ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী বিবর্তন তত্ত্ব সম্পুর্ণ ভুল বা মিথ্যা হলেও, একই ইসলামী শাস্ত্র অনুসারে ইঁদুর আসলে নাকি মানুষের বিকৃত প্রাণী! এবং এমন ধারণাও প্রচলিত যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষকে ইঁদুরের মতো ছোট প্রাণীতে রূপান্তরিত করতে পারেন। সহীহ মুসলিম হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী মুহাম্মদ বলেছেন যে, ইঁদুর আসলে মানুষ থেকে বিকৃত হয়ে গঠিত প্রাণী। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, ইঁদুর বকরীর দুধ পান করে, কিন্তু উটের দুধের প্রতি তার আকর্ষণ নেই। এর মাধ্যমে ইঁদুরের বিকৃতির প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই ধরনের বিশ্বাস কেবল অন্ধবিশ্বাস এবং মিথ্যাচারই নয়, বরং এটি একটি কল্পনাপ্রসূত ধারণা, যা প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক বাস্তবতার সম্পূর্ণ বিপরীত।
প্রথমত, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক এবং ভিত্তিহীন। আধুনিক জীববিজ্ঞান এবং প্রাণীবিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী, ইঁদুর এবং মানুষের মধ্যে প্রজাতিগত (species) এবং বংশগতিগত (genetic) কোনো সম্পর্ক নেই। ইঁদুর Rodentia শ্রেণির অন্তর্গত একটি স্বতন্ত্র প্রজাতি, যা মানুষের মতো Primates শ্রেণির প্রাণীদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রাকৃতিক বিবর্তন (Evolution) প্রক্রিয়ায় প্রতিটি প্রাণী তার নিজের পরিবেশে অভিযোজিত হতে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে, যা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ঘটে। মানুষের ইঁদুরে রূপান্তরিত হওয়া কিংবা ইঁদুরের মানুষের বিকৃত রূপ হওয়া বাস্তবতার সাথে কোনোভাবেই মিল নেই এবং এর পেছনে কোনো জেনেটিক বা জৈবিক প্রমাণ নেই।
ধর্মীয়ভাবে প্রচারিত এই ধরনের ধারণা মানুষকে অন্ধবিশ্বাসের দিকে ঠেলে দেয় এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। ইঁদুরের আচরণ এবং খাদ্যাভ্যাসের ওপর ভিত্তি করে এটিকে মানুষের বিকৃত রূপ হিসেবে চিহ্নিত করা একেবারেই অযৌক্তিক এবং কুসংস্কারপ্রসূত। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায়, ইঁদুরের খাদ্যাভ্যাস এবং আচরণ নির্ভর করে তাদের প্রাকৃতিক চাহিদা ও পরিবেশের ওপর। উদাহরণস্বরূপ, ইঁদুর সাধারণত অল্প পরিমাণে মিষ্টি, শস্য এবং ফলমূল খেতে পছন্দ করে, যা তাদের প্রাকৃতিক খাদ্য। তারা কখনোই কোনো নির্দিষ্ট প্রাণীর দুধের প্রতি আকর্ষণ বা বিরূপ আচরণ প্রদর্শন করে না, যা একে বিকৃত প্রাণী হিসেবে প্রমাণ করে না। বরং, ইঁদুর একটি স্বতন্ত্র প্রাণী, যার আচরণ তার পরিবেশ এবং প্রজাতিগত বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে।
এই ধরনের ধর্মীয় কুসংস্কার শুধুমাত্র শিক্ষিত সমাজের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি। মানুষের মন ও চিন্তাভাবনাকে বিকৃত করে এ ধরনের বিশ্বাস বাস্তবতা থেকে দূরে রাখে এবং যুক্তিবোধকে দুর্বল করে। যেকোনো ধরনের প্রাণীকে বিকৃত মানবের রূপ হিসেবে তুলে ধরার মাধ্যমে মানুষকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে তোলা হয়, যা বিজ্ঞান ও জ্ঞানের প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়। ধর্মীয় এই ধরণের অবৈজ্ঞানিক ধারণা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং অন্ধবিশ্বাসের অন্ধকারে নিমজ্জিত করে। একবিংশ শতাব্দীতে, যেখানে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি প্রচুর অগ্রগতি সাধন করেছে, সেখানে এই ধরনের কুসংস্কারের ভিত্তিহীন প্রচার সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতির পথে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে [1] [2]
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৬/ যুহুদ ও দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণহীনতা সম্পর্কিত বর্ণনা
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ১১. বানর প্রসঙ্গ এবং তা বিকৃত প্রাণী হওয়া প্রসঙ্গ
৭২২৭। আবূ কুরায়ব মুহাম্মদ ইবনু আ’লা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, ইঁদুর (মানুষের) বিকৃত প্রাণী। এর নিদর্শন হচ্ছে এই যে, এদের সামনে বকরীর দুধ রাখা হলে তাঁরা তা পান করে, আর উষ্ট্রীর দুধ রাখা হলে তাঁরা তাঁর একটু স্বাদ গ্রহন করেও দেখেনা। এ কথা শুনে কা’ব (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি নিজে কি (এ হাদিসটি) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছ? তিনি বললেন, তা না হলে, কি তাওরাত আমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে?
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তথ্যসূত্র
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭২২৭ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৬৪ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"