Table of Contents
- 1 ভূমিকা
- 2 গল্পের উৎস এবং ইসলামী ব্যাখ্যা
- 3 অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের সম্মতি ও নৈতিক প্রশ্ন
- 4 এরকম স্বপ্ন দেখলে আপনি কী করবেন?
- 5 অন্ধ আনুগত্য এবং সামাজিক মনোবিজ্ঞান
- 6 আধুনিক উদাহরণ: ধর্মীয় বিভ্রম ও সন্তান হত্যা
- 7 ধর্মীয় গল্প ও সন্ত্রাসবাদ
- 8 সমালোচনামূলক ও উদার মুসলিম মানসিকতা
- 9 মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও সঠিক প্রতিকার
- 10 নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং আগামী ভবিষ্যৎ
- 11 উপসংহার
ভূমিকা
প্রায়শই আমরা এরকম কিছু ঘটনাবলী শুনি যে, কোন ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলাম কায়েমের জন্য কোনো জায়গাতে বোমা মেরেছে, কিংবা নিরাপরাধ অমুসলিমদের হত্যা করেছে। বাংলাদেশে হওয়া হলিআর্টিজান হামলায় অমুসলিমদেরকে জঙ্গিরা কলেমা পড়তে বলেছিল, এটি দেখার জন্য যে তারা মুসলমান কিনা। এরপরে ধরে ধরে এক একজন অমুসলিমকে তারা জবাই করেছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের এই কাজে কী আল্লাহ খুশি হয়েছিল? নিশ্চিতভাবেই তারা বিশ্বাস করতো যে, তাদের এই কাজে আল্লাহ খুশি হয়ে তাদের জান্নাতে নিয়ে যাবেন। কিন্তু নিরাপরাধ মানুষ মারলে তাদের আল্লাহ খুশি হবে, এরকম অদ্ভুত বিশ্বাস তাদের ভেতরে জন্মালো কীভাবে?
ইব্রাহিমের স্বপ্নে পাওয়া আল্লাহর আদেশে তার নিষ্পাপ অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে ছুরি ধরার ঘটনা ইসলামি ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি। এই গল্প মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহার মূল প্রেরণা এবং ইসলামের বাইরে ইহুদি‑খ্রিষ্ট ধর্মগ্রন্থেও উল্লেখিত। কিন্তু সমসাময়িক সমাজে এই গল্পের নৈতিক শিক্ষা নিয়ে ভয়াবহ কিছু প্রশ্ন আছে। শিশু হত্যার স্বপ্নেপ্রাপ্ত ঐশ্বরিক আদেশ মেনে নেওয়া, তাতে পুত্রের সম্মতি বা ইনফর্মড কনসেন্ট না থাকা এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে নিরাপরাধ মানুষের রক্তপাতকে মূল্যবান মনে করা – এসব প্রশ্ন আধুনিক মানবিক ও আইনত মানসিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই গবেষণা নিবন্ধে প্রথমে আমরা গল্পের মূল সূত্র ও তার ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করব, তারপর মনোবৈজ্ঞানিক ও নৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এই ধরণের অন্ধ আনুগত্যের ঝুঁকি, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদে এর ব্যবহার এবং আধুনিক সমাজে এর প্রভাব বিশ্লেষণ করবো। আলোচনার শুরুতেই আসুন একটি ভিডিও দেখে নেয়া যাক,
গল্পের উৎস এবং ইসলামী ব্যাখ্যা
কুরআনের সূরা আস‑সাফফাতে উল্লেখ করা হয়েছে, যখন সন্তান “চলাফেরার বয়সে পৌঁছল”, তখন ইব্রাহিম বললেন, “হে আমার ছেলে! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে তোমাকে আমি কোরবানি করছি। তুমি মতামত দাও।” ছেলে জবাব দিল, “আল্লাহ যেভাবে আদেশ করেছেন, তাই করুন; আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন”। এই কথোপকথন থেকে বোঝা যায়, চলাফেরার বয়সে পৌঁছানো পুত্র সেসময়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল, যার কনসেন্ট বা মতামত গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বুঝেশুনে নেয়া যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে কনসেন্ট হিসেবে গণ্য করা গেলেও, অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় জ্ঞানবুদ্ধি বিবেক বিবেচনার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অপারগতার কারণে কোন সিদ্ধান্তকে একটি ইনফর্মড কনসেন্ট হিসেবে ধরা হয় না। সেইসাথে এই সিদ্ধান্ত তো একজন মানুষের জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যেহেতু এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার মৌলিক মানবাধিকার বেঁচে থাকার অধিকারটি লঙ্ঘিত হচ্ছে। আসুন আয়াতগুলো পড়ি, [1]
অতঃপর সে যখন তার পিতার সাথে চলাফিরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন ইবরাহীম (আঃ) বলল, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, এখন বল, তোমার অভিমত কী? সে বলল, ‘হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন।
— Taisirul Quran
অতঃপর সে যখন তার পিতার সাথে কাজ করার মত বয়সে উপনীত হল তখন ইবরাহীম বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি যবাহ করছি, এখন তোমার অভিমত কি, বল। সে বললঃ হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’; সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’।
— Rawai Al-bayan
অতঃপর তিনি যখন তার পিতার সাথে কাজ করার মত বয়সে উপনীত হলেন, তখন ইবরাহীম বললেন, ‘হে প্রিয় বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি যবেহ করছি [১], এখন তোমার অভিমত কী বল?’ তিনি বললেন, ‘হে আমার পিতা! আপনি যা আদেশপ্ৰাপ্ত হয়েছেন তা-ই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।’
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, নবীদের স্বপ্নও আল্লাহর ওহি। তাই ইব্রাহিম ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (বা ইসহাক, বিষয়টি বিতর্কিত) সিদ্ধান্ত নেন, সমস্ত বিবেক বিবেচনা যুক্তি বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পন করাই ঈমানের পরীক্ষা। এই উদ্দেশ্যে ইব্রাহিম জবাই করার জন্য ছুরি ধার দিয়ে সন্তানকে নিয়ে গেলেন পাহাড়ে। তাকে জবাই করার ঠিক আগে আল্লাহ একটি পশু পাঠান এবং বলেন, এটি ছিল একটি বিশ্বাসের পরীক্ষা মাত্র, অথবা বলা চলে অন্ধবিশ্বাসের পরীক্ষা। আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল এটি পরীক্ষা করা যে, অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে ইব্রাহিম আসলেই একজন নিরাপরাধ শিশুকে হত্যা করে, নাকি যুক্তি আর বুদ্ধি ব্যবহার করে আল্লাহ এরকম আদেশ দিতেই পারেন না ভেবে নেয় বা এই স্বপ্নকে একটি মানসিক সমস্যা ধরে নিয়ে এই কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
ইসলামধর্মে বিশ্বাসী মানুষগণ এর পক্ষে যুক্তি দেন যে, এই স্বপ্নের প্রকৃত অর্থ ছিল “ত্যাগের পরীক্ষা” । কিন্তু অন্ধবিশ্বাসের পরীক্ষার জন্য নিরাপরাধ মানুষ জবাইতে ত্যাগের কী পরীক্ষা হলো তা বোধগম্য নয়, বরঞ্চ অন্ধবিশ্বাসের পরীক্ষা বলেই এটি প্রতীয়মান হয়। পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলমান আজও এই ঘটনাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এবং এর থেকে দীক্ষা নেয় যে, অন্ধবিশ্বাসের জন্য যেকোন নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করার প্রয়োজন হলেই, তারা একবিন্দু দ্বিধা বা সংকোচ না করেই আল্লাহর ওপর অন্ধবিশ্বাস করে নিরাপরাধ মানুষ বা মানুষদের জবাই করে ফেলবে! ঈদুল আজহার উৎসব এই ঘটনার স্মরণেই পশু কোরবানির মাধ্যমে উদযাপন করা হয়।
অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের সম্মতি ও নৈতিক প্রশ্ন
কাহিনিটির একাধিক বৈশিষ্ট্য আধুনিক মানবাধিকারের ধারনাকে চ্যালেঞ্জ করে। প্রথমত, ইব্রাহিমের ছেলে তখন অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং কাহিনীতে তার সম্মতির কোন প্রশ্নই আসে না, যেহেতু সে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক। সভ্য জগতে বিশেষজ্ঞগণ minors-এর consent–কে কোন ইনফর্মড কনসেন্ট বা বুঝেশুনে নেয়া সম্মতি হিসেবে মনে করেন না, এবং একে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন; এর উল্টোটি ঘটলে তা child abuse হিসেবে গণ্য করা হয়। দ্বিতীয়ত, সন্তানের মায়ের অবস্থানও এই গল্পে অবহেলিত। পৃথিবীর কোন সুস্থ স্বাভাবিক যুক্তিবোধসম্পন্ন পিতামাতাই কি আসলে স্বপ্নে দেখে সন্তানের প্রাণ উৎসর্গ করতে দেবেন, নাকি যুক্তি ব্যবহার করবেন? এই প্রশ্নে নিহিত আছে, ধর্মীয় গল্পে অন্ধভাবে সম্পূর্ণভাবে নিজের বিচার বুদ্ধিকে বিসর্জন দেয়া কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
সন্তানের জবাই করার বদলে পশুর কোরবানীর গল্পটি দ্বারা হওয়ায় অনেক মুসলিম ধার্মিক ব্যক্তিরা বলেন, ঈশ্বর মানব বলি নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষেরই এই কোরবানীর গল্পটি পড়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। প্রশ্ন জাগবে, এ কেমন ঈশ্বর যে যুক্তিবুদ্ধির ব্যবহার না শিখিয়ে অন্ধবিশ্বাস পরীক্ষার উদ্দেশ্যে নিরাপরাধ শিশুকে হত্যা করতে বলবেন? সেই বাবাই বা কেমন, যে জান্নাতে যাওয়ার জন্য বা ঈশ্বরকে খুশী করতে সন্তান জবাই করতে প্রস্তুত হবে? এবং কেমন সমাজ এমন অমানবিক আনুগত্যকে উদযাপন করে? গ্লোরিফাই করে? অন্ধ আনুগত্য আর অন্ধবিশ্বাস কীভাবে তাদের কাছে যুক্তিবুদ্ধির চাইতে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়?
এরকম স্বপ্ন দেখলে আপনি কী করবেন?
একটি অত্যন্ত জরুরি প্রশ্ন উঠে আসে যে, এরকম স্বপ্ন আপনি দেখলে কী করতেন? জান্নাতে যাওয়ার লোভ আপনার কতখানি? জান্নাতের হুরের লোভ কিংবা আল্লাহকে খুশি করতে আপনিও কী একইভাবে সন্তানের গলায় ছুরি চালাতেন? নাকি একজন মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতেন? একইসাথে প্রশ্ন ওঠে, আপনি বুঝবেনই বা কীভাবে, কোনটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা স্বপ্ন, আর কোনটি শয়তানের? আল্লাহর যেহেতু বাস্তব কোন প্রমাণ নেই, শয়তানেরও নেই, তাই আল্লাহকে আলাদাভাবে আইডেন্টিফাই করা তো অসম্ভব। ধরুন, শয়তান এসে বিশ্বাসের পরীক্ষা নিচ্ছে নাকি আল্লাহ, এটি কী আপনি পরীক্ষা করবেন? অর্থাৎ, আল্লাহকে কী এরকম কোন পরীক্ষা নেবেন, যে সে আসলেই আল্লাহ কিনা? আল্লাহর এরকম পরীক্ষা নেয়া কী তার মর্যাদা ও সম্মানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না? তাছাড়া, কী পরীক্ষাই বা নেবেন? শয়তানও তো ইসলামিক মিথলজি অনুসারে অনেক ক্ষমতাবান। সে যদি আপনাকে ধোঁকা দেয় আল্লাহ সেজে, আপনি বুঝবেন কীভাবে? বা এরকমও তো হতে পারে, কোন এলিয়েন তার বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে আপনার আহাম্মকী, অন্ধবিশ্বাস আর বোকামির পরীক্ষা নিচ্ছে আর তার বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করছে। বলছে, দেখো এই উজবুক মুমিনটি কতটা নির্বোধ, জান্নাতে যাওয়ার জন্য নিজের পুত্র জবাই করছে! আসুন কোরআন ও হাদিস থেকে কিছু তথ্য দেখে নেয়া যাক,
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী পৃথিবী মানুষের জন্য যুক্তি বুদ্ধি চর্চা কিংবা জ্ঞান চর্চার কোন স্থান নয়, কোনো স্বাধীন বাস্তবতা নয়, বরং আল্লাহর বানানো এক পরীক্ষাগার। কোরআনে বলা হয়েছে, “যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে আমল দ্বারা উত্তম” [2]। অর্থাৎ, জীবনের উদ্দেশ্য কোনো আত্মিক বিকাশ বা মানবিক উন্নতি নয়, বরং কেবল আল্লাহতে অন্ধবিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে, “আমরা অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও প্রাণহানির মাধ্যমে” [3]। এখানে মানুষের দুঃখ, রোগ বা দুর্ভোগ—সবকিছুই আল্লাহর পরীক্ষার হাতিয়ার। তাই আল্লাহ যেকোন সময়েই মুমিনের যেকোন ইমানের পরীক্ষা নিতে পারেন।
এই ধারণা আরও স্পষ্টভাবে এসেছে সূরা আনকাবূতে: “মানুষ কি মনে করে যে তারা কেবল ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই ছেড়ে দেওয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?” [4]। অর্থাৎ আল্লাহর দৃষ্টিতে বিশ্বাস কেবল মুখের স্বীকারোক্তি নয়, বরং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণযোগ্য। অন্যদিকে সূরা মুহাম্মদে বলা হয়েছে, “আমরা অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব যতক্ষণ না জানা যায় তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করে ও ধৈর্য ধারণ করে” [5]। এই ধারনা অনুসারে, যুদ্ধ, রক্তপাত, কষ্ট, মৃত্যুও হয়ে যায় ঈমান যাচাইয়ের পদ্ধতি।
এমনকি সম্পদ ও পরিবারও ইসলামি তত্ত্বে আল্লাহর পরীক্ষার উপকরণ: “তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষা ( فِتْنَةٌۭ ۚ) (fitnah)” [6]। অর্থাৎ, মানবজীবনের প্রতিটি ভালো জিনিসও ইসলামের দৃষ্টিতে ফিতনা—এগুলো আল্লাহর দেওয়া প্রলোভন, যার দ্বারা মুমিনের আনুগত্য যাচাই করা হয়। এর ফলে বিশ্বাসীর কাছে পৃথিবী হয়ে ওঠে এমন এক শূন্য অর্থের জায়গা, যেখানে আনন্দ, প্রেম, পরিবার বা সুখ কোনো স্বাধীন মানে বহন করে না; সবই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের অংশ। এবং একজন বিশ্বাসী মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে, এসব ফিতনার দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা!
এই মনোভাবকে আরও গভীর করেছে হাদিসের বক্তব্যগুলো। তিরমিজির বর্ণনায় বলা হয়েছে, “যত বড় পরীক্ষা, তত বড় পুরস্কার; আল্লাহ যদি কাউকে ভালোবাসেন, তাঁকে পরীক্ষা করেন” [7]। অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসার চিহ্নই নাকি দুঃখ, ক্ষতি ও যন্ত্রণার পরিমাণ। এমন একটি বিশ্বাসব্যবস্থা যেখানে ঈশ্বরের দয়া প্রমাণ হয় কষ্টের মাত্রা দিয়ে, সেখানে মানুষের যন্ত্রণার কোনো অর্থপূর্ণ প্রতিবাদ করার স্থান থাকে না।
কোরআনের আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, “যদি আল্লাহ চাহেন, তিনি তোমাদের ধ্বংস করে নতুন জাতি আনতে পারেন” [8]—অর্থাৎ আল্লাহর পরীক্ষার কোনো সীমা বা ন্যায়বোধের বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি ইচ্ছা করলে পরীক্ষার নামে হত্যা, দুর্ভিক্ষ বা যুদ্ধও ঘটাতে পারেন, আর বিশ্বাসীকে বলা হয় ধৈর্য ধরতে। এমন এক তত্ত্বে মানুষ আর স্বাধীন চিন্তাশীল সত্তা নয়; সে কেবল পরীক্ষার বিষয়বস্তু। যার কাজ হচ্ছে যখন তাকে কোন পরীক্ষা নেয়া হবে, তখনই সে সেই অন্ধ আনুগত্য বা অন্ধবিশ্বাসের পরীক্ষা দেবে।
এখানেই ইসলামী ধারণার মূল সংকট: যখন ঈশ্বর নিজেই পরীক্ষক, প্রশ্ন-প্রণেতা ও মূল্যায়নকারী—তখন মানুষ স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে না। সে কেবল অনুমান করে কোনটি “আল্লাহর পরীক্ষা” আর কোনটি “শয়তানের প্রলোভন।” আল্লাহ নাকি যাকে ভালোবাসেন তাকেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেন, আর শয়তান নাকি যাকে ধোঁকা দেয় তাকেও একইভাবে যন্ত্রণায় ফেলে—ফলে পার্থক্য কোথায়? এই বিশ্বাস মানুষকে এমন এক মানসিক গোলকধাঁধায় ফেলে, যেখানে প্রতিটি দুর্ভোগকে ঈশ্বরীয় উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যাখ্যা করতে হয়, আর প্রতিটি প্রশ্নকেই “অবিশ্বাস” হিসেবে দেখা হয়।
অতএব, ইসলামিক চিন্তায় আল্লাহর “পরীক্ষা” ধারণাটি যতটা আত্মসমর্পণের তত্ত্ব, তার চেয়ে বেশি এক মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা—যেখানে মানুষকে শেখানো হয় কষ্টের কারণ খোঁজা নয়, বরং কষ্টকেই আল্লাহর অনুগ্রহ হিসেবে মানতে। এর ফলে প্রশ্ন, যুক্তি ও প্রতিবাদ সবই ধীরে ধীরে পাপের শ্রেণিতে পড়ে যায়, এবং মানুষ এক অদৃশ্য পরীক্ষকের অনুমোদন ছাড়া নিজের বোধশক্তিকেও আর বিশ্বাস করতে পারে না।
অন্ধ আনুগত্য এবং সামাজিক মনোবিজ্ঞান
প্রাচীন গল্পকে যখন ঈমানের আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, তখন তার প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকে না। স্ট্যানলি মিলগ্রামের বিখ্যাত obedience ( “Obedience to Authority” বা মিলগ্রাম এক্সপেরিমেন্ট (Milgram Experiment) আধুনিক মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং বিতর্কিত গবেষণাগুলোর একটি ) দেখা গেছে, কর্তৃপক্ষের আদেশ শুনে বহু অংশগ্রহণকারী অচেনা মানুষকে ক্রমবর্ধমান ভোল্টেজের ‘শক’ দেওয়াতে রাজি হয়; লেখক একে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইব্রাহিমের গল্পের উদাহরণ দেন: ঈশ্বরের আদেশের সামনে তিনি এতটাই আনুগত্যশীল ছিলেন যে নিজের ছেলেকে হত্যা করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। সমাজবিজ্ঞানীরা এই phenomena‑কে “non‑rational obedience” বলে বর্ণনা করেন। ইব্রাহিমের মতোই উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা মনে করেন যে তারা ঈশ্বরের আদেশ পালন করছেন; তারা তাই সেই নির্দেশনাগুলো আদৌ মানুষের জন্য কল্যাণকর কিনা, শুভ কিনা, সেইসব নৈতিক বোধ উপেক্ষা করে মানববিরোধী কাজ করতে দ্বিধা করেন না। ইব্রাহিমের গল্পে আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে ছেলেকে হত্যা করতে যাওয়া বাবাকে নায়ক হিসেবে যদি বিবেচনা করি, এই গল্পটিকে সামাজিকভাবে গ্লোরিফাই করি, তাতে ঈশ্বরকে খুশি করতে আত্মঘাতী বোমা হামলা কারী, কাফের কতলে উদ্বুদ্ধ ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদেরকেও এটি উদ্বুদ্ধ করে।
ইব্রাহিমের অন্ধ আনুগত্য মানুষের জন্য মোটেও আদর্শ নয়; বরং উচিত ছিল এরকম আদেশকে প্রত্যাখ্যান করে ঈশ্বরের প্রতি প্রশ্ন ও প্রতিবাদ করা। ইব্রাহিম সডোম শহরের জন্য আল্লাহকে প্রশ্ন করেছিলেন, দ্বিমত প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু নিজের ছেলের জন্য করেননি, যা তার স্ববিরোধী চরিত্রকে প্রকাশ করে, একইসাথে প্রবল মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত কোন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি হওয়ার সম্ভাবনাকেও জোরালো করে।
পরে যখন ইবরাহীমের আতঙ্ক দূর হল, আর তার কাছে সুসংবাদ আসল, তখন সে লূত জাতির ব্যাপারে আমার সাথে ঝগড়া করল।
— Taisirul Quran
অতঃপর যখন ইবরাহীমের সেই ভয় দূর হয়ে গেল এবং সে সুসংবাদ প্রাপ্ত হল তখন আমার প্রেরিত মালাইকার সাথে লূতের কাওম সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক (জোর সুপারিশ) করতে শুরু করল।
— Sheikh Mujibur Rahman
অতঃপর যখন ইবরাহীম থেকে ভয় দূর হল এবং তার কাছে সুসংবাদ এল, তখন সে লূতের কওম সম্পর্কে আমার সাথে বাদানুবাদ করতে লাগল।
— Rawai Al-bayan
অতঃপর যখন ইবরাহীমের ভীতি দূরীভূত হল এবং তাঁর কাছে সুসংবাদ আসল তখন তিনি লূতের সম্প্রদায় সম্বন্ধে আমাদের সাথে বাদানুবাদ করতে লাগলেন [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
অবশ্যই ইবরাহীম ছিল বড়ই সহিষ্ণু, কোমল হৃদয় আর আল্লাহমুখী।
— Taisirul Quran
বাস্তবিক ইবরাহীম ছিল বড় সহিষ্ণু প্রকৃতির, দয়ালু স্বভাব, কোমল হৃদয়।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় ইবরাহীম অত্যন্ত সহনশীল, অধিক অনুনয় বিনয়কারী, আল্লাহমুখী।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় ইবরাহীম অত্যন্ত সহনশীল, কোমল হৃদয় [১], সর্বদা আল্লাহ্ অভিমুখী।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
‘হে ইবরাহীম! এথেকে তুমি নিবৃত্ত হও, তোমার প্রতিপালকের নির্দেশ এসে গেছে, তাদের প্রতি শাস্তি আসবেই যা রদ হবার নয়।
— Taisirul Quran
হে ইবরাহীম! এ কথা ছেড়ে দাও, তোমার রবের আদেশ এসে গেছে এবং তাদের উপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই প্রতিহত করার নয়।
— Sheikh Mujibur Rahman
হে ইবরাহীম, তুমি এ থেকে বিরত হও। নিশ্চয় তোমার রবের সিদ্ধান্ত এসে গেছে এবং নিশ্চয় তাদের উপর আসবে আযাব, যা প্রতিহত হবার নয়।
— Rawai Al-bayan
হে ইবরাহীম! আপনি এটা থেকে বিরত হোন [১]; নিশ্চয় আপনার রবের বিধান এসে পড়েছে; আর নিশ্চয় তাদের প্রতি আসবে শাস্তি যা অনিবার্য।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আধুনিক উদাহরণ: ধর্মীয় বিভ্রম ও সন্তান হত্যা
ইব্রাহিমের গল্পে অন্ধ আনুগত্যের প্রশংসা বহু ধর্মবিশ্বাসী কিংবা অন্ধবিশ্বাসী মানুষের কাছে বিভ্রান্তিকর নৈতিক বার্তা তৈরি করতে পারে। ঈশ্বরের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যকে মহৎ হিসেবে তুলে ধরা হলে, কিছু মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি বাস্তব জীবনেও একই ধরনের “ঈশ্বরপ্রদত্ত নির্দেশ” মেনে ভয়ংকর কাজ করে ফেলেন। এই প্রবণতা বিশেষ করে দেখা যায় মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে—বিশেষত postpartum psychosis, religious delusion বা command hallucination-এ ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে, যারা বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর, ফেরেশতা বা শয়তান তাদেরকে কোনো ভয়ংকর কাজ করার আদেশ দিয়েছেন।
আমেরিকার Psychiatric Times-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, postpartum psychosis আক্রান্ত কিছু মায়ের মধ্যে এমন বিভ্রম দেখা দেয় যে তাদের সন্তান অভিশপ্ত বা শয়তানের দখলে, এবং ঈশ্বর তাদের আদেশ দিচ্ছেন শিশুটিকে হত্যা করতে যাতে সে নরক থেকে রক্ষা পায়। এটি postpartum obsessive-compulsive disorder (OCD) থেকে পৃথক; এখানে মায়েরা শুনতে পান কণ্ঠস্বর যা তাদের আদেশ দেয় কাজটি সম্পন্ন করতে—একেবারে “ঈশ্বরের নির্দেশ” বলে মনে হয় [9]। গবেষকরা বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা ও প্রাথমিক মনোরোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে এই ধরণের filicide (সন্তান হত্যা) অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়।
আসুন এই বিষয়ে সংজ্ঞাগুলো জেনে নেয়া যাক। ডিল্যুশন হলো এমন স্থির বিশ্বাস যা বিরোধী প্রমাণ দেখালেও বদলায় না। কমান্ড হ্যালুসিনেশন–এ রোগী এমন “শোনা নির্দেশ” অনুভব করেন যা তাকে নির্দিষ্ট কাজ করতে বলে—কখনও নিরীহ, কখনও সহিংস। তাই এমন উপসর্গ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক সাইকিয়াট্রিক সেফটি-অ্যাসেসমেন্ট দরকার। পোস্টপার্টাম সাইকোসিস (PPP) প্রাকটিক্যালি খুবই বিরল (প্রায় ১–২/১০০০), কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ ইমার্জেন্সি। হঠাৎ শুরু, ডিল্যুশন/হ্যালুসিনেশন হতে পারে এবং আনট্রিটেড অবস্থায় আত্মহত্যা বা সন্তান-হত্যার ঝুঁকি বেড়ে যায় (স্টাডি ভেদে ~৪% পর্যন্ত)। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি ও এভিডেন্স-বেজড চিকিৎসা অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীকে স্থিতিশীল করে।
যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ডিনা লেনি (Deanna Laney) নামের এক নারী নিজের দুই শিশুকে পাথর দিয়ে হত্যা করেন এবং আরেক সন্তানকে গুরুতর আহত করেন। পরে তদন্তে জানা যায়, তিনি বিশ্বাস করতেন ঈশ্বর তাকে পরীক্ষা করছেন—তিনি আব্রাহামের মতো আনুগত্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সন্তানদের হত্যা করেছেন। তার মানসিক মূল্যায়নে দেখা যায়, তিনি অন্ধবিশ্বাসে বশবর্তী হয়ে ভাবছিলেন ঈশ্বর তাকে একটি “স্বর্গীয় গ্রাম” পুরস্কার হিসেবে দেবেন যদি তিনি ছেলেদের হত্যা করে নিজের অন্ধবিশ্বাস প্রমাণ করতে পারেন [10]
একইভাবে আন্দ্রিয়া ইয়েটস (Andrea Yates) ২০০১ সালে হ্যালুসিনেশনের প্রভাবে নিজের পাঁচ সন্তানকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেন। পরে আদালতে বলা হয়, তিনি বিশ্বাস করতেন তার সন্তানরা “শয়তানের দখলে” এবং তাদের মৃত্যু তাদের আত্মাকে নরকের চিরস্থায়ী যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করবে। এই কেসটি মার্কিন ইতিহাসে postpartum psychosis-এর অন্যতম আলোচিত মামলা হিসেবে রয়ে গেছে [11]।
আরও সাম্প্রতিক এক ঘটনায়, মিশিগানে ২২ বছর বয়সী এক নারী দাবি করেন যে তিনি “স্পঞ্জবব” চরিত্রের মাধ্যমে ঈশ্বরের কণ্ঠ শুনেছেন, যা তাকে নির্দেশ দেয় নিজের তিন বছর বয়সী কন্যাকে হত্যা করতে। পুলিশি তদন্তে নিশ্চিত করা হয়, এটি একটি command hallucination-এর ফল ছিল [12] । আলাস্কার ফেয়ারব্যাঙ্কস শহরেও অনুরূপভাবে একজন মা হ্যালুসিনেশন ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে তার ছয় বছর বয়সী ছেলেকে হত্যা করেন বলে স্বীকার করেন [13]। এই ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, ধর্মীয় এইসব বিশ্বাস—বিশেষ করে “ঈশ্বরের পরীক্ষা” বা “faith demonstration”—মানসিকভাবে দুর্বল বা বিভ্রমগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
ধর্মীয় বিভ্রমের প্রকৃতি
মানসিক রোগতত্ত্বে “religious delusion” এমন এক ধরনের বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত মানসিক সমস্যা, যেখানে ব্যক্তি মনে করেন তিনি ঈশ্বরের দ্বারা বিশেষভাবে নির্বাচিত বা কোনো ডিভাইন মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারা প্রায়ই বিশ্বাস করেন ঈশ্বর, ফেরেশতা বা শয়তান সরাসরি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। Psychosis-এর উইকিপিডিয়া পাতায় উল্লেখ আছে, এই ধরনের বিভ্রমে ব্যক্তি “কণ্ঠস্বর শুনে” ঈশ্বরীয় নির্দেশের বাস্তব রূপ কল্পনা করে ফেলতে পারেন [14]।
গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় বিভ্রম আক্রান্ত রোগীরা ঈশ্বর, নৈতিক বিচার, আত্মত্যাগ ও নরক-স্বর্গের ধারণা নিয়ে চরম চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন, এবং বাস্তব ও কল্পনার সীমারেখা হারিয়ে ফেলেন [15]। ফলে, ধর্মীয় গল্প যেমন ইব্রাহিমের কাহিনি—যেখানে ঈশ্বরের নির্দেশে সন্তান বলির প্রসঙ্গ আছে—এমন ব্যক্তিদের জন্য মানসিকভাবে ট্রিগারিং হয়ে ওঠে।
মনোরোগবিদ্যার আধুনিক মানদণ্ড অনুযায়ী, ধর্মীয় বিভ্রম (religious delusion) এবং শ্রবণ বিভ্রম (auditory hallucination) সাধারণত সিজোফ্রেনিয়া স্পেকট্রামের অন্তর্গত। DSM-5-TR (American Psychiatric Association, 2022)-এর Section II: Schizophrenia Spectrum and Other Psychotic Disorders অংশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যখন কোনো ব্যক্তি নিজেকে ঈশ্বরের দূত বা নির্বাচিত বলে মনে করেন এবং সেই বিশ্বাস থেকে বিপজ্জনক আচরণে লিপ্ত হন, সেটিকে ধর্মীয় প্ররোচিত বিভ্রম (religiously-themed delusion) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয় [16]।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ Pierre (2001) তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ধর্ম ও মানসিক ব্যাধির সংযোগে এক সূক্ষ্ম সীমানা আছে — বিশ্বাস যদি যুক্তির সীমা অতিক্রম করে বাস্তবতাবর্জিত কাজের দিকে নিয়ে যায়, তখন সেটি ভক্তি নয়, বিভ্রমে রূপ নেয় [17]। এটি বোঝায় যে মানসিক চিকিৎসা বিশ্বাসের বিপরীত অবস্থানে রোগীদের এনালাইসিস করে, এবং বিপজ্জনক বিশ্বাস-প্রসূত আচরণ প্রতিরোধে বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র ২০২২ সালের প্রতিবেদনে (Mental Health and Religion) বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্য অনেক সময় সূক্ষ্ম সীমা অতিক্রম করে ফেলতে পারে, যার ফলে অতিরিক্ত আক্ষরিক বা ভয়ভিত্তিক বিশ্বাস মানসিক স্থিতি সম্পূর্ণ নষ্ট করতে পারে। রিপোর্টটি ধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ ও মনো-সামাজিক সহায়তার ওপর জোর দিয়েছে যাতে বিভ্রম-জাতীয় বিশ্বাসে আক্রান্ত মানুষদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায় [18]।
উপমহাদেশের ঘটনা ও সামাজিক প্রভাব
বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝে মাঝে সংবাদে দেখা যায়, কেউ “কালী দেবীর আহ্বান” বা “স্বপ্নে পাওয়া নির্দেশে” নিজের সন্তানকে বলি দিয়েছে। ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের এক নারী দাবি করেছিলেন যে, তিনি দেবীর স্বপ্নে প্রাপ্ত নির্দেশে নিজের ছেলেকে নদীতে ফেলে দিয়েছেন—পরে তাকে মানসিক চিকিৎসার আওতায় নেওয়া হয়। যদিও এই ঘটনাগুলোর অধিকাংশই মানসিক রোগের ফলাফল, ধর্মীয় প্রেক্ষাপট এতে একটি নৈতিক আবরণ তৈরি করে যা অপরাধটিকে “ভক্তি” হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে।
এই সব উদাহরণ একটিই ইঙ্গিত করে—ধর্মীয় আখ্যান, বিশেষ করে আনুগত্য ও আত্মত্যাগকে গৌরবান্বিত করা গল্পগুলো মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের কাছে এক প্রকার “ঈশ্বরীয় নির্দেশনা” হিসেবে প্রতিভাত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান বা ভারত—সব দেশেই এমন মানুষদের শেষ পর্যন্ত মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়েছে, এবং সুস্থ হওয়ার পর তারা নিজের অপরাধকে বিভ্রমজনিত ভুল হিসেবে স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশেও এরকম উদাহরণ নিতান্তই কম নয়, যার উদাহরণ আমরা মাঝেমাঝেই পত্রিপত্রিকাতে দেখি।

আধুনিক মনোবিজ্ঞান স্পষ্ট করে দেখিয়েছে যে অন্ধবিশ্বাস, অন্ধ আনুগত্য, ধর্মীয় বিভ্রম এবং মানসিক রোগের সংমিশ্রণ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধগুলোর জন্ম দিতে পারে। ইব্রাহিমের গল্পের মতো ধর্মীয় আখ্যানকে যদি প্রশ্নহীনভাবে মহিমান্বিত করা হয়, তবে তা মানসিকভাবে দুর্বল ব্যক্তির কাছে “ঈশ্বরের আদেশ পালন”-এর একটি বিপজ্জনক নকশা তৈরি করে। অতএব, ধর্মীয় বয়ানকে মানবিক ও যৌক্তিক কাঠামোয় পুনঃবিশ্লেষণ করা, এবং মানসিক স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও চিকিৎসাকে সমাজে অগ্রাধিকার দেওয়া—এই দুই পদক্ষেপই এ ধরনের ট্র্যাজেডি প্রতিরোধের প্রধান উপায়।
ধর্মীয় গল্প ও সন্ত্রাসবাদ
প্রাচীন কাহিনির প্রতি অন্ধ বিশ্বাস এবং ভক্তি এইসব কাহিনীর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে অনেকটাই সহায়ক। অনেক ক্ষেত্রে এগুলো আধুনিক উগ্রবাদীদের জন্য মনস্তাত্ত্বিক ও ন্যারেটিভ পুঁজি হিসেবে কাজ করতে পারে। লেখক কারোল ডেলানি একবার উল্লেখ করেছিলেন যে ইব্রাহিমের গল্পে যাদের প্রশংসা করা হয়, তারা মূলত অন্ধ আনুগত্য দেখান; একই সাথে যারা এগুলো নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন করে, তাদেরকে “অবিশ্বাসী” বা “সন্দেহকারী“ হিসেবে অবমানিত করা হয়। তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে শয়তানের সাথেও তুলনা দেয়া হয়।
এই ন্যারেটিভের অপব্যবহার কয়েকটি সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীর ভাষণে স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। তারা পুরাতন ধর্মীয় কাহিনীকে নতুন করে ব্যবহার করে “ঈশ্বরের আদেশ” প্রদর্শন ও ন্যায্যতার এক ধরণের ন্যারেটিভ বা বয়ান তৈরি করে। যেমন ধরুনঃ
- আব্দুল্লাহ el-Faisal নামে এক ইসলামিক বক্তা তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, “যারা কাফির (ইসলামে অবিশ্বাসী) … তাদেরকে হত্যা করো” এবং জয়ী হলে আল্লাহ স্বর্গের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেগুলো দেবেন।[19]
- আবু হামজা আল-মাসরি (Abu Hamza al-Masri) তার বক্তৃতায় সাধারণভাবে বলেন, “Allah likes those who believe in Him who kill those who do not believe in Him.”
— অর্থাৎ “ঈশ্বর এমন বিশ্বাসীদের পছন্দ করেন যারা অবিশ্বাসীদের হত্যা করে“ — এই ধরনের বক্তব্য সমাজে সহিংসতার ন্যারেটিভ তৈরি হয়। [20] - আল-কায়দা (Al-Qaeda) একটি ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন যারা ধর্মীয় বিধান হিসেবে পুরাতন ইসলামিক টেক্সট ও দর্শন ব্যবহার করে, “ফিতনা সৃষ্টিকারী” বা “শিরককারী” হিসেবে অমুসলিমদের চিহ্নিত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায় — এবং তাদের বক্তৃতায় এই ন্যারেটিভকে “ঈশ্বরপ্রদত্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ” হিসেবে উপস্থাপন করে। [21]
এই প্রেক্ষিতে আমাদের প্রশ্ন হওয়া উচিতঃ এসব ধর্মীয় কাহিনী কি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজস্ব বিচারবুদ্ধি গড়ে তোলে নাকি নিঃশর্ত আনুগত্যকে মাহাত্ম্য দেয়? যদি ধর্মীয় গল্পের অর্থ বা প্রেক্ষাপট ক্রিটিক্যালি এনালাইসিস বা সমালোচনামূলকভাবে ব্যাখ্যা না করা হয়, তাহলে এধরনের গল্প অত্যন্ত কার্যকর উগ্রবাদী রূপকথা হয়ে উঠতে পারে — যাকে অতি উৎসাহী বা অন্ধবিশ্বাসীরা (radical actors) বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধকে ন্যায্যতা দিতে ব্যবহার করতে পারে। গল্পটি যদি শুধু আনুগত্য-কেন্দ্রিক কোরাস হিসেবে ধরা হয় এবং মানবিক সমবেদনা, নৈতিক প্রশ্ন ও মানবাধিকার বিষয়গুলোর মূল্য অগ্রাহ্য করা হয়, তাহলে সেটি সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষে এমন এক ভিত্তি হতে পারে যার ওপর ভিত্তি করে তারা যেকোন অপকর্মকে ঈশ্বরিক আদেশ নির্দেশ বা নৈতিক কাজ হিসেবে ন্যায্যতা দিতে পারে।
সমালোচনামূলক ও উদার মুসলিম মানসিকতা
যেকোনো ধর্মীয় কাহিনি—বিশেষ করে যে গল্পটি সহিংসতা, আত্মত্যাগ বা ঈশ্বরের পরীক্ষার ধারণার সঙ্গে যুক্ত—তার গল্পগুলোর অর্থ কিংবা মুল শিক্ষণীয় বিষয়াদি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন জরুরি। অন্ধ আনুগত্য অন্ধবিশ্বাস সেই প্রাচীন সময়ে যত উত্তম কাজ বলে গণ্য হতো, বর্তমান সময়ে আর এত ভাল কাজ বলে গণ্য হয় না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই গল্পগুলো অন্ধ আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে প্রচারিত হয়েছে; কিন্তু আধুনিক যুগে এগুলোকে নতুনভাবে পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। সমালোচনামূলক চিন্তা দ্বারা এসব গল্পের ভেতরে থাকা অর্থ, নৈতিক দ্বন্দ্ব, ও মানবিক পরিণতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি।
কিছু সমকালীন ধর্মতত্ত্ববিদ বলেন, ঐতিহ্যকে পুনর্মূল্যায়ন করা অপরিহার্য, কারণ অন্ধ আনুগত্যকে ধর্মীয় গুণ হিসেবে শেখানো মানে পরবর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে চিন্তার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া। ধর্মের বিকাশ তখনই সম্ভব, যখন বিশ্বাসের পাশাপাশি সমালোচনামূলক অনুসন্ধানও উৎসাহিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন করা অপরাধ নয়—বরং আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ। কারণ ঈশ্বর যদি সর্বজ্ঞ ও ন্যায়বিচারক হন, তাহলে যুক্তি ও প্রশ্নের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
যখন শিশুরা ছোটবেলা থেকে রক্ত ও হত্যার দৃশ্যকে “স্বাভাবিক” হিসেবে দেখতে শেখে, তখন সহিংসতার প্রতি সংবেদনশীলতা ধীরে ধীরে কমে যায়। সেই পরিবেশই একদিন এমন প্রজন্ম তৈরি করে, যারা সহিংসতা দেখে বিচলিত হয় না, বরং তাকে ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে মেনে নেয়।তাই আধুনিক যুগে ধর্মের প্রকৃত সংস্কার মানে হলো—প্রশ্ন তোলার স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা। অন্ধ আনুগত্য নয়, যুক্তি, সহানুভূতি ও মানবিকতার ওপর দাঁড়ানো এক বিশ্বাসব্যবস্থা গড়ে তোলা। একমাত্র এই মননশীল, সমালোচনামূলক চেতনা দ্বারাই ধর্ম ও মানবতা একে অপরের প্রতিপক্ষ না হয়ে পরিপূরক হয়ে উঠতে পারে। এই বিষয়ে একটি হিন্দি সিনেমার কিছুটা অংশ আপনাদের সাথে শেয়ার করছি, দেখতে পারেন,
মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও সঠিক প্রতিকার
filicide গবেষণায় দেখা যায়, সন্তান হত্যাকারী অনেক মা বা বাবা গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন; delusion ও hallucination–এর কারণে তারা ভাবেন ঈশ্বর তাঁদের নির্দেশ দিচ্ছেন [22]। এসব রোগের চিকিৎসা না করলে শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, কিন্তু যথাযথ মনোরোগী সহায়তা পেলে ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই ধর্মীয় গল্পের অন্ধ অনুকরণ নয়, সন্তানের কল্যাণে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করা ও ধর্মীয় আখ্যানের সমালোচনামূলক বোঝাপড়া তৈরি করা জরুরি।
অনেক সমাজবিজ্ঞানী বলেন, বারবার আনুগত্যের গল্প শুনতে শুনতে শিশুরা সন্দেহহীনভাবে কর্তৃপক্ষ মানতে শেখে; “যাহা বলা হয়, তাহাই কর” – “ধর্মীয় নেতাদের প্রতি সদাসর্বদা জ্বী হুজুর” এই সংস্কৃতি দমনমূলক শাসনের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। যে সমাজে প্রশ্ন করা বা চ্যালেঞ্জ করা স্বাভাবিক, সেখানে চরমপন্থার স্থান কম। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মুক্ত আলোচনার পরিবেশ ও নৈতিক ভাবনা প্রশিক্ষণ (moral reasoning education) চালু করা প্রয়োজন।
নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং আগামী ভবিষ্যৎ
ধর্মসমূহ যেরকম নিঃশর্ত আনুগত্য দাবী করে, সেগুলোকে গ্লোরিফাই করে, সেগুলো আসলেই সংকটজনক। আমাদের দরকার এমন এক সমাজ যেখানে ধর্মীয় গল্পগুলোকে যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে যাচাই করে তারপরে সেই গল্পের নৈতিক দিক গ্রহণ করতে শেখানো হবে। উদার মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদি ধর্মতাত্ত্বিকেরা তাই নতুন ব্যাখ্যা প্রস্তাব করছেন: ইব্রাহিমের পরীক্ষা আসলে ছিল মানব বলি নিষেধের ঈশ্বরিক বিধান; তিনি সন্তান হারাতে প্রস্তুত ছিলেন এবং আল্লাহ মানবহত্যা না করার নির্দেশ দিয়ে বলি বন্ধ করেন। এই ধরণের আধুনিক ব্যাখ্যা আসলে ধর্মের প্রাচীন ব্যাখ্যাগুলোর সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক, তবে অপেক্ষাকৃত মানবিক। তবুও এই গল্পে যে ঈমানের পরীক্ষার দাবী আছে, তার কারণে জানিয়ে দেওয়া জরুরি – ঈশ্বর মানব সৃষ্টিকে মূল্য দেন এবং শিশুদের জীবন অমূল্য। কোন পরীক্ষার কারণেই কোন শিশুকে হত্যা করা যাবে না। কোন লোভই একজন শিশুর জীবনের চাইতে দাবী নয়। কোন ঈশ্বরই একজন নিরাপরাধ শিশুর বলি চাইতে পারেন না।
রিচার্ড মিডলটন যেমন বলেন, ঈশ্বরের প্রকৃত চরিত্র বিষয়ে শিখতে নৈতিক সাহস দরকার, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মত যুক্তি বুদ্ধি দরকার। তখনি ধর্মীয় কাহিনিগুলো আমাদের কেবল আনুগত্য নয়, ন্যায় বিচার, মানবিকতা ও অপরের প্রতি সহানুভূতির দীক্ষা দিতে পারে।
উপসংহার
ইব্রাহিমের স্বপ্নের কাহিনিকে অন্ধ আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে ধারণ করলে বৈশ্বিক সমাজে এর ক্ষতিকর প্রভাব হতে পারে: বিশ্বাস প্রমাণ করতে শিশু হত্যার প্রশ্নে সংশয় করা উচিত, একে মানসিক রোগীদের বিভ্রম হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত, এবং এসব গল্প জঙ্গিবাদের সম্ভাব্য উৎস হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা উচিত। আধুনিক সময়ে এর অনুবাদ, মূল ভাব এবং শিক্ষাকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলা উচিত, কিংবা গল্পটিই পালটে দেয়া উচিত। নৈতিক শিক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, মানবাধিকার ও যুক্তিবোধ – এই চারটি দিককে সমন্বিত করলে ধর্মীয় আখ্যানগুলোকেও মানবিক ও সমকালীনভাবে উপযোগী করা সম্ভব।
তথ্যসূত্রঃ
- কোরআন, সুরা ৩৭, আয়াত ১০২ ↩︎
- সূরা আল-মুলক ৬৭:২ ↩︎
- সূরা আল-বাকারা ২:১৫৫–১৫৬ ↩︎
- সূরা আনকাবূত ২৯:২–৩ ↩︎
- সূরা মুহাম্মদ ৪৭:৩১ ↩︎
- সূরা আত-তাগাবুন ৬৪:১৫ ↩︎
- জামি আত-তিরমিজি ২৩৯৬ ↩︎
- সূরা ইব্রাহীম ১৪:১৯ ↩︎
- Mothers and Child Murder: How Psychiatrists Can Help in Prevention ↩︎
- Deanna Laney: God Told Her to Kill Her Children ↩︎
- Filicide in the United States ↩︎
- Police: Mom says SpongeBob hallucination told her to kill her 3-year-old daughter ↩︎
- Mom suffered hallucinations from depression medication before killing 6-year-old son, police say ↩︎
- Wikipedia – Religious delusion ↩︎
- Religious psychopathology: The prevalence of religious content of delusions and hallucinations in mental disorder ↩︎
- Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM-5-TR) ↩︎
- Documenting Psychotherapy: Getting Hep on HIPAA ↩︎
- who.int/publications ↩︎
- Abdullah el-Faisal ↩︎
- Abu Hamza al-Masri ↩︎
- Islamic terrorism ↩︎
- Mothers and Child Murder: How Psychiatrists Can Help in Prevention ↩︎