হিন্দুধর্মধর্মসংশয়বাদ

মনুর চোখে শূদ্ররা মানুষ নয়-হিন্দু ধর্মে শূদ্রের অবস্থান

ভূমিকা

মারাঠায় পেশোয়াদের শাসনকালে বিকাল ৩ টে থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত  অস্পৃশ্যদের পুনা শহরের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হত না, পাছে কোনো অস্পৃশ্যের অপবিত্র ছায়া  কোনো ব্রাহ্মণের ওপর গিয়ে পড়ে এবং তারাও অপবিত্র হয়ে যায়! প্রাচীর ঘেরা শহরের মধ্যে অচ্ছুৎদের থাকার অধিকার ছিল না। কুকুর এবং গবাদি পশুরা শহরের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পারতো কিন্তু একজন অচ্ছুতের সেই শহরের ভেতরে ঢোকার অধিকার ছিল না। কোনো অচ্ছুৎ মাটিতে থুতু পর্যন্ত ফেলতে পারতো না, পাছে কোনো হিন্দুর পায়ে তার স্পর্শ হয়! তাই থুতু ফেলার জন্য তার গলায় একটা মটকা ঝুলিয়ে দেয়া হত। আর অচ্ছুৎদের কোমরে একটি করে ঝাড়ু বেধে রাখতে হত, যাতে তারা তাদের অপবিত্র পায়ের ছাপ মাটি থেকে মেটাতে মেটাতে চলে। কোনো ব্রাহ্মণ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের মাটিতে তাকে শুয়ে পড়তে হত, যাতে তার ছায়া সেই ব্রাহ্মণের ওপর না পড়ে।

মারাঠায় পেশোয়াদের শাসনকালে বিকাল ৩ টে থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত  অস্পৃশ্যদের পুনা শহরের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হত না, পাছে কোনো অস্পৃশ্যের অপবিত্র ছায়া  কোনো ব্রাহ্মণের ওপর গিয়ে পড়ে এবং তারাও অপবিত্র হয়ে যায়! প্রাচীর ঘেরা শহরের মধ্যে অচ্ছুৎদের থাকার অধিকার ছিল না। কুকুর এবং গবাদি পশুরা শহরের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পারতো কিন্তু একজন অচ্ছুতের সেই শহরের ভেতরে ঢোকার অধিকার ছিল না। কোনো অচ্ছুৎ মাটিতে থুতু পর্যন্ত ফেলতে পারতো না, পাছে কোনো হিন্দুর পায়ে তার স্পর্শ হয়! তাই থুতু ফেলার জন্য তার গলায় একটা মটকা ঝুলিয়ে দেয়া হত। আর অচ্ছুৎদের কোমরে একটি করে ঝাড়ু বেধে রাখতে হত, যাতে তারা তাদের অপবিত্র পায়ের ছাপ মাটি থেকে মেটাতে মেটাতে চলে। কোনো ব্রাহ্মণ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের মাটিতে তাকে শুয়ে পড়তে হত, যাতে তার ছায়া সেই ব্রাহ্মণের ওপর না পড়ে।

মহারাষ্ট্রের অচ্ছুৎদের হাতে অথবা গলায় কালো দড়ি বেধে রাখতে হত, যাতে তাদের শনাক্ত করা যায়।

গুজরাটের অচ্ছুৎদের মাথায় শিং পড়তে হত শনাক্তকরণ চিহ্ন হিসাবে।

পাঞ্জাবে ঝাড়ুদারদের হাতে অথবা বগলে করে একটা ঝাড়ু নিয়ে চলতে হত, যাতে তারা যে ঝাড়ুদার তা যেন বোঝা যায়।

মুম্বাইতে অচ্ছুৎদের পরিষ্কার এবং ছেঁড়া নয় এমন কাপড় পড়তে দেয়া হত না। এমনকি দোকানদারেরাও অচ্ছুৎদের কাছে কাপড় বিক্রি করার আগে দেখে নিত, যাতে তা ছেঁড়া হয়।

মালাবারে অচ্ছুতদের একতলার উচু ঘর বানাতে দেয়া হত না এবং তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অধিকার ছিল না। তারা ছাতা ব্যবহার করতে পারতো না, জুতো পরতে পারতো না, সোনার গয়না ব্যবহার করতে পারতো না, গোরুর দুধ দোয়াতে পারতো না, এমনকি শহরের সাধারণ ভাষায় কথাও বলতে পারতো না।

দক্ষিণভারতের অচ্ছুতেরা তাদের কোমরের উপরের অংশ আবৃত রাখতে পারতো না, এমনকি মহিলাদের ক্ষেত্রেও তা উন্মুক্ত রাখতে হত।

বম্বে প্রেসিডেন্সিতে স্বর্ণকারের মত জাতিও ভাজ করে ধুতি পড়তে পারতো না এবং অভিবাদন করার জন্য নমস্কার শব্দ উচ্চারণ করতে পারতো না।

মারাঠায় পেশোয়ার শাসনকালে ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য কেউ বেদমন্ত্র উচ্চারণ করতে পারতো না, কিন্তু কারো সেই দুঃসাহস হলে তার জিভ কেটে ফেলা হত । অনেক স্বর্ণকার বেদ মন্ত্র উচ্চারণের মত দুঃসাহস করেছিল। এর ফলে পেশোয়ার আদেশে তাদের জিভ কেটে ফেলা হয়েছিল।

সারা ভারতেই ব্রাহ্মণদের কোনো গুরু দণ্ড দেওয়া হত না, এমনকি তারা খুনও করলেও।

পেশোয়ার সময়ে জাতি অনুযায়ী সকলকে শাস্তি দেওয়া হত এবং অধিকাংশক্ষেত্রেই অচ্ছুৎদের কঠোর শাস্তি ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত।

বাংলাতে জাতি অনুযায়ী জমির কর আদায় করা হত এবং অচ্ছুতকে তা সবচেয়ে অধিক প্রদান করতে হত।

( Manu and The Shudra -B.R. Ambedkar)

শূদ্রের 1

শুধু অচ্ছুৎ  নয় শূদ্রদের প্রতিও এমন অবিচার করা হত, সাম্প্রতিককালেও মাঝে মাঝেই যা আমাদের চোখে পড়ে। এই অবিচার, নির্যাতনের প্রধান একজন বিধান দাতা হলেন মনু নামের ব্যক্তি, যার প্রভাব হিন্দু শাস্ত্রে ও সমাজে ব্যাপক। প্রধানত মনুর বিধান অনুযায়ীই এইসব নিপীড়ন চালানো হয়।

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী জাতিভেদের সূত্রপাত হয় সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে। মনুসংহিতা মতে ,প্রজাপতি ব্রহ্মা তার মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, বাহু থেকে ক্ষত্রিয়, উরু থেকে বৈশ্য এবং পা থেকে শূদ্রের সৃষ্টি করেন এবং তাদের জন্য পৃথক পৃথক কাজের ব্যবস্থা করে দেন (১/৮৭)-

  • ব্রহ্মা ব্রাহ্মণদের জন্য স্থির করেন অধ্যাপন, স্বয়ং অধ্যয়ন, যজন, যাজন ইত্যাদি কর্ম। (১/৮৮)
  • ক্ষত্রিয়দের জন্য প্রজা রক্ষণ, অধ্যয়ণ ইত্যাদি কাজ স্থির করেন। (১/৮৯)
  • বৈশ্যের জন্য স্থির করেন পশুপালন,বাণিজ্য, কৃষিকর্ম ইত্যাদি কাজ। (১/৯০)
  • আর শূদ্রদের জন্য তিন বর্ণের সেবা করার বিধান দেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। (১/৯১)

এভাবেই সৃষ্টিকর্তা প্রজাপতি একই প্রজাতির মানুষকে তার ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গ থেকে সৃষ্টি করে তাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাজ স্থির করে দেন, যা চাইলেও কারো পক্ষে পরিবর্তন সম্ভব নয়।

প্রজাপতি ব্রহ্মা যা বলেছেনঃ

“একমেব তু শূদ্রস্য প্রভুঃ কর্ম সমাদিশৎ।এতেষামেব বর্ণানাং শুশ্রূষামনসূয়য়া।। (মনুসংহিতা-১/৯১)

অর্থাৎ : প্রভু ব্রহ্মা শূদ্রের জন্য একটি কাজই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন,– তা হলো কোনও অসূয়া অর্থাৎ নিন্দা না করে (অর্থাৎ অকপটভাবে) এই তিন বর্ণের অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের শুশ্রূষা করা।”

এছাড়াও ,

  • “ব্রহ্মা বিশেষরূপে বলেছেন যে শূদ্র যদি দ্বিজকর্মের অনুষ্ঠান করে এবং দ্বিজ যদি শূদ্রকর্মের অনুষ্ঠান করে তাহলে তারা পরস্পর সমানও হয় না, আবার অসমানও হয় না। কারণ শূদ্রের দ্বিজকর্ম (উচ্চ তিন বর্ণের আচার -অনুষ্ঠান) অনধিকার চর্চা। সুতরাং শূদ্রের পক্ষে দ্বিজের সমান হওয়া সম্ভব নয়। আবার দ্বিজের ( উচ্চ তিন বর্ণের) পক্ষে  শূদ্রের কর্ম করা নিষিদ্ধ। সুতরাং কেউই কারো সমান নয়। অথচ দুজনেরই অনুচিত আচরণের মধ্যে তুল্যতা আছে।” ১০/৭৩

রাজার দায়িত্ব স্থির হল সকল বর্ণকে তাদের নিজ নিজ কর্মে নিয়োজিত করা এবং শূদ্রকে দ্বিজাতিদের সেবায়  নিযুক্ত করা।আর রাজার আদেশ মত কর্ম না করলে তাদের দণ্ড প্রদান করা। (৮/৪১০-৪১১) আরও বলা হল- শূদ্র নিজ কর্ম থেকে চ্যুত হলে এবং অশাস্ত্রীয় উপায়ে ধন উপার্জন করলে জগতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। (৮/৪১৮)

শূদ্রের এই দাসত্বের সবচাইতে বেশি সুযোগ গ্রহণ করে ব্রাহ্মণেরা।  ব্রাহ্মণ মনু তার ঘৃণ্য শাস্ত্রটিতে বলছেন-

স্বর্গ লাভ করতে হলে শূদ্রকে ব্রাহ্মণের আরাধনা করতে হবে। শূদ্র ‘ব্রাহ্মণের আশ্রিত’ অর্থাৎ ‘ব্রাহ্মণসেবক’ এই বিশেষণের মাধ্যমেই শূদ্র কৃতার্থতা লাভ করে।একমাত্র ব্রাহ্মণের সেবা করেই  শূদ্র ইহলোক এবং পরলোকে কৃতার্থ হয়। তাই অন্যান্য কর্ম অপেক্ষা ব্রাহ্মণের পরিচর্যা করাই শূদ্রের প্রকৃষ্ট কর্ম। এছাড়া শূদ্র যেসকল কাজ করে, তা সবই নিস্ফল হয়। (১০/১২২-১২৩)

মনু আরও বলছেন-

 “শূদ্র ভরণপোষণের মাধ্যমে প্রতিপালিত হোক বা না হোক ব্রাহ্মণ শূদ্রকে দিয়েই বিনা দ্বিধায় দাস্যকর্ম করাবেন। কারণ বিধাতা দাস্য কর্ম নির্বাহের জন্যই শূদ্রের সৃষ্টি করেছেন।”  -মনুসংহিতা ৮/৪১২-৪১৩

ধূর্ত মনু শূদ্রকে দাস হিসাবে  শনাক্ত করার জন্য বলেছেন-

  • “ব্রাহ্মণের নাম হবে মঙ্গলবাচক, ক্ষত্রিয়ের নাম হবে বলবাচক, বৈশ্যের নাম হবে ধনবাচক এবং শুদ্রের নাম হবে নিন্দাবাচক।” ২/৩১
  • “ব্রাহ্মণের নামের সঙ্গে শর্মা,ক্ষত্রিয়ের নামের সাথে বর্মা, বৈশ্যের নামের সাথে ভূতি বা অন্য পুষ্টিবোধক উপাধী যুক্ত হবে। শুদ্রের নাম হবে নিন্দাবাচক।যেমনঃশুভশর্মা,বলবর্মা,বসুভূতি,দীনদাস ইত্যাদি।” ২/৩২

তাতেও যদি ভৃত্য-শূদ্রদের শনাক্তকরণ না করা যায়, তাই  বলা হয়েছে,

  • “ব্রাহ্মণের শুশ্রূষা পরায়ণ শূদ্র প্রতি মাসে কেশ মুণ্ডন করবে… এবং ব্রাহ্মণের উচ্ছিষ্ট ভোজন করবে।” ৫/১৪০

ব্রাহ্মণ যাতে কখনোই শূদ্রের সেবা না করে তা নিশ্চিত করা হয়েছে নিচের শ্লোকগুলির মাধ্যমে-

  •  শূদ্র সেবার মাধ্যমে যে ব্রাহ্মণ জীবিকা নির্বাহ করে  সেই ব্রাহ্মণকে হব্যকব্যে নিমন্ত্রণ করা উচিত নয়। ৩/১৬৪
  • শূদ্রের কাছ থেকে যে ব্যাকরণ অধ্যয়ণ করেছে  এবং শূদ্রকে অধ্যয়ণ করান যে ব্রাহ্মণ, এই সকল ব্রাহ্মণকে কখনোই দৈব ও পিতৃ কর্মে  নিযুক্ত করা উচিত নয়। ১/১৫৬
  • শূদ্রযাজী ব্রাহ্মণ যতগুলো ব্রাহ্মণভোজনের পঙক্তিতে উপবেশন করে সেই সেই পংক্তিগত শ্রাদ্ধীয় ব্রাহ্মণভোজনের ফল থেকে দাতা বঞ্চিত হন।৩/১৭৭-১৭৮
  • যে ব্যক্তি শূদ্রের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে অগ্নিহোত্রের উপাসনা করে তাকে শূদ্রযাজী বলা হয় এবং ব্রহ্মবাদীদের কাছে সে অত্যন্ত নিন্দার পাত্র হয়ে ওঠে। শূদ্রের কাছ থেকে ধন নিয়ে যারা অগ্নির উপাসনা করে সেই অজ্ঞান ব্যক্তিদের মাথায় পা দিয়ে দাতা শূদ্র নরক থেকে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু যজমানের কোনো ফলই হয় না। ১১/৪২-৪৩
  • এছাড়া “…যে দ্বিজগণ নিষিদ্ধ শূদ্র সেবাকারী তাদের প্রাজাপত্যের প্রায়শ্চিত্ত” করার বিধান দেওয়া হয়েছে। ১১/১৯৩

ওরা শিক্ষাবঞ্চিত

ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্যকে  দ্বিজাতি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় যেহেতু শাস্ত্রমতে তারা দুই বার জন্মায়। প্রথম জন্ম হয় মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হলে, আর দ্বিতীয় জন্ম হয় যখন তাদের উপনয়ন সংস্কার হয়। এই উপনয়ন সংস্কারের মাধ্যমেই  উচ্চ তিন বর্ণ অর্থাৎ দ্বিজাতি  তাদের শিক্ষাজীবনে প্রবেশ করতো। যেহেতু শূদ্রের উপনয়নের অধিকার ছিল না, তাই তারা দ্বিজত্বের অধিকারী ছিল না।তাদের শিক্ষার অধিকার ছিল না, তারা ছিল ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্যের আজীবন দাস।

 দাস কয় প্রকার? প্রশ্নটি শুনলেই আমাদের অনেকের হয়তো অস্বস্তি হতে শুরু করে। বর্তমান সময়কার অধিকাংশ মানুষই কোনো মানুষকে দাস হিসাবে কল্পনাও করতে পারে না। কিন্তু মনুসংহিতায় খুব সুন্দরভাবে দাসেদের শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। সেই শ্রেণীবিভাগ অনুসারে দাস কয়প্রকার  জানা যাক- 

  1. ধ্বজাহৃত অর্থাৎ যাকে যুদ্ধে জয় করা হয়েছে,
  2. ভক্ত দাস অর্থাৎ যে ভাতের লোভে দাসত্ব স্বীকার করেছে,
  3. গৃহজ অর্থাৎ যে দাসীর পুত্র ,
  4. ক্রীত অর্থাৎ যাকে কেনা হয়েছে ,
  5. দত্রিম অর্থাৎ যে দাসকে অন্য কেউ দান করেছে ,
  6. পৈতৃক বা যে বংশানুক্রমে (পিতৃপিতামহক্রমে) দাসত্ব করছে ,
  7. দণ্ডদাস, যাকে শাস্তি স্বরূপ দাসে পরিণত করা হয়েছে। ৮/৪১৫
শূদ্রের 3

মনু দাস-শূদ্রদের সকল প্রকার শিক্ষা ও ধর্মাচরের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বলেন-

  • শূদ্রের উপনয়ন প্রভৃতি দ্বিজাতি সংস্কার নেই, অগ্নিহোত্র প্রভৃতি যজ্ঞের অধিকার নেই ।(১০/৪ ; ১০/১২৬-১২৭)
  • শূদ্রের শিক্ষকতা করাকে (যাজন ও অধ্যাপনকে) অত্যন্ত পাপজনক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে মনুস্মৃতিতে এবং সেই পাপ জপ ও হোমের মাধ্যমে দূর করার উপায় ও বলে দেওয়া হয়েছে। (১০/১১১)
  • ব্রাহ্মণকে বলা হয়েছে -‘শূদ্রের কাছে কখনো বেদ পড়বেন না।’ ৪/৯৯
  • আরও বলা হয়েছে,”লৌকিক কোনো ব্যাপারে শূদ্রকে উপদেশ দেবেন না ।ভৃত্য ভিন্ন অন্য শূদ্রকে উচ্ছিষ্ট দেবেন না। যে হব্যের কিয়দংশ হোম করা হয়েছে সেই হবিষ্কৃৃৃত অংশ শূদ্রকে দেবেন না। শূদ্রকে কখনোই (ব্রাহ্মণের) ধর্মোপদেশ দেওয়া উচিত নয়।……” ৪/৮০

শূদ্রকে উপদেশ দান করলে কি হবে? এর উত্তরে বলা হয়-

  • যে ব্রাহ্মণ শূদ্রকে স্বয়ং উপদেশ দান করেন অথবা কোনো ব্রতানুষ্ঠানের আদেশ করেন তিনি সেই শূদ্রের সঙ্গে অসংবৃত নরকে গমন করেন। ৪/৮১

বিচারের কাঠগোড়ায় শূদ্র

সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রেও শূদ্রের প্রতি  চরম অবিচার করা হয়।

সাক্ষী হিসাবে আগত ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,শূদ্র এই চার বর্ণের কাকে কিভাবে সম্বোধন করতে হবে,  মনু তা নির্দেশ করেছেন এইভাবে-

  • ব্রাহ্মণকে বলতে হবে, ‘তুমি বলো’ , ক্ষত্রিয়কে বলতে হবে, ‘সত্য করে বল’, বৈশ্যকে বলতে হবে, ‘গো,ধান্য,বীজ ও সুবর্ণের শপথ করে বলো’ আর শূদ্রকে বলতে হবে, ‘‘তুমি মিথ্যা বললে সমুদয় পাপে বধ্য হবে’ ৮/৮৮

বিচারকার্যে কখনো  সাক্ষীর প্রয়োজনে নানাবর্ণের লোকেদের কিভাবে শপথ করাতে হবে মনু তার বিধান  এভাবে দিয়েছেন-

  • ব্রাহ্মণকে বলা হবে, ‘তুমি সত্য বলো’, ক্ষত্রিয়কে বলাতে হবে, ‘হস্তি, অশ্ব, আয়ুধ যেন আমার নিস্ফল হয়’, বৈশ্যকে বলাতে হবে , ‘গবাদি, পশু,বীজ, কাঞ্চন যেন আমার বিফল হয়’ আর শূদ্রকে বলাতে হবে, ‘সমুদয় পাপ যেন আমার হয়’ অথবা শূদ্রকে ‘অগ্নিপরীক্ষা,জলপরীক্ষা ইত্যাদি কঠিন পরীক্ষা করাতে হবে। নতুবা স্ত্রী পুত্রের মাথা স্পর্শ করিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। ৮/১১৩-১১৪

এছাড়া নিচের শ্লোকগুলিতে শূদ্রের অন্যান্য দণ্ডের কথা উল্লেখিত আছে-

  • বৈশ্য ও ক্ষত্রিয় যদি অরক্ষিতা ব্রাহ্মণীতে গমন করে তাহলে বৈশ্যের পাঁচ পণ ও ক্ষত্রিয়ের সহস্র পণ দণ্ড হবে। আবার বৈশ্য ও ক্ষত্রিয় যদি গুণবতী ও রক্ষণযুক্তা ব্রাহ্মণীতে গমন করে তাহলে তারা শূদ্রের মত দণ্ডনীয় হবে অথবা দর্ভ বা শর দিয়ে তাদের আচ্ছাদিত করে দগ্ধ করতে হবে।…৮/৩৭৬-৩৭৮
  • ক্ষত্রিয় যদি ব্রাহ্মণকে গালাগাল দেয় তাহলে ক্ষত্রিয়ের একশ পণ দণ্ড হবে।বৈশ্যের হবে দেড়শো বা দুশো পণ এবং শূদ্রের গুরুলঘুভাবে শারীরিক দণ্ড হবে।কিন্তু ক্ষত্রিয়কে ব্রাহ্মণ যদি অশ্লীল বাক্য প্রয়োগ করে তাহলে ব্রাহ্মণের পঞ্চাশ পণ দণ্ড,বৈশ্যকে গালি দিলে হবে পঁচিশ পণ এবং শূদ্রকে গালী দিলে বারো পণ দণ্ড হবে। ৮/২৬৭-২৬৮

অর্থনৈতিক শোষণ

কোনো ব্রাহ্মণ যদি ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য, শূদ্র- এই চার বর্ণের স্ত্রীকে বিবাহ করে, তবে তাদের পুত্রদের মধ্যে সম্পদের বন্টন কিরূপ হবে মনুসংহিতায় তা বলা আছে এইভাবে-

  • একজন বিভাগ ধর্মবিদ ব্যক্তি সমস্ত পৈতৃক সম্পত্তিকে দশ ভাগে ভাগ করবেন, তার মধ্যে ব্রাহ্মণীর পুত্রকে চারভাগ, ক্ষত্রিয়ার পুত্র তিনভাগ, বৈশ্যার পুত্র দুইভাগ এবং শূদ্রার পুত্র এক ভাগ পাবে। ৯/১৫২-১৫৫
  • তবে ব্রাহ্মণী,ক্ষত্রিয়া,বৈশ্যা কারো গর্ভে সন্তান উৎপন্ন হোক বা না হোক শূদ্রার পুত্র যে কখনো একভাগের বেশি পাবে না তা নিশ্চিত করে দেয়া হয়েছে।এছাড়াও বলা হয়েছে, ‘ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যের অনূঢ়া শূদ্র গর্ভজ পুত্র ধনভাগী হয় না। তাকে জীবদ্দশায় পিতা যা দেবেন তাই তার ধন হবে।’ ৯/১৫২-১৫৫
  • শূদ্রার গর্ভে যদি একশ সন্তানও উৎপন্ন হয় তখনো সকলেই দশভাগের একভাগ সম্পত্তিই পাবে, এর অধিক পাবে না। ৯/১৫৬-১৫৭

শূদ্রকে বাকিদের মত সম্পদ সঞ্চয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বলা হয়েছে-

  • “শূদ্র অর্থ উপার্জনে সক্ষম হলেও পোষ্যবর্গের প্রতিপালনের জন্য এবং মহাযজ্ঞ সাধনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করবে। কখনো তার অধিক অর্থ সঞ্চয় করবে না। কারণ শাস্ত্রজ্ঞানহীন শূদ্র অধিক অর্থ সঞ্চয় করলে ধনমদে মত্ত হয়ে ব্রাহ্মণকে পীড়ন করতে পারে।” ১০/১২৯
  • “ভার্যা, পুত্র ও দাস এদের তিনজনকেই অধন বলা হয়েছে। অর্থাৎ শাস্ত্রমতে এদের তিন জনের কেউই ধন পাবার যোগ্য নয়। কিন্তু এরা যদি কোনো ধন উপার্জন করে তাহলে এরা যার ভার্যা, যার পুত্র, যার দাস তারই ধন হবে। অর্থাৎ, নিজেদের অর্জিত ধনে এদের কোনো স্বাতন্ত্র‍্য থাকবে না।… ” ৮/৪১৬

শূদ্রকে দিয়ে নিরন্তর দাসত্ব করিয়ে, তাকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেও ব্রাহ্মণের লালসা যখন মেটে না, তখন ব্রাহ্মণ সমাজের প্রতিনিধি মনু বলেন-

  • ব্রাহ্মণ শূদ্রের কাছ থেকে ধন আত্মসাৎ করতে পারে যেহেতু দাস শূদ্রের নিজস্ব বলতে কিছুই নেই। তার সব ধনই ভ্রর্তৃহার্য অর্থাৎ বিপদগ্রস্ত শূদ্র দাসের কাছ থেকে ব্রাহ্মণ বলাৎকারে (জোর করে) ইচ্ছামতো ধন নিতে পারে। এক্ষেত্রে রাজা ব্রাহ্মণকে কোনো দণ্ড দেবেন না। ৮/৪১৭

সামাজিক বৈষম্য

ব্রাহ্মণ নিজেকে পৃথিবীর দেবতা হিসাবে ঘোষণা করেছিল। যেহেতু সে দেবতা সুতরাং সে যতই অনাচার করুক না কেন তাকে হত্যা করা অথবা শারীরিক দণ্ড প্রদান করা যেত না । এছাড়া  ব্রাহ্মণের হত্যাকে ‘ব্রহ্মহত্যা’ নাম দিয়ে সাংঘাতিক পাপজনক বলে বর্ণনা করা হয়।ব্রহ্মহত্যাকারীদের ইহকালে অত্যন্ত কঠিন শাস্তির বিধান  ছিলই, তারপরেও তারা নরক যন্ত্রণা ভোগ করতো পাপের ফল হিসাবে। নরকের শেষে পৃথিবীতে আবার যে রূপে ব্রহ্মহত্যাকারী জন্মগ্রহণ করে, সেই প্রসঙ্গে মনু বলেন-

  • ব্রহ্মহত্যাকারীর  নরক ভোগ শেষ হলে, শূকর, কুকুর, গর্ধব, উট, গরু, ছাগল, মেষ, মৃগ, পক্ষী, চণ্ডাল এবং নিষাদের ঔরসে শূদ্রার গর্ভজাত পুক্কস প্রভৃতির যোনি প্রাপ্ত হয়। ১২/৫৫

অর্থাৎ ব্রহ্মহত্যাকারীরা অত্যন্ত নিকৃষ্ট চণ্ডাল,পুক্কস প্রভৃতি যোনিতে পাপের ফলে জন্মগ্রহণ করেন।

তথাকথিত নিম্নবর্ণের খেটে খাওয়া  মানুষদের অপবিত্র ঘোষণা করে তাদের কাছ থেকে অন্ন গ্রহণ করতে ব্রাহ্মণদের নিষেধ করে মনুসংহিতাতে বলা হয়-

  • নট,দর্জি,কর্মকার,নিষাদ,স্বর্ণকার,বেণুবিদারক,রঞ্জক,বস্ত্ররঞ্জক,লৌহবিক্রেতা এদের অন্ন ভোজন না করতে। ৪/২১৩-২১৬

এছাড়া শূদ্র যে কোনোদিনো অতিথি হতে পারে না তা স্পষ্ট করা হয় মনুস্মৃতিতে-

  • “ব্রাহ্মণের ঘরে আগত ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রকে অতিথি বলা যায় না যেহেতু তারা ব্রাহ্মণের থেকেও নিকৃষ্ট জাতি। বন্ধু ও জ্ঞাতি আত্মীয়সম বলে এবং গুরু স্থানীয় বলে অতিথি পদবাচ্য নয়, অর্থাৎ ক্ষত্রিয়ের গৃহে ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণ অতিথি হতে পারে কিন্তু বৈশ্য, শূদ্র অতিথি হবে না। সেইরূপ বৈশ্যের গৃহে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য- এই দ্বিজাতিরাই কেবল অতিথি হবে, শূদ্র নয়।” ৩/১১০

শূদ্রায় ঘৃণা তবে শূদ্রা সুন্দরী হলে ভোগ

গৌরবর্ণ-জ্যোতিপূর্ণ-দেবতুল্য-গুণধর আর্যরা শূদ্রজাতির সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিলেন না। তারা সাধারণত শূদ্রের কন্যাদের বিবাহের পক্ষপাতী ছিলেন না। মনু সংহিতায়ও তাদের এই মনোভাব স্থানে স্থানে প্রকাশ পেয়েছে- 

  • দ্বিজাতিগণ মোহবশত যদি কোনো হীনজাতীয় স্ত্রীলোককে বিবাহ করে তাহলে ঐ স্ত্রীতে উৎপন্ন সন্তানদের সঙ্গে দ্বিজাতি সবংশে শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হন। ৩/১৫
  • সবর্ণা(নিজ বর্ণের) নারীকে বিবাহ না করে শূদ্রাকে প্রথম বিবাহ করলে ব্রাহ্মণের নরক লাভ হয়। আবার ঐ স্ত্রীতে পুত্র উৎপাদন করলে ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণ্য থাকে না। সুতরাং সবর্ণা বিবাহ না করে দৈবাৎ শূদ্রাকে বিবাহ করলেও তাতে সন্তান উৎপাদন করা উচিত নয়। ৩/১৭
  • …যে ব্রাহ্মণ সবর্ণাকে বিবাহ করে শূদ্র স্ত্রীকে বিবাহ করেছ…সেই সব ব্রাহ্মণকে দৈব ও পিতৃ কর্মে নিমন্ত্রণ করবেন না। ৩/১৫৫

তবে কোনো শূদ্রা রমণীর সৌন্দর্যে মুনি -ঋষি-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যরা কাতর হয়ে পড়লে কখনো সখনো তারা সেই রমণীদের দিকে তাদের দেবতুল্য দৃষ্টিপাত করতেন। সেই সব স্ত্রী আখ্যা পেত রত্ন হিসাবে। রত্ন যেমন যেকোনো স্থান থেকেই আহরণ করা যায়, তেমনি কামবাণে পীড়িত হলে তারা শূদ্রের ঘরের মেয়েকেও ভোগ করতেন। এ সম্বন্ধে মনুসংহিতা বলছে-

  • “স্ত্রী ,রত্ন,বিদ্যা, ধর্ম, শৌচ, হিতকথা এবং বিভিন্ন শিল্পকার্য সকলের কাছ থেকেই সকল শিক্ষা করতে পারে। কুল্লুকের মতে এখানে স্ত্রী শব্দের উল্লেখে বোঝানো হয়েছে, নিম্নকূল থেকে যেমন স্ত্রী গ্রহণ করা যায় সেইরূপ রত্ন প্রভৃতি মূল্যবান দ্রব্য সব জায়গা থেকেই গ্রহণ করা যেতে পারে।”২/২৪০

বর্ণসঙ্কর ও অস্পৃশ্যতা

বিবাহের ক্ষেত্রেও মনু এক বিশেষ ধরণের ব্যবস্থা করেছেন। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণী,ক্ষত্রিয়া, বৈশ্যা ও শূদ্রাকে বিবাহ করতে পারেন। ক্ষত্রিয় নিজ এবং তার নিচের অপর দুই বর্ণের স্ত্রীকে; বৈশ্য, বৈশ্যা ও শূদ্রাকে বিবাহ করতে পারেন। এই ধরণের বিবাহকে অনুলোম বিবাহ বলা হত।

এর বিপরীত যখন ঘটে থাকে অর্থাৎ নিম্ন বর্ণের পুরুষ যখন উচ্চবর্ণের স্ত্রীকে বিবাহ করে তখন তা প্রতিলোম বলে গণ্য হয়।

মনু উচ্চবর্ণের ভোগের পথকে প্রশস্ত করে কেবল অনুলোম বিবাহেরই বৈধতা প্রদান করেন কিন্তু প্রতিলোম বিবাহকে নিন্দনীয় এবং প্রতিলোমজাত সন্তানকে (বিশেষত শূদ্রের প্রতিলোমজাত সন্তানকে) বর্ণসঙ্কর বলে কোনো বর্ণে স্থান দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাদের ধর্ম ও সমাজের নানবিধ আচার-অনুষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করেন।

মনু বলেন-

  • “শূদ্রের ঔরসে বৈশ্যার গর্ভজ সন্তানকে আয়োগব, শূদ্রের ঔরসে ক্ষত্রিয়ার গর্ভজাত সন্তান ক্ষত্তা এবং শূদ্রের ঔরসে ব্রাহ্মণীর গর্ভজাত সন্তান চণ্ডাল আখ্যা প্রাপ্ত হয়। শূদ্র থেকে উৎপন্ন এই তিন বর্ণজাত সন্তান বর্ণ সঙ্কর বলে পরিগণিত হয়ে থাকে।” ১০/১২
  • শূদ্রের সাথে ব্রাহ্মণীর মিলনে যখন সন্তান হয়, তখন সেই সন্তান চণ্ডাল নাম প্রাপ্ত হয়, তাকে নিকৃষ্ট আখ্যা দেওয়া হয়েছে। চণ্ডাল প্রভৃতি সংকরবর্ণের ঔরসে যখন উচ্চ তিনবর্ণের স্ত্রীদের সন্তান হয়, তারা  তাদের  পিতার থেকেও ‘সহস্রগুণে হীন ও নিন্দারযোগ্য’। (১০/৩০)
  • যে রাজ্যে বর্ণ দূষক বর্ণ সঙ্কর জাতি উৎপন্ন হয় সেই রাজ্য উৎকৃষ্ট প্রজার সঙ্গে অচিরেই বিনষ্ট হয়। সুতরাং রাজ্য থেকে বর্ণ সঙ্কর জাতির নিষ্কাশন অবশ্য কর্তব্য। ১০/৬১
  • ব্রাহ্মণ প্রভৃতি তিন দ্বিজের স্বজাতি স্ত্রীর গর্ভ সম্ভূত তিন সন্তান অর্থাৎ ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণীজাত সন্তান, ক্ষত্রিয়ের ক্ষত্রিয়াজাত সন্তান ও বৈশ্যের বৈশ্যজাত সন্তান এবং অনুলোমক্রমে ব্রাহ্মণের ঔরসজাত দুই সন্তান অর্থাৎ ব্রাহ্মণের ক্ষত্রিয়াজাত  ও বৈশ্যা জাত দুই সন্তান এবং ক্ষত্রিয়ের ঔরসজাত বৈশ্যার সন্তান- এই ছয় সন্তান দ্বিজ ধর্মাবলম্বী হয়। তাই এদের উপনয়ন প্রভৃতি দ্বিজাতির সংস্কার হবে। কিন্তু এই তিন দ্বিজের প্রতিলোমজ সন্তানেরা শূদ্রধর্মী হয়। সুতরাং তাদের উপনয়ন প্রভৃতি কোনো সংস্কারই হবে না। ১০/৪১
  •  শূদ্রের প্রতিলোমজাত সন্তান অপেক্ষা দ্বিজজাতির প্রতিলোমজ সন্তান উৎকৃষ্ট। ১০/২৭-২৮
  • “চণ্ডালের থেকে পুক্কসী স্ত্রীর গর্ভে যে পাপিষ্ঠ জাতি জন্মায় তাদের সোপাক বলে। এই জাতি অসাধু ও পাপজনক জল্লাদের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আবার চণ্ডালের নিষাদী স্ত্রীর গর্ভজাত যে সন্তান তাকে অন্ত্যাবসায়ী বলে। সাধারণত শ্মশানের কাজ করেই এরা জীবিকা নির্বাহ করে। এরা সকল প্রতিলোম জাতির থেকে নিকৃষ্ট ও ঘৃণার পাত্র। বর্তমান যুগে এদেরকেই মুদাফফরাস বলে।”১০/৩৮-৩৯
  • শূদ্রের ঔরসে ব্রাহ্মণীর গর্ভজ সন্তান (চণ্ডাল) স্বাভাবিক ভাবেই অপকৃষ্ট হয়ে থাকে। ১০/৬৬-৬৭
শূদ্রের 5

শূদ্র-চণ্ডাল-অন্ত্যজদের (অস্পৃশ্য) অশূচি- অস্পৃশ্য ঘোষণা করা হয়েছে-

  • প্রতিদিন শ্রাদ্ধ কার্য বা দেবকার্য করার সময় স্নান ও আচমন করে পবিত্র হবার পর যদি চণ্ডাল প্রভৃতি অশূচি দর্শন ঘটে তাহলে উৎসাহের সঙ্গে বেদোক্ত সূর্য মন্ত্র এবং পাবমানী মন্ত্র জপ করতে বলা হয়েছে।  ৫/৮৬
  • “…শূদ্র থেকে প্রতিলোমক্রমে উৎপন্ন অর্থাৎ শূদ্র থেকে বৈশ্যা স্ত্রীজাত আয়োগব, ব্রাহ্মণী স্ত্রীজাত ক্ষত্তা এবং শূদ্র স্ত্রীজাত চণ্ডাল- এই তিন জাতির পরলৌকিক পিতৃকার্যে কোনো অধিকার নেই। তাই এদের নরাধম বলে।” ১০/১৫-১৬
  • “পতিত, চণ্ডাল পুক্কস, মূর্খ, ধনমদে গর্বিত রজক প্রভৃতি নীচু জাতী ও অন্ত্যাবসায়ী- এইসব মানুষদের সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্যও বসবাস করবেন না।……” ৪/৭৯
  • “আত্মীয়স্বজন ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্যগণ কখনোই শূদ্রকে দিয়ে মৃত দেহ বহন করাবেন না।কারণ মৃতদেহ শূদ্র স্পর্শে দূষিত হলে মৃতাত্মার সর্ব বিরোধী দুর্গতি লাভ হয়। সুতরাং যদি আত্মীয় না থাকে তাহলে ক্ষত্রিয়ের সাহায্যে, তার অভাবে বৈশ্যের সাহায্যে, তার অভাবে শূদ্রের সাহায্যে শববহন করা যেতে পারে।” ৫/১০৪

ধান্দাবাজি কেন?

শূদ্রকে সমস্ত শিক্ষা,ধর্মাচার থেকে বঞ্চিত করলেও বামুন ঠাকুর খুবই চতুর ছিলেন। তাই  তিনি শূদ্রকে সকল বিদ্যা থেকে বঞ্চিত করে  বলেছেন, শূদ্রের কোনো ভালো বিদ্যা জানা থাকলে সেটা গ্রহণ করা উচিত, শূদ্রের নারীগণ অত্যন্ত সুন্দরী হলে তাদের ভোগ করা উচিত।

ভগবান মনুর ভাষায়-

  • “শ্রদ্ধার সঙ্গে শূদ্রের কাছ থেকেও শ্রেয়স্করী বিদ্যা গ্রহণ করা উচিত। অন্ত্যজদের ( যাদের ছোয়া যায় না, অস্পৃশ্য) কাছ থেকেও পরম ধর্ম লাভ করবে এবং স্ত্রীরত্ন নিজের অপেক্ষা নিকৃষ্ট কুলজাত হলেও বিবাহ করবে।” ২/২৩৮
  • “স্ত্রী ,রত্ন,বিদ্যা, ধর্ম, শৌচ, হিতকথা এবং বিভিন্ন শিল্পকার্য সকলের কাছ থেকেই সকল শিক্ষা করতে পারে। কুল্লুকের মতে এখানে স্ত্রী শব্দের উল্লেখে বোঝানো হয়েছে, নিম্নকূল থেকে যেমন স্ত্রী গ্রহণ করা যায় সেইরূপ রত্ন প্রভৃতি মূল্যবান দ্রব্য সব জায়গা থেকেই গ্রহণ করা যেতে পারে।” ২/২৪০

পোষা শূদ্র

যেসব শূদ্রকে আর্যরা পোষ মানাতে পেরেছিল, সেইসব পোষা শূদ্রদের ক্ষেত্রে তারা  খানিকটা স্বল্প পরিমাণে অত্যাচার করেছিল। নিজের দাসেদের সাথে ছোঁয়াছুঁয়ির খেলা খেললে যেহেতু জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে, তাই তাদের ক্ষেত্রে অস্পৃশ্যতা খানিকটা শিথিল করে দেওয়া হয়। মনু বলেন-

  • “যে যার কৃষিকাজ করে, পুরুষানুক্রমে যে নিজের বংশের বন্ধু, যে যার গো পালন করে; যে যার ভৃত্য এবং যে যার ক্ষৌর কর্ম করে- শূদ্রের মধ্যে এদের অন্ন ভোজন করা যায়। এমনকি যে যার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে তার অন্নও ভোজন করা যায়।… ” (কলিযুগে নিষিদ্ধ) ৪/২৫৩-২৫৪

এখানে লক্ষণীয় ব্যাপার হল, কলিযুগে নিষিদ্ধ বলে পরবর্তীতে এই নিয়মও বাতিল করা হয়েছে, গৃহভৃত্য শূদ্রের আরো অবনমন হয়েছে।

শূদ্র কেন মানুষ নয়?

তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর্য-ব্রাহ্মণ-দ্বিজাতীরা নিজেদের পশুসুলভ আচরণ বহাল রেখে নিম্নবর্ণের লোকেদের উপর অমানবিক অত্যাচার করেছে।

শূদ্রকে কুকুর,মুরগি,শুয়োর প্রভৃতি জন্তুর সাথে তুলনা করে তাড়ানোর কথা বলা হয়েছে নিচের শ্লোকে-

  • শুয়োর ঘ্রাণের মাধ্যমে শ্রাদ্ধকর নষ্ট করে,কুক্কুট পক্ষবায়ুর মাধ্যমে ,কুকুর দৃষ্টির মাধ্যমে আর শূদ্র স্পর্শের মাধ্যমে শ্রাদ্ধকর্ম নষ্ট করে। তাই ঘ্রাণযোগ্য স্থান থেকে শূকরকে , পক্ষপবনযোগ্য স্থান থেকে কুক্কুটকে, দৃষ্টি যোগ্য স্থান থেকে কুকুরকে এবং স্পর্শ যোগ্য স্থান থেকে শূদ্রকে বিতাড়িত করবার কথা বলা হয়েছে। ৩/২৪১

শূদ্র শ্রাদ্ধের উচ্ছিষ্টেরও অধিকারী নয়, যে শূদ্রকে মায়াবশত উচ্ছিষ্ট প্রদান করে তার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে-

  • “যে ব্যক্তি শ্রাদ্ধে ভোজন করে পাত্রে অবশিষ্ট উচ্ছিষ্ট অন্ন শূদ্রকে দান করে সেই মূর্খ মৃত্যুর পর কালসূত্র নামক  নরকে অধোমুখে পতিত হয়।”৩/২৪৯
  • তবে সরল স্বভাব যে সব ভৃত্য, ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়াদি উচ্চ বর্ণের অত্যাচার যারা প্রতিবাদহীন ভাবে মেনে নেয় সেইআলস্যশূণ্য, অকুটিল ভৃত্যদের শ্রাদ্ধের যে উচ্ছিষ্ট অন্ন ভূমিতে পড়ে যায় তা দান করতে বলা হয়েছে। ৩/২৪৬

সাধারণ অবস্থায় শূদ্রের রান্না করা খাবার খেতে নিষেধ করা হয়েছে-

  • যে ব্রাহ্মণ বেদবেত্তা তিনি পঞ্চযজ্ঞহীন শূদ্রের রান্ন করা খাবার খাবেন না। কিন্তু অন্য অন্ন পাওয়া না গেলে এক রাতের উপযুক্ত অপক্ক অন্ন শূদ্রের কাছ থেকে গ্রহণ করতে পারেন। ৪/২২৩-২২৪

আরও বলা হয়েছে-

  • দাস-দাসী,চণ্ডাল প্রভৃতি নীচ জাতি, খঞ্জ, বিকলাঙ্গ ব্যক্তিকে স্বাক্ষী করা যাবে না।…চণ্ডালের ধর্ম জ্ঞান না থাকায় এবং বিকলাঙ্গের উপলব্ধি না থাকায় এদের সাক্ষী করা যায় না। ৮/৬৩-৬৬
  • ভৃত্য ভিন্ন অন্য শূদ্রকে উচ্ছিষ্ট দেবেন না।যে হব্যের কিয়দংশ হোম করা হয়েছে সেই হবিষ্কৃত অংশ শূদ্রকে দেবেন না । ৮/৮০
  • আত্মীয়স্বজন ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্যগণ কখনোই শূদ্রকে দিয়ে মৃত দেহ বহন করাবেন না।কারণ মৃতদেহ শূদ্র স্পর্শে দূষিত হলে মৃতাত্মার সর্ব বিরোধী দুর্গতি লাভ হয়। সুতরাং যদি আত্মীয় না থাকে তাহলে ক্ষত্রিয়ের সাহায্যে, তার অভাবে বৈশ্যের সাহায্যে, তার অভাবে শূদ্রের সাহায্যে শববহন করা যেতে পারে। ৫/১০৪
  • পতিত, চণ্ডাল পুক্কস, মূর্খ, ধনমদে গর্বিত রজক প্রভৃতি নীচু জাতীয় ও অন্ত্যাবসায়ী- এইসব মানুষদের সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্যও বসবাস করবেন না। (ব্রাহ্মণের ঔরসে শূদ্র নারী থেকে যে পুত্রের জন্ম হয় তাকে নিষাদ বলে। এই নিষাদের ঔরসে শূদ্রা নারীতে যে পুত্র জন্মায় তাকে পুক্কস বলে। আর নিষাদপত্নীতে চন্ডালের পুত্র জন্মালে তাকে অন্ত্যাবসায়ী বলে)। ৪/৭৯

শূদ্রের হত্যাকে সামান্য উপপাতক (ছোটোখাটো অপরাধ) বলে বর্ণনা করা হয়েছে-

  • “স্ত্রী হত্যা,বৈশ্য হত্যা, শূদ্র হত্যা এবং নারীহত্যা- এই সকলের প্রত্যেককে উপপাতক বলে।” ১১/৫৯-৬৭

এখানে অবশ্য শূদ্র ও নারীর পাশাপাশি বৈশ্যের অবনমনও চোখে পড়ে।

তবে ব্রাহ্মণ দেবতার যদি কখনো দয়া হয় তবে-

  • “ব্রাহ্মণের ঘরে যদি বৈশ্য ও শূদ্র অতিথি হয়ে আসেন তাহলে তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে ভৃত্যদের ভোজনের সময় তাদেরও ভোজন করাবেন।” ৩/১১২

এবং,

  • “……আশ্রিত শূদ্রকে ভক্ষণের জন্য ব্রাহ্মণ উচ্ছিষ্ট অন্ন দেবেন, পরিধানের জন্য জীর্ণ বস্ত্র দেবেন, শয়ণের জন্য পুরোনো শয্যা দেবেন এবং ধানের পুলাক অর্থাৎ আগ্রা, ক্ষুদ, কুড়ো প্রভৃতি দান করবেন।” ১০/১২৪-১২৫
  • “চন্ডাল এবং শ্বপচ জাতির লোকেরা গ্রামের বাইরে বসবাস করবে এবং এদের জলপাত্র দেওয়া হবে না। কুকুর এবং গাধা এদের একমাত্র সম্পদ। এরা মৃত মানুষের কাপড় পরবে, ভাঙা পাত্রে ভোজন করবে, লোহার তৈরি অলংকার ধারণ করবে এবং একস্থানে অবস্থান না করে সর্বদা পরিভ্রমণ করবে।।” ১০/ ৫১-৫২
  • “যে দেশে শূদ্র রাজা, যে দেশে অধার্মিক লোকের সংখ্যা বেশি, বেদ বহির্ভূত পাষণ্ডরা যে দেশ আক্রমণ করছে এবং যে দেশে চণ্ডাল প্রভৃতি নীচ জাতির লোকেরা উপদ্রব করে সেই দেশে (দ্বিজাতিরা) বাস করবে না।” ৪/৬১

শূদ্র কখনোই শাসক নয়!

নিজেদের গদি হারানোর ভয়ে শূদ্রদের কখনোই শাসকের স্থানে বসতে দিতে চাননি মনু, মনু বলেন –

  • “রাজা যদি স্বয়ং বিচার করতে না পারেন তাহলে বিদ্যা ও অন্যান্য গুণসম্পন্ন ব্রাহ্মণকে ঐ কাজে নিযুক্ত করবেন। যোগ্য ব্রাহ্মণের অভাব হলে গুণান্বিত ক্ষত্রিয়কে নিয়োগ করবেন। গুণী ক্ষত্রিয় না পাওয়া গেলে গুণবান বৈশ্যকে নিয়োগ করবেন। কিন্তু কখনোই ধার্মিক সর্ব গুণান্বিত শূদ্রকে ওই পদে নিয়োগ করবেন না।……” ৮/২০

ধার্মিক সর্ব গুণান্বিত শূদ্রকে রাজপদে নিয়োগ না করার কারণও মনু বর্ণনা করেছেন।

শূদ্র বিচার করলে যে দোষ হয়-

  • “……যে রাজার রাজ্যে শূদ্র ন্যায় অন্যায় ধর্ম বিষয়ক বিচার করে ,পঙ্কে পতিত গোরু যেমন আত্মত্রাণে অক্ষম হয়ে পঙ্কে মগ্ন হয়, সেইরূপ ঐ রাজার রাষ্ট্র অধর্মে অবসন্ন হয়।” ৮/২১

এছাড়াও বলা হয়েছে,

  • “যে রাজার রাজ্য শূদ্র বহুল, নাস্তিক মানুষে আক্রান্ত এবং ব্রাহ্মণশূন্য সে রাজ্য দুর্ভিক্ষ ও বিভিন্ন ব্যাধিতে পীড়িত হয়ে শীঘ্রই বিনষ্ট হয়।” ৮/২২

শূদ্রের দমন

শূদ্র যাতে কোনোদিনো মেরুদন্ড সোজা করে উঠে দাঁড়াতে না পারে তাই তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয় নৃশংস সব দণ্ডের-

  • একজাতি অর্থাৎ শূদ্র যদি ব্রাহ্মণ প্রভৃতি দ্বিজাতিদের প্রতি কঠিন বাক্য প্রয়োগ করে তাহলে  শাস্তিস্বরূপ ওই শূদ্রের জিহ্বা ছেদন করতে বলা হয়েছে।  ৮/২৭০

আর এরূপ দণ্ড প্রদানকে একেবারেই স্বাভাবিক হিসাবে দেখার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে-‘যেহেতু শূদ্রের জন্ম নিকৃষ্ট অঙ্গ থেকেই হয়েছে।’ ৮/২৭০

আর,

  • নাম এবং জাতি তুলে শূদ্র যদি দ্বিজাতির ওপর আক্রোশ প্রকাশ করে তাহলে ওই অপরাধে তার মুখে দশ আঙ্গুল পরিমিত জ্বলন্ত লৌহময় শঙ্কু নিক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। ৮/২৭১-২৭২
  • আবার দর্প ভরে শূদ্র যদি ব্রাহ্মণকে ধর্মোপদেশ দেয় তাহলে রাজাকে তার মুখে এবং কানে গরম তেল নিক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। ৮/২৭১-২৭২
  • অন্ত্যজ জাতি অর্থাৎ শূদ্র যদি কোনো অঙ্গ দিয়ে কোনো শ্রেষ্ঠ জাতিকে আঘাত করে তাহলে রাজাকে তার সেই অঙ্গ ছেদন করতে বলা হয়েছে।- ‘ইহা মনুর অনুশাসন’। ২/২৭৯
  • শূদ্র যদি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ জাতিকে আঘাত করার জন্য হাত তোলে তাহলে রাজাকে তার হাত কেটে ফেলতে বলা হয়েছে এবং পা দিয়ে আঘাত করলে পা কেটে ফেলতে বলা হয়েছে।  ৮/২৮০
  • শূদ্র যদি অহংকার করে ব্রাহ্মণের সঙ্গে এক আসনে অবস্থান করে তাহলে রাজাকে তার কটিদেশ তপ্ত লোহার শলাকা দিয়ে অঙ্কিত করে তাকে দেশ থেকে নির্বাসিত করার কথা বলা হয়েছে অথবা যাতে তার মৃত্যু না হয় সেভাবে তার পশ্চাৎ দেশ কেটে দিতে বলা হয়েছে। ৮/২৮১-২৮২
  • আবার দর্প ভরে শূদ্র যদি ব্রাহ্মণের গায়ে থুতু দেয় তাহলে রাজাকে তার ওষ্ঠাধার ছেদন করতে বলা হয়েছে। ৮/২৮১-২৮২
  • সেইরূপ ব্রাহ্মণের গায়ে প্রস্রাব করলে তার লিঙ্গ ছেদন এবং অধোবায়ু ত্যাগ করলে গুহ্যছেদন করার বিধান দেওয়া হয়েছে।  ৮/২৮১-২৮২
  • যদি শূদ্র অহংকারবশত হাত দিয়ে ব্রাহ্মণের কেশ ধারণ করে তাহলে রাজা তার দুই হাতই ছেদন করবেন। আবার যদি হিংসা করে শূদ্র ব্রাহ্মণের পা,দাড়ি,গ্রীবা কিংবা অণ্ডকোশ গ্রহণ করে তাহলেও রাজা তার দুহাত ছেদন করবেন। ৮/২৮৩
  • দ্বিজচিহ্নধারী বা যজ্ঞোপবীতধারী শূদ্রকে হস্তছেদ থেকে প্রাণবধ পর্যন্ত দণ্ড দিতে বলা হয়েছে। ৯/২২৪
  • শূদ্র যদি কামবশত ব্রাহ্মণকে শারীরিক বা আর্থিক পীড়া দেয় তাহলে রাজাকে তার হাত, পা, নাক,কান প্রভৃতি ছেদনরূপ বিভিন্ন উপায়ে হত্যা করতে বলা হয়েছে।মনুসংহিতা ৯/২৪৮
  • “স্বামী কর্তৃক রক্ষিত হোক বা না হোক শূদ্র যদি দ্বিজাতির ওইরূপ স্ত্রীতে গমন করে তাহলে অরক্ষিতা স্ত্রী গমনে শূদ্রের লিংগচ্ছেদ এবং স্বামী রক্ষিত স্ত্রী গমনে বধ ও সর্বস্ব হরণ দণ্ড হবে।…” ৮/৩৭৪-৩৭৫

সীমাহীন অত্যাচারের পর নিম্নবর্ণকে লোভ দেখিয়ে বলা হয়-

  • “গোরু, ব্রাহ্মণ,স্ত্রী এবং বালক বিপদাপন্ন হলে তাদের পরিত্রাণের জন্য যদি কোনো প্রতিলোম জাতিভূত সন্তান পুরস্কারের প্রত্যাশা না করে প্রাণত্যাগ করে তাহলে তার স্বর্গ প্রাপ্তি ঘটে ।” ১০/৬২

ব্রাহ্মণ্যবাদের তৈরি জাতিভেদ ছিল শূদ্র,অস্পৃশ্য,বর্ণসংকর প্রভৃতির জন্য মরণফাদ। মনু বলেন-

ন স্বামিনা নিসৃষ্টোহপি শূদ্রো দাস্যাদ্বিমুচ্যতে।

নিসর্গজং হি তৎ তস্য কন্তস্মাৎ  তদপোহতি।।

স্বামী যদি দাস্য কর্ম থেকে শূদ্রকে মুক্ত করে দেয় তাহলেও শূদ্র দাসত্ব থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বিমুক্ত হয় না।দাসত্ব কর্মই তার স্বাভাবিক ধর্ম।মরণ পর্যন্ত তার থেকে শূদ্রের মুক্তি নেই।  -মনুসংহিতা ৮/৪১৪

মনুর মতে,  শূদ্রের এই দাসত্ব অত্যন্ত স্বাভাবিক, তার এই দাসত্ব ঠিক মৃত্যু পর্যন্ত।

সহায়ক গ্রন্থ-

মনুসংহিতার অধিকাংশ শ্লোকের  তর্জমা চৈতালি দত্তের মনু সংহিতা হতে গৃহীত হয়েছে

সম্পূর্ণ লেখাটির পিডিএফ ডাউনলোড করুন

অজিত কেশকম্বলী II

"মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।"

10 thoughts on “মনুর চোখে শূদ্ররা মানুষ নয়-হিন্দু ধর্মে শূদ্রের অবস্থান

  • Anonymous

    ভাই হিন্দুরা প্রায় 70%নাস্তিক, তাই আপনি কি জানেন বা কি বল্লেন কিচ্ছুই আসে যায় না ।এরপর ও কিন্ত তারা হিন্দুই ।

    Reply
    • দারুণ তথ্য দিয়েছেন, ‘হিন্দুরা 70% নাস্তিক’। তথ্যসূত্রটা এবার পাওয়া যাবে কি ভাই?

      Reply
  • Nihar Ranjan Biswas

    অজিত দা ভালো ।অনেক কিছু অজানা ছিল, এবার জানতে পারলাম । ধর্মের মুখোশ খুলে দিন । পৃথিবী থেকে ধর্ম বিদায় নিক্ ।যে ধর্ম মানুষ কে সমান অধিকার দিতে পারে না , সে আবার কিসের ধর্ম । আর ভগবান, তার তো লজ্জায় আত্মহত্যা করা উচিত । ভগবান, তুই বেটা সব থেকে অস্পৃশ্য ।

    Reply
    • “যে ধর্ম তার এক বিরাট অংশকে চিরকাল অশিক্ষিত দরিদ্র করে রাখতে চায়, তাকে ধর্ম না বলে ধাপ্পা বলাই সঙ্গত” – ভিমরাও আম্বেদকর

      মিথ্যা অপসারিত হবে। সত্য প্রকাশ পাবেই।

      Reply
  • chokher bali

    adam ar eve r monu bole prithibir prothom manush je nei seta manush keno bujhte parena janina
    biborton bad aneker mathai dhokena bad dilam
    jodi tara thake tobe tader chele meyer bar bar jouno somporker dara aro manuser jonmo hoeche kintu eta mene nile 3,4 projonmo por e sobai bikolango hoto
    misor er raja rani der modhyeu amra ei proman ta pai

    Reply
  • সৌম্য দীপ্ত দাশ

    তথাকথিত ব্রাহ্মণরা তাদের পরম্পরাগত খবরদারি নিশ্চিত করতেই ইচ্ছেমতো নানারকম
    ফতোয়াবাজি সৃষ্টি করেছেন।ভাষাগত বিশ্লষণিক
    গবেষণা করে ড.সুরেন্দ্র কুমার দেখিয়েছেন যে মনুসংহিতার অর্ধেকের বেশি শ্লোকই প্রক্ষিপ্ত ।
    এক্ষেত্রে আপনারা “বিশুদ্ধ মনুসংহিতা “বইটি বিবেচনা করে দেখতে পারেন যাতে কুমারজী মৌলিক শ্লোকগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
    তবে “বিশুদ্ধ মনুসংহিতা” অনুযায়ী ব্রাহ্মণের ছেলে অজ্ঞ হলে সে শুদ্র হবে ,ব্রাহ্মণ নয়।

    Reply
  • অজিত কেশকম্বলী ii

    @ সৌমদীপ্ত, সুরেন্দ্র কুমারকে ধন্যবাদ একটা নতুন মনুসংহিতা রচনার জন্য। তবে এই মনুসংহিতাকে মনুসংহিতা না বলে সুরেন্দ্রসংহিতা বলাই অধিকতর ভালো বলে মনে হয়। এই জাতপাত একটি আধটি গ্রন্থে নেই, যে প্রক্ষেপ প্রক্ষেপ খেলে পার পাওয়া যাবে।

    Reply
  • অনেক কুসংস্কার ছিল হিন্দু ধর্মে পূর্বে। এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। হিন্দু ধর্ম মানুষের মইদ্ধে মনুষ্যত্ব তৈরী করতে অনেক ভূমিকা পালন করে।

    Reply
  • জাত পাত অনেক অংশে থেকেই নির্মূল হয়েছে আরো হবে যখন সনাতন অবলম্বী রা প্রাতিষ্ঠানিক শিখায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে। কে শুভ্র কে ব্রাম্মন এগুলো বিচার করার কথা মানুষ ভুলেই যাবে। তাইতো বলি যে আপনার পক্ষ থেকেই শুরু করুন পরে আপনার অনুসারীরা শুরু করবে। যেমন আমার বাবা জাত মেনে বিয়ে করে নি আমিও করবো না আমার পরবর্তীতে ও কেউ করবে না।

    Reply
  • Sushil Chandra Das

    এই লেখার সকল অংশ আমি, pdf পাবো কিভাবে

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *