05.স্ত্রী প্রহারের বৈধতা

Print Friendly, PDF & Email

গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং স্ত্রীদেরকে স্বামীদের মারধর হল সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ যা সারা বিশ্বের সমাজে প্রভাব ফেলে। এটি একটি দুঃখজনক বাস্তবতা যে আমাদের সমাজে অনেক মহিলাকেই তাদের সঙ্গীদের হাতে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। এই ধরনের সহিংসতা নারীর উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে তারা দীর্ঘস্থায়ী ট্রমা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং চরম ক্ষেত্রে এমনকি তাদের মৃত্যুও হতে পারে।

স্ত্রী প্রহার হল পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের ক্ষমতার এক ধরণের চরম অপব্যবহার যা নারীর ওপর পুরুষ নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য প্রয়োগ করে। গার্হস্থ্য সহিংসতা একেবারেই একটি অগ্রহণযোগ্য কাজ, যা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যেই সত্য। আধুনিক সভ্য সমাজে প্রতিটি মানুষের অধিকার রয়েছে, কোন ধরণের শারীরিক নির্যাতনের শিকার না হয়ে নির্ভয়ে জীবন যাপন করার। কিন্তু ইসলাম সহ প্রায় সকল প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই পুরুষকে তাদের স্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য মারধোর করার অনুমতি ও আইনগত বৈধতা দান করে।

গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং স্ত্রী-প্রহারের সবচেয়ে বিধ্বংসী পরিণতিগুলির মধ্যে একটি হল ভিকটিমদের মানসিক এবং মানসিক সুস্থতার উপর এর প্রভাব। যে মহিলারা এই ধরনের সহিংসতার শিকার হন তারা হতাশা, উদ্বেগ, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। এগুলি তাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজ করার ক্ষমতার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে, তাদের কাজ, সম্পর্ক এবং জীবনের সামগ্রিক মানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু যে নারীর ওপরই তা প্রভাব ফেলে তা নয়, এইসব পরিবারের সন্তানরাও এই ধারণা নিয়ে বড় হয় যে, তারা চাইলে তাদের চাইতে দুর্বল বা কম ক্ষমতাশালীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করতে পারে, যা শিশুদের মনে ভয়াবহ হিংস্রতা এবং নানাবিধ ভুল ধারণার জন্মও দেয়। মানসিক এবং মানসিক প্রভাব ছাড়াও, গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং স্ত্রী-মারধরেরও গুরুতর শারীরিক পরিণতিও হতে পারে। এই ধরনের সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা হাড় ভাঙ্গা, ক্ষত, পোড়া এবং অন্যান্য আঘাতে ভুগতে পারে। এই আঘাতগুলি কখনও কখনও প্রাণঘাতী হতে পারে, যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন এবং এমনকি হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন। চরম ক্ষেত্রে, গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং স্ত্রী-প্রহার এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

আরও বিপদজনক বিষয় হচ্ছে ধর্মগুলো, বিশেষ করে ইসলাম, নারীদের আসলে এই শিক্ষাও দেয় যে, স্বামীরা চাইলে তাদের পেটাতেই পারে, এতে এত বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এটি একটি বৈধ কাজ এবং নারীর ওপর এই ধরণের নির্যাতন হলে আসলে তার জন্য নারীরাই দায়ী, ইসলাম এই ধারণাকে শক্তিশালী করে। আসুন আমরা এই বিষয়ে ইসলামের অবস্থান ভালভাবে জেনে নিই।

অবাধ্য হলে স্ত্রীদের পেটানো যাবে

ইসলাম স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে স্বামীকে প্রভু এবং স্ত্রীকে দাসীর মতই গণ্য করে। ইসলামের বিধান হচ্ছে, একজন স্বামী অবাধ্য হওয়ার শুধুমাত্র আশঙ্কা করলেই, স্ত্রীকে পেটাতেও পারবে। কিন্তু স্বামী ভদ্রলোক যাই করুক না কেন, স্ত্রী কোনমতেই তাকে পেটানো দুরের কথা, গালিও দিতে পারবে না। নারীর সুমহান মর্যাদাদানের অতি উৎকৃষ্ট নমুনা [1]

আর যাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে কোন অবাধ্যতা খুঁজে পাও তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না।
সুরা নিসা আয়াত ৩৪

এমনকি, নবী নিজেই একবার তার শিশু স্ত্রী আয়িশাকে প্রহার করেছিল বলেই জানা যায়। হযরত আয়িশা হতে বর্ণিত, তিনি (মুহাম্মদ) আমাকে বুকের ওপর আঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল [2] [3]

সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৭/ স্ত্রীর সাথে ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ৪. আত্মাভিমান
৩৯৬৫. সুলায়মান ইবন দাউদ (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আমার ব্যাপারে কি তোমাদেরকে বর্ণনা করব না? আমরা বললাম, কেন করবেন না? তিনি বললেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআমার পালার রাতে (ইশার সালাত আদায়ের পর) ফিরে আসলেন। তারপর তার জুতা পায়ের দিকে রাখলেন, তাঁর চাদর রেখে দিলেন এবং তাঁর একটি লুঙ্গি বিছানার উপর বিছালেন।
তারপর তিনি মাত্র এতটুকু সময় অবস্থান করলেন যতক্ষণে তাঁর ধারণা হল যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। তারপর উঠে আস্তে করে জুতা পরলেন এবং আস্তে করে তার চাদর নিলেন। তারপর আস্তে করে দরজা খুললেন এবং বের হয়ে আস্তে দরজা চাপিয়ে দিলেন। আর আমি মাথার উপর দিয়ে কামিজটি পরিধান করলাম, ওড়না পরলাম এবং চাদরটি গায়ে আবৃত করলাম ও তার পিছনে চললাম, তিনি বাকীতে আসলেন এবং তিনবার হাত উঠালেন ও বহুক্ষণ দাঁড়ালেন, তারপর ফিরে আসছিলেন। আমিও ফিরে আসছিলাম। তিনি একটু তীব্রগতিতে চললেন, আমিও তীব্রগতিতে চললাম, তিনি দৌড়ালেন, আমিও দৌড়ালাম। তিনি পৌছে গেলেন, তবে আমি তার আগে পৌছে গেলাম।
ঘরে প্রবেশ করেই শুয়ে পড়লাম। তিনিও প্রবেশ করলেন এবং বললেনঃ হে আয়েশা! কি হয়েছে তোমার পেট যে ফুলে গেছে। বর্ণনাকারী সুলায়মান বলেন, ইবন ওয়াহাব (رابية) এর পরিবর্তে (حشيا) দ্রুত চলার কারণে হাঁপিয়ে ওঠা শব্দটি বলেছেন বলে ধারণা করছি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঘটনা কি বল, নচেৎ আল্লাহ্ যিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত, তিনিই আমাকে খবর দিবেন।
আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক এবং ঘটনাটির বর্ণনা দিলাম। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমিই সেই (ছায়ামূর্তি) যা আমি আমার সামনে দেখছিলাম? আমি বললাম, হ্যাঁ। আয়েশা (রাঃ) বললেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বক্ষে একটি মুষ্ঠাঘাত করলেন যা আমাকে ব্যথা দিল। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি ধারণা করেছ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর যুলুম করবে? আয়েশ্ম (রাঃ) বললেন, লোক যতই গোপন করুক না কেন, আল্লাহ্ তা নিশ্চিত জানেন।
রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি যখন আমাকে দেখছিলে তখন জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসেছিলেন। তুমি যে (শুয়ে যাওয়ায়) কাপড় খুলে ফেলেছ। তাই জিবরীল (আঃ) প্রবেশ করেননি। তোমার থেকে গোপন করে আমাকে ডাকলেন, আমিও তোমার থেকে গোপন করে উত্তর দিলাম। মনে করলাম, তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। তোমাকে জাগিয়ে দেওয়াটা পছন্দ করলাম না এবং এ ভয়ও ছিল যে, (আমি চলে যাওয়ার কারণে) তুমি নিঃসঙ্গতা বােধ করবে। জিবরীল (আঃ) আমাকে নির্দেশ দিলে বাকীতে অবস্থানকারীদের কাছে যাই এবং তাদের রব্বের কাছে তাদের জন্য ক্ষমা চাই।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মদ ইবন কায়স (রহঃ)

2

স্ত্রী প্রহার করলে কোন শাস্তি নেই

একটি বিখ্যাত হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ প্রাথমিকভাবে স্ত্রীদের মারপিট করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু উমরের কথায় এবং এই বিষয়ে কোরআনের সূরা নিসার ৩৪ নম্বর আয়াত নাজিল হওয়ার পরে তিনি স্ত্রীদের প্রহার করার অনুমতি দিলেন। এরপরে ৭০ জন নারী এসে মুহাম্মদের কাছে অভিযোগ করে যে, তাদের স্বামীরা তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, মুহাম্মদ সেই সব স্বামীর বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। শুধুমাত্র মৌখিকভাবে বলেছেন, যারা স্ত্রীকে পেটায় তারা উত্তম নয়! [4]

সুনান ইবনু মাজাহ
৯/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ৯/৫১. স্ত্রীদের প্রহার করা নিকৃষ্ট কাজ।
৩/১৯৮৫। ইয়াস ইবনু ’আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ যুবাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর দাসীদের প্রহার করো না। অতঃপর ’উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! নারীরা তো তাদের স্বামীদের অবাধ্যাচরণ করছে। তিনি তাদেরকে মারার অনুমতি দিলেন এবং তারা প্রহৃত হলো। পরে অনেক নারী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাড়িতে সমবেত হলো। সকাল বেলা তিনি বলেনঃ ’’আজ রাতে মুহাম্মাদের পরিবারে সত্তরজন মহিলা এসে তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তোমরা মারপিটকারীদেরকে তোমাদের মধ্যে উত্তম হিসাবে পাবে না।
আবূ দাউদ ২১৪৬, দারেমী ২২১৯, গায়াতুল মারাম ২৫১, সহীহ আবী দাউদ ১৮৬৩।
তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)

এবারে নিচের হাদিসটি পড়ুন। নবী মুহাম্মদ তার সাহাবীদের প্রয়োজন সাপেক্ষে স্ত্রী প্রহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। এরপরে মারধোরের শিকার হওয়া স্ত্রীগণ বারবার এসে মুহাম্মদের কাছে অভিযোগ করলেও, মুহাম্মদ স্ত্রী প্রহার করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেন নি। শুধুমাত্র তার সাহাবীদের হালকা বকে দিয়েছেন এই বলে যে, তারা ভাল মানুষ নয়! আমরা যখন কোন কাজে প্রশ্রয় দিই, তখন এরকম হালকা বকে দিই। মুহাম্মদের এই হালকা বকে দেয়াটি আসলে যে কাজটির প্রশ্রয় দেয়াই, তা হাদিসটি পড়লেই বোঝা যায় [5]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৬১-[২৪] আয়াস ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ তা‘আলার বান্দীগণকে (স্ত্রীগণকে ক্রীতদাসীর ন্যায়) মেরো না। অতঃপর ‘উমার এসে বললেন, (আপনার নিষেধাজ্ঞার দরুন) স্বামীদের ওপর রমণীদের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে (প্রয়োজনসাপেক্ষে) মারার অনুমতি দিলেন। এমতাবস্থায় রমণীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণীগণের নিকট পুনঃপুন এসে স্বামীদের (অত্যাচারের) ব্যাপারে অভিযোগ করতে লাগল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শুনে রাখ! আমার পরিবার-পরিজনের নিকট স্ত্রীগণ স্বামীদের অভিযোগ নিয়ে পুনঃপুন আসছে যে, তোমাদের মধ্যে (যারা স্ত্রীদেরকে এরূপে কষ্ট দেয়) তারা কোনক্রমেই ভালো মানুষ নয়। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]
[1] সহীহ : আবূ দাঊদ ২১৪৬, ইবনু মাজাহ ১৯৮৫, দারিমী ২২৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪১৮৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৩৬০।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ্ ইবন সায়িব (রহঃ)

শুধু তাই নয়, একবার এক নারীকে তার স্বামী বেদম পিটিয়ে চামড়া সবুজ করে ফেলে। আয়িশার বর্ণনা অনুসারে, কোন মুমিন মহিলাকে তিনি এত ভয়াবহভাবে প্রহার হতে দেখেনি। মহিলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে নবী কোন ব্যবস্থাই নিলেন না। সেই স্বামীর বিরুদ্ধে পৃথিবীর যেকোন সভ্য আদালতেই মামলা হতো, নবীর বিচারালয়ে তার কোন বিচারই হয়নি [6]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৭/ পোশাক
পরিচ্ছেদঃ ৭৭/২৩. সবুজ পোশাক প্রসঙ্গে
৫৮২৫. ’ইকরামাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত। রিফা’আ তার স্ত্রীকে ত্বালাক দেয়। পরে ’আবদুর রহমান কুরাযী তাকে বিবাহ করে। ’আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তার গায়ে একটি সবুজ রঙের উড়না ছিল। সে ’আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট অভিযোগ করল এবং (স্বামীর প্রহারজনিত) স্বীয় গাত্রের চামড়ার সবুজ বর্ণ দেখালো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এলেন, আর স্ত্রীগণ একে অন্যের সহযোগিতা করে থাকে, তখন ’আয়িশাহ বললেনঃ কোন মু’মিন মহিলাকে এমনভাবে প্রহার করতে আমি কখনও দেখিনি। মহিলাটির চামড়া তার কাপড়ের চেয়ে বেশি সবুজ হয়ে গেছে। বর্ণনাকারী বলেনঃ ’আবদুর রহমান শুনতে পেল যে, তার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসেছে। সুতরাং সেও তার অন্য স্ত্রীর দু’টি ছেলে সাথে করে এলো। স্ত্রী লোকটি বললঃ আল্লাহর কসম! তার উপর আমার এ ব্যতীত আর কোন অভিযোগ নেই যে, তার কাছে যা আছে তা আমাকে এ জিনিসের চেয়ে অধিক তৃপ্তি দেয় না। এ বলে তার কাপড়ের আঁচল ধরে দেখাল।
’আবদুর রহমান বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! সে মিথ্যা বলছে, আমি তাকে ধোলাই করি চামড়া ধোলাই করার ন্যায় দীর্ঘস্থায়ী সঙ্গম করি। কিন্তু সে অবাধ্য স্ত্রী, রিফা’আর কাছে ফিরে যেতে চায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ব্যাপার যদি তাই হয় তাহলে রিফা’আ তোমার জন্য হালাল হবে না, অথবা তুমি তার যোগ্য হতে পার না, যতক্ষণ না ’আবদুর রহমান তোমার সুধা আস্বাদন করবে। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আবদুর রহমানের সাথে তার পুত্রদ্বয়কে দেখে বললেন, এরা কি তোমার পুত্র? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এই আসল ঘটনা, যে জন্য স্ত্রী লোকটি এমন করেছে। আল্লাহর কসম! কাকের সাথে কাকের যেমন মিল থাকে, তার চেয়েও বেশি মিল আছে ওদের সাথে এর (অর্থাৎ ’আবদুর রহমানের সাথে তাঁর পুত্রদের)। [২৬৩৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৯৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইকরিমা (রহঃ)

এই হাদিসটির আরো কয়েকটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, নবীর সেই সাহাবী তার স্ত্রীকে নিয়মিতভাবে পেটাতো। এই নিয়ে অভিযোগের পরেও নবী সেই সাহাবীর বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি। যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, স্ত্রী প্রহার বিষয়ে নবীর মৌন সম্মতি ছিল অথবা কাজটি ইসলামের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধ নয় [7] !

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৪/ পোষাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ২৩৫২. সবুজ পোশাক
৫৪০৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … ইকরামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। রিফাআ তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। পরে আবদুর রহমান কুরাযী তাকে বিবাহ করে। আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ তার গায়ে একটি সবুজ রঙের উড়না ছিল। সে আয়িশা (রাঃ) এর নিকট অভিযোগ করলেন এবং (স্বামীর প্রহারের দরুন) নিজের গায়ের চামড়ার সবুজ বর্ণ দেখালো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এলেন, আর লোকেরা একে অন্যের সহযোগিতা করে থাকে, তখন আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ কোন মুমিন মহিলাকে এমনভাবে প্রহার করতে আমি কখনও দেখিনি।
মহিলাটির চামড়া তার কাপড়ের চেয়ে অধিক সবুজ হয়ে গেছে। বর্ণনকারী বলেনঃ আবদুর রহমান শুনতে পেল যে, তার স্ত্রী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসেছে। সুতরাং সেও তার অন্য স্ত্রীর দুটি ছেলের সাথে করে এলো। স্ত্রীলোকটি বললঃ আল্লাহর কসম! তার উপর আমার এ ছাড়া আর কোন অভিযোগ নেই সে, তার কাছে যা আছে, তা আমাকে এ জিনিসের চেয়ে বেশী তৃপ্তি দেয় না। এ বলে তার কাপড়ের আচল ধরে দেখান।
আবদূর রহমান বললঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে মিথ্যা কাছে, আমি তাকে ধোলাই করি চামড়া ধোলাই করার ন্যায়। (অর্থাৎ পূর্ণ শক্তির সাথে দীর্ঘস্থায়ী সঙ্গম করি)। কিন্তু সে অবাধ্য স্ত্রী, রিফাআর কাছে ফিরে যেতে চায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ব্যাপার যদি তাই হল তাহলে রিফাআ তোমার জন্য হারাম হবে না, অথবা তুমি তার যোগ্য হতে পার না, যতক্ষন না আবদুর রহমান তোমার সুধা আস্বাদন করবে। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুর রহমানের সাথে তার পুত্রদ্বয়কে দেখে বললেনঃ এরা কি তোমার পুত্র? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এই আসল ব্যপার, যে জন্য স্ত্রী লোকটি এরূপ করছে। আল্লাহর কসম কাকের সাথে কাকের যেমন সা’দৃশ থাকে, তার চেয়েও অধিক মিল রয়েছে ওদের সাথে এর (অর্থাৎ আবদুর রহমানের সাথে তার পুত্রদের)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইকরিমা (রহঃ)

একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে, নিজের স্ত্রীকে কোন পুরুষ কেন পিটিয়েছে, দুনিয়াতে তার জন্য পুরুষকে কোন জবাবদিহি করতে হবে না। এই হাদিসটিকে অনেকেই দুর্বল বলে অভিহিত করেছেন বটে, আবার অনেকে এটিকে হাসান বলেছেন। কিন্তু এর সাথে আরো কয়েকটি হাদিস পাওয়া যায়, যেখানে দেখা যায় নবী নিজেও স্ত্রী প্রহার করার কারনে স্বামীর ওপর কোন শাস্তি প্রয়োগ না করে কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ না করে বরঞ্চ স্বামীটি যেন স্ত্রীকে তালাক দেয় সেই চেষ্টাই করেছেন। আগে উমর বর্ণিত সেই হাদিসটি দেখে নিই।

স্ত্রীকে কেন প্রহার করা হলো সে বিষয়ে শেষ বিচারের দিন তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে না। (আবু দাউদ , বই নং- ১১, হাদিস -২১৪২)
হাদিসের মান বিষয়ক নোটঃ কিছু কিছু প্রখ্যাত স্কলার, যেমন আলবানী এই হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন, অন্যদিকে সৌদি আববের বিখ্যাত ইসলামি প্রকাশনা দারুস সালাম থেকে প্রকাশিত ইংরেজি অনুবাদে হাদিসের মান “হাসান” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে । নিচে দারুস সালাম থেকে প্রকাশিত হওয়া গ্রন্থের ডাউনলোড লিঙ্ক এবং রেফারেন্স দেয়া হলো। [8]

4
6

আরো আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, একজন স্ত্রীকে পিটিয়ে হাড্ডি ভেঙ্গে দেয়ার পরেও নবী সেই স্বামীকে কোন শাস্তি প্রদান করেননি [9] [10]

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭/ তালাক
২২২২. মুহাম্মদ ইবন মু’আম্মার ….. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবা বিনত সাহাল (রাঃ) সাবিত ইবন কায়স ইবন শাম্‌মাসের স্ত্রী ছিলেন। সে তাকে মারধর করলে তার শরীররে কোনো অঙ্গ ভেঙ্গে যায়। সে (হাবীবা) ফজরের নামাযের পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসে এবং সাবিতের বিরূদ্ধে তাঁর নিকট অভিযোগ করে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবিতকে ডাকেন এবং বলেন, তুমি তোমার প্রদত্ত মাহরের মাল গ্রহণ করো এবং তাকে ত্যাগ করো। সে (সাবিত) জিজ্ঞাসা করে, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! তা কি উত্তম হবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তখন সে বলে, আমি তাকে তার মাহর স্বরূপ দু’টি বাগান প্রদান করেছিলাম এবং সে এখন তার মালিক, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি তা গ্রহণ করো এবং তাকে ত্যাগ করো। সে (সাবিত) এরূপই করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

8

তবে নবী মুহাম্মদ স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করতে নিষেধ করেছেন, কারণ হিসেবে উনি এটিও উল্লেখ করে দিয়েছেন যে, রাতে সে সেই স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে হবে। তাই তাদেরকে গোলামের মত না পেটাতে, যেন রাতের সহবাসে আবার কোন সমস্যা না হয় [11]

10

এবারে এই হাদিসটি আরো একটি হাদিস গ্রন্থ থেকে পড়ি, যেখানে আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, কেন স্ত্রীদের গোলামের মত পেটাতে নিষেধ করা হয়েছে! হাদিস অনুসারে এর কারণ হচ্ছে, গোলামের মত পেটালে স্ত্রী রাতের বেলা সহবাস করতে অনাগ্রহী হতে পারে [12]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৪২-[৫] ‘আব্দুল্লাহ ইবনু যাম্‘আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন ক্রীতদাসীর ন্যায় স্ত্রীকে না মারে (অত্যাচার না করা হয়), অথচ দিনের শেষেই তার সাথে সহবাস করে।
অপর বর্ণনায় আছে- তোমাদের কেউ যেন ইচ্ছা করে স্ত্রীকে ক্রীতদাসীর ন্যায় মারমুখো না হয়, হয়তো দিন শেষে তার সাথে সহবাস করতে চাইবে; আর এতে সে অনাগ্রহ প্রকাশ করবে। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বায়ু নির্গত হওয়ায় হাসি-ঠাট্টাচ্ছলের কারণে উপদেশ করলেন, যে কাজ নিজে কর অন্যের সে কাজে তোমরা কেন হাসবে! (বুখারী ও মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : বুখারী ৪৯৪২, মুসলিম ১৪৭০।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু যাম‘আহ (রাঃ)

আরো একটি হাদিস পড়ি, যেখানে নবী আবার স্ত্রীদের মুখে না মারতে নিষেধ করেছেন! এর অর্থ হচ্ছে, অন্য স্থানে মারতে হবে [13]

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত
৩২৫৯-[২২] হাকীম ইবনু মু‘আবিয়াহ্ আল কুশায়রী (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! স্ত্রীগণ আমাদের ওপর কি অধিকার রাখে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যখন খাও, তখন তাকেও খাওয়াও; তুমি পরলে তাকেও পরিধান করাও, (প্রয়োজনে মারতে হলে) মুখমণ্ডলে আঘাত করো না, তাকে গালি দিও না, (প্রয়োজনে তাকে ঘরে বিছানা পৃথক করতে পার), কিন্তু একাকিনী অবস্থায় রাখবে না। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
[1] সহীহ : আবূ দাঊদ ২১৪২, ইবনু মাজাহ ১৮৫০, আহমাদ ২০০১৩, ইরওয়া ২০৩৩, সহীহ আত্ তারগীব ১৯২৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এবারে আসুন বিখ্যাত সাহাবী যুবায়র ইবন আওয়াম সম্পর্কে কিছু জেনে নেয়া যাক। নবী মুহাম্মদের সাহাবীদের মধ্যে যিনি সবচাইতে বেশি স্ত্রী পেটাতেন, যুবায়ের ছিলেন তাদের একজন। তার সম্পর্কে নবী মুহাম্মদের মহিলা সাহাবী এবং যুবায়েরের স্ত্রী উম্মে কুলসুম জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন অত্যন্ত নির্দয় স্বভাবের এবং স্ত্রীদের মারপিটও করতেন [14]

12

শুধু তাই নয়, এই যুবায়র ইবনে আওয়াম আবু বকরের কন্যা আসমা বিনতে আবু বকরকেও বিবাহ করেছিল। কিন্তু সেই সংসারেও ছিল একই মারপিটের সমস্যা। তখন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত আবু বকর তার কন্যা আসমাকে মারপিট সহ্য করে স্বামীর সংসার করতে নির্দেশ দিয়েছিল [15]। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য এই আরবি ফতোয়াটি পড়তে পারেন, এখানে আরবি ভাষায় বিস্তারিতভাবে এই বর্ণনাটি সহিহ সনদ সহ বিবৃত আছে। প্রয়োজনে আরবি জানা কারো সাহায্য নিন অন্যথায় গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করুন [16]

14

খুবই হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, এই স্ত্রীদের মারপিট করায় উস্তাদ যুবায়র ইবনে আওয়াম ছিলেন নবীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সাহাবী এবং পৃথিবীতেই জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সৌভাগ্যবান সাহাবীদের একজন [17] [18]

সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ৯. খিলাফাত সম্পর্কে।
৪৫৭৭. হাফ্‌স ইবন উমার (রহঃ) …. আবদুর রহমান ইবন আখনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা তিনি মসজিদে অবস্থানকালে এক ব্যক্তি আলী (রাঃ) সম্পর্কে আলোচনা করলে, সাঈদ ইবন যায়দ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বলেনঃ আমি এরূপ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, দশ ব্যক্তি বিনা হিসাবে বেহেশতে যাবে। তাঁরা হলেনঃ ১। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতে যাবেন, ২। আবূ বকর (রাঃ) জান্নাতী, ৩। উমার (রাঃ) জান্নাতী, ৪। উছমান (রাঃ) জান্নাতী, ৫। আলী (রাঃ) জান্নাতী, ৬। তালহা (রাঃ) জান্নাতী, ৭। যুবায়র ইবন আওয়াম (রাঃ) জান্নাতী ৮। সা’আদ ইবন মালিক (রাঃ) জান্নাতী, ৯। আবদুর রহমান ইবন আওফ (রাঃ) জান্নাতী।
তিনি বলেনঃ আমি ইচ্ছা করলে দশম ব্যক্তির নামও বলতে পারি। তখন লেকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করেঃ সে লোকটি কে? তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলেনঃ তিনি হলেন সাঈদ ইবন যুবায়র (রাঃ), অর্থাৎ তিনি নিজে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ – আশারাহ্ মুবাশশারা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬১০৮-[১] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে (খিলাফতের ব্যাপারে) এ কয়েকজন ছাড়া আমি অন্য আর কাউকেও যোগ্যতম মনে করি না, যাঁদের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সা.) – মৃত্যুর সময় খুশি থেকে গেছেন। অতঃপর তিনি [’উমার (রাঃ)] ’আলী, ’উসমান, যুবায়র, ত্বলহাহ্, সা’দ ও আবদুর রহমান (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) এর নাম উল্লেখ করেন। (বুখারী)
সহীহ: বুখারী ৩৭০০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬৯১৭, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী ১৭০২১, আবূ ইয়া’লা ২০৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)

তথ্যসূত্র

  1. সুরা নিসা, আয়াত ৩৪ []
  2. সূনান নাসাঈ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৬৫ []
  3. সহিহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, তৃতীয় খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ২১২৮ []
  4. সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ১৯৮৫ []
  5. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩২৬১ []
  6. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫৮২৫ []
  7. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৮, হাদিস নম্বরঃ ৫৪০৮ []
  8. সুনান আবু দাউদ খণ্ড ২ []
  9. সুনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর ২২২২ []
  10. সুনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯০ []
  11. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৭৭ []
  12. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩২৪২ []
  13. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৩২৫৯ []
  14. Muhammad ibn Saad. Kitab al-Tabaqat al-Kabir Volume 8. Translated by Bewley, A. (1995). The Women of Madina. London: Ta-Ha Publishers. Page: 163 []
  15. Muhammad ibn Saad. Kitab al-Tabaqat al-Kabir Volume 8. Translated by Bewley, A. (1995). The Women of Madina. London: Ta-Ha Publishers. Page: 177 []
  16. هل ثبت أن الزبير بن العوام كان يضرب زوجته أسماء رضي الله عنهما؟. []
  17. সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৫৭৭ []
  18. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিস নম্বরঃ ৬১০৮ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন