ইসলাম এবং বিজ্ঞান শিক্ষার দ্বন্দ্ব
সূচিপত্র
- 1 ভূমিকা
- 2 ধর্ম ও বিজ্ঞানের মৌলিক দ্বন্দ্ব
- 3 পার্থিব জ্ঞান সম্পর্কে ইসলাম
- 4 ভাষার আবিষ্কার
- 5 বিজ্ঞান ও ইসলামি সৃষ্টিতত্ত্ব
- 6 মাটির নিচে কী আছে?
- 7 পৃথিবী, সূর্য, চন্দ্র ও ইসলাম
- 7.1 পৃথিবী স্থির এবং নড়াচড়া করে না
- 7.2 পাহাড় পৃথিবীর পেরেক
- 7.3 সূর্য রাতের বেলা কই যায়?
- 7.4 কেয়ামতের ময়দানের সূর্য
- 7.5 কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর ছায়া
- 7.6 পৃথিবী সমতলভাবে বিছানো
- 7.7 দাহাহা বা উটপাখির ডিম
- 7.8 আসমান ও পৃথিবীর মাঝে দূরত্ব
- 7.9 চাঁদের জ্যোতি রয়েছে
- 7.10 চাঁদ দুইভাগে বিভক্ত
- 7.11 সূর্যকে থামিয়ে দিয়েছিল এক নবী
- 8 মহাকাশ এবং ইসলাম
- 9 জীববিজ্ঞান ও ইসলাম
- 9.1 ডানাওয়ালা ফেরেশতাকুল
- 9.2 প্রতিটি প্রাণী জোড়ায় জোড়ায়
- 9.3 আদম ছিল ৯০ ফুট লম্বা
- 9.4 নূহ নবী ৯৫০ বছর জীবিত ছিলেন
- 9.5 মানুষকে বানানো হয়েছে মাটি দ্বারা
- 9.6 আগুন দিয়ে প্রাণী সৃষ্টি করা যায়
- 9.7 জিনদের খাদ্য হাড্ডি ও গোবর
- 9.8 হিজড়া সন্তান জন্ম হয় কেন
- 9.9 শয়তান ও নবজাতকের কান্না
- 9.10 শয়তান পাদ মারে
- 9.11 শয়তান ডিম পাড়ে এবং ছানা জন্ম দেয়
- 9.12 আল্লাহর মাতৃগর্ভে আকৃতি দান
- 9.13 পাপপুণ্য হৃদপিণ্ডে থাকে
- 9.14 মেরুদণ্ডের হাড্ডি মাটি দ্বারা ক্ষয় হয় না
- 9.15 নবীদের শরীর মাটিতে পচবে না
- 9.16 মানুষ বানরে পরিণত হতে পারে
- 9.17 মানুষ ইঁদুরে পরিণত হতে পারে
- 9.18 মৃত মানুষ শুনতে পারে
- 9.19 কবরের চিৎকার প্রাণীরা শুনতে পায়
- 9.20 কবর ৭০ হাত প্রশস্ত হয়ে যায়
- 9.21 উপরে তাকালে দৃষ্টিশক্তি হারাবে
- 9.22 মেয়েদের বীর্য থাকে!
- 9.23 সন্তানের চেহারা কার মত হবে
- 9.24 গাছপালার প্রাণ নেই
- 9.25 পাথরের প্রাণ আছে
- 9.26 কাঠের খণ্ডের কান্নাকাটি
- 9.27 হাঁটাচলা করা গাছপালা
- 10 চিকিৎসাবিজ্ঞান ও ইসলাম
- 11 পানি সম্পর্কিত সমস্যাবলী
- 12 গাণিতিক সমস্যাবলী
- 13 অন্যান্য সমস্যাবলী
- 14 বিজ্ঞান বা দর্শন শিক্ষা এবং ইসলাম
- 15 উপসংহার
- 16 প্রাসঙ্গিক আরো কয়েকটি লেখা
- 17 তথ্যসূত্র
ভূমিকা
সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা স্কুল থেকে পাওয়া অনেক বই খুব আনন্দের সাথে পড়ে পড়ে বড় হই। আমরা অনেক নতুন বিষয় সেইসব বইগুলো থেকে শিখি এবং জানি। সেই বইগুলোর মধ্যে কিছু বই হচ্ছে মানব সভ্যতার ইতিহাস, গুহাযুগে মানুষ কেমন ছিল, এরপরে মানুষ ধীরে ধীরে কীভাবে আগুন আর চাকা আবিষ্কার করলো, অস্ত্র তৈরি শিখলো, যোগাযোগ আর কথা বলার জন্য ধীরে ধীরে ছোট ছোট শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ভাষার আবিষ্কার করলো, সাধারণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা ইত্যাদি। সেইসব বই থেকে আমরা আরো নানাবিধ বিষয় জানতে পারি, যেগুলোর অনেককিছুই আমাদের প্রচলিত বিশ্বাসের পরিপন্থী।
ধরুন, ছোটবেলা থেকে আমরা আমাদের কিছু গুরুজনদের কাছ থেকে জানতাম, রোগব্যাধী হচ্ছে দেবতা বা আল্লাহ ভগবানের শাস্তি। কিন্তু পরে আমরা বই পড়ে জানতে পারি, সেগুলো হচ্ছে নানা ধরণের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যা। অথবা মানুষের শারীরিক কোন জটিলতা। বৃষ্টি কীভাবে হয়, বিদ্যুৎ কেন চমকায়, দিনরাত কীভাবে হয়, আকাশের তারাগুলো আসলে কী, এইসবই আমরা সেই বইগুলো থেকে শিখি। ছোটবেলা আমরা ভাবতাম, বা আমাদের দাদাদাদীদের থেকে শুনতাম, সেগুলো সম্পর্কে নানা রূপকথার মুখরোচক গল্প। গল্পগুলো শুনতে ভালোই লাগতো, কিন্তু সেগুলো আসলে গুরুত্ব দেয়ার মত কিছু ছিল না। আমরা আমাদের বিজ্ঞান বইতে যা পড়তাম, দিনশেষে সেগুলোই সঠিক তথ্য বলে ধরে নিতাম। সেই বইগুলোতে যা বলা রয়েছে, সেগুলোই কি শেষ কথা? সেগুলো নিয়েও কি আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি না? সেগুলো কি যাচাই ছাড়াই আমাদের মেনে নিতে হয়? না। সাধারণত আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো, মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা, মহাকাশের নানা নক্ষত্রসমূহ, এইসব কিছুই অসংখ্যবার যাচাই করে দেখার পরেই আমরা জানতে পারি। এবং সেগুলোও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। যাচাই করে যদি সেগুলোর মধ্যে ভুল পাওয়া যায়, সেগুলো ঠিক করে নিতে হয়। এভাবেই আমাদের সভ্যতা এবং জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। সভ্যতার চাকা আসলে মানুষের জ্ঞান এবং ক্রমাগত নিজেদের জ্ঞানকে শুধরে নেয়ার ওপরই নির্ভর করে। কিন্তু ধর্মগ্রন্থ কী সেই চাকা স্থবির করে দেয়? আমাদের স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগুলোতে আসলে কী পড়ানো হয়? সেই সব ইসলামিক গ্রন্থগুলো থেকে আমাদের শিশুরা কী শিখছে? তারা এইসব মধ্যযুগীয় গ্রন্থ পড়ে আজকে আমরা সেগুলোই বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবো। উল্লেখ্য, ধর্ম হিসেবে ইসলাম তার নিয়মাবলী এবং বিশ্বাসের বিষয়গুলোকে যাচাই করার কোন সুযোগ দেয় না, বরঞ্চ যাচাই করতে নিরুৎসাহিত করে। এই বিষয়ে বিস্তারিত অন্যত্র লেখা হয়েছে, এই লেখাতে সেগুলো তাই আলোচনা করা হচ্ছে না [1]।
ধর্ম ও বিজ্ঞানের মৌলিক দ্বন্দ্ব
ধর্মের মূল স্তম্ভ হলো বিশ্বাস, সত্যিকার অর্থে ধর্মের মৌলিক বিষয়াদি অন্ধবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। একজন ধার্মিকের জন্য ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ এবং ধর্মীয় বিধিবিধান সবকিছুই অবিচল আস্থার সাথে মেনে চলতে হয়, কোনো ধরণের প্রশ্ন তোলা বা সন্দেহ প্রকাশ করা সেখানে মহাপাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই কারণে ধর্মীয় শাস্ত্রের প্রতিটি বক্তব্যকে প্রশ্নাতীতভাবে মেনে নিতে বাধ্য করা হয়, এবং যে কোনো প্রকার সংশয় বা সন্দেহ প্রকাশকে কঠোর শাস্তির আওতায় ফেলা হয়। কোন ধরণের যাচাই বাছাই অথবা দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা মানেই বিশ্বাসটি দুর্বল হয়ে যাওয়া। একজন ধার্মিক কোন অবস্থাতেই তার ধর্ম সম্পর্কে সামান্যতম সন্দেহ করার অধিকার রাখে না। মনে যদি সন্দেহ বা সংশয়ের সৃষ্টি হয় তাহলে সেটিকে ধর্মগুলো মহাপাপ হিসেবে গণ্য করে। একজন ধার্মিককে তার ধর্মের ভুল চোখের সামনে তুলে ধরলেও সে মানতে চাইবে না। সে নানা ধরণের কুযুক্তি এবং ভুল তথ্য দিয়ে তার ধর্মকে সঠিক বলে চালাবার চেষ্টা করবে। আর কেউ যদি ধর্মের ভুল মানুষের কাছে প্রকাশ করে, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধানও ধর্ম করে রেখেছে। ইসলামে এই ধরনের শাস্তির উদাহরণ হলো ধর্মত্যাগীদের (মুরতাদ) মৃত্যুদণ্ডের বিধান, যেখানে কেউ ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বললে বা ধর্ম থেকে বেরিয়ে গেলে তাকে সমাজ থেকে বহিষ্কার করা, এমনকি হত্যার মতো চরম শাস্তি প্রদান করাও বৈধতা লাভ করে। এই ধরনের শাস্তি শুধুমাত্র ইসলামেই নয়, অন্যান্য প্রধান ধর্মগুলোতেও বিদ্যমান, যেখানে ধর্মের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ বা ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এতে দেখা যায়, ধর্মের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে বাধ্য করা, কোনো প্রকার যুক্তি, তথ্য বা প্রমাণের ভিত্তিতে নয়, বরং একধরনের অন্ধ ভক্তি এবং মেনে নেওয়ার মানসিকতার ওপর ভিত্তি করে।
অন্যদিকে, বিজ্ঞানের জগতে বিশ্বাসের কোনো স্থান নেই। বিজ্ঞান শুধুমাত্র যুক্তি, প্রমাণ, পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা, যাচাই করা এবং প্রমাণিত ভুলকে সংশোধন করা বিজ্ঞানীদের দায়িত্ব। একজন গবেষক চাইলে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব, নিউটনের গতির সূত্র বা ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, এবং প্রমাণ করতে পারলে তাকে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের কাছে সমাদৃত করা হবে। এমনকি, এই ধরনের গবেষণার জন্য তাকে নোবেল পুরস্কারও দেওয়া হতে পারে। কারণ, বিজ্ঞান কখনোই কারও প্রতি অন্ধ ভক্তির দাবি করে না, বরং যেকোনো তত্ত্ব বা ধারণা প্রমাণের ভিত্তিতে নির্ণীত হয় এবং প্রতিটি বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। বিজ্ঞান একটি চলমান প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিনিয়ত পুরনো ধারণা ও তত্ত্বগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবন সামনে আসে। বিজ্ঞান এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে সংশয়, সন্দেহ এবং অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করা হয়, কারণ এর মাধ্যমেই জ্ঞানের সত্যিকারের অগ্রগতি সম্ভব। ফলে, ধর্ম যেখানে বিশ্বাসের ভিত্তিতে নির্ভরশীল এবং যে কোনো প্রকার সংশয়কে শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে করে, সেখানে বিজ্ঞান সম্পূর্ণরূপে যুক্তি, তথ্য এবং প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এই কারণেই, ধর্ম এবং বিজ্ঞান মৌলিকভাবে একে অপরের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে—একটি অবিচল অন্ধবিশ্বাসের প্রতীক, আরেকটি সন্দেহ ও যুক্তির বিকাশের চূড়ান্ত উদাহরণ।
যেকোন বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বিষয়ে আপনি সন্দেহ সংশয় যাচাই বাছাই করতে পারেন। এমনকি, কোন মহাবিজ্ঞানীর কোন যুগশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে আপনি চ্যালেঞ্জও করতে পারেন। কারণ বিজ্ঞানে বিশ্বাসের কোন স্থানই নেই। বিজ্ঞান কাজ করে যুক্তি তথ্য প্রমাণ যাচাই বাছাই এবং পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে। আপনাকে এরকম বলা হবে না যে, নিউটনের প্রতি ভক্তি স্বরূপ তার সব কথাকে বিশ্বাস করতে হবে, বা নিউটনের সমালোচনা শাতিমে নিউটন বলে গণ্য হবে, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড! হেফাজতে বিজ্ঞান নামে একটি সংগঠন আপনার ফাঁসিও চাইবে না। বরঞ্চ বিজ্ঞানীদের সংগঠনগুলো আপনাকে মাথায় তুলে রাখবে।
পার্থিব জ্ঞান সম্পর্কে ইসলাম
বিজ্ঞান হচ্ছে মূলত পদ্ধতিগত ও বিধিবদ্ধ পার্থিব জ্ঞানের সমষ্টি, যার প্রধান উদ্দেশ্য সত্য জানা এবং পার্থিব সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করা, মানুষের পার্থিব স্বার্থ রক্ষা করা। যেমন ধরুন, একটি রোগ এবং তার ঔষধ নিয়ে বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করেন পার্থিব জীবনে মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই। ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান। একইসাথে বিজ্ঞানের সমস্ত শাখা প্রশাখাই আসলে পার্থিব জীবনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট; মানুষের ক্ষুধা, রোগব্যাধি অথবা মানুষের পার্থিব জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য। পার্থিব বিষয়াদিই বিজ্ঞানে মুখ্য, পারলৌকিক কোন বিষয় বা আল্লাহর সন্তুষ্টি বিজ্ঞানের কোন ধর্তব্যের বিষয়ই নয়। তাহলে আসুন দেখি, এই বিষয়ে ইসলামের অবস্থান কী [2] [3] –
সুনান ইবনু মাজাহ
ভূমিকা পর্ব
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. জ্ঞান দ্বারা উপকৃত হওয়া এবং তদনুযায়ী ‘আমল করা।
৩/২৫২। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে জ্ঞান দ্বারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয়, যদি কেউ সেই জ্ঞান পার্থিব স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শিক্ষা করে, তবে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুবাসও পাবে না।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: আবূ দাঊদ ৩৬৬৪, আহমাদ ৮২৫২।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবী ফুদায়লাহ বিন সুলায়মান সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ। ইবনু আদী ও ইমাম দারাকুতনী বলেন, তার হাদিস বর্ণনায় সমস্যা নেই। আস-সাজী বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন)
১২/ ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ২৪১: ইলমের ফযীলত
তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ১৩৯৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩৯১
১৬/১৩৯৯। উক্ত রাবী (আবূ হুরাইরা) রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন জ্ঞান অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহ আয্যা অজাল্লার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সানাদ)[1]
[1] আবূ দাউদ ৩৬৬৪, ইবনু মাজাহ ২৫২, আহমাদ ৮২৫২
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
ভাষার আবিষ্কার
আমরা মানব সভ্যতার ইতিহাস থেকে জানি, মানুষের ভাষার আবিষ্কার এবং বস্তুর নামকরণ হয়েছে ভাষার ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়ে। শুধু আধুনিক মানুষই নয়, নিয়ানডারথাল নামক মানুষের আরেক প্রজাতি, যারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তারাও সামান্য হলেও কথা বলতে পারতো বা যোগাযোগ করতে পারতো [4]। যদিও সেগুলো আধুনিক হোমো হোমো সেপিয়েন্স বা মানুষের মত সমৃদ্ধ ভাষা নয়। তবে তারা ভালভাবে যোগাযোগ এবং মনের ভাব আমাদের ভাষার মত জটিল করে না হলেও মোটামুটি প্রকাশ করতে পারতো। কিন্তু ইসলামি বিশ্বাস হচ্ছে, আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করার পরেই প্রতিটি বস্তুর নাম তাকে শিক্ষা দেন। এর অর্থ হচ্ছে, প্রথম মানুষই কথা বলতে পারতো, বা ভাষা মানুষের সৃষ্টি নয়! ইসলাম আমাদের জানাচ্ছে, আল্লাহ যেহেতু প্রথমেই ভাষা শিখিয়েছে, তাই ভাষার উদ্ভব এবং ক্রমবিকাশ পুরোটাই ভুল! যা প্রতিষ্ঠিত সকল বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং ঐতিহাসিক প্রমাণাদির বিরুদ্ধে যায়। [5]
এবং তিনি আদাম (আ.)-কে সকল বস্তুর নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন এবং বললেন, ‘এ বস্তুগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।
Taisirul Quran
এবং তিনি আদমকে সমস্ত নাম শিক্ষা দিলেন, অনন্তর তৎসমূদয় মালাইকা/ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপিত করলেন, অতঃপর বললেনঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে আমাকে এ সব বস্তুর নামসমূহ বর্ণনা কর।
Sheikh Mujibur Rahman
আর তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। সুতরাং বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।
Rawai Al-bayan
আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন [১] , তারপর সেগুলো [২] ফেরেশ্তাদের সামনে উপস্থাপন করে বললেন, ‘ এগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও ’।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আল্লামা ইবনে কাসীরের তাফসীর এবং অন্যান্য বেশ কিছু সূত্র থেকে থেকে জানা যায়, জান্নাতের ভাষাও হবে আরবি। যদিও সহিহ হাদিস থেকে এর কোন প্রমাণ মেলে না [6] –
এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ এবং তার ফেরেশতাগণ আরবি ভাষাতেই কথাবার্তা বলেন। কিয়ামতের ময়দানে সকলের ভাষা হবে সুরিয়ানী ভাষা। তবে জান্নাতে তারা আরবিতেই কথাবার্তা বলবে!
বিজ্ঞান ও ইসলামি সৃষ্টিতত্ত্ব
হাইড্রোজেন, পানি নাকি কলম
আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে আমরা জানি, মহাবিশ্বের সকল পদার্থ মৌলিক পদার্থগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয়। স্কুল জীবনে আমরা শিখেছি, মৌলিক পদার্থের সংখ্যা ১০৯ টি। বর্তমান সময়ে মোট ১১৮টি মৌল চিহ্নিত হয়েছে যার মধ্যে ৯৮টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, বাকী ২০টি কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়। সাধারণত, একটি মৌলের পরমাণুতে প্রোটন সংখ্যা নির্দিষ্ট বা একই মৌলের প্রতিটি পরমাণুতে সমান সংখ্যা প্রোটন থাকে (অর্থাৎ, তাদের প্রত্যেকের পারমাণবিক সংখ্যা একই এবং ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ভিন্ন)। তাই, সাধারণভাবে প্রোটন সংখ্যা দ্বারা কোন মৌল চেনা যায়।
তবে, একই মৌলের ভিন্ন নিউট্রন সংখ্যা বিশিষ্ট পরমাণুও রয়েছে, যাদেরকে আইসোটোপ বলে। একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপে একই সংখ্যক প্রোটন থাকে, নিউট্রন সংখ্যা এবং ভর সংখ্যা বা পারমাণবিক ভরে ভিন্নতা থাকে।
সমগ্র মহাবিশ্বে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, যেগুলো তৈরি হয়েছে মহাবিষ্ফোরণ বা বৃহৎ সম্প্রসারণের প্রাথমিক পর্যায়ে। হাইড্রোজেনে একটি প্রোটন থাকায় এটিই সর্বপ্রথম মৌলিক পদার্থ হিসেবে স্বীকৃত। এর অর্থ হচ্ছে, হাইড্রোজেনই প্রথম পদার্থ।
কিন্তু ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর। অর্থাৎ মহাবিশ্ব এবং মহাবিশ্বের সকল পদার্থ সৃষ্টির পূর্বে পানি তৈরি হয়েছে, হাইড্রোজেন তৈরির আগেই পানি বানানোর চিন্তা খুবই অবৈজ্ঞানিক এবং হাস্যকর কথা। কারণ পানি তৈরিতে হাইড্রোজেন প্রয়োজন হয়। হাইড্রোজেনের আগে পানির অস্তিত্ব সম্ভব নয়। এবং হাইড্রোজেনের সৃষ্টি মহাবিশ্বের উৎপত্তির সাথে সাথে। কোরআন বা বাইবেলে বা মহাভারতের এই সকল ভুল তথ্য যে আসলে প্রাচীন দার্শনিক থেলিসের দ্বারা প্রভাবিত, তা বুঝতে খুব সমস্যা হয় না।
প্রাচীনকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এবং যাকে রীতিমত দর্শনের জনক হিসেবেও ধরা হয়, তার নাম থেলিস বা মাইলেটাসের থেলিস। তার জন্ম অনুমানিক ৬২৪–৬২৫ খ্রিস্টপূর্ব মৃত্যু ৫৬৯-৫৮৬ খ্রিস্টপূর্ব সালে। তিনি ছিলেন প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দার্শনিক, এবং তার মতবাদই সারা পৃথিবীতে একসময় সবচাইতে প্রভাবশালী মতবাদ বলে বিবেচিত হতো। তিনি মনে করতেন, “সবকিছুর আদিমতম উপাদান হচ্ছে পানি”[7] । তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী দার্শনিক এবং তার এই মতবাদও অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় পরবর্তী সময়ের প্রায় সকল দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের ওপরই এই মতবাদ প্রভাব বিস্তার করেছে। সেই প্রভাব আমরা দেখতে পাই বাইবেলের মধ্যে, একইসাথে কোরআনের মধ্যেও।
কোরআনে বলা হয়েছে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর [8] –
তিনিই সর্বশক্তিমান, যিনি সৃজন করিয়াছেন আসমান ও জমীনকে ছয় দিবসে আর তিনি সিংহাসনে আসীন ছিলেন যা ছিল পানির উপরে।
হাদিসেও অসংখ্যবার বলা হয়েছে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর। কিন্তু যখন মহাবিশ্বের পদার্থসমূহ তৈরি হয়নি, তখন পানি আসলো কোথা থেকে? [9]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৯৭/ তাওহীদ
পরিচ্ছেদঃ ৯৭/২২. আল্লাহর বাণীঃ তখন তাঁর আরশ পানির ওপর ছিল- (সূরাহ হূদ ১১/৭)। তিনি আরশে ‘আযীমের প্রতিপালক- (সূরাহ আত্-তাওবাহ ৯/১২৯)।
৭৪২৭. আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সব মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে। (আমার হুঁশ ফিরলে) তখন আমি মূসা (আঃ)-কে আরশের একটি পায়া ধরে দাঁড়ানো দেখতে পাব।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
এবারে আসুন দেখা যাক, কোরআনের বহু পূর্বে লিখিত বাইবেলে কী বলা আছে [10] –
আদিপুস্তক ১
১ শুরুতে, ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। প্রথমে পৃথিবী সম্পূর্ণ শূন্য ছিল; পৃথিবীতে কিছুই ছিল না।
২ অন্ধকারে আবৃত ছিল জলরাশি আর ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল।
৬ তারপর ঈশ্বর বললেন, “জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশমণ্ডলের ব্যবস্থা হোক।”
৭ তাই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে থাকল।
৯ তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়।” এবং তা-ই হল।
এবারে আসুন হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ণে এই বিষয়ে কী বলা আছে সেটি পড়ে নিই [11] –
सर्वं सलिलमेवासीत्पृथिवी यत्र निर्मिता।
तत: समभवद्ब्रह्मा स्वयम्भूर्दैवतै: सह।।2.110.3।।
At the beginning, all this was water from which the earth was created. Thereafter, the selfexistent Brahma along with the gods came into existence.
প্রায় কাছাকাছি কথা বলা আছে মহাভারতেও। আসুন মহাভারতে মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে কী বলা আছে সেটিও পড়ি [12] –
প্রথমে কেবল একমাত্র সনাতন ভগবান্ ব্রহ্মা বিদ্যামান ছিলেন। অনন্তর তাঁহার মরীচি, অত্রি,অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু ও বশিষ্ঠ এই সাত অগ্নিতুল্য পুত্রের উৎপত্তি হয়।
সমগ্র বিশ্ব এক ঘোরতর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, পরমব্রহ্ম নিজ তেজে সেই অন্ধকার দূর করে জল সৃষ্টি করলেন। সেই জলে সৃষ্টির বীজ নিক্ষেপ করলে একটি অতিকায় সুবর্ণ অণ্ড বা ডিম সৃষ্টি হয়। সেই অণ্ডের মধ্যে পরমব্রহ্ম স্বয়ং প্রবেশ করেন। এরপর অণ্ড দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এর একভাগ দ্বারা আকাশ ও অপর ভাগ দ্বারা ভূমণ্ডল তৈরি হয়। এরপর ব্রহ্মা মন থেকে দশজন প্রজাপতি সৃষ্টি করেন। এই প্রজাপতিরাই মানবজাতির আদিপিতা। এই দশজন প্রজাপতি হলেন- অঙ্গিরা, অত্রি, ক্রতু, দক্ষ, নারদ,পুলস্ত্য, পুলহ, বশিষ্ঠ, ভৃগু ও মরীচি। ব্রহ্মার আদেশে এঁরা বিভিন্ন প্রাণী সৃষ্টি করলেন। বাকি একজন অর্থাৎ নারদকে সৃষ্টি রক্ষার ভার দিলেন। কিন্তু ব্রহ্ম-সাধনায় বিঘ্ন হবে বলে নারদ সে ভার গ্রহণ করলেন না। এই কারণে ব্রহ্মা তাঁকে মানুষ ও গন্ধর্বরূপে জন্মগ্রহণ করার অভিশাপ দিলেন।
মজার বিষয় হচ্ছে, অন্য আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে সর্বপ্রথম সৃষ্ট বস্তু হচ্ছে কলম। বোঝাই যাচ্ছে নবী মুহাম্মদ ব্যাপারগুলো নিয়ে তালগোল ভালই পাকিয়েছেন, যেগুলো জায়েজ করতে এখনকার ইসলামিক আলেমদের নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতে হয়। আবোলতাবোল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে অন্ধবিশ্বাসীদের বুঝ দিতে হয়। কিন্তু কলম তো মানুষের মানবীয় একটি আবিষ্কার। মহাবিশ্বের সর্বপ্রথম সৃষ্ট বস্তু হচ্ছে কলম, এই কথাটিও অত্যন্ত হাস্যকর। এতটাই হাস্যকর যে, এর সত্যতা নিয়ে বেশি চিন্তাও করতে হয় না। আসুন হাদিসটি পড়ি [13] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৭. তাকদীর সম্পর্কে
৪৭০০। আবূ হাফসাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) তার ছেলেকে বললেন, হে আমার প্রিয় পুত্র! তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানের স্বাদ পাবে না যতক্ষণ না তুমি জানতে পারবে ’’যা তোমার উপর ঘটেছে তা ভুলেও এড়িয়ে যাওয়ার ছিলো না। পক্ষান্তরে, যা এড়িয়ে গেছে তা তোমার উপর ভুলেও ঘটবার ছিলো না।
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হচ্ছে কলম। অতঃপর তিনি তাকে বললেন, লিখো! কলম বললো, হে রব! কি লিখবো? তিনি বললেন, কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক বস্তুর তাকদীর লিখো। হে আমার প্রিয় পুত্র! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাস ছাড়া মারা যায় সে আমার (উম্মাতের) নয়।[1]
সহীহ।
[1]. তিরমিযী, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এবারে আসুন এই হাদিসটি নিয়ে একটু চিন্তা করি। উপরের হাদিস থেকে জানা যাচ্ছে, কলমকে আল্লাহপাক নির্দেশ দিলেন, কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সবকিছু লিখে ফেলতে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, কলম কী একটি সচেতন সত্ত্বা? অর্থাৎ চিন্তাভাবনা করতে সক্ষম? নিজের মগজ খাটিয়ে কথাবার্তা বলতে সক্ষম? সেটি অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন কুদরতি কলম হয়ে থাকলে, সেই কলম কি গায়েব জানে? অর্থাৎ ভবিষ্যতে কী হবে না হবে, এটি তো ইসলাম ধর্ম অনুসারে শুধুমাত্র আল্লাহ পাক জানেন। তাহলে আল্লাহ না বলে দিলে কলম সেটি জানবে কীভাবে? লিখবেই বা কীভাবে? এখানে তো আল্লাহ পাকের ধারা বিবরণী দেয়ার প্রয়োজন ছিল যে, অমুকটি লেখো তমুকটি লেখো। কলমটি আল্লাহর ধারা বর্ণনা অনুসারে শুধু লিখে যাবে। কিন্তু আল্লাহ নির্দেশ দিলেন, কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সবকিছু লিখে ফেলতে। ধারা বিবরণী তো তিনি দিলেন না। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, কলমও জানে যে, ভবিষ্যতে অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত কী হবে সবকিছু। তাহলে এই কলমটিও তো আল্লাহর গুণসম্পন্ন, অর্থাৎ গায়েব জানে। এটা তো তাহলে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের পরিপন্থী হয়ে যাচ্ছে। এরকম প্রশ্ন কী আপনার মাথায় আসেনি?
আল্লাহর একদিন অর্থ
পৃথিবীতে সূর্য যখন ওঠে এবং যখন অস্ত যায়, এই সময়টুকুকে আমরা মানুষেরা সময় গণনার একটি ইউনিট হিসেবে ধরে নিয়েছি। একে আমরা দিন বলি। এরপরে আসে রাত। একটি পুরো দিন এবং একটি পুরো রাত মিলে হয় একটি গোটা দিন। মানে হচ্ছে, এক দিন সময়ের একটি একক। সূর্য উঠা থেকে শুরু করে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে পুনরায় সূর্য উঠা পর্যন্ত সময়কে দিন বলা হয়। তাই দিন পুরোপুরিই নির্ভর করে পৃথিবী এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতির ওপর। অন্যান্য গ্রহে দিনের হিসেব হবে ভিন্ন, রাতের হিসেবও। দিনের এই হিসেব নির্ভর করে আপনি কোন গ্রহে অবস্থান করছেন, আপনার গ্রহটির ঘূর্ণন গতি এবং আপনার নিকটবর্তী নক্ষত্র কোনটি তার ওপর। অন্য গ্রহে পৃথিবীর হিসেব অনুসারে দিন একরকম নয়। যেমন,
গ্রহ | গোটা দিনের দৈর্ঘ্য |
বুধ | ১৪০৮ ঘণ্টা |
শুক্র | ৫৮৩২ ঘণ্টা |
পৃথিবী | ২৪ ঘণ্টা |
মঙ্গল | ২৫ ঘণ্টা |
বৃহস্পতি | ১০ ঘণ্টা |
শনি | ১১ ঘণ্টা |
প্লুটো | ১৭ ঘণ্টা |
নেপচুন | ১৬ ঘণ্টা |
কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ পাক যেখানে থাকেন সেখানেও দিন রাত্রির হিসেব রয়েছে। তবে সেই দিন পৃথিবীর দিন থেকে অনেক বড় [14] [15]-
তোমার প্রতিপালকের একদিন হল তোমাদের গণনায় এক হাজার বছরের সমান।
— Taisirul Quran
তোমার রবের একদিন তোমাদের গণনায় সহস্র বছরের সমান।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তোমার রবের নিকট নিশ্চয় এক দিন তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।
— Rawai Al-bayan
আর নিশ্চয় আপনার রবের কাছে একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান;
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত কার্য পরিচালনা করেন, অতঃপর সকল বিষয়াদি তাঁরই কাছে একদিন উত্থিত হবে যার পরিমাপ তোমাদের গণনা অনুযায়ী হাজার বছর।
— Taisirul Quran
তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন, অতঃপর একদিন সব কিছুই তাঁর সমীপে সমুত্থিত হবে, যে দিনের পরিমাপ হবে তোমাদের হিসাবে হাজার বছরের সমান।
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনি আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করেন। তারপর তা একদিন তাঁর কাছেই উঠবে। যেদিনের পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছর।
— Rawai Al-bayan
তিনি আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন, তারপর সব কিছুই তাঁর সমীপে উত্থিত হবে এমন এক দিনে যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনা অনুসারে হাজার বছর [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে আরোহণ করে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর [16]
ফেরেশতা এবং রূহ (অর্থাৎ জিবরীল) আল্লাহর দিকে আরোহণ করে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।
— Taisirul Quran
মালাইকা/ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যা পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বৎসরের সমান।
— Sheikh Mujibur Rahman
ফেরেশতাগণ ও রূহ এমন এক দিনে আল্লাহর পানে ঊর্ধ্বগামী হয়, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।
— Rawai Al-bayan
ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে উর্ধ্বগামী হয় [১] এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর [২] ।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
উপরের আয়াতটি থেকে জানা যায়, আল্লাহ যেখানে থাকেন সেখানেও দিনরাত রয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে তিনি কোন গ্রহে বসবাস করেন, সেই গ্রহটিও ঘূর্ণায়মান এবং গ্রহটির নিকটবর্তী একটি নক্ষত্র রয়েছে যা গ্রহটিকে আলো দেয়। নতুবা তার দিনের হিসেব থাকার কথা নয়। আমরা জানি, এক বছরে ৮৭৬০ ঘণ্টা। অর্থাৎ, এক হাজার বছরে ৮৭৬০০০০ ঘণ্টা। অর্থাৎ গ্রহটি নিজ অক্ষের ওপর একবার ঘুরতে এই সময় প্রয়োজন হয়। এরকম গ্রহ আদৌ থাকা সম্ভব কিনা, সেটি একটি প্রশ্ন বটে। সেটিও মেনে নিলে, আল্লাহ পাক যে কোন একটি গ্রহে বসবাস করেন, সেই গ্রহের নিকটবর্তী যে একটি নক্ষত্র রয়েছে, সেটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। নইলে সেখানে দিন আসবে কোথা থেকে? দিন থাকলে অবশ্যই সেই গ্রহে অন্তত একটি নিকটবর্তী নক্ষত্র প্রয়োজন, তাই না?
ছয়দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টি
আমরা জানি যে, দিন রাতের হিসেবের জন্য প্রয়োজন হয় একটি গ্রহের নিজ অক্ষের ওপর ঘূর্ণন এবং পার্শ্ববর্তী একটি নক্ষত্রের, যেমন পৃথিবীর জন্য রয়েছে সূর্য। কিন্তু মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে দিনরাত বলে কিছু থাকার কথা নয়। কারণ বৃহৎ সম্প্রসারণ তত্ত্ব থেকে আমরা জানি, মহাবিশ্বের উদ্ভবের পুর্বে আমরা যাকে সময় বলে বুঝি, সেই সময় বলে কিছুর অস্তিত্বই ছিল না। তাহলে তিনি ছয় দিনে বা আটদিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করলেন কীভাবে? আর দিনের হিসেব তখনই থাকতে পারে, যখন কোন গ্রহে কেউ অবস্থা করবে এবং সেই গ্রহের নিকটবর্তী একটি নক্ষত্র থাকবে। তাহলে আল্লাহ কী কোন গ্রহে থাকেন? উনি কি এলিয়েন? [17] [18] [19]
নি:সন্দেহ, তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ , যিনি আসমান ও জমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করিয়াছেন, অনন্তর সিংহাসনে সমাসীন হইয়াছেন, তিনিই দিনকে রাত্রির দ্বারা আচ্ছাদিত করেন, যাহা উহার পিছনে দৌড়াইয়া চলে এবং তিনিই চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্রসমূহকে তাহার নির্দেশাধীন করিয়াছেন।
তোমাদের প্রতিপালক সেই আল্লাহ তিনি আকাশ ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করিয়াছেন ছয় দিবসে, তৎপর তিনি অধিষ্ঠিত হন আরশের উপর।
আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এ দু’এর মাঝে যা কিছু আছে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন- অতঃপর তিনি ‘আরশে সমুন্নত হন। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য কোন অভিভাবক নেই, সুপারিশকারীও নেই। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
— Taisirul Quran
আল্লাহ, তিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং সাহায্যকারীও নেই, তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবেনা?
— Sheikh Mujibur Rahman
আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তা ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য কোন অভিভাবক নেই এবং নেই কোন সুপারিশকারী। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
— Rawai Al-bayan
আল্লাহ্, যিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের অন্তর্বর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। তারপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক নেই ও সুপারিশকারীও নেই; তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে আসুন উপরের আয়াতটির তাফসীর পড়ে নিই তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে [20] –
এবারে আসুন তাফসীরে মাযহারী থেকে দেখে নেয়া যাক, এই বিষয়ে সেখানে কী বলা হয়েছে, [21]
এবারে আসুন তাফসীরে জালালাইন থেকে পড়ে নিই, এই ছয়দিনে মহাবিশ্ব সম্পর্কে, [22] –
শুধু তাই নয়, সহিহ হাদিসের বর্ণনা অনুসারে, মুহাম্মদ একদম ধরে ধরে বলে দিয়েছেন, কোন দিন আল্লাহ কী কী সৃষ্টি করেছেন। মহাবিশ্ব সৃষ্টি বা সূর্যের সৃষ্টির পুর্বে শনি রবি সোমবার কোথা থেকে আসলো, সেটিই প্রশ্ন। কারণ এই বারগুলো সূর্য বা নিকটবর্তী নক্ষত্রের ওপর নির্ভরশীল [23] [24] –
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৫২। কিয়ামাত, জান্নাত ও জান্নামের বর্ণনা
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ১. সৃষ্টির সূচনা এবং আদাম (আঃ) এর সৃষ্টি
৬৯৪৭-(২৭/২৭৮৯) সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও হারূন ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ….. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তা’আলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন এবং এতে পর্বত সৃষ্টি করেন রবিবার দিন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি বিপদাপদ সৃষ্টি করেন। তিনি নূর সৃষ্টি করেন বুধবার দিন। তিনি বৃহস্পতিবার দিন পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর জুমুআর দিনের শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ আসর থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ মাখলুক আদাম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৯৭,ইসলামিক সেন্টার ৬৮৫১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৩/ কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২. সৃষ্টির সূচনা এবং আদম (আঃ) এর সৃষ্টি
৬৭৯৭। সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তাআলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন। রোববার দিন তিনি এতে পর্বত সৃষ্টি করেন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি আপদ বিপদ সৃষ্টি করেন। বুধবার দিন তিনি নূর সৃষ্টি করেন। বৃহস্পতিবার দিন তিনি পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ জুমুআর দিনের সময়সমূহের শেষ মুহূর্তে (মাখলূক) আসর থেকে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এই বর্ণনাগুলো অনেকটাই বাইবেলের বর্ণনার সাথে মিলে যায়। আসুন বাইবেলে কী বলা আছে সেটিও দেখে নিই [10]। উল্লেখ্য, বাইবেলেও বলা হয়েছে সূর্যের আগেই পৃথিবীতে গাছপালা সৃষ্টি করা হয়েছে, যেই কথাগুলো কতটা হাস্যকর তা পাঠকই বিবেচনা করবেন।
10 ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন, “পৃথিবী” এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন, “মহাসাগর।” ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
11 তখন ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীতে ঘাস হোক, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক। ফলের গাছগুলিতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এইসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক।” আর তাই-ই হল।
12 পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উত্পন্ন হল। আবার ফলদায়ী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
13 সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন।
14 তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভা শুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে।
15 পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।” এবং তা-ই হল।
16 তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন।
17 পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন।
18 দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
19 সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে চতুর্থ দিন হল।
20 তারপর ঈশ্বর বললেন, “বহু প্রকার জীবন্ত প্রাণীতে জল পূর্ণ হোক আর পৃথিবীর ওপরে আকাশে ওড়বার জন্য বহু পাখি হোক।”
21 সুতরাং ঈশ্বর বড় বড় জলজন্তু এবং জলে বিচরণ করবে এমন সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করলেন। অনেক প্রকার সামুদ্রিক জীব রয়েছে এবং সে সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি। যত রকম পাখি আকাশে ওড়ে সেইসবও ঈশ্বর বানালেন। এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটি ভাল হয়েছে।
22 ঈশ্বর এই সমস্ত প্রাণীদের আশীর্বাদ করলেন। ঈশ্বর সামুদ্রিক প্রাণীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে সমুদ্র ভরিয়ে তুলতে বললেন। ঈশ্বর পৃথিবীতে পাখিদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে বললেন।
23 সন্ধ্যা হয়ে গেল এবং তারপর সকাল হল। এভাবে পঞ্চম দিন কেটে গেল।
24 তারপর ঈশ্বর বললেন, “নানারকম প্রাণী পৃথিবীতে উত্পন্ন হোক। নানারকম বড় আকারের জন্তু জানোয়ার আর বুকে হেঁটে চলার নানারকম ছোট প্রাণী হোক এবং প্রচুর সংখ্যায় তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি হোক।” তখন য়েমন তিনি বললেন সব কিছু সম্পন্ন হল।
25 সুতরাং ঈশ্বর সব রকম জন্তু জানোয়ার তেমনভাবে তৈরি করলেন। বন্য জন্তু, পোষ্য জন্তু আর বুকে হাঁটার সবরকমের ছোট ছোট প্রাণী ঈশ্বর বানালেন এবং ঈশ্বর দেখলেন প্রতিটি জিনিসই বেশ ভালো হয়েছে।
26 তখন ঈশ্বর বললেন, “এখন এস, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি। আমাদের আদলে আমরা মানুষ সৃষ্টি করব। মানুষ হবে ঠিক আমাদের মত। তারা সমুদ্রের সমস্ত মাছের ওপরে আর আকাশের সমস্ত পাখির ওপরে কর্তৃত্ব করবে। তারা পৃথিবীর সমস্ত বড় জানোয়ার আর বুকে হাঁটা সমস্ত ছোট প্রাণীর উপরে কর্তৃত্ব করবে।”
27 তাই ঈশ্বর নিজের মতোই মানুষ সৃষ্টি করলেন। মানুষ হল তাঁর ছাঁচে গড়া জীব। ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করলেন।
28 ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমাদের বহু সন্তানসন্ততি হোক। মানুষে মানুষে পৃথিবী পরিপূর্ণ করো এবং তোমরা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের ভার নাও, সমুদ্রে মাছেদের এবং বাতাসে পাখিদের শাসন করো। মাটির ওপর যা কিছু নড়েচড়ে, যাবতীয় প্রাণীকে তোমরা শাসন করো।”
29 ঈশ্বর বললেন, “আমি তোমাদের শস্যদায়ী সমস্ত গাছ ও সমস্ত ফলদায়ী গাছপালা দিচ্ছি। ঐসব গাছ বীজযুক্ত ফল উৎপাদন করে। এই সমস্ত শস্য ও ফল হবে তোমাদের খাদ্য।
30 এবং জানোয়ারদের সমস্ত সবুজ গাছপালা দিচ্ছি। তাদের খাদ্য হবে সবুজ গাছপালা। পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার, আকাশের সমস্ত পাখি এবং মাটির উপরে বুকে হাঁটে যেসব কীট সবাই ঐ খাদ্য খাবে।” এবং এই সব কিছুই সম্পন্ন হল।
31 ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেসব কিছু দেখলেন এবং ঈশ্বর দেখলেন সমস্ত সৃষ্টিই খুব ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল, তারপর সকাল হল। এভাবে ষষ্ঠ দিন হল।
শুরু থেকেই বারোমাসে বছর
পৃথিবীতে বসবাস করা মানুষ তাদের সুবিধার জন্য সময়ের কিছু একক নির্ধারণ করেছে। সেই এককগুলোর একটি প্রধান একক হচ্ছে সৌর বছর। সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর একটি প্রদক্ষিণ সম্পূর্ণ করতে যে সময় লাগে তাকে আমরা এক বছর ধরি। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ হিসেবটি করেছে, যেটি হচ্ছে প্রায় ৩৬৫.২৪ দিন। আধুনিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে এই বছরকে আমরা আবার ১২ টি ভাগে ভাগ করেছি, আমাদের মানুষের সুবিধার জন্য। বছরের একই সময়ে সূর্যের আকাশে একই অবস্থানে ফিরে আসতে এই সময় লাগে। উল্লেখ্য, সৌর বছরের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে পর্যায়ক্রমে ক্যালেন্ডারে লিপ বছর যোগ করা হয়।
প্রাচীন মায়ান ক্যালেন্ডারে পদ্ধতিটি বেশ জটিল ছিল এবং বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের মাসে তা বিভক্ত ছিল। মায়ান ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চক্রগুলির মধ্যে একটি ছিল টুন, যা ৩৬০ দিনের সমতুল্য। টুনের মধ্যে, মোট ৩৬০ দিনের জন্য প্রতিটি ২০ দিনের ১৮টি মাস ছিল। মাসগুলির নাম মায়া অঞ্চল এবং সময়কালের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতো, সেগুলি সাধারণত প্রাকৃতিক ঘটনা বা দেবতাদের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। টুন ছাড়াও, মায়ান ক্যালেন্ডারে হাব নামে পরিচিত আরও একটি পৃথক চক্র ছিল, যেটি ৩৬৫ দিন নিয়ে গঠিত ছিল। ১৮টি মাসে এবং প্রতিটি মাস ২০ দিনে বিভক্ত এই ক্যালেন্ডারে শেষ ৫টি দিন “ওয়ায়েব” নামে পরিচিত ছিল [25]। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে ১০ মাসে বছরের হিসেবটি করেছিলেন রোমান সম্রাট Romulus। প্রাচীন গ্রীস দ্বারা অনুপ্রাণিত এই রাজা তাদের পদ্ধতিই অনুসরণ করতেন রাজ্য চালাবার স্বার্থে [26]।
কিন্তু আমার পয়েন্ট সেটি নয়। আমার পয়েন্ট হচ্ছে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময় যখন সূর্য নামক নক্ষত্রটিই ছিল না, পৃথিবী নামক গ্রহটিও ছিল না, তখন সৌর বছর আসবে কোথা থেকে? সৌর বছর না থাকলে ১২ মাসের হিসেবও বা কোথা থেকে আসবে? কারণ এগুলো তো পৃথিবীর সাথে আপেক্ষিক। অন্যান্য সকল গ্রহ নক্ষত্র সবখানেই বছরের এই হিসেব হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমরা সকলেই জানি, মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর, সূর্যের বয়স প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর, পৃথিবী নামক গ্রহটির বয়স ৪.৫৬ বিলিয়ন বছর। সূর্যের গঠন, পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ থেকে প্রাপ্ত পাথরের বয়স এবং কাছাকাছি নক্ষত্রের বয়স সহ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে এই বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ কোরআন বলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা, যে কথা কোন সেন্সই মেইক করে না [27] –
আসমান-যমীন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে (লৌহ মাহফুজে) মাসগুলোর সংখ্যা হল বার। তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। এটা হল সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন। কাজেই ঐ সময়ের মধ্যে নিজেদের উপর যুলম করো না। মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে। জেনে রেখ, আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন।
— Taisirul Quran
নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে মাস গণনায় বারটি। এর মধ্যে বিশেষ রূপে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত। এটাই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম। অতএব তোমরা এ মাসগুলিতে (ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করে) নিজেদের ক্ষতি সাধন করনা, আর মুশরিকদের বিরুদ্ধে সকলে একযোগে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সকলে একযোগে যুদ্ধ করে। আর জেনে রেখ যে, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলম করো না, আর তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর যেমনিভাবে তারা সকলে তোমাদের সাথে লড়াই করে, আর জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টির দিন থেকেই [১] আল্লাহ্র বিধানে [২] আল্লাহ্র কাছে গণনায় মাস বারটি [৩], তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস [৪], এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন [৫]। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আসুন পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে তাফসীরে জালালাইনে কী বলা আছে জেনে নেয়া যাক, [28] –
এবারে আসুন জেনে নিই, আমাদের মাদ্রাসাগুলোতে পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে ইসলামিক আলেমগণ তাদের গ্রন্থগুলো থেকে কী শেখাচ্ছে,
সাত আসমান ও সাত জমিন
বিজ্ঞানের জগতে আকাশ বা আসমান বলতে নির্দিষ্ট কিছু বা কোন বস্তুকে বোঝানো হয় না। বরঞ্চ আমরা উপরে যা দেখি সবই আকাশের অন্তর্ভূক্ত। আমরা দিনের বেলা পৃথিবীর আকাশকে নীল দেখতে পাই। বস্তুতপক্ষে এটি আমাদের এক ধরণের দৃষ্টিবিভ্রম। আলোর বিক্ষেপণের কারণে আকাশ নীল দেখায়। কোন কণিকার ওপর আলো পড়লে সেই কণিকা আলোকে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেয়, যাকে আলোর বিক্ষেপণ বলে। যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত কম, সেই আলোর বিক্ষেপণ তত বেশি হয়। আলোর বিক্ষেপণ এর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চতুর্ঘাতের ব্যস্তানুপাতিক। বেগুনি ও নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম। তাই আকাশে এই আলো দুইটির বিক্ষেপণ বেশি হয়। আবার আমাদের চোখ বেগুনি অপেক্ষা নীল বর্ণের আলোর প্রতি অধিক সংবেদনশীল। তাই আকাশ নীল দেখায়।
ইসলামের সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে আল্লাহ সাতটি আসমান এবং সাতটি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন [29] –
আল্লাহই সাত আসমান বানিয়েছেন আর ওগুলোর মত পৃথিবীও, সবগুলোর মাঝে (অর্থাৎ সকল আসমানে আর সকল যমীনে) নেমে আসে আল্লাহর নির্দেশ যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান আর আল্লাহ (স্বীয়) জ্ঞানে সব কিছুকে ঘিরে রেখেছেন।
— Taisirul Quran
আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণ। ওগুলির মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ; ফলে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনি আল্লাহ, যিনি সাত আসমান এবং অনুরূপ যমীন সৃষ্টি করেছেন; এগুলির মাঝে তাঁর নির্দেশ অবতীর্ণ হয় যেন তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং আল্লাহর জ্ঞানতো সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে।
— Rawai Al-bayan
তিনি আল্লাহ্, যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং অনুরূপ যমীন, তাদের মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ; যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং জ্ঞানে আল্লাহ্ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এসব কারণেই অনেক ইসলামিক আলেম প্রায়শই দাবী করেন যে, মাটির নিচে আরো পৃথিবী রয়েছে, সেখানেও মানুষ আছে। বিশেষ করে এই বিষয়ে মুফতি ইব্রাহীমের অনেকগুলো ভিডিও রয়েছে। এখানে উদাহরণ হিসেবে একটি ভিডিও দেয়া হচ্ছে –
অনেক মুসলিমই এই সাত আসমানকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সাতটি স্তরের সাথে মিলিয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন কোরআনকে বিজ্ঞানসম্মত করার ইচ্ছে নিয়ে। তবে তাদের এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় কোরআনেরই আয়াত দ্বারা, যেখানে বর্ণিত আছে, আল্লাহ নিকটবর্তী আসমানকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছেন। আসমানগুলোকে বায়ুমণ্ডলের স্তর হিসেবে ব্যাখ্যা দিলে এটিও মেনে নিতে হবে যে, সূর্য নামক নক্ষত্রটি বায়ুমণ্ডলের প্রথম স্তরে অবস্থিত। যেটি হবে আরো হাস্যকর ব্যাখ্যা। আসুন কোরআনের সেই আয়াত দুইটি পড়ে নিই [30] [31] –
নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি। এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে। ওরা উর্ধ্ব জগতের কোন কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং চার দিক থেকে তাদের প্রতি উল্কা নিক্ষেপ করা হয়। ওদেরকে বিতাড়নের উদ্দেশে। ওদের জন্যে রয়েছে বিরামহীন শাস্তি। তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে।
আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি।
প্রাচীনকালের ধর্মীয় বা পৌরাণিক সৃষ্টিতত্ত্বে ধারণা করা হতো যে, পৃথিবীর ওপর সাতটি আসমান বা আকাশমণ্ডলের সাতটি স্তর রয়েছে, একই সাথে মাটির নিচেও রয়েছে সাতটি পৃথিবী। প্রাচীনকালে এগুলি দেবদেবী বা অতিপ্রাকৃতিক সত্ত্বা সমূহের আবাসস্থল হিসেবে গণ্য করা হতো। দৃশ্যমান জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু যেমন গ্রহ-নক্ষত্র, এসবকে এই আসমানসমূহের সাথে সম্পর্কিত করা হত।
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ান সভ্যতায় সপ্ত আসমানের ধারণা বিকশিত হয়েছিল [32]। সুমেরীয় ভাষায় স্বর্গ (আসমান বা আকাশ) ও পৃথিবীকে (জমিন) বলা হত “আন” এবং “কি”। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের শেষের দিকে সুমেরীয় জাদুমন্ত্রে সপ্তস্বর্গের উল্লেখ আছে, যেমন একটিতে এরকম লেখা “আন-ইমিনবি কি-ইমিনবি” (“স্বর্গ সাতটি, পৃথিবী সাতটি”) [33]। মেসোপটেমীয় ধর্মে সাধারণত স্বর্গ মানুষের জন্য কোন স্থান নয়। যেমন গিলগামেশের মহাকাব্যে বীর গিলগামেশ তার বন্ধু এনকিদুকে বলছেন, “স্বর্গে কে যেতে পারে বন্ধু? শুধু দেবতারাই শামাশের (সূর্যদেবের) সঙ্গে চিরকাল থাকবে।”
হিন্দু ধর্মেও সাত স্বর্গের কথা বলা হয়েছে। স্বর্গকে”স্বর্গলোক” বা ঊর্ধ্বলোকও বলা হয়। পুরাণ অনুসারে ব্রহ্মাণ্ডের ঊর্ধ্বাংশ সাতটি লোক বা জগতের সমন্বয়ে গঠিত। পর্যায়ক্রমে এগুলি হচ্ছেঃ ভূলোক (পৃথ্বীলোক বা পৃথিবী), ভুবর্লোক, স্বর্লোক, মহর্লোক, জনলোক, তপোলোক এবং সবার ঊর্ধ্বে সত্যলোক বা ব্রহ্মলোক। হিন্দু পুরাণ এবং অথর্ববেদে ১৪ টি লোকের কথা বলা হয়েছে। এর সাতটি স্বর্গ; বাকি সাতটি পাতাল বা নরক। সপ্তস্বর্গের ঠিক নিচেই সপ্তপাতাল অবস্থিত [34]। স্বর্গের রাজধানী হচ্ছে অমরাবতী এবং ঐরাবত স্বর্গের প্রবেশদ্বার পাহারা দিচ্ছে। দেবরাজ ইন্দ্র সেখানে স্বসভায় (ইন্দ্রলোক/ইন্দ্রপুরী) বিরাজমান।
ইহুদিদের পবিত্র গ্রন্থ তালমুদ অনুসারে মহাবিশ্ব সপ্ত স্বর্গ বা সাত আসমানসমূহ (হিব্রু ভাষায়: שָׁמַיִם “শামাইম”; এই শব্দেরই আরবি স্বগত্রীয় শব্দ “সামাওয়াত”) সমন্বয়ে গঠিত [35]। এগুলির নামঃ
- বিলোন (וילון)
- রাকিয়া (רקיע)
- শেহাকিম (שחקים)
- যেবুল (זבול)
- মা’ওন (מעון)
- মাখোন/মাকোন (מכון)
- আরাবথ (ערבות) – সপ্তম স্বর্গ যেখানে ‘ওফানিম’ (যিহিষ্কেলের পুস্তকে বর্ণিত ঈশ্বরের স্বর্গীয় রথের চক্ররূপী রক্ষী), সরাফগণ (‘সেরাফিম’ – উচ্চপদের স্বর্গদূত বা ফেরেশতা অথবা এক জাতের আগ্নেয় স্বর্গীয় সত্তা), ‘হায়োথ’ বা ‘খায়োৎ’ (আরশ বহনকারী ফেরেশতা বা ঈশ্বরের আসনবাহক স্বর্গদূত) এবং প্রভুর সিংহাসন অবস্থিত [36]।
ইহুদিদের ‘মেরকাবাহ’ (স্বর্গীয় রথ) ও ‘হেখালৎ’ (“প্রাসাদসমূহ”) সাহিত্যে সপ্তস্বর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। হনোকের ৩য় পুস্তকে এর বর্ণনা পাওয়া যায় [37]।
খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারেও বাইবেলে কয়েকটি আসমানের কথা বলা হয়েছে। বাইবেলের নূতন নিয়মে তৃতীয় স্বর্গের একটি স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। ৫৫ খ্রিষ্টাব্দে রোম সাম্রাজ্যের অধীন ম্যাসেডোনিয়ায় লিখিত একটি পৌলীয় পত্র এই আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতাটি তুলে ধরে [38]। যদিও মধ্যযুগীয় কালক্রমে খ্রিস্টান চিন্তাবিদরা মূল সপ্ত স্বর্গের দশ স্বর্গ করে ফেলেন, তবে পূর্বযুগের খ্রিস্টানগণ আসমানকে সাতটিই ভাবতেন বলে বোঝা যায়।
আমি খ্রীষ্টে আশ্রিত একটি লোককে জানি, চোদ্দ বছর আগে যে তৃতীয় স্বর্গে ধরা পড়েছিল, সশরীরে না অশরীরে তা জানি না, ঈশ্বর জানেন৷ এই লোকটির ব্যাপার আমি জানি, সশরীরে কি অশরীরে, তা আমি জানি না, ঈশ্বর জানেন৷ সে স্বর্গোদ্যানে ধরা পড়ায় এমন সব বিস্ময়কর কথা শুনেছিল, যা নিয়ে মানুষের কথা বলা উচিত নয়৷
আসমানসমূহ কিসের তৈরি?
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে মহাবিশ্ব তৈরি সাতটি শক্ত পদার্থে তৈরি আসমান দ্বারা, যেগুলোর প্রত্যেকটিতেই দরজা রয়েছে। সেই সাতটি আসমানে আবার মৃত নবীরা বসবাস করেন, যা সহিহ হাদিস থেকে পরিষ্কারভাবে জানা যায়। মুহাম্মদ মিরাজের রাতে নিজে নাকি সেই সাতটি আসমান ঘুরে এসেছেন। একইসাথে, সেখানে তিনি একটি বিরাট বরই গাছও দেখেছেন। যেটার নাম নাকি সিদরাতুল মুনতাহা। আসুন হাদিসগুলোর একটি হাদিস পড়ে দেখি [39] –
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১। ঈমান [বিশ্বাস]
পরিচ্ছেদঃ ৭৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মি’রাজ এবং সালাত ফরয হওয়া।
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৩০০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৬২
৩০০-(২৫৯/১৬২) শাইবান ইবনু ফার্রূখ (রহঃ) ….. আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার জন্য বুরাক পাঠানো হল[1]। বুরাক গাধা থেকে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট একটি সাদা রঙের জন্তু। যতদূর দৃষ্টি যায় এক পদক্ষেপে সে ততদূর চলে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এতে আরোহণ করলাম এবং বাইতুল মাকদাস পর্যন্ত এসে পৌছলাম। তারপর অন্যান্য আম্বিবায়ে কিরাম তাদের বাহনগুলো যে খুঁটির সাথে বাঁধতেন, আমি সে খুঁটির সাথে আমার বাহনটিও বাঁধলাম। তারপর মসজিদে প্রবেশ করলাম ও দু’ রাকাআত সালাত আদায় করে বের হলাম। জিবরীল (আঃ) একটি শরাবের পাত্র এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ গ্রহণ করলাম। জিবরীল (আঃ) আমাকে বললেন, আপনি ফিতরাহকেই গ্রহণ করলেন।
তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে গেলেন এবং আসমান পর্যন্ত পৌছে দ্বার খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি জিবরীল। জিজ্ঞেস কলা হলো, আপনার সাথে কে? বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হল। সেখানে আমি আদম (আঃ) এর দেখা পাই তিনি আমাকে মুবারাকবাদ জানালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে উর্ধ্বলোক নিয়ে চললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, তাকে কি আনতে পাঠানো হয়েছিল? বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে আমি ঈসা ইবনু মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আঃ) দুই খালাত ভাইয়ের দেখা পেলাম। তারা আমাকে মারহাবা বললেন, আমার জন্য কল্যাণের দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে নিয়ে ঊর্ধ্বলোকে চললেন এবং তৃতীয় আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে ইউসুফ (আঃ) এর দেখা পেলাম। সমুদয় সৌন্দর্যের অর্ধেক দেয়া হয়েছিল তাকে। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে নিয়ে চতুর্থ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে ইদরীস (আঃ) এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন। আল্লাহ তা’আল তার সম্পর্কে ইরশাদ করেছেনঃ “এবং আমি তাকে উন্নীত করেছি উচ্চ মর্যাদায়” (সূরাহ আল হাদীদ ৫৭ঃ ১৯)।
তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে নিয়ে পঞ্চম আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে?”[2] তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে হারূন (আঃ) এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে নিয়ে ষষ্ঠ আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে মূসা (আঃ) এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন।
তারপর জিবরীল (আঃ) সপ্তম আসমানের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরীল। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। জিজ্ঞেস করা হলো, আপনাকে কি তাকে আনতে পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ! পাঠানো হয়েছিল। তারপর আমাদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হল। সেখানে ইবরাহীম (আঃ)-এর দেখা পেলাম। তিনি বাইতুল মামুরে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন[3]। বাইতুল মামুরে প্রত্যেহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশে প্রবেশ করেন যারা আর সেখানে পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না। তারপর জিবরীল (আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায়[4] নিয়ে গেলেন। সে বৃক্ষের পাতাগুলো হাতির কানের ন্যায় আর ফলগুলো বড় বড় মটকার মত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে বৃক্ষটিকে যখন আল্লাহর নির্দেশে যা আবূত করে তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে সৌন্দর্যের বর্ণনা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর আল্লাহ তা’আলা আমার উপর যে ওয়াহী করার তা ওয়াহী করলেন। আমার উপর দিনরাত মোট পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করলেন, এরপর আমি মূসা (আঃ) এর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রতিপালক আপনার উপর কি ফরয করেছেন। আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত। তিনি বললেন, আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং একে আরো সহজ করার আবেদন করুন। কেননা আপনার উম্মত এ নির্দেশ পালনে সক্ষম হবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা করেছি এবং তাদের বিষয়ে আমি অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন আমি আবার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং বললাম, হে আমার রব! আমার উম্মতের জন্য এ হুকুম সহজ করে দিন। পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেয়া হল। তারপর মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললাম, আমার থেকে পাঁচ ওয়াক্ত কমানো হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত এও পারবে না। আপনি ফিরে যান এবং আরো সহজ করার আবেদন করুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এভাবে আমি একবার মূসা (আঃ) ও একবার আল্লাহর মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম। শেষে আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ হে মুহাম্মাদ! যাও দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নির্ধারণ করা হল। প্রতি ওয়াক্ত সালাতে দশ ওয়াক্ত সালাতের সমান সাওয়াব রয়েছে। এভাবে (পাঁচ ওয়াক্ত হল) পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান। যে ব্যক্তি কোন নেক কাজের নিয়্যাত করল এবং তা কাজে রূপায়িত করতে পারল না, আমি তার জন্য একটি সাওয়াব লিখব; আর তা কাজে রূপায়িত করলে তার জন্য লিখব দশটি সাওয়াব। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের নিয়্যাত করল অথচ তা কাজে পরিণত করল না তার জন্য কোন গুনাহ লিখা হয় না। আর তা কাজে পরিণত করলে তার উপর লিখা হয় একটি মাত্র গুনাহ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর আমি মূসা (আঃ) এর নিকট নেমে এলাম এবং তাকে এ বিষয়ে অবহিত করলাম। তিনি তখন বললেন, প্রতিপালকের কাছে ফিরে যান এবং আরো সহজ করার প্রার্থনা করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ বিষয়টি নিয়ে বারবার আমি আমার প্রতিপালকের নিকট আসা-যাওয়া করেছি, এখন আবার যেতে লজ্জা হচ্ছে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৮, ইসলামিক সেন্টারঃ ৩১৯)
1. কায়ী ইয়ায (রহঃ) বলেন যে, মি’রাজ স্বশরীরে হয়েছিল না স্বপ্নযোগে হয়েছিল এটা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, স্বপ্নযোগে হয়েছিল। এটা অত্যন্ত দুর্বল কথা। অধিকাংশ পূর্ব ও পরের উলামা, ফুকাহা ও মুহাদ্বিসীনের অভিমত হল প্রিয়নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জাগ্রত অবস্থায় স্বশরীরে মি’রাজ সংঘটিত হয়েছিল। হাদীসসমূহে প্রকাশ্যভাবে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এর বিপরীত হাদীসের অন্য ব্যাখ্যার কোন কারণ বা সুযোগ নেই যে, অন্য তা’বীল করা যাবে। (সংক্ষিপ্ত নাবাবী)
খাদীজাহ (রাযিঃ)-এর মৃত্যু মিরাজের পূর্বেই হয়েছিল। তাঁর মৃত্যু নুবুওয়াতের দশম বর্ষের রমযান মাসে হয়েছিল বলে জানা যায়। কাজেই মিরাজের ঘটনা এর পরেই ঘটেছে, আগে নয়। (আর রাহীকুল মাখতুম, অনুবাদ- খাদীজাহ আক্তার রেজায়ী ১৬৬ খৃঃ)
2. ইমান নাবাবী (রহঃ) বলেন, এ হাদীস থেকে কয়েকটি কথা জানা যায়। (১) বাড়ীর মধ্যে হতে কোন আগন্তুককে যদি বলা হয় কে? তার উত্তরে বলবে নাঃ “আমি”; বরং নাম বলতে হবে। (২) আকাশের দরজা আছে। (৩) দরজার নিকটে পাহারাদার আছে। (৪) মেহমানের সম্মানে মারহাবা বলে অভিবাদন জানানো যাবে। এটাই নাবীদের আদর্শ।
3. “বাইতুল মামুর” নামে বাইতুল্লাহর সামনে আকাশের উপরে একটি ঘর আছে। বাইতুল মামুর এজন্য বলা হয় যে, সব সময় এ ঘরটি সমৃদ্ধ থাকে অর্থাৎ প্রত্যেকদিন নতুনভাবে সত্তর হাজার ফেরেশতা ইবাদাতের জন্য আসে। যে একবার আসে সে কোনদিন পুনরায় আসার সুযোগ পাবে না। এ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহর ফেরেশতা কত আছে। বাইতুল মামূর সপ্তম আকাশে আছে। ইবরাহীম (আঃ) বাইতুল মামুর এর দিকে পিঠ ফিরে বসে ছিলেন। এ হাদীস হতে এটাও প্রমাণ হয় যে, বাইতুল্লাহর দিকে পিঠ করে বসা যাবে।
4. “সিদরাতুল মুনতাহা” সপ্তম আকাশের উপরের একটি বরই গাছ এবং ফেরেশতাদের বিচরণের শেষ সীমা। অথবা গমনের শেষ সীমা। অর্থাৎ সিদরাতুল মুনতাহার উপর কি আছে আল্লাহ ছাড়া কারও জ্ঞান নেই। ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, যে সিদরাতুল মুনতাহা এজন্য বলা হয় যে, ফেরেশতাদের জ্ঞান বিচরণ ওখান পর্যন্ত শেষ হয়েছিল। তার আগে তারা যেতে পারেনি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত। আর যারা উপরে আছে তারা এখানে এসে থেমে যায়। নিচে আসতে পারে না এবং যারা নিচে আছে তারা এখানে এসে থেমে যায়। উপরে যেতে পারে না। এটা আল্লাহর নির্দেশ।
এ হাদীস হতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন আছেন এবং প্রিয় নাবীর সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। যার কোন অপব্যাখ্যার সুযোগ নেই। এ কথোপকথনের মধ্যে পঞ্চাশ ওয়াক্ত হতে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে নিয়েছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
তাফসীরে জালালাইনে আবার এই আসমানগুলো কী পদার্থে তৈরি তার পরিষ্কারভাবেই বলা আছে [40]
আসমানগুলো ধাতব শক্ত পদার্থে তৈরি এবং সেগুলোর দরজা আছে, দরজায় আবার পাহারাদার আছে, এগুলো কতটা সত্য আর কতটা শিশুদের রূপকথার গল্প, তা পাঠকের বিচার বিবেচনার ওপরই ছেড়ে দিচ্ছি।
মাটির নিচে কী আছে?
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, মহাবিশ্বের স্রষ্টা হিসেবে মহাবিশ্ব সম্পর্কে সবচাইতে ভাল জানেন আল্লাহ, আল্লাহর কাছ থেকে তার নবী এবং নবীর কাছ থেকে জেনেছেন তার সাহাবী বৃন্দ। তাই নবী ও তার সাহাবীগণের জ্ঞান পৃথিবীর যেকোন বিজ্ঞানী বা মস্তবড় পণ্ডিতের চাইতে বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু নবী এবং তার সাহাবীদের জ্ঞান কীরকম ছিল, তা জানতে গেলে মস্তবড় ধাঁধায় পড়তে হয়। আসুন জানি, মাটির নিচে কী আছে, সেই সম্পর্কে ইসলামের বিশ্বাস কী [41] –
পৃথিবী ও আকাশ একত্রে ছিল
সেই প্রাচীনকাল থেকেই অসংখ্য রূপকথা এবং উপকথাতে একটি গল্প পাওয়া যায় যে, পৃথিবী এবং আকাশ পূর্বে একসাথে ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮০ সালে এথেন্সের নিকটবর্তি সালামিস দ্বীপে জন্ম নেয়া প্রসিদ্ধ গ্রিক ধ্রুপদী নাট্যকার ইউরিপিদেস লিখে গেছেন, তার মায়ের কাছ থেকে শোনা সেই সময়ে প্রচলিত উপকথা থেকে তিনি জেনেছেন, পৃথিবী এবং আকাশ একসময়ে একসাথে ছিল। পরে দেবতাগণ সেটি আলাদা করেন। এই ধারণাটি প্রাচীন মিশরেও প্রচলিত ছিল। মিশরীয় উপকথা অনুসারে, দেবতা শু ( Shu ) আকাশের দেবতা নুটকে পৃথিবীর দেবতা গেব থেকে আলাদা করেছিল যখন তারা গভীর প্রেমে ছিল, এর মাধ্যমেই জগতে দ্বৈততার সৃষ্টি হয়েছিল। অর্থাৎ উপরে এবং নীচে, আলো এবং অন্ধকার, ভাল এবং মন্দ। মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে শু যদি নুট (আকাশ) এবং গেব (পৃথিবী) কে আলাদা না করতো তবে পৃথিবীতে জীবনের কোন অস্তিত্ব থাকতো না। আসুন মিশরের সেই উপকথার ওপর তৈরি করা বিখ্যাত প্রাচীন মিশরীয় শিল্পকর্মটি দেখে নিই,
এবারে আসুন আরেকটি বই থেকে জেনে নেয়া যাক, ইউরিপিদেস এবং প্রাচীন আমলে এই বিষয়ে কী কী উপকথা প্রচলিত ছিল [42] –
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারেও, পৃথিবী ও মহাকাশ পূর্বে একসাথে ছিল বলেই কোরআনে বলা হয়েছে। কোরআন যে বাইবেলের মত স্বাভাবিকভাবেই প্রাচীন উপকথাগুলোর দ্বারা প্রভাবিত, তা সহজেই অনুমেয়। আসুন শুরুতেই সেই আয়াতটি পড়ে নিই, [43] –
অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, আকাশ আর যমীন এক সঙ্গে সংযুক্ত ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে আলাদা করে দিলাম, আর প্রাণসম্পন্ন সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?
— Taisirul Quran
যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখেনা যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবেনা?
— Sheikh Mujibur Rahman
যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীন ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল*, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম, আর আমি সকল প্রাণবান জিনিসকে পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি তারা ঈমান আনবে না? * আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে আদিতে আকাশ, সূর্য, নক্ষত্র ও পৃথিবী ইত্যাদি পৃথক সত্তায় ছিল না; বরং সবকিছুই ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল। তখন মহাবিশ্ব ছিল অসংখ্য গ্যাসীয় কণার সমষ্টি। পরবর্তীকালে মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে নক্ষত্র, সূর্য, পৃথিবী ও গ্রহসমূহ সৃষ্টি হয়। এটিই বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ থিওরী।
— Rawai Al-bayan
যারা কুফরী করে তারা কি দেখে না [১] যে, আসমানসমূহ ও যমীন মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, তারপর আমরা উভয়কে পৃথক করে দিলাম [২] এবং প্রাণবান সব কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে [৩]; তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
প্রথমেই জানা দরকার, এই আয়াতের শুরুতে আরবিতে বলা হয়েছে, কাফেররা কী দেখে না। কয়েকটি অনুবাদে আবার খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে দেখে না কথাটি এড়িয়ে ভেবে দেখে না কথাটি যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সৃষ্টির আদিতে কোন কাফেরের এরকম উপস্থিত থেকে সেটি দেখার কথা নয়। এমনকি, যা তারা দেখেনি, তা তাদের পক্ষে ভেবে দেখাও তো অসম্ভব। তবে এখানে যেই আরও বড় সমস্যাটি দেখা যায় তা হলো, মহাবিশ্বের উৎপত্তির আদিতে পৃথিবী নামক কোন গ্রহের অস্তিত্বই ছিল না। আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, মহাবিশ্বে উৎপত্তি হয়েছে ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে, আর পৃথিবী নামক গ্রহটির উৎপত্তি মাত্র ৪.৫৬ বিলিয়ন বছর। অর্থাৎ মাঝখানে প্রায় ৯ বিলিয়ন বছর পৃথিবী নামক কোন গ্রহের অস্তিত্বই ছিল না। পৃথিবী আর মহাবিশ্বের বয়সের মধ্যে রয়েছে এক বিরাট তারতম্য। অনেক সময় আমরা দেখি, শরীর জোড়া লাগানো শিশুদের জন্ম হয়। ধরুন জোড়া লাগানো দুইজন শিশুর জন্ম হলো এবং তাদের আলাদা করা হলো। তাহলে, সেই জোড়া লাগানো শিশু দুইটি জোড়া আলাদা করার দিন থেকে গুনলে বয়স তো সমানই হবে, তাই না?
কোরআন থেকে আমরা জানলাম, পৃথিবী ও আকাশ অর্থাৎ মহাকাশের সকল বস্তু একসময়ে একত্রে ছিল। তাহলে মহাবিশ্বের সকল গ্রহ নক্ষত্রের বয়স তো পৃথিবীর সমান বা কম হবে, তাই না? কিন্তু অসংখ্য নক্ষত্র এবং গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায়, যা পৃথিবী থেকে অনেক প্রাচীন। তাহলে এই আয়াতটি সত্য হয় কীভাবে?
মক্কা নগরীর উৎপত্তি সৃষ্টির আদিতে
ইসলামি বিশ্বাস মতে, মক্কা নগরীকে আল্লাহ পাক সৃষ্টির প্রথম দিনেই সম্মান দান করেন। অর্থাৎ মক্কা নগরীর উদ্ভব সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই [44]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪/ মাগাযী [যুদ্ধ]
পরিচ্ছেদঃ ৬৪/৫৪. পরিচ্ছেদ নাই।
৪৩১৩. মুজাহিদ (রহ.) হতে বর্ণিত যে, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবার জন্য দাঁড়িয়ে বললেন, যেদিন আল্লাহ সমুদয় আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেই দিন থেকেই তিনি মক্কা নগরীকে সম্মান দান করেছেন। তাই আল্লাহ কর্তৃক এ সম্মান প্রদানের কারণে এটি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবস পর্যন্ত সম্মানিত থাকবে। আমার পূর্বে কারো জন্য তা হালাল করা হয়নি, আমার পরে কারো জন্যও তা হালাল করা হবে না। আর আমার জন্যও মাত্র একদিনের সামান্য অংশের জন্যই তা হালাল করা হয়েছিল। তার শিকারযোগ্য প্রাণীকে বিতাড়িত করা যাবে না। ঘাস সংগৃহীত হবে না। বিজ্ঞপ্তির উদ্দেশ্য ব্যতীত রাস্তায় পতিত বস্তু উত্তোলিত হবে না। তখন ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইয্খির ঘাস ব্যতীত। কেননা ইয্খির ঘাস আমাদের কর্মকার ও বাড়ির (ছাউনির) কাজে লাগে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন। এর কিছুক্ষণ পরে বললেন, ইয্খির ব্যতীত। ইয্খির ঘাস কাটা অনুমোদিত। অন্য সানাদে ইবনু জুরায়জ (রহ.) ……. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া এ হাদীস আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)ও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। [১৩৪৯] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৭৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুজাহিদ (রহঃ)
আসুন আরেকটি হাদিস পড়ে নিই, [45] –
অথচ আমরা জানি, পৃথিবী নামক গ্রহটির জন্ম মহাবিশ্বের উদ্ভবের প্রায় ৯ বিলিয়ন বছর পরে। এরপরেও পৃথিবী প্রাথমিক অবস্থায় আজকের পৃথিবীর মত ছিল না। আজকের পৃথিবীর মত অবস্থায় আসতে অনেক সময় লেগেছে। তাই সেই সময়ে মক্কা নগরী থাকা সম্ভব না, এমনকি কোন নগরীই সেই সময়ে থাকার সম্ভাবনা নেই। পৃথিবীর বর্তমান সময়ের ভূমির উদ্ভব ঘটেছে অনেক পরে। আসুন এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ভিডিও দেখে নেয়া যাক,
পৃথিবী, সূর্য, চন্দ্র ও ইসলাম
প্রথমেই আসুন জেনে নিই, আমাদের মাদ্রাসাগুলোতে পৃথিবীর বয়স সম্পর্কে ইসলামিক আলেমগণ তাদের গ্রন্থগুলো থেকে কী শেখাচ্ছে,
পৃথিবী স্থির এবং নড়াচড়া করে না
কোরআনে খুব পরিষ্কারভাবেই পৃথিবীকে স্থির এবং নড়াচড়া করে না বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ আমরা জানি, পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘূর্ণায়মান এবং নিজ অক্ষের ওপরও সে ঘুরছে, অনেকটা নিচের ছবির মত।
এবারে আসুন দেখা যাক, পৃথিবী ঘুর্ণায়মান নাকি স্থির, এই বিষয়ে ইসলাম কী বলে [46] –
আল্লাহই আসমান ও যমীনকে স্থির রাখেন যাতে ও দু’টো টলে না যায়। ও দু’টো যদি টলে যায় তাহলে তিনি ছাড়া কে ও দু’টোকে স্থির রাখবে? তিনি পরম সহিষ্ণু, পরম ক্ষমাশীল।
— Taisirul Quran
আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে সংরক্ষণ করেন যাতে ওরা স্থানচ্যূত না হয়, ওরা স্থানচ্যূত হলে তিনি ব্যতীত কে ওদেরকে সংরক্ষণ করবে? তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনকে ধরে রাখেন যাতে এগুলো স্থানচ্যুত না হয়। আর যদি এগুলো স্থানচ্যুত হয়, তাহলে তিনি ছাড়া আর কে আছে, যে এগুলোকে ধরে রাখবে? নিশ্চয় তিনি পরম সহনশীল, অতিশয় ক্ষমাপরায়ণ।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় আল্লাহ্ আসমানসমূহ ও যমীনকে ধারণ করেন, যাতে তারা স্থানচ্যুত না হয়, আর যদি তারা স্থানচ্যুত হয়, তবে তিনি ছাড়া কেউ নেই যে, তাদেরকে ধরে রাখতে পারে [১]। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল, অসীম ক্ষমাপরায়ণ।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
কোরআনে এটিও বলা আছে যে, পৃথিবীর পর্বতমালার কারণে পৃথিবী ঢলে পড়ছে না। এর অর্থ হচ্ছে, পাহাড় পর্বত না থাকলে পৃথিবীর ঢলে পড়ার সম্ভাবনা ছিল! [47] –
তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ছাড়া যা তোমরা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান পর্বতমালা যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে নড়াচড়া না করে আর তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার জীবজন্তু, আর আমিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তাতে উদ্গত করি যাবতীয় কল্যাণকর উদ্ভিদ।
— Taisirul Quran
তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখছ। তিনিই পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পবর্তমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্ব প্রকার জীব-জন্তু এবং আমিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করে এতে উদ্ভব করি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদ।
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনি খুঁটি ছাড়া আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন, যা তোমরা দেখছ, আর যমীনে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পাহাড়, যাতে তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে না পড়ে, আর তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রত্যেক প্রকারের প্রাণী; আর আসমান থেকে আমি পানি পাঠাই। অতঃপর তাতে আমি জোড়ায় জোড়ায় কল্যাণকর উদ্ভিদ জন্মাই।
— Rawai Al-bayan
তিনি আসমানসমূহ নির্মাণ করেছেন খুঁটি ছাড়া—তোমরা এটা দেখতে পাচ্ছ; তিনিই যমীনে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সব ধরণের জীব-জন্তু। আর আমরা আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি তারপর এতে উদ্গত করি সব ধরণের কল্যাণকর উদ্ভিদ।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আসুন তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে পড়ি [48] –
জাকারিয়া আল-কাজউইনি হচ্ছেন ত্রয়োদশ শতাব্দীর ইসলামি স্বর্ণযুগের একজন ফারসী জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি ইরানের কাজউইন শহরে ৬০০ হিজরি/ ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নবী মুহাম্মাদের একজন বিশিষ্ট সাহাবী আনাস ইবনে মালিকের বংশধর। উনার গ্রন্থ The Wonders of Creation, Translated into Turkish from Arabic. Istanbul: ca. 1553 থেকে আমরা পৃথিবী ও মহাবিশ্বের ইসলামিক ধারণা পাই নিচের ছবিটির মত।
এবারে আসুন শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেদ আল উসাইমীন রচিত ফতোয়ায়ে আরকানুল ইসলাম থেকে একটি বিখ্যাত ফতোয়া দেখে নিই [49] [50] –
প্রশ্ন: (১৬) সূর্য কি পৃথিবীর চার দিকে ঘুরে?
উত্তর: মান্যবর শাইখ উত্তরে বলেন যে, শরী‘আতের প্রকাশ্য দলীলগুলো প্রমাণ করে যে, সূর্যই পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘুরে। এ ঘুরার কারণেই পৃথিবীতে দিবা-রাত্রির আগমণ ঘটে। আমাদের হাতে এ দলীলগুলোর চেয়ে বেশি শক্তিশালী এমন কোনো দলীল নেই, যার মাধ্যমে আমরা সূর্য ঘূরার দলীলগুলোকে ব্যাখ্যা করতে পারি। সূর্য ঘুরার দলীলগুলো হলো আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَإِنَّ ٱللَّهَ يَأۡتِي بِٱلشَّمۡسِ مِنَ ٱلۡمَشۡرِقِ فَأۡتِ بِهَا مِنَ ٱلۡمَغۡرِبِ﴾ [البقرة: ٢٥٨]
“আল্লাহ তা‘আলা সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন। তুমি পারলে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৮] সূর্য পূর্ব দিক থেকে উঠার মাধ্যমে প্রকাশ্য দলীল পাওয়া যায় যে, সূর্য পৃথিবীর উপর পরিভ্রমণ করে।
২) আল্লাহ বলেন,
﴿فَلَمَّا رَءَا ٱلشَّمۡسَ بَازِغَةٗ قَالَ هَٰذَا رَبِّي هَٰذَآ أَكۡبَرُۖ فَلَمَّآ أَفَلَتۡ قَالَ يَٰقَوۡمِ إِنِّي بَرِيٓءٞ مِّمَّا تُشۡرِكُونَ ٧٨﴾ [الانعام: ٧٨]
“অতঃপর যখন সূর্যকে চকচকে অবস্থায় উঠতে দেখলেন তখন বললেন, এটি আমার রব, এটি বৃহত্তর। অতপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যেসব বিষয়ে শরীক কর আমি ওসব থেকে মুক্ত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৭৮]
এখানে নির্ধারণ হয়ে গেল যে, সূর্য অদৃশ্য হয়ে যায়। একথা বলা হয় নি যে, সূর্য থেকে পৃথিবী ডুবে গেল। পৃথিবী যদি ঘূরত তাহলে অবশ্যই তা বলা হত।
৩) আল্লাহ বলেন,
﴿وَتَرَى ٱلشَّمۡسَ إِذَا طَلَعَت تَّزَٰوَرُ عَن كَهۡفِهِمۡ ذَاتَ ٱلۡيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَت تَّقۡرِضُهُمۡ ذَاتَ ٱلشِّمَالِ﴾ [الكهف: ١٧]
“তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বাম দিকে চলে যায়।” [সূরা কাহাফ, আয়াত: ১৭] পাশ কেটে ডান দিকে বা বাম দিকে চলে যাওয়া প্রমাণ করে যে, নড়াচড়া সূর্য থেকেই হয়ে থাকে। পৃথিবী যদিনড়াচড়া করত তাহলে অবশ্যই বলতেন সূর্য থেকে গুহা পাশ কেটে যায়। উদয় হওয়া এবং অস্ত যাওয়াকে সূর্যের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এটা থেকে বুঝা যায় যে, সূর্যই ঘুরে। পৃথিবী নয়।
৪) আল্লাহ বলেন,
﴿وَهُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ كُلّٞ فِي فَلَكٖ يَسۡبَحُونَ ٣٣﴾ [الانبياء: ٣٣]
“এবং তিনিই দিবা-নিশি এবং চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন। সবাই আপন আপন কক্ষ পথে বিচরণ করে।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৩৩]
ইবন আব্বাস বলেন, লাটিম যেমন তার কেন্দ্র বিন্দুর চার দিকে ঘুরতে থাকে, সূর্যও তেমনিভাবে ঘুরে।
৫) আল্লাহ বলেন,
﴿يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا﴾ [الاعراف: ٥٤]
“তিনি রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিনের মাধ্যমে, দিন দৌড়ে দৌড়ে রাতের পিছনে আসে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]
আয়াতে রাতকে দিনের অনুসন্ধানকারী বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী পিছনে পিছনে দ্রুত অনুসন্ধান করে থাকে। এটা জানা কথা যে, দিবা-রাত্রি সূর্যের অনুসারী।
৬) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ بِٱلۡحَقِّۖ يُكَوِّرُ ٱلَّيۡلَ عَلَى ٱلنَّهَارِ وَيُكَوِّرُ ٱلنَّهَارَ عَلَى ٱلَّيۡلِۖ وَسَخَّرَ ٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ كُلّٞ يَجۡرِي لِأَجَلٖ مُّسَمًّىۗ أَلَا هُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡغَفَّٰرُ ٥﴾ [الزمر: ٥]
“তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫]
আয়াতের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম যে, পৃথিবীর উপরে দিবা-রাত্রি চলমান রয়েছে। পৃথিবী যদি ঘুরতো তাহলে তিনি বলতেন, দিবা-রাত্রির উপর পৃথিবীকে ঘূরান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “সূর্য এবং চন্দ্রের প্রত্যেকেই চলমান”। এ সমস্ত দলীলের মাধ্যমে জানা গেল যে, সুস্পষ্টভাবেই সূর্য ও চন্দ্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করছে। এ কথা সুস্পষ্ট যে, চলমান বস্তুকে বশীভুত করা এবং কাজে লাগানো একস্থানে অবস্থানকারী বস্তুকে কাজে লাগানোর চেয়ে অধিক যুক্তিসঙ্গত।
৭) আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلشَّمۡسِ وَضُحَىٰهَا ١ وَٱلۡقَمَرِ إِذَا تَلَىٰهَا ٢﴾ [الشمس: ١، ٢]
“শপথ সূর্যের ও তার কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে।” [সূরা আশ-শামস, আয়াত: ১-২]
এখানে বলা হয়েছে যে, চন্দ্র সূর্যের পরে আসে। এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সূর্য এবং চন্দ্র চলাচল করে এবং পৃথিবীর উপর ঘুরে। পৃথিবী যদি চন্দ্র বা সূর্যের চার দিকে ঘুরত, তাহলে চন্দ্র সূর্যকে অনুসরণ করতনা। বরং চন্দ্র একবার সূর্যকে, আর একবার সূর্য চন্দ্রকে অনুসরণ করত। কেননা সূর্য চন্দ্রের অনেক উপরে। এ আয়াত দিয়ে পৃথিবী স্থীর থাকার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করার ভিতরে চিন্তা-ভাবনার বিষয় রয়েছে।
৮) মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلشَّمۡسُ تَجۡرِي لِمُسۡتَقَرّٖ لَّهَاۚ ذَٰلِكَ تَقۡدِيرُ ٱلۡعَزِيزِ ٱلۡعَلِيمِ ٣٨ وَٱلۡقَمَرَ قَدَّرۡنَٰهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَٱلۡعُرۡجُونِ ٱلۡقَدِيمِ ٣٩ لَا ٱلشَّمۡسُ يَنۢبَغِي لَهَآ أَن تُدۡرِكَ ٱلۡقَمَرَ وَلَا ٱلَّيۡلُ سَابِقُ ٱلنَّهَارِۚ وَكُلّٞ فِي فَلَكٖ يَسۡبَحُونَ ٤٠﴾ [يس: ٣٨، ٤٠]
“সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নির্ধারণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মঞ্জিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। সূর্যের পক্ষে চন্দ্রকে নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। রাতের পক্ষেও দিনের অগ্রবতী হওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে।” [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৩৮-৪০]
সূর্যের চলা এবং এ চলাকে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর নির্ধারণ বলে ব্যাখ্যা করা এটাই প্রমাণ করে যে, সূর্য প্রকৃতভাবেই চলমান। আর এ চলাচলের কারণেই দিবা-রাত্রি এবং ঋতুর পরিবর্তন হয়। চন্দ্রের জন্য মঞ্জিল নির্ধারণ করার অর্থ এ যে, সে তার মঞ্জিলসমূহে স্থানান্তরিত হয়। যদি পৃথিবী ঘুরত, তাহলে পৃথিবীর জন্য মঞ্জিল নির্ধারণ করা হত। চন্দ্রের জন্য নয়। সূর্য কর্তৃক চন্দ্রকে ধরতে না পারা এবং দিনের অগ্রে রাত থাকা সূর্য, চন্দ্র, দিন এবং রাতের চলাচলের প্রমাণ বহন করে।
৯) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আবু যরকে বলেছেন,
«أَتَدْرِي أَيْنَ تَذْهَبُ قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّهَا تَذْهَبُ حَتَّى تَسْجُدَ تَحْتَ الْعَرْشِ فَتَسْتَأْذِنَ فَيُؤْذَنُ لَهَا وَيُوشِكُ أَنْ تَسْجُدَ فَلَا يُقْبَلَ مِنْهَا وَتَسْتَأْذِنَ فَلَا يُؤْذَنَ لَهَا يُقَالُ لَهَا ارْجِعِي مِنْ حَيْثُ جِئْتِ فَتَطْلُعُ مِنْ مَغْرِبِهَا»
“হে আবু যর! তুমি কি জান সূর্য যখন অস্ত যায় তখন কোথায় যায়? আবু যার বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় ‘আরশের নিচে গিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং পুনরায় উদিত হওয়ার অনুমতি চায়। অতঃপর তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। সে দিন বেশি দূরে নয়, যে দিন অনুমতি চাবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া হবে না। তাকে বলা হবে যেখান থেকে এসেছ, সেখানে ফেরত যাও। অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকেই উদিত হবে।”[1]
এটি হবে কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে। আল্লাহ সূর্যকে বলবেন, যেখান থেকে এসেছ সেখানে ফেরত যাও, অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, সূর্য পৃথিবীর উপরে ঘুরছে এবং তার এ ঘুরার মাধ্যমেই উদয়-অস্ত সংঘটিত হচ্ছে।
১০) অসংখ্য হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে, উদয় হওয়া, অস্ত যাওয়া এবং ঢলে যাওয়া এ কাজগুলো সূর্যের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলো সূর্য থেকে প্রকাশিত হওয়া খুবই সুস্পষ্ট। পৃথিবী হতে নয়। হয়তো এ ব্যাপারে আরো দলীল-প্রমাণ রয়েছে। সেগুলো আমার এ মুহূর্তে মনে আসছেনা। তবে আমি যা উল্লেখ করলাম, এ বিষয়টির দ্বার উম্মুক্ত করবে এবং আমি যা উদ্দেশ্য করেছি, তা পূরণে যথেষ্ট হবে। আল্লাহর তাওফীক চাচ্ছি!
[1] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: বাদউল খালক; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান
এবারে আসুন শায়খ মতিউর রহমান মাদানী এই বিষয়ে কী বলে জেনে নেয়া যাক,
পাহাড় পৃথিবীর পেরেক
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহ প্রথমে পৃথিবীতে জমিন বা মাটি সৃষ্টি করেছেন, এরপরে তার উপর স্থাপন করেছেন পর্বত। কোরআনে যেই শব্দটি রয়েছে সেটি হচ্ছে من فوقها যার অর্থ উপর থেকে। উল্লেখ্য, সমতলের ওপর দণ্ডায়মান কোন বস্তু উপর থেকে নিচের দিকে গেঁথে দেয়া বা গেড়ে দেয়া হতে পারে, আবার নিচ থেকে উপরে উঠে আসাও হতে পারে। যেমন গাছপালা হচ্ছে মাটির নিচ থেকে উপরে উঠে আসা বস্তু। আবার মেঝেতে পেরেক মারলে সেটি হয় উপর থেকে নিচের দিকে গেঁথে দেয়া বস্তু। আসুন আয়াতটির আরবি এবং বাঙলা অনুবাদ দেখি, [51]
وجعل فيها رواسي من فوقها
(যমীন সৃষ্টির পর) তার বুকে তিনি সৃদৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, যমীনকে বরকতমন্ডিত করেছেন আর তাতে প্রার্থীদের প্রয়োজন মুতাবেক নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য সঞ্চিত করেছেন চার দিনে।
— Taisirul Quran
তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে রেখেছেন কল্যাণ এবং চার দিনে ব্যবস্থা করেছেন খাদ্যের – সমভাবে, যাঞ্চাকারীদের জন্য।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তার উপরিভাগে তিনি দৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দিয়েছেন, আর তাতে চারদিনে প্রার্থীদের জন্য সমভাবে খাদ্য নিরূপণ করে দিয়েছেন।
— Rawai Al-bayan
আর তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে দিয়েছেন বরকত এবং চার দিনের মধ্যে [১] এতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন সমভাবে যাচঞাকারীদের জন্য।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
কোরআনে পাহাড় পর্বত সম্পর্কে আরো বলা আছে, পৃথিবী যেন নড়াচড়া না করে সেই কারণে আল্লাহ পাহাড় পর্বত দিয়ে পৃথিবীকে আটকে দিয়েছেন [47] –
তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ছাড়া যা তোমরা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান পর্বতমালা যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে নড়াচড়া না করে আর তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার জীবজন্তু, আর আমিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তাতে উদ্গত করি যাবতীয় কল্যাণকর উদ্ভিদ।
— Taisirul Quran
তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখছ। তিনিই পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পবর্তমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্ব প্রকার জীব-জন্তু এবং আমিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করে এতে উদ্ভব করি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদ।
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনি খুঁটি ছাড়া আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন, যা তোমরা দেখছ, আর যমীনে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পাহাড়, যাতে তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে না পড়ে, আর তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রত্যেক প্রকারের প্রাণী; আর আসমান থেকে আমি পানি পাঠাই। অতঃপর তাতে আমি জোড়ায় জোড়ায় কল্যাণকর উদ্ভিদ জন্মাই।
— Rawai Al-bayan
তিনি আসমানসমূহ নির্মাণ করেছেন খুঁটি ছাড়া—তোমরা এটা দেখতে পাচ্ছ; তিনিই যমীনে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সব ধরণের জীব-জন্তু। আর আমরা আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি তারপর এতে উদ্গত করি সব ধরণের কল্যাণকর উদ্ভিদ।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এই সম্পর্কে কোরআনে আরো বলা হয়েছে, পৃথিবীতে পাহাড় বা পর্বত হচ্ছে পেরেক সদৃশ। দেয়ালে কিছু আটকে রাখতে যেমন পেরেকের প্রয়োজন হয়, পৃথিবীকে আটকে রাখতেও আল্লাহ পেরেক অর্থাৎ উপর থেকে মেরে দিয়েছেন। কোরআনে পেরেকের উপমা দিয়ে বোঝানো হয়েছে, পাহাড় পর্বতগুলো উপর থেকে স্থাপিত [52] [53] –
(আমি যে সব কিছুকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে সক্ষম তা তোমরা অস্বীকার করছ কীভাবে) আমি কি যমীনকে (তোমাদের জন্য) শয্যা বানাইনি?
— Taisirul Quran
আমি কি পৃথিবীকে শয্যা (রূপে) নির্মাণ করিনি?
— Sheikh Mujibur Rahman
আমি কি বানাইনি যমীনকে শয্যা?
— Rawai Al-bayan
আমরা কি করিনি যমীনকে শয্যা
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আর পর্বতগুলোকে কীলক (বানাইনি)?
— Taisirul Quran
এবং পর্বতসমূহকে কীলক রূপে নির্মাণ করিনি?
— Sheikh Mujibur Rahman
আর পর্বতসমূহকে পেরেক?
— Rawai Al-bayan
আর পর্বতসমূহকে পেরেক ?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
প্রখ্যাত ইসলামিক আলেম এবং আধুনিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ শায়েখ মুহাম্মদ ইবন সালিহ ইবন উসাইমিন তার রমযান মাসের ৩০ আসর গ্রন্থেও একই কথা উল্লেখ করেছেন [54] –
একইসাথে, সহিহ হাদিসের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ পৃথিবীর মাটি সৃষ্টি করেন শনিবার এবং এর উপর পর্বত বসান রবিবার দিন [23] [24] –
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৫২। কিয়ামাত, জান্নাত ও জান্নামের বর্ণনা
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ১. সৃষ্টির সূচনা এবং আদাম (আঃ) এর সৃষ্টি
৬৯৪৭-(২৭/২৭৮৯) সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও হারূন ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ….. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তা’আলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন এবং এতে পর্বত সৃষ্টি করেন রবিবার দিন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি বিপদাপদ সৃষ্টি করেন। তিনি নূর সৃষ্টি করেন বুধবার দিন। তিনি বৃহস্পতিবার দিন পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর জুমুআর দিনের শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ আসর থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ মাখলুক আদাম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৯৭,ইসলামিক সেন্টার ৬৮৫১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৩/ কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২. সৃষ্টির সূচনা এবং আদম (আঃ) এর সৃষ্টি
৬৭৯৭। সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তাআলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন। রোববার দিন তিনি এতে পর্বত সৃষ্টি করেন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি আপদ বিপদ সৃষ্টি করেন। বুধবার দিন তিনি নূর সৃষ্টি করেন। বৃহস্পতিবার দিন তিনি পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ জুমুআর দিনের সময়সমূহের শেষ মুহূর্তে (মাখলূক) আসর থেকে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপর পর্বতগুলি পেরেকের মত ‘উপর থেকে স্থাপিত’ হয়নি, বরঞ্চ নিচ থেকে উঠে এসেছে। পৃথিবীর দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ (যেমনঃ ভূমিকম্প) হলে একটি প্লেটের ভূত্বক উপরের দিকে যায় এবং অন্য প্লেটের ভূত্বক নিচের দিকে যায়। সেই সময়ে মাটির ভেতরে থাকা যে প্লেটটি উপরে চলে আসে তার দ্বারা একটি পর্বত তৈরি হয়।
টেকটোনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষের এই প্রক্রিয়াটি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চলতে থাকে এবং প্রতিটি সংঘর্ষের সাথে পর্বতগুলি ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে। এবং যখন টেকটোনিক প্লেটগুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করে, তখন এই উঁচু পর্বতগুলি ক্ষয় হতে শুরু করে এবং লক্ষ লক্ষ বছর পরে, তারা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে মাউন্ট এভারেস্ট বলে কিছু ছিল না। দুটি টেকটোনিক প্লেট একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং এর কারণে একটি ছোট মাউন্ট এভারেস্ট সৃষ্টি হয়। টেকটোনিক প্লেটের প্রতিটি সংঘর্ষে এটি উচ্চতা অর্জন করতে থাকে। বর্তমান সময়ে এটি সর্বোচ্চ পর্বত। এটি আরও উচ্চতা অর্জন করতে থাকবে, কিন্তু তারপর একটি সময় আসবে, যখন এটি ক্ষয় শুরু হবে এবং সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যাবে। এবারে আসুন ইসলামের গ্রন্থগুলো থেকে ভূমিকম্পের কারণ এবং অন্যান্য বিষয়াদি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক,
আসুন এবারে মিজানুর রহমান আজহারীর কাছ থেকে পৃথিবীতে ভূমিকম্প হওয়ার কারণ জেনে নেয়া যাক,
সূর্য রাতের বেলা কই যায়?
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, সূর্য রাতের বেলা আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে ইবাদত বন্দেগী করে, এবং সকাল বেলা আল্লাহ অনুমতি দিলে সে আবারো উদিত হয়। আমরা যারা পাঠ্যপুস্তকে পড়েছি, পৃথিবী গোলাকৃতি, এবং কোন না কোন অঞ্চলে কখনো না কখনো সূর্য আলো দিচ্ছে, একপাশে দিন হলে আরেকপাশে রাত হচ্ছে, এই কথাগুলোর সম্পুর্ণ বিপরীতে চলে যাচ্ছে হাদিসের এই কথাগুলো। সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীদের কাছে হাদিসে বর্ণিত বক্তব্যগুলোই হয়তো একটি পবিত্র সত্য, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এটি সম্পূর্ণরূপে বৈজ্ঞানিক সত্যের পরিপন্থী এবং কোনোভাবেই বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়া পৃথিবীর ঘূর্ণন ও এর অক্ষীয় অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবী গোলাকৃতি এবং প্রতিনিয়ত নিজের অক্ষের ওপর ঘূর্ণায়মান হওয়ায় দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীর একটি অংশে সূর্য উদিত হয় এবং অন্য অংশে সেটি অদৃশ্য হয়, অর্থাৎ দিন ও রাতের আবর্তন ঘটে। এতে সূর্য কখনো কোথাও গিয়ে সিজদা করার বা আল্লাহর অনুমতির অপেক্ষায় থাকার মতো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এমন একটি বর্ণনা একদিকে যেমন ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসকে উস্কে দেয়, অন্যদিকে মানুষের জ্ঞান ও যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই হাদিসটি সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং অসত্য। সূর্য একটি বৃহৎ প্লাজমার বল, যার ভর পৃথিবীর তুলনায় লক্ষ কোটি গুণ বেশি এবং এটি নিজের মহাকর্ষীয় শক্তির মাধ্যমে সমগ্র সৌরজগতকে নিয়ন্ত্রণ করে। সূর্যের আলো ও তাপ আমাদের অস্তিত্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি নিজস্ব শক্তির মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয়, যা পৃথিবীকে আলোকিত করে। পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘূর্ণায়মান হওয়ার কারণে আমরা সূর্যের উদয় ও অস্ত দেখা পাই। তাই, হাদিসে বর্ণিত সূর্যের “সিজদা করা” বা “আল্লাহর আরশের নিচে যাওয়া” একটি অবৈজ্ঞানিক ধারণা, যা শুধু ধর্মীয় কল্পকাহিনীরই প্রতিফলন। [55] [56] [57] [58] [59] [60] [61] [62] [63] [64] [65] [66] [67] [68] [69]
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৫/ কুরআনের হরুফ এবং কিরাত
পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই।
৩৯৬১. উবায়দুল্লাহ্ ইবন উমার (রহঃ) …… আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে একটি গাধার পেছনে সওয়ার ছিলাম। এ সময় সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি জান, সূর্য কোথায় অস্তমিত হয়? আমি বলি, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল এ ব্যাপারে অধিক অবহিত। তিনি বলেন عَيْنِ حَامِيَةٍ এটি অর্থাৎ গরম প্রস্রবণের মধ্যে যায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
২৯৭২। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আবূ যার (রাঃ)-কে বললেন, তুমি কি জানো, সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ই ভাল জানেন। তিনি বললেন, তা যেতে যেতে আরশের নীচে গিয়ে সিজদায় পড়ে যায়। এরপর সে পুনঃ উদিত হওয়ার অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। আর অচিরেই এমন সময় আসবে যে, সিজদা করবে তা কবূল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু অনুমতি দেওয়া হবে না। তাকে বলা হবে যে পথে এসেছ, সে পথে ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হবে–এটাই মর্ম হল আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আর সূর্য গমন করে তার নির্দিষ্ট গন্ত্যব্যের দিকে, এটাই পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।
(কোরআন ৩৬:৩৮)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ والشمس تجري لمستقر لها ذلك تقدير العزيز العليم “এবং সূর্য ভ্রমন করে তার নির্দৃিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রন।”
৪৪৩৯ আবূ নু’আয়ম (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সূর্যাস্তের সময় আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে মসজিদে ছিলাম। তিনি বললেন, হে আবূ যার! তুমি কি জানো সূর্য কোথায় ডুবে? আমি বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, সূর্য চলে, অবশেষে আরশের নিচে গিয়ে সিজদা করে। নিম্নবর্ণিত আয়াতوَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ এ এ কথাই বর্ণনা করা হয়েছে, অর্থাৎ সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশলী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ والشمس تجري لمستقر لها ذلك تقدير العزيز العليم “এবং সূর্য ভ্রমন করে তার নির্দৃিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এ পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রন।”
৪৪৪০। হুমায়দী (রহঃ) … আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহর বাণীঃمُسْتَقَرُّ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেছেন, সূর্যের গন্তব্যস্থল আরশের নিচে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭১. যে সময়ে ঈমান কবুল হবে না
২৯৬। ইয়াহইয়া ইবনু আইউব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জানো, এ সূর্য কোথায় যায়? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এ সূর্য চলতে থাকে এবং (আল্লাহ তা’আলার) আরশের নিচে অবস্থিত তার অবস্থানস্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও! অনন্তর সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল দিয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে থাকে এবং আরশের নিচে অবস্থিত তার অবস্থানস্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়লে হয়েই উদিত হয়।
সে আবার চলতে থাকে এবং আরশের নিচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সিজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, ওঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল হয়েই সে উদিত হয়। এমনিভাবে চলতে থাকবে; মানুষ তার থেকে অস্বাভাবিক কিছু হতে দেখবে না। শেষে একদিন সূর্য যথার্রীতি আরশের নিচে তার নিদৃষ্টস্থলে যাবে। তাকে বলা হবে, ওঠ এবং অস্তাচল থেকে উদিত হও। অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিম গগনে উদিত হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন দিন সে অবস্থা হবে তোমরা জানো? সে দিন ঐ ব্যাক্তির ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে ব্যাক্তি পুর্বে ঈমান আনে নাই কিংবা যে ব্যাক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করে নাই।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭১. যে সময়ে ঈমান কবুল হবে না
২৯৮। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথায় উপবিষ্ট ছিলেন। সূর্য অন্তমিত হলে তিনি বললেনঃ হে আবূ যার! জানো, এ সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে তার গন্তব্য স্থলে যায় এবং আল্লাহর কাছে সিজদার অনুমতি চায়। তখন তাকে অনুমতি দেয়া হয়। পরে একদিন যখন তাকে বলা হবে যেদিক থেকে এসেছো সেদিকে ফিরে যাও। অনন্তর তা অস্থাচল থেকে উদিত হবে। এরপর তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদের কিরাআত অনুসারে তিলাওয়াত করেনঃذَلِكَ مُسْتَقَرٌّ لَهَا এ তার গন্তব্যস্থল
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ৭১. যে সময়ে ঈমান কবুল হবে না
২৯৯। আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আামরা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেوَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا “এবং সূর্য ভ্রমণ করে উহার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিবে” (৩৬ঃ ৩৮) এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ আরশের নিচে তার গন্তব্য স্থল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)
সহীহ হাদিসে কুদসি
১/ বিবিধ হাদিসসমূহ
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রশংসামূলক কতক বাক্যের ফযিলত
১৬১. আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি একটি গাধার ওপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। তখন তার উপর একটি পাড়যুক্ত চাদর ছিল। তিনি বলেন: এটা ছিল সূর্যাস্তের সময়, তিনি আমাকে বলেন: “হে আবূ যর তুমি জান এটা কোথায় অস্ত যায়?” তিনি বলেন: আমি বললাম: আল্লাহ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বলেন: সূর্যাস্ত যায় একটি কর্দমাক্ত ঝর্ণায়, সে চলতে থাকে অবশেষে আরশের নিচে তার রবের জন্য সেজদায় লুটিয়ে পড়ে, যখন বের হওয়ার সময় আল্লাহ তাকে অনুমতি দেন, ফলে সে বের হয় ও উদিত হয়। তিনি যখন তাকে যেখানে অস্ত গিয়েছে সেখান থেকে উদিত করার ইচ্ছা করবেন আটকে দিবেন, সে বলবে: হে আমার রব আমার পথ তো দীর্ঘ, আল্লাহ বলবেন: যেখান থেকে ডুবেছে সেখান থেকেই উদিত হও, এটাই সে সময় যখন ব্যক্তিকে তার ঈমান উপকার করবে না”। [আহমদ] হাদিসটি সহিহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ৬৫/৩৬/১. আল্লাহর বাণীঃ আর সূর্য নিজ গন্তব্য স্থানের দিকে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। (সূরাহ ইয়াসীন ৩৬/৩৮)
৪৮০২. আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে মসজিদে ছিলাম। তিনি বললেন, হে আবূ যার! তুমি কি জান সূর্য কোথায় ডুবে? আমি বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, সূর্য চলে, অবশেষে আরশের নিচে গিয়ে সিজদা করে। নিম্নবর্ণিত وَالشَّمْسُ تَجْرِيْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ এ আয়াতের কথাই বর্ণনা করা হয়েছে, অর্থাৎ সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের পানে, এ হল পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। [৩১৯৯] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৩৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ৬৫/৩৬/১. আল্লাহর বাণীঃ আর সূর্য নিজ গন্তব্য স্থানের দিকে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। (সূরাহ ইয়াসীন ৩৬/৩৮)
৪৮০৩. আবূ যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আল্লাহর বাণীঃ وَالشَّمْسُ تَجْرِيْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেছেন, সূর্যের গন্তব্যস্থল আরশের নিচে। [৩১৯৯] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৪০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৯৭/ তাওহীদ
পরিচ্ছেদঃ ৯৭/২৩. আল্লাহর বাণীঃ ফেরেশতা এবং রূহ্ আল্লাহর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয়- (সূরা আল মা‘আরিজ ৭০/৪)। এবং আল্লাহর বাণীঃ তাঁরই দিকে পবিত্র বাণীসমূহ আরোহণ করে- (সূরাহ ফাত্বির ৩৫/১০)।
৭৪৩৩. আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছি, ‘‘আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে’’ আল্লাহর এ কথা সম্পর্কে। তিনি বলেছেনঃ সূর্যের নির্দিষ্ট গন্তব্য হল আরশের নিচে। [৩১৯৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১। ঈমান [বিশ্বাস]
পরিচ্ছেদঃ ৭২. যে সময়ে ঈমান কবুল হবে না।
২৮৯-(২৫০/১৫৯) ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (আঃ) ….. আবূ যার (রাযিঃ) বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা কি জান, এ সূর্য কোথায় যায়? সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, এ সূর্য চলতে থাকে এবং (আল্লাহ তা’আলার) আরশের নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সাজদাবনত হয়ে পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয়, উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও! অনন্তর সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল দিয়েই উদিত হয়। তা আবার চলতে থাকে এবং আরশের নীচে অবস্থিত তার অবস্থান স্থলে যায়। সেখানে সে সাজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকে। শেষে যখন তাকে বলা হয় উঠ এবং যেখান থেকে এসেছিলে সেখানে ফিরে যাও। তখন সে ফিরে আসে এবং নির্ধারিত উদয়স্থল হয়েই সে উদিত হয়। এমনিভাবে চলতে থাকবে; মানুষ তার থেকে অস্বাভাবিক কিছু হতে দেখবে না। শেষে একদিন সূর্য যথারীতি আরশের নীচে তার অবস্থানে যাবে। তাকে বলা হবে, উঠ এবং অস্তাচল থেকে উদিত হও। অনন্তর সেদিন সূর্য পশ্চিমাকাশে উদিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (কুরআনের বাণী) “কোন দিন সে অবস্থা হবে তোমরা জান? সেদিন ঐ ব্যক্তির ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি”- (সূরাহ আল আনআম ৬ঃ ১৫৮)*। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৩০৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)
এবারে আসুন আমরা আমাদের স্কুলের পাঠ্যপুস্তকগুলো থেকে দেখি, মূল বিষয়টি আসলে কী এবং এর সাথে ইসলামের দ্বন্দ্ব সংঘাত কোথায়!
কেয়ামতের ময়দানের সূর্য
সেই প্রাচীনকাল থেকেই সূর্যের তাপ পর্যবেক্ষণ করে মানুষ বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে, সূর্য খুবই উত্তপ্ত এবং সূর্য যত কাছে আসবে তাপ তত বৃদ্ধি পাবে। মাঝে মাঝে দুপুরবেলা সূর্য যখন একদম মাথার সরাসরি উপরে থাকে, তখন প্রচণ্ড গরম লাগে। এই বিষয়গুলো প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এবং পশুপাখিদের জানা থাকলেও, সূর্যের সত্যকারের তাপমাত্রা কত তা তাদের ধারণার মধ্যে ছিল না। বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে সূর্যের সার্ফেস বা পৃষ্টতলের তাপমাত্রা নির্ণয় করেছেন, আর সেটি হচ্ছে 5,778 K বা 10,000 Fahrenheit (5,600 Celsius)। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, লোহার গলিত হওয়ার তাপমাত্রা বা গলনাঙ্ক হচ্ছে 1,538 °C, স্টেনলেস স্টিলের 2550 and 2790°F or 1400 and 1530°C। অর্থাৎ সূর্যের পৃষ্টদেশে যেই তাপমাত্রা রয়েছে তাতে খুব সহজেই এই ধাতুগুলো গলে যাবে। প্রাচীনকালে মানুষের কোন ধারণাই ছিল না যে, সূর্যের পৃষ্টদেশে এত অসম্ভব তাপমাত্রা রয়েছে, যাতে লোহার মত ধাতু অনায়াসে গলে যাবে। আসুন কয়েকটি ধাতুর গলনাঙ্ক দেখে নিই,
নাম | গলনাঙ্ক |
---|---|
Aluminum | 660.37 |
Copper | 1084.62 |
Gold | 1064 |
Iron | 1535 |
Lead | 327.5 |
Silver | 961.93 |
Tin | 232.0 |
Zinc | 419.5 |
এবারে আসুন একটি হাদিস পড়ি, যেখানে বলা আছে, কিয়ামতের ময়দানে সূর্য বান্দাদের এক দুইমাইলের মধ্যে চলে আসবে। এতে নাকি বান্দারা গলতে থাকবে। বিষয়টি কতটা হাস্যকর, তা বলাই বাহুল্য। এ থেকে বোঝা যায়, সূর্যের তাপ সম্পর্কে নবী বা আল্লাহ কারোরই কোন ধারণাই ছিল না। আসুন হাদিসটি পড়ি [70] –
সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪০/ কিয়ামত
পরিচ্ছেদঃ হিসাব এবং অন্যায়ের বদলা।
২৪২৪. সুওয়ায়াদ ইবন নাসর (রহঃ) ….. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন সূর্য বান্দাদের নিকটবর্তী হয়ে যাবে এমন কি তা এক মাইল বা দুই মাইল বলতে যমীনের দুরত্ব জ্ঞাপক মাইল বুঝানো হয়েছে না চোখে সুরমা লাগানো সলা বুঝানো হয়েছে জানি না।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সূর্যতাপে তারা গলতে থাকবে। তারা স্ব-স্ব আমল অনুসারে ঘামের প্রবাহে অবস্থান করবে। কারো তো গোড়ালী পর্যন্ত, কারো দুই হাটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত কারো মুখ পর্যন্ত ঘাম পৌছে লাগামের মত বেষ্টন করবে।
মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি তিনি তাঁর হাত দিয়ে মুখের দিকে ইশারা করলেন অর্থাৎ লাগামের মত বেষ্টন করাকে বুঝিয়ে দিলেন। সহীহ, সহিহাহ ১৩৮২, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৪২১ [আল মাদানী প্রকাশনী]
হাদীসটি হাসান-সহীহ। এই বিষয়ে আবূ সাঈদ ও ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মিকদাদ বিন মা’দীকারিব (রাঃ)
উপরের হাদিসটি নিয়ে অনেকেই বলতে পারেন, এই হাদিসে তো এটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু ইসলাম বিষয়ে সর্বোচ্চ আলমগণ কিন্তু এই হাদিস থেকে এরকমই বুঝেছেন। আসুন শায়েখ সালেহ আল ফাওযানের গ্রন্থ থেকে সরাসরি দেখে নেয়া যাক [71] –
কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর ছায়া
ইসলামের আকীদা অনুসারে, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ পাক তার অনুগত বান্দাদের ছায়া দিয়ে রাখবেন। আর কাফের বান্দারা সেইদিন আল্লাহর ছায়ার নিচে থাকতে পারবে না, সেই কারণে তাদের খুব গরম লাগবে। এই হাদিসগুলো পড়লে পরিষ্কার মনে হয়, মানুষ বা পৃথিবীর বস্তুসমূহের ছায়া কেন পরে, সেই সম্পর্কে নবী মুহাম্মদের বা আল্লাহ কারোরই তেমন কোন ধারণা ছিল না। আসুন প্রথমে হাদিসগুলো পড়ি [72] [73] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
২৪/ যাকাত
পরিচ্ছেদঃ ২৪/১৬. ডান হাতে সদাকাহ প্রদান করা।
১৪২৩. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না সে দিন আল্লাহ তা‘আলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন।
(১) ন্যায়পরায়ণ শাসক।
(২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের ভিতর গড়ে উঠেছে।
(৩) যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সাথে থাকে।
(৪) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে যে দু’ব্যক্তি পরস্পর মহববত রাখে, উভয়ে একত্রিত হয় সেই মহববতের উপর আর পৃথক হয় সেই মহববতের উপর।
(৫) এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য) আহবান জানিয়েছে। তখন সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।
(৬) যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সাদাকা করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না।
(৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাতে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ হতে অশ্রু বের হয়ে পড়ে। (৬৬০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৩৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ – মাসজিদ ও সালাতের স্থান
৭০১-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তা’আলা সেদিন (কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন) তাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া থাকবে নাঃ (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক, (২) সেই যুবক যে যৌবন বয়সে আল্লাহর ’ইবাদাতে কাটিয়েছে, (৩) যে ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মসজিদেই তার মন পড়ে থাকে, (৪) সেই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। যদি তারা একত্রিত হয় আল্লাহর জন্য হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়, (৫) সে ব্যক্তি, যে একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু’ চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, (৬) সে ব্যক্তি, যাকে কোন উচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৭) সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে। যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান হতে কী খরচ করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : বুখারী ৬৬০, মুসলিম ১০৩১, নাসায়ী ৫৩৮০, তিরমিযী ২৩৯১, আহমাদ ৯৬৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪৮৬, ইরওয়া ৮৮৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আমরা সকলেই কমবেশি জানই ছায়া কাকে বলে। আসুন ছায়া কাকে বলা হয় আরেও একবার জেনে নিই। ছায়া হচ্ছে, কোনোকিছুর দ্বারা আলোকরশ্মির গতিপথ রুদ্ধ হওয়ার ফলে উত্পন্ন প্রতিবিম্ব। ছায়া একটি অন্ধকার এলাকা যেখানে আলোর উত্স থেকে আলো একটি অস্বচ্ছ বস্তু দ্বারা অবরুদ্ধ হয়। যেহেতু আল্লাহর ছায়া কেয়ামতের ময়দানে থাকবে, তাই খুব সহজেই বলা যায়, কেয়ামত একটি গ্রহে সংঘটিত হবে এবং সেই গ্রহে একটি নিকটবর্তী নক্ষত্রও থাকবে। নিকটবর্তী আলোর উৎস বা নক্ষত্র না থাকলে আল্লাহর ছায়া কীভাবে পরবে? নিচের ছবিতে দেখুন, ছায়া কেন এবং কীভাবে পরে।
এখন বলুন তো, আল্লাহর যদি ছায়া পরে, তাহলে আল্লাহ তো একটি অস্বচ্ছ বস্তু, তাই না? আর যেহেতু কেয়ামত একটি গ্রহেই সংঘটিত হচ্ছে, তাই গ্রহটির আল্লাহর চাইতে নিঃসন্দেহে বড় হতে হবে। নইলে আল্লাহ সেখানে থাকবেন কীভাবে? সেই গ্রহের একটি নিকটবর্তী নক্ষত্রও প্রয়োজন হবে, যার আলোর ছায়া আল্লাহ বাধা দেবে এবং সেই ছায়ায় আল্লাহর ইমানদার বান্দারা আশ্রয় পাবে। তাহলে সেই নক্ষত্রটিরও তো আল্লাহর চাইতে বড় হতে হবে, তাই না?
পৃথিবী সমতলভাবে বিছানো
সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের ধারণা ছিল, পৃথিবী একটি সমতল রুটির মত। অনেক প্রাচীন উপকথায় পাওয়া যায়, পৃথিবী একটি থালা যা কোন কচ্ছপ বা মাছের পিঠে রয়েছে। ইসলামের বিশ্বাসও সেই দিক দিয়ে কাছাকাছি। কোরআনে পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে, পৃথিবীকে নাকি সমতল করে বিছানো হয়েছে!
এবারে আসুন দেখি কোরআনে পৃথিবীকে কেমন বলা হয়েছে,
এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে? [74]
যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান। [75]
তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। [76]
আমি পৃথিবীকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম। [77]
আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন বিছানা। [78]
আমি কি করিনি পৃথিবীকে বিছানা ? [79]
আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি। [80]
পৃথিবীর সমতল হওয়ার ব্যাপারে আসুন তাফসীরে জালালাইন, যা ১০০৪ হিজরি সালে লিখিত হয়েছিল, সেখান থেকে একটি পৃষ্ঠা দেখে নিই [81] –
এবারে তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে আরো খানিকটা অংশ পড়ি, [82]
একইসাথে, হাদিসেও বর্ণিত আছে যে, পৃথিবীর ডানে এবং বামে একটি শেষ প্রান্ত রয়েছে। যা নবী মুহাম্মদ নিজেই বলে গেছেন [83] [84] –
সুনান ইবনু মাজাহ
১৯/ হজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ১৯/১৫. তালবিয়া
৪/২৯২১। সাহল ইবনে সাদ আস-সাইদী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তিই তালবিয়া পাঠ করে, সাথে সাথে তার ডান ও বাঁ দিকের পাথর, গাছপালা অথবা মাটি, এমনকি দুনিয়ার সর্বশেষ প্রান্ত উভয় দিকের সবকিছু তালবিয়া পাঠ করে।
তিরমিযী ৮২৮, মিশকাত ২৫৫০, রাওদুন নাদীর ২/১১৮।
তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা’দ (রাঃ)
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৭/ হাজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ১৪. তালবিয়া ও কুরবানীর ফযীলত
৮২৮। সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ডান ও বামে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সবকিছুই তার সাথে তালবিয়া পাঠ করে। এমনকি পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ও প্রান্ত পর্যন্ত (তালবিয়া পাঠকারীদের দ্বারা) পূর্ণ হয়ে যায়।
— সহীহ, মিশকাত (২৫৫০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা’দ (রাঃ)
দাহাহা বা উটপাখির ডিম
জাকির নায়েক সহ অনেক ইসলামিক স্কলারই আজকাল কোরআনের একটি শব্দের নতুন একধরণের অনুবাদ করে বলার চেষ্টা করেন যে, কোরআনে নাকি ১৪’শ বছর আগেই পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে বলে দেয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে জাকির নায়েক “দাহাহা” শব্দের অনুবাদ করেছেন “উটপাখির ডিম”। কিন্তু এই অনুবাদটি একদমই ভুল অনুবাদ। কোরআনের আয়াতের এই রকম অর্থ কোন প্রাচীন তাফসীরকারক, নবীর সাহাবায়ে একরাম বা তাবে তাবেইনগণ কেউই করেননি। এমনকি, বর্তমান সময়ের সবচাইতে বড় ইসলামিক আলেমগণই জাকির নায়েকের এই অর্থ গ্রহণকে মিথ্যা আখ্যায়িত করেছেন। জাকির নায়েক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিজ্ঞানের সাথে মেলাবার জন্য মিথ্যা বলেছেন। তিনি কোন ইসলামিক আলেম নন, তিনি শুধুমাত্র ইসলাম প্রচারক। এমনকি, আরবি ভাষাও তিনি জানেন না বলে বহুবার স্বীকার করেছেন। উল্টোদিকে, ইসলামওয়েব ডট নেট ওয়েবসাইটে যারা ফতোয়া দেন, তারা সকলেই মদিনা ও আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা এক একজন আরবি ভাষার ওপর বিশেষজ্ঞ, আলেম, মুফতি এবং সারা পৃথিবীতে স্বনামধন্য স্কলার হিসেবে গণ্য। তারাই বলে দিয়েছেন, জাকির নায়েকের এই দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা। আসুন কাতারের এই বিখ্যাত ফতোয়া ওয়েবসাইটের ফতোয়াটি দেখে নিই, [85] –
Meaning of Quran 79:30
Fatwa No: 92448
Fatwa Date:19-9-2006
Question
Salamvalekum, This is regarding the verse of Surah Naziat 79: 30 where Allaah subhanawataala says in the Quran “And after that He spread the earth” Most of the Modern day scholars translate this verse to “Earth is like egg shaped”. To exactly proof the shape of the earth is Spherical. Yousuf Ali, Picktall and Shakir have translated the word dahaha as “spread”. The word dahaha by the modern scholars is also spread as well as ostrich egg shaped, which is exactly the shape of the earth. I would appreciate if you can provide me with the etymology of the word daha. I would also like to know can we change the meaning and quote is as egg shaped. JazakAllaah Khair
Answer
All perfect praise be to Allaah, The Lord of the Worlds. I testify that there is none worthy of worship except Allaah, and that Muhammad is His slave and Messenger. We ask Allaah to exalt his mention as well as that of his family and all his companions.
Allaah Says (what means): {And after that He spread (in Arabic the word used is Dahaahaa) the earth.} [Quran 79:30]. The Arabic word Dahaahaa is extracted from the root Daha which means spreading as interpreted by Imaams Al-Qurtubi, Ibn Manthoor and other interpreters of the Quran .
Indeed Allaah explained the fact of the Earth being spread just right after mentioning the above verse, as He Says (what means): {And brought forth therefrom its water and its pasture. And the mountains He has fixed firmly.} [Quran 79:31-32]. Therefore, it becomes evident that the verse does not mean that He made it egg-shaped.
This, of course, does not contradict the fact the Earth is round-shaped as agreed by the scholars .
Allaah Knows best.
আসুন এই ফতোয়াটির বাঙলা অনুবাদও একইসাথে পড়ে নিই। ফতোয়াটি অনুবাদ করে দিয়েছেন সংশয় পরিবারের আবুল ফজল ভাই।
কোরানে দাহাহা শব্দটি নিয়ে এক মুমিন ভাইয়ের প্রশ্ন
প্রশ্ন
আমি কোরানের সুরা নাজিয়াতের (৭৯ নাম্বার সুরা) ৩০ নাম্বার আয়াতের বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাই। এখানে আল্লাহ বলেন, “এরপর তিনি জমিনকে বিস্তৃত করেছেন”। বর্তমান সময়ের বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ দাবী করেন যে এই আয়াতে ‘দাহাহা’ শব্দটি দিয়ে নাকি বিস্তৃত করাও বোঝায়, আবার এটাও নাকি বোঝায় যে “পৃথিবীর আকৃতি উটপাখির ডিমের মত”। কিন্তু ইউসুফ আলী, পিকথাল ও শাকিরের অনুবাদে আমরা দাহাহা শব্দটির ইংরেজি হিসেবে দেখতে পাই শুধুমাত্র spread শব্দটি, যার বাংলা অর্থ বিস্তৃত করা। আমি খুব বাধিত হবো যদি এই দাহাহা শব্দটির ব্যুৎপত্তি সম্বন্ধে আমাকে অবহিত করেন। আমি আরও জানতে চাই যে আমরা কি দাহাহা শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে এটিকে “উটপাখির ডিম” হিসাবে উপস্থাপন করতে পারি? জাজাকাল্লাহ খায়ের।
উত্তর
কোরানে সুরা নাজিয়াতের ৩০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এরপর তিনি জমিনকে বিস্তৃত (এখানে বিস্তৃত বোঝাতে ব্যবহৃত আরবি শব্দটি দাহাহা) করেছেন”। আরবি দাহাহা শব্দটির ব্যুৎপত্তি হয়েছে যে শব্দ থেকে, সেই মূল শব্দটি হল দাহা, যার মানে হচ্ছে ছড়ানো, যেটা কিনা ইমাম আল কুরতুবি, ইমাম ইবনে মনসুর প্রমুখ খ্যাতনামা ইমামবৃন্দসহ কোরানের অন্যান্য বহু বিখ্যাত ভাষ্যকার ও ব্যাখ্যাকারীদেরও অভিমত।
এমনকি, আল্লাহ নিজেও পৃথিবীকে ছড়ানো বা বিস্তৃত করার ব্যাপারটি সুরা নাজিয়াতের পরবর্তী দুটি আয়াতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন –
“তিনি তার ভিতর থেকে বের করেছেন তার পানি ও তার তৃণভূমি”।
“আর পর্বতগুলোকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন”।
(কোরান ৭৯:৩১-৩২)
এ থেকে প্রমাণ হয় যে ৩০ নং আয়াতে তিনি এটা কোনভাবেই বোঝান নি যে তিনি পৃথিবীকে ডিমের আকৃতিতে তৈরি করেছেন।
পৃথিবী যে গোলাকৃতি, এ বিষয়ে পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীরাই একমত, এবং এই আয়াত বিজ্ঞানীদের ঐক্যমতের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও নয়।
আল্লাহই ভাল জানেন!
আসমান ও পৃথিবীর মাঝে দূরত্ব
একটি বিখ্যাত হাদিসে আসমান এবং জমিনের দূরত্ব বলেছেন নবী মুহাম্মদ। তবে হাদিসটি সহিহ কিনা সে বিষয়ে আলেমদের মতভেদ আছে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া এবং তাঁর ছাত্র ইবনুল কাইয়্যিম হাদীছটি সহীহ বলেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান গরীব। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা, হাদীছ নং- ১২৪৭। হাদিসটি আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া সহ অনেকগুলো ইসলামের গুরুত্বপুর্ণ গ্রন্থে বর্ণিত আছে।
ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ আকীদাগ্রন্থ ডঃ সালেহ ফাওযানের লিখিত শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া গ্রন্থেও এই হাদিসটি এসেছে, [86]
চাঁদের জ্যোতি রয়েছে
প্রাচীনকাল থেকেই পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা থেকে মানুষের ধারণা ছিল চাঁদের নিজস্ব আলো রয়েছে। কারণ রাতের বেলা তারা উজ্জল চাঁদ দেখতে পেতো। দীর্ঘদিন সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করে প্রাচীন গ্রীসের দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী এনাক্সাগোরাস, যার জন্ম আনুমানিক ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব, মৃত্যু আনুমানিক ৪২৮ খ্রিস্টপূর্ব, সর্বপ্রথম দাবী করেন যে, চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। চাঁদের আলো আসলে সূর্যের প্রতিফলিত আলো। তিনি বলেছিলেন [87] –
সূর্য একটি “লাল-গরম পাথর” যা থেকে প্রতিফলিত আলোর দ্বারা চাঁদ আলোকিত হয়।
দুর্দান্ত প্রতিভা দেখিয়ে তিনি এই বিষয়ে আরো গবেষণা করেন, পরবর্তী পদক্ষেপ নেন এবং সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হন। কিন্তু সেই সময়ের ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর চাপের মুখে নাস্তিকতা প্রচারের দায়ে উনাকে এথেন্স থেকে নির্বাসিত করা হয়।
বাইবেলে এই সম্পর্কে বলা হয়েছে, চাঁদের নিজস্ব আলো রয়েছে। বাইবেলের লেখকগণ নিশ্চয়ই এনাক্সাগোরাসের এই আবিষ্কার সম্পর্কে নিশ্চয়ই অবগত ছিলেন না। বাইবেলে বলা হয়েছে,
14 তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভাশুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে।
15 পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।” এবং তা-ই হল।
16 তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন।
17 পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন।
18 দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে।
ইসলামিও বাইবেলের কথার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারেও চাঁদের নিজস্ব আলো রয়েছে। যদিও জাকির নায়েকের মত বর্তমান যুগের কিছু দাইয়ী ইসলামকে বিজ্ঞানসম্মত করার ইচ্ছে নিয়ে দাবী করেন যে, মুনীরা শব্দটি দিয়ে নাকি প্রতিফলিত আলো বোঝায়! যেটি একদমই ভুল তথ্য। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য এই লেখাটি পড়ুন [88]। অথচ আমরা বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানি, এনাক্সাগোরাসের কথাটিই সঠিক ছিল যে, চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই, তার আলো হচ্ছে সূর্যের প্রতিফলিত আলো। আসুন এই বিষয়ে কোরআনে কী বলা আছে সেগুলো দেখে নিই [89] [90] [91] [92] –
তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদীপ্ত, আর চন্দ্রকে করেছেন আলোকময় আর তার (হ্রাস বৃদ্ধির) মানযিলসমূহ সঠিকভাবে নির্ধারণ করেছেন যাতে তোমরা বৎসর গুণে (সময়ের) হিসাব রাখতে পার। আল্লাহ এটা অনর্থক সৃষ্টি করেননি, তিনি নিদর্শনগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করেন জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।
— Taisirul Quran
আল্লাহ এমন, যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চাঁদকে আলোকময় বানিয়েছেন এবং ওর (গতির) জন্য মানযিলসমূহ নির্ধারিত করেছেন যাতে তোমরা বছরসমূহের সংখ্যা ও হিসাব জানতে পার; আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি, তিনি এই প্রমাণসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন ঐসব লোকের জন্য যারা জ্ঞানবান।
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনিই সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চাঁদকে আলোময় আর তার জন্য নির্ধারণ করেছেন বিভিন্ন মনযিল, যাতে তোমরা জানতে পার বছরের গণনা এবং (সময়ের) হিসাব। আল্লাহ এগুলো অবশ্যই যথার্থভাবে সৃষ্টি করেছেন। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন।
— Rawai Al-bayan
তিনি সূর্যকে দীপ্তিময় ও চাঁদকে আলোকময় করেছেন এবং তার জন্য মনযিল নির্দিষ্ট করেছেন যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পার। আল্লাহ্ এগুলোকে যথাযথ ভাবেই সৃষ্টি করেছেন [১]। তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেন এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
কতই না কল্যাণময় তিনি যিনি আসমানে নক্ষত্ররাজির সমাবেশ ঘটিয়েছেন আর তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ আর আলো বিকিরণকারী চন্দ্র।
— Taisirul Quran
কত মহান তিনি, যিনি নভোমন্ডলে সৃষ্টি করেছেন তারকারাজি এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ ও জ্যোতির্ময় চাঁদ!
— Sheikh Mujibur Rahman
বরকতময় সে সত্তা যিনি আসমানে সৃষ্টি করেছেন বিশালকায় গ্রহসমূহ। আর তাতে প্রদীপ ও আলো বিকিরণকারী চাঁদ সৃষ্টি করেছেন।
— Rawai Al-bayan
কত বরকতময় তিনি যিনি নভোমণ্ডলে সৃষ্টি করেছেন বিশাল তারকাপুঞ্জ এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্ৰদীপ [১] ও আলো বিকিরণকারী চাঁদ।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আর তাদের মাঝে চাঁদকে বানিয়েছেন আলো এবং সূর্যকে করেছেন প্রদীপ।
— Taisirul Quran
এবং সেখানে চাঁদকে স্থাপন করেছেন আলোক রূপে ও সূর্যকে স্থাপন করেছেন প্রদীপ রূপে;
— Sheikh Mujibur Rahman
আর এগুলোর মধ্যে চাঁদকে সৃষ্টি করেছেন আলো আর সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন প্রদীপরূপে’।
— Rawai Al-bayan
আর সেখানে চাঁদকে স্থাপন করেছেন আলোকরূপে ও সূর্যকে স্থাপন করেছেন প্রদীপরূপে;
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
চাঁদ হয়ে যাবে আলোকহীন
— Taisirul Quran
এবং চক্ষু হয়ে পড়বে জ্যোতিহীন।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর চাঁদ কিরণহীন হবে,
— Rawai Al-bayan
এবং চাঁদ হয়ে পড়বে কিরণহীন [১],
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তাফসীরগ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়, প্রাচীনকালের সালাফগণ এই সম্পর্কে কী ভাবতেন। তারা চাঁদের নিজস্ব আলো রয়েছে এই বিষয়েই মত দিয়েছেন, যার প্রচুর প্রমাণ মেলে [93] [94] –
সহীহ্ হাদীস থেকেও প্রমান পাওয়া যায় যে, ইসলাম অনুসারে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল [95] [96] –
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছদঃ ১৯৮৬. চন্দ্র ও সূর্য উভয়ে নির্ধারিত কক্ষপথে আবর্তন করে। এর জন্য মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, উভয়ের আবর্তন চাকার আবর্তনের অনুরূপ। আর অন্যেরা বলেন, উভয় এমন এক নির্দিষ্ট হিসাব ও স্থানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যা তারা অর্থাৎ চন্দ্র ও সূর্য লঙ্ঘন করতে পারে না। حُسْبَانٌ হল حِسَابٍ শব্দের বহুবচন, যেমন شِهَابٍ এর বহুবচন شُهْبَانٍ – ضُحَاهَا এর অর্থ জ্যোতি। أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ চন্দ্র সূর্যের একটির জ্যোতি অপরটিকে ঢাকতে পারে না, আর তাদের পক্ষে এটা সম্ভব নয়। سَابِقُ النَّهَارِ রাত দিনকে দ্রুত অতিক্রম করে। উভয়ে দ্রুত অতিক্রম করতে চায়। نَسْلَخُ আমি উভয়ের একটিকে অপরটি হতে বের করে আনি আর তাদের প্রতিটি চালিত করা হয় وَاهِيَةٌ এবং وَهْيُهَا এর অর্থ তার বিদীর্ণ হওয়া। أَرْجَائِهَا তার সেই অংশ যা বিদীর্ণ হয়নি আর তারা তার উভয় পার্শ্বে থাকবে। যেমন তোমার উক্তি عَلَى أَرْجَاءِ الْبِئْرِ কূপের তীরে أَغْطَشَ وَجَنَّ অন্ধকার ছেয়ে গেল। হাসান বসরী বলেন كُوِّرَتْ অর্থ লেপটিয়ে দেয়া হবে, যাতে তার জ্যোতি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর বলা হয়ে থাকে وَاللَّيْلِ وَمَا وَسَقَ এর অর্থ আর শপথ রজনীর এবং তার যে জীবজন্তু একত্রিত করল। اتَّسَقَ বরাবর হল। بُرُوجًا চন্দ্র সূর্যের কক্ষ ও নির্ধারিত স্থান। الْحَرُورُ গরম বাতাস যা দিনের বেলায় সূর্যের সাথে প্রবাহিত হয়। ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, حَرُورُ রাত্রিবেলার আর سَمُومُ দিনের বেলার লু হাওয়া। বলা হয় يُولِجُ অর্থ প্রবিষ্ট করে বা করবে وَلِيجَةً অর্থ এমন প্রতিটি বস্তু যা তুমি অন্যটির মধ্যে ঢুকিয়েছ।
২৯৭৩। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন চন্দ্র ও সূর্য় উভয়কে লেপটিয়ে দেয়া হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
চাঁদ দুইভাগে বিভক্ত
ইসলামের বিশ্বাস হচ্ছে, নবী মুহাম্মদের আমলে চাঁদকে মুহাম্মদ তার মোজেজা দ্বারা দুই খণ্ডে বিভক্ত করেছিলেন। চাঁদ নামক উপগ্রহটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সেই খণ্ড দুইটির একটি খণ্ড মক্কার একটি পাহাড়ের একপাশে, আরেকটি খণ্ড পাহাড়ের অপর পাশে পড়ে। বিষয়টি খুবই হাস্যকর এই কারণে যে, মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীদের চাঁদের আকৃতি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাও ছিল না। এর বহু পূর্বেই গ্রীসের জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ চাঁদ সম্পর্কে অনেক ভাল তথ্য জানতেন। এছাড়াও, চাঁদের দুই খণ্ড হওয়ার দাবীটিও খুবই হাস্যকর। দুই খণ্ডে বিভক্ত হলে চাঁদ আর কিছুতেই একসাথে লেগে থাকতো না।
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ। চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ। সহজে বোঝার জন্য চাঁদ এবং পৃথিবীর তুলনামূলক একটি চিত্র দেয়া হলো। পাঠকগণ আশা করি বুঝতে পারছেন, চাঁদ কোন ছোট একটি গোলা নয় যে, এটি বলের মত পাহাড়ের এই পাশে আর ঐ পাশে পড়বে। চাঁদের অর্ধেক খণ্ড পড়লে গোটা সৌদী আরবই উধাও হয়ে যাওয়ার কথা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা তো বাদই দিচ্ছি!
এবারে আসুন এই সম্পর্কিত তথ্যসূত্রগুলো যাচাই করে নিই [97] [98] [99] [100] [101] [102] [103] [104] [105] –
কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। – কোরআন ৫৪ঃ১
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৩/ কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ
পরিচ্ছদঃ ৯. চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিবরণ
৬৮১৫। আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, উমার ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস, ও মিনজাব ইবনু হারিছ তামিমী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মিনায় আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। এমতাবস্থায় (হঠাৎ করে) চন্দ্র বিদীর্ন হয়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। এক খন্ড পাহাড়ের এ পাশে পড়ল এবং অপর খন্ড পড়ল পাহাড়ের ওপাশে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা সাক্ষী থাক।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ৪৪/ তাফসীরুল কুরআন
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
পরিচ্ছদঃ ৫৫. সূরা আল-কামার
৩২৮৯। জুবাইর ইবনু মুতাইম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে চাঁদ বিদীর্ণ হল এবং দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলে, এক অংশ এই পাহাড়ের উপর এবং অপর অংশ ঐ পাহাড়ের উপর পড়ে গেল। তারা (মাক্কাবাসী কাফিররা) বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যাদু করেছেন। কেউ কেউ বলল, তিনি আমাদের যাদু করে থাকলে সব মানুষকে যাদু করতে পারবেন না।
হাদীসটির সানাদ সহীহ।
আবূ ঈসা বলেন, কোন কোন বর্ণনাকারী এ হাদীস হুসাইন হতে, তিনি জুবাইর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু জুবাইর ইবনু মুতাইম হতে, তিনি তার পিতা হতে, তিনি তার দাদা জুবাইর ইবনু মুতাইম (রাযিঃ) হতে, এই সূত্রে একই রকম বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৫২। কিয়ামাত, জান্নাত ও জান্নামের বর্ণনা
পরিচ্ছদঃ ৮. চন্দ্র খণ্ডিত হওয়ার বর্ণনা
৬৯৬৬-(৪৫/…) উবাইদুল্লাহ ইবনু মুআয আল আম্বারী (রহঃ) ….. ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় চন্দ্র ফেটে দু’টুকরো হয়ে যায়। এর এক টুকরোকে পাহাড় আড়াল করে ফেলেছে এবং অপর এক টুকরো পাহাড়ের উপর পরিলক্ষিত হয়েছে। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৮১৬, ইসলামিক সেন্টার ৬৮৭০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৩/ কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ
পরিচ্ছদঃ ৯. চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিবরণ
৬৮১৯। মুহাম্মদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হল। তবে আবূ দাঊদ (রহঃ) এর হাদীসে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় (চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৩/ কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ
পরিচ্ছদঃ ৯. চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিবরণ
৬৮১৮। যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কাবাসী লোকেরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তাদের একটি নিদর্শন (মু’জিযা) দেখানোর দাবী করল। তিনি তাদের (দু’বার) চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার নিদর্শন দেখালেন।
মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে শায়বানের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২০৭৭. মুশরিকরা মুজিযা দেখানোর জন্য নবী করীম (সাঃ) এর নিকট আহবান জানালে তিনি চাঁদ দু’টুকরা করে দেখালেন
৩৩৭৭। খালাফ ইবনু খালিদ আল-কুরায়শী (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যামানায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এবারে আসুন সহিহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ নসরুল বারীতে এই বিষয়ে কী বর্ণনা করা আছে দেখে নেয়া যাক [106]
ইসলামের প্রখ্যাত একটি গ্রন্থ আশ শিফা যার লেখক হলেন বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা ইমাম কাজী আয়াজ আন্দুলুসী, তার বই থেকে এই হাদিসগুলো দেখি [107],
এবারে আসুন একজন হুজুরের ওয়াজ শুনি,
এবারে আসুন একটি ছোট ভিডিও দেখে নিই, চাঁদের মত উপগ্রহ পৃথিবীতে পতিত হলে পৃথিবীতে কী হবে-
ইসলামিক মিথ্যাচারের আর কিছু নমুনা এখানে দেয়া হচ্ছে। বোখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলা হয়েছে, নাসার বিজ্ঞানীরা নাকি স্বীকার করে নিয়েছে যে, চাঁদ দুইভাগে বিভক্ত [108]
সূর্যকে থামিয়ে দিয়েছিল এক নবী
বেশ কয়েকটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী একবার চলন্ত সূর্যকে থামিয়ে দিয়েছিলেন। সূর্য নাকি এক নবীর নির্দেশ মোতাবেক বেশ কিছু সময় থেমে এক জায়গাতেই থমকে ছিল! এর অর্থ হচ্ছে, নবী পৃথিবীর ঘুর্ণনকেই আসলে থামিয়ে দিয়েছিলেন। পৃথিবীর ঘুর্ণন থামলেই, পৃথিবী থেকে সূর্যকে স্থির বলে মনে হবে। কিন্তু আমরা জানি যে, পৃথিবীর ঘুর্ণন এক সেকেন্ডের জন্যেও যদি থামে, তাহলে পুরো পৃথিবীব্যাপী মহা দুর্যোগ দেখা দেবে। সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ব্যাপক প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিবে।
পৃথিবীর পৃষ্ঠের সকল বস্তু পূর্বদিকে অত্যন্ত দ্রুতবেগে ছুটে যাবে, কারণ তারা পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে ইতিমধ্যে গতিশীল। পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হওয়ার ফলে মহাকর্ষের পরিবর্তনও হবে। যদি পৃথিবী হঠাৎ করে ঘোরা বন্ধ করে, তাহলে পার্শ্বিক মহাকর্ষ হ্রাস পাবে এবং পৃথিবী একটি ডিম্বাকৃতি আকারে প্রসারিত হতে শুরু করবে। পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হওয়ার ফলে আবহাওয়াও ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হবে। পৃথিবীর ঘূর্ণন বায়ু এবং জলপ্রবাহকে সৃষ্টি করে। যদি পৃথিবী হঠাৎ করে ঘোরা বন্ধ করে, তাহলে বায়ু এবং জলপ্রবাহ থেমে যাবে এবং আবহাওয়া স্থির হয়ে যাবে।
সামগ্রিকভাবে, পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হওয়ার ফলে খুবই নেতিবাচক পরিণতি হবে। এটি ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক ঘটনা হবে এবং পৃথিবীতে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আসুন আমরা এই বিষয়টি আগে একটি ভিডিও থেকে দেখে নিই,
এবারে আসুন এই বিষয়ে ইসলামিক দলিগুলো দেখে নেয়া যাক, [109] [110] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৭/ খুমুস (এক পঞ্চমাংশ)
পরিচ্ছেদঃ ৫৭/৮. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ তোমাদের জন্য গনীমতের মাল হালাল করা হয়েছে।
৩১২৪. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোন একজন নবী জিহাদ করেছিলেন। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এমন কোন ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে না, যে কোন মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তার সঙ্গে মিলিত হবার ইচ্ছা রাখে, কিন্তু সে এখনো মিলিত হয়নি। এমন ব্যক্তিও না যে ঘর তৈরি করেছে কিন্তু তার ছাদ তোলেনি। আর এমন ব্যক্তিও না যে গর্ভবতী ছাগল বা উটনী কিনেছে এবং সে তার প্রসবের অপেক্ষায় আছে। অতঃপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং ‘আসরের সালাতের সময় কিংবা এর কাছাকাছি সময়ে একটি জনপদের নিকটে আসলেন। তখন তিনি সূর্যকে বললেন, তুমিও আদেশ পালনকারী আর আমিও আদেশ পালনকারী। হে আল্লাহ্! সূর্যকে থামিয়ে দিন। তখন তাকে থামিয়ে দেয়া হল। অবশেষে আল্লাহ তাকে বিজয় দান করেন। অতঃপর তিনি গানীমাত একত্র করলেন। তখন সেগুলো জ্বালিয়ে দিতে আগুন এল কিন্তু আগুন তা জ্বালিয়ে দিল না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তোমাদের মধ্যে (গানীমাতের) আত্মসাৎকারী রয়েছে। প্রত্যেক গোত্র হতে একজন যেন আমার নিকট বায়‘আত করে। সে সময় একজনের হাত নবীর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যেই আত্মসাৎকারী রয়েছে। কাজেই তোমার গোত্রের লোকেরা যেন আমার নিকট বায়‘আত করে। এ সময় দু’ ব্যক্তির বা তিন ব্যক্তির হাত তাঁর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যেই আত্মসাৎকারী রয়েছে। অবশেষে তারা একটি গাভীর মস্তক পরিমাণ স্বর্ণ উপস্থিত করল এবং তা রেখে দিল। অতঃপর আগুন এসে তা জ্বালিয়ে ফেলল। অতঃপর আল্লাহ আমাদের জন্য গানীমাত হালাল করে দিলেন এবং আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা লক্ষ্য করে তা আমাদের জন্য তা হালাল করে দিলেন। (৫১৫৭) (মুসলিম ৩২/১১ হাঃ ১৭৪৭, আহমাদ ৮২৪৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৮৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯০১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
ইসলামের প্রখ্যাত একটি গ্রন্থ আশ শিফা যার লেখক হলেন বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা ইমাম কাজী আয়াজ আন্দুলুসী। উনার গ্রন্থ থেকে আসুন আরও একটি ঘটনা জেনে নিই [111] –
মহাকাশ এবং ইসলাম
উল্কাপাত কাকে বলে?
উল্কা (ইংরেজিতে meteoroid) হল কোন ধূমকেতুর অংশবিশেষ যেগুলো কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে বায়ুমণ্ডলের সাথে সেটির ঘর্ষণে জ্বলে উঠে। এগুলোকেই উল্কা বলা হয়। এটি মহাকাশে পরিভ্রমণরত পাথর বা ধাতু দ্বারা গঠিত ছোট মহাজাগতিক বস্তু যা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করলে বায়ুর সংঘর্ষে জ্বলে উঠে। এই ঘটনাকে উল্কাপাত (meteor) বলে।
এই উল্কাপাতের ঘটনাকে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, এটি আসলে হচ্ছে শয়তান তাড়াবার উদ্দেশ্যে আল্লাহর ক্ষেপনাস্ত্র। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, উল্কাপাত বলে আমরা যা দেখি, তা নিতান্তই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সাথে সম্পর্কিত ঘটনা।
নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি। এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে। ওরা উর্ধ্ব জগতের কোন কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং চার দিক থেকে তাদের প্রতি উল্কা নিক্ষেপ করা হয়। ওদেরকে বিতাড়নের উদ্দেশে। ওদের জন্যে রয়েছে বিরামহীন শাস্তি। তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে।
[112]
আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি।
[113]
এবারে আসুন দেখি এই বিষয়ে হাদিসে কী বলা আছে [114] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪০/ সালাম
পরিচ্ছেদঃ ৩৪. জ্যোতিষী কর্ম ও জ্যোতিষীর কাছে গমনাগমন হারাম
৫৬২৫। হাসান ইবনু আলী হুলওয়ানী (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের মাঝে আনসারদের এক ব্যক্তি আমাকে (হাদীস) অবহিত করেছেন যে, তাঁরা এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় একটি তারকা নিক্ষিপ্ত হল, এবং তা জ্বলে উঠল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, এ ধরণের (তারকা) নিক্ষিপ্ত হলে জাহেলী যুগে তোমরা কি বলতে? তারা বলল, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই সমধিক অবগত। আমরা বলতাম, আজ রাতে কোন মহান ব্যক্তির জন্ম হল (এবং কোন মহান ব্যক্তি মারা গেলেন)।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে জেনে রাখ যে, তা কারো মৃত্যু কিংবা কারো জন্মের কারণে নিক্ষিপ্ত হয় না; বরকতময় ও মহান নামের অধিকারী আমাদের রব যখন কোন বিষয়ের ফায়সালা দেন, তখন আরশ বহনকারী ফিরিশতারা তাসবীহ পাঠ করে। তারপর তাসবীহ পাঠ করে সে অহসমানের ফিরিশতারা, যারা তাদের নিকটবর্তী; অবশেষে তাসবীহ পাঠ এ নিকটবর্তী (দুনিয়ার) আসমানের বাসিন্দাদের পর্যন্ত পৌছে। তারপর আরশ বহনকারী (ফিরিশতা)-দের নিকটবর্তী যারা তারা আরশ বহনকারীদের বলে, তোমাদের প্রতিপালক কি ইরশাদ করলেন? তখন তিনি তাদের যা বলেছেন, তারা সে খবর সরবরাহ করে।
(রাবী বলেন) বললেন, পরে আসমানসমূহের বাসিন্দারা একে অপরকে খবর আদান প্রদান করে। অবশেষে এই নিকটবর্তী আসমানে খবর পৌছে। তখন জ্বীনেরা অতর্কিতে (গোপন সংবাদটি) শুনে নেয় এবং তাদের দোসর জ্যোতিষীদের কাছে পৌছিয়ে দেয়, আর তার সঙ্গে বাড়িয়ে দেয়। ফলে যা তারা যথাযথভাবে নিয়ে আসতে পারে, তাই ঠিক হয়; কিন্তু তারা তাতে সংমিশ্রিত ও সংযোজিত করে (যা সঠিক হয় না)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
এর ইংরেজি অনুবাদটি দেখুন, তাহলে বুঝবেন এর বাঙলা অনুবাদে কীরকম চালাকির আশ্রয় নেয়া হয়েছে,
‘Abdullah. Ibn ‘Abbas reported:
A person from the Ansar who was amongst the Companions of Allah’s Messenger (ﷺ) reported to me: As we were sitting during the night with Allah’s Messenger (ﷺ), a meteor shot gave a dazzling light. Allah’s Messenger (ﷺ) said: What did you say in the pre-Islamic days when there was such a shot (of meteor)? They said: Allah and His Messenger know best (the actual position), but we, however, used to say that that very night a great man had been born and a great man had died, whereupon Allah’s Messenger (ﷺ) said: (These meteors) are shot neither at the death of anyone nor on the birth of anyone. Allah, the Exalted and Glorious, issues Command when He decides to do a thing. Then (the Angels) supporting the Throne sing His glory, then sing the dwellers of heaven who are near to them until this glory of God reaches them who are in the heaven of this world. Then those who are near the supporters of the Throne ask these supporters of the Throne: What your Lord has said? And they accordingly inform them what He says. Then the dwellers of heaven seek information from them until this information reaches the heaven of the world. In this process of transmission (the jinn snatches) what he manages to overhear and he carries it to his friends. And when the Angels see the jinn they attack them with meteors. If they narrate only which they manage to snatch that is correct but they alloy it with lies and make additions to it.
আরো একটি হাদিস পড়ি [115] –
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪০। সালাম
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষীর কাছে গমনাগমন নিষিদ্ধ
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৫৭১২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২২২৯
৫৭১২-(১২৪/২২২৯) হাসান ইবনু ’আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ) ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) …… আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের মধ্যে আনসারদের জনৈক ব্যক্তি আমাকে সংবাদ দিয়েছে যে, তারা এক রাত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বসা ছিলেন। সে সময় একটি নক্ষত্র পতিত হলো, যার দরুন আলোকিত হয়ে উঠল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, এ ধরর (তারকা) পতিত হলে অজ্ঞতার যুগে তোমরা কি বলতে? তারা বলল, আল্লাহ এবং তার রসূলই অধিক ভাল জানেন। আমরা বলতাম, আজ রাতে মনে হয় কোন মহান লোকের ভূমিষ্ঠ হয়েছে অথবা কোন মহান লোক মৃত্যুবরণ করেছেন।
তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জেনে রাখো যে, তা কারো মৃত্যু কিংবা কারো জন্মের কারণে পতিত হয় না; কল্যাণময় ও মহান নামের অধিকারী আমাদের প্রতিপালক যখন কোন বিষয়ের সমাধান দেন, তখন আরশ বহনকারী ফেরেশতারা তাসবীহ পাঠ করে। অতঃপর তাসবীহ পাঠ করে সে আকাশের ফেরেশতারা, যারা তাদের পার্শ্ববর্তী পরিশষে তাসবীহ পাঠ এ নিকটবর্তী (পৃথিবীর) আসমানের অধিবাসীদের পর্যন্ত পৌছে।
অতঃপর আরশ বহনকারীদের (ফেরেশতা) পার্শ্ববর্তী যারা তারা আরশ বহনকারীদের বলে তোমাদের প্রতিপালক কি বললেন? সে সময় তিনি তাদের যা কিছু বলেছেন, তারা সে সংবাদ বর্ণনা করে। বর্ণনাকারী বলেন, পরে আসমানসমূহের অধিবাসীরা একে অপরকে সংবাদ আদান-প্রদান করে। পরিশেষে এ নিকটবর্তী আকাশে সংবাদ পৌছে। সে সময় জিনেরা অতর্কিতে গোপন খবরটি শুনে নেয় এবং তাদের দোসর জ্যোতিষীদের নিকট পৌছিয়ে দেয়, আর সাথে অতিরিক্ত কিছু জুড়ে দেয়। ফলে যা তারা ঠিকঠাকভাবে নিয়ে আসতে পারে, তাই ঠিক হয়; তবে তারা তাতে (কথামালা) সুবিন্যস্ত ও সংযোজন করে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৬২৫, ইসলামিক সেন্টার ৫৬৫৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
এই হাদিসটির ইংরেজি অনুবাদও দেখে নিই, তাতে বোঝা যাবে লজ্জিত অনুবাদকগণ কীভাবে হাদিস অনুবাদে চালাকির আশ্রয় নিয়েছেন। লক্ষ্য করুন, লাল ও হলুদ করে দেয়া লাইনটির কোন অনুবাদই বাঙলা অনুবাদগুলোতে নেই।
‘Abdullah. Ibn ‘Abbas reported: A person from the Ansar who was amongst the Companions of Allah’s Messenger (ﷺ) reported to me: As we were sitting during the night with Allah’s Messenger (ﷺ), a meteor shot gave a dazzling light. Allah’s Messenger (ﷺ) said: What did you say in the pre-Islamic days when there was such a shot (of meteor)? They said: Allah and His Messenger know best (the actual position), but we, however, used to say that that very night a great man had been born and a great man had died, whereupon Allah’s Messenger (ﷺ) said: (These meteors) are shot neither at the death of anyone nor on the birth of anyone. Allah, the Exalted and Glorious, issues Command when He decides to do a thing. Then (the Angels) supporting the Throne sing His glory, then sing the dwellers of heaven who are near to them until this glory of God reaches them who are in the heaven of this world. Then those who are near the supporters of the Throne ask these supporters of the Throne: What your Lord has said? And they accordingly inform them what He says. Then the dwellers of heaven seek information from them until this information reaches the heaven of the world. In this process of transmission (the jinn snatches) what he manages to overhear and he carries it to his friends. And when the Angels see the jinn they attack them with meteors. If they narrate only which they manage to snatch that is correct but they alloy it with lies and make additions to it.
এবারে আসুন আরেকটি হাদিস পড়ি, যেখানে খুব সরাসরিই পুরো বিষয়টি বলা আছে [116] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ – জ্যোতিষীর গণনা
৪৬০০-[৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আকাশমণ্ডলীতে যখন কোন ফায়সালা করেন, তখন সে নির্দেশে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাদের পাখাসমূহ নাড়াতে থাকেন। আল্লাহ তা’আলার সে নির্দেশটির আওয়াজ সে শিকলের শব্দের মতো যা কোন একটি সমতল পাথরের উপরে টেনে নেয়া হলে শোনা যায়। অতঃপর যখন মালায়িকাহ্ অন্তর হতে সে ভীতি দূর হয়ে যায়, তখন সাধারণ মালাক (ফেরেশতা) আল্লাহর নিকটতম মালাক-কে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের রব্ কি নির্দেশ দিয়েছেন? তাঁরা বলেন, আমাদের প্রভু যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ সঠিকই বলেছেন। (এবং সে নির্দেশটি কি তা জানিয়ে দেন,) এরপর বলেন, আল্লাহ তা’আলা হলেন সুমহান ও মর্যাদাসম্পন্ন।
আল্লাহর নবী আরো বলেছেনঃ আল্লাহর ফায়সালাকৃত বিধান সম্পর্কে ফেরেশতাদের মধ্যে যেসব আলোচনা হয়, জীন-শায়ত্বনেরা চোরা পথে একজন আরেকজনের উপরে দাঁড়িয়ে শোনার চেষ্টা করে। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান নিজের হাতের অঙ্গুলিগুলো ফাঁক করে শয়তানরা কিভাবে একজন আরেকজন হতে কিছুটা ফাঁক করে কিভাবে একজন আরেকজন হতে কাছাকাছি দাঁড়ায় তা অনুশীলন করে দেখিয়েছেন। অতঃপর যে শয়তান প্রথমে নিকট হতে শুনতে পায় সে তা তার নিচের শয়তানকে বলে দেয় এবং সে তার নিচের জনকে, এভাবে কথাটি জাদুকর ও গণকের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়।
অনেক সময় এমন হয় যে, ঐ কথাটি পৌঁছার পূর্বেই আগুনের ফুলকি তাদের ওপর নিক্ষেপ করা হয় (ফলে আর তা গণকদের পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না)। আবার কখনো তারকা নিক্ষেপ হওয়ার পূর্বেই তা তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর তারা ঊর্ধ্বজগতে শুনা সে (সত্য) কথাটির সাথে (নিজেদের মনগড়া) শত শত মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে মানুষের কাছে বলে। আর যখন তাকে বলা হয় যে, অমুক দিন তুমি আমাদেরকে এই এই কথা বলেছিলে, (তা তো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।) তখন ঐ একটি কথা দ্বারা তার সত্যতা প্রমাণ করা হয়, যা ঊর্ধ্বজগৎ হতে শ্রুত হয়েছিল। (বুখারী)[1]
[1] সহীহ : বুখারী ৪৭০১, ইবনু মাজাহ ১৯৪, আল জামি‘উস্ সগীর ৭৩৬, সহীহুল জামি‘ ৭৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬, তিরমিযী ৩২২৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
কদরের রাতে উল্কাপাত হয় না
আহমদ ইবনে হানবলের একটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, শবে কদরের রাতে উল্কাপাত হয় না। এই হাদিসের ওপর ভিত্তি করে ইসলামের এই হাস্যকর দাবীটি মুফতি ইব্রাহীম সহ অনেকেই অনেকগুলো টিভি চ্যানেল এবং ওয়াজ মাহফিলে দাবী করেন।
একটি ভিডিওতেও মুফতি কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীম শবে কদর বিষয়ক আলোচনায় দাবী করেন, মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এই গবেষণার তথ্য বিগত ১০ বছর ধরে গোপন করে আসছে। তার ভাষ্যমতে, এই গবেষণায় নাসার বিজ্ঞানীরা দেখেছে যে বছরব্যাপী আকাশ থেকে প্রতি রাতে ১০-২০ লক্ষ উল্কা পৃথিবীতে পড়লেও নির্দিষ্ট একটি রাতে উল্কাপাত হয় না এবং সেটি হলো লাইলাতুল কদরের রাত। তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞানীরা মহাকাশ থেকে এই পর্যবেক্ষণে দেখেছে যে পৃথিবীর আকাশ এই রাতে সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকে।
মুফতি কাজী ইব্রাহীমের এই বক্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে বাঙলাদেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা দৈনিক যুগান্তরে একটি নিউজ ছাপা হয়। মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ নামক একজন ব্যক্তি “নাসার গবেষণায় লাইলাতুল কদর” শিরোনামে [117] একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। প্রবন্ধটি প্রকাশের পর এই গুজবটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। নাসা সম্পর্কে এইসব গুজব একদমই মিথ্যা কথা, যেই গুজব ছড়াতে সাহায্য করেছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকাগুলোও। আসুন আমরা দেখি, এই বিষয়ে ইসলাম কী বলে [118] [119] –
এই সম্পর্কিত ভিডিও –
ছায়াপথ কাকে বলে?
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, ছায়াপথ হচ্ছে আকাশের দরজা, যা দিয়ে আরেক আকাশে যাওয়া যায়। একই সাথে, নুহের প্লাবনের সময় যেই বৃষ্টি হয়েছিল, সেই বৃষ্টি নাকি ছায়াপথ বা আকাশের এই দরজা খুলে দেয়ার ফলেই আসমান থেকে এসেছিল!
ছায়াপথ মহাকর্ষীয় শক্তি দ্বারা আবদ্ধ একটি অতি বৃহৎ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা যা তারা, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণা, প্লাসমা এবং প্রচুর পরিমাণে অদৃশ্য বস্তু দ্বারা গঠিত
আল-আদাবুল মুফরাদ
মেহমানদারি
পরিচ্ছেদঃ ৩২৯- ছায়াপথ।
৭৭২। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রংধনু হলো পৃথিবীবাসীর জন্য মহাপ্লাবনের পর নিরাপত্তার প্রতীক এবং ছায়াপথ হলো আকাশের একটি দরজা, যা থেকে আকাশ বিদীর্ণ হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আল-আদাবুল মুফরাদ
মেহমানদারি
পরিচ্ছেদঃ ৩২৯- ছায়াপথ।
৭৭১। আবুত তুফাইল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনুল কাওয়া (রহঃ) আলী (রাঃ)-কে ছায়াপথ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, তা হলো এর সাথে মহাকাশের কোন সম্পর্ক নেই। আসমানের প্রবেশদ্বার এবং নৃহের বন্যায় প্রবল বৃষ্টি বর্ষণের জন্য আকাশের ঐ দ্বারই খুলে দেয়া হয়েছিল (৫৪ঃ ১১ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
শীত গ্রীষ্ম হওয়ার কারণ
বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় আমরা শীত ও গ্রীষ্মকালের কারণ হিসেবে মূলত পৃথিবীর নিজস্ব কক্ষপথে ঘূর্ণন এবং সূর্যের দিকে হেলে থাকার বিষয়টি শিখি, আর আমরা যদি মাদ্রাসায় ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করতে যাই তাহলে শিখি সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। ইসলাম অনুসারে শীত গ্রীষ্ম হয় জাহান্নামের শ্বাস প্রশ্বাসের কারণে। অন্যদিকে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা একদমই আলাদা। বিজ্ঞান বইয়ে পড়া ব্যাখ্যাটি খুবই বিজ্ঞানসম্মত ও যৌক্তিক। পৃথিবী যখন সূর্যকে কেন্দ্র করে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তন করে, তখন এর ঘূর্ণন অক্ষের ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে বা সূর্যের বিপরীত দিকে অবস্থান করে। এই অক্ষের হেলে থাকার ফলে পৃথিবীর নির্দিষ্ট স্থানসমূহে সূর্যের আলো পড়ার পরিমাণ ও সময়ের ব্যাপ্তি ভিন্ন হয়ে যায়, যা মূলত ঋতু পরিবর্তনের কারণ সৃষ্টি করে।
গ্রীষ্মকালে, যে গোলার্ধটি (উত্তর বা দক্ষিণ) সূর্যের দিকে হেলে থাকে, সেটি অধিকতর আলো এবং তাপমাত্রা গ্রহণ করে। এর ফলে সেই অঞ্চলে দীর্ঘদিনের উপস্থিতি ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে গ্রীষ্ম ঋতু তৈরি হয়। সূর্যের আলো সরাসরি পড়ার ফলে দিন দীর্ঘ হয় এবং রাতের সময়কাল কমে আসে। অন্যদিকে, শীতকালে একই গোলার্ধ সূর্যের বিপরীত দিকে সরে গেলে সূর্যের আলো কম সরাসরি পড়ে এবং দিনের সময়কাল ছোট হয়ে আসে। এর ফলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীত ঋতু শুরু হয়।
প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর এই ঘূর্ণন অক্ষের হেলে থাকার ঘটনাটি ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ। তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, পৃথিবী সূর্যের দিকে সরাসরি হেলে থাকার কারণে গ্রীষ্মকালে দিনের সময় দীর্ঘ হয় এবং শীতকালে দিন ছোট হয়, কিন্তু এটি পৃথিবী এবং সূর্যের দূরত্বের কারণে ঘটে না। অনেকের ধারণা, পৃথিবী যখন সূর্যের কাছাকাছি থাকে তখন গ্রীষ্ম এবং দূরে সরে গেলে শীত হয়। এই ধারণাটি সম্পূর্ণভাবে ভুল। আসলে, পৃথিবীর সূর্য থেকে দূরত্ব সামান্য পরিবর্তিত হলেও তা ঋতু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়। পৃথিবীর সূর্যের দিকে বা বিপরীত দিকে হেলে থাকার কারণে দিন, রাত ও তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে, যা একে গ্রীষ্ম ও শীতের চক্রে বিভক্ত করে।
অতএব, ঋতু পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটি স্পষ্টতই পৃথিবীর কক্ষপথে আবর্তন এবং ঘূর্ণন অক্ষের হেলে থাকার প্রভাবের ওপর নির্ভরশীল। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা পৃথিবীর আবহাওয়া, তাপমাত্রা এবং দিন-রাতের দৈর্ঘ্যকে প্রভাবিত করে। তাই আমরা শৈশবে যে শিখি পৃথিবীর ঘূর্ণন ও অক্ষের হেলে থাকার কারণে শীত ও গ্রীষ্মকাল সৃষ্টি হয়, সেটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা প্রকৃতির নিয়ম এবং পৃথিবীর গতিশীলতার একটি নিখুঁত উদাহরণ।
এবারে আসুন পাঠ্যপুস্তক থেকেও বিষয়টি দেখে নিই,
অন্যদিকে ইসলামি বিশ্বাস হচ্ছে, শীতগ্রীষ্ম আসলে জাহান্নামের শ্বাস প্রশ্বাস!
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৫। মাসজিদ ও সলাতের স্থানসমূহ
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ৩২. জামাআতে রওনাকারীর জন্য পথিমধ্যে তীব্র গ্রীষ্মের সময় তাপ ঠাণ্ডা হয়ে আসলে যুহর আদায় করা মুস্তাহাব
১২৯০-(১৮৭/…) হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ….. আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নাম অভিযোগ করে আল্লাহর কাছে বলল, হে আমার প্রভু! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। সুতরাং আমাকে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের অনুমতি দিন। তাই আল্লাহ তা’আলা তাকে দু’বার শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুমতি দান করলেন। একবার শীত মৌসুমে আরেকবার গ্রীষ্ম মৌসুমে। তোমরা শীতকালে যে ঠাণ্ডা অনুভব করে থাকো তা জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে। আবার যে গরমে বা প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভব করে থাকো তাও জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২৭৭, ইসলামীক সেন্টার ১২৯০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫/ মসজিদ ও সালাতের স্থান
পরিচ্ছেদঃ ৩২. তীব্র গ্রীষ্মের সময় তাপ কমে আসলে যোহর আদায় করা মুস্তাহাব
১২৭৯। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নাম বলল, হে রব! আমার একাংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলল। আমাকে শ্বাস নেয়ার অনুমতি দিন। তখন তাকে দুটি শ্বাসের অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে এবং আর একটি গ্রীষ্মকালে। অতএব, তোমরা যে শীত অনুভব কর, তা জাহান্নামের শ্বাস; আর যে গ্রীষ্ম অনুভব কর, তাও জাহান্নামের শ্বাস।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
মেঘের ডাক আসলে কী?
দুটি মেঘের মধ্যে ধাক্কা লাগলে মেঘে মেঘে ঘর্ষণ হয়, যার ফলে তাপ উৎপন্ন হয়। মেঘের ক্ষুদ্র কণাগুলো এই তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আয়নিত হয়ে যায়। যারফলে এই তাপশক্তি তখন বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। যাকে আমরা বিদ্যুৎ চমকানো বলি। আর আমরা আরো জানি যে কম্পনের ফলেই শব্দের উৎপত্তি হয়। মেঘের ঘর্ষণজনিত প্রতিক্রিয়া বলের কারণে যে কম্পন সৃষ্টি হয় সেটি থেকেই মূলত এই বিকট শব্দ বা আওয়াজ হয়। একেই মেঘের ডাক বলে। কিন্তু ইসলামের বিশ্বাস একেবারেই অন্যরকম।
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ৪৪/ তাফসীরুল কুরআন
১৪. সূরা আর-রা’দ
৩১১৭। ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াহুদীরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, হে আবূল কাসিম! আমাদেরকে রা’দ (মেঘের গর্জন) প্রসঙ্গে বলুন, এটা কি? তিনি বললেনঃ মেঘমালাকে হাকিয়ে নেয়ার জন্য ফেরেশতাদের একজন নিয়োজিত আছে। তার সাথে রয়েছে আগুনের চাবুক। এর সাহায্যে সে মেঘমালাকে সেদিকে পরিচালনা করেন, যেদিকে আল্লাহ তা’আলা চান। তারা বলল, আমরা যে আওয়াজ শুনতে পাই তার তাৎপর্য কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটা হচ্ছে ফেরেশতার হাকডাক। এভাবে হাকডাক দিয়ে সে মেঘমালাকে তার নির্দেশিত স্থানে নিয়ে যায়। তারা বলল, আপনি সত্য বলেছেন। তারা আবার বলল, আপনি আমাদের বলুন, ইসরাঈল ইয়াকুব (আঃ) কোন জিনিস নিজের জন্য হারাম করেছিলেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তিনি ইরকুন নিসা (স্যায়াটিকা) রোগে আক্রান্ত ছিলেন কিন্তু উটের গোশত ও এর দুধ ছাড়া তার উপযোগী খাদ্য ছিল না। তাই তিনি তা হারাম করে নিয়েছিলেন। তারা বলল, আপনি সত্য বলেছেন।
সহীহঃ সহীহাহ (১৮৭২)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মুয়াত্তা মালিক
৫৬. কথাবার্তা সম্পর্কিত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১১. বজ্রপাতের সময় কি পড়িতে হয়
রেওয়ায়ত ২৬. আমির ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রহঃ) বজ্রের শব্দ শুনিলে কথা বলা বন্ধ করিয়া এই দোয়া পাঠ করিতেনঃ
سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ
বজ্র নির্ঘোষ ও ফেরেশতাগণ ভয় তাহার প্রশংসা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে।
অতঃপর তিনি (আমির ইবন আবদুল্লাহ) বলিতেন, যমীনের অধিবাসীদের জন্য এই আওয়ায অত্যন্ত কঠিন আযাবের সংবাদ।[1]
[1] মুসনাদে আহমদ, নাসায়ী ও তিরমিযীতে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, ইহুদীগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল যে, রা’দ কি? এতদুত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাদ জনৈক ফেরেশতা যিনি মেঘের উপর নিয়োজিত আছেন। তাহার হাতে আগুনের একটি চাবুক আছে। সেই চাবুক দ্বারা উক্ত ফেরেশতা মেঘখণ্ডগুলিকে আল্লাহ যেইদিকে নির্দেশ দেন সেইদিকে লইয়া যান। ইহুদীগণ পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, এই গর্জন কিসের? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহা সেই রা’দ ফেরেশতারই গর্জন। ইহুদীগণ বলিল, আপনি ঠিকই বলিয়াছেন।
সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫০/ কুরআন তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ সূরা রা’দ
৩১১৭. আবদুল্লাহ্ ইবন আবদুর রহমান (রহঃ) …… ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক বার কতিপয় ইয়াহূদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এগিয়ে এসে বললঃ হে আবুল কাসিম! আপনি আমাদের বলুন, রা’দ (বজ্র) কি?
তিনি বললেনঃ মেঘ-বিষয়ে দায়িত্বশীল এক ফেরেশত। যার সঙ্গে আগুনের একটি বেত রয়েছে। এর দ্বারা আল্লাহ্ যেখানে চান সেখানেই এই ফেরেশতা মেঘ হাঁকিয়ে নিয়ে যান।
এরা বললঃ আমরা যে শব্দ শুনতে পাই তা কি? তিনি বললেনঃ এ হল মেঘ তাড়ানো হাঁক যখন তিনি মেঘ তাড়িয়ে নিয়ে যান পরিশেষে তা নির্দেশিত স্থানে গিয়ে পৌঁছে। এরা বললঃ ঠিক বলেছেন। এরপর তারা বললঃ ইসরাঈল [ইয়াকূব (আঃ)] তাঁর নিজের জন্য কি বস্ত হারাম করেছিলেন সে সম্পর্কে আমাদের বলুন।
তিনি বললেনঃ ইসরাঈল ইরকুন নাসা (সাইটিকা জাতীয়) রোগে আক্রান্ত হন। উটের গোশত ও দুধ ব্যতীত অন্য কোন জিনিস এর জন্য উপযুক্ত পান নি। তাই সে দুটো জিনিস নিজের জন্য হারাম করে ফেলেছিলেন। এরা বললঃ আপনি ঠিক বলেছেন।
সহীহ, সহীহাহ ১৮৭২, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩১১৭ [আল মাদানী প্রকাশনী]
(আবু ঈসা বলেন)এ হাদীসটি হাসান-সহীহ-গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
ফেরেশতারা মেঘের মধ্যে আলোচনা করে
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে ফেরেশতাগণ মেঘের ভেতর আলাপ আলোচনা করেন। বিষয়টি খুবই হাস্যকর [120] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ৫৯/১১. ইবলীস ও তার বাহিনীর বর্ণনা।
৩২৮৮. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ফেরেশতামন্ডলী মেঘের মাঝে এমন সব বিষয় আলোচনা করেন, যা পৃথিবীতে ঘটবে। তখন শয়তানেরা দু’ একটি কথা শুনে ফেলে এবং তা জ্যোতিষদের কানে এমনভাবে ঢেলে দেয় যেমন বোতলে পানি ঢালা হয়। তখন তারা এ সত্য কথার সঙ্গে শত রকমের মিথ্যা বাড়িয়ে বলে।’ (৩২১০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৫৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
জীববিজ্ঞান ও ইসলাম
ডানাওয়ালা ফেরেশতাকুল
আমরা জানি যে, প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ পাখীদের ডানা দেখে কল্পনায় ডানাওয়ালা ঘোড়া, ডানাওয়ালা হরিণ, ডানাওয়ালা মানুষ কল্পনা করে নানা রূপকথার জন্ম দিয়েছে। এমনকি, অনেক সময় তারা সেইসব রূপকথার গল্পে এরকম কাহিনীও তৈরি করেছে যে, ডানাওয়ালা মানুষ উড়ে উড়ে চাঁদে চলে গেছে, বা অন্য কোন গ্রহে চলে গেছে। অথচ বিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ মাত্রই জানেন যে, ডানা প্রয়োজন হয় বায়ুমণ্ডলের জন্য। বায়ুমণ্ডলের উপরে ডানার কোন প্রয়োজন নেই। একইসাথে, শত শত ডানা থাকাটিও কোন কাজের কথা নয়। ব্যাপারটি মোটেও এরকম নয় যে, বেশি ডানা থাকলে বেশি দ্রুত চলাফেরা করা যাবে! ইসলামি মিথলজিতে এরকম কিছু হাস্যকর রূপকথাই আসলে বলা হয়েছে। আসুন দেখা যাক, ফেরেশতাদের ডানা সম্পর্কে ইসলামে কি বলা আছে [121] [122] [123] [116] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ৬৫/৫৩/২. আল্লাহর বাণীঃ অবশেষে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের দূরত্ব রইল অথবা আরও কম। (সূরাহ আন্-নাজম ৫৩/৯)
৪৮৫৬. ’আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। فَأَوْحٰىٓ إِلٰى عَبْدِهٰمَآ أَوْحٰى আয়াত দু’টোর ব্যাখ্যা সম্পর্কে ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আঃ)-কে দেখেছেন। তাঁর ছয়’শ ডানা ছিল। [৩২৩২] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৪৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৪৯২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছেদঃ ২১৯০. যে সব মুসলিম উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন হামযা ইব্ন আবদুল মুত্তালিব (হুযায়ফার পিতা), ইয়ামান, আনাস ইব্ন নাসর এবং মুসআব ইব্ন উমায়র (রা)।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩৭৮০, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪০৭৯ – ৪০৮০
৩৭৮০। কুতায়বা ইব্ন সাঈদ (রহঃ) … জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের দু’জনকে একই কাপড়ে (একই কবরে) দাফন করেছিলেন। কাফনে জড়ানোর পর তিনি জিজ্ঞেস করতেন, এদের মধ্যে কে কুরআন সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত? যখন কোনো একজনের প্রতি ইঙ্গিত করা হত তখন তিনি তাকেই কবরে আগে নামাতেন এবং বলতেন, কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য সাক্ষ্য হব। সেদিন তিনি তাদেরকে তাদের রক্তসহ দাফন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাদের জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) ও আদায় করা হয়নি এবং তাদেরকে গোসলও দেওয়া হয়নি।
(অন্য এক সনদে) আবূল ওয়ালী (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমার পিতা শাহাদাত বরণ করার পর (তাঁর শোকে) আমি কাঁদতে লাগলাম এবং বারবার তার চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে দিচ্ছিলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ আমাকে এ থেকে বারণ করেছিলেন। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ ব্যাপারে) আমাকে নিষেধ করেননি। অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবদুল্লাহর ফুফুকে বলেছেন) তোমরা এর জন্য কাঁদছ! অথচ জানাযা না উঠানো পর্যন্ত ফেরেশতারা নিজেদের ডানা দিয়ে তাঁর উপর ছায়া বিস্তার করছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
হাদীস সম্ভার
১/ ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ফিরিশতার প্রতি ঈমান
(৫৭) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীলকে দেখেছেন, তাঁর ছয় শত ডানা রয়েছে।
(বুখারী ৪৮৫৭, মুসলিম ৪৫০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ)
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ – জ্যোতিষীর গণনা
৪৬০০-[৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আকাশমণ্ডলীতে যখন কোন ফায়সালা করেন, তখন সে নির্দেশে মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাদের পাখাসমূহ নাড়াতে থাকেন। আল্লাহ তা’আলার সে নির্দেশটির আওয়াজ সে শিকলের শব্দের মতো যা কোন একটি সমতল পাথরের উপরে টেনে নেয়া হলে শোনা যায়। অতঃপর যখন মালায়িকাহ্ অন্তর হতে সে ভীতি দূর হয়ে যায়, তখন সাধারণ মালাক (ফেরেশতা) আল্লাহর নিকটতম মালাক-কে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের রব্ কি নির্দেশ দিয়েছেন? তাঁরা বলেন, আমাদের প্রভু যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ সঠিকই বলেছেন। (এবং সে নির্দেশটি কি তা জানিয়ে দেন,) এরপর বলেন, আল্লাহ তা’আলা হলেন সুমহান ও মর্যাদাসম্পন্ন।
আল্লাহর নবী আরো বলেছেনঃ আল্লাহর ফায়সালাকৃত বিধান সম্পর্কে ফেরেশতাদের মধ্যে যেসব আলোচনা হয়, জীন-শায়ত্বনেরা চোরা পথে একজন আরেকজনের উপরে দাঁড়িয়ে শোনার চেষ্টা করে। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান নিজের হাতের অঙ্গুলিগুলো ফাঁক করে শয়তানরা কিভাবে একজন আরেকজন হতে কিছুটা ফাঁক করে কিভাবে একজন আরেকজন হতে কাছাকাছি দাঁড়ায় তা অনুশীলন করে দেখিয়েছেন। অতঃপর যে শয়তান প্রথমে নিকট হতে শুনতে পায় সে তা তার নিচের শয়তানকে বলে দেয় এবং সে তার নিচের জনকে, এভাবে কথাটি জাদুকর ও গণকের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়।
অনেক সময় এমন হয় যে, ঐ কথাটি পৌঁছার পূর্বেই আগুনের ফুলকি তাদের ওপর নিক্ষেপ করা হয় (ফলে আর তা গণকদের পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না)। আবার কখনো তারকা নিক্ষেপ হওয়ার পূর্বেই তা তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর তারা ঊর্ধ্বজগতে শুনা সে (সত্য) কথাটির সাথে (নিজেদের মনগড়া) শত শত মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে মানুষের কাছে বলে। আর যখন তাকে বলা হয় যে, অমুক দিন তুমি আমাদেরকে এই এই কথা বলেছিলে, (তা তো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।) তখন ঐ একটি কথা দ্বারা তার সত্যতা প্রমাণ করা হয়, যা ঊর্ধ্বজগৎ হতে শ্রুত হয়েছিল। (বুখারী)[1]
[1] সহীহ : বুখারী ৪৭০১, ইবনু মাজাহ ১৯৪, আল জামি‘উস্ সগীর ৭৩৬, সহীহুল জামি‘ ৭৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৬, তিরমিযী ৩২২৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
প্রতিটি প্রাণী জোড়ায় জোড়ায়
জীববিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান যাদের রয়েছে, তারা নিশ্চয়ই পারথেনোজেনেসিস শব্দটি শুনেছেন। অপুংজনি বা পারথেনোজেনেসিস হলো অযৌন প্রজননের একটি প্রাকৃতিক রূপ যাতে গর্ভাধান ছাড়াই ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং বিকাশ ঘটে। প্রাণীদের ক্ষেত্রে পার্থেনোজেনেসিস অর্থ হলো একটি অনিষিক্ত ভ্রুণকোষ থেকে ভ্রূণের বিকাশ হওয়া। নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন, নিচের ছবির প্রাণীটি অযৌন প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার করে, যারা সকলেই নারী। মাঝখানের ছবির প্রাণীটি একটি অল ফিমেল প্রাণী, অর্থাৎ এই প্রাণীটির শুধুমাত্র নারীই হয়, পুরুষ হয় না [124]। এরকম আরও প্রাণী রয়েছে।
একইসাথে, যারা উদ্ভিদবিজ্ঞান পড়েছেন, তারা স্ব-পরাগায়ন কাকে বলে নিশ্চয়ই জানেন। কোন ফুলের পরাগরেণু সেই একই ফুলের অথবা সেই একই উদ্ভিদের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হলে তাকে স্ব-পরাগায়ন বলে। উদাহরণ- সরিষা,ধুতুরা,সন্ধ্যামালতী, শিম, টমেটো ইত্যাদি। স্ব-পরাগায়নে জন্মলাভ করা উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য মাতৃ-উদ্ভিদের হুবহু অনুরূপ হয়। স্ব-পরাগায়ন এসব উদ্ভিদের একই শরীরে নারী ও পুরুষের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে। তাই আলাদা করে নারী পুরুষ বিভাজন থাকে না।
অথচ কোরআনে দুইটি আয়াতে বলা হয়েছে, প্রতিটি বস্তু এবং প্রাণীকে আল্লাহ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এই আয়াতের ব্যাখ্যাতে ক্লাসিক্যাল তাফসীরগুলোতে পরিষ্কারভাবেই বলা আছে, প্রতিটি প্রাণীকে নাকি আল্লাহ নারী ও পুরুষ এরকম জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। [125] [126]
পূত পবিত্র সেই সত্তা যিনি জোড়া সৃষ্টি করেছেন প্রত্যেকটির যা উৎপন্ন করে যমীন, আর তাদের নিজেদের ভিতরেও আর সে সবেও যা তারা জানে না।
— Taisirul Quran
পবিত্র মহান তিনি, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যাদেরকে জানেনা তাদের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়।
— Sheikh Mujibur Rahman
পবিত্র ও মহান সে সত্তা যিনি সকল জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন, যমীন যা উৎপন্ন করেছে তা থেকে, মানুষের নিজদের মধ্য থেকে এবং সে সব কিছু থেকেও যা তারা জানে না ।
— Rawai Al-bayan
পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি সৃষ্টি করেছেন সকল প্রকার সৃষ্টি, যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদ এবং তাদের (মানুষদের) মধ্য থেকেও (পুরুষ ও নারী)। আর তারা যা জানে না তা থেকেও [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আমি প্রত্যেকটি বস্তু সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।
— Taisirul Quran
আমি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর প্রত্যেক বস্তু থেকে আমি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আশা করা যায়, তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।
— Rawai Al-bayan
আর প্রত্যেক বস্তু আমরা সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায় [১], যাতে তোমরা উপদেশ গ্ৰহণ কর।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আসুন এই বিষয়ে তাফসীরগুলো পড়ে দেখা যাক। প্রথমেই তাফসীরে জালালাইন থেকে পড়ি [127] –
এবারে আসুন তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে পড়ি [128] –
আদম ছিল ৯০ ফুট লম্বা
ইসলামি বিশ্বাস হচ্ছে, প্রথম মানব আদমের উচ্চতা ছিল ৯০ ফুট বা ৬০ হাত। প্রথমত, প্রথম মানব বলেই কিছু হয় না, দ্বিতীয়ত ৯০ ফুট কোন মানুষের পক্ষে হওয়া সম্ভব নয়। ৯০ ফুট কোন মানুষ থাকলে সে কিছুতেই পৃথিবীতে দুই পায়ে ভর করে চলাফেরা করতে পারবে না, ব্যালেন্সও ঠিক রাখতে পারবে না। স্কয়ার কিউব ল অনুসারে, একটি শেইপকে বৃদ্ধি করা হলে এর ভলিউম এবং সার্ফেস এরিয়া চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে যাবে। যার ফলে একজন ৯০ ফুট কম্বা মানুষের ভর হবে অনেক অনেক বেশি, মানুষের হাড় যা বহন করতে পারবে না। একইসাথে, সে হাঁটাচলাও করতে পারবে না। কারণ দুই পায়ে তখন ব্যালেন্স ঠিক থাকবে না। আসুন হাদিসগুলো দেখে নিই [129] [130] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৯/ অনুমতি প্রার্থনা
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/১. সালামের সূচনা
৬২২৭. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম (আ.)-কে তাঁর যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেনঃ তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগ সহকারে শোনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়? কারণ এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা)। তাই তিনি গিয়ে বললেনঃ ’আসসালামু ’আলাইকুম’। তাঁরা জবাবে বললেনঃ ’আসসালামু ’আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’। তাঁরা বাড়িয়ে বললেনঃ ’ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বাক্যটি। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বললেনঃ যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আদম (আঃ)-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমশঃ কমে আসছে। [৩৩২৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৪/ জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবর
পরিচ্ছেদঃ ১১. জান্নাতে এমন অনেক দল জান্নাতে যাবে যাদের হৃদয় পাখির হৃদয়ের ন্যায়
৬৯০০। মুহাম্মদ ইলূন রাফি’ (রহঃ) … হাম্মাম ইবন মুনাব্বি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ হচ্ছে (সে সব হাদীস) যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের শুনিয়েছেন। (এভাবে) তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেন। এর মধ্যে একটি হল এ ই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদম (আলাইহিস সালাম) কে তার নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তার দৈর্ঘ্য হল ষাট হাত। তাকে সৃষ্টি করার পর তিনি তাকে বললেন, যাও, এ দলটিকে সালাম কর। তারা হচ্ছে ফিরিশতাদের উপবিষ্ট একটি দল। সালামের জবাবে তারা কি বলে তা খুব মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর। কেননা তোমার এবং তোমার বংশধরদের অভিবাদন এ-ই। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি গেলেন ও বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। উত্তরে তারা বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়ারহমাতুল্লাহ’। তাঁরা ওয়া রামাতুল্লাহ বাড়িয়ে বলেছেন। এরপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে সে আদম (আলাইহিস সালাম) এর আকৃতিতে যাবে। তার দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ এরপর হতে সৃষ্টি (-র দেহের) দেহের পরিমাণ দিন দিন কমতে থাকে আজ পর্যন্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ)
নূহ নবী ৯৫০ বছর জীবিত ছিলেন
কোরআনে সূরা আনকাবুতে [131] আয়াতে বলা হয়েছে, নূহ নবী নাকি সেই সময়ে নয়শো পঞ্চাশ বছর জীবিত ছিলেন। কোরআনে বলা আছে,
আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম, অতঃপর সে পঞ্চাশ বছর কম হাজার বছর তাদের মাঝে অবস্থান করেছিল। অতঃপর মহাপ্লাবন তাদেরকে গ্রাস করল কারণ তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী।
— Taisirul Quran
আমিতো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম এবং সে তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম হাজার বছর অবস্থান করেছিল। অতঃপর প্লাবন তাদেরকে গ্রাস করে। কারণ তারা ছিল সীমালংঘনকারী।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর আমি অবশ্যই নূহকে তার কওমের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর অবস্থান করেছিল। অতঃপর মহা-প্লাবন তাদের গ্রাস করল, এমতাবস্থায় যে তারা ছিল যালিম।
— Rawai Al-bayan
আর আমরা তো নূহকে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম [১]। তিনি তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিলেন পঞ্চাশ কম হাজার বছর। অতঃপর প্লাবন তাদেরকে গ্রাস করে; এমতাবস্থায় যে তারা ছিল যালিম [২]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
ইসলামের অনেক দলিল থেকে জানা যায়, প্রাচীন বিশ্বের নবী রাসুলগণ নাকি অনেকেই কয়েকশো বছর জীবিত ছিলেন। কিন্তু আধুনিক সমস্ত গবেষণা থেকে জানা যায়, এটি কোনভাবেই সম্ভব নয়। প্রাচীন বিশ্বের কোন মানুষই এত বছর জীবিত থাকতে পারতো না। বিজ্ঞানীগণ যে সকল ফসিল রেকর্ড পেয়েছেন, সেগুলো গবেষণা করে জানা যায়, প্রাচীন বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু সাধারণত ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর ছিল। তবে, কিছু ফসিল রেকর্ড থেকে দেখা যায় যে কিছু প্রাচীন মানুষ ষাট থেকে সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকতেন। কিন্তু একশো বা তার চাইতে বেশি বয়সেও তারা বেঁচে থাকতেন, এরকম প্রমাণ মেলে না। নয়শো পঞ্চাশ বছর তো অনেক দূরের বিষয়। প্রাচীন কালের মানুষের আয়ু এত হয়ে থাকলে অন্তত কিছু ফসিল তো পাওয়া যাওয়ার কথা। কিন্তু সেরকম কোন প্রমাণই নেই।
হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ, খ্রিস্টান বা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও একই রকমের উদ্ভট কথাবার্তা বলা আছে। আধুনিক সময়ে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে, নানা ধরণের ঔষধের আবিষ্কার এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে। গত দুইশো বছরে মানুষের গড় আয়ু অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ আয়ুর মানুষ যাকে পাওয়া গেছে, তিনি একজন জাপানের বাসিন্দা ছিলেন। উনার নাম জেনরোম কিউনা। তিনি একশো ষোল বছর, পাঁচ মাস, পনেরো দিন বয়সে মারা যান। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তিনি স্থান পেয়েছিলেন। বিজ্ঞানীদের মতে, একজন মানুষ সঠিক চিকিৎসা, শারীরিক পরিশ্রম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে সর্বোচ্চ ১২২ বছর বা এর থেকে কিছু বছর বেশি জীবিত থাকতে পারেন। তবে সেটির সম্ভাবনা খুবই কম।
মানুষকে বানানো হয়েছে মাটি দ্বারা
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে মানুষকে বানানো হয়েছে মাটি দ্বারা।
আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরি বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি।
কোরআন ১৫ঃ২৬
এবারে আসুন মাটির এলিমেন্টগুলো দেখি। এখানে সাধারণভাবে মাটিতে যে সকল পদার্থগুলো থাকে, সেগুলো দেয়া হলো। লক্ষ্য করুন, সিলিকন হচ্ছে মাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ এলিমেন্ট।
একই সাথে, মানুষের শরীর কার্বন বেইসড জৈব যৌগ দ্বারা গঠিত। মানুষের শরীরের জন্য সিলিকনের অধিক মাত্রা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
আগুন দিয়ে প্রাণী সৃষ্টি করা যায়
ইসলামি বিশ্বাস হচ্ছে, আগুন দিয়ে প্রাণী তৈরি করা যায়, যাদেরকে জিন বলে। যাদের দেখা যায় না, এরকম অলৌকিক প্রাণী।
এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে।
[132]
আগুন হচ্ছে একধরণের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলাফল। আগুন কোন পদার্থই নয়। তাই আগুন দিয়ে কোন প্রাণী সৃষ্টি খুবই প্রাগৈতিহাসিক রূপকথার গল্প।
জিনদের খাদ্য হাড্ডি ও গোবর
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে কাল্পনিক প্রাণী জিনেরা হাড্ডি এবং গোবর খায়, এর অর্থ হচ্ছে জিনেদের পরিপাকতন্ত্র আছে এবং খাবার হজম হয়। [133]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৩/ আনসারগণ (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর মর্যাদা
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬৩/৩২. জ্বিনদের উল্লেখ।
৩৮৬০. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযু ও ইস্তিন্জার ব্যবহারের জন্য পানি ভর্তি একটি পাত্র নিয়ে পিছনে পিছনে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তিনি তাকিয়ে বললেন, কে? আমি বললাম, আমি আবূ হুরাইরাহ। তিনি বললেন, আমাকে কয়েকটি পাথর তালাশ করে দাও। আমি তা দিয়ে ইস্তিন্জা করব। (১) তবে, হাড় এবং গোবর আনবে না। আমি আমার কাপড়ের কিনারায় কয়েকটি পাথর এনে তাঁর কাছে রেখে দিলাম এবং আমি সেখান থেকে কিছুটা দূরে গেলাম। তিনি যখন ইস্তিন্জা হতে বেরোলেন, তখন আমি এগিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হাড় ও গোবর এর ব্যাপার কী? তিনি বললেন, এগুলো জ্বিনের খাবার। আমার কাছে নাসীবীন (২) নামের জায়গা হতে জ্বিনের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা ভাল জ্বিন ছিল। তারা আমার কাছে খাদ্যদ্রব্যের আবেদন জানাল। তখন আমি আল্লাহর নিকট দু‘আ করলাম যে, যখন কোন হাড্ডি বা গোবর তারা লাভ করে তখন তারা যেন তাতে খাদ্য পায়। (৩) (১৫৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫৭৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
হিজড়া সন্তান জন্ম হয় কেন
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, হিজড়া সন্তান জন্ম হয় কেন তা আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতি তার গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন [134]
শয়তান ও নবজাতকের কান্না
একটি শিশু জন্মের সময়ই চিৎকার করে কান্না শুরু করে, এমনটি আমরা সকলেই জানি। নবজাতকের ক্ষেত্রে এই কান্না করা একটি শিশুর জন্য খুবই জরুরি একটি বিষয়। মূলত, নবজাতক যদি না কাঁদে, তাহলে প্রায়শই চিকিৎসকের উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়। একটি নবজাতক শিশুর শ্বাসনালী পরিষ্কার করা, তাদের ফুসফুস প্রসারিত করা এবং তাদের প্রথম শ্বাস নিতে এই কান্না খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, সমস্ত বাচ্চা জন্মের পরপরই কান্নাকাটি করে না। কিন্তু কান্না না করলে সামনে থাকা চিকিৎসক সাধারণত তাদের পিঠে বা পা ঘষে বা তাদের মুখ এবং নাক থেকে শ্লেষ্মা চুষিয়ে বাচ্চাকে কাঁদতে উত্সাহিত করেন। এই কাজগুলো করা হয় বাচ্চাকে তাদের প্রথম শ্বাস নিতে এবং কাঁদতে শুরু করতে উত্সাহিত করতে। যদি এই ব্যবস্থাগুলি ব্যর্থ হয় এবং শিশু এখনও কাঁদতে না পারে তবে এটি আরও গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। শিশুটি শ্বাসকষ্টের ঝামেলা অনুভব করতে পারে, যা অবরুদ্ধ শ্বাসনালী, জন্মগত অস্বাভাবিকতা বা সংক্রমণের মতো বিভিন্ন সমস্যার কারণে হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, মেডিকেল টিম বাচ্চাকে শ্বাস নিতে এবং তাদের অবস্থা স্থিতিশীল করতে সহায়তা করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
উল্লেখ্য, জন্মের সময় বাচ্চারা কেঁদে ওঠে, যা বাচ্চার জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। বাচ্চা না কাঁদলে বুঝতে হবে, বড় ধরণের কোন সমস্যা হয়েছে। জন্মের আগে বাচ্চারা তাদের মায়ের দেহের সঙ্গে সংযুক্ত আম্বিলিক্যাল কর্ড বা নাভিরজ্জুর মধ্য দিয়ে শ্বাস নেয়। জন্মের কয়েক সেকেন্ড পর শিশু নিজে থেকেই শ্বাস নেয়। শিশু যখন গর্ভের বাইরে আসে, তখন শরীরের বিভিন্ন ফ্লুইড নিঃসরণের ফলে আটকে যায় হৃৎপিণ্ডের শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ। তখন শিশু চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। এই কান্নার ফলেই পরিষ্কার হয়ে যায় শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ। তার পর সে স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে।
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, জন্মের সময় নবজাতক শিশুর কান্না একটি শয়তানি কাজ, অর্থাৎ শয়তানের খোঁচার কারণে এটি ঘটে থাকে। যার থেকে বোঝা যায়, ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে এই কাজটি অকল্যাণকর এবং খারাপ ব্যাপার, অথচ আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে এটি স্পষ্ট যে, জন্মের পর পর নবজাতকের কান্না তার জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বরঞ্চ না কান্নাই একটি অস্বাভাবিকত্বের লক্ষণ, যার সুচিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে[135]। ইসলাম বাচ্চাদের জন্মের সময় কান্নাকে শয়তানের খোঁচা হিসেবে চিহ্নিত করে একে একটি খারাপ বা অশুভ বিষয় বলে প্রচার করে, যা খুবই ভয়ঙ্কর বিষয়। এর ফলে জন্মের সময় বাচ্চারা না কাঁদলে পিতামাতা বা আত্মীয়রা সেই বাচ্চাকে ওলী আউলিয়া ভেবে নিতে পারে, কারণ তাকে শয়তানে খোঁচা দিতে পারে নি। এটি সুস্থ বাচ্চার লক্ষণ নয়, বরঞ্চ অসুস্থ বাচ্চার লক্ষণ। [136]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ৬০/৪৪. মহান আল্লাহর বাণী
আর স্মরণ কর, কিতাবে মারিয়ামের ঘটনা। যখন তিনি স্বীয় পরিবার-পরিজন হতে পৃথক হলেন…..। (মারইয়াম ১৬) মহান আল্লাহর বাণীঃ স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বললঃ হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর তরফ থেকে তোমাকে একটি কালিমার সুসংবাদ দিচ্ছেন। (আলে ইমরান ৪৫) মহান আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ্ আদম (আঃ), নূহ (আঃ) ও ইব্রাহীম (আঃ)-এর বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে পৃথিবীতে মনোনীত করেছেন…..বে-হিসাব দিয়ে থাকেন। (আলে ইমরান ৩৩-৩৭)
ঈব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আলু-ইমরান অর্থাৎ মু’মিনগণ। যেমন, আলু-ইব্রাহীম, আলূ ইয়াসীন এবং আলু মুহাম্মাদ। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ সমস্ত মানুষের মধ্যে ইব্রাহীমের সব থেকে ঘনিষ্ঠ হলো তারা, যারা তাঁর অনুসরণ করে। আর তারা হলেন মু’মিনগণ। آلُ এর মূল হলো أَهْلُ আর أَهْلُ কে ছোট অর্থে করা হলে তা أُهَيْلٌ হয়।
৩৪৩১. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, এমন কোন আদম সন্তান নেই, যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে না। জন্মের সময় শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে কাঁদে। তবে মারইয়াম এবং তাঁর ছেলে (ঈসা) (আঃ)-এর ব্যতিক্রম। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ্ বলেন, ‘‘হে আল্লাহ্! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট তাঁর এবং তাঁর বংশধরদের জন্য বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (৩২৮৬, মুসলিম ৪৩/৪০ হাঃ ২৩৬৬, আহমাদ ৭১৮৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১৮৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৫৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছদঃ ৫৯/১১. ইবলীস ও তার বাহিনীর বর্ণনা।
৩২৮৬. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক আদাম সন্তানের জন্মের সময় তার পার্শ্বদেশে শয়তান তার দুই আঙ্গুল দ্বারা খোঁচা মারে। ‘ঈসা ইবনু মরয়াম (আঃ)-এর ব্যতিক্রম। সে তাঁকে খোঁচা মারতে গিয়েছিল। তখন সে পর্দার ওপর খোঁচা মারে। (৩৪৩১, ৪৫৪৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৫৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
শয়তান পাদ মারে
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে জিন জাতি থেকে আসা শয়তান পাদ মারে। পাদ দেয়া একটি শারীরিক প্রক্রিয়া যার জন্য প্রাণী হওয়া আবশ্যক এবং তার পরিপাকতন্ত্র থাকা জরুরি। জিনের সেই পরিপাক তন্ত্র রয়েছে, অথচ তাদের দেখা যায় না, বিষয়টি উদ্ভট!
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৯/ তাহাজ্জুদ বা রাতের সালাত
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ৭৮০. সালাত তিন রাকা’আত আদায় করা হল না কি চার রাকা’আত তা মনে করতে না পারলে বসা অবস্থায় দু’টি সিজ্দা করা।
১১৫৯। মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় যাতে আযান শুনতে না পায় আর তার পশ্চাদ-বায়ূ সশব্দে নির্গত হতে থাকে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে এগিয়ে আসে। আবার সালাতের জন্য ইকামত দেওয়া হলে সে পিঠ ফিরিয়ে পালায়। ইকামত শেষ হয়ে গেলে আবার ফিরে আসে। এমন কি সে সালাতরত ব্যাক্তির মনে ওয়াস্ওয়াসা সৃষ্টি করে এবং বলতে থাকে, অমুক অমুক বিষয় স্মরণ করো, যা তার স্মরণে ছিল না। এভাবে সে ব্যাক্তি কত রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে তা স্মরণ করতে পারে না। তাই, তোমাদের কেউ তিন রাকা’আত বা চার রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছে, তা মনে রাখতে না পারলে বসা অবস্থায় দু’টি সিজ্দা করবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মহানবী (সাঃ) বলেন, “নামাযের জন্য আযান দেওয়া হলে শয়তান পাদতে পাদতে এত দূরে পালায়, যেখানে আযান শোনা যায় না। আযান শেষ হলে আবার ফিরে আসে। ইকামত শুরু হলে পুনরায় পালায়। ইকামত শেষ হলে নামাযীর কাছে এসে তার মনে বিভিন্ন কুমন্ত্রণা আনয়ন করে বলে, ‘এটা মনে কর, ওটা মনে কর।’ এইভাবে নামাযীর যা মনে ছিল না তা মনে করিয়ে দেয়। এর ফলে নামাযী শেষে কত রাকআত নামায পড়ল তা জানতে পারে না।”
(বুখারী ৬০৮ নং, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান, মালেক, মুঅত্তা, আহমাদ, মুসনাদ ২/৩১৩)
শয়তান ডিম পাড়ে এবং ছানা জন্ম দেয়
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে শয়তান ডিম পাড়ে, এর অর্থ শয়তান কী ধরণের প্রাণী, তা বিজ্ঞ পাঠকগণই বুঝে নিন।
রিয়াযুস স্বা-লিহীন
১৯/ বিবিধ চিত্তকর্ষী হাদিসসমূহ
পরিচ্ছেদঃ ৩৭০ : দাজ্জাল ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী সম্পর্কে
৩৫/১৮৫১। সালমান ফারেসী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর উক্তি (মওকূফ সূত্রে) বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তুমি যদি পার, তাহলে সর্বপ্রথম বাজারে প্রবেশকারী হবে না এবং সেখান থেকে সর্বশেষ প্রস্থান-কারী হবে না। কারণ, বাজার শয়তানের আড্ডা স্থল; সেখানে সে আপন ঝাণ্ডা গাড়ে।’ (মুসলিম)(1)
বারক্বানী তাঁর ‘সহীহ’ গ্রন্থে সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সর্বপ্রথম বাজারে প্রবেশকারী হয়ো না এবং সেখান থেকে সর্বশেষ প্রস্থান-কারী হয়ো না। কারণ, সেখানে শয়তান ডিম পাড়ে এবং ছানা জন্ম দেয়।’’
(1) সহীহুল বুখারী ৩৬৩৪, মুসলিম ২৪৫১
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আল্লাহর মাতৃগর্ভে আকৃতি দান
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহ পাক মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছা মানুষকে আকৃতি দান করেন। কোর আনে সূরা ইমরানের ৬ নম্বর আয়াতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, আল্লাহ যেভাবে চান, মাতৃগর্ভে সেভাবেই শিশুদের আকৃতি দান করেন। আসুন প্রথমে কোরআনের আয়াত এবং এর তাফসীর দেখে নেয়া যাক [137] [138] –
তিনিই তোমাদেরকে মায়ের পেটে যেভাবে ইচ্ছে আকৃতি দেন, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তিনি মহাশক্তিমান ও প্রজ্ঞাশীল।
— Taisirul Quran
তিনিই স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী জরায়ুর মধ্যে তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন। তিনি ব্যতীত অন্য কোনই উপাস্য নেই, তিনি পরাক্রান্তশালী, বিজ্ঞানময় ।
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনিই মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে আকৃতি দান করেন যেভাবে তিনি চান। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
— Rawai Al-bayan
তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন [১]। তিনি ছাড়া অন্য কোনো সত্য ইলাহ্ নেই; (তিনি) প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
– কোরআন, সূরা আল ইমরান, আয়াত ৬
কিন্তু আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায়, মায়ের শরীরের পুষ্টি, খাদ্যাভ্যাস, জিন এবং তেজস্ক্রিয়তা সহ নানাবিধ বিষয় গর্ভের সন্তানের আকার আকৃতি গঠনে খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়েছে, সেইসব অঞ্চলে গর্ভের সন্তানের বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায়। সাধারণ বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে যদি এই ধারণা থাকে যে, গর্ভের শিশুর আকৃতি আল্লাহ যেভাবে চান সেভাবেই দেন, তা খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। কারণ এতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা কমে যাওয়ার সমূহ সম্ভাননা রয়েছে, কারণ তারা এগুলো আল্লাহর লীলা বলে মনে করে। বিষয়টি যদি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহই নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো মেনে নেয়ার প্রবণতাও সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু গর্ভের শিশুদের তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা করার কিছু ব্যবস্থা আগেই গ্রহণ করা হলে অনেকাংশেই বাচ্চাদের বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনা সম্ভব। বহু তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া অঞ্চলে গবেষণা করে দেখা গেছে, সেই সব অঞ্চলে গর্ভের সন্তানের আকৃতি তৈরিতে সেই তেজস্ক্রিয়তা প্রভাব ফেলেছে। অর্থাৎ আল্লাহ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে গর্ভের শিশুদের আকৃতি দেন, এই বিশ্বাসটি সাধারণ অন্ধবিশ্বাসী মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর [139]
পাপপুণ্য হৃদপিণ্ডে থাকে
প্রাচীনকালে মানুষের ধারণা ছিল যে, মন মানুষের হৃদয়ে থাকে। এই নিয়ে নানা কাব্য সঙ্গীত আজও আমরা শুনে থাকি। মূলত প্রেম ভালবাসা কিংবা দুঃখের অনুভূতি হলে মানুষের হৃদপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যেতো, এ থেকেই মানুষের ধারণা হতো যে, মন আসলে হৃদপিণ্ডের মধ্যে অবস্থিত। হৃদপিণ্ড মানুষের আবেগ অনুভূতি এবং চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু, প্রাচীন এই ধারণাকে বলা হয় কার্ডিওসেন্ট্রিজম। এই ধারণার প্রাচীন মিশরে শক্তিশালী হয়, এরপরে গ্রীক দার্শনিক যেমন অ্যারিস্টটল, ডায়োক্লিস এবং প্রাক্সগোরাস এর কস দ্বারাও এই ধারণাটি গৃহীত হয়েছিল [140]। অ্যারিস্টটল যেহেতু প্রাচীনকালের সবচাইতে প্রভাববিস্তারকারী দার্শনিক ছিলেন, তাই তার এই ধারণাই পরবর্তী যুগে সবচাইতে প্রভাবশালী ধারণা হিসেবে সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায়। এই সময়ে লিখিত প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থেই এই বিষয়টিই তাই প্রাধান্য পায়, যেমন বাইবেলেও মন এবং হৃদপিণ্ডকে এক করে ভাবা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীগণ প্রমাণ করেছেন, মানুষের আবেগ অনুভূতি স্মৃতি চিন্তা সকল কিছুর কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্ক। হৃদপিণ্ডের কাজ শুধুমাত্র রক্ত সঞ্চালন ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনকি, হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনও বর্তমান যুগে সম্ভব হয়েছে। এমনকি শূকরের হৃদপিণ্ড মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়েছে [141]।
কিন্তু ইসলাম ধর্মে বাইবেলের মতই হৃদপিণ্ডকে মন, আত্মা, পাপপুণ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কোরআনের বহু স্থানেই বলা হয়েছে, হৃদয়ের কথা। উপমা দেয়ার সময়ও বহু সংখ্যকবার বক্ষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একবারও মস্তিষ্কের সাথে মন বা চিন্তাভাবনা বা স্মৃতির কোন সম্পর্কের কথা ইঙ্গিত করা হয়নি। সহজেই বোঝা যায় যে, কোরআনের লেখক প্রাচীন মিশরীয় ধারণা এবং অ্যারিস্টটল দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন [142] [143] [144] [145] –
জেনে রাখো, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের বক্ষদেশ ঘুরিয়ে দেয় যেন আল্লাহর নিকট হতে লুকাতে পারে। শোন, তারা তখন কাপড়ে নিজেদেরকে আচ্ছাদিত করে, তিনি তখনও জানেন যা কিছু তারা চুপিসারে বলে আর প্রকাশ্যভাবে বলে। নিশ্চয় তিনি জানেন যা কিছু বক্ষ/অন্তর সমূহে নিহিত রয়েছে।
– কোরআন, সূরা হুদ, আয়াত ৫
তারা কি এই উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণ করেনি, যাতে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারে? বস্তুত: চক্ষু তো অন্ধ হয় না, বরং বক্ষস্থিত হৃদয়/অন্তরই অন্ধ হয়।
– কোরআন, সূরা হাজ্জ, আয়াত ৪৬
আর আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের হৃদয়/অন্তর রয়েছে, তারা এর দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তারা এর দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তারা এর দ্বারা শোনে না। …
– কোরআন, সূরা আ’রাফ, আয়াত ১৭৯
অতঃপর আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন-যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। এমনিভাবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না আল্লাহ তাদের উপর আযাব বর্ষন করেন।
– কোরআন, সূরা আন’আম, আয়াত ১২৫
একইসাথে, হাদিসেও একাধিকবার এই বিষয়টি উল্লেখ করে বোঝানো হয়েছে যে, মানুষের চিন্তাভাবনা, স্মৃতি, আবেগ অনুভূতি সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু আসলে বুকের ভেতরে থাকা হৃদপিণ্ড, যা বৈজ্ঞানিকভাবে মস্তবড় ভুল। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, ফেরেশতা জিব্রাইল শিশু বয়সে নবী মুহাম্মদের হৃদপিণ্ড পরিষ্কার করে পাপ মুক্ত করে দিয়েছিলেন। ফেরেশতা জিব্রাইলের আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান থাকলে তিনি নিশ্চয়ই হৃদপিণ্ড পরিষ্কার না করে মস্তিষ্কটি পরিষ্কার করতো [146] [147] –
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছদঃ ৭৩. রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মি’রাজ এবং নামায ফরয হওয়া
৩১০। শায়বান ইবনু ফাররুখ (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এলেন, তখন তিনি শিশুদের সাথে খেলছিলেন। তিনি তাঁকে ধরে শোয়ালেন এবং বক্ষ বিদীর্ণ করে তাঁর হৎপিন্ডটি বের করে আনলেন। তারপর তিনি তাঁর বক্ষ থেকে একটি রক্তপিন্ড বের করলেন এবং বললেন এ অংশটি শয়তানের। এরপর হৎপিণ্ডটিকে একটি স্বর্ণের পাত্রে রেখে যমযমের পানি দিয়ে ধৌত করলেন এবং তার অংশগুলো জড়ো করে আবার তা যথাস্থানে পূনঃস্থাপন করলেন। তখন ঐ শিশুরা দৌড়ে তাঁর দুধমায়ের কাছে গেল এবং বলল, মুহাম্মাদ -কে হত্যা করা হয়েছে। কথাটি শুনে সবাই সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখল তিনি ভয়ে বিবর্ণ হয়ে আছেন! আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বক্ষে সে সেলাই-এর চিহ্ন দেখেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
কাছাকাছি বক্তব্য বর্ণিত আছে আর একটি সহিহ হাদিসে। কিন্তু এখানে পেট চিড়ে দুইটি কাল রঙের রক্তপিণ্ড বের করে ফেলা হয় বলে বর্ণিত হয়েছে [148] –
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
ভূমিকা
পরিচ্ছেদঃ ৩. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাথমিক অবস্থা কেমন ছিল?
১৩. উতবা ইবনু আব্দুস সুলামী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবী ছিলেন, তিনি তাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল: ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনার (জীবনের) প্রাথমিক অবস্থা কেমন ছিল? তিনি বললেন: ’বনী সা’দ ইবনু বাকর গোত্রে এক মহিলা ধাত্রী (দুধ মাতা-হালিমা) আমাকে প্রতিপালন করেছেন। (তাঁর নিকট থাকা অবস্থায় একদা) আমি ও তার (দুধ মাতার) ছেলে মেষ চরাতে গেলাম কিন্তু আমাদের সাথে কোন খাদ্য ও পানিয় নিলাম না। তাই আমি বললাম: হে আমার (দুধ) ভাই! যাও, আমাদের মায়ের নিকট থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসো।’ ভাই চলে গেলে আমি মেষপালের নিকট থেকে গেলাম। তখন শকুনের মত সাদা রংয়ের দু’টি পাখি (সদৃশ ফেরেশতা) আমার নিকট উপস্থিত হল। তাদের একজন অপরজনকে বলল: ইনিই কি তিনি? অপরজন বলল: হাঁ। তারা দ্রুত আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে ধরে চিত করে শুইয়ে দিল। তারপর আমার পেট চিরে ফেলে আমার ’কলব’ বের করে সেটিও চিরে ফেলল। সেখান থেকে কালো রংয়ের দু’টি রক্তপিণ্ড বের করে ফেলল। এরপর তাদের একজন তার সাথীকে বলল: বরফের পানি নিয়ে আস। অতঃপর সে পানি দিয়ে আমার ভেতরটা ধুয়ে দিল। এরপর বলল: এবার তুষার (শীতল) পানি নিয়ে এসো। আর তা দ্বারা সে আমার কলবকে ধুয়ে দিল। তারপর বলল, ’সাকিনাহ’ (স্থিরতা/ মানসিক দৃঢ়তা) নিয়ে এসো।’ এরপর সে তা আমার কলবের ভিতরে ছড়িয়ে দিল। তারপর একজন অপরজনকে বলল: সমান করে সেলাই করে দাও, ফলে সে সমান করে সেলাই করে দিল। তারপর তার উপর নবুওয়াতের মোহর দিয়ে সিলগালা করে দিল। তারপর একজন অপরজনকে বলল: তাঁকে এক পাল্লায় রাখ এবং তাঁর উম্মাতের এক হাজার লোককে আরেক পাল্লায় রাখ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ফলে আমি যখন আমার উপরের দিকে উঠে যাওয়া পাল্লার হাজার লোকের দিকে তাকালাম, তখন আমার ভয় হচ্ছিল যে, তাদের কেউ আবার আমার উপরে পড়ে যায় কি-না।’ তারপর সে বলল: যদি তাঁর সকল উম্মতকেও তাঁর সাথে ওজন করা হয়, তবুও তাঁর পাল্লা ঝুঁকে যাবে।’ তারপর তারা দু’জন আমাকে ছেড়ে চলে গেল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তখন আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। তারপর আমার (দুধ) মা’র নিকট এসে আমি যে ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম, তা সব খুলে বললাম। তিনি আশংকা করলেন যে, আমাকে নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই তিনি বললেন: আমি তোমার জন্য আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তারপর তিনি তার উষ্ট্রীতে সাওয়ার হলেন এবং আমাকেও তুলে নিয়ে আমার পিছনে বসে যাত্রা করলেন। এভাবে সোজা আমার মা’য়ের নিকট পোঁছে গেলাম। তারপর তিনি বললেন: আমি আমার আমানত ও যিম্মা আদায় করেছি।’ এবং আমাকে কেন্দ্র করে যা কিছু ঘটেছে তিনি তাকে সব খুলে বললেন। কিন্তু তিনি এতে ভয় পেলেন না। বরং তিনি বললেন: তার ভুমিষ্ঠ হওয়ার সময় আমি এমন একটি নূর দেখেছি, যাতে শামের (সিরিয়া অঞ্চল) রাজপ্রাসাদও আলোকিত হয়ে গিয়েছিল।”[1]
[1] তাহক্বীক্ব: এর সনদ যয়ীফ। অপর দু’টি সনদে আহমাদ, হাকিম, তাবারানী বর্ণনা করেছেন, যার সনদ সহীহ ।
তাখরীজ: আহমাদ, আল মুসনাদ ৪/১৮৪-১৮৫; হাকিম, আল মুসতাদরাক, নং ৪২৩০; তাবারানী, মু’জামুল কাবীর নং ৩২২।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মেরুদণ্ডের হাড্ডি মাটি দ্বারা ক্ষয় হয় না
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে মানুষের শরীরের একটি হাড় কখনই ক্ষয় হয় না বা পচন ধরে না। পৃথিবীতে এই পর্যন্ত বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ মারা গেছে। সব মানুষের একটি করে হাড় অক্ষত থেকে গেলে মাটি খুড়লেই মানুষের সেই হাড়টি পাওয়া যাওয়ার কথা। কিন্তু এরকম কোন হাড় আমরা খুঁজে পাই না। কয়েক বছরেই মানুষের শরীর হাড্ডি সহ সম্পূর্ণভাবে মাটিতে মিশে যায়। [149]
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৫৪। বিভিন্ন ফিতনাহ ও কিয়ামাতের লক্ষনসমূহ
২৮. উভয় ফুঁৎকারের মধ্যে ব্যবধান
৭৩০৬-(১৪৩/…) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ….. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কতিপয় হাদীস উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে একটি হাদীস হচ্ছে এই যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের শরীরে এমন একটি হাড় আছে, যা জমিন কখনো ভক্ষণ করবে না। কিয়ামাতের দিন এর দ্বারাই পুনরায় মানুষ সৃষ্টি করা হবে। সহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ আবার কোন হাড্ডি? তিনি বললেন, এ হলো, মেরুদণ্ডের হাড্ডি। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭১৪৮, ইসলামিক সেন্টার ৭২০০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
নবীদের শরীর মাটিতে পচবে না
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে নবী রাসূলদের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৪ হাজার মতান্তরে ২ লক্ষ ২৪ হাজার, যাদের মৃতদেহ কখনই ক্ষয় হবে না। এর অর্থ হচ্ছে, মাটি খুড়লে এরকম নবীদের মৃতদেহ পাওয়া যাওয়ার কথা। অথচ বিজ্ঞানীগণ এত এত ডায়নোসরের ফসিল, বিভিন্ন প্রাণীর ফসিল খুঁজে পাচ্ছেন, কিন্তু একজন নবীর শরীরও এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারলেন না। ইসলামকে সত্য প্রমাণের জন্য মুমিনেরা কেন নবী মুহাম্মদের কবর খুড়ে নবীর অক্ষত মৃতদেহ দেখিয়ে দিচ্ছে না, সেটি অবশ্য আমাদের বোধগম্য নয়।
সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ৬/ জানাযা
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬/৬৫. নাবী ﷺ -এর ইনতিকাল ও তাঁর কাফন-দাফন।
১০/১৬৩৬। আওস ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আহর দিন সর্বোত্তম। এদিনই আদম (আঃ)–কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এদিনই শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে এবং এদিনই ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে। অতএব তোমরা এদিন আমার প্রতি অধিক সংখ্যায় দুরূদ ও সালাম পেশ করো। কেননা তোমাদের দুরূদ আমার সামনে পেশ করা হয়। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের দুরূদ আপনার নিকট কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনি তো মাটির সাথে মিশে যাবেন? তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামগণের দেহ ভক্ষণ যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
নাসায়ী ১৩৭৪, আবূ দাউদ ১০৪৭, ১৫৩১, আহমাদ ১৫৭২৯, দারেমী ১৫৭২ তাহকীক আলবানীঃ সহীহ্।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায)
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ৩৬৭. ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা সম্পর্কে।
১৫৩১. আল্-হাসান ইব্ন আলী (রহঃ) ………. আওস ইব্ন আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট দিন হলো জুমআর দিন। তোমরা ঐ দিনে আমার উপর অধিক দরূদ পাঠ করবে। কেওননা তোমাদের দরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়ে থাকে। রাবী বলেন, সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার দেহ মোবারক চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে মাটির সাথে মিশে যাবে, তখন কিরূপে তা আপনার সামনে পেশ করা হবে? জবাবে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা যমীনের জন্য নবীদের শরীরকে হারাম করে দিয়েছেন – – (নাসাঈ, ইব্ন মাজা)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৪/ জুমু’আ
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ৫/ জুমু’আর দিন নবী (ﷺ) এর উপর অধিক দুরুদ পড়া
১৩৭৭। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) … আওস ইবনু আওস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের সকল দিনের মধ্যে পরমোৎকৃষ্ট দিন হল জুমু’আর দিন, সে দিন আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, সে দিনই তাঁর ওফাত হয়, সে দিনই দ্বিতীয় বার শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং সে দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। অতএব, তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পড়। কেননা, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিভাবে আমাদের দরুদ আপনার কাছে পেশ করা হবে। যেহেতু আপনি (এক সময়) ওফাত পেয়ে যাবেন অর্থাৎ তারা বললেন, আপনার দেহ মাটির সাথে মিশে যাবে। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা যমীনের জন্য নাবীগণের দেহ গ্রাস করা হারাম করে দিয়েছেন।
(সহীহ। ইবন মাজাহ হাঃ ১০৮৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মানুষ বানরে পরিণত হতে পারে
ইসলামি বিশ্বাস বিবর্তন তত্ত্ব অস্বীকার করলেও উলটো বিবর্তন তারা বিশ্বাস করে। যেমন, কোরআনে বর্ণিত আছে আল্লাহর অভিশাপে মানুষ বানর ও শুকরে পরিণত হয়েছিল! [150] [151] [152] –
তোমাদের মধ্যে যারা শনিবার সম্পর্কে সীমালঙ্ঘন করেছিল, তাদেরকে তোমরা অবশ্যই জান, আমি তাদেরকে বলেছিলাম, ‘তোমরা ঘৃণিত বানরে পরিণত হও’।
— Taisirul Quran
এবং অবশ্যই তোমরা অবগত আছ যে, তোমাদের মধ্যে যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমা লংঘন করেছিল। আমি তাদেরকে বলেছিলাম যে, তোমরা অধম বানর হয়ে যাও।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তোমাদের মধ্যে যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছিল, তাদেরকে অবশ্যই তোমরা জান। অতঃপর আমি তাদেরকে বললাম, ‘তোমরা নিকৃষ্ট বানর হয়ে যাও’।
— Rawai Al-bayan
আর তোমাদের মধ্যে যারা শনিবার সম্পর্কে সীমালঙ্ঘন করেছিলো তাদেরকে তোমরা নিশ্চিতভাবে জেনেছিলে [১]। ফলে আমরা তদেরকে বলেছিলাম, ‘তোমরা ঘৃণিত বানরে পরিণত হও’।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
যখন তারা চরম ধৃষ্টতা দেখিয়ে ঐ কাজগুলো করতে থাকল যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল, তখন তাদের উদ্দেশ্যে বললাম, ‘ঘৃণিত অপমানিত, বানরে রূপান্তরিত হয়ে যাও’।
— Taisirul Quran
অতঃপর যখন তারা বেপরোয়াভাবে নিষিদ্ধ কাজগুলি করতে থাকল তখন আমি বললামঃ তোমরা ঘৃণিত ও লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।
— Sheikh Mujibur Rahman
অতঃপর যা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল তারা যখন সে বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করল, তখন আমি তাদেরকে বললাম, ‘তোমরা নিকৃষ্ট বানর হয়ে যাও’।
— Rawai Al-bayan
অতঃপর তারা যখন নিষিদ্ধ কাজ বাড়াবাড়ির সাথে করতে লাগল তখন আমরা তাদেরকে বললাম, ‘ঘৃণিত বানর হও!’
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
বল, আমি তোমাদেরকে কি এর চেয়ে খারাপ কিছুর সংবাদ দেব যা আল্লাহর নিকট প্রতিদান হিসেবে আছে? (আর তা হল) যাকে আল্লাহ লা‘নাত করেছেন, যার উপর তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছেন, যাদের কতককে তিনি বানর ও শুকরে পরিণত করেছেন আর যারা তাগুতের ‘ইবাদাত করেছে তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানের লোক এবং সরল সত্য পথ হতে সবচেয়ে বিচ্যুত।
— Taisirul Quran
তুমি বলে দাওঃ আমি কি তোমাদেরকে এরূপ পন্থা হিসাবে ওটা হতেও (যাকে তোমরা মন্দ বলে জান) এরূপ সংবাদ দিব যা আল্লাহর কাছে অধিক নিকৃষ্ট? ওটা ঐ সব লোকের পন্থা, যাদেরকে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন এবং যাদের প্রতি গযব নাযিল করেছেন ও যাদেরকে বানর ও শুকরে রূপান্তরিত করেছেন এবং যারা তাগুতের ইবাদাত করছে তারা মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সরল পথ হতে সর্বাধিক বিচ্যুত ।
— Sheikh Mujibur Rahman
বল, ‘আমি কি তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট পরিণতির বিচারে এর চেয়ে মন্দ কিছুর সংবাদ দেব? যাকে আল্লাহ লা‘নত দিয়েছেন এবং যার উপর তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছেন? আর যাদের মধ্য থেকে বাঁদর ও শূকর বানিয়েছেন এবং তারা তাগূতের উপাসনা করেছে। তারাই অবস্থানে মন্দ এবং সোজা পথ থেকে সর্বাধিক বিচ্যুত’।
— Rawai Al-bayan
বলুন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে নিকৃষ্ট পরিণামের সংবাদ দেব যা আল্লাহর কাছে আছে? যাকে আল্লাহ লা’নত করেছেন এবং যার উপর তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছেন। আর যাদের কাউকে তিনি বানর ও কাউকে শূকর করেছেন [১] এবং (তাদের কেউ) তাগূতের ইবাদাত করেছে। তারাই অবস্থানের দিক থেকে নিকৃষ্ট এবং সরল পথ থেকে সবচেয়ে বেশি বিচ্যুত’।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
মানুষ ইঁদুরে পরিণত হতে পারে
ইসলামি বিশ্বাস মতে মানুষকে ইদুঁরে পরিণত করা সম্ভব! শুধু তাই নয়, ইসলাম অনুসারে ইঁদুর হচ্ছে মানুষের বিকৃত প্রাণী!
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৬/ যুহুদ ও দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণহীনতা সম্পর্কিত বর্ণনা
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ১১. বানর প্রসঙ্গ এবং তা বিকৃত প্রাণী হওয়া প্রসঙ্গ
৭২২৭। আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনু আ’লা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, ইঁদুর (মানুষের) বিকৃত প্রাণী। এর নিদর্শন হচ্ছে এই যে, এদের সামনে বকরীর দুধ রাখা হলে তাঁরা তা পান করে, আর উষ্ট্রীর দুধ রাখা হলে তাঁরা তাঁর একটু স্বাদ গ্রহন করেও দেখেনা। এ কথা শুনে কা’ব (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি নিজে কি (এ হাদিসটি) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছ? তিনি বললেন, তা না হলে, কি তাওরাত আমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে?
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মৃত মানুষ শুনতে পারে
ইসলামি বিশ্বাস হচ্ছে, মৃত মানুষরা কানে শুনতে পায়, যা শুধু উদ্ভটই নয়, হাস্যকরও বটে।
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২০/ জানাযা
পরিচ্ছেদঃ ৮৫০. মৃত ব্যক্তি (দাফনকারীদের) জুতার শব্দ শুনতে পায়।
১২৫৭। আয়্যাশ ও খলীফা (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাকে পিছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায় (এতটুকু দূরে যে,) তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়, এমন সময় তার কাছে দু’জন ফিরিশতা এস তাকে বসিয়ে দেন। এরপর তাঁরা প্রশ্ন করেন, এই যে মুহাম্মদ তাঁর সম্পর্কে তুমি কি বলতে? তখন সে বলবে, আমি তো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল)। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ পাক তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারিত করেছেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তখন সে দু’টি স্থান একই সময় দেখতে পাবে। আর যারা কাফির বা মুনাফিক, তারা বলবে, আমি জানিনা। (তবে) অন্য লোকেরা যা বলতো আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, না তুমি নিজে জেনেছ, না তিলাওয়াত করে শিখেছ। এরপর তার দু’ কানের মধ্যবর্তী স্থানে লোহার মুগুর দিয়ে এমন জোরে আঘাত করা হবে, এতে সে চিৎকার করে উঠবে, মানুষ ও জ্বীন ব্যতীত তার আশেপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
কবরের চিৎকার প্রাণীরা শুনতে পায়
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, প্রাণীরা কবরে থাকা মৃত মানুষদের চিৎকার শুনতে পায়। তাহলে কবরের পাশে একটি মেশিন লাগিয়ে সেই শব্দ তরঙ্গ পরীক্ষা করলেই কিন্তু মৃত মানুষদের কথা শোনা যেতো, তাই না? আজকাল মহাকাশের শব্দ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা যন্ত্রের সাহায্যে রেকর্ড করে ফেলছে, মৃত মানুষের চিৎকার কেন রেকর্ড করতে পারছে না?
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ২৭. কবরের জিজ্ঞাসাবাদ এবং শাস্তি প্রসঙ্গে
৪৭৫২। আব্দুল ওয়াহাব (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যখন কোনো লোককে কবরে রেখে তার সঙ্গীরা এতটুকু দূরে চলে যায় যেখান থেকে সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায় তখন তার নিকট দু’ জন ফিরিশতা এসে বলে … অতঃপর প্রথমোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এতে কাফিরেরর সঙ্গে মুনাফিকের কথা রয়েছে এবং বলা হয়েছেঃ আর কাফির ও মুনাফিককে প্রশ্ন করা হবে। তিনি বলবেন, মানব ও জীন ছাড়া যারা কবরের নিকট থাকে সকলেই চিৎকার শুনতে পায়।[1]
সহীহ।
[1]. এর পূর্বেরটি দেখুন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
কবর ৭০ হাত প্রশস্ত হয়ে যায়
ইসলামের বিশ্বাস হচ্ছে, মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর পরে কবরের দৈর্ঘ্য প্রস্ত সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয়। মাঝে মাঝেই মৃতদেহ পোস্টমর্টেম করার জন্য খোড়া হয়, কিন্তু কোন কবর খুড়ে আজ পর্যন্ত এরকম দাবীর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৫৩। জান্নাত, জান্নাতের নি’আমাত ও জান্নাতবাসীদের বর্ণনা
১৭. মৃত ব্যক্তির কাছে জান্নাত কিংবা জাহান্নামের ঠিকানা উপস্থিত করা হয়, আর কবরের শাস্তি প্রমাণ করা এবং তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা
৭১০৮-(৭০/২৮৭০) আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বান্দাকে যখন তার কবরের মধ্যে রেখে তার সঙ্গী-সাথীরা সেখান থেকে ফিরে আসে এবং সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায় তখন তার কাছে দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে উঠিয়ে বসান। তারপর তাকে তারা জিজ্ঞেস করে, এ লোকটির ব্যাপারে তুমি কি বলতে? মু’মিন বান্দা তখন বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তার রসূল। তখন তাকে বলা হয়, জাহান্নামে তুমি তোমার আসন দেখে নাও। আল্লাহ তা’আলা তোমার এ আসনকে জান্নাতের আসনের দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তখন সে তার উভয় আসন অবলোকন করে নেয়।
বর্ণনাকারী কাতাদাহ্ (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতঃপর তার কবরকে (দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে) সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সবুজ শ্যামল গাছের দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেয়া হয় কিয়ামাত পর্যন্ত। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৫২, ইসলামিক সেন্টার ৭০১০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
উপরে তাকালে দৃষ্টিশক্তি হারাবে
ইসলামের বিশ্বাস অনুসারে, ইসলামের নবী মুহাম্মদ বলেছেন, যারা নামাজের সময় আকাশের দিকে চোখ চুলে তাকালে তারা অন্ধ হয়ে যাবে [153] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১০/ আযান
পরিচ্ছেদঃ ১০/৯২. সালাতে আসমানের দিকে চোখ তুলে তাকানো।
৭৫০. আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকদের কী হলো যে, তারা সালাতে আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায়? এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য রাখলেন; এমনকি তিনি বললেনঃ যেন তারা অবশ্যই এ হতে বিরত থাকে, অন্যথায় অবশ্যই তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়া হবে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭১৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
মেয়েদের বীর্য থাকে!
যৌনকর্মের সময় ছেলেদের লিঙ্গ থেকে বীর্য নির্গত হয়, সেটি আমরা সকলেই জানি। বীর্য একপ্রকার জৈবিক তরল যা যৌনসঙ্গমের শেষ পর্যায়ে চরম সুখানুভূতি সৃষ্টির সঙ্গে পুরুষাঙ্গ হতে নি:সৃত হয়। এটি হচ্ছে যার মধ্যে শুক্রাণু থাকে, যেই শুক্রাণু ডিম্বাশয়ে প্রবেশ করলে সন্তান জন্ম হয। এটি এক প্রকার অঘনীভূত, ঈষৎ ক্ষারীয়, আঠালো জেলির ন্যায় জৈব তরল যা সাধারণত স্পার্মাটোজোয়া বা সহজ ভাষায় স্পার্ম ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। এটি সাধারণত কোন জীব প্রজাতির পুরুষের অন্ডকোষ কিংবা উভলিঙ্গ প্রাণীর অন্ডকোষ থেকে উৎপন্ন হয় এবং ঐ প্রজাতির স্ত্রী লিঙ্গের প্রাণীর জরাযুতে সৃষ্ট হওয়া ডিম্বাণু নিষিক্ত করার ক্ষমতা রাখে।
নারীর যোনিমুখের দু’পাশে বিশেষ গ্রন্থি আছে । কামোত্তেজনার সময় এই গ্রন্থি থেকে এক রকম তরল রস নির্গত হয়, যা কিনা সারা যোনি-মুখকে ভিজিয়ে পিচ্ছিল করে দেয়, এর ফলে পুরুষের লিঙ্গ তার গভীরে প্রবিষ্ট করতে সুবিধে হয়। বাইরে থেকে এই গ্রন্থি দৃশ্যমান নয়, চামড়ার আড়ালে সেটি ঢাকা থাকে। কিন্তু যোনিমুখে রস নিঃসরণ হলে সেই রস সরাসরি চোখে দেখা যায়। সব সময় এই রস নিঃসৃত হয় না। কেবল যখন প্রবল কামোত্তেজনা সৃষ্টি হয়- তখনি বার্থোলিন গ্রন্থি এই রসসৃষ্টি করে এবং নারীর যোনিকে পিচ্ছিল করে পুরুষের লিঙ্গ প্রবেশের উপযোগী করে। এই রস দেখে প্রাচীনকালে মানুষ ভাবতো, নারীরও বীর্য রয়েছে। আসলে সেইসব ধার ভুল। সেই রসে কোন শুত্রূবীজানু থাকে না। আবার নারীদেহের এই কামরসের সঙ্গে ডিম্বাণুর সরাসরি কোন সস্পর্ক নেই, এই কামরস শুধুমাত্র পুরুষাঙ্গকে প্রবেশের পথ তৈরি করে। অনেকেই বলে থাকেন, রতিক্রিয়া শেষে পুরুষের মতো কি নারীর যোনি থেকেও বীর্যপাত ঘটে ? এক কথায় এর জবাব হল ‘না।’ মেয়েদের কোনো বীর্যপাত হয় না। তাদের বীর্য হলো ডিম্বাণু।
নবী মুহাম্মদের এই সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। নিশ্চয়ই তিনি যৌনকর্মের সময় মেয়েদের কামরস দেখতেন, সেগুলো দেখে তিনি ভাবতেন মেয়েদেরও বীর্য নির্গত হয়। বস্তুতপক্ষে সেগুলো বীর্য নয়, মেয়েদের কামরস [154] [155] [156] [157] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩/ আল-ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান)
পরিচ্ছেদঃ ৩/৫০. ইল্ম শিক্ষা করতে লজ্জাবোধ করা।
وَقَالَ مُجَاهِدٌ لاَ يَتَعَلَّمُ الْعِلْمَ مُسْتَحْيٍ وَلاَ مُسْتَكْبِرٌ وَقَالَتْ عَائِشَةُ نِعْمَ النِّسَاءُ نِسَاءُ الأَنْصَارِ لَمْ يَمْنَعْهُنَّ الْحَيَاءُ أَنْ يَتَفَقَّهْنَ فِي الدِّينِ.
মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ’লাজুক এবং অহঙ্কারী ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। ’আয়িশাহ (রাযি.) বলেন, ’আনসারী মহিলারাই উত্তম। লজ্জা তাদেরকে ইসলামী জ্ঞান অন্বেষণ থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি।
১৩০. উম্মু সালামাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উম্মু সুলায়ম (রাযি.) এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্ হক কথা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলে কি গোসল করতে হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ’হ্যাঁ, যখন সে বীর্য দেখতে পাবে।’ তখন উম্মু সালামাহ (লজ্জায়) তার মুখ ঢেকে নিয়ে বললেন, ’হে আল্লাহর রাসূল! মহিলাদেরও স্বপ্নদোষ হয় কি?’ তিনি বললেন, ’হ্যাঁ, তোমার ডান হাতে মাটি পড়ুক! (তা না হলে) তাদের সন্তান তাদের আকৃতি পায় কীভাবে? (২৮২, ৩৩২৮, ৬০৯১, ৬১২১; মুসলিম ৩/৭, হাঃ ৩১৩, আহমাদ ২৬৬৭৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩/ ইলম বা জ্ঞান
পরিচ্ছেদঃ ৯২। ‘ইলম শিক্ষা করতে লজ্জাবোধ করা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ১৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৩০
وَقَالَ مُجَاهِدٌ لاَ يَتَعَلَّمُ الْعِلْمَ مُسْتَحْيٍ وَلاَ مُسْتَكْبِرٌ. وَقَالَتْ عَائِشَةُ نِعْمَ النِّسَاءُ نِسَاءُ الأَنْصَارِ لَمْ يَمْنَعْهُنَّ الْحَيَاءُ أَنْ يَتَفَقَّهْنَ فِي الدِّينِ
মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, ’লাজুক এবং অহঙ্কারী ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। ’আয়িশা (রাঃ) বলেন, ’আনসারী মহিলারাই উত্তম। লজ্জা তাদেরকে ইসলামী জ্ঞান অন্বেষণ থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে নি।
১৩২। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) … উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে উম্মে সুলায়ম (রাঃ) এসে বললেনঃ ইয়া রাসুল্লাহ! আল্লাহ হক কথা প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হলে কি গোসল করতে হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ’হ্যাঁ, যখন সে বীর্য দেখতে পাবে।’ তখন উম্মে সালমা (লজ্জায়) তাঁর মুখ ঢেকে নিয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হয় কি?’ তিনি বললেন, ’হ্যাঁ, তোমার ডান হাতে মাটি পড়ুক!* (তা না হলে) তাঁর সন্তান তাঁর আকৃতি পায় কিরূপে?
* এটি কোন বদ দুয়া বরং বিস্ময় প্রকেশের জন্য আরবীতে ব্যবহৃত হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫/ গোসল
পরিচ্ছেদঃ ৫/২২. মহিলাদের ইহ্তিলাম (স্বপ্নদোষ) হলে।
২৮২। উম্মুল মু‘মিনীন উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আবূ তালহা (রাঃ) এর স্ত্রী উম্মু সুলায়ম (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমাতে এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্ তা‘আলা হকের ব্যাপারে লজ্জা করেন না। স্ত্রীলোকের ইহ্তিলাম (স্বপ্নদোষ) হলে কি ফরয গোসল করবে? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হাঁ, যদি তারা বীর্য দেখে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩/ হায়েয
পরিচ্ছেদঃ ৭. মহিলার মনী (বীর্য) বের হলে তার উপর গোসল করা ওয়াজিব
৬০৩। আব্বাস ইবনুল ওয়ালদী (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সেই মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে ঘূমে পুরুষ যা দেখে তাই দেখতে পায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মেয়ে লোক যখন ঐরুপ দেখবে তখন সে গোসল করবে। উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, এ কথায় আমি লজ্জাবোধ করলাম। তিনি বললেন, এ রকমও কি হয়? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তা না হলে ছেলে মেয়ে তার সদৃশ কোত্থেকে হয়? পুরুষের বীর্য গাড় সাদা আর মেয়েলোকের বীর্য পাতলা, হলুদ। উভয়ের মধ্য থেকে যার বীর্য ওপরে উঠে যায় অথবা আগে চলে যায় (সন্তান) তারই সদৃশ হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
সন্তানের চেহারা কার মত হবে
সন্তানের চেহারা কার মত হবে, এই বিষয়েও নবী বলে গেছেন। আসুন হাদিস থেকে জেনে নিই, সন্তান কার মত হয় সেটি কীসের ওপর নির্ভর করছে! [158]
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২০০০. আদম (আঃ) ও তাঁর সন্তানদের সৃষ্টি। আল্লাহর বাণীঃ স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফিরিশতাগণকে বললেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা সৃষ্টি করছি। (২ঃ ৩০) صَلْصَالٌ বালি মিশ্রিত শুকনো মাটি যা শব্দ করে যেমন আগুনে পোড়া মাটি শব্দ করে। আরো বলা হয়, তাহল দুর্ঘন্ধযুক্ত মাটি। আরবরা এ দিয়ে صَلَّ এর অর্থ নিয়ে থাকে। যেমন তারা দরজা বন্ধ করার শব্দের ক্ষেত্রে صَرَّ الْبَابُ এবং صَرْصَرَ শব্দদ্বয় ব্যবহার করে থাকে। অনুরূপ كَبْكَبْتُهُ এর অর্থ كَبَبْتُهُ নিয়ে থাকে। فَمَرَّتْ بِهِ তার গর্ভ স্থিতি লাভ করল এবং এর মিয়াদ পূর্ণ করল। أَنْ لاَ تَسْجُدَ এর لاَ শব্দটি অতিরিক্ত। أَنْ تَسْجُدَ অর্থ সিজদা করতে হবে। মহান আল্লাহর বাণীঃ এবং স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফিরিশতাগণকে বললেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা সৃষ্টি করছি। (২ঃ ৩০) ইবন আব্বাস (রাঃ) বললেন, لَمَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ এর অর্থ কিন্তু তার উপর রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক। فِي كَبَدٍ সৃষ্টিগত ক্লেশের মধ্যে وَرِيَاشًا এর অর্থ সম্পদ। ইবন আব্বাস (রাঃ) ছাড়া অন্যরা বলেন, الرِّيَاشُ এবং الرِّيشُ উভয়ের একই অর্থ। আর তা হল পরিচ্ছেদের বায্যিক দিক। مَا تُمْنُونَ স্ত্রীলোকের জরায়ুতে পতিত বীর্য। আর মুজাহিদ (রহঃ) আল্লাহর বাণীঃ إِنَّهُ عَلَى رَجْعِهِ لَقَادِرٌ এর অর্থ বলেছেন, পুরুষের লিঙ্গ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আল্লাহ সক্ষম। আল্লাহ সকল বস্তুকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন। আকাশেরেও জোড়া আছে, কিন্তু আল্লাহ বেজোড়। فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ উত্তম আকৃতিতে। যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত সকলেই হীনতাপ্রাপ্তদের হীনতমে। خُسْرٍ পথভ্রষ্ট। এরপর আল্লাহ استثناء করে আল্লাহ বলেন, কিন্তু যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত। لاَزِبٍ অর্থ আঠালো। نُنْشِئَكُمْ অর্থ যে কোন আকৃতিতে আমি ইচ্ছা করি তোমাদেরকে সৃষ্টি করব। نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ অর্থ আমরা প্রশংসার সাথে আপনার মহিমা বর্ণনা করব। আর আবুল আলীয়া (রহঃ) বলেন, অতঃপর আদম (আঃ) যা শিক্ষা করলেন তা হল তার উক্তি “হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নফসের উপর যুলম করেছি।“ তিনি আরো বলেন, فَأَزَلَّهُمَا শয়তান তাঁদের পদস্খলিত করল। يَتَسَنَّهْ পরিবর্তিত হবে। آسِنٌ পরিবর্তিত। الْمَسْنُونُ পরিবর্তিত। حَمَإٍ শব্দটি حَمْأَةٍ শব্দের বহুবচন। যার অর্থ গলিত কাদা মাটি। يَخْصِفَانِ তারা উভয়ে (আদম ও হাওয়া) জান্নাতের পাতাগুলো জোড়া জোড়া দিতে লাগলেন। (জোড়া দিয়ে নিজেদের লজ্জাস্থান ঢাকতে শুরু করলেন) سَوْآتُهُمَا দ্বারা তাঁদের উভয়ের লজ্জাস্থানের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আর مَتَاعٌ إِلَى حِينٍ এর অর্থ এখানে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত। আর আরববাসীগণ الْحِينُ শব্দ দ্বারা কিছু সময় থেকে অগনিত সময়কে বুঝিয়ে থাকেন। قَبِيلُهُ এর অর্থ তার ঐ দল যাদের মধ্যে সেও শামিল।
৩০৯৪। ইবনু সালাম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালামের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার উত্তর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর কেও অবগত নয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি কারণে সন্তান তার পিতার সা’দৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে (কোন কোন সময়) তার মামাদের সাদৃশ্য হয়? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইমাত্র জিব্রাঈল (আলাইহিস সালাম) আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবি বলেন, তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, সে তো ফিরিশতাগণের মধ্যে ইয়াহুদীদের শত্রু।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হল মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য প্রথমে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সাদৃশ্যতা লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি-নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল।
এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদিরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রটনা করবে। তারপর ইয়াহুদিরা এলো এবং আবদুল্লাহ (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনুু্ সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যাক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যাক্তির পুত্র।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহন করে, এতে তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তার তাঁকে রক্ষা করুক। এমন সময় আবদুল্লাহ (রাঃ) তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তির সন্তান এবং তারা তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
গাছপালার প্রাণ নেই
ইসলামের বিশ্বাস অনুসারে গাছপালা প্রাণহীন, এর অর্থ হচ্ছে গাছের কোন প্রাণ নেই। হাদিসটির লাল করে দেয়া অংশগুলো মন দিয়ে পড়ুন [159]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৩৪/ ক্রয়-বিক্রয়
পরিচ্ছেদঃ ৩৪/১০৪. প্রাণহীন জিনিসের ছবি বেচা-কেনা এবং এসব ছবির মধ্যে যেগুলো অপছন্দনীয় ও নিষিদ্ধ তার বর্ণনা।
২২২৫. সা‘ঈদ ইবনু আবুল হাসান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, এমন সময়ে তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবূ আববস! আমি এমন ব্যক্তি যে, আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরি করি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বলেন, (এ বিষয়ে) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি যা বলতে শুনেছি, তাই তোমাকে শোনাব। তাঁকে আমি বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ছবি তৈরি করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে শাস্তি দিবেন, যতক্ষণ না সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে। আর সে তাতে কখনো প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। (এ কথা শুনে) লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আক্ষেপ তোমার জন্য, তুমি যদি এ কাজ না-ই ছাড়তে পার, তবে এ গাছপালা এবং যে সকল জিনিসে প্রাণ নেই, তা তৈরি করতে পার। আবূ ‘আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেন, সা‘ঈদ (রাঃ) বলেছেন, আমি নযর ইবনু আনাস (রাঃ) হতে শুনেছি তিনি বলেছেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করার সময় আমি তার কাছে ছিলাম। ইমাম বুখারী (রহ.) আরো বলেন, সা‘ঈদ ইবনু আবূ আরুবাহ (রহ.) একমাত্র এ হাদীসটি নযর ইবনু আনাস (রহ.) হতে শুনেছেন। (৫৯৬৩, ৭০৪২, মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১১০, আহমাদ ২১৬২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২০৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২০৮৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা‘ঈদ ইবনু আবুল হাসান (রহঃ)
পাথরের প্রাণ আছে
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে একটি পাথর মানুষের জামা নিয়ে দৌড়ে পালাতে পারে, যা খুবই অবৈজ্ঞানিক কুসংস্কার [160] –
আল-লুলু ওয়াল মারজান
৩/ হায়িয
পরিচ্ছেদঃ ৩/১৮. নির্জনে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়িয
১৯৪. আবূ হুরায়রাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলের লোকেরা নগ্ন হয়ে একে অপরকে দেখা অবস্থায় গোসল করতো। কিন্তু মূসা (আঃ) একাকী গোসল করতেন। এতে বনী ইসরাঈলের লোকেরা বলাবলি করছিল, আল্লাহর কসম, মুসা (‘আঃ) ‘কোষবৃদ্ধি’ রোগের কারণেই আমাদের সাথে গোসল করেন না। একবার মূসা (আঃ) একটা পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল করছিলেন। পাথরটা তাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা (আঃ) ‘পাথর! আমার কাপড় দাও,’ ‘পাথর! আমার কাপড় দাও’ বলে পেছনে পেছনে ছুটলেন। এদিকে বনী ইসরাঈল মূসার দিকে তাকাল। তখন তারা বলল, আল্লাহর কসম মূসার কোন রোগ নেই। মূসা (আঃ) পাথর থেকে কাপড় নিয়ে পরলেন এবং পাথরটাকে পিটাতে লাগলেন। আবূ হুরায়রাহ্ (রাযি.) বলেনঃ আল্লাহর কসম, পাথরটিতে ছয় কিংবা সাতটা পিটুনীর দাগ পড়ে গেল।
সহীহুল বুখারী, পৰ্ব ৫; গোসল, অধ্যায় ২০, হাঃ ২৭৮; মুসলিম, পর্ব ৩: হায়য, অধ্যায় ১৮, হাঃ ৩৩৯
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
কাঠের খণ্ডের কান্নাকাটি
ইসলামের চরম হাস্যকর সব কল্পকাহিনীর মধ্যে আরও একটি উদ্ভট দাবী হচ্ছে, কাঠের খণ্ড নাকি নবীর জন্য ষাঁড়ের মত কান্নাকাটি করতো। এইসব গল্পকাহিনী এতটাই উদ্ভট এবং হাস্যকর যে, এগুলো ঠাকুরমার ঝুলিকেও হার মানায়। মুমিন পাঠকদের জন্য বলতেই হচ্ছে, কাঠের খণ্ডের কোন কার্যকর মস্তিষ্ক থাকে না বিধায় কাঠের খণ্ডের বোধবুদ্ধি থাকে না। কান্নার জন্য কণ্ঠস্বর, চোখ, নিঃশ্বাস নেয়ার মত ফুসফুস না থাকায় কাঠের খণ্ডের কান্নাকাটি করার কোন সুযোগ নেই। তবে গাঁজার নৌকা যেহেতু পাহাড় ডিঙ্গায়, তাই ইসলামিক গাঁজার এই কাঠ আল্লাহর কুদরতে কাঁদতেই পারে [161] –
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
ভূমিকা
পরিচ্ছেদঃ ৬. মিম্বারের কান্নার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্মানিত করার বিবরণ
৪২. আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমু’আর দিনে মসজিদের একটি কাষ্ঠখণ্ডের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে লোকদের মাঝে খুতবা দিতেন। তারপর এক রোম থেকে একজন লোক এসে বলল, আমি আপনার জন্য একটি কিছু বানিয়ে দিব যার উপরে বসলে মনে হবে যেন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন? তারপর সে তাঁর জন্যে একটি মিম্বার তৈরী করল, যার (নিচের দিকে) দু’টি ধাপ ছিল, আর (উপরের দিকে) তৃতীয় ধাপে তিনি বসতেন। অতঃপর যখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই মিম্বারে বসলেন, তখন কাষ্ঠখণ্ডটি ষাঁড়ের মত আর্তনাদ করতে লাগলো, এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শোকে পুরো মসজিদ প্রকম্পিত হয়ে উঠল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বার হতে নেমে সেটির দিকে আসলেন এবং আর্তনাদরত কাষ্ঠখণ্ডটিকে আলিঙ্গন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটিকে আলিঙ্গন করা মাত্র তা শান্ত হয়ে গেল। তারপর তিনি বলেন: ’সেই মহান সত্ত্বার কসম, যার হাতে রয়েছে মুহাম্মাদের প্রাণ, আমি যদি একে আলিঙ্গন না করতাম, তবে অবশ্যই তা কিয়ামত পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শোকে এভাবে কাঁদতে থাকত।’ এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটিকে দাফন করার নিদের্শ দিলেন, ফলে এটিকে দাফন করে দেয়া হল।[1]
[1] তাহক্বীক্ব: এর সনদ সহীহ।
তাখরীজ: আহমদ, ৩/২২৬; তিরমিযী ৩৬৩১; ইবনু মাজাহ ১৪১৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
হাঁটাচলা করা গাছপালা
ইসলামের চরম হাস্যকর সব কল্পকাহিনীর মধ্যে আরও একটি হাস্যকর কথা হচ্ছে, আল্লাহর কুদরতে গাছপালা নাকি নবীর কাছে হেঁটে হেঁটে চলে আসতো । এইসব গল্পকাহিনী এতটাই উদ্ভট এবং হাস্যকর যে, এগুলো ঠাকুরমার ঝুলিকেও হার মানায় [162] –
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
ভূমিকা
পরিচ্ছেদঃ ৪. আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীর প্রতি গাছ-পালা, চতুষ্পদ জন্তু ও জিনদের ঈমান আনয়নের মাধ্যমে তাঁকে যে সম্মানিত করেছেন, তার বর্ণনা
২৩. আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভারাক্রান্ত মনে বসে ছিলেন, এমতাবস্থায় জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর নিকট আসলেন। আর তখন মক্কার কুরাইশদের অত্যাচারে তিনি রক্তে রঞ্জিত ছিলেন। জিবরীল (আ:) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি কি চান আমি আপনাকে কোন নিদর্শন দেখাই? তিনি বললেন: ’হাঁ’। তখন তিনি (জিবরীল) তাঁর পিছনের একটি গাছের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি একে ডাকুন। তখন তিনি গাছটিকে ডাকলেন আর সেটি চলে আসল এবং তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর তিনি (জিবরীল) বললেন, আপনি একে ফিরে চলে যেতে নির্দেশ দিন। তখন তিনি একে ফিরে যেতে নির্দেশ দিলেন আর সঙ্গে সঙ্গে সেটি আপন স্থানে ফিরে চলে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ’’এ-ই আমার জন্য যথেষ্ট, এ-ই আমার জন্য যথেষ্ট।”[1]
[1] তাহক্বীক্ব: এর সনদ সহীহ।
তাখরীজ: ইবনু মাজাহ ৪০২৮; আহমদ, আল মুসনাদ ৩/১১৩; ইবনু আবী শাইবা ১১/৪৭৮-৪৭৯ নং ১১৭৮১; আবী ইয়ালা নং ৩৬৮৫, ৩৬৮৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
চিকিৎসাবিজ্ঞান ও ইসলাম
রোগীদের আল্লাহ খাওয়ান
ইসলামি বিশ্বাসমতে, একজন রোগীকে আল্লাহ পাকই খাওয়ান এবং পান করান। তাই তাকে খাবার পানীয় দেয়া অপ্রয়োজনীয়! বিষয়টি বর্তমান বৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। কারণ একজন রোগী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকতে পারে। তাকে খাবার এবং পানীয় দেয়া এই সময়ে অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনীয় খাবার দাবার বা পানীয় না পেলে এই সময়ে শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যা তার অসুস্থতাকে দীর্ঘায়িত করবে। শুধুমাত্র শারীরিক দুর্বলতার কারণেই নয়, বিভিন্ন ঔষধ খাওয়াবার জন্যেও তাকে খাবার পানীয় খাওয়াতে হবে। শুধু তাই নয়, অসুস্থ মানুষকে স্যালাইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু আল্লাহই যদি রোগীদের খাওয়ান এবং পান করান, তাহলে স্যালাইন দিয়ে রোগীদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন কী? [163] –
সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩১/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ রোগীকে পানাহারের ক্ষেত্রে জোর জবরদস্তী করবে না।
২০৪৭. আবূ কুরায়ব (রহঃ) ….. উকবা ইবন আমির জুহানী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রোগীকে আহারের জন্য পীড়াপীড়ি করবে না। কেননা, আল্লাহ তা’আলা তাদের আহার করান এবং পান করান। সহীহ, ইবনু মাজাহ ৩৪৪৪, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২০৪০ [আল মাদানী প্রকাশনী]
হাদীসটি হাসান-গারীব, এই সূত্র ছাড়া এটি সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উকবাহ ইবনু আমির (রাঃ)
খেজুর খেলে বিষক্রিয়া হয় না
নবী মুহাম্মদের একটি হাদিস অনুসারে, সকালবেলা সাতটি উৎকৃষ্ট খেজুর খেলে সেটি সেইদিন বিষক্রিয়ার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এবং কোনো বিষাক্ত পদার্থ খাওয়ার পরেও ক্ষতি করবে না। এই ধরনের বক্তব্য ইসলামিক বিশ্বাস অনুসারে সত্য হিসেবে গ্রহণ করা হলেও, বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সম্পূর্ণরূপে অবৈজ্ঞানিক এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার বাইরে থাকা একটি উদ্ভট দাবি। খেজুর একটি পুষ্টিকর ফল এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে, কিন্তু এটি কোনোভাবেই বিষক্রিয়া প্রতিরোধে সক্ষম নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বিষাক্ত পদার্থ, যেমন পটাশিয়াম সায়ানাইড, মানবদেহের সেলুলার শ্বাসপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে এবং মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এরকম একটি মারাত্মক বিষক্রিয়াকে কয়েকটি খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। যদি এটি সত্যিই কার্যকরী হতো, তবে আজকের দিনে বিষক্রিয়ার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে খেজুর বিতরণ করা হতো, যা আমরা কখনোই দেখি না। সুতরাং, এই হাদিসের ভিত্তিতে বিষ প্রতিরোধের ধারণা সম্পূর্ণরূপে অসার এবং অবৈজ্ঞানিক।
অন্যদিকে, এমন একটি বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য যদি কোন মুসলিমকে সকালে সাতটি উৎকৃষ্ট খেজুর খেয়ে পটাশিয়াম সায়ানাইড খাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাহলে কেউই এতে অংশগ্রহণ করতে রাজি হবেন না। যদিও তারা এই হাদিসকে মুখে সত্য বলে মেনে নেন, বাস্তবে এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করার মতো সাহস তাদের নেই। এর কারণ হলো, বাস্তবিক জ্ঞান ও যুক্তি তাদের মনে গোপনে হলেও বলে দেয় যে, খেজুর খেয়ে বিষক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকা অসম্ভব। ফলে, মুখে নবী মুহাম্মদের হাদিসের প্রতি শত বিশ্বাসের দাবি করলেও এমন পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের জীবন নিয়ে পরীক্ষা করতে চান না। এটি প্রমাণ করে যে, ধর্মীয় বিশ্বাসে যে সমস্ত অসঙ্গতিপূর্ণ বা অবৈজ্ঞানিক ধারণা রয়েছে, তা আসলে মানুষ মনের গভীরে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করতে পারে না। কেবলমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থের প্রতি অন্ধ আনুগত্য এবং সামাজিকভাবে বিশ্বাসী পরিচিতি বজায় রাখার জন্যই তারা এসব ধারণা মেনে চলেন। তাই, খেজুরের মতো একটি সাধারণ ফলকে বিষের প্রতিষেধক হিসেবে প্রচার করা এবং সেটিকে সত্য বলে মেনে নেওয়া ধর্মের নামে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিকে চরমভাবে অপমানিত করার শামিল। মানুষের উচিত এমন মিথ্যা বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে বৈজ্ঞানিক চিন্তা এবং যুক্তির আলোকে সত্যকে নিরূপণ করা [164] [165] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭০/ খাওয়া সংক্রান্ত
পরিচ্ছেদঃ ৭০/৪৩. আজওয়া খেজুর প্রসঙ্গে।
৫৪৪৫. সা’দ তাঁর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেকদিন সকালবেলায় সাতটি আজওয়া উৎকৃষ্ট খেজুর খাবে, সেদিন কোন বিষ ও যাদু তার ক্ষতি করবে না। [৫৭৬৮, ৫৭৬৯, ৫৭৭৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫০৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৩৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)
সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩১/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ মাসরুম ও আজওয়া খেজুর।
২০৭২. আবূ উবায়দা ইবন আবূ সাফার ও মাহমূদ ইবন গায়লান (রহঃ) …. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আজওয়া হলো জান্নাতী খেজুর। এতে আছে বিষের প্রতিষেধক, মাসরুম হলো মান্নের অন্তর্ভুক্ত। এর পানি হলো চক্ষু রোগের প্রতিষেধক।
হাসান সহীহ, তাহকিক মিশকাত ছানী ৪২৩৫, তিরমিজী হাদিসঃ ২০৬৬ [আল মাদানী প্রকাশনী]
(আবু ঈসা বলেন) এই বিষয়ে সাঈ ইবন যায়দ, আবূ সাঈদ ও জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। হাদীসটি এই সূত্রে হাসান-গারীব। সাঈদ ইবন আমির (রহঃ) -এর সূত্র ছাড়া মুহাম্মদ ইবন আমরের রিওয়ায়াত হিসাবে এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
আসুন এই সম্পর্কিত একটি ভিডিও দেখে নিই,
ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই
বেশ কয়েকটি সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নবী মুহাম্মদ বলেছেন ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই। অথচ আধুনিক যেকোন সভ্য মানুষ মাত্রই জানেন, ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ অবশ্যই আছে, এই কিছুদিন আগেই করোনা নামক ছোঁয়াচে রোগে কোটি মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। লজ্জিত ইসলামিস্টগণ এই হাদিসগুলো এখন উলটে ফেলতে চেষ্টা করেন, কিন্তু অনেক ইসলামিক আলেমই এখনো মনে করেন, নবীর এই হাদিস ধ্রুবসত্য! আসলেই ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই! [166] [167] [168] [169] [170] [171]
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ – শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৭৭-[২] উক্ত রাবী (হুরায়রা (রাঃ) হতে) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগের সংক্রমণ বলতে কিছুই নেই, কোন কিছুতে অশুভ নেই। প্যাঁচার মধ্যে কু-লক্ষণ নেই এবং সফর মাসেও কোন অশুভ নেই। তবে কুষ্ঠরোগী হতে পলায়ন করো, যেমন- তুমি বাঘ হতে পালিয়ে থাকো। (বুখারী)[1]
[1] সহীহ : বুখারী ৫৭০৭, আল জামি‘উস্ সগীর ১৩৪৮৭, সহীহুল জামি‘ ৭৫৬০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৭৮২, ৭৮৩; আহমাদ ৯৭২২, ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৪৫৪৩, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ১৯৫০৮।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ – শুভ ও অশুভ লক্ষণ
৪৫৮০-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, রোগে ছোঁয়াচে লাগা, সফর মাস অশুভ হওয়া বা ভূত-প্রেতের ধারণার কোন অস্তিত্ব নেই। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম (২২২২)-১০৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১২৮, আহমাদ ১৫১০৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২৩/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ২৪. অশুভ লক্ষণ
৩৯১২। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই, পেঁচা সম্পর্কে যেসব কথা প্রচলিত তা সঠিক নয়, কোনো নক্ষত্রের নির্দিষ্ট তারিখে আকাশের কোনো স্থানে অবস্থান করলে বৃষ্টিপাত হয় এরূপ বিশ্বাসও ঠিক নয় এবং সফর মাসকে অশুভ মনে করবে না।[1]
সহীহ।
[1]. মুসলিম, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৬/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ৭৬/৪৩. পশু-পাখি তাড়িয়ে শুভ-অশুভ নির্ণয়।
৫৭৫৩. ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ছোঁয়াচে ও শুভ-অশুভ বলতে কিছু নেই। অমঙ্গল তিন বস্তুর মধ্যে স্ত্রীলোক, গৃহ ও পশুতে।[1] [২০৯৯; মুসলিম ৩৯/৩৪, হাঃ ২২২৫, আহমাদ ৪৫৪৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৯)
[1] কোন কোন স্ত্রীলোক স্বামীর অবাধ্য হয়। আবার কেউ হয় সন্তানহীনা। কোন গৃহে দুষ্ট জ্বিনের উপদ্রব দেখা যা, আবার কোন গৃহ প্রতিবেশীর অত্যাচারের কারণে অশান্তিময় হয়ে উঠে। গৃহে সালাত আদায় ও যিকর-আযকারের মাধ্যমে জ্বিনের অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কোন কোন পশু অবাধ্য বেয়াড়া হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২৩/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ২৪. অশুভ লক্ষণ
৩৯২১। সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ পেঁচা অশুভ নয়, ছোঁয়াচে রোগ নেই এবং কোনো জিনিস অশুভ হওয়া ভিত্তিহীন। যদি কোনো কিছুর মধ্যে অশুভ কিছু থাকতো, তাহলে ঘোড়া, নারী ও বাড়ী এই তিন জিনিসের মধ্যে থাকতো।[1]
সহীহ।
[1]. আহমাদ। আহমাদ শাকির বলেনঃ এর সনদ; সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা‘দ ইবনু মালিক (রাঃ)
সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২৩/ ভাগ্য গণনা ও ফাল নেয়া
পরিচ্ছেদঃ ৪. পাখীর দ্বারা শুভাশুভের ফাল নির্ধারণ সম্পর্কে।
৩৮৭২. কা’নবী (রহঃ) …. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়, না মৃতের খুলিতে পেঁচা থাকে, আর না দেউ-দানব রাস্তা ভুলিয়ে দেয় এবং না সফর মাস অমঙ্গলের।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
জ্বর কাকে বলে
জ্বর হচ্ছে শারীরিক অসুস্থতার অন্যতম প্রধান একটি লক্ষ্মণ, যা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার সীমা ৩৬–৩৭.২ °সে (৯৬.৮–৯৯.০ °ফা) এর অধিক তাপমাত্রা নির্দেশ করে। শরীরের দেহের তাপমাত্রা মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত উচ্চ নির্দিষ্ট সূচক(set point) থেকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে জ্বর অনুভূত হয়। সেট পয়েন্ট বা নির্দিষ্ট সূচক হচ্ছে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, যেটাকে সে স্বাভাবিক মনে করে সে অনুযায়ী দেহের তাপমাত্রা কমায় বা বাড়ায়। অর্থাৎ শরীরের এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি বাইরে থেকে আসা তাপের কারণে নয়, বরঞ্চ মস্তিষ্কের থেকে আসে।
নানাবিধ কারণে মানুষের জ্বর হতে পারে, এমনকি প্রাণীজগতের অনেক প্রাণীর মধ্যেই জ্বর হয়। সাধারণত কোন রোগের সংক্রমণ হলে তার লক্ষণ হিসেবে জ্বর হয়। সেটি হতে পারে কোন ভাইরাসের সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, দেহে বাসরত পরজীবীর সংক্রমণ। আরো অসংখ্য কারণে প্রাণীদের মধ্যে জ্বর হতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই, জ্বর জাহান্নাম বা দোজখ থেকে আসা কোন উত্তাপ নয়। হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, জ্বর হচ্ছে জাহান্নামের উত্তাপ! বিষয়টি খুবই হাস্যকর। [172] [173] [174]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৬/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ৭৬/২৮. জ্বর হল জাহান্নামের উত্তাপ।
৫৭২৩. ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে হয়। কাজেই তাকে পানি দিয়ে নিভাও।
নাফি‘ (রহ.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ তখন বলতেনঃ আমাদের উপর থেকে শাস্তিকে হালকা কর। [৩২৬৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৬/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ৭৬/২৮. জ্বর হল জাহান্নামের উত্তাপ।
৫৭২৪. ফাতিমাহ বিনত্ মুনযির (রহ.) হতে বর্ণিত যে, আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ)-এর নিকট যখন কোন জ্বরে আক্রান্ত স্ত্রীলোকদেরকে দু‘আর জন্য নিয়ে আসা হত , তখন তিনি পানি হাতে নিয়ে সেই স্ত্রীলোকটির জামার ফাঁক দিয়ে তার গায়ে ছিটিয়ে দিতেন এবং বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ করতেন, আমরা যেন পানির সাহায্যে জ্বরকে ঠান্ডা করি। [মুসলিম ৩৯/২৬, হাঃ ২২১১,আহমাদ ২৬৯৯২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ফাতিমা বিনতে আল মুনযির (রহঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৬/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ৭৬/২৮. জ্বর হল জাহান্নামের উত্তাপ।
৫৭২৫. ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ জ্বর হয় জাহান্নামের তাপ থেকে। কাজেই তোমরা পানি দিয়ে তা ঠান্ডা কর। [৩২৬৩] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৬/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ৭৬/২৮. জ্বর হল জাহান্নামের উত্তাপ।
৫৭২৬. রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ জ্বর হয় জাহান্নামের তাপ থেকে। কাজেই তোমরা তা পানি দিয়ে ঠান্ডা কর। [৩২৬২; মুসলিম ৩৯/২৬, হাঃ ২২১২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ)
ইসলাম ও বদনজর
নবী মুহাম্মদ যেহেতু সেই অশিক্ষিত মূর্খ আরব সমাজের একজন মানুষ ছিলেন, স্বাভাবিকভাবেই সেই সময়ে সমাজে প্রচলিত নানা ধরণের কুসংস্কার এবং হাস্যকর সব বিষয় তিনি বিশ্বাস করতেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সেইসব কুসংস্কার এবং হাস্যকর বিশ্বাসগুলোকে তিনি ইসলাম ধর্মে অন্তর্ভূক্ত করে গেছেন। যেমন ধরুন বদনজর লাগার বিষয়টি। নিতান্তই হাস্যকর এবং পুরনো যুগের অশিক্ষিত মূর্খ মানুষের একটি কুসংস্কার। এই কুসংস্কার অনুসারে, কেউ কারো দিকে খারাপ নজর দিলে কোন মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়! চোখ দিয়ে তাকিয়ে কোন মানুষের ক্ষতি করা অত্যন্ত হাস্যকর একটি বিষয়। আসুন এই বিষয়ে হাদিসগুলো পড়ে দেখি [175] [176] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৫৬০-[৪৭] আসমা বিনতু ’উমায়স (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রসূল! জা’ফার (তাইয়্যার)-এর সন্তানদের ওপর দ্রুত বদনযর লেগে থাকে। আমি কি তাদের জন্য ঝাড়ফুঁক করাব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, কেননা যদি কোন জিনিস তাকদীরের অগ্রগামী হতে পারত, তবে বদনযরই তার অগ্রগামী হত। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
[1] সহীহ : আহমাদ ২৭৪৭০, তিরমিযী ২০৫৯, ইবনু মাজাহ ৩৫১০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১২৫২, সহীহুল জামি‘ ৯৪১৭, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৩৫৯১, ‘নাসায়ী’র কুবরা ৭৫৩৭, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ১৯৮৫৯, বায়হাক্বী’র কুবরা ২০০৭২।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আসমা বিনতু ‘উমায়স (রাঃ)
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৪৫৩১-[১৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নযর লাগা একটি বাস্তব সত্য। যদি কোন জিনিস তাকদীর পরিবর্তন করতে সক্ষম হত, তবে বদনযরই তা করতে পারত। আর যদি তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়া পানি চাওয়া হয়, তবে অবশ্যই ধুয়ে দেবে। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম (২১৮৮)-৪২, তিরমিযী ২০৬২, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১২৫১, ১২৫২; সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১০৭, আস্ সুনানুস্ সুগরা ৪২৯৩, বায়হাক্বী’র কুবরা ২০১০২, ‘নাসায়ী’র কুবরা ৭৬২০, শু‘আবুল ঈমান ১১২২৫, ইবনু মাজাহ ৩৫১০, আল জামি‘উস্ সগীর ৭৫৯৬, সহীহুল জামি‘ ৪১৪৭, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৪/১৭ পৃঃ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
বদনজরের ইসলামি চিকিৎসা
নবী মুহাম্মদ যে শুধুমাত্র বদনজর লাগার মত অবৈজ্ঞানিক কুসংস্কারে বিশ্বাসী ছিলেন তাই নয়, তিনি এর চিকিৎসা হিসেবেও অত্যন্ত হাস্যকর এবং নোংরা একটি পদ্ধতি দিয়ে গেছেন। সেই পদ্ধতিটি এমনই নোংরা যে, তা ভাষায় প্রকাশ করতেও ঘৃণা বোধ হয়। নবী মুহাম্মদ যার বদনজর লেগেছে তার পুরো শরীর, এমনকি গোপনাঙ্গ ধোয়া পানি দিয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে ধুইয়ে দিতে শিখিয়ে গেছেন। এতে নাকি বদনজর কেটে যায়! এরকম হাস্যকর চিকিৎসার কথা শুনলে আজকালকার বাচ্চাকাচ্চারাও হাসাহাসি করবে [177] [178] –
মুয়াত্তা মালিক
৫০. বদনজর সংক্রান্ত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১. বদ নজরের প্রভাব হইতে মুক্তির জন্য ওযু করা প্রসঙ্গে
রেওয়ায়ত ২. আবূ উসামা ইবন সহল (রহঃ)-এর রেওয়ায়ত, ’আমির ইবনে রবী’আ সহল ইবনে হানীফকে গোসল করিতে দেখিয়া বলিলেন, আজ আমি যেই সুন্দর মানুষ দেখিলাম, এই রকম কাহাকেও দেখি নাই, এমন কি সুন্দরী যুবতীও এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট দেখি নাই। (আমিরের) এই কথা বলার সাথে সাথে সহল সেখানে লুটাইয়া পড়িল। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাযির হইয়া আরয করিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি সহল ইবনে হুনাইফ (বা হানীফ)-এর কিছু খবর রাখেন কি? আল্লাহর কসম! সে মস্তক উত্তোলন করিতে পারিতেছে না। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তুমি কি মনে করিতেছ যে, তাহাকে কেহ বদনজর দিয়াছে? লোকটি বলিল, হ্যাঁ, আমর ইবন রবী’আ (বদনজর দিয়াছে)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আমির ইবন রবী’আকে ডাকিয়া ক্রোধান্বিত হইয়া তাহাকে বলিলেন, তোমাদের কেহ নিজের মুসলিম ভাইকে কেন নিহত করিতেছ? তুমি (بارك الله) কেন বলিলে না? এইবার তুমি তাহার জন্য গোসল কর। অতএব আমির হাত, মুখ, হাতের কনুই, হাটু, পায়ের আশেপাশের স্থান এবং লুঙ্গির নিচের আবৃত দেহাংশ ধৌত করিয়া ঐ পানি একটি বরতনে জমা করিল। সেই পানি সহলের দেহে ঢালিয়া দেওয়া হইল। অতঃপর সদল সুস্থ হইয়া গেল এবং সকলের সঙ্গে রওয়ানা হইল।
হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৫৬২-[৪৯] সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ)-এর পুত্র আবূ উমামাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’আমির ইবনু রবী’আহ্ (রাঃ) সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ)-কে গোসল করতে দেখলেন এবং (তার মসৃণ দেহ দেখে) বলে উঠলেন : আল্লাহর কসম! আজকের মতো আমি কোনদিন দেখিনি এবং পর্দার আড়ালে রক্ষিত (কুমারী মেয়ের) কোন চামড়াও (সাহল-এর চামড়ার মতো) এরূপ দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর (তার মুখ হতে এ শব্দগুলো বের হওয়ায়) সাহল সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন এবং (এ অবস্থায়) তাঁকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলো। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি সাহল ইবনু হুনায়ফ-এর জন্য কোন ব্যবস্থা করতে পারেন? আল্লাহর কসম! সে তো তার মাথা উঠাতে পারছে না। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তোমরা কি কাউকেও তার সম্পর্কে অভিযুক্ত করো? লোকেরা বলল : আমরা ’আমির ইবনু রবী’আহ্-এর ওপর সন্দেহ করি।
বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আমিরকে ডেকে পাঠালেন এবং কঠোর ভাষায় তার নিন্দা করে বললেনঃ তোমাদের কেউ তার আরেক ভাইকে কেন হত্যা করে? তুমি তার জন্য কল্যাণের দু’আ করলে না কেন? তুমি (তোমার শরীরের কিছু অঙ্গ) সাহল-এর জন্য ধুয়ে দাও। তখন ’আমির নিজের মুখমণ্ডলে, উভয় হাত কনুই পর্যন্ত, উভয় পা হাঁটু হতে অঙ্গুলির পার্শ্ব এবং ইযারের ভিতরের অঙ্গ ধুয়ে পানিগুলো একটি পাত্রে নিলেন, অতঃপর সে পানি সাহল-এর উপর ঢেলে দেয়া হলো। তাতে সাহল সুস্থ হয়ে লোকজনের সাথে হেঁটে আসলেন, যেন তাঁর শরীরে কোন কষ্ট ছিল না। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
আর ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ)-এর এক রিওয়ায়াত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আমিরকে বললেনঃ বদনযর একটি সত্য ব্যাপার। সুতরাং তুমি সাহল-এর জন্য উযূ করো। ’আমির তার জন্য উযূ করলেন।
[1] সহীহ : শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩২৪৫, মুওয়াত্ত্বা মালিক ১৭৪৭, নাসায়ী’র কুবরা ৭৬১৯, ত্ববারানী ৫৪৪১, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১০৫, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৫৭২।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ উমামাহ বিন সাহল (রহঃ)
ঝাড়ফুঁক দ্বারা চিকিৎসা
যেকোন শিক্ষিত এবং সভ্য মানুষ মাত্রই জানেন যে, ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে কখনো কোন রোগের নিরাময় হয় না। আমাদের গ্রামাঞ্চলে এখনো যেহেতু সভ্যতা ও শিক্ষার আলো ঠিকভাবে পৌঁছেনি, তাই সেইসব জায়গাতে এখনো মানুষ ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস করে। কিন্তু ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে আসলে রোগের উপশম তো হয়-ই না, বরঞ্চ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁক রোগীর মারাত্মক সমস্যাও সৃষ্টি করে। এখনো বহুস্থানে সাপের কামড়ে গ্রামের লোকজন ওঝা ডেকে নিয়ে আসে, সেই সব ওঝারা আল্লাহ রাসুলের নামে বিষকে নেমে যেতে বলে। সূরা পড়ে ফুঁ দেয়। এসবের মাধ্যমে যেই সময়ের অপচয় হয়, তাতে রোগী অনেক সময়ই এমন অসুস্থ হয়ে যায় যে, পরে হাসপাতালে নিলেও আর কিছু করার থাকে না। শরীরে বিষ প্রবেশ করলে তার জন্য আধুনিক হাসপাতালগুলোতে নানা ধরণের ইঞ্জেকশন দিয়ে সেই বিষের ক্রিয়াকে নষ্ট করে দেয়া হয়। ঝাড়ফুঁক বা সূরা-মন্ত্র পড়লে এসময় কোন কাজই করবে না। এইসব পুরনো অন্ধবিশ্বাসকে ইসলাম ধর্মটি জায়েজ করেছে, এবং হাদিসগুলো থেকে জানা যায় নবী নিজেও ঝাড়ফুঁক করতেন, ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস করতেন। যা নিতান্তই অবৈজ্ঞানিক কুসংস্কারকে সমাজে প্রসার প্রচার করারই নামান্তর। আসুন দেখি, ইসলাম কীভাবে ঝাড়ফুঁকের মত অন্ধবিশ্বাসকে চিকিৎসা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়! [179] [180] [181]
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২৩/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ১৭. তাবীজ ঝুলানো
৩৮৮৪। ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কেবল বদনযর লাগা কিংবা বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে চিকিৎসায় ঝাড়ফুঁক দেয়া যায়।[1]
সহীহ।
[1]. বুখারী মাওকুফভাবে, তিরমিযী, আহমাদ, হুমাইদী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৩/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ২৩০৬. বদ নযরের জন্য ঝাড়ফুঁক করা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৫৩২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৭৩৯
৫৩২৮। মুহাম্মদ ইবনু খালিদ (রহঃ) … উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে একটি মেয়েকে দেখলেন যে, তার চেহারায় কালিমা রয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ তাকে ঝাড়ফুক করাও, কেননা তার উপর (বদ) নযর লেগেছে। আবদুল্লাহ ইবনু সালিম (রহঃ) এ হাদীস যুবায়দী থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। উকায়ল (রহঃ) বলেছেন, এটি যুহরী (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২৩/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ১৮. ঝাড়ফুঁক সম্পর্কে
৩৮৮৭। আশ-শিফা বিনতু আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি হাফসাহ (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেনঃ তুমি ওকে (হাফসাহকে) যেভাবে লেখা শিখিয়েছ, সেভাবে পিপড়া (পোকা) কামড়ের ঝাড়ফুঁক শিক্ষা দাও না কেন।[1]
সহীহ।
[1]. আহমাদ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ শিফা বিনতু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)
সর্বরোগের মহৌষধ
নবী মুহাম্মদ রাস্তার স্বপ্নে পাওয়া ঔষধ বিক্রেতা হকারদের মতই একটি সর্বরোগের একটি মহৌষধ দিয়ে গেছেন, আর সেটি হচ্ছে কালোজিরা। তিনি এটিও বলে গেছেন, এই কালোজিরা হচ্ছে মৃত্যু ছাড়া সর্ব রোগের ঔষধ। কালোজিরা, আদা রসুন পিয়াজ মরিচ এগুলোর যত ভাল গুণই থাকুক না কেন, এগুলোকে সর্বরোগের মহৌষধ দাবী করা অত্যন্ত হাস্যকর বিষয়। তাহলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে মেডিকেল সায়েন্সের এত এত গবেষণা, এত এত ঔষধ আবিষ্কারের দরকারই হতো না। সব হাসপাতালগুলোতে আর ফার্মেসিতে শুধু কালোজিরাই পাওয়া যেতো। আসুন হাদিসটি পড়ে দেখি [182] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৬/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ৭৬/৭. কালো জিরা
৫৬৮৭. খালিদ ইবনু সা’দ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনু আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদিনায় ফিরলাম তখনও তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশুনা করতে আসেন ইবনু আবূ ’আতীক। তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা এ কালো জিরা সাথে রেখ। এত্থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে যাইতুনের কয়েক ফোঁটা তৈল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এ দিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে। কেননা, ’আয়িশাহ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ এই কালো জিরা ’সাম’ ছাড়া সব রোগের ঔষধ। আমি বললামঃ ’সাম’ কী? তিনি বললেনঃ মৃত্যু। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মদ দ্বারা চিকিৎসা হারাম
ইসলাম মদের সর্বপ্রকার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এলকোহল বা মদ অসংখ্য কাজে আমাদের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি এবং ফ্যাক্টরিতে এলকোহলের গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু তাই নয়, মানুষের চিকিৎসায় এলকোহলের কোন বিকল্প নেই। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা সহ এত অসংখ্য কাজে এলকোহল ব্যবহৃত হয়, যার লিস্ট তৈরি করাও কষ্টকর। অথচ, ইসলাম এমনকি চিকিৎসার জন্যেও মদ বা এলকোহলকে হারাম করে দিয়েছে [183] [184] [185] [186]
হাদীস সম্ভার
২৩/ বাণিজ্য ও উপার্জন
পরিচ্ছেদঃ ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কিত কিছু বিধি-নিষেধ
(২৪৯৫) ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদ পানকারীকে, মদ পরিবেশনকারীকে, তার ক্রেতা ও বিক্রেতাকে, তার প্রস্তুতকারককে, যার জন্য প্রস্তুত করা হয় তাকে, তার বাহককে ও যার জন্য বহন করা হয় তাকে আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।
(আবূ দাউদ ৩৬৭৬, ইবনে মাজাহ ৩৩৮০) ইবনে মাজার বর্ণনায় আছে, তার মূল্য ভক্ষণকারীও (অভিশপ্ত)। (সহীহুল জামে’ ৫০৯১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৭। পানীয় বস্তু
পরিচ্ছেদঃ ৩. মদ দিয়ে চিকিৎসা করা হারাম
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৫০৩৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ১৯৮৪
৫০৩৫-(১২/১৯৮৪) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ….. ওয়ায়িল আল-হাযরামী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তারিক ইবনু সুওয়াইদ জুকী (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মদ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি তাকে বারণ করলেন, কিংবা মদ প্রস্তুত করাকে খুব জঘন্য মনে করলেন। তিনি [তারিক (রাযিঃ)] বললেন, আমি তো শুধু ঔষধ তৈরি করার জন্য মদ প্রস্তুত করি। তিনি বললেনঃ এটি তো (ব্যাধি নিরামক) ঔষধ নয়, বরং এটি নিজেই ব্যাধি। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৯৭৭, ইসলামিক সেন্টার ৪৯৮৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ওয়ায়ল হাযরামী (রাঃ)
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি
পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ – মদের বর্ণনা ও মধ্যপায়ীকে ভীতিপ্রদর্শন করা
৩৬৪২-[৯] ওয়ায়িল আল হাযরামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ত্বারিক ইবনু সুওয়াইদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মদ ব্যবহারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা ব্যবহার করতে নিষেধ করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তবে আমি যদি তা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তা প্রতিষেধক নয়; বরং স্বয়ং ব্যাধি। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম ১৯৮৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৫৬৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ওয়ায়ল হাযরামী (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৭/ পানীয় দ্রব্য
পরিচ্ছেদঃ ৩. মদদ্বারা চিকিৎসা করা হারাম এবং তা ঔষধ হতে না পারার বিবরণ
৪৯৭৭। মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ওয়াল আল-হাযরামী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তারিক ইবনু সুওয়ায়দ জুফী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মদ সন্মন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাঁকে নিষেধ করলেন, অথবা মদ প্রস্তুত করাকে খুব খারাপ মনে করলেন। তিনি তারিক (রাঃ) বললেন, আমি তো ঔষধ প্রস্তুত করার জন্য মদ বানাই। তিনি বললেনঃ এটি তো (রোগ নিরামক) ঔষধ নয়, বরং এটি নিজেই রোগ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ওয়ায়ল হাযরামী (রাঃ)
উটের প্রস্রাব হালাল ও পবিত্র
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, উটের মূত্র একটি ঔষধ এবং হালাল পানীয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে যে সম্পূর্ণ ভুল এবং একইসাথে হাস্যকর, তা আর অতিরিক্ত ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না [187]। এই বিষয়ে বেশ কয়েকটি হাদিস রয়েছে, এবং আলেম ওলামাগণের ঐক্যমত্যও রয়েছে যে, যেসব পশু খাওয়া হালাল সেই সব পশুর প্রস্রাব পান করাও ইসলামে সম্পূর্ণ বৈধ। আসুন প্রথমে হাদিসগুলো পড়ি [188] [189] [190] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬ঃ কিসাস (প্রতিশোধ)
পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ – মুরতাদ এবং গোলযোগ সৃষ্টিকারীকে হত্যা করা প্রসঙ্গে
৩৫৩৯-(৭) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ‘উকল সম্প্রদায়ের কিছু লোক উপস্থিত হলো। অতঃপর তারা ইসলাম গ্রহণ করল। কিন্তু মাদীনার আবহাওয়া তাদের জন্য অনুপযোগী হলো। অতএব তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে সাদাকার উটনীর নিকট গিয়ে তার দুধ ও প্রস্রাব পানের নির্দেশ দিলেন। ফলে তারা নির্দেশ পালনার্থে সুস্থ হয়ে উঠল। কিন্তু তারা সুস্থ হয়ে মুরতাদ হয়ে গেল এবং তারা রাখালদেরকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিল। তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ সংবাদ শুনে) তাদের পেছনে লোক পাঠালেন। অতঃপর তাদেরকে ধরে আনা হলে তাদের দু’ হাত ও দু’ পা কেটে ফেললেন এবং তাদের চোখ ফুঁড়ে দিলেন, তারপর তাদের রক্তক্ষরণস্থলে দাগালেন না, যাতে তারা মৃত্যুবরণ করে।
অপর বর্ণনাতে রয়েছে, লোকেরা তাদের চোখে লৌহ শলাকা দিয়ে মুছে দিল। অন্য বর্ণনাতে আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লৌহ শলাকা আনার হুকুম করলেন, যাকে গরম করা হলো এবং তাদের চোখের উপর মুছে দেয়া হলো। অতঃপর তাদেরকে উত্তপ্ত মাটিতে ফেলে রাখলেন। তারা পানি চাইল কিন্তু তাদেরকে পানি পান করানো হয়নি। পরিশেষে তারা এ করুণ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল। (বুখারী ও মুসলিম)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ৩০১৮, ৬৮০২, মুসলিম ১৬৭১, আবূ দাঊদ ৪৩৬৪, নাসায়ী ৪০২৫, ইবনু মাজাহ ২৫৭৮, আহমাদ ১২৬৩৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৯/ ‘কাসামা’-(খুনের ব্যাপারে বিশেষ ধরনের হলফ করা), ‘মুহারিবীন’ (শত্রু সৈন্য), ‘কিসাস’ (খুনের বদলা) এবং ‘দিয়াত’ (খুনের শাস্তি স্বরূপ অর্থদন্ড)
পরিচ্ছেদঃ ২. শত্রু সৈন্য এবং মুরতাদের বিচার
৪২০৭। আবূ জাফর মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, “উকল” গোত্রের আট জনের একটি দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আগমন করল। অতঃপর তারা ইসলামের ওপর বাইআত গ্রহণ করল। কিন্তু সেখানকার আবহাওয়া তাদের অনুকুলে না হওয়ায় তাদের শরীর অসুস্থ হায় গেল। তখন তারা এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আভিযোগ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি আমাদের রাখালের সাথে-গমন করে উটের মূত্র ব্যবহার এবং দুধ পান করতে পারবে? তখন তারা বলল, জী হ্যাঁ। এরপর বের হয়ে গেল এবং তার মূত্র ব্যবহার ও দুধ পান করল। এতে তারা সুস্থ হয়ে গেল।
অতঃপর তারা রাখালকে হত্যা করল এবং উটগুলো তাড়িয়ে নিয়ে গেল। এই সংবাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছল। তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তাঁরা ধরা পড়ল এবং তাদেরকে নিয়ে আসা হল। তাদের প্রতি আদেশ জারি করা হল এবং তাদের হাত-পা কর্তন করা হল এবং তপ্ত লৌহ শলাকা চোখে প্রবেশ করানো হলো। এরপর তাদেরকে রৌদ্রে নিক্ষেপ করা হলো। অবশেষে তারা মারা গেল।
ইবন সাব্বাহ (রহঃ) … এর বর্ণনা وَطَرَدُوا الإِبِل এর স্থলে وَاطَّرَدُوا النَّعَمَ উল্লেখ রয়েছে এবং তার বর্ণনায় وَسُمِّرَتْ أَعْيُنُهُمْ রয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ২৯। কাসামাহ্ (খুন অস্বীকার করলে হলফ নেয়া), মুহারিবীন (লড়াই), কিসাস (খুনের বদলা) এবং দিয়াত (খুনের শাস্তি স্বরূপ জরিমানা)
৪২৪৬-(১০/…) আবূ জাফার মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) ….. আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, “উকল” গোত্রের আটজনের একটি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো। তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ইসলামের উপর বাই’আত করল। অতঃপর মাদীনার আবহাওয়া তাদের প্রতিকূল হওয়ায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অভিযোগ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি আমাদের রাখালের সাথে গমন করে উটের মূত্র এবং দুগ্ধ পান করতে পারবে? তখন তারা বলল, জী- হ্যাঁ। এরপর তারা বের হয়ে গেলে এবং এর (উটের) মূত্র ও দুগ্ধ পান করল। এতে তারা সুস্থ হয়ে গেল্ অতঃপর তারা রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে গেলে। এ সংবাদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছল। তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তারা তাদেরকে পাকড়াও করে নিয়ে এল। তাদের প্রতি নির্দেশ জারি করা হল। তখন তাদের হাত-পা কৰ্তন করা হল এবং তপ্ত লৌহ শলাকা চোখে প্রবেশ করানো হলা। এরপর তাদেরকে রৌদ্রে নিক্ষেপ করা হলো। অবশেষে তারা মারা গেল।
ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) … বর্ণনা وَطَرَدُوا الإِبِلَ এর স্থলে وَاطَّرَدُوا النَّعَمَ উল্লেখ রয়েছে। রাবী বলেন, অতঃপর তাদের চোখগুলো উপড়ে ফেলা হল। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২০৭, ইসলামিক সেন্টার ৪২০৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
এবারে আসুন আল্লামা ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রচিত মুখতাসার যাদুল মা’আদ গ্রন্থ থেকে এই বিষয়ক ইসলামিক বিধানটি জেনে নেয়া যাক [191] –
শায়েখ সালিহ আল মুনাজ্জিদের পরিচালিত islamqa.info একটি বিখ্যাত ওয়েবসাইটে, যেখানে সৌদি আরবের সব বিখ্যাত আলেম ওলামাগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করে ইসলামের বিভিন্ন অথেনটিক বিষয়াদি আলোচনা করা হয়। এই ওয়েবসাইটে পূর্বে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল, উটের প্রস্রাব পান করা কত ভাল এই নিয়ে। প্রবল সমালোচনা এবং উপযুক্ত বিজ্ঞানভিত্তিক জবাব দেয়ার পরে ওয়েবসাইটটি সেই প্রবন্ধটি সরিয়ে ফেলে। আসুন সেই প্রবন্ধটি আমরা আর্কাইভ ডট অর্গ থেকে দেখে নিই। উল্লেখ্য, আর্কাইভ ডট অর্গে পুরনো সব ওয়েবসাইট বা ওয়েবসাইটের লেখার একটি ভার্শন সংরক্ষণ করা হয়। আসুন বর্তমান সময়ের এবং আর্কাইভ ডট অর্গের পুরাতন আর্কাইভ থেকেই দুইটি লিঙ্ক যাচাই করে দেখা যাক [192] [193]। প্রশ্ন হচ্ছে, লেখাটি সরিয়ে ফেলার কারণ কী?
এবারে আসুন আরেকটি বিখ্যাত ইসলামিক ফতোয়া ওয়েবসাইট থেকে একটি ফতোয়া দেখে নেয়া যাক [194] –
The urine of camels as medicine
Fatwa No: 93051
The Prophetic narration which you mentioned in the question is authentic and is reported by Al-Bukhari, Muslim and others may Allaah have mercy upon them.
The narration is proves the permissibility of drinking the urine of camels and that it is a beneficial medicine. Moreover, some doctors stated this fact as well, like Ibn Seenaa may Allaah have mercy upon him in his book entitled ”Al-Qaanoon (The Law (of medicine))”.
The urine of camels and that of cows is pure; and this is the view of the majority of the scholars may Allaah have mercy upon them.
Similarly, the urine and dung of animals which we are allowed to eat their meat, is pure as stated by the scholars may Allaah have mercy upon them.
এবারে আসুন উটের মূত্রপান সম্পর্কে ড আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়ার দুইটি বক্তব্য শুনে নিই,
পানি সম্পর্কিত সমস্যাবলী
পানি অপবিত্র হয় না?
পানিতে ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ খুবই বাজে একটি কাজ। সাধারণত অনুন্নত এবং শিক্ষাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে পানিতে ময়লা আবর্জনা ফেলার এই বাজে অভ্যাসটি লক্ষ্য করা যায়। যা কিছুই তারা কোথাও ফেলতে চায়, নদীনালা পুকুর কিংবা সমুদ্রে তারা ফেলে দেয়। এগুলো ফেলা হলে পানি ক্রমশ দূষিত হয়ে ওঠে, ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। এরকম পানি ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। একইসাথে, যেসব অঞ্চলে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি, সেইসব অঞ্চলের পানি ব্যবহারও বিপদজনক। কিন্তু ইসলামের বিধান হচ্ছে, পানিকে কিছুই অপবিত্র করতে পারে না। এই সকল পানিই আসলে ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভার উপযোগী! যা একটি ভুল ধারণা তো বটেই, একইসাথে ক্ষতিকর ধারণাও। [195]
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ১/ পবিত্রতা অর্জন
হাদিস নম্বরঃ ৬৬
৩৪. বুযা‘আহ নামক কূপ প্রসঙ্গে
৬৬। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আমরা কি (মদীনার) ‘বুযাআহ’ নামক কূপের পানি দিয়ে অযু করতে পারি? কূপটির মধ্যে মেয়েলোকের হায়িযের নেকড়া, কুকুরের গোশত ও যাবতীয় দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস নিক্ষেপ করা হত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পানি পবিত্র, কোন কিছু একে অপবিত্র করতে পারে না।(1)
সহীহ।
(1) তিরমিযী (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ পানিকে কোনো জিনিস অপবিত্র করতে পারে না, হাঃ ৬৬, ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান), নাসায়ী (অধ্যায়ঃ পানি, অনুঃ বুদ‘আহ কূপের বর্ণনা, হাঃ ৩২৫), আহমাদ (৩/১৫, ১৬, ৩১, ৮৬), দারাকুতনী (১/৩০-৩১) আবূ সাঈদ খুদরী সূত্রে। এর সানাদ সহীহ। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ অপবিত্রতা পড়ার কারণে পানির কোনো একটি বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়ে গেলে তা পবিত্রতা থেকে বের হয়ে যায়। আলোচ্য হাদীসের ‘উমূম (ব্যাপকতা) অন্য হাদীসাবলী দ্বারা খাস করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পানি কীভাবে দূষিত হতে পারে এবং দূষিত পানি ব্যবহারে কী বিপর্যয় ঘটতে পারে, আসুন নবম দশম শ্রেনীর বিজ্ঞান বই থেকে তা পড়ি,
বৃষ্টির পানি সর্বদাই বিশুদ্ধ
কোরআনে উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ মেঘমালা থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করেন, যা মানবজাতির জন্য কল্যাণকর। তবে আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা জানি, বৃষ্টির পানি সবসময়ই বিশুদ্ধ বা নিরাপদ নয়, বরং এটি দূষণ ও ক্ষতিকর পদার্থের সাথে মিশ্রিত হতে পারে। বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, যানবাহনের ধোঁয়া, এবং অন্যান্য দূষণকারী উপাদান বায়ুমণ্ডলে মিশে গিয়ে বৃষ্টির সাথে পৃথিবীতে ফিরে আসে। একে এসিড বৃষ্টি বলা হয়, যা মানবস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং জলজ জীবের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। এসিড বৃষ্টির মধ্যে সালফিউরিক ও নাইট্রিক এসিড থাকে, যা গাছপালা ধ্বংস করে, মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং পানির উৎসকে বিষাক্ত করে তোলে।
লাইভ সায়েন্স ম্যাগাজিনের একটি প্রবন্ধে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, বৃষ্টির পানি সবসময় পান করার উপযোগী নয় এবং এটি দূষিত হতে পারে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক সত্য যা কোরআনের বিবৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রকৃতপক্ষে, বৃষ্টির পানি তার যাত্রাপথে ধূলিকণা, ধোঁয়া এবং অন্যান্য দূষণকারী পদার্থের সাথে মিশে যায়, যা একে দূষিত করে তোলে। এই দূষিত বৃষ্টির পানি সরাসরি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। গবেষণা অনুযায়ী, যেসব এলাকায় কলকারখানা বেশি বা যানবাহনের ধোঁয়া ও দূষণ বেশি, সেসব এলাকায় বৃষ্টির পানি এসিডিক বা বিষাক্ত হতে পারে। এমনকি কিছু জায়গায় বৃষ্টির পানিতে ভারী ধাতু যেমন পারদ ও সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা ধরনের অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই বৈজ্ঞানিকভাবে এটি বলা ভুল যে বৃষ্টির পানি সবসময় সম্পূর্ণভাবে বিশুদ্ধ বা নিরাপদ। কোরআনের এই দাবিটি যে সময়ের কুসংস্কার এবং অজ্ঞতার প্রতিফলন, তা আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে।
ইসলামে যেহেতু বলা হয়েছে, বৃষ্টির পানি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বরকত, তাই অনেক মুসলিম একে বিশুদ্ধ মনে করে থাকে। অনেক সময় ধর্মীয় বক্তাগণ এই ধরণের বক্তব্য দিয়ে থাকেন, যা কোরআন সম্মত হলেও বাস্তব সম্মত নয়। তাই জনসাধারণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে বৃষ্টির পানি যে দূষিত হতে পারে, এটি সকলকে বোঝানো জরুরি। প্রকৃতপক্ষে, প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং মানবসৃষ্ট দূষণ দুইভাবেই এটি দূষিত হতে পারে। সুতরাং, বৃষ্টি যখন মেঘমালা থেকে পড়ে, তা বিভিন্ন রাসায়নিক এবং দূষণকারী পদার্থ মিশ্রিত হয়ে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। অতএব, বৃষ্টি সম্পর্কে আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তা থেকে শেখা গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের প্রকৃত সত্যের মুখোমুখি হতে সাহায্য করবে এবং কোরআনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ দাবির ব্যাপারে সতর্ক থাকতে শিখাবে।
আসুন প্রবন্ধটির অংশবিশেষ পড়ি, যেটি লাইভ সায়েন্স ম্যাগাজিনের একটি প্রবন্ধে একটি গবেষণার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বৃষ্টির পানি সবসময় পান করার উপযোগী নয় [196],
In a study published in August 2022 in the journal Environmental Science & Technology, researchers found that rainwater all over the globe has concentrations of toxic PFAS (per- and polyfluorinated alkyl substances) that exceed health guidelines.
এবারে আসুন এই বিষয়ে কোরআনের আয়াত এবং তার তাফসীর পড়ে দেখি,
আর আমি মেঘমালা থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি। [197]
ইবনে কাসীরের তাফসীর গ্রন্থে এই বিষয়ে যা বলা হয়েছে [198] –
ইব্ন আবু হাতিম (র) বলেন, আমার পিতা …… . সাঈদ ইবন মুসাইয়্যেব (র) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা আকাশ হইতে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করিয়াছেন উহাকে অন্য কিছুই অপবিত্র করিতে পারে না। হযরত সাঈদ (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞাসা করা হইল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা কি বুয’আহ নাম পুকুর হইতে অযূ করিতে পারি। অথচ উহা এমন একটি কূপ যাহাতে জাহেলী যুগে মলমূত্র ও কুকুরের মাংস নিক্ষেপ করা হইত? তখন তিনি বলিলেন, “পানি পাক পবিত্র কোন বস্তু উহাকে অপবিত্র করে না”। হাদীসটি ইমাম শাফিঈ ও আহমাদ বর্ণনা করিয়াছেন এবং ইমাম আহমদ (র) উহাকে বিশুদ্ধ বলিয়াছেন।
দুই সমুদ্রের পানি মেশে না
সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের ধারণা ছিল, দুইটি নদী বা নদীর সাথে সমুদ্র যখন মিলিত হয়, তখন তাদের পানি মেশে না। মূলত উপর থেকে দেখে দুই ধরণের রঙ এর পানি দেখে তাদের এরকম ধারণা হতো। একইসাথে তারা এটিও জানতো যে, নদীর পানি পান যোগ্য, আর সমুদ্রের পানি লবণাক্ততার কারণে পান যোগ্য নয়। তাই তারা এই দুই ধরণের পানির পার্থক্য বুঝতে পারতো সেই প্রাচীনকাল থেকেই। তাদের এরকম ধারণার কারণ ছিল, পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা। পৃথিবীকে তারা মূলত সমতল ভূমিই মনে করতো। তারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখতো, সমুদ্রের পানি নদীর পানিগুলোকে লবণাক্ত করে দিচ্ছে না, এই কারণে তারা মনে করতো এই দুই পানি মেশে না। বর্তমান সময়েও আপনারা যারা নদীর মোহনা কিংবা সমুদ্রের সাথে নদীর মিলনস্থলে যাতায়াত করেছেন, তারা দেখে থাকবেন, দুই ধরণের রঙ এর পানি দেখলে মনে হয়, সেগুলো মিশছে না। কিন্তু সত্য হচ্ছে, তারা অবশ্যই মিশ্রিত হয়। লবণাক্ততা, পানির ঘনত্বের কারণে তার জন্য কিছুটা সময় লাগে, তবে মিশ্রিত হবে অবশ্যই।
মোহনায় যেখানে নদীর মিষ্টি হালকা পানি সমুদ্রের লবণাক্ত ভারী পানির সাথে মিশে যায় সেখানে উভয় ধরনের পানির মিশ্রণ পাওয়া যায়। জোয়ারের সময় খেয়াল করলে দেখবেন, সমুদ্রের লবণাক্ত পানি নদীর ভেতরে ঢুকে যায়, আবার ভাটার সময় নেমে যায়। সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এই অঞ্চলে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রাও যেরকম থাকে, আবার থাকে স্বাদু পানি প্রবাহের মাত্রাও। এই বৈচিত্র্যই এই অঞ্চলে বিশেষ বিশেষ গাছপালার জন্ম দেয়, যা অন্যত্র পাওয়া যায় না। অর্থাৎ সুন্দরবনের নদীতে আপনি লবণাক্ততাও পাবেন, আবার স্বাদু পানি প্রবাহও পাবেন।
পৃথিবীর বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক সংস্থা নাসা ( National Aeronautics and Space Administration (NASA), ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা। সংস্থাটি পৃথিবীর মহাসাগরসমূহের পানির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণের জন্য অতি ক্ষুদ্র কিছু কণা বিভিন্ন স্থানের পানিতে ছেড়ে দিয়েছিল। সেই কণাসমূহ স্যাটেলাইটের কাছে সিগন্যাল প্রেরণ করে, যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ সমুদ্রসমূহের পানির গতি প্রকৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান। সেই কণাসমূহের চলাফেরা থেকে সহজেই বোঝা যায়, দুটি সমুদ্রের পানি মিশে যায় কিনা। যদি দুটি সমুদ্রের পানি না মিশতো, তাহলে সেই কণাসমূহের গতি পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যেত যে, কোন নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে থেমে যাচ্ছে [199]
কোরআনে পরিষ্কারভাবেই প্রাচীনকালের এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে, দুই সমুদ্রের পানি অথবা লোনা পানি ও মিষ্টি পানি মেশে না। তাদের মধ্যে রয়েছে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল, যে কারণে এগুলো পরস্পরের সাথে মিশতে পারে না, আলাদাই থাকে। এটি পরিষ্কারভাবে ভুল তথ্য। দুই সমুদ্রের পানি মিলিত হলে তাদের ঘনত্ব এবং তাপমাত্রার কারণে মিশতে কিছু ক্ষেত্রে সময় লাগলেও, সেগুলো অবশ্যই মিশ্রিত হয়। লোনা পানি এবং মিষ্টি পানিও মিশ্রিত হয়, যার প্রমাণ আমরা পাই নদী ও সমুদ্রের মোহনায়। নদীর স্রোতের কারণে সমুদ্রের লোনা পানি নদীতে ঢুকতে পারে না বটে, কিন্তু জোয়ারের সময় সমুদ্রের লোনা পানি অবশ্যই নদীতে ঢুকে পড়ে। [200] [201] [202] –
তিনিই সমুদ্রকে দু’ ধারায় প্রবাহিত করেছেন- একটি সুপেয় সুস্বাদু আরেকটি লবণাক্ত কটু, উভয়ের মাঝে টেনে দিয়েছেন এক আবরণ- এক অনতিক্রম্য বিভক্তি-প্রাচীর।
— Taisirul Quran
তিনিই দুই সমুদ্রকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন; একটি মিষ্টি, সুপেয় এবং অপরটি লবণাক্ত, খর; উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তিনিই দু’টো সাগরকে একসাথে প্রবাহিত করেছেন। একটি সুপেয় সুস্বাদু, অপরটি লবণাক্ত ক্ষারবিশিষ্ট এবং তিনি এতদোভয়ের মাঝখানে একটি অন্তরায় ও একটি অনতিক্রম্য সীমানা স্থাপন করেছেন।
— Rawai Al-bayan
আর তিনিই দুই সাগরকে সমান্তরালে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট, সুপেয় এবং অন্যটি লোনা, খর; আর তিনি উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
দু’টি সমুদ্রকে তিনিই প্রবাহিত করেন যারা পরস্পর মিলিত হয়,
— Taisirul Quran
তিনি প্রবাহিত করেন দুই দরিয়া, যারা পরস্পর মিলিত হয়,
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়।
— Rawai Al-bayan
তিনি প্রবাহিত করেন দুই সমুদ্র যারা পরস্পর মিলিত হয়,
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
(কিন্তু তা সত্ত্বেও) উভয়ের মাঝে আছে এক আড়াল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।
— Taisirul Quran
কিন্তু ওদের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যা ওরা অতিক্রম করতে পারেনা।
— Sheikh Mujibur Rahman
উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক আড়াল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।
— Rawai Al-bayan
কিন্তু তাদের উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না [১]
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আসুন এবারে তাফসীর গ্রন্থ থেকে আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পড়ে দেখি [203] [204] –
গোবর ও রক্ত থেকে দুধ উৎপন্ন
কোরআনে গরুর দুধ উৎপন্ন হওয়ার বিষয়ে যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা বৈজ্ঞানিকভাবে মস্তবড় ভুল এবং এটি একটি পুরনো কুসংস্কার। কোরআনের ১৬:৬৬ আয়াতে বলা হয়েছে, গরুর দুধ উৎপন্ন হয় গোবর ও রক্তের মাঝখান থেকে। এই বিবরণ থেকে বোঝা যায় যে, দুধ গোবর ও রক্তের মিশ্রণ থেকে তৈরি হচ্ছে, যা প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানসম্মত নয়। আধুনিক জীববিজ্ঞান ও প্রাণীবিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী, দুধ গরুর পেট বা পাকস্থলীর কোনো অংশে তৈরি হয় না, বরং এটি গরুর স্তনে বিশেষ কোষের মাধ্যমে নিঃসৃত হয়। গরুর পাকস্থলীতে খাদ্য হজম হয় এবং এরপর পুষ্টি উপাদান রক্তের মাধ্যমে স্তনে পৌঁছে যায়। স্তনের দুধ উৎপাদন কোষগুলো এই পুষ্টি উপাদান যেমন পানি, প্রোটিন, শর্করা, চর্বি ইত্যাদি গ্রহণ করে দুধ তৈরি করে। গোবর হচ্ছে গরুর খাবার হজমের পরের বর্জ্য, তাই গোবর এবং রক্তের সঙ্গে দুধের উৎপাদনের কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।
এছাড়া, দুধের উৎপাদন একটি জটিল প্রক্রিয়া যা গরুর অন্ত্র ও রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। হজমকৃত খাবার থেকে উপাদান সংগ্রহ করা হয়(গোবর থেকে নয়), কিন্তু এটি গোবর বা রক্তের মিশ্রণ থেকে উৎপন্ন হয় না। দুধে ল্যাকটোজ, ক্যালসিয়াম, প্রোটিনসহ অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে, যা রক্ত থেকে সন্নিবেশিত হয় কিন্তু গোবরের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়। এই ভুল ধারণাটি মধ্যযুগীয় কুসংস্কার এবং আধুনিক বিজ্ঞানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে। ইসলামিক বর্ণনায় এভাবে বলা হয়, কারণ সে যুগে বিজ্ঞান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ছিল না এবং এমন অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল। মানুষ সাধারণ চোখে যা দেখত, সেই সময়ের জ্ঞান ততটুকুই ছিল। আধুনিক বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে দুধের উৎপাদন এবং তার উপাদানের সঙ্গে গোবরের কোনো সম্পর্ক নেই; বরং এটি পুরোপুরি রক্ত ও পুষ্টি উপাদান থেকে পৃথকভাবে তৈরি।
এই ধরনের কোরআনিক ব্যাখ্যা মানুষকে একটি ভুল বিশ্বাসের দিকে পরিচালিত করে, যেখানে দুধকে একটি অপবিত্র উপাদানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এর ফলে ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক সত্যের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। যখন বিজ্ঞান মানুষের জীবনের বিভিন্ন জটিলতার সমাধান দেয় এবং প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে, তখন ধর্মীয় কুসংস্কার বা ভুল ব্যাখ্যা শুধুমাত্র বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এটি মানুষের বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাধারাকে দমিয়ে রাখে এবং তাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে তোলে [205] –
তোমাদের জন্য গবাদি পশুতেও অবশ্যই শিক্ষা নিহিত আছে। তোমাদেরকে পান করাই ওদের পেটের গোবর আর রক্তের মাঝ থেকে বিশুদ্ধ দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্য খুবই উপাদেয়।
— Taisirul Quran
অবশ্যই (গৃহপালিত) চতুস্পদ জন্তুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে; ওগুলির উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে আমি পান করাই বিশুদ্ধ দুগ্ধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর নিশ্চয় চতুষ্পদ জন্তুতে রয়েছে তোমাদের জন্য শিক্ষা। তার পেটের ভেতরের গোবর ও রক্তের মধ্যখান থেকে তোমাদেরকে আমি দুধ পান করাই, যা খাঁটি এবং পানকারীদের জন্য স্বাচ্ছ্যন্দকর।
— Rawai Al-bayan
আর নিশ্চয় গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তার পেটের গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে [১] তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যকর।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এই বিষয়ে তাফসীরে জালালাইনে যা বলা আছে আসুন সেটি পড়ে নিই [206] –
গোবর ও রক্তের মাঝখান দিয়ে পরিষ্কার দুধ বের করা সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, জন্তুর ভক্ষিত ঘাস তার পাকস্থলীতে একত্রিত হলে পাকস্থলী তা সিদ্ধ করে। পাকস্থলীর এই ক্রিয়ার ফলে খাদ্যের বিষ্ঠা নিচে বসে যায় এবং মুখ উপরে থেকে যায়। দুধের উপরে থাকে রক্ত। এরপর যকৃত এই তিন প্রকার বস্তুকে পৃথকভাবে তাদের স্থানে ভাগ করে দেয়, রক্ত পৃথক করে রগের মধ্যে চলায় এবং দুধ পৃথক করে জঙুর স্তনে পৌঁছে দেয়। এখন পাকস্থলীতে শুধু বিষ্ঠা থেকে যায়, যা গোবর হয়ে বের হয়ে আসে।
গাণিতিক সমস্যাবলী
উত্তরাধিকার আইনে ভুল
কোরআনে উত্তরাধিকার আইনের মধ্যে রয়েছে একটি বড় ধরণের সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে খলিফা উমরের আমলে আউল নীতির উদ্ভাবন করতে হয়, কারণ কোরআন অনুসারে হিসেব করলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্পত্তি সঠিকভাবে ভাগ করা যায় না। খলিফা উমরের আমলে এই নিয়ে একটি সমস্যার উদ্ভব ঘটায় উমরের আমল থেকে এই আউল নীতি মুসলিম সমাজে চালু আছে। কিন্তু এই আউল নীতি অনুসরণ করলে কোরআনের আয়াত সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় না। আবার, ইবনে আব্বাস আরেকটি পদ্ধতিতে সম্পত্তি ভাগ করতে বলতেন, যেটি কোরআনের নিয়ম অনুসরণ করে বটে, কিন্তু সেখানে যেই সমস্যাটি হয়, তা হচ্ছে পরে আর সম্পত্তির কোন অংশ থাকে না। শেষের দিকে যারা থাকেন, তারা আর কোন অংশ পান না। আসুন এই বিষয়টি সংক্ষেপে আলোচনা করি। পরিবর্তীতে আরও বিস্তারিতভাবে এটি আলোচনা করা হবে। এই বিষয়ে আমাদের যে বিষয়টি জানা থাকা জরুরি তা হচ্ছে, কোন কিছু ভাগ করার সময় ভগ্নাংশগুলোর যোগফল সর্বদাই ১ হতে হবে। এর এর কম বা বেশি হওয়া যাবে না। কারণ সম্পূর্ণ সম্পত্তিকেই এক হিসেবে ধরে ভাগ করা হয়। যেমন ধরুন, একটি পিটজা ভাগ করার সময় যদি ১/৮ করে ভাগ করা হয়, তবে মোট ৮ টি টুকরো হবে এবং ১/৮+১/৮+১/৮+১/৮+১/৮+১/৮+১/৮+১/৮ = ১ হবে। যদি ৯ বা ১০ জন মানুষ থাকে, শেষ ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা আর কোন পিটজার অংশ পাবেন না। কারণ ১/৮ করে টুকরো করা পিটজাকে কে ৮ জনার বেশী মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেয়া যাবে না। যোগফল যদি ১ এর বেশি হয়ে যায়, তাহলে ১ এর বেশী আর কাউকে অংশ দেয়া যাবে না। এগুলো স্কুলজীবনেই মানুষ পাটিগণিত করলে শিখে যায়।
এবারে আসুন কোরআনের উত্তরাধিকার আইনটি পড়ি। প্রথমেই এই সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতগুলো পড়ে নিই,
আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু`এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের সন্তান থাকে। যদি সন্তান না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ। (কুরআন-৪:১১)
আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে, অপরের ক্ষতি না করে। এ বিধান আল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
(কুরআন-৪:১২)
উপরের আয়াতদুটো হচ্ছে সম্পত্তির হিসেবের আয়াত। ছেলে মেয়ে স্বামী স্ত্রী কে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন তার হিসেব। আচ্ছা, এবারে আসুন ধরি, জনাব আবুল মিয়ার পরিবারে রয়েছে তার বৃদ্ধ পিতা মাতা, তার স্ত্রী, এবং তিন কন্যা। আবুল মিয়া মারা গেলেন, এবং উনার সম্পত্তি কোরআনের উপরের আয়াত মোতাবেক ভাগ বাটোয়ারা করা হবে। হিসেব করার সুবিধার জন্য ধরে নিচ্ছি আবুল মিয়া ১০০ টাকার সম্পত্তি রেখে গেছেন। এখন ভাগ বাটোয়ারা কীভাবে করবো?
১। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের সন্তান থাকে।
- এই আয়াত অনুসারে যেহেতু মৃতের সন্তান আছে, তাই তার বৃদ্ধ পিতা মাতা প্রত্যেকে পাবেন ছয় ভাগের এক ভাগ করে। অর্থাৎ এক একজন পাবেন (১০০÷৬ = ১৬.৬৬) টাকা করে। দুইজন মিলেে পাবেন ১৬.৬৬×২ = ৩৩.৩৩ টাকা।
২। আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু`এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক।
- এবারে আসুন তার তিন কন্যা কতটুকু সম্পত্তি পাবে তার হিসেবে। উপরের আয়াত থেকে বোঝা যায়, আবুল সাহেবের তিন কন্যা পাবে মালের তিনভাগের দুই ভাগ। অর্থাৎ ( ১০০× ২/৩ = ৬৬.৬৭) টাকা।
৩। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর।
- এবারে মৃত আবুল মিয়ার স্ত্রীর হিসেব। উপরের আয়াত মোতাবেক তিনি পাবেন আট ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ (১০০÷৮ = ১২.৫০) টাকা।
এভাবে আসুন হিসেব করি। আবুল সাহেব মোট ১০০ টাকা রেখে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে কোরআনের এই নিয়ম অনুসারে
যারা পাবেন | যত পাবেন |
পিতামাতা | ৩৩.৩৩ টাকা |
তিন কন্যা | ৬৬.৬৭ টাকা |
স্ত্রী | ১২.৫০ টাকা |
মোট | ৩৩.৩৩ + ৬৬.৬৭ + ১২.৫০ = ১১২.৫০ টাকা |
কিন্তু টাকাগুলো ভাগ করে দেয়ার সময় দেখা যাছে, ১২.৫০ টাকা কম হয়ে যাচ্ছে। মোট টাকা আছে ১০০, অথচ সবাইকে দিতে হবে ১১২.৫০। এই বাড়তি ১২.৫০ টাকা কোথা থেকে আসবে? আল্লাহ পাক নাজিল করবেন? এরকম বড় ধরণের গাণিতিক ভুল দিয়ে সম্পত্তির হিসেব করা খুবই বিপদজনক।
মেরাজের রাতে সালাত কমানো
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, নবী মুহাম্মদ মেরাজের রাতে সাত আসমানে গিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে সালাত নিয়ে আসেন, যার মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ আদায় করা ফরজ হয়। এই সালাত ফরজ হওয়ার পেছনে আছে একটি মজাদার কাহিনী। আল্লাহ প্রথমে মুসলিমদের জন্য ৫০ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছিলেন। কিন্তু সর্বজ্ঞানী আল্লাহর চাইতেও বেশি পাকনা মুসা নবীর পরামর্শে নবী মুহাম্মদ আল্লাহর সাথে রীতিমত কাঁচাবাজারে কাচকি মাছের দর কষাকষির মত মুলামুলি করে নামাজের পরিমাণ কমিয়ে আনেন। এ থেকে মুসা নবীকে আল্লাহর চাইতেও বেশি পাকনা বলে যে কারো মনে হতেই পারে, যেহেতু মুসা নবী আল্লাহর নির্ধারিত সালাত বিষয়ে আপত্তি তুলে সেটি কমানোর পরামর্শ দেন। আল্লাহর শানে এহেন বেয়াদবির জন্য আল্লাহ মুসা নবীকে কী শাস্তি দেবেন জানি না, তবে আল্লাহও নবীর চাপাচাপিতে নামাজের সংখ্যা কমিয়ে দেন বলে জানা যায়। মানে আল্লাহ নিজের ভুলটিও শুধরে নেন। নইলে নামাজের সংখ্যা কমাবেন কেন? সমস্যা যদিও এখানে নয়, সমস্যাটি অন্যত্র। এই মুলামুলির সময় আল্লাহ ৫০ ওয়াক্ত থেকে একবার নামাজের সংখ্যা অর্ধেক করেন। এরপরে নবী মুহাম্মদ আবার গেলে আবারো অর্ধেক করেন। ৫০ ওয়াক্তের অর্ধেক হচ্ছে ২৫। এর অর্ধেক হচ্ছে ১২.৫। কিন্তু এভাবে নামাজ আদায় করা তো অসম্ভব। কেউ কি ১২.৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারবে? তাহলে আল্লাহ কোন আক্কেলে এরকম সংখ্যক নামাজের বিধান দিয়েছিলেন? নবী না হয় মূর্খ ছিলেন, গণিত শেখেননি। কিন্তু আল্লাহ এরকম ভুল কীভাবে করলেন? আসুন হাদিসটি পড়ি [207] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ৬০/৫. ইদ্রীস (আঃ)-এর বিবরণ।
৬০/৪. অধ্যায় :
(মহান আল্লাহর বাণীঃ) আর নিশ্চয়ই ইলিয়াসও রাসূলগণের মধ্যে একজন ছিলেন। স্মরণ কর, তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা কি সাবধান হবে না? ………… আমি তা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। (আস্সাফফাতঃ ১২৩-১২৯)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, (ইলয়াস আঃ-এর কথাকে) মর্যাদার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ইলয়াসের প্রতি সালাম। আমি সৎ-কর্মশীলদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন আমার মু’মিন বান্দাদের অন্যতম- (আস্সাফফাত ১৩০-১৩২)
এবং তিনি নূহ (আঃ)-এর পিতার দাদা ছিলেন। মহান আল্লাহর বাণীঃ আর আমি তাঁকে (ইদরীস) উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছি। (মারইয়াম ৫৭)
৩৩৪২. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (লাইলাতুল মি’রাজে) আমার ঘরের ছাদ উন্মুক্ত করা হয়েছিল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। অতঃপর জিব্রাঈল (আঃ) অবতরণ করলেন এবং আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। অতঃপর তিনি যমযমের পানি দ্বারা তা ধুলেন। এরপর হিকমত ও ঈমান (জ্ঞান ও বিশ্বাস) দ্বারা পূর্ণ একখানা সোনার তশ্তরি নিয়ে আসেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। অতঃপর আমার বক্ষকে আগের মত মিলিয়ে দিলেন। এবার তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে আকাশের দিকে উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর যখন দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে পৌঁছলেন, তখন জিবরাঈল (আঃ) আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? জবাব দিলেন, আমি জিবরাঈল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সঙ্গে কি আর কেউ আছেন? তিনি বললেন, আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন। দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করলেন, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর দরজা খোলা হল। যখন আমরা আকাশের উপরে আরোহণ করলাম, হঠাৎ দেখলাম এক ব্যক্তি যার ডানে একদল লোক আর তাঁর বামেও একদল লোক। যখন তিনি তাঁর ডান দিকে তাকান তখন হাসতে থাকেন আর যখন তাঁর বাম দিকে তাকান তখন কাঁদতে থাকেন। (তিনি আমাকে দেখে) বললেন, মারাহাবা! নেক নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল! ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম (আঃ) আর তাঁর ডানের ও বামের এ লোকগুলো হলো তাঁর সন্তান। এদের মধ্যে ডানদিকের লোকগুলো জান্নাতী আর বামদিকের লোকগুলো জাহান্নামী। অতএব যখন তিনি ডানদিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বামদিকে তাকান তখন কাঁদেন। অতঃপর আমাকে নিয়ে জিবরাঈল (আঃ) আরো উপরে উঠলেন। এমনকি দ্বিতীয় আকাশের দ্বারে এসে গেলেন। তখন তিনি এ আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন! দ্বাররক্ষী তাঁকে প্রথম আকাশের দ্বাররক্ষী যেরূপ বলেছিল, তেমনি বলল। অতঃপর তিনি দরজা খুলে দিলেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আবূ যার (রাঃ) উল্লেখ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশসমূহে ইদ্রীস, মূসা, ‘ঈসা এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। তাঁদের কার অবস্থান কোন্ আকাশে তিনি আমার নিকট তা বর্ণনা করেননি। তবে তিনি এটা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে আদম (আঃ)-কে এবং ষষ্ঠ আকাশে ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখতে পেয়েছেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, জিবরাঈল (আঃ) যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ) ইদ্রীস (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন তিনি (ইদ্রীস (আঃ)) বলেছিলেন, হে নেক নবী এবং নেক ভাই! আপনাকে মারহাবা। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল) জবাব দিলেন, ইনি ইদ্রীস (আঃ)! অতঃপর মুসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি মূসা (আঃ)। অতঃপর ‘ঈসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি ‘ঈসা (আঃ)। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা। হে নেক নবী এবং নেক সন্তান! আমি জানতে চাইলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি ইবরাহীম (আঃ)।
ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, আমাকে ইবনু হাযম (রহ.) জানিয়েছেন যে, ইবনু ‘আব্বাস ও আবূ ইয়াহয়্যা আনসারী (রাঃ) বলতেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতঃপর জিবরাঈল আমাকে ঊর্ধ্বে নিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আমি একটি সমতল স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখান হতে কলমসমূহের খসখস শব্দ শুনছিলাম।
ইবনু হাযম (রহ.) এবং আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন আল্লাহ আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। অতঃপর আমি এ নির্দেশ নিয়ে ফিরে আসলাম। যখন মূসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার রব আপনার উম্মাত উপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে। তিনি বললেন, পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য রাখে না। তখন ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার জন্য আবেদন করলাম। তিনি তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে পুনরায় কমাবার আবেদন করুন এবং তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্বের অনুরূপ কথা আবার উল্লেখ করলেন। এবার তিনি (আল্লাহ) তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তিনি পূর্বের মত বললেন। আমি তা করলাম। তখন আল্লাহ তার এক অংশ মাফ করে দিলেন। আমি পুনরায় মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে জানালাম। তখন তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আরো কমাবার আরয করুন। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার আবেদন করলাম। তিনি বললেন, এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাকী রইল। আর তা সাওয়াবের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান হবে। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি এবারও বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আবেদন করুন। আমি বললাম, এবার আমার রবের সম্মুখীন হতে আমি লজ্জাবোধ করছি। এবার জিবরাঈল (আঃ) চললেন এবং অবশেষে আমাকে সাথে নিয়ে সিদ্রাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। দেখলাম তা এমন চমৎকার রঙে পরিপূর্ণ যা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করানো হল। দেখলাম এর ইট মোতির তৈরী আর এর মাটি মিসক বা কস্তুরীর মত সুগন্ধময়। (৩৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১০৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
অন্যান্য সমস্যাবলী
বানরের শরীয়া আইন
ইসলামের নবী এবং তার বেশিরভাগ সাহাবীই ছিলেন নিরক্ষর এবং সব ধরণের জ্ঞান বিজ্ঞানের থেকে বঞ্চিত। একটি সহিহ হাদিসের সূত্র ধরে ইসলামী বিশ্বাস হচ্ছে,, বানর বানরীদের মধ্যেও শরীয়া আইন চালু আছে। কোন বানরী যিনা ব্যাভিচার করলে বানররা শাস্তি স্বরূপ তাকে পাথর ছুড়ে হত্যা করে! যা খুবই হাস্যকর কথা [208]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৩/ আনসারগণ [রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম]-এর মর্যাদা
পরিচ্ছেদঃ ৬৩/২৭. জাহিলী যুগের কাসামাহ (শপথ গ্রহণ)।
৩৮৪৯. ‘আমর ইবনু মাইমূন (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাহিলীয়্যাতের যুগে দেখেছি, একটি বানরী ব্যাভিচার করার কারণে অনেকগুলো বানর একত্র হয়ে প্রস্তর নিক্ষেপে তাকে হত্যা করল। আমিও তাদের সাথে প্রস্তর নিক্ষেপ করলাম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৫৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫৬৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আমর ইবনু মায়মূন (রহঃ)
মোরগ এবং গাধা ডাকে কেন?
ইসলামের বিশ্বাস হচ্ছে, গাধা এবং মোরগ ফেরেশতা আর শয়তানদের দেখতে পায়। কীভাবে দেখতে পায় তা বোধগম্য নয় [209]
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছদঃ ১৯৯৭. মুসলমানের সর্বোত্তম সম্পদ ছাগ-পাল, যা নিয়ে তারা পাহাড়ের চুড়ায় চলে যায়
৩০৭১। কুতাইবা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে তখন তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চেয়ে দু’আ কর। কেননা, এ মোরগ ফিরিশতাদের দেখে আর যখন গাধার আওয়াজ শুনবে তখন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে, কেননা, এ গাধাটি শয়তান দেখেছে।’
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
দ্রব্যমূল্য আল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করে
বাজারে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি, এর কারণ ও নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের সমাজে যারা পড়ালেখা করেছেন, তারা বেশ ভালভাবেই বিষয়গুলো বোঝেন। বিষয়গুলো যে একটু জটিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। অর্থনীতি বা ইকোনমিক্সে এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রচুর গবেষণা, বিশ্লেষণ এবং নীতিনির্ধারণ করা হয়। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ, যেমন ভর্তুকি প্রদান, আমদানি-রফতানি নীতি নির্ধারণ, এবং বাজার মনিটরিং ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি পুরোপুরি ভিন্ন এবং কিছুটা সমস্যাসঙ্কুলই বটে।একইসাথে এক ধরনের স্থূল বাটপারিও- যার যেই জ্ঞান নেই তার সেই সম্পর্কে চুপ থাকাই বাঞ্ছনীয়। ইসলাম বলে যে, দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা বা কোনো পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হারাম, কারণ তা আল্লাহর কাজ। হাদিসে এমন বর্ণনা রয়েছে যেখানে মুহাম্মদ বলেছেন, মূল্য নির্ধারণের কাজ একমাত্র আল্লাহর। এ কারণে মুসলমানদের কাছে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত যে, দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাসের পেছনে কোনো মানবীয় কারণ নয় বরং এটি আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী হয়।
এই ধারণাটি ইসলামের অনুসারীদের মাঝে একধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাস তৈরি করে এবং বাজার ব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক নীতির পুরোপুরি বিপরীতে যায়। ইকোনমিক্স অনুযায়ী, দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে, যেমন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, ইনফ্লেশন বা টাকার অবমূল্যায়ন, তেলের দাম বৃদ্ধি, যুদ্ধ, সরবরাহ কমে যাওয়া, বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার যখন বাজারে হস্তক্ষেপ করে, তখন এটি একটি সাধারণ এবং বাস্তবধর্মী পন্থা যা বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু ইসলামি হাদিসের এই নির্দেশনা অনুযায়ী, এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা আল্লাহর ওপর হস্তক্ষেপ করার সমতুল্য ধরা হয়, যা একটি ভয়ংকর ভুল বার্তা দেয়। এই চিন্তাধারায়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হলে সাধারণ জনগণ তা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে নীরব থাকে, যা সমাজে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
হাদিস থেকে বোঝা যায়, যেকোনো মূল্যবৃদ্ধি যেনো আকাশ থেকে নেমে আসা এক অলৌকিক ব্যাপার যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অথচ অর্থনীতির বাস্তবতায় এটি একটি জটিল এবং মানবসৃষ্ট সমস্যা যা সংশোধনযোগ্য এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য। বাজারে সংকট সৃষ্টি হলে সরকারের হস্তক্ষেপ এবং জনগণের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এই সকল ইসলামিক কুসংস্কারের প্রভাবে অনেক মুসলিম এটিকে আল্লাহর ইচ্ছা হিসেবে মেনে নিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে অসচেতন হয়ে পড়ে। হাদিসের এই ধরনের নির্দেশনা মূলত অর্থনীতির মূল নীতির বিপরীতে অবস্থান করে এবং সমাজের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় বাধা সৃষ্টি করে। তাই এ ধরনের বিশ্বাস শুধু নির্বুদ্ধিতা নয়, বরং এটি একটি সমাজকে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়। মানুষের জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার আলোকেই অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধান করা উচিত, কুসংস্কার বা ভুল বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে নয়। ইসলামের এই ধারণা ইকোনমিক্সের মূল নীতিগুলোর বিরুদ্ধে গিয়ে, সমাজের মানুষকে সচেতনতা ও প্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে [210] [211]
সুনান ইবনু মাজাহ
১২/ ব্যবসা-বাণিজ্য
পরিচ্ছেদঃ ১২/২৭. যে ব্যক্তি মূল্য বেঁধে দেয়া অপছন্দ করে।
১/২২০০। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর যুগে একবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলো। লোকজন বললো, হে আল্লাহর রাসূল! জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। অতএব আপনি আমাদের জন্য মূল্য বেঁধে দিন। তিনি বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ মূল্য নিয়ন্ত্রণকারী, সংকোচনকারী, সম্প্রসারণকারী এবং রিযিক দানকারী। আমি আমার রবের সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করতে চাই যে, কেউ যেন আমার বিরুদ্ধে রক্তের ও সম্পদের কোনরূপ অভিযোগ উত্থাপন করতে না পারে।
তিরমিযী ১৩১৪, আবূ দাউদ ৩৪৫১, আহমাদ ১২১৮১, ১৩৬৪৩, দারেমী ২৫৪৫, ইবনু হিব্বান ৪৯৩, ৪৯৩৫, আল বায়হাকী ফিশ-শুআব ২৯১৬, ১৭৩১৮। গায়াতুল মারাম ৩২৩, রাওদুন নাদীর ৪০৫। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
১৮. ব্যবসা-বাণিজ্য অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১৩. মুসলিমদের মধ্যে দ্রব্যমূল্য বেঁধে দেওয়া নিষেধ
২৫৮৩. আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে একবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলো। লোকজন বললো, হে আল্লাহর রাসূল! জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। অতএব আপনি আমাদের জন্য মূল্য বেঁধে দিন। তিনি বলেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহই হলেন স্রষ্টা (অপর বর্ণনায়: মূল্য নিয়ন্ত্রণকারী), সংকোচনকারী, সম্প্রসারণকারী এবং রিযিক দানকারী। আমি আমার রবের সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করতে চাই যে, যেন আমার বিরুদ্ধে রক্তের ও সম্পদের কোনরূপ অভিযোগ তোমাদের কারো না থাকে।”[1]
[1] তাহক্বীক্ব: এর সনদ সহীহ।
তাখরীজ: আমরা যার পূর্ণ তাখরীজ দিয়েছি মুসনাদুল মাউসিলী নং ২৭৭৪, ২৮৬১ ও সহীহ ইবনু হিব্বান নং ৪৯৩৫ তে। [212]
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
অনাবৃষ্টির কারণ যাকাত না দেয়া
ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, যাকাত না দেয়া হলে আল্লাহপাক রাগ করে সেই অঞ্চলে অনাবৃষ্টি দেন এবং বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়, এটি হাদিসে খুব স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য ইসলাম ধর্মের ধার্মিকদের কাছে সত্য বলে মনে হতেই পারে, তবে এটি আসলে যুক্তি এবং বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং কুসংস্কারপূর্ণ। বৃষ্টিপাত একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা আবহাওয়ার পরিবর্তন, জলবায়ু, তাপমাত্রা, বাতাসের গতি, আর্দ্রতা, এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। মেঘের গঠন, বায়ুপ্রবাহ, এবং বাষ্পীভবনের কারণে বৃষ্টি হয়; কোনো অলৌকিক সত্তার রাগ ক্ষোভ দুঃখের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
কোনো অঞ্চলে অনাবৃষ্টি বা খরা দেখা দিলে এর প্রকৃত কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত যে, পৃথিবীর আবহাওয়া মূলত সূর্য থেকে আসা শক্তি, মেঘের গঠন, বায়ুমণ্ডলের চাপ, এবং জলবায়ুর বৈশ্বিক পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, বায়ুমণ্ডলের উচ্চচাপ অঞ্চলে বাতাস নিচে নেমে আসায় মেঘ তৈরি হতে পারে না, যার ফলে বৃষ্টি হয় না। তাছাড়া, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, বনাঞ্চল নিধন, এবং শিল্প দূষণও আবহাওয়া এবং বৃষ্টিপাতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীদের মতে, এসব প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে, যা অনাবৃষ্টির কারণ হতে পারে।
ইসলামে বর্ণিত এই ধারণা শুধু অযৌক্তিকই নয়, এটি মানুষকে প্রকৃত সমস্যা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং কুসংস্কার বাড়ায়। মানুষের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করে, অন্ধবিশ্বাসকে একটি সামাজিক রোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, কিন্তু এটি মূল সমস্যার সমাধান করে না। এমন কুসংস্কারপূর্ণ ধারণা মানুষকে প্রকৃত বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের থেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বাস্তব পন্থাগুলো অবহেলা করতে প্ররোচিত করে। বৃষ্টিপাত এবং খরা নিয়ে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করার চেয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে সমস্যার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলোর প্রতিকারের চেষ্টা করা অধিকতর যৌক্তিক।
বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাভাবনা মানুষকে সঠিক উপায়ে প্রকৃত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং সমাধানের পথ বের করতে সহায়তা করে। প্রকৃতির প্রক্রিয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তনকে এভাবে ব্যাখ্যা করা এবং এই সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার পরে জ্ঞানের দাবী করা মানব সভ্যতার বিকাশের জন্য ক্ষতিকর। এই ধরনের চিন্তাধারা মানুষকে কুসংস্কারে বিশ্বাসী করে তোলে, যা সমাজের অগ্রগতি এবং পরিবেশ রক্ষায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এটি শুধুমাত্র মানুষের চিন্তাশক্তিকে সীমাবদ্ধ করে না, বরং প্রকৃতির আইন এবং বৈজ্ঞানিক সত্যকেও অস্বীকার করে। আসুন এই সম্পর্কিত হাদিসটি দেখে নেয়া যাক [213] [214] –
সুনান ইবনু মাজাহ
৩০/ কলহ-বিপর্যয় – ফিতনা
পরিচ্ছেদঃ ৩০/২২. অপরাধের শাস্তি
২/৪০১৯। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওযন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, শাসকের তরফ থেকে অত্যাচার কঠিন বিপদ-মুসীবত এবং যখন যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভূ-পৃষ্ঠে চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাশীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)
কিন্তু সমগ্র বিশ্বে সর্বাধিক বৃষ্টি হয় ভারতের মেঘালয়ে অবস্থিত মৌসিনরামে। এই অঞ্চলের আদম শুমারি অনুসারে, এই অঞ্চলে মুসলিমের সংখ্যা মাত্র ২০৭ জন, মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৩৮%। অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষই যাকাত দেন না। তাহলে এই অঞ্চলে আট বৃষ্টির কারণ কী?
Description | Population | Percentage |
---|---|---|
Total | 54109 | 100% |
Christian | 39542 | 73.08% |
Other religions and persuasions | 8534 | 15.77% |
Hindu | 5660 | 10.46% |
Muslim | 207 | 0.38% |
Religion not stated | 122 | 0.23% |
Buddhist | 36 | 0.07% |
Sikh | 7 | 0.01% |
Jain | 1 | 0% |
বিজ্ঞান বা দর্শন শিক্ষা এবং ইসলাম
এবারে জেনে নেয়া দরকার, একজন মুসলিমের কাছে কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যাচাই করে দেখা – গবেষণা, যুক্তিবিদ্যা ইত্যাদি নাকি ইসলাম কী বলেছে সেটি। ইসলামের আকীদা অনুসারে, যুক্তিবিদ্যা বা দর্শন বা গণিত শাস্ত্র, তথা মানুষের তৈরি সকল জ্ঞানের সাথে যদি ইসলামের ওহীর জ্ঞানের পার্থক্য দেখা যায়, তাহলে ওহীর জ্ঞানকেই সঠিক বলে গণ্য করতে হবে। এমনকি, বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিবিদ্যা অধ্যয়নও করা যাবে না, কারণ তাতে ইসলামের ইমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ইসলাম ধর্মের অনেক কিছু নিয়ে যৌক্তিক আলাপ আলোচনা তর্ক বিতর্ক করতে নবী নিষেধ করে গেছে। উনি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হতেন, যখন কেউ এই নিয়ে আলোচনা করতো। উনি চাইতেন, অন্ধভাবেই এগুলো তার উম্মতগণ বিশ্বাস করুক। ভয় দেখাবার জন্য বলেছেন, এই নিয়ে আলোচনা করলে ধ্বংস হয়ে যাবে [215]
সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৫/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ তাকদীর নিয়ে আলোচনায় মত্ত হওয়া সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী।
২১৩৬. আবদুল্লাহ ইবন মুআবিয়া জুমাহী (রহঃ) ……. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বের হয়ে এলেন। আমরা তখন তাকদীর বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করছিলাম। তিনি অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন। এমনকি তাঁর চেহারা লাল হয়ে উঠল, তাঁর দুই কপালে যেন ডালিম নিংড়ে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি বললেনঃ এই বিষয়েই কি তোমরা নির্দেশিত হয়েছ? আর এই নিয়েই কি আমি তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি? তোমাদের পূর্ববর্তীরা যখন এ বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে তখনই তারা ধ্বংস হয়েছে। দৃঢ়ভাবে তোমাদের বলছি, তোমরা যেন এ বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত না হও। হাসান, মিশকাত ৯৮, ৯৯, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৩৩ (আল মাদানী প্রকাশনী)
এ বিষয়ে উমার, আয়িশা ও আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি গারীব। সালিহ মুররী-এর রিওয়ায়াত হিসাবে এ সূত্র ছাড়া এটি সম্পর্কে আমরা অবহিত নই, সালিহ মুররি বেশ কিছু গারীব রিওয়ায়াত রয়েছে। যেগুলির বিষয়ে তিনি একা।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
একইসাথে, তিনি মুসলিমদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন, মাথায় ঈশ্বর বা আল্লাহ সম্পর্কে নানা ধরণের প্রশ্ন আসলে উত্তর না খুঁজে সেই সব প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকা উচিত। [216] [217]
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১৯৯৩. ইবলীস ও তার বাহীনীর বর্ণনা। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, يُقْذَفُونَ তাদের নিক্ষেপ করা হবে। دُحُورًا তাদের হাকিয়ে বের করে দেয়া হবে। وَاصِبٌ স্থায়ী। আর ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, مَدْحُورًا হাকিয়ে বের করা অবস্থায়। مَرِيدًا বিদ্রোহীরূপে। بَتَّكَهُ তাকে ছিন্ন করেছে। وَاسْتَفْزِزْ তুমি ভয় দেখাও। بِخَيْلِكَ অশ্বারোহী। وَالرَّجْلُ পাদাতিকগন। এর একবচন رَاجِلٌ যেমন صَاحِبٍ এর বহুবচন صَحْبٍ আর تَاجِرٍ এর বহুবচন تَجْرٍ، – لأَحْتَنِكَنَّ অবশ্যই আমি সমূলে উৎপাটন করব। قَرِينٌ শয়তান।
৩০৪৬। ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো কাছে শয়তান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছেন? ঐ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমার প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন বিষয়টি এ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে পানাহ চায় এবং বিরত হয়ে যায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৫৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ৫৯/১১. ইবলীস ও তার বাহিনীর বর্ণনা।
৩২৭৬. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো নিকট শয়তান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? ঐ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমার প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন ব্যাপারটি এ স্তরে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায় এবং বিরত হয়ে যায়। (মুসলিম ১/৬০ হাঃ ১৩৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৪৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
দর্শন শাস্ত্র, বা ইংরেজিতে ফিলোসফি শব্দটির অর্থ হচ্ছে, “জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা”। আরো ভালভাবে বললে, মানুষের অস্তিত্ব, মহাবিশ্ব, প্রকৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, কার্যকারণ, মন এবং ভাষা সম্পর্কে সাধারণ এবং মৌলিক প্রশ্নগুলির অধ্যয়ন। মানব ইতিহাসে প্রায় সকল জ্ঞানই দর্শন থেকে উদ্ভুত। যেকোন বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখা করলে PhD ডিগ্রী দেয়া হয়, যার অর্থ ডক্টর অফ ফিলোসফি। এর অর্থ, যেকোন বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখাই আসলে দর্শনের পড়ালেখা। বস্তুতপক্ষে, দর্শন এবং যুক্তিবিদ্যাই মানুষের সকল জ্ঞানের জননী। বিশেষভাবে গণিতশাস্ত্রকে যুক্তিবিদ্যারই আরেক রূপ বলে বহু গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক সংজ্ঞায়িত করেছেন। কিন্তু এই দর্শন বা যুক্তিশাস্ত্র অধ্যয়ন সম্পর্কে ইসলামের অবস্থান কী? প্রথমে আসুন বাঙলাদেশের বর্তমান সময়ের অন্যতম আলেম ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া সাহেবের একটি আলোচনা শুনি, যেখানে উনি মুসলমানদের যুক্তিবিদ্যা বা দর্শন পড়া উচিত নাকি অনুচিত সেই বিষয়ে আলোচনা করছেন,
শারহুল আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া অত্যন্ত বিখ্যাত একটি আকীদা গ্রন্থ, যার লেখক ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী। তিনি তার বইতে এই বিষয়ে ইসলামের আকীদা কী, সালাফগণ এই বিষয়ে কী বলেছেন, সেটিও দেখে নিই [218] –
ইমাম গাজ্জালী রহিমাহুল্লাহ তার অন্যতম মূল্যবান কিতাব … -এ বলেন, প্রশ্ন হলো মানতেক ও তর্কশাস্ত্র কি জ্যোতিষ শাস্ত্রের মত নিন্দনীয়? না কি এটি মুবাহ?
এর জবাবে আমি বলবো, মানুষেরা এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে চরম বাড়াবাড়ি ও সীমা লংঘন করেছে। কেউ কেউ বলেছেন, ইলমুল কালাম ও তর্কশাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা বিদআত ও হারাম। শির্ক ছাড়া অন্যান্য সকল প্রকার পাপাচার নিয়ে আল্লাহর কাছে হাযির হওয়া ইলমে কালাম নিয়ে তার নিকট হাযির হওয়ার চেয়ে উত্তম। আবার কেউ কেউ বলেছেন, মানতেক, ইলমে কালাম ও তর্ক শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা ফরয। কেউ বলেছেন, ফরযে কেফায়া আবার কেউ বলেছেন, ফরযে আইন। শুধু তাই নয়; তারা আরো বলেছেন, এটি সর্বোত্তম আমল এবং সর্বোচ্চ আনুগত্য। এর মাধ্যত্রে তাওহীদের জ্ঞান পুর্ণরূপে অর্জিত হয় এবং এটিই আল্লাহর দীনের পথে সংগ্রামের অন্তর্ভূক্ত। ইমাম গাজ্জালী রহিমাহুল্লাহ আরো বলেন, কেউ কেউ বলেছেন, ইলমে মানতেক ও তর্কশাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা সম্পূর্ণ নিষেধ। এটিই ইমাম শাফেঈ, আহমাদ বিন হাম্বাল, সুফিয়ান সাওরী এবং সালাফদের মুহাদ্দিছদের মত। তাদের মতামতকে ইমাম গাজ্জালী স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, সালাফদের সকল মুহাদ্দিছের ঐকমত্যে এটি হারাম। তাদের থেকে এ বিষয়ে যত উক্তি এসেছে তা উপরোক্ত কথার মধ্যেই সীমিত নয়।
আলেমগণ বলেছেন, ছাহাবীগণ ইলমে কালাম, মানতেক ও তর্কশাস্ত্র সম্পর্কে চুপ থাকার কারণ হলো, তারা তাওহীদের হাকীকত সম্পর্কে ভালো করেই জানতেন এবং অন্যদের তুলনায় ইলমে কালামের পরিভাষা ও শব্দ চয়ন সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞানী ছিলেন। এ জন্যই তাদের থেকে দীনের ক্ষেত্রে কোনো বিদআত ও ক্ষতিকর জিনিস বের হয়নি। নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, هَلَكَ الْمُتَنَطِعُونَ قَالَهَا ثَلَاثًا
যারা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে, তারা ধ্বংস হোক। কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন।১৯২ অর্থাৎ দীনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার সময় বেশী বেশী ঘাটাঘাটি করা ও গভীরে প্রবেশ করা ঠিক নয়। ইলমে কালাম ও তর্কশাস্ত্র যদি দীনের অন্তর্ভুক্ত হতো, তাহলে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে সর্বাগ্রে আদেশ দিতেন এবং কালাম শাস্ত্রবিদদের প্রশংসা করতেন। অতঃপর ইমাম গাজ্জালী রহিমাহুল্লাহ আরো অনেক দলীল-
—————-
হাজারের নেছাবসমূহ হতে একটি নেছাব তাহার মার জন্য বখশাইয়া দিলাম। আমি আমার অন্তরে তা গোপন রাখছিলাম। কিন্তু ঐ যুবক তৎক্ষনাৎ বলতে লাগল চাচা! আমার মা দোযখের আগুন হতে রক্ষা পেয়েছে। কুরতুবী (রহি) বলেন: এ ঘটনা হতে আমার দু’টি ফায়দা হল। এক. সত্তর হাজার বার কালেমা তাইয়্যেবা পড়ার বরকত সম্পর্কে যাহা আমি শুনেছি তার অভিজ্ঞতা। দুই যুবকটির সত্যতার (তার কাশফ হওয়ার) একীন হইয়া গেল । দেখুন: ফাযায়েলে আমাল, ১ম খণ্ড, ১৩৫ পৃষ্ঠা, প্রথম প্রকাশ, অক্টোবর-২০০১ ইং। দারুল কিতাব, ৫০ বাংলা বাজার ঢাকা-১১০০ থেকে প্রকাশিত)
১৯২. ছহীহ মুসলিম ২৬৭০, মুসনাদে ইবনে আবী শাইবা।
আল ফিকহুল আকবর একটি আদি ইসলামি আকিদা বিষয়ক গ্রন্থ। ইমাম আবু হানিফার লিখিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অক্ষত রয়ে যাওয়া এটি অন্যতম একটি গ্রন্থ। আসুন, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবের অনুদিত এই বইটি থেকে দর্শন বিষয়ক অধ্যায়টি পড়ি। [219]
উপসংহার
এই লেখাটিতে আমরা ইসলামে বিশ্বাস এবং আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের কিছু বিষয় একত্র করেছি। আশাকরি অন্যান্য লেখার মতই এই লেখাটিকেও আমরা ক্রমান্বয়ে বর্ধিত করবো। উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটি খুবই পরিষ্কার যে, ইসলাম এবং আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য দ্বন্দ্ব এবং বিপরীতমূখী বক্তব্য। আমরা আমাদের শিশুদের কী এইসব অবৈজ্ঞানিক, মূর্খতাপ্রসূত, হাস্যকর কথা শেখাবো, নাকি আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত করবো, সেটি বিবেচনার দায় পাঠকের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি।
প্রাসঙ্গিক আরো কয়েকটি লেখা
- পৃথিবী আগে সৃষ্টি নাকি মহাকাশ?
- দুই সমুদ্রের পানি একত্রিত হয় না?
- তথাকথিত চন্দ্র দ্বিখণ্ডনের ফটোগ্রাফিক জালিয়াতি
- কোরআন এবং বীর্যের উৎস
- শুরুর দিকের মুসলিমরা কি জানতো পৃথিবী গোল?
- ইয়াজুজ মাজুজ | ইসলামী রূপকথার রাক্ষস খোক্কস
- সিদরাতুল মুনতাহা | সাত আসমানের বৃক্ষ
- মাংসে পচন ধরা কবে থেকে শুরু হয়েছিল?
- আরশ ও কুরসী সৃষ্টির বিবরণ – আল্লামা ইবনে কাসীর
- হযরত আদমের সৃষ্টি প্রসঙ্গে – ইবনে কাসীর
- কুরআন জানিয়েছে, চাঁদের নিজস্ব আলো নেই?
- ১৪০০ বছর আগেই আবিষ্কার ?
- ডাক্তার জাকির আব্দুল করিম নায়েক প্রসঙ্গে
তথ্যসূত্র
- ইসলাম কি যাচাই করার সুযোগ দেয়? [↑]
- সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিসঃ ২৫২ [↑]
- রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন), হাদিসঃ ১৩৯৯ [↑]
- Neanderthals could speak like modern humans, study suggests [↑]
- কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ৩১ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২৩ [↑]
- মো. আবদুল হালিম (মে ২০০৩)। দার্শনিক প্রবন্ধাবলি : তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ। প্রকাশকঃ বাংলা একাডেমি [↑]
- কোরআন, সূরা হুদ, আয়াত ৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৭৪২৭ [↑]
- বাইবেল, আদিপুস্তক ১ [↑][↑]
- Script: Devanagari, Kanda:AYODHYAKANDA, Sarga:110, Sloka:3 [↑]
- মহাভারত, শান্তিপপর্ব, অষ্টাধিকদ্বিশততম অধ্যায়, প্রজাপতি বিবরণ-সৃষ্টিবিস্তার [↑]
- সুনান আবু দাউদ(তাহকিককৃত), হাদিসঃ ৪৭০০ [↑]
- কোরআন, সূরা হাজ্ব, আয়াত ৪৭ [↑]
- কোরআন, সূরা সাজদা, আয়াত ৫ [↑]
- কোরআন, সূরা মাআরিজ, আয়াত ৪ [↑]
- কোরআন, সূরা আরাফ, আয়াত ৫৪ [↑]
- কোরআন, সূরা ইউনুস, আয়াত ৩ [↑]
- কোরআন, সূরা আস সাজদা, আয়াত ৪ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৭০৯, ৭১০ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, নবম খণ্ড, কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া, পৃষ্ঠা ৩৬৬, ৩৬৭ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০০ [↑]
- সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী), হাদিসঃ ৬৯৪৭ [↑][↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৭৯৭ [↑][↑]
- মায়ান ক্যালেন্ডার [↑]
- রোমান ক্যালেন্ডার [↑]
- সূরা তওবা, আয়াত ৩৬ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, পঞ্চম খণ্ড, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পৃষ্ঠা ৯২ [↑]
- কোরআন, সূরা তালাক, আয়াত ১২ [↑]
- কোরআন ৩৭ঃ ৬-১০ [↑]
- কোরআন ৬৭ঃ৫ [↑]
- Barnard, Jody A. (2012). The Mysticism of Hebrews: Exploring the Role of Jewish Apocalyptic Mysticism in the Epistle to the Hebrews. Mohr Siebeck. p. 62. ISBN 978-3-16-151881-2. Retrieved 3 June 2015 [↑]
- Horowitz, Wayne (1998). Mesopotamian Cosmic Geography. Eisenbrauns. p. 208. ISBN 0-931464-99-4. Retrieved 3 June 2015 [↑]
- শিব পুরাণ, বি. কে. চতুর্বেদী (২০০৪), ডায়মন্ড পকেট বুকস, পৃষ্ঠা ১২৪, আইএসবিএন 8171827217 [↑]
- “Angelology”. Jewish Encyclopedia. Retrieved 16 June 2015 [↑]
- Hagigah 12b [↑]
- Scholem, Gershom (1965). Jewish Gnosticism, Merkabah Mysticism, and the Talmudic Tradition. New York: Jewish Theological Seminary of America. OCLC 635020 [↑]
- ২য় করিন্থীয় ১২.২-৪ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিসঃ ৩০০ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ১৪৫ [↑]
- The Separation of Sky and Earth at Creation (II) [↑]
- সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত ৩০ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৪৩১৩ [↑]
- তাহাবী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৭ [↑]
- কোরআন ৩৫ঃ৪১ [↑]
- কোরআন ৩১ঃ১০ [↑][↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৯ [↑]
- ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ঈমান, শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) [↑]
- ফতোয়ায়ে আরকানুল ইসলাম, শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেদ আল উসাইমীন, পৃষ্ঠা ৩৭, ৩৮, ৩৯ [↑]
- কোরআন ৪১ঃ১০ [↑]
- কোরআন ৭৮ঃ৬ [↑]
- কোরআন ৭৮ঃ৭ [↑]
- রমযান মাসের ৩০ আসর, শায়েখ মুহাম্মদ ইবন সালিহ ইবন উসাইমিন, পৃষ্ঠা ২০ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬১ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৭২ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪০ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৬ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৮ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৯ [↑]
- সহীহ হাদিসে কুদসি, হাদিস নম্বরঃ ১৬১ [↑]
- সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), হাদিস নম্বরঃ ৪৮০২ [↑]
- সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), হাদিস নম্বরঃ ৪৮০৩ [↑]
- সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), হাদিস নম্বরঃ ৭৪৩৩ [↑]
- সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), হাদিস নম্বরঃ ২৮৯ [↑]
- রাতে আরশের নিচে সূর্যের যাওয়ার হাদিসটি কেন বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল? [↑]
- কুরআন হাদিস অনুসারে সূর্য কি পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে? [↑]
- নিকটবর্তী আসমানে আল্লাহ পাক [↑]
- সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৪২৪ [↑]
- শারহুল আক্বীদাহ আল-ওয়াসেত্বীয়া, মূল: ড. সালেহ বিন ফাওযান আল ফাওযান, পৃষ্ঠা ৩৩০, ৩৩১ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৪২৩ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৭০১ [↑]
- কোরআন ৮৮ঃ২০ [↑]
- কোরআন সুরা বাকারা ২:২২ [↑]
- কোরআন সুরা ত্বা-হা ২০:৫৩ [↑]
- কোরআন সুরা যারিয়া’ত ৫১:৪৮ [↑]
- কোরআন সুরা নূহ ৭১:১৯ [↑]
- কোরআন সুরা নাবা ৭৮:৬ [↑]
- কোরআন সুরা হিজর ১৫:১৯ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৪৯ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ২১৬-২১৭ [↑]
- সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ২৯২১ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৮২৮ [↑]
- Fatwa No: 92448 [↑]
- শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া, ডঃ সালেহ ফাওযান, অনুবাদ: শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী [↑]
- Anaxagoras of Clazomenae [↑]
- কোরআন ও হাদীস অনুসারে চাঁদের নিজস্ব আলো আছে [↑]
- কোরআন, সূরা ইউনুস, আয়াত ৫ [↑]
- কোরআন, সূরা আল-ফুরকান, আয়াত ৬১ [↑]
- কোরআন, সূরা নূহ, আয়াত ১৬ [↑]
- কোরআন, সূরা আল-ক্বিয়ামাহ, আয়াত ৮ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০০ [↑]
- তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৩৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৭৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬১ [↑]
- কোরআন ৫৪ঃ১ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৮১৫ [↑]
- সহিহ মুসলিম, ইসলামিক সেন্টার, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬০ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হুসাইন আল-মাদানী প্রকাশনী, হাদিস নম্বরঃ ৩২৮৯ [↑]
- সহীহ আত তিরমিযী, আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানীর তাহকীককৃত, হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০২ [↑]
- সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী), হাদিস নম্বরঃ ৬৯৬৬ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৮১৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৮১৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৩৭৭ [↑]
- নসরুল বারী, শরহে সহিহ বুখারী, নবম খণ্ড, শিবলী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৬২০[↑]
- আশ-শিফা, প্রথম খণ্ড, সনজরী পাবলিকেশন্স, ইমাম কাযী আয়ায আন্দুলুসী, পৃষ্ঠা ৫৮৯, ৫৯০ [↑]
- বোখারী শরীফ, বাংলা তর্জমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা, হামিদিয়া লাইব্রেরি লিঃ, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪২, ৩৪৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩১২৪ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯০৪ [↑]
- আশ-শিফা, প্রথম খণ্ড, সনজরী পাবলিকেশন্স, ইমাম কাযী আয়ায আন্দুলুসী, পৃষ্ঠা ৫৯৩, ৫৯৪, ৫৯৫ [↑]
- কোরআন ৩৭ঃ ৬-১০ [↑]
- কোরআন ৬৭ঃ৫ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৬২৫ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৫৭১২ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৪৬০০ [↑][↑]
- নাসার গবেষণায় লাইলাতুল কদর [↑]
- ইসলাম কিউএ এর ফতোয়া [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, একাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৫২[↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩২৮৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫৬ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৭৮০ [↑]
- হাদিস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ৫৭ [↑]
- New Mexico whiptail [↑]
- কোরআন, সূরা ইয়াসিন, আয়াত ৩৬ [↑]
- কোরআন, সূরা যারিয়াত, আয়াত ৪৯ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৬-৩৩৯ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৫ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬২২৭ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৯০০ [↑]
- সূরা আনকাবুত, আয়াত ১৪ [↑]
- কোরআন ৫৫ঃ১৫ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৮৬০ [↑]
- জ্বীন জাতির বিষ্ময়কর ইতিহাস, আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি, পৃষ্ঠা ৫০ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩১ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩২৮৬ [↑]
- কোরআন, সূরা আল ইমরান, আয়াত ৬ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪০-৪৪১ [↑]
- PARADISE LOST Inside world’s most radioactive places where people live with birth defects after nuke bomb tests by US and Russia [↑]
- Cognitiveneuropsychology (2011-09-25). “Cognitive Neuropsychology 101: The History of Neuropsychology”. Cognitive Neuropsychology 101. Retrieved 2019-07-02. [↑]
- চিকিৎসা: প্রথমবারের মত এক আমেরিকান ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা হল শূকরের হৃদপিণ্ড [↑]
- কোরআন, সূরা হুদ, আয়াত ৫ [↑]
- কোরআন, সূরা হাজ্জ, আয়াত ৪৬[↑]
- কোরআন, সূরা আ’রাফ, আয়াত ১৭৯ [↑]
- কোরআন, সূরা আন’আম, আয়াত ১২৫ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর- ৩১০ [↑]
- সহিহ মুসলিম খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ১৯৮, ১৯৯ [↑]
- সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিস নম্বরঃ ১৩ [↑]
- সহিহ মুসলিম শরীফ (প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ), মাকতাবাতুল হাদীছ প্রকাশনী, ২১ ও ২২ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৫২ [↑]
- কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ৬৫ [↑]
- কোরআন, সূরা আরাফ, আয়াত ১৬৬ [↑]
- কোরআন, সূরা মায়িদা, আয়াত ৬০ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৭৫০ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৩০ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৩২ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৮২ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬০৩ [