Table of Contents
ভূমিকা
কোরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত হচ্ছে সূরা আনফালের ৬৭ নম্বর আয়াত। বদর যুদ্ধের সময় এই আয়াতটি নাজিল হয়, যেই আয়াতে খুব পরিষ্কারভাবে আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে দেন যে, যুদ্ধের পরে কাফের যুদ্ধবন্দীদের ওপর যথেষ্ট পরিমাণ হত্যাকাণ্ড এবং রক্তপাত ঘটানো না পর্যন্ত তাদেরকে মুক্তিপণের জন্য বন্দী করা নবীর জন্য জায়েজ নেই। অর্থাৎ আল্লাহ খুব পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন, যুদ্ধে যেসকল কাফের পরাজিত এবং বন্দী হবে, অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পন করে দেবে, তাদের যথেষ্ট পরিমাণ রক্তপাত ঘটানো জরুরি! এটিই আল্লাহর নির্দেশনা। অর্থাৎ বন্দী মানুষদের জবাই করে ফেলাই আল্লাহর হুকুম। অথচ, আধুনিক মানবাধিকার আইন অনুসারে যুদ্ধবন্দীদের সাথে যাবতীয় অত্যাচার নির্যাতন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ! যারা অস্ত্র ফেলে দেয়, তাদেরকে সভ্য পৃথিবীতে কোনভাবেই হত্যা করা যায় না।
সূরা আনফাল, আয়াত ৬৭
কোরআনে বলা হয়েছে, কাফিরদের প্রচুর রক্তপাত ঘটানো না পর্যন্ত কোন যুদ্ধবন্দী নেয়া ইসলামে জায়েজ নেই [1]
কোন নবীর সাথে যুদ্ধরত কাফিরদের মাঝে প্রচুর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তাদেরকে ভালোভাবে পর্যুদস্ত না করা পর্যন্ত নিজের কাছে বন্দী রাখা তাঁর জন্য উচিৎ হবে না। যেন তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চারিত হয় এবং তারা তাঁর সাথে দ্বিতীয়বার যুদ্ধ করতে না আসে। হে মু’মিনরা! তোমরা মূলতঃ বদরের কাফিরদেরকে বন্দী করে তাদের থেকে মুক্তিপণ নিতে চাও। অথচ আল্লাহ তা‘আলা আখিরাত চাচ্ছেন যা ধর্মের বিজয় ও তার পরাক্রমশীলতার মাধ্যমে হাসিল করা সম্ভব। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সত্তা, গুণাবলী ও ক্ষমতায় অপ্রতিদ্ব›দ্বী। তাঁকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। তেমনিভাবে তিনি তাঁর শরীয়ত প্রণয়নে ও তাক্বদীর নির্ধারণে অতি প্রজ্ঞাময়।
— Bengali Mokhtasar
কোন নাবীর জন্য এটা সঠিক কাজ নয় যে, দেশে (আল্লাহর দুশমনদেরকে) পুরোমাত্রায় পরাভূত না করা পর্যন্ত তার (হাতে) যুদ্ধ-বন্দী থাকবে। তোমরা দুনিয়ার স্বার্থ চাও আর আল্লাহ চান আখিরাত (এর সাফল্য), আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী।
— Taisirul Quran
কোন নাবীর পক্ষে তখন পর্যন্ত বন্দী (জীবিত) রাখা শোভা পায়না, যতক্ষণ পর্যন্ত ভূ-পৃষ্ঠ (দেশ) হতে শক্র বাহিনী নির্মূল না হয়, তোমরা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সম্পদ কামনা করছ, অথচ আল্লাহ চান তোমাদের পরকালের কল্যাণ, আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
— Sheikh Mujibur Rahman
কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, তার নিকট যুদ্ধবন্দি থাকবে (এবং পণের বিনিময়ে তিনি তাদেরকে মুক্ত করবেন) যতক্ষণ না তিনি যমীনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন। তোমরা দুনিয়ার সম্পদ কামনা করছ, অথচ আল্লাহ চাচ্ছেন আখিরাত। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।
— Rawai Al-bayan
কোনো নবীর জন্য সংগত নয় যে [১] তার নিকট যুদ্ধবন্দি থাকবে, যতক্ষণ না তিনি যমীনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন [২]। তোমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ [৩] এবং আল্লাহ্ চান আখেরাত; আর আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তাফসীরে জালালাইন
এই আয়াতটির অনুবাদ তাফসীরে জালালাইন থেকে পড়ে নিই [2] –

তাফসীরে মাযহারী
এবারে আসুন তাফসীরে মাযহারী থেকে আয়াতটির ব্যাখ্যা পড়ে দেখা যাক [3] –


যুদ্ধবন্দীদের জবাই করাই আল্লাহর কাছে উত্তম!
এবারে আসুন দেখি, ইসলামের বিধান অনুসারে যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করাটি উত্তম আমল নাকি তাদের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া উত্তম আমল সেটি [4] –
অথবা ফিদিয়া— যে কোনো একটিকে আপনি গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু ফিদিয়া গ্রহণ করলে প্রতি বন্দীর পরিবর্তে আপনার দলের একজন মৃত্যুবরণ করবে। রসুল স. এ কথা সাহাবীগণকে জানালেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসুল! বন্দীরা আমাদেরই স্বজন। তাদেরকে ফিদিয়ার বিনিময়ে মুক্ত করে দিলে ফিদিয়ার অর্থে আমরা সমর-সরঞ্জাম বৃদ্ধি করতে পারবো। আর তাদের একজনের বদলে আমাদের একজন যদি শহীদও হয়, তবুও তা আমাদের নিকট অপছন্দনীয় নয়। তাই হয়েছিলো। বদরের সত্তরজন যুদ্ধবন্দীর বদলে উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন সত্তরজন সাহাবী।
জ্ঞাতব্যঃ কাযী আবুল ফজল আয়ায তাঁর আশিফা গ্রন্থে লিখেছেন, হত্যা ও মুক্তিপণ গ্রহণ— দু’টোই ছিলো বৈধ। তবে হত্যা ছিলো উত্তম এবং মুক্তিপণ গ্রহণের মাধ্যমে বন্দী মুক্তির ব্যাপারটি ছিলো অনুত্তম। রূপকার্থে তাই মুক্তিপণ গ্রহণ করাকে অন্যায় বলা হয়েছে। নির্দেশনাটি ছিলো এ রকম– উত্তম আমল গ্রহণ করাই সমীচীন। তিবরানীও এ রকম বলেছেন। হজরত ওমর এবং হজরত সা’দ গ্রহণ করেছিলেন উত্তম আমলটি। তাই রসুল স. বলেছিলেন, আযাব এলে ওমর ও সা’দ ছাড়া আর কেউ বাঁচতে পারতো না। কিন্তু তকদীরের নির্ধারণ ছিলো আযাব আসবে না। তাই আযাব আসেনি।
দাউদ জাহেরী বলেছেন, পূর্বাহ্নে ফিদিয়াকে নিষেধ করা হয়নি। নিষেধ করা হলেও এ কথা বলা যেতো না যে রসুল স. আল্লাহর নিষেধের বাইরে কোনো কাজ করেন। এ রকম করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। তাই, বলা হয়েছে ‘আল্লাহর পূর্ব বিধান না থাকলে’। এভাবে বলে বরং রসুল স. কে সম্মানিতই করা হয়েছে। প্রকাশ করা হয়েছে আল্লাহর প্রতি রসুল স. এর একনিষ্ঠ আনুগত্যকে। বাগবী লিখেছেন, এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে সাহাবীগণ ফিদিয়ার অর্থ গ্রহণের প্রতি তাঁদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তখন অবতীর্ণ হয় নিম্নের আয়াত।

ইসলামিক জিহাদের পরে অমুসলিম যুদ্ধবন্দীদের সাথে বিজয়ী মুসলিমদের আচরণ কীরকম হবে, সে সম্পর্কে আসুন আর পড়ি ইবনে কাসীর থেকে [5] –
তাফসীরঃ উল্লেখিত আয়াতসমূহে আল্লাহ পাক কাফিরদের প্রতি তাঁহার ঘৃণা এবং তাহাদের অপকর্মের বর্ণনা দিয়া বলিতেছেন যে, ভূপৃষ্ঠে জীবকুলের মধ্যে বেঈমান কাফিরগণই হইল আল্লাহর নিকট অতি নিকৃষ্ট জীব। উহাদের মধ্যকার যাহাদের সাথে তুমি যখনই কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হও, তখনই উহারা সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে। যখন উহাদিগকে বিশ্বাস করিয়া আস্থা স্থাপন কর, তখন বিশ্বাস ভঙ্গ করিয়া তোমার আস্থা নষ্ট করিয়া ফেলে। উহারা আল্লাহকে আদৌ কোনরূপ ভয়ই করে না। নির্ভয় দাম্ভিকতার সহিত পাপাচারে লিপ্ত হয়। আলোচ্য আয়াতাংশের মর্ম হইলঃ তুমি যদি উহাদের যুদ্ধে পরাস্ত করিয়া বিজয় লাভ করিতে পার, তবে কঠোরভাবে বন্দী করিয়া জ্বালা-যন্ত্রণা দিবে। এই ব্যাখ্যা প্রদান করেন ইবন আব্বাস (রা)।
হাসান বসরী, যাহহাক, সুদ্দী, আতা খুরাসানী ও ইবন উআয়না (র) ইহার ব্যাখ্যায় বলেনঃ যুদ্ধে উহাদিগকে পরাস্ত করিতে পারিলে অতি কঠোরভাবে শাস্তি দিবে এবং নির্দয়ভাবে উহাদিগকে হত্যা করিবে যেন ইহাদের ছাড়া আরবের অন্যান্য শত্রুগণ এই শাস্তির কথা শুনিয়া ভীত হয় এবং নসীহত ও শিক্ষা গ্রহণ করে। তাহাদের মধ্যে লজ্জা ও অনুশোচনার সৃষ্টি হয়।

এই বিষয়ে আলেমদের বক্তব্য
আসুন এই বিষয়ে পাকিস্তানের একজন আলেমের বক্তব্য শুনি,