলিক গোষ্ঠীর লোক এখানে পূজো দিতে আসতো। এটি ছিল মক্কার অন্যতম অর্থনীতির উৎস। এখন ছেলেটির থাকার জায়গা কখনো এবাড়ি, কখনো ওবাড়ী, কখনো বা মন্দিরের চাতাল। সারা দিনের কাজ মাঠে ভেড়া চড়ানো, মন্দিরের পূজা দেখা আর বসে বসে চিন্তা করা। এই সময়ই ধর্ম প্রচারক হবার চিন্তা তার মাথায় আসে।
সেই দেশে কোন কৃষি কাজ ছিল না । প্রধান আয়করী কাজ ছিল দুটি, বাণিজ্য সামগ্রী নিয়ে দেশে বিদেশে যাওয়া, আর নয় তো ডাকাত দল গঠন করে বনিক বা ভ্রমনকারীর সম্পদ লুট করা। একটু বড় হয়ে সে মাঝে মাঝে বনিকদের সাথে বিদেশে যেত। সেখানে ছোট ছেলেরা ভালোই টাকা পেতো, যতটা না কাজের জন্য তার চেয়ে বেশী লুতু সার্ভিসের জন্য । সে দেশের পুরুষেরা এসব ছাড়া থাকতেই পারতো না । বিদেশে গিয়ে সে নিজের আগ্রহে ইহুদী আর খৃষ্টান ধর্ম সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখে নেয়। এগুলি তার পরবর্তী জীবনে ধর্ম প্রচারে সহায়তা করে।
অল্প বয়সে কষ্টকর কাজ করতে করতে তার মনে হতো, সব কিছু থাকতেও এই বয়সে সে পিতৃসম্পদ হারা। কেন? কারন তার দাদা ও পিতা মারা যাওয়ায় চাচারা তার সুযোগ নিয়েছে । কিন্তু এই জন্য কি সে দায়ী? সে ভাবলো, ‘শুধু আমি একা কেন এই পৃথিবীতে পিতার মৃত্যুর কারনে সম্পদ-হারা হবো? আমি এমন ধর্ম প্রচার করবে যেখানে কোন পিতৃহারা শিশু দাদার সম্পত্তি পাবে না।‘ সেই বয়সে সে বুঝতে পেরেছিল, তার দাদা ও মাএর সুবিধা হবে বলেই তাকে শিশুকালে মায়ের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। সে ভাবলো, এত কিছু না করে তার দাদা তার মাকে বিয়ে করে নিলেই পারতো । তবে সে জানতো, সে দেশে পুত্রবধূ বিয়ের প্রচলন নেই। তাই সে প্রতিজ্ঞা করলো, সে নিজে এই কাজ করে তার ধর্মে পুত্রবধূ বিবাহের বিধান চালু করবে।
তবে পরবর্তীকালে তার কোন পুত্রসন্তান না থাকায় সে পালকপুত্র গ্রহন করেছিল । তাকে তার নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করিয়েছিল । সে আশা করেছিল, তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরন করে পুত্রটি মারা যাবে। কিন্তু পালক পুত্রটি মারা না যাওয়ায় সে পালক পুত্রকে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করে এবং পরে সেই স্ত্রীকে বিয়ে করে এই নিয়ম প্রবর্তন করে। তার সুবিধা ছিল, সে এমন এক ঈশ্বর তৈরী করেছিল, যে তার সুবিধা ও ইচ্ছেমত নিয়ম তৈরী করে পাঠাত।
উপরের লেখাটি জিহাদী মতবাদ উদ্ভব কালের পুস্তক ও দলিলপত্রের ভিত্তিতে লিখিত । এটি পড়ে যে কোন সাধারণ বুদ্ধির লোকও বুঝবে, “কি ভাবে জিহাদী ধর্মে উপরের দুইটি অমানবিক, অনৈতিক ও নোংরা আইন এসেছিল”।
ধর্মের মধ্যে জেহাদ এল কি ভাবে?
পিতৃহীন ছেলেটা দাদার মৃত্যুর পর আর একবার পিতৃহীন হলো। বাড়ীতে ঠাই হলো না, থাকতে হলো এবাড়ি ওবাড়ি বা পৌত্তলিকদের মন্দিরের চাতালে । কাজের মধ্যে উট ভেড়া চড়ানো আর মাঝে মাঝে বনিকদের সাথে যাওয়া । পৌত্তলিক মন্দিরে মূর্তিপূজকরা তাদের মূর্তিকে পূজা করতো । তাদের দেশে বিভিন্ন দল বা সম্প্রদায়ের মাঝে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো । তাই তারা নিয়ম করেছিল যে, এই মন্দিরের সীমার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ করা ‘হারাম’ বা নিষিদ্ধ। সেই থেকেই এটার নাম হয়েছিল ‘হারাম শরীফ’। বিদেশে যাবার সুবাদে সে ইহূদী আর খৃষ্টান ধর্ম সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনেছিল। একটু বড় হলে সে এক ধনী বর্ষীয়ান খৃষ্টান মহিলার ব্যবসা দেখা শোনার কাজ পেলো। আর কিছুদিন পর এই মহিলার সাথে তার বিয়ে হয়ে গেল। এখন আর তার টাকার অভাব নেই। স্ত্রীর কাছ থেকে সে খৃষ্টান ধর্ম সম্বন্ধে অনে কিছু শিখেছিল। তার স্ত্রী ও শ্যালকের সাথে পরামর্শ করে সে ঠিক করলো, তারা নিজেরাই একটি ধর্ম প্রচার করবে।
তারা জানতো, তার নিজের যা শিক্ষা তাতে সে ধর্মের কথা বললে কেউ তা বিশ্বাস করবে না। তার শ্যালক জানিয়েছিল, আগের প্রধান দুইটি ধর্মের নবীরা চলে গেছে, তবে দুই ধর্মেই বলা হয়েছে আরও নবী আসার কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনা করা হলো, তারা বলবে আগের ধর্মের ধারাবাহিকতায় সে নবী হয়ে এসেছে। প্রথমে সে ঐ দুটি ধর্মের কথা বলে তাদের অনুসারীদের নিজের দলে নিয়ে আসবে, তারপর নিজের ধর্ম ঢোকাবে। তার প্রভূর নাম হবে আল্লাহ। জিব্রাইল নামের এক দূত তার কাছে তার বানী নিয়ে আসবে । আগের দুটি ধর্ম আর তার ধর্ম, এই তিনটি ধর্ম মিলিয়ে হবে ‘প্রভূর কাছে আত্মসমর্পন কারী ধর্ম বা ইসলাম’। তারা আরো ঠিক করলো, এই ব্যবসায়ের কফিনে সে শেষ পেরেক পুতে দেবে এই বলে যে, সেই হলো সর্বশেষ নবী, এর পর আর কেউ আসবে না। স্থির করা হলো, সে একটা নির্জন স্থানে গিয়ে সে কিছুক্ষন থাকবে, তারপর একটা ঘোরের মতন করে সেখান থেকে ছুটে এসে বলবে, তার প্রভূ দূতের মাধ্যমে তাকে ধর্মের বানী পাঠিয়েছে। তার স্ত্রী এইগুলি অন্যদের বিশ্বাসযোগ্য করে প্রচার করবে।
প্রায় দুই দশককাল ধরে চললো এই প্রচেষ্টা। কিন্তু এতে খৃষ্টান, ইহুদী বা কুরাইশ কারো মন গলানো গেলো না। উল্লেখ করা যায় যে, একজনের কাছে শোনা কথা অন্য একজনকে বলতে গেলে কিছুটা পরিবর্তন হয়ে যায়। তার ক্ষেত্রেও তাইই হয়েছিল। যেমন, খৃষ্টান ধর্মের এক সতী নারীকে ঈশ্বরের দ্বারা সন্তানসম্ভবা করার কাহিনীটি তার জবানীতে এলো, তার প্রভূ ফু দিয়ে বা নিজের জিহবাকে লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করে এ কাজটি করেছিল । অনেক চেষ্টার পর তার নিজের কুরাইশ গোত্রের কিছু লোক তার অনুগত হয়। আসলে এরা ধর্মের আকর্ষনে নয়, বরং তার অদ্ভূত কথা শুনতে বার বার তার কাছে আসতো। এতে তাদের আত্মীয় স্বজনেরা বিরক্ত হয়ে তাদের ত্যাগ করে । তখন তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় তারা তার কাছেই আশ্রয় নিয়েছিল । স্ত্রী ধনী ছিল বলে সেই টাকায়ই তাদের খাওয়া দাওয়া চলতো । কিন্তু এভাবে তার কাছে পড়ে থাকা লোকদের আত্মীয়রা বিরক্ত হয়ে তার ক্ষতি করার ঘোষনা দিল। এই সময় তার স্ত্রী মারা গেলো। এই অবস্থায় পত্নীর আয়ে প্রতিপালিত লোকটি আর তার এই কর্মকান্ড চালিয়ে চালিয়ে যেতে সাহস পেলো না। সে তার স্বল্প সংখ্যক শিষ্য শিষ্যা নিয়ে অন্য দেশে পালিয়ে গেল ।
মদিনা নামের নতুন জায়গায় কোন চাষাবাদ ছিল না। ব্যবসাবাণিজ্য ছিল তবে ডাকাতিই ছিল প্রধান জীবিকা। ছোট ছোট মরু ডাকাতেরা বড় বাণিজ্য বহরে আক্রমন চালাতে সাহস পেতো না । আবার দলাদলির কারনে ছোট দলগুলি সঙ্ঘবদ্ধ বা বড়ও হতে পারছিল না । লোকটি ভাবলো, যদি সে তার ধর্মের মাধ্যমে এদেরকে সংঘটিত করতে পারে তাহলে তার ডাকাত সর্দার বা রাজা হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। সে দেখলো, মদিনার কিছু মানুষ ইতিমধ্যে তাকে ধর্ম প্রচারক হিসেবে মেনে নিয়েছে। সে বুঝতে পারলো, এখানে তার ধর্মের সাফল্য নির্ভর করছে এই ডাকাতদের তাদের সুযোগ সুবিধা বজায় থাকে এমন একটা ধর্ম প্রচারের উপর ।
কি ভাবে এলো- এমন উদ্ভট ও নোংরা বেহেস্ত-দোজখ?
ডাকাতরা ডাকাতি করতো সাধারন মানুষের সম্পদ। সে ঠিক করলো, যারা তার ধর্ম বিশ্বাস করবে তারা হবে ধার্মিক, আর অন্যেরা সব হবে অধার্মিক। তার ধর্মের মূল মন্ত্র হবে আল্লাহ নামের এক দেবতাকে একমাত্র দেবতা বলে মেনে নিতে হবে। সেই সঙ্গে সে (মুহাম্মদ) যে তার একমাত্র প্রতিনিধি তা মানতে হবে। মরুভূমি অঞ্চলে অল্প জল দিয়ে হাত মুখ ধোয়ার একটা পদ্ধতি চালূ ছিল। সে এই পদ্ধতির সাথে তার প্রভূর নাম যুক্ত করে এটিকে তার প্রার্থনার পূর্বে অবশ্য করনীয় হিসেবে যুক্ত করল ।
একনন “তার বিশেষ ধর্মের নামে জিহাদের মাধ্যমে তার পরিবারের জন্য সমগ্র পৃথিবী দখল করে নিতে হবে” এই গোপন মূল মন্ত্রের মাধ্যমে শুরু হলো তার প্রকল্প । যারা জিহাদ করবে তারা ‘গানি মতের মাল’ এই ধর্মীয় আইন অনুযায়ী লুন্ঠিত সম্পদ ও বন্দীদের তিন পঞ্চমাংশ পাবে । আল্লাহ পাবে এক পঞ্চমাংশ এবং সে নিজে পাবে এক পঞ্চমাংশ। মদিনার ডাকাতেরা এই নিয়ম মহা আনন্দে গ্রহন করেছিল। সে নিজে এক শ’এর বেশী অভিযানে অংশগ্রহন করেছিল। শৃংখলা রক্ষার জন্য সে কঠোর ধর্মীয় নিয়ম চালু করেছিল । যেমন, লুন্ঠিত দ্রব্যের হিসাব না দেয়া বা চুরি করার জন্য হাত কাটা, বিশ্বাস ভঙ্গের জন্য অঙ্গ হানি, ধর্মে অবিশ্বাস করলে বা ধর্ম ত্যাগ করলে গলাকাটা ইত্যাদি । আরবের বাইরে সারা পৃথিবীই তখন অন্য ধর্মের বা বিনা ধর্মের লোকের আবাস। তাই জিহাদের নামে অনন্তকাল ডাকাতি চালিয়ে যেতে কোন অসুবিধা হবার কথা নয়। বিশ্বাস পোক্ত করার জন্য সে দিনে পাচ বার দৈহিক ব্যায়াম সহ উপাসনা এবং বতসরে একমাস উপবাসের বিধান দিলো।
সে জানতো, ইহূদী আর খৃষ্টান ধর্ম পরকালে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা এরা পছন্দ করে না। সে জানতো, এই ডাকাতেরা চায়, মাংস, মেয়েমানুষ, লুতুকর্ম, মদ, দুধ, মধু, ফল, ছায়া ও ঠান্ডা পানি । তাই সে জানালো, বেহেস্তে জিহাদী ও ধার্মিকদের এসব জিনিসই দেয়া হবে। সে আরো জানালো, যারা তার ধর্ম বিশ্বাস করবে না, সর্দারকে অমান্য করবে, ধর্ম ত্যাগ করবে অথবা জিহাদে অংশ গ্রহন করবে না, পরকালে তাদের স্থান হবে দোযখে, যেখানে শুধুই আগুন।
ডাকাতদের ইহকালের স্বার্থ নিয়েও তার চিন্তা ছিল। সে জানতো, মদ খেলে মাথা ঠান্ডা রেখে তারা ডাকাতি করতে পারবে না । আর লুতুর কথা মনে হলেই তার নিজেরই কোথাও ব্যাথা লাগতো । কাজেই ইহলোকে সে এই দুইটি আইটেম বাদ দিল। মেয়েমানুষ সহজ লভ্য করার জন্য সে ধর্মীয় বিধান দিলো, পুরুষ মানুষ একসময় সর্বোচ্চ চারটি সহ যে কোন সংখ্যক মেয়ে বিয়ে করতে পারবে এবং তাদের দাসীদের ও গনি মতে প্রাপ্ত নারীদের ভোগ করতে পারবে। যে কোন সময় বিনা কারনে তারা স্ত্রীদের তালাক দিতে পারবে । তা ছাড়া জিহাদের লুন্ঠিত সম্পদ তো আছেই । । ডাকাতেরা আগে যুদ্ধ করতো সম্পদের জন্য । ডাকাতি, যা ছিলো একটি চরম অনৈতিক কাজ, তার ধর্মের বিধানে তা হয়ে গেলো জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধ, বেহেস্ত অর্জনের উপায়। সে জানতো, পুরুষকে প্রাধান্য দিতে হলে মেয়েদের অধিকার সংকুচিত করতেই হবে। মেয়েদের ইহকালে ঠান্ডা রাখার জন্য সে রাখলো তালাক, হিল্লা ইত্যাদি। সে আরো বলল, স্বামীদের খুশী না রাখলে এবং ধর্ম পালন না করলে পরকালে তাদের জন্য আছে দোযখের আগুন । পৃথিবীর অন্য ধর্মগুলি বেহেস্ত দোযখ সম্বন্ধে কিন্তু নারী পুরুষের জন্য একই বিধান।
এমন সব বাস্তবতার পরে যদি কেউ বলে, “পুরুষেরা বেহেস্তে গিয়ে , মাংস, মেয়েমানুষ, লুতুকর্ম, মদ, দুধ, মধু, ফল, ছায়া ও ঠান্ডা পানি পাবে। মেয়েরা স্বামীকে অসন্তুষ্ট করলে দোযখের আগুলে পুড়বে”, তাহলে কি স্পষ্ট বোঝা যায় না যে, একজন কেউ উত্তপ্ত মরুভূমি এলাকায় ডাকাতি পেশায় রত মানুষকে জিহাদ নামের ডাকাতিতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তাদেরকে জিনিসের প্রলোভন দেখাচ্ছে? যে কোন সৎ মানুষকে আজকের যুগে “মাংস, মেয়েমানুষ, লুতুকর্ম ও মদ”ীর লোভ দেখালে সে কি অপমানিত বোধ করবে না? একজন মেয়েকে যদি বলা হয়, তোমার কর্তব্য জিহাদী স্বামীকে সন্তুষ্ট করা এবং ধর্ম পালন করা। কর। না হলে তোমাকে আগুনে পোড়ানো হবে”- তাহলে এই ধর্ম সম্বন্ধে সে কি ভাববে?
কি ভাবে সম্ভব হলো মদিনা রাজের বহিঃবিশ্ব জয় ।
মদিনায় সাফল্যের পর তার জিহাদী নামের ডাকাত বাহিনী নিয়ে সে চলে গেল মারামারী নিষিদ্ধ বা হারাম মন্দিরের দেশে । নামমাত্র যুদ্ধ হলো। আত্মোত্সর্গকারী জিহাদীদের সঙ্গে যুদ্ধে কে জিতবে ? সেখানে তার কাজ, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা আর আরব উপদ্বীপকে অমুসলিম মুক্ত করা। এখানে দূরের ভক্তদের প্রধান পূজা দেবার জন্য তিন মাস এবং পরে আরো এক মাস সব রকম “হানাহানির জন্য নিষিদ্ধ” হিসেবে ঘোষিত ছিল ।
ন্যায় নীতিহীন লোক, বিশেষতঃ প্রভূর নামে যার নিজেরই নিয়ম বানানোর সুবিধা আছে, তার জন্য অনেক কাজই সহজ হয়ে যায়। মক্কায় এসে সে বিভিন্ন গোত্র এবং দলের সাথে অনাক্রমন চুক্তি স্বাক্ষর করে । কলে সে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু সময় পেয়ে যায়। এরপর সে পুরানো সকল চুক্তি বাতিল করে ঘোষনা করে, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর এখানে তার ধর্মের লোক ছাড়া কেউ বাস করতে পারবে না। মৃত্যুর ভয়ে মানুষ তার ধর্মগ্রহন করে। নিয়ম করা হয়, জিহাদ বা ব্যবসা থেকে তাদের যা আয় হবে তা থেকে বার্ষিক শতকরা আড়াই ভাগ ট্যাক্স বা জাকাত দিতে হবে । সমস্যা দেখা দেয় খায়বার নামের এলাকায়। এখানকার লোকেরা কৃষিকাজ করতো বলে তাদের পক্ষে জিহাদে অংশগ্রহন সম্ভব ছিল না। তাদের আয়ের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ ট্যাক্স ধার্য্য করা হয়। এই ট্যাক্সের নাম জিজিয়া । পরবর্তী কালে কিছু ইসলামী শাসক অমুসলিমদের জন্য এই জিজিয়া কর প্রবর্তন করে। প্রকৃত সত্য এই যে, ইসলামে অমুসলিমদের জন্য কোন ট্যাক্স নেই । কারন এই ধর্মে এই অমুসলিমদের বেচে থাকারই কোন অধিকার ছিল না। তার ধর্মে আরো বিধান রাখা হয় যে পৃথিবীর যে কোন স্থানে তার ধর্মের লোকের প্রার্থনা করার অধিকার আছে। তার রাজধানী শহরের উন্নয়নের জন্য সে ঘোষনা করে যে, তার ধর্মের সকল লোকের জীবনে কমপক্ষে একবার এই স্থানে ভ্রমন বা হজ করা বাধ্যতামূলক ।
তার দলে এখন বিপুল জিহাদী। তাদের জন্য কাজ দরকার। তাদেরকে কাজ দেয়া হলো, প্রথমে কাছের এবং পরে দূরের দেশগুলিতে আক্রমন চালিয়ে মুসলমান বানানো। মোহাম্মদের লেখা জিহাদী চিঠি যাতে লেখা ছিল ‘হয় মুসলমান হও, নয় মর’ ইউরোপের বিভিন্ন লাইব্রেরী ও সংগ্রহশালায় রাখা আছে।
সে দিনে পাচ বার (প্রথমে ছিল তিন বার) ব্যায়াম ভিত্তিক প্রার্থনা এবং বছরে একমাসের উপবাস এর নিয়ম প্রবর্তন করে। সে জানতো, এর মাধ্যমে মানুষের ‘ইমান’ পোক্ত হবে। জীবনের প্রথম ষোল সতের বছর এই গুলি করার পর সবারই ধারনা হয়, “এগুলি মিথ্যা হলে তো আমি পাঠার মতন আমার জীবনের এই মূল্যবান সময় ও শক্তি নষ্ট করেছি।“ কেউই নিজেকে পাঠা ভাবতে চায় না। ঈমান পোক্ত হবার মূল কারন এইটি। যারা একবার এই ধর্মে ঢুকেছে তাদের বেরিয়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করতে ধর্মত্যাগীদের জন্য করা হয় গলা কাটার বিধান। এমন ধর্মের মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে, এতে আশ্চর্যের কি আছে?
আগে মরু ডাকাত বাহিনী ডাকাতি করতো, এখন আত্মোতসর্গকারী ডাকাত বাহিনী ‘মহান ধর্মের” প্রচারের নামে বাইরের দেশ আক্রমন শুরু করলো। তারা ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়ায় অনেক রাজাকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিল। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায় শান্তির ধর্ম প্রচারের নামে তারা গনহত্যা চালিয়ে একটির পর একটি দেশ দখল করতে থাকে। এই সব রাজ্যের শিক্ষিত সেনাবাহিনী মূলতঃ আইন শৃংখলা বজায় রাখতো বা অন্য রাজ্যের শিক্ষিত সৈন্যের সাথে যুদ্ধ করতো। ন্যায়নীতি হীন ডাকাত বাহিনীর সাথে যুদ্ধে তারা পরবে কেন? ডাকাত আর শিক্ষিত সৈন্যের অসম যুদ্ধে ডাকাতের জয়কেই ইসলামী ইতিহাসবিদগন ধর্মের শক্তি হিসাবে উল্লেখ করেছে। তারা রাজাদের মানুষ সৈন্য আর ধর্মের নামে আত্মোতসর্গকারী নরপশুদের পার্থক্যটা পরিষ্কার করে নি। রাজার সৈন্যদের যুদ্ধ ছিল শুধুমাত্র সৈন্যদের সঙ্গে, আর সেখানে সৈন্য হত্যা ছিল জয়ের প্রচেষ্টায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা মাত্র । অথচ ধর্মোন্মাদ সৈন্যদের ক্ষেত্রে যুদ্ধ মানেই ছিল গনহত্যা, সাধারন মানুষদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে, লুট পাট করে, মেয়েদের উপর পাষবিক অত্যাচার করে আক্রান্ত পক্ষের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া। সেখানে যুদ্ধজয় মানেই ছিল গানি মতের মাল অর্থাৎ বিজিত সৈন্য ও সেই অঞ্চলের সকল মানুষ ও সম্পত্তির মালিকানা লাভের উল্লাস। আর যুদ্ধে মারা যাওয়া মানে ছিল বেহেস্তে গিয়ে হুর পরী ও অন্য সব জিনিস ভোগ করা । এই সব কিছুর লোভ একটা মানুষকে যে ধরনের উন্মাদ এবং হিংস্র জন্তুতে পরিনত করতে পারে, পৃথিবীর কোন রাজার সৈন্য বাহিনীর পক্ষে তেমন হবার সুযোগ কখনই ছিল না। আর এটাই ছিল এই “ধর্মাশ্রয়ী রাজ্ত্ব বিস্তার লোভী” রাজাদের ‘অভাবনীয়’ সাফল্যের মূল কথা।
কি ভাবে সম্ভব হলোঃ এত দীর্ঘ সময় টিকে থাকা।
হ্যা, প্রায় চৌদ্দ শ’ বছর টিকে আছে বটে, তবে সন্মানের সাথে নয় । উন্নত বিশ্বে আজকাল যেখানে সবাইকে সমান নজরে দেখা হয়, সেখানে এই ধর্মের লোক জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। তাদের বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করা হয়, কোন কোন স্থানে ঢুকতে দেয়া হয় না, এমন কি প্লেন থাকে নামিয়েও দেয়া হয়। অন্য ধর্মের লোকেরা তাদের প্রচারকের স্বভাব চরিত্র বা ধর্মের খুটি নাটী নিয়ে যেভাবে হাসাহাসি করে । তবে ভদ্রতার খাতিরে তাদের দেখতে পেলেই এই আলোচনা বন্ধ করে দেয়।
মূলতঃ একজন ব্যাক্তির সারা পৃথিবীকে তার পরিবারের সম্পত্তি করার উদ্দেশ্যে ডাকাত দলের কর্মকান্ড অব্যাহত রেখে তাদের স্বার্থে প্রনীত “অত্যন্ত নীচু মানের ধর্মের নামে একটি রাজনৈতিক মত বাদ” পৃথিবীর বুকে প্রায় চৌদ্দ শ’ বছর ধরে টিকে আছে, এটা ভাবলে একটু অবাকই লাগে। মজার কথা হলো, নিজের পরিবারের স্বার্থে প্রনীত হলেও এই লোকটির পরিবার টেকে নি। তার কোন পুত্র সন্তান ছিল না। জামাইকে নিয়ে তার আশা ছিল। কিন্তু আল্লাহ তার আশা পূর্ন করে নি। তার ধর্মে বিধান ছিল, প্রথমে গনি মতের মাল, পরে যাকাত এবং জিজিয়া হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদের এক পঞ্চমাংশ পাবে আল্লাহ, এক পঞ্চমাংশ তার পরিবার আর বাকীটা, প্রথমে ছিল জিহাদীরা পাবে, পরে ঠিক হয়, তা বাইতুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাবে। তার মৃত্যুর পর তার জামাই ঝগড়া করে ইরান চলে যায়। এই জামাইএর পুত্ররা রাজত্ব দাবী করতে গেলে দুজনেই নিহত হয়। তার মৃত্যুর পর তার ‘হাওয়া থেকে পাওয়া’ বানী সঙ্কলন করতে গেলে দেখা গেল, সেখানে ভাগাভাগীর দলিলটিই নেই। সংকলকের দাবী এটি ছাগলে খেয়ে ফেলেছে। যারা তা বিশ্বাস করে নি তারা সংকলককে হত্যা করে। পরিবারতন্ত্রের প্রবাহ এখানেই শেষ।
এদিকে জামাই ঐ ভাগাভাগির দলিল সহ ধর্মের মূল পুস্তক এর ভিত্তিতে ইরান থেকে শুরু করে এই ধর্মের নতুন সংস্করন। সেখানে শুরু হয় পরিবারতান্ত্রিক শাসন। তবে তা ইরানের বাইরে আর তেমন বিস্তৃত হতে পারে নি। এদিকে ডাকাততন্ত্রের এই ধর্মের বেচে থাকার উপায়ই হচ্ছে, জিহাদ বা আক্রমন। এই আক্রমন দূর দুরান্তে রাজ্য দখলে সফল হলেও এই রাজ্যগুলি আর “হারাম শরীফ-কাবা-মক্কা” কেন্দ্রের অধীনে থাকলো না, বরং বিভিন্ন ডাকাত সর্দারেরা নিজেরাই এগুলির রাজা হয়ে বসলো । এই রাজাদের টিকে থাকার মূলমন্ত্র ছিল দুটি ঃ (১) তাদের অস্ত্র শক্তি এবং (২) তারা যে এই ধর্মকে প্রচন্ড শ্রদ্ধা করে এটা দেখানো। এটার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল আরবের সব আইন চালু করা। নানা কারনেই আর তা করা যাচ্ছিল না। এসব দেশে জিহাদী আয়ের অর্থনীতি আর চালানো যাচ্ছিল না। আবার হজের আয় ছিল না। আবার যে সব রাজ্য তারা দখল করেছিল সেখানে ব্যাবসার পাশাপাশি শিল্প, আহরন, রুপান্তর ইত্যাদি অর্থকরী আইটেম চালু থাকায় জিহাদের প্রয়োজনও ছিল না। সেই সঙ্গে সকল নাগরিককে ধর্মান্তরিত করাও বাস্তব সম্মত ছিল না। এমতাবস্থায় এসব দেশে অমুসলিমদের সহ্য করার মনোভাব ও মানিয়ে নেবার পরিবেশ তৈরী হয়। এই প্রেক্ষিতে কৃষিজীবিদের জন্য উদ্ভাবিত জিজিয়া কর অমুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, যদিও তা তাদের সংখ্যা কমিয়ে দেয়।
সংক্ষেপে বলি, এভাবে চলতে চলতে কিছুটা পরিবেশ, কিছুটা সভ্য মানুষের প্রভাব সব কিছু মিলিয়ে এই ধর্ম রাষ্ট্রীয় ভাবে যে পর্য্যায়ে আছে তা হলো, শ্বশুরের প্রবর্তিত একক ধর্মের দুটি একনায়কতান্ত্রিক দেশ (সৌদী আরব এবং ব্রুনেই), জামাইয়ের প্রবর্তিত কিঞ্চিত পরিবর্তিত একক ধর্মের একটি পরিবার তান্ত্রিক দেশ (ইরান), শ্বশুরের প্রবর্তিত একক ধর্মের মানুষের বেশ কয়েকটি কিছুটা উদার নৈতিক একতান্ত্রিক দেশ, এই ধর্মের লোক বেশী এমন কয়েকটি গনতান্ত্রিক দেশ যার একটিতেও গনতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হয় নি। পৃথিবীতে উন্নত দেশের যে মানদন্ড তৈরী হয়েছে তার বিচারে এদের একটিও উন্নত দেশ নয়। এই ধর্মের মূল নীতির সাথে গনতন্ত্রের প্রকাশ্য সঙ্ঘাতের কারনে এই ধর্মের সবগুলি দেশকেই বলা যায়, “গনতন্ত্রের শত্রু দেশ”।
এর বাইরে পৃথিবীতে রয়েছে গনতান্ত্রিক এবং উন্নতদেশ সমূ্হ, গনতন্ত্রের কারনে স্বাভাবিক কারনেই যেগুলি ধর্ম নিরপেক্ষ । নানা কারনে জিহাদী ধর্মটির কিছুটা চারিত্রিক পরিবর্তন হলেও, এমনকি গনতান্ত্রিক দেশে বসবাসরত তাদের অনেক অনুসারীর এখনও চারিত্রিক পরিবর্তন হয় নি। তারা তাদের ধর্মীয় দেশগুলির উস্কানী ও অর্থ সাহায্যে ( এটি হতে পারে তাদের ডাকাতি-জিহাদের পরিবর্তর্তিত প্রোগ্রাম) সব সময় গনতান্ত্রিক দেশগুলির ক্ষতি করার চেষ্টায় রত।
মুসলিমদের মুল শক্তি তাদের সন্তান উৎপাদন । এটা ছাড়া তাদের কিছুই নেই । গত ১০০ বছর তারা কোন যুদ্ধ জিতে নি । শুধু তুরকি ২ টা সাধহারন যুদ্ধ জিতেছে ইসলামকে ফিনিস করতে হলে তাদের বাচ্চা নেওয়া থামান নয়ত তাদর চেয়ে বেশি বাচ্চা নিন ।। অথবা তাদের দেশগুলোতে আক্রমণ করে সব ধ্বংস করুন ।। এবং দুরবিক্ষ লাগান ।। সামনে ১০০ বছরের মধ্যে মুসলিমদের ২০% বানাতে হবে । আর ২২০০ এর মধ্যে ৫% ।। আর ২৫০০ এর মধ্যে ইসলামকে ফিনিস করে দিতে হবে । মানব সভ্যতার জন্য এটা করতে হবে । ইসলাম মানেই মাণবতার শত্রু ।
মৌলিক সমস্যার স্বরূপ উৎঘাটন
আজকের পৃথিবীতে মোট প্রায় ৭৫০ কোটী মানুষের মধ্যে জিহাদী ধর্মের মানুষ আছে ১৬০ কোটী (২১%), আর অন্য ধর্মের ও বিনা ধর্মের মানুষ আছে ৫৮০ কোটী (৭৯%)। এই দুই ধরনের মানুষ প্রধানতঃ ছয় ধরনের দেশে বসবাস করে। পৃথিবীর মানুষকে ২১ ও ৭৯ এই দুইভাগে বিভক্ত করে দেখানোর কয়েকটি বিশেষ কারণ আছে। যেমনঃ
(১) পৃথিবীর মানুষ তাদের সীমিত ৬০-৮০ বৎসরের জীবন শান্তিতে কাটাতে চায় । অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং একনায়কতন্ত্রের ব্যর্থতার পর এখন যে কোন দেশের পক্ষে শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক শাসন পদ্ধতি হচ্ছে গনতন্ত্র। গনতন্ত্রে রাষ্ট্রের প্রতিটি মানূষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। নির্বাচিত সরকার দেশের সম্পদের সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে তার সকল নাগরিকের সাধারন প্রয়োজন (যেমন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান ও কর্মসংস্থান) এবং স্বীকৃত মানবাধিকার রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত।
(২) সরকারের যদি কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি আকর্ষন বা ঘৃনা থাকে তাহলে তাদের পক্ষে গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে পৃথিবীর অনেক ধর্মের লোকের পক্ষে ধর্মীয় ভাবে নিরপেক্ষ আচরন করা সম্ভব হলেও জিহাদী ধর্মের লোকের পক্ষে এখন পর্য্যন্ত তা সম্ভব হয় নি। মূলতঃ এই ধর্মের ইতিহাস ও মূলনীতি পর্য্যালোচনা করলেই এর কারণ জানা যায়।
এই প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর সকল ধর্মই গনতন্ত্রের পথে কম বেশী বাঁধা হলেও জিহাদী ধর্মটি গনতন্ত্রের প্রমানিত শত্রু। এই আলোকে আমরা যদি বিভিন্ন রাষ্ট্রকে ভালো থেকে খারাপের মানে ভাগ করি তাহলে নিচের চিত্রটি পাওয়া যাবে।
০১। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে সকল ধর্মের এবং ধর্মহীন নাগরিকের সমান অধিকার। পৃথিবীর সকল উন্নত রাষ্ট্র এই গ্রুপে পড়ে। তবে সাম্প্রতিক কালে এসব দেশে দেশীয় এবং বহিরাগত জিহাদী সন্ত্রাসীদের দমন করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
০২। গনতন্ত্রের নামে অগনতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে জিহাদী ধর্মের লোক সংখ্যালঘু , এবং যেখানে রাষ্ট্র সাধারন ভাবে কোন ধর্মকে উতসাহিত করে না। যেমন, চীন, জাপান, উঃ ও দঃ কোরিয়া, মায়ানমার ইত্যাদি। তবে এসব দেশে প্রাচীন ধর্মস্থানকে পর্য্যটনের আয় হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং জিহাদী ধর্মকে দমন করা হয়।
০৩। গনতন্ত্রের নামে অগনতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে জিহাদী ধর্মের লোক সংখ্যালঘু , এবং যেখানে রাষ্ট্র সাধারন ভাবে সকল ধর্মকে উতসাহিত করে । যেমন, ভারত ও শ্রীলংকা।
০৪। গনতন্ত্রের নামে অগনতান্ত্রিক রাস্ট্র যেখানে জিহাদী ধর্মের লোক সংখ্যাগুরু, এবং যেখানে রাষ্ট্র সাধারন ভাবে সকল ধর্মকে সহ্য করে । যেমন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশীয়া।
০৫। গনতন্ত্রের নামে অগনতান্ত্রিক রাস্ট্র যেখানে সকল নাগরিক জিহাদী ধর্মের , এবং যেখানে কেবলমাত্র জিহাদী ধর্মের মানুষের স্বার্থ দেখা হয়। যেমন, ইরাক, ইয়েমেন, কুয়েত, মালদ্বীপ ইত্যাদি।
০৬। একনায়ক শাসিত জিহাদী ধর্মের লোকদের জন্য রাষ্ট্র, যেখান থেকে সারা বিশ্বে জিহাদ চালানোর জন্য উৎসাহ ও মদত দেয়া হয়। যেমন, সৌদী আরব, ইরান ও ব্রুনেই।
উল্লেখ করা যায় যে, যেখানে সকল ধর্মের মানুষ গনতান্ত্রিক দেশ গঠন করতে পারে, সেখানে জিহাদী ধর্মের বা এমনকি জিহাদী সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের কোন দেশ তা পারে না। শুধু তাই নয়, এরা সন্ত্রাস প্রেরনের মাধ্যমে অন্য দেশের গনতন্ত্র ধংশ করার চেষ্টা করে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই ধর্মের জন্মই হয়েছে জিহাদের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবী দখল করার জন্য। এখন তারা যখন বুঝে গেছে, তা আর সম্ভব নয় তখন তারা ধর্ম সম্প্রসারনের কিছু বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। যেমন, (১) দ্রুত সন্তানসংখ্যা বৃদ্ধি, অভিবাসন বা ধর্মান্তরের মাধ্যমে জিহাদী ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা, (২) অ-জিহাদী দেশে জিহাদী ধর্মের উপাসনালয়, ধর্মীয় স্কুল ও ছাত্রাবাস স্থাপন করা, (৩) সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়ে ত্রাসের মাধ্যমে অ-জিহাদী দেশের সরকারকে তাদের ধর্মের সহায়ক ব্যবস্থা গ্রহনে বাধ্য করা ইত্যাদি।
এদিকে জিহাদী ধর্মকে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য বিভিন্ন দেশ যে সব ব্যবস্থা করেছে তার মধ্যে আছে, (ক) টেকনোলজীর মাধ্যমে তাদের যাতায়াত ও কার্য্যকলাপ নিয়ন্ত্রন করা (যেমন, যুক্তরাষ্ট্র), (খ) তাদেরকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া (যেমন, মায়ানমার), (গ) তাদেরকে ক্যাম্প-এ বন্দী করে রাখা (যেমন- চীন) ইত্যাদি। এই যখন ছিল সামগ্রিক অবস্থা তখন বর্তমান শতাব্দীর শুরুতেই এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা এই জিহাদী ধর্মটির ভিত্তিমূল কাপিয়ে দিয়েছে।
এমন পোলারে বাঘে খাইলো কেমনে ?
আগের এপিসোডে “বর্তমান শতাব্দীতে এমন ঘটনা ঘটেছে যা ধর্মটির ভিত্তিমূল কাঁপিয়ে দিয়েছে।“ আজকের আলোচনা, সেই ঘটনা। ইসলামের জিহাদী বাহিনী এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ আক্রমন করতে থাকে। ঐ বিশাল সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রন তখন আর মক্কা থেকে করা সম্ভব ছিল না। জিহাদী সেনাপতিরা নিজেরাই সব নিয়ন্ত্রন হাতে নিয়ে বিজিত দেশগুলির খলিফা হয়ে পড়ে। তারা এখন নিজেরাই আইন তৈরী করতো। তবে ইসলাম বা এর প্রচারকের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু করতে সাহস পেতো না। কারণ এই ধর্মের প্রতি আনুগত্যই ছিল তাদের রাজ্য শাসনের মূল ভিত্তি।
এই কারনে মোহাম্মদের মৃত্যুর উনিশ বছর পর থেকে পরবর্তী প্রায় ৩০০ বছর এই ধর্ম সম্বন্ধে যে সব বই লেখা হয়েছিল রাজারা কোন রকম পরিবর্তন করতে সাহস করে নি। এই বইগুলি হচ্ছে- (১) কোরান , (২) হাদিস এবং (৩) মাগাজী এবং (৪) সিরাত । এই বইগুলির মধ্যে এমন অসম্ভব, পরস্পরবিরোধী, উদভট, অবাস্তব এবং অতিরঞ্জিত কথা আছে যা যে কোন বুদ্ধিমান লোকই বাদ দিতে চাইবে । কিন্তু উপরে বর্নিত কারনে শত সহস্ত্র বৎসর ধরে সেগুলি অবিকৃত আছে এবং এখন ক্লাসিক বইএর মর্য্যাদা লাভ করেচে । এই গুলি আরবী ভাষায় লেখা । অন্য ভাষাভাষীরা এগুলি জানতো আরবী ভাষা জানা লোকের তরজমায় । মজার ব্যাপার, তরজমাকারীরা সেগুলি শ্রোতাদের মন জয় করার জন্য বিকৃত ভাবে পরিবেশন করতো। ফলে অন্য ভাষার লোকদের মনে এই ধর্ম সম্বন্ধে এক ভ্রান্ত এবং ভালো ধারনার সৃষ্টি হয়। আবার দুর্বোদ্ধতার সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে কোরানের আয়াতগুলি সময়-অনুক্রম অনুযায়ী সাজানো হয় না। সৌদী আরব এই বইগুলি বাংলায় অনুবাদের জন্য প্রচুর অর্থ প্রদান করে। সরকার ধার্মিক ব্যাক্তিদের সহায়তায় এগুলির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করে। এই গুলি এখন সারা পৃথিবীর মাদ্রাসা, মসজিদ, ধর্মীয় লাইব্রেরী এবং ব্যাক্তিগত সংগ্রহে আছে। আর এর পিডিএফ কপি যে কত কম্পিঊটার, ট্যাব আর স্মার্ট মোবাইলে আছে তার কোন ইয়ত্তা নাই । এই সঙ্গে এসেছে সময় অনুক্রম মেনে তৈরী করা কোরান ।
এগুলি পড়ে আর এর অর্থ বুঝে ধার্মিকদের চক্ষু চড়ক গাছ। অন্ধ ধার্মিকেরা বলছে, “এটা কিছুতেই হতে পারে না”। কিন্তু পরক্ষনেই শিক্ষিত ছেলেরা কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে মূল বই পড়ে সত্যটা বলে দিচ্ছে। এই বইগুলি স্পষ্ট বলে দেয়, মোহাম্মদ যে নতুন ধর্ম প্রচার করে তাতে সে নিজেকে ইহুদী এবং খৃস্টান ধর্মের পরবর্তী এবং শেষ নবী হিসেবে ঘোষনা করে । দশ বছর এই কাজে সফল না হওয়ায় সে ডাকাতের দেশ মদিনায় চলে যায়। সেখানে সে ডাকাতেরা পছন্দ করবে এমন পরকাল (বেহেস্ত) যেখানে থাকবে মদ, মাংস, মেয়েমানুষ, শিশু, মধু, দুধ, ছায়া, ঠান্ডা পানি ইত্যাদি, এবং ইহকালে বিধর্মীদের সম্পদ লুন্ঠন ও তাদের হত্যা করার নিয়ম বা জিহাদ ঘোষনা করে। বলা হয়, জিহাদে প্রাপ্ত সম্পদ ও বন্দীদের তিন পঞ্চমাংশ তাদেরকে দেয়া হবে। মেয়েদের বিষয়ে বলা হয়, ধর্ম পালন না করলে তারা দোযখের আগুনে পুড়বে। নিজের জন্ম এবং পিতৃ সম্পত্তি না পাওয়ার দুঃখ থেকে তাকে পুত্র বধুকে বিবাহ এবং অনাথের সম্পত্তি না পাওয়ার মত অদ্ভুত আইন চালূ করতে হয়। নিজের পুত্র না থাকায় তার পারিবারিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল হয় নি। তার প্রচারিত ধর্মের সকল তথ্য এখন স্মার্টফোন আর নেট আছে এমন যে কোন বাংলাভাষীর হাতের একেবারে কাছে। সৌদী আরব ও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় যে সত্য আজ থলের বাইরে বেড়িয়ে পড়েছে তাকে আর থলেতে ঢোকানো যাবে না । বরং নাড়াচাড়া করলেই তা থেকে ভুরভুরে গন্ধ বের হয়। তাই বলা হয়েছিল, “বর্তমান শতাব্দীর শুরুতেই এমন ঘটনা ঘটেছে যা জিহাদী ধর্মটির ভিত্তিমূল কাঁপিয়ে দিয়েছে।“ এই কাঁপন ভিত্তিকে শক্ত করবে না ভেঙ্গে ফেলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
(জিহাদী ধর্মের পর্দা উন্মোচন- শেষ)
“বানান ভুল বা তথ্যগত ভুল কেউ পেলে বিনা দ্বিধায় সংশোধন করে দিন। আপনার সংশোধনী সঠিক হলে কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করা হবে ”
কোথায় এবং কিভাবে এডিট করলে অশুদ্ধ বানান শুদ্ধ করা সম্ভব???
এখানে কোরআন ঠিক আছে লেখক তার মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে। ভাই ১ লিটারের বোতলের মুখে যদি আজ্ঞুল ঢুকান তাহলে কি তলা খুজে পাবেন??? তলা খুজে না পেলে কি বলবেন তলা নেই???? তেমনি আপনি বুঝতে ভুল করলে কিংবা আপনার বিজ্ঞান অসামর্থ্য হলে কেন বলেন কোরআন ভুল??? নিজের মূর্খতা ও বিজ্ঞানের অসামর্থ্যতা কেন স্বীকার করেন না??? আপনি বললেন ফাতেহা পড়লে মনে হয় না আল্লহর কথা??? আমরা আল্লাহর কাছে কি চাইব সেটা ফাতেহা দ্বারা আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছে। আর সূরা গুলো আমরা পাঠ করি তাই এগুলো আমাদের কথার সাথে মিল রেখে আল্লাহ নাযিল করেছে আর এর গভীরে আরো কি আছে আল্লাহ ভাল জানেন।
বিকল্প সার্ভারের ব্যবস্থা করুন। আমরা যেন নিয়মিত পড়তে পারি। মানুষ সচেতন হচ্ছে। মেীলবাদীদের মাথায় হাত। সংশয় এর বিরুদ্ধে লেগেছে। বিপ্লবী দমনের চেষ্টা যুগ যুগ ধরে করা হয়েছে। বিপ্লব থেমে থাকেনি। আপনারা সংগ্রাম চালিয়ে যান। নতুন প্রজন্ম আপনাদের মাধ্যম্যে সচেতন হবে। নতুন প্রজন্মকে যেন মেীলবাদ গ্রাস করতে না পারে। সে চেষ্টা আপনাদের চালিয়ে যেতে হবে। আপনারা সফল হবেন। ধন্যবাদ।
ইসলাম হচ্ছে দিবালোকের মত, কিছু সত্য কিছু মিথ্যা দিয়ে বানোয়াট তথ্য পেশ করে কি সত্য ঢাকা দেয়া যায়? কখনোই না…… তোমাদের মেহনত কোন কাজে আসবে না…. একেবারে দূর্বলতম ঈমানদার ও তোমাদের মিথ্যাচার ধরে ফেলতে পারে অনায়াসে…. যতদিন গড়াবে দলে দলে মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আসবে
Amin
এখানে কোথায় মিথ্যা বলা হয়েছে তা প্রমাণ করুন
প্রমাণ ছাড়া আজে বাজে কথা বলে শুধু নিজের
মনেই শান্তনা দিতে পারবেন। এর বেশি কিছু না
যুক্তিগুলো পরে বোঝা যায় আপনি অনেক পড়ালেখা করেছেন কিন্তূ এটাও বোঝা যায় আপনি সত্যানুসন্ধানী নন কারন সব যুক্তিই আপনার একপেশে এবং যে যুক্তিবিদ্যা জানে সে এগুলোর অসারতা বুঝতে পারে । গবেষনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ বিষয় হলো সত্য খুজতে হলে নিরপেক্ষ হতে হয় । অর্থাৎ Bias হওয়া বা কোন fixed idea নিয়ে শুরু করলে সত্য থেকে ক্রমশ্য দুরে সরে যাওয়ার পথ তৈরী হয়। পরিষ্কার বোঝা যায় কোন কারনে ইসলামের উপর আপনি চটে আছেন । তাই সত্য না খুজে নিজের ধারনার পক্ষে যুক্তি তৈরী করেছেন যার অধিকাংশই অপরিপক্ক ও শিশু সুলভ ।
এটাও স্পষ্ট আপনার যুক্তির প্রয়োজনে যেটুকু তথ্য তাই এনেছেন; যে তথ্য সত্যকে বুঝতে সাহায্য করতে পারতো তা হয়ত জানেন না অথবা ইচেছ করে এড়িয়ে গেছেন। আমি আপনার জন্য দঃখিত কারন যে পরিশ্রম করেছেন বা করছেন এর দ্বারা আপনি অনেক বড় আল্লাহর ‘ওলি’ হয়ে যেতে পারেন ! আল্লাহ আপনাকে কবুল করুন !আমিন !!
আপনি যেসব লিখেছেন সেগুলি আপনার মন গড়া দাবি মাত্র , প্রমান নয় | আপনি একটাও রেফারেন্স বা প্রমান দেখাতে পারেননি আসিফের কোন তথ্যটা মিথ্যা কোন যুক্তিটা একপেশে এবং কেন একপেশে ? তাছাড়া আসিফ ভাই নিজের বানানো কোনো মতামত বা রেফারেন্স দেননি বা নিজিস্ব কোনো ব্যাখ্যা দেননি , তিনি স্বীকৃত তাফসীর বা দলিলগুলি থেকে প্রমান দিয়েছেনা যা নাদ্যিকদের বানানো নয় |প্রখ্যাত ও আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ক্লাসিক যুগের ইসলামী স্কলারদের লেখা থেকে রেফারেন্স দিয়েছেন | আপনি পারলে ভুল ধরিয়ে দেন যদি রেফারেন্স ভুল বা মিথ্যা থাকে | মিথ্যাচার করছেন কেন ? নিজেকে চরম অন্ধ আর মূর্খ হিসেবে প্রমান দিয়েছেন | মুমিন মানেই মূর্খ ও অন্ধ | আসলে আপনার পূর্বধারনার সঙ্গে মেলেনি বলেই এখন তালগাছটা আমার , আবার আপনি নিরপেক্ষতার .দোহাই দিচ্ছেন ! আপনারা আসলে চরম ভন্ড | নিরপেক্ষতার মানে কি আপনি বোঝেন ? আপনি কি রেফারেন্সগুলো একবারও যাচাই করে দেখেছেন ? আমি নিশ্চিত আপনি দেখেননি কারণ আপনার মনে রায় আগেই ঠিক করা আছে যার নাম অন্ধ বিশ্বাস ! আবার অন্যকে নিরপেক্ষতার সবক দেন ! সত্যি আপনাদের ভণ্ডামির তুলনা হয়না !
এ সব হদিস নামের ভন্ডামী বা ভন্ডদের কথাবার্তা! কোরান তো কোরান !! আপনার রেফার করা কথিত হাদিস ইসলামের কোন কথা নয় !! এ সব ওমুক তমুকের কথা !! এ সব কিছু ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত নয়!! হাদিস হলো এক মাত্র কোরান যেটা আল্লার বাণী হিসাবে আমি বিশ্বাস করি !! আমি মুসলিম হিসাবে, শুধু মাত্র এবং এক মাত কোরানকেই বিশ্বাস করি !! আপনি মানতে পারেন না সেটা আপনার বিষয় !! কথিত সংগৃহিত ও সংকলিত হাদিস কি এবং কেন সেটা আপনি যেমন জানেন আমিও তেমিনী জানি !! কথিত হাদিস গুলো কোন ধর্মীয় কোন গ্রন্থ নয়, বরং আাল্লাহ ও তার রসুল সঃ কে প্রশ্নবিদ্ধ কল্পে তৈরী কৃত জাল বা ভূয়া ডুকুমেন্ট ! যার দোকানদার নামধারী আলেম সমাজ এমনকি আপনার মতো মহাঞ্জানী গন!! কোরান বোঝার ক্ষমতা থাকলে তো বুঝবেন!! সমালোচনা করছেন করেন, তাই বলে সবাই কে মূর্খ বা বোকা ভাবার কোন কারন নাই !! ধন্যবাদ ভাল থাকবেন এবং ভাল রাখবেন !!
আপনি আগে বলুন যে একই বাক্যের মধ্যে তুমি আর আমি কি করে থাকে ? পৃথিবীর কোনো ভাষার কোনো ব্যাকরণের নিয়মে কি একই বাক্যে একাধিক কর্তা ব্যবহৃত হতে পারে ? আল্লাহ কি ব্যাকরণ জানেন না ? নাকি কোরানের রচয়ীতা মুহম্মদ ব্যাকরণ জানেন না ? কোনটা সত্য ?
নাস্তিকরা যে একদমই মুর্খ হয় এই লেখা তার প্রমান।
আল্লাহ কুরানে নিজেই কেন নিজের নাম ধরে বলেছেন এতেই আপনার মনে হল কুরান বিকৃত গ্রন্থ৷
ব্যপারটা একদমই সহজ। ছোট বেলায় আপনার বাবা আপনাকে বাবা ডাক শেখানর জন্য বাবা, বাবা বলে ডাকতেন। এর মানে কি আপনি তার জন্মদাতা বাবা হয়ে গেলেন? এখন আপনি যদি উল্টা বুঝে আপনার বাবাকে আপনার সন্তান মনে করেন তাইলে তো আপনি পাগল ছাড়া কিছু না।
তেমনিভাবে আল্লাহ কুরানে তার বান্দাদেরকে কে উনার নিজের সম্মন্ধে বোঝাতে গিয়ে নিজের নাম ধরে আয়াত অবতীর্ন করেছেন।
সহজ বিষয়টা বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে তেজপাতা।
রেফারেন্স তো আরো অসংখ্য দেওয়া হয়েছে , প্রায় ১০৪ টা দলিল বা প্রমান সেগুলি নিয়ে কিছু বলছেন না কেন ? আর আপনি কি আল্লার মনের মধ্যে হান্দাইছিলেন নাকি যে আপনি জেনে গেলেন যে আল্লা বোঝানোর জন্য আল্লা বলেছে ? এটা তো আপনার মন গড়া ভাষ্য | আল্লা যে তাই বুঝিয়েছে সেটার কোনো রেফারেন্স বা তাফসীর দেখতে পারবেন ? আপনার ব্যক্তিগত মতামত কে মানবে ?
নাস্তিকরা মূর্খ হয় আর আপনারা মুমিনরা যে আদিম গুহাবাসী মানুষ–মগজের বিবর্তন হয়নি ভালো করে সেটা বুঝতে পারেন না : সূরা ফাতিহা যদি আল্লাহ প্রার্থনা শেখানোর জন্য অভাবে দিয়ে থাকেন তাহলে নিচের সূরাটিতে বক্তা কে
“তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।
কোরআন ৫৮ঃ২২” প্রশ্ন : আল্লাহ কাকে তিনি বলে সম্মোধন করছেন ? আল্লারও কি তাহলে আল্লা আছে নাকি ? আল্লার আল্লাটা কে তাহলে ?
“এগুলো দ্বারা বড় কোন পরিবর্তন ঘটছে না। যেমন হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল করা হচ্ছে না।”
Osman is right. Quoran is well preserved.
Fatimah bint Muhammad, (Friday, 20 Jumada II (10 September AD 605) – 14 Jumada I AH 11 (5 August AD 632))
আর হযরত মুহাম্মদ সা: মৃত্যু 8 June 632 (aged 61–62)Medina, Hejaz, Arabia
তাহলে হাদিস গুলোতে Fatimah bint Muhammad,
গ্রন্থের নামঃ সুনানে ইবনে মাজাহ
হাদিস নম্বরঃ [1629]
অধ্যায়ঃ ৬/ জানাযা
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬/৬৫. নাবী ﷺ -এর ইনতিকাল ও তাঁর কাফন-দাফন।
৩/১৬২৯। আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যু যন্ত্রণা তীব্রভাবে অনুভব করেন, তখন ফাতেমাহ (রাঃ) বলেন, হায় আমার আব্বার কত কষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আজকের দিনের পরে তোমার আব্বার আর কোন কষ্ট থাকবে না। তোমার আব্বার নিকট এমন জিনিস উপস্থিত হয়েছে, যা কিয়ামাত পর্যন্ত কাউকে ছাড়বে না।
সহীহুল বুখারী ৪৪৬২, আহমাদ ১৬০২৬, সহীহাহ ১৬৩৮, মুখতাসার শামাযিল ৩৩৪, বুখারী শেষ বাক্য বাদ দিয়ে। তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মৃত মানুষ কি করে বলে এগুলো বুঝলাম না।
আরো ভালো করে যাচাই করতে হবে আপনাদের।
আপনাকে দুটি প্রশ্ন : ১) আল্লাহ ওয়াদা করেছিলেন যে কোরান আল্লাহ নিজেই হেফাজত করবেন , তাহলে কোরানের আয়াত ছাগলে খায় কিভাবে ?
২) কোরানের মধ্যে যদি কোনো সমস্যাই না হয় তাহলে হজরত ওসমানকে কেন হত্যা করা হলো ? কেন বলা হয় যে আমরা যে কোরান পেয়েছি সেটি ওসমানের কোরান মুহম্মদেড় রচিত আসল অরিজিনাল কোরান নয় ?
আপনার কাছে প্রশ্ন : সূরা ফাতেহাতে আল্লাহ বলছেন : “আমরা আপনারই ইবাদত করছি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাচ্ছি |” আল্লাহ নিজে নিজেকে ইবাদত করছেন কেন ? আল্লা কার ইবাদত করছেন ? আল্লার কি মাথায় গন্ডগোল দেখা দিয়েছিলো ? তিনি সাহায্য চাইছেন কার কাছে ?
Fatimah bint Muhammad, (Friday, 20 Jumada II (10 September AD 605) – 14 Jumada I AH 11 (5 August AD 632))
আর হযরত মুহাম্মদ সা: মৃত্যু 8 June 632 (aged 61–62)Medina, Hejaz, Arabia
তাহলে হাদিস গুলোতে Fatimah bint Muhammad,
গ্রন্থের নামঃ সুনানে ইবনে মাজাহ
হাদিস নম্বরঃ [1629]
অধ্যায়ঃ ৬/ জানাযা
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬/৬৫. নাবী ﷺ -এর ইনতিকাল ও তাঁর কাফন-দাফন।
৩/১৬২৯। আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যু যন্ত্রণা তীব্রভাবে অনুভব করেন, তখন ফাতেমাহ (রাঃ) বলেন, হায় আমার আব্বার কত কষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আজকের দিনের পরে তোমার আব্বার আর কোন কষ্ট থাকবে না। তোমার আব্বার নিকট এমন জিনিস উপস্থিত হয়েছে, যা কিয়ামাত পর্যন্ত কাউকে ছাড়বে না।
সহীহুল বুখারী ৪৪৬২, আহমাদ ১৬০২৬, সহীহাহ ১৬৩৮, মুখতাসার শামাযিল ৩৩৪, বুখারী শেষ বাক্য বাদ দিয়ে। তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মৃত মানুষ কি করে বলে এগুলো বুঝলাম না।
আরো ভালো করে যাচাই করতে হবে আপনাদের।
একটু জেনে বুঝে কমেন্ট করুন। বেকুবের মত কমেন্ট না করে জেনে বুঝে কমেন্ট লিখুন।
খুব ভাল লেখা। এই লেখা পড়ার পর আমি পুরোপুরি নাস্তিক হয়ে গেছি। ধন্যবাদ লেখককে।
Very useful
Very useful i like that
তথ্য সমৃদ্ধ এবং মূল্যবান একটি লেখা। ধন্যবাদ।
Excellent writing!
I wanna download but how?
প্রিয় ভাই আপনার জন্য অবারিত শুকরিয়াহ্
আমি একজন মুসলিম হিসেবে যে সকল চিন্তা/ভাবনা আমাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতো ‘আপনার জ্ঞান এবং তথ্য-উপাত্তের প্রসারে আমি তার বেশিরভাগ সম্পর্কে নিশ্চিত জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হলাম।
একটু খেয়াল করবেন প্রিয় ভাই, এই সকল তথ্য উপাত্তের দ্বারা এটা সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে মুসলিম সমাজ বিকৃত পথে আল্লাহর নৈকট্য অনুসন্ধান করছে। তবে এটা প্রমাণ করেনা যে আল্লাহ অস্তিত্ত্বহীন!
তাই সর্বশক্তিমান দয়াময় আল্লাহকে যথাযত সম্মান প্রদর্শন করবেন এই অনুরোধ করছি।
আসিফ ভাইয়ের লাইভে শুনেছিলাম কোন এক ওহী লেখক তার ইচ্ছামত আয়াতের অংশ জুড়ে দিয়েছিল এবং নবী বলেছিল ঠিক আছে এই শব্দটা জুড়ে দাও। পরবর্তীতে সেই ওহী লেখক ইসলাম ত্যাগ করে। সেই রেফারেন্সটা একটু দিবেন দয়া করে।
আপনারা যে সব সব হদিস নামের ভন্ডামী বা ভন্ডদের কথাবার্তা নিয়ে দিবা স্বপ্ন দেখে, লাফা লাফি করছেন তা ধর্মের কোন অংশ নয়, বরং তা ধর্মের নামে ভয়ঙ্কর আগাছা ও পরগাছা ! কোরান তো কোরানই !! আপনার রেফার করা কথিত হাদিস ইসলামের কোন কথা নয় !! এ সব ওমুক তমুকের কথা !! এ সব কিছু ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত নয়!! হাদিস হলো এক মাত্র কোরান যেটা আল্লার বাণী হিসাবে আমি বিশ্বাস করি !! আমি মুসলিম হিসাবে, শুধু মাত্র এবং এক মাত কোরানকেই বিশ্বাস করি !! আপনি মানতে পারেন না সেটা আপনার বিষয় !! কথিত সংগৃহিত ও সংকলিত হাদিস কি এবং কেন সেটা আপনি যেমন জানেন আমিও তেমিনী জানি !! কথিত হাদিস গুলো কোন ধর্মীয় কোন গ্রন্থ নয়, বরং আাল্লাহ ও তার রসুল সঃ কে প্রশ্নবিদ্ধ কল্পে তৈরী কৃত জাল বা ভূয়া ডুকুমেন্ট ! যার দোকানদার নামধারী আলেম সমাজ এমনকি আপনার মতো মহাঞ্জানী গন!! কোরান বোঝার ক্ষমতা থাকলে তো বুঝবেন!! সমালোচনা করছেন করেন, তাই বলে সবাই কে মূর্খ বা বোকা ভাবার কোন কারন নাই !! ধন্যবাদ ভাল থাকবেন এবং ভাল রাখবেন !!
আপনারা যে সব সব হদিস নামের ভন্ডামী বা ভন্ডদের কথাবার্তা নিয়ে দিবা স্বপ্ন দেখে, লাফা লাফি করছেন তা ধর্মের কোন অংশ নয়, বরং তা ধর্মের নামে ভয়ঙ্কর আগাছা ও পরগাছা ! কোরান তো কোরানই !! আপনার রেফার করা কথিত হাদিস ইসলামের কোন কথা নয় !! এ সব ওমুক তমুকের কথা !! এ সব কিছু ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত নয়!! হাদিস হলো এক মাত্র কোরান যেটা আল্লার বাণী হিসাবে আমি বিশ্বাস করি !! আমি মুসলিম হিসাবে, শুধু মাত্র এবং এক মাত কোরানকেই বিশ্বাস করি !! আপনি মানতে পারেন না সেটা আপনার বিষয় !! কথিত সংগৃহিত ও সংকলিত হাদিস কি এবং কেন সেটা আপনি যেমন জানেন, আমিও তেমিনী জানি। আপনি হয়তো মানতে পারেননা বা এগুলো কে নিজের যুক্তির পুজি বানিয়েছেন !! ইসলামের গ্রন্থ এক মাত্র কোরান এবং কোরান!! হাদিস গ্রন্থ গুলো ধর্মীয় কোন গ্রন্থ নয়, বরং আাল্লাহ ও তার রসুল সঃ কে প্রশ্নবিদ্ধ কল্পে তৈরী কৃত জাল বা ভূয়া ডুকুমেন্ট ! যার দোকানদার নামধারী আলেম সমাজ, এমনকি আপনার মতো মহাজ্ঞানী গন !! কোরান বোঝার ক্ষমতা থাকলে তো বুঝবেন !! সমালোচনা করছেন করেন, তাই বলে সবাই কে মূর্খ বা বোকা ভাবার কোন কারন নাই !! ধন্যবাদ ভাল থাকবেন এবং ভাল রাখবেন !!
আপনারা যে সব সব হদিস নামের ভন্ডামী বা ভন্ডদের কথাবার্তা নিয়ে দিবা স্বপ্ন দেখে, লাফা লাফি করছেন তা ধর্মের কোন অংশ নয়, বরং তা ধর্মের নামে ভয়ঙ্কর আগাছা ও পরগাছা ! কোরান তো কোরানই !! আপনার রেফার করা কথিত হাদিস ইসলামের কোন কথা নয় !! এ সব ওমুক তমুকের কথা !! এ সব কিছু ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত নয়!! হাদিস হলো এক মাত্র কোরান যেটা আল্লার বাণী হিসাবে আমি বিশ্বাস করি !! আমি মুসলিম হিসাবে, শুধু মাত্র এবং এক মাত কোরানকেই বিশ্বাস করি !! আপনি মানতে পারেন না সেটা আপনার বিষয় !! কথিত সংগৃহিত ও সংকলিত হাদিস কি এবং কেন সেটা আপনি যেমন জানেন, আমিও তেমিনী জানি। আপনি হয়তো মানতে পারেননা বা এগুলো কে নিজের যুক্তির পুজি বানিয়েছেন !! ইসলামের গ্রন্থ এক মাত্র কোরান এবং কোরান!! হাদিস গ্রন্থ গুলো ধর্মীয় কোন গ্রন্থ নয়, বরং আাল্লাহ ও তার রসুল সঃ কে প্রশ্নবিদ্ধ কল্পে তৈরী কৃত জাল বা ভূয়া ডুকুমেন্ট ! যার দোকানদার নামধারী আলেম সমাজ, এমনকি আপনার মতো মহাজ্ঞানী গন !! কোরান বোঝার ক্ষমতা থাকলে তো বুঝবেন !! সমালোচনা করছেন করেন, তাই বলে সবাই কে মূর্খ বা বোকা ভাবার কোন কারন নাই !! ধন্যবাদ ভাল থাকবেন এবং ভাল রাখবেন !!
Informative article, Thanks
আসিফ ভাই আপনাকে একটা আমার কথা বলার ছিল কথাটি হল – ৫ নম্বর সূরা সূরা মায়িদা মদকে হারাম বলে ঘোষণা করেছে, কিন্তু ১৬ নম্বর সূরা নাহালে ৬৭ নম্বর আয়াতে মাদক ও উত্তম রিজিক গ্রহণ করো বলে হয়েছে।
[৫:৯০] আল মায়িদাহ
يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنوا إِنَّمَا الخَمرُ وَالمَيسِرُ وَالأَنصابُ وَالأَزلامُ رِجسٌ مِن عَمَلِ الشَّيطانِ فَاجتَنِبوهُ لَعَلَّكُم تُفلِحونَ
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
[১৬:৬৭] আন নাহল
وَمِن ثَمَراتِ النَّخيلِ وَالأَعنابِ تَتَّخِذونَ مِنهُ سَكَرًا وَرِزقًا حَسَنًا إِنَّ في ذلِكَ لَآيَةً لِقَومٍ يَعقِلونَ
আর তোমরা খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর থেকে মাদক* ও উত্তম রিয্ক গ্রহণ কর। নিশ্চয় এতে এমন কওমের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা বুঝে। \n\n* ইমাম তাবারী বলেন, আয়াতটি মাদক নিষিদ্দ হওয়ার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে।
আসিফ ভাই আপনাকে একটা আমার কথা বলার ছিল কথাটি হল – ৫ নম্বর সূরা সূরা মায়িদা মদকে হারাম বলে ঘোষণা করেছে, কিন্তু ১৬ নম্বর সূরা নাহালে ৬৭ নম্বর আয়াতে মাদক ও উত্তম রিজিক গ্রহণ করো বলে হয়েছে।
[৫:৯০] আল মায়িদাহ
يا أَيُّهَا الَّذينَ آمَنوا إِنَّمَا الخَمرُ وَالمَيسِرُ وَالأَنصابُ وَالأَزلامُ رِجسٌ مِن عَمَلِ الشَّيطانِ فَاجتَنِبوهُ لَعَلَّكُم تُفلِحونَ
হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
[১৬:৬৭] আন নাহালে
وَمِن ثَمَراتِ النَّخيلِ وَالأَعنابِ تَتَّخِذونَ مِنهُ سَكَرًا وَرِزقًا حَسَنًا إِنَّ في ذلِكَ لَآيَةً لِقَومٍ يَعقِلونَ
আর তোমরা খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর থেকে মাদক* ও উত্তম রিয্ক গ্রহণ কর। নিশ্চয় এতে এমন কওমের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা বুঝে।
আল্লাহকে দেখা যায় না!
কিছু লোকজন বলে, ‘যদি আল্লাহ থেকে থাকে, তাহলে দেখাও?’ যদি দেখাতে পারো তাহলে মেনে নিব।
আর যখন আধুনিক বা ভৌতিক শাস্ত্ৰ বলে, ‘ইলেকট্রন আছে কিন্তু দেখা যায় না।‘ তখন কেউ এই সন্দেহ প্রকাশ করে না।
তখন কোন ডাক্তার বা বিজ্ঞানী এই সন্দেহ প্রকাশ করে না যে,’আমরা এটা কিভাবে মেনে নিব?’
আর তুমি বলছো, ‘আল্লাহকে দেখা যায় না, যদি থেকে থাকে তাহলে দেখাও?’
কোন বিজ্ঞানের ক্ষমতা নেই যে, ইলেকট্রন কে দেখাতে পারবে। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, ‘ইলেকট্রন আছে, আমরা তার পরিণাম দেখছি।
একই কথা তো পুরান শাস্ত্র বলছে, ‘আল্লাহকে দেখা যায় না, কিন্তু দেখ পরিণাম দেখা যাচ্ছে; এত বিশাল ব্যবস্থা-এত বড় আয়োজন।‘
আর কিসের প্রমাণ চাও?
তুমি একটু মরুভূমিতে যাও, তাহলে দেখতে পাবে একটি সাধারণ হাত ঘড়ি পড়ে রয়েছে; অথচ কাউকে খুঁজে পাবে না, এবং দূর থেকে দূর পর্যন্ত কোন পদচিহ্ন দেখতে পাবে না। তারপরেও তুমি বলবে, ‘অবশ্যই এখানে কোন মানুষ এসেছিল, তা না হলে এই ঘড়ি কোথা থেকে আসলো? তখন তুমি এটা মেনে নিবে না যে আকস্মিক ঘটনা, এই ঘড়ি নিজে থেকে নির্মিত হয়েছে। টিকটিক করে ঘড়ি এখনো বাজছে। তুমি কি এটা মেনে নিতে পারবে আকস্মিক ঘটনা?
“আমি আমার বন্দার প্রতি যাহা অবতীর্ন করেছি, তাহাতে তোমাদের বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ থাকলে, তোমরা ইহার অনুরুপ কোন সূরা আনয়ন কর। এবং তোমরা যদি সত্যবাদি হও তাহলে আল্লাহ ব্যাতিত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে নিয়ে আস। যদি আনয়ন না কর তবে সেই আগুনকে ভয় কর কাফিরদের জন্য যাহা প্রস্তুত করিয়া রাখা হয়েছে। (সূরা বাকারা:২৩, ২৪)।
You are really great
I salute you