ইসলাম ও নারী – সর্বোচ্চ সম্মান এবং সুমহান মর্যাদা!
সূচিপত্র
- 1 ভূমিকা
- 2 জীবন্ত প্রথিত কন্যার নিয়তি
- 3 নারীই মানুষের সমস্ত দুর্দশার কারণ
- 4 নারী হচ্ছে বিপর্যয়কর
- 5 নারীর সম্পত্তির অধিকার
- 6 সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন
- 7 বহুবিবাহ ও ইসলাম
- 8 ইসলাম ও স্ত্রী প্রহার
- 9 নারীর জন্য স্বামী হচ্ছে মালিক
- 10 দেনমোহর, তালাক ও বিবাহ
- 11 অল্পবয়সী কুমারী মেয়ে
- 12 অপমানজনক আরও বক্তব্য
- 12.1 পুরুষরা নারীর থেকে শ্রেষ্ঠ
- 12.2 পুরুষের থেকে নারীর বুদ্ধি কম হয়
- 12.3 নারী নেতৃত্ব দিতে পারবে না
- 12.4 নারীর খৎনা করা
- 12.5 নারীরা অধিক জাহান্নামী
- 12.6 তিনজন ছাড়া সকল নারী অপূর্ণাঙ্গ
- 12.7 নারীর সাক্ষ্য পুরুষের অর্ধেক
- 12.8 নারীদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করতে হবে
- 12.9 নারীদের রাস্তার মাঝ দিয়ে চলা যাবে না
- 12.10 পরপুরুষের সাথে কর্কশ কণ্ঠ
- 12.11 সুগন্ধী ব্যবহারকারীরা ব্যভিচারিণী
- 12.12 সাজসজ্জা/সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি হারাম
- 12.13 জান্নাতেও বৈষম্য
- 13 দাসীর সাথে যৌনকর্ম হালাল
- 14 ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি
- 15 নারী সম্পর্কিত আরো কিছু দলিল
- 16 উপসংহার
- 17 তথ্যসূত্র
ভূমিকা
ইসলাম নারীকে কী কী সর্বোচ্চ সম্মান এবং সুমহান মর্যাদা দিয়েছে, তার বয়ান মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ এবং ওয়াজকারীদের মুখে শুনে থাকি। প্রায় প্রতিদিনই নানাভাবে এইসব ইসলামিক বক্তাগণ বলে থাকেন, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে নারীর বিন্দুমাত্র কোন অধিকার ছিল না, নারী শিশুকে জন্মানো মাত্রই জীবন্ত মাটিতে পুতে ফেলা হতো, অথবা বিক্রি করে দেয়া হতো। তাদের সম্পত্তির কোন অধিকার ছিল না, তাদের মানুষ হিসেবেই আসলে গন্য করা হতো না ইত্যাদি। সমাজে তাদের কোন রকম অধিকার কিংবা সম্মান ছিল না। একপ্রকার গৃহপালিত জীবজন্তুর মতই তাদের জীবনযাপন করতে হতো। এই সব কথা শুনে বড় ভাল লাগে, মনে হয়, ভাগ্যিস ইসলাম এসেছিল। নইলে নারীদের যে কী অবস্থাই হতো! মনে শান্তি পাই যে ইসলাম নারীকে খুব উঁচু সম্মান দিয়েছে। নারীরা তাদের সমমর্যাদা পেয়েছে।
কিন্তু একই সাথে আশ্চর্য লাগে যখন ভাবি, পৃথিবীর ইসলাম প্রধান দেশগুলোতে নারীর এই দুরবস্থা কেন? এর কারণ কী? যেই ধর্মটি নারীকে এত এত সম্মান আর সুমহান মর্যাদা দিয়ে দিলো, সেই ধর্মের মানুষেরাই কেন সব চাইতে বেশি নারী অবমাননার সাথে যুক্ত। ইসলামপন্থী মোল্লারাই কেন নারীর সম্পত্তিতে সমান অধিকারের বিরুদ্ধে সব চাইতে সোচ্চার? ওয়াজকারীরা কেন মেয়েদের ক্লাস ফোর এর বেশী পড়ালেখা করতে দিতে চাচ্ছে না? আফগানিস্তান পাকিস্তানে কেন মোল্লারা মেয়েদের স্কুলে প্রতিমাসেই বোমা মারছে! মোল্লারাই কেন সবচাইতে বেশি নিজের স্ত্রীদেরকে নির্যাতন করে! ইসলামিক দেশগুলোতে কেন একজন নারী প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী বা ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ দেখা যায় না? এই ক’দিন আগেও ইসলামী দেশগুলোতে নারীর ভোটাধিকার ছিল না, নারীকে বাইরে বের হতে হলেও তার স্বামীর বা পিতার অনুমতি লাগতো। এর নামই কী ইসলামী মর্যাদা?
এমন হতে পারে যে, এখনকার মুসলিমরা আর প্রকৃত ইসলাম পালন করছে না। সহিহ ইসলামে নারীকে যেই সম্মান দেয়া হয়েছে, মনে হচ্ছে মুসলিমরা তার থেকে দূরে সরে গেছে। কিন্তু তখন প্রশ্ন জাগে, গোটা বিশ্বে কেউ কি ইসলাম অনুসরণ করছে না? ইসলামী দেশগুলোতে নারীর চরম অমানবিক অবস্থা কিভাবে সম্ভব হচ্ছে? আর সহিহ ইসলাম যদি কেউ পালন না-ই করে থাকে, কেন করছে না? সেগুলো কী এখন আর সমাজ সভ্যতার সাথে মানানসই নয়? ব্যবহারিকভাবে অনুপযুক্ত সেই পুরনো নিয়ম নীতির তাহলে প্রয়োজনটাই বা কী? যেই আদর্শ প্রয়োগ হবার নয়, তা নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখারই বা দরকার কী?
আমরা প্রকৃত ইসলাম তথা একদম কোরআন হাদিস থেকে নারীর মর্যাদা এবং সুমহান অধিকার বিষয়ে যদি একটু দৃষ্টি দেই, তাহলেই পুরোপুরি ভিন্ন ব্যাপার স্যাপার দেখতে পাই। ইসলামপন্থীদের গলা ফাটানো নারীর সুমহান অধিকার ও মর্যাদার ব্যাপারগুলো সম্পর্কে কোরআন হাদিস আসলে কী বলে? আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে নারীর যেই অবস্থার কথা বর্ণনা করা হয়, সেটাই বা কতটা সত্য? আমরা জানি, প্রতিটি বিজয়ী বাহিনীই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ঢোল বাজাবার জন্য আগের আমল সম্পর্কে নানা ধরণের মিথ্যাচার করে। যেমন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বলে বিএনপির আমলে জনগনের জানমালের কোন নিরাপত্তা ছিল না, সব লুটপাট করা হয়েছে। আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও আগের আওয়ামী শাসন সম্পর্কে একই কথা বলে। এগুলো বলে নিজেদের শাসনকে আগের চাইতে ভাল প্রমাণের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন, বিএনপি আওয়ামী দুই আমলেই জনগনের অবস্থা খারাপই থাকে। কেউই জনগনকে সেই সুমহান মর্যাদা দেয় না। ইসলামের ক্ষেত্রেও কি একই ঘটনা ঘটেছে? ইসলাম আইয়্যামে জাহেলিয়াত সম্পর্কে যা বলে, তার কি আদৌ কোন ভিত্তি আছে?
শোনা যায় ইসলামের আবির্ভাবের আগে নাকি কন্যা শিশুদের জীবন্ত পুঁতে মেরে ফেলা হতো। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে নারী শিশুদের এভাবে জীবন্ত মাটিতে পুতে ফেলা হলে ইসলামের নবী এবং তার সাহাবাগন ১০-১৫ টা করে বিবাহ এবং যৌনদাসী রাখার মত পর্যাপ্ত নারী কোথায় পেতেন? আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগে সম্পত্তিতে বিন্দুমাত্র অধিকার না থাকলে মুহাম্মদের প্রথম স্ত্রী হযরত খাদিজা, যিনি ছিলেন বিধবা, সম্ভ্রান্ত একজন মহিলা ব্যবসায়ী, ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেই তিনি এত বিপুল সম্পদের মালিক কিভাবে হয়েছিলেন? বিধবা হবার পরেই তাকে কেন লোকজন বাজারে নিয়ে বিক্রি করে দিলো না বা দাসী বানিয়ে নিয়ে গেল না? তিনি সম্পত্তির অধিকার কিভাবে পেয়েছিলেন? ভীষণ গোলমেলে ব্যাপার স্যাপার বটে! ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেই খাদিজা যে একজন বিধবা এবং সম্ভ্রান্ত সম্মানিত ব্যবসায়ী ছিলেন, তা ইসলামী সুত্র থেকেই জানা যায়। এখন দুটো ব্যাপার হতে পারে, হয় আইয়্যামে জাহেলিয়াত আমলে নারীর যেই অবস্থানের কথা বলা হয় তা মিথ্যা, অথবা খাদিজা সম্পর্কে যা বলা হয় তা মিথ্যা। দুটো একই সাথে সত্য হতে পারে না। কারণ এই দুটো পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য। খাদিজার মত আরো অসংখ্য উদাহরণ দেখানো যেতে পারে, যারা ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে ঐ অঞ্চলে নারী হিসেবেই সম্ভ্রান্ত এবং ক্ষমতাশালী ছিলেন। এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন হিন্দ বিনতে উতবা, আরেকজন হচ্ছে আসমা বিনতে মারওয়ান। এরকম আরো অনেকেই ছিলেন। অথচ কন্যা সন্তানকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা, বা সম্পত্তিতে অধিকার বঞ্চিত করার বিশেষ কোন উদাহরণই পাওয়া যায় না। উল্টো উদাহরণ পাওয়া যায়। তাহলে আসলেই কী আইয়্যামে জাহেলিয়াত সম্পর্কে ইসলামের দাবীগুলো সত্য, নাকি সেগুলো সবই অতিরঞ্চিত কিছু কথা যা বলে ইসলামকে মহান প্রমাণের চেষ্টা করা হয়! কারণ আগের আমল সম্পর্কে অতিরঞ্চিত সমালোচনা সবসময়ই পরের আমলকে এক ধরণের বৈধতা দেয়। দুইটি খারাপ বিষয়ের তুলনা করা হলে মানুষ কম খারাপটিকেই ভাল হিসেবে গ্রহণ করে। মানুষের স্বভাব এরকমই।
জীবন্ত প্রথিত কন্যার নিয়তি
আইয়্যামে জাহেলিয়াত সম্পর্কে ইসলাম প্রচারকগণ প্রায়শই বলে থাকেন যে, ইসলাম আবির্ভাবের আগে সেই আমলে মেয়ে জন্ম নিলে পিতামাতা নাকি তাদের জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলতো। ইসলাম নাকি সেই সব মেয়েদের অধিকার দিয়ে রক্ষা করেছে! স্বাভাবিকভাবেই এইসকল কথা শুনলে মনে হয়, ইসলাম সেইসব কাফেরদের কন্যা সন্তান সম্পর্কে কতই না চিন্তিত ছিল! অথচ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী ঐ সকল জীবন্ত পুতে ফেলা কন্যাদের জাহান্নামি বলেছেন। অর্থাৎ সেইসব জীবন্ত প্রথিত মেয়েদের সম্পর্কে, যাদের কোন অন্যায়ই ছিল না, ইসলাম ঘৃণার কথাই প্রচার করেছে। নইলে তারা বিনা দোষে জাহান্নামে কেন যাবে? [1] –
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৮. মুশরিকদের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে।
৪৬৪২. ইব্রাহীম ইবন মূসা (রহঃ) ….. আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জীবন্ত প্রথিত কন্যা এবং তার মা- উভয়ই জাহান্নামী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ শা‘বী (রহঃ)
নারীই মানুষের সমস্ত দুর্দশার কারণ
পৃথিবীর প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর ওপর যখন নির্মম গণহত্যা চালানো হয়েছে কিংবা তাদের ওপর নির্যাতন করে অধিকার হরণ করা হয়েছে, সেই সময়গুলোতে সমাজের শাসক বা শক্তিশালী অংশটি সবসময় যেই কাজটি সর্বপ্রথম করে থাকে, সেটি হচ্ছে যাদের তারা নির্যাতন করবে, সেই জাতিগোষ্ঠীকে জনগণের সামনে অপরাধী বা সমস্ত সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসি বাহিনী ইহুদীদেরকে অভিযুক্ত করেছিলে তাদের সমস্ত দুঃখ দুর্দশা এবং সমস্যার জন্য। একইভাবে আপনারা এরকম চিহ্ন বর্তমান সময়েও দেখতে পাবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম এবং ম্যাক্সিকানদের তথা ইমিগ্রান্টদের আমেরিকার সমস্ত সমস্যার মূল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রচার প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েছিল, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বপুরুষ এবং স্ত্রীও আমেরিকাতে ইমিগ্রান্ট। একইভাবে আপনারা এরকম কাজ করতে অনেক শাসকদেরই দেখবেন, কোন জাতিগোষ্ঠীকে পূর্বপুরুষের কোন এক কাজের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত করে নির্যাতনের পথ প্রশস্ত করতে। কারণ একবার সমাজে তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা গেলে, জনগণের মনের ভেতর এটি ঢোকানো গেলে যে, ওরা অপরাধী এবং আমাদের সমস্যাবলীর কারণ, এরপরে তাদের ওপর নির্যাতন হোক কিংবা তাদের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হোক, জনগণ আর প্রতিবাদ করে না। নবী মুহাম্মদও একই কৌশল কাজে লাগিয়েছেন, মানুষের সকল দুর্গতি এবং দুর্দশার পেছনে বিবি হাওয়াকে, অর্থাৎ নারীজাতিকে চিহ্নিত করে [2] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আঃ)
পরিচ্ছদঃ ৬০/১ক. আল্লাহ তা‘আলার বাণী।
৩৩৩০. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একইভাবে বর্ণিত আছে। অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈল যদি না হত তবে গোশত দুর্গন্ধময় হতো না। আর যদি হাওয়া (আঃ) না হতেন তাহলে কোন নারীই স্বামীর খিয়ানত করত না।
* (৫১৮৪, ৫১৮৬) (মুসলিম ১৭/১৯ হাঃ ১৪৭০, আহমাদ ৮০৩৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৯২)
* বনী ইসরাঈল আল্লাহ তা’আলার নিকট থেকে সালওয়া নামক পাখীর গোশত খাওয়ার জন্য অবারিতভাবে পেত। তা সত্ত্বেও তা জমা করে রাখার ফলে গোশত পচনের সূচনা হয়। আর মাতা হাওয়া নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণে আদম (‘আঃ)-কে প্রভাবিত করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আসুন এই বিষয়ে একটি ওয়াজ শুনে নিই,
নারী হচ্ছে বিপর্যয়কর
“নারী হচ্ছে বিপর্যয়কর” বা “নারী হচ্ছে ফিতনা” এই ধরণের ধারণাগুলো শুধু অসত্যই নয়, একটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক এবং বৈষম্যমূলক ধারণা যা কোন সভ্য সমাজে প্রচারিত হতে পারে না। এই শব্দগুচ্ছ প্রায়ই নারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিকর স্টেরিওটাইপ এবং বৈষম্যকে স্থায়ী করতে ব্যবহৃত হয় এবং এটি সমাজে নারীদের অবদানকে ক্ষুণ্ন করে। এই ধারণাকে বিলুপ্ত করা সমাজের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য যে, “নারীরা সহজাতভাবে নিকৃষ্ট বা বিপর্যয়কর!“ নারীরা পুরুষদের থেকে অক্ষম বা নিকৃষ্ট এই বিশ্বাসটি পুরানো এবং পুরুষতান্ত্রিক সেক্সিস্ট মনোভাবের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে যা আধুনিক সভ্য সমাজের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিজ্ঞান, রাজনীতি, সাহিত্য, শিল্পকলা সহ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
এটি স্বীকার করা এবং সমাজে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, নারীরা যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয় তা বেশিরভাগ সময়ে তাদের কোন বৈশিষ্ট্যগত ত্রুটির কারণে নয়, বরং আমাদের সমাজে বহু শতাব্দী ধরে প্রবর্তিত পদ্ধতিগত বৈষম্য, পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান ধারণা এবং পক্ষপাতের কারণে। লিঙ্গ বৈষম্য এবং পক্ষপাতের কারণে নারীরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং নেতৃত্বের অবস্থানে উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হয় এবং একই কাজের জন্য প্রায়ই পুরুষদের তুলনায় কম বেতন পায়, এটি প্রায় সকল পরিসংখ্যানেই উঠে এসেছে। এছাড়াও, নারীরা যে বিপর্যয়কর, এই ধারণাটি প্রায়শই নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক এবং ক্ষতিকারক সামাজিক নিয়মগুলোকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু সমাজে, মহিলাদের জোরপূর্বক বিবাহ, অনার কিলিং এবং মহিলাদের খৎনা করা হয়, যার সবই এই ধারণার উপর ভিত্তি করে যে, মহিলারা স্বভাবগতভাবে পুরুষের চেয়ে নিকৃষ্ট, তারা নিজেদের ভাল বুঝতে পারে না, তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি এবং কঠোরভাবে পুরুষরা তাদের নিয়ন্ত্রিত করলেই তারা ভাল ও নিরাপদে থাকবে!
এটাও ভেবে দেখা অপরিহার্য যে নারীরা যে বিপর্যয়কর এই বিশ্বাস শুধুমাত্র নারীদের জন্যই নয়, পুরুষদের জন্যও ক্ষতিকর কিনা। যখন আমরা এই ধারণাটি গ্রহণ করি, সমাজে চর্চা করি যে নারীরা নিকৃষ্ট বা বিপর্যয়কর, আমরা আমাদের মেধা ও সম্ভাবনাগুলোকে সীমিত করি এবং লিঙ্গ সমতা থেকে আসা অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হই। এতে পুরুষরাও তাদের লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে বৈষম্য এবং পক্ষপাতের শিকার হয় এবং সমাজে কোন পক্ষ তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে থাকলে তার প্রভাব সকলের ওপরই পরে। ক্ষমতা, শক্তিমত্তা যখন অধিকার প্রতিষ্ঠার মাপকাঠি হয় তখন সমাজের সকলেই তার ভুক্তভোগী হয়। তাই নারীরা নিকৃষ্ট, ক্ষতিকর, ফিতনা বা বিপর্যয়কর, এই বিশ্বাসগুলো শুধুমাত্র ক্ষতিকারক স্টেরিওটাইপগুলিকে শক্তিশালী করে যা পুরুষ এবং মহিলা উভয়কেই প্রভাবিত করে। নারীরা ক্ষতিকর, বিপর্যয়কর, এই ধারণাগুলোই সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং অসত্য ধারণা যার কোনো স্থান আমাদের সভ্য সমাজে নেই। আমাদের অবশ্যই লিঙ্গ বৈষম্য এবং পক্ষপাত দূর করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং সকলের জন্য আরও ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনের জন্য লিঙ্গ সমতার প্রচার বৃদ্ধি করতে হবে। সময় এসেছে ক্ষতিকারক স্টেরিওটাইপ প্রত্যাখ্যান করার এবং নারীরা আমাদের বিশ্বে যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং চালিয়ে যাচ্ছেন তা স্বীকৃতি দেওয়ার।
আমরা প্রায়শই বিভিন্ন ইসলামিক ওয়াজগুলোতে নারীদের সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর এবং কুরুচিপূর্ণ সব বক্তব্য শুনে থাকি। যেমন ধরুন এই ওয়াজটি,
আসলেই কী এইসব কথা ইসলামেরও কথা, নাকি গুটিকয় আলেম না জেনে বা ইসলামকে অপব্যাখ্যা করে এসব বক্তব্য দিয়ে থাকেন? আসুন নবী মুহাম্মদ কী বলেছেন, তা দেখে নেয়া যাক। তিনি বলেছেন, আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিক বিপর্যয়কর আর কিছু রেখে যাবো না [3] –
সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ৩০/ কলহ-বিপর্যয়
পরিচ্ছদঃ ৩০/১৯. নারীদের সৃষ্ট বিপর্যয়
১/৩৯৯৮। উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে অধিক বিপর্যয়কর আর কিছু রেখে যাবো না।
সহীহুল বুখারী ৫০৯৬, মুসলিম ২৮৪০, ২৮৪১, তিরমিযী ২৮৮০, আহমাদ ২১২৩৯, ২১৩২২, সহীহাহ ২৭০১। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
নারীর সম্পত্তির অধিকার
পৃথিবীব্যাপী লিঙ্গ বৈষম্য দুর করার জন্য নারী পুরুষের সমান সম্পত্তি অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের একটি মৌলিক দিক। সম্পত্তি অধিকারের ধারণাটি শতাব্দী ধরে মানবাধিকার আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এতে সম্পত্তি, আবাসন এবং জমির অধিকার সহ বিভিন্ন মানবাধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও অনেক সভ্য দেশই নারী ও পুরুষের সমান সম্পত্তির অধিকার আছে তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, কিন্তু এই অধিকারগুলিকে বিশ্বজুড়ে সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত এবং বাস্তবায়িত করা নিশ্চিত করতে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। বিশেষ করে ধর্মপ্রবণ দেশগুলোতে এই অধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত কষ্টকর, কারণ ধর্মীয় বিধিবিধান এখানে একটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
সম্পত্তির অধিকার একটি সর্বজনীন মানবাধিকার, এটি মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার অন্তর্ভূক্ত। এই অধিকারটি এই নীতিতে ভিত্তি করে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির জমি সহ সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার রয়েছে এবং এই অধিকার রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাষ্ট্র কোনভাবেই কোন নাগরিকের সাথে লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করতে পারে না। বহু শতাব্দী ধরেই ধর্ম ও প্রথার নামে নারীদের সম্পত্তির অধিকারের সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটি বিশেষত পিতৃতান্ত্রিক সমাজে দেখা যায় যেখানে মহিলাদের পুরুষদের অধীনস্থ হিসাবে দেখা হয় এবং নারীদের সম্পত্তির মালিক হওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেয়। কিছু দেশে, মহিলাদের তাদের নিজস্ব সম্পত্তির মালিক হতে বা তাদের পিতামাতা বা স্বামীর কাছ থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হওয়ারও অনুমতি নেই। সম্পত্তির অধিকার না থাকলে কিংবা কম থাকলে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রতিকূলতা সহ মহিলাদের জন্য সুদূরপ্রসারী সমস্যার উদ্ভব ঘটে। লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারীর সম্পত্তির সমান অধিকার থাকাটি অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। কিন্তু ধর্মীয় বৈষম্যমূলক আইন এবং সামাজিক নিয়মাবলী, সেইসাথে আইনি এবং আর্থিক সম্পদের সুবিধা নেয়াতে পিছিয়ে থাকা, নারীদের সম্পত্তির মালিকানা এবং উত্তরাধিকারী হতে বাধা দেয়। এই বাধাগুলি প্রায়শই ধর্ম এবং অন্যান্য ধরণের বৈষম্য দ্বারাও সংঘটিত হতে পারে।
অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোর মতই ইসলামও নারীকে সম্পত্তির সমান অংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সেটি কীভাবে করে, এখানে তা আলোচনা করা হবে।
ইসলামের আগে নারীর উত্তরাধিকার
ইসলাম পূর্ব আরবে নারী কী পিতামাতার সম্পত্তিতে অধিকার পেতো? নিচে কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করছি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, সেই পৌত্তলিক আরবে ছেলে মেয়ে সব সন্তানেরই সমান সম্পত্তির অধিকার ছিল। মুহাম্মদ এসে সেটি আল্লাহর নামে বদলে ছেলের জন্য বেশি সম্পদ, আর মেয়ের জন্য তার অর্ধেক সম্পত্তির বিধান দেন। আসুন হাদিসগুলো ভালভাবে পড়ি [4] [5] [6] [7] [8] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৭/ অসিয়াত
পরিচ্ছেদঃ ১৭১১. ওয়ারিসের জন্য অসীয়াত নেই
২৫৬০। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (সেকালে) উত্তরাধিকারী হিসাবে সম্পদ পেতো সন্তান আর পিতা-মাতার জন্য ছিল অসীয়াত। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর পছন্দ মোতাবেক এ বিধান রহিত করে ছেলের অংশ মেয়ের দ্বিগুন, পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠামাংশ, স্ত্রীর জন্য (যদি সন্তান থাকে) এক অষ্টমাংশ, (না থাকলে) এক চতুর্থাংশ, স্বামীর জন্য (সন্তান না থাকলে) অর্ধেক, (থাকলে) এক চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ২৩৩১. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমাদের জন্য (৪ঃ ১২)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৪২২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৫৭৮
৪২২৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মৃত ব্যাক্তির সম্পদ ছিল সন্তানের জন্য, আর ওসীয়ত ছিল পিতামাতার জন্য। এরপর তা থেকে আল্লাহ তাআলা তাঁর পছন্দ অনুযায়ী কিছু রহিত করলেন এবং পুরুষদের জন্য মহিলার দ্বিগুন নির্ধারণ করলেন। পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য ৬ ভাগের ১ অংশ ও ৩ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন, স্ত্রীদের জন্য ৮ ভাগের ১ ও ৪ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন এবং স্বামীর জন্য ২ ভাগের ১ ও ৪ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭৩/ উত্তরাধিকার
পরিচ্ছেদঃ ২৭৯৯. সন্তানাদির বর্তমানে স্বামীর উত্তরাধিকার
৬২৮৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (প্রথমে) মাল ছিল সন্তানাদির আর ওসিয়াত ছিল পিতামাতার জন্য। কিন্তু পরে আল্লাহ তা রহিত করে দিয়ে এর চেয়ে উত্তমটি প্রবর্তন করেছেন। পূরুষের জন্য নারীদের দু’জনের সমতূল্য অংশ নির্ধারণ করেছেন। আর পিতা-মাতার প্রত্যেকের জন্য এক-ষষ্ঠাংশ নির্ধারণ করেছেন। স্ত্রীর জন্য নির্ধারণ করেছেন (সন্তান থাকা অবস্থায়) এক-অষ্টমাংশ এবং (সন্তান না থাকলে) এক-চতূর্থাংশ। আর স্বামীর জন্য (সন্তান না থাকলে) অর্ধেক আর (সন্তান থাকলে) এক-চতুর্থাংশ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৫৫/ ওয়াসিয়াত
পরিচ্ছেদঃ ৫৫/৬. ওয়ারিসের জন্য অসীয়াত নেই।
২৭৪৭. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পদ পেতো সন্তান আর পিতা-মাতার জন্য ছিল অসীয়াত। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা তাঁর পছন্দ মত এ বিধান রহিত করে ছেলের অংশ মেয়ের দ্বিগুণ, পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠাংশ, স্ত্রীর জন্য এক অষ্টমাংশ, এক চতুর্থাংশ, স্বামীর জন্য অর্ধেক, এক চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেন। (৪৫৭৮, ৬৭৩৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৫৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
আসুন এই একই বিষয়ে আরো দুইটি হাদিস পড়ি [9] [10] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ৬৫/৪/৫. ‘‘আর তোমরা পাবে অর্ধেক তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির।’’ (সূরাহ আন-নিসা ৪/১২)
৪৫৭৮. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির সম্পদ লাভ করত সন্তানরা, আর ওয়াসীয়াত ছিল পিতামাতার জন্য। অতঃপর তাত্থেকে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় পছন্দ অনুযায়ী কিছু রহিত করলেন এবং পুরুষদের জন্য মহিলার দ্বিগুণ নির্দিষ্ট করলেন। পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য ষষ্ঠাংশ ও তৃতীয়াংশ নির্ধারণ করলেন, স্ত্রীদের জন্য অষ্টমাংশ ও চতুর্থাংশ নির্ধারণ করলেন এবং স্বামীর জন্য অর্ধাংশ ও চতুর্থাংশ নির্ধারণ করলেন। [২৭৪৭] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২২০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৮৫/ ফারায়িয
পরিচ্ছেদঃ ৮৫/১০. সন্তান ও অন্যান্য ওয়ারিশগণের সাথে স্বামীর উত্তরাধিকার।
৬৭৩৯. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (প্রাথমিক অবস্থায় মৃতের ছেড়ে যাওয়া) মাল ছিল সন্তানাদির জন্য আর ওসিয়াত ছিল পিতামাতার জন্য। অতঃপর আল্লাহ্ তাত্থেকে কিছু রহিত করে দিয়ে অধিকতর পছন্দনীয়টি প্রবর্তন করেছেন। পুরুষের জন্য দু’জন নারীর অংশের সমান নির্ধারণ করেছেন। আর পিতা-মাতার প্রত্যেকের জন্য এক-ষষ্ঠাংশ নির্ধারণ করেছেন। স্ত্রীর জন্য নির্ধারণ করেছেন (সন্তানের বর্তমানে) এক-অষ্টমাংশ এবং (সন্তানের অবর্তমানে) এক-চতুর্থাংশ। আর স্বামীর জন্য (সন্তানের অবর্তমানে-) অর্ধেক আর (সন্তানের বর্তমানে) চার ভাগের একভাগ। [২৭৪৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬২৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৮৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
এই হাদিসগুলো থেকে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়, নবী মুহাম্মদের শরিয়ত প্রতিষ্ঠার আগে ছেলে এবং মেয়ে দুইজনারই সম্পত্তিতে সমান উত্তারাধিকার ছিল। মুহাম্মদ মেয়েদের জন্য সেটি কমিয়ে অর্ধেক করেছেন। তাই বোঝা যাচ্ছে, ইসলাম নারীকে সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে, কথাটি সঠিক তো নয়-ই, রীতিমত মিথ্যাচার। এবারে আসুন দেখি ইসলাম তথা কোরআন এবং হাদিস নারীকে আসলেই আর কি কি সম্মানে ভূষিত করেছে।
সম্পত্তিতে নারী পাবে অর্ধেক
ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে ছেলে মেয়ে সব সন্তানেরই ছিল সম্পত্তিতে সমান অধিকার। কিন্তু ইসলাম এসে এই নিয়ম বাতিল করে ছেলেকে বেশি, এবং মেয়ের জন্য অর্ধেক সম্পত্তির বিধান দেয়। এই বিষয়ে একটি হাদিস বর্ণনা করছি, যেখানে দেখা যাচ্ছে, সেই পৌত্তলিক আরবে ছেলে মেয়ে সব সন্তানেরই সমান সম্পত্তির অধিকার ছিল। যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। এবারে আসুন দেখি, ইসলাম এই বিষয়ে কী নতুন বিধান দিলো- [11]
আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান।
সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন
সমাজ বিজ্ঞানে অবজেক্টিফিকেশন বলা হয় যখন একজন ব্যক্তিকে একটি বস্তু বা জিনিস বা উপভোগের সামগ্রী হিসাবে বিবেচনা করে তার সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা হয়। তাকে একজন স্বতন্ত্র মানব সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনা না করে একটি অবজেক্টের সাথে তুলনা দিয়ে তার মানবিক মর্যাদার অসম্মান করা হয়। এটি সামাজিকভাবে স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে কাউকে অস্বীকার করার একটি প্রক্রিয়া, যার সাথে সেই ব্যক্তির অধিকার এবং সম্মান জড়িত। সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন হচ্ছে, একজন ব্যক্তিকে যৌন আকাঙ্ক্ষার বস্তু বা অবজেক্ট হিসেবে বিবেচনা করা, যার মাধ্যমে তাকে স্বাধীন মন, রুচি, পছন্দ অপছন্দ ইত্যাদি দিয়ে বিবেচনা না করে তাকে একটি যৌনযন্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। যার ফলাফল হিসেবে সামাজিকভাবে তার সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয় যে, এই মানুষেরা আসলে যৌনবস্তু কিংবা যৌনযন্ত্র বা অন্যকে সুখী ও আনন্দিত করাই তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য। ভিন্ন কথায় বলা যেতে পারে,
In social philosophy, objectification is the act of treating a person, as an object or a thing. It is part of dehumanization, the act of disavowing the humanity of others. Sexual objectification, the act of treating a person as a mere object of sexual desire.
আসুন দেখে নিই, ইসলামী বক্তাগণ কীভাবে নারীকে সেক্সুয়াল অব্জেক্টিফিকেশন করে থাকে,
নারী হচ্ছে শস্যক্ষেত্র
কোরআনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, নারী হচ্ছে শস্য ক্ষেত্র স্বরূপ, তাকে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করা যাবে [12]। এরকম সরাসরি নারীকে সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন সামাজিকভাবে নারীকে একটি ভোগ্যপণ্য এবং যৌনযন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য খুবই কার্যকর। নারীর অবজেক্টিফিকেশন বলতে বোঝায় একজন ব্যক্তিকে, বিশেষ করে একজন নারীকে, একটি যৌন আবেদনের বস্তু বা যৌনযন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত বা ব্যবহার করার পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক অনুশীলন। এটি বহু শতাব্দী ধরে সমাজে একটি স্থায়ী সমস্যা, যা বিভিন্ন ধর্ম, প্রথা এবং সাংস্কৃতিক নিয়ম দ্বারা বদ্ধমূল হয় যা সমাজে একজন নারীর জন্য অত্যন্ত অমর্যাদাকর এবং অসম্মানজনক। এই ধরণের বক্তব্য এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর ওপর যৌন হয়রানি, নির্যাতন এবং সহিংসতার বৃদ্ধি করে।
নারীর সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন সমাজে লিঙ্গ বৈষম্যকেও স্থায়ী করে, কারণ এটি এই ধারণাটিকে শক্তিশালী করে যে নারীরা পুরুষদের থেকে নিকৃষ্ট এবং শুধুমাত্র তাদের যৌনকর্ম ও বাচ্চা উৎপাদনের জন্য মূল্যবান। অধিকন্তু, নারীদের সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন লিঙ্গ স্টিরিওটাইপগুলিকেও শক্তিশালী করে, যেমন এই ধারণার জন্ম দেয় যে, নারী হচ্ছে পুরুষের বশ্যতা স্বীকার করবে এবং এটিই তাদের ভবিতব্য। এবং এই ধারণাটিকে শক্তিশালী করে যে মহিলারা শুধুমাত্র কিছু বিশেষ কাজের জন্য উপযুক্ত, যা তাদের শিক্ষাদীক্ষা, পেশা নির্বাচন, স্বাধীন জীবনযাপন ইত্যাদির সুযোগ সীমিত করতে পারে। নারীর অবজেক্টিফিকেশন একটি ক্ষতিকর সামাজিক সমস্যা যা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্যই সুদূরপ্রসারী পরিণতি বহন করে। এই সমস্যাটি মোকাবেলা করার জন্য, সর্বক্ষেত্রে নারীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সম্মানজনক সমাজ তৈরি করতে হবে, যেখানে নারীরা কেবল তাদের শরীর নয়, মানুষ হিসেবেই সম্মান ও আত্মমর্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করতে পারবে।
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যে প্রকারে ইচ্ছে গমন কর এবং নিজেদের জন্য ভবিষ্যতের বন্দোবস্ত কর এবং আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখ যে, তোমাদেরকে তাঁর কাছে হাজির হতে হবে। আর বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।
— Taisirul Quran
তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত্র স্বরূপ; অতএব তোমরা যখন যেভাবে ইচ্ছা স্বীয় জীবনের জন্য ব্যবহার কর এবং নিজেদের আগামী দিনের জন্য ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় কর ও জেনে রেখ, একদিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত হবে। আর বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।
— Sheikh Mujibur Rahman
তোমাদের স্ত্রী তোমাদের ফসলক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেত্রে গমন কর, যেভাবে চাও। আর তোমরা নিজদের কল্যাণে উত্তম কাজ সামনে পাঠাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় তোমরা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে । আর মুমিনদেরকে সুসংবাদ দাও।
— Rawai Al-bayan
তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছে [১] গমন করতে পার। আর তোমরা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু করো [২] এবং আল্লাহ্কে ভয় করো। এবং জেনে রেখো, তোমরা অবশ্যই আল্লাহ্র সম্মুখীন হবে। আর মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে আসুন আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসূফের একটি ভিডিও দেখে নেয়া যাক,
মানুষের জন্য সুশোভিত নারী?
কোরআনের একটি আয়াতে বলা হয়েছে, “মানুষের” জন্য পৃথিবীকে সুশোভিত করা হয়েছে নারী দ্বারা। অর্থাৎ, কোরআনের লেখক মানুষ বলতে শুধুমাত্র পুরুষ মানুষকেই বোঝেন, এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই বলেন যে,দুনিয়ার উপভোগ্য বা সুশোভিত করার জন্য তাদের জন্য দেয়া হয়েছে নারী। এই ধরণের বক্তব্য নারীর জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং মর্যাদাহানীকর। আসুন আয়াতটি পড়ে দেখি, [13]
মানুষের কাছে সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান, স্ত্তপীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভান্ডার, চিহ্নযুক্ত অশ্বরাজি, গৃহপালিত পশু এবং শস্যক্ষেত্র, এসব পার্থিব জীবনের সম্পদ, আর আল্লাহ -তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম আশ্রয়স্থল।
— Taisirul Quran
মানবমন্ডলীকে রমণী, সন্তান-সন্ততি, পুঞ্জীকৃত স্বর্ণ ও রৌপ্যভান্ডার, সুশিক্ষিত অশ্ব ও পালিত পশু এবং শস্য ক্ষেত্রের আকর্ষণীয় বস্ত্ত দ্বারা সুশোভিত করা হয়েছে, এটা পার্থিব জীবনের সম্পদ এবং আল্লাহর নিকট রয়েছে শ্রেষ্ঠতম অবস্থান।
— Sheikh Mujibur Rahman
মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে প্রবৃত্তির ভালবাসা- নারী, সন্তানাদি, রাশি রাশি সোনা-রূপা, চিহ্নত ঘোড়া, গবাদি পশু ও শস্যক্ষেত। এগুলো দুনিয়ার জীবনের ভোগসামগ্রী। আর আল্লাহ, তাঁর নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।
— Rawai Al-bayan
নারী, সন্তান, সোনা-রুপার স্তূপ, বাছাই কড়া ঘোড়া, গবাদি পশু এবং খেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য বস্তু [১]। আর আল্লাহ্, তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
নারী হচ্ছে ভোগ্যপণ্য
কোরআনে বলা হচ্ছে, নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষের জন্য, পুরুষের বিনোদন এবং অবসন্নতা কাটাবার জন্য। এটি নারীর জন্য চরমভাবে অমর্যাদাকর। নারীর সৃষ্টি যদি পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য হয়ে থাকে, তা অবশ্যই নারীকে একটি স্বাধীন এবং স্বাভাবিক সত্ত্বা হিসেবে চিহ্নিত করে না, বরঞ্চ পুরুষের জন্য একটি উপভোগ্য বস্তু হিসেবে নির্দেশ করে, একটি যৌনযন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে [14] –
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন আর তাত্থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। যখন সে স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হয় তখন সে লঘু গর্ভধারণ করে আর তা নিয়ে চলাফেরা করে। গর্ভ যখন ভারী হয়ে যায় তখন উভয়ে তাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ডেকে বলে, ‘যদি তুমি আমাদেরকে (গঠন ও স্বভাবে) ভাল সন্তান দান কর তাহলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব।’
— Taisirul Quran
তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই ব্যক্তি হতেই তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যেন সে তার নিকট থেকে প্রশান্তি লাভ করতে পারে। অতঃপর যখন সে তার সাথে মিলনে প্রবৃত্ত হয় তখন সেই মহিলাটি এক গোপন ও লঘু গর্ভ ধারণ করে, আর ওটা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকে। যখন তার গর্ভ গুরুভার হয় তখন তারা উভয়েই তাদের রবের কাছে প্রার্থনা করেঃ আপনি যদি আমাদেরকে সৎ সন্তান দান করেন তাহলে আমরা আপনার কৃতজ্ঞ বান্দা হব।
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে বানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করে। অতঃপর যখন সে তার সঙ্গিনীর সাথে মিলিত হল, তখন সে হালকা গর্ভ ধারণ করল এবং তা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকল। অতঃপর যখন সে ভারী হল, তখন উভয়ে তাদের রব আল্লাহকে ডাকল, ‘যদি আপনি আমাদেরকে সুসন্তান দান করেন তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব’।
— Rawai Al-bayan
তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন যাতে সে তার কাছে শান্তি পায় [১]। তারপর যখন সে তার সাথে সংগত হয় তখন সে এক হালকা গর্ভধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। অতঃপর গর্ভ যখন ভারী হয়ে আসে তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, ‘যদি আপনি আমাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন তাহলে আপানার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।’
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
একইসাথে পড়ুন নিচের হাদিসটি [15] –
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান
পরিচ্ছদঃ ৯. মহিলাদের সম্পর্কে ওসিয়ত
৩৫১২। মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবন নুমায়র আল-হামদানী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়া উপভোগের উপকরণ (ভোগ্যপণ্য) এবং দুনিয়ার উত্তম উপভোগ্য উপকরণ পুণ্যবতী নারী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
অনেক মুসলিম প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, বনলতা সেন কবিতাতেও তো জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন। এটিও কী নারীকে অবজেক্টিফাই করা? কিন্তু জীবনানন্দ দাশের কবিতা কিংবা অন্য কোন কবিতা আমাদের জন্য কোন আইন কিংবা জনগণের নৈতিকতার উৎস হিসেবে বিবেচ্য নয়। জীবনানন্দ দাশও সামগ্রিকভাবে নারীদের শান্তি দেয়ার বস্তু হিসেবে কোথাও উল্লেখ করেননি। বিশেষ একজন নারী সম্পর্কে তার মনের ভাব প্রকাশ আর সমস্ত নারীকে উপভোগের বস্তু বলা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। সেইসাথে, কোরআন হাদিসের বাণী মুসলিমদের নীতি নৈতিকতার উৎস হিসেবে বিবেচিত। এরকম গ্রন্থ তো কোন ব্যক্তির লিখিত কবিতার বইয়ের সাথে তুলনীয় নয়। আসুন ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিবের লেখা নবীদের কাহিনী বই থেকে এই বিষয়ে একটি আলোচনা পড়ি, যেখানে বলা হচ্ছে যে, ফেরেশতাগণ সিজদা করেছিল আদমকে, হাওয়াকে নয়। কারণ হাওয়া কোন পৃথক স্বাধীন সৃষ্টি ছিল না। যার অর্থ হচ্ছে, নারী কোন স্বাধীন সত্ত্বাই নয়, বরঞ্চ আসল সৃষ্টি হচ্ছে আদম [16] –
এবারে আসুন তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে পড়ি, যেখানে আসলে হাওয়ার মুখ থেকে বর্ণনা করানো হচ্ছে যে, নারীর সৃষ্টিই হয়েছে পুরুষের যৌন তৃপ্তির জন্য [17] –
নারী হচ্ছে বাঁকা
নবী মুহাম্মদ বলেছেন, নারী হচ্ছে বাঁকা [18] [19], একে সোজা করা অসম্ভব, তাই কৌশলে এর কাছ থেকে উপকার হাসিল করতে হবে। অন্যান্য সকল মানুষের মতই নারীদেরও লিঙ্গের ভিত্তিতে নয়, তাদের স্বতন্ত্র চরিত্র এবং কর্মের ভিত্তিতে বিচার করা উচিত। এটা স্বীকার করা জরুরি যে, প্রায় সকল ধর্মেই নারীর প্রতি কুসংস্কার এবং বৈষম্য ইতিহাস জুড়ে বিস্তৃত ছিল, যা মানব সমাজকে একটি প্রতিক্রিয়াশীল ব্যবস্থার দিকে পরিচালিত করেছে যা মৌলিক মানবাধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
“নারীরা বাঁকা বা কুটিল” এই বিশ্বাসটি কেবল ভিত্তিহীন নয় বরং ক্ষতিকারক স্টেরিওটাইপগুলিকেও যা নারীর প্রতি বৈষম্য, হয়রানি এবং সহিংসতায় অবদান রাখে। এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধারণা তৈরি করে যে, নারীরা সহজাতভাবে অবিশ্বস্ত, তারা মিথ্যাবাদী এবং তারা কুটিল স্বভাবের। এই ধরনের বিশ্বাস নারীদের পুরুষদের তুলনায় ভিন্ন এবং প্রায়শই উচ্চ শ্রেণীর মানুষ হিসেবে সমাজে পরিচিত করে, যা তাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হওয়া আরও কঠিন করে তোলে। তদুপরি, এই স্টেরিওটাইপটি এই মিথ্যা ধারণার উপর ভিত্তি করে যে মহিলারা কোনওভাবে পুরুষদের থেকে স্বভাবতই আলাদা, যা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত নয়। ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য তাদের অনন্য অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিত্ব এবং পরিবেশের কারণে হয়, তাদের লিঙ্গ নয়। এই ধরনের ভিত্তিহীন অনুমানকে চ্যালেঞ্জ করা এবং লিঙ্গ সমতার প্রচার করা গুরুত্বপূর্ণ।
একইসাথে, “নারীরা বাঁকা বা কুটিল” এই বিশ্বাস সহ ক্ষতিকারক স্টেরিওটাইপ এবং কুসংস্কার প্রত্যাখ্যান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তে, আমাদের লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল ব্যক্তির জন্য অন্তর্ভুক্তি, সম্মান এবং সমান সুযোগের প্রচারের জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। এতে করে আমরা বৈষম্য ও কুসংস্কারমুক্ত হয়ে আরও ন্যায়পরায়ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান
পরিচ্ছদঃ ৯. মহিলাদের সম্পর্কে ওসিয়ত
৩৫১৩। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নারী পাজরের হাড়ের ন্যায় (বাঁকা)। যখন তুমি তাকে সোজা করতে যাবে তখন তা ভেঙ্গে ফেলবে আর তার মাঝে বক্রতা রেখে দিয়েই তা দিয়ে তুমি উপকার হাসিল করবে।
যুহায়র ইবনু হারব ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … (যুহরীর ভ্রাতুষ্পুত্র তার চাচা যুহরীর সুত্রে) (উপরোক্ত সনদের ন্যায়) ইবনু শিহাব (রহঃ) সুত্রে অবিকল অনুরূপ রিওয়ায়াত করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
নারী অশুভ বা নারীতে অমঙ্গল রয়েছে
“নারীরা অশুভ বা অমঙ্গল” এই বিশ্বাসটি কেবল ভিত্তিহীন নয় বরং ক্ষতিকারক স্টেরিওটাইপগুলিকে স্থায়ী করে যা নারীর প্রতি বৈষম্য, হয়রানি এবং সহিংসতায় অবদান রাখে। এই ধরনের বিশ্বাস শুধুমাত্র আপত্তিকর নয়, অসত্য ও অন্যায্যও বটে। এই ধরণের স্টেরিওটাইপ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ব্যবহার করা হয়েছে নারীদের দমন ও পরাধীনতাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য। মহিলাদের প্রলুব্ধকারী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে যারা পুরুষদের প্রলুব্ধ করে, ডাইনি হিসাবে যারা পুরুষদের ওপর জাদু করা কিংবা শরীর ব্যবহার করে তাদের প্রলুব্ধ করার চিত্রায়ন অত্যন্ত অমর্যাদাকর। এতে নারীরা অবিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, যারা সর্বদা পুরুষদের ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করে। এই চিত্রগুলি কেবল অসম্মানজনক ও অন্যায্য নয়, সম্পূর্ণ অসত্যও বটে।
নারীরা অশুভ বা পুরুষের চেয়ে ভিন্ন, এই ধারণাটি এই মিথ্যা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গোরে ওঠে যেখানে নারীরা কোনো না কোনোভাবে পুরুষদের থেকে স্বভাবতই ভিন্ন প্রাণী হিসেবে চিত্রিত করে, যা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত নয়। ব্যক্তিদের মধ্যে পার্থক্য তাদের কর্ম, জীবনাচরণ, অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিত্ব এবং পরিবেশের কারণে হয়, তাদের লিঙ্গ নয়। এই ধরণের ক্ষতিকারক স্টেরিওটাইপ নারীদের প্রান্তিককরণ এবং নিপীড়নে অবদান রাখে, সমাজে তাদের অগ্রগতির সুযোগ সীমিত করে।
তদুপরি, এই বিশ্বাস কেবল অন্যায্য নয়, অযৌক্তিকও বটে। কিছু ব্যক্তির ক্রিয়াকলাপের ভিত্তিতে একটি সম্পূর্ণ লিঙ্গ বিচার করা কেবল অন্যায় নয়, অযৌক্তিকও। এই ধরণের ক্ষতিকারক স্টেরিওটাইপ এবং কুসংস্কার প্রত্যাখ্যান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পরিবর্তে, আমাদের লিঙ্গ বৈষম্য কমাবার জন্য লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল ব্যক্তির জন্য অন্তর্ভুক্তি, সম্মান এবং সমান সুযোগের প্রচারের জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত। এতে করে আমরা বৈষম্য ও কুসংস্কারমুক্ত হয়ে আরও ন্যায়পরায়ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পারি। একটি উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলতে আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে যেখানে নারীরা তাদের প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদার সাথে আচরণ করা হয়।
কিন্তু এই বিষয়ে ইসলামের অবস্থান কী? মুহাম্মদ বলেছেন, অমঙ্গল তিন বস্তুর মধ্যে স্ত্রীলোক, গৃহ ও পশুতে [20] [21] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৬/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ৭৬/৪৩. পশু-পাখি তাড়িয়ে শুভ-অশুভ নির্ণয়।
৫৭৫৩. ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ছোঁয়াচে ও শুভ-অশুভ বলতে কিছু নেই। অমঙ্গল তিন বস্তুর মধ্যে স্ত্রীলোক, গৃহ ও পশুতে।[1] [২০৯৯; মুসলিম ৩৯/৩৪, হাঃ ২২২৫, আহমাদ ৪৫৪৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২২৯)
[1] কোন কোন স্ত্রীলোক স্বামীর অবাধ্য হয়। আবার কেউ হয় সন্তানহীনা। কোন গৃহে দুষ্ট জ্বিনের উপদ্রব দেখা যা, আবার কোন গৃহ প্রতিবেশীর অত্যাচারের কারণে অশান্তিময় হয়ে উঠে। গৃহে সালাত আদায় ও যিকর-আযকারের মাধ্যমে জ্বিনের অমঙ্গল থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কোন কোন পশু অবাধ্য বেয়াড়া হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪০/ সালাম
পরিচ্ছদঃ ৩৩. কুলক্ষণ, সুলক্ষণ, ফাল ও সম্ভাব্য অপয়া বিষয়বস্তুর বিবরণ
৫৬১৩। আহমদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হাকাম (রহঃ) … ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ কোন কিছুতে অশুভ কিছু যদি থাকে, তবে তা হবে ঘোড়া, বাড়ি ও নারীতে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
নারী, গাধা এবং কালো কুকুর
মুহাম্মদ বলেছেন, স্ত্রীলোক, গাধা ও কালো কুকুর অতিক্রম করলে সালাতের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যাবে [22] [23] [24] –
বুলুগুল মারাম
অধ্যায়ঃ পর্ব – ২ঃ সালাত
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৪. সালাত আদায়কারী ব্যক্তির সুতরা বা আড় – সালাত বিনষ্টকারী বিষয়সমূহের বর্ণনা
২৩১. আবূ যার গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত আদায় করার সময় যদি উটের পালানের শেষাংশের কাঠির পরিমাণ একটা সুতরাহ দেয়া না হয় আর উক্ত মুসল্লীর সম্মুখ দিয়ে (প্রাপ্ত বয়স্কা) স্ত্রীলোক, গাধা ও কালো কুকুর অতিক্রম করলে সালাত (এর-একাগ্রতা) নষ্ট হয়ে যাবে। এটা একটা দীর্ঘ হাদীসের খণ্ডাংশ’। তাতে একস্থানে আছেঃ কাল কুকুর হচ্ছে শয়তান।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ৫/ সলাত কায়িম করা ও নিয়ম-কানুন
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৫/৩৮. যা সলাত নষ্ট করে।
৬/৯৫২। আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযাসাল্লাম বলেন: সালাতীর সামনে শিবিকার খুঁটির ন্যায় কোন জিনিস না থাকলে নারী, গাধা ও কালো বর্ণের কুকুর তার সালাত নষ্ট করে। অধস্তন রাবী বলেন, আমি বললাম, লাল বর্ণের কুকুর থেকে কালো বর্ণের কুকুরের পার্থক্য কি? তিনি বলেন, তুমি আমাকে যেরূপ জিজ্ঞেস করলে আমিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তদ্রূপ জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেনঃ কালো কুকুর হল শয়তান।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: মুসলিম ৫১০, তিরমিযী ৩৩৮, নাসায়ী ৭৫০, আবূ দাঊদ ৭০২, আহমাদ ২০৮১৬, ২০৮৩৫, ২০৮৭০, ২০৯১৪, ২০৯২০; দারিমী ১৪১৪। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবী দাউদ ৬৯৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৯/ কিবলা
পরিচ্ছদঃ ৭/ নামাযের সামনে সুতরাহ না থাকলে, যাতে নামায নষ্ট হয় আর যাতে নষ্ট হয় না।
৭৫১। আমর ইবনু আলী (রহঃ) … আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করার জন্য দাঁড়ায়, তখন সে নিজেকে আড়াল করে নেবে যদি তার সামনে হাওদার হেলান কাঠের মত কিছু থাকে। যদি তার সামনে হাওদার হেলান কাঠের মত কিছু না থাকে, তাহলে তার সালাত নষ্ট করবে নারী- গাধা এবং কাল কুকুর। আমি বললাম, লাল ও হলুদে কুকুরের তুলনায় কালো কুকুরের অবস্থা কি?। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করেছিলাম, যেমন তুমি আমাকে প্রশ্ন করেছ। তখন তিনি বললেনঃ কালো কুকুর শয়তান।
সহিহ, ইবনু মাজাহ হাঃ ৯৫২, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ১০২৯
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এবারে আসুন দেখি, এই ধরণের হাদিসগুলো বাঙলাদেশের ইসলামপন্থী আলেমদের মধ্যে কী প্রভাব ফেলেছে, যার কারণে তারা নারীদের কুত্তির সাথে তুলনা দিতে একটুও দ্বিধা করে না,
বহুবিবাহ ও ইসলাম
ইসলাম ধর্ম পুরুষকে শুধু বহু বিবাহের অধিকারই দেয় না, বরঞ্চ তাকে উৎসাহিত করে। ইসলামে বহুবিবাহের এই প্রথাকে জায়েজ করার জন্য অনেক ইসলাম প্রচারকই দাবী করে থাকেন যে, পূর্বে পুরুষেরা নাকি অগণিত বিবাহ করার সুবিধা পেতো, ইসলামই নাকি পুরুষের এই অগণিত বিবাহকে নিষিদ্ধ করে চারটির মধ্যে একে সীমিত করেছে। যা একেবারেই ডাহা মিথ্যাচার। কারণ ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেই পৌত্তলিক সমাজে মুহাম্মদের সবচাইতে বড় যারা শত্রু ছিলেন, তারা কেউই অগণিত বিবাহ করেননি। যেমন ধরুন, মক্কায় মুহাম্মদের সবচাইতে বড় শত্রু ছিলেন আবু লাহাব এবং আবু জেহেল। যতদূর জানা যায়, আবু লাহাবের এক বা দুইজন স্ত্রী ছিল, যাদের একজনার নাম উম্মে জামিল। আবু জেহেলের দুইজন স্ত্রী ছিলেন, যাদের নাম মুজালিদা বিনতে আমর এবং আরওয়া বিনতে আবি আল-আস। এদের কারোরই অসংখ্য স্ত্রী ছিল না। এমনকি, মুহাম্মদের চাচা আবু তালিবেরও ছিল একজন স্ত্রী, যার নাম ফাতিমা বিনতে আসাদ। এদের কারোরই অগণিত স্ত্রী ছিল না। কিন্তু ইসলাম আবির্ভাবের পরে লক্ষ্য করুন, মুহাম্মদের ছিল অনেক স্ত্রী। চারজন খলিফা এবং পরবর্তী সময়ের বেশিরভাগ সাহাবিরই ছিল একাধিক স্ত্রী, এবং প্রচুর সংখ্যক যৌনদাসী। তাহলে ইসলামিস্টদের এইসব দাবী যে কতটা মিথ্যা, তা সহজেই অনুমেয়।
একইসাথে, আমরা যদি প্রাচীন রোম এবং গ্রীসের সভ্যতাগুলো এবং তাদের আইনগুলো পর্যালোচনা করে দেখি, তাহলে দেখা যায়, সেই প্রাচীন আমলেই পুরুষের বহুবিবাহকে রোমান সাম্রাজ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, এমনকি শাসকরাও বহুবিবাহ করতে পারতো না। আসুন কিছু রেফারেন্স যাচাই করে দেখা যাক, [25] –
কোন সুনির্দিষ্ট দলিল প্রমাণ না থাকার পরেও অনেক মুসলিমই খুব গর্বের সাথে দাবি করেন যে, ইসলামের পূর্বে নাকি যতখুশি স্ত্রী রাখার নিয়ম ছিল। ইসলাম এসেই প্রথম স্ত্রীর সংখ্যা চারে সীমাবদ্ধ করে দেয়, যেটাকে ইসলামের অনুসারিগণ খুব বিশাল নারী অধিকার বলে দাবী করে। চার স্ত্রী রাখা কীভাবে নারী অধিকারের প্রমাণ দেয়, তা আমার জানা নেই, কিন্তু মুসলিমদের এই দাবিটিও নোংরা মিথ্যাচার। কারণ মুহাম্মদ এই নিয়মটি শুধুমাত্র কপি করেছেন, ইহুদি ধর্ম থেকে। আরব পৌত্তলিকদের মধ্যে যতখুশী বহুবিবাহের প্রচলন ছিল বটে, কিন্তু ইহুদিদের মধ্যে বহু পূর্ব থেকেই স্ত্রীর সংখ্যা সর্বোচ্চ চারে সীমাবদ্ধ ছিল। আসুন ইহুদি ধর্মে সর্বোচ্চ চার স্ত্রী রাখার নিয়মটি জেনে নিই। উল্লেখ্য, ইহুদি ধর্মের তালমুদে এটিও বর্ণিত আছে যে, সামর্থ্য থাকলেই শুধুমাত্র একাধিক স্ত্রী রাখা যাবে। যেটিও ইসলাম সরাসরি কপি করেছে। ইহুদিদের ব্যাবিলনীয় তালমুদের ইংরেজি অনুবাদ থেকে সরাসরি নিচে দেয়া হলো [26], এখানে টিকা ৫ লক্ষ্য করুন –
And is he allowed? – To marry four wives.
এবারে ব্যবিলনীয় তালমুদের 65a ভার্সে চলে যাই, [27]
Raba said: A man may marry wives in addition to his first wife; provided only that he possesses the means to maintain them
পুরুষের বহুবিবাহ হল একাধিক পত্নী রাখার একটি পুরনো ও পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি, যা বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন পুরুষ শাসিত সমাজে চলে আসছে। কিছু সংস্কৃতিতে, কোন বিশেষ লিঙ্গের মানুষের বহুবিবাহকে ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়, এমনকি উত্সাহিত করা হয়। কিন্তু সভ্য সমাজে এটি অবৈধ এবং অনৈতিক বলে বিবেচিত হয়। সাংস্কৃতিক নিয়ম এবং বিশ্বাস নির্বিশেষে, শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য বহুবিবাহের অধিকার একটি ক্ষতিকারক এবং বিপজ্জনক সামাজিক অনুশীলন যা নিরুৎসাহিত করা উচিত।
প্রথম এবং সর্বাগ্রে, বহুবিবাহ লিঙ্গ বৈষম্য এবং নারীর সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশনকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে। বহুবিবাহের সম্পর্কের ক্ষেত্রে, একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকে, যারা আসলে পুরুষ মালিকের অধীনস্ত কিছু দাসী হিসেবেই বিবেচিত হয়। যাদের নিজেদের ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষার তেমন কোন মূল্য থাকে না, যারা শুধুমাত্র তাদের স্বামীকে সুখ দেয়া, তার শারীরিক ও মানসিক চাহিদা পূরণ করবে বলে আশা করা হয়। এরকম সমাজে নারীকে একটি বস্তু এবং নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক সত্ত্বা হিসেবে কল্পনা করা হয়, যেখানে নারীরা তাদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। বহুবিবাহ এই ধারণাকে শক্তিশালী করে যে নারীরা পুরুষের অধীনস্থ এবং শুধুমাত্র তাদের আনন্দ ও সন্তুষ্টির জন্যই তাদের প্রয়োজন।
তাছাড়া বহুবিবাহ স্ত্রীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও ঈর্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করে। বহুগামী সম্পর্কের ক্ষেত্রে, প্রতিটি স্ত্রীকে স্বামীর মনোযোগ এবং স্নেহের জন্য প্রতিযোগিতা করতে হয়, যা হিংসা, বিরক্তি এবং তিক্ততার অনুভূতির দিকে পরিচালিত করে। এই প্রতিযোগিতার ফলে মানসিক এবং মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতনও হতে পারে, কারণ স্বামী একজন স্ত্রীকে অন্য স্ত্রীর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে বা তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে।বহুবিবাহ নারীদের অর্থনৈতিক ও আর্থিক শোষণের দিকেও নিয়ে যায়। বহুবিবাহ সম্পর্কের ক্ষেত্রে, মহিলারা আর্থিকভাবে তাদের স্বামীর উপর নির্ভরশীল থাকে এবং তাদের নিজস্ব সম্পদের উপর স্বায়ত্তশাসন বা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এটি একটি অসম লিঙ্গ বৈষম্যপূর্ণ সমাজ তৈরি করে যেখানে নারীরা নির্যাতন ও শোষণের শিকার হয়। অধিকন্তু, একাধিক স্ত্রী এবং সন্তানদের যত্ন নেওয়ার ভার কেবলমাত্র স্বামীর উপরই বর্তায়, যার ফলে আর্থিক চাপ এবং দারিদ্র্য স্থায়ী হয়।
বহুবিবাহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যারও অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকলে মহিলারা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ, সেইসাথে শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন যৌন সংক্রমণ এবং সন্তানের জন্ম দেয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সম্মুখীন হন। বহুবিবাহ আন্তঃপ্রজন্মীয় দারিদ্র্যকেও স্থায়ী করে এবং অসমতা ও নিপীড়নের চক্রকে স্থায়ী করে। পুরুষদের জন্য বহুবিবাহ একটি ক্ষতিকর এবং বিপজ্জনক অভ্যাস যা আধুনিক সভ্য সমাজে কার্যত নিষিদ্ধ। কারণ এটি সরাসরিই লিঙ্গ বৈষম্য, নারীর সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন এবং অর্থনৈতিক শোষণকে স্থায়ী করে।
একইসাথে চারজন স্ত্রী রাখা যাবে
একজন পুরুষ একই সাথে চার চারজন স্ত্রী রাখতে পারবে, অগণিত দাসী রেখে সকল দাসীর সাথে যৌনকর্মও করতে পারবে। শুধু তাই নয়, বেহেশতেও সে পাবে ৭২ চির যৌবনা হুর। কিন্তু নারী পৃথিবীতে একটিই স্বামী রাখতে পারবে। এবং বেহেশতে সে হবে তার পুন্যবান স্বামীর হুরবাহিনীর সর্দার্নী [28]।
যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, (নারী) ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিবাহ কর, কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি।
— Taisirul Quran
আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবেনা তাহলে নারীদের মধ্য হতে তোমাদের পছন্দ মত দু’টি, তিনটি কিংবা চারটিকে বিয়ে করে নাও; কিন্তু যদি তোমরা আশংকা কর যে, তাদের সাথে ন্যায় সঙ্গত আচরণ করতে পারবেনা তাহলে মাত্র একটি অথবা তোমাদের ডান হাত যার অধিকারী (ক্রীতদাসী); এটা আরও উত্তম; এটা অবিচার না করার নিকটবর্তী।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীমদের ব্যাপারে তোমরা ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দু’টি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি ভয় কর যে, তোমরা সমান আচরণ করতে পারবে না, তবে একটি অথবা তোমাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে। এটা অধিকতর নিকটবর্তী যে, তোমরা যুলম করবে না।
— Rawai Al-bayan
আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি [১] সুবিচার করতে পারবে না [২], তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন বা চার [৩]; আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না [৪] তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর। এতে পক্ষপাতিত্ব [৫] না করার সম্ভাবনা বেশী।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
বহুবিবাহকে উৎসাহ দেয়া
আজকাল অনেকেই দাবী করেন যে, ইসলামে চার বিবি একত্রে রাখার কথা বলা হলেও, বহুবিবাহকে আল্লাহ এবং নবী নাকি নিরুৎসাহিত করেছেন! অথচ, হাদিসে বহুবিবাহের বিষয়ে উৎসাহ দেয়া হয়েছে [29] [30] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৪/ বিয়ে-শাদী
পরিচ্ছেদঃ ২৪২৯. বহুবিবাহ
৪৬৯৯। আলী ইবনু হাকাম (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি শাদী করেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, শাদী কর। কেননা, এই উম্মতের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি, তাঁর অধিক সংখ্যক বিবি ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬৭/ বিয়ে
পরিচ্ছেদঃ ৬৭/৪. বহুবিবাহ
৫০৬৯. সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, বিয়ে কর। কারণ, এই উম্মাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির অধিক সংখ্যক স্ত্রী ছিল। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)
এবারে আসুন বাঙলাদেশের এক আলেমের বক্তব্য শুনি,
তবে নবীর মেয়ের বেলায় ভিন্ন নিয়ম
হযরত মুহাম্মদ নিজে অনেকগুলো বিবাহ করেছেন, দাসীর সাথে সহবত করেছেন। এবং প্রায়শই বিবি দাসী এদের নিয়ে রীতিমত ঝগড়াঝাঁটি হয়ে গেছে, যা সামাল দিতে আল্লাহপাকের হুমকিধামকি সহ আয়াত পর্যন্ত নাজিল করতে হয়েছে। নবী মুহাম্মদ আয়শাকে বেশি ভালবাসতেন যেটি সর্বজনবিদিত। নিজে এতগুলো বিয়ে করলেও, নিজের মেয়ের জামাইকে কিন্তু তিনি আর কোন বিয়ে করতে দেন নি [31] [32]।
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৪/ বিয়ে-শাদী
পরিচ্ছদঃ ২৫৩৩. কন্যার মধ্যে ঈর্ষা সৃষ্টি হওয়া থেকে বাধা প্রদান এবং ইনসাফমূলক কথা
৪৮৫০। কুতায়বা (রহঃ) … মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বরে বসে বলতে শুনেছি যে, বনি হিশাম ইবনু মুগীরা, আলী ইবনু আবূ তালিবের কাছে তাদের মেয়ে শাদী দেবার জন্য আমার কাছে অনুমতি চেয়েছে; কিন্তু আমি অনুমতি দেব না, আমি অনুমতি দেব না, আমি অনুমতি দেব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আলী ইবনু আবূ তালিব আমার কন্যাকে তালাক দেয় এবং এর পরেই সে তাদের মেয়েকে শাদী করতে পারে। কেননা, ফাতেমা হচ্ছে আমার কলিজার টুকরা এবং সে যা ঘৃণা করে, আমিও তা ঘৃণা করি এবং তাকে যা কষ্ট দেয়, তা আমাকেও কষ্ট দেয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এই বিবাহটি যে আলী নিজেই করতে চেয়েছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে [33]
আরো একটি হাদিস গ্রন্থ থেকে দেখে নিই, এই বিয়ে আলী নিজেই করতে ইচ্ছুক ছিলেন কিনা [34] –
আল-লুলু ওয়াল মারজান
৪৪/ সাহাবাগণের মর্যাদা
পরিচ্ছেদঃ ৪৪/১৫. ফাতিমা বিনতু নাবী (ﷺ)-এর মর্যাদা।
১৫৯২. মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু জেহেলের কন্যাকে ‘আলী (রাঃ) বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে পাঠালেন। ফাতিমাহ (রাঃ) এ খবর শুনতে পেয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেন, আপনার গোত্রের লোকজন মনে করে যে, আপনি আপনার মেয়েদের সম্মানে রাগান্বিত হন না। ‘আলী (রাঃ) আবূ জেহেলের কন্যাকে বিবাহ করতে প্রস্তুত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে প্রস্তুত হলেন। (মিওয়ার বলেন) তিনি যখন হামদ ও সানা পাঠ করেন, তখন আমি তাকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবূল আস ইবনু রাবির নিকট আমার মেয়েকে শাদী দিয়েছিলোম। সে আমার সঙ্গে যা বলেছে সত্যই বলেছে। আর ফাতিমাহ আমার টুকরা; তাঁর কোন কষ্ট হোক তা আমি কখনও পছন্দ করি না। আল্লাহর কসম, আল্লাহর রসূলের মেয়ে এবং আল্লাহর দুশমনের মেয়ে একই লোকের নিকট একত্রিত হতে পারে না। ‘আলী (রাঃ) তাঁর বিবাহের প্রস্তাব উঠিয়ে নিলেন।
সহীহুল বুখারী, পৰ্ব ৬২ : সাহাবাগণের মর্যাদা, অধ্যায় ১৬, হাঃ ৩৭২৯; মুসলিম, পর্ব ৪৪ : সাহাবাগণের মর্যাদা, অধ্যায়, ১৫, হাঃ ২৪৪৯
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ)
উপরের হাদিস পড়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, মুহাম্মদ তো শুধুমাত্র আবু জেহেলের মেয়ের সাথে আলীর বিবাহতে বাধা দিয়েছিল। অন্য কোন সময় তো দেয় নি! তাহলে সমস্যা কোথায়? কিন্তু এই নির্দেশের পরে নবী ও ফাতিমার জীবদ্দশায় আলী আর দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারেন নি, কারণ নবীর ঐ নির্দেশনা। ফাতিমা জীবিত থাকাকালীন তিনি দাসী দিয়েই কাজ চালিয়েছেন। [35] [36]। ফাতিমা মারা যাওয়ার পরে অবশ্য মনের খায়েস ইচ্ছামত মিটিছিলেন [37] –
ইসলাম ও স্ত্রী প্রহার
গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং স্ত্রীদেরকে স্বামীদের মারধর হল সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ যা সারা বিশ্বের সমাজে প্রভাব ফেলে। এটি একটি দুঃখজনক বাস্তবতা যে আমাদের সমাজে অনেক মহিলাকেই তাদের সঙ্গীদের হাতে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। এই ধরনের সহিংসতা নারীর উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে তারা দীর্ঘস্থায়ী ট্রমা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং চরম ক্ষেত্রে এমনকি তাদের মৃত্যুও হতে পারে।
স্ত্রী প্রহার হল পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের ক্ষমতার এক ধরণের চরম অপব্যবহার যা নারীর ওপর পুরুষ নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য প্রয়োগ করে। গার্হস্থ্য সহিংসতা একেবারেই একটি অগ্রহণযোগ্য কাজ, যা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যেই সত্য। আধুনিক সভ্য সমাজে প্রতিটি মানুষের অধিকার রয়েছে, কোন ধরণের শারীরিক নির্যাতনের শিকার না হয়ে নির্ভয়ে জীবন যাপন করার। কিন্তু ইসলাম সহ প্রায় সকল প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই পুরুষকে তাদের স্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য মারধোর করার অনুমতি ও আইনগত বৈধতা দান করে।
গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং স্ত্রী-প্রহারের সবচেয়ে বিধ্বংসী পরিণতিগুলির মধ্যে একটি হল ভিকটিমদের মানসিক এবং মানসিক সুস্থতার উপর এর প্রভাব। যে মহিলারা এই ধরনের সহিংসতার শিকার হন তারা হতাশা, উদ্বেগ, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। এগুলি তাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজ করার ক্ষমতার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে, তাদের কাজ, সম্পর্ক এবং জীবনের সামগ্রিক মানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু যে নারীর ওপরই তা প্রভাব ফেলে তা নয়, এইসব পরিবারের সন্তানরাও এই ধারণা নিয়ে বড় হয় যে, তারা চাইলে তাদের চাইতে দুর্বল বা কম ক্ষমতাশালীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করতে পারে, যা শিশুদের মনে ভয়াবহ হিংস্রতা এবং নানাবিধ ভুল ধারণার জন্মও দেয়। মানসিক এবং মানসিক প্রভাব ছাড়াও, গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং স্ত্রী-মারধরেরও গুরুতর শারীরিক পরিণতিও হতে পারে। এই ধরনের সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা হাড় ভাঙ্গা, ক্ষত, পোড়া এবং অন্যান্য আঘাতে ভুগতে পারে। এই আঘাতগুলি কখনও কখনও প্রাণঘাতী হতে পারে, যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন এবং এমনকি হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন। চরম ক্ষেত্রে, গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং স্ত্রী-প্রহার এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
আরও বিপদজনক বিষয় হচ্ছে ধর্মগুলো, বিশেষ করে ইসলাম, নারীদের আসলে এই শিক্ষাও দেয় যে, স্বামীরা চাইলে তাদের পেটাতেই পারে, এতে এত বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এটি একটি বৈধ কাজ এবং নারীর ওপর এই ধরণের নির্যাতন হলে আসলে তার জন্য নারীরাই দায়ী, ইসলাম এই ধারণাকে শক্তিশালী করে। আসুন আমরা এই বিষয়ে ইসলামের অবস্থান ভালভাবে জেনে নিই।
অবাধ্য হলে স্ত্রীদের পেটানো যাবে
ইসলাম স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে স্বামীকে প্রভু এবং স্ত্রীকে দাসীর মতই গণ্য করে। ইসলামের বিধান হচ্ছে, একজন স্বামী অবাধ্য হওয়ার শুধুমাত্র আশঙ্কা করলেই, স্ত্রীকে পেটাতেও পারবে। কিন্তু স্বামী ভদ্রলোক যাই করুক না কেন, স্ত্রী কোনমতেই তাকে পেটানো দুরের কথা, গালিও দিতে পারবে না। নারীর সুমহান মর্যাদাদানের অতি উৎকৃষ্ট নমুনা [38] –
পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের এককে অন্যের উপর মর্যাদা প্রদান করেছেন, আর এজন্য যে, পুরুষেরা স্বীয় ধন-সম্পদ হতে ব্যয় করে। ফলে পুণ্যবান স্ত্রীরা (আল্লাহ ও স্বামীর প্রতি) অনুগতা থাকে এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে তারা তা (অর্থাৎ তাদের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ) সংরক্ষণ করে যা আল্লাহ সংরক্ষণ করতে আদেশ দিয়েছেন। যদি তাদের মধ্যে অবাধ্যতার সম্ভাবনা দেখতে পাও, তাদেরকে সদুপদেশ দাও এবং তাদের সাথে শয্যা বন্ধ কর এবং তাদেরকে (সঙ্গতভাবে) প্রহার কর, অতঃপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তাহলে তাদের উপর নির্যাতনের বাহানা খোঁজ করো না, নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোচ্চ, সর্বশ্রেষ্ঠ।
— Taisirul Quran
পুরুষেরা নারীদের উপর তত্ত্বাবধানকারী ও ভরণপোষণকারী, যেহেতু আল্লাহ তাদের মধ্যে একের উপর অপরকে বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এই হেতু যে, তারা স্বীয় ধন সম্পদ হতে তাদের জন্য ব্যয় করে থাকে; সুতরাং যে সমস্ত নারী পুণ্যবতী তারা আনুগত্য করে, আল্লাহর সংরক্ষিত প্রচ্ছন্ন বিষয় সংরক্ষণ করে; যদি নারীদের অবাধ্যতার আশংকা হয় তাহলে তাদেরকে সদুপদেশ প্রদান কর, তাদেরকে শয্যা হতে পৃথক কর এবং তাদেরকে প্রহার কর; অনন্তর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তাহলে তাদের জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ সমুন্নত, মহা মহীয়ান।
— Sheikh Mujibur Rahman
পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেনে। আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান।
— Rawai Al-bayan
পুরুষরা নারীদের কর্তা [১], কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং এজন্যে যে, পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে [২]। কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা [৩] এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হেফাযতে তারা হেফাযত করে [৪]। আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর [৫]। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না [৬]। নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এমনকি, নবী নিজেই একবার তার শিশু স্ত্রী আয়িশাকে প্রহার করেছিল বলেই জানা যায়। হযরত আয়িশা হতে বর্ণিত, তিনি (মুহাম্মদ) আমাকে বুকের ওপর আঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল [39] [40] –
সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৭/ স্ত্রীর সাথে ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ৪. আত্মাভিমান
৩৯৬৫. সুলায়মান ইবন দাউদ (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আমার ব্যাপারে কি তোমাদেরকে বর্ণনা করব না? আমরা বললাম, কেন করবেন না? তিনি বললেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআমার পালার রাতে (ইশার সালাত আদায়ের পর) ফিরে আসলেন। তারপর তার জুতা পায়ের দিকে রাখলেন, তাঁর চাদর রেখে দিলেন এবং তাঁর একটি লুঙ্গি বিছানার উপর বিছালেন।
তারপর তিনি মাত্র এতটুকু সময় অবস্থান করলেন যতক্ষণে তাঁর ধারণা হল যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপর উঠে আস্তে করে জুতা পরলেন এবং আস্তে করে তার চাদর নিলেন। তারপর আস্তে করে দরজা খুললেন এবং বের হয়ে আস্তে দরজা চাপিয়ে দিলেন। আর আমি মাথার উপর দিয়ে কামিজটি পরিধান করলাম, ওড়না পরলাম এবং চাদরটি গায়ে আবৃত করলাম ও তার পিছনে চললাম, তিনি বাকীতে আসলেন এবং তিনবার হাত উঠালেন ও বহুক্ষণ দাঁড়ালেন, তারপর ফিরে আসছিলেন। আমিও ফিরে আসছিলাম। তিনি একটু তীব্রগতিতে চললেন, আমিও তীব্রগতিতে চললাম, তিনি দৌড়ালেন, আমিও দৌড়ালাম। তিনি পৌছে গেলেন, তবে আমি তার আগে পৌছে গেলাম।
ঘরে প্রবেশ করেই শুয়ে পড়লাম। তিনিও প্রবেশ করলেন এবং বললেনঃ হে আয়েশা! কি হয়েছে তোমার পেট যে ফুলে গেছে। বর্ণনাকারী সুলায়মান বলেন, ইবন ওয়াহাব (رابية) এর পরিবর্তে (حشيا) দ্রুত চলার কারণে হাঁপিয়ে ওঠা শব্দটি বলেছেন বলে ধারণা করছি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘটনা কি বল, নচেৎ আল্লাহ্ যিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত, তিনিই আমাকে খবর দিবেন।
আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক এবং ঘটনাটির বর্ণনা দিলাম। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমিই সেই (ছায়ামূর্তি) যা আমি আমার সামনে দেখছিলাম? আমি বললাম, হ্যাঁ। আয়েশা (রাঃ) বললেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বক্ষে একটি মুষ্ঠাঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি ধারণা করেছ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর যুলুম করবে? আয়েশ্ম (রাঃ) বললেন, লোক যতই গোপন করুক না কেন, আল্লাহ্ তা নিশ্চিত জানেন।
রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি যখন আমাকে দেখছিলে তখন জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসেছিলেন। তুমি যে (শুয়ে যাওয়ায়) কাপড় খুলে ফেলেছ। তাই জিবরীল (আঃ) প্রবেশ করেননি। তোমার থেকে গোপন করে আমাকে ডাকলেন, আমিও তোমার থেকে গোপন করে উত্তর দিলাম। মনে করলাম, তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। তোমাকে জাগিয়ে দেওয়াটা পছন্দ করলাম না এবং এ ভয়ও ছিল যে, (আমি চলে যাওয়ার কারণে) তুমি নিঃসঙ্গতা বােধ করবে। জিবরীল (আঃ) আমাকে নির্দেশ দিলে বাকীতে অবস্থানকারীদের কাছে যাই এবং তাদের রব্বের কাছে তাদের জন্য ক্ষমা চাই।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ)
স্ত্রী প্রহার করলে কোন শাস্তি নেই
একটি বিখ্যাত হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ প্রাথমিকভাবে স্ত্রীদের মারপিট করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু উমরের কথায় এবং এই বিষয়ে কোরআনের সূরা নিসার ৩৪ নম্বর আয়াত নাজিল হওয়ার পরে তিনি স্ত্রীদের প্রহার করার অনুমতি দিলেন। এরপরে ৭০ জন নারী এসে মুহাম্মদের কাছে অভিযোগ করে যে, তাদের স্বামীরা তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, মুহাম্মদ সেই সব স্বামীর বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। শুধুমাত্র মৌখিকভাবে বলেছেন, যারা স্ত্রীকে পেটায় তারা উত্তম নয়! [41] –
সুনান ইবনু মাজাহ
৯/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ৯/৫১. স্ত্রীদের প্রহার করা নিকৃষ্ট কাজ।
৩/১৯৮৫। ইয়াস ইবনু ’আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ যুবাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর দাসীদের প্রহার করো না। অতঃপর ’উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! নারীরা তো তাদের স্বামীদের অবাধ্যাচরণ করছে। তিনি তাদেরকে মারার অনুমতি দিলেন এবং তারা প্রহৃত হলো। পরে অনেক নারী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাড়িতে সমবেত হলো। সকাল বেলা তিনি বলেনঃ ’’আজ রাতে মুহাম্মাদের পরিবারে সত্তরজন মহিলা এসে তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তোমরা মারপিটকারীদেরকে তোমাদের মধ্যে উত্তম হিসাবে পাবে না।
আবূ দাউদ ২১৪৬, দারেমী ২২১৯, গায়াতুল মারাম ২৫১, সহীহ আবী দাউদ ১৮৬৩।
তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
এবারে নিচের হাদিসটি পড়ুন। নবী মুহাম্মদ তার সাহাবীদের প্রয়োজন সাপেক্ষে স্ত্রী প্রহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। এরপরে মারধোরের শিকার হওয়া স্ত্রীগণ বারবার এসে মুহাম্মদের কাছে অভিযোগ করলেও, মুহাম্মদ স্ত্রী প্রহার করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেন নি। শুধুমাত্র তার সাহাবীদের হালকা বকে দিয়েছেন এই বলে যে, তারা ভাল মানুষ নয়! আমরা যখন কোন কাজে প্রশ্রয় দিই, তখন এরকম হালকা বকে দিই। মুহাম্মদের এই হালকা বকে দেয়াটি আসলে যে কাজটির প্রশ্রয় দেয়াই, তা হাদিসটি পড়লেই বোঝা যায় [42] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬১-[২৪] আয়াস ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ তা‘আলার বান্দীগণকে (স্ত্রীগণকে ক্রীতদাসীর ন্যায়) মেরো না। অতঃপর ‘উমার এসে বললেন, (আপনার নিষেধাজ্ঞার দরুন) স্বামীদের ওপর রমণীদের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে (প্রয়োজনসাপেক্ষে) মারার অনুমতি দিলেন। এমতাবস্থায় রমণীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীগণের নিকট পুনঃপুন এসে স্বামীদের (অত্যাচারের) ব্যাপারে অভিযোগ করতে লাগল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শুনে রাখ! আমার পরিবার-পরিজনের নিকট স্ত্রীগণ স্বামীদের অভিযোগ নিয়ে পুনঃপুন আসছে যে, তোমাদের মধ্যে (যারা স্ত্রীদেরকে এরূপে কষ্ট দেয়) তারা কোনক্রমেই ভালো মানুষ নয়। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
[1] সহীহ : আবূ দাঊদ ২১৪৬, ইবনু মাজাহ ১৯৮৫, দারিমী ২২৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪১৮৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৩৬০।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ্ ইবন সায়িব (রহঃ)
শুধু তাই নয়, একবার এক নারীকে তার স্বামী বেদম পিটিয়ে চামড়া সবুজ করে ফেলে। আয়িশার বর্ণনা অনুসারে, কোন মুমিন মহিলাকে তিনি এত ভয়াবহভাবে প্রহার হতে দেখেনি। মহিলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে নবী কোন ব্যবস্থাই নিলেন না। সেই স্বামীর বিরুদ্ধে পৃথিবীর যেকোন সভ্য আদালতেই মামলা হতো, নবীর বিচারালয়ে তার কোন বিচারই হয়নি [43] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৭/ পোশাক
পরিচ্ছেদঃ ৭৭/২৩. সবুজ পোশাক প্রসঙ্গে
৫৮২৫. ’ইকরামাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। রিফা’আ তার স্ত্রীকে ত্বালাক দেয়। পরে ’আবদুর রহমান কুরাযী তাকে বিবাহ করে। ’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তার গায়ে একটি সবুজ রঙের উড়না ছিল। সে ’আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট অভিযোগ করল এবং (স্বামীর প্রহারজনিত) স্বীয় গাত্রের চামড়ার সবুজ বর্ণ দেখালো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এলেন, আর স্ত্রীগণ একে অন্যের সহযোগিতা করে থাকে, তখন ’আয়িশাহ বললেনঃ কোন মু’মিন মহিলাকে এমনভাবে প্রহার করতে আমি কখনও দেখিনি। মহিলাটির চামড়া তার কাপড়ের চেয়ে বেশি সবুজ হয়ে গেছে। বর্ণনাকারী বলেনঃ ’আবদুর রহমান শুনতে পেল যে, তার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসেছে। সুতরাং সেও তার অন্য স্ত্রীর দু’টি ছেলে সাথে করে এলো। স্ত্রী লোকটি বললঃ আল্লাহর কসম! তার উপর আমার এ ব্যতীত আর কোন অভিযোগ নেই যে, তার কাছে যা আছে তা আমাকে এ জিনিসের চেয়ে অধিক তৃপ্তি দেয় না। এ বলে তার কাপড়ের আঁচল ধরে দেখাল।
’আবদুর রহমান বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! সে মিথ্যা বলছে, আমি তাকে ধোলাই করি চামড়া ধোলাই করার ন্যায় দীর্ঘস্থায়ী সঙ্গম করি। কিন্তু সে অবাধ্য স্ত্রী, রিফা’আর কাছে ফিরে যেতে চায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ব্যাপার যদি তাই হয় তাহলে রিফা’আ তোমার জন্য হালাল হবে না, অথবা তুমি তার যোগ্য হতে পার না, যতক্ষণ না ’আবদুর রহমান তোমার সুধা আস্বাদন করবে। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আবদুর রহমানের সাথে তার পুত্রদ্বয়কে দেখে বললেন, এরা কি তোমার পুত্র? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এই আসল ঘটনা, যে জন্য স্ত্রী লোকটি এমন করেছে। আল্লাহর কসম! কাকের সাথে কাকের যেমন মিল থাকে, তার চেয়েও বেশি মিল আছে ওদের সাথে এর (অর্থাৎ ’আবদুর রহমানের সাথে তাঁর পুত্রদের)। [২৬৩৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৯৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইকরিমা (রহঃ)
এই হাদিসটির আরো কয়েকটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, নবীর সেই সাহাবী তার স্ত্রীকে নিয়মিতভাবে পেটাতো। এই নিয়ে অভিযোগের পরেও নবী সেই সাহাবীর বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি। যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রী প্রহার বিষয়ে নবীর মৌন সম্মতি ছিল অথবা কাজটি ইসলামের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধ নয় [44] !
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৩৫২. সবুজ পোশাক
৫৪০৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইকরামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রিফাআ তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। পরে আবদুর রহমান কুরাযী তাকে বিবাহ করে। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ তার গায়ে একটি সবুজ রঙের উড়না ছিল। সে আয়িশা (রাঃ) এর নিকট অভিযোগ করলেন এবং (স্বামীর প্রহারের দরুন) নিজের গায়ের চামড়ার সবুজ বর্ণ দেখালো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এলেন, আর লোকেরা একে অন্যের সহযোগিতা করে থাকে, তখন আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ কোন মুমিন মহিলাকে এমনভাবে প্রহার করতে আমি কখনও দেখিনি।
মহিলাটির চামড়া তার কাপড়ের চেয়ে অধিক সবুজ হয়ে গেছে। বর্ণনকারী বলেনঃ আবদুর রহমান শুনতে পেল যে, তার স্ত্রী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসেছে। সুতরাং সেও তার অন্য স্ত্রীর দুটি ছেলের সাথে করে এলো। স্ত্রীলোকটি বললঃ আল্লাহর কসম! তার উপর আমার এ ছাড়া আর কোন অভিযোগ নেই সে, তার কাছে যা আছে, তা আমাকে এ জিনিসের চেয়ে বেশী তৃপ্তি দেয় না। এ বলে তার কাপড়ের আচল ধরে দেখান।
আবদূর রহমান বললঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে মিথ্যা কাছে, আমি তাকে ধোলাই করি চামড়া ধোলাই করার ন্যায়। (অর্থাৎ পূর্ণ শক্তির সাথে দীর্ঘস্থায়ী সঙ্গম করি)। কিন্তু সে অবাধ্য স্ত্রী, রিফাআর কাছে ফিরে যেতে চায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ব্যাপার যদি তাই হল তাহলে রিফাআ তোমার জন্য হারাম হবে না, অথবা তুমি তার যোগ্য হতে পার না, যতক্ষন না আবদুর রহমান তোমার সুধা আস্বাদন করবে। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমানের সাথে তার পুত্রদ্বয়কে দেখে বললেনঃ এরা কি তোমার পুত্র? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এই আসল ব্যপার, যে জন্য স্ত্রী লোকটি এরূপ করছে। আল্লাহর কসম কাকের সাথে কাকের যেমন সা’দৃশ থাকে, তার চেয়েও অধিক মিল রয়েছে ওদের সাথে এর (অর্থাৎ আবদুর রহমানের সাথে তার পুত্রদের)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইকরিমা (রহঃ)
একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নিজের স্ত্রীকে কোন পুরুষ কেন পিটিয়েছে, দুনিয়াতে তার জন্য পুরুষকে কোন জবাবদিহি করতে হবে না। এই হাদিসটিকে অনেকেই দুর্বল বলে অভিহিত করেছেন বটে, আবার অনেকে এটিকে হাসান বলেছেন। কিন্তু এর সাথে আরো কয়েকটি হাদিস পাওয়া যায়, যেখানে দেখা যায় নবী নিজেও স্ত্রী প্রহার করার কারনে স্বামীর ওপর কোন শাস্তি প্রয়োগ না করে কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ না করে বরঞ্চ স্বামীটি যেন স্ত্রীকে তালাক দেয় সেই চেষ্টাই করেছেন। আগে উমর বর্ণিত সেই হাদিসটি দেখে নিই।
স্ত্রীকে কেন প্রহার করা হলো সে বিষয়ে শেষ বিচারের দিন তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে না। (আবু দাউদ , বই নং- ১১, হাদিস -২১৪২)
হাদিসের মান বিষয়ক নোটঃ কিছু কিছু প্রখ্যাত স্কলার, যেমন আলবানী এই হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন, অন্যদিকে সৌদি আববের বিখ্যাত ইসলামি প্রকাশনা দারুস সালাম থেকে প্রকাশিত ইংরেজি অনুবাদে হাদিসের মান “হাসান” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে । নিচে দারুস সালাম থেকে প্রকাশিত হওয়া গ্রন্থের ডাউনলোড লিঙ্ক এবং রেফারেন্স দেয়া হলো। [45]
আরো আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, একজন স্ত্রীকে পিটিয়ে হাড্ডি ভেঙ্গে দেয়ার পরেও নবী সেই স্বামীকে কোন শাস্তি প্রদান করেননি [46] [47] –
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭/ তালাক
২২২২. মুহাম্মদ ইবন মু’আম্মার ….. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবা বিনত সাহাল (রাঃ) সাবিত ইবন কায়স ইবন শাম্মাসের স্ত্রী ছিলেন। সে তাকে মারধর করলে তার শরীররে কোনো অঙ্গ ভেঙ্গে যায়। সে (হাবীবা) ফজরের নামাযের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসে এবং সাবিতের বিরূদ্ধে তাঁর নিকট অভিযোগ করে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবিতকে ডাকেন এবং বলেন, তুমি তোমার প্রদত্ত মাহরের মাল গ্রহণ করো এবং তাকে ত্যাগ করো। সে (সাবিত) জিজ্ঞাসা করে, হে আল্লাহ্র রাসুল! তা কি উত্তম হবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তখন সে বলে, আমি তাকে তার মাহর স্বরূপ দু’টি বাগান প্রদান করেছিলাম এবং সে এখন তার মালিক, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি তা গ্রহণ করো এবং তাকে ত্যাগ করো। সে (সাবিত) এরূপই করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
তবে নবী মুহাম্মদ স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করতে নিষেধ করেছেন, কারণ হিসেবে উনি এটিও উল্লেখ করে দিয়েছেন যে, রাতে সে সেই স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে হবে। তাই তাদেরকে গোলামের মত না পেটাতে, যেন রাতের সহবাসে আবার কোন সমস্যা না হয় [48] –
এবারে এই হাদিসটি আরো একটি হাদিস গ্রন্থ থেকে পড়ি, যেখানে আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, কেন স্ত্রীদের গোলামের মত পেটাতে নিষেধ করা হয়েছে! হাদিস অনুসারে এর কারণ হচ্ছে, গোলামের মত পেটালে স্ত্রী রাতের বেলা সহবাস করতে অনাগ্রহী হতে পারে [49]
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪২-[৫] ‘আব্দুল্লাহ ইবনু যাম্‘আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন ক্রীতদাসীর ন্যায় স্ত্রীকে না মারে (অত্যাচার না করা হয়), অথচ দিনের শেষেই তার সাথে সহবাস করে।
অপর বর্ণনায় আছে- তোমাদের কেউ যেন ইচ্ছা করে স্ত্রীকে ক্রীতদাসীর ন্যায় মারমুখো না হয়, হয়তো দিন শেষে তার সাথে সহবাস করতে চাইবে; আর এতে সে অনাগ্রহ প্রকাশ করবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বায়ু নির্গত হওয়ায় হাসি-ঠাট্টাচ্ছলের কারণে উপদেশ করলেন, যে কাজ নিজে কর অন্যের সে কাজে তোমরা কেন হাসবে! (বুখারী ও মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : বুখারী ৪৯৪২, মুসলিম ১৪৭০।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু যাম‘আহ (রাঃ)
আরো একটি হাদিস পড়ি, যেখানে নবী আবার স্ত্রীদের মুখে না মারতে নিষেধ করেছেন! এর অর্থ হচ্ছে, অন্য স্থানে মারতে হবে [50] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৯-[২২] হাকীম ইবনু মু‘আবিয়াহ্ আল কুশায়রী (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! স্ত্রীগণ আমাদের ওপর কি অধিকার রাখে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যখন খাও, তখন তাকেও খাওয়াও; তুমি পরলে তাকেও পরিধান করাও, (প্রয়োজনে মারতে হলে) মুখমণ্ডলে আঘাত করো না, তাকে গালি দিও না, (প্রয়োজনে তাকে ঘরে বিছানা পৃথক করতে পার), কিন্তু একাকিনী অবস্থায় রাখবে না। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
[1] সহীহ : আবূ দাঊদ ২১৪২, ইবনু মাজাহ ১৮৫০, আহমাদ ২০০১৩, ইরওয়া ২০৩৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৯২৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এবারে আসুন বিখ্যাত সাহাবী যুবায়র ইবন আওয়াম সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাক। নবী মুহাম্মদের সাহাবীদের মধ্যে যিনি সবচাইতে বেশি স্ত্রী পেটাতেন, যুবায়ের ছিলেন তাদের একজন। তার সম্পর্কে নবী মুহাম্মদের মহিলা সাহাবী এবং যুবায়েরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন অত্যন্ত নির্দয় স্বভাবের এবং স্ত্রীদের মারপিটও করতেন [51] –
শুধু তাই নয়, এই যুবায়র ইবনে আওয়াম আবু বকরের কন্যা আসমা বিনতে আবু বকরকেও বিবাহ করেছিল। কিন্তু সেই সংসারেও ছিল একই মারপিটের সমস্যা। তখন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত আবু বকর তার কন্যা আসমাকে মারপিট সহ্য করে স্বামীর সংসার করতে নির্দেশ দিয়েছিল [52]। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য এই আরবি ফতোয়াটি পড়তে পারেন, এখানে আরবি ভাষায় বিস্তারিতভাবে এই বর্ণনাটি সহিহ সনদ সহ বিবৃত আছে। প্রয়োজনে আরবি জানা কারো সাহায্য নিন অন্যথায় গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করুন [53] –
খুবই হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, এই স্ত্রীদের মারপিট করায় উস্তাদ যুবায়র ইবনে আওয়াম ছিলেন নবীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সাহাবী এবং পৃথিবীতেই জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সৌভাগ্যবান সাহাবীদের একজন [54] [55] –
সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ৯. খিলাফাত সম্পর্কে।
৪৫৭৭. হাফ্স ইবন উমার (রহঃ) …. আবদুর রহমান ইবন আখনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা তিনি মসজিদে অবস্থানকালে এক ব্যক্তি আলী (রাঃ) সম্পর্কে আলোচনা করলে, সাঈদ ইবন যায়দ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বলেনঃ আমি এরূপ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, দশ ব্যক্তি বিনা হিসাবে বেহেশতে যাবে। তাঁরা হলেনঃ ১। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতে যাবেন, ২। আবূ বকর (রাঃ) জান্নাতী, ৩। উমার (রাঃ) জান্নাতী, ৪। উছমান (রাঃ) জান্নাতী, ৫। আলী (রাঃ) জান্নাতী, ৬। তালহা (রাঃ) জান্নাতী, ৭। যুবায়র ইবন আওয়াম (রাঃ) জান্নাতী ৮। সা’আদ ইবন মালিক (রাঃ) জান্নাতী, ৯। আবদুর রহমান ইবন আওফ (রাঃ) জান্নাতী।
তিনি বলেনঃ আমি ইচ্ছা করলে দশম ব্যক্তির নামও বলতে পারি। তখন লেকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করেঃ সে লোকটি কে? তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলেনঃ তিনি হলেন সাঈদ ইবন যুবায়র (রাঃ), অর্থাৎ তিনি নিজে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ – আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১০৮-[১] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে (খিলাফতের ব্যাপারে) এ কয়েকজন ছাড়া আমি অন্য আর কাউকেও যোগ্যতম মনে করি না, যাঁদের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সা.) – মৃত্যুর সময় খুশি থেকে গেছেন। অতঃপর তিনি [’উমার (রাঃ)] ’আলী, ’উসমান, যুবায়র, ত্বলহাহ্, সা’দ ও আবদুর রহমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এর নাম উল্লেখ করেন। (বুখারী)
সহীহ: বুখারী ৩৭০০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৯১৭, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৭০২১, আবূ ইয়া’লা ২০৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)
আসুন এবারে একটি ওয়াজ শুনে নিই,
পরপুরুষের সাথে স্ত্রীকে দেখলে হত্যা
নবী মুহাম্মদের একজন সাহাবীর নাম সা’দ ইবনু উবাদাহ্। উনি বলেছিলেন, উনার স্ত্রীকে উনি পরপুরুষের সাথে দেখলে ” তাকে আমার তরবারীর ধারালো দিক দিয়ে তার উপর আঘাত হানব”। এই কথা মুহাম্মদের কাছে পৌঁছালে উনি সা’দ ইবনু উবাদাহ্ এর খুব প্রশংসা করে বলেছিলেন, সা’দ ইবনু উবাদাহ্ খুবই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ।
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২০। লি’আন
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৩৬৫৫-(১৬/…) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) ….. আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সা’দ ইবনু উবাদাহ্ (রাযিঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! যদি আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোন পুরুষকে দেখতে পাই তবে চারজন সাক্ষী উপস্থিত না করা পর্যন্ত আমি কি তাকে ধরব না? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, পারবে না। তিনি (সা’দ) বললেনঃ এমনটি কিছুতেই হতে পারে না, সে মহান সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আবশ্য আমি তার (চারজন সাক্ষী উপস্থিত করার) আগেই কাল বিলম্ব না করে তার প্রতি তলোয়ার হানব। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা শোন, তোমাদের নেতা কী বলছেন। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় আত্মমর্যাদার অধিকারী। আর আমি তার চাইতেও অধিকতর আত্মমর্যাদাশীল এবং আল্লাহ আমার চাইতেও অধিক মর্যাদাবান। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৬২১, ইসলামিক সেন্টার ৩৬২১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
২০। লি’আন
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৩৬৫৬-(১৭/১৪৯৯) উবাইদুল্লাহ ইবনু উমার কাওয়ারীরী ও আবূ কামিল ফুযায়ল ইবনু হুসায়ন জাহদারী (রহঃ) ….. মুগীরাহ শুবাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সা’দ ইবনু উবাদাহ্ (রাযিঃ) বললেনঃ আমি যদি আমার স্ত্রীর সাথে অন্য কোন পুরুষকে দেখতে পাই তবে নিশ্চয়ই আমি তাকে আমার তরবারীর ধারালো দিক দিয়ে তার উপর আঘাত হানব- পার্শ্ব দিয়ে নয়। এ কথা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌছল। তিনি বললেনঃ তোমরা কি সাদের আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে আশ্চর্য হয়েছ? আল্লাহর কসম! আমি তার চাইতে অধিকতর আত্মমর্যাদাবান। আর আল্লাহ আমার তুলনায় অধিকতর মর্যাদাবান। আল্লাহ তাঁর আত্মমর্যাদার কারণে প্রকাশ্য ও গোপন যাবতীয় অশ্লীল কর্ম হারাম করে দিয়েছেন। আর আল্লাহর তুলনায় অধিক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কেউ নেই এবং আল্লাহর চাইতে অধিকতর ওযর (স্থাপন) পছন্দকারী কেউ নেই।* এ কারণেই আল্লাহ তার নাবী-রসূলদের সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর চাইতে অধিকতর প্রশংসা পছন্দকারী কেউ নেই। এ কারণে তিনি জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ৩৬২২, ইসলামিক সেন্টার ৩৬২২)
* আল্লাহর চেয়ে ওযর পছন্দকারী কেউ নেই। এখানে ‘ওযর’ ক্ষমা করা ও সতর্ক করা অর্থে এসেছে। শাস্তির জন্য পাকড়াও করার পূর্বে আল্লাহ তা’আলা রসূলদেরকে সতর্ক করার জন্য প্রেরণ করেছেন। (তাহকীক। সহীহ মুসলিম, ফুআদ আবদুল বাকী’, ২য় খণ্ড, ৫৭৪ পৃঃ)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ শু’বা (রহঃ)
নারীর জন্য স্বামী হচ্ছে মালিক
ইসলামের ইতিহাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মুসলিম দার্শনিক ইমাম আবু হামেদ মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আল-গাযযালী বা যিনি আসলে ইমাম গাজ্জালী নামেই অধিক পরিচিত, তার রচিত ‘এহইয়াউ উলুমিদ্দীন’ বিগত আট শতাধিক বছর ধরে সমগ্র মুসলিম সমাজে সর্বাধিক পঠিত একটি গ্রন্থ। আজ পর্যন্তও মুসলিমদের মধ্যে এ গ্রন্থটি একটি অনন্য এবং অপ্রতিদ্ব্ন্দ্বী ইসলামী গ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়। আসুন এই বইটি থেকে “স্ত্রীর ওপর স্বামীর হক” অধ্যায়টি পড়ে নেয়া যাক,
স্বামী সিজদার উপযুক্ত
বেশ কিছু হাদিস গ্রন্থেই পাওয়া যায়, নবী মুহাম্মদ স্বামীকে স্ত্রীদের সিজদার উপযুক্ত বলেছিলেন।
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬৬-[২৯] কায়স ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (ইরাকে অবস্থিত, কূফার সন্নিকটবর্তী) ‘হীরা’ শহরে গিয়ে দেখতে পেলাম যে, তারা তাদের নেতাকে সম্মানার্থে সিজদা করছে। এটা দেখে আমি মনে মনে বললাম, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই সিজদা পাওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললাম, আমি হীরা’র সফরে দেখতে পেলাম যে, সেখানকার অধিবাসীরা তাদের নেতাকে সিজদা করে। আমি স্থির করেছি যে, আপনিই সাজদার অধিক হকদার। এ কথা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, (তবে কি আমার মৃত্যুর পরে) তুমি আমার কবরের সম্মুখ দিয়ে গমনকালে কবরকে সিজদা করবে? উত্তরে আমি বললাম, (নিশ্চয়) না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না, (কস্মিনকালেও) করো না। কেননা আমি যদি (আল্লাহ ব্যতিরেকে) অপর কাউকে সিজদা করতে বলতাম তবে স্বামীদের জন্য রমণীদেরকে সিজদা করার নির্দেশ করতাম। (আবূ দাঊদ)[1]
[1] হাসান : আবূ দাঊদ ২১৪০, দারিমী ১৫০৪, মুসতাদরাক লিল হাকিম ২৭৬৩।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ কায়েস ইবনু সা‘দ আনসারী (রাঃ)
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-১৩ঃ বিবাহ
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৫-(১৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি কোনো মানবকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে স্ত্রীকে তার স্বামীর জন্য সিজদা করার নির্দেশ দিতাম। (তিরমিযী)(1)
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)।
সুনান আদ-দারেমী
অধ্যায়ঃ ২. সালাত অধ্যায়
পাবলিশারঃ বাংলা হাদিস
পরিচ্ছদঃ ১৫৯. (আল্লাহ ব্যতীত) কারো উদ্দেশ্যে সাজদা করা নিষেধ
১৫০১. কাইস ইবনু সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন (পারস্যের) হীরা নামক শহরে গমণ করলাম, সেখানে দেখলাম, তারা তাদের নেতা/ রাজাকে সিজদা করছে। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি আপনাকে সাজদা করবো না? তিনি বললেন: “আমি যদি কোনো ব্যক্তিকে (অন্য কারো উদ্দেশ্যে) সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে অবশ্যই আমি নারীদেরকে তাদের স্বামীদের উদ্দেশ্যে সাজদা করার নির্দেশ দিতাম। কারণ, আল্লাহ তাদের (স্ত্রীলোকদের) উপর তাদের (স্বামীদের) (অনেক বেশি) হাক্ব (অধিকার) নির্ধারণ করেছেন।”(1)
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
স্বামীর যৌন চাহিদা মেটাতে অস্বীকার করা যাবে না
বৈবাহিক ধর্ষণের আমাদের দেশে এখনো কোন অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়না, যদিও উন্নতবিশ্বে বৈবাহিক ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আসুন এই সম্পর্কে ইসলামের অবস্থান জেনে নেয়া যাক,
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৭। বিবাহ
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ২০. স্বামীর বিছানা পরিহার করা স্ত্রীর জন্য নিষিদ্ধ
৩৪৩৩-(১২২/…) আবূ বাকর ইবনু শায়বাহ, আবূ কুরায়ব, আবূ সাঈদ আল আশাজ্জ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহিমাহুমুল্লাহ) ….. আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে এবং সে না আসায় তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে রাত্রি যাপন করে, সে স্ত্রীর প্রতি ফেরেশতাগণ ভোর হওয়া পর্যন্ত লা’নাত করতে থাকে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪০৬, ইসলামীক সেন্টার ৩৪০৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আসুন এই বিষয়ে হারুন ইজহারের বক্তব্য শুনে নিই,
চাহিবা মাত্র সহবত করতে হবে, উটের পিঠেও
সুনানে ইবনে মাজাহ
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
অধ্যায়ঃ ৯/ বিবাহ
২/১৮৫৩। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআয (রাঃ) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে সাজদাহ করেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে মু‘আয! এ কী? তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পাই যে, তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে সাজদাহ করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ ছাড়া অপর কাউকে সাজদাহ করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সাজদাহ করতে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার প্রভুর প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না। স্ত্রী শিবিকার মধ্যে থাকা অবস্থায় স্বামী তার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে চাইলে স্ত্রীর তা প্রত্যাখ্যান করা অনুচিত।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
It was narrated that: Abdullah bin Abu Awfa said “When Muadh bin Jabal came from Sham, he prostrated to the Prophet who said: ‘What is this, O Muadh?’ He said: ‘I went to Sham and saw them prostrating to their bishops and patricians and I wanted to do that for you.’ The messenger of Allah said: ‘Do not do that. If I were to command anyone to prostrate to anyone other than Allah, I would have commanded women to prostrate to their husbands. By the One in Whose Hand is the soul of Muhammad! No woman can fulfill her duty towards Allah until she fulfills her duty towards her husband. If he asks her (for intimacy) even if she is on her camel saddle, she should not refuse.’ ”
সঙ্গমের ক্ষেত্রে স্ত্রীর ইচ্ছা মূল্যহীন
হাদিসে বর্ণিত আছে, জনৈক নারী সঙ্গমের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এক ধরণের অবস্থায় সঙ্গম করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার স্বামী বিভিন্নভাবে সঙ্গম করতে চাইতো। এই নিয়ে ঝগড়া শুরু হওয়ায় আল্লাহ আয়াত নাজিল করলেন যে, নারীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র স্বরূপ, যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে তার সাথে সঙ্গম করা যাবে। এর অর্থ হচ্ছে, এখানে নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই, পুরুষের ইচ্ছা অনিচ্ছাই এখানে প্রাধান্য পাবে [56] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ৪৬. বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিধান
২১৬৪। ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ ইবনু উমার (রাযি.)-কে ক্ষমা করুন, তিনি ভুল করেছেন। আসল কথা হচ্ছে, আনসারদের এই জনপদের লোকেরা মূর্তিপূজারী ছিলো। তারা আহলে কিতাব ইয়াহুদীদের সাথে বসবাস করতো এবং ইয়াহুদীরা জ্ঞানের দিক দিয়ে মূর্তিপূজারীদের উপর নিজেদের মর্যাদা দিতো। সুতরাং তারা নিজেদের কাজকর্মে ইয়াহুদীদের অনুসারী ছিলো। আহলে কিতাবদের নিয়ম ছিলো, তারা স্ত্রীদেরকে কেবল চিৎ করে শুইয়ে সঙ্গম করতো এবং বলতো, মহিলাদের সতর এ নিয়মে অধিক সংরক্ষিত। আনসার সম্প্রদায়ও তাদের এ কাজে আহলে কিতাবদের নিয়ম অনুসরণ করতো। কিন্তু কুরাইশরা নারীদেরকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে সঙ্গম করতো এবং তাদেরকে সামনাসামনি, পেছনের দিকে এবং চিৎ করে শুইয়ে বিভিন্নভাবে সঙ্গম করতো।
অতঃপর যখন মুহাজিরগণ মদীনাহয় আসলেন তখন তাদের এক ব্যক্তি জনৈক আনাসারী নারীকে বিয়ে করে তার সাথে ঐভাবে সঙ্গম করতে চাইলো যেভাবে তারা মক্কার নারীদের সাথে করতো। কিন্তু মহিলাটি তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বললো, আমরা শুধু এক অবস্থায়ই সঙ্গম করি। সুতরাং তোমাকেও সেভাবেই সঙ্গম করতে হবে অন্যথায় আমার থেকে দূরে থাকো। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ খবর পৌঁছলে মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ ‘‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ, সুতরাং যেভাবে ইচ্ছা করো তোমাদের ক্ষেতে গমন করো।’’ অর্থাৎ সামনের দিক থেকে, পিছনের দিক থেকে বা চিৎ করে শুইয়ে তার লজ্জাস্থানেই সঙ্গম করো।[1]
হাসান।
[1]. আবূ দাঊদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
দেনমোহর, তালাক ও বিবাহ
দেনমোহর হচ্ছে লজ্জাস্থানের মূল্য
ইসলামে দেনমোহর স্বামীর দিতে হয় স্ত্রীর যোনী ভোগ করার মূল্য হিসেবে। এই বিষয়ে আলাদাভাবে একটি পুরো লেখাই রয়েছে, এখানে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু প্রমাণ দেয়া হচ্ছে। আগ্রহী পাঠক এই লেখাটি পড়ে নিতে পারেন [57]। আহকামুল কুরআন গ্রন্থে খুব পরিষ্কারভাবেই বর্ণিত আছে, স্বামী তার স্ত্রীর যৌন অঙ্গের মালিক পর্যায়ের [58]
নিচের হাদিসগুলো পড়ুন [59] [60] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – বিয়ের ওয়ালী (অভিভাবক) এবং নারীর অনুমতি গ্রহণ প্রসঙ্গে
৩১৩১-(৬) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোনো নারী তার ওয়ালীর (অভিভাবকের) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে; তার বিয়ে বাত্বিল (না-মঞ্জুর, পরিত্যক্ত), তার বিয়ে বাত্বিল, তার বিয়ে বাত্বিল। যদি এরূপ বিয়েতে স্বামীর সাথে সহবাস হয়ে থাকে, তবে স্ত্রীর মোহর দিতে হবে তার (লজ্জাস্থান) উপভোগ (হালাল) করার জন্যে। আর যদি তাদের (ওয়ালীগণের) মধ্যে আপোসে মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে যার ওয়ালী নেই শাসক (প্রশাসন) তার ওয়ালী (বলে বিবেচিত) হবে।
(আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)(1)
(1) সহীহ : আবূ দাঊদ ৩০৮৩, তিরমিযী ১১০২, ইবনু মাজাহ ১৮৭৯, আহমাদ ২৪২০৫, দারিমী ২২৩০, ইরওয়া ১৮৪০, সহীহ আল জামি‘ ২৭০৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২০/ লি’আন
পরিচ্ছদঃ পরিচ্ছেদ নাই
৩৬১০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, আবূ বকর ইবনু শায়বা ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লি’আনকারীদ্বয়ের (লি’আন বাক্য পাঠের ব্যাপারে) হিসাব আল্লাহর দায়িত্ব। তোমাদের দু’জনের একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী তার (তোমার স্ত্রীর) উপর তোমার কোন অধিকার নেই। লোকটি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার মালের (প্রদত্ত মাহর) কি হবে? তিনি বললেন, তুমি তোমার মাল পাবে না। যদি তুমি তার ব্যাপারে সত্যবাদী হও তাহলে তোমার দেওয়া সস্পদ ঐ বস্তুর বিনিময়ে বলে গণ্য হবে যা দ্বারা তুমি তার লজ্জাস্থান হালাল করেছ। আর যদি তুমি তার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাক তাহলে তার থেকে মাল ফেরত পাওয়া তো আরো দুরের কথা।
যুহায়র (রহঃ) তার বর্ণনায় বলেছেন যে, সুফিয়ান (রহঃ) সাঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) এর সুত্রে ইবনু উমর (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলতে শুনেছেন।
Ibn Umar (Allah be pleased with them) reported Allah’s Messenger (ﷺ) saying to the invokers of curse: Your account is with Allah. One of you must be a liar. You have now no right over this woman. He said: Messenger of Allah, what about my wealth (dower that I paid her at the time of marriage)? He said: You have no claim to wealth. If you tell the truth, it (dower) is the recompense for your having had the right to intercourse with her, and if you tell a lie against her, it is still more remote from you than she is. Zuhair said in his narration: Sufyan reported to us on the authority of ‘Amr that he had heard Sa’id b Jubair saying: I heard Ibn Umar (Allah be pleased with them) saying that Allah’s Messenger (ﷺ) had said it.
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এই বিষয়ে সহিহ বুখারী থেকেও পড়ি [61] –
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৫/ তালাক
পরিচ্ছদঃ ২০৭২. লি‘আনকারীদ্বয়কে ইমামের একথা বলা যে, নিশ্চয় তোমাদের কোন একজন মিথ্যাবাদী, তাই তোমদের কেউ তাওলা করতে প্রস্তুত আছ কি ?
৪৯২৯। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … সাঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি লিআনকারীদ্বয় সম্পর্কে ইবনু উমরকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিআনকায়ীদ্বয়কে লক্ষ্য করে বলেছিলেনঃ তোমাদের হিসাব গ্রহনের দায়িত্ব আল্লাহরই। তোমাদের একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। তার (স্ত্রীর) উপর তোমার কোন অধিকার নেই। লোকটি বললঃ তবে আমার মাল (মোহর হিসেবে প্রদত্ত)? তিনি বললেনঃ তুমি কোন মাল পাবে না। যদি তুমি সত্যবাদী হও তাহলে এর বিনিময়ে তুমি তার লজ্জাস্থানকে হালাল করে নিয়েছিলে। আর যদি তার উপর মিথ্যারোপ করে থাক তবে তো মাল চাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।
সুফিয়ান বলেনঃ আমি এ হাদীস আমর (রাঃ) এর কাছ থেকে মুখস্থ করেছি। আইয়্যুব বলেনঃ আমি সাঈদ ইবনু জুবায়র-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলামঃ এক ব্যাক্তি তার স্ত্রীর সাথে লিআন করল (এখন তাদের বিধান কি?) তিনি তার দু’আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে বললেনঃ সুফিয়ান তার তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল ফাঁক করলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ আজলানের এক দম্পত্তির বৈবাহিক সম্পর্ক এভাবে ছিন্ন করে দেন এবং বলেনঃ আল্লাহ তাআলা অবহিত আছেন যে, তোমাদের একজন অবশাই মিথ্যাবাদী। সুতরাং কেউ তাওবা করতে সম্মত আছ কি? এভাবে তিনি তিনবার বললেন। সুফিয়ান বলেনঃ আমি তোমাকে যেভাবে হাদীসটি শোনাচ্ছি এভাবেই আমি আমর ও আইয়্যুব (রাঃ) থেকে মুখস্থ করেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মেয়েদের স্বেচ্ছায় বিয়ের অধিকার নেই
ইসলামের বিধান অনুসারে, একজন স্বাধীন মা তার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবে না। একইসাথে, একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী অভিভাবক পুরুষ ছাড়া নিজ ইচ্ছাতে বিয়েও করতে পারবে না। কেউ যদি নিজেই বিয়ে ঠিক করে বিবাহ করে, তাকে ব্যভিচারিণী হিসেবে গণ্য করতে হবে [62] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩ঃ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ – বিয়ের ওয়ালী (অভিভাবক) এবং নারীর অনুমতি গ্রহণ প্রসঙ্গে
৩১৩৭-(১২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো নারী যেন অপর নারীর বিবাহ সম্পাদন না করে এবং সে নিজেকেও স্বয়ং বিয়ে দিতে পারে না। আর ব্যভিচারিণীই তো সেই, যে নিজেকে বিয়ে দেয়। (ইবনু মাজাহ)(1)
(1) সহীহ : ইবনু মাজাহ ১৮৮২, দারাকুত্বনী ৩৫৩৯, ইরওয়া ১৮৪১, সহীহ আল জামি‘ ৭২৯৮।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
তালাক দেয়ার অধিকার স্বামীর
ইসলামের বিধান হচ্ছে, তালাক দেয়ার অধিকার একমাত্র স্বামীর। স্ত্রীর তালাক দেয়ার কোন অধিকার নেই, সে তালাক চাইতে পারে [63] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-১৩ঃ বিবাহ
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ১১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – খুল্‘ই (খুলা‘ তালাক) ও তালাক প্রসঙ্গে
৩২৭৯-(৬) সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে রমণী বিনা কারণে স্বামীর নিকট তালাক চায়, সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ, দারিমী)(1)
(1) সহীহ : আবূ দাঊদ ২২২৬, তিরমিযী ১১৮৭, ইবনু মাজাহ ২৫০০, দারিমী ১৩১৬, আহমাদ ২২৪৪০, ইরওয়া ২০৩৫, সহীহ আল জামি‘ ২৭০৬, সহীহ আত্ তারগীব ২০১৮।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
ব্যাখ্যাঃ
ব্যাখ্যা: তালাক স্বামীর অধিকার, স্ত্রীর নয়। স্ত্রীর সঙ্গত কারণ থাকলে খুলা‘র মাধ্যমে সে স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। কোনো মহিলা একান্ত কারণ ছাড়া স্বামীর কাছ থেকে তালাক প্রার্থনা করবে না। কোনো কোনো বর্ণনায় এ কথাও এসেছে, কোনো মহিলা নিজের জন্য অথবা অন্যের জন্য তালাক প্রার্থনা করবে না।
যে নারী বিনা কারণে তার স্বামীর কাছে তালাক প্রার্থনা করবে তার জন্য জান্নাতের ঘ্রাণ হারাম অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এটা ভীতি ও ধমকিমূলক বাক্য। মুহসিন বা নেককারগণ যেমন প্রথম ধাপেই জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবেন তারা সেই সুঘ্রাণ পাবে না। ‘আল্লামা কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ এটাও হতে পারে যে, যদি সে জান্নাতে প্রবেশ করে তবে সুঘ্রাণ থেকে বঞ্চিত থাকবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
এবারে আসুন দেখে নেয়া যাক, তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআনে কী বলা আছে, [64] –
মুসলিম আইনে নারীদের হাতে তালাকের বিধান হলোঃ
১. খোলা তালাক,
২. মুবারাত এবং
৩. তালাক-ই তাওফিজ
হানাফি ফিকাহ শাস্ত্রের বুনিয়াদি গ্রন্থ আল হেদায়ার তালাক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একজন মুসলিম নারী শুধু খোলা তালাকের মাধ্যমে বিয়ে বিচ্ছেদ করতে পারেন। যেটি সম্পূর্ণ স্বামীর পক্ষেই থাকে। অন্যান্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বা ইসলামিক শরীয়া আইনে পুরুষই তালাক দেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত। নারীর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তালাক প্রদানের ক্ষমতা নেই। তবে শুধুমাত্র দুই একটি ক্ষেত্রে, যেমন স্বামী যৌন অক্ষম হলে কিংবা পাগল হলে, স্ত্রী তালাকের জন্য আবেদন করতে পারে বিচারকের কাছে। বিচারকের মর্জি হলে তালাক পাওয়া যাবে। তবে স্বামী যেকোন অবস্থাতেই তালাক দিতে পারেন। তালাকের ক্ষেত্রে স্বামীর অধিকারই মূখ্য, কারণ স্বামীই হচ্ছে মালিক।
এবারে আসুন ফিকহে ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু গ্রন্থ থেকে তৃতীয় খলিফা ওসমানের সময়ে আইনটি দেখে নিই, [65]
এবারে আসুন একটি ফতোয়া দেখে নিই [66] –
তালাকপ্রাপ্তা নারী খোরপোষ পাবে না
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৮/ ত্বলাক
পরিচ্ছদঃ ৬৮/৪১. ফাতিমাহ বিন্ত কায়সের ঘটনা
৫৩২৩-৫৩২৪. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ফাতিমার কী হল? সে কেন আল্লাহকে ভয় করছে না অর্থাৎ তার এ কথায় যে, তালাকপ্রাপ্তা নারী (তার স্বামীর থেকে) খাদ্য ও বাসস্থান কিছুই পাবে না। (৫৩২১, ৫৩২২) আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮২৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৯। ত্বলাক্ব (তালাক)
পরিচ্ছদঃ ৬. বায়িন ত্বলাকপ্রাপ্তা* স্ত্রীর জন্য খোরপোষ নেই
৩৬০০-(৪৪/…) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশশার (রহিমাহুমাল্লাহ) ….. ফাত্বিমাহ বিনতু কায়স (রাযিঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিন ত্বলাক (তালাক) প্রাপ্ত মহিলা সম্পর্কে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তার জন্য বাসস্থান ও খোরপোষ কোনটাই নেই। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৫৭০, ইসলামীক সেন্টার ৩৫৭০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
স্ত্রী মারা গেলে কান্না এবং আবার বিয়ে করা
ইসলামের বিধান হচ্ছে, স্বামী মারা গেলে তার ইদ্দত পালন ও শোক পালন করা ওয়াজিব, তবে স্ত্রী মারা গেলে পুরুষের শোক পালনের কোন বিধান নেই। এমনকি স্বামী চাইলে পরের দিনই নতুন বিবি নিয়ে আসতে পারেন। আসুন বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়েখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ এর ইসলামকিউএ ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে কী বলা আছে তা দেখে নিই, [67]
প্রশ্ন
স্ত্রীর মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট কোন সময় শোক ও দুঃখ পালন করা কি স্বামীর উপর ওয়াজিব?
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.
শোকপালন (ইহদাদ) মানে নির্দিষ্ট একটি সময় সাজসজ্জা ও সুগন্ধির ব্যবহার বর্জন করা। এটি নারীদের বৈশিষ্ট্য; পুরুষদের নয়। যে নারীর স্বামী মারা গেছেন তার উপর ইদ্দত পালন ও শোক পালন ওয়াজিব।
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:
“সদ্য বিধবা নারী সুগন্ধি ও সাজসজ্জা বর্জন করবে…। এটাকে শোকপালন বলা হয়। সদ্য বিধবা নারীর উপর এটি ওয়াজিব — এ ব্যাপারে আলেমদের কোন মতভেদ আছে মর্মে আমরা জানি না।”[আল-মুগনী (৮/১২৫)]
স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রতে (২০/৪৭৯) এসেছে:
“যে নারীর স্বামী মারা গেছেন তার উপর ইদ্দত পালন ও শোক পালন ওয়াজিব।”[সমাপ্ত]
পক্ষান্তরে, আলেমদের ইজমাক্রমে (সর্বসম্মতিক্রমে) পুরুষের উপর কোন শোকপালন নেই।
আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা গ্রন্থে (২/১০৫) এসেছে: “তারা (আলেমগণ) এই মর্মে ইজমা (মতৈক্য) করেছেন যে, পুরুষের উপরে শোকপালন নেই।”[সমাপ্ত]
স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে (১৯/১৫৬) এসেছে:
“আমরা যে অঞ্চলে আছি সেখানে একটি প্রথা আছে; তাহলো: কারো স্ত্রী মারা গেলে সে স্বামী ৬ মাস বা তদুর্ধ্ব সময়ের আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে না। আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন: কেন? তারা বলবে: স্ত্রীর প্রতি সম্মানপ্রদর্শনস্বরূপ। ঘটনাক্রমে এক লোক তার স্ত্রী মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে বিয়ে করে ফেলে। মানুষ তার বিয়েতে যায়নি। এমনকি তারা এ লোককে সালাম পর্যন্ত দেয় না। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে; এমনকি সেটা যদি একদিন পরেও হয় বিয়ে করা কি শরিয়তে অনুমোদিত; নাকি অনুমোদিত নয়?
জবাব: এটি একটি জাহেলী প্রথা। পবিত্র শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। তাই এ প্রথাটি বর্জন করা ও এটাকে বিবেচনা না করার জন্য একে অপরকে নসিহত করা বাঞ্চনীয়। যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মৃত্যুর পরপর বিয়ে করেছে তার সাথে সম্পর্কচ্ছিন্ন করা জায়েয নয়। কেননা তা শরিয়ত প্রদত্ত অধিকার ছাড়া সম্পর্কচ্ছেদ।”[সমাপ্ত]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
অবমাননাকর হিল্লা বিবাহ
ইসলামে পূর্বে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিবাহ করার একটি উপায় হচ্ছে, আরেকজন লোক যদি সেই স্ত্রীকে বিবাহ করে, এবং তার সাথে সহবাস করার পরে স্বেচ্ছায় তালাক দেয়, তাহলে পূর্বের স্বামী তাকে আবার বিবাহ করতে পারবে। উল্লেখ্য, ইসলামে হিল্লা বিবাহ হারাম করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ আগে থেকে পরিকল্পনা করে এরকম কৌশলে পুর্বের স্ত্রীকে আবার বিবাহ করা যাবে না। কিন্তু সেই ক্ষেত্রেও, ইসলামে নারীর এই অবমূল্যায়ন অত্যন্ত পরিষ্কার। নারীটি যেন খেলার পুতুল, খেললাম, তালাক দিলাম, অন্য আরেকজনের কাছে খেলতে দিলাম, সে খেলে টেলে ফেরত দিলে এরপরে সেই নারী হালাল [68]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃত্ব; নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।
– কোরআন, সূরা আল বাকারা, আয়াত ২৩০
বন্ধ্যা নারীদের বিয়ে করা যাবে না
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী হচ্ছে সন্তান জন্মদানের একটি মেশিন। বন্ধ্যা নারীরা যেহেতু সন্তান জন্ম দিতে পারে না, তাই তাদের মূল্য ছিল মুহাম্মদের কাছে কম। সেই কারণে নবী মুহাম্মদ বন্ধ্যা নারীদের বিবাহ করতে নিষেধ করতে গেছেন। নারীর জন্য যা অত্যন্ত অবমাননাকর।
সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২৬/ নিকাহ (বিবাহ)
পরিচ্ছেদঃ ১১. বন্ধ্যা নারীকে বিবাহ করা অনুচিত
৩২৩০. আব্দুর রহমান ইবন খালিদ (রহঃ) … মা’কাল ইবন ইয়াসার (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে আরয করলোঃ আমি এমন এক মহিলার সন্ধান পেয়েছি, যে বংশ গৌরবের অধিকারিণী ও মর্যাদাবান, কিন্তু সে বন্ধ্যা, আমি কি তাকে বিবাহ করবো? তিনি তাকে নিষেধ করলেন। দ্বিতীয় দিন তাঁর নিকট আসলে তিনি নিষেধ করলেন। এরপর তৃতীয় দিন তাঁর খেদমতে আসলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেনঃ তোমরা অধিক সন্তান প্রসবা নারীকে বিবাহ করবে, যে তোমাদেরকে ভালবাসবে। কেননা, আমি তোমাদের দ্বারা সংখ্যাধিক্য লাভ করবো।
তাহক্বীকঃ হাসান। ইরওয়া ১৭৮৪, আদাবুয যিফাফ ১৬, সহীহ আবু দাউদ ১৭৮৯।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ৪. যে মহিলা সন্তান দিতে অক্ষম তাকে বিয়ে করা নিষেধ সম্পর্কে
২০৫০। মা‘কিল ইবনু ইয়াসার (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বললো, আমি এক সুন্দরী ও মর্যাদা সম্পন্ন নারীর সন্ধান পেয়েছি। কিন্তু সে বন্ধ্যা। আমি কি তাকে বিয়ে করবো? তিনি বললেনঃ না। অতঃপর লোকটি দ্বিতীয়বার এসেও তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে নিষেধ করলেন। লোকটি তৃতীয়বার তাঁর নিকট এলে তিনি তাকে বললেনঃ এমন নারীকে বিয়ে করে যে, প্রেমময়ী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারী। কেননা আমি অন্যান্য উম্মাতের কাছে তোমাদের সংখ্যাঘিধক্যের কারণে গর্ব করবো।(1)
হাসান সহীহ।
(1). নাসায়ী।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ)
অল্পবয়সী কুমারী মেয়ে
অল্পবয়সী কুমারী মেয়েদের বিয়ে করার পরামর্শ
নবী মুহাম্মদ তার সাহাবীদের অল্পবয়সী কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে অনুপ্রাণিত করতেন। এই বিষয়ে বেশ কিছু হাদিস রয়েছে [69] [70] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬৭/ বিয়ে
পরিচ্ছেদঃ ৬৭/১০. ত্বলাক্বপ্রাপ্তা অথবা বিধবামেয়েকে বিয়ে করা।
৫০৮০. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বিয়ে করলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন মেয়ে বিয়ে করেছ? আমি বললাম, পূর্ব বিবাহিতা মেয়েকে বিয়ে করেছি। তিনি বললেন, কুমারী মেয়ে এবং তাদের কৌতুক তুমি চাও না? (রাবী মুহাজির বলেন) আমি এ ঘটনা ‘আমর ইবনু দ্বীনার (রাঃ)-কে জানালে তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, তুমি কেন কুমারী মেয়েকে বিয়ে করলে না, যার সাথে তুমি খেলা-কৌতুক করতে এবং সে তোমার সাথে খেলা-কৌতুক করত? (৪৪৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৭০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭০৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৯/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩. কুমারী মেয়েকে বিয়ে করা
১১০০। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, এক মহিলাকে বিয়ে করে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে গেলাম। তিনি বললেনঃ হে জাবির! তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ কুমারী মেয়ে না বিধবা মেয়ে?
আমি বললাম, না, বরং বিধবা। তিনি বললেনঃ কুমারী মেয়েকে বিয়ে করলে না কেন? তাহলে তার সাথে তুমিও আনন্দ করতে পারতে এবং তোমার সাথে সেও আমোদ-প্রমোদ করতে পারত। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মৃত্যুর সময় আবদুল্লাহ (আমার পিতা) সাতটি অথবা নয়টি মেয়ে রেখে গেছেন। এজন্য এমন মহিলাকে এনেছি যেন সে তাদের দেখাশোনা করতে পারে। আমার জন্য তখন তিনি দু’আ করলেন।
— সহীহ, ইরওয়া (১৭৮), বুখারী, মুসলিম
উবাই ইবনু কাব ও কাব ইবনু উজরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। জাবির (রাঃ)-এর হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
সরাসরি ইবনে মাজাহ গ্রন্থ থেকেও হাদিসগুলো দেখি [71] –
কুমারী মেয়েদের প্রতি আসক্তি
নবী মুহাম্মদের কুমারী মেয়েদের প্রতি আসক্তি ছিল। যেই কারণে তিনি অকুমারী স্ত্রীদের সাথে তিনরাত থাকলে কুমারী স্ত্রীর সাথে থাকতেন সাতরাত [72] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬৭/ বিয়ে
পরিচ্ছেদঃ ৬৭/১০১. যখন কেউ সাইয়্যেবা স্ত্রী থাকা অবস্থায় কুমারী মেয়ে বিয়ে করে।
৬৭/১০০. অধ্যায়ঃ আপন স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ করা।
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘তোমরা কক্ষনো স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না যদিও প্রবল ইচ্ছে কর….আল্লাহ প্রশস্ততার অধিকারী, মহাকুশলী।’’ (সূরাহ আন্-নিসা ৪/১২৯-১৩০)
৫২১৩. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত এই যে, যদি কেউ কুমারী মেয়ে বিয়ে করে, তবে তার সঙ্গে সাত দিন-রাত্রি যাপন করতে হবে আর যদি কেউ কোন বিধবা মহিলাকে বিয়ে করে, তাহলে তার সঙ্গে তিন দিন যাপন করতে হবে। (৫২১৪; মুসলিম ১৭/১২, হাঃ ১৪৬১, আহমাদ ১২৯৭০) (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৩৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
কুমারীদের যোনীপথ উষ্ণ
নবী মুহাম্মদ বলেছেন, কুমারী মেয়েদের যোনীপথ অপেক্ষাকৃত উষ্ণ হয়। তাই তিনি কুমারী বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছেন।
হাদীস সম্ভার
অধ্যায়ঃ ২৪/ বিবাহ ও দাম্পত্য
পরিচ্ছেদঃ স্ত্রী নির্বাচন
(২৫৫৮) একাধিক সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কুমারী বিবাহ কর। কারণ কুমারীদের মুখ অধিক মিষ্টি, তাদের গর্ভাশয় অধিক সন্তানধারী, তাদের যোনীপথ অধিক উষ্ণ, তারা ছলনায় কম হয় এবং স্বল্পে অধিক সমত্মুষ্ট থাকে।
(ইবনে মাজাহ ১৮৬১, ইবনুস সুন্নী, ত্বাবারানী, সিঃ সহীহাহ ৬২৩, সহীহুল জামে’ হা/ ৪০৫৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
কুমারী নারী হচ্ছে না খাওয়া নারী
অনেক সময় আমরা অনেক মুমিনের মুখে কিছু বিকৃত রুচির কথা শুনি। এই যেমন কিছুদিন আগেই মিজানুর রহমান আজহারী নামক এক ইসলামিক বক্তা তার ওয়াজে বলেছিলেন, হযরত খাদিজা ইনটেক ছিলেন না! মানে ভার্জিন ছিলেন না! যা খুবই অবমাননাকর কথা। কিন্তু ইসলাম কী আসলেই এইভাবে নারীদের খাওয়া আর না খাওয়া হিসেবে গণ্য করে? যেই নারী যৌন সঙ্গম করেছে, তারা কি ইসলামের দৃষ্টিতে খাওয়া হয়ে যাওয়া নারী হিসেবে গণ্য? আসুন নিচের হাদিসটি পড়ি [73] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৪/ বিয়ে-শাদী
পরিচ্ছেদঃ ২৪৩৪. কুমারী মেয়ের শাদী সম্পর্কে।
ইবন আবী মুলায়কা (র) বলেন, ইবন আব্বাস (রা) আয়েশা (রা)-কে বললেন, আপনাকে ছাড়া নবী (সা) আর কোন কুমারী মেয়ে শাদী করেননি।
৪৭০৬। ইসমাঈল ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, আমি বললাম, ইয়া রাসূলল্লাহ! মনে করুন আপনি এমন একটি ময়দানে গিয়ে পৌঁছলেন, যেখানে একটি গাছের কিছু অংশ খাওয়া হয়ে গেছে। আর এমন কটি গাছ পেলেন, যার কিছুই খাওয়া হয়নি। এর মধ্যে কোন গাছের পাতা আপনার উটকে খাওয়াবেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, যে গাছ থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। এ কথার দ্বারা আয়িশা (রাঃ) এর উদ্দেশ্য ছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ছাড়া অন্য কোন কুমারীকে শাদী করেননি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
অপ্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়েকে বিয়ে দেয়া
বয়ষ্ক পুরুষ অপ্রাপ্তবয়সী কন্যাকেও বিয়ে করতে পারবে। যেমন মুহাম্মদ করেছিলেন ৫৩ বছর বয়সে ৬ বছরের আয়শাকে বিয়ে [74]।
তোমাদের যে সব স্ত্রী আর ঋতুবতী হওয়ার আশা নেই। তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যারা এখনো ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদেরও; আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আর যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ্ তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।
কোরআন সূরাঃ আত-ত্বলাক্ব আয়াত ৪
হাদিসেও বলা রয়েছে,
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১৭। বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১০. পিতা অপ্রাপ্ত বয়স্কা কুমারী কন্যার বিবাহ দিতে পারে
৩৩৭০-(৬৯/১৪২২) আবূ কুরায়ব মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলা ও আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহু (রহিমাছমাল্লাহ) … আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিয়ে করেছেন, আমার বয়স তখন ছয় বছর। তিনি আমাকে নিয়ে বাসর ঘরে যান, তখন আমার বয়স নয় বছর। আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেন, আমরা হিজরাত করে মাদীনায় পৌছার পর আমি একমাস যাবৎ জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম এবং আমার মাথার চুল পড়ে গিয়ে কানের কাছে (কিছু) থাকে। (আমার মা) উম্মু রূমান আমার নিকট এলেন, আমি তখন একটি দোলনার উপরে ছিলাম এবং আমার কাছে আমার খেলার সাখীরাও ছিল। তিনি আমাকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকলেন, আমি তার নিকট গেলাম।
আমি বুঝতে পারিনি যে, তিনি আমাকে নিয়ে কী করবেন। তিনি আমার হাত ধরে আমাকে দরজায় নিয়ে দাঁড় করালেন। আমি তখন বলছিলাম, আহ, আহ। অবশেষে আমার উদ্বেগ দূরীভূত হল। তিনি আমাকে একটি ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে আনসার মহিলাগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলে আমার কল্যাণ ও রহমাতের জন্য দুআ করলেন এবং আমার সৌভাগ্য কামনা করলেন। তিনি (মা) আমাকে তাদের নিকট সমর্পণ করলেন। তারা আমার মাথা ধুয়ে দিলেন এবং আমাকে সুসজ্জিত করলেন। আমি কোন কিছুতে ভীত শংকিত হইনি। চাশতের সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং তারা আমাকে তার নিকট সমর্পণ করলেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৩৪৪, ইসলামীক সেন্টার ৩৩৪৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
অপমানজনক আরও বক্তব্য
পুরুষরা নারীর থেকে শ্রেষ্ঠ
পুরুষ নারীর থেকে সর্বদাই শ্রেষ্ঠ। শিক্ষায়, মেধায়, জ্ঞানে নারী যত কিছুই করুক না কেন, পুরষই শ্রেষ্ঠ। প্রাইমারী স্কুল ফেল পুরুষও পিএইচডি করা নারীর চাইতে শ্রেষ্ঠ, এটা কোরআনের ঘোষণা [75] –
আর নারীদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে।
– কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২২৮
পুরুষের থেকে নারীর বুদ্ধি কম হয়
কোরআন হাদিস এবং প্রায় সকল ইসলামিক রেফারেন্সে কোন রাখঢাক না রেখেই পরিষ্কারভাবে নারীদের স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করার শিক্ষা দেয়া হয়। বিষয়টি শুধু আপত্তিকরই নয়, নারীর জন্য অবমাননাকরও বটে। [76] [77] –
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছদঃ ৩৪. ইবাদতের ত্রুটিতে ঈমান হ্রাস পাওয়া এবং কুফর শব্দটি আল্লাহর সাথে কুফুরী ছাড়া নিয়ামত ও হুকুম অস্বীকার করার বেলায়ও প্রযোজ্য
১৪৫। মুহাম্মাদ ইবনু রুম্হ ইবনু মুহাজির আল মিসরি (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ হে রমনীগন! তোমরা দান-খয়রাত করতে থাক এবং বেশি করে ইস্তিগফার কর। কেননা আমি দেখেছি যে, জাহান্নামের অধিবাসীদের অধিকাংশই নারী। জনৈকা বুদ্ধিমতী মহিলা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! জাহান্নামে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণ কি? বললেন, তোমরা বেশি বেশি অভিসম্পাত করে থাকো এবং স্বামীর প্রতি (অকৃতজ্ঞতা) প্রকাশ করে থাকো। আর দ্বীন ও জ্ঞান-বুদ্ধিতে ক্রটিপূর্ণ কোন সম্প্রদায়, জ্ঞানীদের উপর তোমাদের চেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী আর কাউকে আমি দেখিনি।
প্রশ্নকারিনী জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! জ্ঞান-বুদ্ধি ও দ্বীনে আমাদের কমতি কিসে? তিনি বললেনঃ তোমাদের জ্ঞান-বুদ্ধির ক্রটি হলো দু-জন স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান; এটাই তোমাদের বুদ্ধির ক্রটির প্রমাণ। স্ত্রীলোক (প্রতিমাসে) কয়েকদিন সালাত (নামায/নামাজ) থেকে বিরত থাকে আর রমযান মাসে রোযা ভঙ্গ করে; (ঋতুমতী হওয়ার কারণে) এটাই দ্বীনের ক্রটি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ২৪/ যাকাত
পরিচ্ছদঃ ২৪/৪৪. নিকটাত্মীয়দেরকে যাকাত দেয়া।
১৪৬২. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিত্রের দিনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গেলেন এবং সালাত শেষ করলেন। পরে লোকদের উপদেশ দিলেন এবং তাদের সদাকাহ দেয়ার নির্দেশ দিলেন আর বললেনঃ লোক সকল! তোমরা সদাকাহ দিবে। অতঃপর মহিলাগণের নিকট গিয়ে বললেনঃ মহিলাগণ! তোমরা সদাকাহ দাও। আমাকে জাহান্নামে তোমাদেরকে অধিক সংখ্যক দেখানো হয়েছে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কী? তিনি বললেনঃ তোমরা বেশি অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হয়ে থাক। হে মহিলাগণ! জ্ঞান ও দ্বীনে অপরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়চেতা পুরুষের বুদ্ধি হরণকারিণী তোমাদের মত কাউকে দেখিনি। যখন তিনি ফিরে এসে ঘরে পৌঁছলেন, তখন ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব (রাযি.) তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! যায়নাব এসেছেন। তিনি বললেন, কোন্ যায়নাব? বলা হলো, ইবনু মাস‘ঊদের স্ত্রী। তিনি বললেনঃ হাঁ, তাকে আসতে দাও। তাকে অনুমতি দেয়া হলো। তিনি বললেন, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ আপনি সদাকাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা সদাকাহ করার ইচ্ছা করেছি। ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) মনে করেন, আমার এ সদাকায় তাঁর এবং তাঁর সন্তানদেরই হক বেশি। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) ঠিক বলেছে। তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ সদাকাহর অধিক হাক্দার। (৩০৪, মুসলিম ১২/২, হাঃ ৯৮২, আহমাদ ৭২৯৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৭৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
একইসাথে, যেসকল নারীগণ নারী শিক্ষার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলার চেষ্টা করেছেন, তাদের সম্পর্কে আমাদের দেশের আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি কী, আসুন দেখে নেয়া যাক,
নারী নেতৃত্ব দিতে পারবে না
সরাসরি বুখারী শরীফ বই থেকে [78] [79]
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৮১/ ফিতনা
পরিচ্ছদঃ ২৯৯৪. পরিচ্ছেদ নাই
৬৬১৮। উসমান ইবনু হায়সাম (রহঃ) … আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি কথা দ্বারা আল্লাহ তা’আলা জঙ্গে জামাল (উষ্ট্রের যুদ্ধ) এর সময় আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন। (সে কথাটি হল) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌছলে যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার কন্যাকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে তখন তিনি বললেনঃ সে জাতি কখনই সফলকাম হবে না যারা তাদের শাসনভার কোন রমনীর হাতে অর্পণ করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৯২/ ফিতনা
পরিচ্ছদঃ ৯২/১৮. পরিচ্ছেদ নাই।
৭০৯৯. আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি কথা দিয়ে আল্লাহ্ জঙ্গে জামাল (উষ্ট্রের যুদ্ধ) এর সময় আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন। (তা হল) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যখন এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার মেয়েকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে, তখন তিনি বললেনঃ সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে।(1) (৪৪২৫) (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১৮)
(1) মুসলমানরা যদি সফলতা পেতে চায় তবে তাদেরকে অবশ্যই নারী নেতৃত্ব পরিহার করতে হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী (যুদ্ধ)
পরিচ্ছদঃ ৬৪/৮৩. পারস্যের কিসরা ও রোমের অধিপতি কায়সারের কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্র প্রেরণ।
৪৪২৫. আবূ বাকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রুত একটি বাণীর দ্বারা আল্লাহ জঙ্গে জামালের (উষ্ট্রের যুদ্ধ) দিন আমার মহা উপকার করেছেন, যে সময় আমি সাহাবায়ে কিরামের সঙ্গে মিলিত হয়ে জামাল যুদ্ধে শারীক হতে প্রায় প্রস্তুত হয়েছিলাম। আবূ বাকরাহ (রাঃ) বলেন, সে বাণীটি হল, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যবাসী কিসরা কন্যাকে তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছেন, তখন তিনি বললেন, সে জাতি কক্ষণো সফল হবে না স্ত্রীলোক যাদের প্রশাসক হয়। (৭০৯৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০৮০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
শুধু নেতৃত্বই নয়, নারীকে এমন কোন পদে যা হচ্ছে কোথাও শীর্ষ অবস্থান, কিংবা যার বহুবিধ দায়িত্ব থাকে। যেমন মন্ত্রী, বিচারক কিংবা প্রশাসক। এই বিষয়ে একটি বিখ্যাত ফতোয়া দেখে নিই [80]
People who appoint a woman as their leader will never succeed
Fatwa No: 96432
Fatwa Date:29-5-2007 – Jumaadaa Al-Oula 13, 1428
Question
What does the Messenger of God (saas) mean when he says, “Any community ruled by a woman will never succeed?” Jazaakum Allahu Khairan.
Answer
All perfect praise be to Allaah, The Lord of the Worlds. I testify that there is none worthy of worship except Allaah, and that Muhammad sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) is His slave and Messenger.
The Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) said: “A people who appoint a woman as their leader will never succeed.” (Al-Bukhari). This narration means that it is not permissible for a woman to lead positions of great responsibility, like being a Muslim ruler, a minister, or a judge and the like, as this leads her to mix and be in seclusion with men, and bear great responsibilities which does not befit the nature of a woman.
As regards the small positions which a woman can efficiently run and bear, and in which her responsibility is limited, then it is permissible for her to hold these positions, like running a hospital or a school. For instance ‘Umar may Allaah be pleased with him appointed Ash-Shifaa’ bint ‘Abdullaah Al-‘Adawiyyah may Allaah be pleased with her as an accountant for Al-Madeenah market. Ibn Hajar may Allaah have mercy upon him reported this in a biography about Ash-Shifaa’ may Allaah be pleased with her and ‘Aa’ishah may Allaah be pleased with her was appointed to take care of orphans.
Allaah Knows best.
সেইসাথে, ইসলামিক স্কলারগণ আরো একটি দাবী করেন যে, জঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধে হযরত আয়িশা হযরত আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তাই ইসলামে নারীরাও যোদ্ধা হতে পারে এবং নেতৃত্ব দিতে পারে! অথচ, ইসলামের বিধান হচ্ছে, নারী কখনই নেতৃত্ব দিতে পারবে না। আসুন দেখি, এই বিষয়ে ইসলামের অবস্থান কী!
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩১/ কলহ ও বিপর্যয়
পরিচ্ছেদঃ ৭৫. যে জাতি নিজেদের শাসক হিসাবে নারীকে নিয়োগ করে
২২৬২। আবূ বাকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে শুনা একটি উক্তি দ্বারা আল্লাহ তা’আলা আমাকে (উষ্ট্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ হতে) রক্ষা করেছেন। পারস্য সম্রাট কিসরা নিহত হওয়ার পর তিনি প্রশ্ন করেনঃ তারা কাকে শাসক হিসাবে নিয়োগ করেছে? সাহাবীগণ বলেন, তার কন্যাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে জাতি নিজেদের শাসক হিসাবে নারীকে নিয়োগ করে সে জাতির কখনো কল্যাণ হতে পারে না। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আইশা (রাঃ) বসরায় আসার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐ বাণী আমার মনে পড়ে গেল। অতএব, এর মাধ্যমেই আল্লাহ তা’আলা আমাকে (আলীর বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ হতে) রক্ষা করেন।
সহীহ, ইরওয়া (২৪৫), বুখারী।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ বাকরা (রাঃ)
উপরের হাদিস থেকে বোঝা যায়, আয়িশা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও, সেটি আসলে ইসলামের বিধান অনুসারে সঠিক কাজ ছিল না। কারণ ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান হচ্ছে, নারী নেতৃত্ব দিতে পারবে না। এবারে আসুন আলেমদের মুখ থেকে শুনে নিই,
নারীর খৎনা করা
ইসলামের বিধান অনুসারে, নারীদেরও খৎনা করা উচিত। আসুন শায়খ আহমদুল্লাহর বক্তব্য শুনে নিই এবং প্রাসঙ্গিক হাদিসটি পড়ি,
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৬/ শিষ্টাচার
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
পরিচ্ছদঃ ১৮০. খাতনা করা সম্পর্কে
৫২৭১। উম্মু ‘আতিয়্যাহ আল-আনসারী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। মদীনাতে এক মহিলা খাতনা করতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি গভীর করে কাটবে না। কারণ তা মেয়েলোকের জন্য অধিকতর আরামদায়ক এবং স্বামীর জন্য অতি পছন্দনীয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রহঃ) থেকে আব্দুল মালিক (রহঃ) সূত্রে একই অর্থে ও সনদে এটি বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটির সনদ দুর্বল।(1)
সহীহ।
(1). বায়হাক্বী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
নারীরা অধিক জাহান্নামী
নবী মুহাম্মদ বলেছেন, নারীরা হচ্ছে অধিক জাহান্নামী [81] –
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২/ ঈমান
পরিচ্ছদঃ ২১/ স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা
২৮। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। (আমি দেখি), তার অধিবাসীদের অধিকাংশই স্ত্রীলোক; (কারন) তারা কুফরী করে। জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তারা কি আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করে?’ তিনি বললেনঃ ‘তারা স্বামীর অবাধ্য হয় এবং ইহসান অস্বীকার করে। ’ তুমি যদি দীর্ঘকাল তাদের কারো প্রতি ইহসান করতে থাক, এরপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখলেই বলে, ‘আমি কখনো তোমার কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাইনি। ’
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তিনজন ছাড়া সকল নারী অপূর্ণাঙ্গ
ইসলামের আকিদা অনুসারে পুরুষের মধ্যে অনেকেই পূর্ণাঙ্গতা অর্জন করলেও, নারীদের মধ্যে দুইজন ছাড়া কেউ পূর্ণাঙ্গতা অর্জন করতে পারেনি। অর্থাৎ বেশিরভাগ নারীই অপূর্ণাঙ্গ জীব [82] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আঃ)
পরিচ্ছদঃ ৬০/৪৬. মহান আল্লাহর বাণীঃ
৩৪৩৩. আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল নারীর উপর ‘আয়িশাহর মর্যাদা এমন, যেমন সকল খাদ্যের উপর সারীদের মর্যাদা। পুরুষদের মধ্যে অনেকেই পূর্ণাঙ্গতা অর্জন করেছেন। কিন্তু নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারইয়াম এবং ফির‘আউনের স্ত্রী আছিয়া ছাড়া কেউ পূর্ণাঙ্গতা অর্জন করতে পারেনি। (৩৪১১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১৮০ প্রথমাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১৮৯ প্রথমাংশ)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
নারীর সাক্ষ্য পুরুষের অর্ধেক
আইন আদালতে নারীর সাক্ষ্য পুরুষের সাক্ষ্যর অর্ধেক। দুইজন নারী সমান একজন পুরুষ। তা সে যত নির্বোধ পুরুষই হোক না কেন। একমাত্র পুরুষ হওয়াটাই তার দুইজন নারীর সমকক্ষ হবার যোগ্যতা [83] –
দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা।
– কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২৮২
নারীদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করতে হবে
নারীদের বাড়িতেই থাকা উচিত এবং পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ, এই ধারণা বা বিশ্বাস একটি ভয়ঙ্কর সেকেলে দৃষ্টিভঙ্গি যা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্যই ক্ষতিকর নয়, সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্যও ক্ষতিকর, কারণ এটি লিঙ্গ বৈষম্যকে স্থায়ী করে এবং জনসংখ্যার অর্ধেকের সম্ভাবনাকে সীমিত করে। প্রথম এবং সর্বাগ্রে, নারীদের ঘরে থাকা উচিত এই ধারণাটি পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবের মধ্যে নিহিত যা নারীকে পুরুষদের থেকে স্বাভাবিকভাবেই নিকৃষ্ট এবং অমেধাবী হিসেবে চিহ্নিত করে, যা একটি নারী শিশুর মনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তার করতে পারে। পড়াশোনা বা চাকরিবাকরির উদ্দেশ্যে বাইরে যাওয়া যদি পুরোপুরিভাবে পরিবারের পুরুষ অভিভাবকের ওপর নির্ভরশীল হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরকম দেখা যাবে যে, পুরুষ অভিভাবকটির পছন্দ না হলে একজন নারী মেধা ও যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়ার পরেও, সেই চাইলেও তার জীবনের সিদ্ধান্ত সে নিজে নিতে পারে না। নারীদের পড়াশোনা ও কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা লিঙ্গ সমতা ও মানবাধিকারের নীতির সরাসরি পরিপন্থী। নারীদের শিক্ষা এবং কাজের অধিকার রয়েছে এবং তাদের লিঙ্গের ভিত্তিতে তাদের সুযোগ সীমিত করা এই অধিকারগুলির লঙ্ঘন।
উপরন্তু, যখন নারীদের শিক্ষা এবং কর্মজীবন বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে, চলাফেরা এবং নিজের স্বাধীনতা উপভোগ করা সীমাবদ্ধ করা হয়, তখন তারা তাদের পূর্ণ সম্ভাবনার বিকাশ এবং সমাজে অর্থপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়। একজন মেয়ে অনেক দুর্দান্ত মেধাবী হতে পারে, লিঙ্গ তার মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে কোন বাধা হতে পারে না। তার করার জন্য অনেক কিছু আছে, এবং ব্যক্তিগত এবং পেশাদার সুযোগ সীমিত করা তাদের প্রতিভা এবং ক্ষমতার এক বিশাল অপচয়।
একইসাথে, নারীদের বাড়িতে থাকা উচিত এমন বিশ্বাস ক্ষতিকারক লিঙ্গ বৈষম্য এবং স্টেরিওটাইপগুলিকেও স্থায়ী করে। এটি এই ধারণাটিকে শক্তিশালী করে যে মহিলারা শুধুমাত্র কিছু কাজের যেমন বাচ্চা জন্ম দেয়া, রান্নাবান্না করা ইত্যাদির জন্য উপযুক্ত। এটি শুধুমাত্র নারীর সুযোগ সীমিত করে না, বরং এই ধারণাটিকেও শক্তিশালী করে যে পুরুষরা নারীদের চেয়ে উচ্চতর এবং কর্মজীবন ও শিক্ষার জন্য বেশি উপযুক্ত। একটি পরিবারে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে থাকলে, তাদের পিতা এই ধরণের ইসলামি মন মানসিকতার মানুষ হলে এটি খুবই স্বাভাবিক যে, মেয়েটিকে বেশি পড়ালেখা সে করাবে না। হয়তো মেয়েটিই ছিল বেশি মেধাবী, কিন্তু তার সুযোগ হবে সীমিত। অন্যদিকে, ছেলেটি কম মেধাবী হলেও সে সুযোগ পাবে বেশি। নারীদের পড়াশোনা এবং কাজের সুযোগ নিয়ন্ত্রণ করার অর্থনৈতিক পরিণতিও রয়েছে। যখন নারীদের শিক্ষা এবং কর্মজীবন সীমাবদ্ধ করা হয়, তখন তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে। অধিকন্তু, মহিলাদের সুযোগ সীমিত করা আয়বৈষম্যকেও বাড়িয়ে তোলে, কারণ একই কাজের জন্য মহিলাদের প্রায়শই পুরুষদের তুলনায় কম বেতন দেওয়া হয়, যার ফলে আয়ের ব্যবধান বেড়ে যায়।
এই ধরণের ধর্মীয় বিশ্বাস যে মহিলাদের বাড়িতে থাকা উচিত এবং পড়াশুনা বা কাজ না করা উচিত, করতে হলে পুরুষের অনুমতি সাপেক্ষে করা উচিত, এগুলো একটি মধ্যযুগীয় দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে সৃষ্টি করে যা লিঙ্গ বৈষম্যকে স্থায়ী করতে সহায়ক এবং জনসংখ্যার অর্ধেকের সম্ভাবনাকে সীমিত করে দেয়। আসুন কোরআনের সেই আয়াতটি ভালভাবে পড়ি,
তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।
সুরা আহজাব আয়াত ৩৩
এবারে আসুন এই সম্পর্কিত কিছু ওয়াজ শুনে নিই,
নারীদের রাস্তার মাঝ দিয়ে চলা যাবে না
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৮/ সালাম
৫১৮২. আবদুল্লাহ ইবন মাসলামা (রহঃ) ………. আবূ উসায়দ আনসারী (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বর্ণনা কবতে শুনেছেন; যখন তিন মসজিদ থেকে বেরিয়ে দেখতে পান যে, পুরুষেরা রাস্তার মাঝে মহিলাদের সাথে মিশে যাচ্ছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের বলেনঃ তোমরা অপেক্ষা কর! তোমাদের রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলাচল করা উচিত নয়, বরং তোমরা রাস্তার এক পাশ দিয়ে যাবে। এরপর মহিলারা দেয়াল ঘেষে চলাচল করার ফলে অধিকাংশ সময় তাদের কাপড় দেয়ালের সাথে আটকে যেত।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পরপুরুষের সাথে কর্কশ কণ্ঠ
ইসলামের বিধান হচ্ছে, কোন নারীর কোন পরপুরুষের সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলে তাকে কর্কশ কণ্ঠে কথা বলতে হবে। সুমিষ্ট এবং সভ্য ভদ্রভাবে কথা বলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোরআনেই বলা হয়েছে,
হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে পর পুরুষের সঙ্গে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, যাতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে প্রলুদ্ধ হয়। তোমরা সঙ্গত কথা বলবে।
— Taisirul Quran
হে নাবীর পত্নীরা! তোমরা অন্য নারীদের মত নও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে পর-পুরুষের সাথে কোমল কন্ঠে এমনভাবে কথা বলনা যাতে অন্তরে যার ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায় সঙ্গত কথা বলবে।
— Sheikh Mujibur Rahman
হে নবী-পত্নিগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।
— Rawai Al-bayan
হে নবী -পত্নিগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর সুতরাং পর-পুরুষের সাথে কমল কন্ঠে এমন ভাবে কথা বলো না, কারণ এতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
অনেক মডারেট মুসলিম বর্তমান সময়ে কোরআনের এই আয়াত দেখিয়ে দাবী করেন যে, এই আয়াত শুধুমাত্র নবীর স্ত্রীদের সম্পর্কে নাজিল হয়েছিল। অথচ তারা নিজেরাও জানে যে, ইসলামে নবীর স্ত্রীদের বিভিন্ন হুকুম দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ আসলে স্বাধীনা মুমিনা নারীদেরই হুকুম দিয়েছেন বহু স্থানে। এই বিষয়ে সাহাবী ও তাবে তাবেইনগণই এই রকমই বুঝেছেন যে, এই বিধান সকল মুমিনা নারীর জন্যেই প্রযোজ্য [84] –
সুগন্ধী ব্যবহারকারীরা ব্যভিচারিণী
হাদীস সম্ভার
২৪/ বিবাহ ও দাম্পত্য
পরিচ্ছেদঃ পর্দার বিধান
(২৬৫৯) আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক চক্ষুই ব্যভিচারী। আর রমণী যদি সুগন্ধি ব্যবহার করে কোন (পুরুষের) মজলিসের পাশ দিয়ে পার হয়ে যায় তাহলে সে এক বেশ্যা।
(আহমাদ, সঃ তিরমিযী ২২৩৭, আবূ দাঊদ ৪১৭৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ‘আমির আশ’আরী (রাঃ)
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৪ঃ সলাত
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ২৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – জামা‘আত ও তার ফাযীলাত সম্পর্কে
১০৬৫-(১৪) আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতিটি চক্ষুই ব্যভিচারী। আর যে মহিলা সুগন্ধি দিয়ে পুরুষদের সভায় যায় সে এমন এমন অর্থাৎ ব্যভিচারকারিণী। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)(1) (1) হাসান : আত্ তিরমিযী ২৭৮৬, আবূ দাঊদ ৪১৭৩, সহীহ আত্ তারগীব ২০১৯, সুনান আল কুবরা ৯৪২২, ইবনু খুযায়মাহ্ ১৬৪১, ইবনু হিব্বান ৪৪২৪।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
হাদীস সম্ভার
২৪/ বিবাহ ও দাম্পত্য
পরিচ্ছেদঃ পর্দার বিধান
(২৬৬১) আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদা চাশতের সময় তিনি মসজিদ থেকে বের হলেন। দেখলেন, একটি মহিলা মসজিদ প্রবেশে উদ্যত। তার দেহ বা লেবাস থেকে উৎকৃষ্ট সুগন্ধির সুবাস ছড়াচ্ছিল। আবূ হুরাইরা মহিলাটির উদ্দেশে বললেন, ’আলাইকিস্ সালাম।’ মহিলাটি সালামের উত্তর দিল। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন, ’কোথায় যাবে তুমি?’ সে বলল, ’মসজিদে।’ বললেন, ’কি জন্য এমন সুন্দর সুগন্ধি মেখেছ তুমি?’ বলল, ’মসজিদের জন্য।’ বললেন, ’আল্লাহর কসম?’ বলল, ’আল্লাহর কসম।’ পুনরায় বললেন, ’আল্লাহর কসম?’ বলল, ’আল্লাহর কসম।’ তখন তিনি বললেন, ’তবে শোন, আমাকে আমার প্রিয়তম আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ’’সেই মহিলার কোন নামায কবুল হয় না, যে তার স্বামী ছাড়া অন্য কারোর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে; যতক্ষণ না সে নাপাকীর গোসল করার মত গোসল করে নেয়।’’ অতএব তুমি ফিরে যাও, গোসল করে সুগন্ধি ধুয়ে ফেল। তারপর ফিরে এসে নামায পড়ো।
(আবূ দাঊদ ৪১৭৬, নাসাঈ ৫১২৭, ইবনে মাজাহ ৪০০২, বাইহাকী ৫৫৮২, সিলসিলাহ সহীহাহ ১০৩১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সাজসজ্জা/সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি হারাম
সরাসরি বই থেকে [85]
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৮/ পোশাক ও সাজসজ্জা
পরিচ্ছদঃ ২৮. পরচুলা সংযোজনকারিণী ও সংযোজন প্রার্থিনী, মানবদেহে চিত্র অংকনকারিনী ও অংকন প্রার্থিনী, ভ্রুর পশম উৎপাটনকারিণী ও উৎপাটনপ্রার্থিনী, দাঁতের মাঝে দর্শনীয় ফাঁক সুষমা তৈরিকারিণী এবং আল্লাহর সৃজনে বিকৃতি সাধনকারিণীদের ক্রিয়াকলাপ হারাম
৫৩৮৮। ইসহাক ইবন ইবরাহীম ও উসমান ইবন আবু শায়বা (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মানবদেহে চিত্র অঙ্কনকারিণী ও অঙ্কনপ্রার্থিণী নারী, (বড় দেখাবার জন্য) কপাল ভ্রুর চুল উৎপাটনকারিণী ও উৎপাটনকামী নারী এবং (সৌন্দর্য সুষমা বৃদ্ধির মানসে) দাঁতের মাঝে (সুষম) ফাঁক সৃষ্টিকারিনী, যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধনকারিণী, এদের আল্লাহ তা’আলা লানত করেন।
রাবী বলেন, আসাদ গোত্রের উম্মু ইয়াকুব নাম্নী এক মহিলার কাছে (আবদুল্লাহ (রাঃ) এর) এ হাদীসের বর্ণনা পৌছল। তিনি কুরআন পাঠে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি তার কাছে কাছে এসে বললেন, সে হাদীসখানি কিরূপ, যা আপনার পক্ষ থেকে আমার কাছে পৌছেছে যে, আপনি মানবদেহে চিত্র অঙ্কনকারিণী ও অঙ্কনকামী নারী ও কপাল ভ্রুর লোম উৎপাটনকারিণী ও উৎপাটনকামী নারী এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রয়াসে দাতের মাঝে ফাক তৈরিকারিণীদের, যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন সাধনকারিণী, এদের লানত করেছেন?
আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমার কি যুক্তি থাকতে পারে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের অভিসম্পাত দিয়েছেন, আমি সে লোকদের অতিসস্পাত দিব না? অথচ তা আল্লাহর কিতাবে রয়েছে। মহিলা বললেন, পবিত্র গ্রন্থের (আল-কুরআন এর) বাঁধাই কাগজের মধ্যবর্তী (আগাগোড়া) সবটুকু আমি পড়েছি, কিন্তু তা তো কোথাও পাইনি? তিনি বললেন, তুমি যদি (গভীর অভিনিবেশসহকারে) পড়তে, তাহলে অবশ্যই তা পেতে। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
আর রাসুল তোমাদের কাছে যা উপস্থাপন করেন তা ধরে রাখ, আর তিনি যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।
মহিলা বললেন, আমি (প্রায় নিশ্চিত যে), এর কোন কিছু এখন গিয়ে আপনার স্ত্রীর মাঝে দেখতে পাব। তিনি বললেন, যাও, তা দেখ গিয়ে। রাবী বলেন, মহিলা আবদুল্লাহ (রাঃ) এর স্ত্রীর কাছে গেলেন, কিন্তু (সে সবের) কিছুই তিনি দেখতে পেলেন না। তখন তিনি ফরে এসে বললেন, দেখতে পেলাম না। তিনি বললেন, শোন! তেমন কিছু থাকলে আমরা একত্রে বসবাস করতাম না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
জান্নাতেও বৈষম্য
একপন স্ত্রী যদি স্বামীর অবাধ্য হয়, ইসলাম অনুসারে জান্নাতের হুরী বাহিনী সুর করে তখন গান গেয়ে সেই স্বামীকে আহবান করতে থাকে এবং সেই স্ত্রীকে অভিশাপ দিতে থাকে। অথচ, স্বামী যদি স্ত্রীকে নির্যাতন করে, তাহলে কিন্তু জান্নাতের কোন পুরুষ হুর সেই স্ত্রীর জন্য সুরে সুরে ডাকাডাকি করবে না [86] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-১৩ঃ বিবাহ
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৮-(২১) মু‘আয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে দুনিয়াতে কষ্ট দেয় (অর্থাৎ- অশ্রদ্ধা, অবাধ্যতা ইত্যাদির মাধ্যমে)। তখন উক্ত স্বামীর জান্নাতের রমণীগণ (হূরেরা) বলতে থাকে, তুমি তাকে কষ্ট দিও না, (যদি কর) তবে আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করবেন। তিনি তোমার নিকট (কিছু সময়ের দিনের) মেহমান, শীঘ্রই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে আসবে। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি গরীব)(1)
(1) হাসান : তিরমিযী ১১৭৪, ইবনু মাজাহ ২০১৪, আহমাদ ২২১০১, সহীহাহ্ ১৭৩, সহীহ আল জামি‘ ৭১৯২।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
মুমিন পুরুষগণ জান্নাতে পাবে অসংখ্য উন্নতবক্ষা সুন্দরী নারী। কিন্তু কোন নারী জান্নাতে একাধিক পুরুষ পাবেন না [87] –
সুনানে ইবনে মাজাহ (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ (4337)
পরিচ্ছদঃ ৩১/৩৯. জান্নাতের বর্ণনা
আবূ উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ যাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন তাদের প্রত্যেককেই বাহাত্তরজন স্ত্রীর সাথে বিবাহ দিবেন। তাদের মধ্যে দু’জন হবে আয়তলোচনা হূর এবং সত্তরজন হবে জাহান্নামীদের থেকে ওয়ারিসী সূত্রে প্রাপ্ত। তাদের প্রত্যেকের স্ত্রী অঙ্গ হবে অত্যন্ত কামাতুর এবং পুরুষের অঙ্গ হবে অত্যন্ত সুদৃঢ় অটল। হিশাম ইবনে খালিদ (রাঃ) বলেন, জাহান্নামীদের থেকে প্রাপ্ত স্ত্রী বুঝতে সেইসব পবিত্রা নারীদের বুঝানো হয়েছে যাদের স্বামীরা জাহান্নামী হয়েছে। কিন্তু স্ত্রীরা ঈমানদার হওয়ার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। যেমন ফেরাউনের স্ত্রী জান্নাতী।
দাসীর সাথে যৌনকর্ম হালাল
দাসী নারীদের সাথে যৌনসম্পর্ক আল্লাহ এবং দয়াল নবী, নারীপ্রেমিক নবী মুমিনদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন [88] [89]। এই বিষয়ে খুব বিস্তারিতভাবে অন্য একটি লেখাতে সমস্ত দলিল প্রমাণ একত্রিত করে রাখা আছে, আগ্রহী পাঠকগণ এই লেখাটি পড়তে পারেন [90] –
যারা তাদের যৌন-অঙ্গকে সংযত রাখে, কিন্তু তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভূক্ত দাসীদের বেলায় তিরস্কৃত হবে না।
– কোরআন, সূরা আল-মা’আরিজ, আয়াত ২৯-৩০
হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন।
– কোরআন, সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৫০
নিচের হাদিসগুলোও পড়ে দেখিঃ
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৮/ দুধপান
পরিচ্ছদঃ ১. ইসতিবরার পর যুদ্ধ বন্দিনীর সাথে সঙ্গম করা জায়েয এবং তার স্বামী বর্তমান থাকলে সে বিবাহ বাতিল
৩৪৭৭। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমর ইবনু মায়সারা কাওয়ারীরী (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধের সময় আওতাসের দিকে একটি বাহিনী পাঠান। তারা শক্রদলের মুখোমুখী হয় এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে এবং তাদের অনেক কয়েদী তাদের হস্তগত হয়। এদের মধ্য থেকে দাসীদের সাথে সহবাস করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কয়েকজন সাহাবী যেন নাজায়িয মনে করলেন, তাদের মুশরিক স্বামী বর্তমান থাকার কারণে। আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “এবং নারীর মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত সকল সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” অর্থাৎ তারা তোমাদের জন্য হালাল, যখন তারা তাদের ইদ্দত পূর্ন করে নিবে।
(গর্ভবতী হলে প্রসব, অন্যথায় এক ঋতু অতিবাহিত হওয়াকেই ইসতিবরার বলে।)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
মুহাম্মদ তার জামাতা আলিকে যুদ্ধবন্দী নারী দিতেন সেক্স করার জন্য।
বিঃদ্রঃ পাঠক লক্ষ্য করুন, যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে যৌন কর্মের পরে গোছলের কথাটিকে বাঙলায় অনুবাদ করা হয়েছে শুধু গোছল হিসেবে। যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে নবী জামাতা আলী সেক্স করতেন তা গোপন করার জন্য। খুব কৌশলে আলীর চরিত্র রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে একই হাদিসের ইংরেজি অনুবাদে সেটি পাওয়া যায়।
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী (যুদ্ধ)
পরিচ্ছদঃ ৬৪/৬২. বিদায় হাজ্জের পূর্বে ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব এবং খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ।
৪৩৫০. বুরাইদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আলী (রাঃ)-কে খুমুস (গানীমাতের এক-পঞ্চমাংশ) নিয়ে আসার জন্য খালিদ (রাঃ)-এর কাছে পাঠালেন। (রাবী বুরাইদাহ বলেন,) আমি ‘আলী (রাঃ)-এর প্রতি অসন্তুষ্ট, আর তিনি গোসলও করেছেন। (রাবী বলেন) তাই আমি খালিদ (রাঃ)-কে বললাম, আপনি কি তার দিকে দেখছেন না? এরপর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে আসলে আমি তাঁর কাছে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি বললেন, হে বুরাইদাহ! তুমি কি ‘আলীর প্রতি অসন্তুষ্ট? আমি বললাম, জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার উপর অসন্তুষ্ট থেক না। কারণ খুমুসে তার প্রাপ্য এর চেয়েও অধিক আছে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০১২)
Narrated Buraida: The Prophet (ﷺ) sent `Ali to Khalid to bring the Khumus (of the booty) and I hated `Ali, and `Ali had taken a bath (after a sexual act with a slave-girl from the Khumus). I said to Khalid, “Don’t you see this (i.e. `Ali)?” When we reached the Prophet (ﷺ) I mentioned that to him. He said, “O Buraida! Do you hate `Ali?” I said, “Yes.” He said, “Do you hate him, for he deserves more than that from the Khumlus.”
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে এই বর্ণনাটির আরো বিবরণ পাওয়া যায় [91] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৭/ বিয়ে
পরিচ্ছদঃ ৬৭/৯৭. ‘আয্ল প্রসঙ্গে।
৫২১০. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধকালীন সময়ে গানীমাত হিসাবে কিছু দাসী পেয়েছিলাম। আমরা তাদের সঙ্গে ‘আয্ল করতাম। এরপর আমরা এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেনঃ কী! তোমরা কি এমন কাজও কর? একই প্রশ্ন তিনি তিনবার করলেন এবং পরে বললেন, ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যে রূহ পয়দা হবার, তা অবশ্যই পয়দা হবে। (1) (৫২০৭) (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৩০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২৬/ ক্রয় – বিক্রয়
পরিচ্ছদঃ ১৩৮৪. গোলাম বিক্রয় করা
২০৮৮. আবূল ইয়ামান (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একদা তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বসা ছিলেন, তখন তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা বন্দী দাসীর সাথে সংগত হই। কিন্তু আমরা তাদের (বিক্রয় করে) মূল্য হাসিল করতে চাই। এমতাবস্থায় আযল (নিরুদ্ধ সঙ্গম) সম্পর্কে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, তোমরা কি এরূপ করে থাক? তোমরা যদি তা (আযল) না কর, তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কারন মহান আল্লাহ্ তা’আলা যে সন্তান জন্ম হওয়ার ফায়সালা করে রেখেছেন, তা অবশ্যই জন্মগ্রহন করবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৬/ বিবাহ
পরিচ্ছদঃ ১৩৯. বন্দী স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস করা।
২১৫৫. আন- নুফায়লী ………. রুওয়াইফি‘ ইবন সাবিত আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তিনি (রুওয়াইফি‘) আমাদের মধ্যে খুতবা প্রদানের সময় দন্ডায়মান হয়ে বলেন, আমি তোমাদেরকে তা-ই বলব, যা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। তিনি হুনায়নের (যুদ্ধের) সময় বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে, সে যেন অন্যের খেতে পানি সেচ না করে অর্থাৎ অন্যের গর্ভবতী কোন নারীর সাথে সহবাস না করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছে, তার জন্য কোন বন্দিনী গর্ভবতী নারীর সাথে সহবাস করা বৈধ নয়, যতক্ষণ সে সন্তান প্রসব করে পবিত্র না হয়। আরো বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলা ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্য গণীমতের মাল বণ্টনের আগে বিক্রয় করা হালাল নয়।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি
ইসলামে ধর্ষণের কাগুজে শাস্তি থাকলেও, প্রাক্টিক্যালি বা প্রায়োগিক দিক দিয়ে আসলে ইসলামে ধর্ষনের জন্য কোন শাস্তির বিধানই নেই। এই বিষয়ে সমস্ত তথ্য প্রমাণ অন্য একটি লেখাতে দেয়া হয়েছে, আগ্রহী পাঠকগণ এই লেখাটি পড়ে নিতে পারেন [92]।
ধর্ষণ করার পরে মোহরানা দিয়ে ফয়সালা করা
মুয়াত্তা মালিক
হাদিস নম্বরঃ (1435)
অধ্যায়ঃ ৩৬. বিচার সম্পর্কিত অধ্যায়
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ১৬. কোন স্ত্রীলোকের সাথে জবরদস্তি যিনা করিলে তাহার ফয়সালা
রেওয়ায়ত ১৪. ইবন যুহরী (রহঃ) হইতে বর্ণিত, আবদুল মালিক ইবন মারওয়ান জবরদস্তিভাবে যিনা করান হইয়াছে এমন স্ত্রীলোকের ফয়সালা এই দিয়াছেন: ব্যভিচার যে করিয়াছে ঐ স্ত্রীলোকটিকে মোহর দান করিবে।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট এই ফয়সালা যে, যদি কেহ কোন স্ত্রীলোকের উপর জবরদস্তি করে, চাই সে কুমারী হউক অথবা অকুমারী, যদি সে স্বাধীন হয় তবে তাহাকে মাহরে মিসাল দেওয়া আবশ্যক।
আর যদি যে দাসী হয় তবে যিনার দ্বারা যে মূল্য কম হইয়াছে তাহা আদায় করিতে হইবে এবং ব্যভিচারীর শাস্তিও সঙ্গে সঙ্গে হইবে এবং উক্ত স্ত্রীলোকের উপর কোন শাস্তিও হইবে না। আর যদি ব্যভিচারী গোলাম হয় তবে মনিবের জরিমানা দিতে হইবে। কিন্তু যদি গোলামকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিয়া দেয় তবে ভিন্ন কথা।
নারী সম্পর্কিত আরো কিছু দলিল
রমণী তার পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়লে, রমযানের রোযা পালন করলে, ইজ্জতের হিফাযত করলে ও স্বামীর তাবেদারী করলে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছামত প্রবেশ করতে পারবে।
(ত্বাবারানী, ইবনে হিববান, সহীহ, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৫৪নং)
‘‘শ্রেষ্ঠ রমণী সেই, যার প্রতি তার স্বামী দৃকপাত করলে সে তাকে খোশ করে দেয়, কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং তার জীবন ও সম্পদে স্বামীর অপছন্দনীয় বিরুদ্ধাচরণ করে না।’’
(আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ১৮৩৮নং)
স্ত্রীর নিকট স্বামীর মর্যাদা বিরাট। এই মর্যাদার কথা ইসলাম নিজে ঘোষণা করেছে। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘স্ত্রীর জন্য স্বামী তার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।’’
(ইবনে আবী শাইবাহ ,নাসাঈ, তাবারানী, হাকেম , প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৮৫পৃঃ)
‘‘যদি আমি কাউকে কারো জন্য সিজদা করতে আদেশ করতাম, তাহলে নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে।’’
(তিরমিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ ৩২৫৫নং)
‘‘স্ত্রীর কাছে স্বামীর এমন অধিকার আছে যে, স্ত্রী যদি স্বামীর দেহের ঘা চেঁটেও থাকে তবুও সে তার যথার্থ হক আদায় করতে পারবে না।’’
(হাকেম , ইবনে হিববান, ইবনে আবী শাইবাহ , সহীহুল জামে ৩১৪৮ নং)
‘‘মহিলা যদি নিজ স্বামীর হক (যথার্থরূপে) জানতো, তাহলে তার দুপুর অথবা রাতের খাবার খেয়ে শেষ না করা পর্যন্ত সে (তার পাশে) দাঁড়িয়ে থাকতো।’’
(ত্বাবারানী, সহীহ আল-জা-মিউস সাগীর অযিয়াদাতুহ ৫২৫৯নং)
‘‘তাঁর শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে! নারী তার প্রতিপালকের হক ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার স্বামীর হক আদায় করেছে। সওয়ারীর পিঠে থাকলেও যদি স্বামী তার মিলন চায় তবে সে বাধা দিতে পারবে না।’’
(ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ, ইবনে হিববান , আদাবুয যিফাফ ২৮৪পৃঃ)
‘‘দুই ব্যক্তির নামায তাদের মাথা অতিক্রম করে না (কবুল হয় না) ; সেই ক্রীতদাস যে তার প্রভুর নিকট থেকে পলায়ন করেছে, সে তার নিকট ফিরে না আসা পর্যন্ত এবং যে স্ত্রী তার স্বামীর অবাধ্যাচরণ করেছে, সে তার বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত (নামায কবুল হয় না।)’’
(ত্বাবারানী, হাকেম , আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ২৮৮নং)
‘‘তিন ব্যক্তির নামায কবুল হয় না, আকাশের দিকে উঠে না; মাথার উপরে যায় না; এমন ইমাম যার ইমামতি (অধিকাংশ) লোকে অপছন্দ করে, বিনা আদেশে যে কারো জানাযা পড়ায় এবং রাত্রে সঙ্গমের উদ্দেশ্যে স্বামী ডাকলে যে স্ত্রী তাতে অসম্মত হয়।
(আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ ৬৫০নং)
‘‘ স্বামী যখন তার স্ত্রীকে নিজ বিছানার দিকে (সঙ্গম করতে) আহ্ববান করে তখন যদি স্ত্রী না আসে, অতঃপর সে তার উপর রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রি কাটায়, তবে সকাল পর্যন্ত ফিরিশ্তাবর্গ তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’ অন্য এক বর্ণনায় ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফিরিশ্তা তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন।’’
(বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, মুসনাদে আহমদ, প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ২৮৩পৃঃ)
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘নারী হচ্ছে গোপন বস্তু। যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে নগ্নতার প্রতি ক্ষিপ্ত করে তুলে’ (তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩১০৯)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নারী পর্দাবিহীন অবস্থায় বের হ’লে শয়তান তাকে পাপের উপর ক্ষিপ্ত করে’।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলা একদিন এক রাতের সফর করতে পারে না’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫১৫; বাংলা ৫ম খন্ড, হা/২৪০১ ‘হজ্জ’ অধ্যায়)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নারীদেরকে একা সফর করতে নিষেধ করেছেন।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী রয়েছে যাদেরকে এখনও আমি দেখিনি (প্রথম শ্রেণী) এমন সম্প্রদায় যাদের হাতে গরু পরিচালনা করা লাঠি থাকবে যা দ্বারা তারা মানুষকে প্রহার করবে। (দ্বিতীয় শ্রেণী) নগ্ন পোষাক পরিধানকারী নারী যারা পুরুষদেরকে নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি তারা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সেই সুগন্ধি এত বহুদূর হতে পাওয়া যায়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এক মাসের পথের দূরত্ব হতে পাওয়া যায়’ (মুসলিম, মিশকত হা/৩৫২৪; বাংলা ৭ম খন্ড, হা/৩৩৬৯)।
অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নগ্ন পোষাক পরিহিতা বেহায়া ঈমান ধ্বংসকারিণী নারীদের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি তাদেরকে জাহান্নামী বলেছেন। বিশেষ করে তাদের নগ্ন মাথার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘…. তোমরা দুনিয়া এবং নারীদের থেকে সাবধান থাক। কারণ নিশ্চয়ই বনী ইসরাঈলের প্রথম দুর্ঘটনা নারীদের মধ্যেই ঘটে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮৬; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৫২ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।
উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি আমার পরে এমন কোন জটিল সমস্যা ত্যাগ করিনি, পুরুষদের জন্য বেশী ক্ষতিকারক হতে পারে নারীদের চেয়ে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩০৮৫)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) নারীদেরকে পুরুষদের জন্য সবচেয়ে বেশী ধ্বংসাত্মক বলে ঘোষণা করেছেন। কাজেই পুরুষদের সাবধান থাকা যরূরী।
উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে সাবধান থাক। একজন ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! দেবর সম্পর্কে কি বলছেন? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘দেবর মরণ সমতুল্য’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১০২; বাংলা ৬ষ্ঠ খন্ড, হা/২৯৬৯ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)।
ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হ’লে তৃতীয় জন হবে শয়তান’ (তিরমিযী, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/১৩১৮; বাংলা হা/২৯৮৪)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) পুরুষদেরকে অপর কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং শয়তান তাদেরকে বিপদগামী করবে বলে সাবধান করেছেন।
একদা রাসূল (ছাঃ) মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘বুদ্ধি ও ধর্মের ব্যাপারে অপূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী পুরুষদের জ্ঞান তোমাদের অপেক্ষা আর কেউ অধিক বিনষ্ট করতে পারে এমন কাউকে আমি দেখিনি’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৯)। অত্র হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘জ্ঞানী ব্যক্তিও নারীদের চক্রান্ত থেকে রেহায় পায় না। নারীদের চক্রান্ত অত্যন্ত শক্তিশালী। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের (নারীদের) চক্রান্ত শক্তিশালী’ (ইউসুফ ২৮)।
উপসংহার
খুব অল্পকিছু উদাহরণ দিলাম, এরকম আরো অসংখ্য উদাহরণ কোরআন এবং হাদিসে ছড়িয়ে রয়েছে। এগুলোর বিপরীতে কয়েকটা ভাল আয়াতও যে নেই তা নয়, তবে ভাল আয়াত খারাপ আয়াতের তুলনায় এত বেশী নগন্য যে, তা উল্লেখ করারই কোন অর্থ হয় না। এখন কথা হচ্ছে, আল্লার সর্বশ্রেষ্ঠ কেতাব এবং পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থায় আমাদের কেন ভাল আয়াত এবং খারাপ আয়াত বা ভাল হাদিস বা খারাপ হাদিস বিচার করতে হবে, যাচাই বাছাই করতে হবে? খারাপগুলো বাদ দিয়ে ভাল আয়াতগুলো পালন করতে হবে? আল্লাহর কেতাবে তো সব আয়াতই ভাল হওয়ার কথা, সুন্দর এবং মানবিক হবার কথা। নারীর মর্যাদা সমুন্নত রাখার কথা। কোরআনে এরকম কথাও বলা নেই যে, খারাপ আয়াতগুলো বাদ দিয়ে ভালগুলো পালন করো। মানলে সবই মানতে হবে, না মানলে আপনি ইসলামের অন্তর্ভূক্তই নন।
তাহলে আজকে মুসলিম বিশ্বে নারীর যেই দুরাবস্থা, তার দায় কি ইসলামের উপরেও বর্তায় না? আমরা আসলেই ভাগ্যবান যে, এখন সভ্য মুসলিমরা “ঐ প্রকৃত ইসলাম” অক্ষরে অক্ষরে পালন করে না, নতুবা আজকে নারী যতটা স্বাধীনতা পেয়েছে, যতটা অধিকার পেয়েছে, সেটুকুও পেতো না।
তথ্যসূত্র
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৬৪২ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৩৩৩০ [↑]
- সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৯৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৫৬০ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮০, ৮১। হাদিস নম্বরঃ ২৫৬০ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪২২৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬২৮৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ২৭৪৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৭৩৯ [↑]
- সূরা নিসা, আয়াত ১১ [↑]
- কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২২৩ [↑]
- সূরা ইমরান, আয়াত ১৪ [↑]
- কোরআন, সূরা ৭, আয়াত ১৮৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫১২ [↑]
- নবীদের কাহিনী-১, ড মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব, পৃষ্ঠা ১৯ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫১৩ [↑]
- সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪১৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ প্রকাশনী, হাদিস নম্বরঃ ৫৭৫৩ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫৬১৩ [↑]
- বুলুগুল মারাম, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৩১ [↑]
- সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ৯৫২ [↑]
- সূনান নাসাঈ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৭৫১ [↑]
- Scheidel, Walter, “A peculiar institution? Greco–Roman monogamy in global context“, 2006, Stanford University, Stanford, CA 94305-2145, USA (2006), In History of the Family 14 (2009), Elsevier, pp. 280–291 [↑]
- Babylonian Talmud: Yevamoth 44a. halakhah.com [↑]
- Babylonian Talmud: Yevamoth 65a. halakhah.com [↑]
- সুরা নিসা, আয়াত ৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৫০৬৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫০ [↑]
- সহিহ বুখারী, খণ্ড ৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন [↑]
- বোখারী শরীফ (বাংলা তরজমা ও ব্যাখ্যা), খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২২৯ [↑]
- আল-লুলু ওয়াল মারজান, হাদিস নম্বরঃ ১৫৯২ [↑]
- সহীহুল বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭ [↑]
- জামাতাকেও নারী উপহার দিতেন মুহাম্মদ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৮৯ [↑]
- সুরা নিসা, আয়াত ৩৪ [↑]
- সূনান নাসাঈ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬৫ [↑]
- সহিহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, তৃতীয় খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ২১২৮ [↑]
- সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ১৯৮৫ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩২৬১ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫৮২৫ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৮, হাদিস নম্বরঃ ৫৪০৮ [↑]
- সুনান আবু দাউদ খণ্ড ২ [↑]
- সুনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর ২২২২ [↑]
- সুনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯০ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৭৭ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩২৪২ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩২৫৯ [↑]
- Muhammad ibn Saad. Kitab al-Tabaqat al-Kabir Volume 8. Translated by Bewley, A. (1995). The Women of Madina. London: Ta-Ha Publishers. Page: 163 [↑]
- Muhammad ibn Saad. Kitab al-Tabaqat al-Kabir Volume 8. Translated by Bewley, A. (1995). The Women of Madina. London: Ta-Ha Publishers. Page: 177 [↑]
- هل ثبت أن الزبير بن العوام كان يضرب زوجته أسماء رضي الله عنهما؟. [↑]
- সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৭ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৬১০৮ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ২১৬৪ [↑]
- দেনমোহর | ইসলামে নারীর লজ্জাস্থান ভোগের মূল্য [↑]
- আহকামুল কুরআন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৩১৩১ [↑]
- সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), হাদিসঃ ৩৬১০ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৯২৯ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩১৩৭ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস একাডেমি, হাদিস নম্বরঃ ৩২৭৯ [↑]
- তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৫০ [↑]
- ফিকহে ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু, ড মুহাম্মদ রাওয়াস কালা’জী, ভাষান্তর ও সম্পাদনাঃ মুহাম্মদ খলিলুল রহমান মুমিন, আধুনিক প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১৭৬ [↑]
- ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩৮২ [↑]
- স্ত্রী মারা গেলে কি পুরুষের উপর শোক পালন ওয়াজিব? [↑]
- কোরআন, সূরা আল বাকারা, আয়াত ২৩০ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স। হাদিস নম্বর-৫০৮০ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বর- ১১০০ [↑]
- সুনানে ইবনু মাজাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৭, ১৬৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স। হাদিস নম্বর- ৫২১৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৭০৬ [↑]
- কোরআন সূরাঃ আত-ত্বলাক্ব আয়াত ৪ [↑]
- কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২২৮ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৪৫ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ১৪৬২ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ১০ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৭ [↑]
- People who appoint a woman as their leader will never succeed [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩৩ [↑]
- কোরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২৮২ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪০, ১৪২, ১৪৩ [↑]
- সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৫২-১৫৩ [↑]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩২৫৮ [↑]
- ইবনে মাজাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৩৭ [↑]
- কোরআন, সূরা আল-মা’আরিজ, আয়াত ২৯-৩০[↑]
- কোরআন, সূরা আল-আহযাব, আয়াত ৫০[↑]
- ইসলামে অমানবিক দাসপ্রথা [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৯১ [↑]
- ইসলামি শরিয়তে ধর্ষণের শাস্তি [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"
Notun kichu jante parlam.
ভাই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ , মানবতার সার্থে এগিয়ে চলুন , জিৎ আমাদের হবেই ।
অসাধারন।
লেখাটা বেশ ভাল যুক্তিপূর্ণ ও তথ্য সমৃদ্ধ, আমি এটি আগেও পড়েছিলাম। তখন কৌতূহল নিয়ে কিছু আয়াত ফোনে থাকা বাংলা কুরান এপ্লিকেশন ঘেটে মিলিয়েও দেখেছিলাম! এরকম লেখা সত্যিই যে কারোর ই চোখ খুলে(অন্ধত্বের মুক্তি) দেবার মত।
ভাই আমার অনেক প্রশ্ন আছে ।সরসরি ফোনে বলতে চাই
ভাই বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এবং নিউট ঈশ্বরে বিশ্বাস করত কেন তারা সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান
আপনার চেয়ে বেশি জ্ঞানী।
আইনস্টাইন নাস্তিক ছিলেন। তবুও যদি ধরে নেই আইনস্টাইন আস্তিক ছিলেন তাহলে আপনার যুক্তি অনুসারে আমাদের সবাইকে ইহুদি হয়ে যাওয়া উচিত।
কারন আইনস্টাইন ছিলেন ইহুদি। নিউটনের বেলাতেও একই কথা।
These fuckers are mostly crackheads ganjakhor and hardcore alcoholic. They all misinterpreting the Quran and hadith here. And some of the hadith they listed here are not genuine at all. I’m just putting a simple example below which they have mentioned here above. Every Quran excerpt and genuine hadith came out for a particular situation or incident. Yusuf (AS) was the most good looking man in his time and also among the all prophets. Yusuf(AS) Landlord’s young wife tried to seduce him then this Quran verse got revealed. you can read that full sura online n Bangla. And yes of course woman can never be equal to men that’s the creation. Even in USA the Americans don’t wana see woman as the president as plane pilot etc. (you can also find this in humayun ahmed, jafar Iqbal’s book cause they lived in USA for a long time). They also said women drivers are usually the worse drivers. The most dumbbest dumbfuck are those who believe there’s no creator or believe that there is multiple creators.
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের (নারীদের) চক্রান্ত শক্তিশালী’ (ইউসুফ ২৮)।
Dumbfuck USA is a christian country… Germany,Netherlands,Sweden,Norway,Denmark and many more are atheist countries ????????????
জাকির নায়েকের মিথ্যাচার সম্পর্কে জানতে চাই
আপনি জাকির নায়েক এর সঙ্গে সরসরি তর্ক করুন
নুমান আলি খান ও জাকির নায়েকের যুক্তি গুলো খন্ডন করে লেখা চাই ৷
আপনার চেষ্টা দেখে আমি সত্যিই খুব অবাক, আপনি আপনার চেষ্টা চালিয়ে যান। কোরানের আয়াতের এবং হাদিস সমুহের আরো ভালো ভাবে সঠিক বিশ্লেষণ চাই। দয়া করে ভূলভাল বিশ্লেষণ করবেন না ।
Do not listen to this fuckers here they have all misinterpreted the Quran and mention some unauthentic hadiths here . These fuckers are mostly crackheads ganjakhor and hardcore alcoholic. They all misinterpreting the Quran and hadith here. And some of the hadith they listed here are not genuine at all. I’m just giving below a simple example which they have referenced here above. Every Quran excerpt and genuine hadith came out for a particular situation or incident.
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের (নারীদের) চক্রান্ত শক্তিশালী’ (ইউসুফ ২৮). Yusuf (AS) was the most good looking man in his time and also among the all prophets. Yusuf(AS) Landlord’s young wife tried to seduce him then this Quran verse got revealed. you can read that full sura online n Bangla. And yes of course woman can never be equal to men that’s the creation. Even in USA the Americans don’t wana see woman as the president as plane pilot etc. (you can also find this in humayun ahmed, jafar Iqbal’s book cause they lived in USA for a long time). They also said women drivers are usually the worse drivers. The most dumbbest dumbfuck are those who believe there’s no creator or believe that there is multiple creators. You can Obey Allah as your creator or you don’t obey him as your creator that is up to you but you do not have the right to misguide others with intentional wrong explanation and provide wrongful meanings. These are the Islam haters ‘munafiq’ whom the holy Quran warned us about.
Saadat
এটা আপনার জন্য
https://www.shongshoy.com/archives/14331
প্রত্যেক মুসলমানকে বলছি,
আপনারা আপনাদের চেনাজানা যেকোনো ভালো আলেম বা মসজিদের ইমাম কে ২ টি প্রশ্নঃ করবেন:
১) আল্লাহ নারীদের কেন সৃষ্টি করেছেন?
২) ইসলাম কি নারীদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে মনে করে? নাকি অর্ধেক মানুষ হিসেবে মনে করে?
As usual you don’t show any proof except claiming it’s wrong. Stop bitching everywhere. You feel the need of commenting as you take it as a part of your duty that goes by the name ZIHAD. Also, Dont play smart by writing English. No matter how much you tried you’ve still got some grammatical errors. Cry please…
ব্যাখ্যা গ্রন্থগুলি ভালো করে পড়বেন
ইসলামসহ সকল ধর্মই নারীকে ছোট করেছে
কেমন আছেন আপনি? জ্বী আমি পড়ে শেষ করলাম বিশাল এই ডকুমেন্টটি এবং বলেছিলাম আসব কথা বলতে। ধন্যবাদ সব কোরআন হাদীস এর আয়াত শেয়ার করার জন্য। আমি আপনার যুক্তির পক্ষে বিপক্ষে কিছু বলবনা এখন। আমি কার ও ধর্মবিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করা পছন্দ করিনা।
আমার কাছে ধর্মের বই পড়া বা বলার থেকে ও বেশী উপলব্ধির।
কিছু আত্নসম্মানহীন নারীদের জন্য সমস্ত নারীরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে না বা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছে না। কিছু মূর্খ মানুষের দাবী এটাই নাকি নারীদের স্বাধীনতা। তারা শিয়াল মুরগীর উদাহরণ দিয়ে নারী এবং পুরুষের মধ্যে ব্যবধান বুঝাচ্ছে। তারা চায় নারীদের তাদের ইচ্ছামত নাচাতে।