মারিয়া কিবতিয়া – বাঁদী পত্নী সমাচার!
সূচিপত্র
- 1 ভূমিকা
- 2 ক্রীতদাসী বা যৌনদাসী সঙ্গমে সওয়াব
- 3 মারিয়া কিবতিয়ার ইতিহাস
- 4 কেন তার সম্পর্কে কিছু শোনা যায় না?
- 5 ইসলাম ও দাসপ্রথা
- 6 ইসলামে স্ত্রী ও দাসী কি সমমর্যাদার?
- 7 উম্মে ওয়ালাদ কী?
- 8 বিবাহ নিষিদ্ধের আয়াত
- 9 আল্লাহর সরাসরি নির্দেশকে অমান্য করা?
- 10 দাসী-বাঁদি নাকি স্ত্রী?
- 10.1 ১। তাবারী ( The History of al-Tabari )
- 10.2 ২। তাফসীরে ইবনে আব্বাস
- 10.3 ৩। ইবনে কাসীরের তাফসীর থেকে
- 10.4 ৪। জালালাইনের তাফসীর থেকে
- 10.5 ৫। তাফসীরে মাযহারী থেকে
- 10.6 ৬। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া
- 10.7 ৭। আবু আলা মওদুদি
- 10.8 ৮ । Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid ( Islamqa.info )
- 10.9 ৯। আর-রাহীকুল মাখতূম
- 10.10 ১০। পাকিস্তানের নারী ইসলামিক স্কলারের বক্তব্য
- 10.11 ১১। পাকিস্থানী শায়েখ নুরুল হাসান মাদানী
- 10.12 ১২। ড. আবু বকর যাকারিয়া সাহেবের মিথ্যাচার!
- 11 উপসংহার
- 12 তথ্যসূত্র
ভূমিকা
ছোটবেলা থেকে এই পর্যন্ত আমি অসংখ্য ইসলামিক ওয়াজ শুনেছি। ছোটবেলা আমার অন্যতম প্রিয় বিষয় ছিল ইসলামিক ওয়াজ শোনা এবং কোরআন হাদিস থেকে ওয়াজের কথাগুলো মিলিয়ে দেখা। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, যতজন ইসলামি আলেম কিংবা হুজুরদের কথা শুনেছি, কখনই মুহাম্মদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নারী মারিয়া কিবতিয়ার নাম কাউকে উচ্চারণ করতে শুনি নি। গুরুত্বপূর্ণ বললাম এই কারণে যে, হযরত মুহাম্মদের পুত্র সন্তান ইব্রাহিম, যার মৃত্যুতে মুহাম্মদ প্রচণ্ড দুঃখ পেয়েছিলেন, তার মায়ের নাম মারিয়া কিবতিয়া। আরো উল্লেখ্য, তার সাথে মুহাম্মদের কখনো বিয়েই হয় নি। পুত্র সন্তান নিশ্চয়ই সেই সময়ের আরব সমাজের এক সম্মানের বিষয় বলেই বিবেচিত হতো, তাই সন্তানশোকে মুহাম্মদের কষ্ট আমরা অনুভব করতে পারি। বিষয়টি দুঃখজনক ছিল অবশ্যই। এই নিয়ে তাকে বহুবার কাফেররা খোঁটাও দিয়েছে। কিন্তু মুহাম্মদের জীবনের খুঁটিনাটি অনেক কিছু নিয়েই আলোচনা শোনা গেলেও এই নিয়ে মোল্লাদের আলাপ আলোচনা তেমন একটা শোনা যায় না। শুরুরেই আসুন মারিয়া ও তার পুত্র ইব্রাহিমের কবরের ছবি দেখে নিই। [1]
কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রচুর বই পড়তে হয়েছিল। প্রথম যখন মারিয়া কিবতিয়ার নাম জানি, রীতিমত অবাকই হই। কখন প্রথম তার নাম পড়েছিলাম সেটা এত বছর পরে আর মনে নেই। খুব সম্ভবত তাফসীরে ইবনে কাসীর পড়ার সময়। মুহাম্মদের অনেক স্ত্রীর নাম নানা জায়গাতে পাওয়া গেলেও তার কথাটি কীভাবে যেন হুজুরেরা এড়িয়ে যান। শুরুতেই আসুন একটি সহি হাদিস পড়ে তারপরে অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করি।
সুনানু নাসাই শরীফের একটি তাহকীককৃত সহিহ হাদিস হচ্ছে, [2] [3]
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
গ্রন্থঃ সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৭/ স্ত্রীর সাথে ব্যবহার (كتاب عشرة النساء)
হাদিস নাম্বার: 3961
৩৯৬১. ইবরাহীম ইবন ইউনুস ইবন মুহাম্মাদ হারামী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি বাদি ছিল যার সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহবাস করতেন। এতে আয়েশা (রাঃ) এবং হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে লেগে থাকলেন। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বদিটিকে নিজের জন্য হারাম করে নিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ পাক নাযিল করেনঃ (يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ) “হে নবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন তা আপনি নিজের জন্য কেন হারাম করে নিয়েছেন (সূরা তাহরীমঃ ১) ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তাহক্বীকঃ সহীহ।
সহিহ মুসলিম শরীফ থেকে আরেকটি হাদিস পড়ে নিইঃ [4]
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫১/ তাওবা
পরিচ্ছেদঃ ১১. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর হেরেম সন্দেহমুক্ত হওয়া
৬৭৬৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মে ওয়ালাদের সাথে এক ব্যক্তির প্রতি অভিযোগ (অপবাদ) উত্থাপিত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) কে বললেন, যাও। তার গর্দান উড়িয়ে দাও। আলী (রাঃ) তার নিকট গিয়ে দেখলেন, সে কুপের মধ্যে শরীর শীতল করছে। আলী (রাঃ) তাকে বললেন, বেরিয়ে আস। সে আলী (রাঃ)এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। তিনি তাকে বের করলেন এবং দেখলেন, তার পূরুষাঙ্গ কর্তিত, তার লিঙ্গ নেই। তখন আলী (রাঃ) তাকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকলেন। তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে তো লিঙ্গ কর্তিত তার তো লিঙ্গ নেই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
উপরের হাদিসে দেখুন, মুহাম্মদের হেরেমের কথা বলা হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নিষিদ্ধ বা গোপনীয় স্থান। আর আরেকটি অর্থ হচ্ছে রক্ষিতাদের আবাসস্থল। স্ত্রীকে কেউ হেরেমে রাখে না।
সেইসাথে, সহিহ বুখারী হাদিস গ্রন্থে মুহাম্মদের সেই সন্তান ইব্রাহিমের কথাও বলা রয়েছে, [5]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
২৩/ জানাযা
পরিচ্ছেদঃ ২৩/৯১. মুসলমানদের (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) সন্তানদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।
১৩৮২. বারাআ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (নাবী তনয়) ইব্রাহীম (রাঃ)-এর মৃত্যু হলে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তাঁর জন্য তো জান্নাতে একজন দুধ-মা রয়েছেন। (২৩৫৫, ৬১৯০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৯৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ বারা’আ ইবনু আযিব (রাঃ)
ক্রীতদাসী বা যৌনদাসী সঙ্গমে সওয়াব
অনেকেই বলতে পারেন, ক্রীতদাসীদের সাথে যৌনকর্মের কথা ইসলামে রয়েছে তবে কাজটি বাধ্যতামূলক নয়। কেউ চাইলে করতে পারে, নাও করতে পারে। কিন্তু দাসীর সাথে যৌনকর্ম কী আসলেই একটি ঐচ্ছিক বিষয়? নাকি এই কাজে রীতিমত উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে? আসুন হাদিস থেকেই জেনে নিই, দাসী ভোগ ইসলামে পবিত্র কাজ বা সওয়াব বলে বিবেচিত হয় কিনা। নিজের হাদিস থেকে এটি পরিষ্কার যে, নবী দাসী সেক্স করার উৎসাহ দিয়েছেন এবং এটি একটি রীতিমত সওয়াবের কাজ [6]।
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬: যাকাত
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ – সদাক্বার মর্যাদা
১৮৯৮-[১১] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক ‘তাসবীহ’ অর্থাৎ সুবহা-নাল্ল-হ বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা), প্রত্যেক ‘তাকবীর’ অর্থাৎ আল্ল-হু আকবার বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা), প্রত্যেক ‘তাহমীদ’ বা আলহাম্দুলিল্লা-হ বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। প্রত্যেক ‘তাহলীল’ বা ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। নেককাজের নির্দেশ দেয়া, খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। নিজের স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে সহবাস করাও সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ যদি নিজের কামভাব চরিতার্থ করে তাতেও কি সে সাওয়াব পাবে? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমাকে বলো, কোন ব্যক্তি যদি হারাম উপায়ে কামভাব চরিতার্থ করে তাহলে সেকি গুনাহগার হবে না? ঠিক এভাবেই হালাল উপায়ে (স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে) কামভাব চরিতার্থকারী সাওয়াব পাবে। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম ১০০৬, আহমাদ ২১৪৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮২৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৫৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৫৮৮।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মারিয়া কিবতিয়ার ইতিহাস
বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অধিনস্ত মিশরীয় সম্রাট মুকাউকিস হিজরি ৬ অথবা ৭ সালে, ৬২৮ বা ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে, মারিয়া আল-কিবতিয়া নামক একজন মিশরীয় কপ্টিক খ্রিস্টান দাসীকে মুহাম্মাদের নিকট উপহার হিসাবে প্রদান করেন। মুহাম্মাদ তাকে দাসী হিসেবে গ্রহণ করেন এবং যৌনমিলন করেন। তার আসল নাম মারিয়া বিনত সাম’উন, তবে তিনি মারিয়া আল-কিবতিয়া নামেই অধিক পরিচিত (আরবি: مارية القبطية, অন্যত্র, “মারিয়া কুপতিয়াহ”, বা মারিয়া, দ্যা কপ্ট; মৃত্যুঃ ৬৩৭)। তিনি ইব্রাহিম ইবনে মুহাম্মাদ নামে মুহাম্মাদের একটি সন্তানের জন্ম দেন, যে কিনা ১৬ অথবা ১৮ মাস বয়সে শিশুকালেই মারা যায়।
ইবনে কাসীরের তাফসীর থেকে জানা যায়, মারিয়া আসলে ছিলেন ধরা পরা যুদ্ধবন্দী নারী। তাকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ধরা হয়েছিল, পরে তাকে নবী মুহাম্মদের কাছে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। [7]
কেন তার সম্পর্কে কিছু শোনা যায় না?
হযরত মুহাম্মদের উপহার সূত্রে প্রাপ্ত দাসীর গর্ভে একজন পুত্র সন্তান ছিল, সে বিষয়টিও ছোটবেলা হুজুরদের মুখে কোনদিন শুনি নি। নিশ্চিতভাবেই ইসলামিক বক্তাগণ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কিন্তু এই নিয়ে কথা বলেন না। একটু বড় হওয়ার পরে নিজেই পড়ালেখা করে জানলাম, হযরত মুহাম্মদের যৌনদাসী মারিয়া কিবতিয়ার কথা। যার গর্ভে হযরত মুহাম্মদের একজন পুত্র সন্তান ইব্রাহিমের জন্ম হয়। মুহাম্মদের জীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা নিয়ে শীতকালে হুজুরেরা দিনের পর দিন ওয়াজ করেন, কীভাবে ঘুমাতেন কীভাবে প্রশাব করতেন কীভাবে দাঁত মাজতেন, কীভাবে বিবি সহবত করতেন; অথচ এতবড় একটি ঘটনা নিয়ে কেউ তেমন কথা বলেন না। খুব অদ্ভুত বিষয়। তিনি কীভাবে দাসী সহবত করতেন, বিষয়টি বিস্তারিত জানা থাকা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলিমের ঈমানের অঙ্গ হওয়াটাই উচিত ছিল। যেহেতু আল্লাহ পাক এটি হালাল করেছেন, নবী মুহাম্মদও প্রাকটিস করেছেন।
বর্তমান সময়ে অনেক টাউট টাইপের ইসলামিস্ট বলার চেষ্টা করেন, তার সাথে হযরত মুহাম্মদের নাকি বিবাহ হয়েছিল! অথচ সত্য হচ্ছে, মারিয়া কিবতিয়া ছিল মুহাম্মদের যৌনদাসী। সেটি নিয়েই আজকের এই লেখাটি। পাঠকগণ তথ্যসূত্রগুলো মিলিয়ে দেখবেন, যাচাই করবেন, এটাই কামনা করি।
প্রথমদিকে যখন মারিয়া কিবতিয়ার নাম বলেছিলাম, প্রচুর সংখ্যক মুমিন মুসলমান বিষয়টি একদম পুরোপুরি অস্বীকার করেছিল। অসংখ্য গালাগালি এবং অশালীন কথাবার্তা শুনতে হয়েছিল, সত্য বলবার জন্য। এমন দাবীও দেখেছি, মারিয়া কিবতিয়া নামে নাকি কেউ কখনো ছিলই না। এগুলো নাকি ইহুদী নাসারা আর নাস্তিকদের বানানো নাম। এরপরে রেফারেন্স দেয়া শুরু করলে মুমিনগণ বলতে থাকেন, মারিয়া কিবতিয়া নামে একজন ছিলেন বটে, কিন্তু তিনি ছিলেন মুহাম্মদের স্ত্রী। এরপরে আরো রেফারেন্স দেয়ার পরে অনেক গাইগুই শেষে বর্তমানে উনারা বলে বেড়াচ্ছেন, মারিয়া কিবতিয়া ছিল মুহাম্মদের বাঁদী পত্নী! পত্নীর আবার বাঁদী কীভাবে হয় বিষয়টা আমার জানা নেই। কিন্তু মুমিনদের এই লজ্জা ঢাকার চেষ্টাটুকু খুব হাস্যকর মনে হয়। সেই বিষয়েই আলোচ্য লেখাটি। অর্থাৎ, মারিয়া কিবতিয়া কে ছিলেন? বাঁদী, নাকি স্ত্রী, নাকি বাঁদী স্ত্রী?
তাই এই বিষয়ে কিছু তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করছি। পাঠকগণ তথ্যপ্রমাণগুলো যাচাই বাছাই করে নিজ বুদ্ধি বিবেচনা ব্যবহার করে পড়ে দেখতে পারেন। কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল, তা পাঠকগণের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি। আর যাদের বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ নেই, তারা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারেন। সবার সব কিছু পড়তে হবে না।
আলোচনার শুরুতে যেই কথাটি বলে নেয়া ভাল যে, ইদানিং কালের অনেক মডারেট মুসলমান ইসলামের অনেক বিষয়য়াদি লুকাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন। লুকাবার এই চেষ্টাটি নানাভাবেই করা হয়ে থাকে। যেমন অনুবাদ করার সময়, এমন ভাবে অনুবাদ করা হয় যেন শব্দগুলো অনেকটা হালকা হয়ে যায়। কারণ অনেকেই লজ্জিত হন, এই আধুনিক সময়ে এসে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনাতে ইসলামের অনেক গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যায় বলেও তারা মনে করেন। তারা কোনভাবেই চান না, নাস্তিকরা এগুলো জেনে ফেলুক, এবং ইসলাম ধর্মটি নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করুক।
মুসলিমদের মধ্যে এখনো অনেকেই এমন আছেন, যারা ইসলামের অনেক বিধান নিয়ে রীতিমত লজ্জিত এবং বিব্রত। তাই নানাভাবে সেই বিষয়গুলোকে তারা লুকিয়ে ফেলতে চান, ঢাকে রাখতে চান। উল্লেখ্য, যারা ঢেকে রাখতে চায়, বা লুকাতে চায়, ইসলামের পরিভাষায় তাদের কাফেরও বলে। যারা ঢেকে রাখতে চান, লুকাবার চেষ্টা করেন, তারা মানুষ হিসেবে ঐ সহি মুসলিম লোকটির চাইতে অবশ্যই উন্নত মানের। অন্তত তারা বোঝেন, এই বিষয়গুলো অন্যায় এবং নোংরা। তাই তারা বিষয়গুলোকে নানা আগডুম বাগডুম ব্যাখ্যা দিয়ে বাতিল করার চেষ্টা করেন।
তাই এই কথাটি স্পষ্ট করেই বলে নিচ্ছি, যারা মারিয়া কিবতিয়াকে মুহাম্মদের স্ত্রী হিসেবে প্রচার করতে চান, তারা একদম কট্টর এবং সহি মুসলমানদের থেকে উন্নত চরিত্রের মানুষ। কোরানে দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ককে বৈধতা দেয়ার পরেও তারা আধুনিক মন মানসিকতা নিয়েই বুঝতে পেরেছেন, দাসীদের সাথে যৌন সম্পর্ক বিষয়টি নোংরা এবং খারাপ। তাই মুহাম্মদের চরিত্রকে রক্ষার জন্য তারা নানাভাবে প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন, মুহাম্মদ দাসীর সাথে যৌন সম্পর্কের মত নোংরা কাজটি করেন নি। তাদের প্রতি আমার কোন বিতৃষ্ণা নেই, বরঞ্চ সহানুভূতি রয়েছে।
মুসলিমদের মতে আল্লাহ পাক কোরানে যা যা বলেছেন, সবই নৈতিকতার কথা, ভাল কথা। সেই সূত্রে দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ক কোন খারাপ কাজ নয়। মুহাম্মদ তা করে থাকলে তাতে দোষের কিছু নেই!
যখন মুহাম্মদের সাথে মারিয়া কিবতিয়ার বিয়ে হয়েছে বলে প্রচার চালানো হয়, তার মানে এই যে, কিছু মুসলিম মনে করছেন, কোরআনের ঐ আয়াতগুলো, যেখানে দাসী সঙ্গম বৈধ করা হয়েছে, বিষয়টি খারাপ কাজ, এবং মুহাম্মদের চরিত্রকে রক্ষার জন্যেই তারা ঐ খারাপ কাজটি মুহাম্মদ করেন নি, সেটা প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
তাহলে, দাসীর সাথে যৌন সঙ্গম কী ভাল নাকি খারাপ কাজ এই প্রশ্নটির উত্তর আগে খোঁজা জরুরি। যেহেতু কোরআন সর্বকাল সর্বযুগ সকল অবস্থায় অবশ্য পালনীয়, তাই মুহাম্মদ দাসী সহবত করে থাকলে সেটা ইসলাম অনুসারে ভাল কাজ হিসেবেই ধরে নিতে হয়। এই নিয়ে লুকোছাপার কিছু থাকে না। তাহলে কিছু মুসলমানের এই লজ্জার কারণ কী? মারিয়া কিবতিয়াকে মুহাম্মদের স্ত্রী প্রমাণের চেষ্টার এত তোড়জোড় কেন? এই নিয়ে এত বিব্রত হওয়ার কারণ কী?
আসল ঘটনা কী?
ইসলাম ও দাসপ্রথা
প্রথমেই যেই বিষয়টি খুব ভালভাবে জেনে নিতে হবে, দাসপ্রথা বা দাসব্যবসাকে ইসলাম কোনভাবেই নিষিদ্ধ ঘোষনা করে নি। দাস ব্যবসা, মানুষকে দাস বানানো এবং মানুষকে বাজারে নিয়ে কেনাবেচার মত জঘন্য কাজ কোরআন এবং বাইবেল উভয় ধর্মীয় কেতাব দ্বারাই পরিষ্কারভাবে বৈধ। এমনকি নবী মুহাম্মদ এবং তার অনুসারিগণ পরিষ্কারভাবেই দাস কেনাবেচার সাথে যুক্ত ছিলেন। সেই সাথে, আল্লাহ যা হারাম ঘোষনা করে নি, তা নিষিদ্ধ বা হারাম মনে করাও ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ। কারণ আল্লাহ বলেছেন, [8]
হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন?
তাই বর্তমান সময়ে কেউ যদি দাবী করে, ইসলামে দাসপ্রথা নেই, সে মিথ্যা বলে। কারণ আল্লাহ পাক কোরআনে দাস প্রথাকে হালাল করেছেন। এবং আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা অন্য কেউ হারাম ঘোষণা করতে পারে না। আধুনিক সময়ে পৃথিবীর অসংখ্য মানবতাবাদীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দাস প্রথা পৃথিবী থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেছে। জেনেভা কনভেনশন অনুসারে যুদ্ধবন্দী নারীদেরকে কেনাবেচা, অত্যাচার এবং দাস হিসেবে ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য।
মুমিনগণ প্রায়শই দাবী করেন, এই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুয়ানতানামো কারাগারে মানুষ নির্যাতন করেছে, সেটাও তো অন্যায়। তাহলে মুসলিমরা একটু গনিমতের মাল হিসেবে যুদ্ধবন্দী নারীদের ভোগ করলে সমস্যা কই? কিন্তু, এই যুক্তিটি খুবই স্থুল। একে আমরা লজিক্যাল ফ্যালাসি বলি। অন্য একটি খারাপ উদাহরণ সামনে আনলে আরেকটি খারাপ ভাল প্রমাণিত হয় না। আমরা যারা নিজেদের মানবতাবাদী বলি, তারা গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দীদের অত্যাচারেরও তীব্র নিন্দা জানাই। সেটাও যুদ্ধাপরাধ। একই সাথে, যুদ্ধবন্দী নারীদের দাস বানানোও। সেটা সকলের ক্ষেত্রে। মুসলিমগণ ” ওরাও করে তাই আমরাও করি”, এই যুক্তি দিতে থাকলে বিষয়টা আর আলোচনার উপযুক্ত থাকে না। কারণ এটি কোন যুক্তি হতে পারে না।
ইসলাম সহ অন্য বেশ কয়েকটি ধর্ম দাসদের কিছুটা সুযোগ সুবিধা দিলেও, দাস প্রথাকে নিষিদ্ধ করে নি। যেহেতু কখনই এটি আল্লাহ নিষিদ্ধ করেন নি, তাই আজকে যদি আবার দাস প্রথা চালু হয়, মুসলিমগণ আবারো দাস রাখতে পারবেন। পৃথিবীতে দাস প্রথা প্রায় নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় মুসলিমগণ এখন আর দাস কিনতে বা বিক্রি করতে পারেন না। কিন্তু ইসলামে পরিষ্কারভাবেই কোথাও দাস প্রথাকে হারাম বা নিষিদ্ধ বলা হয় নি। বরঞ্চ নানা জায়গাতেই দাসপ্রথাকে হালাল করা হয়েছে।
এই সাথে, যুদ্ধের পরে যুদ্ধবন্দী নারীদের গনিমতের মাল হিসেবে ভোগ করাও কোরআনে কোথাও নিষিদ্ধ হয় নি। কোরআনের নিয়মকানুন কেয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকবে। তাই আজকের দিনেও যদি যুদ্ধ হয়, পরাজিত বাহিনীর নারীদের তুলে আনতে, তাদের দাস বানাতে, তাদের যৌনসঙ্গি বানাতে ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে কোন অন্যায় নেই। বরঞ্চ ইসলাম একে বৈধতা দিয়েছে।
যুদ্ধবন্দী হিসেবে প্রাপ্ত দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ক করা বিষয়ে ইসলাম কী বলছে? কোরান বলছে, [9]
হে নবী! নিশ্চয় আমি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীগণকে বৈধ করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা প্রদান করেছ এবং বৈধ করেছি তোমার অধিকারভুক্ত দাসিগণকে যাদেরকে আমি যুদ্ধবন্দিনীরূপে দান করেছি এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচাতো ভগিনী, ফুফাতো ভগিনী, মামাতো ভগিনী ও খালাতো ভগিনীকে; যারা তোমার সঙ্গে দেশ ত্যাগ করেছে এবং কোন বিশ্বাসীনী নবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করলে এবং নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে (সেও তোমার জন্য বৈধ।) –এ (বিধান) বিশেষ করে তোমারই জন্য; অন্য বিশ্বাসীদের জন্য নয়; বিশ্বাসীদের স্ত্রী এবং তাদের দাসিগণ সম্বন্ধে যা নির্ধারিত করেছি তা আমি জানি। (এ বিধান এ জন্য) যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
এই লেখাটিতে যুদ্ধবন্ধী নারীদের সাথে যৌনাচার নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। [10] [11] [12]
২৪. আর নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া সব সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য এগুলো আল্লাহর বিধান।
যারা তাদের যৌন-অঙ্গকে সংযত রাখে, কিন্তু তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভূক্ত দাসীদের বেলায় তিরস্কৃত হবে না।
হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন।
ইসলামে স্ত্রী ও দাসী কি সমমর্যাদার?
অনেক ইসলামিস্টই আজকাল লজ্জাশরমের বালাই না করে তর্কে জয়ী হওয়ার জন্য বলে বসেন, ইসলামে নাকি দাসী আর স্ত্রী সমমর্যাদার। এই কথা বলে উনারা দাসীদের মর্যাদা দেন নাকি স্ত্রীদের অসম্মান করেন, বোঝা মুশকিল। তবে তাফসীরে জালালাইনে আমরা পেয়ে যাই একদমই ভিন্ন কথা। সেখানে ইসলামের এই বিধান বলে দেয়া রয়েছে যে, দাসী আর স্ত্রীদের অধিকার এবং সম্মান ভিন্ন থাকে। [13]
সেই সাথে, প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রাজ্জাক এবং মুফতি ইব্রাহীমের কাছ থেকে জেনে নিন, ক্রীতদাসীর পর্দার বিধান সম্পর্কেঃ
উম্মে ওয়ালাদ কী?
ইসলামের বিধান অনুসারে, উম্মে ওয়ালাদ হচ্ছে যে দাসীর গর্ভে মনিবের সন্তান জন্ম নেবে তারা। নবীর যুগে উম্মে ওয়ালাদ বিক্রয় করা বৈধ ছিল, কিন্তু উমর এসে সেটি নিষিদ্ধ করেন। আসুন হাদিস থেকে সরাসরি বিষয়টি দেখে নিই, [14] [15] [16]
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২৪/ দাসত্বমুক্তি
পরিচ্ছেদঃ ৮. উম্মু ওয়ালাদ আযাদ হওয়া
৩৯৫৪। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকরের যুগে উম্মু ওয়ালাদ বাঁদীদেরকে বিক্রি করেছি। পরবর্তীতে উমার (রাঃ)-এর যুগে তিনি আমাদের বারণ করায় আমরা বিরত হই।[1]
সহীহ।
[1]. বায়হাক্বী, হাকিম। ইমাম হাকিম বলেনঃ এই হাদীসটি মুসলিমের শর্ত মোতাবেক।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
সুনান ইবনু মাজাহ
১৩/ বিচার ও বিধান
পরিচ্ছেদঃ ১৩/৯৫. উম্মু ওয়ালাদ সম্পর্কে
৩/২৫১৭। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা আমাদের যুদ্ধবন্দিনী ক্রীতদাসী ও উম্মু ওয়ালাদ বিক্রয় করতাম। আমরা এটাকে দূষণীয় মনে করতাম না।
আবূ দাউদ ৩৯৫৪। সহীহাহ ২৪১৭।
তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
উমরের বিধান অনুসারে, এরকম দাসী মনিবের মৃত্যুর পরে মুক্ত হয়ে যাবে, তবে মনিব জীবিত থাকা অবস্থায় সে সেই উম্মে ওয়ালাদকে দাসীর মতই ভোগ করতে পারবে, তাকে দিয়ে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে। আসুন ফতোয়ায়ে আলমগীরি থেকে এই বিষয়ক একটি মাসআলা দেখে নিই, [17]
কিন্তু উমরের এই বিধানের বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন আরেক খলিফা হযরত আলী। আসুন সেটিও জেনে নেয়া যাক, [18] –
বিবাহ নিষিদ্ধের আয়াত
আল্লাহ পাক নবী মুহাম্মদের বিবাহ নিষিদ্ধ করে আয়াত নাজিল করেছেনঃ [19]
এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে মুগ্ধ করে, তবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন।
তাফসীরে জাকারিয়া
কাতাদাহ বলেন, আল্লাহ তাদের উপর যা ফরয করেছেন তার অন্যতম হচ্ছে, কোন মহিলাকে অভিভাবক ও মাহর ব্যতীত বিয়ে করবে না। আর থাকতে হবে দু’জন গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য, আর তাদের জন্য চার জন নারীর অধিক বিয়ে করা জায়েয নয়, তবে যদি ক্রীতদাসী হয় সেটা ভিন্ন কথা। (তাবারী)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান
এখতিয়ারের আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী পত্নীগণ দুনিয়ার আয়েশ-আরামের সামগ্রীর পরিবর্তে সানন্দ চিত্তে নবী (সাঃ)-এর সাথে বসবাস করাকে পছন্দ করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তার বদলা এই দিলেন যে, নবী (সাঃ)-কে সেই স্ত্রীগণ ছাড়া (সে সময় তাঁরা নয় জন ছিলেন) অন্য কোন মহিলাকে বিবাহ করা বা তাঁদের কাউকে তালাক দিয়ে তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে বিবাহ করতে নিষেধ করে দিলেন। অনেকে বলেন, পরে নবী (সাঃ)-কে তার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি আর কোন বিবাহ করেননি। (ইবনে কাসীর)
অর্থাৎ, ক্রীতদাসী রাখার ব্যাপারে কোন বাধা নেই। অনেকে আয়াতের ব্যাপক নির্দেশ থেকে দলীল নিয়ে বলেন যে, নবী (সাঃ)-কে কাফের ক্রীতদাসী রাখারও অনুমতি দেওয়া ছিল। আবার অনেকে (ولاَ تُمْسِكُوا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ) ‘‘তোমরা অবিশ্বাসী নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না’’ (মুমতাহিনা ১০) আয়াতের ভিত্তিতে বলেন, নবী (সাঃ)-এর জন্য কাফের ক্রীতদাসী হালাল ছিল না। (ফাতহুল ক্বাদীর)
আল্লাহর সরাসরি নির্দেশকে অমান্য করা?
কোরানের সুরা আহজাবের ৫২ নম্বর আয়াত এবং তার তাফসিরগুলো থেকে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়, হযরত মুহাম্মদের স্ত্রীদের খুশী করতে আল্লাহ পাক এই আয়াতটি নাজিল করেন, এবং আর কোন বিয়ে করতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে এই আয়াতটি রহিত হয়, এরকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। আয়াতটি রহিত হয়ে থাকলে পরবর্তী সময়ে কোন আয়াতটি দ্বারা এই আয়াতটি রহিত হয়েছিল, তাও জানা যায় না। তাই রহিত করার আয়াত না পাওয়া গেলে এই আয়াতটিকেই সঠিক বলে ধরে নিতে হবে। এছাড়াও, স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, আল্লাহ যখন কাউকে(নবী পত্নীদেরকে) পুরষ্কার দেন, তা ফিরিয়ে নেন না। পুরষ্কার দিয়ে তা আবার ফিরিয়ে নেয়া খুবই ছোটলোকী কাজ। এবং হযরত মুহাম্মদ যে আল্লাহর সরাসরি নির্দেশ ভঙ্গ করে আবার বিয়ে করবেন, সেরকম মানাও কষ্টকর। কোন মুমিন যদি এখন হাদিস দেখিয়ে কোরআনের নির্দেশ ভঙ্গের অজুহাত দেখান, বা যদি বলেন আল্লাহ নবীকে আরো বিবাহ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তখন বলতে হয়, আল্লাহ পাকের সরাসরি আয়াতকে আরেকটি আয়াত দ্বারাই শুধুমাত্র রহিত করা হয়। অন্য কারো মুখের কথায় তো কাজ হবে না। হাদিস দ্বারা কোরআনের সরাসরি নির্দেশের বিপরীত কাজ করা যায় না।
দেখা যাচ্ছে, মারিয়া কিবতিয়ার সাথে মুহাম্মদের দেখা হয় হিজরি ৬ অথবা ৭ সালে। আর আল্লাহ পাক মুহাম্মদের স্ত্রীদের খুশী করতে মুহাম্মদকে আর বিবাহ না করতে নির্দেশ দেন হিজরি ৫ সালে। এমতাবস্থায় দুটো ঘটনা ঘটতে পারে।
১। মারিয়াকে যদি মুহাম্মদ বিয়েই করে থাকেন, তাহলে এখানে উনি আল্লাহর নির্দেশ বরখেলাপ করেই তা করেছেন। তাই তিনি আর মুসলিমদের নবী হিসেবে গণ্য হতে পারেন না।
২। মারিয়াকে বিয়ে না করেই যৌন সম্পর্ক করতেন। দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ক ইসলাম পরিষ্কারভাবেই জায়েজ ঘোষনা করে।
উপরের দুই সম্ভাবনা থেকে কোনটি হতে পারে, তা আপনারাই চিন্তা করে দেখবেন। আমি কোন সিদ্ধান্ত দিচ্ছি না। এটা সত্য যে, দুই একটি এমন তথ্যসূত্র পাওয়া যায় যেখানে মারিয়া কিবতিয়াকে হযরত মুহাম্মদের স্ত্রী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো শুধুমাত্র মুহাম্মদের দাসী সহবতকে ধামাচাপা দিতে। সেটি সত্য হয়ে থাকলে, হযরত মুহাম্মদ যে আল্লাহর নির্দেশ উপরের ঐ বিয়ে না করার আয়াতটি অমান্য করেই বিয়েটা করেছিল, তা নিশ্চিত।
দাসী-বাঁদি নাকি স্ত্রী?
১। তাবারী ( The History of al-Tabari )
এবারে আসুন দেখি, ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তাবারীর বিবরণে কী পাওয়া যায়! [20]
এবারে আসুন, দাসী, বাঁদি, রক্ষিতা, উপপত্নী, বাঁদিপত্নী শব্দগুলোর অর্থ জেনে নেয়া যাক।
ইবনে আব্বাস, তাবারী, তাফসীরে জাকারিয়া, তাফসীরে আহসানুল বায়ানের রেফারেন্স উপরে দেয়া হয়েছে।
২। তাফসীরে ইবনে আব্বাস
এবারে আসুন সবচাইতে প্রখ্যাত তাফসীরকারক ইবনে আব্বাসের তাফসির থেকে পড়ি। যারা ইবনে আব্বাস সম্পর্কে অবগত নন, তাদের জন্য সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। [21]
৩। ইবনে কাসীরের তাফসীর থেকে
[22]
৪। জালালাইনের তাফসীর থেকে
[23]
৫। তাফসীরে মাযহারী থেকে
[24]
৬। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া
[25]
৭। আবু আলা মওদুদি
ইসলামি বিশ্বের অন্যতম প্রখ্যাত স্কলার আবু আলা মওদুদি পরিষ্কারভাবেই বলেন,
The woman who came into his possession from among the slave-girls granted by Allah. According to this the Holy Prophet selected for himself Hadrat Raihanah from among the prisoners of war taken at the raid against the Banu Quraizah. Hadrat Juwairiyyah from among the prisoners of war taken at the raid against the Bani al-Mustaliq, Hadrat Safiyyah out of the prisoners captured at Khaiber, and Hadrat Mariah the Copt who was presented by Maqauqis of Egypt. Out of these he set three of them free and married them, but had conjugal relations with Mariah on the ground of her being his slave-girl. In her case THERE IS NO PROOF that the Holy Prophet set her free and married her.
(Maududi, The Meaning of the Qur’an, English rendered by the Late Ch. Muhammad Akbar, edited by A.A. Kamal, M.A. (Islamic Publications (Pvt.) Ltd., Lahore Pakistan, 4th edition, August 2003), Volume IV, fn. 88, p. 124)
৮ । Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid ( Islamqa.info )
ইসলামী প্রশ্নোত্তরের জন্য Islamqa ওইয়েবসাইটটির কথা আপনারা সকলেই আশাকরি কমবেশি জানেন। প্রখ্যাত সব ইসলামি স্কলার এই সাইটে ইসলাম বিষয়ক নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। এই ওয়েবসাইটটি Shaykh Muhammad Saalih al-Munajjid দ্বারা পরিচালিত। এই ভদ্রলোক ইসলামী বিশ্বে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ স্কলার। উনার সম্পর্কে জানা না থাকলে জেনে নিতে পারেন। সেখানে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ এই বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, মারিয়া কিবতিয়া ছিলেন রাসুলের যৌনদাসী/উপপত্নী। এবং তিনি তার সন্তান ইব্রাহিমকে জন্ম দেন। তাই মারিয়া কিবতিয়াকে কী “বিশ্বাসীদের মাতা” উপাধি দেয়া ঠিক?
এর উত্তরে বলা হয়েছে, নবী মুহাম্মদ মারিয়া কিবতিয়াকে বিবাহ করেন নি। মারিয়া ছিলেন একজন উপপত্নী/যৌনদাসী যাকে মিশরীয় সম্রাট মুকাউকিস উপহার দিয়েছিলেন। মারিয়া খ্রিস্টান ছিলেন, এবং পরে উনি মুসলিম হন। এরপরে ঐ প্রশ্নোত্তরে রেফারেন্সগুলো উল্লেখ করা হয়।
Question: There is no doubt that Mariyah al-Qibtiyyah was the concubine of the Messenger (peace and blessings of Allaah be upon him), and she bore him his son Ibraaheem. Can the title of “Mother of the Believers” be given to Mariyah al-Qibtiyyah or not?
Answer:
Praise be to Allaah.
The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) DID NOT MARRY MARIYAH AL-QIBTIYYAH, RATHER SHE WAS A CONCUBINE who was given to him by al-Muqawqis, the ruler of Egypt. That took place after the treaty of al-Hudaybiyah. Mariyah al-Qibtiyyah was a Christian, then she became Muslim (may Allaah be pleased with her).
Ibn Sa’d said:
The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) lodged her – meaning Mariyah al-Qibtiyyah and her sister – with Umm Sulaym bint Milhaan, and the Messenger of Allaah (S) entered upon them and told them about Islam. He took Mariyah AS A CONCUBINE and moved her to some property of his in al-‘Awaali… and she became a good Muslim.
Al-Tabaqaat al-Kubra, 1/134-135
Ibn ‘Abd al-Barr said:
Mariyah died during the caliphate of ‘Umar ibn al-Khattaab, in Muharram of 16 AH. ‘Umar gathered the people himself to attend her funeral, and he led the funeral prayer for her. She was buried in al-Baqee’.
Al-Isti’aab, 4/ 1912
Mariyah (may Allaah be pleased with her) WAS ONE OF THE PROPHET’S CONCUBINES, NOT ONE OF HIS WIVES. The Mothers of the Believers are the wives of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him). Allaah says (interpretation of the meaning):
“The Prophet is closer to the believers than their ownselves, and his wives are their (believers’) mothers (as regards respect and marriage)”(al-Ahzaab 33:6)
The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) had four concubines, ONE OF WHOM WAS MARIYAH.
Ibn al-Qayyim said:
Abu ‘Ubaydah said: HE HAD FOUR (CONCUBINES): MARIYAH, who was the mother of his son Ibraaheem; Rayhaanah; another beautiful slave woman whom he acquired as a prisoner of war; and a slave woman who was given to him by Zaynab bint Jahsh.
Zaad al-Ma’aad, 1/114
For more information of the wives of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) – the Mothers of the Believers – please see the answer to question no. 47072
And Allaah knows best.
আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে এই ওয়েবসাইটে পরিষ্কারভাবে হযরত মুহাম্মদের সকল স্ত্রীদের নাম তালিকা করা আছে। এবং সেই সাথে এটাও বলা আছে, ইসলামের সকল স্কলার এই বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন। নিচে স্ত্রীদের তালিকা দেয়া হলো।
- খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ
তিনি ছিলেন মক্কার একজন ধনাঢ্য ও সম্ভ্রান্ত মহিলা। তার বয়স যখন ৪০, তখন ২৫ বৎসর বয়সী মুহাম্মদের সঙ্গে তার বিবাহ হয়েছিল। মুহাম্মদের সকল সন্তান(ইব্রাহিম বাদে) তার গর্ভে জন্ম লাভ করে। - সাওদা বিনতে যামআ
হিজরতের পূর্বেই (আনুমানিক ৬২০ খ্রিস্টাব্দে) খাদিজা এর মৃত্যুর বেশ কিছুদিন পরেই মুহাম্মাদ এর সাথে তার বিবাহ হয় । - আয়িশা বিনতে আবু বকর
ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকরের কন্যা আয়িশা। তাকে উম্মুল মুমেনিন বলা হয়ে থাকে। বিবাহের সময় তার বয়স ছিল ৬ বছর। - হাফসা বিনতে উমর
তিনি ইসলামের ২য় খলিফা উমর এর কন্যা। - যয়নাব বিনতে খুযাইমা
মুহাম্মাদ উনাকে হিজরতের একত্রিশ মাস পরে ৩য় হিজরীর রমজান মাসে বিবাহ করেন। - উম্মে সালামা হিন্দ বিনতে আবী উমাইয়্যা
৪র্থ হিজরিতে তার প্রথম স্বামী আবু সালামা এক যুদ্ধে শহীদ হন। অত:পর, শাওয়াল মাসে মুহাম্মাদ তাকে বিবাহ করেন। - জুওয়াইরিয়া বিনতে হারিছ ইবনে আবি যারার
জুওয়াইরিয়া বিনতে হারিছ ছিলেন বনু মুস্তালিক গোত্রের সঙ্গে দাঙ্গার ফলে আটক হওয়া যুদ্ধবন্দী, যিনি উক্ত গোত্রের সর্দারের কন্যা ছিলেন। - যয়নাব বিনতে জাহশ
তিনি মুহাম্মাদ এর ফুফাত বোন ছিলেন। তিনি মুহাম্মদের পালিত পুত্রের সাবেক স্ত্রী ছিলেন। - উম্মে হাবিবা বিনতে আবী-সুফিয়ান
তিনি উম্মে হাবিবা নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের কন্যা ছিলেন এবং পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি মুসলিম হন। - মাইমুনা বিনতে হারিছ ইবনে হাযন
তার আসল নাম ছিলো বাররা। মুহাম্মাদ তার নাম পরিবর্তন করে মায়মুনা রাখেন । - সফিয়্যা বিনতে হুওয়াই
সাফিয়া বিনতে হুয়াই ছিলেন বনু নাদির গোত্রের প্রধান হুয়াই ইবনে আখতাবের কন্যা। খন্দকের যুদ্ধে তার পিতা নিহত হন। তার প্রথম স্বামীর নাম সাল্লাম ইবনে মিশকাম। তার কাছ থেকে তালাকপ্রাপ্ত হয়ে তিনি বনু নাদিরের সেনাপতি কেনানা ইবনে রাবিকে বিয়ে করেন। খায়বার যুদ্ধে বনু নাদির গোত্র পরাজিত হলে কেনানাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং সাফিয়াকে যুদ্ধবন্দীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
দাসী
- রায়হানা বিনত যায়েদ
রায়হানা বিনত যায়েদ ছিলেন বানু নাদির গোত্রের একজন ইহুদী নারী। - মারিয়া আল-কিবতিয়া
ইবনে কায়িম আল-যাওজিয়া সহ আরও বহু সূত্র দাবি করে যে, তিনি মুহাম্মাদের একজন উপপত্নী ছিলেন, অর্থাৎ তিনি মুহাম্মাদের কৃতদাসী ছিলেন কিন্তু স্ত্রী নয়।
৯। আর-রাহীকুল মাখতূম
১০। পাকিস্তানের নারী ইসলামিক স্কলারের বক্তব্য
১১। পাকিস্থানী শায়েখ নুরুল হাসান মাদানী
মারিয়া মুহাম্মদের স্ত্রী নয় লোন্ডী ছিলো! উল্লেখ্য, লোন্ডী অর্থ রক্ষিতা। [26]
১২। ড. আবু বকর যাকারিয়া সাহেবের মিথ্যাচার!
বাঙলাদেশের প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ড. আবু বকর যাকারিয়া সাহেব প্রকাশ্যে একটি মিথ্যাচার করেছেন। এই ভিডিওটিতে বেশ কয়েকটি মিথ্যাচার থাকলেও শুধু দাসী বিষয়ে বলছি। ড. আবু বকর যাকারিয়া বলেছেন, মিশর থেকে নাকি উপহার হিসেবে দাসী মারিয়া কিবতিয়াকে বিবাহ দিয়েই হযরত মুহাম্মদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার সঠিক রেফারেন্স কোথায়? কোন সহিহ হাদিসে তা বলা হয়েছে? যেখানে সুনানু নাসাই শরীফে (ইফাঃ৩৯৬১, উপরে দেয়া আছে) পরিষ্কার তাহক্বীককৃত সহিহ হাদিস রয়েছে যে, মুহাম্মদ তার বাঁদীর সাথে সহবাস করতেন। জাকারিয়া সাহেব কী সহিহ হাদিস অস্বীকার করেন? উনি কী সহিহ হাদিস নিয়ে লজ্জিত? হযরত মুহাম্মদের চরিত্র নিয়ে শরমিন্দা?
দাসী মারিয়া এবং শীরীন নামক দুইজনকে একত্রে উপহার হিসেবে মুহাম্মদের জন্য পাঠানো হয়েছিল। দাসী দুইজনকে পাওয়ার পরে নবী মুহাম্মদ সুন্দরী মারিয়াকে নিজের জন্য রাখেন, আর শীরীনকে দিয়ে দেন সাহাবী হাসসান ইবনে ছাবিতকে। জাকারিয়া সাহেবের বক্তব্য সঠিক হলে দুইজনকেই মুহাম্মদের সাথে বিবাহ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। কারণ আলেক্সান্ড্রিয়ার শাসনকর্তা দুইজনকেই মুহাম্মদের জন্যেই পাঠিয়েছিলেন। মুহাম্মদের সাথে বিবাহ দিয়েই যদি পাঠানো হয়ে থাকে, মুহাম্মদ কি তাহলে নিজ স্ত্রী শীরীনকে তার অনুসারীকে ভোগ করতে দিয়েছিলেন? নবী মুহাম্মদ কী সাহাবীদের সাথে এভাবে স্ত্রী আদান প্রদান করে ভোগ করতেন? এটি কি সুন্নত? বর্তমানের মুসলিমরা কী এভাবে স্ত্রী আদান প্রদান করে ভোগ করতে পারবে? ভিডিওটি দেখুনঃ
উপসংহার
উপরে সমস্ত রেফারেন্স, বইগুলোর ডাউনলোড লিঙ্ক, অন্যান্য তথ্যউপাত্ত পর্যালোচনা করে এবং যাচাই বাছাই করে দেখার জন্য সকল পাঠককে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যদি কোন রেফারেন্সে সমস্যা দেখেন, নিশ্চিন্তে তা কমেন্ট বক্সে উল্লেখ করতে পারেন। ইসলামের ইতিহাসে সবচাইতে গ্রহণযোগ্য এবং পুরনো রেফারেন্সগুলোই এখানে যুক্ত করা হয়েছে। এরপরে আপনারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন, মারিয়া কিবতিয়া মুহাম্মদের বাঁদি/ দাসী ছিলেন নাকি স্ত্রী।
তথ্যসূত্র
- মারিয়া কিবতিয়ার কবর [↑]
- সূনান নাসাঈ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নাম্বার: ৩৯৬১ [↑]
- সূনান নাসাঈ (ইফাঃ), খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১০৬। ডাউনলোড লিঙ্ক [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৮৫, ডাউনলোড লিঙ্ক [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বর – ১৩৮২ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), আধুনিক প্রকাশনী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৩ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৩১ [↑]
- সুরা তাহরীম আয়াত ১ [↑]
- সুরা আহজাব আয়াত ৫০ [↑]
- সুরা নিসা আয়াত ২৪ [↑]
- সুরা আল-মা’আরিজ আয়াত ২৯-৩০ [↑]
- সুরা আল-আহযাব আয়াত ৫০ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৬৪ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৩৯৫৪ [↑]
- সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ২৫১৭ [↑]
- সুনানু ইবনে মাজাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৩৫ [↑]
- ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩৭ [↑]
- তাহাবী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০৮ [↑]
- সুরা আল-আহযাব আয়াত ৫২ [↑]
- The History of Al Tabari, page 141, Download link [↑]
- ইবনে আব্বাসের তাফসীরের তৃতীয় খণ্ডের ডাউনলোড লিঙ্ক [↑]
- বিস্তারিতঃ সুরা তাহরীম এর তাফসির – ইবনে কাসীর [↑]
- বিস্তারিতঃ সুরা তাহরীম | তাফসীরে জালালাইন [↑]
- বিস্তারিতঃ সুরা তাহরীম | তাফসীরে মাযহারী [↑]
- বিস্তারিতঃ হযরতের দাসীদের বিবরণ – আল্লামা ইবনে কাসীর [↑]
- QA: Maria Qibtia, Rasulullah (saw) ki biwi ya laundi thi?- Shaykh Noorul Hasan Madani [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"
This fact is hard for momin to accept !!
তখন কার যুগে এটা একটা সাধারণ ঘটনা ছিলো এটা, পরে হারাম করা হয়।
যেমটা ছিলো তখন মদ খাওয়া, পরে একে হারাম করা হয়।
হারাম করার কোরআনের আয়াতটি দিন।
Asif bro, isn’t it possible that Maria was married to Muhammad (pbuh) and Shirin was just sent to him as a gift???
Very well written wonderful article. I have no words to praise.
https://sunnah.com/muslim/44/323. Ama k amar 1 boro vi ei Hadith diyechilo. Asif Vi k onugroho korbo eta porar jonno
সহীহ্ জাল হাদিস না@ খাইবর থেকে বন্ধি সকল দাসিরাই স্ত্রীর অধিকার আদায় করেছেন সাহাবীদের থেকে। মিশর সাম্রাজ্যের রাজন্যবর্গ খাইবরের যুদ্ধদূষ্কৃতিদের থেকে সম্ভ্রান্ত _কিবতী(ফিরাউন) বংশধর slave ruler।
WISEwise NEVERnever RECEIVEreceive ANYany CAUSEcause.
নিজের লেখাটির রেফারেন্স কি আর কোন হাদিসের এটা?
“মারিয়া আল-কিবতিয়া নামক একজন মিশরীয় কপ্টিক খ্রিস্টান দাসীকে মুহাম্মাদের নিকট উপহার হিসাবে প্রদান করেন। মুহাম্মাদ তাকে দাসী হিসেবে গ্রহণ করেন এবং যৌনমিলন করেন
তিনি ইব্রাহিম ইবনে মুহাম্মাদ নামে মুহাম্মাদের একটি সন্তানের জন্ম দেন, যে কিনা ১৬ অথবা ১৮ মাস বয়সে শিশুকালেই মারা যায়”
আপনার সব পড়াটুকু পড়ে বুঝতে পেরেছি। বাট কিছুই পাইনাই। আপনি বলছেন দাসী ছিল আর কুরআন বা হাদিসেও দাসীর উল্লেখ আছে। আর সেটা সেই সময় নবীজীর জন্য হালাল ছিল যেটা আপনার লেখায় ও প্রমানিত। তাহলে এখানেতো ভুলের কিছুই নাই। দাসী ছিল সেটা আবার স্ত্রীদের খুশির জন্য হারাম করলেন আবার এর জন্য আল্লাহ আয়াত নাজিল করলেন। সবই তো ঠিক। আল্লাহ তায়ালার আয়াত নাজিলের মাধ্যমেই প্রমান হয় নবী (স) কোন ভুল করেন নায়। যদি ভুল করতেন তাহলে আল্লাহ তায়ালা আয়াতের মাধ্যমেই বলে দিতেন যে এটা ভুল ছিল এখন দাসীকে হারাম করছো এখন ঠিকাছে। এখানে তো আল্লাহ তায়ালা নবীজীর সাথে আরো একত্বতা প্রকাশ করলেন। তাই নয় কি?
আর একটা কথা বলছিলেন যে এটা মাওলানারা গোপন কেন রাখে? ভাই এটা কেউ গোপন রাখেনা। গোপন রাখলে যেই মাওলানাদের কিতাব দিয়েছিলেন রেফারেন্স হিসেবে তারাও গোপন রাখতো। এখন কথা হলো অনেকে এ ব্যাপারে কম জানে বা জানেওনা৷ আমিও এই ব্যাপারে এর আগে জানতাম না। আসলে এটা জানাটা জরুরীও নয়৷ তবে জানাটা জরুরী হলে ও এর ওয়াজ করাটা জরুরী নয় এই জন্য যে এখন আর দাস প্রথা নাই। কুরআনে হুকুম থাকলেও এর বাস্তবায়ন তো আর করা যায়না। যদি দাস প্রথা থাকতো তাহলে বাস্তবায়ন ও থাকতো। তখন আবার সকলেও জানতো।
আরেকটা কথা এই সম্পর্কে যদি কোন হুজুরকে জিজ্ঞেস করেন যদি তারা গোজামিলের আশ্রয় নেয় সেটা তাদের দুর্বলতা। ইসলামের কোন হুকুম যদি কেউ না জানে বা জানার পরেও সঠিকটা না বলে তাহলে ইসলামের দোষনা৷ দোষ ওই ব্যাক্তির। কিছু লোকের দুর্বলতাকে আপনি ঢালাওভাবে মুসলিম উম্মাহ বা ইসলাম ও কুরআনকে দোষারোপ করতে পারেন না।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো বলেছেন। আমার পুরাটা পড়ে মনে হইছে লেখার উদ্দেশ্য কনফিউশান সৃষ্টি করা। উনার লেখাতে আমি কোন কনফ্লিক্ট পাই নাই বরং আমি জানিনা এমন কিছু তথ্য পেয়েছি – আলহামদুলিল্লাহ্। নবী হিসাবে সিরাহতে উনার ছোটখাটো কোন বিষয়ই বাদ দেয়া হয়নি। কারণ তার সকল কিছু আমাদের জানতে হবে। সমস্যা হোল আমরা যারা মুসলমান তাদের জানার ব্যাপারে কিছুটা ঘারতি আছে। আর হুজুররা সাধারণত রাসুল (সঃ) এর কিছু বিষয়ে খুব একটা কথা বলতে চান না। এটা তাদের নিজেদের বুঝার ভুল অথবা কম জানা লোকদের জন্য বুঝা কঠিন হতে পারে ভেবে বলেন না।
যদি দাসীকে বিয়ে করে তার সাথে সংসার করা যায়, তাহলে সমস্যা কোথায়?
তোদের নৈতিকতা কি বলে??