সম্পাদকীয়

হাইপেশিয়া থেকে জাস্টিসিয়ার মূর্তি- আলেক্সান্ড্রিয়া থেকে বাঙলাদেশ!

সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক হাইপেশিয়া সেই সময়ে ছিলেন আলেক্সান্ড্রিয়ার মুক্তচিন্তার প্রতীক। শিক্ষকতা করতেন, উনার শিক্ষার্থীরা মন্ত্রমুগ্ধের মত উনার কথা শুনতে আসতো। দূর দূরান্ত থেকে। তিনি প্যাগান ছিলেন, প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস এবং প্রথার সমালোচকও ছিলেন। তিনি বলতেন, দর্শনই আমার ধর্ম। জ্ঞানই আমার বিশ্বাস। সৌন্দর্য্য এবং জ্ঞানের অপূর্ব সম্মিলন হাইপেশিয়াকে বলা হতো, সৌন্দর্য্যের দেবী আফ্রিদিতির শরীরে যেন মহাজ্ঞানী পেল্টোর আত্মা ভর করেছে। নারী দার্শনিক এবং গণিতজ্ঞ বলে নয়, যেকোন পুরুষ দার্শনিক বা গণিতজ্ঞের চাইতে তিনি অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন জ্ঞানে। যুক্তিতে। চিন্তায়।

সেই সময়ে রাজনীতি শুরু হলো। খ্রিস্টান চার্চ চাচ্ছিল সমস্ত প্যাগান সংস্কৃতি ধ্বংস করে, সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞান ইতিহাস মুছে ফেলে খ্রিস্টান সভ্যতার উত্থানের। এই সময়ে আলেক্সান্ড্রিয়াতেই কিছু রাজাকার তৈরি হয়েছিল, যারা ক্ষমতার লোভে সাহায্য করছিল খ্রিস্টান মৌলবাদীদের। হাইপেশিয়া এবং উনার সাথে কিছু মানূষ বাধা দিচ্ছিলেন খ্রিস্টান মৌলবাদীদের। ধর্ম নিয়ে তীক্ষ্ণ প্রশ্নবান ছুড়ে দিচ্ছিলেন আহাম্মক ধর্মান্ধদের দিকে। কিন্তু উম্মত্ত ধর্মান্ধরা যুক্তিতর্ক মানবে কেন? তাদের প্রয়োজন ছিল ধ্বংস, এবং রক্ত।

বড় বড় খ্রিস্টান মৌলবাদী ধর্মপ্রচারক সেই সময় খুব অহংকারের সাথে হাইপেশিয়াকে বুঝিয়ে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য এসেছিল। তারা ভেবেছিল, মেয়ে মানুষ! কী আর এমন বুঝবে। কিন্তু হাইপেশিয়াকে কথা বলতে দিলেই বিপদ হতো। কারণ এত যুক্তি দিয়ে তিনি বুঝিয়ে কথা বলতেন, উপস্থিত জনতা পরিষ্কার বুঝতো, অন্তত যুক্তি দিয়ে উনাকে হারানো সম্ভব নয়। তাই শক্তি প্রয়োগ করার দরকার হয়ে গেল।
চুলের মুঠি ধরে তেনে হিঁচড়ে হাইপেশিয়াকে পুরো শহর ঘুরিয়েছিল খ্রিস্টান মৌলবাদীরা। বিখ্যাত লাইব্রেরিটা, যেখানে ছিল সব প্রাচীন দার্শনিকদের অমূল্য সব বই, সব পুড়িয়ে দিয়েছিল। হাইপেশিয়ার অনেক অনুনয় বিনয়ের পরেও বইগুলো তারা জ্বালিয়ে দেয়। এরপরে শহরের মাঝেই নগ্ন করে হাইপেশিয়ার ওপর চালানো হয় নারকীয় অত্যাচার। একের পর এক। উম্মত্ত ঈশ্বরের সেনারা সেই সময়ে কেটে টুকরো টুকরো করে হাইপেশিয়ার শরীর। এত জ্ঞান দিয়ে কী হবে? জ্ঞান শুধু সন্দেহ সৃষ্টি করে। তাদের প্রয়োজন ছিল বিশ্বাসের তরবারি, চাপাতি এবং রক্ত।

হাইপেশিয়ার মৃত্যুর পরে এক ঘনকালো অন্ধকার যুগের সুচনা হয়েছিল। জ্ঞানের অন্ধকার যুগের। বিশ্বাসের জয়গানের যুগের। ধর্ম আর মৌলবাদের যুগের। ঈশ্বর আর ঈশ্বরের সুপূত্ররা মিলে মিশে হাজার বছর ধরে চালিয়েছিল তাণ্ডব। সভ্যতা তাতে এতটুকু এগোয় নি, বিজ্ঞান তাতে এতটুকু উপকৃত হয় নি। যুওগটিকে বলা হয়, জ্ঞানের অন্ধকার যুগ। ধর্মান্ধতা আর মৌলবাদের যুগ। ঈশ্বর আর ঈশ্বরের অনুসারী গলাকাটা পাশণ্ডদের যুগ।
গতকাল রাতে বাঙলাদেশের ঢাকায় হাইকোর্টের সামনের সেই একই কাণ্ড ঘটে গেল, একটু ভিন্নভাবে। প্যাগান গ্রিক দেবী জাস্টিসিয়ার মূর্তিটি ভেঙ্গে দেয়া হলো ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের খুশি করতে। কাজটি করলো এই সময়ের রাজাকার আওয়ামী লীগ এবং রাজাকার শেখ হাসিনা। ন্যায় বিচারের প্রতীককে প্রকাশ্যে খুবলে নেয়া হলো, টুকরো টুকরো করা হলো।

সামনে আসছে এক ঘনকালো অন্ধকার যুগ। শরীয়তি এবং মদিনা সনদের যুগ। নারীকে পদদলিত করার যুগ। লাইব্রেরি ধ্বংস করে উপাসনালয় করার যুগ। জ্ঞান বিজ্ঞানের ধ্বংসের ওপর ধর্মবিশ্বাসী উম্মত্ত পাশণ্ডদের উন্মাদনার যুগ।
আপনি প্রস্তুত তো?

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

One thought on “হাইপেশিয়া থেকে জাস্টিসিয়ার মূর্তি- আলেক্সান্ড্রিয়া থেকে বাঙলাদেশ!

  • A Proud ধর্মহীনান্ধ

    Hypatia was truly an great pioneer more than a thousands of years ago!

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *