একজন মানুষের যখন মৃত্যু হয় এবং সে লাশে পরিণত হয়, তখন তার সাথে কোন ধরণের অমানবিক বা বর্বর আচরণ করা খুবই নিকৃষ্ট মন মানসিকতার কাজ। পৃথিবীর বড় বড় যুদ্ধে বড় বড় বীর যোদ্ধাদের ইতিহাস থেকে জানা যায়, চরমতম শত্রুর সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরেও, শত্রুকে হত্যা করার পরেও যথাযোগ্য মর্যাদায় যোদ্ধারা বিপক্ষের নিহত যোদ্ধাদের লাশ ফেরত দিতেন, অথবা সম্মানের সাথে দাফন করতেন। কারণ লাশের সাথে কারো কোন শত্রুতা থাকে না। একজন মৃত মানুষ মাত্রই একটি শরীর, যেই শরীরের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ অর্থহীন এবং অপ্রয়োজনীয়।
যুদ্ধে যুদ্ধনীতি এবং ন্যূনতম মানবিকতা বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা রয়েছে, যার অন্যতম প্রধান একটি হলো – বিপক্ষের নিহত সৈন্যদের মর্যাদার সাথে কবর দেওয়া অথবা তাদের মৃতদেহ যথাযথভাবে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা। ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সনদে এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত শত্রু সৈন্যরাও মানবাধিকার থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হতে পারে না। তাদের দেহ অবহেলিতভাবে ফেলে রাখা, অপমান করা, প্রদর্শন করা, অথবা যথাযথ দাফনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্পষ্ট অপরাধ।
এ ধরনের আচরণ কেবল যুদ্ধনীতির ভঙ্গই নয়, বরং মানবতার মৌলিক মূল্যবোধেরও পরিপন্থী। নিহতদের মর্যাদা রক্ষা যুদ্ধের মধ্যেও সভ্যতা ও নৈতিকতাকে বাঁচিয়ে রাখে। ইতিহাসে দেখা গেছে, অনেক সেনাবাহিনী এমনকি চরম শত্রুতার মাঝেও বিপক্ষের মৃত সৈন্যদের যথাযোগ্য দাফন করেছে, যা একটি উন্নত যুদ্ধনীতি, সভ্য আচরণ এবং সুস্থ মানসিকতার পরিচায়ক। পক্ষান্তরে, যারা নিহতদের লাশ অসম্মান করে বা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তারা শুধু আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি নয়, বরং মানবিকতার চরম অপমান করে। আসুন একটি হিন্দি সিনেমার অংশবিশেষ দেখে নেয়া যাক,
এবারে আসুন এই বিষয়ে ইসলামের বিধান পড়ে নেয়া যাক। মক্কার পৌত্তলিক কোরাইশদের সাথে নবীর শত্রুতার কথা আমরা সকলেই জানি। তাদের মধ্যে বেশ কিছু যুদ্ধ হয়, সেইসব যুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নবী মুহাম্মদ কাফেরদের লাশের প্রতিও চরম প্রতিহিংসা পরায়ণ আচরণ করেন বদরের যুদ্ধের পরে নিহত কাফেরদের লাশগুলো নবী মুহাম্মদ এবং তার সঙ্গীরা নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত কূপে নিক্ষেপ করেছিল। তার কারণ হিসেবে বলেছিল, এই কাফেররা মুসলিমদের শত্রু, অপবিত্র এবং ঘৃণিত। এমনকি তাদের লাশের সাথেও হিংস্র আচরণের শিক্ষা দিয়ে গেছেন নবী- [1] [2]
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছেদঃ ২১৭০. আবূ জাহলের নিহত হওয়ার ঘটনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩৬৮৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৯৭৬
৩৬৮৯। ’আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) … আবূ তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বদর যুদ্ধের দিন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে চব্বিশজন কুরাইশ সর্দারের লাশ বদর প্রান্তরের একটি কদর্য আবর্জনপূর্ণ কূপে নিক্ষেপ করা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করলে সে স্থানের উপকন্ঠে তিনদিন অবস্থান করতেন। সে মতে বদর প্রান্তরে অবস্থানের পর তৃতীয় দিন তিনি তাঁর সাওয়ারী প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন, সাওয়ারী জ্বীন কষে বাঁধা হল। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজে (কিছু দূর) এগিয়ে গেলেন। সাহাবাগণও তাঁর পেছনে পেছনে চলেছেন।
তারা বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, কোন প্রয়োজনে (হয়ত) তিনি কোথাও যাচ্ছেন। অবশেষে তিনি ঐ কূপের কিনারে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কূঁপে নিক্ষিপ্ত ঐ নিহত ব্যাক্তিদের নাম ও তাদের পিতার নাম ধরে এভাবে ডাকতে শুরু করলেন, হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কি এখন অনুভব করতে পারছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য তোমাদের জন্য পরম খুশীর বস্তু ছিল? আমাদের প্রতিপালক আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যা বলেছিলেন তোমরাও তা সত্য পেয়েছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, (এ কথা শুনে) ’উমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আত্মাহীন দেহগুলোকে সম্বোধন করে কি কথা বলছেন?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, আমি যা বলছি তা তাদের তুলনায় তোমরা অধিক শ্রবণ করছ না। কাতাদা বলেন, আল্লাহ তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা শোনাতে) তাদের ধমকি, লাঞ্ছনা, দুঃখ-কষ্ট, আফসোস এবং লজ্জা দেওয়ার জন্য (সাময়িকভাবে) দেহে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ত্বলহা (রাঃ)

একই বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে সীরাতুল মুস্তফা গ্রন্থেও [3]। বিবরণটির উপরের অংশটিও পড়ুন, সেখানে আবূ হুযায়ফার পিতার লাশ দেখে তার মুখে দুঃখের ভাবের দিকেও লক্ষ্য করুন। জন্মদাতা প্রিয় পিতার লাশটিও কাফের হওয়ার জন্য সম্মানের যোগ্য নয়।
