বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় আমরা শীত ও গ্রীষ্মকালের কারণ হিসেবে মূলত পৃথিবীর নিজস্ব কক্ষপথে ঘূর্ণন এবং সূর্যের দিকে হেলে থাকার বিষয়টি শিখি, আর আমরা যদি মাদ্রাসায় ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করতে যাই তাহলে শিখি সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। ইসলাম অনুসারে শীত গ্রীষ্ম হয় জাহান্নামের শ্বাস প্রশ্বাসের কারণে। অন্যদিকে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা একদমই আলাদা। বিজ্ঞান বইয়ে পড়া ব্যাখ্যাটি খুবই বিজ্ঞানসম্মত ও যৌক্তিক। পৃথিবী যখন সূর্যকে কেন্দ্র করে তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তন করে, তখন এর ঘূর্ণন অক্ষের ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে থাকার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে বা সূর্যের বিপরীত দিকে অবস্থান করে। এই অক্ষের হেলে থাকার ফলে পৃথিবীর নির্দিষ্ট স্থানসমূহে সূর্যের আলো পড়ার পরিমাণ ও সময়ের ব্যাপ্তি ভিন্ন হয়ে যায়, যা মূলত ঋতু পরিবর্তনের কারণ সৃষ্টি করে।
গ্রীষ্মকালে, যে গোলার্ধটি (উত্তর বা দক্ষিণ) সূর্যের দিকে হেলে থাকে, সেটি অধিকতর আলো এবং তাপমাত্রা গ্রহণ করে। এর ফলে সেই অঞ্চলে দীর্ঘদিনের উপস্থিতি ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে গ্রীষ্ম ঋতু তৈরি হয়। সূর্যের আলো সরাসরি পড়ার ফলে দিন দীর্ঘ হয় এবং রাতের সময়কাল কমে আসে। অন্যদিকে, শীতকালে একই গোলার্ধ সূর্যের বিপরীত দিকে সরে গেলে সূর্যের আলো কম সরাসরি পড়ে এবং দিনের সময়কাল ছোট হয়ে আসে। এর ফলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীত ঋতু শুরু হয়।
প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর এই ঘূর্ণন অক্ষের হেলে থাকার ঘটনাটি ঋতু পরিবর্তনের মূল কারণ। তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, পৃথিবী সূর্যের দিকে সরাসরি হেলে থাকার কারণে গ্রীষ্মকালে দিনের সময় দীর্ঘ হয় এবং শীতকালে দিন ছোট হয়, কিন্তু এটি পৃথিবী এবং সূর্যের দূরত্বের কারণে ঘটে না। অনেকের ধারণা, পৃথিবী যখন সূর্যের কাছাকাছি থাকে তখন গ্রীষ্ম এবং দূরে সরে গেলে শীত হয়। এই ধারণাটি সম্পূর্ণভাবে ভুল। আসলে, পৃথিবীর সূর্য থেকে দূরত্ব সামান্য পরিবর্তিত হলেও তা ঋতু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়। পৃথিবীর সূর্যের দিকে বা বিপরীত দিকে হেলে থাকার কারণে দিন, রাত ও তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে, যা একে গ্রীষ্ম ও শীতের চক্রে বিভক্ত করে।
অতএব, ঋতু পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটি স্পষ্টতই পৃথিবীর কক্ষপথে আবর্তন এবং ঘূর্ণন অক্ষের হেলে থাকার প্রভাবের ওপর নির্ভরশীল। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা পৃথিবীর আবহাওয়া, তাপমাত্রা এবং দিন-রাতের দৈর্ঘ্যকে প্রভাবিত করে। তাই আমরা শৈশবে যে শিখি পৃথিবীর ঘূর্ণন ও অক্ষের হেলে থাকার কারণে শীত ও গ্রীষ্মকাল সৃষ্টি হয়, সেটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা প্রকৃতির নিয়ম এবং পৃথিবীর গতিশীলতার একটি নিখুঁত উদাহরণ।
এবারে আসুন পাঠ্যপুস্তক থেকেও বিষয়টি দেখে নিই,
অন্যদিকে ইসলামি বিশ্বাস হচ্ছে, শীতগ্রীষ্ম আসলে জাহান্নামের শ্বাস প্রশ্বাস!
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৫। মাসজিদ ও সলাতের স্থানসমূহ
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ৩২. জামাআতে রওনাকারীর জন্য পথিমধ্যে তীব্র গ্রীষ্মের সময় তাপ ঠাণ্ডা হয়ে আসলে যুহর আদায় করা মুস্তাহাব
১২৯০-(১৮৭/…) হারমালাহ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ….. আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নাম অভিযোগ করে আল্লাহর কাছে বলল, হে আমার প্রভু! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। সুতরাং আমাকে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের অনুমতি দিন। তাই আল্লাহ তা’আলা তাকে দু’বার শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুমতি দান করলেন। একবার শীত মৌসুমে আরেকবার গ্রীষ্ম মৌসুমে। তোমরা শীতকালে যে ঠাণ্ডা অনুভব করে থাকো তা জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে। আবার যে গরমে বা প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভব করে থাকো তাও জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১২৭৭, ইসলামীক সেন্টার ১২৯০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫/ মসজিদ ও সালাতের স্থান
পরিচ্ছেদঃ ৩২. তীব্র গ্রীষ্মের সময় তাপ কমে আসলে যোহর আদায় করা মুস্তাহাব
১২৭৯। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নাম বলল, হে রব! আমার একাংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলল। আমাকে শ্বাস নেয়ার অনুমতি দিন। তখন তাকে দুটি শ্বাসের অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে এবং আর একটি গ্রীষ্মকালে। অতএব, তোমরা যে শীত অনুভব কর, তা জাহান্নামের শ্বাস; আর যে গ্রীষ্ম অনুভব কর, তাও জাহান্নামের শ্বাস।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)