শিশু নির্যাতন প্রসঙ্গে ইসলামের অবস্থান
সূচিপত্র
- 1 ভূমিকা
- 2 শিশুদের কেন মারা ঠিক নয়
- 3 শিশু বিশেষজ্ঞদের মতামত
- 4 শরীয়া আইনে শিশু নির্যাতন অপরাধ নয়
- 5 জাহান্নামের অমানবিক শাস্তির ভীতি
- 6 ইসলাম শিশুদের প্রহার বৈধ করেছে
- 7 শিশু নির্যাতনের আরো বৈধতা
- 8 শিশু স্ত্রী নির্যাতন করেছিলেন নবী
- 9 শিশু হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নবী
- 10 জীবন্ত প্রথিত কন্যাশিশু জাহান্নামী
- 11 কোরআন ও হাদিসে কাফের শিশু হত্যা
- 12 শিশুকামী বা পেডোফাইল ছিলেন নবী
- 13 না পিটিয়ে তাহলে উপায় কী?
- 14 উপসংহার
- 15 তথ্যসূত্র
ভূমিকা
ছোটবেলা আমি বাঙলাদেশের একটি সরকারী স্কুলে লেখাপড়া করেছি। সেই সাথে, খুব সকালবেলা আমি আমার এলাকার মক্তবে যেতাম, আরবী ভাষা এবং কোরআন শেখার উদ্দেশ্যে। স্কুলে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের মারপিট করা হতো, কিন্তু স্কুলে মারপিটের একটি সীমা ছিল। কিন্তু এলাকার মক্তবে যেই মারধোর করা হতো, সেটি ছিল সীমাহীন। সামান্য কোন প্রশ্ন, সামান্য কোন জিজ্ঞাসা আমাদের মক্তবের হুজুর সহ্য করতে পারতো না। সে চাইতো, আমরা তার উচ্চারিত প্রতিটি কথা শুনি, মুখস্ত করি, এবং কোন প্রশ্ন না করি। মাথা খাটিয়ে যে প্রশ্ন করা যায়, না বুঝলে যে জিজ্ঞাসা করা উচিত, সেই শিক্ষাটিই সেখানে আমরা পেতাম না। সকল কথায় শুধু মাশাল্লাহ সুবহানাল্লাহ বলাটিই ছিল সেখানকার রীতি। একটু এদিক সেদিক হলেই নির্মমভাবে পেটান হতো। সেই মার যে কী ভয়াবহ ছিল, তা চোখে না দেখলে বোঝা মুশকিল। খুবই অমানবিক এবং বর্বর পদ্ধতিতে এই মার দেয়া হতো। পড়ালেখায় অপেক্ষাকৃত ভাল হওয়ায় সেই মার অনেক সময় এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতো, কিন্তু অন্যদের মার খেতে দেখে কিছুদিনের মধ্যেই আরবী পড়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে আরো অনেকেই পড়তে যেতো। অন্য বাচ্চাদের মানসিকতা সেই মক্তবটি কতটা হিংস্র করে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
আজকের লেখাটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশ্বাসভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার সাথে কীভাবে মারপিট জড়িত, শারীরিক নির্যাতন জড়িত, তা বিশ্লেষণ করা। সত্যিকার অর্থে, মারপিটের প্রয়োজন তখনই বেশি দেখা দেয়, তখন একজন শিক্ষক ছাত্রদের সঠিকভাবে একটি বিষয় শেখাতে পারেন না। বিশ্বাস কোন প্রশ্ন, সন্দেহ, সংশয়, জিজ্ঞাসাকে পছন্দ করে না। যৌক্তিকভাবে চিন্তা করা, ক্রমাগত প্রশ্ন করে যাওয়া বিশ্বাসভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর। এই কারণেই বিশ্বাসভিত্তিক শিক্ষাব্যস্থায় শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বেশি দেখা যায়।
শিশুদের কেন মারা ঠিক নয়
বাচ্চাদের যেকোন অবস্থাতেই মারপিট করা উচিত নয়। বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবেই দুষ্টুমি করবে, কথা শুনতে চাইবে না, এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বাচ্চাদের এখনো মানসিক বৃদ্ধি ঘটে নি। কোনটি তার জন্য ভাল, কোনটি মন্দ, সেই বিষয়ে এখনো সে বুঝতে শেখে নি। তাদের মারধোর করবেন না, কঠিন এবং শারীরিক কোন শাস্তি দেবেন না৷ একটি শিশুর মনে এটি দীর্ঘমেয়াদি ভয়াবহ সমস্যা তৈরি করে। আপনি আজকে আপনার বাচ্চাকে মারধোর করলে, কাল সে বড় হয়ে মারধোর করাকে স্বাভাবিক বিষয় বলেই মনে করবে। সেও ভাববে, তার যখন ক্ষমতা হবে, একই কায়দায় সেও অন্যদের মারবে। মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির অন্যতম বড় কারণ শিশু বয়সে তার ওপর হওয়া শারীরিক নির্যাতন। সিরিয়াল কিলার, খুনী বা ধর্ষক, গণহত্যাকারী, টেরোরিস্ট এদের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, অল্পবয়সে এরা বেশিরভাগই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। বেশিরভাগ মাদ্রাসার শিক্ষক, যারা বাচ্চাদের পেটায়, তারাও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ঠিক একইভাবে ছোট বয়সে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েই বড় হয়েছে। সারাজীবন এটিই সে স্বাভাবিক আচরণ বলে মনে করে এসেছে। সেইসাথে, বাচ্চাদের মারপিটের মাধ্যমে যেই ধর্ম পালনে বাধ্য করা হয়, সেই ধর্মও কখনো মানবিক হতে পারে না৷
আমাদের দেশে মাদ্রাসাগুলোতে বাচ্চাদের ওপর যেই ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়, তা আশাকরি সকলেই জানেন। কিন্তু এই মাদ্রাসাগুলতেই কেন এরকম অবস্থা? বিশেষভাবে, মাদ্রাসাগুলতে এত ভয়াবহ মারপিট কেন করা হয়? ইউরোপের উন্নত সেক্যুলার বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার দেশগুলোতে যেখানে শিশুদের ওপর এমনকি পিতামাতাও সামান্য মারপিট করলে পুলিশ কেইস হয়ে যায়, সন্তানদের রাষ্ট্র থেকে নির্ধারিত এজেন্সি এসে তুলে নিয়ে যায়, সেখানে আমাদের দেশে এই অবস্থা কেন? অনেক মুসলিমই আজকাল বলেন, ইউরোপের সংস্কৃতি নাকি আমাদের সভ্যতা ঐতিহ্য ধর্মীয় মূল্যবোধ সব ধ্বংস করছে! শিশুদের গায়ে হাত দেয়া যাবে না, এগুলো নাকি ইউরোপের নাস্তিকদের চক্রান্ত, মুসলিম শিশুদের চরিত্র ধ্বংস করার জন্য! অথচ, এসব যারা বলেন তারা নিজেরাও জীবনের কোন না কোন সময়ে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা কীভাবে তাদের সন্তানদেরও একই কাঠামোর মধ্যে নির্যাতনের শিকার হওয়াকে সঠিক মনে করেন, আমি জানি না।
অনেক সময়ই আমাদের সমাজের বাবা মা বলে থাকেন, পিটানি না খেলে নাকি বাচ্চারা মানুষ হয় না! অনেক সময়, বাবামাই শিক্ষকদের অনুরোধ করেন, বাচ্চাদের পেটাতে। আমাদের নানা গল্প বলা হয়, শিক্ষকের মার খেলে নাকি সেই স্থান বেহেশতে যাবে! অথচ, এগুলো একজন শিশুর বিকাশে কতটা ভয়াবহ প্রভাব ফেলে, আমরা কী সেগুলো ভেবে দেখেছি? লক্ষ্য করলে দেখবেন, অতিরিক্ত মার খাওয়া বাচ্চাগুলো আরো বেশি জেদি হতে থাকে। মানসিকভাবে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপমানের কারণে সে নিজেকে ছোট ভাবে। এই অনুভূতি একটি শিশুর জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। তার আত্মবিশ্বাস, সেলফএস্টিম এতে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। নিজের প্রতি আস্থা, নিজের প্রতি সম্মান আর তার অবশিষ্ট থাকে না। এরকম একজন শিশু সমাজের জন্য খুবই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।
এই বিষয়ে নিচের কার্টুনটি খুবই প্রাসঙ্গিক। কার্টুন কৃতজ্ঞতাঃ অপুর কার্টুন
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতামত
বাচ্চাদের মারপিট করলে যেই প্রধান সমস্যাটি হয়, তা হচ্ছে, একজন শিশু ছোটবেলা থেকেই এটি শেখে যে, ক্ষমতাবান একজন তার চাইতে কম ক্ষমতা সম্পন্ন আরেকজনকে চাইলেই মারতে পারে। বা শরীরে আঘাত করা হচ্ছে নিজের ক্ষমতা, প্রভাব, প্রতিপত্তির নিদর্শন! আমি যে কর্তৃত্বশীল, আমি যে ক্ষমতার অধিকারী, এটি জানান দেয়ার একটি কৌশল! এই কারণে যেই শিশুরা ছোটবেলা থেকেই শিক্ষক বা পিতামাতার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন, তারা বড় হন তার চাইতে অপেক্ষাকৃত ক্ষমতাহীন কারো ওপর একইভাবে নির্যাতন করে। প্রায়শই এটি হয় বাসার কাজের ছেলে বা মেয়ের ওপর, বা বাসার কুকুর বা বেড়ালের ওপর। এই মানসিকতা তার আরো বিস্তার লাভ করে পরবর্তী জীবনে। দেখা যায়, সেও তার সন্তানদের ওপর নির্যাতন করছে, মারপিট করছে, বা তার স্ত্রীর ওপর অত্যাচার করছে। সেই বাচ্চাটিই হয়তো কোন স্কুল বা মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করলো। ছোটবেলা থেকেই যদি সে শারীরিক আঘাত করাকে খুব স্বাভাবিক একটি কাজ বলে মনে করে, সেও একইভাবে তার ছাত্রদের মারপিট করবেন, এরকম হওয়াটিই স্বাভাবিক হয়ে যায়। তার ছাত্ররাও একইভাবে মারপিট করা শিখে বড় হয়। এটি তখন একটি চক্রে পরিণত হয়।
শিশুদের ওপর শারীরিক অত্যাচার আর কী কী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, আসুন সেটি একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নিই।
শরীয়া আইনে শিশু নির্যাতন অপরাধ নয়
ইসলামী শরীয়া আইনে স্ত্রী এবং শিশুদের ওপর পারিবারিক পর্যায়ে নির্যাতন করা আইনগতভাবে বৈধ [1] । আরো পরিষ্কারভাবে বললে, শিশুদের ওপর নির্যাতন করাা হলে, এই বিষয়ে ইসলামী শরীয়া আইনে কোন শাস্তির বিধান নেই। এই বিষয়ে প্রসিদ্ধ ইসলামিক আলেম শাইখ আসিম আল হাকিমের একটি বক্তব্য শুনে নেয়া যাক-
জাহান্নামের অমানবিক শাস্তির ভীতি
মাদ্রাসায় শিক্ষকেরা বাচ্চাদের পেটালে অনেক বাবামাই বলেন, জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে দুনিয়ায় এরকম একটু মারপিট খাওয়া ভাল। আমি এরকমও অনেক বাবামাকে বলতে শুনেছি, হুজুর, বাচ্চারে দিয়ে গেলাম, হাড্ডিগুলা আমাদের, আর মাংসগুলো আপনার! সেইসব মাদ্রাসায় বাচ্চাদের পিটিয়ে পিটিয়ে নাকি মানুষ করা হয়! তাদের সভ্য করে তোলা হয়! কিন্তু সেইসব মারের চাইতেও আরেকটি ভয়াবহ ব্যাপার যুক্ত থাকে, সেটি হচ্ছে, জাহান্নামে অনন্ত অত্যাচার নির্যাতনের ভীতি প্রদর্শন। যার কারণে দুনিয়াতে এই মারধোরগুলো শিশুদের কাছে স্বাভাবিক মনে হতে থাকে। একই সাথে, সেই মানসিকভাবে আরো দুর্বল হয়ে যায়।
পরম করুনাময় এবং অসীম দয়ালু আল্লাহপাক মুহাম্মদের ধর্ম ইসলামকে পালন না করার শাস্তি স্বরূপ জাহান্নামে এই সকল শিশুর সাথে কী করবেন, কী কী অত্যাচার এবং শাস্তি দেবেন, সেই শাস্তিগুলোর কয়েকটি বর্ণনা করছি।
- ১) আগুনের জুতা পরিয়ে শাস্তি দেয়া হবে, যার কারণে মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে।
- ২) মাথার উপর ফুটন্ত গরম পানি ঢালা হবে, তা পেটের মধ্যে প্রবেশ করে পেটের সব কিছু বিগলিত করে পায়ের দিক দিয়ে বেরিয়ে যাবে।
- ৩) রক্ত-পুঁজ পান করানো হবে।
- ৪) মুখ আগুনে তাপে ভাজাপোড়া হয়ে উপরের ঠোট সংকুচিত হয়ে মাথার মধ্যস্থলে এবং নিচের ঠোঁট ঝুলে নাভির সাথে এসে লাগবে।
- ৫) বিষাক্ত সাপে কামড়াবে। যা একবার দংশন করলে তার বিষ ব্যথা ৪০ বছর পর্যন্ত অনুভব করবে।
- ৬) ভয়ঙ্কর আগুনে পোড়ানো হবে, যাতে চামড়া গলে যাবে। আবার চামড়া গজানো হবে। আবার তা গলে যাবে। এভাবে চলতেই থাকবে, অনন্তকাল।
এরকম আরও অসংখ্য অভিনব শাস্তি দেয়ার কৌশল। শুনলে মনে হবে, কোন অসুস্থ বিকৃত মস্তিষ্কের সিনেমা পরিচালকের বিকৃত মস্তিষ্ক সিনেমা দেখছি। ঠিক যেমনটা হিটলার করতো, ইহুদীদের সাথে। বিবরণগুলো পড়লে মনে হয়, যেন হলিউডের বানানো SAW সিনেমার কাহিনী পড়ছি। কী পরিমাণে বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী হলে কেউ এরকম বিবরণ দিতে পারে? কী পরিমাণ অসুস্থতা থাকলে কেউ এসব কল্পনা করতে পারে। ভাবুন তো! আল্লাহপাক নিজেকে মানুষের স্রষ্টা দাবী করে, নিজের সন্তান সমতুল্য মানুষকে শুধুমাত্র তার নাম দিনে পাঁচবার না জপার কারণে, সার্বক্ষনিক তোষামোদ এবং তার প্রশংসা না করার জন্য এরকম শাস্তি দিচ্ছেন, সেই ধর্মটি একজন শিশুকে কতটা নৈতিক চরিত্রের করে গড়ে তুলবে?
সেইসাথে, হযরত মুহাম্মদের ধর্ম পালন করলে বেহেশতে আমাকে কী কী সুবিধা দেয়া হবে, সেগুলোও শিশুদের শেখানো হয়। সেগুলো হচ্ছে, উন্নত বক্ষের ৭২ জন হুর এবং মুক্তার মত দেখতে গেলমান। সেই হুরগুলো নাকি প্রতিবার সেক্সের পরে আবার ভার্জিন হয়ে যাবে। এক একবার সেক্স নাকি ৭০ বছরব্যাপী দীর্ঘ হবে। চিন্তা করে দেখুন অবস্থা! ছোটবেলার এই শিক্ষাগুলো একজন শিশুকে যে মানসিকভাবে ভীত, দুর্বল এবং আত্মবিশ্বাসহীন করে তুলবে, এটি যেকোন সুস্থ মানুষই অনুধাবন করতে পারেন।
ইসলাম শিশুদের প্রহার বৈধ করেছে
আমাদের মনে হতে পারে, ইসলামিক আলেমগণ হয়তো কোথাও ভুল কিছু বলছেন। সেই কারণে, ইসলামের গ্রন্থাবলী খুঁজে দেখা প্রয়োজন যে, এই বিষয়ে ইসলামের অবস্থান কী। আসলেই এই আলেমগণ সঠিক বলছেন, নাকি ভুল বলছেন। এই কথাগুলো ইসলাম সম্মত, নাকি অনৈসলামিক!
ইসলামের ইতিহাসে ইমাম বুখারী একটি অতি প্রসিদ্ধ নাম। আরব রীতি অনুযায়ী বংশধারাসহ পুরো নাম হলো মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিযবাহ । তিনি একজন বিখ্যাত হাদীসবেত্তা ছিলেন। তিনি “বুখারী শরীফ” নামে একটি হাদীসের সংকলন রচনা করেন, যা মুসলমানদের নিকট হাদীসের সবোর্ত্তম গ্রন্থ বিবেচিত হয়।সেই সাথে, তাকে আমিরুল মুমিনীন ফিল হাদীস উপাধিতে ভুষিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, হাদিসের ক্ষেত্রে তিনি হচ্ছেন ইসলামে বিশ্বাসীদের আমীর সমতূল্য। তার একটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থের নাম হচ্ছে, আল-আদাবুল মুফরাদ বা অনন্য শিষ্টাচার। ইমাম আল বুখারী বইটিতে ইসলামী নবী মুহাম্মদ-এর শিষ্টাচার সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত রয়েছে। এটিতে ১৩২২টি হাদিস রয়েছে। এই বইটির ১৩৯ নম্বর হাদিসে যা বলা আছে, তা হচ্ছে, নবী মুহাম্মদ ইয়াতীম শিশুদের সাথে কীরকম আচার আচরণ করা যাবে সেটি বোঝাতে গিয়ে বলছেন, তুমি নিজের সন্তানদের যেভাবে প্রহার করো, তাদেরও একইভাবে প্রহার করবে। এর দ্বারা নবী মুহাম্মদ বোঝাতে চেয়েছেন, ইয়াতীম বাচ্চাদের নিজের সন্তানের মতই দেখতে, অতিরিক্ত প্রহার না করতে। সেই বিষয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। একজন ইয়াতীম বাচ্চাকে নিজের সন্তানের মত কেউ দেখলে সেটি অবশ্যই ভাল ব্যাপার। কিন্তু তাদের নিজের সন্তানের মত দেখতে হবে, এটি বলতে গিয়ে নবী মুহাম্মদ একটি বেফাঁস কথাও বলে ফেলেছেন। যেটি হচ্ছে, তাদেরও একইভাবে প্রহার করতে হবে, যেভাবে নিজের সন্তানদের মুমিনরা প্রহার করে! অর্থাৎ, নবী মুহাম্মদ মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিজের সন্তানদের প্রহার করাকে খারাপ কিছু মনে করতেন না। নইলে এরকম উদাহরণ দিয়ে তিনি কেন বিষয়টি বোঝাবেন? আসুন হাদিসটি পড়ে দেখি [2] [3] –
আল-আদাবুল মুফরাদ
ভদ্র আচার ব্যাবহার
পরিচ্ছেদঃ ৭৭- ইয়াতীমের জন্য দয়ার্দ্র পিতৃতুল্য হও।
১৩৯। আসমা ইবনে উবায়েদ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনে সীরীন (রহঃ)-কে বললাম, আমার কাছে এক ইয়াতীম আছে। তিনি বলেন, তুমি তার সাথে তোমার সন্তানের অনুরূপ ব্যবহার করো এবং তাকে প্রহার করো যে কারণে তুমি তোমার সন্তানকে প্রহার করে থাকো (তার সাথে তোমার সন্তানের অনুরূপ ব্যবহার করবে)।
بَابُ كُنَّ لِلْيَتِيمِ كَالأَبِ الرَّحِيمِ
حَدَّثَنَا مُوسَى، قَالَ: حَدَّثَنَا سَلاَّمُ بْنُ أَبِي مُطِيعٍ، عَنْ أَسْمَاءَ بْنِ عُبَيْدٍ قَالَ: قُلْتُ لِابْنِ سِيرِينَ: عِنْدِي يَتِيمٌ، قَالَ: اصْنَعْ بِهِ مَا تَصْنَعُ بِوَلَدِكَ، اضْرِبْهُ مَا تَضْرِبُ وَلَدَكَ.
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
শিশু নির্যাতনের আরো বৈধতা
নবী মুহাম্মদ শিশুদের দশ বছর বয়স হয়ে গেলে নামাজ না পড়লে মারপিট করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই হাদিসটি বহু হাদিস গ্রন্থেই উল্লেখ করা হয়েছে। আসুন, হাদিসটি দেখে নিই [4] [5] [6] [7] [8] –
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায)
৪৯৫. মুআম্মাল ইবনু হিশাম …………. আমর ইবনু শুআয়েব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা এবং দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের সন্তানরা সাত বছরে উপনীত হবে, তখন তাদেরকে নামায পড়ার নির্দেশ দেবে এবং তাদের বয়স যখন দশ বছর হবে তখন নামায না পড়লে এজন্য তাদেরকে মারপিট কর এবং তাদের (ছেলে-মেয়েদের) বিছানা পৃথক করে দিবে।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায)
৪৯৪. মুহাম্মাদ ইবনু ঈসা …….. আবদুল মালিক থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা এবং তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের সন্তানদের বয়স যখন সাত বছর হয়, তখন তাদেরকে নামায পড়ার নির্দেশ দাও এবং যখন তাদের বয়স দশ বছর হবে তখন নামায না পড়লে এজন্য তাদের শাস্তি দাও– (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
২/ রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে নামাযের সময়সূচী
পরিচ্ছেদঃ ১৮৭. বালকদের কখন হতে নামায আদায়ের নির্দেশ দিতে হবে
৪০৭। সাবরা ইবনু মা’বাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত বছর বয়সে বালকদের নামায শিখাও এবং দশ বছরে পৌছলে নামায আদায়ের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য দৈহিক শাস্তি দাও।
এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। হাসান সহীহ। মিশকাত- (৫৭২, ৫৭৩), সহীহ আবু দাউদ(২৪৭), ইরওয়া- (২৪৭), তা’লীক আলা ইবনু খুজাইমাহ– (১০০২)।
আবু ঈসা বলেনঃ সাবরা ইবনু মা’বাদের হাদীসটি হাসান সহীহ। একদল বিদ্বান এ হাদীসের উপর আমল করেছেন। ইমাম আহমাদ এবং ইসহাকও একথা বলেছেন। তারা উভয়ে বলেছেন, কোন বালক দশ বছরের পর নামায না আদায় করলে এগুলোর কাযা তাকে অবশ্যই আদায় করতে হবে।
আবু ঈসা বলেনঃ সাবরা হলেন ইবনু মা’বাদ আল-জুহানী, এও বলা হয়ে থাকে যে, তিনি ইবনু আওসাজাহ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ সাবরাহ বিন মা’বাদ আল জুহনী (রাঃ)
রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)
বিবিধ
পরিচ্ছেদঃ ৩৮. পরিবার-পরিজন, স্বীয় জ্ঞানসম্পন্ন সন্তান-সন্ততি ও আপন সমস্ত অধীনস্থদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর অবাধ্যতা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা, তাদেরকে আদব শেখানো এবং শর‘য়ী নিষিদ্ধ জিনিস থেকে তাদেরকে বিরত রাখা ওয়াজিব
৪/৩০৬। ‘আমর ইবনু শুআইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি আমরের দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনু আম্র) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে। আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’’ (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে)(1)
(1) আবূ দাউদ ৪৯৫, আহমাদ ১৬৬৫০, ৬৭১৭
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
শিশু স্ত্রী নির্যাতন করেছিলেন নবী
নবী মুহাম্মদের অল্পবয়সী শিশু স্ত্রী ছিলেন হযরত আয়িশা। হযরত আয়শা হতে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায়, একরাতে নবী মুহাম্মদ ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়েছিলেন। আয়িশা সন্দেহবশত তার পিছু নিয়ে দেখছিলেন উনি কোথায় যায়। ফিরে আসার পরে নবী যখন বিষয়টি জানতে পারেন, তখন তিনি আয়িশার বুকে আঘাত করেন, বা থাপ্পর দেন, যা তাকে ব্যথা দিয়েছিল। আয়িশার বর্ণনা অনুসারে, (মুহাম্মদ) আমাকে বুকের ওপর আঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল [9]
সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৭/ স্ত্রীর সাথে ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ৪. আত্মাভিমান
৩৯৬৫. সুলায়মান ইবন দাউদ (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আমার ব্যাপারে কি তোমাদেরকে বর্ণনা করব না? আমরা বললাম, কেন করবেন না? তিনি বললেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআমার পালার রাতে (ইশার সালাত আদায়ের পর) ফিরে আসলেন। তারপর তার জুতা পায়ের দিকে রাখলেন, তাঁর চাদর রেখে দিলেন এবং তাঁর একটি লুঙ্গি বিছানার উপর বিছালেন।
তারপর তিনি মাত্র এতটুকু সময় অবস্থান করলেন যতক্ষণে তাঁর ধারণা হল যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপর উঠে আস্তে করে জুতা পরলেন এবং আস্তে করে তার চাদর নিলেন। তারপর আস্তে করে দরজা খুললেন এবং বের হয়ে আস্তে দরজা চাপিয়ে দিলেন। আর আমি মাথার উপর দিয়ে কামিজটি পরিধান করলাম, ওড়না পরলাম এবং চাদরটি গায়ে আবৃত করলাম ও তার পিছনে চললাম, তিনি বাকীতে আসলেন এবং তিনবার হাত উঠালেন ও বহুক্ষণ দাঁড়ালেন, তারপর ফিরে আসছিলেন। আমিও ফিরে আসছিলাম। তিনি একটু তীব্রগতিতে চললেন, আমিও তীব্রগতিতে চললাম, তিনি দৌড়ালেন, আমিও দৌড়ালাম। তিনি পৌছে গেলেন, তবে আমি তার আগে পৌছে গেলাম।
ঘরে প্রবেশ করেই শুয়ে পড়লাম। তিনিও প্রবেশ করলেন এবং বললেনঃ হে আয়েশা! কি হয়েছে তোমার পেট যে ফুলে গেছে। বর্ণনাকারী সুলায়মান বলেন, ইবন ওয়াহাব (رابية) এর পরিবর্তে (حشيا) দ্রুত চলার কারণে হাঁপিয়ে ওঠা শব্দটি বলেছেন বলে ধারণা করছি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘটনা কি বল, নচেৎ আল্লাহ্ যিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত, তিনিই আমাকে খবর দিবেন।
আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক এবং ঘটনাটির বর্ণনা দিলাম। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমিই সেই (ছায়ামূর্তি) যা আমি আমার সামনে দেখছিলাম? আমি বললাম, হ্যাঁ। আয়েশা (রাঃ) বললেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বক্ষে একটি মুষ্ঠাঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি ধারণা করেছ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর যুলুম করবে? আয়েশ্ম (রাঃ) বললেন, লোক যতই গোপন করুক না কেন, আল্লাহ্ তা নিশ্চিত জানেন।
রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি যখন আমাকে দেখছিলে তখন জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসেছিলেন। তুমি যে (শুয়ে যাওয়ায়) কাপড় খুলে ফেলেছ। তাই জিবরীল (আঃ) প্রবেশ করেননি। তোমার থেকে গোপন করে আমাকে ডাকলেন, আমিও তোমার থেকে গোপন করে উত্তর দিলাম। মনে করলাম, তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। তোমাকে জাগিয়ে দেওয়াটা পছন্দ করলাম না এবং এ ভয়ও ছিল যে, (আমি চলে যাওয়ার কারণে) তুমি নিঃসঙ্গতা বােধ করবে। জিবরীল (আঃ) আমাকে নির্দেশ দিলে বাকীতে অবস্থানকারীদের কাছে যাই এবং তাদের রব্বের কাছে তাদের জন্য ক্ষমা চাই।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ)
একই হাদিস আপনি পাবেন সহীহ মুসলিমে-
শিশু হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নবী
আমরা সকলেই জানি, বনূ কুরাইজা গোত্রকে আক্রমণ করে নবী তাদের সকল প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষদের হত্যা করে নারী ও শিশুদের দাসে পরিণত করেছিলেন। কাফেরদের মধ্যে কারা প্রাপ্তবয়ষ্ক আর কারা শিশু, তা নির্ধারণ করে খুন করার একটি পদ্ধতি তিনি ব্যবহার করেছিলেন। পদ্ধতিটি হচ্ছে, কাদের যৌনলোম উদ্গত হয়েছে, সেই অনুসারে শিশুকিশোরদের আলাদা করে যাদের যৌনলোম উদ্গত হয়েছে, তাদের হত্যা করতেন নবী। আর যাদের তা ওঠে নি, তাদের দাস বানিয়ে নিয়ে যেতেন।
সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৪/ অভিযান
পরিচ্ছদঃ কোন মুসলিমের নির্দেশ কেউ আত্মসমার্পন করলে।
১৫৯০। হান্নাদ (রহঃ) … আতিয়্যা কুরাযী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরায়যা যুদ্ধের সময় আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পেশ করা হল। তিনি যাদের যৌন লোম উদগত হয়েছিল তিনি তাদের হত্যা করলেন আর যাদের যৌন লোম উদগত হয়নি তাদের ছেড়ে দিলেন। আমি তাদের মধ্যে ছিলাম যাদের যৌন লোম উদগম হয়নি। সুতরাং আমার পথে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হল। সহীহ, ইবনু মাজাহ ২৫৪১, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৫৮৪ (আল মাদানী প্রকাশনী)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
একইসাথে, কাফেদের গোত্রগুলোর ওপর আক্রমণের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে কাফেরদের শিশুদের হত্যাতে কোন দোষ নেই বলে মনে করতেন নবী। যদিও পরবর্তী সময়ে তিনি অকারণে কাফের শিশুদের হত্যা করতে আরেকটি হাদিসে নিষেধ করেছিলেন।
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছদঃ ৯. রাতের অতর্কিত আক্রমনে অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই
৪৩৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মনসুর ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) … সা’ব ইবনু জাছছামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুশরিকদের নারী ও শিশু সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যখন রাতের আধারে অতর্কিত আক্রমণ করা হয়, তখন তাদের নারী ও শিশুরাও আক্রান্ত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারাও তাদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৩৩। জিহাদ ও সফর
পরিচ্ছদঃ ৯. রাতের আকস্মিক হামলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই
৪৪৪২-(২৭/…) আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. সা’ব ইবনু জাসসামাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা রাতের অন্ধকারে আকস্মিক হামলায় মুশরিকদের শিশুদের উপরও আঘাত করে ফেলি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারাও তাদের (মুশরিক যোদ্ধাদের) মধ্যে গণ্য। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪০০, ইসলামিক সেন্টার ৪৪০০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ১৮/ জিহাদ
১/২৮৩৯। সাব‘ ইবনে জাসসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের বেলা মুশরিকদের মহল্লায় অতর্কিত আক্রমণ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো, যাতে নারী ও শিশু নিহত হয়। তিনি বলেনঃ তারাও (নারী ও শিশু) তাদের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
জীবন্ত প্রথিত কন্যাশিশু জাহান্নামী
নবী মুহাম্মদ ছোটবেলা যেইসব কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো, সেইসব কন্যাদের জাহান্নামী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে, উনি কাফের পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুদেরও ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধী বা পাপী বলেই মনে করতেন। যা একটি ভয়াবহ ধারণা, কারণ এই ধারণা শিশুদের সম্পর্কে অত্যন্ত বাজে মানসিকতার প্রকাশ।
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৮. মুশরিকদের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে।
৪৬৪২. ইব্রাহীম ইবন মূসা (রহঃ) ….. আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জীবন্ত প্রথিত কন্যা এবং তার মা- উভয়ই জাহান্নামী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ শা‘বী (রহঃ)
কোরআন ও হাদিসে কাফের শিশু হত্যা
ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কোর আনে একটি গল্প রয়েছে, যেখানে বলা হচ্ছে, নবী মুসা একবার খিজির নামের একজন জ্ঞানী এবং আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ প্রাপ্ত ব্যক্তির সান্নিধ্যে যান। সেই খিজির একজন কাফের বালককে আচমকা হত্যা করে, এর কারণ জিজ্ঞেস করলে খিজির উত্তর দেন, এই বালকটি বড় হয়ে কুফরী করতো! কুফরীর মাধ্যমে সে তার বাবা মাকে কুফরীর দিকে নিয়ে যেতো। তাই তিনি আগেই বালকটিকে হত্যা করে ফেলেছে।
এই বালকটি জাহান্নামে যাবে, নাকি জান্নাতে, সেটি তো তখন পর্যন্ত ঘটেই নি। সে তো কোন অপরাধই করে নি। যার জন্মই হয়েছে কাফির হিসেবে, যাকে সৃষতি করাই হয়েছে কুফরী করার জন্য, তাকে কুফরী করার আগেই বিনা অপরাধে হত্যা করা, একইসাথে তাকে জাহান্নামে প্রেরণ করা, এই হচ্ছে ইসলামের বিচার ব্যবস্থা! আল্লাহ তাকে কাফির হিসেবেই জন্ম দিলেন, আবার হত্যা করালেন বিনা অপরাধে, আবার জাহান্নামেও পাঠাবেন- এর নাম ইনসাফ? আসুন হাদিসগুলো পড়িঃ [10] [11] [12]
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৭। তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রত্যেক শিশু ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মানোর মর্মার্থ এবং কাফির ও মুসলিমদের মৃত শিশুর বিধান
৬৬৫৯-(২৯/২৬৬১) আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ ইবনু কা’নাব (রহঃ) ….. উবাই ইবনু কা’ব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই যে ছেলেটিকে খাযির (আঃ) (আল্লাহর আদেশে) হত্যা করেছিলেন তাকে কফিরের স্বভাব দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছিল। যদি সে জীবিত থাকত তাহলে সে তার পিতামাতাকে অবাধ্যতা ও কুফুরী করতে বাধ্য করত। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫২৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৭৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৫/ ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ৪২. খিযির (আঃ) এর ফযীলত
৫৯৪৯। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আলা কায়সী (রহঃ) … সাঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলা হলো, নাওফ দাবি করে যে, মূসা (আলাইহিস সালাম) যিনি জ্ঞান অন্বেষণে বের হয়েছিলেন। তিনি বনী ইসরাঈলের মূসা নন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, হে সাঈদ, তূমি কি তাকে এটা বলতে শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, নাওফ মিথ্যা বলেছে। কেননা উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মূসা (আলাইহিস সালাম) একদা তার জাতির সামনে আল্লাহ তা’আলার নিয়ামত এবং তাঁর শাস্তি পরীক্ষাসমূহ স্মরণ করিয়ে নসীহত করছিলেন। (কথা প্রসঙ্গে কারো প্রশ্নের জবাবে) তিনি বলে ফেললেন, পৃথিবীতে আমার চেযে উত্তম এবং বেশি জ্ঞানী কোন ব্যক্তি আছে বলে আমরে জানা নেই।
রাবী বলেন। আল্লাহ মূসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি ওহী পাঠালেনঃ আমি জানি তার (মূসা) থেকে উত্তম কে বা কার কাছে কল্যাণ রয়েছে। অবশ্যই পৃথিবীতে আরো ব্যক্তি আছে যে তোমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আয় রব্ব! আমাকে তার পথ বাতলিয়ে দিন। তাকে বলা হলো লবণাক্ত একটি মাছ সঙ্গে নিয়ে যাও। যেখানে এ মাছটি হারিয়ে যাবে, সেখানেই সে ব্যক্তি। মূসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর খাদিম রওনা হলেন, অবশেষে তাঁরা একটি বিশাল পাথরের কাছে পৌছলেন। তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর সাথীকে রেখে অগোচরে চলে গেলেন। এরপর মাছটি নড়েছরে পানিতে চলে গেল এবং পানিও খোপের মত হয়ে গেল মাছের পথে মিলিত হল না।
মূসা (আলাইহিস সালাম) এর খাদিম বললেন, আচ্ছা আমি আল্লাহর নাবীর সাথে মিলিত হয়ে তাঁকে এ ঘটনা বলবো। পরে তিনি ভুলে গেলেন। যখন তারা আরো সামনে অগ্রসর হলেন, তখন মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমার নাশতা দাও, এ সফরে তো আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যতক্ষন তারা এ স্থানটি অতিক্রম করেন নি, ততক্ষণ তাদের ক্লান্তি আসে নি।
রাবী বলেন, তাঁর সাথীর যখন স্মরণ হল, এবং সে বলল, আপনি কি জানেন যখন আমরা পাথরে আশ্রয় নিয়েছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গেছি। আর শয়তানই আমাকে আপনার কাছে বলার কখা ভুলিয়ে দিয়েছে এবং বিস্ময়করভাবে মাছটি সমুদ্রে তার পথ করে নিয়েছে। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ-ই তো ছিল আমাদের উদ্দীষ্ট। অতএব তাঁরা পায়ের চিহ্ন অনুসরণ করে ফিরে চললেন। তখন তার খাদিম মাছের স্থানটি তাকে দেখালো।
মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, এ স্থানের বিবরনই আমাকে দেওয়া হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরপর মূসা (আলাইহিস সালাম) খুজতে লাগলেন, এমন সময় তিনি বস্ত্রাবৃত খিযির (আলাইহিস সালাম) কে গ্রীবার উপর চিৎ হয়ে শায়িত দেখতে পেলেন। অথবা (অন্য বর্ননায়) সোজাসুজি গ্রীবার উপর। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আসসালামু আলাইকুম। খিযির (আলাইহিস সালাম) মুখ খেকে কাপড় সরিয়ে বললেন, ওয়া আলাইকুম সালাম, তুমি কে? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি মূসা। তিনি বললেন, কোন মূসা? মূসা (আলাইহিস সালাম) উত্তর দিলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, কোন মহান ব্যাপারই আপনাকে নিয়ে এসেছে? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি এসেছি যেন আপনাকে যে সৎজ্ঞান দান করা হয়েছে, তা থেকে কিছু আপনি আমায় শিক্ষা দেন।
খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমার সঙ্গে আপনি ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হবেন না। আর কেমন করে আপনি ধৈর্য ধারণ করবেন এমন বিষয়ে, যার জ্ঞান দেওয়া হয় নি। এমন বিষয় হতে পারে যা করতে আমাকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, আপনি যখন তা দেখবেন, তখন আপনি সবর করতে পারবেন না। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। আর আমি আপনার কোন নির্দেশ অমান্য করব না।
খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি যদি আমার অনুগামী হন তবে আমাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না আমি নিজেই এ বিযয়ে উল্লেখ করি। এরপর উভয়ই চললেন, অবশেষে তারা একটি নৌকায় চড়লেন। (খিযির (আলাইহিস সালাম) তখন( তা ছিদ্র করলেন অর্থাৎ তাতে (একটি তক্তায়) সজোরে চাপ দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁকে বললেন, আপনি কি নৌকাটি ভেঙ্গে ফেলেছেন, আরোহীদের ডুবিয়ে দেয়ার জন্যে? আপনি তো বড় আপত্তিকর কাজ করেছেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি আমার সঙ্গে ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হবেন না? মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আমি ভুলে গিয়েছি, আমাকে আপনি দোষী করবেন না। আমার বিষয়টিকে আপনি কঠোরতাপূর্ণ করবেন না।
আবার দু’জন চলতে লাগলেন। এক জায়গায় তাঁরা বালকদের পেলেন যারা খেলা করছে খিযির (আলাইহিস সালাম) অবলীলাক্রমে একটি শিশুর কাছে গিয়ে তাকে হত্যা করলেন। এতে মূসা (আলাইহিস সালাম) খুব ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, আপনি প্রাণের বিনিময় ব্যতীত একটি নিষ্পাপ প্রাণকে হত্যা করলেন? বড়ই গর্হিত কাজ আপনি করেছেন। এ স্থলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর রহমত বর্ষণ করুন আমাদের ও মূসা (আলাইহিস সালাম) এর উপর। তিনি যদি তাড়াহুড়া না করতেন তাহলে আরো বিস্ময়কর ঘটনা দেখতে পেতেন। কিন্তু তিনি সহযাত্রী (খিযির (আলাইহিস সালাম)) এর সামনে লজ্জিত হয়ে বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোন প্রশ্ন করি, তবে আপনি আমায় সঙ্গে রাখবেন না। তখন আপনি আমার ব্যাপারে অবশ্যই চূড়ান্ত অভিযোগ করতে পারবেন (এবং দায়মুক্ত হবেন)।
যদি মূসা (আলাইহিস সালাম) ধৈর্য ধরতেন, তাহলে আরো বিস্ময়কর বিষয় দেখতে পেতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন নাবীর উল্লেখ করতেন, প্রথমে নিজকে দিয়ে শুরু করতেন, বলতেন, আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন এবং আমার অমুক ভাইয়ের উপরও। এভাবে নিজেদের উপর আল্লাহর রহমত কামনা করতেন।
তারপর উভয়ে চললেন এবং ইতর লোকের একটি জনপদে গিয়ে উঠলেন। তাঁরা লোকদের বিভিন্ন সমাবেশে ঘুরে তাদের কাছে খাবার চাইলেন। তারা তাঁদের আতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। এরপর তাঁরা একটি পতনোন্মুখ দেয়াল পেলেন। তিনি (খিযির (আলাইহিস সালাম)) সেটি ঠিকঠাক করে দিলেন। মূসা (আলাইহিস সালাম) বললেন, আপনি চাইলে এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন। খিযির (আলাইহিস সালাম) বললেন, এবার আমার আর আপনার মধ্যে বিচ্ছেদ (এর পালা)।
খিযির (আলাইহিস সালাম) মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কাপড় ধরে বললেন, আপনি যেসব বিষয়ের উপর অধৈর্য হয়ে পড়েছিলে সে সবের তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।
‘নৌকাটি ছিল কতিপয় গরীব লোকের যারা সমুদ্রে কাজ করতো’– আয়াতের শেষ পর্যন্ত। তারপর যখন এটাকে দখলকারী লোক আসলো তখন ছিদ্রযুক্ত দেখে ছেড়ে দিল। এরপর তারা একটা কাঠ দিয়ে নৌকাটি ঠিক করে নিলো। আর বালকটি সৃষ্টিতেই ছিল জন্মগত কাফির। তার মা-বাবা তাকে বড়ই স্নেহ করতো। সে বড় হলে ওদের দুজনকেই অবাধ্যতা ও কুফরির দিকে নিয়ে যেতো। সুতরাং আমি ইচ্ছে করলাম, আল্লাহ যেন তাদেরকে এর বদলে আরো উত্তম, পবিত্র স্বভাবের ও অধিক দয়াপ্রবন ছেলে দান করেন। ‘আর দেয়ালটি ছিল শহরের দুটো ইয়াতীম বালকের’ আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরা কাহফঃ ৬০-৮২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)
উপরের এই হাদিসগুলো থেকে আমরা কী শিখলাম? এই সকল হাদিস থেকে কী ভাল কিছু শেখা আদৌ সম্ভব?
শিশুকামী বা পেডোফাইল ছিলেন নবী
হামাগুড়ি দেয়া কচি শিশু দেখেও মুহাম্মদের তাকে বিবাহ করার ইচ্ছা হয়েছিল। মানে, হামাগুড়ি দেয়া শিশু দেখলেও উনার মনে বিবাহের ইচ্ছা জাগতো। যার রেফারেন্স পাওয়া যায় ইবনে ইসহাকের গ্রন্থে [13]
একই বিষয় পাবেন Guillaume এর সীরাত গ্রন্থে [14]
সেইসাথে, আয়শার বয়ঃসন্ধীর আগেই তার সাথে যৌনকর্ম করেছিল মুহাম্মদ। এই লেখাটিতে আরো বিস্তারিতভাবে সেটি বর্ণনা করা হয়েছে।
Narrated `Aisha:
I used to play with the dolls in the presence of the Prophet, and my girl friends also used to play with me. When Allah’s Messenger (ﷺ) used to enter (my dwelling place) they used to hide themselves, but the Prophet would call them to join and play with me. (The playing with the dolls and similar images is forbidden, but it was allowed for `Aisha at that time, as she was a little girl, not yet reached the age of puberty.) (Fath-ul-Bari page 143, Vol.13)
Reference : Sahih al-Bukhari 6130
In-book reference : Book 78, Hadith 157
USC-MSA web (English) reference : Vol. 8, Book 73, Hadith 151
না পিটিয়ে তাহলে উপায় কী?
অনেক বাবামাই এবং শিক্ষকগণই প্রশ্নটি করেন, মারপিট না করে উপায় কী? বাচ্চারা তো ভীষণ দুষ্টু হয়!
হ্যাঁ, অনেক বাচ্চাই অনেক দুষ্টু হয় বটে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, একজন শিশু হচ্ছে কাদামাটির মত। তাকে যেভাবে তৈরি করা হয়, সে সেভাবেই তৈরি হয়। সে স্বাভাবিকভাবেই বাবামার কাছ থেকে, পরিবেশ থেকেই সব শেখে। তাই তাকে বারবার বোঝানো প্রয়োজন। একবারে হয়তো সে বুঝবে না, অনেক বাচ্চা বারবার বোঝাবার পরেও বুঝবে না। কিন্তু আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। অনেক সময় আমরা তাদের সমস্যাটি না বুঝে তার ওপর কিছু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিই। হয়তো সে বামহাতে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, বাবামা বা শিক্ষক তাকে ডানহাতে লিখতে বাধ্য করেন। যার ফলে সে মানসিকভাবে জেদী হয়ে যায়। আবার, তার হয়তো ছবি আঁকতে ভাল লাগে, তাকে জোর করে পড়ালেখা করানো হয়। কিন্তু ছবি আঁকার মাধ্যমেও কিন্তু পড়ালেখা করা যায়। অনেক সময় বাচ্চারা অটিস্টিক হতে পারে, তারা হয়তো অক্ষর চিনতে বা বুঝতে পারছে না। বা উল্টো করে লিখছে। ওদের মারপিট না করে তার সমস্যাটি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। কেন সে এই কাজটি করছে, সেটি খুব সুক্ষ্মভাবে আপনি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
অনেক সময় আমরা তাদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে, তাকে ছোট মানুষ মনে করে তাকে তাচ্ছিল্য করি। এগুলো বাচ্চাদের মনে জেদের সৃষ্টি করে। তাকেও একজন স্বাভাবিক মানুষের মতই মনে করুন, মাঝে মাঝে তার মতামত নিন। আজকে কী রান্না করলে ভাল হয়, আগামী ছুটিতে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়, এইসব বিষয়ে তার মতামত নিতে চেষ্টা করুন। এতে সে নিজেকে একজন দায়িত্বশীল মানুষ মনে করবে। তাকে ঘরের কিছু কাজ করতে দিন, সে যেন তার ঘরটি গুছিয়ে রাখে, এই দায়িত্ব তার এটি তাকে বুঝিয়ে দিন। ময়লা আবর্জনা কোথায় ফেলতে হবে, ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেললে কী সমস্যা হয়, সেগুলো তাকে বুঝিয়ে দিন। পশুপাখীর সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ ভালবাসার সম্পর্ক যেন তৈরি হয়, সেই দিকেও নজর দিন। এমপ্যাথি তারা যত শিখবে, ততই তাদের জন্য ভাল।
অন্য বাচ্চাদের সাথে তাদের তুলনা দেয়া বন্ধ করুন। অমুকের বাচ্চা ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে, এগুলো বাচ্চাদের বলা খুবই ক্ষতিকর। এতে তার মনে হিংসার সৃষ্টি হয়, এবং তার আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। এরকম কাজ করে অনেক বাবামাই ভাবেন, বাচ্চাকে খুব ভাল বুঝ দেয়া গেছে। আসলে এগুলো শিশুদের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ কথা। এইসব কাজ কখনই করতে যাবেন না। প্রতিটি বাচ্চাই স্বতন্ত্র এবং বৈচিত্র্যময়। কাউকে কারো মত হতে হবে না, পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়াই জীবনের মূল লক্ষ্য নয়। সে কী শিখছে, সেটিই সবচাইতে জরুরি।
নিতান্তই যদি শাসন করতে হয়, তাহলে তাদের সুবিধাগুলো কমিয়ে দিন। যেমন, সে আগে দুই ঘণ্টা খেলতো। যদি সে কথা না শুনতে চায়, তাহলে সেই খেলার সময় একঘণ্টা করে দিন। এতে সে কথা না শোনার ফলাফল নিজেই বুঝতে পারবে। বা নতুন কোন খেলনা যেটি কিনে দেয়ার কথা ছিল, সেটি তাকে বুঝিয়ে দিন যে, কেন সেটি আর কিনে দেয়া হবে না। এভাবে সে ধীরে ধীরে তার কাজগুলোর যে একটি ফলাফল রয়েছে, তা বুঝতে পারবে। মারপিট করা যাবে না, এর অর্থ এই নয় যে, তাকে অত্যাধিক আহ্লাদ দিতে হবে। যা চায় সেটিই দিতে হবে। বরঞ্চ, সে যদি বেশি কিছু চায়, তাকে বোঝাতে হবে, অন্যের কাছে কিছু দেখলেই সেটি চাওয়া ঠিক নয়। বরঞ্চ, তাকে মাঝে মাঝে গরীব অসহায় বাচ্চাদের সাথে মিশতে দিন। এতে সে অন্য মানুষের প্রতি সহানুভূতিপ্রবন হবে, তার অতিরিক্ত চাহিদাগুলো যে অতিরিক্ত তা বুঝতে পারবে।
বাচ্চাদের আত্মসম্মানবোধ থাকে। ছোট মানুষ ভেবে তার আত্মসম্মানে আঘাত করবেন না। তাকে প্রতিশ্রুতি দিলে সেটি রক্ষা করুন। কখনও কখনও পিতামাতারা তাদের বাচ্চাদের সাথে তথাকথিত “ভালোর জন্য” প্রতারণা করেন। পিতামাতা মনে করেন, এই প্রতারণাগুলো তার সন্তানদের জন্য ভাল! অথচ, এগুলো থেকে বাচ্চারা প্রতারণা শেখে। অন্যান্য লোকের কাছে সন্তানের গোপনীয় বিষয়াদি প্রকাশ করে তাকে কখনো অপমান করবেন না। তাকে নিয়ে উপহাস করা, সে গাধা বা বুদ্ধি কম, এগুলো বলা তার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
উপসংহার
উপরের আলোচনা থেকে এটি খুবই পরিষ্কার যে, ইসলাম শিশুদের মারপিট করাকে বৈধতা দিয়েছে। আমাদের যে মানসিকতা তৈরি হয়েছে, পরিবারে একজন আলেম থাকলে পিতামাতা তার সুবাদে জান্নাতে যেতে পারবেন। একইসাথে, সীমাহীন দারিদ্র এবং শিক্ষাদীক্ষার অভাবের কারণে আমাদের দেশের অনেক গরীব বাবামাই তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠান, এই আশায় যে, সেখানে বাচ্চারা খেতে পারবে, শিক্ষাদীক্ষা পাবে, মানুষ হয়ে উঠবে। কিন্তু সেই সব মাদ্রাসায় সেই সব শিশুদের সাথে কী ভয়াবহ অন্যায় হচ্ছে, তা আমরা পত্রিকাগুলো খুললেই জানতে পারি। শুধু কী শিক্ষকেরা, আমাদের দেশের ধর্মান্ধ পরিবারের বাবামাও কিন্তু কম নন। এই রকম একটি সমাজে একটি শিশুর স্বাভাবিক মানসিক ও শারীরিক বিকাশ অসম্ভব হয়ে যায়। যার কারণে দেশে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এসব বিষয়ে এখনই নজর না দিলে, আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার। আমাদের উচিত, সেই মধ্যযুগের মানুষদের মত চিন্তা না করে, “আমরাও পিটানি খেয়ে মানুষ হয়েছি, আমাদের বাচ্চারাও হবে”- এরকম প্রাচীনপন্থী চিন্তাভাবনার মধ্যে থেকে বের হয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক করে তোলা। ইহুদি নাসারা নাস্তিকদের ষড়যন্ত্র, মারপিট না করলে মানুষ হয় না, এইসব বাজে কথা সমাজে প্রচলন না করে আমাদের উচিত শিশুদের বোঝার চেষ্টা করা এবং তাদেরকে বারবার বোঝানো।
আমাদের প্রতিটি শিশু বেড়ে উঠুক আত্মবিশ্বাস, এমপ্যাথি এবং গর্বিত মুক্তমনা মানুষ হিসেবে। নইলে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার।
তথ্যসূত্র
- UAE: Spousal Abuse Never a ‘Right’ [↑]
- আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নম্বরঃ ১৩৯ [↑]
- আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃষ্ঠা ৯৫-৯৬ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নাম্বারঃ ৪৯৫ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নাম্বারঃ ৪৯৪ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৭১, ২৭২ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪০৭ [↑]
- রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), হাদিস নম্বরঃ ৩০৬ [↑]
- সূনান নাসাঈ শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬৫ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিস নম্বর- ৬৬৫৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর- ৫৯৪৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর- ৫৯৪৮ [↑]
- সিরাতে রাসুলাল্লাহ (সাঃ), অনুবাদ, শহীদ আখন্দ, প্রথমা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৩৫৩ [↑]
- The Life Of Mohammed, Alfred Guillaume, ৩১১ পৃষ্ঠা [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"
আপনার এই না পিটিয়ে উপায় কি অংশটুকু পড়ে কান্না চলে এলো, নিজের শৈশবের কথা মনে পড়ে গেলো।