১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর পাকবাহিনী হামলা চালায়। এমন অবস্থায় হামলা চালায় যে, আমাদের কারোর প্রস্তুতি নেয়ার কোন উপায় ছিল না। অপ্রস্তুত ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা চালানো সকল নৈতিকতার মানদণ্ডে অন্যায়, তার ওপর যদি যুক্ত হয় নারী ও শিশু হত্যা, তাহলে সেগুলো সরাসরি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
রাতের অন্ধকারে চুপিসারে কোন জানান না দিয়ে যারা আক্রমণ করে, তাদের আমরা ডাকাত বলি। একই উদাহরণ নবী মুহাম্মদের বাহিনীর মধ্যেও দেখতে পাওয়া যায়। মুমিন সমাজের মধ্যে অনেকেই একে গেরিলা যুদ্ধের সাথে তুলনা দিয়ে উদাহরণ হিসেবে বলে থাকেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত হামলা করেছিল। অথচ, এই কথাগুলো বলার সময় তারা যে বিষয়টি গোপন করে সেটি হচ্ছে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সর্বদাই পাকবাহিনীর কোন বেসামরিক পাকিস্তানের নাগরিক বা নারী অথবা শিশু যেন হতাহত না হয়, সেইদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখা হতো।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেরিলা আক্রমণ একটি স্বীকৃত যুদ্ধের কৌশল। কিন্তু এই স্বীকৃত আক্রমণের কৌশলের মধ্যেও নীতি বজায় রাখতে হয়। এমন নয় যে, গেরিলা আক্রমণ একটি বৈধ যুদ্ধকৌশল বলে যার যেমন খুশি রাতের অন্ধকারে অস্ত্রসহ ঢুকে ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষকে খুনোখুনী করে যেতে পারে। গেরিলা যুদ্ধ পরিচালিত হয় সাধারণত দুইটি যুদ্ধরত বাহিনীর মধ্যে, এবং লক্ষ্য রাখা হয় যে, কোন বেসামরিক জনগণ যেন এর কারণে হতাহত না হয়। কারণ গেরিলা আক্রমণ হয় হঠাৎ করে, কেউ প্রস্তুতি নেয়ার সময় পায় না। তাই এই ধরণের আক্রমণে নারী শিশু বা বেসামরিক জনগণের জানমালের যেন কোন ক্ষতি না হয়, তার দিকে লক্ষ্য রাখা বাধ্যতামূলক।
পৃথিবীর বেশিরভাগ গেরিলা যুদ্ধে অতর্কিত আক্রমণ করার সময় সবচাইতে বেশি নজর রাখা অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে, আক্রমণে যেন শুধুমাত্র সেনাসদস্যদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এই গেরিলা আক্রমণে কোন বেসামরিক মানুষ আহত বা নিহত হলে সেটি আর ন্যায়সঙ্গত আক্রমণ থাকে না। কোনটি গেরিলা যুদ্ধ, আর কোনটি স্রেফ ডাকাতি- ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্যাতন, তার পার্থক্য বোঝার জন্য এটি দেখাই যথেষ্ট যে, যদি যুদ্ধটিতে বেসামরিক জনগণকে হত্যা বা আহত করা হয়, তাদের জীবনের ওপর কোন হুমকি আসে, তাহলে সেটি স্রেফ ডাকাতি বা অন্যায্য হামলা। আর বেসামরিক জনগণকে বাইরে রেখে শুধুমাত্র অস্ত্রধারী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ হচ্ছে নৈতিক আক্রমণ। এটিকে তখন আর ডাকাতি বলা যায় না। আর ইসলামের এই আক্রমণগুলোতে নিরীহ নারী শিশুদের ক্ষয়ক্ষতি হতো। একদম ডাকাতদের মতই এই গুপ্ত অতর্কিত হামলাগুলো ছিল খুবই নৃশংস। ইসলাম গ্রহণ করেনি বলে আগ বাড়িয়ে আক্রমণাত্মক জিহাদ করা, গনিমতের মাল হিসেবে নারী শিশুদের দাস বানানো, এমনকি যৌনদাসী বানানো, বাজারে নিয়ে সেইসব নারী শিশুদের দাস হিসেবে বিক্রি করা কোনভাবেই গেরিলা যুদ্ধ নয়, মুক্তি যুদ্ধ নয়। বরঞ্চ নৃশংস বর্বরতা। এগুলো কোন অবস্থাতেই কোন গেরিলা যুদ্ধের নিয়মের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হয় না। ইসলামিক জিহাদিরা রাতের অন্ধকারে তারা তরবারি নিয়ে কাফেরদের ঘরবাড়িতে ঝাঁপিয়ে পরতো, ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষ নারী শিশু কেউই রেহাই পেতো না। নবীকে এসে তারা জিজ্ঞেসও করতো যে, এরকম অবস্থায় রাতের অন্ধকারে বেপরোয়া অতর্কিত আক্রমণে নারী শিশুকে মারা যাবে কিনা। নবী বলে দিয়েছিলেন, রাতের অন্ধকারে না দেখে অনিচ্ছাকৃতভাবে মারলে এতে কোন দোষ নেই। যেসব নারী ও শিশুদের যুদ্ধের পরে জীবিত পাওয়া যেত, তাদের বন্দী করে দাস বানানো হতো, এটিও আন্তর্জাতিক আইনে একটি পরিষ্কার যুদ্ধাপরাধ। [1] [2] [3] [4] [5] !
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ১. যে সকল বিধর্মীর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা বৈধ
৪৩৭০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) … ইবনু আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নাফি’ (রহঃ) কে এই কথা জানতে চেয়ে পত্র লিখলাম যে, যুদ্ধের পূর্বে বিধর্মীদের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন কি না? তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে লিখলেন যে, এ (নিয়ম) ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ মুসতালিকের উপর আক্রমণ করলেন এমতাবস্থায় যে, তারা অপ্রস্তুত ছিল (তা জানতে পারেনি।) তাদের পশুদের পানি পান করানো হচ্ছিল। তখন তিনি তাদের যোদ্ধাদের (পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ) হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের (নারী শিশুদের) বন্দী করলেন। আর সেই দিনেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল। (ইয়াহইয়া বলেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি বলেছেন) জুওয়ায়রিয়া অথবা তিনি নিশ্চিতরূপে ইবনাতুল হারিছ (হারিছ কন্যা) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই হাদীস আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেই সেনাদলে ছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইবনু ‘আউন (রহঃ)
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছদঃ ৯. রাতের অতর্কিত আক্রমনে অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই
৪৩৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মনসুর ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) … সা’ব ইবনু জাছছামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুশরিকদের নারী ও শিশু সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যখন রাতের আধারে অতর্কিত আক্রমণ করা হয়, তখন তাদের নারী ও শিশুরাও আক্রান্ত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারাও তাদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৩৩। জিহাদ ও সফর
পরিচ্ছদঃ ৯. রাতের আকস্মিক হামলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই
৪৪৪২-(২৭/…) আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. সা’ব ইবনু জাসসামাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা রাতের অন্ধকারে আকস্মিক হামলায় মুশরিকদের শিশুদের উপরও আঘাত করে ফেলি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারাও তাদের (মুশরিক যোদ্ধাদের) মধ্যে গণ্য। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪০০, ইসলামিক সেন্টার ৪৪০০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনানে ইবনে মাজাহ
তাওহীদ পাবলিকেশন
অধ্যায়ঃ ১৮/ জিহাদ
১/২৮৩৯। সাব‘ ইবনে জাসসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের বেলা মুশরিকদের মহল্লায় অতর্কিত আক্রমণ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো, যাতে নারী ও শিশু নিহত হয়। তিনি বলেনঃ তারাও (নারী ও শিশু) তাদের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তথ্যসূত্র
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭০ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪২ [↑]
- সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৮৩৯ [↑]
- সহিহ মুসলিম শরীফ (প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ), আল হাদীছ প্রকাশনী, ১৭ ও ১৮ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"