Table of Contents
- 1 ভূমিকা
- 2 হাদিসঃ সংশয়হীন স্বচ্ছ ঈমান
- 3 ইমানের সংজ্ঞাঃ তাফসীরে জালালাইন
- 4 ইমাম নববীর শরহে মুসলিমঃ ঈমানের ভিত্তি দলিল প্রমাণ নয়
- 5 ইমান আর বিশ্বাসের পার্থক্যঃ যাকারিয়া
- 6 ইসলামী বনাম পশ্চিমা জ্ঞানতত্ত্বঃ আবু তোহা আদনান
- 7 কোরআন হাদিসের কাছে যুক্তি প্রমাণের মূল্য নেই
- 8 মুমিন হচ্ছে নাকে দড়ি বাধা উট
- 9 আহমদুল্লাহঃ কোরআন হাদিস শোনামাত্রই মাথা নিচু করে মানতে হবে
- 10 ইসলামী আকীদার বিরুদ্ধে প্রমাণ চাওয়াও কুফরি
ভূমিকা
ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ স্বীকার করা, স্বীকৃতি দেওয়া, মতান্তরে দৃঢ়ভাবে অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা। ইসলাম ধর্মে ঈমানের অর্থ হচ্ছে, কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়াই নিচের সমস্ত কিছু নিঃসন্দেহে মেনে নেয়া এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করাঃ
- একক স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা।
- আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস করা।
- আসমানী কিতাব সমূহতে বিশ্বাস।
- নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
- তাক্বদীর বা ভালো মন্দের ওপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা।
- আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
- মৃত্যুর পর পুনঃজীবিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস।
হাদিসঃ সংশয়হীন স্বচ্ছ ঈমান
হাদিসেও এই বিষয়ে খুব পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, সংশয় সন্দেহ যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে ইসলামের বিধানগুলোকে যাচাই করতে না চাওয়াই ঈমান [1] –
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ – সন্দেহ-সংশয়, কুমন্ত্রণা
৬৪-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কতক সাহাবা (সাহাবা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে কেউ তার মনে কোন কোন সময় এমন কিছু কথা (সংশয়) অনুভব করে যা মুখে ব্যক্ত করাও আমাদের মধ্যে কেউ তা গুরুতর অপরাধ মনে করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি তা এমন গুরুতর বলে মনে কর? সাহাবীগণ বললেন, হাঁ! তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটাই হলো স্বচ্ছ ঈমান। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম ১৩২, আবূ দাঊদ ৫১১১, আহমাদ ৯৬৯৫। এ হাদীসটি ইমাম হাকিম (রহঃ)-এর পা-ুলিপি হতে বিলুপ্ত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
বাঙলাভাষায় অন্ধবিশ্বাস এর অর্থ হচ্ছে, যুক্তিবুদ্ধি ব্যবহার না করে বা বিচার বিবেচনা না ক’রে কোনো কিছু মেনে নেয়া। মজার বিষয় হচ্ছে, ইসলামে ঈমানের সংজ্ঞাও ঠিক একই।
ইমানের সংজ্ঞাঃ তাফসীরে জালালাইন
তাফসীরে জালালাইনে ইমানের সংজ্ঞায় যা বলা হয়েছে, সেটি হচ্ছে, [2]
নবী করীম যা নিয়ে এসেছেন, তা তাঁর প্রতি আস্থা রেখে বিশ্বাস করা।
অনুভূতিগ্রাহ্য ও দৃশ্যমান কোনো বস্তুতে কারো কথায় বিশ্বাস করার নাম ঈমান নয়ঃ মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে আয়াতে দুটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ঈমান ও গায়েব। এ থেকে বোঝা গেল, অনুভূতিগ্রাহ্য ও দৃশ্যমান কোনো বস্তুতে কারো কথায় বিশ্বাস করার নাম ঈমান নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা হয় যে, কোনো ব্যক্তি যদি এক টুকরো সাদা কাপড়কে সাদা এবং এক টুকরো কালো কাপড়কে কালো বলে এবং এক ব্যক্তি তার কথা সত্য বলে মেনে নেয়, তাহলে একে ঈমান বলা যায় না। এতে বক্তার কোনো প্রভাব বা দখল নেই। অপরদিকে রাসূল এর কোনো সংবাদ কেবলমাত্র রাসূল এর উপর বিশ্বাসবশত মেনে নেওয়াকেই শরিয়তের পরিভাষায় ঈমান বলে।

তাফসীরে জালালাইনে আরো বলা আছে, ঈমান অর্থই গায়েবের ওপর বিশ্বাস। গায়েব সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা সম্পর্কে যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে কোন কিছুই জানা সম্ভব নয় [3] –

ইমাম নববীর শরহে মুসলিমঃ ঈমানের ভিত্তি দলিল প্রমাণ নয়
এবারে আসুন শরহে মুসলিম গ্রন্থ থেকে ঈমান সম্পর্কিত একটি অধ্যায় পড়ে নেয়া যাক, [4]

ইমান আর বিশ্বাসের পার্থক্যঃ যাকারিয়া
এই বিষয়ে ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়ার এই বক্তব্যটি শোনা এবং বোঝা অত্যন্ত জরুরি,
ইসলামী বনাম পশ্চিমা জ্ঞানতত্ত্বঃ আবু তোহা আদনান
আসুন একটি ওয়াজ শুনি,
কোরআন হাদিসের কাছে যুক্তি প্রমাণের মূল্য নেই
ইসলামের প্রতিষ্ঠিত আকীদা হচ্ছে, কোরআন হাদিসের ওপর কোন যুক্তি বুদ্ধি প্রমাণ ইত্যাদির কোন মূল্য নেই। আসুন একটি ওয়াজ শুনি,
মুমিন হচ্ছে নাকে দড়ি বাধা উট
এবারে আসুন প্রখ্যাত আলেম মুফতি ইব্রাহিমের বক্তব্য শুনে নেয়া যাক,
আহমদুল্লাহঃ কোরআন হাদিস শোনামাত্রই মাথা নিচু করে মানতে হবে
এবারে আসুন আহমদুল্লাহর একটি বক্তব্য শুনে নিই,
ইসলামী আকীদার বিরুদ্ধে প্রমাণ চাওয়াও কুফরি
বিশ্বে বর্তমানে ৪,২০০-রও বেশি ধর্ম ও মতবাদ বিদ্যমান, প্রতিটিরই নিজস্ব কিছু মৌলিক বিশ্বাস, দাবি এবং ঐশী বা দার্শনিক ভিত্তি রয়েছে। একজন যুক্তিনিষ্ঠ ও চিন্তাশীল মানুষের নৈতিক ও বৌদ্ধিক দায়িত্ব হলো—প্রতিটি দাবির ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলা, তার পক্ষে কী ধরনের প্রমাণ বা যুক্তি উপস্থাপিত হয়েছে তা অনুসন্ধান করা, প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষা করা এবং তথ্য-তথ্যাদির আলোকে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয় করা। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা—সব ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়াকে জ্ঞানের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কিন্তু ইসলামী শরীয়াহ ও আকীদাহর কাঠামোতে এর সম্পূর্ণ বিপরীত একটি নীতি বিদ্যমান। এখানে কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসের সমালোচনা বা প্রত্যাখ্যানই নয়, বরং এমনকি সেই বিশ্বাসের বিপরীত কোনো দাবির প্রমাণ চাইতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইসলামী ফিকহ ও আকীদাহ শাস্ত্র অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাস—যেমন আল্লাহর অস্তিত্ব, কুরআনের ঐশী উৎস, মুহাম্মদের নবুয়ত, কিয়ামতের অবধারিত আগমন ইত্যাদি—এর বিপরীত কোনো বক্তব্য শুনে এবং কৌতূহলবশত বা বৌদ্ধিক সততার কারণে তার প্রমাণ চায়, তবে এই কর্মটি একটি সরাসরি “কুফর”, যার অর্থ হচ্ছে ভয়ঙ্করতম অপরাধের একটি।
অর্থাৎ, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো আকীদাহ-বিরোধী বক্তব্যকে যাচাই করার জন্যও প্রমাণের আবেদন করা ইসলামের মৌলিক আনুগত্যের নীতির লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়। এখানে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য উন্মুক্ত অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করার বদলে, প্রশ্ন তোলার আগেই তা ধর্মের অবমাননা এবং ঈমানের পরিত্যাগ বলে বিবেচনা করা হয়। ফলস্বরূপ, একজন মুসলিমের জন্য জ্ঞানের স্বাধীন অনুসন্ধান ও বিশ্বাসের প্রতি সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা আইনগত ও ধর্মীয় উভয় দিক থেকেই শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত হয়।