ধর্মহিন্দুধর্ম

মনু কে?

ভূমিকা

সম্ভবত আপনারা অনেকেই মনুসংহিতার নাম  শুনে থাকবেন। স্ত্রীদের প্রতি ঘৃণা, শূদ্রদের প্রতি অত্যাচার ও জাতিভেদের আকরগ্রন্থ হল এই মনুসংহিতা। সুচতর ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের সৃষ্ট এই শাস্ত্রে পদে পদে ব্রাহ্মণ্যবাদের জয়জয়কার দেখা যাবে। ব্রাহ্মণকে দেবতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এই মনুসংহিতা। মনুসংহিতার প্রণেতা হিসাবে ঋষি মনু্ অত্যন্ত জনপ্রিয়। বৈদিক সাহিত্য হতে শুরু করে  রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ সর্বত্রই মনুর উল্লেখ পাওয়া যাবে। যে ব্যাপারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হল কয়েকশ বছর আগেও বর্ণবাদীরা নিম্নবর্ণের মানুষদের এই মনুর বিধান অনুসারেই অত্যাচার করতেন। এমনকি এখনও প্রায়ই দলিতদের উপর নির্যাতনের খবর সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়। সুতরাং প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আজ অবধি মনুর আদর্শের ভুত হিন্দুসমাজের পিছু ছাড়েনি।


বিখ্যাত লোকেদের পরিচয় যেমন জানার প্রয়োজন পড়ে, তেমনি কুখ্যাত লোকেদের পরিচয় না জেনেও উপায় থাকে না; মনুর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই মনুর পরিচয় দেওয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।

মনুসংহিতায়

সবার প্রথমে  মনুসংহিতা হতে মনু সম্বন্ধে যা জানা যায় তার উল্লেখ করা হচ্ছে।

  1. মনুসংহিতা মতে বিরাট পুরুষ বহুকাল তপস্যা করে মনুকে সৃষ্টি করেছিলেন। মনুকে সমুদয় জগতের দ্বিতীয় স্রষ্টা বলা হয়েছে। ১/৩৩
  2. মনু তপস্যার মাধ্যমে দশজন প্রজা সৃষ্টি করেছিলেন। তারা হল- মরীচি,অত্রি, অঙ্গীরা, পুলহ,পুলস্ত্য, ক্রতু,প্রচেতা, বশিষ্ট, ভৃগু ও নারদ। ১/৩৪-৩৫
  1. মরীচি প্রভৃতি দশ প্রজাপতি আরো সাতজন মনুকে সৃষ্টি করেছিলেন। (১/৩৬) তাদের নাম হল স্বরোচিষ,ঔত্তমি,তামস,রৈবত,মহাতেজা চাক্ষুস ও বৈবস্বত। (১/৬১-৬২)
  2.  অসীম ক্ষমতা সম্পন্ন এই সাতজন মনু নিজ নিজ অধিকার বলে এই চরাচর বিশ্বসংসার সৃষ্টি করে প্রতিপালন করেন। ১/৬৩
    মনুসংহিতা প্রসঙ্গে মনুসংহিতায় বলা হয়েছে-
  3.  হিরণ্যগর্ভ ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রারম্ভে এই শাস্ত্র  প্রস্তুত করে যথাবিধি অধ্যয়ণ করিয়েছিলেন এবং মনু মরীচি প্রভৃতি মুনিগণকে পাঠ করিয়েছিলেন। ১/৫৮
  4. আর,  মহর্ষি ভৃগু মনুর কাছে মনুসংহিতা অধ্যয়ণ করেছিলেন এবং তিনিই মনুসংহিতা আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেন। ১/৫৯

ঋগ্বেদে

হিন্দুদের আদিমতম গ্রন্থ ঋগ্বেদে অসংখ্যবার মনুর উল্লেখ পাওয়া যায়। ঋগ্বেদের যে যে স্থানে মনুর উল্লেখ আছে তা নিচে তুলে ধরা হচ্ছে।

  • “হে অগ্নি! দেবগণ প্রথমে তোমাকে নহুষের মনুষ্যরূপধারী সেনাপতি করেছিলেন এবং ইহলোকে মনুর ধর্মোপদেষ্টা করেছিলেন। পুত্র যেন পিতৃতুল্য হয়।“ ঋগ্বেদ ১/৩১/১১
  • “হে বিশুদ্ধ অগ্নি! হে অঙ্গীরা! মনু ও অঙ্গীরা এবং যযাতি ও অন্যান্য পূর্বপুরুষের ন্যায় তুমি সম্মুখবর্তী হয়ে (যজ্ঞ) দেশে গমন কর, দেবসমূহকে আন ও কুশের উপর উপবেশন করাও এবং অভিষ্ট হব্যদান কর।“ ঋগ্বেদ ১/৩১/১৭
  • “হে অগ্নি! তুমি এ যজ্ঞে বসুদের, রুদ্রদের এবং আদিত্যদের অর্চনা কর এবং শোভনীয় যজ্ঞযুক্ত ও জলসেচনকারী মনুজাত জনকেও অর্চনা কর।“ ঋগ্বেদ ১/৪৫/১
  • “আমাদের নতুন স্তুতি হৃদয়জাত ও মিষ্ট জিহ্ব অগ্নির সম্মুখে ব্যপ্ত হোক; মনুর সন্তান মানুষগণ যথাকালে যজ্ঞ সম্পাদন করে ও যজ্ঞান্ন প্রদান করে সে অগ্নিকে সংগ্রামকালে উৎপন্ন করে। ঋগ্বেদ” ১/৬০/৩
  • “হে অগ্নি! তুমি মনুর অপত্যগণের মধ্যে দেবগণের আহ্বানকারী রূপে অবস্থিতি কর; তুমিই তাদের ধনের স্বামী, তারা স্বীয় শরীরে পুত্র উৎপাদনার্থ শক্তি ইচ্ছা করেছিল এবং মোহত্যাগ করে পুত্রগণের সাথে চিরকাল জীবিত থাকে।“ ঋগ্বেদ ১/৬৮/৪
  • “দেবগণের আহ্বানকারী, অতিশয় বিদ্বান এবং দেবগণের মধ্যে মেধাবী অগ্নিদেব,মনুর যজ্ঞের ন্যায় আমাদের যজ্ঞে উপবেশন করে দেবগণকে আমাদের হব্যের অভিমুখে শাস্ত্রানুসারে প্রেরণ করুন। হে দ্যাবাপৃথিবী! আমার বিষয় অবগত হও।“ ঋগ্বেদ ১/১০৫/১৪
  • “আমরা যজ্ঞানুষ্ঠান ও আজ্যাদিবিশিষ্ট নমোস্কারোপলক্ষিত স্তোত্র দ্বারা বহু হব্য বিশিষ্ট এবং দেবযজ্ঞে যজ্ঞসাধক অগ্নিকে পরিতোষপূর্বক সেবা করি। সে অগ্নি আমাদের হব্যরূপ অন্ন গ্রহণের জন্য ক্ষমবান হয়ে নাশপ্রাপ্ত হবেন না। মাতরিশ্বা মনুর জন্য দূর হতে অগ্নিকে এনে দীপ্ত করেছিলেন, সেরূপ দূর হতে আমাদের যজ্ঞশালায় তিনি আসুন।“ ঋগ্বেদ ১/১২৮/২
  • “হে ইন্দ্র! তুমি সমুদ্রাভিমুখে যাবার জন্য নদীদের গমণশীল রথের ন্যায় অনায়াসে সৃজন করেছ। সংগ্রামকামীগণ যেরূপ রথ সৃজন করে সেরূপ তুমিও করেছ।মনুর জন্য ধেণুগণ যে সর্বার্থপ্রদ হয় এবং সমর্থ মানুষের জন্য ধেণুগণ যেরূপ ক্ষীরপ্রদ হয় সেরূপ অস্মদাভিমুখী নদী সকল একই প্রয়োজনে জল সংগ্রহ করে।“ ঋগ্বেদ ১/১৩০/৫
  • “স্বীয় তেজবলে শত্রুদের পরাভব করবার সময় হে অগ্নি! তুমি আমাদের সম্ভোগযোগ্য স্তুতি অবগত হও। তোমার আশ্রয় পেয়ে আমরা মনুর ন্যায় স্তব করি। সে অনূন মধুস্পর্শী ধনপ্রদ অগ্নিকে আমি জুহু ও স্তুতি দ্বারা আহ্বান করি।“ ঋগ্বেদ ২/১০/৬
  • “হে মরুৎগণ ! তোমাদের যে নির্মল ঔষধ আছে, হে অভীষ্টবর্ষিগণ, তোমাদের যে ঔষধ অত্যন্ত সুখকর ও সুখপ্রদ, যে ঔষধ আমাদের পিতা মনু মনোনীত করেছিলেন, রুদ্রের সে সুখকর ভয়হারী ঔষধ আমরা কামনা করছি। ঋগ্বেদ ২/৩৩/১৩

ঋগ্বেদ ৪/২৬/১ এ ইন্দ্র আপনার কীর্তি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ

  • “আমি মনু, আমি সূর্য, আমি মেধাবী কক্ষীবান ঋষি, আমি অর্জুনীর পুত্র কুৎস রিষিকে অলঙ্কৃত করেছি, আমি কবি উশনা, আমাকে দর্শন কর।

এছাড়া অন্যান্য ঋগ্বেদের অন্যান্য স্থানে বলা হচ্ছেঃ

  • “হে অগ্নি! মনুর ন্যায় আমরা তোমাকে ধ্যান ও প্রজ্বলিত করছি; হে অঙ্গীরা! তুমি মনুর ন্যায় যজমানের জন্য দেবগণের পূজা কর।“ ঋগ্বেদ ৫/২১/১
  • “মনুকৃত দেবযজ্ঞে তিনটি তেজের আবির্ভাব হয়; মরুৎগণ অন্তরিক্ষে সূর্য, বায়ু, অগ্নিরূপ তিনটি জ্যোতিষ্ক ধারণ করেন। হে ইন্দ্র! বিশুদ্ধ বলসম্পন্ন মরুৎগণ তোমার স্তব করেন, কারণ তুমি সুবুদ্ধিসম্পন্ন এবং এসকল মরুৎকে দর্শন করে।“ ঋগ্বেদ ৫/২৯/১
  • “হে বন্ধুগণ! এস, আমরা সে স্তোত্র পাঠ করি, যা দিয়ে অপহৃত ধেণুগণের গোষ্ঠ উদ্ঘাটিত হয়েছিল, যা দিয়ে মনু বিশিশিপ্রকে জয় করেছিলেন যা দিয়ে বণিকের ন্যায় কক্ষীবান জলেচ্ছায় বনে গিয়ে জল লাভ করেছিলেন।“ ঋগ্বেদ ৫/৪৫/৬
  • “হে মহান ইন্দ্র ও বরুণ! মনুর ন্যায় কুশ বিস্তারকারী যজমানের অন্নের জন্য এবং সুখের জন্য যে যজ্ঞ আরদ্ধ হয়, অদ্য তোমাদের জন্য ক্ষিপ্র সে যজ্ঞ ঋত্বিকগণের দ্বারা প্রবৃত্ত হয়েছে।“ ঋগ্বেদ ৬/৬৮/১
  • “হে অগ্নি! ঋত্বিকগণ দিবসে তিনবার হব্যদাতা মনুষ্যের জন্য তোমার মধ্যে হব্য প্রক্ষেপ করে। মনুর ন্যায় এ যজ্ঞে দূত হয়ে যাগ কর এবং আমাদের শত্রু হতে রক্ষা কর।“ ঋগ্বেদ ৭/১১/৩
  • “ যজ্ঞার্হ দেবগণের ও যজনীয় মনুর, যজনীয় মরণরহিত সত্যজ্ঞ যে দেবগণ আছেন, তারা অদ্য আমাদের বহু কীর্তি যুক্ত পুত্র প্রদান করুন। তোমরা সর্বদা আমাদের স্বস্তি দ্বারা পালন কর।“ ঋগ্বেদ ৭/৩৫/১৫
  • “তুমি যজ্ঞশীল, কবিপুত্র,জাতবেদা,মনুর গৃহে উশবা তোমাকে হোতারূপে উপবেশন করিয়েছিলেন।“ ঋগ্বেদ ৮/২৩/১৭
  • “হে বরুণ! আমরা মনুর ন্যায় সোম অভিষব করে ও অগ্নি সমিদ্ধ করে, ঘন ঘন হব্য স্থাপন ও বর্হি ছেদন করে তোমাদের আহ্বান করছি” ঋগ্বেদ ৮/২৭/৭
  • “হে সর্বধনবিশিষ্ট দেবগণ! অদ্য সূর্য উদিত হলে এবং সায়ংকালে হব্যদায়ী প্রকৃষ্ট জ্ঞানবান মনুর উদ্দেশে সে কমনীয় ধন ধারণ করেছ।“  ঋগ্বেদ ৮/২৭/২১
  • “হে শত্রু ভক্ষক, মনুর যজ্ঞার্হ দেবগণ! তোমরা ত্রয়স্ত্রিংশ, তোমরা এ প্রকারে স্তুত হয়েছ।“ ঋগ্বেদ ৮/৩০/২
  • “তোমরা আমাদের ত্রাণ কর, তোমরা রক্ষা কর, তোমরা আমাদের মিষ্ট কথা বল। হে দেবগণ! পিতা মনু হতে আগত পথ হতে আমাদের ভ্রষ্ট করো না, দূরবর্তী মার্গ হতেও ভ্রষ্ট করো না।“ ঋগ্বেদ ৮/৩০/৩
  • “ হে ইন্দ্র! বিবস্বান মনুর সোম পূর্বে যেরূপ পান করেছ, ত্রিতের মন যেরূপ যুগিয়েছ, আয়ুর সাথে যেরূপ প্রমত্ত হয়েছ- মাতরিশ্বা যজ্ঞীয় পৃষধ্র অভিষব করতে আরম্ভ করলে, তুমি যেরূপ প্রমত্ত হও এবং সম্বন্ধ দীপ্তিবিশিষ্ট দশশিপ্র ও দশোন্যের সোম পান করে থাক-  ঋগ্বেদ ৮/৫২/১-২
  • “ যে স্থানে সকল স্তুতিবাক্য রচয়িতারা স্তব করবার জন্য মিলিত হয়, সোমের সে সত্য স্বরূপ স্থান আমরা যেন প্রাপ্ত হই। সে সোম যার জ্যোতি দ্বারা আলোক উদয় হয়ে দিবসের আবির্ভাব করেছে। যার জ্যোতি মনু রক্ষা করেছে এবং দস্যুর দিকে প্রেরিত হয়েছে।“ ঋগ্বেদ ৯/৯২/৫
  • “ যে সকল দেবতা অতি দূরদেশ হতে এসে মনুষ্যদের সাথে বন্ধুত্ব করেন,যারা বিবস্বানের পুত্র মনুর সন্তানদের অতি সন্তুষ্ট হয়ে তাদের আশ্রয় দান করেন, যারা নহুষপুত্র যযাতির যজ্ঞে অধিষ্ঠান হন, তারা আমাদের মঙ্গল করুন।“ ঋগ্বেদ ১০/৬৩/১
  • “মনু অগ্নি প্রজ্বলিত করে শ্রদ্ধাযুক্ত চিত্তে সাতজন হোতা নিয়ে যে সকল দেবতার উদ্দেশ্যে অতি উৎকৃষ্ট হোমের দ্রব্য উৎসর্গ করেছেন, সে সমস্ত দেবতাগণ আমাদের অভয় দান করুন এবং সুখী করুন, আমাদের সকল বিষয়ে সুবিধা করে দিন এবং কল্যাণ বিতরণ করুন।“ ঋগ্বেদ ১০/৬৩/৭

ইন্দ্রের কীর্তি সম্বন্ধে ঋগ্বেদে বলা হচ্ছে-

  • “যজ্ঞানুষ্ঠানে নমুচিকে বধ করেছ। দাসজাতীয়কে ঋষির নিকট নিস্তেজ করে দিয়েছ। তুমি মনুকে সুবিস্তীর্ণ পথ সকল প্রস্তুত করে দিয়েছ, সেগুলি দেবলোকে যাবার অতি সরল পথ হয়েছে।“ ঋগ্বেদ ১০/৭৩/৭

এছাড়া বলা হয়েছেঃ

  • “যেমন পূর্বকালে মনুর যজ্ঞে সোমরস এসেছিল, সেরূপ এ প্রস্তরের দ্বারা নিষ্পীড়িত সোম জলে প্রবেশ করুন। গাভীদের জলে স্নান করাবার সময়ে এবং গৃহ নির্মাণ কার্যে এবং ঘোটকদের স্নান করাবার সময় যজ্ঞকালে এ অবিনাশী সোমরসদের আশ্রয় লওয়া হয়। “ঋগ্বেদ ১০/৭৭/৩

ঋগ্বেদে মনুর এতবার উল্লেখ দেখে মনুকে একজন প্রভাবশালী স্বতন্ত্র মানুষ বলেই মনে হয়।

এছাড়াও,

  1. তৈত্তিরীয় সংহিতায় মনুর নির্দেশকে ‘ভেষজ’ বলা হয়েছে- “যদ্বৈ কিং চ মনুরবদৎ তদ্ ভেষজম্।”
  2. ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণে “সর্বজ্ঞানময়ো বেদঃ সর্ববেদময়ো মনুঃ” উক্তিটির মাধ্যমে মনুর মধ্যে সমস্ত বেদের জ্ঞান নিহিত আছে বলে প্রশংসা করা হয়েছে।
  3. ছান্দোগ্য উপনিষদে ঋষি বলছেন- “প্রজাপতি (ব্রহ্মা) মনুকে উপদেশ দিয়েছিলেন এবং মনুই প্রজাদের মধ্যে তা প্রচার করেন।”- “প্রজাপতি র্মনবে মনুঃ প্রজাভ্যঃ” (৩.১১.৪)।
  4. তৈত্তিরিয় সংহিতায় মনু থেকেই প্রজা সৃষ্টি হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

রামায়ণে

রামায়ণে রামচন্দ্র বালীকে হত্যা করার জন্য আড়াল থেকে তীর নিক্ষেপ করলে বালী তাকে ভর্ৎসনা করেন। বালীর নানা অভিযোগের উত্তর দিতে গিয়ে রাম মনুর উল্লেখ করে মনুসংহিতা হতে দুটি শ্লোক উদ্ধৃত করেন। রাম বলেন,

শক্যম্ ত্বয়া অপি তত্ কার্যম্ ধর্মম্ এব অনুবর্ততা।। ২৯

শ্রুয়তে মনুনা গীতৌ শ্লোকৌ চারিত্র বৎসলৌ।

গৃহীতৌ ধর্ম কুশলৈঃ তথা তত্ চরিতম্ ময়া ।। ৪/১৮/৩০

অর্থাৎ,  আর তুমিও যদি ধর্মের অপেক্ষা রাখতে , তাহলে তোমায় স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এই দণ্ড ভোগ করতে হত। মহর্ষি মনু চরিত্র শোধক দুইটি শ্লোক বলেছেন , ধার্মিকেরা তাতে আস্থা প্রদর্শন করেন , আমিও সেই ব্যবস্থাক্রমে এমন করলাম।

রাজভিঃ ধৃত দণ্ডাঃ চ কৃত্বা পাপানি মানবাঃ।

নির্মলা স্বর্গম্ আয়ান্তি সন্তঃ সুকৃতিনো যথা।। ৪/১৮/৩১

শাসনাত্ বা অপি মোক্ষাত্ বা স্তেনঃ পাপাত্ প্রমুচ্যতে।

রাজা তু অশাসন্ পাপস্য তদ্ অপ্নোতি কিল্বিষম্।। ৪/১৮/৩২

অর্থাৎ, মনু বলেছেন, মানুষেরা পাপাচরণ করে রাজদণ্ড ভোগ করলে বীতপাপ হয় এবং পূণ্যশীল সাধুর মত স্বর্গে গমন করে থাকে । নিগ্রহ বা মুক্তি যেরূপে হোক , পাপী শুদ্ধ হয় কিন্তু যে রাজা দণ্ডের পরিবর্তে মুক্তি দিয়ে থাকেন , পাপ তাকেই স্পর্শ করে।

রামচন্দ্র মনুর যে কথার উদ্ধৃতি দিলেন তা মনুসংহিতায় (৮/৩১৬-৩১৮) রয়েছে।  সুতরাং দেখা যায়, রাম মনুকে চেনেন এবং মান্যও করেন। রাম যে মনুর মতোই জাতিবাদী তা রামের শম্বুক বধে ফুটেও ওঠে।

এছাড়াও রামায়ণের উত্তরকাণ্ডেও মনুর উল্লেখ মেলে। উত্তরকাণ্ডের ৯২ তম সর্গে আছে-

পুরা কৃতযুগে রাম মনুরদণ্ডোধরঃ প্রভুঃ।

তস্য পুত্রো মহানাসীদিক্ষ্বাকুঃ কুলনন্দন।। ৭/৯২/৫

অর্থাৎ,  সত্যযুগে মনু নামে এক রাজা ছিলেন। তার পুত্র ছিলেন ইক্ষ্বাকু। (পঞ্চানন তর্করত্নের সংস্করণ)

রামায়ণের বালকাণ্ডের পঞ্চম সর্গে বলা হয়েছে মনু অযোধ্যা নগরীর নির্মাণ করেছিলেন-

কোশলো নাম মুদিতঃ স্ফীতো জনপদো মহান্।

নিবিষ্টঃ সরযূতীরে প্রভূতধনধান্যবান্।। ১/৫/৫

অযোধ্যা নাম নগরী তত্রাসীল্লোকবিশ্রুতা।

মনুনা মানবেন্দ্রেণ যা পুরী নির্ম্মিতা স্বয়ম্।।১/৫/৬

অর্থাৎ,  সরযূতীরে নিবিষ্ট, প্রমোদান্বিত, প্রচুরধনধান্যশালী, অতিবৃহৎ ও ক্রমশঃ বর্ধমান কোশলনামক দেশে সর্বলোক বিখ্যাতা অযোধ্যা নামে এক নগরী আছে। যে নগরীকে মানবেন্দ্র মনু স্বয়ং নির্মাণ করেছিলেন।

মহাভারতে

মহাভারতের শান্তি পর্বের ৩৩৬ তম অধ্যায়ে মনু প্রণীত ধর্মশাস্ত্রের বিস্তারিত প্রসঙ্গ আছেঃ

“ পূর্বে সুমেরু পর্বতে মরীচি, অত্রি, অঙ্গীরা , পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু ও মহাতেজা বসিষ্ঠ এই সাতজন মহর্ষি অবস্থান করিতেন। ঐ সপ্তর্ষিমণ্ডল চিত্রশিখণ্ডী নামে বিখ্যাত। স্বায়ম্ভুব মনু উহাদিগের অষ্টম।ঐ সমস্ত একাগ্রচিত্ত জিতেন্দ্রিয় সংযমী ত্রিকালজ্ঞ সত্যধর্মপরায়ণ মহর্ষি লোকসকলকে স্ব স্ব নিয়মে সংস্থাপিত করিয়া রাখিয়াছেন। উহারা একমতাবলম্বন পূর্বক লোকের হিতকর বিষয় সমুদায় পর্যালোচনা করিয়া বেদচতুষ্টয়সম্মত এক উৎকৃষ্ট ধর্মশাস্ত্র প্রস্তুত করেন। ঐ শাস্ত্রে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষের বিষয় কীর্তিত এবং ভূলোক ও দ্যুলোকের নানাপ্রকার নিয়ম প্রণালী নির্দিষ্ট আছে। ঐ সমস্ত মহর্ষি অন্যান্য তপোধনের সহিত দেবমানের সহস্র বৎসর ভগবান নারায়ণের আরাধনা করিয়াছিলেন। নারায়ণ তাহাঁদিগের প্রতি প্রসন্ন হইয়া দেবী সরস্বতীরে উহাদের শরীরে প্রবেশ করিবার নিমিত্ত আদেশ করাতে সরস্বতী লোকের হিতসাধনের নিমিত্ত উহাদের শরীরে প্রবেশ করেন। তপঃপরায়ণ ব্রাহ্মণগণ দেবী সরস্বতীর সাহায্য লাভ করিয়া সেই শব্দ, অর্থ ও হেতুগর্ভ শাস্ত্র প্রণয়নে কৃতকার্য হন। এই সর্বোৎকৃষ্ট নীতিশাস্ত্রই সর্বশাস্ত্রের অগ্রে প্রস্তুত হয়। মহর্ষিগণ এই ওঙ্কার স্বরসমলংকৃত শাস্ত্র প্রণয়ন করিয়া সর্ব প্রথমে পরম কারুণিক নারায়ণকে শ্রবণ করাইলেন। অচিন্ত্যদেহ ভগবান নারায়ণ ঐ শাস্ত্র শ্রবণে যাহার পর নাই প্রীত ও  প্রসন্ন হইয়া অদৃশ্যভাবে তপোধনগণকে সম্বোধন পূর্বক কহিলেন, মহর্ষিগণ এই যে তোমরা লক্ষ শ্লোকাত্মক উৎকৃষ্ট নীতিশাস্ত্র প্রস্তুত করিয়াছ, ইহা হইতেই সমগ্র লোকধর্ম প্রবর্তিত হইবে। ইহা ঋক, যজুঃ, সাম ও অথর্ববেদের অবিরোধী; সুতরাং ইহাই লোকের প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি বিষয়ে সম্পূর্ণ প্রমাণস্থল হইবে। ব্রহ্মার প্রসন্নতা, রুদ্রদেবের ক্রোধ, তোমাদিগের প্রজাসৃষ্টি , সূর্য, চন্দ্র, বায়ু , ভূমি, সলিল, অগ্নি, নক্ষত্র ও অন্যান্য ভূতগণের স্ব স্ব অধিকারে অবস্থান এবং ব্রহ্মবাদীগণের আত্মাশ্রয় বিষয়ে যেমন কাহারই সংশয় উপস্থিত হয় না , সেইরূপ আমি কহিতেছি তোমাদিগের এই শাস্ত্রে কদাচ কাহারই সন্দেহ উপস্থিত হইবে না। স্বায়ম্ভুব মনু এই শাস্ত্র অনুসারে ধর্ম কীর্তন করিবেন। বৃহস্পতি ও শুক্র উৎপন্ন হইয়া তোমাদিগের এই নীতিশাস্ত্র অনুসারে সকলকে উপদেশ দিবেন। ইহারা সর্বত্র এই শাস্ত্র প্রচারে প্রবৃত্ত হইলে রাজা উপরিচর বৃহস্পতি হইতে ইহা লাভ করিবেন। সেই রাজা সদ্ভাবসম্পন্ন ও আমার প্রতি অতিমাত্র ভক্তিপরায়ণ হইবেন। তিনি তোমাদিগের এই শাস্ত্রানুসারে সমস্ত কার্যানুষ্ঠান করিবেন। তোমাদের প্রণীত এই শাস্ত্র সর্বশাস্ত্র অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। ইহাতে ধর্ম, অর্থ ও গুহ্য বিষয় সমুদায় বিশেষরূপে কীর্তিত হইয়াছে । তোমরা এই নীতিশাস্ত্র প্রচার করিয়া পুত্র লাভ করিবে এবং রাজা উপরিচরও ইহার প্রভাবে সাতিশয় সমৃদ্ধিশালী হইবেন। উপরিচরের লোকান্তর প্রাপ্তি হইলে এই সনাতন নীতিশাস্ত্র অন্তর্হিত হইবে । পুরুষোত্তম নারায়ণ এই বলিয়া সেই তপোধনগণকে বিদায় করিয়া তৎক্ষণাৎ তিরোহিত হইলেন । অনন্তর সত্যযুগে বৃহস্পতি জন্মগ্রহণ করিলে সেই মহর্ষিগণ তাহার হস্তে সেই বেদবেদাঙ্গ মূলক নীতিশাস্ত্রের প্রচারভার সমর্পণ করিয়া তপোনুষ্ঠানার্থ অভিলষিত স্থানে প্রস্থান করিলেন।“ ( কালিপ্রসন্ন সিংহের অনুবাদ)

 মহাভারতের নানা স্থানে মনু সম্বন্ধে যা বলা আছে তা নিচে উল্লেখ করা হচ্ছেঃ

  1. “স্বায়ম্ভুব মনুও অহিংসা, সত্যবাক্য, সম্যক রূপে বিভাগ , দয়া, দম, মৃদুতা , লজ্জা, অচঞ্চলতা এবং স্বীয় পত্নীতে পুত্রোৎপাদন এইসকলকে প্রধান ধর্ম বলিয়া কীর্তন করিয়া গিয়াছেন।“ ( শান্তি/ ২১)
  2. “মহর্ষি প্রাচেতস মনু রাজধর্ম  কীর্তনকালে কহিয়া গিয়াছেন মৌনাবলম্বী আচার্য, অধ্যয়ণ পরাঙ্মুখ ঋত্বিক, অরক্ষক রাজা, অপ্রিয় বাদিনী ভার্যা , গ্রাম পর্যটনোৎসুক গোপাল ও বনগমনাভিলাষী নাপিতকে অর্ণবমধ্যে ভগ্ন নৌকার ন্যায় অবিলম্বে পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।“ (শান্তি/ ৫৭)
  3. ” ভগবান মনু কহিয়াছেন, রাজা মনুষ্যদিগের বিধাতাস্বরূপ ও দশ শ্রোত্রিয়ের সমান।”(আদি/ ৪১)
  4. ”সর্বলোকপিতামহ ব্রহ্মার পুত্র মনু।” (আদি/ ৬৬)
  5. “ভগবান মনু কহিয়াছেন, ঔরস, লব্ধ, ক্রীত, পালিত এবং ক্ষেত্রজ এই পঞ্চবিধ পুত্র মনুষ্যের ইহকালে ধর্ম, কীর্তি ও মনঃপ্রীতি বর্ধন করে এবং পরকালে নরক হইতে পরিত্রাণ করে।” (আদি/৭৪)
  6. ” বিবস্বানের দুই পুত্র;- বৈবস্বত মনু ও যম। ধীমান মনু হইতে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় প্রভৃতি মানবজাতি উৎপন্ন হয় , এই নিমিত্ত তাহারা মানব বলিয়া প্রখ্যাত হইয়াছেন। (আদি/৭৫)
  7. “আর স্বায়ম্ভূব মনু কহিয়াছেন,  ঔরস পুত্র অপেক্ষা প্রণীত পুত্র শ্রেষ্ঠ ও ধর্ম ফলপ্রদ। ”(আদিপর্ব/ ১২০)
  8. “যিনি বল দ্বারা শত্রুকে স্তম্ভিত করিয়া পরাজিত ও শরণাগত শত্রুকে প্রাণদান করেন , তিনি সর্ব কল্যাণেরই ভাজন হইতে পারেন। আমি যে বিদ্যা প্রদান করিব, ইহার নাম চাক্ষুষী বিদ্যা। ভগবান মনু সোমকে ইহা সমর্পণ করেন। সোম হইতে বিশ্বাবসু এবং বিশ্বাবসু হইতে এই বিদ্যা আমিই প্রাপ্ত হইয়াছি।”(আদি/ ১৭০)

গীতায়

 মহাভারতের অংশ গীতাতেও মনুর উল্লেখ মেলে।

গীতায় কৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন-
“ইমং বিবস্বতে যোগং প্রোক্তবান্ অহমব্যয়ম্।বিবস্বান্ মনবে প্রাহ মনুরিক্ষাকবেহব্রবীৎ।।” (৪.১)
অর্থাৎ আমি ঐ যোগ পুরাকালে বিবস্বানকে বলেছিলেন এবং বিবস্বান নিজপুত্র বৈবস্বত মনুকে বলেছিলাম । পরে বৈবস্বত মনু ঐ যোগ ইক্ষাকুকে বলেছিল।

পুরাণে

পুরাণে বর্ণনা করা হয়েছে পৃথিবী সাতটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। এই  সাতটি দ্বীপে সাতটি জাতির বসতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছে।  এই সাতটি জাতিই ছিল মূল জাতি। প্রত্যেক মূল জাতির আদি পিতা হলেন  মনু। তাই  মোট সাতজন মনুর কথা বলা হয়ে থাকে। তারা হল- স্বায়ম্ভুব, স্বারোচিষ, ঔত্তমি, তামস, রৈবত, চাক্ষুষ ও বৈবস্বত। এঁদের মধ্যে বৈবস্বত মনুকে আর্যজাতির আদি পিতারূপে কল্পনা করা হয়েছে। মনুসংহিতায় এই মনুর কথাই বলা হয়েছে প্রথম অধ্যায়ের ৬১-৬৩ শ্লোকে।

অন্যান্য শাস্ত্র, স্মৃতি, সাহিত্য প্রভৃতিতে

এছাড়াও,

  1. ৮০০ থেকে ৮২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আবির্ভূত টীকাকার বিশ্বরূপ তাঁর যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতার টীকায় মনুসংহিতা থেকে দুশটিরও বেশি শ্লোকের পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক উদ্ধৃতি দিয়েছেন বলে P.V. Kane দেখিয়েছেন।
  2. সপ্তম শতকে আবির্ভূত বিখ্যাত অদ্বৈতবাদী বা মায়াবাদের জনক শঙ্করাচার্য তাঁর বেদান্তসূত্রভাষ্যে প্রায়ই মনুসংহিতা থেকে শ্লোক উদ্ধৃতি দিয়েছেন (উল্লেখ্য, বর্তমানকালের প্রচলিত হিন্দু দর্শন শঙ্কারাচার্যের এই মায়াবাদের উপরই আশ্রিত বলা যায়)।
  3. ২০০ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত শূদ্রকের মৃচ্ছকটিক নাটকের নবম অঙ্কে মনুর একটি অনুশাসনের উল্লেখ রয়েছে এভাবে-
    “অয়ং হি পাতকী বিপ্রো ন বধ্যো মনুরব্রবীৎ। রাষ্ট্রাদস্মাত্তু নির্বাস্যো বিভবৈরক্ষতৈঃ সহ।।” অর্থাৎ, মনুর মতানুসারে পাপাচারী ব্রাহ্মণ বধ্য হবেন না, বরং এঁকে এঁর সমস্ত ধন-সম্পদের সাথে রাজ্য থেকে বহিষ্কৃত করাই বিধি।
  4. মহাকবি কালিদাস তার রঘুবংশের প্রথম সর্গে দিলিপের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন- এই রাজার শাসনপ্রভাবে মনুর সময় থেকে প্রচলিত চিরাচরিত আচারপদ্ধতি থেকে তার প্রজারা বিচলিত হননি।
    “রেখামাত্রমপি ক্ষুণ্ণাদা মনো বর্ত্মনঃ পরম।
    ন ব্যতিয়ুঃ প্রজাস্তস্য নিয়ন্তু র্নেমিবৃত্তয়ঃ” (রঘুবংশ ১/১৭)
    আবার চতুর্দশ সর্গে (৬৭ শ্লোক) কালিদাস বলছেন – রাজা যাতে বর্ণ ও আশ্রম সুরক্ষিত করতে
    পারেন, তার জন্য মনু কিছু ধর্ম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ।
    “নৃপস্য বর্ণাশ্রমপালনং যৎস এব ধর্মো মনুনা প্রণীতঃ।“
  5. আবার কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রেও কয়েকবার মনুর উল্লেখ পাওয়া যায়।
  6. আরেক স্মৃতিশাস্ত্রকার বৃহষ্পতির আবির্ভাবকাল ৫০০ খ্রিস্টাব্দের আগে। তিনিও প্রয়োজন অনুসারে বহুস্থানে মনুবচন উদ্ধৃত করেছেন।
  7.  আবার অপরার্ক, কুল্লুক ভট্ট প্রভৃতি ভাষ্যকারগণও নিজ নিজ মন্তব্যের সমর্থনে বৃহষ্পতির ঐ উদ্ধৃতিগুলো উল্লেখ করেছেন।
    যেমন, কুল্লুক ভট্ট মনুসংহিতার প্রথম শ্লোকের টীকায় মনুবচনের প্রশংসাসূচক বৃহষ্পতির দুটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন এভাবে-“বেদার্থোপনিবন্ধৃত্বাৎ প্রাধান্যং তু মনুস্মৃতৌ।মন্বর্থবিপরীতা যা স্মৃতিঃ সা ন প্রশস্যতে।।”বেদের অর্থ ঠিক ঠিক ভাবে উপস্থাপিত করার জন্যই মনুস্মৃতির প্রাধান্য। যে স্মৃতি মনুবচনের বিরুদ্ধ তা নিন্দনীয়।
  8. আরো বলা হয়েছে – “তাবচ্ছাস্ত্রাণি শোভন্তে তর্কব্যাকরণানি চ।ধর্মার্থমোক্ষোপদেষ্টা মনুর্যাবন্ন দৃশ্যতে।। অর্থাৎ, ”তর্ক, ব্যাকরণ প্রভৃতি শাস্ত্র ততক্ষণ পর্যন্তই শোভা পায়, যতক্ষণ মনুস্মৃতি আমাদের দৃষ্টির অগোচরে থাকে। মনু হলেন ধর্ম, অর্থ ও মোক্ষের উপদেষ্টা।“

শিলালেখে

এছাড়া বিভিন্ন শিলালেখ থেকে মনুর সম্বন্ধে জানা যায়-

  1. ৫ম ও ৬ষ্ঠ শতকে প্রচারিত কিছু অভিলেখে স্মৃতি শাস্ত্র রচয়িতা মনুর সশ্রদ্ধ উল্লেখ এবং তার দ্বারা অভিহিত বিধানের উল্লেখ আছে।
  2. ৫৩৫ ও ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দে বলভী থেকে প্রচারিত রাজা শ্রীধর সেনের অভিলেখে রাজাকে মনু ও অন্যান্যদের প্রণীত বিধি বিধান অনুসরণকারী বলে বর্ণনা করা হয়েছে- ‘মন্বাদি-প্রণীতবিধিবিধান-ধর্মা’
  3. ৮ম শতক ও তার পরবর্তী বহু তাম্রলিপিতে ‘উক্তঞ্চ মানবে ধর্মে’, ‘তত্র্য মনুগীতা ধর্মা শ্লোকা ভবন্তি’ প্রভৃতি সূচনা দিয়ে শ্লোক উদ্ধৃত করা হয়েছে।

সহায়ক গ্রন্থঃ

  • ঋগ্বেদ- রমেশচন্দ্র দত্ত
  • রামায়ণ
  • মহাভারত- কালিপ্রসন্ন সিংহ
  • গীতা
  • মনুসংহিতা- মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

অজিত কেশকম্বলী II

"মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।"

One thought on “মনু কে?

  • Ayan Roy

    খুব ভালো লেখা ।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *