ইসলামে অমানবিক দাসপ্রথা
সূচিপত্র
- 1 ভূমিকা
- 2 দাসপ্রথা কাকে বলে?
- 3 যুদ্ধবন্দী বা দাসী সহবাস হচ্ছে ‘ধর্ষণ’
- 4 প্রাচীন বিশ্বে দাসপ্রথা নৈতিক ছিল?
- 5 বিভিন্ন সভ্যতায় দাসপ্রথা কেমন ছিল?
- 6 বাইবেলে দাসপ্রথার সমর্থন ও বৈধতা
- 7 ইসলাম পূর্ব আরবসমাজে দাসপ্রথা
- 8 ইসলামে দাসপ্রথার সমর্থন ও বৈধতা
- 9 ইসলামের বিধান কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তনীয়
- 10 আধুনিক যুগেও দাসপ্রথার সমর্থন ও বৈধতা
- 11 আক্রমণাত্মক জিহাদঃ ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
- 11.1 আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
- 11.2 কোরআনে আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
- 11.3 তাফসীরে আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
- 11.4 হাদিসে আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
- 11.5 ফিকাহশাস্ত্রে আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
- 11.6 শরহে মুসলিমে আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
- 11.7 ইসলাম গ্রহণে জোরজবরদস্তির বিধান
- 11.8 মুহাম্মদের ধর্মগ্রহণের হুমকি দেয়া চিঠি
- 11.9 ইসলাম ছেড়ে পুরনো ধর্মে ফেরত গেলেই মৃত্যু বা দাসত্ব
- 11.10 ইসলামে শিরককারী হত্যাযোগ্য
- 11.11 যুদ্ধবন্দীদের প্রচুর রক্তপাত ঘটানো
- 11.12 গেরিলা যুদ্ধ নাকি অতর্কিত হামলা
- 11.13 নবীর আক্রমণাত্মক জিহাদের উদাহরণ
- 12 জিহাদে প্রাপ্ত মালে গনিমত
- 13 ক্রীতদাসীদের সাথে যৌনসঙ্গমের বৈধতা
- 14 যৌনদাসী সম্পর্কিত ইসলামিক বিধান
- 14.1 উম্মে ওয়ালাদ কাকে বলে?
- 14.2 একজন মুমিন সর্বোচ্চ কতজন যৌনদাসী রাখতে পারবে?
- 14.3 দাসীর সতর নাভী থেকে হাঁটু
- 14.4 নাবালিকা দাসীর সাথে সহবাস ইসলামে সম্পূর্ণ বৈধ
- 14.5 এমনকি সাহাবীরাও ধর্ষণে সঙ্কোচ করতো!
- 14.6 দাসীদের সাথে আযল
- 14.7 দাসীদের সাথে আযলের কারণ
- 14.8 দাসব্যবসা ও ক্রয়বিক্রয়
- 14.9 দাসীর বাজারে কেনাবেচা
- 14.10 সহবাসের উদ্দেশ্যে যৌনদাসী ক্রয়
- 14.11 দাসী খরিদের সময় যোনি পরীক্ষা
- 14.12 দাসী অদল বদল করে ভোগ
- 14.13 দাসী মা এবং মেয়ের সাথে সহবাস
- 14.14 ছেলে-পিতা-দাদা মিলেমিশে দাসীভোগ
- 14.15 পছন্দ করে বিবাহের অধিকার
- 14.16 বিবাহিত গর্ভবতী দাসী ভোগ
- 14.17 বিবাহ বাতিলের ক্ষমতা মালিকের
- 14.18 জন্মসূত্রে দাসদাসী
- 14.19 দাসের জীবনের মূল্য কম
- 14.20 দাসদাসী গবাদি পশুর মত
- 14.21 দাসদের সাক্ষ্য দেয়ার ক্ষমতা
- 14.22 দাসদাসীর জন্য যাকাত নেই
- 14.23 দাসদাসীর পালিয়ে যাওয়া কুফরী
- 14.24 পালানো দাসকে আশ্রয় দেয়াও নিষেধ
- 14.25 দাস মুক্ত করার চেয়ে দান করা উত্তম
- 14.26 দাস মুক্তিতেও সাম্প্রদায়িকতা
- 14.27 বেশিরভাগ মূল্য পরিশোধের পরেও দাস
- 14.28 মুক্তদাসকে পুনরায় দাস বানানো
- 14.29 দাসের সম্পত্তি মালিকের
- 14.30 মুক্তদাসের উত্তরাধিকারও মালিক
- 14.31 অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত দাসদাসী
- 15 লজ্জিত মুসলিমদের মিথ্যাচার
- 15.1 ইসলাম দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেছে?
- 15.2 দাসপ্রথা পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল!
- 15.3 ইসলামে দাসদাসী বলা হারাম?
- 15.4 দাসী বিবাহ কী বাধ্যতামূলক?
- 15.5 স্ত্রী ও দাসী কি সমমর্যাদার?
- 15.6 স্বামীহীন মেয়েদের আশ্রয়দানই ছিল উদ্দেশ্য?
- 15.7 দয়া করে ইদ্দতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে?
- 15.8 যুদ্ধবন্দী নারীরা স্বেচ্ছায় সহবাস করতো?
- 15.9 উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধবন্দী নারীদের যৌনচাহিদা পূরণ?
- 15.10 চুক্তি করা ওয়াজিব নাকি মুস্তাহাব?
- 15.11 দাস বা বন্দী মুক্ত করা ফরজ?
- 15.12 দাসদাসীকে প্রহার করা হারাম?
- 15.13 মুশরিক নারীর সাথে যৌনসঙ্গম হারাম?
- 15.14 উমর দাসী কি সহবতকারীকে শাস্তি দিয়েছেন?
- 16 ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে আবারো দাসপ্রথা আসবে
- 17 উপসংহার
- 18 তথ্যসূত্র
ভূমিকা
একজন মানুষের সবচাইতে মৌলিক এবং জরুরি অধিকারটি হচ্ছে, তার স্বাধীন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার। জন্মলাভের মধ্য দিয়েই প্রতিটি মানবশিশু স্বাধীন এবং মর্যাদাসম্পন্ন। খাঁচায় বন্দী পাখী কিংবা চিড়িয়াখানায় জন্তু জানোয়ারের মত তার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া যায় না। এই মৌলিক অধিকারটিই বিবৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের প্রথম ধারাটিতে [1] –
ধারা ১
সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাঁদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে; সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিৎ।
কিন্তু এই অধিকারটি যখন কেড়ে নেয়া হয়, তখন আসলে মনুষ্যত্বের সবচেয়ে বড় অপমান হয়। সেই কারণেই মানব ইতিহাসে মানুষের দ্বারা সংঘটিত সবচাইতে ভয়ঙ্কর অপরাধ এবং অন্ধকার এক অধ্যায়ের নাম দাসপ্রথা। প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগ, এমনকি এই আধুনিক যুগেও অনেক সমাজেই দাসপ্রথা সামাজিক ও আইনানুগভাবে অনুমোদিত ছিল। এ ব্যবস্থায় বাজারে মানুষের আনুষ্ঠানিক বেচা-কেনা চলত এবং কিনে নেয়া মানুষটি ক্রেতার ব্যক্তিগত সম্পত্তি রূপে কাজ করতে বাধ্য থাকতো। তার কোন স্বাধীন ইচ্ছা কিংবা স্বাধীনতা, কোনটিই থাকতো না। প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রায় সব শাসন ব্যবস্থাতেই দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। গবাদিপশুর মত বাজার বসতো, সেখানে প্রকাশ্যেই মানুষেরও কেনাবেচা চলত। শেকলে বেঁধে বন্দী মানুষদের সেখানে ওঠানো হতো, মূল্য নির্ধারণ করা হতো, দরাদরি করা হতো, গরু ভেড়ার মত পরীক্ষা করে দেখা হতো, এরপরে এর মালিকানা হস্তান্তর করা হতো।
আজকের দিনে এসব কল্পনা করাটিও অসম্ভব বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সেই সময়ে আসলেই এসব প্রথার বহুল প্রচলন ছিল। শুধু আইন পুস্তক ও প্রশাসনিক গ্রন্থেই নয়, এ প্রথা ধর্মগুলোতেও স্বীকৃতি ছিল। মানবিক ধর্মের দাবীদার অনেকগুলো ধর্মই একে বিলুপ্ত ঘোষণা না করে অনেক ক্ষেত্রে বরঞ্চ একে বৈধতাই দিয়েছে।
প্রাচীন ও মধ্যযুগের সেইসব অন্ধকার সময় পেরিয়ে মানব সভ্যতা আধুনিক যুগে এসে পৌঁছোবার পর সারা পৃথিবীতে এখন দাসপ্রথা একটি নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে পরিগণিত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের চতুর্থ ধারায় পরিষ্কারভাবে সেটি আমরা দেখতে পাই [1] –
ধারা ৪
কাউকে অধীনতা বা দাসত্বে আবদ্ধ করা যাবে না। সকল প্রকার ক্রীতদাস প্রথা এবং দাসব্যবসা নিষিদ্ধ করা হবে।
এই ধারার ফলাফল হিসেবেই, সারা পৃথিবীতে দাসপ্রথা আজকে নিষিদ্ধ এবং কাউকে কোন অবস্থাতেই দাস বানানো, দাস কেনাবেচা, দাসব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আমরা আধুনিক মানুষ কোন অবস্থাতেই দাসপ্রথাকে আর কোনদিনই পৃথিবীতে দেখতে চাই না। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আন্তর্জাতিক আইনকে অমান্য করে কোন না কোনভাবে এখনো দাসপ্রথা চালু রাখা হয়েছে, কিন্তু যে কোন মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষই বুঝবে, এই দাসপ্রথা কত বীভৎস একটি বিষয়।
ইতিহাস থেকে মধ্যযুগের ইউরোপে সর্বপ্রথম পঞ্চদশ শতকের শুরুতে দাসপ্রথা নিষিদ্ধকরণের যথাযথ সূচনা আমরা দেখতে পাই। দক্ষিণ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে তৎকালীন সময়ে একটি স্বাধীন নগররাষ্ট্র হিসেবে থাকা রাগুসা অথবা দুব্রভনিক নামক নগররাষ্ট্রটিতে, যা কিনা আধুনিক ক্রোয়েশিয়া রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত, দাসপ্রথা সর্বপ্রথম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ১৪১৬ সালে। আধুনিক যুগে নরওয়ে এবং ডেনমার্ক সর্বপ্রথম ১৮০২ সালে দাসবাণিজ্য বন্ধ করে। পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে ইউরোপ এবং আমেরিকাতে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয়।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করার আইনটি প্রণয়নের জন্য আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনকে তার স্বজাতি শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করতে হয়েছিল। আমেরিকার ইতিহাসে এই যুদ্ধ আমেরিকান সিভিল ওয়ার বা আমেরিকান গৃহযুদ্ধ নামে পরিচিত, যা ১৮৬১ সালে শুরু হয়ে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত চলেছিল। এ যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে তবেই আব্রাহাম লিংকন পুরো আমেরিকা জুড়ে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করার আইনটি বলবৎ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সর্বশেষ যেই দেশগুলো দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করার আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করে, তাদের মধ্যে মৌরিতানিয়া অন্যতম। ১৯৬২ সালে গ্রেইট ব্রিটেনের সরাসরি চাপের মুখে সৌদি আরব এবং ইয়েমেন দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করতে সম্মত হয়, এবং ১৯৭০ সালে একইভাবে ব্রিটেনের ক্রমাগত চাপের কারণে ওমানও দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করে [2]।
দাসপ্রথা কাকে বলে?
‘দাসত্ব’ অর্থ হল যেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন মানুষকে একটি অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করে তার স্বাধীনতাকে কেড়ে নেয়া এবং তাকে পারিশ্রমিক ছাড়াই শ্রম দিতে বাধ্য করার এক বর্বর সংস্কৃতি। একজন মালিক তার দাসকে যে কোন সময়ে বিক্রি করে দিতে পারেন, এবং মালিকই নির্ধারণ করতে পারেন তাকে দিয়ে কী কাজ করানো হবে। এই ক্ষেত্রে দাসের কোন মতামত বা ইচ্ছাকে কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না। প্রাচীনকালে এবং মধ্যযুগে মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাদেরকে দাসে পরিণত করা হতো। দাসত্ব হতে পারে কোন মানুষ শত্রুর হাতে আটক হলে, জন্মসূত্রে বা ক্রয় করার মাধ্যমে। এমনকি উপহার হিসেবেও দাস আদান প্রদান মধ্যযুগে বহুল প্রচলিত ছিল।
একজন সাধারণ শ্রমিকের কর্মকাঠামোর সাথে একজন দাসের কর্মকাঠামোর সুনির্দিষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যিনি শ্রমিক, তার নিজের ইচ্ছায় কাজের স্থান বা নিয়োগকারীকে ত্যাগ করার, কাজ না করার বা শ্রমের মজুরি পাবার পূর্ণ অধিকার থাকে। আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুসারে একজন সাধারণ শ্রমিকের সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা এবং ছুটি পাওয়ার অধিকার থাকে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুসারে, একজন শ্রমিককে কয় ঘণ্টা কাজ করানো যাবে, সপ্তাহে কয়ঘণ্টা তিনি কাজ করতে পারবেন, বছরে কতদিন ছুটি নিতে পারবেন, অসুস্থ হলে কিংবা উৎসবকালীন কতদিন ছুটি পাবেন সেগুলো আইন দ্বারা নির্ধারিত [3]। কিন্তু একজন শ্রমিকের সাথে একজন দাসের পার্থক্য এখানেই যে একজন দাসের কখনো কাজের স্থান বা মালিককে ত্যাগ করার, কাজ না করার বা শ্রমের মজুরি পাবার অধিকার থাকে না। ইসলাম ধর্মে দাসপ্রথাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং ইসলামের বিধান যেহেতু কিয়ামত পর্যন্ত প্রযোজ্য, তাই কিয়ামত পর্যন্ত যতদিন ইসলাম থাকবে, ততদিন দাসপ্রথার অস্তিত্ব থাকবে।
যুদ্ধবন্দী বা দাসী সহবাস হচ্ছে ‘ধর্ষণ’
ধর্ষণের সংজ্ঞা থেকে আমরা জানি যে,
সাধারণত একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্যভাবে চাপ প্রদান কিংবা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে। অনুমতি প্রদানে অক্ষম (যেমন- কোনো অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি) এরকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত [4] [5] [6]। দুইটি পক্ষের মধ্যে সংঘাত বা যুদ্ধের সময়ও ধর্ষণ কিংবা যুদ্ধবন্দীদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহারের মত ঘটনাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ধরণের ধর্ষণ গণহত্যার একটি উপাদান হিসেবেও স্বীকৃত।
একজন দাসী কিংবা যুদ্ধে বন্দী নারীর কখনো যৌনকাজে সম্মতি দানের অধিকার থাকে না। কারণ এই সময়ে তাদের না বলার কোন স্বাধীনতা থাকে না। না বলার স্বাধীনতা না থাকাটিই সম্মতির লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়। এই কারণে পুরো সভ্য বিশ্বে বন্দী হওয়া কিংবা দাসত্বের শেকলে আবদ্ধ মানুষের সাথে যে কোন যৌন আচরণ ধর্ষণ এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত। একজন যুদ্ধবন্দিনী, যার বাবা ভাই থেকে শুরু করে সব আত্মীয় স্বজন বিপক্ষের সৈন্যদের হাতে নিহত হলো, সেই নারীর পক্ষে শত্রু সৈন্যদের সাথে স্বেচ্ছায় যৌনকর্ম করা রীতিমত একটি অবাস্তব ব্যাপার।
ব্যাপারটি বুঝতে কষ্ট হলে আমি পাঠককে অনুরোধ করবো, নিজেকে সেই কাফেরের জায়গাতে বসিয়ে চিন্তা করে দেখুন, ভারতের সৈন্যরা আপনাকে হত্যা করে আপনার মা বোনকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ধরে নিয়ে গেলে, আপনার মা বোন স্বেচ্ছায় সেইসব সৈন্যদের বিছানা গরম করবে কিনা। নিজের ওপর আসলে বিষয়টির ভয়াবহতা বোঝাটি সহজ হয়। একজন যুদ্ধে বন্দী হওয়া মানুষ যেই পরিস্থিতিতে থাকে, তখন স্বাধীনভাবে কোন ধরণের ভয়ভীতি বা চাপ প্রয়োগ ছাড়া তার যৌন সঙ্গী বেছে নেয়া সম্ভবই নয়। যুদ্ধে জয়ী সৈন্যরা তখন কর্তৃত্বশীল। তাই তারা যেটি নির্দেশ দিবে সেটিই পালন করতে হবে। আর সম্মতি তখনই সে দিতে পারবে, যখন সে প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন এবং না বললে কোন ধরণের চাপের মুখে সে পড়বে না।
তখন যদি সে বিষয়টি মেনেও নেয়, তাহলেও ধরে নিতে হবে, তাকে ধর্ষণ করাই হয়েছে। কারণ মেনে নেয়া ছাড়া তার আর কী বা করার ছিল! তাই পুরো সভ্য বিশ্বে কোন পরাধীন বা যুদ্ধবন্দীর সাথে যৌনকর্ম সরাসরি ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য বাঙালি নারী পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়ে এবং ধর্ষণের শিকার হয়। বন্দী হওয়া মানুষদের কনসেন্ট না সম্মতি মূল্যহীন। তাই তাদের সাথে যেকোন যৌন আচরণই সংজ্ঞানুসারে ধর্ষণ এবং যুদ্ধাপরাধ। এটি গণহত্যার একটি উপাদানও বটে। একটি যুদ্ধে যারা বন্দী হয়, কিংবা বাজারে যাদেরকে বিক্রি করা হয়, সেইসব মানুষদের যেহেতু যৌন সঙ্গী বাছাই করার বা পছন্দ করার কোন সুযোগ থাকে না, যে তাকে কিনুক বা যে তার মালিক হোক তার সাথেই তার যৌন সঙ্গম করতে বাধ্য হতে হয়, এই কাজটি সংজ্ঞানুসারে ধর্ষণ। সেই হিসেবে ইসলামে বর্ণিত দাসী সহবত কিংবা যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে মালিকের সহবাসের অনুমতি সম্পূর্ণভাবে ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরে।
প্রাচীন বিশ্বে দাসপ্রথা নৈতিক ছিল?
যেকোন যুগে, যেকোন কালে, যেকোন সংস্কৃতিতেই দাসপ্রথা ছিল মানুষের দ্বারা করা অপরাধ এবং অনৈতিক কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। যুদ্ধ, দাসপ্রথা এবং ধর্ষণের মত বিষয়গুলো সকল যুগে সকল কালে সকল সভ্যতাতেই অনৈতিক ছিল। যেকোন যুগেই একজন মানুষকে ধরে এনে বাজারে বিক্রি এবং তাকে পশুর মত পরিশ্রমে বাধ্য করানো হলে সেই মানুষটি একই রকম কষ্ট অনুভব করবে, তার অধিকার একইভাবে লঙ্ঘিত হবে। কিন্তু প্রাচীনকালের মানুষের নৈতিকতার ধারণা এবং জ্ঞান অপেক্ষাকৃতভাবে কম থাকায় তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিল না, কিংবা অবগত থাকলেও কোন না কোন লোভে তারা দাসপ্রথাকে টিকিয়ে রেখেছিল। যেহেতু সমাজ ও আইন দ্বারা এগুলো সিদ্ধ ছিল, তাই আমরা তাদের কাজগুলোকে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করতে না পারলেও অন্যায় হিসেবে সাব্যস্ত করতে পারি।
নৈতিকতার প্রশ্নে সবচাইতে সহজে মানুষের বোধগম্য হয় নির্যাতিত মানুষটির জায়গাতে নিজেকে কল্পনা করলে। ধরুন, ২০০০ বছর পূর্বে আপনাকে কোন এক রাজ্যের রাজা দাস বানালো, আপনার কন্যাকে বানানো হলো তার যৌনদাসী। সেই অবস্থাতে আপনি কি একে নৈতিক কাজ বলে গণ্য করতেন? ২০০০ বছর আগে ঘটনাটি ঘটায় আপনি কী কম কষ্ট পেতেন? আজকে যদি আবারো দাসপ্রথা চালু হয়, আইনগত ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়, আপনার কাছে কি তখন একে নৈতিক মনে হবে? অন্যায় মনে হবে না? আমি মনে করি, নৈতিকতার প্রশ্নে স্থান কাল পাত্র নয়, বরঞ্চ মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কিনা, সেটিই একমাত্র বিবেচ্য।
অন্যায় এবং অপরাধের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, ন্যায় অন্যায় হচ্ছে নৈতিকতার সাথে সম্পর্কিত। আর অপরাধ হচ্ছে আইন ও বিচার ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত। তাই আমরা সেই যুগের মানুষের কাজকে অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করে তাদের শাস্তি প্রদান করতে পারি না, কারণ সেই সময়ে এর বিরুদ্ধে কোন আইন ছিল না। তবে নৈতিক দিক দিয়ে অবশ্যই যেকোন সমাজে যেকোন সংস্কৃতিতে এই কাজ অনৈতিক এবং অন্যায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি নৈতিকতাকে নিরঙ্কুশ মনে করি এবং ইমানুয়েল কান্ট ও পরবর্তী সময়ের দার্শনিকদের দ্বারা সমর্থিত এবসোলিউট মোরালিটিকে [7] নৈতিকতার ধারণা তৈরির জন্য যথার্থ মনে করি। তাই আমি মনে করি, একটি অন্যায় সকল সমাজ ও সকল সংস্কৃতিতেই অন্যায়। মানুষের জ্ঞান যত বৃদ্ধি পায় মানুষ তত সেই আদর্শ অবস্থার দিকে ধীরে ধীরে ধাবিত হয়। এগুলো অনেক বিশাল আলোচনা, পরে একদিন করা যাবে।
বিভিন্ন সভ্যতায় দাসপ্রথা কেমন ছিল?
প্রাচীনকালে বা মধ্যযুগে দাসদের সাথে যেই অমানবিক আচরণ করা হতো তা বর্ণনাতীত। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দাসত্বের শেকলে আবদ্ধ থাকতে হতো, সেখান থেকে মুক্তির কোন উপায় থাকতো না। মালিক চাইলে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করতে পারতো, এমনকি হত্যাও করতে পারতো। এগুলো যেমন সত্য, একইসাথে এটিও সত্য যে, কিছু কিছু সভ্যতায় দাসদের কিছু কিছু অধিকারও দেয়া হতো।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে দাসপ্রথার অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। মানব ইতিহাসে যত আইন কিংবা সংবিধান পাওয়া গেছে, তার মধ্যে কোড অফ উর নাম্মু অন্যতম। উর নাম্মু ছিলেন একজন প্রাচীন সুমেরীয় মহারাজা। তার চালু করা বিধিবিধানের অংশবিশেষ পাথরে খোদিত অবস্থায় বর্তমান ইরাকের একটি এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতায় খ্রিস্টপূর্ব ২১০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২০৫০ অব্দের মধ্যে খােদিত এই প্রাচীন সুমেরীয় ফলকে (পৃথিবীর প্রাচীনতম আইন-বিষয়ক ফলক) ক্রীতদাস সম্পর্কিত আইনবিধির [8] উল্লেখ রয়েছে।
এর প্রায় ৩০০ বছর পরে শুরু হওয়া প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় একজন বিখ্যাত মহারাজা হামুরাবি কর্তৃক প্রচলিত আইনবিধিতেও দাসপ্রথার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কয়েকটি সভ্যতাতেই ঋণের জন্য কাউকে দাসে পরিণত করা বা ঋণদাস প্রথা আইনগতভাবে অবৈধ ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৫৯৪ সালে, এথেন্সের সোলোন সম্পূর্ণভাবে ঋণদাস প্রথা নিষিদ্ধ করেন [9]।
এছাড়াও প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতায় কৃষিকাজে ক্রীতদাসরা নিযুক্ত হত বলে জানা যায়। পারস্য এবং প্রাচীন মিশরেও ক্রীতদাস প্রথার অস্তিত্ব ছিল। মিশরে অট্টালিকা ও পিরামিড নির্মাণে ক্রীতদাসরা নিযুক্ত হতো। প্রাচীন রােমে ক্রীতদাস প্রথা সবচেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। রােমান অর্থনীতি মূলত ক্রীতদাস প্রথার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। রোমান সাম্রাজ্যের কিছু কিছু শাসকের আমলে দাসেরা সম্পত্তির অধিকারও পেয়েছিল। অর্থাৎ তারা নিজেরা অর্থ উপার্জন করে সম্পত্তি ক্রয় করতে পারতো এবং নিজের জন্য সেই সম্পত্তি ব্যয় করতে পারতো [10]। এমনকি তারা কোন কাজে দক্ষ হলে সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করে সেই অর্থ দিয়ে দাসত্ব থেকে মুক্তও হতে পারতো [11] [12]।
সেনেকা ছিলেন একজন রোমান দার্শনিক, রাজনীতিবিদ এবং নাট্যকার। তার জন্ম ৪ খ্রিষ্টপূর্বে এবং মৃত্যু ৬৫ খ্রিস্টাব্দে। তিনি তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখো। তাদেরকে দাস বলো না, বরঞ্চ বলো তারা মানুষ, এবং বন্ধু [13] –
I am glad to learn, through those who come from you, that you live on friendly terms with your slaves. This befits a sensible and well-educated man like yourself. “They are slaves,” people declare. Nay, rather they are men. “Slaves!” No, comrades. “Slaves!” No, they are unpretentious friends. “Slaves!” No, they are our fellow-slaves, if one reflects that Fortune has equal rights over slaves and free men alike.
সেনেকা আরো লিখেছিলেন, দাসদের প্রতি মালিকদের সদয় ও নমনীয় হওয়া উচিত। জন্ম এবং ভাগ্যের কাছে সব মানুষই সমান। মানুষের আসল মূল্য নির্ভর করে কর্মের ওপর। কি ক্রীতদাস, কি অক্রীতদাস-হৃদয়ের স্বাধীনতার উপর সব মানুষের সমান অধিকার। তাই একজন দাসের পক্ষেও তার প্রভুর মত নৈতিক চরিত্র অর্জন করা সম্ভব। যদিও সেনেকা দাসপ্রথা বিলুপ্ত করা বিষয়ে কিছুই বলেননি, তবে সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে কথাগুলো দাসদের অনেকটিই পক্ষে ছিল।
দাসপ্রথা নিয়ে আলোচনা হবে আর সেখানে অসীম সাহসী বীর যোদ্ধা স্পার্টাকাসের নাম থাকবে না, সেটি হতেই পারে না। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যেই দাস বিদ্রোহ করে পুরো রোম সাম্রাজ্যের ভিত্তি কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি স্পার্টাকাস। তিনিই সর্বপ্রথম এত বড় একটি বিদ্রোহের জন্ম দিয়ে দাস মালিক ও দাস ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হন। যুগে যুগে তার এই বিদ্রোহ নিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্র নাটক গান তৈরি হয়েছে এবং হবে। যুগে যুগে এরকম দাস বিদ্রোহ আসলে দাস মালিকদের বাধ্য করে, দাসদের প্রতি সদয় হতে এবং তাদের সাথে পশুর মত ব্যবহার না করতে। নিজের স্বাধীনতা চাওয়া সকল যুগে সকল মানুষের জন্মগত অধিকার। তাই সেই যুগের দাসবিদ্রোহ গুলো ছিল সম্পূর্ণ নৈতিক এবং দাসদের কিছু কিছু অধিকারের ক্ষেত্রে এই বিদ্রোহগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ভারতেও একইভাবে দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে ও অশােকের শাসনামলেও দাসপ্রথার উল্লেখ পাওয়া যায়। কুষাণ ও গুপ্তযুগেও দাসব্যবস্থা চালু ছিল বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে দাসদের বেশ কিছু অধিকারের বর্ণনাও পাওয়া যায়। সেগুলো হচ্ছে,
কোন দাসকে মৃতকে বহন করার জন্য বা প্রস্রাব ঝাড়ু দেয়া কিংবা উচ্ছিষ্ট খাবার পরিষ্কার করার কাজে নিয়োগ করা; কিংবা কোন দাসকে নগ্ন করে রাখা; তাকে আঘাত করা বা গালি দেওয়া; অথবা দাসীর সম্মতি ছাড়া তার সতীত্ব লঙ্ঘন করলে তার জন্য প্রদত্ত মূল্য বাজেয়াপ্ত করা হবে। সতীত্ব লঙ্ঘনের সঙ্গে সঙ্গে তারা স্বাধীনতা অর্জন করবে [14]।
যখন একজন মালিক তার ক্রীতদাসীর সাথে ক্রীতদাসীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাস করবে, তখন মালিককে সেই কারণে শাস্তি দেওয়া হবে। যখন কোন পুরুষ তার কাছে বন্ধক রাখা কোন দাসীর সাথে ধর্ষণ করবে বা অন্য কাউকে ধর্ষণে সাহায্য করবে, তখন তাকে কেবল সেই দাসীর ক্রয়মূল্যই বাজেয়াপ্ত হবে না, একইসাথে ঐ দাসীকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে এবং সরকারকে দ্বিগুণ পরিমাণ জরিমানাও দিতে হবে [14]।
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ভারতীয় সম্রাট অশোক দাস বাণিজ্য বা দাসের বাজারের উচ্ছেদ করেন এবং দাসদের সাথে ভাল আচরণ করতে জনগণকে উৎসাহিত করেন [15]। মৌর্য সাম্রাজ্যে দাসদের এই অধিকারগুলো অনেকটি সময় ধরেই চালু ছিল।
প্রাচীন এই সভ্যতাগুলোকে দাসপ্রথা টিকিয়ে রাখার জন্য দায়ী করা যায়, তবে একই সাথে সত্য হচ্ছে, অনেক সভ্যতাতেই দাসদের কিছু কিছু অধিকার থাকার প্রমাণ মেলে। সেই সময়ের সাপেক্ষে সেগুলো অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য, কিন্তু তারপরেও সত্য হচ্ছে, তাদের কেউই দাসপ্রথাকে সরাসরি নিষিদ্ধ করতে পারেননি। এর জন্য অপেক্ষা করতে হয় বহু বহু বছর। তবে একইসাথে উল্লেখ করতে হয়, পরম করুনাময় ঈশ্বরের বার্তাবাহক কিংবা পুত্র কিংবা শেষ নবী হিসেবে দাবী করা মুসা, ইসা এবং মুহাম্মদ, এই তিনজনার একজনও দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ তো করেই নি, বরঞ্চ আক্রমণাত্মক জিহাদের মাধ্যমে কাফেরদের নারী ও শিশুদের দাসদাসী বানাতে উৎসাহিত করেছে। তারা যেই বিধান দিয়েছে, তার চেয়ে অনেক ভাল ও মানবিক বিধান ইতিহাসে যুগে যুগে মানুষই তৈরি করতে পেরেছে।
বর্তমান সময়ের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রও মানুষেরই তৈরি করা। অর্থাৎ ঐশ্বরিক বা আসমানি নৈতিকতার ভিত্তিতে সভ্য পৃথিবী আর বসে নেই। আমরা নিজেরাই এর চাইতে ভাল বিধান তৈরি করতে পেরেছি, যার ফলাফল হিসেবে যুদ্ধবন্দীদের দাস বানানো কিংবা তাদের যৌন কাজে নিয়োজিত করা সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাইবেলে দাসপ্রথার সমর্থন ও বৈধতা
পুরো পৃথিবীতে বর্তমান সময় পর্যন্ত সবচাইতে প্রভাবশালী ধর্ম হচ্ছে খ্রিস্টধর্ম। ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে বাইবেল। এর দুটি অংশ রয়েছে- পুরাতন নিয়ম বা পুরানো ইচ্ছাপত্র বা ওল্ড টেস্টামেন্ট, এবং নতুন নিয়ম বা নববিধান বা নিউ টেস্টামেন্ট। ইহুদি ধর্মে বিশ্বাসীদের বিশ্বাস অনুযায়ী ওল্ড টেস্টামেন্ট মুসা তথা মোজেসের উপর ঈশ্বরের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছিল, আর খ্রিস্টধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী নিউ টেস্টামেন্ট হচ্ছে ঈশ্বরপুত্র তথা স্বয়ং ঈশ্বর যীশুর বাণী। ইহুদিরা অবশ্য তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যীশু এবং নিউ টেস্টামেন্টকে অস্বীকার করে থাকেন। বাইবেলেও বহুস্থানেই রয়েছে দাসপ্রথার সমর্থনে ঈশ্বরের বক্তব্য। ঈশ্বর দাসপ্রথাকে সমর্থন করেছেন, মানুষকে দাসে পরিণত করার হুকুমও দিয়েছেন।
পুরাতন নিয়ম বা পুরানো ইচ্ছাপত্র বা ওল্ড টেস্টামেন্টের যাত্রাপুস্তকে বলা হয়েছে [16] –
কোনো পুরুষ যদি তার দাস-দাসীকে রড দিয়ে এমনভাবে আঘাত করে যাতে দাস-দাসী সাথে সাথে মারা যায় তাহলে সেই পুরুষের শাস্তি হবে। কিন্তু দাস-দাসী যদি দু-এক দিনের জন্য জীবিত থাকে তাহলে সেই পুরুষের কোনো শাস্তি হবে না, যেহেতু দাস-দাসী তার নিজস্ব সম্পত্তি।
নতুন নিয়ম বা নববিধান বা নিউ টেস্টামেন্টের তীত এ বলা হয়েছে [17] –
দাসদের তুমি এই শিক্ষা দাও; তারা যেন সবসময় নিজেদের মনিবদের আজ্ঞা পালন করে, তাদের সন্তুষ্ট রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে, এবং মনিবদের কথার প্রতিবাদ না করে। তারা যেন মনিবদের কিছু চুরি না করে এবং তাদের মনিবদের বিশ্বাসভাজন হয়৷ এইভাবে তাদের সমস্ত, আচরণে প্রকাশ পাবে যে আমাদের ত্রাণকর্তা ঈশ্বরের শিক্ষা উত্তম৷
নতুন নিয়ম বা নববিধান বা নিউ টেস্টামেন্টের লুক এর গসপেলে বলা হয়েছে [18] –
যে দাস তার মনিবের ইচ্ছা জেনেও প্রস্তুত থাকে নি, অথবা যে তার মনিবের ইচ্ছানুসারে কাজ করে নি, সেই দাস কঠোর শাস্তি পাবে৷ কিন্তু যে তার মনিব কি চায় তা জানে না, এই না জানার দরুন এমন কাজ করে ফেলেছে যার জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত, সেই দাসের কম শাস্তি হবে৷ যাকে বেশী দেওয়া হয়েছে, তার কাছ থেকে বেশী পাবার আশা করা হবে৷ যার ওপর বেশী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, লোকেরা তার কাছ থেকে অধিক চাইবে৷’
বাইবেলে ওল্ড টেস্টামেন্টের দ্বিতীয় বিবরণ বা ডিউটেরোনমিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবন্দী নারীদের গনিমতের মাল হিসেবে ঈশ্বর বিশ্বাসীরা নিয়ে আসতে পারবে, একমাস সেই মেয়ের মৃত আত্মীয়স্বজনদের জন্য কান্নাকাটির সময় দিতে হবে, এরপরে তাকে বিয়ে করা যাবে। তবে বিয়ে করে সুখী না হলে সেই মেয়েকে স্বাধীনভাবে যেখানে ইচ্ছে চলে যেতে দিতে হবে। তাকে বাজারে বিক্রি করা যাবে না। ক্রীতদাসীর মত আচরণও করা যাবে না।
বলা বাহুল্য যে, বাইবেলের এই বিধানও অত্যন্ত অসভ্য এবং বর্বর। তবে বাইবেলের এই বিধানটি কিন্তু তুলনামূলকভাবে ইসলামের বিধানের চাইতে ভাল। বাইবেলে যুদ্ধবন্দী নারীদের একমাস সময় দেয়ার বিধান রয়েছে, তার মৃত পরিবার পরিজনদের জন্য শোক পালন করার জন্য। সেইসাথে, একমাস পরে পছন্দ হলে তাকে বিয়ে করতে বলা হয়েছে, এবং সুখী না হলে তাকে স্বাধীনভাবে চলে যেতে দিতে বলা হয়েছে। উল্টোদিকে ইসলামে হায়েজের পরেই তার সাথে বিয়েশাদী ছাড়াই সঙ্গম করা যাবে, এবং তাদের সাথে আজল করে বাচ্চা জন্ম না দিয়ে পরে বিক্রি করা যাবে, আর বাচ্চা হয়ে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত তাকে ভোগ করা যাবে, এই বিধান দেয়া হয়েছে। আমরা ইসলামের বিধানটি পরবর্তীতে আলোচনা করবো, আপাতত বাইবেলের বিধানটি দেখে নিই [19] –
10 তোমরা তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলে তোমাদের প্রভু ঈশ্বর তাদের পরাজিত করতে তোমাদের সাহায্য করতে পারেন এবং তোমরা তোমাদের শত্রুদের বন্দী করে আনতে পারো।
11 বন্দীদের মধ্যে কোনো সুন্দরী স্ত্রীলোককে দেখে মুগ্ধ হয়ে তোমাদের স্ত্রী হিসেবে তোমরা চাইতে পারো।
12 তখন তাকে তোমার বাড়ীতে নিয়ে আসবে। সে অবশ্যই তার মাথা কামাবে এবং নখ কাটবে।
13 সে যে জামাকাপড়গুলি পরে আছে যার থেকে বোঝা যায় যে সে যুদ্ধে বন্দীনী ছিল, সেগুলি সে অবশ্যই খুলে ফেলবে। সে অবশ্যই পুরো এক মাস তোমার বাড়ীতে থাকবে এবং বাবা মাকে হারানোর জন্য বিলাপ করবে। এরপর তুমি তার কাছে যেতে পার এবং তার স্বামী হতে পার। সে তোমার স্ত্রী হবে।
14 যদি তুমি তার সঙ্গে সুখী না হও, তাহলে তুমি তাকে ত্যাগ করবে এবং তাকে স্বাধীনভাবে চলে যেতে দেবে। তুমি তাকে বিক্রি করতে পারবে না। তুমি কখনই তার সঙ্গে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করবে না কারণ তার সঙ্গে তোমার যৌন সম্পর্ক ছিল।
ইসলাম পূর্ব আরবসমাজে দাসপ্রথা
ইসলাম-পূর্ব আরবে দাসপ্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের ধরে এনে দাস হিসেবে বিক্রি করা হতো। সেই সময়ে আরবে নিয়মিত দাসবাজার বসত, যেখানে ধনী ব্যক্তিরা নিজেদের প্রয়োজন ও আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী দাস ও দাসী কিনতে পারতেন। এই সময়ে কিছু দাস-মালিক দাসদের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠুর আচরণ করতেন, তাদেরকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার করাতেন। তবে, অন্যদিকে কিছু মালিক দাসদের প্রতি সদয় ছিলেন এবং মানবিকভাবে তাদের সঙ্গে আচরণ করতেন বলেও জানা যায়। দাসদের মুক্ত করা সেই সমাজেও একটি মহৎ কাজ হিসেবে বিবেচিত হতো, এবং কিছু মালিক আনন্দের কোনো বিশেষ উপলক্ষ্যে বা খুশির সংবাদে দাস মুক্ত করতেন।
ইসলাম-পূর্ব আরবের এই সামাজিক প্রেক্ষাপটে দাসমুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে স্বীকৃত ছিল। এমনকি, ইসলামের আগমনের পূর্বে মক্কার একজন ধনী ব্যক্তি, যিনি পরবর্তীতে নবী মুহাম্মদ-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবী হন, পৌত্তলিক অবস্থায় থেকেই প্রায় ১০০ জন ক্রীতদাসকে মুক্ত করেছিলেন বলে জানা যায়। এটি প্রমাণ করে যে, দাসমুক্তি শুধু ধর্মীয় কারণেই নয়, বরং মানবিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও আরব সমাজে একটি ইতিবাচক কাজ হিসেবে গণ্য করা হতো। [20] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৫৫. ইসলাম গ্রহনের পূর্বেকার কুফরী জীবনের নেককাজসমূহের প্রতিদান প্রসঙ্গে
২২৬। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … উরওয়া ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, হাকীম ইবনু হীযাম (রাঃ) জাহিলী যুগে একশ’ ক্রীতদাস আযাদ করেছিলেন, মাল বোঝাই একশ’ উট দান করেছিলেন, ইসলাম গ্রহণ করার পরেও তিনি একশ’ ক্রীতদাস আযাদ করেন এবং মালামাল বোঝাই একশ উট সা’দকা করেন। পরে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে এসে প্রশ্ন করেন। এরপর বর্ণনাকারী উল্লেখিত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উরওয়াহ বিন যুবাইর (রহ.)
নবী মুহাম্মদের অন্যতম চরম শত্রু হিসেবে পরিচিত আবূ লাহাব, যাকে কোরআনের একটি সূরায় অভিশাপ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনিও নবীজির জন্মের সময়ে বিশেষ এক মানবিক কাজ করেছিলেন। হযরত মুহাম্মদের জন্মের সুসংবাদ শুনে আবূ লাহাব এতটাই আনন্দিত হয়েছিলেন যে, তিনি তার ক্রীতদাসী সুওয়ায়বাকে মুক্ত করে দেন। ঘটনাটি তখন ঘটে, যখন শিশুকালীন মুহাম্মদ তার আঙ্গুল ধরে রাখেন, যা দেখে আবূ লাহাব অত্যন্ত খুশি হন। এই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তিনি সুওয়ায়বাকে মুক্ত করেন, যাতে তিনি নবী মুহাম্মদকে দুধ পান করাতে পারেন। সুওয়ায়বা ছিলেন নবী মুহাম্মদের দুধমা, যিনি পরে তার দুধমাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেন। এই ঘটনা শুধু আবূ লাহাবের সেই মুহূর্তের আবেগকেই প্রকাশ করে না, বরং এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ইসলাম-পূর্ব আরব সমাজে দাসমুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে বিবেচিত হতো, এমনকি যাঁরা ইসলামের চরম বিরোধী ছিলেন তাঁরাও এই ধরনের মানবিক কাজে অংশগ্রহণ করতেন।
On the day the Prophet (peace be upon him) was born, Thuwayba rushed to her master Abu Lahab in joy and said, “Have you heard?! Aminah has just given birth to a son, for your brother Abdullah!” As was the custom of Arabs to show generosity at receiving good news, and since this was the newborn son (peace be upon him) of his recently deceased brother, Abu Lahab gestured with his thumb and forefinger, saying to Thuwayba, “Go, for you are free.” For this, his punishment in the Hereafter is lessened by a small sip of water equal to what could be held in the small curve of flesh at the base of the thumb till the forefinger (‘Abdur-Razzaq, Mussanaf).
সীরাত গ্রন্থ আর রাহীকুল মাখতূম গ্রন্থেও বিষযটির উল্লেখ হয়েছে [21] –
সুওয়ায়বা সম্পর্কে সহি হাদিসটিও জেনে নিই [22] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৯/ ভরণ-পোষণ
পরিচ্ছেদঃ ৬৯/১৬. দাসী ও অন্যান্য নারী কর্তৃক দুধ পান করানো।
৫৩৭২. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার বোন আবূ সুফিয়ানের মেয়েকে আপনি বিয়ে করুন। তিনি বললেনঃ তুমি কি তা পছন্দ কর? আমি বললাম, হাঁ। আমি তো আর আপনার অধীনে একা নই। যারা আমার সঙ্গে কল্যাণের অংশীদার, আমার বোনও তাদের অন্তর্ভুক্ত হোক, তাই আমি অধিক পছন্দ করি। তিনি বললেনঃ কিন্তু সে তো আমার জন্য হালাল হবে না। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! আমাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে, আপনি নাকি উম্মু সালামাহর মেয়ে দুর্রাকে বিয়ে করার ইচ্ছা করেছেন? তিনি বললেনঃ উম্মু সালামাহর মেয়েকে? আমি বললামঃ হাঁ। তিনি বললেনঃ আল্লাহর কসম! সে যদি আমার কোলে পালিত, পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত উম্মে সালামাহর গর্ভের সন্তান নাও-হতো, তবু সে আমার জন্য বৈধ ছিল না। সে তো আমার দুধ-ভাইয়ের কন্যা। সুওয়ায়বা আমাকে ও আবূ সালামাহকে দুধ পান করিয়েছে। সুতরাং তোমাদের কন্যা ও বোনদের আমার সামনে পেশ করো না।(1)
শু‘আইব যুহরী হতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘উরওয়াহ বলেছেনঃ সুওয়ায়বাকে আবূ লাহাব আযাদ করে দিয়েছিল। (৫১০১) আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৬৮)
(1) রক্ত সম্পর্ক যাকে হারাম করে, দুধ সম্পর্কও তাকে হারাম করে। রক্ত সম্পর্কিত বোন, কন্যা, ভাইঝি, ভাগনী ইত্যাদিকে যেমন বিয়ে করা হারাম, তেমনি দুধ সম্পর্কিত বোন, কন্যা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে ইত্যাদিকেও বিয়ে করা হারাম। রেজায়াত বা দুধ সম্পর্ক সাব্যস্ত হবার জন্য দু’টি শর্ত রয়েছে। তা হলঃ ১। সময়সীমাঃ দুধ পানকারীর বয়স দু বছরের কম হতে হবে। ২। একবার হলেও ক্ষুধা নিবারণ করে দুধ পান করা সাব্যস্ত হতে হবে যা হাদীসের ভাষায় দুয়ের অধিক পাঁচবার পর্যন্ত পান করার কথা বলা হয়েছে। মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ সহ অনেকেই বর্ণনা করেছেন। ফিকহুস সুন্নাহ ২য় খন্ড, ১০৬-১০৭ পৃষ্ঠা।)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হাবীবা (রাঃ)
আরেকটি হাদিস দেখে নিই [23] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৭/ বিয়ে
পরিচ্ছেদঃ ৬৭/২১. আল্লাহ্ বলেন,),‘‘তোমাদের জন্য দুধমাকে বিয়ে) হারাম করা হয়েছে।’’সূরাহ আন্-নিসা ৪/২৩)
৫১০১. উম্মু হাবীবাহ বিনতে আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার বোন আবূ সুফিয়ানের কন্যাকে বিয়ে করুন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এটি পছন্দ কর? তিনি উত্তর করলেন, হাঁ। এখন তো আমি আপনার একক স্ত্রী নই এবং আমি চাই যে, আমার বোনও আমার সঙ্গে উত্তম কাজে অংশীদার হোক। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, এটি আমার জন্য হালাল নয়। আমি বললাম, আমরা শুনতে পেলাম, আপনি নাকি আবূ সালামাহর মেয়েকে বিয়ে করতে চান। তিনি বললেন, তুমি বলতে চাচ্ছ যে, আমি উম্মু সালামাহর মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যদি সে আমার প্রতিপালিতা কন্যা না হত, তাহলেও তাকে বিয়ে করা হালাল হত না।
কেননা, সে দুধ সম্পর্কের দিক দিয়ে আমার ভাতিজী। কেননা, আমাকে এবং আবূ সালামাহকে সুওয়াইবা দুধ পান করিয়েছে। সুতরাং, তোমরা তোমাদের কন্যা ও বোনদেরকে বিয়ের জন্য পেশ করো না। ‘উরওয়াহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, সুওয়াইবা ছিল আবূ লাহাবের দাসী এবং সে তাকে আযাদ করে দিয়েছিল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দুধ পান করায়। আবূ লাহাব যখন মারা গেল, তার একজন আত্মীয় তাকে স্বপ্নে দেখল যে, সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হয়েছে। আবূ লাহাব বলল, যখন থেকে তোমাদের হতে দূরে আছি, তখন থেকেই ভীষণ কষ্টে আছি। কিন্তু সুওয়াইবাকে আযাদ করার কারণে কিছু পানি পান করতে পারছি। (৫১০৬, ৫১০৭, ৫১২৩, ৫৩৭২; মুসলিম ১৭/৪, হাঃ ১৪৪৯, আহমাদ ২৭৪৮২)(আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু হাবীবা (রাঃ)
ইসলামে দাসপ্রথার সমর্থন ও বৈধতা
ইসলামের ইতিহাসে ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন, ধ্রুপদী পণ্ডিতদের রচিত অসংখ্য তাফসীর এবং হাদিস গ্রন্থে দাসপ্রথার প্রসঙ্গ বারবার উঠে এসেছে এবং সেগুলোতে দাসপ্রথাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই লেখায়, আমরা ধীরে ধীরে সেই সকল আয়াত এবং হাদিসগুলো বিশদভাবে আলোচনা করব। কোরআনে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহই কিছু মানুষকে অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, অর্থাৎ আল্লাহই কাউকে দাস এবং কাউকে মালিক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। একইসাথে, আল্লাহ তিরস্কারের সুরে মানুষকে জিজ্ঞাসা করেছেন: “তোমরা কি তোমাদের দাসদের নিজেদের সম্পদ বা জীবনোপকরণের অংশীদার করো? যদি না করো, তাহলে আল্লাহ কেন তাঁর ইবাদতের অধিকার থেকে কিছুটা ছাড় দেবেন?” আসুন, এই আয়াতটি এবং মা’আরেফুল কোরআন থেকে এর তাফসীর বিশদভাবে পর্যালোচনা করি [24] [25],
আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয়না যাতে তারা এ বিষয়ে সমান হয়ে যায়; তাহলে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?
— Sheikh Mujibur Rahman
আর আল্লাহ রিয্ক তোমাদের কতককে কতকের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন; কিন্তু যাদেরকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, তারা তাদের রিয্ক দাসদাসীদের ফিরিয়ে দেয় না। (এই ভয়ে যে,) তারা তাতে সমান হয়ে যাবে। তবে তারা কি আল্লাহর নিআমতকে অস্বীকার করছে?
— Rawai Al-bayan
আর আল্লাহ্ জীবনোপকরণে তোমাদের মধ্যে কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাসদাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায় [১]। তবে কি তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ অস্বীকার করছে [২]?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
ইসলামের বিধান কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তনীয়
ইসলামের মৌলিক শিক্ষার মধ্যে অন্যতম হলো, নবী মুহাম্মদ (সা.) যেই ফয়সালা দেন, তা বিন্দুমাত্র দ্বিধা বা কুণ্ঠাবোধ ছাড়াই সম্পূর্ণভাবে মেনে নেওয়া এবং সেই ফয়সালার প্রতি নিজেকে সমর্পণ করাই প্রকৃত ইমানের পরিচয়। এ বিষয়ে কুরআনের সুরা নিসার ৬৫ নাম্বার আয়াতের অনুবাদ থেকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, নবীর আদেশ ও রায় মেনে চলা বাধ্যতামূলক এবং তা কোনোভাবেই অমান্য করা যাবে না। নবী মুহাম্মদ-এর জীবদ্দশায় তার ওপর ওহী (ঐশী বার্তা) নাজিল হতো, যা ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহর নির্দেশাবলী। কিন্তু নবী মুহাম্মদ-এর ইন্তেকালের পর ওহী নাজিলের পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে, ইসলামের মূল বিধান এবং শরিয়াহ আইনগুলোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন বা পরিমার্জন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং হারাম বলে বিবেচিত। ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, নবীর রায় বা আদেশ পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই, কারণ ওহী বা নবীর ফয়সালা হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি প্রেরিত নির্দেশনা, যা সর্বদা অপরিবর্তনীয় এবং শাশ্বত সত্য হিসেবে স্বীকৃত [26] –
কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের বিবাদ-বিসম্বাদের মীমাংসার ভার তোমার উপর ন্যস্ত না করে, অতঃপর তোমার ফয়সালার ব্যাপারে তাদের মনে কিছু মাত্র কুণ্ঠাবোধ না থাকে, আর তারা তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সমর্পণ করে।
— Taisirul Quran
অতএব তোমার রবের শপথ! তারা কখনই বিশ্বাস স্থাপনকারী হতে পারবেনা, যে পর্যন্ত তোমাকে তাদের সৃষ্ট বিরোধের বিচারক না করে, অতঃপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং ওটি সন্তষ্ট চিত্তে কবূল না করে।
— Sheikh Mujibur Rahman
অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।
— Rawai Al-bayan
কিন্তু না, আপনার রবের শপথ! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের [১] বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের মনে কোনো দ্বিধা না থাকে [২] এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয় [৩]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
একইসাথে, ইসলামের একটি অপরিবর্তনীয় নীতি হলো, নবী মুহাম্মদ যেসব কাজকে নিজে নিষিদ্ধ করেননি বা হারাম ঘোষণা করেননি, তা পরবর্তীতে কোনো মুসলমান বা আলেমের পক্ষে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা বৈধ নয়। নবী মুহাম্মদ-এর সিদ্ধান্ত ও বিধানই ইসলামের চূড়ান্ত নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং তার অনুমোদিত বা বৈধতা দেওয়া কাজগুলোকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা কারো নেই। একইভাবে, নবী মুহাম্মদ যে বিষয়গুলোকে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গেছেন, সেগুলোকে কেউই পরবর্তীতে হালাল বা বৈধ ঘোষণা করতে পারবে না। ইসলামের দৃষ্টিতে, এটি একটি অপরিবর্তনীয় আইন, যা নবীর মৃত্যুর পরও অক্ষুণ্ণ থাকে। ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী, নবী মুহাম্মদ-এর ফয়সালা এবং নির্দেশাবলী সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত, তাই কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা এই বিধানগুলোতে পরিবর্তন আনার বা নতুন বিধান জারি করার অধিকার রাখে না। তাঁর নির্ধারিত হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধের সীমারেখাকে অমান্য করা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের বিপরীত বলে বিবেচিত হয়। এই বিষয়ে বুখারী শরীফের একটি হাদিস দেখে নিই [27] [28] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৫/ কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ
পরিচ্ছেদঃ ৩০৯৭. কোন বিষয় নবী (সাঃ) কর্তৃক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন না করাই তা বৈধ হওয়ার প্রমাণ। অন্য কারো অস্বীকৃতি বৈধতার প্রমান নয়
৬৮৫৩। হাম্মাদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবনু মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে আল্লাহর কসম খেয়ে বলতে শুনেছি যে, ইবনু সায়িদ অবশ্যই (একটি) দাজ্জাল। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর কসম খেয়ে বলছেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ আমি উমর (রাঃ) কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপস্থিতিতে কসম খেয়ে এ কথা বলতে শুনেছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা অস্বীকার করেননি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (রহঃ)
এবারে আসুন এই হাদিসটির ব্যাখ্যা পড়ে নিই নাসরুল বারী থেকে [29] –
এই হাদিসটি থেকে সুস্পষ্ট যে, নবী যা হালাল করেছেন, এমনকি যা তিনি অবৈধ করেননি, অস্বীকৃতি জানাননি, তা পরবর্তী সময়ের যতবড় ইসলামের আলেমই হোক না কেন, সে তা অবৈধ বলার যোগ্যতা রাখে না। ইসলাম যদি দাসপ্রথাকে হালাল করে থাকে, পরবর্তীতে কোন মুসলিমের পক্ষে একে হারাম সাব্যস্ত করা বা অনৈতিক ও বেআইনি ঘোষণা করা অসম্ভব।
আধুনিক যুগেও দাসপ্রথার সমর্থন ও বৈধতা
সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ইসলামিক আলেম শায়েখ সালেহ আল-ফাওজান হচ্ছেন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংস্থা “ঊর্ধ্বতন উলামা পরিষদ”-এর একজন সদস্য যা ধর্মীয় ব্যাপারে বাদশাহকে উপদেশ প্রদান করে থাকে। ইসলামী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদান স্থায়ী কমিটি “ঊর্ধ্বতন উলামা পরিষদ” সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত একটি ইসলাম বিষয়ক পরিষদ। এই পরিষদটি ঊর্ধ্বতন ধর্মতত্ত্ববিদের দ্বারা ইসলামী আইন বা ফিকাহ-এর বিষয় ও বিধিবিধান এবং গবেষণা পত্র প্রণয়ন করে থাকে। তিনি যা বলেছেন, তা ইংরেজিতে অনুবাদ করলে হয় [30] –
“Slavery is a part of Islam. Slavery is part of jihad, and jihad will remain as long there is Islam.”
শাইখ সালেহ আল ফাওজানের কথাটি ইংরেজি থেকে বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায়-
দাসপ্রথা ইসলামের অঙ্গ। দাসপ্রথা জিহাদেরও অঙ্গ, এবং যতদিন ইসলাম ধর্ম থাকবে ততদিন জিহাদও থাকবে।
এবারে আসুন দাসপ্রথা এবং দাসদাসী সম্পর্কে বাঙলাদেশের আলেমদের বক্তব্য শুনে নেয়া যাক,
আক্রমণাত্মক জিহাদঃ ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
আক্রমণাত্মক জিহাদ, আরবিতে যা “জিহাদ আত-তালাব” বা “জিহাদ আত-ত্বলাব” (جهاد الطلب) নামে পরিচিত, এর অর্থ “জিহাদের ঘোষণা”, যা অমুসলিমদের কাছে ইসলাম গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ পাঠানোর প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত। একটি ইসলামি রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের খলিফার একটি অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে, অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ইসলামের পথে আসার আহবান জানানো, এবং তারা সেটি না করলে তাদেরকে আক্রমণের হুমকি দেয়া। ধ্রুপদী ইসলামি উৎসগুলোতে “দার আল-হার্ব” (যুদ্ধের অঞ্চল বা অমুসলিমদের ভূমি) এর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক জিহাদ পরিচালনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না পৃথিবীর সমস্ত গৃহে আল্লাহর হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ধরনের জিহাদকে মুসলমানদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি বিভিন্ন উপায়ে সম্পাদিত হতে পারে।
শুধু তাই নয়, এই যুদ্ধ ও লড়াই হতে হবে সর্বাত্মক এবং আগ্রাসী, কোন যুদ্ধনীতি অনুসরণ ছাড়াই এই সকল যুদ্ধ চলতে পারে। নবী মুহাম্মদ বলেছেন, “যুদ্ধ হল প্রতারণা”, অর্থাৎ যুদ্ধে কাফেরদের সাথে সকল প্রতারণা এবং ধোঁকাবাজি ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ। এর ফলে, জিহাদের পথে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য চুক্তি, শপথ, এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং প্রতারণার অন্যান্য সকল ধরণকে বৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক যুগের আলেমগণের, এমনকি বর্তমান সময়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আলেমগণের একটি সাধারণ ঐক্যমত্য রয়েছে যে, জিহাদ একটি চিরন্তন দায়িত্ব, যতক্ষণ না “ধর্ম কেবল আল্লাহর জন্য” হয়। তবে, আলেমদের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে যে, খলিফা এবং মুমিনদের নেতা ছাড়া জিহাদ বৈধভাবে পরিচালিত হতে পারে কি না। এই মতপার্থক্য সালাফি-জিহাদিদের এবং রক্ষণশীল কিন্তু নীরব সালাফি গোষ্ঠীর মধ্যে একটি বড় বিতর্কের কারণ। বর্তমান সময়ের অধিকাংশ জিহাদিরা বিশ্বাস করে যে, জিহাদ পরিচালনার জন্য একজন খলিফার উপস্থিতি প্রয়োজনীয় নয়, বা নিজেরাই খলিফা নির্বাচিত করে এই জিহাদ পরিচালনা করা যেতে পারে। তবে রক্ষণশীল সালাফিরা মনে করেন, খলিফা ছাড়া এই জিহাদ বৈধ নয়, তাই বর্তমান সময়ের জিহাদের কোন বৈধতা নেই। যদি খলিফা নির্বাচিত হয়, তখনই এই সমস্ত কাজকর্ম বৈধ হবে। অর্থাৎ, জিহাদের পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে উভয়েই একমত, শুধুমাত্র জিহাদের সূচনা খলিফার পক্ষ থটকে হবে নাকি খলিফা ছাড়া করা যাবে, এই নিয়েই তাদের মত পার্থক্য।
ইউরোপ আমেরিকাতে লেখাপড়া করা মডার্নিস্ট ইসলামিক আলেমদের একটি বড় অংশ যুক্তি দেন যে, ধ্রুপদী ইসলামিক ব্যাখ্যাগুলি অনেকাংশে ভুল এবং বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় অপ্রয়োজনীয়। তারা মনে করেন, কোরআনের ব্যাখ্যায় আক্রমণাত্মক জিহাদ, অন্য দেশ আক্রমণ, ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা, জিজিয়া আরোপ করা ইত্যাদি আর প্রয়োজন নেই, এবং বর্তমানে সকল ধর্মের মানুষের সাথে মিলেমিশে শাস্তিপূর্ণ সহাবস্থানই বৈশ্বিক লক্ষ্য হওয়া উচিত। অন্যদিকে যারা ইসলামের প্রাথমিক যুগের সাহাবী এবং তাবে-তাবেইনদের জীবনকে অনুসরণ করতে চান, তারা মনে করেন জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত একটি অবশ্য কর্তব্য বিধান।
যদিও আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে জিহাদ কখন পরিচালিত হবে, খলিফা সহ নাকি খলিফা ছাড়া নাকি নিজেরাই খলিফা নির্বাচন করে করা যাবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, তবুও ইসলামিক আলেমদের সাধারণ ঐক্যমত্য রয়েছে যে, “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ” অর্থাৎ “অমুসলিমদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে জিহাদ” প্রতিটি সক্ষম মুসলিম পুরুষের জন্য একটি দায়িত্ব, বিশেষ করে যখন মুসলিম ভূমিগুলি হুমকির সম্মুখীন হয়। এটি এমন একটি দায়িত্ব যা ইসলামের আধিপত্য বিস্তার, সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে একটি ইসলামিক দল দ্বারা পূর্ণ হতে হবে।
আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
কোরআন এবং হাদিসের বহুস্থানেই অমুসলিম কাফের অঞ্চলগুলোতে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তারা ইসলাম কবুল না করলে নতি স্বীকার করে তাদের জীবনের মূল্য হিসেবে তাদের ওপর অবমাননাকর জিযিয়া কর আরোপের কথা বলা হয়েছে, সেটিতেও সম্মত না হলে তাদের আক্রমণ করে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সব অঞ্চলের নারী ও শিশুদের মুসলিমরা দাস হিসেবে গ্রহণও করতে পারবে, আবার বিক্রিও করে দিতে পারবে। এই বিষয়টিই আমরা বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে সরাসরি প্রমাণ করবো। আলোচনার শুরুতেই আসুন একটি ওয়াজ শুনে নিই,
আসুন আর একটি ওয়াজ শুনি, এই ওয়াজের দলিল প্রমাণ লেখার পরবর্তীতে ধাপে বর্ণিত হবে,
কোরআনে আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
অনেক মুসলিমই আজকাল লাজলজ্জার মাথা খেয়ে কোরআনের সূরা বাকারার ১৯০ নম্বর আয়াতের উদ্দৃতি দিয়ে বলবার চেষ্টা করেন যে, ইসলাম কখনোই প্রথমে আক্রমণের হুকুম দেয় না! ইসলামে নাকি যুদ্ধ শুধুমাত্র রক্ষণাত্মক! এগুলো যে ডাহা মিথ্যা কথা, তা অল্প একটু পড়ালেখা করলেই বোঝা যায়। নবী মুহাম্মদ তার জীবনে যতগুলো যুদ্ধ করেছিলেন, সেগুলোর অধিকাংশই ছিল আক্রমণাত্মক। বানু কুরাইজা [31] গোত্রকে এক দিনে আক্রমণ করে উধাও করে ফেলা হয়। ৬০০-৯০০ জলজ্যান্ত মানুষকে একদিনে জবাই করা হয়। সেটি ছিল সম্পূর্ণই আক্রমণাত্মক বা নির্মম গণহত্যা। এছাড়াও মুহাম্মদ মক্কার আশেপাশে অনেকগুলো গোত্রকে আক্রমণ করতে খালিদ বিন ওয়ালিদ সহ অনেককেই পাঠিয়েছিল [32]। এছাড়াও সূরা তওবা নাজিলের প্রেক্ষাপট দেখলে বোঝা যায়, এসময়ে কোন যুদ্ধই ছিল না। কাফেররা সেসময়ে মুসলিমদের অনুগতই ছিল, তাদের দ্বারা শাসিত ছিল। এরপরেও সূরা তওবার প্রথম ৪০ আয়াত নাজিল হয় এবং কাফেরদের যেখানেই পাওয়া যাবে হত্যা করার হুকুম আসে। এছাড়াও আবু বকরের খিলাফতে ধর্মত্যাগী এবং যাকাত দিতে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে আবু বকর জিহাদ চালিয়েছিল। সেসময়ে তিনি সেই সকল গোত্রকে আক্রমণ আগ বাড়িয়েই আক্রমণ করেছেন। আক্রমণাত্মক জিহাদকে অস্বীকার করলে নবী মুহাম্মদ ও তার সাহাবাগণ সকলকেই তাহলে কাফের এবং কোরআনের এই আয়াতের বিরোধীতাকারী হিসেবে গণ্য করতে হয়। সেগুলো পরে ধীরে ধীরে আলোচনা করা হবে। আপাতত আসুন সূরা বাকারার ১৯০ নম্বর আয়াত ও তার তাফসীর পড়ে দেখা যাক [33]। তাফসীর পড়লেই সব পরিষ্কার হয়ে যায় –
পাঠক লক্ষ্য করুন, এই আয়াতটি নাজিলের প্রেক্ষাপট। এই সময়ে অর্থাৎ হিজরতের পরে নবী মক্কায় গিয়েছিলেন হজ্ব করতে। এই সময়ে স্বাভাবিকভাবেই নবী শান্তির বাণী শুনিয়েছিলেন, কারণ তার তখন মক্কায় যাওয়া জরুরি ছিল। মক্কায় তখন কুরাইশ পৌত্তলিকরা শক্তিশালী। যেই মুহাম্মদ মক্কার দেবদেবীদের গালমন্দ করতো, তাদের ধর্মের সমালোচনা করতো, এরপরেও মক্কার পৌত্তলিক কাফেরগণ অনেক সৌজন্য দেখিয়ে পরের বছর পুরো মক্কা খালি করে মুহাম্মদকে ওমরা করার অনুমতি দেন। কিন্তু পরবর্তীতে মুহাম্মদের মক্কা দখলের পরেই অর্থাৎ মুসলিমরা শক্তিশালী হয়ে যাওয়ার পরেই নাজিল হয়ে যায় সূরা তওবা। যেখানে মুশরিকদের যেখানেই পাওয়া যাবে হত্যা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে!
ইসলামে ধর্মে ধর্ম প্রসারের স্বার্থে অমুসলিম রাষ্ট্রে আক্রমণাত্মক জিহাদ পরিচালনা করা এবং অমুসলিমদের তরবারির জোরে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা সম্পূর্ণ বৈধ। কোরআনে এই বিষয়ে খুব পরিষ্কার বিধান উল্লেখ করা রয়েছে। আসুন এই সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতগুলো একসাথে পড়ি, [34] [35] [36] [37] [38] [39] –
তারপর (এই) নিষিদ্ধ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর, তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে ঘেরাও কর, তাদের অপেক্ষায় প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু তারা যদি তাওবাহ করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।
— Taisirul Quran
অতঃপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলি অতীত হয়ে যায় তখন ঐ মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে তাদের সাথে যুদ্ধ কর এবং হত্যা কর, তাদেরকে ধরে ফেল, তাদেরকে অবরোধ করে রাখো এবং তাদের সন্ধানে ঘাঁটিসমূহে অবস্থান কর। অতঃপর যদি তারা তাওবাহ করে, সালাত আদায় করে এবং যাকাত প্রদান করে তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাপরায়ণ, পরম করুণাময়।
— Sheikh Mujibur Rahman
অতঃপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে বসে থাক। তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে, আর যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
— Rawai Al-bayan
অতঃপর নিষিদ্ধ মাস [১] অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা কর [২], তাদেরকে পাকড়াও কর [৩], অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাক; কিন্তু যদি তারা তাওবাহ্ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয় [৪] তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও [৫]; নিশ্চয় আল্লাহ্ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু [৬]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাও যে পর্যন্ত না ফিতনা (কুফর ও শিরক) খতম হয়ে যায় আর দ্বীন পুরোপুরিভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। অতঃপর তারা যদি বিরত হয় তাহলে তারা (ন্যায় বা অন্যায়) যা করে আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
— Taisirul Quran
তোমরা সদা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকবে যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। আর তারা যদি ফিতনা ও বিপর্যয় সৃষ্টি হতে বিরত থাকে তাহলে তারা কি করেছে তা আল্লাহই দেখবেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। তবে যদি তারা বিরত হয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে সে বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।
— Rawai Al-bayan
আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফেৎনা দূর হয় এবং দীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যায় [১] তারপর যদি তারা বিরত হয় তবে তারা যা করে আল্লাহ্ তো তার সম্যক দ্রষ্টা।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
ফিতনা দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত এবং দীন আল্লাহর জন্য নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, অতঃপর যদি তারা বিরত হয় তবে যালিমদের উপরে ছাড়া কোনও প্রকারের কঠোরতা অবলম্বন জায়িয হবে না।
— Taisirul Quran
ফিতনা দূর হয়ে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ কর; অতঃপর যদি তারা নিবৃত্ত হয় তাহলে অত্যাচারীদের উপর ব্যতীত শত্রুতা নেই।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যে পর্যন্ত না ফিতনা খতম হয়ে যায় এবং দীন আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। সুতরাং তারা যদি বিরত হয়, তাহলে যালিমরা ছাড়া (কারো উপর) কোন কঠোরতা নেই।
— Rawai Al-bayan
আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যতক্ষণ না ফেত্না [১] চুড়ান্ত ভাবে দূরীভূত না হয় এবং দীন একমাত্র আল্লাহ্র জন্য হয়ে যায়। অতঃপর যদি তারা বিরত হয় তবে যালিমরা [২] ছাড়া আর কারও উপর আক্রমণ নেই।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।
– MUHIUDDIN KHAN
যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না, আর শেষ দিনের প্রতিও না, আর আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করেছেন তাকে হারাম গণ্য করে না, আর সত্য দ্বীনকে নিজেদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে না তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর যে পর্যন্ত না তারা বশ্যতা সহকারে স্বেচ্ছায় ট্যাক্স দেয়।
— Taisirul Quran
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখেনা এবং কিয়ামাত দিনের প্রতিও না, আর ঐ বস্তুগুলিকে হারাম মনে করেনা যেগুলিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল হারাম বলেছেন, আর সত্য ধর্ম (অর্থাৎ ইসলাম) গ্রহণ করেনা, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাক যে পর্যন্ত না তারা অধীনতা স্বীকার করে প্রজা রূপে জিযিয়া দিতে স্বীকার করে।
— Sheikh Mujibur Rahman
তোমরা লড়াই কর আহলে কিতাবের সে সব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, আর সত্য দীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিয্য়া দেয়।
— Rawai Al-bayan
যাদেরকে কিতাব প্রদান করা হয়েছে [১] তাদের মধ্যে যারা আল্লাহ্তে ঈমান আনে না এবং শেষ দিনেও নয় এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম গণ্য করে না, আর সত্য দীন অনুসরণ করে ন; তাদের সাথে যুদ্ধ কর [২], যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে নিজ হাতে জিয্ইয়া [৩] দেয় [৪]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
SAHIH INTERNATIONAL
Fight those who do not believe in Allah or in the Last Day and who do not consider unlawful what Allah and His Messenger have made unlawful and who do not adopt the religion of truth from those who were given the Scripture – (fight) until they give the jizyah willingly while they are humbled.
কোরআন ৯/২৯
নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের কাছ থেকে তাদের জান আর মাল কিনে নিয়েছেন কারণ তাদের জন্য (বিনিময়ে) আছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। অতঃপর (দুশমনদের) হত্যা করে এবং (নিজেরা) নিহত হয়। এ ওয়া‘দা তাঁর উপর অবশ্যই পালনীয় যা আছে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে। আল্লাহর চেয়ে আর কে বেশী নিজ ওয়া‘দা পালনকারী? কাজেই তোমরা যে ক্রয় বিক্রয় সম্পন্ন করেছ তার জন্য আনন্দিত হও, আর এটাই হল মহান সফলতা।
— Taisirul Quran
নিঃসন্দেহে আল্লাহ মু’মিনদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন সম্পদসমূহকে এর বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন যে, তাদের জন্য জান্নাত রয়েছে, তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা (কখনও) হত্যা করে এবং (কখনও) নিহত হয়, এর কারণে (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জীলে এবং কুরআনে। নিজের অঙ্গীকার পালনকারী আল্লাহ অপেক্ষা অধিক আর কে আছে? অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাক তোমাদের এই ক্রয় বিক্রয়ের উপর, যা তোমরা সম্পাদন করেছ, আর এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সংগে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় আল্লাহ্ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত। তারা আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইনজীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের হক ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? সুতরাং তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও। আর সেটাই তো মহাসাফল্য [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
হে মু’মিনগণ! যে সব কাফির তোমাদের নিকটবর্তী তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যাতে তারা তোমাদের মধ্যে দৃঢ়তা দেখতে পায়, আর জেনে রেখ যে, আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন।
— Taisirul Quran
হে মু’মিনগণ! ঐ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ কর যারা তোমাদের আশেপাশে অবস্থান করছে, যেন তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা খুঁজে পায়; আর জেনে রেখ যে, আল্লাহ পরহেযগারদের সাথে রয়েছেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
— Rawai Al-bayan
হে ঈমানদারগণ! কাফেরদের মধ্যে যারা তোমাদের কাছাকাছি তাদের সাথে যুদ্ধ কর [১] এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা [২] দেখতে পায়। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তাফসীরে আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
ইসলামের জিহাদের মূল ধারণা বোঝার জন্য শুরুতেই সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতটির তাফসীর পড়ে নিই। এই তাফসীরটি আপনারা পাবেন তাফসীরে মাযহারী পঞ্চম খণ্ডে। হানাফী মাযহাবের একনিষ্ঠ অনুসারী বিশ্ববিখ্যাত সুন্নি ইসলামী পন্ডিত আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথীর লেখা এই তাফসীর কোরআনকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ [40] –
এবং তোমরা তাহাদিগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে থাকিবে যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহের দ্বীন সামগ্রীকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যদি তাহারা বিরত হয় তবে তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।
যদি তাহারা মুখ ফিরায় তবে জানিয়া রাখ যে আল্লাহ্ই তোমাদিগের অভিভাবক এবং কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী ।
( সূরা আনফালঃ ৩৯, ৪০ )
প্রথমে বলা হয়েছে এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফেতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফেতনা অর্থ বিশৃংখলা। আর পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় বিশৃংখলা হচ্ছে শিরিক ( অংশীবাদিতা )। আলোচ্য বাক্যে ফেতনা অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কথার অর্থ-মুশরিকেরা যতক্ষণ পর্যন্ত শিরিক পরিত্যাগ না করবে, অথবা মুসলমানদের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে জিযিয়া দিতে সম্মত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংগ্রাম করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। আলোচ্য নির্দেশনাটিতে এ রকম বলা হয়নি যে, সকল অংশীবাদী ও অবিশ্বাসীকে যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করতে হবে। এ রকম মনে করা হলে আলোচ্য আয়াতটি চলে যাবে জিযিয়া দিতে সম্মত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরো না। সুতরাং – এই আয়াতের নির্দেশনাটি দাঁড়াচ্ছে এ রকম অবিশ্বাসীরা ইসলাম গ্রহণ না করা পর্যন্ত অথবা জিযিয়া প্রদানের মাধ্যমে পূর্ণ অনুগত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এখানে দ্বীন প্রতিষ্ঠার অর্থ হবে শক্তি , বিজয় এবং একচ্ছত্র শাসন প্রতিষ্ঠা। ‘ দ্বীন ‘ শব্দের এ রকম অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে কামুস গ্রন্থে।
হজরত মেকদাদ বিন আসওয়াদ বর্ণনা করেছেন, রসুল স . বলেছেন, এক সময় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে পৃথিবীর সকল গৃহে। অবিশ্বাস ও অংশীবাদিতা হয়ে যাবে ইসলামের সম্পূর্ণ অধীন। সকল শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য হবে কেবল আল্লাহর।
হজরত ইবনে ওমর কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, রসুল স . বলেছেন, আমাকে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে ওই সময় পর্যন্ত সংগ্রাম করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে-যতক্ষণ না তারা বলে, ‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ’ প্রতিষ্ঠা করে নামাজ এবং প্রদান করে জাকাত। যে এ রকম করবে আমার পক্ষ থেকে তার জীবন ও সম্পদ হয়ে যাবে সুরক্ষিত। আল্লাহ্ই তাদের অভ্যন্তরীণ হিসাব গ্রহণ করবেন ( তিনি বিচার করবেন , তারা তাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্যে , না অন্তরের তাগিদে ইসলাম গ্রহণ করেছে )। বোখারী ও মুসলিম। হজরত আবু হোরায়রা থেকে ছয়জন সাহাবী হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আল্লামা সুয়ুতী বলেছেন , হাদিসটি সুবিদিত ( মুতাওয়াতির )।
এবারে আসুন সূরা বাকারার ১৯৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর থেকে একটি পাতা পড়ে নিই, [41] –
‘এটাই সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণাম’— একথার অর্থ হত্যাই অবিশ্বাসীদের প্রকৃষ্ট শাস্তি ।
‘যদি তারা বিরত হয় তবে আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’- এই বাক্যটির মাধ্যমে বলা হয়েছে, যদি অবিশ্বাসীরা তাদের অবিশ্বাসকে পরিত্যাগ করে এবং সমরপ্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকে তবে আল্লাহ্পাক তাদের অতীতের অপরাধ সমূহ ক্ষমা করবেন এবং তাদের প্রতি প্রদর্শন করবেন অশেষ করুণা ।
“তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকো যতোক্ষণ না ফেত্না দূর হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়।” ফেৎনা অর্থ শিরক ও ফাসাদ। আর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ, অংশীবাদীতাহীন ইবাদত ও আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া। হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত হয়েছে— রসুল পাক স. এরশাদ করেছেন, আমাকে ওই সময় পর্যন্ত সমরাভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে যতোক্ষণ না মানুষ বলে, আল্লাহ্পাক ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, মোহাম্মদ স. তাঁর রসুল এবং নামাজ কায়েম করে ও জাকাত দেয়। যখন মানুষ এরকম করবে তখন তাঁদের জীবন ও সম্পদ থাকবে আমার তত্ত্বাবধানে। আর তার হিসাবের দায়িত্ব থাকবে আল্লাহ্পাকের অধিকারে। বাগবী বলেছেন, এই আয়াতের মাধ্যমে একথাই প্রমাণিত হয় যে, পৌত্তলিকদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান জানাতে হবে। যদি তারা এই আহবানে সাড়া না দেয় তবে তাদেরকে হত্যা করা যাবে। আমি বলি, একথা ঠিক নয়। কারণ, পৌত্তলিকতা, অগ্নিউপাসনা, ইহুদীবাদ— এসকলকিছুই কুফরীর অন্তর্ভূত। আল্লাহ্পাকের নিকট একমাত্র গ্রহণীয় ধর্ম হচ্ছে ইসলাম । পৌত্তলিকতা থেকে যেমন ফেতনার উদ্ভব হয় তেমনই ফেৎনা উদ্ভাবিত হয় ইহুদীবাদ ও অগ্নিউপাসনা থেকে। তারা সকলেই অবিশ্বাসী। তারা যদি ইমান গ্রহণ করে ও অনুগত হয়, তবে ফেৎনা দূর হয়ে যাবে। যদি না হয়, তবে তাদেরকে জিজিয়া দিতে সম্মত হতে হবে। জিজিয়া দিতে স্বীকৃত হলেও ফেৎনা উচ্ছেদ হয়ে যায়। তাই অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, ‘হাত্তা ইয়া’তুল জিজিয়াতা’ (যতক্ষণ না তারা জিজিয়া প্রদান করে)। এই আয়াত দ্বারা জিজিয়ার বিধান বলবৎ হয়েছে ইহুদী, অগ্নিপূজক ও পৌত্তলিক— সকলের উপর। ইমাম আবু হানিফা একথা বলেছেন । অন্য ইমামগণ এই অভিমতটির পোষণকারী নন। আল্লাহ্ চান তো সুরা তওবার ব্যাখ্যায় জিজিয়ার আলোচনা করা হবে। যদি তারা বিরত হয়-একথার অর্থ যদি তারা যুদ্ধ পরিত্যাগ করে, অংশীবাদীতা ছেড়ে ইমানকে আশ্রয় করে, অথবা জিজিয়া দিতে স্বীকৃত হয়। এরকম করলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে না, তাদেরকে বন্দী করা যাবে না, তাদের সম্পদও ছিনিয়ে নেয়া যাবে না ।
‘সীমালংঘনকারীগণ ব্যতীত আর কাউকে আক্রমণ করা চলবে না’— একথার অর্থ, যারা ইমান, আনুগত্য কিংবা জিজিয়া— কোনোটাতেই সম্মত হবে না— তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বৈধ হবে। তাদেরকে বন্দী করা যাবে, হত্যা করা যাবে এবং তাদের সম্পদও ছিনিয়ে নেয়া যাবে। এরকম ব্যাখ্যা করেছেন হজরত আব্দুল্লাহ্
হাদিসে আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
নবী মুহাম্মদ-এর “জান্নাত হচ্ছে তরবারির ছায়াতলে” কথাটি ইসলামের ইতিহাসে এবং জিহাদের প্রসঙ্গে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বর্ণনা হিসেবে চিহ্নিত। এই বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশকে দিক উন্মোচিত হয়, যেখানে ধর্মের সাথে যুদ্ধ, পেশীশক্তি ও অস্ত্রের ব্যবহারকে সরাসরি সংযুক্ত করা হয়েছে। এবং তা শুধুমাত্র আত্মরক্ষার খাতিরে নয়। এটি খুব সহজেই বোঝায় যে, এই ধরনের বক্তব্য সর্বাত্মক জিহাদের প্রতি একটি স্পষ্ট উৎসাহ প্রদান করে।
এই উক্তি যেহেতু সরাসরি জান্নাত এবং যুদ্ধের মধ্যকার সম্পর্ককে তুলে ধরে, তাই এটি ধর্মীয় বিশ্বাসীদের মনে একটি ধরনের যুদ্ধমুখী মানসিকতা বা আক্রমণাত্মক মনোভাব গড়ে তোলে। এর ফলে, এটি শুধু আত্মরক্ষার জিহাদের উৎসাহ হিসেবে নয়, বরং আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা হিসেবেও বোঝা যায়। যেহেতু জান্নাত প্রাপ্তি প্রতিটি ধর্মবিশ্বাসীর জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য, তাই এই বক্তব্য যুদ্ধের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জন করার একটি মোক্ষম উপায় হিসেবে উপস্থাপিত হয়। এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে একদিকে মুসলিম যোদ্ধাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে শত্রুর প্রতি সহিংসতা ও আক্রমণাত্মক মনোভাব পোষণকে প্রশংসনীয় করা হয়েছে।
তাছাড়া, “তরবারির ছায়াতলে” জান্নাতের অবস্থানকে চিত্রিত করার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে যে, যুদ্ধ এবং যুদ্ধকালীন সাহসিকতাই জান্নাত প্রাপ্তির অন্যতম মাধ্যম। এর ফলে, এটি কেবল সামরিক অভিযানের প্রয়োজনীয়তাকেই নয়, বরং ধর্মীয় ও নৈতিক কর্তব্য হিসেবেও যুদ্ধকে উপস্থাপন করেছে। এটি মুসলিমদের মধ্যে অত্যন্ত নেতিবাচক একটি মনোভাব তৈরি করতে পারে, যেখানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা নষ্ট হয়ে যায় [42] [43] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার
পরিচ্ছদঃ ৫৬/২২. জান্নাত হল তলোয়ারের ঝলকানির তলে।
মুগীরাহ ইবনু শু‘বা (রাঃ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জানিয়েছেন, আমাদের ও প্রতিপালকের পয়গাম। আমাদের মধ্যে যে শহীদ হলো সে জান্নাতে পৌঁছে গেল।
‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলেন, আমাদের শহীদগণ জান্নাতবাসী আর তাদের নিহতরা কি জাহান্নামবাসী নয়? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হ্যাঁ।
২৮১৮. ‘উমার ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ্ (রহ.)-এর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবূন নাযর (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তাঁকে লিখেছিলেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা জেনে রাখ, তরবারির ছায়া-তলেই জান্নাত।
উয়াইসী (রহ.) ইবনু আবূ যিনাদ (রহ.)-এর মাধ্যমে মূসা ইবনু ‘উকবাহ (রহ.) থেকে হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে মু‘আবিয়াহ ইবনু ‘আমর (রহ.) আবূ ইসহাক (রহ.)-এর মাধ্যমে মূসা ইবনু ‘উকবাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের অনুসরণ করেছেন। (২৮৩৩, ২৯৬৬, ৩০২৪, ৭২৩৭) (মুসলিম ৩২/৬ হাঃ ১৭৪২, আহমাদ ১৯১৩৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬২০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
হাদীস সম্ভার
২০/ (আল্লাহর পথে) জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ জিহাদ ওয়াজেব এবং তাতে সকাল-সন্ধ্যার মাহাত্ম্য
(১৯০০) ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি (কিয়ামতের পূর্বে) তরবারি-সহ প্রেরিত হয়েছি, যাতে শরীকবিহীনভাবে আল্লাহর ইবাদত হয়। আমার জীবিকা রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে। অপমান ও লাঞ্ছনা রাখা হয়েছে আমার আদেশের বিরোধীদের জন্য। আর যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।
(আহমাদ ৫১১৪-৫১১৫, ৫৬৬৭, শুআবুল ঈমান ৯৮, সহীহুল জামে’ ২৮৩১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)
একইসাথে, নবী মুহাম্মদ-এর বক্তব্য, যেখানে তিনি বলেন, “নবীকে ভীতি বা সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে বিজয়ী করা হয়েছে,” এটি একটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বক্তব্য হিসেবে বিবেচনা করতে হয়। মূল আরবি শব্দের সঠিক অনুবাদ করতে গিয়ে বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদকরা নানা ধরনের ব্যাখ্যা ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন, যেন হাদিসটির মূল বক্তব্য থেকে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করা যায়। এই ধরনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা পরিবর্তনের মাধ্যমে চেষ্টা করা হয়েছে হাদিসের কঠোর ও আক্রমণাত্মক সুরকে নরম করে তুলে ধরতে, যাতে এটি ইসলামের কদর্য দিকগুলো সহজে প্রকাশিত না হয়ে যায়। অথচ, এই বক্তব্যে সরাসরি ভীতি, সন্ত্রাস এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বিজয় লাভের কথা বলা হয়েছে, যা সভব্য সমাজের নৈতিক ও মানবিক আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আসুন এই হাদিসটি আগে বাঙলায় এবং পড়ে ইংরেজিতে পড়ে দেখি [44] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ৫৬/১২২. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তিঃ এক মাসের পথের দূরত্বে অবস্থিত শত্রুর মনেও আমার সম্পর্কে ভয়-ভীতি জাগরণের দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।
وَقَوْلِهِ جَلَّ وَعَزَّ )سَنُلْقِيْ فِيْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الرُّعْبَ بِمَآ أَشْرَكُوْا بِاللهِ ( قَالَهُ جَابِرٌ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
মহান আল্লাহর তা‘আলার বাণীঃ আমি কাফিরদের অন্তরে ভীতি প্রবিষ্ট করব। যেহেতু তারা আল্লাহর শরীক করেছে। (আলে ইমরান ১৫১)
(এ প্রসঙ্গে) জাবির (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস উদ্ধৃত করেছেন
২৯৭৭. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমাকে পাঠানো হয়েছে এবং শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, তখন পৃথিবীর ধনভান্ডার সমূহের চাবি আমার হাতে দেয়া হয়েছে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো চলে গেছেন আর তোমরা ওগুলো বাহির করছ। (৬৯৯৮, ৭০১৩, ৭২৭৩) (মুসলিম ৫/৫ হাঃ ৫২৩, আহমাদ ৭৭৫৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৬৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
এবারে আসুন এই হাদিসটির ইংরেজি অনুবাদটি দেখি। নবী এখানে বলেছেন, I have been made victorious with terror। এর সঠিক বাঙলা অনুবাদ হয় আমাকে বিজয়ী করা হয়েছে সন্ত্রাসের দ্বারা। কিন্তু উপরে দেখুন, এর অনুবাদ কী করা হয়েছে!
Narrated Abu Huraira:
Allah’s Messenger (ﷺ) said, “I have been sent with the shortest expressions bearing the widest meanings, and I have been made victorious with terror (cast in the hearts of the enemy), and while I was sleeping, the keys of the treasures of the world were brought to me and put in my hand.” Abu Huraira added: Allah’s Messenger (ﷺ) has left the world and now you, people, are bringing out those treasures (i.e. the Prophet did not benefit by them).
ইসলাম ধর্মে কোন জোরজবরদস্তি নেই, কিংবা ইসলামে আক্রমণাত্মক জিহাদ নেই, শুধু রক্ষণাত্মক জিহাদ রয়েছে, এরকম যারা বলেন বা দাবী করেন, তারা কতটুকু সত্য বলেন সেটি পাঠকই বিবেচনা করে দেখবেন। এখন আমরা আরো কিছু হাদিস পর্যালোচনা করি। এই হাদিসটি সহিহ এবং তাহকীককৃত সহিহ [45]-
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
অধ্যায়ঃ ১৪/ কর, ফাই ও প্রশাসক
৩০০৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমরা মাসজিদে উপস্থিত ছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বেরিয়ে এসে বললেনঃ ইহুদীদের এলাকায় চলো। ‘আমরা তাঁর সাথে বের হয়ে সেখানে গিয়ে পৌঁছলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাদেরকে ডেকে বললেনঃ হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম কবূল করো শান্তিতে থাকবে। তারা বললো, হে আবুল কাসিম! আপনি পৌঁছে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আবার বললেনঃ তোমরা ইসলাম কবূল করো, নিরাপত্তা পাবে। তারা বললো, হে আবুল কাসিম! আপনি পৌঁছে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ এ দাওয়াত পৌঁছে দেয়াই আমার উদ্দেশ্য ছিলো। তৃতীয় বারও তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বললেনঃ জেনে রাখো! এ ভুখন্ডের মালিকানা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। আমি তোমাদের এ ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত করতে চাই। সুতরাং তোমরা কোনো জিনিস বিক্রি করতে সক্ষম হলে বিক্রি করো। অন্যথায় জেনে রাখো! এ ভূখন্ডের মালিক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
উপরের হাদিসটি পড়লে বুঝতে সমস্যা হয় না, ইসলাম ধর্মে জোরজবরদস্তির কোন সুযোগ নেই, এই বক্তব্যটি কতটা হাস্যকর এবং স্ববিরোধী। নবী মুহাম্মদ নিজেই ইহুদি গোত্রের কাছে গিয়ে হুমকি দিতেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করলে নিজ ভূমি থেকে ইহুদিদের উৎখাত করবেন বলে শাসাতেন! বিশ্বাসী পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, নিশ্চয়ই তারা কোন অন্যায় করেছিল, সেই কারণে নবী মুহাম্মদ শাস্তি হিসেবে এরকম করেছিলেন। কিন্তু কোন ইহুদি বা কয়েকজন ইহুদি কোন অন্যায় করলে, বা অন্যায্য কাজ করলে খুব সহজেই সেই ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতো। কিন্তু পুরো একটি গোত্রই কীভাবে অপরাধী হয়? এমনকি বৃদ্ধা, বাচ্চা, নারীরাও? কীভাবে সম্ভব?
একজন বা কয়েকজন ইহুদির দোষে যদি পুরো গোত্রকে শাস্তি পেতে হয়, তাহলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যেই অত্যাচার চলছে, তাদের বিতাড়িত করা হচ্ছে আপন ঘরবাড়ি থেকে, সেটিও তো ন্যায্যতা পেয়ে যায়। তাই না? আল কায়েদা আইসিসের মত কট্টর মুসলিমদের বোমাবাজি বা জঙ্গিবাদের কারণে যদি এখন সব মুসলিমকে এর জন্য দায়ী করা হয়, তাহলেও তো সেটি অন্যায় হবে, তাই না? যে অপরাধ করেছে দায় তো শুধু তার ওপর বর্তায়। অন্যের ওপর নয়। তাহলে ইহুদিদের পুরো গোত্র কীভাবে দায়ী হলো? এরপরেও যদি কেউ বলে ইসলাম ধর্মে জোরজবরদস্তির কোন সুযোগ নেই, এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে?
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী বলেছেন যে, মানুষ যে পর্যন্ত না আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” এই কথার স্বীকৃতি দিবে, অর্থাৎ মুসলিম হয়ে যাবে সেই পর্যন্ত আমি(নবী) তাদের বিরুদ্ধে কিতাল বা সশস্ত্র যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। নবীর উল্লেখিত হাদিসে “কিতাল” বা সশস্ত্র যুদ্ধের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ এটি ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর জোর করে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা নির্দেশ করে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী, প্রতিটি মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নিজস্ব মতামত পোষণের অধিকার রয়েছে। কারও ওপর ধর্মবিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়া বা জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার প্রচেষ্টা, কোন ধরণের ভয়ভীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে চাপ প্রদান মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে। এমন ধরনের চিন্তাধারা সভ্য সমাজে সাম্প্রদায়িকতা, ভেদাভেদ এবং সংঘাত সৃষ্টির জন্য উর্বর ভূমি তৈরি করে। যখন একটি সম্প্রদায় তাদের ধর্মকে অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়, তখন তা ধর্মীয় ও সামাজিক বৈষম্যের জন্ম দেয় এবং যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করে। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের মধ্যে সহাবস্থান ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে ধ্বংস করে, যা একটি শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনের অন্তরায়। তাই এই হাদিসের বিবৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোনো সমাজ যদি পরিচালিত হয়, তা জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ ও আধুনিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হবে [46] [47] [48] [49] [50] –
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৮/ ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ১. যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করতে আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি
২৬০৭। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যুর পর আবূ বকর (রাযিঃ) যখন খলীফা নির্বাচিত হন, তখন আরবের কিছু সংখ্যক লোক কাফির হয়ে যায়। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) আবূ বাকর (রাযিঃ)-কে বললেন, আপনি এদের বিরুদ্ধে কিভাবে অস্ত্ৰধারণ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ যে পর্যন্ত না “আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” এই কথার স্বীকৃতি দিবে সেই পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। আর যে ব্যক্তি বললো, “আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” সে আমার থেকে তার মাল ও রক্ত (জীবন) নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের অধিকার সম্পর্কে ভিন্ন কথা। আর তাদের প্রকৃত হিসাব-নিকাশ রয়েছে আল্লাহ তা’আলার দায়িত্বে।
আবূ বকর (রাযিঃ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ নামায ও যাকাতের মধ্যে যে ব্যক্তি পার্থক্য করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবোই। কেননা যাকাত সম্পদের হাক্ক। কেউ উটের একটি রশি দিতেও যদি অস্বীকার করে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দিত, আল্লাহর কসম! আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবোই। তারপর উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি দেখতে পেলাম আল্লাহ যেন যুদ্ধের জন্য আবূ বাকরের অন্তর উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। অতঃপর আমি বুঝতে পারলাম যে, তার সিদ্ধান্তই যথার্থ।
সহীহঃ সহীহাহ (৪০৭), সহীহ আবূ দাউদ (১৩৯১-১৩৯৩), বুখারী ও মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। শু’আইব ইবনু আবী হামযা (রহঃ) যুহরী হতে, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদিল্লাহ হতে, তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ)-এর সূত্রে একই রকম বর্ণনা করেছেন। এই হাদীস মামার-যুহরী হতে, তিনি আনাস (রাযিঃ) হতে, তিনি আবূ বাকর (রাযিঃ) হতে এই সূত্রে ইমরান আল-কাত্তান বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনাটি ভুল। ‘ইমরানের ব্যাপারে মা’মার হতে বর্ণিত বর্ণনাতে বিরোধিতা করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৮/ ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ২. আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে এবং নামায আদায় করবে
২৬০৮। আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ তা’আলার বান্দা ও তার রাসূল এবং আমাদের কিবলামুখী হয়ে নামায আদায় করবে, আমাদের যবেহকৃত পশুর গোশত খাবে এবং আমাদের মতো নামায আদায় করবে। তারা এগুলো করলে তাদের জান ও মালে হস্তক্ষেপ করা আমাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে। কিন্তু ইসলামের অধিকারের বিষয়টি ভিন্ন। মুসলিমদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা তারাও পাবে এবং মুসলিমদের উপর অর্পিত দায়-দায়িত্ব তাদের উপরও বর্তাবে।
সহীহঃ সহীহাহ (৩০৩) ও (১/১৫২), সহীহ আবূ দাউদ (২৩৭৪), বুখারী অনুরূপ।
মুআয ইবনু জাবাল ও আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। ইয়াহইয়া (রাহঃ) হুমাইদ হতে, তিনি আনাস (রাযিঃ)-এর সূত্রে একই রকম হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৮/ হত্যা অবৈধ হওয়া
পরিচ্ছদঃ ১. মুসলিমকে হত্যা করার অবৈধতা
৩৯৭৯. ইসহাক ইবন ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ না বলা পর্যন্ত আমি লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। যদি তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলে, তবে আমার পক্ষ হতে তাদের জানমাল রক্ষা করে নেবে কিন্তু এর হক ব্যতীত। আর তাদের হিসাব আল্লাহর যিম্মায়।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১। ঈমান (বিশ্বাস)
পরিচ্ছদঃ ৮.লোকেদের বিরুদ্ধে জিহাদের নির্দেশ যতক্ষণ না তারা স্বীকার করে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং সালাত কায়িম করে, যাকাত দেয়, নাবী যে শারীআতের বিধান এনেছেন তার প্রতি ঈমান আনে, যে ব্যক্তি এসব করবে সে তার জান মালের নিরাপত্তা লাভ করবে; তবে শারীআত সম্মত কারণ ব্যতীত, তার অন্তরের খবর আল্লাহর কাছে; যে ব্যক্তি যাকাত দিতে ও ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করতে অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার এবং ইসলামের বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইমামের গুরুত্বারোপ করার নির্দেশ।
৩৫-(৩৫/…) আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) ….. জাবির (রাযিঃ), আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) ও আবূ সালিহ থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। বাকী অংশ আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে ইবনুল মুসাইয়্যাব-এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
আবূ বাকর ইবনু শাইবাহ ও মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না (রহঃ) ….. জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই” এ কথার স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। “আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই” এ কথা স্বীকার করলে তারা আমার থেকে তাদের জান মালের নিরাপত্তা লাভ করবে; তবে শারী’আত সম্মত কারণ ছাড়া। তাদের হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে। তারপর তিনি আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ “আপনি তো একজন উপদেশদাতা। আপনি এদের উপর কর্মনিয়ন্ত্রক নন”- (সূরাহ আল গা-শিয়াহ্ ৮৮ঃ ২১-২২)। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫, ইসলামিক সেন্টারঃ ৩৫-৩৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনানে ইবনে মাজাহ
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
অধ্যায়ঃ ৩০/ কলহ-বিপর্যয়
পরিচ্ছদঃ ৩০/১. যে ব্যক্তি ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ’’ বলে, তার উপর হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা
৩/৩৯২৯। আওস (রাঃ) বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি আমাদেরকে (অতীতের) ঘটনাবলী উল্লেখপূর্বক উপদেশ দিচ্ছিলেন। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে তাঁর সাথে একান্তে কিছু বললো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তাকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করো। লোকটি ফিরে গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, ‘‘আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই’’? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেনঃ যাও, তোমরা তাকে তার পথে ছেড়ে দাও। কারণ লোকেরা ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ না বলা পর্যন্ত আমাকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা তাই করলে তাদের জান-মালে হস্তক্ষেপ আমার জন্য হারাম হয়ে গেলো।
নাসায়ী ৩৯৭৯, ৩৯৮২, ৩৯৮৩, আহমাদ ১৫৭২৭, দারেমী ২৪৪৬। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
নিচের হাদিসটি এবারে মনোযোগ সহকারে পড়ুন। ইসলামে কাফেরদের বাসভবনে অতর্কিত আক্রমণ সম্পূর্ণ বৈধ, একইসাথে তাদের বাড়িঘরে আক্রমণ করে তাদের নারী শিশুদের বন্দী করাও ইসলামে সম্পূর্ণ জায়েজ। এগুলো ইসলামের খুব পরিষ্কার বিধান, যদিও আমাদের দেশের মোল্লারা ওয়াজ মাহফিলে এসব হাদিস ভুলেও উচ্চারণ করেন না। কারণ এসব হাদিস বললে জঙ্গিবাদের দায়ে জেল জরিমানা হয়ে যাবে। এই হাদিসে রাতের অন্ধকারে কাফের জনগোষ্ঠীর ওপর অতর্কিত আক্রমণের বৈধতা এবং নারী-শিশুদের বন্দী করার বিধান স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা মানবিক নীতি ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতির সম্পূর্ণ বিরোধী [51] [52] –
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ১. যে সকল বিধর্মীর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা বৈধ
৪৩৭০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) … ইবনু আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নাফি’ (রহঃ) কে এই কথা জানতে চেয়ে পত্র লিখলাম যে, যুদ্ধের পূর্বে বিধর্মীদের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন কি না? তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে লিখলেন যে, এ (নিয়ম) ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ মুসতালিকের উপর আক্রমণ করলেন এমতাবস্থায় যে, তারা অপ্রস্তুত ছিল (তা জানতে পারেনি।) তাদের পশুদের পানি পান করানো হচ্ছিল। তখন তিনি তাদের যোদ্ধাদের (পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ) হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের (নারী শিশুদের) বন্দী করলেন। আর সেই দিনেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল। (ইয়াহইয়া বলেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি বলেছেন) জুওয়ায়রিয়া অথবা তিনি নিশ্চিতরূপে ইবনাতুল হারিছ (হারিছ কন্যা) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই হাদীস আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেই সেনাদলে ছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইবনু ‘আউন (রহঃ)
এবারে আসুন তাহাবী শরীফ থেকে একটি হাদিস পড়ে নেয়া যাক, যেখানে দেখা যাচ্ছে, যেহেতু বর্তমানে সকলের কাছেই ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে গেছে, তাই আবারো ইসলামের পথে আহবান জানাবার আর কোন বিশেষ প্রয়োজন নেই। আক্রমনাত্মক জিহাদ বা অতর্কিত আক্রমণ চালালে সেটি সম্পূর্ণ জায়েজ [53] –
ফিকাহশাস্ত্রে আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
ফিকাহ্ শাস্ত্রের জগতে, বিশেষতঃ হানাফি ফিকাহ্র পরিমণ্ডলে আল-হিদায়া একটি মৌলিক ও বুনিয়াদি গ্রন্থ। এক কথায় এ গ্রন্থকে হানাফী ফিকাহ্ শাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলা যায়। এই গ্রন্থে জিহাদ অধ্যায়ের অংশবিশেষ আসুন এবারে পড়ে নিই [54] –
উপরের তথ্যসূত্রগুলো থেকে এটি পরিষ্কার যে, ইসলাম আক্রমণাত্মক জিহাদের মাধ্যমে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে অথবা অবমাননাকর জিযিয়া কর দিতে বাধ্য করে। সেগুলোতে সম্মত না হলে হত্যা অথবা দাসে পরিণত করার প্রক্রিয়া ইসলামের খুব পরিষ্কার বিধান। অবমাননাকর জিযিয়া কর বিষয়ে এখানে আলোচনা করলে লেখাটি দীর্ঘ হয়ে যাবে বিধায় সেই অংশটি বাদ দেয়া হচ্ছে। তবে আগ্রহী পাঠকগণ এই লেখাটি পড়তে পারেন। [55]।
শরহে মুসলিমে আক্রমণাত্মক জিহাদের বৈধতা
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান হচ্ছে জিহাদুত ত্বলাব বা আক্রমণাত্মক জিহাদের বিধান। এই বিধানটি তখনই প্রযোজ্য যখন মুসলিমদের শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকবে। সেনাবাহিনী থাকলে এবং অস্ত্রশস্ত্র থাকলে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে, কারণ কুফরি ইসলামের দৃষ্টিতে সবচাইতে বড় ফিতনা। এই বিষয়ে পরিষ্কার বিবরণ পাওয়া যায় সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকেও। শুধুমাত্র ইসলাম কবুল অথবা অপমানিত অবস্থায় নত হয়ে জিযিয়া প্রদানের মাধ্যমেই কাফের আহলে কিতাবীগণ জীবিত থাকতে পারবে। আর মুশরিকদের কাছ থেকে তো ইসলাম ভিন্ন আর কিছুই গ্রহণ করা হবে না, যার রেফারেন্স আগেই দেয়া হয়েছে [56] –
চতুর্থ ধাপঃ মুসলমানগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরম্ভ না করিলেও সকল ধর্ম ও বর্ণের কাফিরদের বিরুদ্ধে প্রথমেই জিহাদ শুরু করিবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাহারা ইসলাম গ্রহণ করে কিংবা জিযিয়া (ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের উপর ধার্যকৃত কর) প্রদান না করে। আর ইহা দ্বারা আল্লাহ তা’আলার কালেমা সমুন্নত করা, দ্বীন ইসলামের মর্যাদা দান এবং কুফরের দাপট ধ্বংস করা উদ্দেশ্য। আর এই ধাপের কার্যক্রম হিজরী ৯ম সনে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাযি.)-এর যবানীতে এই ধাপের ঘোষণা দেওয়া হইয়াছিল। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা সূরা তাওবায় ইহার বিস্তারিত বিবরণ দিয়াছেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, অনন্তর যখন হারাম মাসসমূহ অতীত হইয়া যাইবে তখন ঐ মুশরিকদেরকে তোমরা যেইখানেই পাও হত্যা কর এবং ধৃত কর আর অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাটির অবস্থানসমূহে তাহাদের লক্ষ্য করিয়া বসিয়া যাও। অতঃপর তাহারা যদি (কুফরী হইতে) তাওবা করিয়া লয় এবং নামায আদায় করিতে থাকে এবং যাকাত দিতে থাকে, তবে তাহাদের পথ ছাড়িয়া দাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা অতীব ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। -(সূরা তাওবা ৫)
সূরা তাওবার অপর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, তোমরা যুদ্ধ কর ঐ সকল লোকদের বিরুদ্ধে যাহারা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁহার রসূল যাহা হারাম করিয়া দিয়াছেন তাহা হারাম করে না আর গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম যতক্ষণ না তাহারা বশ্যতা স্বীকার করতঃ জিযিয়া (কর) প্রদানে স্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। -(সূরা তাওবা ২৯)
সূরায়ে আনফালে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ আর তোমরা তাহাদের সহিত লড়িতে থাক যদ্যাবধি তাহাদের মধ্য হইতে ফিতনা (শিরক) বিলুপ্ত হইয়া না যায় এবং দ্বীন যেন কেবল আল্লাহর জন্যই হয়। -(সূরা আনফাল ৩৯)
ইসলাম গ্রহণে জোরজবরদস্তির বিধান
সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে একটি বহুল প্রচলিত ধারণা হলো “দ্বীনে কোনো জোর নেই,” যা সূরা বাকারার ২৫৬ নাম্বার আয়াতে উল্লেখিত। এই আয়াতটি প্রায়ই ইসলামের সহনশীলতার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়। অনেকেই মনে করেন, ইসলাম ধর্ম পালনে বাধ্য করে না এবং প্রত্যেকেরই নিজস্ব বিশ্বাস অনুসরণ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু ইসলামিক তাফসীর গ্রন্থগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এই আয়াতের প্রকৃত অর্থ এবং এর প্রয়োগ ইসলামিক শাস্ত্রীয় বিধানে পুরোপুরি ভিন্ন। বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ আহকামুল কোরআনসহ অন্যান্য তাফসীরগুলোতে বলা হয়েছে যে, এই আয়াতটি কোরআনের পরবর্তী যুদ্ধে আহ্বানমূলক আয়াতগুলো দ্বারা রহিত (মানসুখ) হয়ে গেছে, বিশেষভাবে মুশরিকদের জন্য। বিশেষত সূরা তাওবার ৫ ও ৭৩ নং আয়াত, যা সরাসরি জিহাদের আহ্বান করে এবং অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়, এই সহনশীলতার ধারণাকে কার্যত অস্বীকার করে।
ইসলামের এই দ্বৈত অবস্থান মানবাধিকারের মৌলিক নীতির সরাসরি লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজস্ব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা এবং ধর্মান্তর না হওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু ইসলামের ইতিহাস এবং ধ্রুপদী আলেমদের দ্বারা লিখিত গ্রন্থগুলোতে দেখা যায়, ইসলামের এই সহনশীলতা মূলত শুধুমাত্র মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং তা বাস্তবে কার্যকর নয়। ইসলামের আইন অনুযায়ী, যদি কোনো মুসলিম ইসলাম ত্যাগ করে, তবে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মুরতাদ বা ধর্মত্যাগীদের ক্ষেত্রে এই কঠোর শাস্তি এবং আক্রমণাত্মক জিহাদের মধ্যমে ধর্ম গ্রহণের বাধ্য করার ঐতিহাসিক দলিলগুলো স্পষ্টতই দেখায় যে, ইসলামে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নেই; বরং এটি ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে এবং ধর্মত্যাগ করলে শাস্তি নিশ্চিত করে। এর সাথে, অমুসলিমদের জন্য আরোপিত জিযিয়া করও একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা, যা তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকত্বের অধীনে রাখে এবং তাদের সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে অবমাননা, অসম্মান এবং অপমান করে।
“দ্বীনে কোনো জোর নেই” এই আয়াতের প্রকৃত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ইসলামিক তাফসীর গ্রন্থগুলোতে। এখানে মূলত বোঝানো হয়েছে যে, এই আয়াতটি ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে নাজিল হওয়া একটি বিধান যখন মুসলিমগণ শক্তিহীন ছিল। যা পরবর্তীতে তরবারির আয়াত বা সূরা তওবার মাধ্যমে মুশরিকদের জন্য মানসুখ হয়ে যায়। ইসলামের বিধান অনুসারে, ইসলাম গ্রহণের পর ধর্মত্যাগের কোনো সুযোগ নেই এবং আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জন্য কেবলমাত্র ইসলাম গ্রহণ, যুদ্ধের সম্মুখীন হওয়া, অথবা জিযিয়া কর প্রদান করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে মুশরিক বা মুর্তি পূজারীদের জন্য শুধু দুইটি রাস্তা খোলা, হয় ইসলাম কবুল করতে হবে নতুবা তাদের হত্যা করা হবে। এটি কোনো ধরনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নয়; বরং অমুসলিমদের ইসলামিক রাষ্ট্রের অধীনে তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক স্বাধীনতা সংকুচিত করা হয়। ইসলামের এই বিধান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের “ধর্মের স্বাধীনতা” ও “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা”র স্পষ্ট লঙ্ঘন, যা প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার।
এই আয়াতের প্রেক্ষিতে ইসলামিস্টরা প্রায়ই সহাবস্থানের সপক্ষে কথা বললেও, তাদের কার্যকলাপ এবং ইসলামিক ইতিহাস অন্যকিছু প্রমাণ করে। মক্কা বিজয়ের পর, ইসলামের প্রসারের জন্য বহু যুদ্ধ পরিচালিত হয়, যেখানে অমুসলিম মূর্তিপুজারীদের বেঁচে থাকার জন্য ইসলাম গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। সেগুলো জোরপূর্বক ধর্মান্তরের স্পষ্ট উদাহরণ। নবীর একটি বিখ্যাত হাদিসে বলা হয়েছে যে, তিনি আদিষ্ট হয়েছেন যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই” এই স্বীকৃতি না দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার। এটি স্পষ্টতই নির্দেশ করে, ইসলামে সহনশীলতার স্থান নেই; বরং এটি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যান্য ধর্ম ও মতবাদকে উৎখাত করার আহ্বান জানায়। তাই, “দ্বীনে কোনো জোর নেই” এই আয়াতটি সহনশীলতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হলেও, প্রকৃতপক্ষে ইসলাম তার শাস্ত্রীয় বিধান এবং বাস্তবিক কার্যকলাপ এটি পুরোপুরি অস্বীকার করে। আসুন, দ্বীনে কোন জোর প্রয়োগ নেই, এই আয়াতটি সম্পর্কে ইসলামের বিধানটি আসলে কী, সরাসরি তাফসীর গ্রন্থ থেকে দেখে নিই। কোরআনের এই আয়াতটির শানে নুজুল এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা পড়ে দেখা এই জন্য জরুরি। ইসলামে জোর জবরদস্তি নেই, এরূপ বিবরণ সংবলিত আয়াতটি হচ্ছে সূরা বাকারার ২৫৬ নাম্বার আয়াত, যা কোরআনেরই শেষের দিকে নাজিল হওয়া সূরা তাওবার ৫ নং ও ৭৩ নং আয়াত দ্বারা অর্থাৎ জিহাদের আয়াত দ্বারা মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ আহকামুল কোরআনে। একইসাথে, এখানে আসলে কী বোঝানো হয়েছে, সেটি ভালভাবে বোঝার জন্য তাফসীর পড়ে দেখা জরুরি [57] –
আল্লাহর কথা,
দ্বীনে কোন জোর প্রয়োগ নেই। হেদায়েতের পথ গুমরাহী থেকে আলাদা স্পষ্ট প্রতিভাত হয়ে উঠেছে।
( সূরা বাকারাঃ ২৫৬ )
দহাক, সুদ্দী, সুলায়মান ইবনে মৃসা বলেছেন, এই আয়াতটি মনসূখ হয়ে গেছে এ আয়াতটি দ্বারাঃ
হে নবী! তুমি কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর। (সূরা তওবাঃ ৭৩)
এবং এ আয়াতটি দ্বারাঃ
অতএব তোমরা মুশরিকদের হত্যা কর। (সূরা আত্-তওবাঃ ৫)
আল-হাসান ও কাতাদা বলেছেন, ‘দ্বীনে জোর প্রয়োগ নেই’ কথাটি বিশেষভাবে সেই আহলে কিতাব লোকদের বেলায়, যারা জিযিয়া দিতে প্রস্তুত হবে। আরবের সাধারণ মুশরিকদের বেলায় এ কথা নয়। কেননা তারা বশ্যতা স্বীকার করে জিযিয়া দিতে রাজী হয়নি। তাদের নিকট থেকে হয় ইসলাম কবুল নিতে হবে, না হয় তরবারির আঘাত তাদের উপর পড়বে।
এ পর্যায়ে এ – ও বলা হয়েছে যে , উক্ত আয়াতের অর্থ হল, যুদ্ধের পরে যারা ইসলাম কবুল করেছে তাদের সম্পর্কে বল না যে, জোর – জবরদস্তির ফলে তারা ইসলাম কবুল করেছে ।
আবু বকর বলেছেনঃ দ্বীনে জোর প্রয়োগের অবকাশ নেই। এটি সংবাদ দানরূপে বলা কথা। কিন্তু মূলত একটি আদেশ। এটি সম্ভব যে , আয়াতটি মুশরিকদের বিরুদ্ধে করার আদেশ নাযিল হওয়ার পূর্বে এ আয়াত নাযিল হয়েছিল। ফলে তখন সে কথা সব কাফির সম্পর্কেই প্রয়োগীয় ছিল। যেমন আল্লাহর এই কথাটিঃ
প্রতিরোধ কর সেই পন্থায় যা অতীব উত্তম। তাহলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা আছে, সে সহসাই অতীব উষ্ণ বন্ধুতে পরিণত হবে ।
( সূরা হা-মিম-আস সিজদাঃ ৩৪ )
যেমন আল্লাহর কথাঃ
এবং যা অতীব উত্তম পন্থা, তদ্বারা বিরোধীদের সাথে মুকাবিলা কর ।
( সূরা নহলঃ ১২৫ )
আল্লাহর কথাঃযখন তাদেরকে মূর্খ লোকেরা সম্বোধন করে , তখন তারা বসে সালাম।
( সূরা ফুরকানঃ ৬৩ )
ইসলামের প্রথম দিকে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল। শেষ পর্যন্ত কাফিরদের প্রতি ইসলাম পেশ করার কাজটি যখন সম্পূর্ণ হয়ে গেল, নবীর সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হল, তারপরও যখন তারা শত্রুতা করতে থাকল, তখন মুসলমানদেরকে নির্দেশ দেয়া হল তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে। তখন দ্বীনের জোর প্রয়োগ করার অবকাশ নেই ‘ কথাটি আরবের মুশরিকদের বেলায় মনসুখ হয়ে গেল। আয়াত নাযিল হলঃ
মুশরিকদের যেখানেই পাবে , হত্যা করবে। ( সূরা আত্-তওবাঃ ৫)
মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার হুকুম সম্বলিত আরও বহু আয়াত রয়েছে। তাই উক্ত আয়াতের প্রয়োগ কেবলমাত্র আহলি কিতাবের সাথে থেকে গেল অর্থাৎ দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে তাদের উপর কোন জোর প্রয়োগ করা যাবে না। আর আহলি কিতাবদেরকেও নিষ্কৃতি দেয়া হবে তখন, যদি তারা বশ্যতা স্বীকার করে জিযিয়া দিতে রাজী হয়। তখন তারা মুসলমানদের যিম্মী হয়ে থাকবে। ইসলামের শাসনাধীন হবে।
এ কথার হাদিসী প্রমাণ হচ্ছে , নবী করীম ( স ) নিজে আরবের মুশরিকদের নিকট থেকে ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে প্রস্তুত হন নি। তা নাহলে তাদের উপর তরবারি চালিয়েছেন।
অনেক মুসলিম আবার কোরআনের সূরা কাফিরুনের একটি আয়াত এনে দাবী করতে শুরু করেন যে, ইসলাম ধর্ম অন্যান্য ধর্মের মানুষের সাথে পাশাপাশি সহাবস্থান এবং সব ধর্মের মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকার কথা বলে! অথচ এই কথাটিও ডাহা মিথ্যা। ইসলাম কখনোই অন্যা ধর্মের মানুষের সাথে সহাবস্থান এবং সম্প্রীতির মাধ্যমে সকল মত পথ ও ধর্মকে মেনে নেয়ার শিক্ষা দেয় না। বরঞ্চ ইসলাম ছাড়া বাকি সব মত ও ধর্মকে উচ্ছেদ করার হুকুম দেয় সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে। আসুন সেই আয়াতটি এবং তার তাফসীর পড়ে নিই [58] [59] [60] –
তোমাদের পথ ও পন্থা তোমাদের জন্য (সে পথে চলার পরিণতি তোমাদেরকেই ভোগ করতে হবে) আর আমার জন্য আমার পথ (যে সত্য পথে চলার জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, এ পথ ছেড়ে আমি অন্য কোন পথ গ্রহণ করতে মোটেই প্রস্তুত নই)।
— Taisirul Quran
তোমাদের জন্য তোমাদের কর্মফল এবং আমার জন্য আমার কর্মফল।
— Sheikh Mujibur Rahman
‘তোমাদের জন্য তোমাদের দীন আর আমার জন্য আমার দীন।’
— Rawai Al-bayan
তোমাদের দীন তোমাদের, আর আমার দ্বীন আমার [১]।’
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
বলার কারণ : অর্থাৎ তোমাদের দীন তোমাদের, আমার দীন আমার । এ আয়াতটির অর্থ অবলোকন করে অনেক লোক বিভ্রান্ত হয়। তারা বলে- তা দ্বারা ইসলাম অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মের স্বীকৃতি দিয়েছে। যদি তাদের ধর্ম সত্যই না হবে তবে কুরআনে কেন এ কথা বলা হলো যে, তোমাদের ধর্ম তোমাদের, আমার ধর্ম আমার। এটা দ্বারা দুই ধর্মকেই পাশাপাশি অবস্থান করার এবং একে অপরের উপর হস্তক্ষেপ না করার স্বীকৃতি পাওয়া যায়। কিন্তু দীন শব্দ দ্বারা এখানে কি বুঝানো হয়েছে; তা চিন্তা না করার ফলেই তাদের মনে এ উদ্ভট চিন্তা গজিয়েছে। এখানে দীন শব্দটি কর্মফল অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, সূরা আল-ফাতিহায় আল্লাহকে অর্থাৎ কর্মফল দিনের কর্তা বলা হয়েছে। সুতরাং এই অর্থ গ্রহণ করলে আয়াতের মর্ম হবে- তোমাদের কর্মফল তোমরা ভোগ করবে, আমাদের কর্মফল আমরা ভোগ করবো। যেহেতু এ আয়াত ইসলামের প্রথম যুগে মক্কায় অবতীর্ণ হয়, তখন জিহাদের বিধান অবতীর্ণ হয়নি । তাই কতিপয় তাফসীরকার বলেন- এ আয়াতের বিধান দ্বারা কাফেরদেরকে ইসলামের প্রথম যুগে ধর্ম পালনের যেটুকু অবকাশের কথা ভাবা যায়, তা জিহাদের বিধান দ্বারা রহিত করা হয়েছে। মক্কা বিজয়সহ অন্যান্য লড়াইগুলোই এর জ্বলন্ত প্রমাণ। বস্তুত দীনকে ধর্ম অর্থ গ্রহণ করলে আমরা এ কথাও বলতে পারি, এটা ঠিক অনুরূপ কথার ন্যায়, যেমন আমরা ধিক্কার ও ভৎসনাভাবে বলে থাকি তোমার পথে ভূমি, আমার পথে আমি। এ কথা দ্বারা আমরা যেমন তার পথের স্বীকৃতি দেই না এবং সহাবস্থানেরও অবকাশ বুঝাই না; বরং তা দ্বারা পথের ভয়াবহ পরিণতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়। আয়াতেও অনুরূপভাবে ‘তোমার দীন তোমার আমার দীন আমার’ বলে তাদের জীবনাদর্শ ও শিরকি কর্মপন্থার ভয়াবহ পরিণতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাদের শিরকি জীবনাদর্শ ও মতবাদের স্বীকৃতি বা পাশাপাশি অবস্থানের কথা বলা হয়নি।
শেষোক্ত আয়াতে (৬) বলা হয়েছে— ‘তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আমার দ্বীন আমার’। এই আয়াতের দু’টি বাক্যই বিজ্ঞপ্তিমূলক। কিন্তু এমতো ভাবনার কোনো অবকাশ নেই যে, বক্তব্যটির (তোমাদের দ্বীন তোমাদের) দ্বারা এখানে কাফেরদের কুফরীর ব্যাপারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, অথবা মুসলমানদেরকে জেহাদ করতে নিষেধ করা হয়েছে। বরং বলা যেতে পারে, এই আয়াতে প্রকাশ করা হয়েছে পূর্ববর্তী বক্তব্যের গুরুত্ব ও পরিণতিকে। সুতরাং এই আয়াত দ্বারা জেহাদের আয়াতকে রহিত করা হয়েছে, এরকম ভাবা যেতেই পারে না। কুফরী যেহেতু কল্যাণকর নয়, সেহেতু এরকম চিন্তাও অসমীচীন যে, সমঝোতার মাধ্যমে এখানে ইমানদার ও কাফেরদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে স্ব স্ব অবস্থানে থাকতে। তাই তো আমরা দেখতে পাই, এর পরেও রসুল স. বার বার কাফের কুরায়েশদেরকে ইমান ও ইসলামের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা তাঁকে এবং তাঁর প্রিয় সহচরবর্গকে দিয়েছে নানা প্রকারের যাতনা। সুতরাং আলোচ্য আয়াতের মর্মার্থ এরকম হওয়াই সমীচীন যে— তোমরা প্রতিফল লাভ করবে তোমাদের কৃতকর্মের এবং আমি লাভ করবো আমার কৃতকর্মের প্রতিফল ।
মুহাম্মদের ধর্মগ্রহণের হুমকি দেয়া চিঠি
নবী মুহাম্মদ তার জীবদ্দশাতে যাদের সাথে মুহাম্মদের কোনকালেই কোন রকম শত্রুতা ছিল না, এরকম বেশ কিছু অঞ্চলে চিঠি লিখে সেই সব অঞ্চলের শাসকদের ইসলাম গ্রহণের সরাসরি হুমকি দেন। চিঠিতে তিনি এটিও লেখেন যে, ইসলাম গ্রহণ না করলে সেই সব অঞ্চলে নবী তার দলবল নিয়ে আক্রমণ করবেন এবং সেইসব শাসকদের হত্যা করবেন। ভেবে দেখুন তো, আজকের দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যদি বাঙলাদেশের হাসিনাকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণের জন্য চিঠি লেখে, এবং হিন্দু ধর্ম গ্রহণ না করলে আক্রমণ করবেন বলে হুমকি দেন, তখন ব্যাপারটি কেমন হবে? এগুলো কী কোন সভ্য আচরণ, নাকি সরাসরি মাফিয়া নেতাদের মত গুণ্ডারাজ কায়েম করা? আসুন ওমানে পাঠানো নবী মুহাম্মদের একটি চিঠি পড়ি এবং চিঠির ভাষা পর্যালোচনা করি [61] –
‘… আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে জুলান্দা আযদীর দুই পুত্র জায়ফার ও আব্দের প্রতি। শান্তি বর্ষিত হৌক ঐ ব্যক্তির উপরে যিনি হেদায়াতের অনুসরণ করেন। অতঃপর আমি আপনাদের দু’জনকে ইসলামের দিকে আহবান জানাচ্ছি। আপনারা ইসলাম কবুল করুন, নিরাপদ থাকুন। আমি সমগ্র মানবজাতির প্রতি আল্লাহর রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি, যাতে আমি জীবিতদের সতর্ক করি এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। অতঃপর যদি আপনারা ইসলাম কবুল করেন, তবে আপনাদেরকেই আমি গবর্ণর নিযুক্ত করে দেব। আর যদি ইসলাম কবুলে অস্বীকার করেন, তাহ’লে আপনাদের রাজত্ব শেষ হয়ে যাবে। আমার ঘোড়া আপনাদের এলাকায় প্রবেশ করবে ও আমার নবুঅত আপনাদের রাজ্যে বিজয়ী হবে’।
ইসলাম ছেড়ে পুরনো ধর্মে ফেরত গেলেই মৃত্যু বা দাসত্ব
নবী ও তার সাহাবীগণ ভয়ভীতি এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে অনেককেই ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেছিল, যাদের অনেকে সুযোগ পাওয়া মাত্রই ইসলাম ত্যাগ করে তাদের পুরনো ধর্মে ফেরত চলে গিয়েছিল। এরকম মানুষদের আবারো আক্রমণ করে তাদের হত্যা করে, তাদের শিশুদের দাস বানিয়ে রীতিমত বিক্রি করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, এই হাদিসে শিশুদের মুক্ত করে দেয়ার কথা লেখা থাকলেও, হাদিসটি মন দিয়ে পড়বেন। তাহলে বুঝতে পারবেন, মুক্ত করা নয়, হযরত আলী সেইসব শিশুদের আসলে বিক্রি করেছিল মাসকালা ইবন হুবাইরা শায়বানীর কাছে পুরো অর্থ নগদ পাওয়ার পরে। কল্পনা করুন তো, সেই সময়ের এক লক্ষ মূদ্রার বর্তমান মূল্য কত হতে পারে? [53] –
ইসলামে শিরককারী হত্যাযোগ্য
প্রখ্যাত বাংলাদেশের আলেম এবং ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রের অন্যতম পণ্ডিত ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়ার সম্পাদনায় প্রকাশিত মো আব্দুল কাদেরের বই বাংলাদেশে প্রচলিত শির্ক বিদ‘আত ও কুসংস্কার পর্যালোচনা গ্রন্থে পরিষ্কারভাবেই বলা আছে যে, শিকর হচ্ছে হত্যাযোগ্য অপরাধ। যারা শিরক করে, তাদের রক্ত মুসলিমদের জন্য হালাল [62]।
যুদ্ধবন্দীদের প্রচুর রক্তপাত ঘটানো
এবারে আসুন ইসলামিক জিহাদের পরে অমুসলিম যুদ্ধবন্দীদের সাথে মুসলিমদের আচরণ কীরকম হবে, সে সম্পর্কে আসুন পড়ি ইবনে কাসীর থেকে [63] –
তাফসীরঃ উল্লেখিত আয়াতসমূহে আল্লাহ পাক কাফিরদের প্রতি তাঁহার ঘৃণা এবং তাহাদের অপকর্মের বর্ণনা দিয়া বলিতেছেন যে, ভূপৃষ্ঠে জীবকুলের মধ্যে বেঈমান কাফিরগণই হইল আল্লাহর নিকট অতি নিকৃষ্ট জীব। উহাদের মধ্যকার যাহাদের সাথে তুমি যখনই কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হও, তখনই উহারা সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে। যখন উহাদিগকে বিশ্বাস করিয়া আস্থা স্থাপন কর, তখন বিশ্বাস ভঙ্গ করিয়া তোমার আস্থা নষ্ট করিয়া ফেলে। উহারা আল্লাহকে আদৌ কোনরূপ ভয়ই করে না। নির্ভয় দাম্ভিকতার সহিত পাপাচারে লিপ্ত হয়। আলোচ্য আয়াতাংশের মর্ম হইলঃ তুমি যদি উহাদের যুদ্ধে পরাস্ত করিয়া বিজয় লাভ করিতে পার, তবে কঠোরভাবে বন্দী করিয়া জ্বালা-যন্ত্রণা দিবে। এই ব্যাখ্যা প্রদান করেন ইবন আব্বাস (রা)।
হাসান বসরী, যাহহাক, সুদ্দী, আতা খুরাসানী ও ইবন উআয়না (র) ইহার ব্যাখ্যায় বলেনঃ যুদ্ধে উহাদিগকে পরাস্ত করিতে পারিলে অতি কঠোরভাবে শাস্তি দিবে এবং নির্দয়ভাবে উহাদিগকে হত্যা করিবে যেন ইহাদের ছাড়া আরবের অন্যান্য শত্রুগণ এই শাস্তির কথা শুনিয়া ভীত হয় এবং নসীহত ও শিক্ষা গ্রহণ করে। তাহাদের মধ্যে লজ্জা ও অনুশোচনার সৃষ্টি হয়।
এই বিষয়ে কোরআনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়। বদর যুদ্ধের সময় একটি আয়াত নাজিল হয়, যেই আয়াতে খুব পরিষ্কারভাবে আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে দেন যে, যুদ্ধের পরে কাফের যুদ্ধবন্দীদের ওপর যথেষ্ট পরিমাণ হত্যাকাণ্ড এবং রক্তপাত ঘটানো না পর্যন্ত তাদেরকে মুক্তিপণের জন্য বন্দী করা নবীর জন্য জায়েজ নেই। অর্থাৎ আল্লাহ খুব পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন, যুদ্ধে যেসকল কাফের পরাজিত এবং বন্দী হবে, তাদের যথেষ্ট পরিমাণ রক্তপাত ঘটানো জরুরি! [64]
কোন নবীর সাথে যুদ্ধরত কাফিরদের মাঝে প্রচুর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তাদেরকে ভালোভাবে পর্যুদস্ত না করা পর্যন্ত নিজের কাছে বন্দী রাখা তাঁর জন্য উচিৎ হবে না। যেন তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চারিত হয় এবং তারা তাঁর সাথে দ্বিতীয়বার যুদ্ধ করতে না আসে। হে মু’মিনরা! তোমরা মূলতঃ বদরের কাফিরদেরকে বন্দী করে তাদের থেকে মুক্তিপণ নিতে চাও। অথচ আল্লাহ তা‘আলা আখিরাত চাচ্ছেন যা ধর্মের বিজয় ও তার পরাক্রমশীলতার মাধ্যমে হাসিল করা সম্ভব। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সত্তা, গুণাবলী ও ক্ষমতায় অপ্রতিদ্ব›দ্বী। তাঁকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। তেমনিভাবে তিনি তাঁর শরীয়ত প্রণয়নে ও তাক্বদীর নির্ধারণে অতি প্রজ্ঞাময়।
— Bengali Mokhtasar
কোন নাবীর জন্য এটা সঠিক কাজ নয় যে, দেশে (আল্লাহর দুশমনদেরকে) পুরোমাত্রায় পরাভূত না করা পর্যন্ত তার (হাতে) যুদ্ধ-বন্দী থাকবে। তোমরা দুনিয়ার স্বার্থ চাও আর আল্লাহ চান আখিরাত (এর সাফল্য), আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী।
— Taisirul Quran
কোন নাবীর পক্ষে তখন পর্যন্ত বন্দী (জীবিত) রাখা শোভা পায়না, যতক্ষণ পর্যন্ত ভূ-পৃষ্ঠ (দেশ) হতে শক্র বাহিনী নির্মূল না হয়, তোমরা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সম্পদ কামনা করছ, অথচ আল্লাহ চান তোমাদের পরকালের কল্যাণ, আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
— Sheikh Mujibur Rahman
কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, তার নিকট যুদ্ধবন্দি থাকবে (এবং পণের বিনিময়ে তিনি তাদেরকে মুক্ত করবেন) যতক্ষণ না তিনি যমীনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন। তোমরা দুনিয়ার সম্পদ কামনা করছ, অথচ আল্লাহ চাচ্ছেন আখিরাত। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।
— Rawai Al-bayan
কোনো নবীর জন্য সংগত নয় যে [১] তার নিকট যুদ্ধবন্দি থাকবে, যতক্ষণ না তিনি যমীনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন [২]। তোমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ [৩] এবং আল্লাহ্ চান আখেরাত; আর আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এই আয়াতটির অনুবাদ তাফসীরে জালালাইন থেকে পড়ে নিই [65] –
এবারে আসুন তাফসীরে মাযহারী থেকে আয়াতটির ব্যাখ্যা পড়ে দেখা যাক [66] –
এবারে আসুন দেখি, ইসলামের বিধান অনুসারে যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করাটি উত্তম আমল নাকি তাদের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া উত্তম আমল সেটি [67] –
গেরিলা যুদ্ধ নাকি অতর্কিত হামলা
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর পাকবাহিনী হামলা চালায়। এমন অবস্থায় হামলা চালায় যে, আমাদের কারোর প্রস্তুতি নেয়ার কোন উপায় ছিল না। অপ্রস্তুত ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা চালানো সকল নৈতিকতার মানদণ্ডে অন্যায়, তার ওপর যদি যুক্ত হয় নারী ও শিশু হত্যা, তাহলে সেগুলো সরাসরি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
রাতের অন্ধকারে চুপিসারে কোন জানান না দিয়ে যারা আক্রমণ করে, তাদের আমরা ডাকাত বলি। একই উদাহরণ নবী মুহাম্মদের বাহিনীর মধ্যেও দেখতে পাওয়া যায়। মুমিন সমাজের মধ্যে অনেকেই একে গেরিলা যুদ্ধের সাথে তুলনা দিয়ে উদাহরণ হিসেবে বলে থাকেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত হামলা করেছিল। অথচ, এই কথাগুলো বলার সময় তারা যে বিষয়টি গোপন করে সেটি হচ্ছে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সর্বদাই পাকবাহিনীর কোন বেসামরিক পাকিস্তানের নাগরিক বা নারী অথবা শিশু যেন হতাহত না হয়, সেইদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখা হতো।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেরিলা আক্রমণ একটি স্বীকৃত যুদ্ধের কৌশল। কিন্তু এই স্বীকৃত আক্রমণের কৌশলের মধ্যেও নীতি বজায় রাখতে হয়। এমন নয় যে, গেরিলা আক্রমণ একটি বৈধ যুদ্ধকৌশল বলে যার যেমন খুশি রাতের অন্ধকারে অস্ত্রসহ ঢুকে ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষকে খুনোখুনী করে যেতে পারে। গেরিলা যুদ্ধ পরিচালিত হয় সাধারণত দুইটি যুদ্ধরত বাহিনীর মধ্যে, এবং লক্ষ্য রাখা হয় যে, কোন বেসামরিক জনগণ যেন এর কারণে হতাহত না হয়। কারণ গেরিলা আক্রমণ হয় হঠাৎ করে, কেউ প্রস্তুতি নেয়ার সময় পায় না। তাই এই ধরণের আক্রমণে নারী শিশু বা বেসামরিক জনগণের জানমালের যেন কোন ক্ষতি না হয়, তার দিকে লক্ষ্য রাখা বাধ্যতামূলক।
পৃথিবীর বেশিরভাগ গেরিলা যুদ্ধে অতর্কিত আক্রমণ করার সময় সবচাইতে বেশি নজর রাখা অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে, আক্রমণে যেন শুধুমাত্র সেনাসদস্যদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এই গেরিলা আক্রমণে কোন বেসামরিক মানুষ আহত বা নিহত হলে সেটি আর ন্যায়সঙ্গত আক্রমণ থাকে না। কোনটি গেরিলা যুদ্ধ, আর কোনটি স্রেফ ডাকাতি- ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্যাতন, তার পার্থক্য বোঝার জন্য এটি দেখাই যথেষ্ট যে, যদি যুদ্ধটিতে বেসামরিক জনগণকে হত্যা বা আহত করা হয়, তাদের জীবনের ওপর কোন হুমকি আসে, তাহলে সেটি স্রেফ ডাকাতি বা অন্যায্য হামলা। আর বেসামরিক জনগণকে বাইরে রেখে শুধুমাত্র অস্ত্রধারী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ হচ্ছে নৈতিক আক্রমণ। এটিকে তখন আর ডাকাতি বলা যায় না। আর ইসলামের এই আক্রমণগুলোতে নিরীহ নারী শিশুদের ক্ষয়ক্ষতি হতো। একদম ডাকাতদের মতই এই গুপ্ত অতর্কিত হামলাগুলো ছিল খুবই নৃশংস। রাতের অন্ধকারে তারা তরবারি নিয়ে কাফেরদের ঘরবাড়িতে ঝাঁপিয়ে পরতো, ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষ নারী শিশু কেউই রেহাই পেতো না। নবীকে এসে তারা জিজ্ঞেসও করতো যে, এরকম অবস্থায় রাতের অন্ধকারে বেপরোয়া অতর্কিত আক্রমণে নারী শিশুকে মারা যাবে কিনা। নবী বলে দিয়েছিলেন, রাতের অন্ধকারে না দেখে অনিচ্ছাকৃতভাবে মারলে এতে কোন দোষ নেই। যেসব নারী ও শিশুদের যুদ্ধের পরে জীবিত পাওয়া যেত, তাদের বন্দী করে দাস বানানো হতো, এটিও আন্তর্জাতিক আইনে একটি পরিষ্কার যুদ্ধাপরাধ। [68] [69] [70] [71] [72] !
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ১. যে সকল বিধর্মীর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা বৈধ
৪৩৭০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) … ইবনু আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নাফি’ (রহঃ) কে এই কথা জানতে চেয়ে পত্র লিখলাম যে, যুদ্ধের পূর্বে বিধর্মীদের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন কি না? তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে লিখলেন যে, এ (নিয়ম) ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ মুসতালিকের উপর আক্রমণ করলেন এমতাবস্থায় যে, তারা অপ্রস্তুত ছিল (তা জানতে পারেনি।) তাদের পশুদের পানি পান করানো হচ্ছিল। তখন তিনি তাদের যোদ্ধাদের (পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ) হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের (নারী শিশুদের) বন্দী করলেন। আর সেই দিনেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল। (ইয়াহইয়া বলেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি বলেছেন) জুওয়ায়রিয়া অথবা তিনি নিশ্চিতরূপে ইবনাতুল হারিছ (হারিছ কন্যা) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই হাদীস আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেই সেনাদলে ছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইবনু ‘আউন (রহঃ)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছদঃ ৯. রাতের অতর্কিত আক্রমনে অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই
৪৩৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মনসুর ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) … সা’ব ইবনু জাছছামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুশরিকদের নারী ও শিশু সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যখন রাতের আধারে অতর্কিত আক্রমণ করা হয়, তখন তাদের নারী ও শিশুরাও আক্রান্ত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারাও তাদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৩৩। জিহাদ ও সফর
পরিচ্ছদঃ ৯. রাতের আকস্মিক হামলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই
৪৪৪২-(২৭/…) আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. সা’ব ইবনু জাসসামাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা রাতের অন্ধকারে আকস্মিক হামলায় মুশরিকদের শিশুদের উপরও আঘাত করে ফেলি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারাও তাদের (মুশরিক যোদ্ধাদের) মধ্যে গণ্য। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪০০, ইসলামিক সেন্টার ৪৪০০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনানে ইবনে মাজাহ
তাওহীদ পাবলিকেশন
অধ্যায়ঃ ১৮/ জিহাদ
১/২৮৩৯। সাব‘ ইবনে জাসসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের বেলা মুশরিকদের মহল্লায় অতর্কিত আক্রমণ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো, যাতে নারী ও শিশু নিহত হয়। তিনি বলেনঃ তারাও (নারী ও শিশু) তাদের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
নবীর আক্রমণাত্মক জিহাদের উদাহরণ
নবী মুহাম্মদের যখন ক্ষমতা কম ছিল, অস্ত্র এবং লোকবল কম ছিল, তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। আর যখনই ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন, যুদ্ধ এবং কতল করার মত লোকজন যোগার হয়ে গেছে, নবির নির্দেশে মুসলিমরা পৌত্তলিকদের মূর্তি এবং মন্দির ধ্বংস করে দিতো। যাদের সাথে নবীর কোন যুদ্ধ বা শত্রুতা কিছুই ছিল না, তাদেরকেও কোন কারণ ছাড়াই শুধুমাত্র ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, এবং তারা মূর্তি পুজা করে এই অপরাধে হত্যা করার নির্দেশ দিতেন নবী।
ইয়ামেনের অন্তর্গত একটি জায়গায় পৌত্তলিকদের একটি তীর্থস্থান ছিল, যার নাম যুল খালাসা। সেটি যোদ্ধা পাঠিয়ে নবী সেটি ধ্বংস করতে হুকুম দেন। এরকম ঘটনা অনেকগুলো। এই সম্পর্কে প্রখ্যাত স্কলার আল্লামা ইবনে কাসীরের আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে বলা আছে, নবী মুহাম্মদ এই তীর্থস্থানটি ধ্বংসের নির্দেশ দেন [73] –
উল্লেখ্য, যে সকল জায়গাতে লোক পাঠিয়ে মন্দির ধ্বংস এবং মানুষ হত্যার হুকুম নবী দিতেন, তাদের কারোর সাথে মুসলিমদের কোন রকম শত্রুতা ছিল না। আক্রমণাত্মক জিহাদের আয়াত নাজিলের পরেই শুরু হয়ে যায় সর্বাত্মক যুদ্ধ। যারাই ইসলাম কবুল না করবে কিংবা জিজিয়া না দিবে, তাদেরই কতল। আর মুশরিকদের কাছ থেকে তো ইসলাম ছাড়া কিছুই গ্রহণ করা হবে না, যা আগেই বলা হয়েছে। সহিহ বুখারী হাদিস গ্রন্থ থেকে যুল খালাসা গোত্রের ওপর আক্রমণের বিষয়ের সত্যতা পরিষ্কার হয়ে যায় [74] [75] [76] [77] [78] [79] [80] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৫. ঘরবাড়ী ও খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দেওয়া
২৮১১। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি কি আমাকে যিলখালাসার ব্যাপারে শাস্তি দিবে না? খাশআম গোত্রে একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর (রাঃ) বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ’ আশ্বরোহী সাথে নিয়ে রওনা করলাম। তারা নিপুন অশ্বারোহী ছিল। জারীর (রাঃ) বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলীর চিহৃ দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দোয়া করলেন যে, ‘হে আল্লাহ! তাকে স্থির রাখুন এবং হেদায়েত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন।’
তারপর জারীর (রাঃ) সেখানে গমন করেন এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলে ও জ্বালিয়ে দেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সংবাদ নিয়ে এক ব্যক্তিকে তাঁর নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর (রাঃ)-এর দূত বলতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ তা‘আলার! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি যখনই যুলখালাসাকে আমরা ধংস করে দিয়েছি। জারীর (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাচঁবার বরকতের দু‘আ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজলী (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২১৩১. জারীর ইবন আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) এর আলোচনা
৩৫৪৯। ইসহাক আল ওয়াসিতী (রহঃ) … জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গৃহে প্রবেশ করতে কোনদিন আমাকে বাঁধা প্রদান করেন নি এবং যখনই আমাকে দেখেছেন মুচকি হাসি দিয়েছেন। জারীর (রাঃ) আরো বলেন, জাহিলী যুগে (খাস’আম গোত্রের একটি প্রতীমা রক্ষিত মন্দির) যুল-খালাসা নামে একটি ঘর ছিল। যাকে কা’বায়ে ইয়ামানী ও কা’বায়ে শামী বলা হত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি যুল-খালাসার ব্যাপারে আমাকে শান্তি দিতে পার? জারীর (রাঃ) বলেন, আমি আহমাস গোত্রের একশ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে যাত্রা করলাম এবং (প্রতীমা ঘরটি) বিধ্বস্ত করে দিলাম। সেখানে যাদেরকে পেলাম হত্যা করে ফেললাম। ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সংবাদ শোনালাম। তিনি (অত্যন্ত খুশী হয়ে) আমাদের জন্য এবং আহমাস গোত্রের জন্য দু’আ করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২২২৬. যুল খালাসার যুদ্ধ
৪০১৮। ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) … জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসার পেরেশানী থেকে স্বস্থি দেবেনা? আমি বললামঃ অবশ্যই। এরপর আমি (আমাদের) আহমাস গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈনিক নিয়ে চললাম। তাদের সবাই ছিলো অশ্ব পরিচালনায় অভিজ্ঞ। কিন্তু আমি তখনো ঘোড়ার উপর স্থির হয়ে বসতে পারতাম না। তাই ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালাম। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করলেন।
এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর হাতের চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ্! একে স্থির হয়ে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন’। জারীর (রাঃ) বলেন, এরপরে আর কখনো আমি আমার ঘোড়া থেকে পড়ে যাইনি। তিনি আরো বলেছেন যে, যুল-খালাসা ছিলো ইয়ামানের অন্তর্গত খাসআম ও বাজীলা গোত্রের একটি (তীর্থ) ঘর। সেখানে কতগুলো মূর্তি স্থাপিত ছিলো। লোকেরা এগুলোর পূজা করত এবং এ ঘরটিকে বলা হতো কা’বা।
রাবী বলেন, এরপর তিনি সেখানে গেলেন এবং ঘরটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন আর এর ভিটামাটিও চুরমার করে দিলেন। রাবী আরো বলেন, আর যখন জারীর (রাঃ) ইয়ামানে গিয়ে উঠলেন তখন সেখানে এক লোক থাকত, সে তীরের সাহায্যে ভাগ্য নির্নয় করত, তাকে বলা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিনিধি এখানে আছেন, তিনি যদি তোমাকে পাকড়াও করার সুযোগ পান তাহলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবেন।
রাবী বলেন, এরপর একদা সে ভাগ্য নির্নয়ের কাজে লিপ্ত ছিল, সেই মূহুর্তে জারীর (রাঃ) সেখানে পৌঁছে গেলেন। তিনি বললেন, তীরগুলো ভেঙ্গে ফেল এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই- এ কথার সাক্ষ্য দাও, অন্যথায় তোমার গর্দান উড়িয়ে দেব। লোকটি তখন তীরগুলো ভেঙ্গে ফেলল এবং (আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, এ কথার) সাক্ষ্য দিল। এরপর জারীর (রাঃ) আবূ আরতাত নামক আহমাস গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে পাঠালেন খোশখবরী শোনানোর জন্য। লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে সত্তার (আল্লাহর) কসম করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, ঘরটিকে ঠিক খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত উটের মতো কালো করে রেখে আমি এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী এবং পদাতিক সৈনিকদের সার্বিক কল্যাণ ও বরকতের জন্য পাঁচবার দোয়া করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২২২৬. যুল খালাসার যুদ্ধ
৪০১৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … কায়স (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, জারীর (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসা থেকে স্বস্থি দেবে না? যুল-খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি (বানোয়াট তীর্থ) ঘর, যাকে বলা হত ইয়ামনী কা’বা। এ কথা শুনে আমি আহমাস্ গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশজন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে চললাম। তাঁদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে শক্তভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করলেন। এমন কি আমার বুকের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র আঙ্গুলগুলোর ছাপ পর্যন্ত দেখতে পেলাম।
(এ অবস্থায়) তিনি দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্! একে (ঘোড়ার পিঠে) শক্তভাবে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর (রাঃ) সেখানে গেলেন এবং ঘরটি ভেঙ্গে দিয়ে তা জ্বালিয়ে ফেললেন। এরপর তিনি (জারীর (রাঃ)) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীর (রাঃ) এর দূত (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) বলল, সেই মহান সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য বাণী সহকারে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত কালো উঠের মত রেখে আপনার কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক সৈনিকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দোয়া করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী (যুদ্ধ)
পরিচ্ছদঃ ৬৪/৬৩. যুল খালাসার যুদ্ধ।
৪৩৫৬. ক্বায়স (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জারীর (রাঃ) থেকে আমাকে বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল খালাসা থেকে স্বস্তি দেবে না? যুল খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি ঘর, যার নাম দেয়া হয়েছিল ইয়ামানী কা‘বা। এ কথা শুনে আমি আহ্মাস গোত্র থেকে একশ’ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে চললাম। তাঁদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে স্থিরভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করলেন। এমন কি আমি আমার বুকের উপর তার আঙ্গুলগুলোর ছাপ পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! একে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াত দানকারী ও হিদায়াত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর (রাঃ) সেখানে গেলেন এবং ঘরটি ভেঙ্গে দিলেন আর তা জ্বালিয়ে দিলেন। এরপর তিনি (জারীর (রাঃ)) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীরের দূত (রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বলল, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে চর্মরোগে আক্রান্ত কাল উটের মতো রেখে আপনার কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীর জন্য পাঁচবার বারাকাতের দু‘আ করলেন। (৩০২০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০১৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
উপরে যুল খালাসায় সৈন্য পাঠিয়ে অমুসলিমদের উপাসনালয় এবং পুজনীয় মূর্তি ভাঙ্গার নির্দেশের কথা বলা হয়েছে। এরকম উদাহরণ অনেকগুলোই আছে। আসুন আর-রাহীকুল মাখতূম থেকে পড়ি, সেখানে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে সৈন্য পাঠিয়ে নবী মূর্তি, উপাসনালয় এবং সেই সব মূর্তির পুজা কারী মানুষদের সমূলে নিশ্চিহ্ন করতেন। এমনকি মহিলাদেরও বাদ দিতেন না। অবস্থা এমন খারাপ হয়েছিল যে, নবী নিজেই খালিদ বিন ওয়ালিদের ওপর এত হত্যাকাণ্ড দেখে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন [81] –
বিভিন্ন অভিযান ও প্রতিনিধি প্রেরণঃ
১. মক্কা বিজয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজকর্ম সুসম্পন্ন করার পর যখন তিনি কিছুটা অবকাশ লাভ করলেন তখন ৮ম হিজরীর ২৫ রমযান উযযা নামক দেব মূর্তি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে একটি ছোট সৈন্যদল প্রেরণ করলেন। উযযা মূর্তির মন্দিরটি ছিল নাখলা নামক স্থানে। এটি ভেঙ্গে ফেলে খালিদ (রাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, (هَلْ رَأَيْتَ شَيْئًا؟)‘তুমি কি কিছু দেখেছিলে?’ খালিদ (রাঃ) বললেন, ‘না’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, (فَإِنَّكَ لَمْ تَهْدِمْهَا فَارْجِعْ إِلَيْهَا فَاهْدِمْهَا) ‘তাহলে প্রকৃতপক্ষে তুমি তা ভাঙ্গ নি। পুনরায় যাও এবং তা ভেঙ্গে দাও।’ উত্তেজিত খালিদ (রাঃ) কোষমুক্ত তরবারি হস্তে পনুরায় সেখানে গমন করলেন। এবারে বিক্ষিপ্ত ও বিস্ত্রস্ত চুলবিশিষ্ট এক মহিলা তাঁদের দিকে বের হয়ে এল। মন্দির প্রহরী তাকে চিৎকার করে ডাকতে লাগল। কিন্তু এমন সময় খালিদ (রাঃ) তরবারি দ্বারা তাকে এতই জোরে আঘাত করলেন যে, তার দেহ দ্বিখন্ডিত হয়ে গেল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে তিনি এ সংবাদ অবগত করালে তিনি বললেন, (نَعَمْ، تِلْكَ الْعُزّٰى، وَقَدْ أَيِسَتْ أَنْ تَعْبُدَ فِيْ بِلَادِكُمْ أَبَدًا) ‘হ্যাঁ’, সেটাই ছিল উযযা। এখন তোমাদের দেশে তার পূজা অর্চনার ব্যাপারে সে নিরাশ হয়ে পড়েছে (অর্থাৎ কোন দিন তার আর পূজা অর্চনা হবে না)।
২. এরপর নাবী কারীম (সাঃ) সে মাসেই ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-কে ‘সুওয়া’ নামক দেবমূর্তি ভাঙ্গার জন্য প্রেরণ করেন। এ মূর্তিটি ছিল মক্কা হতে তিন মাইল দূরত্বে ‘রিহাত’ নামক স্থানে বনু হুযাইলের একটি দেবমূর্তি। ‘আমর যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন প্রহরী জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কী চাও?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর নাবী (সাঃ) এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার জন্য আমাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন।’
সে বলল, ‘তোমরা এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে পারবে না।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘কেন?’
সে বলল, ‘প্রাকৃতিক নিয়মেই তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হবে।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা এখনও বাতিলের উপর রয়েছ? তোমাদের উপর দুঃখ, এই মূর্তিটি কি দেখে কিংবা শোনে?’
অতঃপর মূর্তিটির নিকট গিয়ে তিনি তা ভেঙ্গে ফেললেন এবং সঙ্গীসাথীদের নির্দেশ প্রদান করলেন ধন ভান্ডার গৃহটি ভেঙ্গে ফেলতে। কিন্তু ধন-ভান্ডার থেকে কিছুই পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি প্রহরীকে বললেন, ‘বল, কেমন হল?’
সে বলল, ‘আল্লাহর দ্বীন ইসলাম আমি গ্রহণ করলাম।’
৩. এ মাসেই সা‘দ বিন যায়দ আশহালী (রাঃ)-এর নেতৃত্বে বিশ জন ঘোড়সওয়ার সৈন্য প্রেরণ করেন মানাত দেবমূর্তি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। কুদাইদের নিকট মুশাল্লাল নামক স্থানে আওস, খাযরাজ, গাসসান এবং অন্যান্য গোত্রের উপাস্য ছিল এ ‘মানত’ মূর্তি। সা‘দ (রাঃ)-এর বাহিনী যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন মন্দিরের প্রহরী বলল, ‘তোমরা কী চাও?’
তাঁরা বললেন, ‘মানাত দেবমূর্তি ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্যে আমরা এখানে এসেছি।’
সে বলল, ‘তোমরা জান এবং তোমাদের কার্য জানে।’
সা‘দ মানাত মূর্তির দিকে অগ্রসর হতে গিয়ে একজন উলঙ্গ কালো ও বিক্ষিপ্ত চুল বিশিষ্ট মহিলাকে বেরিয়ে আসতে দেখতে পেলেন। সে আপন বক্ষদেশ চাপড়াতে চাপড়াতে হায়! রব উচ্চারণ করছিল।
প্রহরী তাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘মানাত! তুমি এ অবাধ্যদের ধ্বংস কর।’
কিন্তু এমন সময় সা‘দ তরবারির আঘাতে তাকে হত্যা করলেন। অতঃপর মূর্তিটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিলেন। ধন-ভান্ডারে ধন-দৌলত কিছুই পাওয়া যায় নি।
৪. উযযা নামক দেবমূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলার পর খালিদ বিন ওয়ালীদ (সাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৮ম হিজরী শাওয়াল মাসেই বনু জাযামাহ গোত্রের নিকট তাঁকে প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল আক্রমণ না করে ইসলাম প্রচার। খালিদ (রাঃ) মুহাজির, আনসার এবং বনু সুলাইম গোত্রের সাড়ে তিনশ লোকজনসহ বনু জাযীমাহর নিকট গিয়ে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। তারা (ইসলাম গ্রহণ করেছি) বলার পরিবর্তে (আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি) বলল। এ কারণে খালিদ (রাঃ) তাদের হত্যা এবং বন্দী করতে আদেশ দিলেন। তিনি সঙ্গী সাথীদের এক একজনের হস্তে এক এক জন বন্দীকে সমর্পণ করলেন। অতঃপর এ বলে নির্দেশ প্রদান করলেন যে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর নিকটে সমর্পিত বন্দীকে হত্যা করবে। কিন্তু ইবনু উমার এবং তাঁর সঙ্গীগণ এ নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলেন। অতঃপর যখন নাবী কারীম (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন। তিনি দু’ হাত উত্তোলন করে দু’বার বললেন, (اللهم إِنِّيْ أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدًا) ‘হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তা হতে তোমার নিকটে নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।’(1)
এ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র বনু সুলাইম গোত্রের লোকজনই নিজ বন্দীদের হত্যা করেছিল। আনসার ও মহাজিরীনগণ হত্যা করেন নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী (রাঃ)-কে প্রেরণ করে তাদের নিহত ব্যক্তিদের শোণিত খেসারত এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন। এ ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে খালিদ (রাঃ) ও আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ)-এর মাঝে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং সম্পর্কের অবণতি হয়েছিল। এ সংবাদ অবগত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,
(مَهَلًّا يَا خَالِدُ، دَعْ عَنْكَ أَصْحَابِيْ، فَوَاللهِ لَوْ كَانَ أَحَدٌ ذَهَبًا، ثُمَّ أَنْفَقَتْهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا أَدْرَكَتْ غُدْوَةَ رَجُلٍ مِّنْ أَصْحَابِيْ وَلَا رَوْحَتَهُ)
‘খালিদ থেমে যাও, আমার সহচরদের কিছু বলা হতে বিরত থাক। আল্লাহর কসম! যদি উহুদ পাহাড় সোনা হয়ে যায় এবং তার সমস্তই তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করে দাও তবুও আমার সাহাবাদের মধ্য হতে কোন এক জনেরও এক সকাল কিংবা এক সন্ধ্যার ইবাদতের নেকী অর্জন করতে পারবে না।(2)
শুধু এইটুকুতেই শেষ নয়। আলীর প্রতি এবং পরবর্তীদের প্রতি নবীর নির্দেশও আমরা দেখে নিই [82] –
সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১০/ কাফন-দাফন
পরিচ্ছেদঃ কবর সমান করে দেওয়া।
১০৪৯. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ….. আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আবূল- হায়্যাজ আল-আসা’দী (রহঃ) কে বলেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন, আমি তোমাকেও সেই দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করছি। তা হলো, কোন উঁচু কবরকে (মাটি) সমান করা ব্যতীত ছাড়বেনা, আর কোন প্রতিকৃতি বিধ্বংস করা ব্যতীত ছাড়বে না। – আল আহকাম ২০৭, ইরওয়া ৭৫৯, তাহযীরুস সাজিদ ১৩০, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১০৪৯ [আল মাদানী প্রকাশনী]
এই বিষয়ে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও হাদীস বর্ণিত রয়েছে। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি হাসান। কোন কোন আলিম এতদনুসারে আমল করেছেন। তারা যমীনের উপর কবর উচূঁ করে বাঁধা অপছন্দনীয় বলে মনে করেন। ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেন, যতটুকু উঁচু করলে এটিকে কবর বলে চিনা যায় তদপেক্ষা কবরকে উঁচু করা আমি পছন্দ করি না। তবে চিহ্নস্বরূপ কিছু উঁচু করার দরকার এই জন্য যে, এটিকে যেন কেউ পদদলিত না করে বা এর উপর যেন কেউ না বসে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ওয়াইল (রহঃ)
জিহাদে প্রাপ্ত মালে গনিমত
গনিমতের মাল হিসেবে নবী মুহাম্মদ কাফেরদের থেকে কী পরিমাণ লুটপাট করতেন, তার একটি নমুনা হিসেবে একটি হিসেব উল্লেখ করছি। পাঠক লক্ষ্য করুন, একটি যুদ্ধে প্রাপ্ত গনিমতের মালের পরিমাণ কী হতে পারে। উল্লেখ্য, এরকম যুদ্ধ নবী অনেকগুলো চালিয়েছেন। [83]
ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী বা আল-ফাতাওয়া আল-আলমগিরিয়া বা আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া নামে পরিচিত একটি ইসলামী আইন সংকলন রয়েছে। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে এই সংকলন প্রণীত হয়। “ভারতে তৈরি মুসলিম আইনের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন” হিসাবে ঘোষণা করা হয়, সংকলনটি ব্যাপকভাবে ইসলামিক আইনশাস্ত্রের (ফিকহ) ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুসংগঠিত কাজগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। সুন্নি হানাফি মাজহাবের ভিত্তিতে শরিয়া আইন এতে সংকলিত হয়েছে। অনেক আলেম এই গ্রন্থ প্রণয়নে অবদান রেখেছেন। এতে কোরআন, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনান আবু দাউদ, জামি’আত-তিরমিযী থেকে সব দলিল গ্রহণ করা হয়েছে।
ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী প্রণয়নের উদ্দেশ্যে আওরঙ্গজেব ফিকহের ৫০০ আলেমকে নিয়োগ দেন। তাদের মধ্যে ৩০০ জন দক্ষিণ এশিয়া, ১০০ জন ইরাক এবং ১০০ জন হেজাজ থেকে আগত। দিল্লি ও লাহোরে সংকলন কর্মে শেখ নিজাম বুরহানপুরি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের কয়েক বছরব্যাপী পরিশ্রমের মাধ্যমে ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী প্রণীত হয়। এই গ্রন্থে বিভিন্ন সম্ভাব্য পরিস্থিতির সাপেক্ষে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, দাস, যুদ্ধ, সম্পদ, আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক, বিনিময়, কর, অর্থনীতি ও অন্যান্য আইন এবং আইনি নির্দেশনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আসুন এই গ্রন্থ থেকে জিহাদের নীতিমালা এবং গনিমতের মাল গ্রহণের ইসলামিক পদ্ধতি জেনে নেয়া যাক [84] –
যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌনসঙ্গম
ইসলামে যুদ্ধবন্দী হিসেবে প্রাপ্ত নারীদের সাথে হায়েজ হতে মুক্ত হওয়ার পরে যৌনসঙ্গম করার সম্পূর্ণ বৈধতা নবী মুহাম্মদ দিয়ে গেছেন। এই বৈধতা প্রদান থেকে একাধারে দুটো বিষয় পরিষ্কার হয়। যুদ্ধ বা জিহাদে বিজিত পক্ষের একজন রমণীকে স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে দাসীতে পরিণত করা যেমনি ইসলামে বৈধ তেমনি সেই রমণীটির অনুমতি ব্যতীতই তার সাথে বিজয়ী পক্ষের জিহাদি মুসলিম পুরুষটির যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়া, যা কিনা সংজ্ঞানুসারে সরাসরি ধর্ষণ, সেটিও ইসলামে অনুমোদিত। অথচ এ দুটি বিষয় আমাদের আধুনিক সভ্য পৃথিবীর যুদ্ধসংক্রান্ত আচরণবিধি জেনেভা কনভেনশনের সাথে পুরোপুরিভাবে সাংঘর্ষিক। এর প্রমাণ অসংখ্য হাদিসে রয়েছে। কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করছি [85] [86] [87] [88] [89] [90] –
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩৯. বন্দী স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস করা।
২১৫২. উবায়দুল্লাহ্ ইবন উমার ইবন মায়সার …… আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধের সময় আওতাস্ নামক স্থানে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করেন। তারা তাদের শত্রুদের সাথে মুকাবিলা করে তাদেরকে হত্যা করে এবং তাদের উপর বিজয়ী হয়। আর এই সময় তারা কয়েদী হিসাবে (হাওয়াযেন গোত্রের) কিছু মহিলাকে বন্দী করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিছু সাহাবী তাদের সাথে অনধিকারভাবে সহবাস করা গুনাহ মনে করে, কেননা তাদের মুশরিক স্বামীরা তখন বন্দী ছিল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেনঃ (অর্থ) যে সমস্ত স্ত্রীলোকদের স্বামী আছে তারা তোমাদের জন্য হারাম। তবে যারা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী অর্থাৎ যেসব মহিলা যুদ্ধবন্দী হিসাবে তোমাদের আয়ত্বে আসবে তারা ইদ্দত (হায়েযের) পূর্ণ করার পর তোমাদের জন্য হালাল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩৯. বন্দী স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস করা।
১৫৪. আমর ইবন আওন …… আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কোন গর্ভবতী বন্দিনীর সাথে তার সন্তান প্রসবের আগে এবং কোন রমণীর সাথে তার হায়েয হতে পবিত্র হওয়ার পূর্বে সহবাস করবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৭। বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ২২. আযল এর হুকুম
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৩৪৩৬,
আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৩৮
৩৪৩৬-(১২৫/১৪৩৮) ইয়াহইয়া ইবনু আবূ আইয়ুব, কুতায়বাহ্ ইবনু সাঈদ ও আলী ইবনু হুজর (রহিমাহুমুল্লাহ) ….. ইবনু মুহায়রিয (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং আবূ সিরমাহ (রহঃ) আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) এর নিকট গেলাম। আবূ সিরমাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ সাঈদ! আপনি কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ’আযল সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বানু মুসতালিক এর যুদ্ধ করেছি। সে যুদ্ধে আমরা আরবের সবচেয়ে সুন্দরী বাঁদীদের বন্দী করলাম। এদিকে আমরা দীর্ঘকাল স্ত্রী সাহচর্য থেকে বঞ্চিত ছিলাম। অন্যদিকে আমরা ছিলাম সম্পদের প্রতি অনুরাগী। এমতাবস্থায় আমরা বাঁদীদের দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল করার এবং ’আযল করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু আমরা এ কথাও আলোচনা করলাম যে, আমরা কি এ কাজ করতে যাব, অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন। তার নিকট আমরা কি এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করব না! তাই আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ ঐ কাজ না করাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি করার কথা লিখে রেখেছেন সে সব মানুষ সৃষ্টি হবেই। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪০৯, ইসলামীক সেন্টার ৩৪০৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইবনু মুহায়রিয (রহঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪/ মাগাযী [যুদ্ধ]
পরিচ্ছেদঃ ৬৪/৩২. যাতুর রিকা-র যুদ্ধ।
قَالَ ابْنُ إِسْحَاقَ وَذَلِكَ سَنَةَ سِتٍّ وَقَالَ مُوْسَى بْنُ عُقْبَةَ سَنَةَ أَرْبَعٍ وَقَالَ النُّعْمَانُ بْنُ رَاشِدٍ عَنْ الزُّهْرِيِّ كَانَ حَدِيْثُ الإِفْكِ فِيْ غَزْوَةِ الْمُرَيْسِيْعِ
ইবনু ইসহাক (রহ.) বলেছেন, এ যুদ্ধ ৬ষ্ঠ হিজরী সনে সংঘটিত হয়েছিল। মূসা ইবনু ‘উকবাহ (রহ.) বলেছেন, ৪র্থ হিজরী সনে। নুমান ইবনু রাশিদ (রহ.) যুহরী (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মুরাইসীর যুদ্ধে ইফকের ঘটনা ঘটেছিল।
৪১৩৮. ইবনু মুহাইরীয (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে প্রবেশ করে আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)-কে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে বসলাম এবং আযল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বানূ মুসতালিকের যুদ্ধে যোগদান করেছিলাম। এ যুদ্ধে আরবের বহু বন্দী আমাদের হস্তগত হয়। মহিলাদের প্রতি আমাদের মনে আসক্তি জাগে এবং বিবাহ-শাদী ব্যতীত এবং স্ত্রীহীন অবস্থা আমাদের জন্য কষ্টকর অনুভূত হয়। তাই আমরা আযল করা পছন্দ করলাম এবং তা করতে মনস্থ করলাম। তখন আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে আছেন। এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস না করেই আমরা আযল করতে যাচ্ছি। আমরা তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ওটি না করলে তোমাদের কী ক্ষতি? ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত যতগুলো প্রাণের আগমন ঘটবার আছে, ততগুলোর আগমন ঘটবেই। [২২২৯; মুসলিম ত্বলাক (তালাক)/২১, হাঃ ১৪৩৮, আহমাদ ১১৮৩৯] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৮২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৮২৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইবনু মুহায়রিয (রহঃ)
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৭। বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ২২. আযল এর হুকুম
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৩৪৫১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৪৪০
৩৪৫১-(১৩৬/১৪৪০) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহিমাহুমাল্লাহ) ….. জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা ’আযল করতাম আর কুরআন নাযিল হত। এর উপর ইসহাক আরো বাড়িয়ে বলেছেন যে, সুফইয়ান (রহঃ) বলেন, এতে যদি নিষেধ করার মতো কিছু থাকত, তবে কুরআন তা নিষেধ করে দিত। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪২৪, ইসলামীক সেন্টার ৩৪২৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
নাবালক শিশুদের দাস বানানো
গত চৌদ্দশ বছরে ইসলামি নৃশংসতার বলি কত লক্ষ শিশুকে হতে হয়েছে, তার কোন ইয়াত্তা নেই। এই নৃশংসতার আসলে কোন তুলনা হয় না। যেই শিশুটি যুদ্ধের কিছু বোঝে না, কে কোন পক্ষ কিছুই সে জানে না, ঘটনাক্রমে একটি কাফের পরিবারে জন্ম নিয়েছে, একদিন হুট করে কিছু ইসলামি সেনা এসে তাদের বাবাকে মেরে মাকে বানালো যৌনদাসী, তাদের বানানো হলো দাস। এগুলো কী ভয়াবহ বিধান, কল্পনা করা যায় না। যখন মুহাম্মদ বা সাহাবীদের টাকার দরকার হতো, সেইসব শিশুদের বিক্রিও করা হতো বাজারে, গরু ছাগল ভেড়ার মত! এই ভয়াবহতার কোন সীমা নেই। যেই ইসলাম একটি শিশুকেও রেহাই দেয় না, সেই ইসলাম যখন পরিপূর্ণ জীবন বিধানের দাবী করে, শান্তি আর মানবতার দাবী করে, তখন মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করে। আসুন দেখি, সেই শিশুদের সাথে কী করা হতো [91] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৪৯/ ক্রীতদাস আযাদ করা
পরিচ্ছেদঃ ৪৯/১৩. কোন আরব যদি কোন দাস-দাসীর মালিক হয় এবং তাকে দান করে, বিক্রয় করে, সহবাস করে এবং ফিদিয়া হিসাবে দেয় অথবা শিশুদেরকে বন্দী করে রাখে তবে এর বিধান কী?
২৫৪১. ইবনু ‘আউন (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাফি‘ (রহ.)-কে পত্র লিখলাম, তিনি জওয়াবে আমাকে লিখেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী মুস্তালিক গোত্রের উপর অতর্কিতভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। তাদের গবাদি পশুকে তখন পানি পান করানো হচ্ছিল। তিনি তাদের যুদ্ধক্ষমদের হত্যা এবং নাবালকদের বন্দী করেন এবং সেদিনই তিনি জুওয়ায়রিয়া (উম্মুল মু’মিনীন)-কে লাভ করেন। [নাফি‘ (রহ.) বলেন] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমাকে এ সম্পর্কিত হাদীস শুনিয়েছেন। তিনি নিজেও সে সেনাদলে ছিলেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩৭৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ)
বনু কুরাইজা গোত্রকে আক্রমণ এবং ২৫ দিন অবরোধ করে রাখার পরে বনু কুরাইজার সকল নারী পুরুষ যখন আত্মসমর্পন করে, নবীর সৈন্যবাহিনী তখন সকল সাবালক পুরুষকে হত্যা এবং নারী ও শিশুদের দাস বানাবার সিদ্ধান্ত নেয়। ছেলেদের গোপনাঙ্গ পরীক্ষা করে সাবালকত্ব পরীক্ষা করা হয়। যাদের গোপনাঙ্গে চুল গজিয়েছে তাদের হত্যা আর যাদের চুল গজায় নি তাদের দাস বানানো হয়। বনু কুরাইজার নাবালক শিশুদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল? তাদের কিছু অংশ নবী মুহাম্মদের নির্দেশেই বিক্রি করে সেই মূল্য দিয়ে অস্ত্র এবং ঘোড়া কিনেছিলেন নবী মুহাম্মদের অনুসারীরা- [92] [93] –
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু কুরাইযার ধন-সম্পদ, স্ত্রী ও সন্তানদেরকে মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করেন। তারপর সা’দ ইবনে যায়িদ আনসারীকে বনু কুরাইযার কিছুসংখ্যক দাসদাসীকে দিয়ে নাজদ পাঠিয়ে দেন। তাদের বিনিময়ে তিনি সেখান থেকে মুসলমানদের জন্য অস্ত্রশস্ত্র ও ঘোড়া খরিদ করে আনেন।
ক্রীতদাসীদের সাথে যৌনসঙ্গমের বৈধতা
ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে পরিষ্কারভাবে মালিকানাধীন বা অধিকারভূক্ত দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ক হালাল করা হয়েছে। দাসদাসীদের কেনাবেচা, যুদ্ধবন্দী নারী হিসেবে দাসী গ্রহণ করা, এগুলো সবই ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হালাল [94] [95] [96] [97]। আয়াতগুলোর অনেকগুলো অনুবাদ কুরআন ডট কম [98] থেকে নিচে দেয়া হচ্ছে-
কোরআনের আয়াত এবং প্রাসঙ্গিক তাফসীর
সূরা মুমিনুন, আয়াত ৫-৬
যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংরক্ষণ করে।
Taisirul Quran
যারা নিজেদের যৌনাংগকে সংযত রাখে –
Sheikh Mujibur Rahman
আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী।
Rawai Al-bayan
আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে রাখে সংরক্ষিত (১),
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসী ব্যতীত, কারণ এ ক্ষেত্রে তারা নিন্দা থেকে মুক্ত।
Taisirul Quran
নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবেনা।
Sheikh Mujibur Rahman
তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না।
Rawai Al-bayan
নিজেদের স্ত্রী বা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ছাড়া, এতে তারা হবে না নিন্দিত (১),
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এই প্রসঙ্গে একটি হাদিস পড়ে নিই [99] –
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪১/ শিষ্টাচার
পরিচ্ছেদঃ ২২. লজ্জাস্থান হিফাযত করা
২৭৬৯। বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের লজ্জাস্থান কতটুকু ঢেকে রাখব এবং কতটুকু খোলা রাখতে পারব? তিনি বললেনঃ তোমার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া সকলের দৃষ্টি হতে তোমার লজ্জাস্থান হিফাযাত করবে। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, পুরুষেরা একত্রে অবস্থানরত থাকলে? তিনি বললেনঃ যতদূর সম্ভব কেউ যেন তোমার আবরণীয় স্থান দেখতে না পারে তুমি তাই কর। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, মানুষ তো কখনো নির্জন অবস্থায়ও থাকে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা তো লজ্জার ক্ষেত্রে বেশি হাকদার।
হাসানঃ ইবনু মা-জাহ (১৯২০)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। বাহযের দাদার নাম মুআবিয়াহ ইবনু হাইদাহ আল-কুশাইরী। আল-জুরাইরী হাকীম ইবনু মু’আবিয়ার সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি হলেন বাহযের বাবা।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ)
এবারে তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে এর তাফসীরও পড়ে নিই [100] –
সূরা আল-মা’আরিজ, আয়াত ২৯-৩০
যারা নিজেদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে
Taisirul Quran
এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
Sheikh Mujibur Rahman
আর যারা তাদের যৌনাংগসমূহের হিফাযতকারী।
Rawai Al-bayan
আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গসমূহের হিফাযতকারী (১),
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তাদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া, কেননা তাতে তারা তিরস্কৃত হবে না,
Taisirul Quran
তাদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্র ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবেনা –
Sheikh Mujibur Rahman
তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে সে দাসীগণের ক্ষেত্র ছাড়া। তাহলে তারা সে ক্ষেত্রে নিন্দনীয় হবে না।
Rawai Al-bayan
তাদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না—
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৫০
হে নবী (সা.)! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীগণকে যাদের মোহরানা তুমি প্রদান করেছ; আর বৈধ করেছি আল্লাহ ফায় (বিনা যুদ্ধে লব্ধ) হিসেবে তোমাকে যা দান করেছেন তার মধ্য হতে যারা তোমার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে, আর তোমার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, তোমার মামার কন্যা ও তোমার খালার কন্যাকে যারা তোমার সঙ্গে হিজরাত করেছে। আর কোন মু’মিন নারী যদি নবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করে আর নবী যদি তাকে বিয়ে করতে চায় সেও বৈধ, এটি মু’মিনদের বাদ দিয়ে বিশেষভাবে তোমার জন্য যাতে তোমার কোন অসুবিধে না হয়। মু’মিনগণের জন্য তাদের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার তা জানা আছে। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Taisirul Quran
হে নাবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের মোহর তুমি প্রদান করেছ এবং বৈধ করেছি ‘ফায়’ হিসাবে আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তন্মধ্য হতে যারা তোমার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে এবং বিয়ের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, মামার কন্যা ও খালার কন্যাকে, যারা তোমার সাথে দেশ ত্যাগ করেছে এবং কোন মু’মিনা নারী নাবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করলে, এবং নাবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও বৈধ। এটি বিশেষ করে তোমারই জন্য, অন্য মু’মিনদের জন্য নয়; যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। মু’মিনদের স্ত্রী এবং তাদের মালিকানাধীন দাসীদের সম্বন্ধে যা আমি নির্ধারিত করেছি তা আমি জানি। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Sheikh Mujibur Rahman
হে নবী, আমি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা দিয়েছ, আর আল্লাহ তোমাকে ফায়* হিসেবে যা দিয়েছেন তন্মধ্যে যারা তোমার মালিকানাধীন তাদেরকেও তোমার জন্য হালাল করেছি এবং (বিয়ের জন্য বৈধ করেছি) তোমার চাচার কন্যা, ফুফুর কন্যা, মামার কন্যা, খালার কন্যাকে, যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে, আর কোন মুমিন নারী যদি নবীর জন্য নিজকে হেবা** করে, নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও তার জন্য বৈধ। এটি বিশেষভাবে তোমার জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়; আমি তাদের ওপর তাদের স্ত্রীদের ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তাদের ব্যাপারে যা ধার্য করেছি তা আমি নিশ্চয় জানি; যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। * ‘ফায়’ হচ্ছে বিনা যুদ্ধে লব্ধ কাফিরদের সম্পদ।
Rawai Al-bayan
হে নবী! আমরা আপনার জন্য বৈধ করেছি আপনার স্ত্রীগণকে, যাদের মোহর আপনি দিয়েছেন এবং বৈধ করেছি ফায় হিসেবে আল্লাহ আপনাকে যা দান করেছেন তাদের মধ্য থেকে যারা আপনার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে। আর বিয়ের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, মামার কন্যা ও খালার কন্যাকে, যারা আপনার সঙ্গে হিজরত করেছে এবং এমন মুমিন নারীকে (বৈধ করেছি) যে নবীর জন্যে নিজেকে সমৰ্পণ করে, যদি নবী তাকে বিয়ে করতে চায়— এটি বিশেষ করে আপনার জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়; যাতে আপনার কোনো অসুবিধা না হয়। আমরা অবশ্যই জানি মুমিনদের স্ত্রী এবং তাদের মালিকানাধীন দাসীগণ সম্বন্ধে তাদের উপর যা নির্ধারিত করেছি (১)। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা নিসা, আয়াত ২৪
নারীদের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ নারীগণও তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, কিন্তু তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের বাদে, আল্লাহ এসব ব্যবস্থা তোমাদের উপর ফরয করে দিয়েছেন। তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ নারীদের ছাড়া অন্যান্য সকল নারীদেরকে মোহরের অর্থের বদলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। অতঃপর তাদের মধ্যে যাদের তোমরা সম্ভোগ করেছ, তাদেরকে তাদের ধার্যকৃত মোহর প্রদান কর। তোমাদের প্রতি কোনও গুনাহ নেই মোহর ধার্যের পরও তোমরা উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে মোহরের পরিমাণে হেরফের করলে, নিশ্চয় আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত ও পরম কুশলী।
Taisirul Quran
এবং নারীদের মধ্যে বিবাহিতগণ তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে; কিন্তু তোমাদের ডান হাত যাদের অধিকারী – আল্লাহ তোমাদের জন্য তাদেরকে বিধিবদ্ধ করেছেন, এতদ্ব্যতীত তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে অন্যান্য নারীদের; তোমরা স্বীয় ধনের দ্বারা ব্যভিচারের উদ্দেশ্য ব্যতীত বিবাহ করার জন্য তাদের অনুসন্ধান কর; অনন্তর তাদের দ্বারা যে ফল ভোগ করবে তজ্জন্য তাদেরকে তাদের নির্ধারিত দেয় প্রদান কর এবং কোন অপরাধ হবেনা যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পর সম্মত হও, নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়।
Sheikh Mujibur Rahman
আর (হারাম করা হয়েছে) নারীদের মধ্য থেকে সধবাদেরকে। তবে তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে (দাসীগণ) তারা ছাড়া। এটি তোমাদের উপর আল্লাহর বিধান এবং এরা ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে চাইবে বিবাহ করে, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
Rawai Al-bayan
আর নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী (১) ছাড়া সব সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য এগুলো আল্লাহর বিধান। উল্লেখিত নারীগণ ছাড়া অন্য নারীকে অর্থব্যয়ে বিয়ে করতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হল, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। তাদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা সম্ভোগ করেছ তাদের নির্ধারিত মাহ্র অর্পণ করবে (২)। মাহ্র নির্ধারণের পর কোনো বিষয়ে পরস্পর রাযী হলে তাতে তোমাদের কোনো দোষ নেই (৩)। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
দক্ষিণহস্ত বা মালিকানাভূক্ত বলতে কি বুঝায় নিশ্চয়ই বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। ডান হাত বলতে বুঝায় শক্তি প্রয়োগে প্রাপ্ত। ডান হাত শক্তি বা তলোয়ারের প্রতীক এটি নিশ্চয়ই জানা থাকার কথা। কোরআনের বাঙলা অনুবাদে ইদানীং এই আয়াতগুলোকে একটু বদলে দেয়া হচ্ছে। ভালভাবে লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন। অবশ্য তাফসীরগুলোতে বেশ খোলামেলা ভাবেই এই বিষয়ে সব বলা রয়েছে।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় জালালাইনের তাফসীরকারকদ্বয় জালালুদ্দীন সুয়ূতি এবং তার গুরু জালালুদ্দীন মহল্লী বলেন- “অর্থাৎ, যাদেরকে তারা যুদ্ধের ময়দানে আটক করেছে, তাদের সাথে সহবাস করা তাদের জন্যে বৈধ, যদি তাদের স্বামীগণ দারুল হরবে জীবিতও থাকে”। উল্লেখ্য, দারুল হরব অর্থ- অমুসলিম রাষ্ট্র বা দেশ। অর্থাৎ স্বামী জীবিত আছে, এমন যুদ্ধবন্দীও ধর্ষণের উপযোগী।
দক্ষিন হস্তের অধিকার বলতে বোঝায় ক্রীতদাস বা দাসী (স্লেভস কিংবা মেইডস), যা যুদ্ধবন্দী হিসেবে কিংবা বাজার হতে ক্রয়সূত্রে মুসলমানদের দখলে আসে। ক্রীতদাসী মুসলমানদের দখলে যেভাবেই হোক আসলে তাদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ বা হালাল। বর্তমান যুগেও যদি কোন কাফেরদের দেশ মুসলমানদের অধিকারে আসে, এই নিয়ম পালন করা বৈধ বা সম্পূর্ণ হালাল। কারণ কোরআন রোজ কেয়ামত পর্যন্ত যেমন আছে তেমনই থাকবে, কোরআনের কোনও আয়াত পাল্টাবার, বা সময়ের প্রয়োজনে তা সংশোধন করার অনুমতি কাউকেই দেয়া হয় নি। সূরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর পড়ে নিই তাফসীরে জালালাইন থেকে [101] –
কোরআনের এই আয়াতটির তাফসির আমরা পড়তে পারি ইবনে কাসীরের প্রখ্যাত তাফসির গ্রন্থ থেকে [102] –
এবারে আসুন তাফসীরে মাযহারী থেকে সূরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াতের তাফসীরের একটি অংশ পড়ে নিই [103] –
এর আরো ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে পরবর্তী হাদিস সমূহ থেকে। আপাতত আরো একটি হাদিস দেখে নিই [104] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৭/ বিয়ে
পরিচ্ছেদঃ ৬৭/২৫. কোন্ কোন্ মহিলাকে বিয়ে করা হালাল এবং কোন্ কোন্ মহিলাকে বিয়ে করা হারাম।
وَقَوْلِهِ تَعَالَى: (حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالاَتُكُمْ وَبَنَاتُ الأَخِ وَبَنَاتُ الأُخْتِ) إِلَى آخِرِ الآيَتَيْنِ إِلَى قَوْلِهِ: (إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا).
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগিনী, দুধ মা, দুধ বোন, শ্বাশুড়ী, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সঙ্গত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে- নিশ্চয় আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত ও পরম কুশলী।’’(সূরাহ আন্-নিসা ৪/২৩-২৪)
وَقَالَ أَنَسٌ: (وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ) ذَوَاتُ الأَزْوَاجِ الْحَرَائِرُ حَرَامٌ إِلاَّ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ لاَ يَرَى بَأْسًا أَنْ يَنْزِعَ الرَّجُلُ جَارِيَتَهُ مِنْ عَبْدِهِ.
وَقَالَ: (وَلاَ تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ).
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ مَا زَادَ عَلَى أَرْبَعٍ فَهْوَ حَرَامٌ، كَأُمِّهِ وَابْنَتِهِ وَأُخْتِهِ.
আনাস (রাঃ) বলেন, (وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ) এ কথা দ্বারা সধবা স্বাধীনা মহিলাদেরকে বিয়ে করা হারাম বোঝানো হয়েছে; কিন্তু ক্রীতদাসীকে ব্যবহার করা হারাম নয়। যদি কোন ব্যক্তি বাঁদীকে তার স্বামী থেকে তালাক নিয়ে পরে ব্যবহার করে, তাহলে দোষ নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণীঃ ‘‘মুশরিকা নারীরা ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না।’’(আল-বাক্বারাহঃ ২২১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, চারজনের অধিক বিয়ে করা ঐরূপ হারাম বা অবৈধ যেরূপ তার গর্ভধারিণী মা, কন্যা এবং ভগিনীকে বিয়ে করা হারাম।
৫১০৫. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রক্তের সম্পর্কের সাতজন ও বৈবাহিক সম্পর্কের সাতজন নারীকে বিয়ে করা হারাম। এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেনঃ ‘‘তোমাদের জন্যে তোমাদের মায়েদের বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে।’’ (সূরাহ আন-নিসাঃ ২৪)
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু জা‘ফর (রহ.) একসঙ্গে ‘আলী (রাঃ)-এর স্ত্রী[1]ও কন্যাকে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ করেন (তারা উভয়েই সৎ-মা ও সৎ-কন্যা ছিল) ইবনু শিরীন বলেন, এতে দোষের কিছুই নেই। কিন্তু হাসান বসরী (রহ.) প্রথমত এ মত পছন্দ করেননি; কিন্তু পরে বলেন, এতে দোষের কিছুই নেই। কিন্তু হাসান ইবনুহাসান ইবনু ‘আলী একই রাতে দুই চাচাত বোনকে একই সঙ্গে বিয়ে করেন। জাবির ইবনু যায়দ সম্পর্কচ্ছেদের আশংকায় এটি মাকরূহ মনে করেছেন; কিন্তু এটি হারাম নয়। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘এসব ছাড়া আর যত মেয়ে লোক রয়েছে তা তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে।’’ (আন-নিসাঃ ২৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, যদি কেউ তার শালীর সঙ্গে অবৈধ যৌন মিলন করে তবে তার স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যায় না।
শা’বী এবং আবূ জা‘ফর বলেন, যদি কেউ কোন বালকের সঙ্গে সমকামে লিপ্ত হয়, তবে তার মা তার জন্য বিয়ে করা হারাম হয়ে যাবে। ইকরামাহ (রাঃ)…ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কেউ যদি শাশুড়ির সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হয়, তবে তার স্ত্রী হারাম হয় না। আবূ নাসর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, হারাম হয়ে যাবে। ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) জাবির ইবনু যায়দ (রাঃ) আল হাসান (রহ.) এবং কতিপয় ইরাকবাসী থেকে বর্ণনা করেন যে, তার স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে। উপরোক্ত ব্যাপারে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেছেন যে, স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক ততক্ষণ হারাম হয় না, যতক্ষণ না কেউ তার শাশুড়ির সঙ্গে অবৈধ যৌন মিলনে লিপ্ত হয়। ইবনু মুসাইয়িব, ‘উরওয়াহ (রাঃ) এবং যুহরী এমতাবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা বৈধ বলেছেন। যুহরী বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, হারাম হয় না। ওখানে যুহরীর কথা মুরসাল অর্থাৎ একথা যুহুরী ‘আলী (রাঃ) থেকে শোনেননি। (আধুনিক প্রকাশনী- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)
[1] ফাতিমাহ (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় ‘আলী (রাঃ) কাউকে বিয়ে করেননি। পরে তিনি বিয়ে করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
নবী ও খলিফাদের দাসী সঙ্গম
দাসী সঙ্গমে সওয়াব
অনেকেই বলতে পারেন, ক্রীতদাসীদের সাথে যৌনকর্মের কথা ইসলামে রয়েছে তবে কাজটি বাধ্যতামূলক নয়। কেউ চাইলে করতে পারে, নাও করতে পারে। কিন্তু দাসীর সাথে যৌনকর্ম কী আসলেই একটি ঐচ্ছিক বিষয়? নাকি এই কাজে রীতিমত উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে? আসুন হাদিস থেকেই জেনে নিই, দাসী ভোগ ইসলামে পবিত্র কাজ বা সওয়াব বলে বিবেচিত হয় কিনা। নিজের হাদিস থেকে এটি পরিষ্কার যে, নবী দাসী সেক্স করার উৎসাহ দিয়েছেন এবং এটি একটি রীতিমত সওয়াবের কাজ [105]।
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৬ঃ যাকাত
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ – সদাক্বার মর্যাদা
১৮৯৮-[১১] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক ‘তাসবীহ’ অর্থাৎ সুবহা-নাল্ল-হ বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা), প্রত্যেক ‘তাকবীর’ অর্থাৎ আল্ল-হু আকবার বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা), প্রত্যেক ‘তাহমীদ’ বা আলহাম্দুলিল্লা-হ বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। প্রত্যেক ‘তাহলীল’ বা ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ বলা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। নেককাজের নির্দেশ দেয়া, খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। নিজের স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে সহবাস করাও সদাক্বাহ্ (সাদাকা)। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ যদি নিজের কামভাব চরিতার্থ করে তাতেও কি সে সাওয়াব পাবে? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমাকে বলো, কোন ব্যক্তি যদি হারাম উপায়ে কামভাব চরিতার্থ করে তাহলে সেকি গুনাহগার হবে না? ঠিক এভাবেই হালাল উপায়ে (স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে) কামভাব চরিতার্থকারী সাওয়াব পাবে। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম ১০০৬, আহমাদ ২১৪৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮২৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৫৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৫৫৬, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ২৫৮৮।
নবীর দাসী সঙ্গম
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, মুহাম্মদ নিজে কী দাসীদের সাথে যৌন সঙ্গম করতেন? এই বিষয়ে জানার জন্য নিচের হাদিসগুলো পড়া প্রয়োজন- [106] [107]
সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৭/ স্ত্রীর সাথে ব্যবহার
৩৯৬১. ইবরাহীম ইবন ইউনুস ইবন মুহাম্মাদ হারামী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি বাঁদী ছিল যার সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহবাস করতেন। এতে আয়েশা (রাঃ) এবং হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে লেগে থাকলেন। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বদিটিকে নিজের জন্য হারাম করে নিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ পাক নাযিল করেনঃ (يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ) “হে নবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন তা আপনি নিজের জন্য কেন হারাম করে নিয়েছেন (সূরা তাহরীমঃ ১) ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তাহকিকঃ সহীহ।
এই দাসীটি হচ্ছে মারিয়া কিবতিয়া, যার গর্ভে নবী মুহাম্মদের একটি সন্তানও জন্ম নিয়েছিল। তিনিও একজন যুদ্ধবন্দী ছিলেন বলে জানা যায়। এই সম্পর্কে আরো বিস্তারিত পাবেন এই লেখাটিতে [108]।
অনলাইনভিত্তিক অনেক মুসলিম তার্কিক প্রায়ই মারিয়া কিবতিয়া ও নবী মুহাম্মদের শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি লুকোনোর ব্যর্থ ও হাস্যকর চেষ্টা করে থাকেন। এজন্য তারা মারিয়া কিবতিয়া ও নবী মুহাম্মদের মধ্যেকার সম্পর্ককে অফিস বা গৃহস্থালী প্রেক্ষাপটের নিয়োগকর্তা-কর্মচারীর মধ্যেকার সম্পর্কের মত স্বাভাবিক তথা নিষ্কাম সম্পর্ক বলে চালিয়ে দিতে চান। কিন্তু মারিয়া কিবতিয়ার সঙ্গে নবী মুহাম্মদের সম্পর্ক যে মোটেও সেরকম ছিল না, বরং তার চেয়ে বেশি কিছু ছিল, সহিহ মুসলিম শরীফের নিচের হাদিসটি পড়লে সেটি আঁচ করা যায়। সহিহ মুসলিম শরীফ থেকে এই হাদিসটি পড়ে নিই- [109] [110]
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ তাওবা
পরিচ্ছদঃ ১১. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর হেরেম সন্দেহমুক্ত হওয়া
৬৭৬৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মে ওয়ালাদের সাথে এক ব্যক্তির প্রতি অভিযোগ (অপবাদ) উত্থাপিত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) কে বললেন, যাও। তার গর্দান উড়িয়ে দাও। আলী (রাঃ) তার নিকট গিয়ে দেখলেন, সে কুপের মধ্যে শরীর শীতল করছে। আলী (রাঃ) তাকে বললেন, বেরিয়ে আস। সে আলী (রাঃ)এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। তিনি তাকে বের করলেন এবং দেখলেন, তার পূরুষাঙ্গ কর্তিত, তার লিঙ্গ নেই। তখন আলী (রাঃ) তাকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকলেন। তারপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে তো লিঙ্গ কর্তিত তার তো লিঙ্গ নেই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মারিয়া কিবতিয়ার সাথে যদি নবী মুহাম্মদের শারীরিক মিলনের মত অন্তরঙ্গ সম্পর্ক না-ই থাকবে, তাহলে যৌনঈর্ষায় অমন ক্রোধোন্মত্ত ও সন্দেহবাতিকগ্রস্থ হয়ে নবী মুহাম্মদের পক্ষে ঐ ব্যক্তিকে হত্যার নির্দেশ জারি করার কথা নয়। এর সঙ্গে সুনানে নাসাই শরীফের আগের হাদিসটির সরল স্বীকারোক্তি মিলিয়ে বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা নয় যে মারিয়া কিবতিয়ার সঙ্গে নিয়মিত যৌনসম্পর্ক রাখতেন নবী মুহাম্মদ। এছাড়াও মুহাম্মদের আরো কয়েকজন যৌনদাসী ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় [111] –
উমরের দাসী সঙ্গম
হাদিস থেকেই জানা যায়, খলিফা উমরও দাসী সঙ্গম করতেন। উমর নিজ সন্তানকে দাসী দান করার সময় বলে দিতেন, এর সাথে আমি সহবাস করেছি, তাই তুমি করো না। [112]
মুয়াত্তা মালিক
২৮. বিবাহ সম্পর্কিত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১৫. পিতার দাসীর সহিত সহবাস নিষিদ্ধ হওয়া
রেওয়ায়ত ৩৬. মালিক (রহঃ) বলেনঃ তাহার নিকট রেওয়ায়ত পৌছিয়াছে যে, উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) তাহার পুত্রকে একটি দাসী দান করিলেন। এবং বলিয়া দিলেন, তুমি ইহাকে স্পর্শ (সহবাস) করিও না। কারণ আমি উহার পর্দা উন্মোচন করিয়াছি (অর্থাৎ সহবাস করিয়াছি)।
আবদুর রহমান ইবন মুজাববার[1] (রহঃ) বলেনঃ মালিক ইবন আবদুল্লাহ্ (রহঃ) তাহার এক পুত্রকে একটি দাসী দান করিলেন এবং তিনি পুত্রকে বলিয়া দিলেন, তুমি ইহার নিকট গমন (সহবাস) করিও না, কারণ আমি উহার সাথে সংগত হওয়ার ইচ্ছা করিয়াছি। সুতরাং আমি তোমাকে উহার সহিত মিলিত হওয়ার অনুমতি দিতে পারি না।
[1] মুজাব্বার— উল্লেখ্য যে, তাহার নামও আবদুর রহমান। তাহার বংশের সিলসিলা— আবদুর রহমান ইবন আবদুর রহমান ইবন আবদুর রহমান ইবন উমর ইবন খাত্তাব।
হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু আনাস (রহঃ)
এবারে আসুন দেখি, উমরের কয়জন উম্মে ওয়ালাদ ছিল [113]
আলীর দাসী সঙ্গম
নবীর চাচাতো ভাই এবং একইসাথে মেয়ের জামাই চতুর্থ খলিফা হযরত আলী নাবালিকা যুদ্ধবন্দী নারী ধর্ষণ করেছিলেন, সেটি নিয়ে পরে আলোচনা করছি। আপাতত সেই ঘটনাটি ছাড়া আলীর আর কতজন দাসী ছিল, যাদের সাথে আলীর যৌন সম্পর্ক ছিল, সেটি দেখে নেয়া জরুরি। আসুন দেখে নিই, হযরত আলীর কতজন দাসী এবং উম্মে ওয়ালাদ ছিল [114] –
খলিফাদের অশ্লীল নির্মমতা
ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এই মু’আবিয়ার দরবারে দাসীদেরকে নগ্ন অবস্থায় উপস্থাপন করা হতো বলে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থ থেকে জানা যায়। মু’আবিয়া দণ্ড দিয়ে সেই সব দাসীদের গোপনাঙ্গ নির্দেশ করে বলতেন, এই সম্ভোগ অঙ্গ যদি আমার হতো! ভেবে দেখুন, সেই সময়ে এইসব নারীদের মনের অবস্থা কেমন হতো!
ইবনে আসাকির হযরত মু’আবিয়ায় আযাদকৃত গোলাম খোজা খাদীজের জীবনী আলোচনা প্রসঙ্গে তার উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন,
(একবার) মু’আবিয়া (বা) একটি সুন্দরী ও ফর্সা বাঁদী খরিদ করলেন, এরপর আমি তাকে বিবস্ত্র অবস্থায় তার সামনে পেশ করলাম, এ সময় তার হাতে একটি দণ্ড ছিল৷ তিনি তা দ্বারা তার বিশেষ অঙ্গের প্রতি নির্দেশ করে বলেন, এই সম্ভোগ অঙ্গ যদি আমার হত! তুমি তাকে ইয়াযীদ বিন মু’আবিয়ার কাছে নিয়ে যাও৷
… রাবী যখন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন, তখন তিনি তাকে বলেন, এই বাঁদীকে বিবস্ত্র অবস্থায় আমার সামনে আনা হয়েছে এবং আমি তার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ দেখেছি, এখন আমি তাকে ইয়াযীদের কাছে পাঠাতে চাই৷ তিনি বললেন, না৷ আমীরুল মু’মিনীন ! আপনি তা করবেন না৷ কেননা, সে তার জন্য আর হালাল হবে না ৷ তিনি বলেন, তুমি অতি উত্তম রায় প্রদান করেছ৷
রাবী বলেন, এরপর তিনি হযরত ফতিমা (রা)-এর আযাদকৃত গোলাম আবদুল্লাহ বিন মাসআদা আল ফাযারীকে বাঁদীটি দান করেন৷ আর সে ছিল কৃষ্ণাঙ্গ, তইি তিনি তাকে বলেন, এর মাধ্যমে তোমার সন্তানাদিকে ফর্সা করে নাও৷ এ ঘটনা হযরত মুআবিয়ার ধর্মীয় বিচক্ষণতা ও অনুসন্ধিৎসার পরিচায়ক৷ যেহেতু তিনি কামভাবের সাথে বাঁদীটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন৷ কিন্তু তার ব্যাপারে নিজেকে দুর্বল গণ্য করেন (এবং তাকে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন) তাই তিনি নিম্নের আয়াতের কারণে বাঁদীটি তার পুত্র ইয়াযীদকে দান করা থেকে বিরত থেকেছেন।
আসুন সরাসরি বই থেকেই এই অংশটুকু দেখে নিই, [115]
যৌনদাসী সম্পর্কিত ইসলামিক বিধান
উম্মে ওয়ালাদ কাকে বলে?
ইসলামের বিধান অনুসারে, উম্মে ওয়ালাদ হচ্ছে যে দাসীর গর্ভে মনিবের সন্তান জন্ম নেবে তারা। অর্থাৎ দাসীর সাথে মলিবের সহবাসের ফলাফল হিসেবে যদি দাসীটি গর্ভবতী হয়ে যায়, তারাই উম্মে ওয়ালাদ বা সন্তানের মাতা। মালিকের মৃত্যুর পরে তারা স্বাধীনতা পায়। তবে সহিহ হাদিস থেকেই জানা যায়, নবীর যুগে উম্মে ওয়ালাদ বিক্রয় করা বৈধ ছিল। সাহাবীগণ সেটি করেছেন। কিন্তু উমর ক্ষমতায় এসে সেটি নিষিদ্ধ করেন। আসুন হাদিস থেকে সরাসরি বিষয়টি দেখে নিই [116] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২৪/ দাসত্বমুক্তি
পরিচ্ছেদঃ ৮. উম্মু ওয়ালাদ আযাদ হওয়া
৩৯৫৪। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকরের যুগে উম্মু ওয়ালাদ বাঁদীদেরকে বিক্রি করেছি। পরবর্তীতে উমার (রাঃ)-এর যুগে তিনি আমাদের বারণ করায় আমরা বিরত হই।[1]
সহীহ।
[1]. বায়হাক্বী, হাকিম। ইমাম হাকিম বলেনঃ এই হাদীসটি মুসলিমের শর্ত মোতাবেক।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
সুনান ইবনু মাজাহ
১৩/ বিচার ও বিধান
পরিচ্ছেদঃ ১৩/৯৫. উম্মু ওয়ালাদ সম্পর্কে
৩/২৫১৭। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা আমাদের যুদ্ধবন্দিনী ক্রীতদাসী ও উম্মু ওয়ালাদ বিক্রয় করতাম। আমরা এটিকে দূষণীয় মনে করতাম না।
আবূ দাউদ ৩৯৫৪। সহীহাহ ২৪১৭।
তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
উমরের বিধান অনুসারে, এরকম দাসী মনিবের মৃত্যুর পরে মুক্ত হয়ে যাবে, তবে মনিব জীবিত থাকা অবস্থায় সে সেই উম্মে ওয়ালাদকে দাসীর মতই ভোগ করতে পারবে, তাকে দিয়ে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে। আসুন ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী থেকে এই বিষয়ক একটি মাসআলা দেখে নিই- [117]
কিন্তু উমরের এই বিধানের বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন আরেক খলিফা হযরত আলী। আসুন সেটিও জেনে নেয়া যাক, [118] –
একজন মুমিন সর্বোচ্চ কতজন যৌনদাসী রাখতে পারবে?
ইসলামের বিধান অনুসারে একজন পুরুষ একইসাথে সর্বোচ্চ চারজন স্ত্রী রাখতে পারে। কিন্তু সহবাসের উদ্দেশ্যে দাসীর সংখ্যার কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। অর্থাৎ একজন মুসলিম পুরুষ চাইলে হাজার হাজার দাসী কিনতে পারেন, তাদের সাথে যৌনকর্মও করতে পারেন। ইসলামি শরীয়ত একে বৈধতা দান করে। আসুন ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী থেকে এই বিষয়ে জেনে নিই [119] –
দাসীর সতর নাভী থেকে হাঁটু
ইসলামে ক্রীতদাসীদের সতর বা আওরাহ বা যা ঢেকে রাখতে হয় তা হচ্ছে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য এই লেখাটি পড়তে পারেন [120]। আসুন আশরাফুল হিদায়া গ্রন্থটি থেকে বিধানটি দেখে নিই [121] –
সেই সাথে, প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রাজ্জাক এবং মুফতি ইব্রাহীমের কাছ থেকে জেনে নিন, ক্রীতদাসীর পর্দার বিধান সম্পর্কে –
নাবালিকা দাসীর সাথে সহবাস ইসলামে সম্পূর্ণ বৈধ
খুবই ভয়াবহ এবং মাথা খারাপ করে দেয়ার মত একটি ইসলামিক বিধান হচ্ছে, ইসলামে নাবালিকা দাসীদের সাথে যৌনকর্মও সম্পূর্ণ হালাল করা হয়েছে। যুদ্ধবন্দী হিসেবে প্রাপ্ত কিংবা বাজার থেকে মুসলিমগণ ছোট ছোট বালিকা কিনে এনে তাদের সাথে হালাল উপায়েই যৌনকর্ম করতে পারে। এর মত নির্লজ্জ নির্মমতা আর কী হতে পারে আমি জানি না। এই বিধানটি পেডোফাইল বা শিশুকামীদের জন্য এক সূবর্ণ সুযোগ। তারা ইচ্ছেমত এই বিধান মেনে তাদের শিশুকাম চরিতার্থ করতে পারে। খুব কষ্ট লাগে সেই সব নাবালিকা মেয়ের কথা ভেবে, যারা ইসলামের এই অমানবিক বিধানের শিকার হয়ে দিনের পর দিন ধর্ষিত হয়েছে। আসুন হাদিসগুলো প্রথমে পড়ি [122] [123] [124] –
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
১. পবিত্রতা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১২০. দাসীর ইসতিবরা’আ’
১২১২. আওযাঈ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যুহরী রাহি. কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, একটি লোক একটি দাসী ক্রয় করলো যে এখনো হায়েযে উপনীত হয়নি আর গর্ভধারণের মতো (বয়সও তার) হয়নি। এমতাবস্থায় সেই লোকটি কতদিন তার থেকে সম্পর্কহীন থাকবে? তিনি বললেনঃ তিন মাস।[1]
[1] তাহকিকঃ এর সনদ সহীহ।
তাখরীজঃ এটি ৯৫৬ (অনূবাদে ৯৫১) নং এ গত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আওযায়ী (রহঃ)
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
১. পবিত্রতা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১২০. দাসীর ইসতিবরা’আ’
১২১৩. এবং ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাছীর বলেন, পঁয়তাল্লিশ দিন।[1]
[1] তাহকিকঃ এর সনদ সহীহ।
তাখরীজঃ এটি ৯৫৭ (অনূবাদে ৯৫২) নং এ গত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীর (রহঃ)
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
১. পবিত্রতা অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১২০. দাসীর ইসতিবরা’আ’
১২১৪. ইয়াহইয়া ইবনু বাশার হতে বর্ণিত, ইকরিমাহ বলেন, এক মাস।[1]আব্দুল্লাহ কে জিজ্ঞেস করা হলো: এতদুভয়ের মধ্যে আপনার মত কোনটি? তিনি বললেন: তিনমাসই অধিকতর শক্তিশালী মত। আর একমাস যথেষ্ট।
[1] তাহকিক: রাবীগণ নির্ভরযোগ্য।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
হযরত মুহাম্মদের মেয়ের জামাই এবং একই সাথে আপন চাচাতো ভাই আলীও ছিল একজন রঙ্গিন চরিত্রের মানুষ। নবী মুহাম্মদ নিজে অসংখ্য বিবি, দাসী ভোগের সাথে সাথে নিজের জামাইদেরকেও যুদ্ধবন্দিনীদের ভাগ দিতে একটুও কার্পণ্য করেন নি। হযরত আলীকে তিনি উদারভাবে মালে গনিমত থেকে প্রাপ্ত খুমুসের অংশ বন্টন করেছেন। উল্লেখ্য, গনিমতের মাল থেকে এক পঞ্চমাংশ ভাগ নিতেন নবী স্বয়ং। এই এক পঞ্চমাংশকে বলা হয় খুমুস। গনিমতের মালের মধ্যে নারী শিশুও অন্তর্ভূক্ত থাকতো [125]। নিচের হাদিসটিতে দেখা যাবে, কীভাবে হযরত ফাতেমার স্বামী নবী জামাতা শেরে খোদা হযরত আলী এক বালিকা বন্দিনীর সাথে সেক্স করছেন, যে বন্দিনীকে তিনি শ্বশুরের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন।
মহান আমাদের দয়াল নবী মুস্তফা। নিজের কন্যার স্বামীকে সহবতের জন্য যুদ্ধবন্দিনী দিতে এখনকার আধুনিক পিতারও বুক কেঁপে উঠবে, কিন্তু সেই সময়েই দয়াল নবী তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন [126] [127] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী (যুদ্ধ)
পরিচ্ছদঃ ৬৪/৬২. বিদায় হাজ্জের পূর্বে ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব এবং খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ।
৪৩৫০. বুরাইদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে খুমুস (গানীমাতের এক-পঞ্চমাংশ) নিয়ে আসার জন্য খালিদ (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। (রাবী বুরাইদাহ বলেন,) আমি ‘আলী (রাঃ)-এর প্রতি অসন্তুষ্ট, আর তিনি গোসলও করেছেন। (রাবী বলেন) তাই আমি খালিদ (রাঃ)-কে বললাম, আপনি কি তার দিকে দেখছেন না? এরপর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে আসলে আমি তাঁর কাছে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি বললেন, হে বুরাইদাহ! তুমি কি ‘আলীর প্রতি অসন্তুষ্ট? আমি বললাম, জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার উপর অসন্তুষ্ট থেক না। কারণ খুমুসে তার প্রাপ্য এর চেয়েও অধিক আছে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০১২)
Narrated Buraida: The Prophet (ﷺ) sent `Ali to Khalid to bring the Khumus (of the booty) and I hated `Ali, and `Ali had taken a bath (after a sexual act with a slave-girl from the Khumus). I said to Khalid, “Don’t you see this (i.e. `Ali)?” When we reached the Prophet (ﷺ) I mentioned that to him. He said, “O Buraida! Do you hate `Ali?” I said, “Yes.” He said, “Do you hate him, for he deserves more than that from the Khumlus.”
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পাঠক লক্ষ্য করুন, যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে যৌনকর্মের পরে গোছলের কথাটিকে বাঙলায় অনুবাদ করা হয়েছে শুধু গোছল হিসেবে। যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে নবী জামাতা আলী সেক্স করতেন তা গোপন করার জন্য। খুব কৌশলে আলীর চরিত্র রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে একই হাদিসের ইংরেজি অনুবাদে সেটি পাওয়া যায়। অনুবাদটি দেয়া হচ্ছে।
সহি বুখারিঃ ভলিউম-৫, বুক নং-৫৯, হাদিস নং-৬৩৭:
বুরাইদা কর্তৃক বর্ণিতঃ
নবী আলীকে ‘খুমুস’ আনতে খালিদের নিকট পাঠালেন (যুদ্ধলব্ধ মালের নাম খুমুস)। আলীর উপর আমার খুব হিংসা হচ্ছিল, সে (খুমুসের ভাগ হিসেবে প্রাপ্ত একজন যুদ্ধবন্দিনীর সাথে যৌনসঙ্গমের পর) গোসল সেরে নিয়েছে। আমি খালিদকে বললাম- “তুমি এসব দেখ না”? নবীর কাছে পৌছলে বিষয়টি আমি তাকে জানালাম। তিনি বললেন- “বুরাইদা, আলীর উপর কি তোমার হিংসা হচ্ছে”? আমি বললাম-“হ্যাঁ, হচ্ছে”। তিনি বললেন-“তুমি অহেতুক ইর্ষা করছ, কারণ খুমুসের যেটুকু ভাগ সে পেয়েছে তার চেয়ে আরও বেশী পাওয়ার যোগ্য সে”।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে এই বর্ণনাটির আরো বিবরণ পাওয়া যায় [128] –
সহজ ইনআমুল বারী যা সহিহ বুখারীর একটি ব্যাখ্যা গ্রন্থ, তা থেকে এই হাদিসটির ব্যাখ্যা যা জানা যায়, তাতে পিলে চমকে ওঠে। আলী আসলে যুদ্ধবন্দিনী হিসেবে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক পিরিয়ড পর্যন্ত না হওয়া এক বালিকার সাথে সহবত করেছিল [129] –
যুদ্ধবন্দিনী বা দাসী নাবালিকা হলে সেই নাবালিকা শিশু সাথে সহবাস যে সম্পূর্ণ বৈধ, এই সম্পর্কে ফিকহী মাসআলাও পাওয়া যায় ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী থেকে। কেউ কেউ মত দিয়েছেন যে, নাবালিকা যুদ্ধবন্দীর সাথে ভাগবাটোয়ারা এবং ইদ্দত পালন ছাড়াই ( জরায়ু মুক্ত করার জন্য নির্ধারিত সময় ) সহবাস করা যায়, যেমনটি আলী করেছেন। আবার অন্য আলেমগণ বলেছেন দেড় মাস অপেক্ষার পরে নাবালিকা শিশুর সাথে যৌনকর্ম বৈধ হবে। আসুন ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী থেকে পড়ি [130] –
( গায়াতুল বয়ান ) কোন নাবালিগ দাসীকে যদি সহবাসের পর তালাক দেওয়া হয় , তবে তার ইদ্দত দেড় মাস হবে।
অপ্রাপ্তবয়ষ্ক সহবাসে অক্ষম নাবালিকা দাসীর সাথে ইসতিবরার পরে, অর্থাৎ জরায়ু মুক্ত করার পরে সহবাস করার বৈধতার প্রমাণ আরো পাওয়া যায় আশরাফুল হিদায়া গ্রন্থেও- [131]
ইসতিবরা করা ক্রেতার উপর ওয়াজিব, বিক্রেতার উপর নয়। কেননা এর মূল কারণ হলো দাসীর সাথে সহবাসের ইচ্ছা করা। আর তা ক্রেতাই করে থাকে, বিক্রেতা করে না। অতএব, ক্রেতার উপরই ইসতিবরা তথা জরায়ু পবিত্র করা ওয়াজিব। তবে সহবাসের ইচ্ছা একটি গোপন বিষয়, তাই ইসতিবরা এর হুকুম আবর্তিত হবে এর দলিলের উপর। আর সে দলিল হলো সহবাস করার বৈধ কর্তৃত্ব। এ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় মালিকানা ও দখলের দ্বারা। আর তাই কর্তৃত্বকেই কারণ বা সবব সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং বিষয়টিকে সহজ করার জন্য হুকুম উক্ত কর্তৃত্বের সাথেই আবর্তিত হবে। সুতরাং ইসতিবরা করার সবব হলো দাসীর সত্তার মালিকানা যা দখলের মাধ্যমে মজবুত হয়েছে। এ হুকুম মালিকানার অন্যান্য সববের দিকে সম্প্রসারিত হবে। [ মালিকানার অন্যান্য সবব ] যেমন- ক্রয়, দান, অসিয়ত, মিরাস, খুলা ও কিতাবাত ইত্যাদি। অনুরূপভাবে ক্রেতার উপর ইসতিবরা ওয়াজিব হবে যদি সে দাসীকে কোনো শিশুর মাল থেকে অথবা কোনো মহিলার মাল থেকে, অথবা [ ব্যবসায়ে অনুমতিপ্রাপ্ত ] কোনো দাস থেকে কিংবা এমন ব্যক্তি থেকে ক্রয় করে যার জন্য সেই দাসীর সাথে সহবাস করা হালাল নয়। অনুরূপভাবে যদি ক্রয়কৃত দাসীটি সহবাসে অযোগ্য কুমারী হয় তবুও [ ইসতিবরা করা ওয়াজিব হবে ]; সবব পাওয়া যাওয়ার কারণে। আর হুকুমসমূহ সববসমূহের সাথেই আবর্তিত হয়, হিকমত বা রহস্যসমূহের সাথে নয়। কেননা হিকমত গোপন থাকে। সুতরাং জরায়ুতে বীর্য থাকার ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকলেও সবব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।
মুসান্নিফ (র .) বলেন, যেসব দাসী মাস গণনার মাধ্যমে ইদ্দত পালন করতে হয় অর্থাৎ বয়সের স্বল্পতার কারণে এখনো যাদের হায়েয শুরু হয়নি কিংবা অধিক বয়সের কারণে হায়েয বন্ধ হয়ে গেছে এমন দাসী যদি কারো অধিকারে আসে তাহলে সে দাসীর গর্ভাশয় পবিত্র বলে সাব্যস্ত হবে এক মাস অতিক্রান্ত হওয়ার দ্বারা। কেননা এসব মহিলার ক্ষেত্রে একমাসকে এক হায়েযের স্থলবর্তী এবং তিন মাসকে তিন হায়েযের স্থলবর্তী সাব্যস্ত করা হয়েছে ।
এমনকি সাহাবীরাও ধর্ষণে সঙ্কোচ করতো!
নবী মুহাম্মদের সাহাবীগণ যখন কাফেরদের মেরে তাদের মা বোন কন্যা এসব নারীদের ধরে আনতো, তখন সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই অন্যের বৌকে এভাবে ভোগ করতে ইতস্তত করেছিলেন। এমনকি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেইসব নারীদের স্বামীদেরও বন্দী করে আনা হতো। সেইসব স্বামীর সামনেই তাদের স্ত্রীদের ধর্ষণ করতে অনেক সাহাবীই সংকোচ করতেন। এই বিষয়ে তাই তারা নবীর কাছে গেলেন জিজ্ঞেস করার জন্য। নবী তাৎক্ষণিক আল্লাহর আয়াত নামিয়ে কাজটিকে বৈধতা দিয়ে সাহাবীদের মনের খচখচানি তিনি দূর করে দিলেন!
কী মহান আর করুনাময় আল্লাহ পাক এবং তার নবী। একটুও চিন্তা করার সময় ব্যয় না করে সাথে সাথে আয়াত নাজিল করে দিলেন, যেন সাহাবীগণ ঐসব কাফের স্বামীদের সামনেই তাদের স্ত্রীদের ঠিকমত ধর্ষণ করতে পারে! আল্লাহ ও তার নবীর দয়ার আসলে সীমা নেই! এসব দলিল থেকে বোঝা যায়, অনেক সাহাবীর মানবিক বোধ নবী এবং আল্লাহর চাইতে উন্নত ও সভ্য ছিল [132] [85] [90] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৮/ দুধপান
পরিচ্ছেদঃ ১. ইসতিবরার পর যুদ্ধ বন্দিনীর সাথে সঙ্গম করা জায়েয এবং তার স্বামী বর্তমান থাকলে সে বিবাহ বাতিল
৩৪৭৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু মায়সারা কাওয়ারীরী (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধের সময় আওতাসের দিকেএকটি বাহিনী পাঠান। তারা শত্রুদলের মুখোমুখী হয় এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে এবং তাদের অনেক কয়েদী তাদের হস্তগত হয়। এদের মধ্য থেকে দাসীদের সাথে সহবাস করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকজন সাহাবী যেন নাজায়িয মনে করলেন, তাদের মুশরিক স্বামী বর্তমান থাকার কারণে। আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” অর্থাৎ তারা তোমাদের জন্য হালাল, যখন তারা তাদের ইদ্দত পূর্ন করে নিবে।
[গর্ভবতী হলে প্রসব, অন্যথায় এক ঋতু অতিবাহিত হওয়াকেই ইসতিবরার বলে।]
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩৯. বন্দী স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস করা।
২১৫২. উবায়দুল্লাহ্ ইবন উমার ইবন মায়সার …… আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধের সময় আওতাস্ নামক স্থানে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করেন। তারা তাদের শত্রুদের সাথে মুকাবিলা করে তাদেরকে হত্যা করে এবং তাদের উপর বিজয়ী হয়। আর এই সময় তারা কয়েদী হিসাবে (হাওয়াযেন গোত্রের) কিছু মহিলাকে বন্দী করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিছু সাহাবী তাদের সাথে অনধিকারভাবে সহবাস করা গুনাহ মনে করে, কেননা তাদের মুশরিক স্বামীরা তখন বন্দী ছিল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এই আত নাযিল করেনঃ (অর্থ) যে সমস্ত স্ত্রীলোকদের স্বামী আছে তারা তোমাদের জন্য হারাম। তবে যারা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী অর্থাৎ যেসব মহিলা যুদ্ধবন্দী হিসাবে তোমাদের আয়ত্বে আসবে তারা ইদ্দত (হায়েযের) পূর্ণ করার পর তোমাদের জন্য হালাল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
দাসীদের সাথে আযল
নবী মুহাম্মদের বুদ্ধিমান সাহাবীগণ বুঝতে পেরেছিল যে, যুদ্ধের পরে যুদ্ধবন্দী নারী কিংবা অন্যান্য সময়ে ক্রীতদাসীদের সাথে যৌনসঙ্গমের মহা উৎসব চালাবার পরে মেয়েগুলো খুব দ্রুত গর্ভবতী হয়ে যেতো। গর্ভবতী হয়ে গেলে সেই মেয়েগুলোকে বাপ ভাই স্বামীর কাছে ফেরত দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা বা বাজারে বিক্রি করা কিংবা তাদের ওপর জিহাদী মুমিনদের চড়ে বসা অপেক্ষাকৃত কষ্টকর। তাই তারা এক পদ্ধতি অবলম্বন করতো, যাকে বলা হয় আযল। আযল হচ্ছে, সঙ্গমের সময় বীর্যপাতের ঠিক পূর্বমূহুর্তে লিঙ্গ বের করে ফেলে বাইরে বীর্যপাত করা। এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হলে দীর্ঘদিন ধরে একজন নারীকে ভোগ করা যেতো, ভোগ করার পরে আর ভাল না লাগলে বাজারে নিয়ে উচ্চদামে বিক্রিও করা যেতো।
নবীর কাছে তারা এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাও করেছিল, নবী এই কাজে কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, ক্রীতদাসীদের সাথে আযল করতে সম্মতির দরকার হয় না। স্বাধীন স্ত্রীর সাথে করতে স্ত্রীর সম্মতির দরকার হয়। আসুন সরাসরি বুখারী শরীফ থেকে দেখে নিই [133] –
আসুন এই বিষয়টি ফিকাহ শাস্ত্র আশরাফুল হিদায়া থেকে আরো ভালভাবে জেনে নিই [134] –
ইমাম শাফিঈ এর মতে, স্বাধীন স্ত্রীর সাথে আযলেও অনুমতির প্রয়োজন নেই [135] –
দাসীদের সাথে আযলের কারণ
আজকাল আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক মুসলিমই এইসমস্ত বর্বর অপকর্ম ধামাচাপা দিতে বলতে থাকেন, পরিবার পরিজনহীন অসহায় নারীরা কোথায় যাবে, কী করবে, সেই কারণে দয়াল নবী বাধ্য হয়ে তাদের বন্দী করে দাসী বানিয়ে সাহাবীদের ভোগ করতে দিতেন! এইসব নির্লজ্জ কথা বলতে তাদের একটুও সংকোচ হয় না। কিন্তু হাদিস থেকে জানা যায়, যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে সহবতই ছিল নবীর দলবলের প্রধান উদ্দেশ্য। নিচের হাদিসটি পড়লে সেটি স্পষ্ট হয়ে যায়। লক্ষ্য করে পড়ুন, বস্ত্র উন্মোচন করি নি, কথাটি নবীর সামনে কত স্বাভাবিকভাবেই না বলছেন এই সাহাবী [136] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ১৪. নফল (বিশেষ পুরস্কার ও অনুদান) হিসাবে কিছু দেওয়া এবং বন্দীদের বিনিময়ে (আটকে পড়া) মুসলমানদের মুক্ত করা
৪৪২১। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … ইয়াস ইবন সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা বলেছেন, আমরা ফাযারা গোত্রের সাথে যুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের আমীর ছিলেন আবূ বাকর (রাঃ)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আমাদের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন যখন আমাদের এবং (গোত্রের) পানির স্থানের মাঝে এক ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান ছিল, তখন আবূ বাকর (রাঃ) আমাদেরকে শেষ রাতের অবতরণের (বিশ্রামের) নির্দেশ দিলেন। সুতরাং আমরা রাতের শেষাংশেই সেখানে অবতরণ করলাম। এরপর বিভিন্ন দিক দিয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালালেন এবং পানি পর্যন্ত পৌছলেন। আর যাদের পেলেন হত্যা করলেন এবং বন্দী করলেন।
আমি লোকদের একটি দলের দিকে দেখছিলাম যাদের মধ্যে শিশু ও নারী রয়েছে। আমি আশংকা করছিলাম যে, তারা হয়তো আমার আগেই পাহাড়ে পৌছে যাবে। অতএব, আমি তাদের ও পাহাড়ের মাঝে তীর নিক্ষেপ করলাম। তারা যখন তীর দেখতে পেল থেমে গেল। তখন আমি তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে এলাম। তাদের মাঝে চামড়ার পোশাক পরিহিত বনী ফযরার একজন মহিলাও ছিল এবং তার সঙ্গে ছিল তার এক কন্যা। সে ছিল আরবের সব চাইতে সুন্দরী কন্যা। আমি সকলকেই হাকিয়ে আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে নিকট এলাম। আবূ বকর (রাঃ) কন্যাটিকে আমাকে নফল হিসাবে প্রদান করলেন।
এরপর আমি মদিনায় ফিরে এলাম। আমি তখনও তার বস্ত্র উন্মোচন করিনি। পরে বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাকে আমার খুবই পছন্দ হয়েছে এবং এখনও আমি তার বস্ত্র উন্মোচন করিনি। পরের দিন আবারও বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হলো। তখন তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। “আল্লাহ তোমার পিতাকে কতই সুপুত্র দান করেছেন।” তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে আপনার জন্যই আল্লাহর কসম! আমি তার বস্ত্র উমোচন করিনি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ কন্যাটিকে মক্কায় পাঠিয়ে দিয়ে তার কয়েকজন মুসলমানের মুক্তির ব্যবস্থা করলেন, যারা মক্কায় বন্দী ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইয়াস ইবনু সালামাহ ইবনু আকওয়াহ (রহঃ)
জিহাদিদের উন্মত্ত ধর্ষণ প্রক্রিয়ার ফলে যদি বন্দিনীটির গর্ভসঞ্চার হয় তাহলে কী হবে? অনেক জিহাদিই চাইতো না যে তাদের সেক্স-মেশিনটি তাড়াতাড়ি গর্ভসঞ্চার করে বসুক, সুতরাং তারা আযল করতো। এই প্রথা সম্পর্কে মুহম্মদের মনোভাব ছিল ঘোলাটে, কখনও তাকে এই প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায়, কখনও বা তাকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। কিন্তু কোথাও সেই যুদ্ধবন্দিনীকে সাথে সাথে মুক্তি দিতে বলতে দেখা যায় না। সেই যুদ্ধবন্দিনীর সাথে আযল পদ্ধতিতে সেক্স করলো কি করলো না সেটি মহামানব মুহাম্মদের কাছে এত গুরুত্ত্বপূর্ণ, অথচ সেই যুদ্ধবন্দিনীটি মোটেও গুরুত্ত্বপূর্ণ নয়? একজন মহামানবের কাছ থেকে যদি আমি আশা করে থাকি যে, তিনি এই কথা শোনার সাথে সাথে ঐ জিহাদীর বিচারের ব্যাবস্থা করবেন, এবং সেই যুদ্ধবন্দিনীকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দেবেন, তাহলে কি খুব বেশি আশা করা হয়ে যায়?
আসুন নিচের হাদিসটি পড়ি। এখানে দেখা যাচ্ছে, সাফিয়্যা আরেকজন সাহাবীর ভাগে পড়েছিল, যাকে নবী পছন্দ করে নিজে নিয়ে নেন। হাদিসটির বাকি অংশে বর্ণনা করা হচ্ছে, আযল করার কারণ [137] !
বন্দিনী নারীগণ যেন দ্রুত গর্ভবতী না হয়ে যায়, সেই দিকে মুহাম্মদের জিহাদী সৈন্যদের ছিল খুব সজাগ দৃষ্টি। নিচের হাদিসটি পড়ুন [138] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৯৭/ তাওহীদ
পরিচ্ছদঃ ৯৭/১৮. আল্লাহর বাণীঃ তিনিই আল্লাহ্ সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদাতা। (সূরাহ আল-হাশর ৫৯/২৪)
৭৪০৯. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বানী মুসতালিক যুদ্ধ বিষয়ে বর্ণনা করেন যে, মুসলিমগণ যুদ্ধে কতকগুলো বন্দিনী লাভ করলেন। এরপর তাঁরা এদেরকে ভোগ করতে চাইলেন। আবার তারা যেন গর্ভবতী হয়ে না পড়ে সে ইচ্ছাও তারা করছিলেন। তাই তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আযল বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এতে তোমাদের কোন লাভ নেই। কারণ আল্লাহ্ ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যত জীবন সৃষ্টি করবেন, তা সবই লিখে রেখেছেন। মুজাহিদ (রহ.) কাযআ (রহ.)-এর মাধ্যমে আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যত জীবন সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই তা সৃষ্টি করবেনই। (২২২৯) (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
হাদিসটি সরাসরি বই থেকেও দেখে নিই [139] –
অর্থাৎ যুদ্ধে জেতার পরে আল্লাহ রাসুল সকল প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষকে হত্যা করলেন এবং তিনি তাদের সকল নারী এবং শিশুকে বন্দী হিসেবে নিলেন। এবারে আসুন, সহজ নসরুল বারী গ্রন্থে থেকে এই সম্পর্কিত হাদিসের ব্যাখ্যা পড়ে নিই [140] –
অর্থাৎ আমরা যদি বাঁদীর সাথে আযল না করি, তাহলে বাঁদী উম্মে ওয়ালাদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ আমাদের মালের প্রতি মহব্বত আছে। আমরা তাকে বিক্রি করে তার মূল্য দ্বারা উপকৃত হতে চাই। কিন্তু উম্মে ওয়ালাদ হয়ে গেলে তাকে বিক্রয় করতে পারব না। এজন্য আমরা বাঁদীর সাথে আযল করতে চাই। যাতে বাঁদীর গর্ভ সঞ্চার না হয়। সুতরাং এ বিষয়ে আপনি কী বলেন?
দাসব্যবসা ও ক্রয়বিক্রয়
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, নবী নিজে এবং তার সাহাবীগণ দাসদাসী ক্রয়বিক্রয় বা দাসব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন কিনা। আসুন কয়েকটি হাদিস থেকে দেখি, নবী নিজে এবং তার সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই দাসদাসী ক্রয়বিক্রয় ও ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন [141] [142] [143] –
সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৪/ ক্রয় বিক্রয়
পরিচ্ছেদঃ শর্তসমূহ লিপিবদ্ধ করা।
১২১৯. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ……. আবদুল মাজীদ ইবনু ওয়াহব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক দিন আদ্দা ইবনু খালিদ ইবনু হাওযা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বললেন, আমাকে যে লিপিখানি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখে দিয়েছিলেন তোমাকে কি তা পড়ে শুনাব? আমি বললাম, অবশ্যই। তখন তিনি আমাকে শোনাবার জন্য একটি লিপি বের করলেন। এতে ছিল, এ হলো মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আদ্দা ইবনু খালিদ ইবনু হাওযা যা খরীদ করেছেন (এর দলীল)। তিনি তাঁর নিকট থেকে এমন একটি দাস বা দাসী ক্রয় করেছেন, যার মধ্যে কোন দোষ নেই। এটি পলায়ন করে না, এবং তা দুশ্চিরিত্রের অধিকারী নয়। এ হলো এক মুসলিমের সঙ্গে আরেক মুসলিমের ক্রয়-বিক্রয়। – ইবনু মাজাহ ২২৫১, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১২১৬ [আল মাদানী প্রকাশনী]
ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান-গারীব। আব্বাস ইবনু লায়ছের সূত্র ছাড়া এটি সম্পর্কে আমরা জানি না। একাধিক হাদীস বিশেষজ্ঞ রাবী এটিকে তাঁর বরাতে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৪/ ক্রয় বিক্রয়
পরিচ্ছেদঃ মুদাববার বিক্রি প্রসঙ্গে।
১২২২. ইবনু আবূ উমার (রহঃ) ….. জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, জনৈক আনসারী তার একটি গোলামকে মুদাববার বানায়। পরে ঐ ব্যক্তি মারা যায়। কিন্তু এই গোলামটি ছাড়া সে আর কোন সম্পদ রেখে যায়নি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-একে বিক্রি করে দেন। নুআয়ম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নাহহাম একে খরীদ করেন। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এটি ছিল একজন কিবতী গেলাম। সে ইবনুয- যুবাইর এর খিলাফতের প্রথম বছরে মারা যায়। – ইরওয়া ১২৮৮, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১২১৯ [আল মাদানী প্রকাশনী]
ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান-সাহীহ। এটি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে। কতক সাহাবী ও অপরাপর আলিমপর আলিমগণের, এই হাদীস অনুসারে আমল রয়েছে। তাঁরা মুদাববার বিক্রি করায় কোন দোষ মনে করেন না। এ হলো ইমাম শাফিঈ, আহমাদ (রহঃ) এর অভিমত। সাহাবী ও অপর একদল আলিম ’মুদাববার’ বিক্রি করা নাজায়েয বলেন। এ হলো ইমাম সুফইয়ান ছাওরী, মালিক ও আওযাঈ (রহঃ) এর অভিমত।
মুদাববারঃ মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত করে দাস আযাদ করা। যেমন কেউ বলল, আমি মারা গেলে তুমি আযাদ। এই ধরনের আযাদকৃত দাসকে “মুদাববার” বলা হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৭/ ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য
পরিচ্ছেদঃ ৩৬৬. বিক্রীত বস্তুর উপস্থিতিতে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মতানৈক্য হলে।
৩৪৭৫. মুহাম্মদ ইবন ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) …. মুহাম্মদ ইবন আশআছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আশআছ (রাঃ) খুমুসের (মালে গনীমতের পঞ্চমাংশ) গোলাম থেকে কয়েকটি গোলাম আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রাঃ) হতে বিশ হাজার টাকায় খরিদ করেন। এরপর আবদুল্লাহ্ (রাঃ) আশআছ (রাঃ) এর নিকট গোলামদের দাম আনার জন্য জনৈক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন। তখন আশআছ (রাঃ) বলেনঃ আমি তো তাদের দশ হাজার টাকায় খরিদ করেছি। একথা শুনে আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেনঃ তুমি আমার ও তোমার মধ্যে কাউকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে নিয়োগ কর। তখন আশআছ (রাঃ) বলেনঃ আমার ও তোমার মধ্যের (মতানৈক্যের) ফয়সালার ভার তোমার উপর। এ সময় আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ বলতে শুনেছিঃ যখন ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হবে এবং তাদের কাছে কোন সাক্ষী থাকবে না, এমতাবস্থায় মালের মালিক বা বিক্রেতার কথাই গ্রহণীয় হবে এবং তারা উভয়ে একমত হয়ে ক্রয়-বিক্রয়কে বাতিল সাব্যস্ত করবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সেইসাথে, পূর্বেই দেয়া তথ্যটি আরেকবার দিচ্ছি। বনু কুরাইজা গোত্রকে আক্রমণ এবং ২৫ দিন অবরোধ করে রাখার পরে বনু কুরাইজার সকল নারী পুরুষ যখন আত্মসমর্পন করে, নবীর সৈন্যবাহিনী তখন সকল সাবালক পুরুষকে হত্যা এবং নারী ও শিশুদের দাস বানাবার সিদ্ধান্ত নেয়। ছেলেদের গোপনাঙ্গ পরীক্ষা করে সাবালকত্ব পরীক্ষা করা হয়। যাদের গোপনাঙ্গে চুল গজিয়েছে তাদের হত্যা আর যাদের চুল গজায় নি তাদের দাস বানানো হয়। বনু কুরাইজার নাবালক শিশুদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল? তাদের কিছু অংশ নবী মুহাম্মদের নির্দেশেই বিক্রি করে সেই মূল্য দিয়ে অস্ত্র এবং ঘোড়া কিনেছিলেন নবী মুহাম্মদের অনুসারীরা- [92] [93]
দাসীর বাজারে কেনাবেচা
নবী মুহাম্মদের সাহাবীগণের মধ্যে অনেকেই দাসদাসী কেনাবেচার সাথে জড়িত ছিল। নবী নিজেও দাসদাসী বিক্রি করেছেন, কিনেছেন। তবে এই দাসদাসীর বাজার কীরকম ছিল, সেই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার জন্য কয়েকটি রেফারেন্স আপনাদের ভালভাবে পড়তে হবে। আসুন আশরাফুল হিদায়া গ্রন্থ থেকে এই বিষয়ক ফিকহী মাসালাগুলো পড়ে নিই, যার থেকে ধারণা পাওয়া যাবে, সেই সময়ের দাসদাসীর বাজারগুলো কেমন ছিল। এগুলো পড়ুন এবং আপনার কন্যা সন্তানকে সেই জায়গাতে কল্পনা করুন, তখন বুঝতে পারবেন এগুলো কতখানি অমানবিক [144] –
ইমাম কুদুরী (রহ.) তাঁর মুখতাসারুর কুদুরী গ্রন্থে বলেন, যদি কেউ দাসী ক্রয় করার ইচ্ছা পোষণ করে তার জন্য দাসীর ঐ সকল অঙ্গসমূহ স্পর্শ করা জায়েজ, যা দেখা জায়েজ। এমনকি যদি স্পর্শ করার দ্বারা ক্রেতার মধ্যে কামভাব জাগ্রত হয়, তবুও।
মুসান্নিফ (রহ.) বলেন, ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) তাঁর জামিউস সাগীরের মধ্যে এইভাবেই মাসআলাটি বর্ণনা করেছেন। জামিউস সাগীরের ইবারত এই- “ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) ও আবু ইউসুফ (রহ.) এ দুজন ইমাম আবু হানীফা (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি কোন দাসী ক্রয় করার ইচ্ছা পোষণ করেছে তার জন্য দাসীর পায়ের নলি, বুক ও হাত স্পর্শ করাতে কোন ক্ষতি বা দোষ নেই এবং এসব অঙ্গ অনাবৃত অবস্থায় দেখাতেও কোন সমস্যা নেই”। “কামভাব জাগ্রত হলেও স্পর্শ করা বৈধ হবে”।
“স্পর্শ করার দ্বারা কামভাব জাগ্রত হওয়ার আশংকা থাকলেও স্পর্শ করা জায়েজ। তাদের মতে ক্রয় করার উদ্দেশ্যে দাসীর দিকে তাকানো বৈধ, যদিও এতে উত্তেজিত হওয়ার আশংকা থাকে”।
“পূর্বযুগের ইমামগণ দাসী ক্রয় করার সময় তাদের ত্বক সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার উদ্দেশ্যে স্পর্শ করাকে বৈধ বলতেন, কেননা সেই সময়ের লোকজন সাধারণভাবে নেক ছিলেন”।
“পরবর্তীকালে ওলামাগণ কামভাব না থাকা অবস্থায় স্পর্শ করার অনুমতি দিয়েছেন। আর এর উপরেই বর্তমান ফতোয়া”।
“যখন কোন কিশোরী দাসী প্রথম ঋতুমতী হয় তারপর থেকে উক্ত দাসীকে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে নিম্নাঙ্গ আবৃত হয় এমন এক কাপড় পরিয়ে তাকে দর্শন করানো যাবে না। কারণ ঋতুমতী হওয়ার অর্থ হল সে বালেগা হয়েছে। আর বালেগা দাসীর পেট ও পিঠ সতরের অন্তর্ভুক্ত যা ইতঃপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং এখন যদি শুধুমাত্র নিম্নাঙ্গের পোশাক পরিধান করানো হয় তাহলে বুক ও পিঠ খোলা থাকবে তাই তাকে উর্ধাঙ্গের কামিস তথা পোশাক পরতে হবে। উল্লেখ্য যে ইজার এমন পোশাককে বলা হয় যার দ্বারা শুধুমাত্র নাভি থেকে নিচের অংশ ঢাকা যায়”।
“এ আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল এর চেয়ে কম বয়সী দাসীদের বুক পিঠ খোলা অবস্থায় বাজারে নিয়ে যাওয়াতে কোন দোষ নেই”।
“যে কিশোরী দাসী কামভাবের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে (অর্থাৎ সঙ্গমের উপযুক্ত হয়েছে, এতে সাত বা নয় বছর বয়সের কোন শর্ত নেই) তাকে বিক্রির জন্য এক কাপড়ে পেশ করা যাবে না”।
সহবাসের উদ্দেশ্যে যৌনদাসী ক্রয়
ইসলামে লাজলজ্জার মাথা খেয়ে কোন রাখঢাক না করেই যৌন সঙ্গমের উদ্দেশ্যে দাসী ক্রয়ের বিধান রাখা হয়েছে। ইমাম কুদুরী তার গ্রন্থে বলেছেন, অনেক সময় সম্ভোগের উদ্দেশ্যে দাসী কেনার সময় বগলে বা মুখে দুর্গন্ধ থাকলে, সেটির জন্য ক্রেতা সেই দাসীকে আবার ফেরত দিতে পারে। এটিও বলা আছে, দাসী একটি দ্রব্য এবং দাসীর ক্ষেত্রে দুর্গন্ধ থাকা একটি দোষ [145] –
দাসী খরিদের সময় যোনি পরীক্ষা
বিশ্ব মানবতার পথপ্রদর্শক নবী মুহাম্মদের সাহাবীগণ দাসবাজার থেকে সুন্দরী ভার্জিন বা কুমারী দাসী কিনে আনতো ভোগের জন্য। তাদের বাজারে কুমারী দাসীদের বাজার মূল্যও ছিল বেশি। কিন্তু মাঝে মাঝে কিনে আনা ক্রীতদাসীকে দেখা যেত, তারা ঠিক কুমারী নন। কুমারী যোনি যেহেতু মুহাম্মদের সাহাবীদের খুবই পছন্দের ছিল (আল্লাহ পাক বেহেশতেও কুমারী যোনির হুরের লোভ দেখিয়েছেন), দাসীদের এনে বিছানায় তোলার পরে যদি দেখা যেতো কুমারী যোনির পর্দা ফেটে যথেষ্ট রক্তরক্তি হচ্ছে না, অথবা সাহাবীরা সঙ্গম করে ঠিক মজা পাচ্ছে না যোনি যথেষ্ট টাইট না হওয়ার জন্য, তখন নবীর সাহাবীগণ ক্ষেপে যেতো। কারণ তারা তো পয়সা দিয়েছিল কুমারী বা ভার্জিন মেয়ের জন্য! মানে তারা ভাবতো, পুরো টাকাই গচ্চা গেল! ভেবে দেখুন, কী মহান মানবিক এসব কাজকর্ম! আপনার বোন বা মেয়ের সাথে একই ঘটনা ঘটলে আপনার কেমন লাগবে? এই বিষয়ে আশরাফুল হিদায়াতে যেই মাসালাটি দেয়া আছে, সেটি হচ্ছে, এরকম হলে যাচাই করার জন্য মালিক দাসীর লজ্জাস্থান বা যোনি পরীক্ষা করে দেখতে পারবে [146] –
৬. অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি যদি কোনো দাসীকে কুমারী হিসেবে ক্রয় করে। অতঃপর দেখে যে, উক্ত দাসীর কুমারীত্ব নষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু বিক্রেতা কুমারীত্ব নষ্ট হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তাহলে এরূপ অবস্থায় বিষয়টি যাচাই করার জন্য এক পর্যায়ে দাসীর লজ্জাস্থান পরীক্ষার উদ্দেশ্যে দেখা বৈধ।
দাসী অদল বদল করে ভোগ
ইসলাম ধর্মে যেহেতু দাসী বিক্রি কিংবা উপহার হিসেবে দান করে দেয়া সম্পূর্ণ বৈধ, কেনা বা উপহার সূত্রে প্রাপ্ত দাসীকে ভোগ করাও যেহেতু বৈধ, সেহেতু এটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে, নবী মুহাম্মদের সাহাবীগণ দাসী অদল বদল করতেন। ধরুন একজন সাহাবী যুদ্ধবন্দী হিসেবে একজন ক্রীতদাসীকে পেলেন। কিছুদিন ধরে সেই ক্রীতদাসীকে তিনি ইচ্ছেমত ভোগ করলেন। সেই একই সাহাবীর বন্ধুও একজন নারীকে গনিমতের মাল হিসেবে পেলেন। তিনিও তার দাসীকে ভোগ করলেন।
এখন ইসলামের বিধান মোতাবেক, তারা দুইজন দুইজনার দাসীকে পরস্পর উপহার দিলেন, বা সমমূল্যে বিক্রয় করলেন। এরপরে নতুন দাসীকে তারা ইচ্ছেমত ভোগ করলেন। অর্থাৎ, এই যে দাসী বিক্রি বা উপহার হিসেবে দান করার বিধানটি খালি চোখে খুব সাধারণ মনে হলেও, আসলে এর মধ্যে লুকিয়ে আছে আরো কুৎসিত চিত্র। এই বিধানটি কাজে লাগিয়ে গনিমতের মাল হিসেবে প্রাপ্ত একটি মেয়েকে সাহাবীগণ সবাই মিলে মিশে ভোগ করতে পারবে, অদল বদল করে। এর অর্থ হচ্ছে, একটি মেয়ে মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দী হলে তাকে সবাই মিলে ভোগ না করা পর্যন্ত তার কোন নিস্তার নেই। খালি চোখে একদম সহজ একটি বিধানের মধ্যে লুকিয়ে আছে ভয়াবহ কুৎসিত একটি ব্যাপার। আসুন এই সম্পর্কিত একটি হাদিস পড়ে নিই [147] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫১/ হিবা ও এর ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ৫১/৩৬. প্রচলিত অর্থে যদি কেউ বলে এই দাসীটি তোমার খিদমাতের জন্য দিলাম, এটি বৈধ।
وَقَالَ بَعْضُ النَّاسِ هَذِهِ عَارِيَّةٌ وَإِنْ قَالَ كَسَوْتُكَ هَذَا الثَّوْبَ فَهُوَ هِبَةٌ
কোন কোন ফিকাহ্ বিশারদ বলেন, এটি আরিয়ত হবে। তবে কেউ যদি বলে, এ কাপড়টি তোমাকে পরিধান করতে দিলাম, তবে তা হিবা হবে।
২৬৩৫. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বর্ণিত গ্রন্থ হতে বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) সারাকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করলেন। লোকেরা সারার উদ্দেশে হাজিরাকে হাদিয়া দিলেন। তিনি ফিরে এসে (ইবরাহীমকে) বললেন, আপনি কি জেনেছেন, কাফিরকে আল্লাহ পরাস্ত করেছেন এবং সেবার জন্য একটি বালিকা দান করেছেন।
ইবনু সীরীন (রহ.) বলেন, আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, অতঃপর (সেই কাফির) সারার উদ্দেশে হাজিরাকে দান করল। (২২১৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪৫৯)
بَابُ إِذَا قَالَ أَخْدَمْتُكَ هَذِهِ الْجَارِيَةَ عَلَى مَا يَتَعَارَفُ النَّاسُ فَهُوَ جَائِزٌ
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ حَدَّثَنَا أَبُو الزِّنَادِ عَنْ الأَعْرَجِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ هَاجَرَ إِبْرَاهِيْمُ بِسَارَةَ فَأَعْطَوْهَا آجَرَ فَرَجَعَتْ فَقَالَتْ أَشَعَرْتَ أَنَّ اللهَ كَبَتَ الْكَافِرَ وَأَخْدَمَ وَلِيْدَةً وَقَالَ ابْنُ سِيْرِيْنَ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْدَمَهَا هَاجَرَ.
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
এবারে আসুন তাফসীরে মাযহারী থেকে এই সম্পর্কে একটি দলিল দেখে নিই, [148] –
দাসী মা এবং মেয়ের সাথে সহবাস
ফিকহে ওসমান বা দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওসমানের ফিকহ গ্রন্থ অনুসারে, একই মালিক যদি মা এবং মেয়ে উভয়ের মালিক হন, তাহলে তিনি দুইজনার সাথেই সহবাস করতে পারেন। একে ওসমান হারাম করা পছন্দ করতেন না [149]। যদিও উমর এবং অন্যান্য কয়েকজন ইমাম এই কাজটিকে হারাম বলেছেন। অর্থাৎ এই কাজটির পক্ষেও দলিল রয়েছে, বিপক্ষেও দলিল রয়েছে।
ছেলে-পিতা-দাদা মিলেমিশে দাসীভোগ
ইসলামের বিধান হচ্ছে, একজন দাসীকে খরিদ করা হলে তার সাথে সহবাস করা বৈধ। এখন সেই দাসীর সাথে যদি একই পরিবারের ছেলে, পিতা এবং দাদা সহবাস করে, সেই ক্ষেত্রে সন্তানের জন্ম হলে সন্তানের পিতা কে হবে, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত ফিকহী মাসআলা পাওয়া যায় ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী থেকে। আসুন সেখান থেকে পড়ি [150] –
পছন্দ করে বিবাহের অধিকার
ইসলামে একজন দাস বা দাসী তার ইচ্ছেমত কাউকে পছন্দ করে বিয়ে করতে পারে না। তার মনিব বা মালিক যার সাথে তার বিয়ে দেয়, তাকেও তার বিয়ে করতে বাধ্য থাকতে হয়। অর্থাৎ তার বিবাহ এবং যৌন সম্পর্কের বিষয়টি সম্পূর্ণ তার মালিকের ইচ্ছাধীন। তার নিজস্ব কোন পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে না। এই বিষয়টি জানা যায় বারীরা নামক এক ক্রীতদাসীর ঘটনাবলী থেকে।
বারীরা ছিলেন আবু লাহাবের পুত্র উৎবা ইবনে আবি লাহাবের দাসী। উৎবা ছিলেন মুহাম্মদের মেয়ের জামাই, প্রাথমিক সময়ে সে পৌত্তলিক ছিল। তবে ৬৩০ সালের জানুয়ারি মাসে মক্কা আক্রমণের সময় সে ইসলাম গ্রহণ করে। হুনায়নের যুদ্ধে সে মুহাম্মদের পক্ষে বিশেষ কৃতিত্ব দেখায়। তাবারীর বর্ণনা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সে মুহাম্মদের একজন সাহাবী ছিলেন।
এর মৃত্যুর পরে তার সন্তানরা বারীরার মালিক হয়। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, উৎবার সন্তান সকলেই মুসলিমই ছিলেন। কারণ ইসলামের পরিষ্কার বিধান হচ্ছে, মুসুলিমের উত্তরাধিকার কোনদিন কাফির হতে পারে না। হাদিসটি এখানে দেয়া হচ্ছে না, আগ্রহী পাঠক এখান থেকে পড়ে নিন [151]৷ কাফিরের উত্তরাধিকারও মুসলিম হতে পারে না। যেহেতু উৎবার ছেলেরা উত্তরাধিকার হিসেবে বারীরাকে পেয়েছিল [152] সেহেতু উৎবার ছেলেরা অবশ্যই মুসলিম ছিল।
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪২/ মুকাতাব
পরিচ্ছেদঃ ১৬০৬. মুকাতাব যদি (কাউকে) বলে, আমাকে ক্রয় করে আযাদ করে দিন, আর সে যদি ঐ উদ্দেশ্যে তাকে ক্রয় করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৩৯৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৫৬৫
২৩৯৫। আবূ নুআইম (রহঃ) … আয়মান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে বললাম, আমি উতবা ইবনু আবূ লাহাবের গোলাম ছিলাম। সে মারা গেলে তার ছেলেরা আমার মালিক হল। আর তারা আমাকে ইবনু আবূ আমর মাখযূমীর নিকট বিক্রি করল। ইবনু আবূ আমর আমাকে আযদ করে দিলেন। কিন্তু উতবার ছেলেরা ওয়ালার শর্ত আরোপ করল। তখন আয়িশা (রাঃ) বললেন, মুকাতাব থাকা অবস্থায় বারীরা (রাঃ) একবার তার কাছে এসে বললেন, আমাকে ক্রয় করে আযাদ করে দিন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে বলল, তাঁরা ওয়ালার শর্ত আরোপ ব্যতিরেকে আমাকে বিক্রি করবে না। তিনি বললেন, আমার তা প্রয়োজন নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে কথা শুনলেন, কিংবা তার কাছে এ সংবাদ পৌছল। তখন তিনি ’আয়িশা (রাঃ) এর কাছে এ ব্যাপারে আলোচনা করলেন। আর ’আয়িশা (রাঃ) বারীরা (রাঃ) কে যা বলেছিলেন তাই জানালেন। তখন তিনি বললন, তুমি তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দাও, আর তাদেরকে যত ইচ্ছা শর্ত আরোপ করতে দাও। পরে ’আয়িশা (রাঃ) তাকে খরিদ করে আযাদ করে দিলেন এবং তার মালিকপক্ষ ওয়ালার শর্ত আরোপ করল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়ালা তারই থাকবে, যে আযাদ করে যদিও তার মালিক পক্ষ শত শর্ত আরোপ করে থাকে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়মান (রহঃ)
বারীরাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বিয়ে হয়েছিল এক দাসের সাথে। সেই দাসকে বারীরা কখনোই পছন্দ করতো না। দাসী হিসেবে থাকার সময় সে তার স্বামীকে ত্যাগ করতে বা ঐ বিবাহ বাতিল করতে পারছিল না, যেহেতু সেটিই ছিল তার মালিকের ইচ্ছা। স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথেই বারীরা তাকে ত্যাগ করে। উল্লেখ্য, ইসলামে নারীর তালাকের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় তার অমতে বিবাহ সম্পাদন হলে। সেই দাস কেঁদে কেঁদে ঘুরতো, মুহাম্মদও তাকে ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু বারীরা তাকে ফিরিয়ে নেয় নি [153] [154]। এর অর্থ হচ্ছে, দাসী অবস্থায় মালিকের নির্ধারিত স্বামী বা স্ত্রীকে কেউ চাইলেই তালাক দিতে পারে না। তার স্বামী বা স্ত্রী কে হবে এই বিষয়ে মালিকের হুকুমই আইন। স্বাধীন হলেই তারা নিজের পছন্দ অনুসারে বিবাহ বা তালাক দেয়ার অধিকার পায়। মালিক যে দাসদাসীর বিবাহ বাতিলের ক্ষমতা রাখে, পরে এই নিয়ে আরো আলোচনা করা হবে। আপাতত এই হাদিসগুল দেখি –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৫/ তালাক
পরিচ্ছেদঃ ২০৫৩. বিক্রয়ের কারণে দাসী তালাক হয় না
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৪৮৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২৭৯
৪৮৯৯। ইসমাঈল ইবনু ’আবদুল্লাহ (রহঃ) … নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহধর্মিণী ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীরার মাধ্যমে (শরীয়তের) তিনটি বিধান জানা গেছে। এক. তাকে আযাদ করা হল, এরপর তাকে তার স্বামীর সাথে থাকা বা না থাকার ইখ্তিয়ার দেওয়া হল। দুই. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আযাদকারী আযাদকৃত গোলামের পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিক হবে। তিন. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন, দেখতে পেলেন ডেগে গোশত উথলিয়ে উঠছে। তাঁর কাছে রুটি ও ঘরের অন্য তরকারী উপস্থিত করা হল। তখন তিনি বললেনঃ গোশতের পাত্র দেখছি না যে যার ভিতর গোশত ছিল? লোকেরা জবাব দিল, হাঁ, কিন্তু সে গোশত বারীরাকে সাদাকা হিসাবে দেওয়া হয়েছে। আর আপনি তো সাদাকা খান না? তিনি বললেনঃ তার জন্য সাদাকা, আর আমাদের জন্য এটা হাদিয়া।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৫/ তালাক
পরিচ্ছেদঃ ২০৫৪. দাসী স্ত্রী আযাদ হওয়ার পরে গোলাম স্বামীর সাথে থাকা বা না থাকার ইখ্তিয়ার
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৪৯০১, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫২৮১
৪৯০১। আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ অমুক গোত্রের গোলাম এই মুগীস অর্থাৎ বারীরার স্বামী; আমি যেন তাকে এখনও মদিনার অলিতে গলিতে ক্রন্দনরত অবস্থায় বারীরার পিছু পিছু ঘুরতে দেখতে পাচ্ছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
বিবাহিত গর্ভবতী দাসী ভোগ
ইসলাম ধর্মের বিধানে আরো একটি জঘন্য বিষয় হচ্ছে, কেউ যদি একজন গর্ভবতী নারীকে দাসী হিসেবে পায়, সেই দাসীকেও সে শুধুমাত্র যৌনাঙ্গটি ছাড়া অন্যান্য জায়গা ব্যবহার করে নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারবে, পায়ুপথ ছাড়া। অর্থাৎ নারীটির স্তন, মুখ সহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা সে তার যৌনচাহিদা পূরণ করতে পারবে। শুধু তাই নয়, দাসীকে যদি অন্যের কাছে বিবাহ দেয়া হয়, তাতে যদি নারীটি গর্ভবতী হয়ে যায়, সেই দাসীকেও যৌনাঙ্গটি বাদে অন্য অঙ্গ ব্যবহার করে ভোগ করতে পারবে। এই তথ্যগুলো বুখারী শরীফেই পাওয়া যায় [155] [156] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২৬/ ক্রয় – বিক্রয়
পরিচ্ছেদঃ ১৩৮৬. ইসতিবরা অর্থাৎ জরায়ু গর্ভমুক্ত কি-না তা জানার পূর্বে বাঁদীকে নিয়ে সফর করা। হাসান বসরী (রঃ) তাকে চুম্বন করা বা তার সাথে মিলামিশা করায় কোন দোষ মনে করেন না। ইবন উমর (রাঃ) বলেন, সহবাসকৃত দাসীকে দান বা বিক্রি বা আযাদ করলে এক হায়য পর্যন্ত তার জরায়ু মুক্ত কি-না দেখতে হবে। কুমারীর বেলায় ইসতিবরার প্রয়োজন নেই। আতা (রঃ) বলেন, (অপর কর্তৃক) গর্ভবতী নিজ দাসীকে যৌনাঙ্গ ব্যতীত ভোগ করতে পারবে। মহান আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত বাঁদী ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবেনা……। (২৩:৬)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২০৯৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২৩৫
২০৯৩. …
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
বিবাহ বাতিলের ক্ষমতা মালিকের
আরো বিশ্রী ব্যাপার হচ্ছে, ইসলাম ধর্মের বিধান হচ্ছে, ক্রীতদাসীর যদি কোন স্বামী থাকে, সেই ক্রীতদাসীর বিবাহ বাতিল করে একজন মালিক তাকে ভোগ করতে পারে। অর্থাৎ ধরুন একজন মালিকের একজন ক্রীতদাসী আছে, যার স্বামী আরেকজন ক্রীতদাস। এই অবস্থায় তার মালিক যদি চায়, সে এই দাসীর বিবাহ বাতিল করে মেয়েটিকে ভোগ করতে পারবে। নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করুন [157] [158] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৭/ বিয়ে
পরিচ্ছেদঃ ৬৭/২৫. কোন্ কোন্ মহিলাকে বিয়ে করা হালাল এবং কোন্ কোন্ মহিলাকে বিয়ে করা হারাম।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ ’’তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগিনী, দুধ মা, দুধ বোন, শ্বাশুড়ী, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সঙ্গত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে- নিশ্চয় আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত ও পরম কুশলী।’’(সূরাহ আন্-নিসা ৪/২৩-২৪)
وَقَالَ أَنَسٌ: (وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ) ذَوَاتُ الأَزْوَاجِ الْحَرَائِرُ حَرَامٌ إِلاَّ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ لاَ يَرَى بَأْسًا أَنْ يَنْزِعَ الرَّجُلُ جَارِيَتَهُ مِنْ عَبْدِهِ.
وَقَالَ: (وَلاَ تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ).
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ مَا زَادَ عَلَى أَرْبَعٍ فَهْوَ حَرَامٌ، كَأُمِّهِ وَابْنَتِهِ وَأُخْتِهِ.
আনাস (রাঃ) বলেন, (وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ) এ কথা দ্বারা সধবা স্বাধীনা মহিলাদেরকে বিয়ে করা হারাম বোঝানো হয়েছে; কিন্তু ক্রীতদাসীকে ব্যবহার করা হারাম নয়। যদি কোন ব্যক্তি বাঁদীকে তার স্বামী থেকে তালাক নিয়ে পরে ব্যবহার করে, তাহলে দোষ নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণীঃ ’’মুশরিকা নারীরা ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না।’’(আল-বাক্বারাহঃ ২২১) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, চারজনের অধিক বিয়ে করা ঐরূপ হারাম বা অবৈধ যেরূপ তার গর্ভধারিণী মা, কন্যা এবং ভগিনীকে বিয়ে করা হারাম।
৫১০৫. …
[1] ফাতিমাহ (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় ‘আলী (রাঃ) কাউকে বিয়ে করেননি। পরে তিনি বিয়ে করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
এমনকি, একজন ক্রীতদাসীর যদি দুইজন মালিক থাকে, এক মালিক যদি তাকে কারো সাথে বিবাহ দিয়ে দেয়, অন্য মালিক এসে সেই বিবাহ বাতিল করে দিতে পারবে- [159]
জন্মসূত্রে দাসদাসী
আমাদের দেশে দেখবেন যারা গাভী কিংবা ছাগল লালন পালন করেন, তারা অন্য কোন ভাল জাতের ষাঁড় বা ছাগল এনে নিজেদের গাভীর সাথে প্রজনন ঘটায়। এই আশায় যে, তার গাভীটি ভাল জাতের বাচ্চা দেবে, সেই গরুকে তারা বিক্রি করে লাভবান হবে। কিংবা সেই গরুকে দিয়ে তারা ভালভাবে কাজ করাবে। ইসলামে দাসদাসীদের সাথেও ঠিক একই কাজ করাবার সম্পূর্ণ বৈধতা রয়েছে।
মালিকানাধীন দাসীকে অন্য কোন দাস বা স্বাধীন মানুষের সাথে বিবাহ দিয়ে গর্ভবতী করালে ভাল শক্তিশালী ছেলে সন্তান জন্ম দেবে, যাকে দিয়ে কাজ করানো বা বিক্রি করা যাবে। অথবা ধরুন সুন্দর মেয়ে শিশু জন্ম দিলে সেই মেয়ে শিশুটিকে নিজেও ভোগ করা যাবে, পরে ভোগ শেষে বাজারে নিয়ে বিক্রি করা যাবে। এইরকম অমানবিক এবং নির্মম নিয়ম প্রচলিত ছিল এই মধ্যযুগেও। দাসী যদি মালিক বাদে অন্য কারো সাথে বিয়ে করে বাচ্চা জন্ম দেয়, সেই সন্তানের মালিকানা দাসীর মালিকের হয়ে যায়। সেই শিশু সন্তানটি মালিকের দাস হিসেবে পরিগণিত হয়।
অর্থাৎ ইসলামি শরীয়ত অনুসারে, দাসীকে যদি তার মালিক মুদাব্বার বা মালিকের মৃত্যুর পরে মুক্ত হবে এমন ঘোষণা না করে, তাহলে সেই দাসীর গর্ভে মালিক ভিন্ন অন্য কারো সন্তান জন্ম হলে সেই সন্তান মালিকের দাস বলে গণ্য হবে [160]। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, একটি শিশু, যে মাত্র জন্ম নিলো, জন্ম নেয়ার সাথে সাথেই সে দাসে পরিণত হলো!
একইসাথে আসুন জেনে নিই, মালিক ভিন্ন অন্য কারো দ্বারা দাসীর গর্ভজাত সন্তান যে জন্মগতভাবে দাস হবে, সেটি ফিকাহুস সুন্নাহ গ্রন্থ থেকে পড়ে নিই [161] –
একই কথা লেখা রয়েছে প্রখ্যাত ফিকাহ গ্রন্থ আল হিদায়াতেও [162] –
এবারে আসুন তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন থেকেও দেখে নিই, ক্রীতদাসীর সন্তান যে মালিকের গোলাম বলে বিবেচিত হয়, সে সম্পর্কে [163] –
তাফসীরে জালালাইন থেকেই দেখি- [164]
দাসের জীবনের মূল্য কম
হযরত আবু বকরের শাসনামলে তিনি মুহাম্মদের শরীয়তের অনুসরণ করেই দাসদাসীদের হত্যা করার জন্য মালিকের মৃত্যুদণ্ড হবে না, এমন বিধান চালু রাখেন। দাসদাসীদের হত্যার ক্ষেত্রে ইসলামের এই বিধান খুবই ভয়ঙ্কর রকম বৈষম্য। ফিকহে আবু বকর গ্রন্থে এটিও বলা হয়েছে, ইসলামে দাসদাসীর মূল্য মর্যাদার দিক দিয়ে চতুষ্পদ জন্তুর মত। তাই মানুষ এবং পশুর মধ্যে কিসাস হতে পারে না, ইসলামিক বিধানে এরকমই বর্ণিত রয়েছে। আসুন, ফিকহে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু গ্রন্থ থেকে সরাসরি পড়ি [165]। পরবর্তীতে খলিফা উমরও একই বিধান চালু রাখেন।
একইকথা বলা হয়েছে আহকামুল কুরআন গ্রন্থে [166]
দাসদাসী গবাদি পশুর মত
ইসলামে দাসদাসীর মূল্য মর্যাদার দিক দিয়ে চতুষ্পদ জন্তুর মত, এরকম কথাই বলা হয়েছে ফিকহে আবু বকর গ্রন্থ সহ অনেক গ্রন্থে। উপরে এই দলিলটি দেয়া হয়েছে, অরও একবার বিষয়টি জেনে নেয়া জরুরি। আসুন, ফিকহে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু গ্রন্থ থেকে সরাসরি পড়ি [165] –
একইসাথে, আসুন আমরা একটি হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে হাদিসের ব্যাখ্যাটি মন দিয়ে পড়ি। লক্ষ্য করে দেখুন, এই হাদিসের ব্যাখ্যাতে কোনরকম রাখঢাক না রেখেই দাসদাসী বদল করা বা বিক্রি করার সাথে জন্তু জানোয়ার তথা গবাদি পশুর অদল বদল বা বিক্রি করার সামঞ্জস্য দেখিয়ে বিষয়টি বোঝানো হচ্ছে। অর্থাৎ, ইসলামে গবাদি পশুর মতই যেহেতু দাসদাসীর মূল্য, উদাহরণ হিসেবেও তাই দাসদাসীর সাথে গবাদি পশুর তুলনা করা হয়েছে। লক্ষ্য করুন, এই হাদিস থেকে দলিল নিয়ে গবাদি পশুর বিষয়ে ফয়সালা করা হয়েছে [167] –
দাসদের সাক্ষ্য দেয়ার ক্ষমতা
দাস বা গোলামদের আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার ক্ষমতা থাকে না। ইসলামের দৃষ্টিতে তারা পূর্ণ মানুষ হিসেবে যেহেতু গণ্য নয়, তাই তাদের সাক্ষ্য দেয়ার অধিকার নেই। বিষয়টি ফতোয়ায়ে কাযীখান গ্রন্থেও বর্ণিত আছে [168] –
একই গ্রন্থের বিবাহ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, বিবাহের ক্ষেত্রেও গোলাম বা দাস সাক্ষ্য দিতে পারবে না [169] –
দাসদাসীর জন্য যাকাত নেই
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ইসলামিক বিধান হচ্ছে, দাসদাসীর জন্য ইসলামে কোন যাকাত দিতে হয় না। এটি গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, মানুষের চিরন্তন স্বভাব হচ্ছে কর ফাঁকি দেয়া। সাধারণ মানুষ সবসময়ই চায় কম কম কর দিতে, এটি সকল যুগে সকল ব্যবস্থায় বিদ্যমান। এখন দাসদাসী কিনে রাখলে যদি যাকাত দেয়া না লাগে, এই ধরণের বিধান দাস কেনা এবং দাসের বাজারকে সমৃদ্ধই করবে। জনগণের মধ্যে দাস ব্যবসা এবং দাসের কেনাবেচা বৃদ্ধি পাবে।
দাস ব্যবসা কখনই এই বিধানের কারণে বিলুপ্ত হবে না। কারণ এই বিধানের ফলে দাসব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হবে। ট্যাক্স ফ্রি বিজনেস সবসময়ই মানুষের আগ্রহের কারণ। আসুন দেখি এই বিষয়ে ইসলামের বিধান কী [170] [171] –
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৩। যাকাত
পরিচ্ছেদঃ ২. মুসলিম ব্যক্তির ক্রীতদাস ও ঘোড়ার উপর কোন যাকাত নেই
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ২১৬৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৯৮২
২১৬৩-(৮/৯৮২) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া আত তামীমী (রহঃ) ….. আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির ক্রীতদাস ও ঘোড়ার উপর কোন যাকাত নেই। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২১৪২, ইসলামীক সেন্টার ২১৪৫)
গহাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭/ যাকাত
পরিচ্ছেদঃ ঘোড়া ও দাস-দাসীর যাকাত নেই।
৬২৬. আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা ও মাহমুদ ইবনু গায়লান (রহঃ) ….. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমের ঘোড়া ও দাসের উপর কোন যাকাত নেই। – ইবনু মাজাহ ১৮১২, যইফা ৪০১৪, বুখারি ও মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৬২৮ [আল মাদানী প্রকাশনী]
এই বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনু আমর ও আলা (রাঃ) থেকেও হাদিস বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসটি হাসান সহীহ্। আমিগণের আমল এই হাদীছের অনুযায়ী যে, সাইমা ঘোড়ার উপর যাকাত নেই। আর খিদমতের জন্যে নিয়োজিত দাস-দাসীদের উপর যাকাত নেই। কিন্তু ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে হলে ভিন্ন কথা। অর্থাৎ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে হলে, এক বছর পূর্ণ হলে মূল্যের উপর যাকাত ধার্য হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
দাসদাসীর পালিয়ে যাওয়া কুফরী
ইসলামে দাসদাসীর পালিয়ে যাওয়া সবচাইতে ভয়ঙ্কর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। আল্লাহর সাথে শিরক যেমন সবচাইতে বড় অপরাধ, ঠিক তেমনি মালিকের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়াও ইসলামে সবচাইতে বড় অপরাধগুলোর একটি। সহিহ হাদিসের বর্ণনা অনুসারে, কোন ক্রীতদাস যদি মনিবের থেকে পালিয়ে যায়, তাহলে সেটিকে কুফরি হিসেবে গণ্য করা হবে। এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে শরীক করা যেমন কুফরি, মনিবের থেকে পালিয়ে যাওয়াও কুফরি, যা ইসলামের দৃষ্টিকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
দাসপ্রথা যখন প্রচলিত ছিল, তখন অনেক দাসই দাসত্বের এই জীবন সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে যেতো বা অন্তত পালাবার চেষ্টা করতো। কিন্তু দাসদের এই পালিয়ে যাওয়াকে সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবেই চিহ্নিত করেছে ইসলাম, এবং তার মাধ্যমে দাস মালিকদের স্বার্থে দাসদের দাসত্বের শেকলে আবদ্ধ রাখার বন্দোবস্তও করে গেছে। ইমাম আবু বাক্র আহমাদ ইবনুল হুসাইন ইবনু আলী বাইহাকীর শু’আবুল ঈমান গ্রন্থে সহিহ হাদিসের রেফারেন্সে বলা হয়েছে, [172]। সেই সাথে অনেকগুলো হাদিসেও এই বিবরণ এসেছে [173] [174] [175] [176] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৩১. পলাতক দাসকে ‘কাফির’ আখ্যায়িত করা
১৩২। আলী ইবনু হুজর আস সা’দী (রহঃ) … শা’বী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি জারীর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যে দাস তার মনিবের কাছ থেকে পালিয়ে গেল, সে কুফরী করল, যতক্ষন না সে তার প্রভুর কাছে ফিরে আসে। মানসূর বলেন, আল্লাহর কসম! এ হাদীস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু এখানে বসরায় আমার থেকে এ হাদীস বর্ণিত হোক তা আমি অপছন্দ করি।*
* কারণ এখানে খারিজী ও মুতাযিলা সম্প্রদায়ের লোক বেশী, যারা এটিকে সত্যিকার অর্থেই কুফরী মনে করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ শা‘বী (রহঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৩১. পলাতক দাসকে ‘কাফির’ আখ্যায়িত করা
১৩৩। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দাস পালিয়ে যায়, তার থেকে (আল্লাহ ও রাসুলের) যিম্মাদারী শেষ হয়ে যায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজলী (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৩১. পলাতক দাসকে ‘কাফির’ আখ্যায়িত করা
১৩৪। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন দাস পালিয়ে যায়, তখন তার সালাত (নামায/নামাজ) কবুল হয় না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজলী (রাঃ)
হাদীস সম্ভার
২১/ ক্রীতদাস
পরিচ্ছেদঃ মনিবের ঘর ছেড়ে ক্রীতদাসের পলায়ন নিষিদ্ধ
(২০২৮) উক্ত রাবী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন গোলাম পলায়ন করবে, তখন তার নামায কবুল হবে না।
(মুসলিম ২৩৯) অন্য বর্ণনা মতে, ‘সে কুফরী করবে।’ (ঐ ২৩৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজলী (রাঃ)
পালানো দাসকে আশ্রয় দেয়াও নিষেধ
ইসলাম ধর্মের বিধান অনুসারে, অত্যাচার বা লাঞ্ছনায় জর্জরিত বা দাসত্বের শেকল থেকে মুক্ত হতে চাওয়া কিংবা যেকোন কারণেই হোক, একজন দাস যদি পালিয়ে কোথাও যায়, তাকে কোন মুসলিমই আশ্রয় দিতে পারবে না। সেই গোলামও তার মনিবের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ করতে পারবে না। বুখারী শরীফ থেকেই দেখে নিই হাদিসটি [177] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭৩/ উত্তরাধিকার
পরিচ্ছেদঃ ২৮১০. যে গোলাম তার মনিবদের ইচ্ছার খেলাফ কাজ করে তার গুনাহ
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৬২৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৭৫৫
৬২৯৯। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবরাহীম তায়মী তাঁর পিতা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেন, কিতাবুল্লাহ ব্যতীত আমাদের আর কোন কিতাব তো নেই যা আমরা পাঠ করতে পারি। তবে এ লিপিখানা আছে। রাবী বলেন, এরপর তিনি তা বের করলেন। দেখা গেল যে, তাতে যখম ও উটের বয়স সংক্রান্ত কথা লিপিবদ্ধ আছে। বারী বলেন, তাতে আরও লিপিবদ্ধ ছিল যে, আইর থেকে নিয়ে অমুক স্থানের মধ্যবর্তী মদিনার হারাম। এখানে যে (ধর্মীয় ব্যাপারে) বিদআত করবে বা বিদআতকারীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহর ফেরেশতা এবং সকল মানুষের লানত। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার কোন ফরয আমল এবং কোন নফল কবুল করবেন না। যে ব্যক্তি মনিবের অনুমতি ছাড়া কোন গোলামকে আশ্রয় প্রদান করে তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সমস্ত মানুষের লা’নত। তার কোন ফরয বা নফল কিয়ামতের দিন কবুল করা হরে না। সমস্ত মুসলিমের জিম্মাই এক, একজন সাধারণ মুসলিম এর চেষ্টা করবে। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের আশ্রয় প্রদানকে বাচনাল করে তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতার এবং সকল মানুষের লা’নত। কিয়ামতের দিন তার কোন ফরয ও নফল কবুল করা হবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইব্রাহীম তাইমী (রহঃ)
দাস মুক্ত করার চেয়ে দান করা উত্তম
নবী মুহাম্মদ দাস মুক্ত করার চাইতে পরিবারের সদস্যদের দান করাকেই উত্তম এবং বেশি নেকীর কাজ বলে গেছেন। এর অর্থ হচ্ছে, কেউ যদি দাস মুক্ত করতেও চায়, সে এই হাদিসের দ্বারা নিরুৎসাহিত হওয়াটি খুবই স্বাভাবিক এবং সেই দাসকে দান করে দেয়াই যেহেতু তার জন্য বেশি নেকীর কাজ বলে গণ্য, সে সেই কাজটিই করবে। তার মানে, দাসের দাসত্বের জীবনের অবসান ঘটা তখন খুবই কঠিন হয়ে যাবে [178] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ হিবা ও এর ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ৫১/১৫. স্বামী আছে এমন নারীর স্বামী ব্যতীত অন্যের জন্য হিবা করা বা দাস মুক্ত করা। নির্বোধ না হলে বৈধ, নির্বোধ হলে অবৈধ।
২৫৯২. মায়মূনাহ বিনতে হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অনুমতি ব্যতীত তিনি আপন বাঁদীকে মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর তার ঘরে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অবস্থানের দিন তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি জানেন না আমি আমার বাঁদী মুক্ত করে দিয়েছি? তিনি বললেন, তুমি কি তা করেছ? মায়মূনাহ (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, শুন! তুমি যদি তোমার মামাদেরকে এটি দান করতে তাহলে তোমার জন্য বেশি নেকির কাজ হত। (২৫৯৪)
অন্য সনদে বাকর ইবনু মুযার (রহ.) —- কুরায়ব (রহ.) হতে বর্ণিত যে, মায়মূনাহ (রাঃ) গোলাম মুক্ত করেছেন। (মুসলিম ১২/১৪, হাঃ ৯৯৯, আহমাদ ২৬৮৮৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪২১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মাইমূনাহ (রাঃ)
দাস মুক্তিতেও সাম্প্রদায়িকতা
অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক ধর্ম ইসলাম এবং সাম্প্রদায়িক নবী মুহাম্মদ দাস মুক্তির মত একটি ভাল কাজের মধ্যেও সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে রেখে তার কাজটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখে গেছেন [179] [180] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ২১/ দাসমুক্তি
পরিচ্ছেদঃ ৪. দাসমুক্তির ফযীলত
৩৬৫৫। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ঈমানদার ক্রীতদাস মুক্ত করবে আল্লাহ তার (শরীরের) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে তার (শরীরের) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন- এমনকি তিনি তার (মুক্তদাসের) গুপ্তস্থানের পরিবর্তে তার (মুক্তিকারীর) গুপ্তস্থানও রক্ষা করবেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
বেশিরভাগ মূল্য পরিশোধের পরেও দাস
ইসলামের বিধান মোতাবেক, কোন দাস যদি তার বাজার মূল্যের সমপরিমান মালিককে দিয়ে মুক্তি চায়, সেইসব ক্ষেত্রে মালিক সম্মত হলে সেই অর্থ দাসটি কিস্তিতে পরিশোধে করতে পারে। কিন্তু সেই কিস্তি সম্পূর্ণ পরিশোধের পূর্বে যদি দাসটি আর কোন অর্থ পরিশোধ করতে না পারে, বা অর্থ উপার্জনে অপারগ হয়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মূল্য পরিশোধের পরেও দাসটি দাসই রয়ে যাবে। মুক্তি পাবে না। আসুন হাদিস থেকে বিষয়টি জেনে নিই [180] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৪: গোলাম মুক্তিকরণ
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – অংশীদারী গোলাম মুক্ত করা ও নিকটাত্মীয়কে ক্রয় করা এবং অসুস্থাবস্থায় গোলাম মুক্ত করা
৩৪০১-[১৪] ‘আমর ইবনু শু‘আয়ব তাঁর পিতার মাধ্যমে দাদা থেকে হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার গোলামের সাথে একশত উকিয়্যাহ্’র (চল্লিশ দিরহামে এক উকিয়্যাহ্) বিনিময়ে মুক্তিপণ করেছে। কিন্তু দশ উকিয়্যাহ্ অথবা দশ দীনার বাকি রেখে পরিশোধে অক্ষম হয়ে গেল, তাহলে সে গোলামই থেকে গেল। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
[1] হাসান : আবূ দাঊদ ৩৯২৭, তিরমিযী ১২৬০, ইবনু মাজাহ ২৫১৯, আহমাদ ৬৬৬৬, সহীহ আল জামি‘ ৬৪৭৮।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ)
মুক্তদাসকে পুনরায় দাস বানানো
নবী মুহাম্মদ তার জীবদ্দশায় কয়েকজন মুক্ত হয়ে যাওয়া দাসের মুক্তি বাতিল করে তাদের পুনরায় দাসে পরিণত করেন। এই হাদিসগুলো শরীয়তের দলিল যে, মালিক যদি কোন দাসকে মৃত্যুর সময় মুক্তি দিয়েও যায়, রাষ্ট্রপ্রধান বা খলিফা চাইলে সেইসব দাসের মুক্তি বাতিল করে তাদের পুনরায় দাসত্বে বহাল রাখতে পারেন। আসুন হাদিসগুলো পড়ে নিই [181] [182] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৪১/ গোলাম আযাদ করা
পরিচ্ছেদঃ ১৫৯০. মুদাববার বিক্রি করা।
২৩৬৭। আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের একজন তার এক গোলামকে মুদাব্বাররূপে আযাদ ঘোষণা করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই গোলামকে ডেকে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, গোলামটি সে বছরই মারা গিয়েছিলো।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
Narrated Jabir bin `Abdullah:
A man amongst us declared that his slave would be freed after his death. The Prophet (ﷺ) called for that slave and sold him. The slave died the same year.
গ্রন্থের নামঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৪/ দাস মুক্তি
পরিচ্ছেদঃ ১০. যে ব্যক্তি এক-তৃতীয়াংশের কমে গোলাম আযাদ করে- তার সম্পর্কে।
৩৯২০. মুসাদ্দা (রহঃ) … ইমরান ইবন হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ব্যক্তি মৃত্যুকালে তার ছয়টি গোলাম আযাদ করে দেয় এবং এ ছয়টি গোলাম ব্যতীত তার আর কোন সম্পদ ছিল না। এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছলে তিনি গোলামদের মধ্যে লটারীর ব্যবস্থা করেন এবং দু’জনকে আযাদ করেন এবং বাকী চারজনকে গোলামীতে বহাল রাখেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)
দাসের সম্পত্তি মালিকের
ইসলামের বিধান হচ্ছে, কোন গোলাম বা দাস যদি কোন বিশেষ কাজে দক্ষ হয়, মালিকের কাজ শেষ করার পরেও অন্য সময়ে সেই কাজ করে সে যদি কোন অর্থ উপার্জন করতে পারে, বা কেউ যদি তাকে কোন অর্থ সম্পদ দান করে, সেই অর্থ সম্পদের মালিক হয়ে যাবে তার মালিক। অর্থাৎ তার কোন অর্থ সম্পদ থাকলে তা মালিকেরই [183] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৪ঃ গোলাম মুক্তিকরণ
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – অংশীদারী গোলাম মুক্তি করা ও নিকটাত্মীয়কে ক্রয় করা এবং অসুস্থাবস্থায় গোলাম মুক্তি করা
৩৩৯৬-[৯] ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার গোলামকে মুক্ত করে এবং সেই গোলামের যদি অর্থ-সম্পদ থাকে তাহলে মালিক তার ঐ সম্পদের অধিকারী হবে। তবে মালিক যদি ভিন্ন কোনো শর্ত করে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
[1] সহীহ : আবূ দাঊদ ৩৯৬২, ইবনু মাজাহ ২৫২৯, ইরওয়া ১৭৪৯, সহীহ আল জামি‘ ৬০৫৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)
মুক্তদাসের উত্তরাধিকারও মালিক
ইসলামে যেই দাস মুক্তির কথা কিংবা গোলাম আযাদ করার কথা বলা হয়েছে, সেই মুক্তি কিংবা আযাদী কিন্তু নিঃশর্ত নয়। ইসলামে এই মুক্তিও শর্ত সাপেক্ষ। শর্তটি হচ্ছে, ঐ দাস বা দাসীর মৃত্যুর পরে তার বিষয় সম্পত্তি সব কিছুইর উত্তরাধিকার হবে তার প্রাক্তন মালিক। অর্থাৎ ইসলাম দাস মুক্তির মধ্যেও এমন এক বিধান ঢুকিয়ে রেখেছে যে, সেটিকে আর মুক্তি বলা যায় না। কারণ নবী বলেছেন, ওয়ালা এর হক তারই, যে আযাদ করে।
ইসলামপন্থীদের কাছে থেকে একটি হাদিস আপনি অনেকবারই শুনবেন, হাদিসটি আয়িশার একজন দাসী বারীরা সম্পর্কিত। সেই হাদিসটি দেখিয়ে অনেক মুমিনই দাবী করে, নবীর স্ত্রীগণ দাস দাসী মুক্ত করতে নিজের অর্থ সম্পদ খরচ করতেন। অথচ, আসল সত্য জানা যায় হাদিসটি ভালভাবে পড়লে। সেই হাদিসে আসলে আয়িশা বারীরার ওয়ালার অধিকারী হওয়ার জন্যেই বারীরাকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। আয়িশা সরাসরিই প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ওয়ালার অধিকার আয়িশার থাকলে তাহলেই শুধুমাত্র সে বারীরার মুক্তির বাকি অর্থ প্রদান করবেন [184] [185] [186] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২১/ দাসমুক্তি
পরিচ্ছেদঃ ১. মুক্তদাসে অভিবাবকত্ব হবে মুক্তিদাতার
৩৬৩৮। আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু আলা হামদানী (রহঃ) … আবু উসামা হতে, তিনি হিশাম ইবন উরওয়া (রহঃ) হতে, তিনি নিজ পিতা হতে এবং তিনি আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদিন বারীরা (রাঃ) আমার কাছে এল। এরপর সে বলল, আমার মুনিব আমাকে প্রতি বছর এক উকিয়া করে নয় বছরে নয় উকিয়া (চল্লিশ দিরহামে এক উকিয়া) আদায় করার শর্তে আমাকে মুক্তিদানের চুক্তি করেছে। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আমি [আয়িশা (রা)] তাকে বললাম, তোমার মুনিব যদি এই শর্তে রাজী হয় যে, তোমার মুক্তিপণ এক সঙ্গে আদায় করে দিলে তোমার “ওয়ালা” আমার প্রাপ্য হবে তাহলে আমি তোমাকে মুক্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি।
তখন বারীরা (রাঃ) এই বিষয়টি তার মুনিবের কাছে উত্থাপন করলে তাদের জন্য ’ওয়ালা’ ব্যাতিরেকে তারা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল। এরপর সে আমার (আয়িশা (রা) এর) কাছে এসে তাদের কথা বলল। তিনি বলেন, আমি তাকে ধমক দিয়ে বললাম, তাহলে আল্লাহর কসম! আমি রাজী নই। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি শুনলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তার কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। এরপর তিনি বললেন, হে আয়িশা! তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও এবং তাদের জন্য ওয়ালার শর্তে রাবী হয়ে যাও। প্রকৃত পক্ষে ওয়ালা সেই পাবে যে মুক্তি দান করে। আমি (আয়িশা) তাই করলাম।
রাবী বলেন, এরপর সন্ধ্যাবেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিলেন। তিনি আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা ও তাঁর মহিমা ঘোষণা করলেন। এরপর বললেনঃ লোকের অবস্থা এই পর্যায়ে নেমে গিয়েছে যে, তারা এমন সব শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। স্মরণ রাখ, যে শর্ত আল্লাহর কিতাবে নেই তা বাতিল বলে গণ্য, যদিও শতবার শর্তারোপ করা হয়। আল্লাহর কিতাবের শর্তই যথার্থ, আল্লাহর শর্তই নির্ভরযোগ্য। তোমাদের মধ্যে কতক লোকের কি হয়েছে যে, তারা অপরকে বলে অমুককে মুক্ত করে দাও আর ’ওয়ালা’ গ্রহণ করব আমরা? অথচ “ওয়ালা” তো তারই যে আযাদ করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২৬/ ক্রয় – বিক্রয়
পরিচ্ছেদঃ ১৩৪৯. ক্রয়-বিক্রয়ে এমন শর্ত করা যা অবৈধ
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২০৩৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২১৬৮
২০৩৪. আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, বারীরা (রাঃ) আমার কাছে এসে বলল, আমি আমার মালিক পক্ষের সাথে নয় উকিয়া দেওয়ার শর্তে মুকাতাবা* করেছি। প্রতি বছর যা থেকে এক উকিয়া* করে দেওয়া হবে। আপনি (এ ব্যাপারে) আমাকে সাহায্য করুন। আমি বললাম, যদি তোমার মালিক পক্ষ পছন্দ করে যে, আমি তাদের একবারেই তা পরিশোধ করব এবং তোমার ওয়ালা (আযাদ সূত্রে উত্তরাধিকার) এর অধিকার আমার হবে, তবে আমি তা করব। তখন বারীরা (রাঃ) তার মালিকদের নিকট গেল এবং তাদের তা বলল। তারা তা অস্বীকার করল। বারীরা (রাঃ) তাদের নিকট থেকে (আমার কাছে) এলো। আর তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সে বলল আপনার কথা তাদের কাছে পেশ করেছিলাম। কিন্তু তারা নিজেদের জন্য ওয়ালার অধিকার সংরক্ষন ছাড়া রাযী হয়নি।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনলেন, আয়িশা (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তা সবিস্তারে জানালেন। তিনি বললেন, তুমি তাকে নিয়ে নাও এবং তাদের জন্য ওয়ালার শর্ত মেনে নাও। কেননা, ওয়ালা এর হক তারই, যে আযাদ করে। আয়িশা (রাঃ) তাই করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসমুক্ষে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহ্ তা’আলার হামদ ও সানা বর্ননা করলেন।
তারপর বললেন, লোকদের কী হল যে, তারা এমন শর্ত আরোপ করে, যা মহান আল্লাহ্ তা’আলার বিধানে নেই। মহান আল্লাহ্ তা’আলার বিধানে যে শর্তের উল্লেখ নেই, তা বাতিল বলে গন্য হবে, শত শর্ত হলেও। মহান আল্লাহ্ তা’আলার ফায়সালাই সঠিক, মহান আল্লাহ্ তা’আলার শর্তই সুদৃঢ়। ওয়ালার হক তো তারই, যে আযাদ করে।
* নিজের দাস-দাসীকে কোন কিছুর বিনিময়ে আযাদ করার চুক্তিকে মুকাতাবা বলে।
* এক উকিয়া ৪০ দিরহাম পরিমান।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
হাদিসে এটিও এসেছে যে, বারীরা আয়িশাকে জানিয়েছিল যে, ওয়ালার শর্ত তার মালিক পক্ষ ত্যাগ করবে না। এই কথা শুনে আয়িশা বারীরাকে আর কিনতে ইচ্ছুকই ছিলেন না। এর অর্থ হচ্ছে, আয়িশার দাস মুক্ত করার চাইতে দাসের ওয়ালা হওয়ার ব্যাপারেই আগ্রহ ছিল বেশি। এ থেকে বুঝতে সমস্যা হয় না যে, নবী ও তার সাহাবীগণ এই লোভেই দাস মুক্ত করতেন। নিচের হাদিসে এর প্রমাণ মেলে [187] [188] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৬/ শর্তাবলী
পরিচ্ছেদঃ ১৬৯৬. মু্ক্তি দেওয়া হবে এ শর্তে মুকাতাব বিক্রিত হতে রাযী হলে তার জন্য কি কি শর্ত জায়িয
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৫৪২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭২৬
২৫৪২। খাল্লাদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুকাতাবা অবস্থায় বারীরা আমার কাছে এসে বলল, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে খরীদ করুন। কারণ আমার মালিক আমাকে বিক্রি করে ফেলবে। তারপর আমাকে আযাদ করে দিন। তিনি বললেন, ’বেশ, বারীরা বলল, ’ওয়ালার অধিকার মালিকের থাকবে-এ শর্ত না রেখে তারা আমাকে বিক্রি করবে না।’ তিনি বললেন, তবে তোমাকে দিয়ে আমার প্রয়োজন নেই। পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনলেন। কিংবা (রাবীর বর্ণনা) তাঁর কাছে সে সংবাদ পৌছল। তখন তিনি বললেন, বারীরার ব্যাপারে কি? এবং বললেন, তাকে খরীদ কর। তারপর তাকে আযাদ করে দাও। তারা যত ইচ্ছা শর্ত আরোপ করুক। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তারপর আমি তাকে খরীদ করলাম এবং আযাদ করে দিলাম। তার মালিক পক্ষ ওয়ালার শর্ত আরোপ করল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়ালা তারই হবে, যে আযাদ করবে। তারা শত শর্তারোপ করলেও।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
এবারে আসুন দেখে নিই, এই ওয়ালার অধিকার বা অভিভাবকত্ব আসলে কী [186] –
সেইসাথে এই হাদিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই কারণে যে, এই হাদিস থেকে জানা যাচ্ছে, বারীরার মালিকেরা আয়িশাকে বলে পাঠিয়েছিল, আয়িশা যদি শুধুমাত্র সওয়াবের আশায় বারীরাকে কিনে মুক্ত করতে চায়, তাহলে তারা রাজী আছে। কিন্তু ওয়ালার অধিকার চাইলে তারা রাজী নেই। কিন্তু এই প্রস্তাবে আয়িশা রাজী হয় নি, বরঞ্চ নবী নিজেই মুক্তিদাতাই যে ওয়ালার মালিক হবে, সেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন [189] [190] –
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২১। দাসমুক্তি
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রকৃতপক্ষে মুক্তিদাতা পাবে মুক্তদাসের ওয়ালা পরিত্যক্ত সম্পদ
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৩৬৬৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫০৪
৩৬৬৯-(৬/…) কুতাইবাহ ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আয়িশাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বারীরাহ (রাযিঃ) তার লিখিত মুক্তিপণ পরিশোধের ব্যাপারে সাহায্যের জন্য আয়িশাহ (রাযিঃ) এর কাছে এল। সে তার লিখিত মুক্তিপণের কিছুই আদায় করেনি। তখন আয়িশাহ (রাযিঃ) তাকে বললেনঃ তুমি তোমার মুনিবের কাছে ফিরে যাও। যদি তারা এ শর্তে রাযি হয় যে, আমি তোমার লিখিত মুক্তিপণের যাবতীয় পাওনা আদায় করলে তোমার ওয়ালা আমার প্রাপ্য হবে, তবে তা আমি করতে পারি। বারীরা তার মনিবদের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করল। কিন্তু তারা সে প্রস্তাব মেনে নিল না এবং বলে দিল, যদি তিনি সাওয়াবের আশায় তোমার লিখিত মুক্তিপণ আদায়ের দায়িত্ব নেন তাহলে নিতে পারেন, তবে তোমার ’ওয়ালা আমাদের জন্যই থাকবে। এরপর তিনি [“আয়িশাহ (রাযিঃ)] বিষয়টি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উঠালেন। তখন তিনি তাকে বললেনঃ তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দিতে পার, কেননা ওয়ালা মুক্তিদাতারই প্রাপ্য। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেনঃ লোকদের কী হয়েছে তারা এমন কিছু শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যে ব্যক্তি এমন শর্তারোপ করবে যা আল্লাহর কিতাবে নেই- সে শর্তের কোন মূল্য নেই যদিও সে একশো বার শর্তারোপ করে। আল্লাহর শর্তই কেবল সঠিক ও নির্ভরযোগ্য। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬৩৫, ইসলামিক সেন্টার ৩৬৩৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
এবারে আসুন ইসলামের অত্যন্ত প্রখ্যাত একজন ইমাম, ইমাম কুদুরীর আল- মিসবাহুন নূরী শরহে মুখতাসারুল কুদুরী গ্রন্থ থেকে দেখে নিই, ওয়ালা কাকে বলে এবং ইসলামে দাস মুক্তির পরে ওয়ালার বিধান [191] –
আসুন আরো একটি তথ্য দেখে নিই- যা থেকে বোঝা যায়, ইসলামের শরীয়া বিধান অনুসারে একজন মুক্ত দাস মুক্তি পাওয়ার পরেও আসলে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। তার মালিক আজীবনই তার মালিকই থাকে। কারণ সে চাইলেও অন্য কাউকে নিজের উত্তরাধিকার বা ওয়ালা বানাতে পারে না [192] [193] –
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২১। দাসমুক্তি
পরিচ্ছেদঃ ৪. মুক্তদাসের জন্য তার মুক্তিদাতা ব্যতীত অন্য কাউকে ওয়ালার মালিক বানানো হারাম
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৩৬৮৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৫০৮
৩৬৮৩-(১৮/১৫০৮) কুতাইবাহ্ ইবনু সাঈদ (রহঃ) ….. আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (ক্রীতদাস) তার মুনিবের অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে মনিব বানাবে তার উপর আল্লাহর লা’নাত এবং তার ফেরেশতাদেরও লানাত। তার ফরয কিংবা নফল কিছুই (আল্লাহর কাছে) কবুল হবে না। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬৪৯, ইসলামিক সেন্টার ৩৬৪৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত দাসদাসী
যুদ্ধবন্দী নারী ছাড়াও অন্যান্য যে সকল সূত্র থেকে ইসলামে দাসদাসী গ্রহণ করা হালাল সেগুলো হচ্ছে, বাজার থেকে কিনে আনা, কারো কাছ থেকে উপহার বা দান হিসেবে নেয়া, ভাগে খরিদ করা প্রভৃতি। একাধিক লোক যদি ভাগে কোন দাসীকে খরিদ করে, তাহলে মালিকানা সূত্রে তারা দুইজনই দাসীর সাথে সহবাস করতে পারবে। যার বিভিন্ন প্রমাণ ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী থেকে পাওয়া যায় [194] –
আসুন এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক, ইসলাম কীভাবে ভাগাভাগি করে দাসীদের ভোগ করার পদ্ধতি বাতলে দেয়! এগুলো পড়লে যে কোন সুস্থ মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যাবে [195] –
লজ্জিত মুসলিমদের মিথ্যাচার
ইসলাম কেন দাসপ্রথার মত এমন বর্বর এবং অসভ্য ব্যবস্থা বলবৎ রেখেছে, এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় অনেক লজ্জিত মুসলিমকেই নানা ধরণের মিথ্যাচার করতে দেখা যায়। তারা নিয়মিতই এমন এমন মিথ্যাচার করে, যেগুলো খুবই হাস্যকর এবং ইসলামের কোন আলেমই এরকম উদ্ভট কথা কোনদিন বলেননি। অনেক সময় তারা এমন দাবীও করে যে, ইসলামে নাকি দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসলামে নাকি দাসদাসী বলেই কিছু নেই! এরকম কথা শুনলে আসলে হাসাহাসি করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। কিন্তু হাসাহাসি বাদেও, এই বিষয়গুলোর সমস্ত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তাদের দাবীগুলো খণ্ডণ করাও আমাদের লক্ষ্য। এই কারণে তাদের বহুল প্রচারিত কিছু মিথ্যা দাবীকে খণ্ডন করা হচ্ছে।
ইসলাম দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেছে?
ইদানিংকালের অনেক অজ্ঞ মুসলিমই হুট করে কোন দলিল ছাড়াই দাবী করে বসে যে, ইসলাম নাকি দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেছে! প্রমাণ হিসেবে তারা বলে থাকে, বর্তমানে কোথাও তো দাসদাসী পাওয়া যায় না। এটিই নাকি প্রমাণ করে, ইসলামে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ! কিন্তু ইসলামি শরীয়তে দাসদাসীর বিধান থাকার পরেও এখন আর দাসদাসী পাওয়া যায় না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত বইটি থেকে একটি প্রশ্নের উত্তর পড়তে হবে, যেখানে একজন প্রখ্যাত মুফতি ইসলামের আলোকে প্রশ্নটির উত্তর দিচ্ছেন [196] –
অনেক মুসলিম আবার সূরা মুহাম্মদের একটি আয়াত দেখিয়ে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন যে, ইসলামে নাকি দাস বানানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আসুন সূরা মুহাম্মদের তাফসীর পড়ে নিই মা’আরেফুল কোরআন গ্রন্থ থেকে [197] –
আসুন দেখি বাংলাদেশের ইসলামি আলেমগণ এই বিষয়ে কী বলেন,
দাসপ্রথা পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল!
ইসলামে দাসপ্রথা নিয়ে প্রশ্ন তুললেই শুরুতেই যেকোন মুসলিম এর ডিফেন্সে যেই কথাটি সবার আগে বলেন সেটি হচ্ছে, দাসপ্রথা পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল! ভাবখানা এমন যে, পূর্ব থেকে প্রচলিত থাকলে বিষয়টি আর অনৈতিক থাকে না। ধরুন, কেউ ধর্ষণ করে যদি বলে, ধর্ষণ তো আমাদের সমাজে পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল, এই যুক্তিটি কেমন শোনাবে? পৃথিবীর কোন আদালত এমন যুক্তি শুনে ধর্ষককে ক্ষমা করে দেবে? অথবা ধরুন, মিয়ানমারে কোন নতুন আইন করা হলো, সেখানে বলা হলো মুসলিমদের খুন করলে এখন থেকে আর কোন শাস্তি হবে না। এই আইনটির সমর্থনে বলা হলো, মুসলিমদের খুন করা তো পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল! এসব যুক্তি কেমন শোনাবে? এগুলো মুসলিম সম্প্রদায় মেনে নেবে? খুবই হাস্যকর শোনাবে না এগুলো?
বা ধরুন, ফ্রান্সে নতুন আইন করা হলো যে, বোরখা পরা মেয়ে দেখলে টেনে বোরখা খুলে নেয়া হবে। যুক্তি হিসেবে বলা হলো, এগুলো তো পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল! এরকম হাস্যকর যুক্তি দিলে মুসলিমরা কী তা মেনে নিবে? পূর্ব থেকে প্রচলিত থাকলেই কি কোন কাজ করা কারো জন্য নৈতিকভাবে সঠিক হয়ে যায়? পূর্ব থেকে প্রচলিত থাকলেই কী, আর না থাকলেই কী! একটি অন্যায় তো অন্যায়ই থাকে!
অথচ সত্য হচ্ছে, ইসলামের দাবী মোতাবেক পূর্ব থেকে ইসলামেই দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল। কীভাবে? ইসলামের দাবী অনুসারে আদম, মুসা, দাউদ, সুলায়মান এরা সকলেই ইসলামেরই নবী। আমরা সকলেই জানি যে, বিবি হাজেরাকে নবী ইব্রাহীম দাসী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন খিদমতের জন্য[198]। একইসাথে, সুলায়মান নবীর কতজন দাসী ছিল, সেটিও জানা যায় আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া থেকে [199] –
এর অর্থ হচ্ছে, ইসলামের নবীগণের সময়কালেই দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল। কোন নবীই দাসপ্রথাকে বিলুপ্ত করতে বলেননি বা নিষিদ্ধ করেননি। ইসলামের পূর্ব থেকেই পৌত্তলিকতা, মূর্তিপুজা, মদ খাওয়া, সুদ খাওয়া সহ অসংখ্য বিষয় প্রচলিত ছিল। সেই সময়ের সমাজ এগুলোতে নিমজ্জিত ছিল। অসংখ্য মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য ছিল সুদ মদ মূর্তিপূজার ওপর নির্ভরশীল। এগুল সব নিষিদ্ধ করতে পারলেও নবী মুহাম্মদ দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করে একটিও আয়াত নাজিল করাতে পারেননি।
একইসাথে, মক্কাবিজয়ের পরে তিনি এটিও বলেন যে, আজ থেকে জাহিলিয়্যাতের সকল কুপ্রথা আমার পায়ের নিচে দাফন হলো। কিন্তু এরপরেও তিনি দাস রেখেছেন, তার খলিফারাও তাদের শাসনামলে দাসদাসী রেখেছেন। দাসপ্রথা জাহেলিয়্যাতের বা পৌত্তলিকদের প্রথা হয়ে থাকলে, জাহিলিয়্যাতের সকল কুপ্রথা বাতিল করার পরেও নবী ও তার সাহাবীগণ দাস রাখতেন কীভাবে? তাহলে দাসপ্রথা পৌত্তলিক বা জাহেলি প্রথা, এই দাবীটি কতটুকু সত্য? নাকি যুগে যুগে এটি নবী রাসুলদেরই প্রথা ছিল? ইসলামেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল?
ইসলামে দাসদাসী বলা হারাম?
দাসপ্রথা নিয়ে লজ্জিত অনেক মুসলিমই বলে থাকেন, ইসলামে নাকি কাউকে দাসদাসী বলাই হারাম! অথচ, এরকম কোন বক্তব্য ইসলামের প্রতিষ্ঠিত কোন আলেমের ব্যাখ্যা থেকেই জানা যায় না। বরঞ্চ একটি হাদিস থেকে জানা যায়, নবী কাউকে আমার বান্দা বা আমার বাঁদী বলাকে নিরুৎসাহিত করেছে। তবে এই কাজটি মোটেও হারাম নয়। এই কাজটি আলেমদের মতামত অনুসারে মাকরুহে তানজিহী, যার অর্থ হচ্ছে অপছন্দনীয়। কিন্তু মোটেও হারাম নয়। কারণ খলিফাদের অনেকেই দাসদাসীদের দাসদাসী বলেই সম্বোধন করেছেন।
এই হাদিসটির পরিচ্ছদের নামের মধ্যেই বলা আছে, আমার দাস আমার দাসী বলাটি মাকরুহ, হারাম নয়। এর কারণ হচ্ছে, বান্দা শব্দটির সাথে ইবাদতের সম্পর্ক আছে। বান্দা তার মালিকের ইবাদত করে। যেহেতু ইসলাম শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদতের হুকুম দেয়, তাই কোন মানুষকে নিজের বান্দা বলাটি ইসলাম মাকরুহ করেছে। এর অর্থ এই নয় যে, এই কাজটি হারাম। আসুন সেই হাদিসটি এবং একই হাদিসের ব্যাখ্যা শরহে মুসলিম গ্রন্থ থেকে দেখে নিই [200] [201] [202] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৪৯/ ক্রীতদাস আযাদ করা
পরিচ্ছেদঃ ৪৯/১৭. দাসদের মারধোর করা এবং আমার ক্রীতদাস ও আমার বাঁদী এরূপ বলা মাকরূহ।
২৫৫২. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এমন কথা না বলে ‘‘তোমার প্রভুকে আহার করাও’’ ‘‘তোমার প্রভুকে অযু করাও’’ ‘‘তোমার প্রভুকে পান করাও’’ আর যেন (দাস ও বাঁদীরা) এরূপ বলে, ‘‘আমার মনিব’’ ‘আমার অভিভাবক’, তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে ‘‘আমার দাস, আমার দাসী’’। বরং বলবে- ‘আমার বালক’ ‘আমার বালিকা’ ‘আমার খাদিম’। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩৮৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৬/ শিষ্টাচার
পরিচ্ছেদঃ ৮৩. দাস/সেবক তার মালিককে ‘আমার রব’ বলবে না
৪৯৭৫। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন ’আমার দাস ও আমার দাসী’ না বলে এবং অধীনস্থরাও যেন ’আমার রব, আমার রাব্বাতী’ না বলে। বরং মনিব তার দাসকে বলবে, ফাতায়া ও ফাতাতী (আমার যুবক ও আমার যুবতী)। আর অধীনস্থ লোকেরাও বলবে, আমার সাইয়িদ আমার সাইয়িদাহ (আমার নেতা ও আমার নেত্রী)। কেননা তোমরা সবাই গোলাম, মহান আল্লাহই হলেন একমাত্র রব।[1]
সহীহ।
[1]. বুখারীর আদাবুল মুফরাদ, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
দাসী বিবাহ কী বাধ্যতামূলক?
প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কোরআনে সূরা নিসার ২৫ নম্বর আয়াতে [203] দাসীদের সাথে বিবাহের যে উল্লেখ রয়েছে, সেটি কাদের জন্য প্রযোজ্য? অনেক মডারেট মুসলিমই এই আয়াতের অর্থ এমনভাবে করে যে, বিবাহ করেই শুধুমাত্র দাসীদের সাথে যৌন সঙ্গম করা যাবে। অথচ এই আয়াতের এমন অর্থ কোন সাহাবী বা তাবে তাবেইনই করেননি, কোন আলেমও করেননি। আসুন তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন থেকে দেখে নিই, ক্রীতদাসীদের বিবাহ করে সহবাস করা বাধ্যতামূলক নাকি এটি শুধুমাত্র সেই সব মানুষদের জন্য, যারা স্বাধীন নারীকে বিবাহ করতে অক্ষম, সে সম্পর্কে [163] –
এবারে তাফসীরে জালালাইন থেকেই দেখি [164] –
এবারে আসুন ফিকাহুস সুন্নাহ গ্রন্থ থেকেও একই বিষয় সম্পর্কে ব্যাখ্যাটি পড়ে নিই [204]। এর অর্থ হচ্ছে, অন্যের মালিকানাধীন দাসী বিবাহ শুধুমাত্র তাদের জন্য, যারা স্বাধীন নারীকে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে না। ব্যভিচারের আশঙ্কা থাকলে তখন এই বিবাহ করা যাবে।
স্ত্রী ও দাসী কি সমমর্যাদার?
অনেক ইসলামিস্টই আজকাল লজ্জাশরমের বালাই না করে তর্কে জয়ী হওয়ার জন্য বলে বসেন, ইসলামে নাকি দাসী আর স্ত্রী সমমর্যাদার। এই কথা বলে উনারা দাসীদের মর্যাদা দেন নাকি স্ত্রীদের অসম্মান করেন, বোঝা মুশকিল। কারণ দাসী আর স্ত্রী সমান মর্যাদার হলে একই সাথে যে স্ত্রীকে অসম্মান করা হচ্ছে, এই বোধটুকু তাদের নেই। তবে তাফসীরে জালালাইনে আমরা পেয়ে যাই একদমই ভিন্ন কথা। সেখানে ইসলামের এই বিধান বলে দেয়া রয়েছে যে, দাসী আর স্ত্রীদের অধিকার এবং সম্মান ভিন্ন থাকে [205] [206] [207] –
স্বামীহীন মেয়েদের আশ্রয়দানই ছিল উদ্দেশ্য?
লাজলজ্জার মাথা খেয়ে অনেক মুসলিমকেই দাবী করতে শোনা যায়, অসহায় যুদ্ধবন্দী নারীদের স্বামীরা তাদের ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় বা নিহত হওয়ায় সেইসব মেয়েদের জন্য দয়াল নবীর মন কাঁদতো, তাই নিতান্তই মানবতার স্বার্থে নবী তাদের সাহাবীদের সাথে সঙ্গম করতে দিতেন যেন সেই মেয়েরা নতুন এক আশ্রয় পায়। অথচ এই কথাগুলোও একেবারেই মিথ্যা কথা। সেই সময়ে অনেক মেয়েদের স্বামীরা পর্যন্ত বন্দী হতো। স্বামীদের সামনেই তাদের স্ত্রীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করতো দয়াল নবীর জিহাদী সাহাবীগণ। নিচের হাদিসটি দেখুন [85] –
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩৯. বন্দী স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস করা।
২১৫২. উবায়দুল্লাহ্ ইবন উমার ইবন মায়সার …… আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধের সময় আওতাস্ নামক স্থানে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করেন। তারা তাদের শত্রুদের সাথে মুকাবিলা করে তাদেরকে হত্যা করে এবং তাদের উপর বিজয়ী হয়। আর এই সময় তারা কয়েদী হিসাবে (হাওয়াযেন গোত্রের) কিছু মহিলাকে বন্দী করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিছু সাহাবী তাদের সাথে অনধিকারভাবে সহবাস করা গুনাহ মনে করে, কেননা তাদের মুশরিক স্বামীরা তখন বন্দী ছিল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এই আত নাযিল করেনঃ (অর্থ) যে সমস্ত স্ত্রীলোকদের স্বামী আছে তারা তোমাদের জন্য হারাম। তবে যারা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী অর্থাৎ যেসব মহিলা যুদ্ধবন্দী হিসাবে তোমাদের আয়ত্বে আসবে তারা ইদ্দত (হায়েযের) পূর্ণ করার পর তোমাদের জন্য হালাল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
দয়া করে ইদ্দতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে?
মুমিনদের মধ্যে অনেকেই বলে থাকেন, বিশ্ব মানবতার পথপ্রদর্শক দয়াল নবী তো যুদ্ধবন্দী নারীদের ওপর সাহাবীদের চড়ে বসতে এক ইদ্দতকাল অপেক্ষা করতে বলেছেন! এসব কথা শুনলে মনে হয়, দয়াল নবী যেন এক বিশাল মানবতার কাজ করে ফেলেছেন। মুমিনদের দাবী হচ্ছে, এই সময়ে সেই যুদ্ধবন্দী নারীরা প্রিয়জনকে হারানোর শোক কাটিয়ে মনিবের সাথে সহবাস করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারবে।
ইদ্দত বা জরায়ু মুক্ত কিনা তার জন্য নির্ধারিত সময় বা ওয়েটিং পিরিয়ড একদিন থেকে একমাসও হতে পারে। আবার গর্ভবতী হলে নয়মাসও হতে পারে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে কোন কোন যুদ্ধবন্দী নারীকে যুদ্ধে স্বজন হারিয়ে তার শোক কাটিয়ে একদিনের মাঝেই তার মুসলিম মালিকের সাথে মিলিত হবার জন্য প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে, আবার কেউ কেউ কয়েক সপ্তাহ সময় পাবে, কপাল ভালো হলে কেউ কেউ একমাস। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম মাসিকের অথবা প্রসবের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছে যাতে এই বন্দিনীর সাথে মিলনের ফলে যদি কোন সন্তান হয় সেটি যে তার সন্তানই তা যাতে নিশ্চিত হওয়া যায়।
আসুন তাহলে দেখি, বন্দী নারীদের যে মাসিক হলেই নবীর সাহাবীগণের জন্য সহবাস বৈধ ছিল, তার প্রমাণ দেখি- [208] [209] [132]। কিন্তু মাসিক তো তার বন্দী হওয়ার দিনেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তাহলে শোক পালনের জন্য তাদের সময় দেয়া হতো, এই কথাটির সত্যতা তো এতে প্রমাণ হয় না। বরঞ্চ প্রমাণ হয় অন্যের গর্ভজাত সন্তান যেন মুসলিমদের সন্তান বলে গণ্য না হয়, সেটি। উল্লেখ্য, অন্যের গর্ভজাত সন্তান হলে সেই সন্তানটি দাস বলেই গণ্য হবে।
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩ঃ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – জরায়ু মুক্তকরণ বা পবিত্রকরণ
৩৩৩৮-[২] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আওত্বাস যুদ্ধেলব্ধ বন্দীনীদের ব্যাপারে ঘোষণা করেন, গর্ভবতীর সাথে সন্তান প্রসব না পর্যন্ত এবং ঋতুবতীর সাথে ঋতুস্রাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন সহবাস না করে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, দারিমী)[1]
[1] সহীহ : আবূ দাঊদ ২১৫৭, আহমাদ ১১২২৮, দারিমী ২৩৪১, ইরওয়া ১৮৭, সহীহ আল জামি‘ ৭৪৭৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩ঃ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ – জরায়ু মুক্তকরণ বা পবিত্রকরণ
৩৩৪১-[৫] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে বাঁদীর সাথে সহবাস করা হয় ঐ বাঁদী দান, বিক্রয় অথবা মুক্ত করা হলে এক ঋতুস্রাব দ্বারা তার ’ইসতিবরা’ (জরায়ুমুক্ত বা পবিত্রকরণ) করতে হবে। তবে কুমারী জরায়ুমুক্ত কিনা, তা নিস্প্রয়োজন। (উপরোক্ত হাদীস দু’টি রযীন বর্ণনা করেন)[1]
[1] সহীহ : রযীনে পাওয়া যায়নি, বরং ইমাম বুখারী (রহঃ) এটি ২২৩৫ নং হাদীসের পূর্বে সানাদবিহীন অবস্থায় বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৮/ দুধপান
পরিচ্ছেদঃ ১. ইসতিবরার পর যুদ্ধ বন্দিনীর সাথে সঙ্গম করা জায়েয এবং তার স্বামী বর্তমান থাকলে সে বিবাহ বাতিল
৩৪৭৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু মায়সারা কাওয়ারীরী (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধের সময় আওতাসের দিকেএকটি বাহিনী পাঠান। তারা শত্রুদলের মুখোমুখী হয় এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে এবং তাদের অনেক কয়েদী তাদের হস্তগত হয়। এদের মধ্য থেকে দাসীদের সাথে সহবাস করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকজন সাহাবী যেন নাজায়িয মনে করলেন, তাদের মুশরিক স্বামী বর্তমান থাকার কারণে। আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” অর্থাৎ তারা তোমাদের জন্য হালাল, যখন তারা তাদের ইদ্দত পূর্ন করে নিবে।
[গর্ভবতী হলে প্রসব, অন্যথায় এক ঋতু অতিবাহিত হওয়াকেই ইসতিবরার বলে।]
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
যুদ্ধবন্দী নারীরা স্বেচ্ছায় সহবাস করতো?
এই কথাটি আসলে নির্লজ্জতার সকল সীমা অতিক্রম করে যাওয়া একটি অতি নিম্নমানের মিথ্যা কথা। মুসলিমদের মধ্য একটি অংশ যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে যে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সহবাস করা হয়েছে তা প্রমাণ করার জন্য নাস্তিকদের প্রতি হাস্যকর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। মুমিনদের মধ্যে এই অংশটির দাবী, ইসলামিক কোন দলিল থেকে নাস্তিকরা যেন প্রমাণ করে যে, ঐসব যুদ্ধবন্দী নারী সহবাসে রাজী ছিল না! এরকম দাবী যারা করে, তাদের মস্তিষ্কের সক্ষমতা নিয়ে বড় ধরণের প্রশ্ন ওঠে।
এটি খুবই কমনসেন্সের বিষয় যে, ইসলামিক যত সোর্স আছে, যেমন কুরআন, হাদিস, তাফসীর, সীরাত ইত্যাদি সকল গ্রন্থে নিশ্চয়ই নবী, সাহাবী ও মুসলমানদের কথাই লিপিবদ্ধ থাকবে, তাদের গুণকীর্তনেই পরিপূর্ণ থাকবে। যুদ্ধবন্দী দাসীরা কি বলেছে না বলেছে সেটি নিশ্চয়ই সেখানে লেখা থাকবে না। এসব কথা শুনলে মনে হয়, সেই সব বন্দী মেয়েরা নিজেরাই স্বীকারোক্তি দিয়েছিল যে, “নিজেদের পিতা, ভাই কিংবা স্বামীদেরকে সাহাবীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে দেখে আমরা নবী বীর সাহাবীদের ওপর এতই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে, তাদের সাথে সহবাস না করে আর থাকতে পারছিলাম না! মুগ্ধ হয়ে নিজে থেকেই তাদের সাথে সহবাস করতে মুখিয়ে ছিলাম! বাপ ভাই স্বামী ছেলে জবাই হওয়ার সাথে সাথে তাই নাচতে নাচতে নবীর সাহাবীদের কোলে গিয়ে উঠতাম! “
এটি তো খুব স্বাভাবিক বিষয় যে, তাদের আত্মীয় স্বজনকে হত্যা করে যারা মেয়েগুলোকে বন্দী করে নিয়ে এসেছে, তাদের স্বাধীনতা হরণ করেছে, তাদেরকে স্বাধীন মানুষ থেকে দাসী বানিয়েছে, তাদের পরিবার পরিজন ছেলে মেয়ে স্বামী ভাই বাবামায়ের তিলে তিলে গড়ে তোলা সংসার ধ্বংস করেছে, তারা কখনোই তাদের সাথে স্বেচ্ছায় সহবাসে রাজি হবে না। যদি তার উল্টো ঘটনা ঘটে, অর্থাৎ কেউ দাবী করে যে আমাকে কোনোরকম জোর করে কিছু করা হয় নি, তাহলে তারই নিজের মুখের সাক্ষ্য লাগবে যে আমি স্বেচ্ছায় সহবাসে রাজি ছিলাম। বন্দী একজন মানুষের সাথে যৌনকর্ম হওয়া এটিই প্রমাণ করে, তার বন্দিত্ব এখানে একটি প্রভাব ফেলেছে। স্বেচ্ছায় সহবাস হতে পারে শুধুমাত্র তার বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে সম্মতি দেয়ার মাধ্যমে।
যেই ইসলামিস্টরা দাবী করছে, যুদ্ধবন্দী নারীরা সাহাবাদের সাথে সহবাসে রাজি ছিলেন, তাদেরকেই যুদ্ধবন্দী নারীদের নিজস্ব মুখের সাক্ষ্য পেশ করতে হবে যে, উনারা স্বেচ্ছায় সহবাসে রাজি ছিলেন। সেই সাথে প্রমাণ করতে হবে যে, এরকম স্বীকারোক্তির পেছনে সেই সব বন্দী নারীর কোন রকম ভয়ভীতি কিংবা আতঙ্ক ছিল না। দাসত্বের শেকল পায়ে ছিল না। কারণ বন্দী মানুষের এই ভয়টি থাকাটিই স্বভাবিক যে, তাকে ভয় দেখিয়ে বা ক্ষমতা, পেশীশক্তি ও কর্তৃত্ব ব্যবহার করে তার মুখ থেকে স্বীকৃতি আদায় করা হতে পারে।
উল্টদিকে অনেকগুলো হাদিস থেকেই স্পষ্ট জানা যায়, যুদ্ধবন্দী নারীদের গনিমতের মাল হিসেবে ধরে এনে একত্র করা হতো, এর মধ্য থেকে নবীর সাহাবীগণ সহবাসের জন্য দাসী বেছে বেছে নিয়ে যেতো। সেখানে দাসীদের নিশ্চয়ই প্রশ্ন করা হতো না যে, তুমি কার সাথে যাবে! বা তারা কার সাথে সহবাস করতে ইচ্ছুক? যুদ্ধবন্দী নারীরা স্বেচ্ছায় সম্মতিতে স্বাধীনভাবে সাহাবীদের মধ্য থেকে এক একজনকে বেছে নিয়ে আনন্দের সাথে বিছানায় যেতো, সেরকম কোন বিবরণ কোথাও পাওয়া যায় না। কারণ যুদ্ধবন্দী কিংবা দাসীদের তো আর মতামত দেয়ার কোন সুযোগ থাকে না। আসুন নিচের হাদিসটি থেকে দেখে নিই [210] [211] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১৪/ কর, ফাই ও প্রশাসক
পরিচ্ছেদঃ ২১. গানীমাতের মালে সেনাপতির অংশ
২৯৯৮। আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধ শেষে বন্দীদেরকে একত্র করা হলে দিহয়া আল-কালবী (রাঃ) এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে যুদ্ধ বন্দীদের মধ্য থেকে একটি বন্দিনী দিন। তিনি বললেনঃ যাও, একটি দাসী নিয়ে নাও। তিনি সাফিয়্যাহ বিনতু হুয়াইকে বেছে নিলেন। অপর এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি সাফিয়্যাহ বিনতু হুয়াইকে দিহয়াকে দিলেন। অথচ তিনি কেবল আপনারই উপযুক্ত। কেননা হুয়াই কন্যা বনূ কুরাইযাহ ও বনূ নাযীর গোত্রের নেতার কন্যা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সাফিয়্যাহ সহ দিহয়াকে ডেকে আনো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যাহর দিকে তাকিয়ে দিহয়াকে বললেনঃ এর বদলে তুমি বন্দীদের মধ্য থেকে অন্য কোনো দাসী নাও। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আযাদ করে বিয়ে করেন।[1]
[1]. সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধবন্দী নারীদের যৌনচাহিদা পূরণ?
যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে যৌনসঙ্গম বা ধর্ষণের এই ব্যাপারটিকে সুন্দর মোড়কে উপস্থাপনের জন্য অনেক মুসলিমই দাবী করেন, যুদ্ধবন্দী নারীদের যৌন চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যেই দয়ার সাগর নবীজি এই বিধানটি করেছেন! নবীজি আসলে অনেক ভাল মানুষ তো, তাই যুদ্ধবন্দীদের জন্য তার মন অনেক কাঁদতো! এই কারণে যুদ্ধবন্দীরা যেন ঠিকঠাক সেক্স করতে পারে, এইদিকে খুবই সজাগ দৃষ্টি ছিল মানবতার নবীর। এই কারণে তিনি নিজেও বাধ্য হয়ে নিতান্তই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই কাজ করতেন, সাহাবীদের দিয়েও করাতেন। আসলে উনারা কেউই এগুলো করতে চাইতেন না। দিন দুনিয়ার ভোগ বিলাসের দিকে তাদের কারোরই কোন মন ছিল না। তারা জান্নাতের পাখি হয়ে জান্নাতের আকাশে উড়ার কথাই সারাক্ষণ ভাবতেন। দুনিয়াবি ইন্দ্রিয় সুখ নিয়ে ভাবার সময় তাদের কোথায়? কিন্তু যুদ্ধবন্দী নারীদের বাপ ভাই স্বামীকে হত্যার পরেই সেই সব নারীদের যৌনচাহিদা হঠাৎ এমন বেড়ে যেত যে, সাহাবীগণ বাধ্য হয়ে তা করে যুদ্ধবন্দীদের সুখ দিতেন! কত কষ্টই না হতো নবী এবং তার সাহাবীদের এই কাজ করতে। এতগুলো নারীকে সুখ দেয়া তো চাট্টিখানি কথা না!
কিন্তু এখানে যে যুদ্ধবন্দীদের যৌনচাহিদা মোটেও কোন গুরুত্ব রাখে না, সেটি বোঝা যায় আরেকটি বিধান থেকে। যুদ্ধবন্দী সেই সময়ে পুরুষ নারী দুইই হতো। কিন্তু নবীর মেয়ে সাহাবীরা কিন্তু যুদ্ধবন্দী পুরুষ কিংবা দাসের যৌন চাহিদা পূরণ করতে পারতো না। এক মহিলা এই কাজ করতে গিয়ে বিপদেও পড়েছিল।
সুরা মুমিনুনের এই ৫, ৬ নম্বর আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে আল্লামা ইবনে কাসির একটি প্রাসঙ্গিক ও জরুরী বিষয় উল্লেখ করেছেন, সেটি হচ্ছে নারীর শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য দাসকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলামি নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি। এই লৈঙ্গিক বৈষম্য ইসলাম ধর্মের নারীবিদ্বেষ এবং পুরুষ যে আসলে নারীর মালিক এই ধারণার সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই। একজন নারী কোরআনের “মা মালাকাত আইমানুহুম” অংশটি পড়ে ভেবেছিলেন যে একজন পুরুষ যেহেতু তার অধীনস্থ দাসীকে দিয়ে তার নিজের শারীরিক চাহিদা মেটাতে পারে, একজন নারী হিসেবেও হয়ত তার অধিকার আছে যে তিনি তার নিজস্ব শারীরিক চাহিদা নিজের অধীনস্থ দাসকে দিয়ে মেটাতে পারবেন। কিন্তু বিষয়টি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমরের আদালতে গড়ালে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ইসলামি শাস্ত্র নারীকে এই সামান্য সমতাটুকুও দিতে সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক। ঐ নারী ও তার পুরুষ দাস দুজনকেই শাস্তি দিয়েছিলেন খলিফা ওমর। দাসকে করা হয়েছিল শারীরিক নির্যাতন, আর মেয়েটির থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল ভবিষ্যতে অন্য পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার মৌলিক অধিকার, তথা বিবাহের অধিকারটি। নিচের পৃষ্ঠা দুইটির লাল দাগাঙ্কিত অংশটিতে বিস্তারিত পড়ুন। এ থেকে বোঝা যায়, দাসদাসীর যৌন চাহিদা পূরণ এখানে মোটেও মূখ্য নয় [212] –
চুক্তি করা ওয়াজিব নাকি মুস্তাহাব?
বেশকিছু বিব্রত চেহারার মুসলিমকে ইসলামের দাসপ্রথাকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে কোরআনের একটি আয়াত নিয়ে এসে বলতে শোনা যায়, মানব ইতিহাসে নাকি ইসলামই সর্বপ্রথম দাসের সাথে মুকাতাব চুক্তি বা মুক্ত হওয়ার চুক্তি করার বিধান দেয়! অথচ এই কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। মুহাম্মদের আগেও এই ধরণের চুক্তি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত ছিল। মুহাম্মদের প্রায় হাজার বছর পূর্বেই প্রাচীন রোমে মুকাতাব চুক্তি প্রচলিত ছিল। অর্থাৎ যে সকল দাসদাসী কোন বিশেষ কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে, তারা তাদের অর্জিত অর্থের বিনিময়ে বাজার মূল্যে তার দাম যত, সেই অর্থ বা তার কাছাকাছি কোন অর্থ মালিককে প্রদান করতে পারলে সে মুক্ত মানুষ এবং রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে গণ্য হতো। সত্যিকার অর্থে এটি দাস মালিকের কোন দয়াদাক্ষিণ্য বা উদারতাও নয়। একজন দাসের বাজার মূল্য যত, বেশিরভাগ সময়ে তার চাইতে অধিক মূল্য পরিশোধ করেই একজন দাসকে মালিকের কাছ থেকে নিজের স্বাধীনতা কিনে নিতে হতো। কিন্তু চুক্তি করে কিস্তিতে নিজের স্বাধীনতা কেনার এই প্রথাটিও প্রাচীনযুগ থেকেই চলে আসছিল। আসুন প্রাচীন রোমের সেই আইনটি দেখে নিই, [213]
আরো মিথ্যাচার হচ্ছে, অনেক মুমিনই বলতে চেষ্টা করেন যে, ইসলামে নাকি দাস চাইলে মুকাতাব চুক্তি করা বাধ্যতামূলক, অর্থাৎ ফরজ! তারা প্রায়শই হযরত উমরের একটি হাদিস এনে প্রমাণের চেষ্টা করেন, এটি নাকি বাধ্যতামূলক। অথচ, সমস্ত ওলামায়ে একরামের এই বিষয়ে ঐক্যমত্য রয়েছে যে, এটি অনুমোদনমূলক, বাধ্যতামূলক নয়। আসুন আয়াতটি, সেই সাথে তাফসীরে মাজহারী থেকে এর তাফসীরও পড়ে দেখি [214] [215] –
আর তোমাদের দাসদাসীদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি পেতে চায়, তাদের সঙ্গে চুক্তি কর যদি তাতে কোন কল্যাণ আছে ব’লে তোমরা জান।
— Taisirul Quran
তোমাদের মালিকানাধীন দাসদাসীদের মধ্যে কেহ তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চাইলে তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পাও;
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করতে চায় তাদের সাথে তোমরা লিখিত চুক্তি কর, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে বলে জানতে পার
— Rawai Al-bayan
তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি চাইলে, তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে বলে জানতে পার।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এই একই বক্তব্য পাওয়া যায় প্রখ্যাত একটি তাফসীর গ্রন্থ মা’আরেফুল কোরআনেও [216] –
দাস বা বন্দী মুক্ত করা ফরজ?
অনেক ইসলামিক এপোলোজিস্টই দাবী করেন, একটি হাদিসে বন্দীকে মুক্ত করাতে খুবই জোর দেয়া হয়েছে, এবং এর মাধ্যমে গনিমতের মাল হিসেবে বন্দী হওয়া অনেক কাফেরই নাকি মুক্ত হয়ে যেত। অথচ সত্য হচ্ছে, হাদিসটিতে বন্দী বলতে মুসলিম বন্দীদের কথা বলা হয়েছে। যেসব মুসলিম বন্দী কাফেরদের হাতে ধরা পরতো এবং বন্দী অবস্থায় থাকতো, সেইসব বন্দীকে মুক্ত করাকে মুসলিমদের জন্য আবশ্যক বলা হয়েছে। এখানে বন্দী মুক্ত মানে নিজেদের কাছে যেসব বন্দী আছে তাদের মুক্ত করা নয়, কাফেরদের হাতে যেসব মুসলিম বন্দী তাদের মুক্ত করা। এই কথাটিকে ইসলামিক এপোলোজিস্টরা কীভাবে টুইস্ট করে বলে, সেটি খুবই অদ্ভুত ব্যাপার [217] –
দাসদাসীকে প্রহার করা হারাম?
ইসলামকে খুব মানবিক ধর্ম হিসেবে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে অনেক মুসলিমই দাবী করেন, ইসলামে দাসদাসীকে সামান্য প্রহার করাও নাকি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ বা হারাম এবং সামান্যতম প্রহার করলেই নাকি সেই দাসদাসীকে মুক্ত করে দেয়া ইসলামে বাধ্যতামূলক! অথচ এই ধরণের কোন বাধ্যবাধকতা ইসলামে নেই। বুখারী শরীফেই বলা হয়েছে, ক্রীতদাসকে মারলে মুখমণ্ডলে মেরো না। এ থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়, ক্রীতদাসকে মারধোর করা ইসলামে একটি বৈধ বিষয়। বুখারী শরীফে সরাসরিই এই কথাটিও বলা আছে, “দাসদের মারধোর করা মাকরূহ” বা অপছন্দনীয় কিন্তু নিষেধ নয়, এরপরেও অনেক মুমিনই এই নিয়ে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে থাকে [200] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৪৯/ ক্রীতদাস আযাদ করা
পরিচ্ছেদঃ ৪৯/১৭. দাসদের মারধোর করা এবং আমার ক্রীতদাস ও আমার বাঁদী এরূপ বলা মাকরূহ।
২৫৫২. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এমন কথা না বলে ‘‘তোমার প্রভুকে আহার করাও’’ ‘‘তোমার প্রভুকে অযু করাও’’ ‘‘তোমার প্রভুকে পান করাও’’ আর যেন (দাস ও বাঁদীরা) এরূপ বলে, ‘‘আমার মনিব’’ ‘আমার অভিভাবক’, তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে ‘‘আমার দাস, আমার দাসী’’। বরং বলবে- ‘আমার বালক’ ‘আমার বালিকা’ ‘আমার খাদিম’। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৩৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩৮৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
যেখানে নিজের স্ত্রীকে মারধোর করাই ইসলামে একটি বৈধ এবং স্বীকৃত কাজ, সেখানে দাসদাসীকে প্রহার ইসলামে হারাম, এরকম উদ্ভট দাবী করতে মুমিনদের একটুও লজ্জা করে না। এই বিষয়ে বিস্তারিত এই লেখাটিতে রয়েছে [218]। এখানে আমরা শুধু এই বিষয়ক হাদিসটি উল্লেখ করছি, যেই হাদিসে ক্রীতদাসীর মত পেটাতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু ক্রীতদাসীদের পেটানো আদৌ নিষিদ্ধ হয়ে থাকলে নবী কেন স্ত্রীদের ক্রীতদাসীদের মত পেটাতে নিষেধ করবেন? [219] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪২-[৫] ’আব্দুল্লাহ ইবনু যাম্’আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন ক্রীতদাসীর ন্যায় স্ত্রীকে না মারে (অত্যাচার না করা হয়), অথচ দিনের শেষেই তার সাথে সহবাস করে।
অপর বর্ণনায় আছে- তোমাদের কেউ যেন ইচ্ছা করে স্ত্রীকে ক্রীতদাসীর ন্যায় মারমুখো না হয়, হয়তো দিন শেষে তার সাথে সহবাস করতে চাইবে; আর এতে সে অনাগ্রহ প্রকাশ করবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বায়ু নির্গত হওয়ায় হাসি-ঠাট্টাচ্ছলের কারণে উপদেশ করলেন, যে কাজ নিজে কর অন্যের সে কাজে তোমরা কেন হাসবে! (বুখারী ও মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : বুখারী ৪৯৪২, মুসলিম ১৪৭০।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু যাম‘আহ (রাঃ)
আসুন দারুস সালাম প্রকাশনী থেকে বের হওয়া বুখারী শরীফের একটি হাদিস দেখি [220] –
আসুন প্রাসঙ্গিক একটি হাদিস পড়ে নিই। লক্ষ্য করুন, এই হাদিসে স্ত্রীদেরকে গোলাম বা দাসের মত প্রহার করতে নিষেধ করা হচ্ছে। যদি গোলাম বা দাসকে প্রহার করা নিষিদ্ধই হতো, তাহলে স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করতে নিষেধ কেন করা হবে? [221]
বুলুগুল মারাম
পর্ব – ৮ঃ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ৫. স্ত্রীদের হক বণ্টন – স্ত্রীকে অধিক প্ৰহার করা নিষেধ
১০৬৪। ’আবদুল্লাহ বিন যাম’আহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্ৰহার করো না।[1]
[1] বুখারী ৫২০৪, ৩৩৭৭, ৫৯৪২, ৬০৪২, মুসলিম ২৮৫৫, তিরমিযী ৩৩৪৩, ইবনু মাজাহ ১৯৮৩, আহমাদ ১৫৭৮৮, দারেমী ২২২০। পূর্ণাঙ্গ হাদীসটি হচ্ছেঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لا يجلد أحدكم امرأته جلد العبد ثم يجامعها في آخر اليوم তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সঙ্গে তো মিলিত হবে। ইমাম হাইসামী তাঁর মাজমাউয যাওযায়েদ ৫/৭ গ্রন্থে বলেন, এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে হাজ্জাজ বিন আরত্বআ নামক বর্ণনাকারী রয়েছে সে মুদাল্লিস।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু যাম‘আহ (রাঃ)
এবারে আসুন ইযাহুল মুসলিম গ্রন্থ থেকে এই বিষয়টি জেনে নেয়া যাক [222] –
একই কথা বলা রয়েছে সহীহ মুসলিম গ্রন্থের ব্যাখ্যা গ্রন্থেও [223] –
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মুহাম্মদের পরে ইসলামি সাম্রাজ্যের খলিফা আবু বকরের একজন দাস একটি উট হারিয়ে ফেলায় আবু বকর তাকে প্রহার করছিলেন, সেই দৃশ্য দেখে নবী মুহাম্মদ হাসছিলেন বলে হাদিস গ্রন্থ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় [224] [225]। এর অর্থ হচ্ছে, দাসকে প্রহারের সময় নবী তার কোন প্রতিবাদ তো করেনই নি, বরঞ্চ উৎসাহই দিয়েছেন। তাই দাসদাসীকে প্রহার ইসলামে হারাম, এরকম বলার কোন সুযোগ নেই।
প্রথমত, এটি প্রমাণ করে যে, নবী মুহাম্মদ দাসকে প্রহারের সময় নীরব দর্শক ছিলেন, এমনকি সেটিকে নিরুৎসাহিত করার পরিবর্তে হাস্যরসাত্মক প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন, যা কোনভাবেই দাসদের প্রতি তার ব্যক্তিগত সহানুভূতির প্রমাণ দেয় না। এই ঘটনার ফলে, দাসপ্রহারের ন্যায় অন্যায় সম্পর্কে ইসলামের অবস্থান নিয়ে আমাদের ধারনা পরিষ্কার হয়। দ্বিতীয়ত, এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে কেউ যদি মনে করেন যে, দাসপ্রহারের ব্যাপারে নবী মুহাম্মদ-এর নীরবতা বা হাসি দাসদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণকে বৈধতা দেয়, তাহলে সেটিকে ভুল বলার কোন সুযোগই থাকে না। যদি নবী মুহাম্মদ-এর মতো একজন ধর্মীয় নেতা দাসপ্রহারের ঘটনায় নীরব থাকেন, তবে সেটি দাসদের প্রতি তার কথিত সহমর্মিতার দাবীগুলোর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তৃতীয়ত, এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, দাসদের প্রতি কঠোর আচরণ, এমনকি শারীরিক নির্যাতন, নবীর সময়ে নবীর সম্মুখেই স্বীকৃত ছিল এবং এগুলো ইসলামিক নীতি বা শিক্ষার পরিপন্থী নয়। পরিশেষে, এই হাদিসের আলোকে বলা যায়, দাসপ্রহারের ন্যায় একটি অমানবিক কাজের ক্ষেত্রে নবী মুহাম্মদ-এর নীরবতা বা হাসি তার চরিত্রের মানবিক গুণাবলীরই প্রকাশ। এটি দাসপ্রথার ব্যাপারে ইসলামের অবস্থানকে খুব পরিষ্কার করে উপস্থাপন করে এবং ইসলামকে দাসপ্রথা ও দাসদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের বৈধতাকারী হিসেবে প্রতিপন্ন করে। তাই, দাসপ্রহারের মত বিষয়কে হারাম বা নিষিদ্ধ বলা ইসলামের বিশ্বাসের সাথে একেবারেই সাংঘর্ষিক।
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫/ হাজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ২৮. ইহরা্ম অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নিজ গোলামকে প্রহার করলে।
১৮১৮. আহমাদ ইবন হাম্বল (রহঃ) …… আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (বিদায় হজ্জের সময়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমরা আরাজ নামক স্থানে উপনীত হলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহন থেকে অবতরণ করলেন এবং আমরাও অবতরণ করলাম। আয়েশা (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পার্শ্বে উপবেশন করেন এবং আমি আমার পিতা (আবূ বাকর) এর পার্শ্বে উপবেশন করি। আবূ বাকর (রাঃ) ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাদ্য পানীয় ও সফরের সরঞ্জাম একই সংগে আবূ বাকরের একটি গোলামের নিকট (একটি উষ্ট্রের পৃষ্ঠে) রক্ষিত ছিল।
আবূ বাকর (রাঃ) গোলামের অপেক্ষায় ছিলেন (যেন খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা যায়)। কিন্তু সে এমন অবস্থায় উপস্থিত হল যে, সে উট তার সাথে ছিল না। তিনি (আবূ বাকর) জিজ্ঞাসা করেন, তোমার সে উটটি কোথায়? জবাবে সে বলল, আমি গতকাল তাকে হারিয়ে ফেলেছি। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, মাত্র একটি উট, তুমি তাও হারিয়ে ফেললে? রাবী বলেন, তখন তিনি তাকে মারধর করেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হেসে বলেনঃ তোমরা এ মুহরিম ব্যক্তির দিকে দেখ, কী করছে। রাবী ইবন আবূ রিয্মা বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উক্তির চাইতে অধিক কিছু বলেননি যে, ‘তোমরা এ মুহরিম ব্যক্তির দিকে দেখ কী কাজ করছে, আর তিনি মুচকি হাসছিলেন।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ)
ইবনে হিশামের সিরাতুন নবী থেকে জানা যায়, আয়িশার একটি পরকীয়ার গুজব উঠেছিল। সেই সময়ে আলী আয়িশার একজন দাসীকে ধরে বেদম প্রহার করে সত্যি কথা বের করারও চেষ্টা করেন [226]। সেই সময়ে সামনে নবী মুহাম্মদও উপস্থিত ছিলেন, তিনি বাধা দেননি। তাই দাসদাসীকে প্রহার করা হারাম, এরকম বক্তব্য শুধুমাত্র নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।
মুশরিক নারীর সাথে যৌনসঙ্গম হারাম?
সূরা বাকারার ২২১ নম্বর আয়াত দেখিয়ে অনেক মুসলিমই দাবী করেন, ইসলামে তো মুশরিক নারীর সাথে যৌনসঙ্গম হারাম করা হয়েছে। তাহলে যুদ্ধবন্দী মুশরিক নারীদের সাথে মুমিনরা কীভাবে যৌনকর্ম করবে? এ থেকে তারা বলতে চেষ্টা করেন, যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে যৌনসঙ্গম করা ইসলামে নিষিদ্ধ! আসুন, এই আয়াতটি পড়ে দেখি [227]
আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে।
— Rawai Al-bayan
পাঠক নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, এই আয়াতে বিবাহের কথা বলা হয়েছে, দাসী হিসেবে রেখে যৌনসঙ্গমের প্রসঙ্গে এখানে কিছুই বলা হয়নি। যদিও এটি সত্য যে, কিছু কিছু আলেমের মতে এই আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ দ্বারা আসলে যৌনসঙ্গমই বোঝায়। সেই কারণে কিছু আলেম মনে করেন মুশরিক নারীর সাথে সকল ধরণের যৌনসঙ্গমই হারাম। তবে আরেক পক্ষের মতে, যুদ্ধবন্দী মুশরিক নারীর সাথে যৌনসঙ্গম হালাল। কারণ আবু দাউদ শরীফের ২১৫২ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, মুশরিক নারীদের সাথে সাহাবীগণ যৌনসঙ্গম করেছিলেন [228] –
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩৯. বন্দী স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস করা।
২১৫২. উবায়দুল্লাহ্ ইবন উমার ইবন মায়সার …… আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধের সময় আওতাস্ নামক স্থানে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করেন। তারা তাদের শত্রুদের সাথে মুকাবিলা করে তাদেরকে হত্যা করে এবং তাদের উপর বিজয়ী হয়। আর এই সময় তারা কয়েদী হিসাবে (হাওয়াযেন গোত্রের) কিছু মহিলাকে বন্দী করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিছু সাহাবী তাদের সাথে অনধিকারভাবে সহবাস করা গুনাহ মনে করে, কেননা তাদের মুশরিক স্বামীরা তখন বন্দী ছিল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এই আত নাযিল করেনঃ (অর্থ) যে সমস্ত স্ত্রীলোকদের স্বামী আছে তারা তোমাদের জন্য হারাম। তবে যারা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী অর্থাৎ যেসব মহিলা যুদ্ধবন্দী হিসাবে তোমাদের আয়ত্বে আসবে তারা ইদ্দত (হায়েযের) পূর্ণ করার পর তোমাদের জন্য হালাল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
কিন্তু এই পুরো বিষয়টিই এক ধরণের ইসলামিক প্রতারণা। ইসলামে দাসীদের সাথে যৌনকর্মের বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই ইসলামিস্টগণ এসব বাজে যুক্তির অবতারণা করেন। কারণ এই তথ্যগুলো যদি সঠিকও হতো, তাহলে ইহুদি নাসারা নারীদের গনিমতের মাল হিসেবে ভোগ করা তো জায়েজ, কারণ তারা তো মুশরিক নন। পৌত্তলিক বা মুশরিক নারীদের বাদ দিলেই কী ইহুদি নাসারা নারীদের ধর্ষণ করাটিকে সঠিক হয়ে যায়? এগুলো খুবই অদ্ভুত যুক্তি যে, ইসলাম মুশরিক নারীকে ধর্ষণ করতে নিষেধ করেছে! এর অর্থ তো এই নয় যে, ইহুদি নাসারা নারীদের ধর্ষণ করাটি ভাল কাজ হয়ে গেল!
এছাড়া ইসলামিস্টরা এত বছর ধরে যুদ্ধবন্দী বা দাসী ধর্ষণ হালাল করতে যে সকল যুক্তি দিতেন, সেই যুক্তিগুলোও এই যুক্তির দ্বারা উনারা নিজেরাই বাতিল করে দিচ্ছেন। উনারা এতদিন বলতেন, দাসীদের যৌনচাহিদা পূরণ করার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই নবী ও তার সাহাবীগণ অনিচ্ছাসত্ত্বেও দাসীদের বিছানায় তুলতেন। আহারে, আমাদের সাহাবীদের কত বড় হৃদয়! কত মানবতা! কিন্তু এটি তাদের যুক্তি হলে, মুশরিক নারীদের যৌনচাহিদা কেন তারা পূরণ করতেন না? মুশরিক নারীদের কী যৌনচাহিদা থাকে না? ইসলামিস্টরা এতদিন আরো বলতেন, অসহায় যুদ্ধবন্দী নারীদের নতুন স্বামী সংসার দেয়ার মহৎ উদ্দেশ্যেই নাকি সাহাবীগণ তাদের বিছানায় তুলে নিতেন! কিন্তু মুশরিক নারীদের বিছানায় না তুললে, মুশরিক নারীরা তো এক একজন শাহরুখ খানের মত হ্যান্ডসাম সাহাবীকে যৌনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে, তাই না? ইসলামিস্টদের বক্তব্য অনুসারে, যুদ্ধবন্দী বা দাসী নারীরা নাকি সাহাবীদের বীরত্ব দেখে বাপ ভাই স্বামীর লাশের ওপর দিয়ে উত্থাল পাত্থাল যৌনক্ষুধায় দৌঁড়ে এসে নিজেরা স্বেচ্ছায় সাহাবীদের সাথে সহবত করতো! কিন্তু মুশরিক নারীদের তাহলে উনারা কেন সেই যৌন সুখ দেবেন না? এর কারণ কী? ইহুদি নাসারা মেয়েদের গনিমতের মাল হিসেবে ধর্ষণ করা যাবে, মুশরিক নারীদের ওপর দরদ এত উত্থলে ওঠার কারণ কী? সত্যি কথাটি হচ্ছে, ইসলামি বর্বরতা হালাল করতে এগুলো সবই ইসলামি প্রতারণা।
কারণ আমরা আগেই দেখিয়েছি, আক্রমণাত্মক জিহাদের মাধ্যমে মুশরিকদের জোরজোবরদস্তিমূলকভাবে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করার হুকুমই নবী দিয়ে গেছেন। নবী তাদের জন্য দুইটি অপশন রাখতেন, হয় ইসলাম নতুবা তরবারির আঘাতে মৃত্যু। তাহলে সেইসব মুশরিক যুদ্ধবন্দী নারীদের সামনে ইসলাম গ্রহণ করা ছাড়া আর কি রাস্তা খোলা ছিল? ঐ পাতাটি আসুন আবারো পড়ি [229] –
একইসাথে, উনাদের এই সকল যুক্তির বিরুদ্ধে উনাদেরই অত্যন্ত প্রখ্যাত ইসলামিক আলেমগণ জবাব লিখে গেছেন বহু পূর্বেই। আসুন মুসলিম পণ্ডিত ইবন কায়্যিম আল-জাওযিয়্যা কর্তৃক রচিত যাদুল মা’আদ গ্রন্থ থেকে এই বিষয়ে কী বলা আছে দেখে নেয়া যাক, [230] –
এবারে আসুন তাফসীরে যাকারিয়াতে এই সম্পর্কে কী বলা আছে পড়ে নিই, [231]
উমর দাসী কি সহবতকারীকে শাস্তি দিয়েছেন?
ইসলামের পক্ষের অনেক বক্তাই লাজলজ্জার মাথা খেয়ে আরো একটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকেন। তারা আপনাকে একটি হাদিস দেখিয়ে দাবী করবে, ইসলামে দাসী সহবত সম্পূর্ণ হারাম! হাদিসটিতে বলা হয়েছে, একবার হযরত উমর একজনকে কঠিন শাস্তি দিয়েছিল কারণ সে দাসীর সাথে যৌনকর্ম করেছিল। এই তথ্যটির মধ্যে একটি মস্তবড় গলদ আছে। আসুন আগে হাদিসটি পড়ি [232]
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭৮/ বল-প্রয়োগে বাধ্য করা
পরিচ্ছেদঃ ২৯১২. যখন কোন মহিলাকে ব্যভিচারে বাধ্য করা হয় তখন তার উপর কোন ‘হদ’ আসে না। কেননা, আল্লাহ বলেন, তবে কেউ যদি তাদেরকে বাধ্য করে সে ক্ষেত্রে জবরদস্তির উপর আল্লাহতো তাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (২৪ঃ ৩৩)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৬৪৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৯৪৯ – ৬৯৫০
লায়স (র.) নাফি’ (র.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, সাফিয়্যা বিন্ত আবূ উবাইদ তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, সরকারী মালিকানাধীন এক গোলাম গনীমতের পঞ্চমাংশে প্রাপ্ত একটি দাসীর সাথে জবরদস্তিমূলকভাবে যিনা করে। এমন কি তার কুমারীত্ব টুটে দেয়। উমর (রা.) উক্ত গোলামকে কশাঘাত করলেন ও নির্বাসন দিলেন। কিন্তু দাসীটিকে সে বাধ্য করেছিল বলে কশাঘাত করলেন না। যুহরী (র.) কুমারী দাসীর ব্যাপারে বলেন, যার কুমারীত্ব কোন আযাদ ব্যক্তি ছিন্ন করে ফেলল, বিচারক ঐ কুমারী দাসীর মূল্য অনুপাতে তার জন্য ঐ আযাদ ব্যক্তির নিকট হতে কুমারীত্ব টুটে ফেলার দিয়াত গ্রহণ করবেন এবং ওকে কশাঘাত করবেন। আর বিবাহিতা দাসীর ক্ষেত্রে ইমামদের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোন জরিমানা নেই। তবে তার উপর ‘হদ’ কার্যকর হবে নেই।
৬৪৮০। আবুল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) ’সারা’ (আলাইহিস সালাম) কে নিয়ে হিজরত করে এমন এক জনপদে উপনীত হলেন, যেখানে একজন স্বৈরাচার বাদশা ছিল। সে তাঁকে বলে পাঠাল যে, যেন তিনি ’সারা’ কে তার কাছে পাঠিয়ে দেন। তিনি তাকে পাঠিয়ে দিলেন। সে “সারার” দিকে অগ্রসর হতে লাগল। অপর দিকে “সারা” উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে লাগলেন। আর বললেন, হে আল্লাহ্! আমি যদি তোমার ও তোমার রাসূলের প্রতি ঈমান এনে থাকি তাহলে আমার উপর ঐ কাফেরকে কর্তৃত্ব প্রদান করো না। ফলে সে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে (মাটিতে পড়ে) গোড়ালী দিয়ে ঘষর্ণ করতে লাগল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, এই হাদিসটিতেই লেখা রয়েছে যে, ঐ গোলামটি সরকারী মালিকানাধীন একজন ক্রীতদাস ছিল। সে গনিমতের মালের খুমুসের অংশ, অর্থাৎ যেই অংশটি নবীর জন্য নির্ধারিত ছিল, সেই অংশের এক দাসীকে ধর্ষণ করে বলেই উমর তাকে শাস্তি দিয়েছিল। নিজ মালিকানাধীন দাসীর সাথে সহবাস করার কারণে এই শাস্তি নয়, বরঞ্চ গনিমতের এক পঞ্চমাংশের অন্তর্ভূক্ত দাসীকে ধর্ষণ করার কারণেই এই শাস্তি দেয়া হয়েছিল। ইসলামিস্টদের এরকম মিথ্যাচারের নমুনা হাজার হাজার।
ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে আবারো দাসপ্রথা আসবে
ইসলামের প্রায় সকল আলেমই স্বীকার করেন যে, পৃথিবীতে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা হলে আবারো দাসপ্রথা ফিরে আসবে। কাফের মুশরিকদের হত্যা করে কিয়ামতের পূর্বে তাদের মা বোনকে দাসী বানিয়ে আমাদের মুমিন ভাইয়েরা সহবত করতে পারবেন। কোন ধরণের লাজলজ্জা না করে এই কথাগুলো তারা সরাসরিই বলেন, সরাসরিই বইতেও লেখেন। আমি জানি না, এই সমস্ত আলেম কীভাবে এই ধরণের কথা লেখেন! এদের কী একটুও সঙ্কোচ হয় না? আমাদের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ভাইদের মা বোনকে তারা যখন দেখেন, কী দৃষ্টিতে দেখেন আমি জানি না। নিশ্চয়ই এমন চিন্তা তার মাথায় আসে, কিয়ামতের আগে এইসব মা বোন সবাইকে গনিমতের মাল হিসেবে মুমিনরা ভোগ করতে পারবে! কী বীভৎস চিন্তা! [233]
এবারে আসুন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম মিজানুর রহমান আজহারীর মুখ থেকে শুনি, দাসপ্রথা ইসলামে বৈধ কিনা, পুনরায় দাসপ্রথা চালু করার কোন ইসলামি পরিকল্পনা রয়েছে কিনা। স্বাভাবিকভাবেই, মিজানুর রহমান খুব কোমলভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন, কিন্তু কোমলভাবে বললেও যেই কথাগুলো বলেছেন সেগুলো ভয়াবহ। ইহুদি খ্রিস্টানদের দাস বানিয়ে তাদের মা বোনদের গনিমতের মাল বানানো এবং যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করার এই স্বপ্ন এখনো জিহাদী মুসলিমগণ দেখে থাকেন!
উপসংহার
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম যে, ইসলামে দাসপ্রথা একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত দাসপ্রথা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই গণ্য হবে। আল্লাহ বা নবী মুহাম্মদ যা নিষিদ্ধ করেননি তা এরপরে কোন মুসলিমের পক্ষে নিষিদ্ধ করাও অসম্ভব। নবী নিজেই যেখানে দাসীর সাথে যৌন সঙ্গম করেছেন, সেখানে এই বিধানটিকে খারাপ বা অনৈতিক ভাবাটিও কোন মুসলিমের পক্ষে সম্ভব নয়। ইসলামের বিধানের সাথে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণাপত্র এখানে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং আধুনিক সভ্য পৃথিবীর মূল্যবোধের সাথেও সরাসরি সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রীয়ভাবে দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করা এবং একে অনৈতিক কাজ বলে ঘোষণা করাও ইসলামের বিধানের বিপরীত।
অনেক মুসলিমই দাবী করেন, ইসলাম দাসপ্রথাকে বন্ধ করার পথ তৈরি করে গেছে। কিন্তু এগুলো একেবারেই মিথ্যাকথা। কারণ নবীর পরেই ওহী নাজিল বন্ধ হয়ে গেছে, এবং কেয়ামত পর্যন্ত এই বিধানই বলবৎ থাকবে। মুহাম্মদ দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করতে চাইলে মদ এবং সুদের মতই নিষিদ্ধ করে যেতেন। যেহেতু তিনি নিষিদ্ধ করেননি, তাই উনি নিষিদ্ধ করতে চেয়েছেন এরকম বলাটিও ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। আল্লাহ বা নবী কেন তুচ্ছ মানুষকে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করার হুকুম দিতে ইতস্তত করবেন? এমন যদি হতো, নবী মুহাম্মদ দাসপ্রথা নির্মূলের সুচনা করে গেলেন, এরপরে আর কোন নবী এসে দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করবেন এই আশায়, এমনটিও ভাবা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক।
একইসাথে, ইসলামে দাসদাসীদের সাথে যেটুকু ভাল আচরণ করার কথা বলা হয়েছে, ইসলামের আবির্ভাবের অনেক আগেই এর চাইতে অনেক বেশি মানবিক বিধান পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতায় প্রচলিত ছিল। তাই ইসলাম দাসদের সাথে যেটুকু ভাল আচরণ বা দাস মুক্ত করতে উৎসাহ দিয়েছে, সেটিও ইসলামের কোন মৌলিক বিষয় নয়। তাই ইসলামকে দাসপ্রথার মত জঘন্য বর্বর ব্যবস্থার সমর্থক এবং তা জিইয়ে রাখার দায়ে অভিযুক্ত করাটি মোটেও ভুল হবে না। কারণ একটি সভ্য এবং পরিপূর্ণ জীবন বিধান কোনভাবেই দাসপ্রথাকে সমর্থন করতে পারে না।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
বিশাল এবং তথ্যবহুল এই লেখাটি লেখার জন্য আমার যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে। এই পরিশ্রমে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করেছেন সংশয় পরিবারের আবুল ফজল ভাই। লেখাটির বানান সংশোধন করে দিয়েছেন সংশয় পরিবারের শ্রীজীব বিশ্বাস ভাই। উনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
তথ্যসূত্র
- মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র, ১৯৪৮ [↑][↑]
- Martin A. Klein (2002), Historical Dictionary of Slavery and Abolition, p. xxii, ISBN 0810841029 [↑]
- বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ [↑]
- “Sexual violence chapter 6” (PDF)। World Health Organization। ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৫ [↑]
- “Rape”। dictionary.reference.com। এপ্রিল ১৫, ২০১১ [↑]
- “Rape”। legal-dictionary.thefreedictionary.com। এপ্রিল ১৫, ২০১১ [↑]
- Moral absolutism [↑]
- Code of Ur-Nammu [↑]
- Solonian Constitution [↑]
- Gamauf, Richard (2009). “Slaves Doing Business: The role of Roman Law in the Economy of a Roman Household”. European Review of History. 16 (3): 331–346. doi:10.1080/13507480902916837 [↑]
- Kehoe, Dennis P. (2011). “Law and Social Function in the Roman Empire”. The Oxford Handbook of Social Relations in the Roman World. Oxford University Press. pp. 147–8 [↑]
- Bradley (1994), pp. 2–3 [↑]
- Moral letters to Lucilius/Letter 47 [↑]
- Kautilya’s Arthashastra, page 261 [↑][↑]
- Siddharth Kara (10 October 2017). Modern Slavery: A Global Perspective. Columbia University Press. p. 18. ISBN 978-0-231-52802-3.
Ashoka outlawed the slave trade in the Mauryan Empire
[↑] - যাত্রাপুস্তক ২১ঃ২০, ২১ঃ২১ [↑]
- তীত ২ঃ৯, ২ঃ১০ [↑]
- লূক ১২ঃ ৪৭-৪৮ [↑]
- পুরানো ইচ্ছাপত্র, দ্বিতীয় বিবরণ, ২১ঃ ১০-১৪ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২২৬ [↑]
- আর রাহীকুল মাখতূম, আল্লামা সাফিউর রহমান মোবারকপুরী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ৭৬ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ৫৩৭২ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ৫১০১ [↑]
- সূরা নাহল, আয়াত ৭১ [↑]
- মা’আরেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মদ শফী উসমানি, অনুবাদঃ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬২-৩৬৩ [↑]
- সূরা নিসা, আয়াত ৬৫ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৮৫৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দশম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৯, ৫২০, হাদিসঃ ৬৮৫৩ [↑]
- সহজ নসরুল বারী শরহে বুখারী, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা ১৮৫ [↑]
- Author of Saudi Curriculums Advocates Slavery [↑]
- বানু কুরাইজার গণহত্যা [↑]
- ধর্ম অবমাননা, সাম্প্রদায়িকতা এবং মূর্তি ভাঙ্গার সুন্নত [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, প্রথম খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪২৫ [↑]
- সূরা তওবা, আয়াত ৫ [↑]
- সূরা আনফাল, আয়াত ৩৯ [↑]
- সূরা বাকারা, আয়াত ১৯৩ [↑]
- সূরা তওবা, আয়াত ২৯ [↑]
- সূরা তওবা, আয়াত ১১১ [↑]
- সূরা তওবা, আয়াত ১২৩ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৭-১২০ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, প্রথম খণ্ড, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৩৯৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ২৮১৮ [↑]
- হাদীস সম্ভার, হাদিসঃ ১৯০০ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৭৭ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), আল্লামা আলবানী একাডেমী, চতুর্থ খণ্ড, হাদিসঃ ৩০০৩ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ২৬০৭ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ২৬০৮ [↑]
- সূনান নাসাঈ (ইফাঃ), হাদিসঃ ৩৯৭৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী), হাদিসঃ ৩৫ [↑]
- সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ৩৯২৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৩৭০ [↑]
- সহিহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮১, হাদিসঃ ৪৩৭০ [↑]
- তাহাবী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৭ [↑][↑]
- আল হিদায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৯, ৪৩০ [↑]
- ইসলামি শরিয়া রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার [↑]
- সহিহ মুসলিম শরীফ (প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ), আল হাদীছ প্রকাশনী, ১৭ ও ১৮ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২, ১৩ [↑]
- আহকামুল কুরআন, খায়রুন প্রকাশনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৫ – ৩৫৮ [↑]
- সূরা কাফিরুন, আয়াত ৬ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৯৮ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, ১২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬১৩ [↑]
- নবীদের কাহিনী-৩, সীরাতুর রাসূল(ছাঃ), মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৪৭৮ [↑]
- বাংলাদেশে প্রচলিত শির্ক বিদ‘আত ও কুসংস্কার পর্যালোচনা ২. শির্কের পরিণতি [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৮১ [↑]
- কোরআন, সূরা আনফাল, আয়াত ৬৭ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬০১ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৯-২০০ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৭ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭০ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪২ [↑]
- সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৮৩৯ [↑]
- সহিহ মুসলিম শরীফ (প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ), আল হাদীছ প্রকাশনী, ১৭ ও ১৮ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১ [↑]
- আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৫৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৮১১ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৪৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ৩৬৫-৩৬৬, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৪৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪০১৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪০১৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫৬[↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৫-১৮৭ [↑]
- আর-রাহীকুল মাখতূম, আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ), তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ৪৬৬, ৪৬৭ [↑]
- সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ১০৪৯ [↑]
- সহজ নসরুল বারী, শরহে সহীহ বুখারী, ৮ম খণ্ড, আরবি-বাংলা, সহজ তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ উসমান গনী, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪১১ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০২, ৫০৩, ৫৩৫, ৫৩৭, ৫৪০ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২১৫২ [↑][↑][↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৫৪ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩৬ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন,হাদিস নম্বরঃ ৪১৩৮ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৫১ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, তাহকিকঃ আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী, আল্লামা আলবানী একাডেমী, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১৫-২১৬, হাদিস নম্বরঃ ২১৫৫ [↑][↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৫৪১ [↑]
- সীরাতে ইবনে হিশাম, মূলঃ ইবনে হিশাম, অনুবাদঃ আকরাম ফারুক, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, পৃষ্ঠা ২২৭ [↑][↑]
- বনু কুরাইজার গণহত্যা [↑][↑]
- সূরা মুমিনুন, আয়াত ৫, ৬ [↑]
- সূরা আল-মা’আরিজ, আয়াত ২৯-৩০ [↑]
- সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৫০ [↑]
- সূরা নিসা, আয়াত ২৪ [↑]
- quran.com [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ২৭৬৯ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৪, ৫১৯, ৫২০ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা নম্বর ৭৯৫, ৭৯৭ [↑]
- তাফসীর ইবনে কাসীর, তাফসীর পাবলিকেশন্স কমিটি, খণ্ড ৪/৫/৬/৭, পৃষ্ঠা নম্বর ৩৪৩ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬-১৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৫১০৫ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), আধুনিক প্রকাশনী, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৩ [↑]
- সূনান নাসাঈ শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬১ [↑]
- সূনান নাসাঈ শরীফ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। চতুর্থ খণ্ড। পৃষ্ঠা ১০৬ [↑]
- মারিয়া কিবতিয়া | বাঁদী পত্নী সমাচার! [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৭৬৬ [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৮৫, ডাউনলোড লিঙ্ক [↑]
- সিরাতুল মুস্তফা ( সা), আল্লামা ইদরিস কান্ধলবী, ৩য় খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৩০৮ [↑]
- মুয়াত্তা মালিক, বই ২৮, হাদিস ৩৬ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৪, ২৫৫ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৮৯ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসীর, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৬৬-২৬৭ [↑]
- সুনানু ইবনে মাজাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৩৫ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩৭ [↑]
- তাহাবী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০৮ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪ [↑]
- ইসলামে পর্দাপ্রথা – স্বাধীনা ও দাসীর পার্থক্যকরণ [↑]
- আশরাফুল হিদায়া, ইসলামিয়া কুতুবখানা, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬১৫ [↑]
- সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিস নম্বরঃ ১২১২ [↑]
- সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিস নম্বরঃ ১২১৩ [↑]
- সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিস নম্বরঃ ১২১৪ [↑]
- ইসলাম, গনিমতের মাল এবং আমাদের মানবতা [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ প্রকাশনী, হাদিস নম্বর ৪৩৫০ [↑]
- সহীহুল বুখারী, তাওহীদ প্রকাশনী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা নম্বর ২১০, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫০ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৯১ [↑]
- সহজ ইনআমুল বারী, শরহে বুখারী মাগাযী ও তাফসীর অংশ, অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ মাওলানা মুহাম্মদ আলমগীর হুসাইন, মাকতাবায়ে এমদাদিয়া প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২২৭, ২২৮ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৩৯ [↑]
- আশরাফুল হিদায়া, ইসলামিয়া কুতুবখানা, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬১৫, ৬৩৮ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৭৭ [↑][↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৯, হাদিস নম্বরঃ ৩৮৩২ [↑]
- আশরাফুল হিদায়া, ইসলামিয়া কুতুবখানা, ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬২৫ [↑]
- সহজ দরসে ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা ২৫৩ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৪২১ [↑]
- বুখারী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৯, হাদিস নম্বরঃ ২০৮৮ [↑]
- সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস নম্বরঃ ৭৪০৯ [↑]
- বুখারী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দশম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৪৯, হাদিস নম্বরঃ ৬৯০৫ [↑]
- সহজ নসরুল বারী, শরহে সহীহ বুখারী, ১১ তম খণ্ড, আরবি-বাংলা, সহজ তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ উসমান গনী, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৫০৭, ৫০৮ [↑]
- সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১২১৯ [↑]
- সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১২২২ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৭৫ [↑]
- আশরাফুল হিদায়া, ইসলামিয়া কুতুবখানা, ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬১৮, ৬১৯ [↑]
- আল- মিসবাহুন নূরী শরহে মুখতাসারুল কুদুরী, প্রথম খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পৃষ্ঠা ২৩০ [↑]
- আশরাফুল হিদায়া, ইসলামিয়া কুতুবখানা, ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৯৬ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৬৩৫ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৪১ [↑]
- ফিকহে ওসমান রাদিয়াল্লাহ আনহু, আধুনিক প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১৮০, ১৮১ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫০, ১৪৩ [↑]
- সহিহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৬৭৬৪[↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৩৯৫[↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৮৯৯ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৯০১ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২০৯৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯১ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫১০৫ [↑]
- সহিহুল বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ২৬ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৩ [↑]
- ফিকহে ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু, ড মুহাম্মদ রাওয়াস কালা জী, ভাষান্তর ও সম্পাদনাঃ মুহাম্মদ খলিলুল রহমান মুমিন, আধুনিক প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২২৯ [↑]
- ফিকাহুস সুন্নাহ, ২য় খণ্ড, সাইয়েদ সাবেক, শতাব্দী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৮৪, ৮৫ [↑]
- আল হিদায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৭ [↑]
- তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মদ শফী উসমানি, অনুবাদঃ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫০, ৩৫১ [↑][↑]
- তাফসীরে জালালাইন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮০২-৮০৩ [↑][↑]
- ফিকহে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু, ডঃ মুহাম্মদ রাওয়াস কালা’জী, আধুনিক প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১০২-১০৩ [↑][↑]
- আহকামুল কুরআন, ১ম খণ্ড, আল্লামা আবু বকর আহমাদ আল-জাসসাস (রহঃ), খায়রুন প্রকাশনী, পৃষ্ঠাঃ ২৯৯, ৩০০ [↑]
- সহিহ মুসলিম শরীফ (প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ), আল হাদীছ প্রকাশনী, ১৫ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১৭-২১৮ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৬৯, ৪৭০ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ২১৬৩ [↑]
- সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬২৬ [↑]
- শু’আবুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৮৮ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৩২ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৩৩ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৩৪ [↑]
- হাদীস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ২০২৮ [↑]
- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদিস নম্বরঃ ৬২৯৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ২৫৯২ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৬৫৫ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩৪০১ [↑][↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৩৬৭ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯২০ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩৩৯৬ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৬৩৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২০৩৪ [↑]
- সহিহ মুসলিম শরীফ (প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ), মাকতাবাতুল হাদীছ প্রকাশনী, ১৪ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২৬ [↑][↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৫৪২ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস একাডেমী, পৃষ্ঠাঃ ১৬-১৭, হাদিস নম্বরঃ ৩৬৭১ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৩৬৬৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস একাডেমী, পৃষ্ঠাঃ ১৫ [↑]
- আল- মিসবাহুন নূরী শরহে মুখতাসারুল কুদুরী, দ্বিতীয় খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পৃষ্ঠা ১৬৪ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৩৬৮৩ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ২০-২১, হাদিস নম্বরঃ ৩৬৭১ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬১৫ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৭ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত, ১২শ খণ্ড, ফকীহুল মিল্লাত ফাউন্ডেশন, ফকীহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান, পৃষ্ঠা ২৯২, ২৯৩ [↑]
- তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মদ শফী উসমানি, অনুবাদঃ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬,৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৭১৩ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৩৯, ৪০ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৫৫২ [↑][↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিসঃ ৪৯৭৫ [↑]
- সহিহ মুসলিম শরীফ (প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ), মাকতাবাতুল হাদীছ প্রকাশনী, ১৯ ও ২০ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৬ [↑]
- সূরা নিসা, আয়াত ২৫ [↑]
- ফিকাহুস সুন্নাহ, ২য় খণ্ড, সাইয়েদ সাবেক, শতাব্দী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৮৪, ৮৫ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৬৪ [↑]
- ইসলামে পর্দাপ্রথা – স্বাধীনা ও দাসীর পার্থক্যকরণ [↑]
- ইসলামে দাসীদের সাথে আচরণ প্রসঙ্গে [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩৮ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩৩৪১ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ২৯৯৮ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হুসাইন আল-মাদানী প্রকাশনী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩২-২৩৩, হাদিস নম্বরঃ ২৯৯৮ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৯, ৫২০ [↑]
- The Crowd in Rome in the Late Republic (University of Michigan, 1998, 2002), Fergus Millar, pp. 23 [↑]
- সূরা আন-নূর, আয়াত ৩৩ [↑]
- তাফসীরে মাজহারী, অষ্টম খণ্ড [↑]
- মা’আরেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মদ শফী উসমানি, অনুবাদঃ মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৭ [↑]
- সহজ নসরুল বারী শরহে বুখারী, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ২৪০-২৪১ [↑]
- ইসলাম ও নারী – সর্বোচ্চ সম্মান এবং সুমহান মর্যাদা! [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩২৪২ [↑]
- Sahih Al-bukhari,