ইসলামে রূহ বা আত্মা এবং দ্বিখণ্ডিত মস্তিষ্কের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা (Split-Brain Experiment)

ভূমিকা

চেতনা বা consciousness মানব অস্তিত্বের সবচেয়ে গভীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি। হাজার বছর ধরে দার্শনিক, বিজ্ঞানীগণ এবং ধর্মগুলো চেতনার ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেছে। ধর্মগুলো এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে “আত্মা” বা “রূহ”-এর ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছে, যার ভিত্তি অলৌকিকতা এবং দেহ-মন দ্বৈতবাদ। ইসলাম ধর্মে যেমন বলা হয়, চেতনা বা আত্মা হলো আল্লাহর দেওয়া এক হুকুম বা অনির্বচনীয় সত্তা, যা শরীর ছাড়াও অস্তিত্বশীল থাকে, ঘুমে শরীর ত্যাগ করে এবং মৃত্যুর পরও টিকে থাকে [1] [2]। কিন্তু আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান, বিশেষ করে Split-Brain Experiment, এই আধ্যাত্মিক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে এমন এক বাস্তবতা তুলে ধরে, যা দেখায়—চেতনা আসলে মস্তিষ্কের কাঠামোগত একটি ফলাফল বা মিথস্ক্রিয়া, এবং এটি বিভাজনযোগ্য। এই গবেষণার ফলাফল ধর্মীয় আত্মা-কেন্দ্রিক চেতনার তত্ত্বকে শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয়, বরং অবৈজ্ঞানিক ও স্ববিরোধী বলে প্রমাণ করে।


ইসলামে আত্মা বা রূহের ধারণা

ইসলামি বিশ্বাসে বলা হয়, ঘুমের সময় মানুষের রূহ বা আত্মা দেহ থেকে বেরিয়ে আল্লাহর কাছে থাকে এবং ঘুম থেকে ওঠার সময় তা ফেরত আসে। এই বিশ্বাসটি কুরআনের ৩৯:৪২ আয়াত ও হাদিসের কিছু বর্ণনার উপর ভিত্তি করে গঠিত। কিন্তু আধুনিক নিউরোসায়েন্স, জীববিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের আলোকে দেখা যায়, ঘুম একটি জৈবিক ও স্নায়ুবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া, যেখানে ‘আত্মা’ নামক কোনো অতিপ্রাকৃত সত্তার ভূমিকা নেই। ইসলাম ধর্মের এই অন্ধবিশ্বাসকে একটি ধর্মীয় কুসংস্কার হিসেবে যুক্তিসম্মতভাবে খণ্ডন করা জরুরি এবং এই প্রবন্ধে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের আলোকে এর ভিত্তিহীনতা ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।


আত্মা বা রূহ সম্পর্কে ইসলাম

ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহ মানুষের প্রাণ বা আত্মাকে ঘুমের সময়ে নিজের কাছে নিয়ে নেন, আবার ঘুম থেকে উঠলে সেই আত্মা বা প্রাণ ফিরিয়ে দেন। কোরআনে খুব পরিষ্কারভাবেই বিষয়টি বর্ণনা করা আছে [3]

তিনিই রাত্রিকালে তোমাদের আত্মাকে নিয়ে নেন, আর দিনের বেলা যা তোমরা কর তা তিনি জানেন। অতঃপর দিনের বেলা তিনি তোমাদের জাগিয়ে দেন, যাতে জীবনের নির্দিষ্টকাল পূর্ণ হয়। অতঃপর তাঁর পানেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন, অতঃপর তিনি তোমাদের নিকট বর্ণনা করে দেবেন যা তোমরা করছিলে।
— Taisirul Quran
আর সেই মহান সত্তা রাতে নিদ্রারূপে তোমাদের এক প্রকার মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন, আর দিনের বেলা তোমরা যে পরিশ্রম কর তিনি সেটাও সম্যক পরিজ্ঞাত; অতঃপর তিনি নির্দিষ্ট সময়কাল পূরণের নিমিত্ত তোমাদেরকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে থাকেন, পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে, তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তিনিই রাতে তোমাদেরকে মৃত্যু দেন এবং দিনে তোমরা যা কামাই কর তিনি তা জানেন। তারপর তিনি তোমাদেরকে দিনে পুনরায় জাগিয়ে তুলেন, যাতে নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করা হয়। তারপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর তোমরা যা করতে তিনি তোমাদেরকে সে বিষয়ে অবহিত করবেন।
— Rawai Al-bayan
তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিনে যা কামাই কর তা তিনি জানেন। তারপর দিনে তোমাদেরকে তিনি আবার জীবিত করেন, যাতে নির্ধারিত সময় পূর্ণ করা হয়। তারপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তারপর তোমারা যা করতে সে সম্বদ্ধে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

সেইসাথে এটিও বর্ণিত আছে, আল্লাহ প্রাণ হরণ করেন ঘুমের সময়ে, অর্থাৎ ঘুমের সময়ে মানুষ প্রাণহীন থাকে [4]

আল্লাহ প্রাণ গ্রহণ করেন সেগুলোর মৃত্যুর সময়, আর যারা মরেনি তাদের নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যুর সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তার (প্রাণ) রেখে দেন, আর অন্যগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফিরিয়ে দেন। যারা চিন্তা গবেষণা করে তাদের জন্য এতে বহু নিদর্শন আছে।
— Taisirul Quran
আল্লাহই প্রাণ হরণ করেন জীবসমূহের, তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের প্রাণও নিদ্রার সময়। অতঃপর যার জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অপরগুলি ফিরিয়ে দেন, এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।
— Sheikh Mujibur Rahman
আল্লাহ জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যারা মরেনি তাদের নিদ্রার সময়। তারপর যার জন্য তিনি মৃত্যুর ফয়সালা করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল কওমের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।
— Rawai Al-bayan
আল্লাহ্ই জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের প্রাণও নিদ্রার সময়। তারপর তিনি যার জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য [১]। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা চিন্তা করে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

এবারে আসুন তাফসীর গ্রন্থগুলো থেকে এই আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা পড়ে নেয়া যাক, [5] [6]

রূহ
রূহ 1

এবারে আসুন তাফসীরে মাযহারী থেকে এই ব্যাখ্যাটি জেনে নিই, [7]

রূহ 3

হাদিস থেকেও আমরা বিষয়টি জানতে পারি, [8] [9]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৮০/ দু‘আসমূহ
পরিচ্ছেদঃ ৮০/৭. ঘুমানোর সময় কী দু‘আ পড়বে।
৬৩১২. হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ করতে যেতেন, তখন তিনি এ দু’আ পড়তেনঃ “বিস্‌মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া” “হে আল্লাহ! আপনারই নাম নিয়ে মরি আর আপনার নাম নিয়েই বাঁচি।” আর তিনি জেগে উঠতেন তখন পড়তেনঃ “আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না- বা’দা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলাইহিন্ নুশূর” “যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের মৃত্যুদানের পর আবার আমাদের পুনর্জীবিত করেছেন। আর প্রত্যাবর্তন তাঁর পানেই।” [৬৩১৪, ৬৩২৪, ৭৩৯৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬৭ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৬০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ হুযায়ফাহ ইবন আল-ইয়ামান (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৮০/ দু‘আসমূহ
পরিচ্ছেদঃ ৮০/৮. ডান গালের নীচে ডান হাত রাখা।
৬৩১৪. হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নিজ বিছানায় শোয়ার সময় নিজ হাত গালের নীচে রাখতেন, তারপর বলতেনঃ “বিস্‌মিকা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া” হে আল্লাহ! আপনার নামেই মরি, আপনার নামেই জীবিত হই। আর যখন জাগতেন তখন বলতেনঃ “আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না- বা’দা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলাইহিন্ নুশূর” সে আল্লাহর জন্য প্রশংসা, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করলেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের পুনরুত্থান। [৬৩১২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৬৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৬২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ হুযায়ফাহ ইবন আল-ইয়ামান (রাঃ)

হাদিস থেকে খুব পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়, ইসলামের দৃষ্টিতে ঘুমের সময়ে মানুষের কোন প্রাণ বা আত্মা থাকে না, তাই ইসলামে ঘুমকে এক প্রকার মৃত্যু বলে অভিহিত করা হয়েছে [10]

আল-আদাবুল মুফরাদ
ঘুমানোর আদব-কায়দা
পরিচ্ছেদঃ ৫৭৬- কেউ তার বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে যে দোয়া পড়বে।
১২১৭। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর ইচ্ছা করলে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নামেই মরি ও বাচি”। তিনি তাঁর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বলতেনঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদেরকে আমাদের মৃত্যুর পর জীবিত করেছেন এবং তার নিকটই প্রত্যাবর্তন”। (বুখারী, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

একইসাথে, ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, মানুষের রূহ হচ্ছে আল্লাহর আদেশ [11] [12]

তোমাকে তারা রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বল, ‘রূহ হচ্ছে আমার প্রতিপালকের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত (একটি হুকুম)। এ সম্পর্কে তোমাকে অতি সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।’
— Taisirul Quran
তোমাকে তারা রূহ্ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, তুমি বলঃ রূহ্ আমার রবের আদেশ ঘটিত; এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, ‘রূহ আমার রবের আদেশ থেকে, আর তোমাদেরকে জ্ঞান থেকে অতি সামান্যই দেয়া হয়েছে’।
— Rawai Al-bayan
আর আপনাকে তারা রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে [১]। বলুন, ‘রূহ আমার রবের আদেশঘটিত [২] এবং তোমাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে অতি সামান্যই।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ويسألونك عن الروح “তোমাকে তারা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে”।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৪৩৬৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭২১
৪৩৬৬। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে একটি ক্ষেতের মাঝে উপস্থিত ছিলাম। তিনি একটি খেজুর যষ্ঠীতে ভর করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় কিছু সংখ্যক ইহুদী যাচ্ছিল। তারা একে অন্যকে বলতে লাগলো, তাঁকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন কর। কেউ বলল, কেন তাকে জিজ্ঞেস করতে চাইছ? আবার কেউ বলল, তিনি এমন উত্তর দিবেন না যা তোমরা অপছন্দ কর। তারপর তারা বলল যে, তাকে প্রশ্ন কর। এরপরে তাকে রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরত রইলেন। এ সম্পর্কে তাদের কোন উত্তর দিলেন না। আমি বুঝতে পারলাম, তার উপর ওহি নাযিল হবে। আমি আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর যখন ওহি নাযিল হল, তখন তিনি [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন,‏وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلاَّ قَلِيلاً “তোমাকে তারা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। বল, রুহ আমার রবের আদেশ এবং তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে। (১৭: ৮৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ)


মৃত্যু বলতে কী বোঝায়? — বৈজ্ঞানিক ও আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা

চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত্যু: মেডিকেল সায়েন্স অনুযায়ী, মৃত্যু (death) হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে দেহের সামগ্রিক কার্যক্ষমতা—বিশেষ করে স্নায়ুব্যবস্থা, রক্তসঞ্চালন এবং শ্বাসপ্রশ্বাস—স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং তা আর কখনো পুনরায় ফিরে আসে না। বিশেষ করে আধুনিক চিকিৎসায় স্নায়ুমৃত্যু (brain death)-কে মৃত্যুর মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়, কারণ মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে গেলে ব্যক্তি চেতনা ফিরে পাওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মৃত্যুর পরেও একজন মানুষের শরীরের কিছু অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সচল এবং জীবিত থাকতে পারে, তবে সামগ্রিক কার্যক্রম

WHO-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী মৃত্যু

“Death is the permanent disappearance of all evidence of life at any time after live birth has taken place.”
— World Health Organization (WHO), International Classification of Diseases (ICD-10), Definition of Death

এই সংজ্ঞায় “permanent disappearance” বা “স্থায়ী বিলুপ্তি”-র বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এর মানে, মৃত্যু এমন একটি অবস্থা যা থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়—কোনো হৃদস্পন্দন, শ্বাসপ্রশ্বাস বা মস্তিষ্কীয় চেতনার পুনঃসক্রিয়তা হয় না। আর যদি পুনরায় জীবিত হয়ে যায়, তখন সেটিকে মৃত্যুই বলা যাবে না।


চিকিৎসা সংস্থা ও গবেষণালব্ধ সংজ্ঞা

  • Harvard Medical School Criteria for Brain Death (1968):
    “Irreversible coma with no brain activity, including in the brainstem, confirmed by absence of response to external stimuli, no cranial nerve reflexes, and apnea (no breathing).”
  • Uniform Determination of Death Act (UDDA), USA (1981): “An individual who has sustained either (1) irreversible cessation of circulatory and respiratory functions, or (2) irreversible cessation of all functions of the entire brain, including the brain stem, is dead.”

ব্যবহারিক সংজ্ঞা ও উদাহরণ: একজন রোগী দীর্ঘ সময় কোমায় থাকার পর চিকিৎসকেরা যখন নিশ্চিত হন যে তার ব্রেইনস্টেম আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না, তার পিউপিল (pupil) আলোয় সংকুচিত হয় না, এবং নিজে শ্বাস নিতে পারে না—তখন তাকে আইনি ও চিকিৎসা দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত ঘোষণা করা হয়, যদিও তার হৃদস্পন্দন কোনো যন্ত্রের সাহায্যে কিছু সময় ধরে চলতে পারে।


তাই বিজ্ঞান ও চিকিৎসা-ভিত্তিক গবেষণার সংজ্ঞা অনুযায়ী, মৃত্যু একটি স্থায়ী ও চূড়ান্ত জৈবিক অবস্থা। ঘুমের সময় মানুষ শ্বাস নেয়, হৃদস্পন্দন চলে, মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে—তাই ঘুমকে “আত্মার বিচ্ছিন্নতা” বা “আংশিক মৃত্যু” বলা সম্পূর্ণ ভুল এবং বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন। WHO, Harvard Medical School এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, যেসব বৈশিষ্ট্য মৃত্যু নির্দেশ করে, সেগুলোর কোনোটিই ঘুমে অনুপস্থিত।


নিউরোসায়েন্স ও ঘুম: বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

ঘুম একধরনের জৈবিক ও স্নায়ুবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া, যা মানুষের মস্তিষ্ক ও দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রমেরই একটি অংশ। আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক বন্ধ হয়ে যায় না; বরং এটি বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করে। শুধু মস্তিষ্কই নয়, শরীরের সবকিছুই তখন সচল থাকে, কোষগুলো তখন কাজ চালিয়ে যায়। মূলত ঘুমের দুটি প্রধান ধাপ রয়েছে:
১) REM (Rapid Eye Movement)
২) Non-REM (NREM)


Non-REM ঘুম: এই পর্যায়ে শরীর ধীরে ধীরে বিশ্রামে যায়। হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাস কমে আসে, শরীর ঠান্ডা হয়, এবং মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ ধীরে ধীরে কমে যায়। এটি মূলত গভীর ঘুমের অংশ।

REM ঘুম: এই ধাপে আমরা স্বপ্ন দেখি। মস্তিষ্ক তখন খুব সক্রিয় থাকে, ঠিক জেগে থাকার সময়ের মতো। তবে শরীর একরকম অচল হয়ে যায়, যেন আমরা স্বপ্নে যা কিছু করি তা বাস্তবে করতে না পারি। এই পর্যায়ে মস্তিষ্ক স্মৃতি সংরক্ষণ, আবেগ প্রক্রিয়াকরণ এবং শেখার কাজ করে।

বিজ্ঞানীরা ইলেকট্রোএনসেফালোগ্রাম (EEG) দিয়ে ঘুমের সময় মস্তিষ্কের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেয়েছেন যে ঘুমের সময় মস্তিষ্ক বিশেষভাবে সক্রিয় থাকে। অর্থাৎ, ঘুম কোনোভাবে ‘মৃত্যুর মতো অবস্থা’ নয়, বরং এটি জীবনধারণের জন্য জরুরি একটি প্রক্রিয়া।

ঘুমের উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা:

  • মস্তিষ্কের তথ্য ও অভিজ্ঞতা সংগঠিত করা
  • স্মৃতি শক্তিশালী করা
  • মানসিক চাপ হ্রাস করা
  • কোষ পুনরুদ্ধার ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো

এই কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে নিউরনের মাধ্যমে হয়—কোনো অতিপ্রাকৃত রুহ বা আত্মার দরকার হয় না। ঘুমে “আত্মা দেহ ত্যাগ করে” এমন ধারণা বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো পর্যবেক্ষণে প্রমাণিত হয়নি। নিউরোসায়েন্স প্রমাণ করে যে ঘুম একটি সচল, জৈবিক ও পূর্বনির্ধারিত মস্তিষ্কীয় প্রক্রিয়া। এখানে আত্মা বা রুহের বিচরণের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটি মূলত ধর্মীয় কল্পনা ও অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যার ফসল, যা আজকের বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।


অন্যান্য ধর্মে আত্মার ব্যাখ্যা

ধর্মঘুম ও আত্মা সম্পর্কে বিশ্বাসউৎস
ইসলামরুহ ঘুমে আল্লাহর কাছে যায় এবং ফিরে আসেকুরআন ৩৯:৪২, হাদিস
হিন্দুধর্মআত্মা ঘুমে ব্রহ্মলোকে বিচরণ করেমাণ্ডুক্য উপনিষদ
খ্রিস্টান ধর্মঘুমকে মৃত্যু বলে উল্লেখ আছে, কিন্তু আত্মার গমন-ফিরতি নেইবাইবেল (1 Thessalonians 4:13)
বৌদ্ধধর্মআত্মা নেই (অনাত্তা); ঘুম মানসিক ও শারীরিক প্রক্রিয়াবিন্যাণ চক্র

Split-Brain গবেষণার পটভূমি

১৯৬০-এর দশকে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী রজার স্পেরি এবং তাঁর সহকর্মী মাইকেল গাজানিগা এমন রোগীদের নিয়ে গবেষণা শুরু করেন, যাদের corpus callosum কেটে ফেলা হয়েছিল—এটি হলো দুই হেমিস্ফিয়ার (ডান ও বাম মস্তিষ্ক) যুক্ত রাখার প্রধান স্নায়ুতন্তু। এ অস্ত্রোপচার করা হতো মৃগীরোগ (epilepsy) নিয়ন্ত্রণের জন্য। এই অস্ত্রোপচারের পর দেখা যায়, রোগীর দুটি মস্তিষ্কের অংশ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করছে এবং এমন আচরণ প্রকাশ পাচ্ছে যেন ব্যক্তি দুটি আলাদা চেতনা নিয়ে কাজ করছে [13]


‘ব্রেন স্প্লিট’ ও তার প্রেক্ষাপট

১৯৩৯ সালে নিউরোসার্জাররা মৃগী রোগীদের মস্তিষ্কের কর্পাস ক্যালোজাম (মস্তিষ্কের দুইভাগ সংযোগকারী পথ) কেটে দেয়, যাতে সারা মস্তিষ্কে মৃগী ছড়িয়ে না পড়ে । তবে এই অপারেশনের ফলে কল্পনা করা যায়নি — মানুষের চেতনায় দ্বন্দ্ব ও বিভাজন উঠে আসতে পারে। গাজানিগা ও স্পেরি রাইট ভিজ্যুয়াল ফিল্ডে ভিন্ন তথ্য প্রদর্শন করে পরীক্ষার মাধ্যমে দেখান:

  • বাম চোখের মাধ্যমে ডান হেমিস্ফিয়ার তথ্য পায়; যা ভাষা কেন্দ্র ধারণ করে। তাই ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব।
  • অন্যদিকে, ডান চোখ বাম হেমিস্ফিয়ারে তথ্য পাঠায়; যা ভাষায় বর্ণনা করতে অক্ষম, শুধু অঙ্গভঙ্গি বা লেখা দিয়ে প্রকাশ করতে পারে

একজন রোগী যখন বাম হেমিস্ফিয়ারে দেখানো ছবি অজানা বলে ভাষায় কিছু না জানালেও, হাত দিয়ে যে ছবিটি দেখেছে, সেটি চিহ্নিত করতে পারে। এই পরীক্ষা থেকে যে বিষয়গুলো বোঝা যায়,

  • আমাদের মস্তিষ্ক একাধিক ‘সেলুলার বা আঞ্চলিক চেতনা’-র সমষ্টি; শেষে একটি ‘বিগ পিকচার’ তৈরি করে।
  • ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হরমোন ও নিউরোট্রান্সমিটার মাধ্যমে আমাদের জীবন ও মনকে প্রভাবিত করে।
  • আমরা একটি বৃহৎ বাস্তুতন্ত্রের অংশ; চেতনা ও অভিজ্ঞতা পরিবেশ, মাইক্রোস্কোপিক স্তর, অন্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

কীভাবে এই গবেষণা আত্মার ধারনাকে আঘাত করে?

দুটি আলাদা চেতনার অস্তিত্ব?

গবেষণায় দেখা যায়, split-brain রোগী যদি চোখ দিয়ে বাম দিকে কিছু দেখে (যা ডান মস্তিষ্ক দ্বারা প্রক্রিয়াজাত হয়), তবে তারা তা বলতে পারে না, কারণ ভাষা বাম মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু যখন তাদেরকে বস্তুটি আঁকতে বলা হয়, তারা নির্ভুলভাবে তা আঁকতে পারে। অর্থাৎ, এক মস্তিষ্ক জানে, কিন্তু বলতে পারে না; অন্য মস্তিষ্ক বলতে পারে, কিন্তু জানে না। চেতনা এখানে বিভক্ত, বিচ্ছিন্ন এবং অংশগত। যদি আত্মা হয় একক, অভিন্ন ও অদেহী চেতনাসত্তা, তবে তার অভিজ্ঞতা বিভক্ত হয় কিভাবে? [14]

এই প্রশ্ন ধর্মীয় আত্মা-তত্ত্বের ভীত কাঁপিয়ে দেয়।

রূহ 5

রূহ 7

রূহ 9

আত্মার বিভাজন সম্ভব?

ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, আত্মা একটি একক, অদৃশ্য, দেহ-বহির্ভূত সত্তা—যা মৃত্যুর পরও জীবিত থাকে। কিন্তু split-brain রোগীদের আচরণ থেকে বোঝা যায়, চেতনা একক নয়, বরং এটি বহুসূত্রে গঠিত, মস্তিষ্ক-নির্ভর এবং বিভাজনযোগ্য। যদি চেতনা বিভক্ত হয়, তবে আত্মাও কি বিভক্ত হয়? যদি না হয়, তবে কেন একজন split-brain রোগী দুই রকম সিদ্ধান্ত নেয়, বা দুই রকম তথ্য ধারণ করে? উদাহরণস্বরূপ, এক split-brain রোগী তার এক হাত দিয়ে শার্টের বোতাম লাগায়, অন্য হাত তা খোলার চেষ্টা করে [15]

এই ধরণের আচরণ ধর্মীয় রূহ-তত্ত্বকে অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করে।


চেতনা, আত্মা ও মস্তিষ্ক: বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি

বিজ্ঞান এখন দৃঢ়ভাবে বলে, চেতনা উদ্ভব হয় মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট জৈব-ক্রিয়াকলাপ থেকে। নিউরোসায়েন্স অনুযায়ী, চেতনা কোনো আধ্যাত্মিক বস্তুর কাজ নয়, বরং নিউরন, সাইনাপ্স, এবং ইলেকট্রো-কেমিক্যাল সিগনালের সমন্বয়ে গঠিত একটি জটিল প্রক্রিয়া [16]

চেতনার বিজ্ঞান এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে—

  • মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে চেতনা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
  • ঘুম, মাদক, ট্রমা বা অ্যানেস্থেশিয়া দ্বারা সচেতনতা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়, তবে মস্তিষ্ক সচল থাকে।
  • মস্তিষ্কের দুটি অংশ বিচ্ছিন্ন করলে চেতনা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।

এই প্রমাণগুলো আত্মা বা রূহের অস্তিত্বকে অবান্তর ও অপ্রয়োজনীয় করে তোলে।


ধর্মীয় ব্যাখ্যার আত্মবিরোধিতা

ইসলামে বলা হয়, ঘুমের সময় রূহ শরীর থেকে বের হয়ে যায় এবং আবার ফিরে আসে [17]। তাহলে, ঘুমন্ত ব্যক্তি কি চেতনাহীন? কিন্তু আজ আমরা জানি, REM sleep-এ মানুষ অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে স্বপ্ন দেখে—মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশগুলো অতিমাত্রায় সক্রিয় থাকে। এছাড়া, যদি চেতনা দেহ-বহির্ভূত রূহের ফল হয়, তবে brain-dead (মৃত মস্তিষ্ক) ব্যক্তির দেহে কেন কোনো চেতনার লক্ষণ থাকে না? রূহ কি তখনো শরীরে থাকে, কিন্তু নিষ্ক্রিয়?

এই ধরনের প্রশ্নের কোনো যৌক্তিক উত্তর ধর্মে নেই—থাকে কেবল “আল্লাহই ভালো জানেন” জাতীয় দায়সারা উত্তর।


উপসংহার

Split-Brain Experiment আধুনিক চেতনা-গবেষণার অন্যতম মাইলফলক। এটি দেখিয়েছে, চেতনা বিভাজনযোগ্য এবং সরাসরি মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট গঠনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই বৈজ্ঞানিক তথ্য ধর্মীয় আত্মা-তত্ত্বকে শুধু অপ্রমাণিতই নয়, বরং অভ্যন্তরীণভাবে অসংগতি পূর্ণ ও অন্ধবিশ্বাসপূর্ণ বলে প্রতিষ্ঠা করে। ইসলামসহ অন্য ধর্মগুলো আত্মার ধারণা দিয়ে এমন এক চেতনাজগত গড়ে তোলে, যা যুক্তির বাইরে, প্রমাণের বাইরে, প্রশ্নের বাইরে। কিন্তু বিজ্ঞানের কাছে সত্য মানে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা, পরীক্ষাযোগ্য বাস্তবতা, এবং সর্বজনীন নৈর্ব্যক্তিক জ্ঞান [18]

আজ split-brain গবেষণা আমাদের বলে—চেতনার উৎস খুঁজতে আকাশের দিকে নয়, তাকাও নিজের মস্তিষ্কের নিউরন কোষগুলোর দিকে।



তথ্যসূত্রঃ
  1. সূরা আল-ইসরা ১৭:৮৫ ↩︎
  2. সূরা আয-যুমার ৩৯:৪২ ↩︎
  3. কোরআন ৬ঃ৬০ ↩︎
  4. কোরআন ৩৯ঃ৪২ ↩︎
  5. তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৭৭৯ ↩︎
  6. তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৫৭৩ ↩︎
  7. তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ২৬৪ ↩︎
  8. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৬৩১২ ↩︎
  9. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৬৩১৪ ↩︎
  10. আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিসঃ ১২১৭ ↩︎
  11. কোরআন ১৭ঃ৮৫ ↩︎
  12. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৩৬৬ ↩︎
  13. Gazzaniga, M. S. (1967). The split brain in man. Scientific American, 217(2), 24–29. ↩︎
  14. The split brain: A tale of two halves ↩︎
  15. Gazzaniga, M. S. (1998). The Mind’s Past. University of California Press. ↩︎
  16. Dehaene, S. (2014). Consciousness and the Brain: Deciphering How the Brain Codes Our Thoughts. Viking. ↩︎
  17. সূরা আয-যুমার ৩৯:৪২ ↩︎
  18. Koch, C. (2004). The Quest for Consciousness: A Neurobiological Approach. Roberts & Company. ↩︎