আসুন শুরুতেই প্রখ্যাত আলেম মুফতি ইব্রাহিমের বক্তব্য শুনে নেয়া যাক,
এবারে আসুন আহমদুল্লাহর একটি বক্তব্য শুনে নিই,
সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, মুমিন ব্যাক্তিকে হতে হবে নাসারন্ধ্রে লাগাম পরানো উটতুল্য। লাগাম ধরে যে দিকেই তাকে টানা হয়, সে দিকেই যেতে বাধ্য হয়। এর মানে হচ্ছে, ইসলামের বিধান সমূহ অন্ধভাবে বিশ্বাস করা এবং মেনে নেয়া। কোন ধরণের যাচাই বাছাই করে দেখা, যুক্তি প্রমাণ দিয়ে চিন্তা করে তারপরে মেনে নেয়া কিংবা না মানার সিদ্ধান্ত নেয়া, এগুলো কিছুই ইসলাম সমর্থন করে না। যুক্তি তথ্য প্রমাণ দিয়ে যাচাই করে দেখার কোন সুযোগই ইসলাম রাখে নি [1] –
সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ভূমিকা পর্ব
পরিচ্ছেদঃ ৬. হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ি রাশিদীনের সুন্নাতের অনুসরণ।
২/৪৩। ইরবায ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন হৃদয়গ্রাহী নাসীহাত করেন যে, তাতে (আমাদের) চোখগুলো অশ্রু ঝরালো এবং অন্তরসমূহ প্রকম্পিত হল। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! এতো যেন নিশ্চয়ই বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদের থেকে কি প্রতিশ্রুতি নিবেন (আদেশ দিবেন)? তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের আলোকিত দ্বীনের উপর রেখে যাচ্ছি, তার রাত তার দিনের মতই (উজ্জ্বল)। আমার পরে নিজেকে ধ্বংসকারীই কেবল এ দ্বীন ছেড়ে বিপথগামী হবে।
তোমাদের মধ্যে যে বেঁচে থাকবে সে অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। অতএব তোমাদের উপর তোমাদের নিকট পরিচিত আমার আদর্শ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের আদর্শ অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য। তোমরা তা শক্তভাবে দাঁত দিয়ে আকড়ে ধরে থাকবে। তোমরা অবশ্যই আনুগত্য করবে, যদি হাবশী গোলামও (তোমাদের নেতা নিযুক্ত) হয়। কেননা মুমিন ব্যাক্তি হচ্ছে নাসারন্ধ্রে লাগাম পরানো উটতুল্য। লাগাম ধরে যে দিকেই তাকে টানা হয়, সে দিকেই যেতে বাধ্য হয়।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ।
তাখরীজ আলবানী: সহীহাহ ৯৩৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ)
এবারে আসুন এই হাদিসটির ব্যাখ্যা জেনে নিই দরসে ইবনে মাজাহ গ্রন্থ থেকে [2]

ইসলামী আকীদার বিরুদ্ধে প্রমাণ চাওয়াও কুফরি
বিশ্বে বর্তমানে ৪,২০০-রও বেশি ধর্ম ও মতবাদ বিদ্যমান, প্রতিটিরই নিজস্ব কিছু মৌলিক বিশ্বাস, দাবি এবং ঐশী বা দার্শনিক ভিত্তি রয়েছে। একজন যুক্তিনিষ্ঠ ও চিন্তাশীল মানুষের নৈতিক ও বৌদ্ধিক দায়িত্ব হলো—প্রতিটি দাবির ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলা, তার পক্ষে কী ধরনের প্রমাণ বা যুক্তি উপস্থাপিত হয়েছে তা অনুসন্ধান করা, প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষা করা এবং তথ্য-তথ্যাদির আলোকে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয় করা। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা—সব ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়াকে জ্ঞানের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কিন্তু ইসলামী শরীয়াহ ও আকীদাহর কাঠামোতে এর সম্পূর্ণ বিপরীত একটি নীতি বিদ্যমান। এখানে কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসের সমালোচনা বা প্রত্যাখ্যানই নয়, বরং এমনকি সেই বিশ্বাসের বিপরীত কোনো দাবির প্রমাণ চাইতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইসলামী ফিকহ ও আকীদাহ শাস্ত্র অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাস—যেমন আল্লাহর অস্তিত্ব, কুরআনের ঐশী উৎস, মুহাম্মদের নবুয়ত, কিয়ামতের অবধারিত আগমন ইত্যাদি—এর বিপরীত কোনো বক্তব্য শুনে এবং কৌতূহলবশত বা বৌদ্ধিক সততার কারণে তার প্রমাণ চায়, তবে এই কর্মটি একটি সরাসরি “কুফর”, যার অর্থ হচ্ছে ভয়ঙ্করতম অপরাধের একটি।
অর্থাৎ, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো আকীদাহ-বিরোধী বক্তব্যকে যাচাই করার জন্যও প্রমাণের আবেদন করা ইসলামের মৌলিক আনুগত্যের নীতির লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়। এখানে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য উন্মুক্ত অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করার বদলে, প্রশ্ন তোলার আগেই তা ধর্মের অবমাননা এবং ঈমানের পরিত্যাগ বলে বিবেচনা করা হয়। ফলস্বরূপ, একজন মুসলিমের জন্য জ্ঞানের স্বাধীন অনুসন্ধান ও বিশ্বাসের প্রতি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা আইনগত ও ধর্মীয় উভয় দিক থেকেই শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত হয়।