Table of Contents
ভূমিকা
মানব প্রজনন ও সন্তানের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ নিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মধ্যে পার্থক্য বহু পুরনো। ইতিহাসে দেখা যায়, প্রাচীন যুগে মানুষ প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পর্কে খুব সীমিত জ্ঞান রাখতো। তখন অনেক সমাজে সন্তান কার মতো হবে—এই প্রশ্নের উত্তর তারা তাদের অভিজ্ঞতা এবং ধর্মীয় বা পৌরাণিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে দিতে চেষ্টা করতো। ইসলামী বিশ্বাসেও এরকম কিছু ধারণা দেখা যায়, যেগুলোর একটি হল এই বিশ্বাস—যদি পুরুষের বীর্য আগে স্খলিত হয় তবে সন্তান তার পিতার মতো হবে, আর যদি নারীর বীর্য আগে আসে তবে সন্তান তার মায়ের বা মামার মতো হবে। কিন্তু আধুনিক জীববিজ্ঞান ও জেনেটিক্স এই ধারণাটিকে একেবারেই ভিত্তিহীন বলে প্রমাণ করেছে। সেই সম্পর্কেই এই প্রবন্ধটি।
ইসলামী বিশ্বাস
আসুন হাদিস থেকে জেনে নিই, সন্তান কার মত হয়, ইসলাম অনুসারে সেটি কীসের ওপর নির্ভর করছে! [1] [2] [3] [4] [5]
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩। হায়য ঋতুস্রাব
পরিচ্ছেদঃ ৭. মহিলার মনী (বীর্য) বের হলে তার উপর গোসল করা ওয়াজিব
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৬০২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩১৪
৬০২-(৩৩/…) ইবরাহীম ইবনু মূসা আর রায়ী, সাহল ইবনু উসমান ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ….. আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। এক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, মেয়েলোকের যখন স্বপ্নদোষ হবে এবং সে বীর্যরস দেখতে পাবে তখন কি সে গোসল করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এরপর আয়িশাহ (রাযিঃ) মহিলাটিকে বললেন, তোমার উভয় হাত ধূলিময় হোক এবং তাতে অস্ত্রের খোচা লাগুক। তিনি [’আয়িশাহ্ (রাযিঃ)] বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ছেড়ে দাও ওকে (ভৎসনা করো না) সন্তান মা-বাবার সদৃশের কারণেই হয়ে থাকে। যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের আগে জরায়ুতে প্রবেশ করে তখন সন্তানের আকৃতি তার মামাদের মতই হয়। আর যখন পুরুষের বীর্য মেয়েলোকের বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন তার আকৃতি চাচাদের মতই হয়। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬০৬, ইসলামিক সেন্টারঃ ৬২২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩। হায়য ঋতুস্রাব
পরিচ্ছেদঃ ৮. পুরুষ ও মহিলার বীর্যের বর্ণনা এবং সন্তান যে উভয়ের বীর্য ও শুক্র থেকে সৃষ্টি হয় তার বর্ণনা।
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৬০৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩১৫
৬০৩-(৩৪/৩১৫) আল হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী (রহঃ) ….. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুক্তিপ্রাপ্ত গোলাম সাওবান (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। ইতোমধ্যেই ইয়াহুদীদের এক আলিম এসে বলল, আসসালামু ’আলাইকা ইয়া মুহাম্মাদ! এরপর আমি তাকে এমন এক ধাক্কা মারলাম যে, সে প্রায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো! সে বলল, তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেন? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বলতে পার না। ইয়াহুদী বলল, আমরা তাকে তার পরিবার-পরিজন যে নাম রেখেছে সে নামেই ডাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নাম মুহাম্মাদ। আমার পরিবারের লোকই আমার এ নাম রেখেছে। এরপর ইয়াহুদী বলল, আমি আপনাকে (কয়েকটি কথা) জিজ্ঞেস করতে এসেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তোমার কী লাভ হবে, যদি আমি তোমাকে কিছু বলি? সে বলল, আমি আমার কান পেতে শুনব।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছে যে খড়িটি ছিল তা দিয়ে মাটিতে আঁকাঝোকা দাগ কাটতে ছিলেন। তারপর বললেন, জিজ্ঞেস কর। ইয়াহুদী বলল, যেদিন এ জমিন ও আকাশমণ্ডলী পাল্টে গিয়ে অন্য জমিন ও আকাশমণ্ডলীতে পরিণত হবে (অর্থাৎ কিয়ামত হবে) সেদিন লোকজন কোথায় থাকবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা সেদিন পুলসিরাতের কাছে অন্ধকারে থাকবে।
সে বলল, কে সর্বপ্রথম (তা পার হবার) অনুমতি লাভ করবে? তিনি বললেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ! ইয়াহুদী বলল, জান্নাতে যখন তারা প্রবেশ করবে তখন তাদের তোহফা কি হবে? তিনি বললেন, মাছের কলিজার টুকরা। সে বলল, এরপর তাদের দুপুরের খাদ্য কি হবে? তিনি বললেন, তাদের জন্য জান্নাতের ষাঁড় যাবাহ করা হবে যা জান্নাতের আশেপাশে চড়ে বেড়ায়। সে বলল, এরপরে তাদের পানীয় কি হবে? তিনি বললেন, সেখানকার একটি ঝর্ণার পানি যার নাম সালসাবীল। সে বলল, আপনি ঠিক বলেছেন।
সে আরো বলল যে, আমি আপনার কাছে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছি যা নবী ছাড়া পৃথিবীর কোন অধিবাসী জানে না অথবা একজন কি দু’জন লোক ছাড়া। তিনি বললেন, আমি যদি তোমাকে তা বলে দেই তবে তোমার কি কোন উপকার হবে? সে বলল, আমি আমার কান পেতে শুনব। সে বলল, আমি আপনাকে সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছি। তিনি বললেন, পুরুষের বীর্য সাদা এবং মেয়েলোকের বীর্য হলুদ। যখন উভয়টি একত্রিত হয়ে যায় এবং পুরুষের বীর্য মেয়েলোকের বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন আল্লাহর হুকুমে পুত্র সন্তান হয়। আর যখন মেয়েলোকের বীর্য পুরুষের বীর্যের ওপর প্রধান্য লাভ করে তখন আল্লাহর হুকুমে কন্যা সন্তান হয়।
ইয়াহুদী বলল, আপনি ঠিকই বলেছেন এবং নিশ্চয়ই আপনি নবী। এরপর সে চলে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ লোক আমার কাছে যা জিজ্ঞেস করেছে, ইতোপূর্বে আমার সে সম্পর্কে কোন জ্ঞানই ছিল না। আল্লাহ তা’আলা এক্ষণে আমাকে তা জানিয়ে দিলেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬০৭, ইসলামিক সেন্টারঃ ৬২৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাওবান (রাঃ)


সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২০০০. আদম (আঃ) ও তাঁর সন্তানদের সৃষ্টি। আল্লাহর বাণীঃ স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফিরিশতাগণকে বললেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা সৃষ্টি করছি। (২ঃ ৩০) صَلْصَالٌ বালি মিশ্রিত শুকনো মাটি যা শব্দ করে যেমন আগুনে পোড়া মাটি শব্দ করে। আরো বলা হয়, তাহল দুর্ঘন্ধযুক্ত মাটি। আরবরা এ দিয়ে صَلَّ এর অর্থ নিয়ে থাকে। যেমন তারা দরজা বন্ধ করার শব্দের ক্ষেত্রে صَرَّ الْبَابُ এবং صَرْصَرَ শব্দদ্বয় ব্যবহার করে থাকে। অনুরূপ كَبْكَبْتُهُ এর অর্থ كَبَبْتُهُ নিয়ে থাকে। فَمَرَّتْ بِهِ তার গর্ভ স্থিতি লাভ করল এবং এর মিয়াদ পূর্ণ করল। أَنْ لاَ تَسْجُدَ এর لاَ শব্দটি অতিরিক্ত। أَنْ تَسْجُدَ অর্থ সিজদা করতে হবে। মহান আল্লাহর বাণীঃ এবং স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফিরিশতাগণকে বললেন, আমি পৃথিবীতে খলিফা সৃষ্টি করছি। (২ঃ ৩০) ইবন আব্বাস (রাঃ) বললেন, لَمَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ এর অর্থ কিন্তু তার উপর রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক। فِي كَبَدٍ সৃষ্টিগত ক্লেশের মধ্যে وَرِيَاشًا এর অর্থ সম্পদ। ইবন আব্বাস (রাঃ) ছাড়া অন্যরা বলেন, الرِّيَاشُ এবং الرِّيشُ উভয়ের একই অর্থ। আর তা হল পরিচ্ছেদের বায্যিক দিক। مَا تُمْنُونَ স্ত্রীলোকের জরায়ুতে পতিত বীর্য। আর মুজাহিদ (রহঃ) আল্লাহর বাণীঃ إِنَّهُ عَلَى رَجْعِهِ لَقَادِرٌ এর অর্থ বলেছেন, পুরুষের লিঙ্গ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আল্লাহ সক্ষম। আল্লাহ সকল বস্তুকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন। আকাশেরেও জোড়া আছে, কিন্তু আল্লাহ বেজোড়। فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ উত্তম আকৃতিতে। যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত সকলেই হীনতাপ্রাপ্তদের হীনতমে। خُسْرٍ পথভ্রষ্ট। এরপর আল্লাহ استثناء করে আল্লাহ বলেন, কিন্তু যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত। لاَزِبٍ অর্থ আঠালো। نُنْشِئَكُمْ অর্থ যে কোন আকৃতিতে আমি ইচ্ছা করি তোমাদেরকে সৃষ্টি করব। نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ অর্থ আমরা প্রশংসার সাথে আপনার মহিমা বর্ণনা করব। আর আবুল আলীয়া (রহঃ) বলেন, অতঃপর আদম (আঃ) যা শিক্ষা করলেন তা হল তার উক্তি “হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নফসের উপর যুলম করেছি।“ তিনি আরো বলেন, فَأَزَلَّهُمَا শয়তান তাঁদের পদস্খলিত করল। يَتَسَنَّهْ পরিবর্তিত হবে। آسِنٌ পরিবর্তিত। الْمَسْنُونُ পরিবর্তিত। حَمَإٍ শব্দটি حَمْأَةٍ শব্দের বহুবচন। যার অর্থ গলিত কাদা মাটি। يَخْصِفَانِ তারা উভয়ে (আদম ও হাওয়া) জান্নাতের পাতাগুলো জোড়া জোড়া দিতে লাগলেন। (জোড়া দিয়ে নিজেদের লজ্জাস্থান ঢাকতে শুরু করলেন) سَوْآتُهُمَا দ্বারা তাঁদের উভয়ের লজ্জাস্থানের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আর مَتَاعٌ إِلَى حِينٍ এর অর্থ এখানে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত। আর আরববাসীগণ الْحِينُ শব্দ দ্বারা কিছু সময় থেকে অগনিত সময়কে বুঝিয়ে থাকেন। قَبِيلُهُ এর অর্থ তার ঐ দল যাদের মধ্যে সেও শামিল।
৩০৯৪। ইবনু সালাম (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু সালামের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার উত্তর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর কেও অবগত নয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি কারণে সন্তান তার পিতার সা’দৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে (কোন কোন সময়) তার মামাদের সাদৃশ্য হয়? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইমাত্র জিব্রাঈল (আলাইহিস সালাম) আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবি বলেন, তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, সে তো ফিরিশতাগণের মধ্যে ইয়াহুদীদের শত্রু।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হল আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হল মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য প্রথমে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সাদৃশ্যতা লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি-নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল।
এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়াহুদিরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রটনা করবে। তারপর ইয়াহুদিরা এলো এবং আবদুল্লাহ (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনুু্ সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যাক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যাক্তির পুত্র।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহন করে, এতে তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তার তাঁকে রক্ষা করুক। এমন সময় আবদুল্লাহ (রাঃ) তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যাক্তির সন্তান এবং তারা তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

মেয়েদের বীর্যস্খলনঃ মুহাম্মদের অজ্ঞতা
মুহাম্মদ মনে করতো, মেয়েদেরও বীর্য আছে এবং তা সঙ্গমের সময়ে তা বের হয়। কিন্তু মেয়েদের অর্গাজমের সুময়ে যা বের হয়, তা আসলে বীর্য নয়। ইনফ্যাক্ট মেয়েদের সেরকম বের হওয়ার মত কোন বীর্যই থাকে না। এই বিষয়ে এই লেখাটি পড়তে পারেন [6] ।
বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সন্তানের সাদৃশ্য নির্ধারণের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে জেনেটিক্স বা বংশগতি বিজ্ঞানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়। এই বিজ্ঞান দেখায়, সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে বীর্যপাতের ক্রমধারা, সময় বা যৌন ক্রিয়ার ক্রম কোনো ভূমিকা রাখে না। কারণ সাদৃশ্য নির্ধারিত হয় সম্পূর্ণরূপে জিন (Gene) নামক ক্ষুদ্র জৈবিক উপাদানের দ্বারা, যা মানুষের ডিএনএ (Deoxyribonucleic Acid)-এর মধ্যে সংরক্ষিত থাকে।
মানব শরীরের প্রতিটি কোষে ডিএনএ নামক অণু থাকে, যা জীবনের নকশা বা “ব্লুপ্রিন্ট” হিসেবে কাজ করে। এই ডিএনএ-এর নির্দিষ্ট অংশকে বলা হয় জিন, এবং প্রতিটি জিনই কোনো না কোনো বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী — যেমন চোখের রঙ, চুলের ধরন, ত্বকের বর্ণ, উচ্চতা, এমনকি কিছু মানসিক প্রবণতা পর্যন্ত। একজন মানুষের প্রায় ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ জিন থাকে, যেগুলো মিলে তার জেনেটিক পরিচয় গঠন করে।
যখন একটি শুক্রাণু (Sperm cell) একটি ডিম্বাণু (Egg cell)-এর সাথে মিলিত হয়, তখন উভয়ের ডিএনএ একত্রে মিলিত হয়ে একটি নতুন জিনোম (Genome) গঠন করে। এই জিনোমে প্রায় ৫০% উপাদান আসে পিতার কাছ থেকে এবং ৫০% মায়ের কাছ থেকে। অর্থাৎ, সন্তান মা-বাবা উভয়ের জিনগত উপাদানের একটি সংমিশ্রণ। এখানে “কার আগে” বা “কার পরে” বীর্যপাত হয়েছে তা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক, কারণ সাদৃশ্য নির্ভর করে কোন জিন সক্রিয় হবে এবং কোনটি নিষ্ক্রিয় থাকবে তার উপর, যা একটি অত্যন্ত জটিল ও স্বতঃস্ফূর্ত জৈব প্রক্রিয়া।
ডমিন্যান্ট ও রিসেসিভ জিনের ভূমিকা
কোনো বৈশিষ্ট্য সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পাবে কি না, তা নির্ভর করে ডমিন্যান্ট (প্রাধান্যশীল) ও রিসেসিভ (গোপন) জিনের পারস্পরিক ক্রিয়ার উপর। উদাহরণস্বরূপ, যদি পিতার বাদামি চোখের জন্য একটি ডমিন্যান্ট জিন থাকে এবং মাতার নীল চোখের জন্য একটি রিসেসিভ জিন থাকে, তবে সন্তানের চোখ বাদামি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু যদি দুইজনেরই রিসেসিভ জিন মিলিত হয়, তাহলে সন্তান নীল চোখ পেতে পারে। অর্থাৎ, এখানে কার বীর্য আগে স্খলিত হয়েছে তা নয়, বরং কোন জিন কম্বিনেশন কার্যকর হয়েছে তা-ই নির্ধারণ করে ফলাফল।
ক্রোমোজোমের বিন্যাস ও লিঙ্গ নির্ধারণ
মানুষের প্রতিটি কোষে থাকে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম, যার মধ্যে ২২ জোড়া সাধারণ (অটোসোমাল) এবং ১ জোড়া লিঙ্গ নির্ধারণকারী (Sex chromosomes)। মাতার সবসময় X ক্রোমোজোম থাকে (XX), আর পিতার থাকে X ও Y। যদি শিশুর ডিম্বাণুতে পিতার X ক্রোমোজোম প্রবেশ করে, তবে সন্তান কন্যা (XX) হবে; আর যদি Y প্রবেশ করে, তবে সন্তান পুত্র (XY) হবে। এভাবে দেখা যায়, লিঙ্গ নির্ধারণ সম্পূর্ণরূপে পিতার জিনগত অবদানের মাধ্যমে ঘটে, তবে চেহারা, গঠন, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যে উভয়ের জেনেটিক সমান ভূমিকা থাকে।
জিনের সম্ভাবনা ও এলোমেলো মিশ্রণ
জিনের বিন্যাস কোনো নিয়ন্ত্রিত প্যাটার্ন অনুসরণ করে না, বরং এটি সম্ভাবনার (Probability) ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি দম্পতির দুজন সন্তান থাকলে তাদের মধ্যে একটির নাক পিতার মতো এবং অন্যটির চোখ মায়ের মতো হতে পারে। কারণ প্রতিটি নতুন সন্তানের ক্ষেত্রে পিতামাতার ডিএনএর সংমিশ্রণ একেবারেই নতুনভাবে ঘটে।
তাই কেউ যদি মনে করে, প্রথম সহবাসে পুরুষের বীর্য আগে এলে সন্তান তার মতো হবে — এটি আধুনিক জেনেটিক্স অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।
যমজ সন্তানের উদাহরণ
যমজ সন্তান এ বিষয়ে একটি অসাধারণ উদাহরণ দেয়।
অভিন্ন যমজ (Identical twins) গঠিত হয় যখন একটি ডিম্বাণু একটি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হওয়ার পর বিভাজিত হয়ে দুইটি পৃথক ভ্রূণে পরিণত হয়। তাদের ডিএনএ সম্পূর্ণ একরকম হয়, তাই দেখতে প্রায় একই।
কিন্তু অভিন্ন নয় এমন যমজ (Fraternal twins) দুইটি পৃথক ডিম্বাণু ও দুইটি পৃথক শুক্রাণু থেকে জন্ম নেয়, ফলে তাদের ডিএনএ ভিন্ন হয় এবং তাদের চেহারা, রঙ বা ব্যক্তিত্বও ভিন্ন হতে পারে।
এই পার্থক্য প্রমাণ করে যে, একই পিতামাতা ও একই গর্ভেও জন্ম নিলেও সন্তানদের মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয় জেনেটিক সম্ভাবনার কারণে—সময় বা ক্রমধারা নয়।
পরিবেশগত প্রভাব
জেনেটিক্সের পাশাপাশি পরিবেশও সন্তানের কিছু বৈশিষ্ট্যে প্রভাব ফেলে, যদিও তা তুলনামূলকভাবে সীমিত। উদাহরণস্বরূপ—
- মাতৃগর্ভে পুষ্টির ঘাটতি শিশুর ওজন ও উচ্চতাকে প্রভাবিত করতে পারে,
- শিশুকালে পর্যাপ্ত আলো না পেলে ত্বকের রঙ হালকা থেকে আরও হালকা হতে পারে,
- পরিবেশগত দূষণ বা রেডিয়েশনের কারণে কিছু জিন ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরবর্তী প্রজন্মেও তার প্রভাব পড়তে পারে।
তবুও, এসব পরিবর্তন মুখাবয়ব বা বংশগত সাদৃশ্যের মূল কাঠামো বদলায় না। কারণ সাদৃশ্যের ভিত্তি জেনেটিক কোড, যা জন্মের মুহূর্তেই স্থির হয়ে যায়।
বৈজ্ঞানিক প্রমাণ
১৯শ শতকে গ্রেগর মেন্ডেল (Gregor Mendel) নামের একজন বিজ্ঞানী মটর গাছের উপর পরীক্ষা চালিয়ে প্রথম দেখান, বংশগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয় পৃথক জিনের মাধ্যমে। তার গবেষণাই আধুনিক জেনেটিক্সের ভিত্তি স্থাপন করে। আজকের দিনে DNA sequencing ও genome mapping প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ জানে, প্রতিটি বৈশিষ্ট্য হাজারো জিনের জটিল পারস্পরিক ক্রিয়ার ফল। এই গবেষণাগুলোতে কোথাও বীর্যপাতের সময় বা যৌন ক্রমের কোনো প্রভাবের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
উপসংহার
সারসংক্ষেপে বলা যায়, ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী সন্তানের সাদৃশ্যের সঙ্গে বীর্যপাতের ক্রমধারার সম্পর্ক রয়েছে—কিন্তু আধুনিক জেনেটিক্স এই ধারণাকে বৈজ্ঞানিকভাবে খণ্ডন করেছে। সন্তান কার মতো হবে তা নির্ভর করে জিনগত উপাদানের সংমিশ্রণ, ক্রোমোজোম বিন্যাস, এবং ডিএনএর জটিল ক্রিয়াকলাপের উপর। পিতা ও মাতার উভয়েই সন্তানের জিনোমে সমান অবদান রাখেন, এবং পরিবেশগত কারণগুলো তার সামান্য বহির্প্রকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই “পুরুষের বীর্য আগে এলে সন্তান তার মতো হবে”—এই বিশ্বাসটি আজ কেবল ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যবান, বৈজ্ঞানিকভাবে নয়। আধুনিক বিজ্ঞান এই ধারণাকে সম্পূর্ণভাবে অবৈজ্ঞানিক বলে প্রমাণ করেছে এবং দেখিয়েছে যে মানবজাতির বংশগত বৈশিষ্ট্য একটি নিরপেক্ষ জৈবিক প্রক্রিয়া, যা ঈশ্বরীয় ইচ্ছা বা যৌন ক্রমের উপর নির্ভর করে না।
