নবীদের শরীর মাটিতে পচবে না

ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রেরিত নবী ও রাসূলদের সংখ্যা আনুমানিক এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, আর কিছু বর্ণনা অনুসারে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার পর্যন্ত বলা হয়। এই বিশ্বাসের সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যুক্ত রয়েছে — নবীদের মৃতদেহ কখনও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না; অর্থাৎ, মৃত্যুর পরও তাদের শরীর অক্ষত অবস্থায় থাকে। হাদীস সমূহেও এ ধারণার উল্লেখ রয়েছে যে, “আল্লাহ নবীদের দেহকে পৃথিবীর জন্য হারাম করেছেন,” অর্থাৎ মাটি তাদের দেহকে পচাতে পারে না।

কিন্তু এই দাবিটি যদি বাস্তবিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হয়, তবে এর কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় না। পৃথিবীতে গত কয়েক শতাব্দী ধরে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বিভিন্ন যুগের ফসিল, জীবাশ্ম ও মমি আবিষ্কার করেছেন—ডাইনোসর থেকে শুরু করে প্রাচীন মানুষের অবশেষ পর্যন্ত—যেগুলো কয়েক মিলিয়ন বছর পুরনো। অথচ এমন বিপুল পরিমাণ অনুসন্ধানের পরও এখন পর্যন্ত কোনও নবীর অক্ষত মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়নি।

যদি নবীদের দেহ সত্যিই পচে না থাকে, তাহলে যুক্তিগতভাবে ধরে নেওয়া যায় যে, মাটির নিচে কোথাও না কোথাও সেই অক্ষত দেহগুলো থাকা উচিত ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের অগ্রগতি, ভূতাত্ত্বিক স্ক্যানিং প্রযুক্তি এবং বায়োকেমিক্যাল বিশ্লেষণ এতটা উন্নত যে, এমন কোনও অস্বাভাবিক দেহাবশেষ পাওয়া গেলে তা সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব হতো। কিন্তু ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব কিংবা জীববিজ্ঞানের কোনও শাখাতেই এ সংক্রান্ত কোনও প্রমাণ বা পর্যবেক্ষণ নেই।

আরও একটি যৌক্তিক প্রশ্ন এখানে উঠে আসে — ইসলামকে যদি ঐশী সত্য প্রমাণের উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হয়, তবে কেন মুসলমান সমাজের মধ্যে কখনও নবী মুহাম্মদের কবর খনন করে তার কথিত অক্ষত দেহ প্রদর্শনের চেষ্টা করা হয়নি? এমন উদ্যোগ, যদি কখনও নেয়া হতো, তা হলে তা ধর্মীয় দাবির একটি বাস্তব প্রমাণ হিসেবে দাঁড়াতে পারত। কিন্তু এই প্রশ্ন উত্থাপন করলেই মুসলিম সমাজে তা ধর্মনিন্দা হিসেবে গণ্য হয়, যার ফলে এর বৈজ্ঞানিক যাচাইয়ের সুযোগই অবরুদ্ধ থাকে।

বৈজ্ঞানিকভাবে মানুষের শরীরের ক্ষয় একটি স্বাভাবিক জৈবপ্রক্রিয়া, যেখানে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ও এনজাইমের ক্রিয়ায় জৈব পদার্থ ভেঙে যায়। শরীর সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ যেমন শুষ্কতা, নিম্ন তাপমাত্রা, অক্সিজেনের অভাব, কিংবা রাসায়নিক প্রক্রিয়া—এগুলো ব্যতীত কোনও মৃতদেহের প্রাকৃতিকভাবে অক্ষত থাকা সম্ভব নয়। মিসরের মমিগুলোও সংরক্ষিত থাকে বিশেষ রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও পরিবেশগত কারণে, ঈশ্বরীয় শক্তির কারণে নয়। তাই বৈজ্ঞানিকভাবে নবীদের দেহ পচে না—এ দাবি প্রমাণিত নয়, বরং প্রাকৃতিক নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অতএব, “নবীদের শরীর মাটিতে পচে না” — এই বিশ্বাসকে একটি ধর্মীয় প্রতীক বা আধ্যাত্মিক রূপক হিসেবে দেখা যেতে পারে, কিন্তু সেটি বাস্তব পদার্থবিজ্ঞানের বা জীববিজ্ঞানের নিয়মে টিকে থাকে না। যুক্তি ও প্রমাণের বিচারে এই দাবিটি পরীক্ষাযোগ্য নয়, পর্যবেক্ষণযোগ্যও নয় — ফলে এটি বিশ্বাসের অন্ধকার জগতে সীমাবদ্ধ একটি ধারণা, বিজ্ঞানের নয়।


ইসলামিক দাবী এবং কুসংস্কার

আসুন আলেমদের বক্তব্য শুনি, এবং এরপরে হাদিসগুলো পড়ি,

সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ৬/ জানাযা
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ৬/৬৫. নাবী ﷺ -এর ইনতিকাল ও তাঁর কাফন-দাফন।
১০/১৬৩৬। আওস ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আহর দিন সর্বোত্তম। এদিনই আদম (আঃ)–কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এদিনই শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে এবং এদিনই ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে। অতএব তোমরা এদিন আমার প্রতি অধিক সংখ্যায় দুরূদ ও সালাম পেশ করো। কেননা তোমাদের দুরূদ আমার সামনে পেশ করা হয়। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের দুরূদ আপনার নিকট কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনি তো মাটির সাথে মিশে যাবেন? তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামগণের দেহ ভক্ষণ যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
নাসায়ী ১৩৭৪, আবূ দাউদ ১০৪৭, ১৫৩১, আহমাদ ১৫৭২৯, দারেমী ১৫৭২ তাহকীক আলবানীঃ সহীহ্।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায)
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ৩৬৭. ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা সম্পর্কে।
১৫৩১. আল্‌-হাসান ইব্‌ন আলী (রহঃ) ………. আওস ইব্‌ন আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট দিন হলো জুমআর দিন। তোমরা ঐ দিনে আমার উপর অধিক দরূদ পাঠ করবে। কেওননা তোমাদের দরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়ে থাকে। রাবী বলেন, সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার দেহ মোবারক চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে মাটির সাথে মিশে যাবে, তখন কিরূপে তা আপনার সামনে পেশ করা হবে? জবাবে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তাআলা যমীনের জন্য নবীদের শরীরকে হারাম করে দিয়েছেন – – (নাসাঈ, ইব্‌ন মাজা)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৪/ জুমু’আ
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ৫/ জুমু’আর দিন নবী (ﷺ) এর উপর অধিক দুরুদ পড়া
১৩৭৭। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) … আওস ইবনু আওস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের সকল দিনের মধ্যে পরমোৎকৃষ্ট দিন হল জুমু’আর দিন, সে দিন আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, সে দিনই তাঁর ওফাত হয়, সে দিনই দ্বিতীয় বার শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং সে দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। অতএব, তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পড়। কেননা, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিভাবে আমাদের দরুদ আপনার কাছে পেশ করা হবে। যেহেতু আপনি (এক সময়) ওফাত পেয়ে যাবেন অর্থাৎ তারা বললেন, আপনার দেহ মাটির সাথে মিশে যাবে। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা যমীনের জন্য নাবীগণের দেহ গ্রাস করা হারাম করে দিয়েছেন।
(সহীহ। ইবন মাজাহ হাঃ ১০৮৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)


Independent AI Review

- **তথ্যগত সঠিকতা**:
- প্রবন্ধে উল্লেখিত নবীদের সংখ্যা এবং তাদের দেহের অক্ষত থাকার ধারণা ইসলামী বিশ্বাসের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই দাবির বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই এবং এটি "needs verification"।
- প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে নবীদের অক্ষত দেহ পাওয়া যায়নি বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা সঠিক এবং বর্তমান বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

- **যুক্তির গঠন**:
- প্রবন্ধে যুক্তির প্রবাহ সুসংহত এবং ধারাবাহিক। বৈজ্ঞানিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের অভাবের উপর ভিত্তি করে যুক্তি প্রদান করা হয়েছে।
- লেখাটি কোনো সরাসরি লজিক্যাল ফ্যালাসি প্রদর্শন করে না, তবে ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার ক্ষেত্রে কিছুটা একপাক্ষিক হতে পারে।

- **উৎস ও প্রমাণ**:
- প্রবন্ধে উল্লেখিত হাদিসের উদ্ধৃতি সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে এবং তা ইসলামী বিশ্বাসের সমর্থনে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাবের দিকটি সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

- **বৈজ্ঞানিক/সমসাময়িক মানদণ্ড**:
- প্রবন্ধে বৈজ্ঞানিকভাবে মানুষের দেহের ক্ষয়প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা হয়েছে। এটি বর্তমান বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

- **মূল শক্তি**:
- প্রবন্ধটি যুক্তিসঙ্গতভাবে বৈজ্ঞানিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের অভাবের উপর ভিত্তি করে ধর্মীয় দাবির সমালোচনা করেছে।
- লেখাটি স্পষ্টভাবে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছে।

- **মূল দুর্বলতা**:
- প্রবন্ধটি কিছুটা একপাক্ষিক হতে পারে, কারণ এটি ধর্মীয় বিশ্বাসের পক্ষে কোনো যুক্তি বা প্রমাণ প্রদান করে না।
- ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করা হয়নি, যা কিছু পাঠকের জন্য আপত্তিকর হতে পারে।

- **সংশোধন ও সুপারিশ**:
- প্রবন্ধে ধর্মীয় বিশ্বাসের পক্ষে কিছু ঐতিহাসিক বা ধর্মীয় প্রেক্ষাপট প্রদান করা যেতে পারে, যা পাঠকের জন্য আরও সমৃদ্ধ তথ্য সরবরাহ করবে।
- বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাবের পাশাপাশি ধর্মীয় বিশ্বাসের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের উপর আলোচনা করা যেতে পারে।

- **সারাংশ রায়**:
- তথ্যগত সঠিকতা: ৮/১০
- যুক্তির গুণমান: ৭/১০
- উৎসব্যবহার: ৮/১০
- সামগ্রিক স্কোর: ৭.৫/১০

এই রিভিউটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি; এটি কোনো মানব সম্পাদকীয় মতামত নয়।