কোরআনে ব্যাকটেরিয়া?
সূচনা
কোরআনের সূরা ত্বোয়া-হা’র ১২ নং আয়াত ব্যবহার করে কিছু ইসলাম প্রচারক দাবি করেন যে কোরআনে ১৪০০ বছর আগেই ব্যাকটেরিয়ার কথা বলা হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ নবী মূসাকে তার জুতোজোড়া খুলে ফেলতে বলেছেন। ইসলাম প্রচারকদের দাবি, জুতোর তলায় প্রচুর পরিমানে ব্যাকটেরিয়া থাকে বলেই আল্লাহ নবী মূসাকে তার জুতোজোড়া খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।
মিরাকলের দাবি
“ব্যাকটেরিয়া আণুবীক্ষণিক এবং জুতায় প্রচুর পরিমাণে থাকে। প্রথম সংস্পর্শেই জুতা থেকে পরিষ্কার টালি মেঝেতে ব্যাকটেরিয়া চলে যায়। এবিষয়ে মানুষ জানে বেশিদিন হয়নি, তবে আবিষ্কারের ১৪০০ বছর আগেই কোরআনে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ্ মূসা (আঃ) কে জুতোজোড়া খুলে ফেলতে বলেন।
“নিশ্চয়ই আমি তোমার রব; সুতরাং তোমার জুতা জোড়া খুলে ফেলো, নিশ্চয়ই তুমি পবিত্র “তুওয়া” উপত্যকায় রয়েছো।”
١٢ إِنِّي أَنَا رَبُّكَ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ ۖ إِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى
(কোরআন ২০:১২)আল্লাহ্ মূসা (আঃ) কে জায়গাটি অপবিত্র না করতে জুতা জোড়া খুলে ফেলতে বলেন। আজ আমরা জানি কেনো জুতা পায়ে কোনো পবিত্র স্থানে পা দিতে নেই, কারণ জুতা অপবিত্র ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়।
১৪০০ বছর আগের একজন নিরক্ষর মানুষ কিভাবে জানতে পারলেন যে জুতোর তলায় এমনকিছু আছে যা খালি চোখে দেখা যায়না?” [1]
মূল আয়াত
যে আয়াতটিকে কেন্দ্র করে দাবিটি উপস্থাপন করা হয় সেই আয়াতের কয়েকটি সুপরিচিত অনুবাদ দেখে নেওয়া যাক,
إِنِّىٓ أَنَا۠ رَبُّكَ فَٱخْلَعْ نَعْلَيْكَ ۖ إِنَّكَ بِٱلْوَادِ ٱلْمُقَدَّسِ طُوًى
বাস্তবিকই আমি তোমার প্রতিপালক, কাজেই তোমার জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র তুওয়া উপত্যকায় আছ।
— Taisirul Quran
আমিই তোমার রাব্ব। অতএব তোমার পাদুকা খুলে ফেলো, কারণ তুমি পবিত্র তূওয়া উপত্যকায় রয়েছ।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় আমি তোমার রব; সুতরাং তোমার জুতা জোড়া খুলে ফেল, নিশ্চয় তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছ’।
— Rawai Al-bayan
‘নিশ্চয় আমি আপনার রব, অতএব আপনার জুতা জোড়া খুলে ফেলুন, কারণ আপনি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছেন [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
Indeed, I am your Lord, so remove your sandals. Indeed, you are in the blessed valley of Ṭuwā.
— Saheeh International
(কুরআন ২০:১২)
মন্তব্য
আলোচ্য আয়াতটি পড়ে একজন মানুষ কেনো মনে করবে যে এখানে ব্যাকটেরিয়ার কারণেই নবী মূসাকে জুতো খুলে ফেলতে বলা হয়েছে? সেই বিষয়টি পরিষ্কার নয়। হয়তো জুতো খুলে ফেলতে বলার মাধ্যমে সেই কথিত পবিত্র উপত্যকার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে বা অবমাননা না করতে বলা হয়েছে। হয়তো জুতোর ধুলোময়লা থেকে উপত্যকাটিকে পরিষ্কার রাখতেই উক্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া, মানুষের পায়ের তলায়ও প্রচুর ব্যাকটেরিয়া থাকে। পা ব্যাকটেরিয়ার নাগালের বাইরে রাখার জন্য কেউ জুতা পরে না। জুতো পরে ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে পালানোও যায় না। কোরআনের লেখক যদি জানতেন যে জুতোর তলায় প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে, তাহলে একথাও তার অজানা থাকার কথা নয় যে পায়ের তলাও প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে। অতএব, এই অনুমান খুবই অর্থহীন যে ব্যাকটেরিয়ার কারণেই নবী মূসাকে জুতো খুলে ফেলার কথা বলা হয়েছে।
আসুন দেখি, প্রখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে ইবনে কাসিরে আলোচ্য আয়াতটির ব্যাখ্যায় কি বলা হয়েছে,
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হযরত মূসা (আঃ) যখন আগুনের কাছে পৌঁছলেন তখন ঐ বরকতময় মাঠের ডান দিকের গাছগুলির নিকট থেকে শব্দ আসলোঃ হে মূসা (আঃ)! আমি তোমার প্রতিপালক। তুমি তোমার পায়ের জুতা খুলে ফেলো। তাকে জুতা খুলে ফেলার নির্দেশ দেয়ার কারণ হয়তো এই যে, তার ঐ জুতা গাধার চামড়া দ্বারা নির্মিত ছিল, কিংবা হয়তো ঐ স্থানের সম্মানের কারণেই এই নিদের্শ দেয়া হয়েছিল যেমন কাবা গৃহে প্রবেশের সময় লোকেরা জুতা খুলে নেয়। অথবা ঐ বরকতময় জায়গায় পা পড়বে বলেই তাকে এই হুকুম দেয়া হয়। আরো কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। [2]
এছাড়াও, কোরআন যা বলছে তা কোরআনের হাজার বছর আগেই বাইবেল বলেছে।
তখন প্রভু বললেন, “আর কাছে এসো না। পায়ের চটি খুলে নাও। তুমি এখন পবিত্র ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছো।
(বাইবেল, যাত্রাপুস্তক ৩:৫)
কোরআনের লেখক নতুন কিছুই বলেননি, বরং পুরোনো গল্পকেই নতুন করে নতুনভাবে বলেছেন।
উপসংহার
যে আয়াতকে কেন্দ্র করে কিছু ইসলাম প্রচারক দাবিটি করেন সেই আয়াতে এমন কোনোকিছুর কথাই বলা হয়নি যাকে ব্যাকটেরিয়া বলে দাবি করা যায়। দাবিটি অনুমাননির্ভর, যুক্তিহীন এবং হাস্যকরও বটে।
আলোচ্য আয়াতে এমন কিছুই বলা হয়নি যা মানুষ আগে শোনেনি। একই কথা বাইবেল হাজার বছর আগে বলেছে। কোরআন পুরানো কথাই পুনরায় বলেছে মাত্র।
আরও পড়ুন
- কোরআনে আঙুলের ছাপের মিরাকল?
- কোরআন কি ১৪০০ বছর আগেই জানিয়েছে যে একটি শিশু দৃষ্টিশক্তির আগে শ্রবণশক্তি পায়?
তথ্যসূত্র
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"
চালিয়ে যান । সত্যের জয় আসবেই ।
ধন্যবাদ।
সেই পবিত্র জায়গাও ব্যাকটেরিয়াহীন নয়।