Table of Contents
ভূমিকা
ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে উল্লেখ রয়েছে যে, আল্লাহ প্রথমে জমিন বা মাটি সৃষ্টি করেছেন, এরপর সেই জমিনের উপর পর্বত স্থাপন করেছেন। এটি সূরা হা-মীম আস-সাজদা (৪১:১০)-এ “من فوقها” অর্থাৎ “উপর থেকে” শব্দটি দ্বারা বর্ণিত হয়েছে, যা আক্ষরিক অর্থে বোঝায় যে পর্বতগুলো মাটির উপরে এমনভাবে গেঁথে দেয়া হয়েছে যেন পেরেকের মতো তা উপর থেকে নিচের দিকে ধাক্কা দিয়ে বসানো হয়েছে। তবে, আধুনিক ভূতত্ত্ব এবং ভূতাত্ত্বিক গবেষণা অনুসারে, পর্বতের সৃষ্টি এমনভাবে হয়নি, বরং এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রক্রিয়ার ফল। পর্বতগুলো কোনো “উপর থেকে” গেঁথে দেয়া বস্তু নয়; বরং তারা টেকটোনিক প্লেটের ভৌগলিক গতিশীলতার ফলে মাটির অভ্যন্তর থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এই বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা কোরআনে বর্ণিত পর্বত সৃষ্টির ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত এবং এতে কোরআনের লেখকের ভূতাত্ত্বিক জ্ঞানের অভাব প্রতীয়মান হয়। এই বিষয়টি এই আলোচনায় পরিষ্কার করা হবে।
কোরআনে যা বলা হয়েছে
আসুন এই সম্পর্কে করআনের আয়াতের আরবি এবং বাঙলা অনুবাদ দেখি, [1]
وجعل فيها رواسي من فوقها
(যমীন সৃষ্টির পর) তার বুকে তিনি সৃদৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, যমীনকে বরকতমন্ডিত করেছেন আর তাতে প্রার্থীদের প্রয়োজন মুতাবেক নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য সঞ্চিত করেছেন চার দিনে।
— Taisirul Quran
তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে রেখেছেন কল্যাণ এবং চার দিনে ব্যবস্থা করেছেন খাদ্যের – সমভাবে, যাঞ্চাকারীদের জন্য।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তার উপরিভাগে তিনি দৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দিয়েছেন, আর তাতে চারদিনে প্রার্থীদের জন্য সমভাবে খাদ্য নিরূপণ করে দিয়েছেন।
— Rawai Al-bayan
আর তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে দিয়েছেন বরকত এবং চার দিনের মধ্যে [১] এতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন সমভাবে যাচঞাকারীদের জন্য।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
কোরআনে পাহাড় পর্বত সম্পর্কে আরো বলা আছে, পৃথিবী যেন নড়াচড়া না করে সেই কারণে আল্লাহ পাহাড় পর্বত দিয়ে পৃথিবীকে আটকে দিয়েছেন [2] –
তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ছাড়া যা তোমরা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন দৃঢ়ভাবে দন্ডায়মান পর্বতমালা যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে নড়াচড়া না করে আর তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার জীবজন্তু, আর আমিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, অতঃপর তাতে উদ্গত করি যাবতীয় কল্যাণকর উদ্ভিদ।
— Taisirul Quran
তিনি আকাশমন্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখছ। তিনিই পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পবর্তমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্ব প্রকার জীব-জন্তু এবং আমিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করে এতে উদ্ভব করি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদ।
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনি খুঁটি ছাড়া আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন, যা তোমরা দেখছ, আর যমীনে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পাহাড়, যাতে তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে না পড়ে, আর তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রত্যেক প্রকারের প্রাণী; আর আসমান থেকে আমি পানি পাঠাই। অতঃপর তাতে আমি জোড়ায় জোড়ায় কল্যাণকর উদ্ভিদ জন্মাই।
— Rawai Al-bayan
তিনি আসমানসমূহ নির্মাণ করেছেন খুঁটি ছাড়া—তোমরা এটা দেখতে পাচ্ছ; তিনিই যমীনে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সব ধরণের জীব-জন্তু। আর আমরা আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি তারপর এতে উদ্গত করি সব ধরণের কল্যাণকর উদ্ভিদ।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এই সম্পর্কে কোরআনে আরো বলা হয়েছে, পৃথিবীতে পাহাড় বা পর্বত হচ্ছে পেরেক সদৃশ। দেয়ালে কিছু আটকে রাখতে যেমন পেরেকের প্রয়োজন হয়, পৃথিবীকে আটকে রাখতেও আল্লাহ পেরেক অর্থাৎ উপর থেকে মেরে দিয়েছেন। কোরআনে পেরেকের উপমা দিয়ে বোঝানো হয়েছে, পাহাড় পর্বতগুলো উপর থেকে স্থাপিত [3] [4] –
(আমি যে সব কিছুকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে সক্ষম তা তোমরা অস্বীকার করছ কীভাবে) আমি কি যমীনকে (তোমাদের জন্য) শয্যা বানাইনি?
— Taisirul Quran
আমি কি পৃথিবীকে শয্যা (রূপে) নির্মাণ করিনি?
— Sheikh Mujibur Rahman
আমি কি বানাইনি যমীনকে শয্যা?
— Rawai Al-bayan
আমরা কি করিনি যমীনকে শয্যা
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আর পর্বতগুলোকে কীলক (বানাইনি)?
— Taisirul Quran
এবং পর্বতসমূহকে কীলক রূপে নির্মাণ করিনি?
— Sheikh Mujibur Rahman
আর পর্বতসমূহকে পেরেক?
— Rawai Al-bayan
আর পর্বতসমূহকে পেরেক ?
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তাফসীর বা আয়াতের ব্যাখ্যা
এবারে আসুন তাফসীরগ্রন্থ থেকে দেখে নেয়া যাক, ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে আল্লাহ আগে জমিন বানালেন, এরপরে পাহাড়কে উপর থেকে স্থাপন করে দিলেন জমিনকে স্থির করার জন্য [5]
এ ব্যাপারে একটি হাদীস উল্লেখ করা যায়, হাদীসটি নিম্নরূপ-
পাহাড় কখন সৃষ্টি করা আল্লাহ তা’আলা জমিন সৃষ্টি করলেন, কিন্তু তা ভীষণভাবে কাঁপছিল। অতঃপর জমিনের উপর পহাড়কে স্থাপন করা হলো। এতে জমিন স্থির হয়ে গেল। ফেরেশতাগণ আরজ করলন- হে আমাদের রব! পাহাড় থেকে ভারি শক্ত আর কোনো বস্তু কি সৃষ্টি করেছেন? উত্তর দিতে নিশ্চয় তা হলো লৌহ। তারপর তারা আবার প্রশ্ন করলেন, হে আমদের রব! লৌহ থেকে মারাত্মক কি কোন বস্তু সৃষ্টি করেছেন? উত্তর দিলেন, নিশ্চয় তা হলো আগুন। ফেরেশতাগণ পুনরায় প্রশ্ন করলেন, হে আমাদের রব! আগুন থেকে অধিকতর মারাত্মক কোনো বস্তু কি সৃষ্টি করেছেন? উত্তর করলেন, তা হলো পানি। আবার প্রশ্ন হলো যে, হে আমাদের রব, পানি থেকে মারাত্মক কোনো জিনিস সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ বলেন, হ্যাঁ বাতাস। তারপর প্রশ্ন হলো বাতাস হতে তীব্রতর কোনো বন্ধু কি সৃষ্টি করেছেন? উত্তরে বললেন, বনী আদম যারা ডান হাতে এমনভাবে দান করবে যে, বাম হাতে তা জানবে না । এ হাদীসটির উপর ভিত্তি করে সকল দার্শনিকগণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন যে, জমিন সৃষ্টির পরই পাহাড়ের সৃষ্টি হয়েছে । হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, প্রথম পাহাড়ের নাম আবূ কায়েস। এ হাদীসটিকে হাকিম সহীহ বলেছেন ।

পাহাড় সম্পর্কে হাদিসের ভাষ্য
সহিহ হাদিসের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ পৃথিবীর মাটি সৃষ্টি করেন শনিবার এবং এর উপর পর্বত বসান রবিবার দিন , যা আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুসারে পাহাড় পরে এসে স্থাপিত হয়েছে, এমন ধারণা সত্য নয়। [6] [7] –
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৫২। কিয়ামাত, জান্নাত ও জান্নামের বর্ণনা
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ১. সৃষ্টির সূচনা এবং আদাম (আঃ) এর সৃষ্টি
৬৯৪৭-(২৭/২৭৮৯) সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও হারূন ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ….. আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তা’আলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন এবং এতে পর্বত সৃষ্টি করেন রবিবার দিন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি বিপদাপদ সৃষ্টি করেন। তিনি নূর সৃষ্টি করেন বুধবার দিন। তিনি বৃহস্পতিবার দিন পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর জুমুআর দিনের শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ আসর থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ মাখলুক আদাম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৯৭,ইসলামিক সেন্টার ৬৮৫১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৩/ কিয়ামত, জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ২. সৃষ্টির সূচনা এবং আদম (আঃ) এর সৃষ্টি
৬৭৯৭। সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও হারুন ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তাআলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন। রোববার দিন তিনি এতে পর্বত সৃষ্টি করেন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি আপদ বিপদ সৃষ্টি করেন। বুধবার দিন তিনি নূর সৃষ্টি করেন। বৃহস্পতিবার দিন তিনি পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর তিনি আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করেন। অর্থাৎ জুমুআর দিনের সময়সমূহের শেষ মুহূর্তে (মাখলূক) আসর থেকে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
উপরে বর্ণিত তাফসীরে জালালাইন গ্রন্থের যেই হাদিসটি উল্লিখিত হয়েছে, আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী হাদিসটি তাহক্বীক করে জইফ বলেছেন, কিন্তু এই হাদিসটি বহু তাফসীর গ্রন্থে এবং হাদিস গ্রন্থে পাওয়া যায়। আসুন হাদিসটি পড়ে দেখা যাক, [8] [9]


আলেম ওলামাদের বক্তব্য
আসুন একই বক্তব্য বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম মিজানুর রহমান আযহারীর থেকে শুনি,
এবারে আসুন আরেকজন আলেমের কাছ থেকে ভূমিকম্পের কারণ এবং অন্যান্য বিষয়াদি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক,
আসুন এবারে মিজানুর রহমান আজহারীর কাছ থেকে পৃথিবীতে ভূমিকম্প হওয়ার কারণ জেনে নেয়া যাক,
প্রখ্যাত ইসলামিক আলেম এবং আধুনিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ শায়েখ মুহাম্মদ ইবন সালিহ ইবন উসাইমিন তার রমযান মাসের ৩০ আসর গ্রন্থেও একই কথা উল্লেখ করেছেন [10] –

পাহাড় পর্বত সম্পর্কে বিজ্ঞানের ভাষ্য
আধুনিক বিজ্ঞানের মতে, পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপর পর্বতগুলি পেরেকের মত ‘উপর থেকে স্থাপিত’ হয়নি, বরঞ্চ নিচ থেকে উঠে এসেছে। পৃথিবীর ভূত্বকের নিচে টেকটোনিক প্লেট নামে পরিচিত একাধিক স্তর রয়েছে, যা ক্রমাগতভাবে গতিশীল থাকে। যখন দুটি প্লেট একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন একটি প্লেট উপরে উঠে আসে এবং অন্যটি নিচের দিকে চলে যায়। এই প্রক্রিয়াটিই পর্বত সৃষ্টির মূল কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় প্লেট এবং ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষের ফলে মাউন্ট এভারেস্টের সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে। প্লেটের এই সংঘর্ষের প্রতিটি ধাপে মাউন্ট এভারেস্ট আরও উঁচু হতে থাকে এবং এখনো এই প্রক্রিয়াটি চলমান। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়া লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চলে এবং পর্বতগুলো এক সময় ক্ষয়ের মাধ্যমে ছোট হয়ে যায়। এভাবে, পর্বতের সৃষ্টি কোনো “উপর থেকে” বসানো বা স্থাপিত হওয়ার ফল নয়; বরং মাটির অভ্যন্তর থেকে উঠে আসার প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ফল। ভূতাত্ত্বিক গবেষণা এবং বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, মাটি এবং পর্বতের গঠন একে অপরের উপর চাপ সৃষ্টি করে সৃষ্টি হয় এবং এই চাপের ফলে ভূত্বকের উপরে পর্বতগুলো গঠিত হয়। এই প্রক্রিয়া বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত, যা কোরআনের বর্ণনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং কোরআনের লেখকের ভূতাত্ত্বিক জ্ঞানের অজ্ঞতা প্রকাশ করে।
বিশ্বের প্রধান পর্বতমালার গঠনকাল, বয়স এবং বৈশিষ্ট্য
এবারে আসুন, দেখে নেয়া যাক পৃথিবীর পাহাড় পর্বতগুলোর ঠিক কবে উদ্ভব হয়েছে সে সম্পর্কে জেনে নিই। ইসলামের দাবী হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন এবং এতে পর্বত সৃষ্টি করেন রবিবার দিন। কিন্তু পর্বতসমূহের বয়সকাল হিসেব করলে দেখা যায়, এক একটি পাহাড় বা পর্বত এক একটি সময়ে উদ্ভব হয়েছে। এমনকি, এখনো অনেক পাহাড় পর্বতের উদ্ভব ঘটে চলছে। হিমালয় পর্বতের উঁচুটা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো ইসলামের দাবীর সাথে সরাসরিই সাংঘর্ষিক।
পর্বতমালা | অবস্থান | গঠনকাল (যুগ) | আনুমানিক বয়স | গঠনের কারণ | বিশেষ বৈশিষ্ট্য |
---|---|---|---|---|---|
হিমালয় | দক্ষিণ এশিয়া (ভারত, নেপাল, তিব্বত) | কাইনোজোয়িক (Paleogene, ~৫০ মিলিয়ন বছর আগে) | ~৫০ মিলিয়ন বছর | ভারতীয় প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের নিচে ঠেলে যাওয়ার ফলে সংঘর্ষ | বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট (৮,৮৪৮ মিটার), এখনও প্রতি বছর ৫ মিমি উঁচু হচ্ছে |
আলপস | ইউরোপ (ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া) | কাইনোজোয়িক (~৬.৫–২.৫ কোটি বছর আগে) | ~২৫–৬৫ মিলিয়ন বছর | আফ্রিকান প্লেট ও ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষ | ইউরোপের বিখ্যাত পর্যটন ও স্কিইং এলাকা, বহু হিমবাহ বিদ্যমান |
অ্যান্ডিজ | দক্ষিণ আমেরিকা (চিলি, পেরু, বলিভিয়া) | ক্রেটেশিয়াস (~১০০ মিলিয়ন বছর আগে) | ~১০০ মিলিয়ন বছর | নাজকা প্লেট দক্ষিণ আমেরিকান প্লেটের নিচে সাবডাকশন | পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা (~৭,০০০ কিমি), বহু সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে |
রকি পর্বত | উত্তর আমেরিকা (USA, কানাডা) | ক্রেটেশিয়াস থেকে প্যালিওজোয়িক (~৭–১০ কোটি বছর আগে) | ~৭০–১০০ মিলিয়ন বছর | প্লেট সীমান্তে চাপ এবং অভ্যন্তরীণ সঞ্চালন | গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের নিকটে বিস্তৃত, বিশাল বনভূমি ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ |
উরাল | রাশিয়া, ইউরোপ ও এশিয়ার সীমান্ত | প্যালিয়োজোয়িক (~৩০০–২৫০ কোটি বছর আগে) | ~৩০০ কোটি বছর | ইউরোপীয় ও সাইবেরিয়ান মাইক্রো-প্লেট সংঘর্ষ | ইউরোপ ও এশিয়ার ভৌগোলিক সীমারেখা হিসেবে গণ্য হয় |
আরাভাল্লি | ভারত (রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ) | আর্কিয়ান যুগ (~৩৫০–৩২০ কোটি বছর আগে) | ~৩৫০ কোটি বছর | ভূত্বকের প্রাচীন উত্তোলন ও অবসাদ জমে তৈরি | পৃথিবীর প্রাচীনতম পর্বতশ্রেণির একটি, বর্তমানে অধিকাংশ অংশ ক্ষয়ে গেছে |
জাগ্রোস পর্বত | ইরান, ইরাক | প্রায় ১৫–২৫ মিলিয়ন বছর আগে (মিওসিন যুগ) | ~২০ মিলিয়ন বছর | আরবীয় ও ইউরেশীয় প্লেট সংঘর্ষ | খনিজ তেলের বিশাল মজুদের জন্য বিখ্যাত, ভাঁজ পর্বতের স্পষ্ট নিদর্শন |
আতলাস পর্বত | মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া | প্রায় ৬–৯ কোটি বছর আগে | ~৬৫–৯০ মিলিয়ন বছর | আফ্রিকান ও ইউরোপীয় প্লেটের সংঘর্ষ | আফ্রিকার পশ্চিমাংশে বিস্তৃত, আরবী ও বারবার জাতিগোষ্ঠীর আবাস |
উপসংহার
পাহাড় পর্বতের উৎপত্তি এবং সময়কাল সম্পর্কে ইসলামিক মিথোলজিতে যা বর্ণিত আছে, তা নিতান্তই শিশুসুলভ পৌরাণিক রূপকথা মাত্র। আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সাথে ইসলামের এই হাস্যকর রূপকথার গল্প মোটেও সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এসব শিশুতোষ রূপকথা ছোট বাচ্চাদের শোনানো যেতে পারে, কিন্তু এগুলোকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করলে যেই সমস্যাটি দেখা যায় তা হচ্ছে, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি মানুষের দূরত্ব তৈরি হয়, মানুষ ক্রমশ কূপমণ্ডূক ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। তাই এইসব গল্পকে পুরনোদিনের রূপকথা হিসেবে গ্রহণ করে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়াটি আমাদের সকলের জন্য জরুরি।
তথ্যসূত্রঃ
- কোরআন ৪১ঃ১০ ↩︎
- কোরআন ৩১ঃ১০ ↩︎
- কোরআন ৭৮ঃ৬ ↩︎
- কোরআন ৭৮ঃ৭ ↩︎
- তাফসীরে জালালাইন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬১ ↩︎
- সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী), হাদিস নম্বরঃ ৬৯৪৭ ↩︎
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৭৯৭ ↩︎
- তিরমিযী শরীফ, ৬ষ্ঠ খণ্ড, বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ৮৩ ↩︎
- তাহক্বীক মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদিস একাডেমী, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৭১৬-৭১৭ ↩︎
- রমযান মাসের ৩০ আসর, শায়েখ মুহাম্মদ ইবন সালিহ ইবন উসাইমিন, পৃষ্ঠা ২০ ↩︎